পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩

বর্ন আইডেন্টিটি – ২৮

অধ্যায় ২৮

বর্ন দেখলো মেয়েটা তার হোটেলে ফিরে যাচ্ছে। এখানেই সে থাকে। মনিকা ব্রায়াল। জাকুলিন লাভিয়ার এক নাম্বার মেয়ে। জেনাইন ডলবার্টের চেয়ে একটু বেশি শক্তপোক্ত। তাকে সে শপে দেখেছে, মনে পড়লো। মেয়েটার পদক্ষেপ খুব দ্রুত। নিজের অভিজ্ঞতার উপর তার আস্থা আছে। জেসন বুঝতে পারলো কেন সে লাভিয়ার এক নাম্বার।

মোকাবেলাটা হবে সংক্ষিপ্ত। মেসেজটার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এবার দ্বিতীয় শওয়েভ দেবার পালা। সে ফুটপাতে নির্বিকার দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে তাকে অতিক্রম করতে দিলো। রাস্তায় খুব বেশি ভীড় নেই। তবে একেবারে ফাঁকাও নয়। পুরো ব্লকটায় সম্ভবত আধ ডজন লোক আছে। মেয়েটাকে একাকী করাটা খুবই জরুরি।

সে মেয়েটার পিছু নিতে শুরু করলো। যখন হোটেলের প্রবেশদ্বার ত্রিশ ফিট দূরে, মেয়েটার পাশে এসে হাটার গতি কমিয়ে দিলো সে।

“এক্ষুণি লাভিয়ার সাথে যোগাযোগ করো,” সে তার দিকে তাকিয়ে ফরাসিতে বললো।

“কি বললেন? আপনি কি বললেন? কে আপনি, মঁসিয়ে?”

“থেমো না! হাটতে থাকো। প্রবেশপথটা অতিক্রম করো।”

“আপনি জানেন আমি কোথায় থাকি?”

“খুব কমই আছে যা আমরা জানি না।”

“আমি যদি ভেতরে ঢুকি? দরজায় এক জন ডোরম্যান আছে –

“লাভিয়াও আছে,” বর্ন তাকে বাঁধা দিয়ে বললো। “তুমি তোমার চাকরি হারাবে, আর সেন অনরের কোথাও কাজ জুটাতে পারবে না। সেটা তোমার জন্যে বেশ সমস্যারই হবে।”

“আপনি কে?”

“আমি তোমার কোনো শত্রু নই,” জেসন তার দিকে তাকালো। “আমাকে শত্রু বানিয়ো না।”

“আপনি। আমেরিকান লোকটি! জেনাইন…ক্লদ ওরিয়েল!”

“কার্লোস,” বর্ন বাক্যটা সমাপ্ত করলো।

“কার্লোস? এসব পাগলামীর মানে কি? পুরো বিকেলটা জুড়ে খালি কার্লোস আর কার্লোস! আর খালি নাম্বার! আর নাম্বার! প্রত্যেকেরই নাকি নাম্বার আছে, অথচ কেউ তা শোনে নি! ফাঁদের কথা বলা হচ্ছে, অস্ত্রধারী লোকদের কথা বলা হচ্ছে! এটা তো পাগলামী!”

“এটাই হবে। হাটতে থাকো। তোমার ভালোর জন্যেই বলছি।”

মেয়েটা তাই করলো। “জ্যাকুলিন আমাদের সাথে কথা বলেছে,” মেয়েটা বললো। তার কণ্ঠে দুঃশ্চিন্তার ছাপ। “সে আমাদের সবাইকে বলেছে এটা একেবারেই পাগলের কাজ। আপনি, মানে আপনারা লো ক্লাসিককে ধ্বংস করতে চান। অন্য হাউজগুলো অবশ্যই আপনাদের টাকা দিয়েছে এটা করার জন্যে।”

“এছাড়া তার কাছ থেকে তুমি আর কি আশা করো?”

“আপনি একজন ভাড়াটে লোক। সে আমাদেরকে সত্য কথাটাই বলেছে।”

“সে কি তোমাকে তোমার মুখটাও বন্ধ করতে বলে নি? এসব কিছুই যেনো কারো কাছে না বলো?

“অবশ্যই বলেছে।”

“তার চেয়ে বড় কথা হলো, পুলিশের সাথে যেনো যোগাযোগ না করো। যদিও এটাই এই পরিস্থিতিতে সবচাইতে যুক্তিযুক্ত কাজ হোতো।”

“হ্যা, স্বাভাবিকভাবেই…”

“স্বাভাবিকভাবে নয়,” বর্ন দ্বিমত পোষণ করলো। “দ্যাখো, আমি কেবল একজন রিলে। সম্ভবত তোমার চেয়ে উচ্চপদে নই। আমি এখানে তোমাকে পটাতে আসি নি। আমি একটা মেসেজ দিতে এসেছি। আমরা ডলবার্টের উপর একটা পরীক্ষা করছি; তাকে ভূয়া তথ্য দিয়েছি।”

“জেনাইন?” মনিকা ব্রায়াল খুবই অবাক হয়ে জানতে চাইলো। “সে যে কথা বলেছে, সেটা তো অবিশ্বাস্য! ক্লদের হিস্টিরিয়াগ্রস্ত চিৎকারের মতোই—যে কথা সে বলেছে, তার মতোই। কিন্তু জেনাইন যা বলেছে ক্লদ বলছে তার ঠিক উল্টো।”

“আমরা জানি। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। সে আঁজুর-এর কথা বলেছিলো।”

“আঁজুর হাউজ?”

“আগামীকালকে তাকে বাজিয়ে দেখবে। তার মোকাবেলা করবে।”

“মোকাবেলা করবো?”

“যা বলেছি তাই করবে। এটার সাথে ওটার সম্পর্ক থাকতে পারে।”

“কোন্টার সাথে?”

“ফাঁদটার সাথে। আঁজুর ইন্টারপোলের সাথে কাজ ক’রে থাকতে পারে।”

“ইন্টারপোল? ফাঁদ? এটা তো ঐসব পাগলের প্রলাপ! কেউ জানে না আপনি এসব কি বলছেন!”

“লাভিয়া জানে। এক্ষুণি তার সাথে যোগযোগ করো।” তারা ব্লকের শেষ মাথায় এসে পড়লে জেসন তার হাতটা স্পর্শ করলো। “আমি এখান থেকে তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। তুমি হোটেলে ফিরে গিয়ে লাভিয়াকে ফোন করবে। তাকে বলবে, ব্যাপারটা যেরকম ভেবেছিলাম তার চেয়েও সিরিয়াস। সব কিছু ভেঙে পড়ছে। সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো কেউ একজন বেঈমানী করেছে। এ্যালবার্ট নয়, ক্লার্কদের কেউ নয়। উঁচু পদের কেউ হয়তো। সে সব কিছু জানে।”

“বেঈমানী? এর মানে কি?”

“লো ক্লাসিকের একজন বিশ্বাসঘাতক আছে। তাকে বলবে সতর্ক থাকতে। সবাইকে। যদি সে তা না করে তবে সেটা আমাদের সবাইকে শেষ করে দেবে।” বর্ন তার হাতটা ছেড়ে দিয়ে রাস্তাটা পার হয়ে গেলো। ওপাশে গিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা দরজা দিয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়লো।

ভেতরে ঢুকেই সে উঁকি মেরে বাইরে তাকালো। মনিকা ব্রায়াল হোটেলের ভেতর ঢুকছে। দ্বিতীয় শকওয়েভের প্রথম ভীতিটা শুরু হয়ে গেছে। মেরিকে ফোন করার সময় হয়ে গেছে এখন।

.

“আমি খুব উদ্বিগ্ন আছি, জেসন। এটা উনাকে একেবারে বিপর্যস্ত ক’রে ফেলছে। ফোনে উনি একেবারে ভেঙে পড়ছিলেন। উনি বউয়ের দিকে তাকালে কি হবে বলো? উনি এখন কি ভাবছেন, কি করছেন?”

“সে সামলাতে পারবে এটা,” বর্ন বললো। শাম্প এলিসির একটা ফোনবুথ থেকে সে কথা বলছে। “সে যদি তা না করে, আমি তাকে খুন করবো। আমার আসলে মুখটা বন্ধ রাখা উচিত ছিলো, তার বউকে ধরার দরকার ছিলো।”

“তুমি সেটা করতে পারতে না। তুমি দাঁজুকে সিঁড়ির ধাপে দেখেছো, তুমি

ভেতরে যেতে পারতে না।”

“আমি কিছু একটা ভাবতে পারতাম। যেমনটি আমরা একমত হয়েছি। এসব ব্যাপারে আমি খুবই কার্যকরী।”

“কিন্তু তুমি তো কিছু একটা করছো! তুমি ভীতি সৃষ্টি করেছো, যারা কার্লোসের অর্ডার পালন করে তাদেরকে প্রকাশ ক’রে ফেলেছো। কাউকে এই ভীতিটা থামাতে হবে। এমনকি তুমি বলেছো তুমি মনে করো না জ্যাকুলিন লাভিয়া যথেষ্ট উপরের লোক। জেসন, তুমি কাউকে দেখতে পাবে, তুমি জানতে পারবে। তাকে তুমি ধরতে পারবেই!”

“আমিও তাই আশা করি। হায় ঈশ্বর, আমি সেরকম আশাই করি। আমি জানি আমি কি করছি। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে…” বর্ন থামলো। কথাটা বলতে তার ঘেন্না লাগছে। তবে কথাট তাকে বলতেই হবে। “আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। আমার একটা অংশ বলছে ‘নিজেকে বাঁচাও,’ বাকি অংশটা বলছে, ‘কার্লোসকে ধরো’।”

“শুরু থেকেই তো তুমি এরকম করছো, তাই না?” মেরি নরম কণ্ঠে বললো।

“আমি কার্লোসকে পরোয়া করি না!” চিৎকার ক’রে বললো জেসন। “এটা আমাকে পাগল ক’রে ফেলছে।”

“ডার্লিং, ফিরে আসো।”

“কি?” বর্ন ফোনটার দিকে তাকালো। আবারো সেটা শুরু হয়েছে। আকাশটা বেশ গাঢ়। একসময় এটা খুবই উজ্জ্বল ছিলো, চোখ ঝলসানো ছিলো। পাখির কিচির মিচির আর যন্ত্রের শব্দ…

“জেসন।”

“কি?”

“ফিরে আসো। প্লিজ, ফিরে আসো।”

“কেন?”

“তুমি খুব ক্লান্ত। তোমার বিশ্রামের দরকার।”

“আমাকে পিয়েরে ত্রিগনোয়ার কাছে যেতে হবে। সে হলো বুককিপার।”

“আগামীকালকে যোয়ো।”

“না। আগামীকালকে ক্যাপটেনদেরকে ধরতে হবে।” সে এটা কি বললো? ক্যাপটেনদেরকে। সেনাদল। ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন হুড়োহুড়ি করছে। তবে এটা একমাত্র পথ। বহুরূপী একজন উস্কানীদাতা।

“আমার কথা শোনো,” মেরি বললো। তার কণ্ঠ খুব দৃঢ়। “তোমার কিছু একটা হচ্ছে। এটা আগেও হয়েছে। আমরা দু’জনেই সেটা জানি। আর সেটা যখন ঘটে তখন সেটা তোমাকে থামাতে হয়। এটাও আমরা জানি। হোটেলে ফিরে আসো। প্লিজ।”

বর্ন চোখ দুটো বন্ধ ক’রে ফেললো। রাতের আকাশে তারা দেখতে পেলো সে। কোনো চোখ ঝলসানো আলো নেই।

“আমি ঠিক আছি। আমি ঠিক আছি এখন। কেবল কয়েকটা বাজে মুহূর্ত, এই যা।”

“জেসন, কারণটা কি?” মেরি শান্ত কণ্ঠে বললো।

“জানি না।”

“তুমি এইমাত্র ব্রায়াল মেয়েটাকে দেখেছো। সে কি তোমাকে কিছু বলেছে? এমন কিছু যাতে তোমার মধ্যে অন্য কোনো ভাবনা এসে ভর করেছে?”

“আমি নিশ্চিত নই। আমি এতোটা ব্যস্ত ছিলাম যে, কি ভাববো বুঝতে পারি নি।”

“ভাবো, ডার্লিং।”

“বর্ন চোখ দুটো বন্ধ ক’রে মনে করার চেষ্টা করলো। কোনো কিছু কি আছে? “মেয়েটা আমাকে উস্কানীদাতা বলেছে,” জেসন বললো, কেন এই শব্দটা তার মধ্যে ফিরে এলো সে জানে না। “কিন্তু আমি তো সেটাই, তাই না? আমি তো সেটাই করছি।”

“হ্যা,” মেরি একমত হয়ে বললো।

“আমাকে কাজটা চালিয়ে যেতে হবে। ত্রিগনোয়াঁ এখান থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে থাকে। দশটা বাজার আগেই তাকে আমার ধরতে হবে।”

“সতর্ক থেকো,” মেরি উদাস হয়ে বললো।

“ঠিক আছে। তোমাকে ভালোবাসি।”

“তোমার উপর আমার আস্থা আছে,” মেরি বললো।

.

রাস্তাটা একেবারে শান্ত। ব্লকটা দোকানপাট আর ফ্ল্যাট-এর মিশ্রনে একটি এলাকা, দিনের বেলায় লোকসমাগম থাকলেও, রাতে একেবারে ফাঁকা।

ত্রিগনোয়াতে পিয়েরের অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে পৌঁছালো জেসন। সিঁড়ির ধাপগুলো পেরিয়ে একটা মৃদুর আলোর ফয়ারে এসে পড়লো। এক সারি পিতলের মেইলবক্স আছে ডান দিকে। প্রতিটার উপরেই নাম-ঠিকানা লেখা। জেসন নামগুলো থেকে পিয়েরেরটা খুঁজে পেয়ে কালো বোতামটা দু’বার টিপলে দশ সেকেন্ড পরেই স্পিকার থেকে একটা কণ্ঠটা শোনা গেলো।

“উই?”

“মঁসিয়ে ত্রিগনোয়া, সিলভু প্লেইত?”

“ইসি।”

“তেলোগ্রামে, মঁসিয়ে। জে নে পুরা পাস কুইতার মা বাইসাইক্লেত।”

“তেলেগ্রামে? পোর মোয়ে?”

পিয়েরে ত্রিগনোয়াঁ খুব একটা টেলিগ্রাম পেয়ে থাকে না। তাই কথাটা শুনে সে বিস্মিত হলো। তার বাকি কথাগুলো আর বোঝা গেলো না। তবে তার কাছাকাছি একটা নারী কণ্ঠ শোনা গেলো। টেলিগ্রাম মানেই যে খুব খারাপ খবর, এটা ভেবে আৎকে উঠেছে সে।

বর্ন এপার্টমেন্টের ঘোলা কাঁচের দরজার সামনে অপেক্ষা করছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই বর্ন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। ত্রিগনোয়ার পায়ের শব্দ। দরজাটা খুলে গেলে জেসনকে আড়াল ক’রে ফেললো সেটা। টেকো মাথার নাদুসনুদুস শরীরের একজন মেইলবক্সের কাছে হেলে দুলে হেটে গেলো। ৪২ নাম্বারের কাছে এসে থামলো লোকটা।

“মঁসিয়ে ত্রিগনোয়া?”

মোটা লোকটা ঘুরে দাঁড়ালো। “একটা টেলিগ্রাম! আমার কাছে একটা টেলিগ্রাম এসেছে!” সে জোরে জোরে বললো। “আপনিই কি সেটা নিয়ে এসেছেন?”

“চালাকিটা করার জন্যে আমি ক্ষমা চাইছি। তবে সেটা আপনার মঙ্গলের জন্যেই। আমি চাই নি আপনাকে আপনার পরিবার আর স্ত্রী’র সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করি।”

“জিজ্ঞাসাবাদ?” বুককিপার বিস্মিত হলো। তার চোখেমুখে ভয়। “আমাকে? কি জন্যে? এসব কি? আপনি আমার বাড়িতে কেন এসেছেন? আমি আইন মান্যকারী একজন নাগরিক!

“আপনি সেন অনরেতে কাজ করেন? লো ক্লাসিক নামের একটা ফার্মে?”

“হ্যা। আপনি কে?

“চাইলে আপনি আমার অফিসে আসতে পারেন,” বর্ন বললো।

“আরে, আপনি আসলে কে?”

“ব্যুরো অব ট্যাক্সেশন এবং রেকর্ডের স্পেশাল ইনভেস্টিগেটোর। জালিয়াত এবং ষড়যন্ত্র ডিভিশনে আছি। আমার সাথে আসুন—নিচে অফিসের গাড়ি আছে।”

“আপনার সাথে যাবো? আমি তো কোনো জ্যাকেট বা কোট পারি নি! আমার স্ত্রী, সে টেলিগ্রামের জন্যে অপেক্ষা করছে।”

“চাইলে সেটা তার কাছে পাঠাতে পারেন। এখন আমার সঙ্গে আসুন। আমি সারাদিন ধরে এ কাজে লেগে রয়েছি। এটা এখন শেষ করতে চাই।”

“প্লিজ, মঁসিয়ে। আমি কোথাও যাওয়ার জন্যে চাপাচাপি করছি না! আপনি বলেছিলেন আপনার কিছু প্রশ্ন আছে। আমাকে প্রশ্ন করুন, উপরে যেতে দিন। আপনার অফিসে যাবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।”

“কয়েক মিনিট লাগবে তাহলে,” জেসন বললো।

“আমি বউকে ফোন করে বলে দিচ্ছি, বলবো এটা ভুল করে এসেছে।” ত্রিগনোঁয়া বলেই একটু হাসার চেষ্টা করলো। “অন্য কোথাও যাবার দরকার নেই। কয়েক মিনিটে কীইবা এসে যায়? এবার বলুন মঁসিয়ে, ব্যাপারটা কি? আমার বুক- গুলো খুবই নিখুঁত, একদম! একাউন্ট-এর কাজের জন্যে আমি দায়ি নই। সেটা আলাদা একটা ফার্ম করে। সে আলাদা একটা ফার্মে আছে। সত্যি বলতে কি আমি তাকে কখনও পছন্দ করি নি। সে কথায় কথায় কসম খায়। বুঝলেন তো কি বললাম। কিন্তু তার পরেও, সেটা আমি বলার কে?”

“শুরুতেই বলছি,” বর্ন সরাসরি বলতে শুরু করলো। “প্যারিস ছেড়ে যাবেন না। যদি ব্যক্তিগত অথবা পেশাগত কাজে আপনাকে বাইরে যেতে বলা হয়, তবে আমাদেরকে জানাবেন। সত্যি বলতে কি, এটার অনুমতি দেয়া হবে না।”

“আপনি নিশ্চয় ঠাট্টা করছেন, মঁসিয়ে!”

“মোটেই না।”

“প্যারিস ছাড়ার তো আমার কোনো কারণ নেই—এরকম কাজের জন্যে আমার হাতে এখন তেমন টাকা-পয়সাও নেই—আমাকে এরকম কথা বলাটা অবিশ্বাস্য বলেই মনে হচ্ছে। আমি করেছি কি?”

“ব্যুরো আজ সকালে আপনার বুকগুলো তলব করেছিলো। প্রস্তত হন!”

“তলব করেছে? কি জন্যে? প্রস্তুতই বা হবো কেন?”

“তথাকথিত একজন সাপ্লায়ারকে পেমেন্ট দিয়েছেন যার ইনভয়েসগুলো জাল -। মার্চেন্ডাইজটা কখনই রিসিভ করা হয় নি—রিসিভ করা হবেও না—পেমেন্টগুলো জুরিখের একটা ব্যাংকে চলে গেছে।

“জুরিখ? আরে, এসব কি বলছেন, আমি তো কিছুই জানি না! আমি জুরিখের জন্যে কোনো চেক্ প্রস্তুত করি নি।”

“সরাসরি নয়। আমরা সেটা জানি। তবে কোনো অস্তিত্বহীন ফার্মের জন্যে সেগুলো রেডি করাটা কতোটাই না সহজ। টাকাগুলো পেইড করা হয়েছে, তারপর জুরিখে চলে গেছে।”

“প্রতিটি ইনভয়েস-এ মাদাম লাভিয়ার স্বাক্ষর থাকে! আমি নিজে কিছু পে করি না!”

“এখন তো দেখছি আপনিই ঠাট্টা করছেন,” সে বললো।

“কসম খেয়ে বলছি! এটা হাউজের পলিসি। যে কাউকে জিজ্ঞেস ক’রে দেখতে পারেন! মাদাম অথোরাইজ না করলে লো ক্লাসিক কোনো কিছু পে করে না।”

“তাহলে আপনি বলছেন যে, আপনারা সরাসরি মাদামের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে থাকেন।”

“স্বাভাবিকভাবেই!”

“আর মাদাম কার কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে থাকে?”

ত্রিগনোয়াঁ দাঁত বের ক’রে হাসলো। “বলা হয় ঈশ্বরের কাছ থেকে। অবশ্যই এটা ঠাট্টা ক’রে বলা হয়।”

“আমি চাইবো, আপনি একটু সিরিয়াস হবেন। লো ক্লাসিকের আসল মালিক কারা?”

‘পার্টনারশিপ ব্যবসা। মাদাম লাভিয়ার অনেক ধনী বন্ধু আছে। তারা তাকে টাকা দেয়। আর রেনে বারগোঁয়ার প্রতিভা তো আছেই।”

“সেইসব বিনিয়োগকারী কি নিয়মিত দেখা সাক্ষাত ক’রে থাকে? তারা কি নীতিনির্ধারণী কোনো কিছুতে অংশ নেয়? সম্ভবত কোনো ফার্মের ব্যাপারে তদবির করে, ব্যবসার প্রয়োজনে?”

“আমি জানবো না, মঁসিয়ে। স্বাভাবিক, সবারই তো বন্ধুবান্ধব আছে।”

“আমরা হয়তো ভুল লোককে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি,” বর্ন বললো। “এমনও হতে পারে, আপনি এবং মাদাম লাভিয়াকে কেউ ব্যবহার করছে।”

“কিসের জন্যে ব্যবহার করছে?”

“জুরিখে টাকা পাচারের কাজে। ইউরোপের একজন ভয়ংকর খুনির একাউন্টে।”

ত্রিগনোঁয়া আৎকে উঠলো। “আরে, এসব কি বলছেন?”

“আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। বিশেষ ক’রে আপনি। আপনিই চেকগুলো প্রস্তুত করেন, অন্য কেউ নয়।”

“কেবল এপ্রুভাল হলেই করি!”

“ইনভয়েসগুলোর বিপরীতে আপনি কি মার্চেন্ডাইজগুলো কখনও চেক্ ক’রে দেখেছেন?”

“এটা আমার কাজ নয়!”

“তাহলে, আপনি সাপ্লাইয়ের জন্যে যেসব পেমেন্ট ইস্যু করেন সেগুলো কখনও দেখেন না।”

“আমি কখনও কিছু দেখি না! আমার কাছে ইনিশিয়াল দিয়ে পাঠানো হলেই কেবল আমি পে করি!”

“আপনি এবং লাভিয়া প্রতিটি পুরনো ফাইল খুঁজে দেখলেই বুঝতে পারবেন। কারণ আপনারা দু’জনেই—বিশেষ ক’রে আপনি—কেস্ খাবেন।

“কেস্? কিসের কেস্?

“প্রয়োজনীয় রিট-এর অভাবের জন্যে। এটাকে বলতে পারেন হত্যাকাণ্ডে সহযোগীতা করা।”

“হত্যা—”

“গুপ্তহত্যা। জুরিখের একাউন্টটা কার্লোস নামের এক গুপ্তঘাতকের। আপনি, পিয়েরে ত্রিগনোঁয়া, আর আপনার বর্তমান বস্ মাদাম জ্যাকুলিন লাভিয়া সরাসরি ইউরোপের সবচাইতে ভয়ংকর খুনিকে টাকা পয়সা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক সহযোগীতা দিয়েছেন। ইলিচ রামিরেজ সানচেজ। আলিয়াস কার্লোস।”

“অঁউগ!…” ত্রিগনোয়ারের চোখ দুটোতে ভয় আর আতঙ্ক জেঁকে বসলো। “সারাটা বিকেলে…” সে ফিফিস্ ক’রে বলরো। “লোকজন আমার চারপাশে ছোটাছুটি করেছে, উদভ্রান্তের মতো মিটিং করেছে, আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়েছে। আমার বুথের সামনে দিয়ে যাবার সময় ঘাড় বেঁকিয়ে দেখেছে। ওহ্ ঈশ্বর।”

“আপনার জায়গায় আমি হলে আমি এক মুহূর্তও দেরি করতাম না। খুব জলদিই সকাল হবে, শুরু হবে আপনার জীবনের সবচাইতে কঠিন দিন।” জেসন বাইরের দরজা দিয়ে বের হয়ে একটু থামলো। তার হাত দরজার নবের উপর। “আপনাকে উপদেশ দেয়াটা আমার কাজ নয়, তবে আপনার জায়গায় আমি হলে আমি এক্ষুণি মাদাম লাভিয়ার সাথে যোগাযোগ করতাম। আপনাদের দু’জন আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন—এটাই হয়তো কেবল করতে পারেন। পথেঘাটে যেকোনো জায়গায় খুনখারবির ব্যাপারটা হয়তো একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।”

বহুরূপী রাস্তার দিকে পা বাড়ালে ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা তার মুখে এসে লাগলো।

কার্লোসকে ধরো। ফাঁদে ফেলো। কেইন হলো চার্লি আর ডেল্টা হলো কেইন।

ভূয়া!

নিউইয়র্কের একটা নাম্বার খুঁজে বের করো। ট্রেডস্টোন খুঁজে বের করো একটা মেসেজের অর্থ উদ্ধার করো। প্রেরককে খুঁজে বের করো।

জেসন বর্নকে খুঁজে বের করো।

.

নুয়েলি সুর সেইন-এর চার্চের জানালা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করেছে, পরিস্কার জামা কাপড় পরা দাঁড়ি কামানো এক বৃদ্ধলোক হুড়মুড় ক’রে প্রবেশ করলো সেখানে। ভেতরে লম্বা যাজক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে যাজকের মনে হলো লোকটাকে সে এর আগেও দেখেছে। তবে ঠিক চিনতে পারলো না। গতকালকে এক নোংরা ভিক্ষুক এসেছিলো, একই আকারের, ঠিক একই…না এই বৃদ্ধের জুতা চক্‌চক্ করছে। তার সাদা চুলগুলো ভালো ক’রে আঁচড়ানো। তার সুটটা পুরনো ফ্যাশনের হলেও বেশ দামি।

“অ্যাঙ্গেলিয়াস ডোমিনি,” কনফেকশন বুথের পর্দাটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বৃদ্ধ বললো।

“যথেষ্ট!” পর্দার পেছনে আবছায়া অবয়বটা বললো। “সেন অনরে থেকে কি জানতে পারলেন?”

“খুব কমই, তবে তার মেথডগুলো শ্রদ্ধা করি।”

“কোনো ধরণ আছে?”

“সেটা পরে বোঝা যাবে। এমন সব লোকদেরকে সে বেছে নিয়েছে যারা কিছুই জানে না, আর তাদের মাধ্যমেই একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফেলেছে। আমি বলবো, লো ক্লাসিকে আর কোনো কর্মতৎপরতা যাতে না হয়।”

“স্বাভাবিকভাবেই,” ওপাশ থেকে বলা হলো। “কিন্তু তার উদ্দেশ্যটা কি?”

“বিশৃঙ্খলা ছাড়া?” বৃদ্ধ জানতে চাইলো। “আমার মনে হয়, যারা কিছু জানে তাদের মধ্যে অবিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে সে। ব্রায়াল নামের মেয়েটা কথাগুলো ব্যবহার করেছে। সে বলেছে, আমেরিকানটি তাকে বলেছে সে যেনো লাভিয়াকে বলে তাদের মধ্যে একজন বিশ্বাসঘাতক আছে। একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। কার এতো সাহস আছে? গত রাতটা তো ছিলো একেবারে পাগলামী, আপনি তো জানেন সেটা। বুককিপার আর ত্রিগনোয়াঁ পাগল হয়ে গেছে। লাভিয়ার বাড়ির বাইরে রাত দুটোর সময় অপেক্ষা করছিলো তারা, আর লাভিয়া যখন ব্রায়ালের হোটেল থেকে ফিরছিলো তখন তাকে রীতিমতো শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। পথেই চিৎকার চেঁচামেচি করেছে, কান্নাকাটি করেছে।”

“লাভিয়া নিজেও খুব ভালো আচরণ করে নি। সে যখন পার্ক মশিউ’তে ফোন করেছিলো তখন সে নিজেও খুব একটা নিয়ন্ত্রিত ছিলো না। তাকে আবার ফোন করতে বারণ করা হয়েছে। কেউই যেনো সেখানে ফোন না করে…কখনই না।”

“আমরা কথাটা শুনেছি। আমাদের মধ্যে হাতে গোনা যে ক’জন নাম্বারটা জানে তারা এটা ভুলে গেছে।”

“নিশ্চিত থাকবেন, ভুলে যেনো যায়।” আবছায়া অবয়বটা আচমকা উঠে দাঁড়ালো। “অবিশ্বাস ছড়ানো হচ্ছে, অবশ্যই! এতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই উঠে না। সে কনট্যাক্টগুলো পিকআপ করবে, তাদের কাছ থেকে জোর ক’রে তথ্য আদায় করার চেষ্টা করবে। যখন একজন ব্যর্থ হবে, তাকে আমেরিকানদের কাছে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পরের জনকে ধরবে। তবে সে একাই কাজটা করবে। এটা তার অহংয়েরই অংশ। সে একটা উন্মাদ। এবং মোহগ্রস্ত।”

“হতে পারে সে দুটোই,” বৃদ্ধ বললো। “তবে সে একজন পেশাদারও বটে। সে যখন ব্যর্থ হবে তখন তার কর্তাদের কাছে নামগুলো পাঠিয়ে দেবে। সুতরাং, আপনি তাকে ঘায়েল করুন অথবা নাই করুন, তাদেরকে ঘায়েল করা হবে।”

“তারা মরবে,” গুপ্তঘাতক বললো। “তবে বারগোঁয়া নয়। সে অনেক বেশি মূল্যবান। তাকে বলবেন এথেন্সে চলে যেতে। সে জানে কোথায় যেতে হবে।”

“আমি কি তাহলে পার্ক মশিউ’র স্থলাভিষিক্ত হবো?”

“সেটা অসম্ভব। তবে কিছু দিনের জন্যে আপনি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো কয়েক জনের কাছে পৌঁছে দেবেন।”

“প্রথমজন হলো বারগোঁয়া, এথেন্সে।”

“হ্যা।”

“তাহলে লাভিয়া আর দাঁজুকে মার্ক করা হলো?”

“হ্যা। টোপ খুব কমই বেঁচে থাকতে পারে। তারাও পারবে না। লাভিয়া আর দাঁজুকে কভার করে এরকম দুটো দলের কাছে আপনি আরেকটা মেসেজ রিলে করবেন। তাদেরকে বলবেন, আমি তাদের দিকে লক্ষ্য রাখছি সারাক্ষণ। কোনো ভুল যেনো না হয়।”

এবার বৃদ্ধলোকটা চুপ মেরে গেলো। “আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কার্লোস। রেনল্টটা দেড় ঘণ্টা আগে মঁতমাত্রের একটা গ্যারেজে পাওয়া গেছে। গতরাতে সেটা নিয়ে আসা হয়েছে।”

বৃদ্ধলোকটা ওপাশ থেকে নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো। “আমি ধরে নিচ্ছি আপনি সেটাকে নজরদারী করার জন্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন—এমনকি এখন, এই মুহূর্তেও।”

মৃদুভাষী ভিক্ষুক আস্তে ক’রে হাসলো। “আপনার শেষ ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী আমি একজন বন্ধুকে ভাড়া করেছি, চমৎকার একটা গাড়িসহ। সে আবার তার পরিচিত তিনজনকে নিয়োগ করেছে, চারজনে মিলে ছয় ঘণ্টার শিফটে গ্যারাজের বাইরে, রাস্তায় নজরদারী করছে। তারা অবশ্য কিছু জানে না। কেবল জানে তাদেরকে যেকোনো সময় রেনল্টটা অনুসরণ করতে হবে।”

“আপনি আমাকে হতাশ করেন নি।”

“সেটা আমি করতে পারি না। আর যেহেতু পার্ক মশিউ’রটা বাদ দিতে হয়েছে, তাদেরকে আমার নিজের ফোন নাম্বার দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। সেটা কোয়ার্টারের একটা বন্ধ ক্যাফের নাম্বার। মালিক আর আমি বহু পুরনো বন্ধু। আমি প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো মেসেজের জন্যে, আর সে কখনও আপত্তি জানাবে না। আমি জানি সে তার ব্যবসার টাকা কোত্থেকে পেয়েছে। আর কাকে খুন করতে হয়েছে সেটা পাবার জন্যে।”

“আপনার আচরণ বেশ ভালো। আপনার অনেক গুণ আছে।”

“আমার সমস্যাও আছে, কার্লোস। যেহেতু আমাদের কেউ পার্ক মশিউ’তে ফোন করতে পারছি না, তাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে? বিশেষ ক’রে রেনল্টের ব্যাপারটা যদি জানাতে হয়।”

“হ্যা, সমস্যাটার ব্যাপারে আমি সচেতন আছি। আপনি যে বোঝাটা নিতে চাচ্ছেন সেটার ব্যাপারে কি সচেতন আছেন?”

“সেটা না পেলেই বেশি খুশি হতাম। আমার একমাত্র আশা যখন এইসব মিটে যাবে, কেইন মারা যাবে, আপনি তখন আমার অবদানগুলো মনে রাখবেন, আর আমাকে খুন না ক’রে নাম্বারটা বদলে ফেলবেন।”

“আপনি ভবিষ্যৎ দেখতে পান।”

“পুরনো দিনে এটাই আমার বেঁচে থাকার প্রধান মাধ্যম ছিলো।”

গুপ্তঘাতক সাতটি সংখ্যা ফিফিস্ ক’রে বললো। “আপনি হলেন একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, যে এই নাম্বারটা জানে। স্বাভাবিকভাবেই এটা ট্রেস করা যাবে না।”

“সঙ্গত কারণেই। কে আশা করবে একজন ভিক্ষুকের কাছে এটা আছে?”

“প্রতিটি ঘণ্টা আপনাকে আরো ভালো মানের জীবন ব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে আসবে। জালটা গুটিয়ে আনা হচ্ছে। প্রতিটি ঘণ্টা তাকে ফাঁদের কাছে নিয়ে আসছে। কেইন ধরা পড়বে। যে লোক এটা সৃষ্টি করেছে তার মুখের সামনে তার লাশটা ছুড়ে ফেলা হবে। শেষে, সে কেবল একজন পাপেট হিসেবেই থাকবে, খুবই মূল্যবান পাপেট। সে ছাড়া আর সবাই জানে এটা।”

.

বর্ন ফোনটা তুলে নিলো। “হ্যা?”

“রুম ৪২০?”

“বলে যান, জেনারেল।”

“ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার বউ আর যোগাযোগ করছে না— অন্ত তপক্ষে ফোনে তো নয়ই। আমাদের সামনে ফোনটা দু’বার বাজলে উভয় ক্ষেত্রেই আমার বউ আমাকে বলেছে ফোনটা ধরতে। সে আর কথা বলতে চাচ্ছে না।”

“কে ফোন করেছিলো?”

“একজন কেমিস্ট একটা প্রেসক্রিপশনের ব্যাপারে, আর একজন সাংবাদিক একটা ইন্টারভিউয়ের জন্যে। সে কোনোটাই জানে নি।”

“আপনি কি এমন ভাব লক্ষ্য করেছেন যে, সে আপনাকে দিয়ে ফোন ধরানোর মাধ্যমে আসলে আপনাকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করছে?”

ভিলিয়ার্স থেমে গেলো। তার জবাবটা এলো রাগের সাথে। “হ্যা, সে আমাকে বলেছে সে বাইরে লাঞ্চ করবে, জর্জ সিঙ্ক-এ একটা রিজার্ভেশন আছে তার। আমি তাকে সেখানে পাবো, যদি সে ওখানে যেতে মনস্থির করে

“সে যদি যায়, আমি সেখানে প্রথমে যেতে চাই।”

“আমি তোমাকে জানিয়ে দেবো।”

“আপনি বলছেন, সে আর ফোনে যোগাযোগ করছে না। ‘অন্ততপক্ষে ফোনে তো নয়ই।’ মনে হয় এটাই বলেছেন। এ দিয়ে কি আপনি কিছু বোঝাতে চেয়েছেন?

“হ্যা। ত্রিশ মিনিট আগে বাড়িতে এক মহিলা এসেছিলো। আমার বউ তার সাথে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করলেও দেখা করেছে। আমি এক ঝলক তার মুখটা দেখেছি। তারা পার্লারে বসেছিলো। তবে সেটাই যথেষ্ট। মহিলা খুবই ভীতসন্ত্রস্ত ছিলো।”

“তার বর্ণনা দিন।”

ভিলিয়ার্স বর্ণনা দিলো।

“জ্যাকুলিন লাভিয়া,” জেসন বললো।

“আমিও সেরকম ভেবেছি।”

“আমি বুঝতে পারছি না সে কেন আপনার বাড়িতে যাবে। এটা তো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এটা আমার মাথায় ঢুকছে না। যদি না সে নিজের ইচ্ছেয় গিয়ে থাকে। আর কোনো ফোন করা হবে না সেটা জেনেই হয়তো গিয়েছে।”

“আমারও তাই মনে হয়েছে,” বৃদ্ধ জেনারেল বললো। “তাই আমার মনে হলো একটু খোলা জায়গায় হেটে অসি, উন্মুক্ত বায়ুর জন্যে। আমার সাথে আমার সহকারী ছিলো। তবে আমার চোখ খোলা ছিলো। লাভিয়াকে অনুসরণ করা হয়েছে। চারটা বাড়ির পরে একটা গাড়িতে দু’জন লোক বসেছিলো। গাড়িটাতে ওয়্যারলেসের ব্যবস্থা ছিলো। আমি এন্টেনাটা দেখেছি। ঐসব লোক এমনিতেই ব’সে ছিলো না। তারা আমার বাড়িটার দিকে লক্ষ্য রাখছিলো।”

“আপনি কিভাবে জানলেন যে, লাভিয়া তাদের সাথে আসে নি?”

“আমরা নিরিবিলি একটা পথের উপর থাকি। লাভিয়া যখন এলো আমি তখন সিটিং রুমে ব’সে কফি খাচ্ছিলাম। তাকে দৌড়ে আসতে শুনেছি। জানালার কাছে গিয়ে আমি একটা ট্যাক্সিকে চলে যেতে দেখেছি। সে ট্যাক্সিতে ক’রে এসেছে। তাকে অনুসরণ করা হয়েছে, বুঝলে।”

“সে কখন বাড়ি থেকে বের হয়েছে?”

“বের হয় নি, এখনও বাড়িতে আছে আর লোকগুলোও বাইরে অপেক্ষা করছে।”

“কি রকম গাড়িতে আছে তারা?”

“সিঁতরো। ধূসর রঙের। লাইসেন্স প্লেটের প্রথম তিনটি অক্ষর হলো এন.ওয়াই.আর।”

“পাখিরা আকাশে উড়ছে, একটা কনট্যাক্টকে অনুসরণ করা হচ্ছে। পাখিগুলো এলো কোত্থেকে?”

“বুঝলাম না, কি বললে?”

জেসন মাথা ঝাঁকালো। “আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মনে কিছু করবেন না। লাভিয়া চলে যাবার আগেই আমি সেখানে যাবার চেষ্টা করবো। আপনি আমাকে যতোটুকু সম্ভব সাহায্য করার করেন। আপনার বউকে বলেন তার সাথে আপনার কয়েক মিনিট কথা বলতে হবে। তার পুরনো বন্ধুকে আরো কিছুক্ষণ থাকতে বাধ্য করুন। যেকোনো কিছু বলুন। তাকে চলে যেতে দেবেন না। এটা নিশ্চিত করুন।”

“আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো।”

বর্ন ফোনটা রেখে মেরির দিকে তাকালো। “এটা কাজ করছে। তারা একে অন্যকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে। লাভিয়া পার্ক মশিউ’তে গেছে আর তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে।”

“আকাশে পাখি উড়ছে,” বললো মেরি। “এ দিয়ে তুমি কি বুঝিয়েছো?”

“আমি জানি না। এটা খুব একটা গুরুত্বপুর্ণ নয়। হাতে এখন সময় নেই।”

“আমার মনে হয়, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেসন।”

“এখন নয়।” বর্ন চেয়ার থেকে তার কোট আর টুপিটা তুলে নিলো। সে ওগুলো পরে ব্যুরোর ড্রয়ার খুলে অস্ত্রটা হাতে নিয়ে নিলো। অস্ত্রটার দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো। স্মরণ করলো। ছবিগুলো আবার ভেসে এলো তার মনের পর্দায়। জুরিখ। ব্যানহফস্ট্রাস এবং ক্যারিলিয়ন দুলাক; ড্রেই এলপেনহসার লাওয়েনস্ট্রাস। স্টেপডেকস্ট্রাসের নোংরা বোর্ডিং-হাউজ। অস্ত্রটা এসবেরই প্রতীক। এসবের জন্যে জুরিখে তার জীবনটা প্রায় খোয়াতে বসেছিলো সে।

কিন্তু এটা প্যারিস। জুরিখে যা শুরু হয়েছে সেটা এখনও চলছে।

কার্লোসকে খুঁজে বের করো। কার্লোসকে ফাঁদে ফেলো। কেইন হলো চার্লি। আর ডেল্টা হলো কেইন।

ভূয়া। তোমার নিকুচি করি, ভূয়া!

ট্রেডস্টোন খুঁজে বের করো। একটা মেসেজ খুঁজে বের করো। একজন লোককে খোঁজো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *