অধ্যায় ২৭
“ও এতো সুন্দর, আমাকে তার জন্যে কিছু একটা করতেই হবে,” টেলিফোনে মেরি চিৎকার ক’রে বললো। “ঐ চমৎকার যুবকটির জন্যেও। সে খুব সাহায্য করেছে। আমি আপনাকে বলছি পোশাকটা খুবই সাকসেস ফু হয়েছে। আমি খুবই কৃতজ্ঞ।”
“আপনার দেয়া বর্ণনা থেকেই করা হয়েছে, মাদাম,” লো ক্লাসিকের সুইচবোর্ডের এক সংস্কৃতিবান তরুণী জবাব দিলো। “আমি নিশ্চিত আপনি জেনাইন আর ক্লদের কথা বলছেন।”
“হ্যা, অবশ্যই। জেনাইন আর ক্লদ। আমার এখন মনে পড়েছে। আমি আমার ধন্যবাদ হিসেবে প্রতিটি নোট উপঢৌকন হিসেবে ড্রপ ক’রে দেবো। আপনি কি তাদের শেষ নামগুলো জানেন? মানে, খামে তো আর কেবল জেনাইন আর ক্লদ লিখলে হবে না। হবে কি? আপনি কি জ্যাকুলিনকে জিজ্ঞেস করবেন?”
“এর কোনো দরকার হবে না, মাদাম। আমি তাদেরকে চিনি। জেনাইন ডলবার্ট আর কন্দ ওরিয়েল।”
“জেনাইন ডলবার্ট আর ক্লদ ওরিয়েল,” মেরি নাম দুটো আবারো উচ্চারণ ক’রে জেসনের দিকে তাকালো। “জেনাইন তো ঐ চমৎকার পিয়ানোবাদককে বিয়ে করেছে, তাই না?”
“আমার মনে হয় না, মাদামোয়াজেল। ডলবার্ট অন্য কাউকে বিয়ে করেছে।”
“ও, তাই তো। আমি আসলে অন্য কারোর কথা ভাবছিলাম।”
“আমি মাদামের নামটা পুরোপুরি ধরতে পারি নি।”
“কি সব আবোল তাবোল বলছি। এখনও আপনাকে নামটাই বলা হয় নি!” মেরি ফোনটা একটু দূরে সরিয়ে চড়া গলায় বললো। “ডার্লিং, তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে! দরুণ। আমি লো ক্লাসিকের চমৎকার এক মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম…হ্যা, এক্ষুণি আসছি, ডালি। সে ফোনটা মুখের ধরে এনে বললো, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,” ফোনটা রেখে দিলো সে। “কেমন করলাম?”
“যদি কখনও ইকোনোমিক্স ছাড়ার কথা ভাবো তবে সেসে যেয়ো,” প্যারিসের ফোন বুক ঘাটতে ঘাটতে বললো জেসন। “আমি তোমার বলা প্রতিটি কথা বিশ্বাস করবো।”
“বর্ণনাগুলো কি ঠিক আছে?”
“একটা হাড্ডিসার এবং খুবই পাতলা কজি। পিয়ানোবাদক হিসেবে ঢিল মারাটা ঠিকই আছে।”
“আমার মনে হয়েছিলো সে যদি বিবাহিত হয়ে থাক তবে তো ফোনটা তার স্বামীর নামে থাকবে।”
“তা নয়,” জেসন বাঁধা দিয়ে বললো। “এই যে এখানে। ডলবার্ট, জেনাইন, রুই লোসেরাঁ।” জেসন ঠিকানাটা লিখে নিলো। “ওরিয়েল, ইংরেজি ‘ও’ অক্ষর, তাই না?”
“আমার তো তাই মনে হয়।” মেরি একটা সিগারেট ধরালো। “তুমি আসলেই তাদের বাড়িতে যাচ্ছো?”
বর্ন মাথা নেড়ে সায় দিলো। “তাদেরকে যদি আমি সেন অনরে থেকে তুলে নিই, কার্লোস সেটা দেখে ফেলতে পারে।
“বাকিদের কি করবে? লাভিয়া, বারগোয়াঁ, সুইচবোর্ডের লোকটা।”
“তাদেরকে আগামীকাল ধরবো। আজকে কেবল গ্রাউন্ডওয়েল।”
“কি?”
“তাদের সবাইকে কথা বলাতে হবে। চারপাশে কিছু কথা ভেসে বেড়াবে। ঠিক সময়ে ডলবার্ট আর ওরিয়েল পুরো স্টোরে সেটা ছড়িয়ে দেবে। আমি আরো দু’জনের সাথে আজ রাতে কথা বলবো। তারা লাভিয়া এবং সুইচবোর্ডের লোকটাকে ফোন করবে। আজ আমরা প্রথম শওয়েভটা দেবো, তারপরে দ্বিতীয়টা। আজ বিকেলেই জেনারেলের ফোনটা বেজে উঠতে শুরু করবে। সকালের মধ্যে আতঙ্কটা পূর্ণতা লাভ করবে।”
“দুটো প্রশ্ন,” মেরি বিছানা থেকে উঠে তার কাছে এসে বললো। “তুমি লো ক্লাসিকের স্টোর আওয়ারে কি ক’রে ঐ দু’জন ক্লার্ককে ধরবে? আর আজ রাতে তুমি কাদেরকে ধরবে?”
“কেউ ডিপফ্রিজে বসবাস করে না,” বর্ন হাত ঘড়িটা দেখে জবাব দিলো। “বিশেষ ক’রে ফ্যাশন হাউজগুলোতে। এখন ১১টা ১৫ বাজে; আমি ডলবার্টের এপার্টমেন্টে বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবো। ওখানকার সুপারিন্টেন্ডকে দিয়ে ফোন করিয়ে বলবো সে যেনো এক্ষুণি বাড়িতে চলে আসে। খুবই জরুরি এবং ব্যক্তিগত একটা সমস্যা হয়েছে, তাকে এসেই সেটা সামলাতে হবে।”
“কি সমস্যা?”
“আমি জানি না, কিন্তু সমস্যা কার নেই, বলো?”
“ওরিয়েলের সাথেও একই জিনিস করবে?”
“সম্ভবত, এমনকি তার চাইতেও কার্যকরী কিছু।”
“তুমি আসলেই একটা চিজ, জেসন।”
“আমি খুবই সিরিয়াস,” বর্ন বললো। সে এখনও ফোনবুকে নাম খুঁজে যাচ্ছে। এক জায়গায় এসে থেমে গিয়ে বললো, “এই তো সে। ওরিয়েল, ক্লদ গিসেল। কোনো মন্তব্য নেই। রুই রেসিন। আমি তিনটার মধ্যে তাকে ধরতে পারবো। আমি তার কাছ থেকে চলে আসতেই সে সেন অনরে’তে চলে যাবে। ওখানে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করবে।”
“বাকি দু’জনের কি করবে? তারা কারা?”
“আমি হয় ওরিয়েল নয়তো ডলবার্টের কাছ থেকে অথবা দু’জনের কাছ থেকেই নাম দুটো নেবো। তারা সেটা জানবে না। কিন্তু সেটা দিয়েই আমি দ্বিতীয় শওয়েভটা দেবো।”
.
জেসন রুই লোসেরাঁ’র প্রবেশপথের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। জেনাইন ডলবার্টের ছোট্ট এপার্টমেন্টের দরজা থেকে মাত্র পনেরো ফিট দূরে সেটা। কিছুক্ষণ আগে একজন সুপারিন্টেন্ড ডলবার্টের অফিসে ফোন ক’রে জানিয়েছে লিমোজিনে ক’রে এক লোক এসে দু’বার তার কথা জিজ্ঞেস ক’রে গেছে। সে আবারো আসবে। সে যদি আসে তো সুপারিন্টেন্ড কি করবে?
একটা কালো ট্যাক্সি এসে প্রবেশপথের সামনে থামলে হাড্ডিসার জেনাইন ডলবার্ট প্রায় লাফিয়েই গাড়ি থেকে নামলো। হরবর ক’রে দরজার সামনে এগোতেই জেসন তার পথ রোধ করলো।
“খুব জলদি দেখি এসে পড়লেন,” সে কথাটা বলেই তার বাহুটা ধরলো। “আপনাকে আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ঐ দিন আপনি খুব সাহায্য করেছিলেন।”
জেনাইন ডলবার্ট তার দিকে চেয়ে রইলো। তার ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে আছে, মনে করার চেষ্টা করছে, তারপর বিস্মিত হয়ে বললো, “আপনি। আমেরিকান লোকটা না,” ইংরেজিতেই বললো। “মঁসিয়ে বৃগস্, তাই না? আপনিই কি—”
“আমি আমার ড্রাইভারকে বলেছি এক ঘণ্টার জন্যে কোথাও থেকে ঘুরে
আসতে। আমি আপনার সাথে একান্তে দেখা করতে চেয়েছিলাম।
“আমার সাথে? আমার সাথে আপনার কি কাজ থাকতে পারে?”
“আপনি কি জানেন না? তাহলে এখানে কেন এভাবে ছুটে এলেন?”
“আপনি আজুর হাউজ থেকে এসেছেন না?” সে সতর্কভাবে জানতে চাইলো। “হতে পারে।” বর্ন তার হাতে একটু জোরে চাপ দিলো। “আর?”
“আমি যা দেবো ব’লে কথা দিয়েছিলাম তা দিয়ে দেবো। এর চেয়ে বেশি কিছু না, আমরা এ ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম।”
“আপনি কি নিশ্চিত?”
“বোকার মতো বলবেন না! আপনি প্যারিসের ফ্যাশন হাউজগুলো চেনেন না। তারা একে অন্যের ব্যাপারে আজেবাজে কথা বলে, আপনার স্টুডিওতে নোংরা সব মন্তব্য করবে। সিজন আসার আগেই, লো ক্লাসিকে বারগোয়ার ডিজাইনগুলো আসার আগেই আপনার শপে প্রায় অর্ধেক ডিজাইন চলে যায়। আমি আর লো ক্লাসিকে কতো দিন থাকতে পারবো ব’লে মনে করেন? আমি লাভিয়ার দুই নাম্বার মেয়ে। তার অফিসে ঢুকতে পারে যে কয়জন আমি তাদেরই একজন। আপনি আমাকে আপনার লস অ্যাঞ্জেলেসের শপে দেখেশুনে রাখবেন, যেমনটি আপনি কথা দিয়েছেন।”
“আসুন একটু হাটি,” আলতো ক’রে তার হাতটা টেনে নিয়ে জেসন বললো। “আপনি ভুল করছেন, জেনাইন। আমি আজুর হাউজ ব’লে কখনও কোনো কিছুর নাম শুনি নি। আর কারোর ডিজাইন চুরি করার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই। আমার খালি দরকার কিছু তথ্য।”
“হায় ঈশ্বর…”
“হাটতে থাকুন।” বর্ন এবার তার হাতটা শক্ত ক’রে ধরলো। “আমি বললাম না, আপনার সাথে আমার কথা আছে।
“কিসের ব্যাপারে? আপনি আমার কাছ থেকে কি চান? আপনি আমার নামটা জানলেন কি ক’রে?” কথাগুলো এক নাগারে বের হয়ে এলো। “আমি আগেভাগে লাঞ্চ-আওয়ারে বের হয়ে গেছি, আমাকে এক্ষুণি ফিরে যেতে হবে। আজকে আমাদের অনেক ব্যস্ততা। প্লিজ, আপনি আমার হাতে ব্যথা দিচ্ছেন।”
“দুঃখিত।”
“আমি যা বলেছি সেটা বোকার মতো হয়ে গেছে। পুরোটাই মিথ্যে। ওখানে আমরা অনেক গুজব শুনি। আমি আপনাকে পরীক্ষা ক’রে দেখছিলাম। আমি আসলেই সেটা করছিলাম। আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম!”
“আপনি খুব সহজেই বোঝাতে পারেন দেখছি। ঠিক আছে, আপনার কথা মেনে নিচ্ছি।”
“আমি লো ক্লাসিকের কাছে সৎ আছি। আমি সব সময়ই সৎ ছিলাম।”
“এটা তো খুবই ভালো একটা গুন, জেনাইন। আমি সততাকে শ্রদ্ধা করি। আমি ঐদিন আপনাকে বলছিলাম…তার নামটা যেনো কি?…সুইচবোর্ডের সেই চমৎকার লোকটা। তার নামটা কি? আমি ভুলে গেছি।”
“ফিলিপ,” সেক্সের মেয়েটা বললো। তার চোখেমুখে আতঙ্ক। “ফিলিপ দাঁজু।”
“ঠিক তাই। ধন্যবাদ আপনাকে।” তারা দুটো ভবনের মাঝখানে একটা সরু গলিতে এসে পড়লে জেসন তাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। “একটু ভেতরে যাই। ঘাবড়াবেন না। খুব দেরি হবে না আপনার। আমি কেবল কয়েক মিনিট সময় নেবো আপনার কাছ থেকে।” তারা দশ কদম ভেতরে চলে গেলে বর্ন থামলো। জেনাইন ডলবার্ট ইটের দেয়ালে পিঠ ঠেকালো।
“সিগারেট?” পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের ক’রে জেসন বললো।
“ধন্যবাদ আপনাকে।”
সে তার সিগারেটটা ধরিয়ে দিলো। লক্ষ্য করলো মেয়েটার হাত কাঁপছে। “রিলাক্স হোন।”
“না, মানে, ঠিক আছে। আপনি আমার কাছ থেকে কি চান, মঁসিয়ে বৃগস্?”
“শুরুতেই বলে রাখছি, নামটা বৃগস্ নয়। আপনার সেটা জানা উচিত!”
“কেন আমি জানবো। আমার জানার দরকার নেই।”
“আমি নিশ্চিত লাভিয়ার নাম্বার ওয়ান মেয়েটা আপনাকে কথাটা বলেছে।”
“মনিকা?”
“শেষ নামটা ব্যবহার করুন। নির্দিষ্ট ক’রে বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন।”
“ব্রায়াল মনিকা,” জেনাইন বললো ভুরু তুলে। “সে কি আপনাকে চেনে?”
“কথাটা তাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন না?”
“ঠিক আছে, তাকেই করবো। এখন বলুন ব্যাপারটা কি?”
জেসন মাথা ঝাঁকালো। “আপনি আসলেই জানেন না, তাই না? লো ক্লাসিকের তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী আমাদের সাথে কাজ করে আর সবচাইতে জাদরেল একজন কিছুই জানে না। এমন কি সে যোগাযোগও করে না। অবশ্য, কেউ হয়তো আপনাকে জানানোটা ঝুঁকিপূর্ণ ব’লে মনে করেছে, তাই জানায় নি। এরকম হয়ে থাকে।”
“হয়েছে কি? কিসের ঝুঁকি? আপনি কে?”
“এখন আর সময় নেই। বাকিরা আপনাকে জানিয়ে দেবে। আমি এখানে এসেছি, কারণ আমরা আপনার কাছ থেকে কখনও কোনো রিপোর্ট পাই নি। যদিও আপনিই সব বড় বড় কাস্টমারদের সাথে কথা বলে থাকেন সারাদিন।”
“আপনি পরিস্কার ক’রে বলুন তো, মঁসিয়ে।”
“ধরা যাক আমি একটি আমেরিকান, ফরাসি, ইংরেজ, ডাচ লোকদের গ্রুপের মুখপাত্র—এইমাত্র বলা প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক আর সামরিক লোকদেরকে হত্যা করেছে এমন এক খুনিকে ধরার জন্যে আমরা জাল গুটিয়ে এনেছি।”
“হত্যা? সামরিক, রাজনীতিক…” জেনাইনের মুখটা হা হয়ে গেলো। তার সিগারেটের ছাই ভেঙে পড়ে গেলো তার আড়ষ্ট হাতের উপর। “এসব কি? আপনি কি বলছেন? আমি এসব কিছুই শুনি নি!”
“আমি কেবল ক্ষমা চাইতে পারি,” বর্ন নরম কণ্ঠে বেশ আন্তরিকভাবে বললো। “কয়েক সপ্তাহ আগেই আপনার যোগাযোগ করা উচিৎ ছিলো। এটা আমার আগের লোকটার একটা ভুল। আমি দুঃখিত। এটা অবশ্যই আপনার কাছে একেবারেই অভাবনীয় ঠেকছে।”
“অবশ্যই তাই, মঁসিয়ে,” সেলস্ ক্লার্ক ফিসফিস্ ক’রে বললো। “আপনি যেসব কথা বলছেন আমার মাথায় সেসব কিছুই ঢুকছে না।”
“তবে এখন আমি বুঝতে পেরেছি,” জেসন বললো। “আপনার কাছ থেকে কারো সম্পর্কে কোনো কথা শোনা যাবে না। এবার এটা পরিস্কার।”
“এটা মোটেও পরিস্কার নয়।”
“আমরা কার্লোর্সকে প্রায় ধরে ফেলার পথে। ঐ খুনিটার নাম কার্লোস, বুঝলেন।”
“কার্লোস?” ডলবার্টের হাত থেকে সিগারেট পড়ে গেলো। শক্ দেয়া হয়ে গেছে।
“সে আপনাদের নিয়মিত একজন কাস্টমার। এ ব্যাপারে বেশ প্রমাণ আছে। আমরা সম্ভাবনাগুলো আট জনে নামিয়ে এনেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফাঁদটা পাতা হবে। আমারা সবধরণের পূর্ব সতর্কতা নিয়েছি।”
“পূর্ব সতর্কতা…?”
“সব সময়ই তো জিম্মি করার একটা বিপদ থাকে। আমরা এটার সবই জানি। আমরা অনুমাণ করছি গোলাগুলি হবে। কিন্তু সেটা খুব সীমিত আকারে রাখা হবে তবে আসল সমস্যা হলো কার্লোস নিজেই। সে প্রতীজ্ঞা করেছে কখনও জীবিত অবস্থায় ধরা দেবে না। সে শরীরে বোমা নিয়ে পথে বের হয়। সেটাও হয়তে আমরা সামলাতে পারবো। আমাদের দক্ষ বন্দুকবাজরা ঘটনাস্থলেই থাকবে মাথায় একটা গুলি করলেই সব শেষ হয়ে যাবে।”
“উনে সুয়েল বোলে…”
আচমকা বর্ন তার হাতঘড়িটা দেখলো। “আমি আপনার যথেষ্ট সময় নিয়ে ফেলেছি। আপনাকে শপে ফিরে যেতে হবে, আমাকেও আমার পোস্টে যেতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি আমাকে চেনেন না। আমি যদি লো ক্লাসিকে আসি তবে আমাকে একজন ধনী কাস্টমার হিসেবেই দেখবেন। কিন্তু আপনি যদি এমন কাউকে দেখেন, যে আমাদের টার্গেট ব’লে আপনার কাছে মনে হচ্ছে তখন সময় নষ্ট না ক’রে আমাকে বলবেন। আবারো বলছি, আমি এসবের জন্যে দুঃখিত যোগাযোগ ভেঙে যাওয়ায় এটা হয়েছে। এরকমটি হয়ে থাকে।”
“উনে রাপচার…?”
জেসন মাথা নেড়ে সায় দিয়ে গলি থেকে বের হয়ে গেলো। থেমে পেছন ফিরে তাকিয়ে জেনাইনের দিকে তাকালো সে। নিশ্চল হয়ে দেয়ালে সেঁটে আছে সে। যেনো শক্টা এখনও হজম করতে পারছে না।
.
ফিলিপ দাঁজু। নামটা তার কাছে কোনো অর্থই বহন করে না, কিন্তু বর্ন সেটা না ভেবে পারলো না। বার বার আওড়াতে লাগলো সেটা, তার স্মৃতিতে কোনো ছবি ভেসে ওঠে কিনা চেষ্টা করলো…ফিলিপ দাজু। কোনো কিছুই আসছে না। তারপরও কিছু একটা জেসনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পেটে একটা গিট পাকিয়ে মাংসপেশীগুলো আড়ষ্ট হয়ে গেলো।
রুই রেসিন-এর একটি কফি শপের জানালার পাশে সে ব’সে আছে। রাস্তার অপর দিকে পুরনো একটি ভবন থেকে ক্লদ ওরিয়েল বের হয়ে আসলেই সে এখান থেকে উঠে বের হয়ে যাবে ব’লে প্রস্তত হয়ে আছে। তার ঘরটা পাঁচ তলায়। সেই ফ্ল্যাটে সে আরো দু’জন লোকের সাথে থাকে সে। একটা ভাঙাচোড়া সিঁড়ি দিয়েই কেবল সেখানে যাওয়া যায়। সে যখন এসে পৌঁছাবে, বর্ন নিশ্চত সে হাটবে না।
ক্লদ ওরিয়েল জ্যাকুলিন হাভিয়ারের সাথে কথা বলার সময় দাঁতবিহীন ল্যান্ডলেডি ফোন ক’রে তাকে জানিয়েছে তার পাঁচ তলার ঘরে ফার্নিচার ভাঙচুর চলছে। হয় সে বিশ মিনিটের মধ্যে এসে এটা থামাবে নয়তো স্থানীয় পুলিশ জঁদারেমেকে ডাকা হবে।
পনেরো মিনিট পর হাজির হলো সে। তার পিয়েরে কাদোয়া সুটটা বাতাসে উড়ছে। লোকজনের ভীড় এড়িয়ে মেট্রো এক্সিট দিয়ে দৌড়ে আসছে সে।
জেসন কফি শপ থেকে বের হয়ে রাস্তাটা পার হয়ে ভাঙা সিঁড়িটা দিয়ে দ্রুত উঠে গেলো। চার তলায় পৌঁছাতেই সে ওপর তলা থেকে দরজায় আঘাত করার শব্দটা শুনতে পেলো।
“উভরেজ! উভরেজ! ভিতে, নম দ্য দিউ!” ওরিয়েল থেমে গেলো।
বর্ন সন্তর্পনে বাকি ধাপগুলো ডিঙিয়ে আরেকটু উপরে উঠে গেলে রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ওরিয়েলকে দেখতে পেলো। ক্লার্কের দূর্বল শরীরটা দরজায় সেঁটে আছে। তার হাত দুটো দু’দিকে ছড়ানো। সে কাঠের দরজায় কান পেতে রয়েছে। জেসন তার পেছনে এসে আমলাতান্ত্রিক ফরাসিতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “সুরেত! যেখানে আছো সেখানেই থাকো। অযাচিত কিছু যাতে না হয়, বুঝলে। আমরা তোমাকে এবং তোমার বন্ধুদেরকে অনেক দিনে থেকেই নজরদারী ক’রে আসছি। আমরা ডার্করুমের ব্যাপারটা জানি।”
“না!” ওরিয়েল চিৎকার ক’রে বললো। “তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কসম খেয়ে বলছি! ডার্করুম?”
বর্ন তার হাতটা তুললো। “আস্তে। চিৎকার করবে না!”
সে সঙ্গে সঙ্গে তার কথা মতো কাজ করলো। রেলিংয়ের দিকে ঝুঁকে নিচের দিকে তাকালো। “আপনি আমাকে এতে জড়াতে পারেন না!” সেলস্ ক্লার্ক বলতে লাগলো। “আমি জড়িত নই। আমি তাদেরকে বার বার বলেছি এসব বাদ দিতে! একদিন তারা নিজেদেরকেই খুন করবে। ড্রাগ হলো গর্দভদের জন্যে! হায় ঈশ্বর, কোনো সাড়া শব্দ দেখি হচ্ছে না। মনে হয় তারা মরে গেছে!”
জেসন ওরিয়েলের খুব কাছে এসে হাত তুললো। “বললাম না চুপ থাকতে, “ সে নিচু কণ্ঠে কর্কশভাবে বললো। “ভেতরে ঢোকো, চুপ থাকো! তা না হলে নিচের ঐ বুড়িটারই বেশি লাভ হবে।”
সেলস্ ক্লার্ক নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো। “কি?”
“তোমার কাছে চাবি আছে,” বর্ন বললো। “দরজা খুলে ভেতরে ঢোকো।”
“ভেতর থেকে আঁটকানো,” ওরিয়েল জবাব দিলো। “এরকম সময় এটা সব সমই আঁটকানো থাকে।”
“বোকা কোথাকার। দরজা খোলো। জলদি!”
ভীত খোরগোশের মতো ওরিয়েল পকেট হাতরাতে হাতরাতে চাবিটা খুঁজে পেলো। সে দরজাটা খুলে এমন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো যেনো ঘরের ভেতরে লাশ পড়ে রয়েছে। বর্ন তাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ ক’রে দিলো। ফ্ল্যাটের ভেতরটা একেবারেই আলাদা। বড়সড় একটা লিভিংরুম। দামি আসবাব আর লাল-হলুদ রঙের ভেলভেটের কুশন সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এটা গোবরে পদ্মফুল। যৌনতার কাজে ব্যবহৃত একটা লিভিংরুম।
“আমার হাতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় আছে,” জেসন বললো। “কাজের কথা ছাড়া আর কিছু নয়।”
“কাজের কথা?” ওরিয়েল জানতে চাইলো। তার ভাবসাব প্যারালাইজ রোগীর মতো। “এটা…এটা ডার্করুম? কিসের ডার্করুম?”
“ওটার কথা বাদ দাও। কাজের কথায় আসি।”
“কিসের কাজ?”
“আমরা জুরিখ থেকে একটা খবর পেয়েছি, আমরা চাই তুমি এটা তোমার বান্ধবী লাভিয়াকে পৌঁছে দেবে।”
“মাদাম জ্যাকুলিন? আমার বান্ধবী?”
“আমরা টেলিফোনকে বিশ্বাস করি না।”
“কিসের ফোন? খবর? কি খবর?”
“কার্লোস ঠিকই বলেছে।”
“কার্লোস? কার্লোস কে?”
“গুপ্তঘাতক।”
কুদ ওরিয়েল চিৎকার ক’রে উঠলো। মুখে হাত চাপা দিয়ে সে বললো, “আপনি বলছেন কি?”
“আস্তে!”
“আপনি এসব কি বলছেন আমাকে?”
তুমি হলে পাঁচ নাম্বার। আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি।”
“পাঁচ কি? কিসের পাঁচ?”
“কালোর্সকে জাল ভেদ ক’রে পালাতে সাহায্য করার জন্যে। তারা ঘিরে ফেলছে। আগামীকাল, পরের দিন, সম্ভবত তার পরের দিন। তারা শপটা ঘেরাও করবে, প্রতি দশ ফিট অন্তর অন্তর দক্ষ বন্দুকবাজ থাকবে। ক্রশফায়ারটা হবে প্রাণঘাতি। সে যদি ভেতরে থাকে তবে ম্যাসাকার হয়ে যাবে। তোমরাও। তোমাদের সবাই, মারা পড়বে।”
ওরিয়েল আবারো চিৎকার করলো। “আপনি কি চুপ করবেন! আমি জানি না আপনি এসব কি বলছেন! আপনি একজন উন্মাদ। আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না—আমি কিছুই শুনি নি। কালোর্স, ক্রশফায়ার… ম্যাসাকার! হায় ঈশ্বর, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে…আমার বাতাস দরকার!”
“তুমি টাকা পাবে। অনেক টাকা, বুঝলে। লাভিয়া তোমাকে ধন্যবাদ দেবে। দাজঁও ধন্যবাদ দেবে তোমাকে।”
“দাঁজু? সে আমাকে ঘৃণা করে! সে আমাকে ময়ূর ব’লে ডাকে। সুযোগ পেলেই অপমান করে।”
“এটা তার ছদ্মবেশ, আসলে সে তোমার ভক্ত—তুমি জানো না। সে হলো ছয় নাম্বার।”
“এই সব নাম্বারগুলো কি? এইসব নাম্বার নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো!”
“আমরা তো কোনো নাম ব্যবহার করতে পারি না।”
“কারা পারে না?”
“আমরা যারা কার্লোসের জন্যে কাজ করি।”
ওরিয়েলের আঙুল দিয় রক্ত ঝরতেই সে আবারো কান ফাঁটা একটা চিৎকার দিলো। “আমি আর শুনবো না! আমি একজন টেইলর, একজন শিল্পী!”
“তুমি পাঁচ নাম্বার। আমরা যেমনটি বলবো তুমি তাই করবে, তা না হলে তুমি আর এই জীবনে এই রঙমহলটা আর দেখতে পাবে না।”
“অঁগহান!”
“চুপ করো! আমরা তোমার উপর খুশি। আমরা জানি তোমরা সবাই খুবই চাপের মধ্যে আছো। আসলে, আমরা বুককিপারকে বিশ্বাস করি না।”
“ত্রিগনোয়াঁ?”
“প্রথম নামটা কেবল বলবে। গোপনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ন।”
“পিয়েরে। সে খুবই জঘন্য। সে টেলিফোন কলগুলো সামলায়।”
“আমরা মনে করতাম সে ইন্টারপোলের হয়ে কাজ করে।”
“ইন্টারপোল?”
“যদি সে তাই হয়ে থাকে, তবে তুমি দশ বছর জেল খাটবে। তোমাকে জীবন্ত খেয়ে ফেলা হবে, ক্লদ।”
“অঁগহান!”
“চুপ করো! বারগোয়াঁকে কেবল জানিয়ে দিও আমরা কি ভাবছি। ত্রিগনোয়ার দিকে লক্ষ্য রাখবে। বিশেষ ক’রে আগামী দু’দিন। সে যদি কোনো কারণে স্টোর থেকে বের হয়, সাবধান হয়ে যাবে। তার মানে ফাঁদটা চারপাশ থেকে ঘিরে আসছে।” বর্ন দরজার দিকে গেলো, তার হাত পকেটে। “আমাকে ফিরে যেতে হবে, তোমাকেও। ছয় নাম্বারের মাধ্যমে এক নাম্বারকে আমার বলা কথাগুলো ব’লে দিও। কথাটা ছড়িয়ে দেয়া খুবই জরুরি।”
ওরিয়েল আবারো চিৎকার দিলো হিস্ট্রিয়াগ্রস্তের মতো। “নাম্বার! খালি নাম্বার! কিসের নাম্বার? আমি একজন শিল্পী, কোনো নাম্বার নয়!”
“তুমি ওখানে যতো দ্রুত সম্ভব চলে যাও, নইলে তোমার কোনো মুখ ব’লে কিছু থাকবে না। লাভিয়া, দাঁজু, বারগোয়ার কাছে যাও। জদি। তারপর অন্যদের কাছে।”
“অন্যদের আবার কি?”
“দুই নাম্বারকে জিজ্ঞেস কোরো।”
“দুই?”
“ডলবার্ট। জেনাইন ডলবার্ট।”
“জেনাইন। সেও?”
“ঠিক। সেও”
সেলস্ ক্লার্ক উদভ্রান্তের মতো হাত নেড়ে নেড়ে বললো, “এটা পাগলামী! আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না!”
“তোমার জীবনের মূল্য আছে, ক্লদ। আমি নিচের রাস্তায় অপেক্ষা করবো। ঠিক তিন মিনিট পরে এখান থেকে চলে যাবে। ফোনটা ব্যবহান কোরো না। সোজা লো ক্লাসিকে ফিরে যাও। তুমি যদি তিন মিনিট পরে না যাও আমি আবার ফিরে আসবো।” সে পকেট থেকে হাতটা বের করলে দেখা গেলো হাতে একটা পিস্তল। পিস্তলটা দেখেই ওরিয়েলের মুখ দিয়ে বুকের সমস্ত বাতাস বের হয়ে মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। বর্ন ঘুরে ঘর থেকে বের হয়ে দরজাটা বন্ধ ক’রে চলে গেলো।
.
বিছানার পাশে টেবিলের উপরে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। মেরি তার হাত ঘড়িতে তাকালো। ৮টা ১৫। কয়েক মুহূর্তের জন্যে তার মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলো। জেসন বলেছিলো সে তাকে ৯টা বাজে ফোন করবে। সন্ধ্যা নামার পরই লা টেরেস ছেড়ে সে ৭টার দিকে চলে গেছে মনিকা ব্রায়াল নামের এক সেলস্ ক্লার্ককে পাকড়াও করার জন্যে। শিডিউলটা একেবারেই হিসেব ক’রে করা। কেবল জরুরি প্রয়োজনেই সেটা বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। কিছু কি হয়েছে?
“এটা কি ৪২০ নাম্বার রুম?” ফোনে গভীর পুরুষ কণ্ঠটা জানতে চাইলো।
মেরির স্বস্তিটা ফিরে এলো। কণ্ঠটা আদেঁ ভিলিয়ার্সের। জেনারেল বিকেলের দিকে ফোন ক’রে জেসনকে বলতে বলেছে যে, লো ক্লাসিকে ভীতিটা বেশ ভালোমতোই ছড়িয়ে পড়েছে। দেড় ঘণ্টার মধ্যে তার বউকে ছয়বার ফোন করা হয়েছে। যখনই সে ফোনটা তুলে নিয়েছে সিরিয়াস কথাবার্তা হালকা রসিকতায় বদলে গেছে।
“হ্যা,” মেরি বললো। এটা ৪২০ নাম্বার।
“ক্ষমা করবে, আমরা এর আগে কথা বলি নি।”
“আমি জানি আপনি কে?”
“আমিও তোমার সম্পর্কে জানি। আমি কি তোমাকে একটা ধন্যবাদ দিতে পারি?”
“আমি বুঝেছি। আপনার ধন্যবাদ আমি গ্রহণ করলাম।”
“আসল কথায় আসি। আমি আমার অফিস থেকে ফোন করছি। আর অবশ্যই এটার কোনো এক্সটেনশন লাইন নেই। আমাদের দু’জনের বন্ধুকে বোলো, সংকটটা বাড়ছে। আমার বউ নিজের ঘরে আছে। বলছে তার শরীর খারপ। যদিও ফোনে তাকে বেশ সুস্থই মনে হচ্ছে। আমি ফোন তুললেই তারা সতর্ক হয়ে যাচ্ছে প্রতিবারই আমি ক্ষমা চেয়ে বলেছি আমি একটা ফোনের জন্যে অপেক্ষা করছি। সত্যি বলতে কি, আমার মনে হয় না আমার বউ আমার কথাটা বিশ্বাস করেছে। তবে সে আমাকে কোনো প্রশ্ন করার মতো অবস্থায় নেই। আমাদের দু’জনের মধ্যে এক ধরণের অকথিত লড়াই চলছে। এটা খুবই হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। ঈশ্বর যেনো আমাকে শক্তি দেন।”
“আমি কেবল আপনাকে বলবো উদ্দেশ্যের কথাটা স্মরণ রাখতে,” মেরি অনেকটা রেগেই বললো। “আপনার ছেলের কথাটা স্মরণ করুন
“হ্যা,” বৃদ্ধ শান্ত কণ্ঠে বললো। “আমার ছেলে। আর সেই বেশ্যাটা, যে দাবি করে তার স্মৃতিকে সে শ্রদ্ধা করে।”
“ঠিক আছে। আপনি আমাকে যা বললেন সেটা আমি আমাদের বন্ধুকে জানিয়ে দেবো। সে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই আপনাকে ফোন করবে।”
“প্লিজ,” ভিলিয়ার্স বাঁধা দিয়ে বললো। “আরো কিছু আছে। এজন্যেই আমি তোমাকে ফোন করেছি। দু দু’বার আমার যখন বউ ফোনে ছিলো তখন কণ্ঠটা আমার কাছে অর্থবহ ব’লে মনে হয়েছে। দ্বিতীয়টি আমি চিনতে পেরেছি। কণ্ঠটা শুনে আমার একটা চেহারা মনে পড়ে গিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। সে সেন অনরের সুইচবোর্ডে কাজ করে।”
“আমরা তার নামটা জানি। প্রথমজন কে?”
“সেটা খুবই অদ্ভুত। আমি কণ্ঠটা চিনি না। তবে কথাটা আমি বুঝতে পেরেছি। কণ্ঠটা খুবই অদ্ভুত, চাপা আর অনেকটা আদেশমূলক। কমান্ডটা আমাকে ভাবিয়েছে। সেই কণ্ঠটা আমার বউয়ের সাথে কোনো কথপোকথন করে নি। সেটা কেবল একটা অর্ডার করেছে। লাইনে আমি যেতেই সেটা বদলে যায়। তাড়াতাড়ি বিদায় ব’লে কেটে দেয়া হয়। তবে কথাটা আমি ঠিকই শুনেছি। কণ্ঠটা যেকোনো সৈনিকের জন্যেই সুপরিচিত। আমি কি পরিস্কার ক’রে বোঝাতে পেরেছি?”
“মনে হয়,” মেরি আস্তে ক’রে বললো। সে জানে বৃদ্ধ যদি বুঝতে পারে সে কি ভাবছে তবে সেটার যে চাপ তার উপর পড়বে তা সহ্য করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
“এটা নিশ্চিত করবেন, মাদামোয়াজেল,” জেনারেল বললো, “এটা কিলার পিগ,” ভিলিয়ার্স থেমে গেলো। তার নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তার পরের কথাগুলো এমন শোনালো যে, শক্তসামর্থ্য লোকটার কণ্ঠ অনেকটা ভঙ্গুর ব’লে মনে হলো। “সে…আমার বউকে…আদেশ করছে…” বৃদ্ধ সৈনিকের কণ্ঠটা আর্টকে গেলো। “ক্ষমা করবে। তোমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়ার কোনো অধিকার আমার নেই।”
“আপনার সেই অধিকার রয়েছে,” মেরি বললো, আচমকাই সে সতর্ক হয়ে উঠলো। “যা-ই ঘটেছে সেটা আপনাকে অনেক যন্ত্রণা দিচ্ছে কারণ কাউকে কথাট বলতে পারছেন না।”
“আমি তোমাকে বলছি, যদিও তোমাকে সেটা বলা ঠিক হচ্ছে না।”
“আমার খুব ইচ্ছে করছে আপনার সাথে কথা চালিয়ে যেতে। আমাদের একজন আপনার সাথে থাকুক সেটা চাইছি। কিন্তু তাতো আর সম্ভব নয়। আমি জানি আপনি সেটা বোঝেন। প্লিজ, নিজেকে ঠিক রাখুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন, আপনার সাথে আমাদের বন্ধুর কোনো সংযোগ যেনো প্রকাশ না হয়। প্রকাশ হলে আপনার জীবন বিপন্ন হবে।”
“আমার মনে হয় আমি ইতিমধ্যেই আমার জীবনটা হারিয়ে ফেলেছি।”
“সা সেন্ত এবসার্দ,” মেরি বেশ কড়া ক’রে বললো। যেনো বৃদ্ধের গালে একটা চড় বসিয়ে দেবার মতো। “ভূ এত উঁ সোলদাত! আরেতেজ কা ইমিদিয়েতেন!”
“সেস্ত লিনক্রইস্তিস কুই করিয়ে লো মোভোয়া এলেভিয়া। ভু আভেজ ঝুঁ রেসোয়াঁ।”
“অন দিত কুই ভু এত উঁ জোয়াঁ। জো লো কোয়া।”
লাইনে নিরবতা নেমে এলে মেরির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। ভিলিয়ার্স যখন আবর কথা বললো মেরির শ্বাসপ্রশ্বাস আবার সচল হলো।
“আমাদের দু’জনের বন্ধুটি খুবই ভাগ্যবান। তুমি একজন অসাধারণ মেয়ে।”
“মোটেও না। আমি কেবল চাই আমার বন্ধু আমার কাছে ফিরে আসুক। এতে অসাধারণ কোনো ব্যাপার নেই।”
“সম্ভবত তোমার কথাটা ঠিক নয়। তবে আমিও তোমার বন্ধু হতে চাই। তুমি একজন বৃদ্ধকে মনে করিয়ে দিয়েছো সে কে আর কি। অথবা একসময় সে কি ছিলো। এবং আবারো তাকে সেরকম হতে হবে। আমি তোমাকে আবারো ধন্যবাদ দিচ্ছি।”
“আপনাকে স্বাগতম…বন্ধু।” মেরি ফোনটা রেখে দিলো। সে খুবই উদ্বিগ্ন বোধ করছে এখন। ভিলিয়ার্স পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা মোকাবেলা করতে পারবে ব’লে তার মনে হচ্ছে না। সে যদি তা না পারে, খুনি জানবে তার লোকজন কতো গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে। সে লো ক্লাসিকের সবাইকে বলে দেবে প্যারিস ছেড়ে চলে যেতে উধাও হয়ে যেতে। অথবা সেন অনরে’তে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। ফলাফল একই।
যাই ঘটুক না কেন, কোনো জবাব, নিউইয়র্কের কোনো ঠিকানা পাওয়া যাবে না। কোনো মেসেজ’র মর্মবাণী উদ্ধার করা যাবে না। যে লোকটাকে সে ভালোবাসে সে আবারো ফিরে যাবে তার গোলকধাঁধায়। চলে যাবে তাকে ছেড়ে।