পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩

বর্ন আইডেন্টিটি – ২২

অধ্যায় ২২

ওয়াশিংটন ডিসির সিক্সটিস্থ স্ট্রটের জনাকীর্ণ হিলটন হোটেল এসে পৌঁছালো একে একে চারজন লোক। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা লিফটে ক’রে গেলো, নিজেদের গন্তব্যের দুয়েক তলা উপরে অথবা নিচে থামলো তারা। বাকি পথটুকু গেলো পায়ে হেটে। ডিসির বাইরে দেখা করার সময় তাদের নেই। সংকটটা একেবারেই অভাবনীয়। ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ানের বেঁচে থাকা কিছু লোক রয়ে গেছে। বাকিরা সবাই মৃত। নিউইয়র্কের নিরিবিলি শান্ত এক এলাকায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

দুটো মুখ পরিচিত। একজন আবার অনেক বেশি পরিচিত। প্রথমজন কোলোরাডোর বয়োবৃদ্ধ সিনেটর, দ্বিতীয়জন বৃগেডিয়ার জেনারেল আই.এ. ক্রফোর্ড —আরউইন আর্থার, সবার কাছে যে আয়রন আর্থার এ্যাজ্ নামে পরিচিত—আর্মি ইন্টেলিজেন্সের স্পোকম্যান এবং জি-টু ডাটা ব্যাংকের ডিফেন্ডার। বাকি দু’জন লোক একেবারেই অপরিচিত, কেবল তাদের জগতেই তারা পরিচিত। একজন মধ্যবয়সী নেভাল অফিসার, পঞ্চম নেভাল ডিস্ট্রিক্টের ইনফরমেশন অ্যাটাশি। চতুর্থ এবং শেষ লোকটি সিআইএ’র ছেচল্লিশ বছর বয়স্ক এক অফিসার, যে একটা লাঠির সাহায্যে চলাফেরা করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে তার পা’টা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। সেই সময় সে মেডুসা অপারেশনে একজন ছদ্মবেশি এজেন্ট ছিলো। তার নাম আলেকজান্ডার ককলিন।

ঘরে কোনো কনফারেন্স টেবিল নেই। এটা একটা সাধারণ মানের শোবার ঘর। দুটো বিছানা ছাড়াও একটা সোফা, দুটো চেয়ার এবং একটা কফি টেবিল আছে। এরকম একটি মিটিং করার জন্যে ঘরটা খুবই বেমানান। কোনো কম্পিউটার নেই, যোগাযোগের কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিও নেই যে, লন্ডন, প্যারিস অথবা ইস্তাম্বুলে মুহূর্তে যোগাযোগ করা যাবে। এটা একটা হোটেল রুম। আর এখানেই ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ানের গোপন মিটিংটা বসছে।

সিনেটর সোফার শেষপ্রান্তে বসলো, নেভাল অফিসার বসলো অন্যপ্রান্তে। ককলিন একটা চেয়ারে গুঁটিসুটি মেরে ব’সে লাঠিটা তার দু’পায়ের ফাঁকে রাখলো। বৃগেডিয়ার জেনারেল ক্রফোর্ড বসলো না, দাঁড়িয়ে রইলো। তার চেহারা আরক্তিম, চোয়াল প্রচণ্ড রাগে শক্ত হয়ে আছে।

“আমি প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছি,” বললো সিনেটর। চোখ দুটো ঘষে নিলো, সারা রাত না ঘুমানোর ফলে এখন বেশ ঘুম ঘুম লাগছে। “এটা আমাকে করতেই হোতো। আমরা আজ রাতে মিটিং করছি। আমাকে সবকিছু বলুন। আপনারা প্রত্যেকেই। আপনিই আগেই শুরু করেন, জেনারেল। এসব হচ্ছে কি?”

“মেজর ওয়েব তার গাড়িতে ওঠার কথা ছিলো ২৩০০ ঘণ্টায়, সেভেনটি সেকেন্ড এবং লেক্সিংটন স্টটের মোড়ে। সময়টা ঠিক করাই ছিলো। কিন্তু তিনি আর আসেন নি। ২৩৩০ ঘণ্টায় ড্রাইভার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে কারণ মেজরকে নিউ জার্সির এয়ারফিল্ডে যেতে হবে, দেরি করলে সেখানে যাওয়া যাবে না। ঠিকানাটা ড্রাইভারের মনে ছিলো—কারণ তাকে ঠিকানাটা ভুলে যেতে বলা হয়েছিলো—সে ওখানে গিয়ে দেখে দরজাটা খোলা। সিকিউরিটি বোল্টটা বন্ধ। ভেতরে ঢুকে সে ফয়ারে রক্ত আর সিঁড়িতে মহিলার লাশ পড়ে থাকতে দেখে। হলওয়ে দিয়ে অপারেশন রুমে গিয়ে বাকি মৃতদেহগুলো আবিস্কার করে সে।”

“ঐ লোকটা খুব দ্রুত একটা প্রোমোশন পাবার আশা করতে পারে,” নেভাল অফিসার বললো।

“আপনি এটা কেন বললেন?” সিনেটর জানতে চাইলো।

ক্রফোর্ড জবাব দিলো। “তার বুদ্ধিশুদ্ধি বেশ ভালো। সে সঙ্গে সঙ্গে পেন্টাগনে ফোন ক’রে ডামিস্টিক কভার্ট ট্রান্সমিশনে কথা বলার জন্যে চাপাচাপি করে। সে আমাকে ফোনে পাবার আগে কাউকে কিছু বলেও নি।”

“তাকে ওয়ার কলেজে দিয়ে দিন, আরউইন,” ককলিন মুখ বেঁকিয়ে বললো। “আপনার ওখানকার বেশিরভাগ ক্লাউনের চেয়ে সে অনেক বেশি মেধাবী।”

“এটা তো কোনো ঠাট্টা হলো না, ককলিন,” সিনেটর তিক্ত কণ্ঠে বললো, “বরং ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলছেন। বলে যান, জেনারেল।”

ক্রফোর্ড সিআইএ’র লোকটার সাথে দৃষ্টি বিনিময় করলো। “আমি নিউইয়র্কের পল ম্যাকলারেনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে ওখানে যাওয়ার আদেশ করেছি, বলেছি আমি পৌঁছানোর আগপর্যন্ত যেনো সে কিছু না করে। তারপর আমি ককলিন আর জর্জকে ফোন করে এখানে চলে আসি।”

“আমি ম্যানহাটনের ব্যুরোর প্রিন্ট টিমকে ডেকেছি,” ককলিন বললো। “ঐ টিমটাকে আমরা এর আগেও ব্যবহার করেছি। তাদেরকে বিশ্বাস করা যায়। আমি তাদেরকে বলি নি আমরা কি খুঁজছি, তবে তাদেরকে বলেছি জায়গাটা তন্ন তন্ন ক’রে খুঁজে দেখতে, তারা যা কিছুই পাক, আমাদেরকে সেটা দিতে।” সিআইএ’র লোকটা থেমে গেলো। হাতের লাঠিটা নেভাল অফিসারের দিকে ইঙ্গিত করলো সে। “তারপর জর্জ তাদেরকে সাইত্রিশটি নাম দিয়ে দেয়। সেসব নাম এফবিআই’র ফাইলে আছে। তারা এমন একটা নাম পেয়েছে আমরা যেটা কোনোভাবেই আশা করি নি, আমরা সেটা কামনাও করি নি…বিশ্বাসই হতে চায় না।”

“ডেল্টার নাম,” সিনেটর বললো।

“হ্যা,” নেভাল অফিসার একমত হয়ে বললো। “আমি যে নামগুলো তাদেরকে দিয়েছি সেগুলো এমন সব মানুষের যারা যতো দূরেই থাকুক, ট্রেডস্টোনের ঠিকানাটা জানে। এর মধ্যে আমাদের সবার নামও রয়েছে। ঘরটা খুঁজে কেবল মাত্র একটা জিনিসই পাওয়া গেছে। একটা ভাঙা ব্র্যান্ডির গ্লাস। কয়েকটা মাত্র টুকরো, তাও আবার ঘরের এক কোণে একটা পর্দার নিচে ছিলো। আঙুলের ছাপটা ঐসব টুকরোর মধ্যেই পাওয়া গেছে। তৃতীয় আর তর্জনীর, ডান হাতের।”

“আপনি একদম নিশ্চিত?” সিনেটর আস্তে ক’রে জিজ্ঞেস করলো।

“আঙুলের ছাপ কখনো মিথ্যে বলে না, স্যার,” অফিসার বললো। “ওগুলো ওখানে আছে। টুকরোগুলোতে এখনও ব্র্যান্ডি লেগে রয়েছে। এই ঘরের বাইরে, ডেল্টা হলো এমাত্র ব্যক্তি যে সেভেনটি ফার্স্ট স্ট্রটের ব্যাপারে জানে।”

“আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি? অন্যদের হয়তো কিছু বলার থাকতে পারে।”

“কোনো সম্ভাবনা নেই,” বৃগেডিয়ার জেনারেল বাঁধা দিয়ে বললো। “অ্যাবোট এটা কখনই প্রকাশ করতো না, আর এলিয়ট স্টিভেন্স ওখানে পৌঁছানোর পনেরো মিনিট আগে ঠিকানাটা জানতোই না। তার চেয়েও বড় কথা এটা সে করলে নিজের মৃত্যুই ডেকে আনতো।”

“মেজর ওয়েবের ব্যাপারটা কি?” সিনেটর জানতে চাইলো।

“মেজর,” ক্রফোর্ড জবাব দিলো, “তিনি কেনেডি এয়ারপোর্টে নামার পর পরই একমাত্র আমাকেই রেডিও ক’রে ঠিকানাটা জানিয়েছিলেন। আপনি তো জানেনই এটা হলো জি-টু ফ্রিকোয়েন্সির এবং অন্য কেউ এটা রিসিভ করতে পারে না। আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, উনিও প্রাণ হারিয়েছেন।”

“হ্যা, তাতো ঠিকই।” সিনেটর আবারো মাথা ঝুঁকালেন। “এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য। কেন?”

“আমাকে একটা যন্ত্রণাদায়ক বিষয় তুলতে হচ্ছে,” বৃগেডিয়ার জেনারেল ক্রফোর্ড বললো। “শুরুতে আমি ঐ প্রার্থীর ব্যাপারে অতোটা উৎসাহী ছিলাম না। আমি বুঝি ডেভিড বেশ যোগ্যই ছিলো, তার চিন্তাভাবনাটাও আমি বুঝতাম। তবে আপনাদের যদি স্মরণে থাকে তাহলে জানেন, সে আমার পছন্দের ছিলো না। আমি তাকে বেছে নিই নি।”

“আমি জানতাম না আমাদের কাছে এতো বেশি চয়েজ ছিলো,” সিনেটর বললো। “আমাদের একজন লোক ছিলো—একজন যোগ্য লোক—যে স্বেচ্ছায় একটি দীর্ঘমেয়াদী গোপন অপারেশনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জড়িত করেছিলো নিজেকে। এরকম কতোজন লোকের অস্তিত্ব আছে?”

“আমাদের আসলে আরো বেশি ভারসাম্যপূর্ণ একজনকে খুঁজে বের করা উচিত ছিলো,” বৃগেডিয়ার পাল্টা বললো। “এটা আমি সে সময় বলেও ছিলাম।”

“তখন বলেছিলেন,” ককলিন বললো, “আপনার নিজস্ব সংজ্ঞায় একজন ভারসাম্যপূর্ণ একজনের কথা যা আমি সেই সময়েই বলেছিলাম যে এটা হলো অচল একটি কথা।”

“আমরা দু’জনেই মেডুসা’তে ছিলাম, ককলিন,” ক্রফোর্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বললেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো, “আপনার অসাধারণ অর্ন্তদৃষ্টি নেই। ডেল্টার ফিল্ডের কাজকর্ম বিরামহীন এবং খোলামেলাভাবেই শত্রুভাবাপন্ন ছিলো। আপনার চেয়ে আমিই এটা বেশি ভালোভাবে অনুধাবন করেছিলাম।”

“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার এটা করার অধিকার ছিলো। আপনি যদি সায়গনে না থেকে বেশিরভাগ সময় ফিল্ডে থাকতেন তো ব্যাপারটা বুঝতেন।”

“এটা হয়তো আপনাকে অবাক করবে,” বৃগেডিয়ার বললো, “তবে আমি সায়গনের বড় বড় বোকামীগুলোকে ডিফেন্ড করছি না—কেউ সেটা করবে না। আমি এমন এক ধরণের আচরণের বর্ণনা করার চেষ্টা করছি যা সেভেনটি ফার্স্ট স্টুট-এর ঘটনার আগের রাতের একটা বিষয়ে নিয়ে যাবে।”

সিআইএ’র লোকটার চোখ ক্রফোর্ডের উপরে। সে মাথা নাড়তেই তার শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবটা উধাও হয়ে গেলো। “আমি জানি আপনার কথাটা ঠিক। দুঃখিত। এটাই হচ্ছে আসল কথা, তাই না? এটা আমার জন্যে সহজ ছিলো না। আমি ডেল্টার সাথে আধডজন সেকশনে কাজ করেছি, অ্যাবোটের চোখে মেডুসার কর্মকাণ্ড ধরার পড়াও অনেক আগে আমি তার সাথে নম পেনের স্টেশনে ছিলাম। নম পেনের পরে সে আর আগের মতো রইলো না। এজন্যে সে মেডুসাতে যোগ দিয়েছিলো। এজন্যেই সে স্বেচ্ছায় কেইন হতে চেয়েছিলো।”

সোফায় বসা সিনেটর সামনের দিকে ঝুঁকে এলো। “আমি এটা শুনেছি, তবুও আমাকে আবার বলুন। প্রেসিডেন্টকে সব জানতে হবে।”

“মেকং নদীর পাই-এ তার বউ আর দুই সন্তান খুন হয়, বিমানের বোমা বর্ষণে—কেউ জানে না কোন্ পক্ষ এটা করেছে—পরিচয়টা কখনও উন্মোচিত হয় নি। সে যুদ্ধকে ঘৃণা করতো, এসবের সাথে জড়িত সবাইকে ঘৃণা করতো। সে একেবারে উন্মত্ত হয়ে যায়।” ককলিন একটু থেমে বৃগেডিায়ারের দিকে তাকালো। “আমার মনে হয় আপনার কথাই ঠিক, জেনারেল। সে আবারো উন্মত্ত হয়ে গেছে। এটা তার-ই কাজ।”

“কোটা?” সিনেটর কর্কশ কণ্ঠে জানতে চাইলেন।

“বিস্ফোরণটা,” ককলিন বললো। “ঐ বিস্ফোরণটা। সে তার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। তার ঘৃণা তাকে পেয়ে বসেছিলো। এটা খুব কঠিন নয়। আপনাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। সে ঐসব লোককে, সেই মহিলাকে খুন করেছে। একেবারে উন্মত্ত হয়ে গেছে সে। তাদের কেউই এটা প্রত্যাশা করে নি। সম্ভবত, উপর তলায় থাকা মহিলাটি ছাড়া। সে হয়তো চিৎকার চেঁচামেচিটা শুনতে পেয়েছিলো। সে আর ডেল্টা নয়। আমরা একটা মিথ তৈরি করেছিলাম যার নাম কেইন। এখন আর সে কোনো মিথ নয়। এখন সে সত্যি হয়ে উঠেছে।”

“এতো মাস পরে…” সিনেটর হেলান দিয়ে বললো। তার কথাটা মিইয়ে গেলো। “সে কেন ফিরে এলো? কোত্থেকে ফিরে এলো?”

“জুরিখ থেকে,” ক্রফোর্ড জবাবে বললো। “ওয়েব জুরিখে ছিলো। আর আমার মনে হয় সে-ই একমাত্র লোক যে তাকে নিয়ে এসেছে। ‘কেন’, সেটা আমরা হয়তো কোনো দিনই জানতে পারবো না।”

“সে জানে না আমরা কারা,” সিনেটর প্রতিবাদ ক’রে বললো। “তার একমাত্র যোগাযোগ ছিলো ঐ ইয়াখটম্যান, তার বউ আর ডেভিড অ্যাবোট।”

“আর অবশ্যই ওয়েব,” জেনারেল কথার সাথে যোগ করলো।

“এটা কোনো ব্যাপার নয়,” ককলিন বললো। “সে জানে একটা বোর্ড আছে। ওয়েব হয়তো তাকে বলে থাকবে আমরা কারা কারা আছি তাতে। আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন রয়েছে —–ছয় মাস পর কয়েক মিলিয়ন ডলার। ডেল্টা এটাকে যথার্থ সমাধান বলেই বিবেচনা করবে। সে আমাদেরকে ঘায়েল ক’রে উধাও হয়ে যেতে পারে। কোনো চিহ্ন থাকবে না।”

“আপনি এতোটা নিশ্চিত হচ্ছেন কেন?”

“কারণ, প্রথমত সে ঐ হত্যাগুলো করেছে,” ইন্টেলিজেন্সের লোকটা জবাবে বললো। তার কণ্ঠটা এখন উঁচুতে উঠে গেছে। “আমরা তার আঙুলের ছাপ পাওয়া ব্র্যান্ডির গ্লাসের টুকরো পেয়েছি। দ্বিতীয়ত, এটা একটা ক্লাসিক ফাঁদ, শত শত বৈচিত্র রয়েছে তাতে।”

“আপনি কি এটা বুঝিয়ে বলবেন?”

“আপনি চুপ থাকবেন,” জেনারেল আর কথা না বলে থাকতে পারলো না। ককলিনের দিকে তাকালো সে। “যতোক্ষণ না আপনার শত্রু এটা সহ্য করতে পারে, নিজেকে উন্মোচিত করে।”

“আমরা তার শত্রু?”

“এখন তো আর এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না,” নেভাল অফিসার বললো। “কারণ যাই হোক না কেন, ডেল্টা আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এটা আগেও ঘটেছে—ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এটা সচরাচর হয়ে থাকে না। আমরা জানি এখন কি করতে হবে।”

সিনেটর আরেকবার সামনের দিকে ঝুঁকে এলো। “আপনি কি করবেন?”

“তার ছবি কখনও ছড়িয়ে দেয়া হয় নি,” ক্রফোর্ড বললো। “আমরা এখন সেটা ছড়িয়ে দেবো। সব স্টেশনে, লিসেনিং পোস্টে, আমাদের সব ইনফর্মার আর সোর্সদের কাছে। সে কোথাও না কোথাও যাবে। সে যে সব জায়গা চেনে সেসব জায়গা থেকেই শুরু করবে। অন্য একটা পরিচয় কিনতে চাইবে। সে টাকা খরচ করবে। তাকে পাওয়া যাবেই। যখনই তাকে পাওয়া যাবে, পরিস্কার অর্ডার দেয়া হবে।”

“আপনি তাকে তখন নিয়ে আসবেন?”

“আমরা তাকে খুন করবো,” ককলিন সোজা বললো। “আপনি ডেল্টার মতো কোনো লোককে জীবিত ধ’রে আনতে পারেন না। অন্যকোনো সরকার সেটা করুক সেই ঝুঁকিও আপনি নেবেন না। বিশেষ ক’রে সে কি জানে, তা যদি আপনার মনে থাকে।”

“আমি প্রেসিডেন্টকে সেটা বলতে পারবো না। আইন-কানুন বলেও তো কিছু আছে।”

“ডেল্টার জন্যে নয়,” এজেন্ট বললো। “সে আইনের উর্ধ্বে। পরিত্রাণের উর্ধ্বে।”

“পরিত্রাণের উর্ধ্বে—”  

“ঠিক তাই, সিনেটর,” জেনারেল বললো। “পরিত্রাণের উর্ধ্বে। আমার মনে হয় কথাটার অর্থ আপনি জানেন। আপনি ঠিক করবেন প্রেসিডেন্টের কাছে এটা বলবেন, নাকি বলবেন না। ভালো হয় –

“আপনাকে সব কিছু আবিষ্কার করতে হবে,” অফিসারকে থামিয়ে দিয়ে সিনেটর বললো। “গত সপ্তাহে আমি অ্যাবোটের সাথে কথা বলেছিলাম। সে আমাকে জানিয়েছিলো ডেল্টার সাথে যোগাযোগ করার জন্যে একটা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। জুরিখ, ব্যাঙ্ক, ট্রেডস্টোনের নাম উল্লেখ করাটা, সবই ওটার অংশ, তাই নয় কি?”

“ছিলো, এখন সেটা-বাতিল করা হয়েছে,” ক্রফোর্ড বললো। “সেভেনটি ফার্স্ট স্ট্ট-এর প্রমাণটা যদি আপনি যথেষ্ট মনে না করেন তাহলে কি আর বলার আছে। ডেল্টা আমাদেরকে পরিস্কার একটা সিগনাল দিয়েছিলো যে, সে ধরা দিচ্ছে। কিন্তু সে তা করে নি। আপনি আর কি চান?”

“আমি একদম নিশ্চিত হতে চাই।”

“আর আমি চাই তার মৃত্যু।” ককলিন কথাটা নরম ক’রে বললেও খুব কঠিন শোনালো। “সে কেবল আমাদের সমস্ত নিয়ম ভঙ্গই করে নি, সে একটা গর্তে ডুবে আছে। গন্ধ শুকছে। সে হলো কেইন। আমরা ডেল্টা নামটি অনেক ব্যবহার করেছি—এমনকি বর্নও নয়, খালি ডেল্টা—আমার মনে হয় সেটা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। গর্ডন ওয়েব তার ভাই ছিলো। তাকে খুঁজে বের করুন। হত্যা করুন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *