অধ্যায় ১৯
আর্মির সিডানটা ম্যানহাটনের ইস্ট-রিভার ড্রাইভ ধরে ছুটে চলছে। বিলম্বিত শীতের তুষারপাতের কারণে ম্রিয়মান হয়ে আছে হেডলাইটের আলো। পেছনের এক কোণে গুঁটিসুটি মেরে ব’সে থাকা মেজর সাহেব ঝিমুচ্ছে। তার কোলে একটা বৃফকেস। বৃফকেসটা একটা চেইনের মাধ্যমে তার কোমরের বেল্টের সাথে আঁটকানো। সিকিউরিটি ডিভাইসটি বিগত নয় ঘণ্টায় মাত্র দু’বার সরানো হয়েছিলো। একবার জুরিখ থেকে বিদায় নেবার সময়, আর দ্বিতীয়বার কেনেডি বিমান বন্দরে নামার পর। যদিও সেই দুটো জায়গাতেই আমেরিকান সরকারের লোকজন কাস্টম্স ক্লার্ককে নজরদারী করেছে—সত্যি বলতে গেলে আসলে বৃফকেসটা। তাদেরকে বলা হয় নি কেন, তাদেরকে কেবল ইন্সপেকশনটা নজরদারী করার অর্ডার দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক প্রসিডিউর থেকে একটু এদিক ওদিক হলেই, বৃফকেসটার প্রতি অযাচিত আগ্রহ দেখা গেলেই তারা হস্তক্ষেপ করতো। দরকার পড়লে অস্ত্রের ব্যবহারও করতো।
একটা আচমকা মৃদু রিং হলে মেজর চোখ খুলে তার বাম হাতটা মুখর সামনে তুলে ধরলো। শব্দটা হাত ঘড়ির এলার্মের। সে তার ডুয়েল-টোনাল ঘড়িটার বোতাম চাপলো। প্রথমটা জুরিখের, দ্বিতীয়টা নিউইয়র্কের। অফিসার যখন চব্বিশ ঘণ্টা আগে তার কেবল অর্ডারটা পেয়েছিলো তখন অ্যালার্মটা সেট করা হয়েছে। ট্রান্সমিশনটা তিন মিনিটের মধ্যে আসবে, মেজর ভাবলো, সে একটু সামনে ঝুঁকে ড্রাইভারকে বললো।
“সার্জেন্ট, তোমার ফ্রেম্বলারটা ১৪৩০ মেগাহার্টজে ঘোরাবে কি?
“জ্বি, স্যার,” সার্জেন্ট রেডিও প্যানেলের দুটো সুইচ টিপে দিলো। “এই যে, স্যার।”
“ধন্যবাদ। মাইক্রোফোনটা কি পেছন পর্যন্ত আসবে?”
“আমি জানি না। কখনও চেষ্টা ক’রে দেখি নি, স্যার।” ড্রাইভার মাইক্রেফোনটা পেছনে দিয়ে দিলো। “মনে হয় যাবে,” বললো সে।
স্পিকারে ঘর্ঘর্ শব্দ হলো। এই ট্রান্সমিটারটি বৈদ্যুতিকভাবেই স্ক্যান করে এবং ফ্রিকোয়েন্সিকে জ্যাম ক’রে দেয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেসেজটা আসবে। তাই হলো।
“ট্রেডস্টোন? ট্রেডস্টোন, কনফার্ম, প্লিজ।”
“ট্রেডস্টোন, শুনতে পাচ্ছি,” মেজর গর্ডন ওয়েব বললো। “আপনি ক্লিয়ার, এখন বলে যান।”
“আপনার অবস্থান কি?”
“ট্রাইবোরো’র একমাইল দক্ষিণে, ইস্ট-রিভার ড্রাইভ,” মেজর বললো।
“আপনার টাইমিং গ্রহযোগ্য,” বললো কণ্ঠটা।
“শুনে খুশি হলাম। এটা আমাকে আনন্দিত করেছে…স্যার।”
একটা ছোট্ট বিরতি, মেজরের মন্তব্যটাকে সাদরে গ্রহণ করা হলো না। “১৩৯ ইস্ট সেভেনটি ফার্স্ট-এর দিকে যান। আবার বলে নিশ্চিত ক’রে নাও।”
“ওয়ান-থ্রি-নাইন, ইস্ট সেভেনটি-ফার্স্ট।”
“তোমার গাড়িটা এলাকার বাইরে রাখবে। পায়ে হেটে যাবে বাকি পথ।”
“বুঝেছি।”
“আউট।”
“আউট।” ওয়েব বোতাম চেপে মাইক্রোফোনটা বন্ধ ক’রে ড্রাইভারের কাছে দিয়ে দিলো। “সেই জায়গাটার কথা ভুলে যাও, সার্জেন্ট। তোমার নাম এখন খুবই সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছে।”
“ঠিক আছে, মেজর। ঘর্ঘর্ শব্দ ছাড়া আমি কিছুই শুনি নি। যেহেতু জায়গাটা আমি চিনি না, বলেন কোথায় নামিয়ে দেবো?”
ওয়েব হাসলো। “দুই ব্লকের বেশি দূরে নয়। তার চেয়ে বেশি হাটলে আমি কোনো নর্দমায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো।”
“লেক্স এ্যান্ড সেভেনটি সেকেন্ডের ব্যাপারটা কি?”
“এটা কি দুই ব্লকের মধ্যে?”
“না তিন ব্লক দূরে।”
“যদি তিন ব্লক হয় তো-তুমি একজন প্রাইভেট।”
“তাহলে আমি আপনাকে পরে এসে তুলতে পারবো না, মেজর। প্রাইভেটরা এরকম কাজের জন্যে অনুমতি পায় না।”
“ঠিক আছে, ক্যাপ্টেন।” ওয়েব চোখ বন্ধ করলো। দু’বছর পরে অবশেষে ট্রেডস্টোন সেভেনটি ওয়ান দেখতে পাবে সে। তার উত্তেজনা বোধ করার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না। তার কেবল ক্লান্ত আর অর্থহীন বোধ হচ্ছে। হয়েছে কি?
রাস্তার সাথে টায়ারের ঘর্ষণের শব্দটা তাকে সম্মোহিত ক’রে ফেলছে। এই শব্দটা তার অনেক দিন আগের স্মৃতিটাকে জাগিয়ে দিলো। একটা ঘন অরণ্যের এক রৈখিক শব্দ। তারপর রাত—সেই রাতটা—যখন চোখ ধাঁধানো আলো আর বিস্ফোরণ চারপাশে, তাকে বলা হচ্ছে সে মারা যাচ্ছে। তবে সে মরে নি। একটা অলৌকিকের মতো ঘটনা ঘটিয়ে এক লোক তাকে বাঁচিয়ে ছিলো…তার পর অনেক বছর চলে গেছে, সেই রাতটা, সেইসব দিনগুলো কখনও ভোলার নয়। কি আবার হলো?
“এই যে, এসে গেছি, মেজর।”
ওয়েব চোখ খুলে তাকিয়ে কপালের ঘামগুলো হাত দিয়ে মুছে হাতঘড়িটার দিকে তাকালো। বৃষ্ণকেসটা ধরে দরজার হাতলে হাত রাখলো।
“আমি এখানে থাকবো ২৩০০ এবং ২৩৩০ এর মধ্যেই, সার্জেন্ট। যদি তুমি পার্ক করতে না পারো, আশেপাশেই থেকো, আমি খুঁজে নেবো।”
“জ্বি স্যার।” ড্রাইভার বললো। “মেজর কি বলবেন, পরে আমরা কোথায় যাবো?”
“কেন? তোমার কি আরেকটা ভাড়া আছে?”
“কি যে বলেন, স্যার। আমি তো আপনার কাজে নিয়োজিত। আপনিও সেটা জানেন। আমার গাড়িতে তেল খুব বেশি নেই। যদি বেশি দূরে যান তো তেল নিতে হবে।”
“দুঃখিত,” মেজর একটু থামলো। “ঠিক আছে। তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে সেটা কোথায়, কারণ আমি জানি না। আমরা নিউজার্সির ম্যাডিসনের একটা প্রাইভেট এয়ার-ফিল্ডে যাবো। আমাকে ওখানে একশো ঘণ্টার আগে পৌঁছাতে হবে।”
“আমার অস্পষ্ট একটা ধারণা আছে,” ড্রাইভার বললো। “২৩৩০-এ আপনি খুব কাছে পৌঁছে যাবেন, স্যার।”
“ঠিক আছে—তাহলে ২৩০০-ই। ধন্যবাদ,” ওয়েব গাড়ি থেকে নেমে গাড়িটা চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তারপর মোড় নিয়ে দক্ষিণের সেভেনটি সেকেন্ড স্ট্ট-এর দিকে পা বাড়ালো।
চার মিনিট পরে, চমৎকার ব্রাউনস্টোন ভবনটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। রাস্তাটা খুবই শান্ত, ধনীদের এলাকা—পুরনো টাকাওয়ালাদের। ম্যানহাটনের এই অংশে সবচাইতে স্পর্শকাতর ইন্টেলিজেন্স অপারেশন হাউজ অবস্থিত সেটা কোনো লোকেই বিশ্বাস করবে না। বিশ মিনিট আগে, মেজর গর্ডন ওয়েব হলো দেশের আট থেকে দশজন লোকের মধ্যে একজন, যে এটার অস্তিত্বের কথাটা জানে।
ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান।
প্রবেশপথের সামনের ছোট্ট সিঁড়িটা দিয়ে উঠে গেলো। সে জানে এই পাথরের ধাপগুলোর নিচে এক ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আছে যা ক্যামেরাগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু ক’রে দেবে; ভেতরে একটা পর্দায় তার ছবিটা ভেসে উঠবে। এর বাইরে সে কিছুই জানে না। কেবল জানে ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান কখনও বন্ধ হয় না। দিনে চব্বিশ ঘণ্টা এটা মনিটর আর অপারেটেড করে থাকে কয়েকজন বাছাই করা লোক। তাদের পরিচয় অজ্ঞাত।
সে বেলটা বাজালো। বেলটা খুব সাদামাটা হলেও দরজাটা খুব অসাধারণ। ওয়েব জানালার দিকে তাকালো। সবগুলোতে কাঁচ লাগানো আছে। সে জানে প্রতিটি কাঁচই এক ইঞ্জি পুরু। পয়েন্ট ৩০ গুলির আঘাত সইতে পারার ক্ষমতা আছে কাঁচগুলোর। ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান একটা দূর্গ।
দরজাটা খুলে গেলে মেজর অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাসি হাসি মুখ করলো। সামনে যে মহিলা দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখে এ জায়গার ব’লে মনে হয় না। সে ছোটোখাটো গড়নের। অভিজাত দেখতে, ধূসর চুলের এক মহিলা। হালকা পাতলা মুখ।
“আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে, মেজর। জেরেমি লিখে জানিয়েছিলো, আপনি আসবেন। ভেতরে আসুন। আপনাকে আবারো দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি।”
“আপনাকে দেখেও খুব ভালো লাগছে,” ওয়েব জবাব দিলো। চমৎকার ফয়ারে ঢুকে টের পেলো চারদিকে সুগন্ধী। “তবে আমি নিশ্চিত নই আপনার সাথে আগে আমার দেখা হয়েছে কিনা।”
মহিলা হেসে ফেললো, “ওহ্, কতোবার আমরা ডিনার করেছি।”
“জেরেমির সাথে?”
“অবশ্যই।”
“কে জেরেমি?”
“এক অনুগত ভাগ্নে, যে আপনার প্রতিও অনুগত এবং বন্ধুভাবাপন্ন। চমৎকার এক তরুণ। সে আর এখন নেই, সেটা খুবই দুঃখের ব্যাপার।” মহিলা তার বাহুটা ধরে ভেতরের দিকে পা বাড়ালো। “এটা প্রতিবেশীদের জন্যে সুবিধার হয়েছে। আসুন, তারা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।” তারা একটা খিলানপথ দিয়ে বিশাল লিভিংরুমে এসে পড়লো। মেজর ভেতরটা তাকিয়ে দেখলো। জানালার পাশে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো রাখা। তার পাশেই আছে একটা হার্প। আর সব জায়গায় — পিয়ানো এবং পালিশ করা টেবিলগুলোর উপরে—সিলভার ফ্রেমের ছবি। অতীতের ঐশ্বর্য এবং আভিজাত্য ধরে রাখা হয়েছে। নৌকায় নারী-পুরুষ ব’সে আছে। কয়েকটি মিলিটারি ছবিও আছে। আর অবশ্যই আছে দুটো ছবি, কেউ একজন পোলো ম্যাচের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে।
তারা হলওয়ের শেষপ্রান্তে এসে পড়লো। একটা বিশাল মেহগনি দরজা। বাস্- রিলিফ আর লোহার অলংকার বসানো, ডিজাইন আর নিরাপত্তার অংশ হিসেবে। এখানে যদি কোনো ইনফারেড ক্যামেরা থাকে তবে ওয়েব সেটার লেন্স কোথায় আছে ধরতে পারবে না। মহিলা একটা অদৃশ্য বেলে চাপ দিলে মেজর মৃদু একটা শব্দ শুনতে পেলো কেবল।
“তোমাদের বন্ধু এসে গেছে। এবার পোকার খেলা বন্ধ ক’রে কাজে নেমে পড়ো, জেসুইট।”
“জেসুইট?” ওয়েব অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
“একটা পুরনো জোক,” মহিলা জবাবে বললো। “আপনি যখন মার্বেল খেলতেন আর মেয়েদের ভেংচি কাটতেন তখনকার সময়ের জোক এটা।”
দরজাটা খুলে গেলে বয়স্ক কিন্তু এখনও ঋজু শরীরের ডেভিড অ্যাবোটের অবয়বটা দেখা গেলো। “তোমাকে দেখে খুশি হয়েছি, মেজর,” গোপন সার্ভিসের সাবেক চিফ, সন্ন্যাসী নামে পরিচিত লোকটা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
“আমারও খুব ভালো লাগছে, স্যার।” ওয়েব হাত মেলালো। অ্যাবোটের পাশে আরেকজন বয়স্ক লোক এসে দাঁড়ালো।
“জেরেমির একজন বন্ধু, কোনো সন্দেহ নেই,” লোকটা বললো। তার গম্ভীর কণ্ঠে হাস্যরস আছে। “খুবই দুঃখিত সময়ের অভাবে পুরো পরিচয়টা দিতে পারছি না, তরুণ। আসো। মার্গারেট। উপরে চমৎকার ফায়ারফেস আছে।” সে অ্যাবোটের দিকে তাকালো। “তুমি যখন চলে যাবে আমাকে জানাবে, ডেভিড?”
“অবশ্যই,” জবাব দিলো সন্ন্যাসী। “আমি এই দু’জনকে দেখাবো কিভাবে তোমাকে রিং করতে হয়।
তখনই ওয়েব বুঝতে পারলো ঘরে তৃতীয় আরেকজন রয়েছে। সে ঘরের শেষ মাথায় অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে মেজর তাকে চিনতে পারলো। এলিয়ট স্টিভেন্স। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র সহকারী—কেউ কেউ বলে প্রেসিডেন্টের জমজ। চল্লিশের মতো বয়স হবে তার। শক্ত শরীর। চশমা পরে, আর ভাবসাবে বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ।
“…সেটা খুবই চমৎকার হবে,” যে বৃদ্ধলোকটি সময়ের অভাবে নিজের পরিচয়টা ঠিক মতো দিতে পারে নি সে বললো। ওয়েব তার কথাটা শুনতে পেলো না। তার চোখ হোয়াইট হাউজের সহকারীটির উপর। “আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
“আবারো দেখা হবে,” অ্যাবোট কথাটা বলেই ধূসর চুলের মহিলার দিকে তাকালো। “ধন্যবাদ মিস্টার মেগ। তোমার নীচের দিকের অভ্যাসগুলো বজায় রেখো।”
“তুমি এখনও অভদ্রই আছো, জেসুইট।”
দরজাটা বন্ধ ক’রে দিয়ে দম্পতি জোড়া চলে গেলে ওয়েব একটু হাসলো। এই লোক দুটোই এই বাড়ির মালিক। “আপনি তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, তাই না?”
“বলতে পারো সারা জীবন ধরেই,” অ্যাবোট জবাব দিলো। “যুগোশ্লাভিয়াতে আমরা যখন ডোনোভান অপারেশন চালিয়ে ছিলাম তখন সে আড্রিয়াটিক সাগরে আমাদের ইয়াখটম্যান ছিলো। মিখাইলোভিচ একবার বলেছিলো সে ঝড়ো বাতাস আর বিক্ষুব্ধ সাগরেও খুব ভালো ইয়াখট চালাতে পারে। আর মিসেস মেগের আভিজাত্যে বোকা বনে যেয়ো না। সে হলো সেইসব দুঃসাহসী মেয়েগুলোর একজন, পিরানহা মাছের মতোই যাদের দাঁত ধারালো।”
“কাহিনীগুলো তো দারুণ।”
“এটা কখনও বলা হয় না,” অ্যাবোট কথাটা ব’লে চোখ বন্ধ করলো। “আমি চাই তুমি এলিয়ট সিভেন্সের সাথে পরিচিত হও। আমার মনে হয় না সে কে সেটা তোমাকে বলে দিতে হবে। ওয়েব, এ হলো স্টিভেন্স, আর স্টিভেন্স, এ হলো ওয়েব।”
“কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে কোনো ল-ফার্মে আছি,” স্টিভেন্স হাত বাড়িয়ে বললো।
“আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগছে, ওয়েব। ভ্রমণ কেমন হলো?”
“আমি আসলে মিলিটারি ট্রান্সপোর্টই বেশি পছন্দ করতাম। এইসব কমার্শিয়াল এয়ারলাইন্সগুলো আমি ঘৃণা করি। ভেবেছিলাম কেনেডি এয়ারপোর্টে এক কাস্টমসের লোক বুঝি আমার সুটকেসটার চেইন ছিঁড়েই ফেলবে।”
“তোমাকে এই পোশাকে খুবই সম্মানিত লোকদের মতো লাগছে,” অ্যাবোট হেসে বললো। “তুমি একেবারে একজন চোরাকারবারির মতো।”
“এই পোশাকটা বুঝতে পেরেছি ব’লে এখনও নিশ্চিত নই আমি,” মেজর দেয়ালের সাথে আঁটকে রাখা একটা তাকে বৃফকেসটা রেখে চেইনটা খুলে ফেলে বললো।
“তোমাকে আমার বলা উচিত নয়,” অ্যাবোট বললো, “মাঝে মধ্যে স্থলভাগে বেশ কড়া নিরাপত্তা থাকে। একজন আর্মির ইন্টেলিজেন্স অফিসার বিশেষ ক’রে এরকম সময় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা খুবই আশংকার কথা।”
“তাহলে আমিও বুঝতে পারছি না,” হোয়াইট হাউজের সহকারীটি বললো। সে ওয়েবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
“আমি ভেবেছিলাম ছদ্মবেশটা নিলে সেটা ধরা পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
“ওয়েবের জুরিখ সফর একটা রুটিন কন্সুলেট চেক। জি-টু শিডিউলে সেটা আগে থেকেই ঠিক করা আছে। এইসব সফরের ব্যাপারে কেউ কাউকে বোকা বানায় না। তারা যা তারা তাই, আর কিছু না। নতুন সোর্স নিয়োগ দেয়া, ইনফর্মারদের টাকা দেয়া, সোভিয়েতরা এটা সবসময়ই ক’রে থাকে। তারা এটা লুকানোর চেষ্টাও করে না। আমরাও না, সত্যি বলছি।”
“কিন্তু এই সফরের আসল উদ্দেশ্য তো তা নয়,” স্টিভেন্স বললো। “সুতরাং লুকাতে হয়েছে।”
“সেটাই।”
“আমি কি সাহায্য করতে পারি?” প্রেসিডেনশিয়াল সহকারী মনে হলো বৃফকেসটার ব্যাপারে অতিমাত্রায় আগ্রহী। সে বৃফকেসটার দিকেই চেয়ে আছে।
“ধন্যবাদ,” ওয়েব বললো। “কর্ডটা কেবল টানুন।”
স্টিভেন্স তাই করলো। “আমি সব সময় ভাবতাম চেইনটা হাতের কব্জির সাথে লাগানো থাকে,” সে বললো।
“অনেকবার এভাবে হাত কেটে গেছে,” মেজর হেসে হোয়াইট হাউজের লোকটাকে বলেই বৃফকেসটা খুলে টেবিলের উপর রাখলো। “তাহলে এই হলো ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান। জায়গাটা এরকম হবে আমি ভাবি নি।”
“পর্দাগুলো একটু নামিয়ে দেবে কি, এলিয়ট?” অ্যাবোট বললে প্রেসিডেন্টের সহকারী তাই করলো। এরপর একটা বইয়ের শেলফের দিকে গেলো অ্যাবোট, সেটার নিচে একটা ক্যাবিনেট খুলে ভেতরে হাত রাখতেই একটা হিহিস্ শব্দ হলো। পুরো বইয়ের শেলফটা বাম দিকে সরে গেলো আস্তে আস্তে। ওপর প্রান্তে একটি রেডিও কনসোল। গর্ডন ওয়েবের দেখা সবচাইতে অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র। “এর চেয়ে বেশি কিছু কি তুমি ভেবে ছিলে?” জানতে চাইলো অ্যাবোট।
“ঈশ্বর…” মেজর কনসোলটা দেখেই শিস্ বাজিয়ে বললো।
পেন্টাগনের ওয়ার-রুমে অনেক বেশি যন্ত্রপাতি আছে, তবে এটা সেটারই একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ ব’লে মনে হচ্ছে। পৃথিবীর চাইতে আধুনিক ইন্টেলিজেন্স স্টেশন।
“আমিও অবাক হয়েছি,” স্টিভেন্স বললো। “তবে মি: অ্যাবোট ইতিমধ্যেই আমাকে এটা দেখিয়ে দিয়েছেন। এটা তো কেবলমাত্র শুরু। আরো কিছু বোতাম- টোতাম থাকলে এই জায়গাটা দেখে মনে হোতো ওমাহার এম.এ.সি’র মতো।”
“ঐসব বোতাম এই ঘরটাকে অভিজাত ইস্ট সাইড লাইব্রেরিতেও রূপান্তরিত করে ফেলেছে।” বুড়ো লোকটা ক্যাবিনেটের ভেতরে হাত রাখলে মুহূর্তে বিশাল কনসোলটা আবার একটা বইয়ের শ্নেলফে ঢেকে গেলো। তারপর সে পাশের বইয়ের শেফের কাছে গিয়ে ক্যাবিনেটটা খুলে আবারো কিছু একটা টানলে একই রকম শব্দ হলো। শেফটা সরে গেলে দেখা গেলো পেছনে তিনটি ফাইল ক্যাবিনেট রয়েছে। চাবি দিয়ে অ্যাবোট ড্রয়ার খুলে একটা ফাইল বের করলো। “আমি তোমাকে খুব বেশি কিছু দেখাচ্ছি না, গর্ডন। আমরা যখন শেষ করবো তখন আমি চাইবো তুমি এসব ভালো করে দেখে নেবে। আমি তোমাকে সেই সুইচটা দেখিয়ে দেবো, যেটা এগুলোকে আবার আগের জায়গায় রেখে দেবে। তোমার যদি কোনো সমস্যা হয়, বাড়ির মালিক সেটা দেখবে।”
“আমি দেখবোটা কি?”
“সেটা আমরা বলবো। এখন আমি চাইবো জুরিখের কথা শুনতে। তুমি কি জানলে, বলো?”
“ক্ষমা করবেন, মি: অ্যাবোট,” স্টিভেন্স বাঁধা দিয়ে বললো। “আমি যদি একটু দেরিতে বুঝে থাকি তো তার কারণ এসবই আমার কাছে একদম নতুন। তবে আমি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি যেটা আপনি একটু আগে মেজর ওয়েবের সফরের ব্যাপারে বলছিলেন।”
“সেটা কি?”
“আপনি বলেছেন সফরটা জি-টু শিডিউলে আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো।”
“ঠিক।”
“কেন? মেজরের উপস্থিতি জুরিখে আরো বেশি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে, ওয়াশিংটনে নয়। অথবা জানতে চাইবো, করেছে কি?”
সন্ন্যাসী হাসলো। “আমি বুঝতে পারছি কেন প্রেসিডেন্ট তোমাকে তার সঙ্গে রাখেন। আমরা কখনই সন্দেহ করি নি যে, কার্লোস ওয়াশিংটনে দুই কিংবা তিনটি সার্কেল নিয়ে এসেছে। সে অসন্তুষ্ট ব্যক্তিদেরকে লোভনীয় সব প্রস্তাব দিয়েছে। এরকম লোকজন ছাড়া একজন কার্লোস টিকে থাকতে পারে না। তোমার অবশ্যই স্মরণে আছে, সে আসলে মৃত্যু বিক্রি করে না, সে বিক্রি ক’রে কোনো দেশের সরকারের গোপনীয়তা, সবই সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে, কেবল এটা প্রমাণ করার জন্যে যে, তাকে তারা বহিষ্কার ক’রে কতোটা ভুল করেছে।”
“প্রেসিডেন্ট এটা জানতে চাইবেন,” সহকারী বললো। “এটা কয়েকটা ব্যাপারকে ব্যাখ্যা করবে।”
“এজন্যেই তো তুমি এখানে এসেছো, তাই না?” অ্যাবোট বললো।
“আমারও তাই মনে হয়।”
“জুরিখ থেকে শুরু করলেই ভালো হয়,” ওয়েব বৃফকেসটা ফাইল ক্যাবিনেটের সামনে নিয়ে এসে বললো। বৃফকেসটা খুলে সেটা থেকে কয়েকটা কাগজ বের করলো সে। “আপনি হয়তো সন্দেহ করবেন না যে, কার্লোস ওয়াশিংটনে আছে, তবে আমি সেটা নিশ্চিত করতে পারি।”
“কোথায়? ট্রেডস্টোনে?”
“কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, তবে এটাকে বাতিল ক’রে দিতে পারবেন না। সে ফিশেটা খুঁজে পেয়েছে। এটাকে সে বদলে নিতে পেরেছে।”
“হায় ঈশ্বর, কিভাবে?”
“ঠিক যেভাবে আমি অনুমান করতে পারি; যাকে আমি চিনি।”
“কে?”
“কোয়েনিগ নামের এক লোক। সে তিন দিন আগেও গেইমেনশেফট ব্যাংকের প্রাইমারি ভেরিফিকেশন সেকশনের দায়িত্বে ছিলো।”
“তিন দিন আগে? এখন সে কোথায়?”
“মরে গেছে। প্রতিদিন যে রাস্তা দিয়ে সে যাতায়াত করতো সেখানে একটা দুর্ঘটনায় সে মরে গেছে। এখানে পুলিশের রিপোর্টটা আছে। আমি সেটা অনুবাদও করেছি।”
অ্যাবোট কাগজটা হাতে নিয়ে পাশেই একটা চেয়ারে ব’সে পড়লেও এলিয়ট দাঁড়িয়ে রইলো। আবারো বলতে লাগলো ওয়েব। “খুবই কৌতুহলোদ্দীপক কিছু আছে এখানে। এটা এমন কিছু বলে নি যা আমরা জানি না, তবে একটা কু আছে, যা আমরা ফলো-আপ করবো।”
“সেটা কি?” পড়তে পড়তে বললো অ্যাবোট। “এটা দুর্ঘটনাটার বর্ণনা দিয়েছে। আরেকটা গাড়ির সাথে রাস্তার মোড়ে সংঘর্ষ হয়েছে।”
“এটা শেষের কথা। এটাতে গেইমেনশেফট ব্যাংকের হত্যার খবর উল্লেখ করা আছে, মানে, আমাদের পাছায় যে পেরেকটা ঢুকেছিলো তার খবর।
“তাই নাকি?” অ্যাবোট পাতা ওল্টালো।
“এটাতে দেখুন। শেষ কয়েকটা বাক্য। দেখুন, আমি কি বলতে চাচ্ছি?”
“ঠিক তা নয়,” অ্যাবোট ভুরু কুচকে জবাব দিলো।
“এটাতে বলা আছে কোয়েনিগ গেইমেনশেফটের একজন অফিসার ছিলো যেখানে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে…আর সে প্রথম দিকের গোলাগুলির একজন চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলো। এই তো।”
“আমি মনে করি না এটাই সব,” ওয়েব বললো। “আমার মনে হয় আরো আছে। কেউ একটা প্রশ্ন তুলেছিলো, তবে সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি খুঁজে বের করতে চাই জুরিখ পুলিশ রিপোর্টে কার লাল পেন্সিলের আঁচড় পড়েছে। সে কার্লোসের লোক হতে পারে; আমরা জানি তার ওখানে একজন লোক রয়েছে।”
অ্যাবোট চেয়ারে হেলান দিয়ে ভুরু তুললো। “ধরে নিচ্ছি তোমার কথাই ঠিক তাহলে পুরো রেফারেন্সটা কেন মুছে ফেলা হলো না।”
“একদম সোজা। খুনটা হয়ে গেছে। কোয়েনিগ একজন চাক্ষুস সাক্ষী, যে তদন্তকারী অফিসার রিপোর্টটা লিখেছে সে আইনগতভাবেই জানতে চাইবে কেন।”
“কিন্তু সে যদি কানেকশানের ব্যাপারে কোনো ধারণা ক’রেই থাকে, তাহলে সে কি সেটা মুছে ফেলার জন্যে বিব্রত হবে না?”
“তার দরকার নেই। আমরা সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক নিয়ে কথা বলছি। ওখানকার কিছু এরিয়া অফিশিয়ালি অলঙ্ঘনীয়, যদি না কোনো প্রুফ থেকে থাকে।”
“সবসময় নয়। আমি বুঝতে পারছি তুমি সংবাদপত্রের ব্যাপারে খুবই অভিজ্ঞ।”
“আন অফিশিয়ালি। আমি যৌনতাবিষয়ক সাংবাদিকতা ব্যবহার করেছিলাম—যদিও এটা তাকে প্রায় খুন ক’রে ফেলেছিলো—মাঝপথে ওয়ালথার এপফেলের সমর্থন পই।”
“একটু থামাচ্ছি,” এলিয়ট বললো। “আমার মনে হয় ঠিক এখানেই ওভাল অফিস এসে গেছে। আমি সেই সংবাদপত্রটি পড়ে ধারণা করেছি, যাতে আপনি কানাডিয়ান মেয়েটার কথা উল্লেখ করেছেন।”
“ঠিক তা নয়। সেই গল্পটা ইতিমধ্যেই চাউড় হয়ে গেছে। আমরা সেটা থামাতে পারতাম না। কার্লোস জুরিখ পুলিশকে সেটা ফোনে জানিয়ে দেয়। তারা সেই রিপোর্টটা ইসু করেছে। আমরা কেবল সেটার সাথে ভূয়া একটা গল্প জুড়ে দিয়েছে যে, গেইমেনশেফট ব্যাংক থেকে কয়েক মিলিয়ন চুরি আর হত্যাকাণ্ডের সাথে মেয়েটি জড়িত। ওয়েব একটু থেমে অ্যাবোটের দিকে তাকালো। “এটা নিয়েই আমাদেরকে কথা বলতে হবে। এটা পুরোপুরি ভূয়া নাও হতে পারে।”
“আমি সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না,” সন্ন্যাসী অ্যাবোট বললো।
“আমিও এটা বিশ্বাস করতে চাই না,” জবাব দিলো মেজর। “কখনও চাই না।” হোয়াইট হাউজের সহকারীটি আর্মি অফিসারের মুখোমুখি বসলো। “আমাকে এটা পরিস্কার জানতে হবে।”
“আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন,” অ্যাবোট মুখ খুললো। ওয়েবের চোখেমুখে বিস্ময়টা দেখলো। “এলিয়ট এখানে এসেছে প্রেসিডেন্টের আদেশে। অটোয়া এয়ারপোর্টের খুনটার ব্যাপারে।”
“সেটা একেবারে যাচ্ছেতাই ব্যাপার হয়ে গেছে,” স্টিভেন্স সরাসরি বললো। “কানাডার প্রাইম মিনিস্টার প্রেসিডেন্টকে প্রায় বলেই ফেলেছিলেন যে, আমাদের নোভা স্কটিয়া স্টেশনটা সরিয়ে নিতে। তিনি খুব ক্ষেপে আছেন।”
“এতোটা বাজে ঘটনা কিভাবে হলো?” ওয়েব জানতে চাইলো।
“খুবই খারাপভাবে। তারা কেবল জানে কানাডার ন্যাশনাল রেভেনুর একজন র্যাংকিং অফিসার একটি আনলিস্টেড আমেরিকান কর্পোরেশনের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে খুনের শিকার হয়েছে। ব্যাপারটা আরো খারাপ হয়ে গেছে, কানাডিয়ান ইন্টেলিজেন্সকে এ ব্যাপারে নাক না গলানোর কথা ব’লে। এটা খুবই স্পর্শকাতর ইউএস অপারেশন।”
“কাজটা করলো কে?”
“আমার বিশ্বাস আমি এখানে সেখানে আইরন এ্যাজ্ নামটা শুনেছি,” অ্যাবোট বললো।
“জেনারেল ক্রফোর্ড? শালার বানচোত—বানচোত আয়রন এ্যাজ্!”
“আপনি কি কল্পনা করতে পারেন?” কথার মাঝখানে স্টিভেন্স বললো। “তাদের লোক খুন হবে আর আমরা তাদেরকে বলবো এ ব্যাপারে নাক না গলাতে।”
“তার কথা ঠিক,” অ্যাবোট বললো। “এটা খুব দ্রুত করতে হয়েছে, ভুলবোঝাবুঝির কোনো অবকাশ ছিলো না। সঙ্গে সঙ্গে একটা কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়েছিলো। সব কিছু থামানোর জন্যে খুবই ঝুঁকি নিতে হয়েছিলো। এর ফলে আমাকে ম্যাকেঞ্জি হকিন্সের সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছে—ম্যাক এবং আমি বার্মাতে একসঙ্গে কাজ করেছি। সে অবসরে গেলেও তারা তার কথা শোনে। তারা এখন সহযোগীতা করছে, সেটাই হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাই না?”
“আরো কিছু বিষয়ও তো আছে, মি: অ্যাবোট,” স্টিভেন্স প্রতিবাদ ক’রে বললো।
“সেগুলো অন্য লেভেলের, এলিয়ট। কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমাদের নেই। সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”
“প্রেসিডেন্ট এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, স্যার। এজন্যেই আমি এ বিষয়ে পরিস্কার একটা ছবি পেতে চাচ্ছি।” স্টিভেন্স থেমে ওয়েবের দিকে তাকালো। “না, প্লিজ, আমাকে এটা জানতে দিন। আপনি আসলে কী করছেন, কেন করছেন? এই কানাডিয়ান মেয়েটাকে নিয়েই বা আমরা সবাই কি খেলা খেলছি, বলুন?”
“শুরুতে আমরা কিছুই করি নি। সেটা ছিলো কার্লোসের কাজ। জুরিখ পুলিশের খুব উঁচু পদে কার্লোসের একজন বেতনভূক্ত লোক আছে। ঐ পুলিশই মেয়েটার সাথে তথাকথিত তিনটি হত্যার অভিযোগ এনেছে। আর এ ব্যাপারটা একেবারেই হাস্যকর। মেয়েটা কোনো খুনি নয়।”
“ঠিক আছে, ঠিক আছে,” সহকারিটি বললো। “এটা কার্লোসের কাজ। সে কেন এটা করলো?”
“বর্নকে শেষ ক’রে দেয়ার জন্যে। সেন জ্যাক মেরি আর বর্ন একসঙ্গে আছে।”
“বর্ন হলো সেই গুপ্তহত্যাকারী যে নিজেকে কেইন ব’লে পরিচয় দেয়, ঠিক?”
“হ্যা,” ওয়েব বললো। “কার্লোস তাকে খুন করার জন্যে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ। কেইন কার্লোসের ঘাঁটি ইউরোপে ঢুকে পড়েছে। তবে তার কোনো ছবি নেই। কেউ আসলে জানে না সে দেখতে কি রকম। তাই মেয়েটার ছবি ছাপানো হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়েছে সেটা—আর সেটা ওখানকার প্রায় সব পত্রিকাতেই উঠেছে—কেউ না কেউ তাকে ঠিকই দেখতে পাবে। তাকে যদি পাওয়া যায়, তবে কেইনকে—বর্নকে খুঁজে পাওয়া যাবে। কার্লোস তাদের দু’জনকেই খুন করবে।”
“ঠিক আছে। আবারো বলছি, এটা কার্লোস। এখন তুমি কি করবে?”
“যা আমি বলেছি। গেইমেনশেফটে গিয়ে তাদেরকে বোঝাও যে, মেয়েটা হয়তো বড়সড় চুরির সঙ্গে জড়িত। এটা খুব সহজ কাজ হবে না। তবে তাদের লোক কোয়েনিগ ঘুষ খেয়ে কাজটা করতে সাহায্য করেছে, আমাদের কোনো লোক সেটা করে নি। এটা একটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা এটা ঢেকে রাখতে চাইবে। তারপর আমি পত্রিকাগুলোকে ডেকে ওয়ালথার এপফেলের কথাটা জানাবো। রহস্যময় নারী, খুনি, মিলিয়ন ডলারের চুরি; সম্পাদকেরা ঝাঁপিয়ে পড়বে সেটার উপরে।”
“ঈশ্বরের দোহাই, কেন?” স্টিভেন্স চিৎকার ক’রে বললো। “আপনি ইউএস ইন্টেলিজেন্স স্ট্র্যাটেজির জন্যে অন্য দেশের নাগরিককে ব্যবহার করবেন! আমাদের বন্ধুপ্রতিম সরকারের খুবই উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তাকে ব্যবহার করবেন! আপনারা কি পাগল হয়ে গেলেন? আপনারা কেবল পরিস্থিতিটাকে আরো খারাপ ক’রে ফেলবেন, আপনারা মেয়েটাকে বলির পাঠা বানাবেন!”
“আপনি ভুল করছেন,” ওয়েব বললো। “আমরা মেয়েটার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আমরা কার্লোসের অস্ত্রটাকে ঘুরিয়ে তার বিরুদ্ধেই তাক্ করছি।”
“কিভাবে?”
সন্নাসী হাত তুলে বাঁধা দিলো। “এই প্রশ্নের জবাব দেবার আগে আমাদেরকে আরেকটা প্রশ্নে ফিরে যেতে হবে,” সে বললো। “কারণ এটার জবাব হয়তো আপনাকে এই ধারণাই দেবে যে, তথ্যটা কতোটা গোপন রাখা উচিত। কিছুক্ষণ আগে আমি মেজরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কার্লোসের লোকেরা কিভাবে বর্নকে খুঁজে পেলো—ফিশেটা খুঁজে পেলো, যা বর্নকে কেইন হিসেবে চিহ্নিত করে। আমার মনে হয়, আমি সেটা জানি। তবে আমি চাই সে তোমাকে বলুক।”
ওয়েব সামনের দিকে ঝুকে এলো। “মেডুসা রেকর্ড,” সে শান্ত কণ্ঠে বললো।
“মেডুসা…?” স্টিভেন্সের চোখমুখের ভাষা বলে দিচ্ছে মেডুসা হোয়াইট হাউজের গোপন বৃফিংয়ে আলোচিত হয়েছে। “ওগুলো তো মাটি চাপা দিয়ে দেয়া হয়েছে,” সে বললো।
“একটু সংশোধন ক’রে দিচ্ছি,” অ্যাবোট অনেকটা প্রতিবাদ ক’রে বললো। “একটা অরিজিনাল আর দুটো মাত্র কপি আছে, কিন্তু সেগুলো আছে পেন্টাগনের ভল্টে, সিআইএ এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে। ওগুলো দেখা সম্ভব কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন লোকের পক্ষে। আর সেটা একেবারে শীর্ষ কর্ম- কর্তারাই পারে। বর্ন মেডুসা থেকেই এসেছে। ব্যাংক রেকর্ড ক্রশ-চেক্ করলে সেইসব নাম বের হয়ে আসবে। কেউ সেগুলো কার্লোসকে দিয়ে দিয়েছে।”
স্টিভেন্স অ্যাবোটের দিকে তাকালো। “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন কার্লোস…আমাদের উচ্চপদস্থ লোকজনের ভেতরেও ঢুকে পড়েছে? এটা তো সাংঘাতিক একটা অভিযোগ।”
“এটাই হলো একমাত্র ব্যাখ্যা,” ওয়েব বললো।
“বর্ন কেন তার নিজের নামটা ব্যবহার করবে?”
“এটার দরকার ছিলো,” অ্যাবোট জবাব ছিলো। “এটাই হলো পুরো দৃশ্যটা আসল অংশ। খুবই নির্ভরযোগ্য হতে হয়। সবই নির্ভরযোগ্য হতে হয়। সব।”
“নির্ভরযোগ্য?”
“হয়তো আপনি এখন বুঝবেন,” মেজর বলতে লাগলো। “সেন জ্যাক মেরিকে মিলিয়ন ডলার চুরির সাথে জড়িয়ে আমরা আসলে বর্নকে বেরিয়ে আসার কথা বলছি। সে জানে এটা ভূয়া।”
“বর্ন বেরিয়ে আসবে?”
“লোকটার নাম জেসন বর্ন,” অ্যাবোট এবার উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারী করলো। একজন আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স অফিসার। কেইন ব’লে কেউ নেই। কার্লোস যেরকম একজনের কথা বিশ্বাস করে, সেরকম কিছু নেই। সে একটা টোপ, কার্লোসের জন্যে একটা ফাঁদ; এই হলো বর্ন।”
নিরবতাটি সংক্ষিপ্ত হলো হোয়াইট হাউজের লোকটার কারণে। “আমার মনে হয় আপনি আরো বিস্তারিত বললে ভালো হয়। প্রেসিডেন্টকে তো সব জানতে হবে।”
“আমিও তাই মনে করি,” অ্যাবোট বিড়বিড় ক’রে বললো। “জানালার পর্দাটা সরিয়ে উদাসভাবে বাইরে তাকালো। “এটা আসলে সমাধানের অযোগ্য একটি সমস্যা। প্রেসিডেন্ট বদলায়, ভিন্ন লোক, ভিন্ন মেজাজ, ভিন্ন চিন্তা নিয়ে ওভাল অফিসে বসে একেকজন। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী ইন্টেলিজেন্স কৌশল-পরিকল্পনা বদলায় না। এই পরিকল্পনাটিও সেই রকম। তারপরও, বেফাঁস কোনো মন্তব্য প্রেসিডেন্ট পরবর্তী জীবনে হুইস্কি খেয়ে কিছু বলে ফেলা, অথবা সেরকম কিছু সমস্ত পরিকল্পনাটাকে ভেস্তে দিতে পারে। এমন কোনো দিন নেই যে, আমরা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি না।”
“প্লিজ,” স্টিভেন্স বাঁধা দিয়ে বললো। “আমি আপনাকে মনে রাখতে বলবো, আমি এখানে এসেছি প্রেসিডেন্টের আদেশে। আপনি সেটা মানেন কিংবা না মানেন, তাতে কিছু যায় আসে না। আইনগতভাবেই তিনি এটা জানার অধিকার রাখেন। আর তার নামেই বলছি, আমি তার এই অধিকারটা সমুন্নত রাখবো।”
“বেশ ভালো,” অ্যাবোট বললো। এখনও বাইরে তাকিয়ে আছে সে। “তিন বছর আগে আমরা বৃটিশদের কাছ থেকে একটা পৃষ্ঠা ধার করেছিলাম। আমরা এমন এক লোককে সৃষ্টি করেছি যে কখনও ছিলো না। আপনার যদি স্মরণে থাকে তো একটা গল্প জানেন। নরম্যান্ডির অভিযানের আগে বৃটিশ ইন্টেলিজেন্স পর্তুগালের উপকূলে একটা লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিলো, তারা জানতো এটার ব্যাপারে যে ডকুমেন্টই লুকানো হোক না কেন খবরটা লিসবনের জার্মান এ্যাম্বাসিতে ঠিকই গিয়ে পৌঁছাবে। সেই লাশের জন্যে একটি জীবন, একটা নাম সৃষ্টি করা হলো। একজন নাভাল অফিসার, স্কুল, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণের আদেশ, ড্রাইভার লাইসেন্স, লন্ডনের অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ এবং আধ ডজন ব্যক্তিগত চিঠিপত্র। সবই অস্পষ্ট, কোনো নির্দিষ্ট ইঙ্গিত নেই। তবে এসবই একটা জিনিসকে ইঙ্গিত করেছিলো যে, নরম্যান্ডি থেকে একশো মাইল দূরের অভিযানটা এগিয়ে আসছে। আর ছয় সপ্তাহ পরে জুন মাসেই টার্গেট করা হবে। সারা ইংল্যান্ড জুড়ে থাকা জার্মান এজেন্টদের খবরে ভীতি তৈরি হবার পর—সেটা আসলে এমআই ফাইভ- এর নিয়ন্ত্রণে করা হয়েছিলো—বার্লিনের হইকমান্ড খবরটাতে বিশ্বাসী হয়ে বিপুল পরিমানের সৈন্যের সমাবেশ ঘটায় সেখানে। যতো প্রাণহানিই ঘটে থাকুক, হাজার হাজার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিলো ঐ লোকটা, যার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না।” অ্যাবোট পর্দাটা সরিয়ে চেয়ারে ফিরে এলো।
“কাহিনীটা আমি শুনেছি,” হোয়াইট হাউজের সহকারী বললো। “আর?”
“আমাদেরটাতে অবশ্য বৈচিত্র আছে,” অ্যাবোট বললো। “একটা জীবন্ত মানুষ তৈরি করা, দ্রুত একটা রূপকথা প্রতিষ্ঠিত করা, সর্বত্র একই সময়ে, পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে, কার্লোসকে প্রতিটি পদক্ষেপে নাকানি চুবানি খাওয়ানো। যখনই কোনো খুন, হত্যাকাণ্ড, হোমড়া-চোমড়াদের অপমৃত্যু, অব্যাখ্যাত মৃত্যু হোতো কেইনের নামটা উঠে আসতো। নির্ভরযোগ্য সোস— টাকা দিয়ে তথ্যগুলো যথার্থভাবে ছড়ানো হোতো—তার নামটাই গেলানো হোতো সবখানে। এ্যাম্বাসিগুলো, আঁড়িপাতার পোস্টগুলো, পুরো ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক ক্রমাগতভাবেই কেইনের নাম ছড়াতে লাগলো। তার কর্মকাণ্ডকে প্রচার করতে লাগলো। তার ‘খুন’গুলো প্রতি মাসে বাড়তে লাগলো। কখনও কখনও মনে হতো প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। সবজায়গাতেই সে ছিলো…সব ক্ষেত্রেই।”
“মানে, এই বর্নের কথা বলছেন?”
“হ্যা। সে কয়েক মাসেই কাছে থাকা প্রতিটি ফাইলে কার্লোসের ব্যাপারে যা কিছু আছে সব কিছু শিখে ফেলে, কার্লোসের নাম জড়ানো প্রতিটি খুনের ব্যাপারে তথ্য নিয়েছে। সে কার্লোর কৌশল আর পদ্ধতিগুলো গোগ্রাসে গিলেছে। এমন সব তথ্য জেনেছে যা কোনোদিন দিনের আলো দেখে নি, দেখবেও না হয়তো। এটা বিস্ফোরণমূলক – সরকার এবং আন্তর্জাতিক কিছু বিষয় একে অন্যের গলা জড়িয়ে আছে। এমন কিছু নেই যা বর্ন জানে না। তারপর সে নিজেকে প্রদর্শন করলো, সবসময় ভিন্ন রূপে, কয়েকটা ভাষায় কথা বলতে পারে সে, পেশাদার খুনিদের মতো কথা বলা শুরু করলো। তারপর একদিন উধাও হয়ে গেলো, পেছনে রেখে গেলো একদল বিস্মিত আর ভয়ার্ত নারী-পুরুষ। তারা কেইনকে দেখেছে। তার অস্তিত্ব ছিলো। আর সে ছিলো নির্মম। এই ইমেজটাই বর্ন ধারণ করলো।”
“সে এভাবে তিন বছর আন্ডারগ্রাউন্ডে রইলো?” স্টিভেন্স জানতে চাইলো।
“হ্যা। সে ইউরোপে চলে যায়, এশিয়ার সবচাইতে সফল শ্বেতাঙ্গ গুপ্তঘাতক, মেডুসা থেকে গ্র্যাজুয়েট, কার্লোসের আঙিনায় এসে কার্লোসকেই চ্যালেঞ্জ ক’রে বসলো। এই প্রক্রিয়ায় সে কার্লোসের টার্গেট করা চারজন লোককে রক্ষা করলো। কার্লোসের হত্যার কৃতিত্ব নিতে শুরু করলো। তার সঙ্গে মশ্করা করতে শুরু করলো। সে সবচাইতে বিপজ্জনক মিথ্যের মধ্যে বসবাস ক’রে তিন তিনটি বছর পার করলো। এরকম কিছুর অস্তিত্ব খুব কম লোকেই জানতো।”
“সে কি ধরণের লোক?”
“একজন পেশাদার,” গর্ডন ওয়েব জবাব দিলো। “যার ট্রেনিং আছে, সক্ষমতা আছে, যে মনে করতো কার্লোসকে খুঁজে পাওয়া যাবে, থামানো যাবে।”
“কিন্তু তিন বছর?”
“এটা যদি খুব অবিশ্বাস্য মনে হয়,” অ্যাবোট বললো, “তাহলে আপনি জানবেন যে, সে সার্জারি ক’রে নিয়েছিলো। এটা যেনো তার অতীতের সাথে চূড়ান্ত একটি বিচ্ছেদ। সে যা ছিলো তা আর রইলো না। আমার মনে হয় না কোনো দেশ বর্নের মতো মানুষকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে। সম্ভবত একমাত্র পথ হলো তাকে সফল হবার সুযোগ ক’রে দেয়া—ঈশ্বরের সহায়তায় আমি সেটা করতে চাই।” অ্যাবোট একটু থেমেত বললো, “অবশ্য যদি এটা বর্ন হয়ে থাকে তো।”
যেনো এলিয়টকে কোনো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হলো। “আপনি কি বললেন?” সে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“আমার আশংকা আমি হয়তো এটা শেষ পর্যন্ত বলেউ যাবো। আমি চাইবো আমি এই ফাঁকটা বর্ননা করার আগে তুমি পুরো চিত্রটা বুঝে নেবে। এটা হয়তো ফাঁকও নয়—–আমরা কেবল জানি না। অনেক কিছুই ঘটেছে যা আমাদের মাথা ঢুকছে না। তবে সেটাও আমরা নিশ্চিত ক’রে জানি না। এই কারণেই অন্য লেভেল থেকে কোনো রকম নাক গলানো হয় নি। আমরা মানুষ হত্যার নিন্দা করি। বিশেষ ক’রে এমন একজন মানুষ, যে আমাদের যে কারোর চেয়েও বেশি দিয়েছে। সফল হলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে, তবে অজ্ঞাত কোনো নামে। কেবলমাত্র নিজের পরিচয়টা প্রকাশ না ক’রে।”
“আমার মনে হচ্ছে আপনাকে সেটা আরেকটু পরিস্কার ক’রে বুঝিয়ে বলতে হবে,” প্রেসিডেন্টের সহকারী বললো।
“আনুগত্য, এলিয়ট। এটার সাথে সাধারণ ভালো ‘লোক’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। কার্লোস এমন একটা বাহিনী গঠন করেছে যারা তার প্রতি অনুগত। তারা হয়তো তাকে চেনে না তবে তাকে শ্রদ্ধা করে। কোনোভাবে যদি সে কার্লোসকে ঘায়েল করতে পারে—অথবা কার্লোসকে ফাঁদে ফেলতে পারে, যাতে ক’রে আমরা তাকে পাকড়াও করতে পারি—তখন সে মুক্ত হতে পারবে।”
“কিন্তু আপনি তো বললেন সে জেসন বর্ন নাও হতে পারে।”
“আমি বলেছি আমরা জানি না। ব্যাংকে যে গেছে সে বর্নই ছিলো। স্বাক্ষরটা বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু এখনকারটা কি বর্ন? পরবর্তী কয়েকটা দিনে সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে।”
“যদি সে প্রকাশ্য হয়,” ওয়েব যোগ করলো।
“এটা খুবই নাজুক ব্যাপার,” বৃদ্ধলোক বলতে লাগলো। “অনেক অনুঘটক রয়েছ। এটা যদি বর্ন না হয়—অথবা সে যদি বেঈমানী ক’রে থাকে—তাহলে এটা অটোয়ার খুনটাকে ব্যাখ্যা করতে পারবে, এয়ারপোর্টের খুনটার কথা বলছি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে মনে হয় মেয়েটাকে সে প্যারিস থেকে টাকা তোলার কাজে ব্যবহার করেছে। কার্লোসকে কেবল কানাডিয়ান ট্রেজারি বোর্ডে কয়েকটা ইনকোয়ারি করতে হবে। বাকিটা তার জন্যে ছেলে-খেলা হয়ে যাবে। মেয়েটার সাথে যোগাযোগকারীকে খুন করবে, তাকে ভয় পাইয়ে দেবে। তাকে বিচ্ছিন্ন ক’রে বর্নকে ফাঁদে ফেলার কাজে ব্যবহার করবে।”
“আপনারা কি মেয়েটার বার্তাটা পৌঁছাতে পেরেছেন?” মেজর জানতে চাইলো।
“আমি চেষ্টা করেছিলাম, ব্যর্থ হয়েছি। আমি ম্যাক হকিন্সকে দিয়ে সেন জ্যাকের সাথে কাজ করে এ্যালান নামের এক লোককে ফোন করিয়েছিলাম। সে মেয়েটাকে দ্রুত কানাডায় ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটা এখনও বর্নের সঙ্গেই রয়ে গেছে।”
“ধ্যাত্তারিকা!” ওয়েব ক্ষিপ্ত হয়ে বললো।
“একদম ঠিক। মেয়েটাকে যদি ফিরিয়ে আনতে পারতাম তবে হয়তো অনেক কিছু জানতে পারতাম। মেয়েটাই হলো মূল চাবিকাঠি। সে কেন বর্নের সাথে আছে? বর্নই বা কেন তার সাথে আছে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না।”
“আমি তো আরো বুঝতে পারছি না,” প্রেসিডেন্টের লোকটা রেগেমেগে বললো। “আপনারা যদি প্রেসিডেন্টের সহযোগীতা চান—আমি অবশ্য কোনো কথা দিচ্ছি না—আপনাদেরকে পুরো বিষয়টা আরো পরিস্কার করতে হবে।”
অ্যাবোট তার দিকে ফিরলো। “ছয় মাস আগে বর্ন উধাও হয়ে যায়,” সে বললো। “কিছু একটা ঘটেছিলো। আমরা নিশ্চিত নই ঘটনাটা কি। তবে সব টুকরো জোড়া লাগিয়ে সম্ভাব্য একটা ছবি তৈরি করতে পারি। সে জুরিখে যাবার পথে খবর পায় কার্লোস মার্সেই’র পথে আছে। পরে, খুব দেরিতে আমরা বুঝেছিলাম সেটা। সে জানতে পেরেছিলো কার্লোস হাওয়ার্ড লিল্যান্ডকে খুন করার জন্যে কনট্রাক্ট নিয়েছে, আর বর্ন সেটা থামাবার চেষ্টা করেছিলো। তারপর আর কিছুই জানা যায় নি। সে উধাও হয়ে গেলো। সে কি মরে গেছে? সে কি তীব্র চাপে ভেঙে পড়েছে? সে কি… হাল ছেড়ে দিয়েছে?”
“আমি এটা মেনে নিতে পারছি না,” ওয়েব রেগেমেগে বললো। “আমি এটা মেনে নেবো না!”
“আমি জানি তুমি তা করবে না,” বললো অ্যাবোট। “এজন্যেই আমি চাই তুমি সেই ফাইলটা প’ড়ে দেখো। তুমি তার সমস্ত কোডগুলো জানো। দ্যাখো, জুরিখের কোনো ফাঁক ধরতে পারো কিনা।”
“প্লিজ!” স্টিভেন্স বললো। “আপনারা কি মনে করেন? আপনাকে অবশ্যই শক্ত কিছু খুঁজে পেতে হবে। যাতে তার উপর ভিত্তি ক’রে পুরো ব্যাপারটা বিচার করা যায়। আমার সেটা দরকার, মি: অ্যাবোট। প্রেসিডেন্টের সেটা দরকার।”
“আমার কাছে যদি শক্ত কিছু থাকতো তাহলে আমি সেটা আপনাকে বলতাম,” অ্যাবোট জবাব দিলো। “আমরা কি পেয়েছি? সবকিছু, আবার কিছুই না। প্রায় তিন বছর ধরে আমরা আমাদের রেকর্ডগুলো সযত্নে আড়াল ক’রে রেখেছি। প্রতিটি ভূয়া কর্মকাণ্ড ডকুমেন্ট করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি চালই সংজ্ঞায়িত এবং জাস্টিফাই করা হয়েছে। প্রত্যেক নারী এবং পুরুষ—ইনফর্মার, কনটাক্ট, সোর্স—–মুখ, কণ্ঠ আর বলার জন্যে গল্প দেয়া হয়েছে। আর প্রত্যেক সপ্তাহে, প্রত্যেক মাসেই আমরা কার্লোসের আরো কাছে চলে আসছিলাম। তারপর সব বন্ধ হয়ে গেলো। ছয় মাসের দীর্ঘ শূন্যতা।”
“এখন তো আর সেই অবস্থা নেই,” প্রেসিডেন্টের চ্যালাটা পাল্টা বললো। “সেই নিরবতা ভেঙেছে। কে ভেঙেছে?”
“এটাই তো আসল প্রশ্ন, তাই নয় কি?” ক্লান্ত কণ্ঠে বৃদ্ধ বললো। “কয়েক মাসের নিরবতা, তারপর আচমকা তার কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেলো। একাউন্টটাতে অনুপ্রবেশ হলো। ফিশেটা বদলে ফেলা হলো, মিলিয়ন ডলার করা হলো ট্রান্সফার~~বলতে গেলে চুরি করা হলো। লোকজন খুন হতে লাগলো, ফাঁদে পড়তে লাগলো অন্য মানুষদেরকে ফাঁদে ফেলতে গিয়ে, কিন্তু কার জন্যে? কার দ্বারা?” অ্যাবোট ক্লান্ত ভঙ্গীতে মাথা ঝাঁকালো। “ঐ লোকটা আসলে কে?”