পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩

বর্ন আইডেন্টিটি – ১৮

অধ্যায় ১৮

প্যারিস ছাড়ো! এক্ষুণি! তুমি যা করছো তা বন্ধ করো! চলে যাও…এগুলো তোমার গভর্নমেন্টের অর্ডার। তারা চায় তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তারা জেসনকে একাকী ক’রে ফেলতে চায়।

মেরি বিছানার পাশে টেবিলে রাখা অ্যাস্ট্রেতে সিগারেটটা ফেলে দিলো। তার চোখ তিন বছরের পুরনো পোটোম্যাক পত্রিকাটার উপর। জেসন তাকে দিয়ে জোর ক’রে যে খেলাটা খেলিয়েছিলো সেটা নিয়ে একটু ভাবলো সে।

“আমি শুনবো না!” সে আপন মনেই কথাটা বললো। খালি ঘরে কথাটা প্রতিধ্বনি করলো যেনো। জানালার কাছে গেলো সে।

আমাকে কিছু বিষয় জানতে হবে…সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যথেষ্ট কিছু…তবে হয়তো সব কিছু নয়। আমার একটা অংশ হয়তো পালাতে কিংবা উধাও হয়ে যেতে পারবে। এসবের কোনো স্মৃতি আমার নেই। যার কোনো স্মৃতি নেই তার অস্তিত্বও নেই।

“ডার্লিং, তাদেরকে এটা তোমার সাথে করতে দিও না!” মেরির কথাটা এখন আর চমকে দিচ্ছে না। সে জানে জেসন পালাবে না। অর্ধ সত্য নিয়ে সে সন্তুষ্ট হবে না।

তারা তাকে একাকী ক’রে ফেলতে চায়।

তারা কারা? জবাবটা আছে কানাডায়, কিন্তু কানাডা বহু দূরে। আর সেটাও একটা—ফাঁদ।

জেসন প্যারিসের ব্যাপারে ঠিকই বলেছিলো। মেরিও সেটা টের পাচ্ছে এখন। যাই হোক না কেন, সেটা এখানেই আছে। তারা যদি এমন কাউকে খুঁজে বের করতে পারে, যে চাদরটা সরিয়ে তাকে দেখিয়ে দেবে তাকে ম্যানিপুলেট কার হয়েছে, মানে একরকম কব্জা করা হয়েছে, তারপর দেখা যাবে আরেকটা প্রশ্ন এসে হাজির হয়েছে, জবাবগুলো আর তাকে আত্মহননের দিকে টেনে নিয়ে যাবে না। সে যদি তার অতীতের কোনো অপরাধ কাহিনী জানতে পারে, তবে সে আরো বড় অপরাধের ঘুঁটি হিসেবে আবিভূর্ত হবে। সে তাকে নিয়ে উধাও হয়ে যেতে পারে। তবে সবকিছুই আপেক্ষিক। তার ভালোবাসার মানুষটি যা বলেছে সেই অতীতের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু যদি থেকে থাকে তবে সেটা মেনে নিয়েই বেঁচে থাকতে পারবে, সেগুলো ভুলে থাকতে পারবে। এই বোধোদয়টাই তার খুব বেশি দরকার। তাকে বুঝতে হবে, সে বলির পাঠা; তার শত্রুরা যা বোঝাতে চায় সারা দুনিয়াকে সে আসলে তার চেয়ে অনেক কম অপরাধী। তার মৃত্যু আরেকজনের স্থান নিয়ে নেবে। সেই যদি এটা বুঝতো, মেরি যদি তাকে বোঝাতে পারতো। আর মেরি যদি তা করতে না পারে, নির্ঘাত তাকে হারাবে। তারা তাকে ঘায়েল করবে। খুন করে ফেলবে তাকে।

তারা।

“তুমি কে?” সে জানালার দিকে চিৎকার ক’রে বললো। “তুমি কোথায়?” মেরির দম বন্ধ হয়ে গেলো যেনো। কিছুক্ষণ পরে সে আবার শ্বাস নিতে পারলো। সে একেবারে ভড়কে গেছে। এরকমটি আগেও তার হয়েছে। প্যারিসে তাদের প্রথম রাতে, যখন সে ক্যাফে থেকে বের হয়ে তাকে খুঁজতে গেলো।

“বন্ধ করো!” সে চিৎকার ক’রে বললো। “এটা পাগলামী,” সে হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো। জেসন চলে গেছে পাঁচ ঘণ্টা হলো। সে কোথায়? সে এখন কোথায়?

.

অভিজাত হোটেল মতপারোয়ার সামনে ট্যাক্সি থেকে নামলো বর্ন। সামনের কয়কটি ঘণ্টা তার স্মরণযোগ্য সংক্ষিপ্ত জীবনের সবচাইতে কঠিন মুহূর্ত হবে—এমন একটা জীবন যা পোর্ত নোয়ে’র আগে একেবারেই ফাঁকা ছিলো। একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। দুঃস্বপ্নটা চলবে। তবে সে এটা নিয়ে একা একা থাকতে পারবে। সে মেরিকে এতোটাই ভালোবাসে যে, তাকে তার সঙ্গে থাকার কথা বলতে পারে নি। সে উধাও হয়ে যাবার জন্যে একটা পথ খুঁজে বের করবে। কাজটা খুব সহজেই করা যাবে। একটা ভূয়া সাক্ষাতের কথা বলে চলে যাবে, আর ফিরে আসবে না। তারপর কয়েক ঘণ্টা পরে একটা চিঠি লিখে সব জানাবে :

সব শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছি। কানাডায় ফিরে যাও, কাউকে কিছু বোলো না, আমাদের দু’জনের ভালোর জন্যেই। আমি জানি কোথায় তোমার সঙ্গে দেখা করা যাবে।

শেষ কথাটা মিথ্যে—সে কখনও তার সঙ্গে দেখা করবে না—তবে ছোট্ট একটা আশা জিইয়ে রাখতে হবে। মেয়েটা কোনোভাবে অটোয়ার উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠলেই রক্ষা—আস্তে আস্তে তাদের এক সঙ্গে থাকা এক সপ্তাহের মুহূর্তগুলো গভীর অন্ধকারে, এক গোপন স্মৃতিতে বন্দী হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে হয়তো মনে পড়বে, এই যা। একটা সময় সেই স্মৃতিটুকুও থাকবে না। বেঁচে থাকবে তার জীবন্ত স্মৃতিগুলো নিয়ে। চোখের আড়ালে থাকলে মনেরও আড়াল হয়ে যাবে। তার চেয়ে অন্য কেউ এটা ভালো জানে না।

সে লবিটা পেরিয়ে যাবার সময় মার্বেল কাউন্টারের পাশে একটা টুলে বসা দ্বাররক্ষীর দিকে চেয়ে মাথা নাড়লো। একটা সংবাদপত্র পড়ছে লোকটা; মুখ তুলে তাকালো না বললেই চলে। কেবল লক্ষ্য করলো কেউ একজন আসছে।

এলিভেটরটা পঞ্চম তলায় গিয়ে থামলে জেসন গভীর দম নিয়ে দরজার কাছে গেলো। সে যেভাবেই হোক নাটকীয়তা এড়াতে চায়—কথায় কিংবা চাহুনিতে কোনো সতর্কতা যেনো না থাকে। সে জানে কি বলতে হবে। এটা খুব সতর্কভাবে ভেবে নিয়েছে সে।

.

“রাতের বেশির ভাগ সময় হেটে বেড়িয়েছি,” মেরির হাতটা ধরে তার লাল চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো সে। তার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো। “হ্যাংলা পাতলা ক্লার্কদের অনুসরণ করা, অর্থহীন কথাবার্তা শোনা, আর কফি খাওয়া। লো ক্লাসিক সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। ওটা একটা চিড়িয়াখানা। বানর আর ময়ূরের খেলা চলছে সেখানে। তবে আমার মনে হয় না কেউ কোনো কিছু জানে। একটা সম্ভাবনা রয়েছে, ওখানে একজন আছে, সে এক লোকের খোঁজে ব্যস্ত।

“সে?” জানতে চাইলো মেরি। তার কাঁপুনিটা কমে আসছে।

“যে লোকটা সুইচবোর্ড চালায়,” বর্ন বললো। “তার সঙ্গে মধ্যরাতে রুই হতেফিউলে’র বাস্ত্রিগুঁয়ে’তে দেখা করতে রাজি হয়েছি।”

“সে কি বললো?”

“সামান্য, তবে আমাকে আগ্রহী করার জন্যে যথেষ্ট। আমি লক্ষ্য করেছি, আমি যখন প্রশ্ন করছিলাম তখন সে আমাকে দেখছিলো। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি, তাই আমি খুব ভালোভাবেই ক্লার্কদের সাথে কথা বলতে পেরেছি।”

“প্রশ্ন? তুমি তাকে কি প্রশ্ন করেছো?”

“অনেক ব্যাপারে। প্রধানত ম্যানেজারের সম্পর্কে। মেয়েটা যদি কার্লোসের সাথে সরাসরি জড়িত থাকে তাহলে তার অবস্থা হতো হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মতো। আমি তাকে দেখেছি। সেরকম কিছু তার হয় নি। তার আচরণ ছিলো একেবারে স্বাভাবিক।”

“কিন্তু মেয়েটা তো খবরাখবর দেয়, তুমিই তো বলেছো। দামাকোর্ত সেটা বুঝিয়ে বলেছে। আর ফিশেটাও সে কথারই প্রমাণ দেয়, দেয় না?”

“সরাসরি দেয় না। সে একটা ফোন কল পায় এবং তাকে আরেকটা কল করার আগে বলা হয় কি বলতে হবে।” আসলে জ্যাকুলিন লাভিয়া বেশ ভালো ভাবেই জড়িত। জেসন এটাই খুঁজে পেয়েছে। তবে সে সরাসরি জড়িত নয়।

“তুমি এভাবে যাকে-তাকে যেখানে সেখানে প্রশ্ন করতে পারো না,” মেরি বললো।

“পারি,” বর্ন বললো, “যদি আমি একজন আমেরিকান লেখক হই, আর সেন অনরের উপর একটা জাতীয় ম্যাগাজিনে লেখার কাজ করি।”

“খুব ভালো, জেসন।”

“এতে কাজ হয়েছে। কেউ এরকম কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চায় না।”

“কি জানতে পারলে?”

“এরকম জায়গায় যা হয়, লো ক্লাসিকের নিজস্ব কাস্টমার আছে, সবাই বেশ ধনী। বেশিরভাগ লোকেই একে অন্যকে চেনে, কার্লোস জানে সে কি করছে। ওখানে একটা রেগুলার এনসারিং সার্ভিস আছে। তবে ফোনবুথে তালিকাবদ্ধ থাকে সেরকম কিছু নয়।”

“তারা তোমাকে এটা বলেছে?” মেরি তার চোখে চোখ রেখে হাতটা ধরে জানতে চাইলো।

“খুব বেশি না,” মেরির চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছায়া দেখে সতর্ক হয়ে উঠলো সে। “বারগোয়ার খুব নামডাক আছে ওখানে। সবাই তার প্রশংসা করে। তবে সবাই সেই ম্যানেজারকে মানে। আমার কাছে মনে হয়েছে মহিলা হলো তথ্যভাণ্ডার। সে আমাকে কিছুই বলে নি। কেউ একজন আরেকজনকে তথ্য দেয়, সে আবার সেটা আরেকজনকে দিয়ে দেয়। সোর্সটা ট্রেস করা যাবে না। এই পেয়েছি আমি।”

“মিটিংটা বাস্ত্রিগুঁয়ে’তে, আজ রাতেই বা কেন?”

“আমি চলে যাবার সময় সে আমার কাছে এসে একটা অদ্ভুত কথা বলেছে,” জেসনকে এই মিথ্যে অংশটা আবিস্কার করতে হলো না। এটা তাকে এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় মাত্র এক ঘণ্টা আগে চিরকুটের মাধ্যমে বলা হয়েছে। “সে বলেছে, তুমি যা বলছো হয়তো তুমি তাই, আবার তুমি তা নাও হতে পারো। তখনই সে আমাকে একটু পান করার প্রস্তাব করে। সে বলেছে সেটা যেনো সেন অনরের থেকে একটু দূরে হয়।” বর্ন দেখতে পেলো মেরির অবিশ্বাস ক্রমশ সরে যাচ্ছে। মেয়েটা তার মিথ্যের কারসাজিতে ধরা পড়েছে। কেন পড়বে না? সে হলো অসংখ্য খুনের নায়ক, খুবই উদ্ভাবনী। এই মূল্যায়নটা তার কাছে খুব একটা ঘৃন্য ব’লে মনে হলো না। সে হলো কেইন।

“সে হয়তো সেই একজন, জেসন। তুমি বলেছিলে তোমার খালি একজনকে দরকার, এটা হতে পারে সেই লোকটাই!”

“আমরা সেটা দেখবো,” বর্ন তার হাত ঘড়িটা দেখলো। তার বিদায় নেবার সময় ঘনিয়ে আসছে। সে আর পেছনে ফিরে তাকাতে পারবে না। “আমাদের হাতে প্রায় দু’ঘণ্টা আছে। তুমি অ্যাটাশি কেস্টা কোথায় রেখে যাবে?”

“মরিসে। আমি সেখানে রেজিস্টার করেছি।”

“চলো সেটা তুলে নিয়ে ডিনার ক’রে আসি। তুমি তো খাও নি, খেয়েছো কি?”

“না…” মেরির চোখেমুখে প্রশ্ন। “কেসটা যেখানে আছে সেখানেই রাখছো না কেন? ওখানেই তো বেশি নিরাপদে আছে। সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হবার কোনো দরকার নেই।”

“আমাদেরকে যদি এখান থেকে খুব দ্রুত চলে যেতে হয় তাহলে তো সেটা নিতে সমস্যা হবে,” সে সঙ্গে সঙ্গেই বললো, যেনো কথাটা তার ঠোঁটে লেগে ছিলো। মদ নেবার জন্যে ব্যুরোর দিকে গেলো জেসন। যেকোনো মুহূর্তে মুখ ফসকে বেফাঁস কিছু বের হয়ে যেতে পারে, তার চোখমুখ দেখে মেরি বুঝে যেতে পারে।

“কি হয়েছে, ডার্লিং?”

“কিছু না,” বহুরূপী হেসে বললো। “আমি খুব ক্লান্ত, সম্ভবত একটু নিরাশও।”

“হায় ঈশ্বর, কেন? এক লোক তোমার সাথে গোপনে মধ্যরাতে দেখা করতে চাচ্ছে, এমন এক লোক যে সুইচবোর্ড অপারেট করে। সে তোমাকে কিছু একটা বলতে পারে। আর তুমি বিশ্বাস করছো ঐ মেয়েটার সাথে কার্লোসের যোগাযোগ আছে। সে তোমাকে কিছু একটা বলতে বাধ্য। আমার মনে হচ্ছে তুমি খুব বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ছো!”

“তোমাকে এটা বোঝাতে পারবো কিনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই,” জেসন বললো। এখন সে আয়না দিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। “তোমাকে বুঝতে হবে, সেখানে আমি কি পেয়েছি।”

“কি পেয়েছো?”

“যা আমি পেয়েছি,” জেসন বললো। “এটা একটা আলাদা জগৎ,” বর্ন বলতে লাগলো, বোতল আর গ্লাসের জন্যে ব্যুরো দিকে এগোলো। “অন্যরকম সব লোকজন। কালো ভেলভেটের মধ্যে ছোটো ছোটো স্পটলাইট। গসিপ আর গালগল্প চলে, কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নেয়া হয় না। সেই সব লোভী লোকগুলো কিংবা সেই মহিলাটি কার্লোসের তথ্যদাতা হতে পারে, সেটা কেউ জানে না। কেউ কখনও সন্দেহ করে না কার্লোসের মতো এক খুনি এরকম লোকদের ব্যবহার করে। এটাই আমি পেয়েছি। খুবই হতাশাজনক।”

“আর অযৌক্তিকও বটে। তুমি যাই বিশ্বাস করো, ঐসব লোকজন খুবই সজ্ঞানে কাজ করে। তুমি জানো আমি কি ভাবছি? আমার মনে হচ্ছে তুমি ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত, তোমার দরকার একটু পান করার। তুমি যদি আজ রাতে ওটা বাতিল করতে তাহলে খুব ভালো হোতো। একদিনে তুমি অনেক বেশি কাজ ক’রে ফেলেছো।”

“আমি সেটা করতে পারবো না,” বেশ জোর দিয়ে বললো।

“ঠিক আছে, তুমি পারবে না,” অসহায়ের মতো বললো সে।

“দুঃখিত, আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।”

“হ্যা, আমি জানি,” সে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললো। “আমি ফ্রেশ হয়ে নিই, তারপর দু’জনে একসঙ্গে যাবো। তুমি একটু মদ খেয়ে নাও, ডার্লিং। তোমার মুখ তেতো হয়ে গেছে।”

“মেরি?”

“হ্যা?”

“একটু বোঝার চেষ্টা করো। ওখানে গিয়ে আমি যা জানতে পেরেছি সেটা আমাকে খুব হতাশ করেছে। আমি ভেবেছিলাম অন্যরকম কিছু হবে। সহজ কিছু।”

“তুমি যখন খোঁজাখুঁজি করছিলে আমি তখন অপেক্ষা করছিলাম, জেসন। কিছুই জানতাম না। সেটাও খুব সহজ ছিলো না।”

“আমি ভেবেছি তুমি কানাডায় ফোন করেছো। করো নি?”

মেরি থমকে দাঁড়িয়ে চুপ করে রইলো। “না,” বললো সে। “অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

বাথরুমের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলে বর্ন ডেস্কের কাছে গেলো। ড্রয়ার খুলে স্টেশনারিগুলো বের করলো। একটা বল পয়েন্ট নিয়ে কথাগুলো লিখে ফেললো :

সব শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছি। কানাডায় ফিরে যাও। কাউকে কিছু বোলো না, আমাদের দু’জনের ভালোর জন্যেই। আমি জানি তোমার সাথে কোথায় দেখা করা যাবে।

কাগজটা ভাজ ক’রে সেটা একটা খামে ঢুকিয়ে মানিব্যাগ থেকে ফরাসি আর সুইস ফ্রাঁগুলো বের ক’রে চিঠিটার সাথে ঐ খামে ভরে রাখলো জেসন। খামটা বন্ধ ক’রে তার উপর লিখলো : মেরি।

সে খুবই আকুলভাবে লিখতে চাইলো : আমার ভালোবাসা, আমার প্রিয়তমা। কিন্তু পারলো না।

বাথরুমের দরজা খুলে গেলে খামটা তার জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিলো সে। “খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো দেখছি,” সে বললো।

“তাই নাকি? আমার তো তা মনে হচ্ছে না। তুমি কি করছিলে?”

“আমি একটা কলম খুঁজছিলাম,” বল পয়েন্টটা তুলে নিয়ে সে জবাব দিলো।

“ঐ লোকটা যদি আমাকে কিছু বলে আমি সেটা লিখে রাখবো।”

মেরি শুকনো খালি গ্লাসটার দিকে তাকালো। “তুমি মদ খাও নি দেখছো?”

“গ্লাস ব্যবহার করি নি।”

“আচ্ছা। আমরা কি এবার বের হতে পারি?”

লিফটে চড়ার সময় তারা কোনো কথা বললো না। কয়েক মুহূর্ত বাদে জেসন মেরির হাতটা ধরলে সে তার হাতটা শক্ত ক’রে ধরে তার দিকে তাকালো। মেরির এই চার্নি অপ্রতিরোধ্য।

ওহ্ ঈশ্বর, আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি মেরি। তুমি আমার পাশে আছো, আমাকে স্পর্শ করছো আর আমি মারা যাচ্ছি। তবে তুমি আমার সাথে মরতে পারো না। আমি হলাম কেইন।

“কোনো কিছু হবে না। সব ঠিক থাকবে,” জেসন বললো। দরজাটা খুলতেই জেসন গভীর করে দম নিয়ে নিলো।

“ওহ্, আমি ভুলে গেছি।”

“কি?”

“আমার মানিব্যাগ। আমি সেটা ব্যুরোর ড্রয়ারে রেখে এসেছি। লবিতে আমার জন্যে অপেক্ষা করো।” সে বের হয়ে আবার বাটন চেপে দরজাটা বন্ধ ক’রে ঘরের দিকে যেতে লাগলো।

ঘরে ঢুকেই খামটা জ্যাকেটের পকেট থেকে বের ক’রে বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দিলো। তীব্র যন্ত্রণার সাথে সে খামটার দিকে ফিরে তাকালো।

“বিদায়, আমার ভালোবাসা,” ফিফিস্ ক’রে বললো সে।

রুই দ্য রিভোলির হোটেল মরিসের বাইরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে বর্ন অপেক্ষা করছে আর প্রবেশপথের কাঁচের দরজা দিয়ে মেরিকে দেখছে। মেরি ফ্রন্ট ডেস্কের সামনে আছে। অ্যাটাশি কেসটা নেবার জন্যে স্বাক্ষর করছে সে। স্বাক্ষরের পরেই কেসটা তার হাতে দিয়ে দেয়া হলো। এবার মাত্র ছয় ঘণ্টার জন্যে ভাড়া নেয়া হোটেলের একটা ঘরের বিল মিটিয়ে দেবার জন্যে ক্লার্ককে বললো সে।

বিলটা দেয়ার আগে দু’মিনিট পার হয়ে গেলো। একটু গা ছাড়া ভাব। মরিসের কোনো গেস্টের জন্যে এটা স্বাভাবিক ব্যবহার নয়।

মেরি রাস্তায় চলে এলো, পাশেই একটা দোকানের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় সে দাঁড়িয়ে আছে, মেরি তার কাছে চলে এলো। জেসনকে সুটকেসটা দিয়ে জোর ক’রে একটু হাসলো। তার ভেতর থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো যেনো।

“ঐ লোকটা আমাকে সন্দেহ করছে। আমি নিশ্চিত সে মনে করছে আমি ঘরটা কোনো দুই নাম্বারি কাজে ব্যবহার করেছি।”

“তুমি তাকে কি বলেছো?” বর্ন জিজ্ঞেস করলো।

“আমার পরিকল্পনা বদলে গেছে, এই।”

“ভালো। যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। তোমার নামটা রেজিস্ট্রেশন কার্ডে আছে। তুমি কেন ওখানে ছিলে তার জন্যে একটা কারণ ভেবে রেখো।”

“ভেবে রাখবো?…আমি একটা কারণ ভেবে রাখবো?” মেরি তার চোখের দিকে তাকালো।

“মানে, আমরা একটা কারণ ভেবে রাখবো। সঙ্গত কারণেই।”

“সঙ্গত কারণে।”

“চলো এবার।” বৃষ্টির মধ্যে তারা রাস্তাটা দিয়ে হেটে গেলো। খুব জলদি ভারি বৃষ্টি নামবে। সে মেয়ির হাতটা ধরলো—তাকে গাইড করার জন্যে নয়, সৌজন্যতাবশতও নয়—কেবল তাকে স্পর্শ করার জন্যে। সময় খুব কমই আছে।

আমি কেইন। আমি মৃত্যু।

“একটু আস্তে হাটতে পারো না?” মেরি বললো।

“কি?” জেসন বুঝতে পারলো সে আসলে দৌড়াতে শুরু করেছে। “আমি একটা ট্যাক্সি ধরতে চাচ্ছি,” হাটার গতি না কমিয়েই সে বললো। সামনেই একটা খালি ক্যাব দাঁড়িয়ে আছে। “খুব জোরে বৃষ্টি নামবে।”

তারা কাছে পৌঁছাতেই ক্যাবটা চলে গেলে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো। তারা এখন একটি সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেরির দিকে তাকিয়ে জেসন দেখলো সে চোখ দুটো কুচ্‌কে রেখেছে। প্রথমে বর্ন ভাবলো বৃষ্টির কারণে সে এরকমটি করছে। কিন্তু আচমকা মেরি ডান হাত দিয়ে নিজেই নিজের মুখ চাপা দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। বর্ন তাকে ধরে তার মাথাটা বুকে চেপে রাখলো। সে চিৎকার থামালো না।

সে তার এই হিস্টিরিয়াগ্রস্ত আচরণের কারণটা খুঁজে বের করার জন্যে চারপাশে তাকালো। এরপরই ওটা দেখতে পেলো সে। আধ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে বুঝে ফেললো চূড়ান্ত একটি অপরাধ ক’রে ফেলেছে সে। তাকে আর ছেড়ে যেতে পারবে না জেসন। এখন আর সেটা সম্ভব নয়।

সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রের একটা ট্যাবলয়েড পত্রিকায় বড় বড় কালো অক্ষরে লেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে :

খুনি এখন প্যারিসে
জুরিখ হত্যাকাণ্ডের জন্যে এক মেয়েকে খোঁজা হচ্ছে
সন্দেহভাজন কয়েক মিলিয়ন চুরি করেছে ব’লে গুজব আছে

সেই ভয়ংকর লেখাগুলোর নিচে মেরির একটা ছবি ছাপা হয়েছে।

“চুপ করো!” জেসন মেরির মুখটা বুকে চেপে ফিফিস্ ক’রে বললো। পকেট থেকে কয়েন বের ক’রে দুটো পত্রিকা কিনে নিলো সে। সঙ্গে সঙ্গে তারা বৃষ্টিতে ভেঁজা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ দিয়ে ছুটতে লাগলো। এবার তারা দু’জনেই গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে।

.

বর্ন দরজাটা খুলে মেরিকে আগে ঘরে ঢুকতে দিলো। ঘরে ঢুকেই নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো সে। তার দৃষ্টি জেসনের উপর। তার নিঃশ্বাসে অস্বাভাবিকতা। ভয় আর রাগের এক মিশ্রণ সেখানে।

“আমি তোমার জন্যে মদ নিয়ে আসছি,” বললো জেসন। গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে সে ভাবতে লাগলো। সে করেছে কি? হায় ঈশ্বর!

আমি কেইন। আমি মৃত্যু।

মেরির আর্তনাদ শুনতে পেয়ে ঘুরে তাকালো, কিন্তু তাকে থামানোর জন্যে খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। মেরির হাতে খামটা। ইতিমধ্যেই সেটা খুলে চিঠিটা পড়েও ফেলেছে সে। তারপরই তার ভেতর থেকে একটা সুতীব্র আর্তনাদ ঠেলে বের হয়ে এসেছে।

“জেসন!”

“প্লিজ! না!” সে ছুটে এসে তার হাতটা ধরে ফেললো। “এটা কোনো ব্যাপার না। এতে কিছু যায় আসে না। এটা আর হিসেবের মধ্যে রেখো না!” অসহায়ের মতো বলতে লাগলো সে। মেরির চোখে জল গড়িয়ে পড়তে দেখলো। “আমার কথা শোনো! এটা আমি আগে লিখেছিলাম।”

“তুমি চলে যাচ্ছিলে! হায় ঈশ্বর, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে!” তার দৃষ্টিতে শূন্যতা আর ভয়। “আমি টের পেয়েছিলাম। আমি জানতাম!”

“আমিই তোমাকে টের পাইয়ে দিয়েছিলাম।” সে তার দু’কাঁধ ধরে তার মুখোমুখি করলো। “তবে এটা এখন শেষ হয়ে গেছে। আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। শোনো আমার কথা। আমি যাচ্ছি না!”

মেরি আবারো চিৎকার দিলো। “আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না!”

তাকে জড়িয়ে ধরলো জেসন। “আমাদেরকে আবার শুরু করতে হবে। বোঝার চেষ্টা করো। এখন সব হিসেব বদলে গেছে—আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। এভাবে তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি না।”

জেসনের বুকে হাত দিয়ে আঘাত করলো মেরি। “কেন জেসন? কেন?”

“পরে বলবো। এখন নয়। এখন কিছু বোলো না। আমাকে ধরে রাখো কেবল।”

.

এভাবে কয়েক মুহূর্ত অতিক্রম হয়ে গেলো। হিস্টিরিয়া শেষ হয়ে এলে চেতনা ফিরতেই একটা চেয়ারে তাকে বসালো বর্ন। এবার দু’জনেই হেসে ফেললো। জেসন তার পাশে হাটু মুড়ে ব’সে পড়লে কিছুক্ষণ চুপ রইলো তারা।

“মদ খাবে?” অবেশেষে সে বললো।

“মনে হয় খাবো,” বললো মেরি। “তুমি কিছুক্ষণ আগেই ঢেলে রেখেছো।”

“সেটা এমনি এমনি পড়ে থাকবে না,” বলেই সে ব্যুরোর কাছে গিয়ে দু’গ্লাস হুাইস্কি নিয়ে এলো। মেরি গ্লাসটা হাতে নিলে সে বললো, “ভালো লাগছে?”

“একটু। তবে এখনও ভয় আর শংকা কাটছে না…হয়তো রাগও। আমি এতোটা ভীত যে এ নিয়ে ভাবতে পারছি না।” মদে চুমুক দিয়ে সে চোখ দুটো বন্ধ ক’রে ফেললো। চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো, “তুমি এটা কেন করলে, জেসন?”

“কারণ আমি ভেবেছিলাম আমাকে এটা করতে হবে। এটাই হলো সহজ জবাব।”

“এটা কোনো জবাবই না। আমি তার চেয়েও বেশি কিছু আশা করছি।”

“হ্যা, তা করতে পারো, আমি সেই জবাব তোমাকে দেবো। তোমাকে সেটা শুনতে হবে। বুঝতে হবে। তোমাকে তোমার নিজেকে রক্ষা করতে হবে।”

“রক্ষা—”

“আমি সে কথায় আসছি। তবে আমাদেরকে আগে জানতে হবে কি হয়েছে- আমার নয়, তোমার ব্যাপারে বলছি। এখান থেকেই আমাদেরকে শুরু করতে হবে। তুমি কি সেটা করতে পারবে?”

“পত্রিকাটা?”

“হ্যা।”

“ঈশ্বর জানে, আমি খুবই আগ্রহী,” দুর্বলভাবে হেসে বললো সে।

“এখানে,” জেসন পত্রিকা দুটো হাতে নিয়ে বললো, “আমরা দু’জনেই এটা পড়বো।”

“কোনো খেলা নয়?”

“কোনো খেলা নয়।”

সুদীর্ঘ আর্টিকেলটা পড়লো সে। পড়ার সময় মেরি বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শেষে অবিশ্বাসে মাথা ঝাঁকাতে লাগলো সে। বর্ন কিছু বললো না। সে ইলিচ রামিরেজ সানচেজের লম্বা হাতটা দেখতে পাচ্ছে। কার্লোস মৃত্যুর আগপর্যন্ত কেইনকে অনুসরণ করবে। পৃথিবীর শেষপ্রান্ত পর্যন্ত। কার্লোস তাকে খুন করবে। মেরি সেন জ্যাক পরিত্যাগযোগ্য। কেইনকে ধরার জন্যে বলির পাঠা বানানো হবে তাকে।

আমি কেইন। আমি মৃত্যু।

আর্টিকেলটা আসলে দুটো আর্টিকেল—সত্য-মিথ্যা আর কল্পনার সাথে অনুমান মেশানো এক খবর। প্রথম অংশে বলা হচ্ছে, এক কানাডিয় সরকারী কর্মকর্তা, সেন জ্যাক নামের এক মহিলা অর্থনীতিবিদের কথা। তাকে তিন তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। তার আঙুলের ছাপ কানাডা সরকার নিশ্চিত করেছে। ক্যারিলিওন দু’লাক থেকে পুলিশ একটা হোটেলের চাবি পেয়েছে, গুইসানকুয়ে’র মারামারির সময় সেটা খোয়া গেছে ব’লে মনে করা হচ্ছে। এটা মেরি সেন জ্যাকের ঘরের চাবি। যে ক্লার্ক তাকে চাবিটা দিয়েছে সে তাকে বেশ ভালোমতোই মনে করতে পেরেছে—তাকে খুবই উদ্বিগ্ন আর বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিলো। শেষ আলামতটা হলো একটা পিস্তল, স্টেপডেকস্ট্রাসের দুটো হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গেছে। ব্যালেস্টিক পরীক্ষায় জানা গেছে অস্ত্রটা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানেও আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। আবারো কানাডা সরকার নিশ্চিত করেছে সেটা। ছাপটি মহিলার হাতের।

আর্টিকেলের এই জায়গায় সত্যকে বিকৃত করা হয়েছে। একটা গুজবের কথা বলা হয়েছে, যাতে বলা আছে, ব্যানহফস্ট্রাসের ব্যাংক থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার কম্পিউটার কারসাজি ক’রে চুরি করা হয়েছে। এই একাউন্টটা ছিলো একটি আমেরিকান কর্পোরেশনের, যার নাম ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান। ব্যাংকের নাম গেইমেনশেফট। এছাড়া বাকি সবই অস্পষ্ট আর ধোঁয়াটে। সত্যের চেয়ে অনুমানই বেশি।

অজ্ঞাত এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে এক আমেরিকান পুরুষ যথাযথ কোড ব্যবহার ক’রে প্যারিসে নতুন এক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করেছে। প্যারিসে সেই একাউন্টের মালিক টাকাগুলো নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ব্যাংকের একাউন্টের কোড নাম্বারগুলো বের করা রীতিমতো অসম্ভব কাজ হলেও সেটাই করা হয়েছে, খুব সম্ভবত অত্যাধুনিক কম্পিউটার ব্যবহার ক’রে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা হের ওয়ালথার এপফেল বলেছেন, এ বিষয়ে পুরোদমে তদন্ত কাজ চলছে। তবে ব্যাংকের আইন অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

এখানে এসে মেরি সেন জ্যাকের কানেকশনটা স্পষ্ট করা হয়েছে। তাকে একজন সরকারী অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নিয়মকানুনের অভিজ্ঞ লোক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তার রয়েছে কম্পিউটার জ্ঞান। তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে সহযোগী হিসেবে। এই চুরির কাজে সেও ভূমিকা রেখেছে। একজন পুরুষ সন্দেহভাজন আছে। তাকে ঐ মেয়ের সাথে ক্যারিলিওন দু’লাক-এ একসঙ্গে দেখা গেছে।

মেরি প্রথমে পড়াটা শেষ ক’রে পত্রিকাটা ফেলে দিলো মেঝেতে। শব্দ শুনে বর্ন তার দিকে তাকালো। মেরি দেয়ালের দিকে চেয়ে আছে। তার চোখেমুখে এক ধরণের অস্বাভাবিক স্থিরতা। বর্ন এটা মোটেও চাচ্ছিলো না। সে দ্রুত পড়া শেষ ক’রে কয়েক মুহূর্ত বাকহীন রইলো। তারপর কথা বললো সে।

“মিথ্যে,” বললো সে, “আর এটা তারা আমার জন্যেই করেছে। আমি কে এবং কি, তার জন্যে করেছে। তোমাকে বলির পাঠা বানিয়ে আমাকে ধরবে। আমি দুঃখিত। বলতে পারছি না কতোটা দুঃখিত।”

মেরি তার দিকে তাকালো এবার। “এটা মিথ্যের চেয়েও বেশি, জেসন।”

“মিথ্যে ছাড়াও অনেক সত্য আছে এখানে।”

“সত্য?” একমাত্র সত্য হলো তুমি জুরিখে ছিলে। তুমি কখনও অস্ত্র ধরো নি। তুমি স্টেপডেকস্ট্রাসের আশেপাশেও ছিলে না। তুমি কোনো হোটেলের চাবি হারাও নি, গেইমেনশেফট ব্যাংকেও যাও নি।”

“একমত, তবে আমি সেই সত্যটা নিয়ে কথা বলছি না।”

“তাহলে?”

“গেইমেনশেফট, স্ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান, এপফেল। এগুলো তো সত্য—বিশেষ ক’রে এপফেলের বক্তব্যটা—অবিশ্বাস্য। সুইস ব্যাংকাররা খুবই সতর্ক। তারা আইনকে হালকা চোখে দেখে না। এসব আইন লঙ্ঘন কররা দণ্ড খুবই মারাত্মক। সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক সংক্রান্ত অপরাধ গুরুতর অফরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এপফেল যা বলেছে তার জন্যে সে কয়েক বছরের সাজা ভোগ করতে পারে। সে কেবল একাউন্ট সম্পর্কেই বলে নি, নামটাও উল্লেখ করেছে। যদি না তাকে কোনো শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ এই কথা বলতে আদেশ করে থাকতে পারে, যারা আইনকে উপেক্ষা করতে পারবে।”

“কেন? কেন গেইমেনশেফট অথবা ট্রেডস্টোন, সেভেনটি-ওয়ান কিংবা এপফেল এই গল্পের অংশ হলো?” মেরি বললো।

“আমি তো তোমাকে বলেছিই, তারা আমাকে চায়, তারা জানে আমরা এক সঙ্গে আছি। কার্লোস জানে আমরা এক সঙ্গে আছি। তোমাকে পেলে আমাকেও তারা পাবে।”

“না, জেসন, এটা কার্লোসের চেয়েও বড় কিছু। তুমি আসলে বুঝতে পারছো না, কার্লোসের পক্ষে সুইজারল্যান্ডের আইন এভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।” সে তার দিকে তাকালো। “এটা একটা গল্প নয়, দুটো গল্প। দুটোই মিথ্যে। প্রথমটি দ্বিতীয়টির দূর্বল অনুমানের সাথে সম্পর্কিত—লোকজনের অনুমান—একটা ব্যাংকিং সমস্যা কখনও জনগনকে জানানো হবে না। যদি না পুরোপুরি তদন্ত হবার পর সত্য খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেই দ্বিতীয় গল্পটা—ইচ্ছাকৃতভাবেই ভূয়া বক্তব্য দেয়া হয়েছে যে, গেইমেনশেফট থেকে মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়েছে—তার সাথে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে আমি নাকি জুরিখের তিনটি খুনের সাথে জড়িত।”

“বুঝিয়ে বলো, প্লিজ।”

“এখানে, জেসন। আমার কথাটা বিশ্বাস করো। এটা ঠিক আমাদের সামনে আছে।”

“সেটা কি?”

“কেউ আমাদের কাছে একটা মেসেজ পাঠানোর চেষ্টা করছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *