অধ্যায় ১৭
“আমার মনে হয় জুরিখের ফিশে কনফিদেনশিয়াল’র ব্যাপারে কথা বলার সময় হয়েছে।
“হায় ঈশ্বর!”
“আপনি যাকে খুঁজছেন সে আমি নই।”
বর্ন মহিলার হাতটা শক্ত ক’রে ধরলো যাতে সে আরজেনতুইলের জনাকীর্ণ রেস্তোরাঁর প্যাসেজ দিয়ে দৌড়ে পালাতে না পারে। জায়গাটা প্যারিস থেকে কয়েক মাইল দূরে। তারা এখন একা। ভেলভেটের বুথটা একটা খাঁচার মতো।
“তুমি কে?” লাভিয়া ভুরু কুঁচকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো।
“একজন ধনী লোক যে বাহামা’তে থাকে। তুমি কি বিশ্বাস করছো না?”
“আমার বোঝা উচিত ছিলো,” বললো মহিলা, “কোনো চেক্ না- কেবল নগদ। তুমি এমনকি বিলের দিকে তাকিয়েও দেখো নি।”
“অথবা দামগুলোর দিকে। এজন্যেই তো তুমি আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছো।”
“আমি একটা বোকা। ধনীরা সব সময় মূল্যের দিকে আগে তাকায়।” লাভিয়া চারপাশে তাকালো। দেখলো পালানোর পথ আছে কিনা। পালানোর জন্যে একজন ওয়েটারকে হয়তো সে ডাকতে পারে।
“ভুলেও এরকমটি ভেবো না,” মহিলার চোখ দেখে জেসন বললো। “সেটা হবে একদম বোকার মতো কাজ। কথা বললে আমাদের দু’জনেরই মঙ্গল।”
তার দিকে তাকালো মহিলা। “আমি আবারো জিজ্ঞেস করছি, তুমি কে?”
“আমার নামটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা বলেছি সেটাই ধরে নাও।”
“বৃগস্? এটা তো ভূয়া।”
“ঠিক ঐ লারুজের মতো, আর সেটা একটা ভাড়া গাড়ি নিয়ে ভালোয়াঁ ব্যাংকে তিনজন খুনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। ওখানে তারা হারিয়ে ফেলেছিলো। তারা আজ দুপুরে পন্ত নোয়েফেও ধরতে পায় নি। সে পালিয়ে গেছে।”
“ওহ্ ঈশ্বর!” মহিলা চিৎকার ক’রে ভেঙে পড়লো।
“আমি বলেছি এরকম করবে না!” বর্ন তার হাতটা আরো শক্ত ক’রে ধরে টান দিলো। “আমি যদি চিৎকার দেই, মঁসিয়ে?”
“তাহলে আমি আরো জোরে চিৎকার দেবো,” জবাব দিলো জেসন। “আমাদের দু’জনকে ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের ক’রে দেবে তারা। আর বাইরে গেলে আমার মনে হয় না তোমাকে সামলানো অসম্ভব হবে। কথা বলছো না কেন? আমরা একে অন্যের কাছ থেকে হয়তো কিছু জানতে পারবো। হাজার হোক আমরা চাকরিজীবি, চাকরিদাতা নই।”
“তোমাকে আমার বলার কিছু নেই।”
“তাহলে আমিই শুরু করি। হয়তো তুমি তোমার মত বদলাবে।” সে আস্তে ক’রে তার হাতটা আলগা করলে মহিলা ধীরস্থির হয়ে গেলো। শোনার জন্যে প্রস্তুত সে। “তুমি জুরিখে মূল্য চুকিয়েছো। আমরাও মূল্য চুকিয়েছি। অবশ্যই তোমার চেয়ে বেশি। আমরা একই লোকের পিছু নিয়েছি। আমরা জানি কেন আমরা তাকে চাচ্ছি।” সে তার হাতটা ছেড়ে দিলো। “কেন তুমি করলে?”
মহিলা প্রায় আধ মিনিট কোনো কথা বললো না। তার বদলে নিরবে জেসনকে দেখে গেলো। তার চোখেমুখে ক্রোধ থাকলেও তাতে ভয় রয়েছে। বর্ন জানতো সে সঠিকভাবে প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছে। জ্যাকুলিন লাভিয়ার জন্যে কথা বলাটা হবে বিপজ্জনক। এটা তার জীবনকে হুমকীর মুখে ফেলে দিতে পারে।
“আমরা’টা কে?” সে জানতে চাইলো।
“যে কোম্পানিটা নিজেদের টাকাগুলো চাচ্ছে। প্রচুর টাকা। তার কাছে সেটা আছে।”
“তাহলে সে ওগুলো আয় করে নি?”
জেসন জানতো তাকে খুব সতর্ক হতে হবে। সে যতোটুকু জানে তার চেয়ে অনেক বেশি তাকে জানতে হবে। “ঠিক আছে, এ নিয়ে বিতর্ক আছে।”
“কি ক’রে তা হতে পারে? হয় সে করেছে নয়তো করে নি। এরমধ্যে মাঝামাঝি কোনো জায়গা নেই।”
“এবার আমার পালা,” বর্ন বললো। “তুমি একটা প্রশ্নের সাথে আরেকটা প্রশ্ন করছো, আমি তোমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাই নি। এবার চলো ফিরে যাই সেই কথায়। তুমি কেন তাকে চাচ্ছো? কেন সেন অনরের একটা অভিজাত দোকানের একটি প্রাইভেট ফোন জুরিখের ফিশের সাথে সংযোগ দেয়া আছে?”
“সেটার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মঁসিয়ে।
“কার জন্যে?”
“তুমি কি পাগল?”
“ঠিক আছে। এই প্রশ্নটা এখনকার মতো বাদ দিচ্ছি। মনে হচ্ছে এটা আমরা জানি।”
“অসম্ভব!”
“হয়তো, হয়তো না। তাহলে এটার ব্যবস্থা করা হয়েছে…একজন লোককে হত্যা করতে?”
“আমার বলার কিছু নেই।”
“তারপরও কিছুক্ষণ আগে আমি একটা গাড়ির কথা বললে তুমি পালানোর চেষ্টা করেছিলে। এটা তো কিছু বলছে বলেই মনে হচ্ছে!”
“একেবারেই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।” জ্যাকুলিন লাভিয়া তার মদের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললো। “ভাড়ার ব্যবস্থাটা আমিই ক’রে দিয়েছি। এটা বলতে কোনো সমস্যা দেখেছি না, কারণ কোনো প্রমাণ নেই যে, আমি সেটা করেছি। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।” আচমকা তার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো। “তোমরা কারা?”
“আমি তোমাকে বলেছি। একটা কোম্পানি, যারা নিজেদের টাকাগুলো ফেরত চাচ্ছে।”
“তুমি খামোখাই নাক গলাচ্ছো! প্যারিস ছাড়ো! এসব বাদ দাও!”
“কেন আমরা সেটা করবো? আমরাই তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আমরা আমাদের ব্যালান্সশিটটা সংশোধন করতে চাই। সেটা করার ক্ষমতা আর অধিকার আমাদের আছে।”
“তোমাদের কিছুই করার নেই!” মাদাম লাভিয়া রেগেমেগে বললো। “ভুলটা তোমাদের, তোমরাই সেটার মূল্য চুকাবে!
“ভুল?” তাকে খুব সতর্ক হতে হবে। “আমাদের কাছ থেকে চুরি করলে আমরা তো আর দোষী হতে পারি না!”
“তোমাদের পছন্দটা ভুল ছিলো, মঁসিয়ে। তোমরা ভুল লোককে বেছে নিয়েছিলে।”
“সে জুরিখ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার চুরি করেছে,” জেসন বললো। “তুমি সেটা জানো। আর তোমরা যদি সেটা তার কাছ থেকে নিতে যাও তাহলে অনেক বড় ভুল ক’রে ফেলবে।”
“আমরা কোনো টাকা চাই না!”
“জেনে খুশি হলাম। ‘আমরা’-টা কারা?”
“আমার মনে হয় তুমি বলেছিলে সেটা তুমি জানো।”
“আমি বলেছিলাম আমাদের একটা ধারণা আছে। জুরিখের কোয়েনিগ নামের লোকটার পরিচয় ফাঁস করাটাই যথেষ্ট। প্যারিসের দামাকোর্ত। আমরা যদি সেটা করি তো খুব বড়সড় বিব্রতকর একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই না?”
“টাকা? ব্ৰিত? এগুলো তো কোনো ইসু নয়। তোমরা সবাই বোকার মতো কাজ করছো! আবারো বলছি, প্যারিস ছাড়ো। এসব বাদ দাও। এটা আর তোমার বিষয় নয়।”
“আমরা মনে করি না সেটা তোমাদেরও বিষয়। সত্যি বলতে কি, আমরা মনে করি তোমরা অযোগ্য।”
“অযোগ্য!” অবিশ্বাস ফুটে উঠলো লাভিয়ার চোখেমুখে।
“ঠিক।”
“তোমার কি কোনো ধারণা আছে, কি বলছো? কার সম্পর্কে বলছো?”
“তাতে কিছুই যায় আসে না। তোমরা এসব থেকে বিরত না থাকলে সব ফাঁস ক’রে দেবো। জুরিখ, ভালোয়াঁ, সব। সুরেত, ইন্টারপোলকে ডাকবো…শুরু হবে পাকড়াও অভিযান।”
“তুমি একটা পাগল। বোকাও বটে।”
“মোটেই না। সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমাদের বন্ধু রয়েছে। আমাদেরকে আগে তথ্য যোগাড় করতে হবে, তারপর সঠিক সময় আর স্থানের জন্যে অপেক্ষা করবো। আমরা তাকে পাকড়াও করবোই।”
“তাকে তোমরা কিছুই করতে পারবে না। সে আবারো উধাও হয়ে যাবে! সেটা কি বুঝতে পারছো না? সে প্যারিসে আছে। একদল লোক তাকে খুঁজছে, সেটা সে জানে না। সে হয়তো একবার দু’বার পালাতে পারবে। কিন্তু তৃতীয়বার পারবে না! আমরা তাকে ফাঁদে ফেলে দিয়েছি!”
“আমরা চাই না তোমরা তাকে ফাঁদে ফেলো। এটা আমাদের কাম্য নয়।” প্রায় সময় হয়ে গেছে, ভাবলো বর্ন। তবে সত্যটা বের করার জন্যে মহিলাকে বিস্ফোরিত করতে হবে। আরেকটু সময় লাগবে। “আমাদের আলটিমেটামটা শোনো, আর এটা তুমিই জায়গা মতো পৌঁছে দেবে—তা না হলে তোমার অবস্থা হবে কোয়েনিগ আর দামাকোর্তের মতো। তোমাদের শিকার অভিযান বন্ধ করো, তা যদি না করো আগামীকাল সকাল থেকে আমরা খুব দ্রুত আমাদের কাজ শুরু ক’রে দেবো। আমরা এমন শোরগোল করবো যে, সেন অনরের লো ক্লাসিক খুবই বিখ্যাত আর জনপ্রিয় জায়গা হয়ে উঠবে। অনেকে ওখানে যাবে, তবে কোনো ক্রেতা নয়, বুঝলে?”
চড়া মেকআপের মুখোশটাতে ফাঁটল ধরলো, “তুমি এটা করবে না! কতো বড় আস্পর্ধা তোমার? এসব বলার তুমি কে!”
একটু চুপ থাকলো সে তারপর আঘাত হানলো। “এমন একদল লোক যারা তোমাদের কার্লোসকে তেমন একটা পরোয়া করে না।”
লাভিয়া জমে গেলো একেবারে। তার চোখ দুটো গোল গোল হয়ে চোখেমুখে একটা বিস্ময় ফুঁটে উঠলো। “তুমি জানো,” নিচু কণ্ঠে বললো সে। “তারপরও তোমরা ভাবছো তার বিরুদ্ধে তোমরা যেতে পারবে? তোমরা মনে করো তোমরা কার্লোসের সমকক্ষ?”
“বলতে গেলে সেরকমই।”
“তুমি একটা উন্মাদ। কার্লোসকে তোমরা আলটিমেটাম দিতে পারো না।”
“দিলাম তো।”
“তাহলে তুমি মরে গেছো। তুমি এ নিয়ে কারো সাথে কথা বলেছো তো ঐদিনই শেষ হয়ে যাবে। সব জায়গায় তার লোক রয়েছে। তারা তোমাকে রাস্তায় ফেলে জবাই করবে।
“তারা তা করতে পারে যদি তারা জানে কাকে জবাই করতে হবে,” জেসন বললো। “তুমি ভুলে গেছো। তারা জানে তুমি কে। কোয়েনিগ আর দামাকোর্ত I যখনই তোমাকে ফাঁস করবো, তারা তোমাকে শেষ ক’রে দেবে। কার্লোস আর তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে না। কিন্তু আমাকে কেউ চেনে না।”
“তুমি ভুলে গেছো, মঁসিয়ে; আমি তোমাকে চিনি।”
“এ নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। আমার খোঁজ কোরো…এসব ক্ষতি হবার পর আর তোমার নিজের ভাগ্য নির্ধারণের পর। খুব বেশি সময় লাগবে না।”
“এটা একেবারেই পাগলামী। কোত্থেকে যে এসেছো তুমি; উড়ে এসে জুড়ে ব’সে এরকম পাগলের মতো কথা বলছো। তুমি এটা করতে পারবে না!”
“তুমি কি আপোষ করার কথা বলছো?”
“এটা করা যেতে পারে,” জ্যাকুলিন লাভিয়া বললো। “যেকোনো কিছু সম্ভব।”
“এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার মতো অবস্থান কি তোমার আছে?”
“আমি এটা পৌঁছে দেয়ার মতো অবস্থানে আছি…অন্যেরা এটা পৌঁছে দেবে তার কাছে।”
“তাহলে আমরা কথা বলতে পারি।”
“তা পারি, মঁসিয়ে,” মাদাম লাভিয়া বললো।
“তাহলে যেটা নিশ্চিত সেটা নিয়েই শুরু করা যাক।”
“কোটা?”
এখনই সত্যটা বলতে হবে।
“কার্লোসের সাথে বর্নের কি হয়েছে? সে কেন তাকে চাচ্ছে?”
“বর্নটা আবার কে—” মহিলা চুপ মেরে গেলো, তিক্ততা আর ভয় তিরোহিত হলো বিস্ময়ে।
“আমি আবারো সেটা বলছি,” নিজের হৃদস্পন্দনটা তার কানে এলো। “কার্লোসের সাথে বর্ন কি করেছে?”
“সে তো কেইন! আমাদের মতো তুমিও সেটা জানো। সে তোমার ভুল পছন্দ! তুমি এক ভুল লোককে বেছে নিয়েছো!”
কেইন। সে নামটা শুনেছে, একটা প্রতিধ্বনি বজ্রপাতের মতো তার কানে তালা লাগিয়ে দিলে তার মাথার তীব্র যন্ত্রণাটা আবার ফিরে এলো। বার বার তার মাথায় শব্দটা উচ্চারিত হতে লাগলো। কেইন। কেইন। আবারো চারপাশে কুয়াশা। অন্ধকার, ঝড়ো বাতাস। বিস্ফোরণ।
আলফা, ব্রাভো, কেইন, ডেল্টা, ইকো, ফক্সট্রট…কেইন, ডেল্টা। ডেল্টা, কেইন, ডেল্টা… কেইন।
কেইন-এ চার্লি।
ডেল্টা-তে কেইন!
“কি হয়েছে তোমার?”
“কিছু না,” বর্ন তার ডান হাতটা দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরে রেখেছে। তার আঙুলগুলো এতো জোরে খামছে ধরেছে যে, মাংস কেটে ভেদ করছে যেনো। তাকে কিছু একটা করতে হবে। তার এই কাঁপুনিটা বন্ধ করতে হবে। যন্ত্রণাটা উপেক্ষা করতে হবে। তার মাথাটাও পরিস্কার ক’রে নিতে হবে। সত্যের চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে পারে না। “বলে যাও,” নিজের কণ্ঠটা নিয়ন্ত্রণে এনে বললো সে।
“তুমি কি অসুস্থ? তোমাকে খুব ফ্যাকাশে আর—”
“আমি ঠিক আছি,” সে কর্কশভাবে বললো। “বললাম তো, বলে যাও।”
“তোমাকে বলার আর কি আছে?”
“পুরোটা বলো। আমি এটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই।”
“কেন? এমন কিছু নেই যা তুমি জানো না। তুমি কেইনকে বেছে নিয়েছো। কার্লোসকে বাতিল করেছো। ভাবছো এখন আবার তাকে বাতিল করতে পারবে। তুমি তখনও ভুল করেছো, এখনও করছো।”
আমি তোকে খুন করবো। তোর গলা টিপে দম বের ক’রে ফেলবো। বন্ আমাকে। ঈশ্বরের দোহাই, আমাকে বল্। শেষ প্রান্তেই আমার শুরু নিহিত আছে। আমাকে সেটা জানতে হবে।
“তাতে কিছু যায় আসে না,” সে বললো। “তুমি যদি আপোষ করতে চাও—যদি তোমার নিজের জীবনটা কেবল বাঁচাতে চাও—আমাকে বলো কেন আমরা শুনবো। কার্লোস কেন এতোটা দৃঢ় প্রতীজ্ঞ…এতোটা প্যারানয়েড…বর্নের ব্যাপারে? এটা আমাকে বুঝিয়ে বলো, মনে করো আমি এ সম্পর্কে কিছুই শুনি নি। তা যদি না করো, তাহলে যে নামগুলো বলেছি, তা প্যারিসে ফাঁস ক’রে দেবো। আর বিকেলের মধ্যেই তুমি খুন হয়ে যাবে।”
লাভিয়া আড়ষ্ট হয়ে গেলো। “কার্লোস কেইনকে পৃথিবীর শেষ সীমানা পর্যন্ত খুঁজে বেড়াবে। তাকে খুন করবে।”
“আমরা সেটা জানি। আমরা জানতে চাই, কেন?”
“তাকে সেটা করতে হবে। নিজেকে দ্যাখো। তোমার মতো লোকজনকে দ্যাখো।”
“এটা তো অর্থহীন। তুমি জানো না আমরা কারা?”
“আমার জানার দরকারও নেই। আমি জানি তোমরা কি করেছো।”
“খুলে বলো!”
“বলেছি। তুমি কার্লোসকে কোণঠাসা করার জন্যে কেইনকে বেছে নিয়েছিলে—সেটা তোমার ভুল ছিলো। ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছো তুমি। ভুল গুপ্তঘাতককে তুমি টাকা দিয়েছো।”
“ভুল গুপ্তঘাতক…”
“তুমিই প্রথম নও, তবে তুমি হবে শেষ। সেই ভণ্ড উন্নাসিকটা এই প্যারিসে খুন হবে, কোনো আপোষ করা হোক আর না হোক।”
“আমরা ভুল গুপ্তঘাতককে বেছে নিয়েছিলাম…” কথাটা অভিজাত, সুগন্ধী ছড়ানো রেস্তোরাঁর ভেতরে ভেসে বেড়ালো। তার চারপাশের কুয়াশা কেটে যাচ্ছে। যন্ত্রণাটাও মিইয়ে আসছে। সে দেখতে শুরু করলো। আর যা দেখতে পেলো, সেটা একটা দানবের অবয়ব। কোনো মিথ নয়, একটা দানব। আরেকটা দানব। দুটো।
“তুমি কি এ ব্যাপারে সন্দেহ করো?” মহিলা জিজ্ঞেস করলো। “কার্লোসের ব্যাপারে নাক গলিয়ো না। তাকে কেইনের পেছনে লাগতে দাও। তাকে তার প্রতিশোধ নিতে দাও।” একটু থেমে আবারো বললো, “আমি কিছুই প্রতীজ্ঞা করছি না, তবে আমি তোমার হয়ে কথাটা জানিয়ে দেবো, তোমার লোকজনদের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেবার জন্যে। এটা সম্ভব…তুমি সেটা বোঝো…তোমার কন্ট্রাক্টটাকে সম্মান জানানো হবে, আর কাজটা সে-ই করবে যাকে তোমার আগে বেছে নেয়া উচিত ছিলো।”
“আমরা ভুল একজনকে বেছে নিয়েছিলাম।”
“তুমিও সেটা বোঝো, তাই না মঁসিয়ে? তোমাকে সেটা কার্লোসের বলা উচিত ছিলো। হয়তো…তুমি যদি তোমার ভুলটা বুঝতে পারো তবে হয়তো সে তোমার ক্ষতিটাকে পুষিয়ে দেবে।”
“এই হলো তোমার আপোষ?” বর্ন কাঠখোট্টাভাবে বললো। নিজের সমস্ত চিন্তা ভাবনাগুলো গোছাতে চাইলো সে।
“যেকোনো কিছুই সম্ভব। হুমকী ধামকি দিয়ে ভালো কোনো ফল পাবে না তুমি, সেটা আমি বলতে পারি। কেবল অর্থহীন খুনাখুনি হবে। আর তাতে করে কেইনেরই লাভ হবে। তুমি খালি একবারই হারবে না, দ্বিতীয়বারও হারবে।”
“সেটা যদি সত্য হয়ে থাকে…” জেসন তার শুকনো গলায় ঢোক গেলার চেষ্টা করলো। “তাহলে আমি আমার লোকজনকে বোঝাবো কেন আমরা…ভুল লোককে…বেছে নিয়েছিলাম।” এটা বন্ধ করো! কথাটা শেষ করো। নিয়ন্ত্রণ করো নিজেকে। “কেইন সম্পর্কে যা জানো সব আমাকে বলো।”
“এটা জেনে তোমার কি লাভ?”
“আমরা যদি ভুল মানুষকে বেছে নিয়ে থাকি তবে আমাদের কাছে ভুল তথ্যও আছে।”
“তুমি শুনেছো সে কার্লোসের সমকক্ষ, তাই না? তার পারিশ্রমিক একটু কম, আর মাঝখানে যেহেতু ধাপগুলো কম, লোকজনও কম জড়িত, তাই কন্ট্রাক্টটা ট্রেস্ করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তাই না?”
“হয়তো।”
“অবশ্যই। এটাই তো সবাই বলাবলি করে, আর এটা একেবারেই মিথ্যে। কার্লোসের আসল শক্তি তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে তথ্যের উৎসগুলো—অকাট্য আর নির্ভরযোগ্য সব তথ্য।”
“মনে হচ্ছে তার সাথে অনেক লোক জড়িত। জুরিখেও অনেকে ছিলো। এখানে, এই প্যারিসেও অনেক আছে দেখছি।”
“সবাই অন্ধকারে আছে, মঁসিয়ে। সবাই। কেউ জানে না কি করছে তারা।”
“অন্ধকারে আছে?”
“বলতে গেলে আমি এই অপারেশনে কয়েক বছর ধরেই আছি, আরো কয়েক ডজন আছে যাদের ছোটোখাটো কিছু ভূমিকা রয়েছে—কেউই তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। আমি এখন পর্যন্ত একজনের সাথেও সাক্ষাত করি নি, যে কখনও কার্লোসের কথা আমাকে বলেছে। সে কে, সে সম্পর্কে খুব কম মানুষেরই ধারণা আছে।”
“এটা তো কার্লোস। আমি কেইনের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম। কেইনের সম্পর্কে তুমি কি জানো।” নিয়ন্ত্রণ করো নিজেকে। তুমি মুখ সরিয়ে রাখতে পারো না। তার দিকে তাকাও। তাকাও!
“কোত্থেকে শুরু করবো?”
“তোমার মনে প্রথমে যা আসে সেখান থেকে শুরু করো। সে কোত্থেকে এসেছে?” চোখ সরিয়ে নিও না!
“দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে।”
“অবশ্যই…” ওহ্ ঈশ্বর।
“আমেরিকান মেডুসা থেকে। আমরা সেটা জানি…”
মেডুসা! ঝড়ো বাতাস, অন্ধকার, আলোর ঝলকানি, তীব্র যন্ত্রণা… ব্যথাটা এবার তার মাথাটা জেঁকে ধরলো। সে আর তার মাঝে রইলো না। সে এক সময় যেখানে ছিলো সেখানে চলে গেলো। সময় আর দূরত্বের বিচারে বহু দূরের এক পৃথিবীতে। যন্ত্রণাটা। ওহ্ ঈশ্বর। যন্ত্রণাটা…
তাও!
সি-সাহ!
তাম কুয়ান! আলফা, ব্রাভো, কেইন… ডেল্টা।
ডেল্টা…কেইন।
চার্লির জন্যে কেইন।
কেইনের জন্যে ডেল্টা।
“কি হয়েছে?” মহিলা ভয়ার্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো। “তুমি ঘামছো। তোমার হাত কাঁপছে। তোমার কি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে?”
“এটা খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে,” একটা রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো জেসন।
“খুব প্রেসারের কারণে হয়েছে, না?”
“হ্যা। বলে যাও। সময় বেশি নেই। লোকজন এসে যাবে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। কেইনের কথা বলো। তুমি বললে সে এসেছে আমেরিকান…মেডুসা থেকে।”
“লে মার্সিয়ে দু দায়াবাল,” লাভিয়া বললো। “ইন্দো-চিনা ঔপনিবেশিকরা মেডুসার এই ডাক নাম দিয়েছিলো—খুবই যথার্থ একটি নাম, তুমি কি তাই মনে করো না?”
“আমি কি মনে করি তাতে কিছু যায় আসে না। আমি শুনতে চাই তুমি কি মনে করো, তুমি কেইনের ব্যাপারে কি জানো।”
“তোমার অ্যাটাকটা তোমাকে আরো বেশি রুক্ষ্ম ক’রে ফেলেছে।”
“আমার অধৈর্য আমাকে আরো বেশি অধৈর্য ক’রে তুলেছে। তুমি বললে আমরা ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলাম। যদি তাই ক’রে থাকি তবে আমাদের কাছে ভুল তথ্য ছিলো। লে মার্সিয়ে দু দায়াবাল। তুমি কি বলতে চাচ্ছো, কেইন একজন ফরাসি?”
“মোটেই না, তুমি আমাকে খুব বাজেভাবে পরীক্ষা করছো। আমি এটা উল্লেখ করেছি কেবল এটা বোঝানোর জন্যে যে, আমরা মেডুসার অভ্যন্তরে কতো গভীরে প্রবেশ করেছিলাম।”
“‘আমরা’ হলো সেইসব লোক যারা কার্লোসের হয়ে কাজ করে।”
“সেটা তুমি বলতে পারো।”
“আমি সেটাই বলবো। কেইন যদি ফরাসি না হয়ে থাকে, তবে সে কি?”
“সন্দেহাতীতভাবেই একজন আমেরিকান।”
ওহ্ ঈশ্বর! “কেন?”
“তার ধরণ-ধারণ সব আমেরিকান। তার মধ্যে কোনো সূক্ষ্মতা নেই। অন্যের কাজের কৃতিত্ব সে নিজের নামে নিয়ে নেয়। যাদের কিছুই করে নি, তাদের হত্যার দাবি ক’রে বসে সে। কার্লোসের পদ্ধতিগুলো আর কানেকশানগুলো জীবিত অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি স্টাডি করেছে সে। আমাদেরকে বলা হয়েছে, সে নাকি সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের কাছে ওগুলো মুখস্ত বলে যায়। সে কেবল নিজেকে কার্লোসের জায়গায় ভাবে না, মাঝে মাঝে সে দাবি করে সে-ই কার্লোস। খুনের কন্ট্রাক্ট গ্রহণ ক’রে সেটা খুব সহজেই সে সম্পাদনা করতে পারবে।” লাভিয়া থামলো। “একই কাজ সে তোমার সঙ্গেও করেছে—তোমার লোকজনের সঙ্গে, তাই না?”
“হতে পারে।” জেসন আবারো তার হাতের কব্জিটা ধরলো, তার কাছে কথাগুলো ফিরে আসছে।
স্টুটগার্ড। রেজেনবার্গ। মিউনিখ। দুটো খুন আর একটা অপহরণ, বাডের-এর পৃষ্ঠপোষকতায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকাগুলো এসেছিলো…
তেহরান? আটটা খুন। একাধিক দাবি—খোমেনি এবং পিএলও। চুক্তির অঙ্ক দুই মিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ-পশ্চিম সোভিয়েত সেক্টর।
প্যারিস…সবগুলো কন্ট্রাক্টই প্যারিসে প্রক্রিয়া হয়েছে।
কার কনট্রাক্ট?
সানচেজ…কার্লোস?
“…সব সময় এধরণের চালাকি করে।”
লাভিয়া কথা বললেও সে শুনতে পেলো না। “কি বললে তুমি?”
“তুমি মনে করতে পেরেছো, হ্যা? সে তোমার সাথেও একই চালাকি করেছে—তোমার লোকজনের কথা বলছি আর কি। এভাবেই সে তার অ্যাসাইনমেন্টগুলো পেয়ে থাকে।”
“অ্যাসাইনমেন্ট?” বর্ন আবার ধাতস্থ হয়ে বাস্তবে ফিরে এলো। “সে অ্যাসাইনমেন্টগুলো পেয়ে থাকে, তারপর,” উদাসভাবে বললো সে।
“সেগুলো বিশেষজ্ঞ আর অভিজ্ঞদের সাহায্যে বাস্তবায়ন ক’রে থাকে। তার খুন করার রেকর্ড খুবই অসাধারণ। অনেক দিক থেকে কার্লোসের পরেই তার অবস্থান—তবে তার সমকক্ষ নয়। কিন্তু একজন গেরিলা হিসেবে কার্লোসের চেয়ে অনেক ভালো। তার অসাধারণ এবং বহুমুখী দক্ষতা আছে। খুবই উদ্ভাবনী, মেডুসা থেকে বের হয়ে আসা প্রশিক্ষিত একটি মারণাস্ত্র সে। তবে এটা তার অহংকার আর সেটাই তাকে কার্লোসের কাছে ধরাশায়ী করবে।”
“এজন্যে সে আমেরিকান? নাকি এটা তোমার ধারণা? আমার মনে হয় তুমি আমেরিকান টাকা পছন্দ করো।”
“এটা কোনো পূর্ব-ধারণা বা সংস্কার নয়, মঁসিয়ে। তার পরিচয়টা আমরা জানি।”
“কিভাবে সেটা জানলে?”
“একজন অতৃপ্ত মানুষকে ওয়াশিংটন থেকে আনা হয়েছে।”
“ওয়াশিংটন?”
“সেই আমেরিকানটাও কেইনকে খুঁজছে, আমার ধারণা মেডুসার কথা কখনও প্রকাশ করা হয় নি। কেইন হয়তো খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এই অতৃপ্ত লোকটা আমাদেরকে প্রচুর তথ্য দিয়েছে, তার মধ্যে মেডুসা রেকর্ডও রয়েছে। জুরিখের লোকগুলোর সাথে এটা ম্যাচ করা খুবই সহজ ব্যাপার। বিশেষ ক’রে কার্লোসের জন্যেও। অন্যকারোর জন্যে নয়।”
খুব বেশি সহজ-সরল, জেসন ভাবলো। কেন এই ভাবনাটা এলো সেটা সে জানে না। “আচ্ছা,” সে বললো।
“আর তুমি? তুমি কিভাবে তাকে খুঁজে বের করবে? কেইন না, বর্নের কথা বলছি।”
উদ্বেগের ঘন কুয়াশার মাঝে জেসন আরেকটা কথা স্মরণ করলো। কথাটা তার নয়, মেরির। “খুবই সহজ,” বললো সে। “একটা অব্যবহৃত ডিপোজিটের মাধ্যমে অন্য একটা একাউন্টে আমরা তাকে কিছু টাকা দিয়েছিলাম। উদ্বৃত্তটা আরেকটা ব্লাইন্ড একাউন্টে পাঠানো হয়েছিলো। নাম্বারগুলো ট্রেস্ করা যেতে পারে, এটা একটা ট্যাক্স হাতিয়ার।”
“কেইন এটা করতে দিয়েছিলো?”
“সে এটা জানতো না। যে নাম্বারের টাকা দেয়া হয়েছিলো সেটা অন্য একটা নাম্বার—টেলিফোন নাম্বার—ফিশের একটা নাম্বার।”
“আমি তোমার প্রশংসা করছি।”
“এটার কোনো দরকার ছিলো না, কিন্তু তুমি তো কেইনের সম্পর্কে সবই জানো। এ পর্যন্ত তুমি যা করেছো সেটা একটা আইডেন্টিফিকেশনকে ব্যাখ্যা করে। এবার বলে যাও। এই বর্ন নামের লোকটা সম্পর্কে যা জানো, সব। তোমাকে যা বলা হয়েছে, সবটাই বলো।” সতর্ক থেকো। তোমার কণ্ঠ থেকে টেনশনটা ঝেড়ে ফেলো। তুমি এখন ডাটা মূল্যায়ন করছো। মেরি, তুমি এটা বলেছিলে। প্রিয় মেরি। ধন্যবাদ ঈশ্বরকে, তুমি এখানে নেই।
“তার সম্পর্কে যা জানি সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। সে মূল্যবান ডাটাগুলো পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই শিক্ষাটা সে সন্দেহাতীতভাবেই কার্লোসের কাছ থেকে শিখেছে। তবে সবটা নয়। আমরা সবগুলো টুকরো জড়ো ক’রে একটা ছবি পেয়েছি। মেডুসাতে নিয়োগ পাবার আগে সে সিঙ্গাপুরের বসবাসরত ফরাসি বলা একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী হিসেবে নিউইয়র্ক-ক্যালিফোর্নিয়ার আমেরিকান আমদানীকারকদের পক্ষ হয়ে কাজ করতো। সত্য হলো, সে ঐসব আমদানীকারক কর্তৃক্ষ বরখাস্ত হয়েছিলো, তারপরেই তাকে আমেরিকাতে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করার চেষ্টা করা হয়। সে তাদের কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা চুরি করেছিলো। সিঙ্গাপুরে একজন বিচ্ছিন্ন, একাকী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলো সে। অবৈধ জিনিস আমদানী, অপারেশন চালানো, এবং অসাধারণ পৈশাচিকতার কারণে সে খুব শক্তিশালী ছিলো।”
“তার আগে বলো,” জেসন কথার মাঝখানে বললো। টের পেলো কপালে আবারো ঘাম জমতে শুরু করেছে। “সিঙ্গাপুরের আগে সে কোথায় ছিলো?” সতর্ক থাকো! ছবিগুলো! সে সিঙ্গাপুরের পথঘাটের ছবিগুলো দেখতে পেলো। প্রিন্স এডওয়ার্ড রোড, কিম চুয়ান, বুন ট্রাই স্টুট, ম্যাক্সওয়েল, কাসকাডেন।
“এইসব রেকর্ড কেউ খুঁজে পাবেন না। কেবল গুজব আছে আর সেগুলো অর্থহীন। যেমন বলা হয়, সে একজন বহিষ্কৃত যাজক, যে কিনা পাগল হয়ে গেছে। আরেকটা গুজব আছে, সে ছিলো একজন তরুণ আগ্রাসী ব্যাংকার, যে সিঙ্গাপুরের কয়েকটি ব্যাংকের তহবিল তছরুপ করেছে। জোর দিয়ে কিছুই বলা যায় না। কোনো কিছু খতিয়ে দেখারও নেই।”
তুমি ভুল বলছো, প্রচুর আছে। তবে সেটার কোনো কিছুই এটার অংশ নয়… একটা ফাঁক আছে এখানে, আর সেটা পূরণ করতে হবে। তুমি আমাকে সাহায্য রকতে পারবে না। সম্ভবত কেউই পারবে না। কেউ করবেও না।
“এ পর্যন্ত তুমি চমকে দেবার মতো কিছুই বলো নি,” বর্ন বললো। “আমার আগ্রহ আছে তার সাথে সম্পর্কিত কোনো কিছুই না।”
“তাহলে আমি জানি না তুমি কি চাও! তুমি আমাকে প্রশ্ন করছো, বিস্তারিত বলার জন্যে চাপ দিচ্ছো। আর যখনই আমি তোমাকে কোনো কিছু বলছি, তুমি সেটা অপ্রাসঙ্গিক ব’লে বাতিল ক’রে দিচ্ছো। তুমি আসলে কি চাও?”
“তুমি কেইনের ব্যাপারে যা জানো…তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে? যেহেতু তুমি আপোষ করতে চাচ্ছো, তার একটা যুক্তিসংগত কারণ দাও আমাকে। যদি আমাদের তথ্যগুলো আলাদা হয়, তবে সে কি করেছে সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামানো হবে না। কখন সে তোমাদের নজরে প্রথম এলো? কার্লোসের নজরে? দ্রুত বলো!”
“দু’বছর আগে,” বললো মাদাম লাভিয়া। “এশিয়া থেকে একটা খবর পাওয়া গেলো যে, এক শ্বেতাঙ্গ বিস্ময়করভাবে কার্লোসের অনুরূপ সার্ভিস দেবার প্রস্তাব করছে। সে খুব দ্রুত প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলো। মউলমেনে এক অ্যাম্বাসেডর খুন হলেন; দু’দিন বাদে টোকিওতে নাম করা এক জাপানি রাজনীতিবিদ খুন হলেন। এক সপ্তাহ পরে, হংকংয়ের এক সংবাদপত্রের সম্পাদক গাড়ি বোমায় নিহত হলেন। আর তারও আটচল্লিশ ঘণ্টা কম সময় পরে—কলকাতার রাস্তায় একজন ব্যাংকার খুন হলো। সবগুলোর পেছনে ছিলো কেইন।” মহিলা থামলো। বর্নের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যে, কিন্তু সে কিছুই দেখতে পেলো না। “তুমি কি দেখছো না, সে সবখানেই আছে? সে এক খুন থেকে আরেক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে বেড়াচ্ছে। সে খুব দ্রুত নিজের সুনাম তৈরি ক’রে ফেলেছে। কারো সন্দেহ নেই সে একজন পেশাদার। এরপরই নির্দেশ পাঠানো হলো : এই লোকটার সম্পর্কে জানো, যতো পারো জেনে নাও। আমরা যেটা বুঝি নি, কার্লোস সেটা বুঝতে পেরেছে। আর বারো মাস পরে তার ধারণাই সঠিক ব’লে প্রমাণ হচ্ছে। ম্যানিলা, ওসাকা, হংকং এবং টোকিও থেকে খবর আসতে লাগলো। কেইন ইউরোপে চলে গেছে। তারা আরো জানালা সে প্যারিসকে তার অপারেশনের ঘাঁটি বানাবে। চ্যালেঞ্জটা পরিস্কার। দস্তানা ছুড়ে মারা হয়েছে। কেইন কার্লোসকে ধ্বংস করতে মরিয়া। সে হয়ে উঠবে নতুন কার্লোস, যারা তাদেরকে খুঁজছে সে তাদের সার্ভিস দিতে লাগলো। যেমনটি আপনি তাকে খুঁজছেন, মঁসিয়ে।”
“মউলমেন, টোকিও, কলকাতা…” জেসন বিড়বিড় ক’রে বললো। অস্পষ্ট এক অতীতের স্মৃতি ছায়া ভেসে এলো তার চোখের সামনে। “ম্যানিলা, হংকং…” সে থামালো। কুয়াশাটা কাটাতে চাইলো।
“সেইসব জায়গা এবং আরো অসংখ্য জায়গায়,” লাভিয়া বলতে লাগলো। “আর এটাই হলো কেইনের ভুল। অনেকের কাছে কার্লোস হয়তো অনেক কিছু, কিন্তু যেসব লোক তার কাছ থেকে সুবিধা পেয়েছে, লাভবান হয়েছে, তারা তার প্রতি আনুগত্য দেখায়। তার ইনফর্মার আর ভাড়াটেরা খুব সহজে বিক্রি হয় না। যদিও কেইন এটা বার বার চেষ্টা করেছে। কেইন যা বুঝতে পারে নি—এখনও বুঝতে পারছে না- তা হলো কার্লোসের নেটওয়ার্কটা খুবই বিস্তৃত। কেইন যখন ইউরোপে চলে এলো তখন জানতো না তার কর্মকাণ্ডের খবর বার্লিন, লিসবন, আমস্টারডাম…ওমান পর্যন্ত চাউড় হয়ে গেছে।”
“ওমান,” বর্নের মুখ দিয়ে শব্দটা বের হয়ে গেলো। “শেখ মুস্তাফা কালিগ, “ ফিফিস্ ক’রে বললো সে।
“এটা কখনই প্রমাণিত হয় নি!” দ্বিমত পোষণ ক’রে লাভিয়া বললো। “ইচ্ছাকৃতভাবে এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের ধোয়া তোলা হয়েছিলো, আসলে কন্ট্রাক্টটাই কল্পিত। সে একটি অভ্যন্তরীণ হত্যার কৃতিত্ব নিয়েছে। কেউ ঐ নিরাপত্তা ভেদ করতে পারে নি। একটা মিথ্যে!”
“একটা মিথ্যো,” জেসন প্রতিধ্বনি করলো।
“অনেক মিথ্যে আছে। সে বোকা নয়, আস্তে ক’রে একটা গল্প ছেড়ে দেয় সে, জানে এসব গল্প মুখে মুখে ফুলে ফেঁপে উঠবে। সে প্রতিটি চালেই কার্লোসকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। নিজেকে সে কার্লোসের স্থলাভিষিক্ত করতে চাইছে। কিন্তু তার সাথে কার্লোসের কোনো তুলনা চলে না। এমন সব কন্ট্রাক্ট নেয় সে যা বাস্তবায়ন করতে পারে না। তুমি হলে তার একমাত্র উদাহরণ। আমরা আরো কয়েক জনের কথা জানি। শুনেছি এজন্যেই নাকি সে কয়েক মাস ধরে গা ঢাকা দিয়েছে, তোমার মতো লোকদেরকে এড়িয়ে চলছে।”
“এড়িয়ে চলছে…” জেসনের হাতটা আবার কাঁপতে শুরু করলো। মাথাটা ধপ্ ধপ্ করছে এখন। “তুমি…নিশ্চিত?”
“খুবই। সে মারা যায় নি। লুকিয়ে ছিলো। কেইন একটা এনসাইনমেন্টে ব্যর্থ হয়েছে। এটা তো অনস্বীকার্য। সে খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ হাতে নিয়ে নিয়েছে। তারপরও, যখন কাজ করে নিজের সুনাম রক্ষার জন্যে বেছে নেয় একটা ব্যর্থ হত্যাকাণ্ড। এক্ষেত্রে সে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে বেছে নেয়। যেমন হত্যাকাণ্ডটি সবাইকে শিহরিত করেছে। অ্যাম্বাসেডর মউলমেইনে ভ্রমন করছিলেন। তাকে কেউ হত্যার জন্যে বলে নি। ওটা হলো তার কর্মকাণ্ডের একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এরকম আরো দুটো আছে—সাংহাই’র এক রাশিয়ান কমিসার এবং মাদ্রিদের এক ব্যাংকার…”
এই কথাগুলো জেসন আগেও শুনেছে। এগুলো যেনো তার বিস্তৃত অতীতের স্মরণ।
মেয়েটা কথা বলছে…তার সম্পর্কে!
আলফা, ব্রাভো, কেইন, ডেল্টা…কেইন হলো চার্লি, ডেল্টা হলো কেইন।
জেসন বর্ন এমন একজন গুপ্তঘাতক যার নাম কেইন।
একটা চূড়ান্ত প্রশ্ন, সরবোনে দু’রাত আগে যে জবাবটা পেয়ে অন্ধকার থেকে তার সংক্ষিপ্ত মুক্তি ঘটেছিলো। মার্সেই। আগস্ট ২৩ তারিখের ঘটনাটা।
“মার্সেই’তে কি ঘটেছিলো?” সে জানতে চাইলো।
“মার্সেই?” লাভিয়া স্মরণ করার চেষ্টা করলো। “তুমি কি ক’রে জানতে পারলে? তোমাকে কোন্ মিথ্যেটা বলা হয়েছে, বলো?”
“শুধু বলো কি ঘটেছিলো।”
“লিল্যান্ডের কথা বলছো? ঐ রহস্যময় অ্যাম্বাসেডর? বলা হচ্ছে কেউ টাকা দিয়ে তাকে খুন করিয়েছে, সেটার কনট্রাক্ট আসলে কার্লোসের ছিলো।”
“আমি যদি বলি অনেকেই আছে যারা মনে করে কাজটা কেইন করেছে, তাহলে কি হবে?”
“সবাই এরকম ভাবুক সেটাই তো সে চায়! এটা তো কার্লোসকে চূড়ান্ত অপমান করেছে—তার খুনের কৃতিত্ব চুরি করা হয়েছে। কেইনের কাছে পেমেন্টটা বড় কথা নয়। সে কেবল পৃথিবীকে দেখতে চায়—আমাদের পৃথিবীকে যে কাজ কার্লোসকে দেয়া হয়েছে সেটা সে আগেভাগে ক’রে দিতে পারে। তবে সে কাজটা করতে পারে নি, জানোই তো। লিল্যান্ড খুনের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“সে ওখানে ছিলো।”
“সে ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলো। তাকে আর দেখা যায় নি। অনেকেই বলে সে খুন হয়েছে, কিন্তু যেহেতু কোনো লাশ পাওয়া যায় নি তাই কার্লোস সেটা বিশ্বাস করে নি।”
“কেইন কিভাবে খুন হতে পারে?”
মাদাম লাভিয়া মাথা ঝাঁকালো। “ওয়াটারফ্রন্টের দু’জন লোক এই কৃতিত্বটা নেবার চেষ্টা করেছিলো। এজন্যে টাকা পাবার চেষ্টাও করেছিলো তারা। একজনকে আর কখনও দেখা যায় নি। ধরে নেয়া হয় কেইন তাকে খুন করেছে। যদি সেটা কেইন হয়ে থাকে তো। তারা ছিলো ডক-ইয়ার্ডের ভবঘুরে।”
“ফাঁদটা কি ছিলো?”
“তথাকথিত ফাঁদ, মঁসিয়ে। তারা খবর পেয়েছিলো হত্যাকাণ্ডের আগের রাতে অথবা ঠিক আগেভাগে কেইন এক লোকের সাথে দেখা করতে আসবে রুই সারাসিনে। তারা বলেছে, কেইন ডকে অপেক্ষা করছে বলে তারা একটা মেসেজ দিয়ে লোকটাকে মাছ ধরার একটা ট্রলারে নিয়ে আসে। ট্রলারটা এবং তার স্কিপারকে আর দেখা যায় নি। সুতরাং তারা হয়তো ঠিকই বলেছে—তবে যেমনটি বলেছি, কোনো প্রমাণ নেই। যে লোকটাকে ওখানে দেখা গেছে তার সাথে কেইনের যথার্থ বর্ননাও পাওয়া যায় নি। ওখানেই ওটা শেষ হয়ে গেছে।”
তুমি ভুল বলছো। ওখান থেকেই এটা আমার জন্যে শুরু হয়েছে।
“আচ্ছা,” বললো বর্ন। “আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটা অবশ্য অন্যরকম।”
“ভুল। তোমাদেরটা ভুল, মঁসিয়ে। আমি যা বলেছি সেটাই সত্যি।”
“হ্যা, আমি জানি।”
“তাহলে আমরা আমাদের আপোষ রফা ক’রে ফেলি?”
“কেন নয়?”
“বুয়ো।” মহিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। “তুমি দেখবে এটা সবার জন্যেই ভালো হবে।”
“তাতে…এখন আর কিছুই যায় আসে না।” তার কথাটা একদমই শোনা গেলো না। এটা সে নিজেও জানে। সে কি বলেছে? সে এইমাত্র কি বললো? কেন বললো?…কুয়াশাটা আবারো জেঁকে ধরলো তাকে। বজ্রপাতের শব্দ বাড়তে লাগলো। মাথার যন্ত্রণাটা ফিরে এলো আবার। “মানে…যেমনটি বললে, এটা সবার জন্যেই ভালো হবে।”
সে দেখতে পেলো—টের পেলো—লাভিয়ার চোখ তার উপর। তাকে পরখ করছে। “এটাই যুক্তিসঙ্গত সমাধান।”
“অবশ্যই। তুমি মনে হয় ভালো বোধ করছো না?”
“আমি বললামই তো, এটা তেমন কিছু না। এটা কেটে যাবে।”
“আমি স্বস্তি পেলাম। তুমি কি আমাকে কিছু সময়ের জন্যে টয়লেটে যেতে দেবে?”
“না।” জেসন তার হাতটা খপ্ ক’রে ধরে ফেললো।
“জে ভু প্রি, মঁসিয়ে। বাথরুমে যাবো। যদি প্রয়োজন মনে করো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকো।”
“আমরা চলে যাবো। চলে যাবার সময় সেরে নিও।” ওয়েটারকে বিল নিয়ে আসার ইশারা করলো বর্ন।
“তোমার যেমন ইচ্ছে,” মহিলা বললো।
অন্ধকারাচ্ছন্ন করিডোরে জেসন দাঁড়িয়ে আছে। করিডোরের শেষ মাথায় লেডিস রুম। দশ মিনিট ধরে লাভিয়া লেডিস-রুমে আছে, এটা জেসনকে খুব বিব্রত করছে। কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছে না জেসন। তার অবস্থা খুব সঙ্গীন। শব্দ আর যন্ত্রণা তাকে গিলে খাচ্ছে। সামনে তাকিয়ে আছে সে, তার পেছনে এক মৃত লোকের ইতিহাস। অতীতটা সত্যের চোখে ধরা পড়েছে। তারা তাকে খুঁজে পেয়েছে। সেও দেখেছে। কেইন…কেইন…কেইন।
মাথার উপরে কালো সিলিংয়ের দিকে তাকালো সে। তাকে কাজ করতে হবে। নিজেকে আর কোনো নিকষ কালো গহ্বরে ফেলে দিতে পারবে না। একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে…না, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। এখন কেবল সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেরি। মেরি? ওহ্, ঈশ্বর, আমার ভালোবাসা। আমরা অনেক ভুল করেছি!
সে গভীর একটা দম নিয়ে ঘড়ি দেখে লেডিসরুমের দিকে তাকালো।
জ্যাকুলিন লাভিয়া কোথায়? সে বের হয়ে আসছে না কেন? ভেতরে থেকে সে কি করার আশা করছে? হোটেলের মাইতর দি’কে ডেকে সে জেনে নিয়েছে ভেতরে কোনো ফোন নেই। তখন লাভিয়া তার সঙ্গেই ছিলো। লোকটার জবাব সে শুনেছে। জিজ্ঞেস করার কারণটাও বুঝেছে
আচমকা তীব্র আলোর ঝলকানি হলে পিছিয়ে গেলো সে। দেয়াল ঘেষে দু’হাতে চোখ বন্ধ ক’রে ফেললো। তীব্র যন্ত্রণা। ওহ্ ঈশ্বর। তার চোখে আগুন!
এরপরই কথাগুলো শুনতে পেলো জেসন। করিডোর দিয়ে যেতে থাকা সুবেশী ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলারা মৃদু স্বরে কথা বলছে।
“রজে’তে আপনার ডিনারের স্মরণে, মঁসিয়ে,” ক্যামেরা হাতে এক প্রাণবন্ত হস্টেস বললো। “ছবিগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। রজে’র সৌজন্যে।”
বর্ন আড়ষ্ট হয়ে রইলো। জানতো ক্যামেরাটা ভাঙতে পারবে না। আরেকটা ভীতি জেঁকে ধরলো তাকে। “আমার ছবি তুলছো কেন?” জানতে চাইলো সে।
“আপনার ফিয়াসে অনুরোধ করেছে, মঁসিয়ে,” লেডিস রুমের দিকে মাথা নেড়ে ইঙ্গিত ক’রে মেয়েটা জবাব দিলো। “ভেতরে আমাদের কথা হয়েছে। আপনি খুব ভাগ্যবান। চমৎকার এক মেয়ে পেয়েছেন। ও আপনাকে এটা দিতে বলেছে।” মেয়েটি ভাঁজ করা একটা কাগজ দিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যেতেই জেসন সেটা পড়লো।
তোমার অসুস্থতা আমাকে ভুগিয়েছে, আমি নিশ্চিত তোমাকে ও ভোগাচ্ছে সেটা, আমার নতুন বন্ধু। হতে পারে তুমি যা বলেছো, তুমি তাই। আবার এও হতে পারে তুমি তা নও। আমি আধ ঘণ্টার মধ্যেই জবাবটা পেয়ে যাবো। ডিনার করতে আসা এক সহমর্মী কাস্টমার একটা টেলিফোন করছে, ছবিটা প্যারিসের পথে আছে এখন। তুমি আর সেটা থামাতে পারবে না। আমাদের আপোষ রফাটা নিয়ে আর মাথা ঘামিয়ো না। আমার সহযোগীরা যখন এসে পৌঁছাবে তখন আমরা আবার কথা বলবো।
বলা হয়ে থাকে কেইন একজন বহুরূপী, বিভিন্ন ধরণের বেশভূষা নিয়ে থাকে সে। আরো বলা হয়ে থাকে, সে খুবই হিংস্র। এসবই হলো অসুস্থতা, তাই না?
সে দৌড়ে অন্ধকার রাস্তায় চলে এলো। একটা অপসৃয়মান ট্যাক্সির ছাদের বাতিটা দেখা যাচ্ছে। মোড় নিলে সেটা উধাও হয়ে গেলো। একটু থেমে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে। আরেকটা ট্যাক্সির জন্যে চারদিকে তাকালো। একটাও নেই। রজে’র দ্বাররক্ষী তাকে বলেছিলো একটা ক্যাব দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। মঁসিয়ে কেন তাকে আরো আগে বললো না? ফাঁদটা পাতা হয়েছে আর সে নিজে এসে সেটাতে ঢুকে পড়েছে।
সামনে! একটা বাতি। আরেকটা ট্যাক্সি! দৌড়াতে শুরু করলো সে। তাকে সেটা থামাতে হবে; তাকে প্যারিসে ফিরে যেতে হবে। মেরির কাছে।
একটা গোলকধাঁধায় অন্ধের মতো ছুটছে সে। কিন্তু পালানোর কোনো পথ নেই। সে জানে কে সে…কি ছিলো। সে একজন অপরাধী।
সে চলে যাবে। মেরি কখনও জানতে পারবে না, আর সেও তাকে কখনও বলতে পারবে না কেন এভাবে চলে গেলো। মেরির কাছে সে ঋণী। এই যন্ত্রণাটা খুবই গভীর। কিন্তু কেইন হওয়ার যন্ত্রণাটা তার চেয়েও অনেক বেশি তীব্র।
কেইন!
মেরি। মেরি! আমি একি করেছি?
“ট্যাক্সি! ট্যাক্সি!”