অধ্যায় ১৫
“সেই লোকটা হলো কেইন,” কর্নেল জ্যাক ম্যানিং সরাসরি বললো কথাটা। যেনো পেন্টাগনের কনফারেন্স টেবিলে তিনজন সিভিলিয়ান সদস্যের কেউ তার সাথে দ্বিমত পোষণ করছে। তারা প্রত্যেকেই তার চেয়ে বয়সে বড়। আর তারা নিজেদেরকে তার তুলনায় অনেকে বেশি অভিজ্ঞও মনে করে। তাদের কেউই এটা মানতে প্রস্তুত নয় যে, তাদের নিজেদের সংগঠন যেখানে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে সেনাবাহিনী খবরটা যোগাড় ক’রে ফেলেছে। চতুর্থ সিভিলিয়ান ব্যক্তিটি এখানে থাকলেও তার মতামত গণ্য করা হবে না। সে কংগ্রেশনাল ওভারসাইট কমিটির সদস্য। “আমরা যদি এখনই কিছু না করি,” ম্যানিং আবারো বলতে লাগলো, “তাহলে আমরা যা জেনেছি তা জানাজানি হবার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সে আবারো জাল ফসকে বেরিয়ে যাবে। ঠিক যেমনটি হয়েছিলো এগারো দিন আগে। সে ছিলো জুরিখে। আমরা নিশ্চিত সে এখনও ওখানেই আছে। আর ভদ্র মহোদয়গণ, সে-ই কেইন।”
“এটা একটা বক্তব্য বটে,” ন্যাশনাল সিকিউরিটির টেকো মাথার অধ্যাপক আলফ্রেড জিলেট বললো। তাদের প্রত্যেকের হাতে জুরিখের ঘটনার উপর রিপোর্টের কপি দেয়া আছে। সে ওটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কথাটা বললো। ব্যক্তিগত স্ক্রিনিং এবং মূল্যায়নে একজন অভিজ্ঞ লোক সে। পেন্টাগন তাকে বেশ প্রতিভাবান মনে করে। তার রয়েছে উঁচু তলার অনেক বন্ধুবান্ধব।
“আমি এটাকে খুব অভূতপূর্ব হিসেবেই দেখছি,” সিআইএ’র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর পিটার নোলটন বললো। পঞ্চাশের ঘরে বয়স হলেও এই লোকটা ত্রিশ বছর আগের একজন আই.ভি লিগারের মতো পোশাক-আশাক পরে থাকে। “আমাদের সোর্স এগারো দিন আগে কেইনকে ব্রাসেসে দেখেছিলো, জুরিখের নয়। আমাদের সোর্সদের খুব কমই ভুল হয়।”
“এটাও একটা বক্তব্য বটে,” তৃতীয় সিভিলিয়ান ব্যক্তিটি বললো, এই ঘরের একমাত্র ব্যক্তি যাকে ম্যানিং শ্রদ্ধা করে। সে এখানে সবচাইতে বয়স্ক, তার নাম ডেভিড অ্যাবোট। একজন সাবেক অলিম্পিক সাঁতারু, শারিরীক সক্ষমতার মতোই তার রয়েছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। তার বয়স এখন ষাটেরও বেশি। তবে তার শরীর আর মন এখনও সতেজ রয়েছে। ভেতরে যা-ই হোক না তার মুখে সেটা কখনও প্রকাশ হয় না। গোপন অপারেশনের বোবা সন্ন্যাসী নামে পরিচিত ছিলো এক সময়, সেই থেকে সংক্ষিপ্ত হয়ে কেবল সন্ন্যাসী নামেই এখন সে সমধিক পরিচিত। সে জানে সে কি বলছে, কর্নেল ভাবলো। যদিও সে বর্তমানে শক্তিশালী ফর্টি কমিটিতে আছে, তবে এর আগে সে দীর্ঘদিন সিআইএ’তে ছিলো, অবশ্য সিআইএ’র তখন নাম ছিলো ওএসএস। “আমার সময়কালে এজেন্সিতে,” চিবিয়ে চিবিয়ে অ্যাবোট বললো, “সোর্সেরা প্রায়শই চুক্তিবন্ধ থাকতো।”
“তথ্য খতিয়ে দেখার জন্যে আমাদের কাছে অনেক পদ্ধতি রয়েছে, অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর বললো। “কোনো অশ্রদ্ধা না করেই মি: অ্যাবোটাকে আমি বলছি, আমাদের ট্রান্সমিশন যন্ত্র আমাদেরকে সরাসরি আর দ্রুত খবর দিয়ে থাকে।”
“ঐ যন্ত্রটা ভেরিফিকেশন করা হয় নি। তবে আমি তর্ক করবো না। মনে হচ্ছে আমাদের মধ্যে ব্রাসেল্স অথবা জুরিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।”
“ব্রাসেসের তথ্যটা বেশি বিশ্বাসযোগ্য,” নোলটন দৃঢ়ভাবে বললো।
“তাহলে সেটাই আগে শোনা যাক্,” বললো টেকো মাথার জিলেট। “আমরা জুরিখের রিপোর্টটাতে ফিরে যাই, এটা সবার সামনেই আছে। আমাদের সোর্স আরো কিছু জানিয়েছে যা জুরিখ এবং ব্রাসেসের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করে না। এটা ঘটেছিলো প্রায় ছয় মাস আগে।”
সাদা চুলের অ্যাবোট জিলেটের দিকে তাকালো। “ছয় মাস আগে? আমার তো মনে পড়ছে এন.এস.সি কেইনের ব্যাপারে ছয় মাস আগে কিছু ডেলিভারি দিয়েছিলো।”
“এটা পুরোপুরি কনফার্ম করা ছিলো না,” জবাবে বললো জিলেট। “আমরা কমিটিকে অসমর্থিত কোনো তথ্য দিয়ে ভারাক্রান্ত করতে চাই না
“এটাও তো একটা বক্তব্য হয়ে গেলো,” বললো অ্যাবোট।
“কংগ্রেসম্যান ওয়াল্টারস্” কর্নেল বাঁধা দিয়ে বললো। “আমরা শুরু করার আগে কি আপনার কোনো প্রশ্ন রয়েছে?”
“অবশ্যই রয়েছে,” টেনিসির কংগ্রেসম্যান ছোটো একটা হুঙ্কারই দিলো যেনো। তার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটো চারদিকে ঘুরছে। “তবে যেহেতু আমি এখানে নতুন। আপনারাই আগে শুরু করুন, পরে আমি আমার কথা বলবো।”
“খুব ভালো, স্যার,” কথাটা বলে ম্যানিং মাথা নাড়লো সিআইএ’র নোলটনের দিকে। “এগারো দিন আগে ব্রাসেসে কি হয়েছিলো?”
“প্লেস্ ফঁতোয়ায় একজন খুন হয়েছিলো—মস্কো এবং পশ্চিমের সাথে ব্যবসা করে এরকম একজন ছদ্মবেশী ডিলার ছিলো সে। জেনেভায় অবস্থিত সোভিয়েত ফার্ম রুশোলমাজের একটি শাখা চালাতো। আমরা জানি যাত্রাপথে কেইন তার তহবিলটা অন্য মুদ্রায় বদলে নিয়েছিলো।”
“কেইনের সাথে এই খুনটার সম্পর্ক কি?” সন্দেহগ্রস্ত জিলেট জানতে চাইলো।
“প্রথমে বলতে গেলে বলতে হয়, পদ্ধতিটা। অস্ত্রটা ছিলো লম্বা সূঁচের। দিনের বেলায় জনাকীর্ণ স্কয়ারে বিদ্ধ করা হয়েছিলো সেটা। একেবারে নিখুঁতভাবে। কেইন এর আগেও এটা ব্যবহার করেছে।”
“এটা একদম সত্যি কথা,” অ্যাবোট একমত হলো। কয়েক বছর আগে একজন রুমানিয়ান ছিলো লন্ডনে। তার এক সপ্তাহ আগে সে মরেছে। মনে হচ্ছে দু’জনেই কেইনের হাতে খুন হয়েছে।”
“মনে হচ্ছে, কিন্তু নিশ্চিত নয়,” কর্নেল ম্যানিং বাঁধা দিয়ে বললো। “তারা উঁচু স্তরের রাজনৈতিক বেঈমান। তাদেরকে কেজিবিও ঘায়েল ক’রে থাকতে পারে।
“অথবা কেইন, সোভিয়েতদের চেয়ে খুব কম ঝুঁকির সাহায্যে,” সিআইএ’র লোকটা বললো।
“কিংবা কার্লোস,” জিলেট যোগ করলো। তার কণ্ঠটা চড়া। “কার্লোস আর কেইন, কেউই আদর্শ নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা দু’জনেই ভাড়ায় খাটে। সব ধরণের খুনের ব্যাপারে আমরা কেইনকে কেন দোষারোপ করি?”
“এটা আমরা করি তার কারণ, সোর্সগুলো একে অন্যের ব্যাপারে জানে না, অথচ তাদের তথ্য একরকম হয়,” নোলটন জবাব দিলো।
“এটা খুব বেশি নিখুঁত,” জিলেট ভিন্নমত পোষণ ক’রে বললো।
“ব্রাসেসে ফিরে যাই,” বললো কর্নেল। “যদি এটা কেইন হয়ে থাকে তবে সে কেন রুশোলমাজের একজন ব্রোকারকে খুন করবে? সে তো তাকে ব্যবহার করতো।”
“একজন ছদ্মবেশী ব্রোকার,” শুধরিয়ে দিলো সিআইএ’র ডিরেক্টর। “আমাদের ইনফর্মারদের ভাষ্য অনুযায়ী যেকোনো কারণেই সেটা সে করতে পারে। লোকটা একজন চোর। আর কেন হবে নাঁ? তার বেশির ভাগ ক্রেতাই তো তাই। সে হয়তো কেইনকে ঠকিয়েছিলো, যদি সেরকম কিছু ক’রে থাকে তাহলে সেটা হবে তার শেষ ট্রানজাকশান। অথবা সে এতোটাই বোকা ছিলো যে, কেইনের পরিচয়টা খোঁজ ক’রে ছিলো। এটার সামান্যতম ইঙ্গিত পেলেও কেইন তাকে হত্যা করবে। কিংবা কেইন হয়তো তার সাম্প্রতিক সাক্ষীসাবুদগুলো মুছে ফেলতে চেয়েছিলো। যাইহোক না কেন, কেইন-ই কাজটা করেছে।”
“আমি জুরিখের ব্যাপারটা স্পষ্ট করতে পারলে অনেক কিছুই জানা যাবে,” ম্যানিং বললো। “আমি কি সামারিটা উত্থাপন করবো?”
“একটু দাঁড়ান, প্লিজ,” সন্ন্যাসী ডেভিড অ্যাবোট তার পাইপ জ্বালাতে জ্বালাতে বললো। “আমার বিশ্বাস আমাদের সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্য ছয় মাস আগের একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন যার সাথে কেইনের ঘটনাটার সম্পর্ক রয়েছে। হয়তো আমাদের সেটাই আগে শোনা উচিত।”
“কেন?” জানতে চাইলো জিলেট। “এটা অনেক আগের ঘটনা, এর সাথে বর্তমানের কোনো সম্পর্ক নেই।”
“আমার ধারণা কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড জানাটা আমাদেরকে সাহায্যই করবে। তারপর আমরা সামারিতে ফিরে যাবো,” সিআইএ’র সাবেক পাণ্ডাটি বললো।
“ধন্যবাদ আপনাকে, মি: অ্যাবোট,” কর্নেল বললো। “লক্ষ্য করবেন, এগারো দিন আগে জুরিখে চারজন খুন হয়েছে। তাদের মধ্যে লিমাট নদীর পার্কিং এলাকার একজন ওয়াচম্যানও আছে। ধরে নেয়া যায় সে কেইনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো না। তবে মাঝখানে প’ড়ে প্রাণ হারিয়েছে। বাকি দু’জনকে একটা গলিতে পাওয়া গেছে শহরের পশ্চিম উপকূলে। তাদেরকে দেখে হত্যাকাণ্ডের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই ব’লে মনে হয়। হয়তো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা। খালি চতুর্থ ব্যক্তিটি বাদে। সে গলিতে খুন হওয়া লোকগুলোর সাথে সম্পর্কিত—তারা তিন জনই মিউনিখ আন্ডারওয়ার্ল্ডের লোক—আর সেও কেইনের সাথে জড়িত।”
“এটা চারনাক,” জিলেট সামারিটা দেখে বললো। “আমার ধারণা এটা চারনাক। আমি এই লোকটাকে কেইনের ফাইলে কোথাও পেয়েছিলাম।”
“হ্যা, তাই,” জবাব দিলো ম্যানিং। “এটা প্রথমে জি-টু রিপোর্টে এসেছিলো। আঠারো মাস আগে। তারপর আবার একবছর আগে তার সম্পর্কে জানা যায়।”
“তার মানে ছয় মাস আগে,” সন্ন্যাসী আস্তে ক’রে কথার মাঝখানে বলে জিলেটের দিকে তাকালো।
“হ্যা, স্যার,” কর্নেল আবারো বলতে শুরু করলো। “নরকের কীটের একটি যোগ্য উদাহরণ হলো এই চারনাক। যুদ্ধের সময় সে দাচাউ’তে অবস্থিত চেকোশ্লোভাকিয়ান আর্মিতে ছিলো। বীভৎসভাবে জেরা আর হত্যা করার এক ক্যাম্প হিসেবে যা পরিচিত। সে পোলিশ, স্লোভাক, আর ইহুদিদেরকে টর্চার করার পর শাওয়ারে পাঠাতো—সেখানে তথ্য আদায় ক’রে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতো। যুদ্ধের পর সে পালিয়ে যায়, কিন্তু পালানোর সময় এক ল্যান্ড-মাইনে নিজের একটা পা হারায়। কেইন তাকে খুঁজে পেয়ে তাকে তার খুনখারাবির কাজে ব্যবহার করতো। টাকা দিয়ে পালতো তাকে।”
“একটু দাঁড়ান!” নোলটন বাঁধা দিয়ে বললো। “আমরা এই চারনাকের কাজকর্ম সম্পর্কে আগেও আলোচনা করেছি। আমাদের এজেন্সিই তাকে প্রথম উন্মোচিত করেছিলো, মনে পড়ে কি। আমরা তাকে বহু আগেই ফাঁস ক’রে দিতাম যদি আমাদের দেশ বন সরকারের কয়েকজন সোভিয়েত বিরোধী অফিশিয়ালের ব্যাপারে নাক না গলাতো। আপনি ধরে নিয়েছেন কেইন চারনাককে ব্যবহার করেছে। আপনি এটা আমাদের চেয়ে বেশি নিশ্চিত ক’রে জানেন না।”
“কিন্তু এখন তো জানি,” ম্যানিং বললো। “সাড়ে সাত মাস আগে আমরা এক লোকের ব্যাপারে জানতে পেরেছিলাম, যে ড্রেই এলপেনসার নামে একটা রেস্তোরাঁ চালায়। আমরা জানতে পেরেছিলাম সে কেইন আর চারনাকের মাঝে একজন সংযোগস্থাপনকারী। আমরা তাকে এক সপ্তাহ নজরদারী করেছি কিন্তু কিছুই পাই নি। সে জুরিখ আন্ডারওয়ার্ল্ডের ছোটোখাটো একজন সদস্য। এই যা। তাকে নিয়ে আমাদের বেশি সময় ব্যয় করা ঠিক না।” কর্নেল থামলো। সবার চোখ তার উপরে দেখে খুশি হলো সে।
“আমরা যখন চারনাকের হত্যার খবরটা পেলাম তখন একটা জুয়া খেললাম। পাঁচ রাত আগে আমাদের দু’জন লোক ড্রেই এলপেনহসার রেস্তোরাঁটা বন্ধ হবার পর সেখানে লুকিয়ে ছিলো। তারা রেস্তোরাঁর মালিককে চেপে ধরে তাকে কেইনের হয়ে চারনাকের সাথে কাজ করার জন্যে অভিযুক্ত করে। লোকটা একেবারে হাউমাউ ক’রে কেঁদে তাদের পায়ে পড়লে তারা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলো। সে নিজের সুরক্ষার জন্যে ভিক্ষা চায়। সে স্বীকার করেছে যে রাতে চারনাক খুন হয় সে রাতে কেইন জুরিখেই ছিলো। সে কেইনকে দেখেছে। চারনাকের সাথে তার কথাও হয়েছে।”
মিলিটারির লোকটা একটু থামলে ডেভিড অ্যাবোট আস্তে ক’রে শিষ বাজালো। “এটাও তো একটা বক্তব্য হয়ে গেলো,” শান্ত কণ্ঠে বললো সে।
“আপনার কাছে আসা সাত মাস আগে এই খবরটা কেন এজেন্সিকে জানানো হয় নি?” নোলটন জানতে চাইলো।
“ওটার সত্যতা জানা যায় নি।”
“আপনারা জানতে ধরেন নি, কিন্তু আমাদের কাছে এলে সেটা হয়তো অন্যরকম কিছু হোতো।”
“সেটা সম্ভব। আমি মানছি তার ব্যাপারটা নিয়ে আমরা খুব বেশি সময় ব্যয় করি নি। জনশক্তি ছিলো সীমিত। এজন্যে সব বিষয় নিয়ে সার্ভিলেন্স করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।”
“আমরা জানতে পারলে সেটা নিয়ে আলাপ করতে পারতাম।”
“আমরা আপনার সময় বাঁচিয়ে দিয়েছি।”
“ইঙ্গিতটা কোত্থেকে পেয়েছিলেন?” জিলেট জানতে চাইলো।
“গোপন একটা সোর্স থেকে।”
“আপনি সেটা মেনে নিয়ে ছিলেন?” বিস্মিত হয়ে বললো জিলেট।
“এই একটা কারণে আমাদের শুরুর দিকে সার্ভিলেন্সটা সীমিত আকারে ছিলো।”
“হ্যা, অবশ্যই। তবে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি কখনও খতিয়ে দেখেন নি?”
“অবশ্যই দেখেছি। সেটাই তো স্বাভাবিক,” কর্নেল আয়েশ করে জবাব দিলো।
“বোঝাই যাচ্ছে খুব কম উৎসাহের সাথে,” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ম্যানিং। তার চারপাশে কমসংখ্যক মিলিটারি ব্যক্তি থাকাটাই এই দীর্ঘশ্বাসের কারণ।
“ইনফর্মার এটা বেশ স্পষ্ট ক’রে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আমরা যদি আরো অন্য কোনো শাখাকে জড়িত করি সে আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে না। আমাদের মনে হয়েছে সেটা মানা উচিত। এরকমটি আমরা আগেও করেছি।”
“আপনি কি বললেন?” পেন্টাগনের অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললো নোলটন।
“নতুন কিছু নয়, পিটার। আমরা সবাই আমাদের সোর্স নিয়োগ করি, রক্ষা করি তাদেরকে।”
“এ ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। এজন্যে আপনি ব্রাসেসের ব্যাপারে বলেন নি।”
নিরবতা। আলফ্রেড জিলেট প্রথম মুখ খুললো। “প্রায়শই বলে থাকেন ‘আমরা এটা আগেও করেছি,’ তাই না, কর্নেল?”
“কি?” ম্যানিং জিলেটের দিকে তাকালো। তবে সে সচেতন আছে ডেভিড অ্যাবোটের চোখ তাদের দু’জনের উপর। “আমি জানতে চাই আপনাকে কতোবার বলা হয়েছে যে, আপনার সোর্সকে নিজের কাছে রাখবেন।”
“আমার মনে হয় অনেকবার।”
“আপনার মনে হয়?”
“বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আর কি।”
“আর আপনি, পিটার? এজেন্সির ব্যাপারটা কি?”
“পুরোপুরি বিস্তারের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।”
“হায় ঈশ্বর, এর মানে কি?” এতোক্ষণ চুপ ক’রে থাকা কংগ্রেসম্যান কথার মাঝখানে বললো। “আমাকে ভুল বুঝবে না, আমি এখনও শুরু করি নি। আমি কেবল ভাষাটা ধরতে চাচ্ছি।” সিআইএ’র লোকটার দিকে তাকালো সে। “আপনি এইমাত্র কি বললেন? কিসের বিস্তার?”
“বিস্তার, কংগ্রেসম্যান ওয়াল্টারস্। এটা কেইনের ফাইলে বিস্তারিতভাবে আছে। অন্য ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নজরে ইনফর্মারদের আনলে তাদেরকে হারানোর ঝুঁকি থাকে। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি এটাই প্রচলিত আছে।”
“আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি একটা বাছুরের টেস্টটিউব করছেন।”
“যা ভুল তা বার বার ক্রশ চেক করা হয় না,” জিলেট বললো।
“শব্দের নতুন ব্যাখ্যা,” বললো সন্ন্যাসী। “তবে আমি আপনার কথাটা বুঝতে পারলাম ব’লে মনে হচ্ছে না।”
“আমি বলবো এটা বেশ পরিস্কার,” এনএসসি’র লোকটা কর্নেল ম্যানিং এবং পিটার নোলটনের দিকে তাকিয়ে বললো। “দেশের সবচাইতে কার্যক্ষম গোয়েন্দা সংস্থা কেইনের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে—বিগত তিন বছর ধরে—আর তাতে কোনো ক্রশ চেক্ করা হয় নি। আমরা সব ধরণের তথ্যই নির্ভরযোগ্য ডাটা হিসেবে গ্রহণ ক’রে থাকি। সেগুলো জমিয়ে রাখি।”
“আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ ক’রে আসছি— হয়তো অনেক দিন ধরেই। আমি মানছি—তবে এখানে এমন কিছু নেই যা আমি এর আগে শুনি নি,” অ্যাবোট বললো। “সোর্সগুলো খুবই ধূর্ত আর আত্মরক্ষাকারী হয়ে থাকে। তারা কেউই চ্যারিটি করতে আসে না। কেবল লাভ আর টিকে থাকার জন্যে কাজ করে তারা।”
“আমার আশংকা হচ্ছে আপনি আমার পয়েন্টটা এড়িয়ে যাচ্ছেন,” চশমাটা খুলে বললো জিলেট। “আমি আগেও বলেছি কেইনের সাম্প্রতিক অনেকগুলো গুপ্তহত্যার ব্যাপারে সতর্ক ক’রে দিয়েছিলাম। তাকে আমার আমাদের কালে সবচাইতে সফল গুপ্তঘাতক ব’লে মনে হয়—সম্ভবত ইতিহাসে। এখন তাকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। আমার মনে হয় এটা ভুল। আসলে কার্লোসের ব্যাপারেই আমাদের বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। কার্লোসের খবর কি?”
“আমি আপনার বিচারবুদ্ধির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছি, আলফ্রেড,” সন্ন্যাসী বললো। “কার্লোসের সময় ফুরিয়ে গেছে, এখন কেইনের সময়। পুরনোর বদলে নতুনের আগমন হয়েছে। আমার সন্দেহ, পানিতে আরো বেশি হিংস্র হাঙরের আবির্ভাব ঘটেছে।”
“আমি এর সাথে একমত নই,” ন্যাশনাল সিকিউরিটির লোকটা বললো। “আমাকে ক্ষমা করবেন, ডেভিড, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কার্লোস এই কমিটিটাকে কুক্ষিগত ক’রে ফেলেছে। তার দিক থেকে মনোযোগ সরানোর অর্থ হলো আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি একটা দাঁতহীন হাঙরের পেছনে ব্যয় করছি, যেখানে হিংস্র হাঙরটা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“কার্লোসকে কেউ ভুলে যাচ্ছে না,” ম্যানিং বাঁধা দিয়ে বললো। “সে এখন কেইনের মতো কার্যক্ষম নয়, কেবল এটাই বলতে চাচ্ছি।”
“হয়তো,” শীতল কণ্ঠে বললো জিলেট। “কার্লোস চায় আমরা ঠিক এটাই বিশ্বাস করি। আর ঈশ্বর জানে, আমরা সেটা বিশ্বাসও করি।”
“আপনি কি এতে সন্দেহ করেন?” জানতে চাইলো সন্ন্যাসী। “কেইনের সফলতার রেকর্ড খুবই অসাধারণ।”
“আমি কি সন্দেহ করতে পারি?” প্রতিধ্বনি করলো জিলেট। “এটাই হলো প্রশ্ন, তাই না? কিন্তু আমাদের কেউ কি নিশ্চিত হতে পারবে? এটাও একটা দামি প্রশ্ন। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি পেন্টাগন আর সিআইএ আক্ষরিক অর্থেই স্বনির্ভরভাবে কাজ ক’রে যাচ্ছে। এমন কি নিজেদের সোর্সের যথার্থতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই।”
“এই শহরের কোনো নিয়ম খুব সহজেই প্রবর্তিত হয় না,” সন্ন্যাসী বললো। তাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে এখন।
আবারো কথার মাঝখানে কথা বললো কংগ্রেসম্যান। “আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, মি: জিলেট?”
“আমি ঐ ইলিচ রামিরেজ সানচেজের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আরো তথ্য জানতে চাই। সেই—”
“কার্লোস,” কংগ্রেসম্যান বললো। “তার উপরে আমি কিছু লেখা পড়েছি ব’লে মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে। বলে যান।”
ম্যানিং দ্রুত বললো। “আমরা কি আবার জুরিখে ফিরে যেতে পারি, প্লিজ। আমাদের রিকমেন্ডেশন হলো, কেইনের পিছু নিতে হবে আর সেটা এখনই। আমরা ভারভেখারওয়েন্টে-এ কথাটা ছড়িয়ে দিতে পারি। আমাদের সব ইনফর্মারদেরকে জড়ো করতে পারি, জুরিখ পুলিশকে সহযোগীতা করার জন্যে অনুরোধ করতে পারি। আমরা আর একটা দিনও নষ্ট করতে পারি না। জুরিখের লোকটাই কেইন।”
“তাহলে ব্রাসেসেরটা কে?” জানতে চাইলো সিআইএ’র নোলটন। সে সবচাইতে বেশি প্রশ্ন করছে। “খুন করার পদ্ধতিটা কেইনের মতোই। ইনফর্মারদের কথাও তো মিলে যায়। তাহলে সেটার উদ্দেশ্য কি?”
“অবশ্যই আপনাকে ভুয়া তথ্য দেয়া,” জিলেট বললো। “আর জুরিখে কোনো কিছু করার আগে আমি বলবো আপনি কেইনের সবগুলো ফাইল ঘেটে রি-চেক্ করুন। আপনার ইউরোপিয়ান স্টেশনের সব ইনফর্মাররা, যারা অযৌক্তিকভাবে আবির্ভূত হয় তথ্য দেবার জন্যে, তাদেরকে গুটিয়ে আনুন। আমার একটা আইডিয়া আছে, আপনি এমন কিছু খুঁজে বের করুন যা আপনি প্রত্যাশা করেন না : রামিরেজ সানচেজের চমৎকার লাতিন হাতটা।”
“যেহেতু আপনি বিশদ ব্যাখ্যার জন্যে জন্যে চাপাচাপি করছেন, আলফ্রেড, “ বললো অ্যাবোট। “তাহলে ছয় মাস আগে সংঘটিত অসমর্থিত ঘটনাটা আমাদেরকে বলছেন না কেন। এটা হয়তো অনেক সাহায্যে আসবে।”
এই প্রথম ন্যাশনাল সিকিউরিটির সদস্যকে দ্বিধাগ্রস্ত ব’লে মনে হচ্ছে। “কেইন মার্সেইর পথে রওনা দিয়েছে ব’লে অঁয়ে প্রভিন্সের এক নির্ভরযোগ্য সোর্সের কাছ থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে খবরটা পাই।”
“আগস্ট?” কর্নেল বিস্মিত হলো। “মার্সেই? এটা তো লিল্যান্ড! অ্যাম্বাসেডর লিল্যান্ড গুলিবিদ্ধ হন মার্সেই’তে। আগস্টে!”
“কিন্তু কেইন রাইফেল থেকে গুলিটা ছোড়ে নি। ওটা কার্লোসের কাজ ছিলো। এই খবরটা একদম নিশ্চিত। ব্যালেস্টিক মার্কিংগুলো আগের গুপ্তহত্যার সাথে মিলে যায়। তিন তিন জনের কাছ থেকে এক অজ্ঞাত কালো চুলের ভাড়াটে লোকের বর্ণনা পাওয়া গেছে, তারা তাকে ওয়াটারফ্রন্ট হাউজের চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় দেখেছে। একটা ব্যাগ ছিলো তার সাথে। লিল্যান্ডকে যে কার্লোস খুন করেছে সে ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই।”
“ঈশ্বরের দোহাই,” গর্জে উঠলো অফিসার। “এটা তো ঘটনার আগে, খুনের আগে। কে করেছে সেটা জানি না, তবে লিল্যান্ডের ব্যাপারে একটা কনট্র্যাক্ট ছিলো—এটা কি আপনার মনে উদয় হয় নি? আমরা যদি কেইনের ব্যাপারটা জানতাম তাহলে আমরা লিল্যান্ডকে রক্ষা করতে পারতাম। তিনি আমাদের মিলিটারির সম্পদ ছিলেন। ধ্যাত্তারিকা, তাহলে আজ বেঁচে থাকতেন তিনি!”
“আমার তা মনে হয় না,” জিলেট শান্ত কণ্ঠে বললো। “লিল্যান্ড এমন লোক ছিলেন না যে, বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে থাকবেন। অস্পষ্ট কোনো সতর্কতায় কোনো কাজই হোতো না। তাছাড়া আমাদের কৌশলটা যদি একসঙ্গে ধরে রাখা যেতো, তাহলে লিল্যান্ডকে সতর্ক ক’রে দিলে হিতে বিপরীত হোতো।”
“কিভাবে?” রুক্ষভাবে জানতে চাইলো সন্ন্যাসী।
“আমাদের সোর্স সেই সময় মধ্যরাতে কেইনের সাথে যোগাযোগ করে, আগস্টের ২৩ তারিখ ভোর তিনটায় আবার তার সঙ্গে দেখা করে রুই সারাসিনে। লিল্যান্ডকে পঁচিশ তারিখের আগপর্যন্ত দেখা যায় নি। যেমনটি বলেছি, সেটা যদি জানতাম তবে কেইনকে বিরত করা যেতো। তা হয় নি, কেইনকেও আর দেখা যায় নি।”
“আর আপনার সোর্স একমাত্র আপনার সাথেই যোগাযোগ রাখার জন্যে চাপাচাপি করেছে,” সন্ন্যাসী বললো। “বাকি সবাইকে বাদ দিয়ে।”
“হ্যা,” জিলেট মাথা নেড়ে বললো। নিজের বিব্রত হওয়াটা লুকাতে পারলো না। “আমাদের মনে হয়েছিলো লিল্যান্ডের ঝুঁকিটা অপসারিত হয়েছে—যার ফলে কেইন এসে হাজির হয় দৃশ্যপটে–আর তাকে ধরার মতো সুযোগটিও এসে গিয়েছিলো। অবশেষে আমরা একজনকে পেয়েছি, যে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে কেইনকে চিহ্নিত করেছে। আপনাদের কেউ কি এটা অন্য কোনোভাবে সামলাতে পারতেন?”
নিরব। এবার নিরবতা ভাঙলো টেনিসির কংগ্রেসম্যান। “জিশুখৃস্ট, সর্বশক্তিমান….কি সব যাচ্ছেতাই ব্যাপার।
নিরবতা। সন্ন্যাসী ডেভিড অ্যাবোটের বুদ্ধিদীপ্ত কণ্ঠটা সেই নিরবতা ভাঙলো। “পাহাড় থেকে নেমে আসা মূসা নবীর মতো একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে আমি কি আপনার প্রশংসা করবো, স্যার? সত্য হলো, আপনি এইসব অতি গোপন তথ্যে উত্তেজিত নন, এটা আপনার কাছে বরং স্বস্তির ব্যাপার।”
“আমার মনে হয় না কংগ্রেসম্যান পুরোপুরি
“ওহ্, চুপ করুন, পিটার,” বললো সন্ন্যাসী। “আমার মনে হয় কংগ্রেসম্যান কিছু বলতে চান।”
“একটু বলছি,” ওয়াল্টার্স বললো।
“আমি ভেবেছিলাম আপনারা সব মিলিয়ে একুশজন। মানে, আপনারা একুশজন এটা তদন্ত করছেন। এরই মধ্যে আপনারা আরো ভালো কিছু জেনে যাবেন। আপনাদের তো বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা বলার কথা, একে অন্যের সাথে তথ্য বিনিময় ক’রে প্রত্যেকের গোপনীয়তাকে সম্মান দিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর কথা। তার বদলে আপনারা একদল বাচ্চা ছেলের মতো এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন, লাফাচ্ছেন যেনো কে কার আগে সস্তা চকোলেট পেতে পারেন। এটা ট্যাক্সদাতাদের মূল্যবান অর্থের অপচয়।”
“আপনি খুব বেশি সরলীকরণ ক’রে ফেলছেন, কংগ্রেসম্যান,” বললো জিলেট। “আপনি একটা কাল্পনিক ফ্যাক্ট-ফাইন্ডার মেকানিজমের কথা বলছেন। এরকম কোনো জিনিস আসলে নেই।”
“আমি যুক্তিবাদী মানুষের কথা বলছি। আমি একজন আইনজীবি। আর এই অভিশপ্ত সার্কাসে ঢোকার আগে আমি প্রতিদিন অনেক গোপন আর স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে কাজ কারবার করেছি। এসব আমার কাছে কি আর এমন নতুন?”
“আপনার বক্তব্যটা কি?” জানতে চাইলো সন্ন্যাসী।
“আমি একটা ব্যাখ্যা চাইছি। আঠারো মাসেরও বেশি সময় ধরে আমি ব’সে আছি ‘গুপ্তহত্যা সাব কমিটি’র হাউজে। আমি হাজার হাজার পৃষ্ঠা ঘেটে দেখেছি শত শত নাম আছে তাতে, আর তার চেয়েও বেশি আছে তত্ত্ব। আমার মনে হয় না, এখানে কোনো ষড়যন্ত্র বা সন্দেহভাজন গুপ্তঘাতক আছে যার ব্যাপারে আমি অবগত নই। আমি ঐসব থিওরি আর নামগুলোর সাথে দুই বছর ধরে পরিচিত।”
“আমি বরং বলবো আপনার উপরে আমারদের অনেক আস্থা,” সন্ন্যাসী কথার মাঝখানে বললো।
“এজন্যেই তো আমি ওভার-সাইট চেয়ারে বসেছি। আমি ভেবেছিলাম আমি বাস্তবিকই কিছু অবদান রাখতে পারবো। তবে এখন আমি অতোটা নিশ্চিত নই। আমি আচমকা এটা ভাবতে শুরু করেছি যে, আমি আসলে কি জানি।”
“কেন?” ম্যানিং বেশ রেগেই বললো।
“কারণ আমি এখানে বসে বসে তিন বছর ধরে আপনাদের চার জনের কাছ থেকে একটা অপারেশনের কিসসা শুনে যাচ্ছি। যাতে ইনফর্মার অফিসার, আর ইউরোপের প্রধান প্রধান সব পোস্টই জড়িত—সবই একজন গুপ্তঘাতককে নিয়ে, যার ‘কর্ম সফলতার’ তালিকা খুবই অসাধারণ। আমি কি ঠিক বলেছি?”
“বলে যান,” শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো সন্নাসী। ঠোঁটে তার পাইপ ধরা। “আপনার প্রশ্নটা কি?”
“সে কে? মানে, কেইন লোকটা আসলে কে?”