বড় দুঃসময় – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

বড় দুঃসময়

অন্যান্য দিনের সঙ্গে আজকের দিনটারও কোনো তফাৎ ছিল না। বারান্দায় রোদ এখনও সোনার জলের মতো ছড়িয়ে, নীল নাইলন মশারির ভিতর থেকে আরও মিঠে লাগে। দেখে মহেন্দ্র বোঝে, আজ তত বেলা হয়নি। অন্য দিনের তুলনায় আজ বরং একটু আগেই উঠে পড়েছে, আটটা হবে, শরীরের কোথাও কোনো গ্লানি নেই, না একটু মাথা-ধরা, না গা-ব্যথা, কিছু না। পেটের অভ্যন্তরীণ অবস্থা টের পেয়ে ‘বেশ ভালো পায়খানা হবে আজ’, সে বোঝে।

মহেন্দ্র বিছানা ছাড়ে না। বিয়ের কিছুকাল পর থেকেই বুচুর দুই হবার সময়কাল থেকে, মহেন্দ্র এঘরে একা শোয়। পূরবী ও বুচু ও-ঘরে। বেডরুম ওটাই, ঘরটা বড়ো, খাট আছে বড়োসড়ো, জানালা দিয়ে অনেক আকাশ দেখা যায়। মহেন্দ্র করিডোরের দিকে দরজা বন্ধ করে রাখে। গত মাসখানেক থেকে তাদের পাড়ার অবস্থা যে-কোনো-মুহূর্তে-স্ট্রোক-হতে-পারে এমন প্রেসারের রুগী যেন। আর কার বাড়িতে কী করে মহেন্দ্র জানে না। কোনো বাড়িতেই লোকজন আর বিশেষ নেই, গত এক মাসে পাড়া খুবই পাতলা হয়ে এসেছে। বিশেষত, এখনও বিন্দুমাত্র বা কোনোরূপ যৌন আবেদন আছে এমন মেয়ে ও নারীরা অন্যত্র চলে গেছে। পুরুষরা বিকেল-বিকেল বাড়ি ঢুকে পড়ে। সন্ধের পর রাস্তা খাঁ-খাঁ করে, দোকান-পাটও বিশেষ খোলা থাকে না। অবশ্য দোকানগুলো নির্দেশ মতো বন্ধ দরজার সামনে একটি সমুজ্জ্বল ডুম সারারাত জ্বালিয়ে রাখে। সারি সারি ঘুমন্ত দোকানের সামনে সাইনবোর্ডগুলো জেগে থাকে সারারাত।

পাড়ার একমাত্র বাসরুট বদলে গেছে। মাঝে মাঝে দ্রুত সাইকেল রিক্সা যায় ও পড়বি-তো-পড় মহেন্দ্রদের ফ্ল্যাটের সামনেই একটা গর্তে পড়ে ঝনঝন করে বেজে ওঠে।

পূরবী থেকে গেছে। সে-ও তাই করে, তার ঘরেরও দরজা-বন্ধ, তবে তার ভয়ডর কমই। থাকবে কেন, কেউ এলে কৃত্য যা সে তো মহেন্দ্রকেই করতে হবে। পূরবীর ভূমিকা তো নিষ্ক্রিয় বা দর্শকের। মহেন্দ্রই তাই পূরবীকে ভালো করে দরজায় খিল এঁটে, অধিকন্তু, ছিটকিনি লাগিয়ে শুতে শিখিয়েছে। খিল শক্ত করার জন্যে মাঝখানে যে মাপসই খোঁটাটা গোঁজা হয়, মানে পূরবীর ঘরে পূরবী গোঁজে, সেও মহেন্দ্ররই সংগ্রহ। ধরা যাক, বাথরুম দিয়ে কোনো ক্রমে সে এল। নিঃশব্দে দরজাও ভাঙল। তারপর করিডোরে ঢুকে যথাক্রমে পূরবী ও মহেন্দ্রর দরজা দুটি তার পক্ষে দ্বিতীয় বাধা। এই দরজা দুটো না-ভেঙে খোলা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। যত সন্তর্পণেই ভাঙা হোক না কেন, অন্তত সেটুকু শব্দ হবেই যাতে করে তাদের কারও না-কারও ঘুম ভাঙবেই।

শক্ত গ্রিল দিয়ে পুরোপুরি মোড়া দক্ষিণের বারান্দায় যাবার জন্য দুটি ঘরের দরজাই অবশ্য ভেজানো থাকে। মাসে চার-পাঁচ দিন যা বাদ যায়, নইলে বারান্দার খোলা দরজা দুটো ঠিক একদিন অন্তর পেরিয়ে সপ্তাহে তিনবার পূরবী এঘরে আসেই, শাড়ি ছাড়ে ও ব্লাউজ খোলে; তারপর পেটিকোট ও ব্রেসিয়ার গায়ে মশারি ছোট্ট করে তুলে স্মার্টলি ঢুকে পড়ে। মহেন্দ্রকে ডিঙিয়ে বাঁ দিকে শোয়। ডান হাতে পাকড়ালে মহেন্দ্রর জোর বাড়ে।

তো, সোজা বারান্দায় চলে গিয়ে চেঁচামেচি করার পথ সম্পূর্ণ মুক্ত ও বাধাহীন। একে অন্যকে চুপি চুপি ডাকো; সে জাগিয়ে তোলো অন্যকে, যার ঘুম আগে ভেঙেছে। তারপর ছুটে বারান্দায় গিয়ে দু-জনে চ্যাঁচাও। বুচুও যোগ দেবে। চেঁচালেই যে কেল্লা ফতে তা নয়, নিজের মাথা নিজেই দুদিকে নাড়িয়ে মহেন্দ্র ভাবে, আজকালকার দিনে চ্যাঁচালে আসবেটা কে? নিচের ফ্ল্যাটের ননীবাবু? ওঃ হো, তিনি তো হাওয়া। ওপরের ফ্ল্যাটের মৌলিক মশাই বা রাস্তার ওপারের বদ্যিনাথ গাঙ্গুলী সম্পর্কেও একই কথা। অর্থাৎ ছোঃ। ভুটে, নন্তু, অশোক, বাবু—পাড়ার মস্তানদের ওপরেও ভরসা কই, হয়তো তাদেরই কেউ স্বয়ং এসে পড়েছে! মহেন্দ্রর ঘরে অবশ্য যার-পর-নেই ব্যবহারযোগ্য একটি লাঠি আছে। ভারি পোক্ত আর হালকা এবং এটা দিয়ে একটা বিছে মারা কি কাক-টাক তাড়ানো সম্ভবও হয়েছে। কিন্তু মানুষ? ধরা যাক, রাতের সেই মানুষটি খুবই রোগা-পাতলা এবং হাতেও তার ছুরি-পিস্তল কিছুই নেই। কিন্তু মানুষ? মানুষকে মারবে কোথায়? ঘাড়ে, হাতে, না পায়ে? মাথায়! আ, ভাবা যায় না। মহেন্দ্র পারে না ভাবতে। মুখোমুখি সেই নিশিমানুষের সামনে উদ্যত লাঠি হাতে শতটুকরো হয়ে পড়ছে সে, মহেন্দ্র আগেভাগেই বুঝতে পারে। মানুষকে কোথায় মারতে হয় মহেন্দ্র জানে না। সে, মহেন্দ্র, এমন একজন মানুষ, যাকে আজ ৪০ বছরে কেউ একটা ঘুষি মারেনি। সেও পারে-নি মারতে। একটি মাত্রও ঘুষি না খেয়ে সে জীবনের তিন ভাগ কাটিয়ে দিল, মহেন্দ্র আয়ু ধরে রেখেছে ৬০ বছর। বাকি ২০ বছর একটি ঘুষি না মেরেই যদি কাটিয়ে দেওয়া যায়—মানে কোনো মানুষকে—তবে তাকে ‘চূড়ান্ত সফল’ বা ‘চরমতম ব্যর্থ’ একজন, যা হয় একটা কিছু বলা যাবে।

বাকি রইল আশা। আশা শোয় করিডোর সংলগ্ন ছোট্ট ভাঁড়ার ঘরে। হাওয়ার জন্যে চাপা, দমবন্ধ ছোট্ট ঘরটার দরজা খুলেই তাকে শুতে হয়। এ-ঘর থেকে বাথরুম যাতায়াতের পথে আশাকে মহেন্দ্র কখনও চিৎ, কখনও পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে। এ বাড়িতে তেমন নিরাপত্তা নেই। বুঝে তার একটা অনির্দিষ্ট কষ্ট হয়। সে অনেকবার পূরবীকে বলেছে, ‘শুক না আশা তোমার ঘরের মেঝেয়, তুমি তো এঘরে রাত করে আসো, কতটুকু শব্দ পাবে যদি তখনও জেগেই থাকে। তাছাড়া’, মহেন্দ্র আরও বলে ‘বস্তিতে ওদের তো একটাই ঘর আর ওর বাপ-মা এখনো ইয়াং। ওর অভ্যেস আছে।’ পূরবীর এক কথা, না, ও বড়ো হয়েছে। কত বড়ো। কী-রকম বড়ো…পূরবীর সায়ার দড়ি টানতে গিয়ে, না-টেনে ক-মুহূর্ত চুপ করে না ভেবে পারে না মহেন্দ্র। কিছু ভেবে পায় না। তার মন নেই, তার হঠাৎ মনে হয়। সে দড়ি খোলে। তারপর বাস্তিল আক্রমণ করে।

স্টোররুমে আলো জ্বালাতে গিয়ে সুইচে হাত রেখে মহেন্দ্র কতদিন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকেছে। কখনও ও-দিকের জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাট আসছে, কখনও মশারির ছেঁড়া-খোঁড়ার ভেতর দিয়ে আসল জ্যোৎস্না ঢুকে পড়েছে মশার সঙ্গে, গ্রীষ্ম-হাওয়ায় ফুলন্ত মশারির ভেতর আশা ঘুমে কাদা, শীতে কুঁকড়ে এতটুকু কখনও-বা। গা থেকে চাপা খসে গেছে। মহেন্দ্র কতদিন নিজে টেনে দিয়েছে ওর ছেঁড়া র‍্যাপার, ডেকে তুলেছে, ‘আশা, আশা! জানলাটা বন্ধ করে শো। এই আশা।’ ঠিক গায়ে হাত দিয়ে যে, তা না, মাথার বালিশ ধরে টানাটানি করে ঘুম ভাঙিয়েছে। ‘ও কী ভাবে শুয়ে আছিস, ধিঙ্গি মেয়ে। পাশ ফিরে শো!’ —বলেছে। সেই ছোটবেলা থেকে রয়েছে আশা, এতদিনে ঠিক কত বা কী-রকম বড়ো হয়েছে মহেন্দ্র তা জানে না। অনুমানও করতে পারে না। এ বছর পুজো থেকেই পূরবী ওকে শাড়ি, সায়া ও অন্তর্বাস পরাচ্ছে।

যতদূর সম্ভব খোঁজ-খবর নিয়েই মহেন্দ্র এ-দিকে আসে। দক্ষিণ খোলা, গ্রিলে-মোড়া বারান্দাসহ ফ্ল্যাটটি তার খুবই পছন্দ হয়, তিন বছরের কামিনীলতা গ্রিলের ওপর তৈরি করেছে ঘন সবুজ জাফরি। বাড়িটিও ছোট্ট, একহারা, ওপরে ও নিচে একটি করে দুকামরা ফ্ল্যাট। পূব দিকে জুড়ে প্রকাণ্ড স্কুল-কম্পাউন্ড, দক্ষিণে মাঠের পরে রাস্তা, পিছনে পানায় ভরা বিল।

ডাইনে পশ্চিম দিক থেকে পাড়ার শুরু। তারপর আধ-মাইলটাক দূরে গঙ্গা। ঠিক তিন বছর আগে, অনেক ভেবেচিন্তে, মহেন্দ্র এ-পাড়ায় উঠে আসে। সত্যি, যা চেয়েছিল, শুধু উত্তর শহরতলিতে কেন, সারা কলকাতায় এমন নিরিবিলি, শান্ত ও ভদ্রপাড়া আজ আর কটা আছে বলা শক্ত। খুব বেশি নেই।

অফিসগুলো তো সব এক-একটা জ্যান্ত নিউজ-পেপার আজকাল। বিশেষত, তাদের রেভিনিউ-ডিপার্টমেন্টটি ‘শেষ সংস্করণ’ যেন। শহর ও শহরতলির চতুর্দিক থেকে তো বটেই, সোদপুর, ব্যারাকপুর, উলুবেড়ে, সোনারপুর মায় ক্যানিং লাইনের চম্পাহাটি থেকে পর্যন্ত তাদের অফিসের একজন বেয়ারা, দ্বারিকানাথ মণ্ডল, ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করে। সর্বত্র থেকে আবার তাদের ডিপার্টমেন্টেই জড়ো হয় যত রাজ্যের গুজব, যার মোটামুটি অংশের সমর্থনও পরদিন কাগজে মেলে।

শুধু মহেন্দ্রদের পাড়াই এতদিন কাগজে ওঠেনি। অতি সম্প্রতি অবশ্য একটা ছোট্ট খবর তাদের পাড়া সম্পর্কে বেরিয়েছে। আর কেউ পাত্তা না দিলেও, মহেন্দ্র লক্ষ করেছে খবরটি। ভেবেছে; ভাবতে ভাবতে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হয়ে পড়েছিল। দরজা-টরজা এত ভালো করে বন্ধ করে শোবার প্রয়োজন ওর আগে কখনও হয়নি। লাঠিটা যে সরে এসেছে নাগালের মধ্যে—মাথার কাছেই থাকে মহেন্দ্রর—সেও ঐ খবরটার পর থেকেই।

মাস তিনেক আগের কথা। সেদিন শেষরাতে বান আসবার কথা ছিল। বান এসেছিল। ভোরের স্নানার্থীরা সেদিনই প্রথম সারবন্দি ও দূরবিস্তৃত খুরের ছাপ পলির ওপর দেখতে পায়। যদিও কুকুরের পদছাপ ঠিক অত গভীর হয় না এবং আকারেও বড়োসড়ো, তবু কেউ তা লক্ষ করেনি। কেবল যতীনবাবুর খটকা লেগেছিল। বাজারের ঠেলাঠেলির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শিঙমাছের ঝাপটানো থলি হাতে মহেন্দ্রকে উনিই প্রথম খবরটা দেন। সন্ধের মধ্যে আরো কিছু লোক খবরটা জেনেও ফ্যালে। খবরটি অবশ্য কাগজে বেরোবার মতন নয়, এবং বেরোয়ওনি। ‘মস্ত কাঁঠালিচাঁপার মতো মোশায় এক-একটা’ বলতে বলতে ঠিক অবিচলিত ছিল না যতীনবাবুর মুখ, আর তাঁর হাতের থলিতে জ্যান্ত শিঙ-মাছগুলোও দারুণ ছটফট করছিল, ‘গঙ্গার তীর থেকে উঠে এসে আবার গঙ্গার জল পর্যন্ত সমানে নেমে গেছে।’

তারপর মাস না ঘুরতেই বেস্পতিবার সারারাত বৃষ্টি। বাজারের পিছনে হরিনারায়ণ ব্যানার্জি লেনের মুখেই দুধের বুথ, এ অঞ্চলের মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হলেই ওখানটা নাব্য হয়ে ওঠে। অন্তত ছেলেপিলেরা কাগজের নৌকো ছাড়েই। ভোরে, হাঁটুজলে ঠিক দুধের বুথের সামনে, নৌকোর বদলে সেদিনই প্রথম, একটি শব উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। শবটি যে পাড়ার হাবা পাগলির তা কেউ পুলিশ আসার আগে কল্পনাও করেনি। কুণ্ডুদের রকে ঋতু-রক্তে ভিজে শাড়ি পড়ে কতদিন তাকে হেসে খুন হতে দেখা গেছে। অর্ধ-নগ্ন ও ভিজে ঐ নারী-শরীর কুণ্ডুদের উঁচু রকে কতদিন শুয়ে। দারোগা মন্তব্য করেন, পাড়ার কোনো একটি ষাঁড়েরই এই কীর্তি। বস্তুত, হাবা পাগলির সারা গায়ে গর্ত, ফোলা কালসিটে ও রক্ত। গর্তগুলো প্রায় চার-পাঁচ ইঞ্চি গভীর। কারোনার বলেন, তীক্ষ্ণমুখ শাবল দিয়েই ঐ সব গহ্বর তৈরি। অথচ, অপরপক্ষে, পাড়ার যে তিনটি ষাঁড়কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের মধ্যে ভোলা ও ধরমবীরের শিঙ-ভাঙা এবং অপরটি নেহাতই বাচ্ছা। এখনো নামকরণই হয়নি।

যদিও ঐ কারণেই, ইদানীংকালের মধ্যে সেই প্রথম, তাদের পাড়ার নাম খবরের কাগজে ওঠে। কিন্তু খবরটাতে আজকালকার তুলনায় তেমন বৈশিষ্ট্য ছিল না বোধহয়, অন্তত সেদিন অফিসে কেউ এনিয়ে কোনো কথা বলেনি।

অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও সকলেই লাইন দিয়ে দুধ নেয়। মহেন্দ্ররা সরকারি দুধ নেয় না। নইলে আর সকলের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা প্রায় আধ-ঘণ্টাটাক ধরে, তাকেও শবটি দেখতে হত। এরপর অবশ্য মাস-খানেকের মধ্যে কিছুই ঘটেনি। ব্যাপারটার ঐখানেই ইতি হল বলে মনে হয়।

মাত্র গতমাসের গোড়াতেই বলতে গেলে নতুন বিপদের প্রথম সংকেত দেখা দেয়। পরপর তিনটি ঘটনা ঘটে, যায় মধ্যে দ্বিতীয়টি গুজব বলে প্রমাণিতও হয় : বেশি রাতে রমানাথবাবুর দশ বছরের মেয়ে মনুর ঘুম ভেঙে যায়। একটু বড়ো হবার পর থেকে এ-রকম রাতে ঘুম ভাঙলে সে আজকাল মাঝে-মাঝেই মাকে বিছানায় পেত না। বাথরুম থেকে ফিরে এসে, সে তাই ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ভোরেও রমাদার স্ত্রীর খোঁজ নেই! রমানাথবাবুর এক বেকার ভাগ্নে লিলুয়ায় থাকত। সেটা অবশ্য, ওঁর ভাগ্নের সঙ্গে স্ত্রীর গৃহত্যাগের ঘটনা বলে দিন-কয়েকের মধ্যেই প্রমাণিত হয়। কিন্তু প্রথম ঘটনাটি?

জেলে-পাড়ার রানির-মা তার সদ্যবিধবা যুবতী মেয়েকে বুকে আঁকড়ে শেষরাতে ঘরের চাল আঁচড়ানো ও খোঁড়ার শব্দ ঠিকই শুনেছিল, পরদিন সকালে তার চাক্ষুষ প্রমাণও পাওয়া যায়। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে। বস্তুত, আগস্ট মাসের এই ঘটনাটি দিয়েই নতুন বিপদের অববাহিকা সূচিত হয় বলা চলে। এ-পাড়ার বিপদ যে অতি-অজ্ঞাত ও যার-পর-নেই অশ্রুতপূর্ব দিক থেকে ঘনিয়ে আসছে, তার কোনো সূত্র এর আগে গোয়েন্দা লাগিয়েও পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ নারীকেন্দ্রিকতার দিক থেকে। বলা বাহুল্য, এ-খবরটি আদৌ কাগজে বেরোয়নি।

তবু সেপ্টেম্বর মাসের এই তৃতীয় ঘটনাটির আগে কেউ পাড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এমনটা শোনা যায়নি : ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে উঠোন পেরিয়ে মাঝরাতে রানি গিয়েছিল বাথরুমে। খুব ভোরে মা তার খোঁজ শুরু করে। শোনা গেল, গঙ্গার ধারে নদীঘাটের চাতালে রানির বিবস্ত্র দেহ চিৎ হয়ে পড়ে আছে। আজ তার একমাত্র অটুট স্তন দেখে অবশেষে বোঝা যায়, বিধবা মেয়েটি কতখানি যুবতী ছিল। অপর স্তনটি? নেই! নিতম্বের অংশ নেই। সারা শরীর অ-মানবিক বলশালী কেউ যেন উন্মত্ত গুঁড়িয়েছে। বিশেষত মুখ একেবারে বিধ্বস্ত। চাতাল সংলগ্ন ভাঙা পাঁচিলটাও নাড়া খেয়েছে বেশ, যার ফলে পাঁচিলের মস্ত ফাটল থেকে বেরনো কচি শিউলি গাছটি রক্তাক্ত শরীরের ওপর সব ফুল ঝরিয়ে সকালেই একদম ন্যাড়া। গঙ্গা থেকে উঠে আসা চতুষ্পদ খুরের দাগের সঙ্গে হত্যার সুস্পষ্ট প্রমাণও সেই প্রথম পাওয়া গেল। রক্তে ভেজা চাতাল থেকে নেমে খুরের দাগ সিঁড়ি ভেঙে পলিমাটির ওপর দিয়ে নদীতীর পর্যন্ত হেঁটে গেছে। গিয়ে মিলিয়ে গেছে। সেই সারবন্দি রক্ত-চাঁপাগুলোর একটিতে মাত্র একবার নাক রেখেই পুলিশের কুকুর মুখ তুলে ঘাতক ও নিহতের উদ্দেশ্যে একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ক্রোধ ও বিলাপ জানায়। তারপর দৌড়ে নদীতীর পর্যন্ত গিয়ে, বারবার জলে নেমে ও লাফিয়ে তীরে উঠে বিরাট সোরগোল শুরু করে। উঁচু তীরে কয়েক শ’ লোক দাঁড়িয়ে।

এবারে ঘটনাটি বিস্তৃত বিবরণ (অধিকপক্ষে ১০ লাইন) প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে ছাপা হয় এবং তারপরেই ক্রমে পাড়া ভাঙতে থাকে। মহেন্দ্রদের ফ্ল্যাটের নিচে একতলায় থাকতেন ননীবাবুরা। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে সপরিবারে ওঁর স্ত্রী চলে গেলেন দুর্গাপুর। ননীবাবু সাহসী লোক। থেকে যাচ্ছেন বলে মনে হল। তারপর সেই যে একদিন সকালে বেরলেন, তারপর আর কোনো খবর নেই। দুর্গাপুর থেকে দুবার ভাড়া মানি অর্ডার করেছেন। খুব ফাঁকার ওপর একহারা ছোট্ট বাড়িতে মহেন্দ্ররা এভাবে থেকে গেল।

দুমাস চুপচাপ। তারপর একদিন সে এল।

সেটা ছিল ছুটির দিন, তখন সবে সন্ধে হয়েছে। চালতাবাগানে পূরবীর দিদির বাড়িতে দুপুরের খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল, সেখানে থেকে উঠতে বিকেল হয়ে গেল। বুচু মাসির কাছেই থেকে গেল।

বাড়ি থেকে আধ-মাইলটাক দূরে বি.টি রোড দিয়ে ‘এল’ বাসগুলো যায়। মহেন্দ্র সেখানে নেমে বাকি পথটুকু একটা সিগারেট ধরিয়ে আনমনে হেঁটে আসছিল। ভালো লাগছিল হেমন্তের বিকেলবেলায় হাঁটতে।

একটু এগিয়েই তার প্রথম খটকা লাগে। কিছু লোক কেমন যেন দলবদ্ধভাবে পিছন দিকে চাইতে চাইতে তার পাশে দিয়ে, উল্টোদিকে, বি.টি রোডের দিকে হেঁটে চলে গেল। হাঁটছিল তারা ঠিকই, তবু কী অস্বাভাবিক তাদের হাঁটা! আসলে, সেই হাঁটায় ছিল ঊর্ধ্বশ্বাস ছোটার দ্রুততা।

মহেন্দ্র তার সন্দেহের সত্যতা মিনিট খানেকের মধ্যেই বুঝতে পারল। হঠাৎ, দু-পাশে দোকানগুলোর শাটার হুড়হুড় করে নেমে পড়তে লাগল। তাদের পাড়ার দিকে থেকে অমনিভাবে, ছোটার-চেয়ে-দ্রুত, হেঁটে আসছে দলবদ্ধভাবে মানুষ, সঙ্গে নারী ও শিশুও হাঁটছে। হঠাৎ রাস্তার আলো গেল নিবে এবং সেই সঙ্গে ‘হা-আ’ করে দূরে-কাছে মাত্র একবার উঠল বা পড়ল মানুষের সমবেত আর্তস্বর, তারপরই সব স্তব্ধ। এখন শুধু অগণন মনুষ্যমূর্তি আসছে, দলে দলে মানুষ, তারা এখন অন্ধকার রাস্তা দিয়ে দৌড়ে আসছে। নির্জনতর তীরে, বাড়ি রেখে, মহেন্দ্র একবার রাত্রে পুরীর সমুদ্রে নেমে পড়েছিল। আকাশে চাঁদ ছিল, আর ফসফরাসে ভরা উজ্জ্বল ফেনাসহ এগিয়ে আসছিল ঢেউ-এর পর ঢেউ— ঢেউ-সংঘর্ষের অব্যর্থ মুহূর্তে হঠাৎ লাফিয়ে কাত হয়ে গিয়ে, মহেন্দ্র সে-রাতের সেই প্রচণ্ড ঢেউ-এর পর ঢেউ-এর মোকাবিলা করেছিল। আজও অমনই একের পর একদল করে মানুষ ছুটে আসছে আর মহেন্দ্র লাফিয়ে উঠে কাত হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যাতে করে ধাক্কা কম লাগে। এভাবে ঢেউ কেটে মহেন্দ্র বাড়ির দিকে এগোবার চেষ্টা করে। যত চেষ্টা করে, ততই পিছিয়ে পড়তে থাকে। একসময় দেখা যায়, মহেন্দ্রও ঢেউ-এর সঙ্গে ছুটে চলেছে বাড়ি থেকে ক্রমাগত দূরে।

শেষ পর্যন্ত এটুকু রাস্তা পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছতে তার দেরি হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগে। মহেন্দ্রর বাড়ির ঠিক আগে ফায়ারিং স্কোয়াডের পাঁচিলের মতো লম্বা একটানা দেওয়াল— সেটা পেরোলেই তাদের দোতলা। অন্যান্য দিনের মতো পাঁচিল পেরিয়েই মহেন্দ্র মুখ তোলে ও আজ আলো জ্বলছে না দেখে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফ্যালে। তারপর পশ্চিমে গঙ্গার দিকে তাকায়। দূরে একটা বাঁক। বাঁকের পরেই নদী। রাস্তা কী বিলকুল ফাঁকা! একটা কুকুর তো দূরের কথা, দেখে মনে হয় এই রাস্তায় এখন কীটপতঙ্গও নেই। সমস্ত বাড়ি অন্ধকার ও স্তব্ধ। শুধু হঠাৎ-ওঠা জোরালো হাওয়ায় একটা শালপাতার ঠোঙা গঙ্গার দিকে হু-হু উড়ে যাচ্ছে। ঐ বাদামি ঠোঙার সঙ্গে মহেন্দ্রর মধ্যে থেকে মহেন্দ্রর এক খণ্ডও উড়ে যাচ্ছে গঙ্গারই দিকে, মহেন্দ্র টের পায়। বাড়ি থেকে মাত্র বিশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে, পূরবী নয়, বুচুও নয়, হঠাৎ আশার কথা ভেবে মহেন্দ্র আমর্ম কামনায় কেঁপে ওঠে। রহমানদা একদিন খুব মাতাল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে তাদের বাড়িতে রাতের আশ্রয় নেয়। পূরবী শোবার ঘর থেকে বেরোয়নি। আশাই সেদিন খেতে-টেতে দেয়। এক সময় মহেন্দ্র দ্যাখে, রহমানদার চোখ দুটো দুখণ্ড সাদা পাথর হয়ে গেছে। মণিহারা চোখে রহমানদা আশাকে দেখছে। আশাও অনড়। এই মেয়েটাকে তুমি নার্স করো মহেন্দ্র—একটা লাভ-এ্যাফেয়ার তৈরি করো এর সঙ্গে—তার বেশি-কিছু এখন নয়। দুচার বছর পরে এ তোমাকে তা দেবে যা তুমি মেয়েদের মধ্যে এতকাল খুঁজে বেড়িয়েছ।’ মহেন্দ্র তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলে। আশার জন্য কামনায় সে আজ থরথর করে কাঁপছে, সে দেখে।

আশা? দৌড়ে বাড়ির দরজায় এসে সে দ্যাখে, দরজা ভেঙে পড়ে আছে। আশা আছে তো? মহেন্দ্র আবার আমূল কেঁপে ওঠে। সে বেল টেপে।

‘আশা!’

শব্দ নেই। ‘আশা!’ সিঁড়ির নিচে থেকে মহেন্দ্র ডাকে। সাড়া নেই।

‘আশা!’ মহেন্দ্র আবার ডাকে। শব্দ নয়, এবার তার গলা দিয়ে অস্ফুট ভয়ার্ত স্বর বের হয়।

সিঁড়ির মুখে আশা এসে দাঁড়ায়।

তার হাতে মোমবাতি। সে একটি লাল-পাড় শাদা শাড়ি পরে আছে।

কাঁধ থেকে আঁচল খসে গেছে।

মাত্র এক বছরও হয়নি শাড়ি পরছে—এরই মধ্যে স্বাস্থ্যে ফেটে পড়ছে তার ব্লাউজ। মহেন্দ্র আশার মুখের দিকে তাকায়। আশা তাকে ডাকে। ডেকে ছাদে নিয়ে যায়।

ছাদ থেকে পূর্ণিমার গঙ্গা পর্যন্ত দেখা যায়।

আশা শুরু করে :

তখনও সন্ধে হয়নি। চাঁদ উঠছিল। প্রথমে, ছাদে দাঁড়িয়ে, পূবরী ও আশা গঙ্গার জল থেকে এক খণ্ড মেঘ ভেসে উঠতে দ্যাখে। তারপরই শুরু হয় সেই শব্দহীন চিত্রার্পিত ঢেউ-এর পর ঢেউ, যার ধাক্কা কাটিয়ে মহেন্দ্র এদিকে আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি।

ফাঁকা রাস্তা দিয়ে সে হেঁটে আসে। তার ভারি খুরের শব্দ শোনা যায়। সে যখন তাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়, ওরা তখনো ছাদে। সে কি ওদের দেখতে পেয়েই বাড়িটি নির্বাচন করেছিল, নাকি, এ-রকমই ছিল পূর্ব-নির্দিষ্ট, যা সে আগেই জানত? ধীর ও নিশ্চিত পদক্ষেপে, যেন গুনতে জানে, পদক্ষেপ গুনে সে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় ও ঘাড় থেকে মুণ্ডু তুলে ও চারদিকে ঘুরিয়ে মুখ ব্যাদান করে সে দুবার গর্জন করে। যেন সে প্রতিবেশী সমাজকে দ্বন্দ্বে আহ্বান করছে, যদি কেউ থাকে। কে আসবে? তেমন কেউ নেই বুঝে আরও নিশ্চিতভাবে সে এক পা তুলে দরজায় আঘাত করে। মাত্র একটি আঘাতেই হুমড়ি খেয়ে দরজা ভেঙে পড়ে।

ওপরের দরজার ছিটকিনি খুলে পূরবী বেরোয়। তার পরনে ছিল মুর্শিদাবাদ সিল্কের লাল-পাড় শাড়ি। একটু আগেই গা ধুয়ে বৈকালী প্রসাধন সেরেছে, চুল আশা বেঁধে দিয়েছিল। পাড়া জুড়ে লোডশেডিং। পূরবীর হাতের মোমবাতির আলো সিঁড়ি ভেঙে পিছনে তার গায়ে গিয়ে পড়ে। অবর্ণনীয় দৃশ্য। বলার মতো ভাষা কই, যে আশা বলবে! কালো শাটিনের মত তার চামড়া, তরুণ ও নমনীয় তার পেশি, তার চোখ পূরবীকে দেখে নরম ও ছলছলে হয়ে আসে। সে গা থেকে জল ঝাড়া দেয়।

তারপর উঠে আসে।

চারটি সিঁড়ির ব্যবধান রেখে সে ঐখানে নতজানু বসে পড়ে। আশার হাতে মোমবাতি ধরিয়ে দিয়ে পূরবী দুটি সিঁড়ি নেমে যায়। আশা সেই থেকে মোম ধরে আছে। আঙুলের ডগা দিয়ে পূরবী তার পুরু ঠোঁট ছোঁয়। নাকের পাটা কাঁপিয়ে সে ফোঁস করে একটি নিঃশ্বাস ফ্যালে। তার নিঃশ্বাস থেকে নেবুফুল ও মধু মেশানো এক তীব্র কামনাময় সুগন্ধ ভেসে আসে। আশার মনে হয়, সে তার দিদিমণির হাত চুমায় চুমায় ভরিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদানে পূরবী তার ককুদে হাত বুলিয়ে দেয়। তার গলা দিয়ে তৃপ্ত, সুখী, মৃদু ঘড়ঘড় শব্দ বেরুতে থাকে।

ঈদের দুটি চাঁদের মতো রূপালি, বাঁকানো শিংদুটি বাঁকিয়ে সে পূরবীর উদ্দেশ্যে তার পিঠের দিকে ইঙ্গিত করে। তারপর তার প্রশ্নময় ছলোছলো চোখদুটি তুলে পূরবীর দিকে তাকায়। মোমের আলোয় দুই চাঁদের মাঝখানে একটি রূপালি তারা চিকচিক করতে থাকে।

পূরবী একবার আশাকে ঘাড় ফিরিয়ে দ্যাখে। সেই শেষবার। আশার মাধ্যমে সে বিদায় নেয় তার ৩০ বছরের অবুঝ, তৃপ্তিহীন জীবন থেকে। তারপর ওর চওড়া পিঠে উঠে বসে। শায়ার লেসে ধুলো লাগতে পারে ভেবে ওঠার আগে সে শাড়ি ও শায়া একটু তুলেও নেয়। ওঠার সময় দিদিমণিকে লাগে একটি হালকা পালকের মতো।

ট্রফি হাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিজয়ীর মতো ষাঁড়টি এবার উঠে দাঁড়ায়। তারপর সাবধানে সিঁড়ি ভেঙে নামে। তারপর রাস্তায় নেমে প্রতিবেশী সমাজের উদ্দেশে আহ্বানে ভরা তৃতীয় হুঙ্কার ছাড়ে। যে, কোঈ হ্যায়? কেউ আসে না। তারপর ভালো করে কিছু বোঝার আগেই সামনে খুর গেঁথে, আঁচড়ে, কিছু ধুলো উড়িয়ে, অশ্বের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে গঙ্গার দিকে দৌড়ে যায়। তার ককুদ আঁকড়ে ধরে, তার পর মাথা পেতে, পূরবীকে শুয়ে থাকতে দেখা যায় সেই শেষবার। আশা ছাদ থেকে দ্যাখে।

সেই থেকে সে ছাদে দাঁড়িয়ে। একা।

এখন, ঐ দেখা যাচ্ছে জলের ওপর ধোঁয়া। হাতের তালুর মতো এক টুকরো মেঘ এখনও দেখা যাচ্ছে। ঐখানে।

মহেন্দ্র ডাকল, ‘আশা!’ চল, আমরা পূরবীকে খুঁজতে যাই।’

আশা ও মহেন্দ্র পথে বেরুল। আশা হাত ধরল, মহেন্দ্র এগিয়ে চলল গঙ্গার দিকে। সে নিরস্ত্র, তার হাতে তাদের বাড়ির সেই একমাত্র হালকা ও পোক্ত লাঠিটাও নেই। সে কেবল আশার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে নদীর দিকে। আশার অপরহাতে মোমবাতি। রাস্তা কীটপতঙ্গহীন। শালপাতার ঠোঙাটাও এখন নেই।

এখন হাওয়া নেই।

১৯৭২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *