প্রথমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : ধর্ম্মব্যাখ্যা

প্রথমোহধ্যায়ঃ – প্রথমাহ্নিক

অথাতো ধৰ্ম্মং ব্যাখ্যাস্যামঃ।।১।।

অনুবাদ

অনন্তর (তত্ত্বজিজ্ঞাসু শিষ্যগণের জিজ্ঞাসান্তে এবং) তত্ত্বজিজ্ঞাসু যোগ্য শিষ্যগণের সবিনয়ে উপস্থিতি হেতু ধৰ্ম্মব্যাখ্যান করিব।

(অথবা)

মঙ্গল; অনন্তর ধর্ম্মব্যাখ্যান করিব।

ব্যাখ্যা

শাস্ত্রে আছে ‘নাপৃষ্টঃ কস্যচিদ্ ব্রূয়াৎ, নচান্যায়েন পৃচ্ছতঃ’। জিজ্ঞাসিত না হইয়া উত্তর দিতে নাই, যে অবৈধরূপে জিজ্ঞাসা করে, তাহাকেও উত্তর দিতে নাই। এই নিষেধ অনতিক্রমণীয়। ইহা বুঝাইয়া মহর্ষি কণাদ বলিলেন, শিষ্যগণ তত্ত্বজিজ্ঞাসু এবং সবিনয়ে আমার নিকট উপস্থিত, এক্ষণে ধর্ম্মব্যাখ্যান আমার কর্ত্তব্য—আমি ধর্ম্মব্যাখ্যান করিব।

অপর অনুবাদের ব্যাখ্যা। মহর্ষি শিষ্যগণকে একাগ্রচিত্ত হইবার জন্য বলিলেন, এই সূত্রের পর হইতেই ধর্ম্মব্যাখ্যা করিব। এইরূপ বাক্যকে প্রতিজ্ঞাবাক্য বলে। এই সূত্র শ্রবণ করিয়া শিষ্যগণ একাগ্রচিত্ত হইয়া ধর্ম্মব্যাখ্যা শ্রবণ করিতে লাগিলেন।।১।।

উপস্কারঃ

ঊর্দ্ধবদ্ধজটাজুটক্রোড়ক্রীড়ৎসুরাপগম্।
নমামি যামিনীকান্তকান্তভালস্থলং হরম্।।১।।
যাভ্যাং বৈশেষিকে তন্ত্রে সম্যগ্ ব্যুৎপাদিতোহস্ম্যহম্।
কণাদভবনাথাভ্যাং তাভ্যাং মম নমঃ সদা।।২।।
সূত্রমাত্রাবলম্বেন নিরালম্বেঽপি গচ্ছতঃ।
খে খেলবন্মমাপ্যত্র সাহসং সিদ্ধিমেষ্যতি।।৩।।

তাপত্রয়পরাহতা বিবেকিনস্তাপত্রয়নিবৃত্তিনিদানমনুসন্দধানা নানাশ্রুতিস্মৃতীতিহাসপুরাণে- স্বাত্মতত্ত্বসাক্ষাৎকারমেব তদুপায়মাকলয়াম্বভূবুঃ। তৎপ্রাপ্তিহেতুমপি পন্থানং জিজ্ঞাসমানাঃ পরমকারুণিকং কণাদং মুনিমুপসেদুরথ কণাদো মুনিস্তত্ত্বজ্ঞানবৈরাগ্যৈশ্বর্য্যসম্পন্নঃ যগ্নাং পদার্থানাং সাধর্ম্মবৈধর্ম্মাভ্যাং তত্ত্বজ্ঞানমেবাত্মতত্ত্বসাক্ষাৎকারপ্রাপ্তয়ে পরমঃ পন্থা ইতি মনসিকৃত্য তচ্চ নিবৃত্তিলক্ষণাদ্ধৰ্ম্মাদেতেষামনায়াসেন সেৎস্যতীতি লক্ষণতঃ স্বরূপতশ্চ ধৰ্ম্মমেব প্রথমমুপদিশাম্যনন্তরং ষড়পি পদার্থানুদ্দেশলক্ষণপরীক্ষাভিরুপদেক্ষ্যামীতি হৃদি নিধায় তেষামবধানায় প্রতিজানীতে।

অথেতি। শিষ্যাকাঙ্ক্ষানন্তৰ্য্যমাহ—অত ইতি। যতঃ শ্রবণাদিপটবোঽনসূয়-কাশ্চান্তেবাসিন উপসেদুরিত্যর্থঃ। যদ্বা অথশব্দো মঙ্গলার্থঃ। তদুক্তম—

“ওঁকারশ্চাথশব্দশ্চ দ্বাবেতৌ ব্রহ্মণঃ পুরা।
কণ্ঠং ভিত্ত্বা বিনির্যাতৌ তেন মাঙ্গলিকাবুভৌ”।। ইতি।।

যুক্তঞ্চৈতৎ। কথমন্যথা সদাচারপরম্পরাপরিপ্রাপ্তকর্তব্যতাকস্য মঙ্গলস্য বৈশেষিকশাস্ত্রং প্রণয়তো মহামুনেরনাচরণং সম্ভাব্যতে। ন চ কৃতমঙ্গলস্যাপি ফলাদর্শনাদকৃতমঙ্গলস্যাপি ফলদর্শনাদননুষ্ঠানং, ন হি নিষ্ফলে প্রেক্ষাবান্ প্রবর্ত্তত ইতি বাচ্যম্, অকরণস্থলে জন্মান্তরীয়স্য, করণস্থলে চাঙ্গবৈগুণ্যস্য কল্পনয়া সফলত্বনিশ্চয়াৎ। ন হি শিষ্টাচারানুমিতশ্রুতিবোধিতকৰ্ত্তব্যতাকস্যাপাততঃ ফলাদর্শনমাত্রেণাকারণত্বশঙ্কাপি চৈহিকমাত্ৰফলকত্বা জন্মান্তরীয়ানুমানং পুত্রেষ্টিবদৈহিকমাত্রফলকত্বানুপপত্তেঃ। কারীর্য্যাদৌ তু তথা কামনয়ৈবানুষ্ঠানাদৈহিকমাত্রফলকত্বম্। অত্র চ সমাপ্তিকামোঽধিকারী স্বর্গকাম ইব যাগে তত্রাপূর্ব্বং দ্বারমিহ তু বিঘ্নধ্বংস ইতি বিশেষঃ, নির্বিঘ্নমাররূং সমাপ্যতামিতি কামনয়া প্রবৃত্তেঃ। ন চ বিঘ্নধ্বংসমাত্রং ফলং, সমাপ্তিস্তু স্বকারণাদেবেতি বাচ্যম্, তস্য স্বতো হপুরুষার্থত্বাৎ সমাপ্তেস্ত সুখসাধনতয়া পুরুষার্থত্বাৎ উপস্থিতত্বাচ্চ। কিঞ্চ দূরিতধ্বংসমাত্রং ন ফলং, তস্য প্রায়শ্চিত্তকীৰ্ত্তনকর্ম্মনাশাপারগমনাদিসাধ্যতয়া ব্যভিচারাৎ, প্রারব্ধপরিসমাপ্তি- প্রতিবন্ধকদূরিতধ্বংসত্বেন ফলত্বে সমাপ্তেরেব ফলত্বৌচিত্যাৎ। তত্রাপি চ হিরণ্যদানপ্রয়াগস্নানাদিজন্যত্বেন ব্যভিচারাৎ, তেষামপি মঙ্গলত্বাভিধানং সাহসম্। কিঞ্চ মঙ্গলে সতি সমাপ্তেরাবশ্যকত্বমিত্যেবং মঙ্গলস্য কারণতা, তদুক্তম্ “শ্রৌতাৎ সাঙ্গাৎ কৰ্ম্মণঃ ফলাবশ্যম্ভাবনিয়মাৎ” ইতি। অতএব বিকল্পিতমপি কারণং কারণমেব, ফলানন্তর্য্যনিয়মস্যৈব বৈদিককারণত্বাৎ বিকল্পে তু বৈজাত্যকল্পনং বৈজাত্যমেব। যত্রান্বয়ব্যতিরেকগম্যা কারণতা, তত্র ফলপূৰ্ব্বভাবনিয়মো গ্রাহ্যো ন তু বেদেঽপি তত্র ব্যতিরেকভাগস্য গুরুত্বেনানুপস্থিতেঃ। তথা চ সাঙ্গে মঙ্গলে সমাপ্তিরাবশ্যকীতি ন ব্যভিচারঃ। সমাপ্তিস্তু যস্মিন্ অনুষ্ঠিতে সম্পূর্ণমিদং কৰ্ম্মেতি প্রমা, সা চ গ্রন্থাদৌ চরমবাক্যলিখনে, যাগাদৌ চরমাহুতৌ, পটাদাবন্ত্যতন্তুসংযোগে, গ্রামগমনাদৌ গ্রামচরণ-চরম-সংযোগে; এবং তত্র তত্রোহনীয়মিতি মঙ্গলজন্যসমাপ্তো বৈজাত্যকল্পনেঽপি নোভয়থা ব্যভিচারঃ। মঙ্গলঞ্চ বিঘ্নধ্বংসদ্বারকসমাপ্তিফলকং কৰ্ম্ম তচ্চ দেবতানমস্কারাদিরূপমেব স্বতঃসিদ্ধবিঘ্নাভাবস্থলে হপি সামান্যতো গৃহীতস্য বিঘ্নধ্বংসদ্বারকত্বস্যানপায়াৎ নমস্কারাদীনাং তাদৄপ্যেণৈব বিঘ্নধ্বংসদ্বারকত্ব- প্রতিপত্তেন্যাব্যাপ্তিরিতি দিক্।।১।।

.

যতোঽভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধৰ্ম্মঃ।।২।।

অনুবাদ

যাহা তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা মুক্তিলাভের হেতু, তাহা ধৰ্ম্ম।

(অথবা)

যাহা সুখ ও মোক্ষের সাধন তাহাই ধৰ্ম্ম।

ব্যাখ্যা

অভ্যুদয় অর্থে উন্নতাবস্থা, তত্ত্বজ্ঞানই উন্নতাবস্থা। তত্ত্বজ্ঞান মুক্তির কারণ, সেই তত্ত্বজ্ঞান ধৰ্ম্মবলে উৎপন্ন হয়। যখন তত্ত্বজ্ঞান ব্যতীত মুক্তি হয় না, ধৰ্ম্ম ব্যতীত তত্ত্বজ্ঞানও হয় না, তখন তত্ত্বজ্ঞানজনিত মুক্তিলাভ যে ধৰ্ম্ম হইতেই হয়, ইহা অনায়াসবোধ্য। যাহা ঐরূপে মুক্তির সাধক তাহাই ধর্ম্ম—ইহাই ধর্ম্মের লক্ষণ। সুতরাং নিবৃত্তিধৰ্ম্ম বা যোগজ ধর্ম্ম এই লক্ষণের লক্ষ্য। অপর প্রবৃত্তিধর্ম্ম মুক্তির অনুপযোগী বলিয়া মহর্ষি এখানে তাহার উল্লেখ করিলেন না।

অপর অনুবাদের ব্যাখ্যা এই যে, প্রবৃত্তি ধৰ্ম্ম ও নিবৃত্তি ধৰ্ম্ম—উভয় ধৰ্ম্মই এই লক্ষণের লক্ষ্য। যাহার ফলে সুখ লাভ হয়, তাহা এবং যাহার ফলে মুক্তিলাভ হয় তাহাও ধৰ্ম্ম। ফলতঃ যাহা পরম পুরুষার্থের হেতু, তাহাই ধর্ম্ম। সুখ ও দুঃখনিবৃত্তিই পরম পুরুষার্থ।। ২।।

উপস্কারঃ

অথ প্রতিজ্ঞাতার্থমাহ—

অভ্যুদয়স্তত্ত্বজ্ঞানং, নিঃশ্রেয়সমাত্যন্তিকী দুঃখনিবৃত্তিঃ, তদুভয়ং যতঃ স ধৰ্ম্মঃ, অভ্যুদয়দ্বারকনিঃশ্রেয়সমিতি মধ্যপদলোপী সমাসঃ, পঞ্চমীতৎপুরুষো বা, স চ ধৰ্ম্মো নিবৃত্তিলক্ষণো বক্ষ্যতে, যদি তু নিদিধ্যাসনাদিযোগসাধ্যো ধর্ম্মোহদৃষ্টমেব তদা বিধিরূপঃ। বৃত্তিকৃতস্তু অভ্যুদয়ঃ সুখং, নিঃশ্রেয়সমেককালীনসকলাত্মবিশেষগুণধ্বংসঃ, প্রমাণঞ্চ ধৰ্ম্মে দেবদত্তশরীরাদিকং ভোতৃবিশেষগুণপ্রেরিতভূতপূর্ব্বকং, কাৰ্য্যত্বে সতি তদ্ভোগসাধনত্বাত্ত- ন্নিৰ্ম্মিতঅগ্বদিত্যাহুঃ। তদেতদ্ব্যাখ্যানং প্রত্যেকসমুদায়াভ্যাং ন ব্যাপকম্ ইত্যর্ব্বাচীনৈরুপেক্ষিতং, বস্তুতস্তু কো ধৰ্ম্মঃ কিংলক্ষণশ্চেতি সামান্যতঃ শিষ্যজিজ্ঞাসায়াং যতোহভ্যুদয়নিঃশ্রেয়স- সিদ্ধিরিত্যুপতিষ্ঠতে, তথা চ যতোহভ্যুদয়সিদ্ধির্যতশ্চ নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিস্তদুভয়ং ধর্ম্মঃ। এবং পুরুষার্থাসাধারণকারণং ধর্ম্ম ইতি বক্তব্যে পরমপুরুষার্থয়োঃ সুখদুঃখাভাবয়োর্বিশেষতঃ পরিচর্য্যয়ার্থমভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিরিত্যুক্তং স্বর্গাপবর্গয়োরেবান্যেচ্ছানধীনেচ্ছাবিষয়ত্বেন পরমপুরুষার্থত্বাৎ সাধয়িষ্যতে চ দুঃখাভাবস্যাপি পুরুষার্থত্বম্।। ২।

.

তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যম্।। ৩।।

অনুবাদ

বেদ ঈশ্বর বাক্য, অতএব তাহা প্রমাণ

(অথবা)

বেদ ধৰ্ম্ম-প্রতিপাদক, এই কারণেই তাঁহার প্রামাণ্য।।৩।।

ব্যাখ্যা

প্রমা—ভ্রমভিন্ন জ্ঞান। যে বস্তু প্রকৃতপক্ষে যাহা নয়, তাহাকে সেই বস্তু বলিয়া বুঝার নাম ভ্রম। প্রমার আর একটী নাম যথার্থজ্ঞান। যে উপায়ের সাহায্যে যথার্থজ্ঞান জন্মে, তাহার নাম প্রমাণ। বেদ যাহা বুঝাইয়া দেন, তাহা যথার্থ, সেই জ্ঞান যথার্থজ্ঞান, একথা মানিতে হয় কেন না, বেদ সাক্ষাৎ ঈশ্বরের বাক্য। যাহা যাহা ঈশ্বরবাক্য তৎসমস্তই প্রমাণ যেমন অথর্ব্ববেদস্থ আভিচারিক মন্ত্র, আয়ুর্ব্বেদ ইত্যাদি। যখন সেই সকল বেদাংশ হইতে যাহা বুঝা যায় তাহা যথার্থ বলিয়া লোকে প্রত্যক্ষ করে, তখন তাহা যে প্রমাণ, সে বিষয়ে, তো কোন সন্দেহই থাকে না। সেই সকল অংশকে দৃষ্টান্তস্বরূপ গ্রহণ করিয়া তৎসাধারণ হেতু দ্বারা সকল বেদের প্রমাণত্ব অনুমান করিতে হয়। সকল-বেদ-সাধারণ হেতু ঈশ্বরবাক্যত্ব। তবেই হইল বেদপ্রতিপাদিত সকল বিষয়ই যথার্থ। ধৰ্ম্ম বেদপ্রতিপাদিত, নিবৃত্তিধৰ্ম্ম যে নিঃশ্রেয়সজনক তত্ত্বজ্ঞানের হেতু—ইহাও বেদপ্রতিপাদিত, সুতরাং যথার্থ। এই প্রমা অবলম্বন করিয়া কার্য্য করিলে, কর্তা অচিরেই অভীষ্ট ফল প্রাপ্ত হন, তদ্বিষয়ে সংশয় নাই। প্রত্যেক উন্নত জাতিই আপন আপন ধর্ম্মশাস্ত্রকে ঈশ্বরোপদেশ বলিয়া বিশ্বাস করেন। কেবল আমাদের ভাগ্যদোষে আমাদের সজাতীয়গণ বিদেশীয় শিক্ষায় অভিভূত হইয়া সে বিশ্বাস বিসর্জ্জন দিতেছেন। কিন্তু তাঁহাদের মনে করা উচিত, যে গ্রন্থকে জগতের মধ্যে সর্ব্বপ্রাচীন বলিয়া তাঁহাদের শিক্ষকগণ বলিতেছেন, যদি ঈশ্বরবাক্য বা ঈশ্বর প্রণীত গ্রন্থ কাহাকেও বলিতে হয়, তবে তাহা সৰ্ব্বপ্রাচীন বেদকেই বলা উচিত। অন্যধর্ম্মের মূলপুস্তকও সেই বেদসাগর হইতেই উদ্ভূত। এক সময়ে যজ্ঞবিদ্বেষী বৌদ্ধগণ এবং চার্ব্বাকগণ বেদের অপ্রামাণ্য প্রতিপাদনে প্রবৃত্ত হয়—তাহাদের যুক্তি—বেদে মিথ্যা কথা আছে, পরস্পর বিরুদ্ধ উপদেশ আছে এবং পুনরুক্তি আছে, যে বাক্যে এ সকল দোষ থাকে, তাহাকে প্রমাণ বলিয়া কিছুতেই গণ্য করা যায় না। এই আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নিষ্ফল যাগের কথা তাহারা উল্লেখ করিয়াছে। কারীরী যাগ করিলে বৃষ্টি হয় ইহা বেদে আছে, পরন্তু কত কারীরী যাগ হইয়াছে কিন্তু বৃষ্টি হয় নাই। সুতরাং বেদের কথা মিথ্যা, বেদে উদিত হোম ও অনুদিত হোম করিবার বিধি আছে; সূর্য্যোদয় হইলে যে হোম করা হয়, তাহাকে উদিত ও তৎপূর্ব্বে যে হোম করা হয় তাহাকে অনুদিত হোম বলা যায়। আবার বেদেই আছে—উদিত হোম কৰ্ত্তব্য নয় ও অনুদিত হোমও কর্তব্য নয়; সুতরাং বেদেই পরস্পর বিরুদ্ধ উপদেশ থাকিল। বেদের একটী মন্ত্র ৩বার করিয়া পঠিত হইয়াছে, আর একটী মন্ত্রও পরে পুনরায় ৩ বার পঠিত হইয়াছে—ইহা কি পুনরুক্ত নহে; আর পুনরুক্ত বাক্যকে কে প্রমাণ বলিয়া গণ্য করে?

এই যুক্তির বিরুদ্ধে ভগবান্ গৌতম বলিয়াছেন, যাগযজ্ঞের অবশ্যম্ভাবী ফল প্রতক্ষ সিদ্ধ। তবে দুই এক স্থলে যে তাহার ব্যভিচার হয় তাহা—পুরোহিত, দ্রব্য বা কর্ম্মের দোষে ঘটিয়া থাকে। পুরোহিত যদি অজ্ঞ প্রতারক হয়, দ্রব্য যদি বিশুদ্ধ ও উপযুক্ত না হয় অথবা কৰ্ম্ম যদি যথাবিধি অনুষ্ঠিত না হয়, তবেই ফল হয় না; নতুবা ফল হইবেই। সুতরাং পুরোহিত প্রভৃতির দোষে যদি ফল না হয়, তাহাতে বেদ মিথ্যাবাদ-দোষে দূষিত হইতে পারেন না। উদিত হোমাদির কথা যে বলা হইয়াছে, তাহা নিতান্ত অজ্ঞতামূলক, কেন না বেদের ঐ বিধিনিষেধ বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির পক্ষে বুঝিতে হয়, তাহা না বুঝাই অজ্ঞতা। যে ব্যক্তি উদিত হোম সঙ্কল্প করিয়া আরম্ভ করিয়াছে, সে যদি অনুদিত হোম করে, বা যে ব্যক্তি সঙ্কল্প করিয়া অনুদিত হোম আরম্ভ করিয়াছে, সে যদি উদিত হোম করে, সে-ই নিন্দিত হইয়াছে। কেহ উদিত হোম, কেহ বা অনুদিত হোম করিবে ইহাই বিধি। সুতরাং ঐ স্থলে বেদবাক্যে পরস্পর বিরোধ থাকিল না। আর যে পুনরুক্তির কথা বলিয়াছ তাহার উত্তর শ্রবণ কর। পুনরুক্ত হইলেই যে একেবারে পচিয়া গেল তা নয়, তবে যাহা নিষ্প্রয়োজন পুনরুক্ত তাহা পচিয়া যায় বটে— অর্থাৎ তাহা একেবারেই অপ্রমাণ হয়। মনে কর, তুমি শীঘ্র আসিবার জন্য একজনকে ‘এস এস’ বলিয়া আহ্বান করিলে। এখানে কি তোমার পুনরুক্তি দোষ হইবে? কখনই না। তুমি ঐ পুনরুত্তের মধ্যে আপনার শীঘ্র আগমনাদেশরূপ প্রয়োজন রাখিয়াছ। বেদের উল্লিখিত স্থলেও প্রয়োজন আছে—ঐ স্থল উল্লেখ করিয়া বেদেই লিখিত আছে, পঞ্চদশ মন্ত্র দ্বারা আমি শত্রুপীড়া প্রদান করি; পরন্তু সেইস্থলের উল্লিখিত মন্ত্র ১১টী মাত্র। এই এগারটীকে পনেরটী করিবার জন্যই দুইটী মন্ত্রকে ৩ বারু করিয়া ছয় বার উল্লেখ করা হইয়াছে। বেদের আদেশেই এইরূপ সপ্রয়োজন পুনরুক্তি, সুতরাং ইহা অপ্রমাণ নহে। এইরূপ সর্ব্বত্রই দোষোদ্ধার আছে।

দ্বিতীয় অনুবাদের ব্যাখ্যা এই যে, যাহা যথার্থ—যে বাক্য দ্বারা তাহা বর্ণিত হয়, তাহাই প্রমাণ বাক্য; ধৰ্ম্ম যথার্থ, বিধিস্বরূপ বেদ এই ধর্ম্মের বোধক; অন্য বেদও সেই বিধি পোষণ দ্বারা বিধিবেদেরই অংশীভূত। সুতরাং বেদমাত্রই প্রমাণ। ৩।।

উপস্কারঃ

ননু নিবৃত্তিলক্ষণো ধৰ্ম্মস্তত্ত্বজ্ঞানদ্বারা নিঃশ্রেয়সহেতুরিত্যত্র শ্রুতিঃ প্রমাণম্, শ্রুতেরেব প্রামাণ্যে বয়ং বিপ্রতিপদ্যামহে অনৃতব্যাঘাতপুনরুক্তদোষেভ্যঃ পুত্রেষ্টৌ কৃতায়ামপি পুত্রানুৎপাদাদনৃতত্বম্। “উদিতে জুহোতি অনুদিতে জুহোতি সময়াধ্যুষিতে জুহোতি” ইতি বিধৈঃ প্রাপ্ত এবোদিতাদিকালে হোমো ব্যাহন্যতে “শ্যাবোঽস্যাহুতিমভ্যবহরতি য উদিতে জুহোতি শবলো হস্যাহুতিমভ্যবহরতি যোহনুদিতে জুহোতি শ্যাবশবলাবস্যাহুতিমভ্যবহরতো যঃ সময়াধ্যুষিতে জুহোতি” ইত্যাদিনা। তথা “ত্রিঃ প্রথমামন্বাহ ত্রিরুত্তমামন্বাহ” ইত্যনেন প্রথমোত্তমসামিধেন্যোস্ত্রিরুচ্চারণাভিধানাৎ পৌনরুক্ত্যমেব। চান্নায় প্রামাণ্যপ্রতিপাদক কিঞ্চিদস্তি নিত্যত্বে বিপ্রতিপত্তৌ নিত্যনির্দোষত্বমপি সন্দিগ্ধং পৌরুষেয়ত্বে তু ভ্রম প্রমাদবিপ্রতিপত্তিকরণাপাটবাদিসম্ভাবনয়া আপ্তোক্তত্বমপি সন্দিগ্ধমেবেতি ন নিঃশ্রেয়সম্, ন বা তত্র তত্ত্বজ্ঞানং দ্বারম্, ন বা ধর্ম্ম ইতি সৰ্ব্বমেতদাকুলমত আহ।

তদিত্যনুপক্রান্তমপি প্রসিদ্ধিসিদ্ধতয়েশ্বরং পরামৃশতি যথা “তদপ্রামাণ্যমনৃতব্যাঘাত- পুনরুক্তদোষেভ্যঃ” ইতি গৌতমীয়সূত্রে তচ্ছদেনানুপক্রান্তোঽপি বেদঃ পরামৃশ্যতে। তথা চ তদ্বচনাত্তেনেশ্বরেণ প্রণয়নাদান্নায়স্য বেদস্য প্রামাণ্যং যদ্বা তদেতি সন্নিহিতং ধর্ম্মমেব পরামৃশতি তথাচ ধৰ্ম্মস্য বচনাৎ প্রতিপাদনাৎ আন্নায়স্য বেদস্য প্রামাণ্যং, যদ্ধি বাক্যং প্রামাণিকমর্থং প্রতিপাদয়তি তৎ প্ৰমাণমেব যত ইত্যর্থঃ। ঈশ্বরস্তদাপ্তত্বঞ্চ সাধয়িষ্যতে যচ্চোক্তম্ “অনৃতব্যাঘাতপুনরুক্তদোষেভ্যঃ” ইতি তত্রানৃতত্বে জন্মান্তরীয়ফলকল্পন কৰ্ম্মকসাধনবৈগুণ্যকল্পনং বা শ্রৌতাৎ সাঙ্গাৎ কৰ্ম্মণঃ ফলাবশ্যম্ভাবনিশ্চয়াৎ, ন চ কারীরীব- দৈহিকমাত্রফলকত্বং, তত্র. হি শুষ্যচ্ছস্যসঞ্জীবনকাম্যস্যাধিকারঃ, পুত্রেষ্টৌ পুত্রমাত্রকামস্যেতি বিশেষাৎ। ন চ ব্যাঘাতোঽপি উদিতাদিহোমং বিশেষতঃ প্রতিজ্ঞায় তদন্যকালে হোমানুষ্ঠানে “শ্যাবোঽস্যাহুতিমভ্যবহরতি” ইত্যাদিনিন্দা প্রতিপাদনাৎ, ন চ পুনরুক্ততাদোষোঽপি একাদশ- সামিধেনীনাং প্রকৃতৌ পাঠাৎ “পঞ্চদশাবরেণ বাগ্বজ্রেণাববাধে তমিমং ভ্রাতৃব্যম্” ইত্যত্র সামিধেনীনাং পঞ্চদশত্বস্য প্রথমোত্তমসামিধেন্যোস্ত্রিরভিধানমন্তরেণানুপপত্তেস্তথাভিধানাৎ।।৩।।

.

ধৰ্ম্মবিশেষ প্রসূতাদ দ্রব্যগুণকৰ্ম্মসামান্যবিশেষসমবায়ানাং পদার্থানাং সাধৰ্ম্মবৈধৰ্ম্মাভ্যাং তত্ত্বজ্ঞানান্নিঃশ্রেয়সম্।।৪।।

অনুবাদ

দ্রব্য, গুণ, কৰ্ম্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায়ের সাধর্ম্ম ও বৈধর্ম্মরূপে তত্ত্বজ্ঞান, নিবৃত্তি ধৰ্ম্মসম্ভূত, নিঃশ্রেয়স সেই তত্ত্বজ্ঞানের প্রযোজ্য।

(অথবা)

ধৰ্ম্মবিশেষবলে মহর্ষি কণাদ কর্তৃক প্রণীত শাস্ত্র (এই বৈশেষিক দর্শন) আত্মসাক্ষাৎকারের উপায়। এই শাস্ত্রই দ্রব্য, গুণ, কৰ্ম্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায়ের সাধর্ম্ম-বৈধৰ্ম্মপ্রতিপাদক। এই শাস্ত্রেরই ফল নিঃশ্রেয়স।। ৪।।

ব্যাখ্যা

ধৰ্ম্মগত একতাই সাধর্ম্ম এবং ধর্ম্মর্গতভেদই বৈধৰ্ম্ম। ঐ ধৰ্ম্মশব্দ, জাতি বা সামান্যতঃ আশ্রিত বস্তুর বাচক, এখানকার এই ধর্ম্ম শব্দ অদৃষ্টবিশেষ নহে। দ্রব্য-গুণ- কৰ্ম্ম-সামান্য-বিশেষ-সমবায়ের পরিচয় পরে পাইবে। কোন একটী ধৰ্ম্ম কেবল দ্রব্যে আছে যথা দ্রব্যত্ব। পৃথিবী, জল ইত্যাদি সকল দ্রব্যেই দ্রব্যত্ব আছে। সুতরাং দ্রব্যত্ব পৃথিবী প্রভৃতি সকল দ্রব্যের সাধারণ ধর্ম্ম, দ্রব্যত্বরূপে যে পৃথিবী, জল ইত্যাদির জ্ঞান তাহাই সাধর্ম্মরূপে জ্ঞান। গুণত্ব দ্রব্যের বৈধর্ম্ম—–কেননা গুণত্ব দ্রব্যে থাকে না; দ্রব্যত্ব গুণের বৈধৰ্ম্ম—কেননা তাহা গুণে থাকে না। এই প্রকার যে জ্ঞান, তাহা বৈধর্ম্মরূপে জ্ঞান। এইরূপ সামান্য-বিশেষভাবে যাবৎপদার্থজ্ঞানই বেদান্তে বস্তুবিচার নামে কথিত। ইহাই আত্মা ও অনাত্মা বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান। নিবৃত্তিধৰ্ম্মফলে এই জ্ঞান জন্মে। এই জ্ঞান সুদৃঢ় হইলে, আত্মসাক্ষাৎকার হয়; আত্মসাক্ষাৎকারফলে দেহাদির প্রতি যে আত্মত্বভ্রম আছে তাহা দূরীভূত হয়। সেই ভ্রম অপগত হইলে সৰ্ব্ববিষয়ে বৈরাগ্য বা পরবৈরাগ্য জন্মে, অর্থাৎ অপরবৈরাগ্যজনিত-ধর্ম্মফলে বস্তুবিচার, তাহার পর আত্মাসাক্ষাৎকার। তৎপরে পরবৈরাগ্য হইয়া থাকে, ইহার পর অদৃষ্টনিবৃত্তি, অদৃষ্ট অভাবে জন্ম নিবৃত্তি, জন্মের অভাবে দুঃখনিবৃত্তি। এই দুঃখনিবৃত্তিই নিঃশ্রেয়স। সাধারণ সংসারীর যে যে বিষয়ে আসক্তি হয়, সেই সেই বিষয়ে বিতৃষ্ণাই অপর-বৈরাগ্য, আর আত্মসাক্ষাৎকাররূপ পরম প্রার্থনীয় বস্তু পর্যন্তেও যে বিস্তৃষ্ণা, তাহা পরবৈরাগ্য।

দ্বিতীয় অনুবাদের ব্যাখ্যা এই—ধৰ্ম্মবিশেষ অর্থে ঈশ্বরের আদেশ ও প্রসন্নতা, অথবা যে অদৃষ্টে ঈশ্বরের আদেশ ও প্রসন্নতা লাভ করা যায়, সেই শুভাদৃষ্টই ধৰ্ম্মবিশেষ। মহর্ষি কণাদ সেইরূপ ধৰ্ম্মবলে এই শাস্ত্র প্রণয়ন করেন, এইরূপ জনশ্রুতি। আর জনশ্রুতিই বা বলি কেন? ইহাতে একপ্রকার প্রত্যক্ষই বলিতে হয়, কেননা, অনাদি কালের মধ্যে কত ঋষি মহর্ষি জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তন্মধ্যে দর্শনকার কয়জন? বিশেষতঃ বৈশেষিকের ন্যায় সর্ব্বসাধারণের উপকারী দর্শন কয়খানি আছে? সেই শাস্ত্র দ্রব্যাদি পদার্থে সাধর্ম্ম-বৈধৰ্ম্মজ্ঞাপক অর্থাৎ একধর্ম ও বিভিন্নধর্ম্ম দ্রব্যাদি নিরূপণ এই শাস্ত্রদ্বারা হইয়াছে। এই শাস্ত্র আলোচনার চরমফল নিঃশ্রেয়স, নিঃশ্রেয়স অর্থে—মুক্তি।। ৪।।

উপস্কারঃ

শিষ্যাকাঙ্ক্ষানুরোধেন স্বরূপতো লক্ষণতশ্চ ধৰ্ম্মং ব্যাখ্যায়াভিধেয়সম্বন্ধ প্রতিপাদনায় সূত্রম্।

এতাদৃশং তত্ত্বজ্ঞানং বৈশেষিকশাস্ত্রাধীনমিতি তস্যাপি নিঃশ্রেয়সহেতুত্বং দণ্ডাপূপায়িতম্। তত্ত্বং জ্ঞায়তে হনেনেতি করণব্যুৎপত্ত্যাশাস্ত্রপরত্বে ধৰ্ম্মবিশেষ প্রসূতাদিত্যনেনান্বয়াপত্তেঃ। সৰ্ব্বপদার্থপ্রধানো দ্বন্দ্বশ্চাত্র সমাসঃ, সর্ব্বপদার্থতত্ত্বজ্ঞানস্য নিঃশ্রেয়সহেতুত্বাৎ, তদত্র শাস্ত্রনিঃশ্রেয়সয়োর্হেতুহেতুমদ্ভাবঃ, শাস্ত্রতত্ত্বজ্ঞানয়োর্ব্যাপারিভাবঃ, নিঃশ্রেয়সতত্ত্বজ্ঞানয়োঃ কার্য্যকারণভাবঃ, দ্রব্যাদিপদার্থশাস্ত্রয়োঃ প্রতিপাদ্যপ্রতিপাদকভাবঃ সম্বন্ধোঽবগম্যতে, এতেষাঞ্চ সম্বন্ধানাং জ্ঞানান্নিঃশ্রেয়সার্থিনামিহ শাস্ত্রে প্রবৃত্তিঃ, মোক্ষমাণাশ্চ মুনেগৃহীতাপ্তভাবা এব শাস্ত্রে প্রবর্ত্তন্তে। নিঃশ্রেয়সমাত্যন্তিকী দুঃখনিবৃত্তিঃ দুঃখনিবৃত্তেশ্চাত্যন্তিক ত্বং সমানাধিকরণ- দুঃখপ্রাগভাবাসমানকালীনত্বং যুগপদুৎপন্নসমানাধিকরণসর্ব্বাত্মবিশেষগুণধ্বংসসমানকালীনত্বং বা। অশেষবিশেষগুণধ্বংসাবধিকদুঃখপ্রাগভাবো বা মুক্তিঃ। ন চাসাধ্যত্বান্নায়ং পুরুষার্থঃ, কারণবিঘটনমুখেন প্রাগভাবস্যাপি সাধ্যত্বাৎ, ন চ তস্য প্রাগভাবত্বক্ষতিঃ, প্রতিযোগিজনকাভাবত্বেন তথাত্বাৎ, জনকত্বঞ্চ স্বরূপযোগ্যতামাত্রম্, নহি প্রাগভাবশ্চরমসামগ্রী যেন তস্মিন্ সতি কাৰ্য্যমবশ্যম্ভবেৎ, তথা সতি কাৰ্য্যস্যাপ্যনাদিত্ব প্রসঙ্গাৎ, তথাচ যথা সহকারিবিরহাদিয়ন্তং কালং নাজীজনৎ তথাগ্রে ঽপি তদ্বিরহান্ন জনয়িষ্যতি হেতুচ্ছেদে পুরুষব্যাপারাৎ ইত্যস্যাপি প্রাগভাবপরিপালন এর তাৎপর্য্যাৎ। অতএব গৌতমীয়দ্বিতীয়সূত্রে “দুঃখজন্মপ্রবৃত্তিদোষমিথ্যাজ্ঞানানামুত্তরোত্তরাপায়ে তদনন্তরাপায়াদপবর্গঃ ইত্যত্র কারণাভাবাৎ কার্য্যাভাবাভিধানং দুঃখপ্রাগভাবরূপামেব মুক্তিং দ্রঢ়য়তি, ন হি দোষাপায়ে প্রবৃত্ত্যপায়ঃ, প্রবৃত্ত্যপায়ে জন্মাপায়ঃ, জন্মাপায়ে দুঃখাপায় ইত্যপায়ো ধ্বংসঃ কিন্তুনুৎপত্তিঃ, সা চ প্রাগভাব এব, ন চ প্রতিযোগ্য প্রসিদ্ধিঃ, সামান্যতো দুঃখত্বেনৈব প্রতিযোগিপ্রসিদ্ধেঃ প্রায়শ্চিত্তবৎ তত্রাপি প্রত্যবায়ধ্বংসদ্বারা দুঃখানুৎপত্তেরেবাপেক্ষিতত্বাৎ লোকেঽপ্যহিকণ্টকা- দিনিবৃত্তেদুঃখানুৎপত্তিফলকত্বদর্শনাৎ। দুঃখসাধননিবৃত্ত্যর্থবে প্রেক্ষাবতাং প্রবৃত্তিঃ। কেচিত্তু দুঃখাত্যন্তাভাব এব মুক্তিঃ, স চ যদ্যপি নাত্মনিষ্ঠস্তথাপি লোষ্টাদিনিষ্ঠ এবাত্মনি সাধ্যতে, সিদ্ধিশ্চ তস্য দুঃখপ্রাগভাবাসহবৰ্ত্তিদুঃখধ্বংস এব তস্য তৎসম্বন্ধতয়োপগমাৎ, তস্মিন্ সতি তত্র দুঃখাত্যন্তাভাবপ্রতীতেঃ, এবঞ্চ সতি “দুঃখেনাত্যন্তং বিমুক্তশ্চরতি” ইত্যাদি শ্রুতিরপ্যুপপাদিতা ভবতীত্যাহুঃ। তন্ন, দুঃখাত্যন্তাভাবস্যাসাধ্যত্বেনাপুরুষার্থত্বাৎ দুঃখধ্বংসস্য চ ন তত্র সম্বন্ধত্বং পরিভাষাপত্তেঃ, “দুঃখেনাত্যন্তং বিমুক্তশ্চরতি” ইতি শ্রুতেদুঃখপ্রাগভাবস্যৈব কারণবিঘটনমুখেনাত্যম্ভাভাবসমানরূপত্বতাৎপর্য্যকত্বাৎ। নন্বয়ং ন পুরুষার্থঃ নিরুপাধীচ্ছা- বিষয়ত্বাভাবাৎ, দুঃখকালে সুখং তাবন্নোৎপদ্যতে ইতি সুখার্থিনামেব দুঃখাভাবার্থং প্রবৃত্তেরিতি চেন্ন। বৈপরীত্যস্যাপি সুবচত্বাৎ, সুখেচ্ছাপি দুঃখাভাবৌপাধিকীত্যেব কিং ন স্যাৎ, শোকাকুলানাং সুখবিমুখানামপি দুঃখাভাবমাত্রমভিসন্ধায় বিষভক্ষণোদ্বন্ধনাদৌ প্রবৃত্তিদর্শনাৎ। ননু পুরুষার্থোহপ্যয়ং জ্ঞায়মান এব, মুক্তেস্তু দুঃখাভাবস্য জ্ঞায়মানতৈব নাস্তি। অন্যথা মূৰ্চ্ছাদ্যবস্থার্থমপি প্ৰবৰ্ত্তেতেতি চেন্ন, শ্রুত্যনুমানাভ্যাং জ্ঞায়মানস্যাবেদ্যত্বানুপপত্তেঃ। অস্তি হি শ্ৰুতিঃ “দুঃখেনাত্যন্তং বিমুক্তশ্চরতি” “তমেব বিদিত্বাঽতিমৃত্যুমেতি” ইত্যাদিকা। অনুমানমপ্যস্তি দুঃখসম্ভতিরত্যন্তমুচ্ছিদ্যতে সন্ততিত্বাৎ প্রদীপসন্ততিবদিত্যাদিচরমদুঃখধ্বংসস্য দুঃখসাক্ষাৎকারেণ ক্ষণং বিষয়ীকরণাৎ প্রত্যক্ষবেদ্যতাঽপি। যোগিনা যোগজধৰ্ম্ম- বলেনাগামিনো দুঃখধ্বংসস্য প্রত্যক্ষোপগমাচ্চ। তথাপি তুল্যায়ব্যয়তয়া নায়ং পুরুষার্থে দুঃখবৎ সুখস্যাপি হানেঃ দ্বয়োরপি সমানসামগ্ৰীকত্বাদিতি চেৎ। উৎসর্গতো বীতরাগাণাং দুঃখদুদিনভীরূণাং সুখখদ্যোতিকামাত্রে হল প্রত্যয়বতাং তত্র প্রবৃত্তেঃ। ননু তথাপি দুঃখনিবৃত্তির্ন পুরুষার্থঃ, অনাগতদুঃখনিবৃত্তেরশক্যত্বাৎ অতীতদুঃখস্যাতীতত্বাৎ বৰ্ত্তমানদুঃখস্য পুরুষ প্রযত্নমন্তরেণৈব নিবৃত্তেরিতি চেন্ন। হেতুচ্ছেদে পুরুষব্যাপারাৎ প্রায়শ্চিত্তবৎ, তথাহি সবাসনং মিথ্যাজ্ঞানং সংসারহেতুস্তদুচ্ছেদশ্চাত্মতত্ত্বজ্ঞানাৎ, তত্ত্বজ্ঞানঞ্চ যোগবিধিসাধ্যমিতি তদর্থং প্রবৃত্ত্যুপপত্তেঃ। ননু নিত্যসুখাভিব্যক্তিরেব মুক্তির্ন তু দুঃখাভাব ইতি চেন্ন। নিত্যসুখে প্রমাণাভাবাৎ, ভাবে বানিত্যং তদভিব্যক্তেমুক্তসংসারিণোরবিশেষাপাতাৎ অভিব্যক্তেরুৎ- পাদ্যত্বেন তন্নিবৃত্তৌ পুনঃ সংসারাপত্তেশ্চ। ব্রহ্মাত্মনি জীবাত্মলয়ো মুক্তিরিতি চেন্ন। লয়ো যদ্যেকীভাবস্তদা বাধাৎ, নহি দ্বয়মেকং ভবতি, লিঙ্গশরীরাপগমো লয়ো লিঙ্গঞ্চৈকাদশেন্দ্রিয়াণি তেষাং শরীরস্য চ বিগমো লয় ইতি চেন্ন। এতাবতা দুঃখসামগ্রীবিরহস্যোক্তত্বাৎ, তথাচ দুঃখাভাব এব মুক্তিরিতি পর্যবসানাৎ। এতেনাবিদ্যানিবৃত্তৌ কেবলাত্মস্থির্তিমুক্তিরাত্মা চ বিজ্ঞানসুখাত্মক ইত্যেকদণ্ডিমতমপাস্তম্, আত্মনো জ্ঞানত্বে সুখত্বে চ প্রমাণাভাবাৎ। ন চ “নিত্য বিজ্ঞানমানন্দং ব্রহ্ম” ইতি শ্রুতিমানং তস্যাজ্ঞানবত্ত্বানন্দবত্ত্ব প্রতিপাদকত্বাৎ ভবতি হি অহং জানে অহং সুখীতি প্রতীতিঃ, নত্বহং জ্ঞানম্, অহং সুখমিতি। কিঞ্চ ব্রহ্মণ ইদানীমপি সত্ত্বাৎ মুক্তসংসারিণোরবিশেষাপত্তিঃ, অবিদ্যানিবৃত্তেশ্চাপুরুষার্থত্বাৎ, ব্রহ্মণশ্চ নিত্যত্বেনাসাধ্যত্বাৎ তৎসাক্ষাৎকারস্য তদাত্মকত্বেনাসাধ্যত্বাৎ এরমানন্দস্যাপি তদাত্মকত্বেনাসাধ্যত্বমেবেতি তদর্থং প্রবৃত্ত্যনুপপত্তিরেব। নিরুপপ্লবা চিত্তসন্ততিমুক্তিরিতি চেন্ন। দুঃখাদিরূপস্য উপপ্লবস্য বিমো যদি নিরুপপ্লবত্বং, তদা তন্মাত্রস্যৈব পুরুষার্থত্বেন চিত্তসন্ততেরনুবৃত্তৌ প্রমাণাভাবঃ, তদনুবৃত্তেরপি শরীরাদিসাধ্যত্বেন সংসারানুবৃত্তেরা-বশ্যকত্বাদিতি সিদ্ধং দুঃখনিবৃত্তিরেবোক্তরূপা নিঃশ্রেয়সমিতি। তত্ত্বস্য জ্ঞানমিতি কৰ্ম্মণি ষষ্ঠী, সাধর্ম্মবৈধৰ্ম্মাভ্যামিতি প্রকারে তৃতীয়া। তত্র সাধর্ম্ম্যমনুগতো ধৰ্ম্মঃ, বৈধর্ম্মঞ্চ ব্যাবৃত্তো ধৰ্ম্মঃ, যদ্যপি ক্বচিৎ সাধর্ম্ম্যমপি কুতশ্চিদ্বৈধৰ্ম্মং কুতশ্চিদ্বৈধৰ্ম্ম্যমপি কেষাঞ্চিৎ সাধর্ম্মং, তথাপি তাদৄপ্যেণ জ্ঞানং বিবক্ষিতম্। অত্র চ দ্রব্যাদিপদার্থানামুদ্দেশ এব বিভাগঃ পর্যবসন্নঃ, স চ ন্যূনাধিকসঙ্খ্যাব্যবচ্ছেদফলকস্তেন ষড়েব পদার্থা ইতি নিয়মঃ পৰ্য্যবস্যতি, স চানুপপন্নঃ ব্যবচ্ছেদ্যস্য পদার্থান্তরস্য প্রতিপত্তৌ নিয়মানুপপত্তিঃ অপ্ৰতীতৌ ব্যবচ্ছেদানুপপত্তিঃ। ননু নায়মন্যযোগব্যবচ্ছেদঃ, কিন্তুযোগব্যবচ্ছেদঃ, পদার্থেষু যড়লক্ষণাযোগো ব্যবচ্ছিদ্যত ইতি চেন্ন। পদার্থপদেন প্রসিদ্ধপদার্থমাত্রোপসংগ্রহে সিদ্ধসাধনাৎ, অন্যস্য চাপ্রতীতেরেব। কিন্তু লক্ষণানাং মিলিতানামযোগো ব্যবচ্ছেদ্যঃ প্রত্যেক বা আদ্যে মিলিতাযোগঃ মিলিতাযোগঃ সৰ্ব্বত্রেতি ব্যবচ্ছেদানুপপত্তিঃ। অন্ত্যেঽপি প্রত্যেকাযোগঃ পরস্পরং সর্ব্বত্রেতি ব্যবচ্ছেদানুপপত্তিরেবেতি চেন্ন। শক্তিসঙ্খ্যসাদৃশ্যাদিষু পদার্থেষু পরাভিমতেষু ষড়লক্ষণাযোগঃ পরৈরুচ্যতে তদ্ব্যবচ্ছেদে নিয়মার্থঃ। তথাচ ষড়েব পদার্থা ইত্যস্য প্রতীয়মানেষু যগ্নাং লক্ষণানাং মধ্যে অন্যতমলক্ষণযোগোহস্ত্যেব নত্বযোগ ইত্যর্থঃ। তত্র বিশেষ্যসঙ্গতস্যান্যযোগব্যবচ্ছেদো বিশেষণসঙ্গতস্যাযোগব্যবচ্ছেদঃ ক্রিয়াসঙ্গতস্য চাত্যন্তাযোগব্যবচ্ছেদস্তাবৎ প্রতীয়তে তত্র শক্তিত্রয়মেবকারস্যেত্যেকে ব্যবচ্ছেদমাত্রে শক্তিরযোগান্যযোগাদয়স্তু ব্যবচ্ছেদ্যাঃ সমভিব্যাহারলভ্য ইত্যপরে। ধৰ্ম্মবিশেষপ্রসূতাদিতি তত্ত্বজ্ঞানাদিত্যস্য বিশেষণং, তত্ৰ ধৰ্ম্মবিশেষো নিবৃত্তিলক্ষণো ধৰ্ম্মঃ। যদি তু তত্ত্বং জ্ঞায়তেহনেনেতি তত্ত্বজ্ঞানং শাস্ত্রমুচ্যতে তদা ধর্ম্মবিশেষ ঈশ্বরনিয়োগপ্রসাদরূপো বক্তব্যঃ, শুয়তে হীশ্বরনিয়োগপ্রসাদাবধিগম্য কণাদো মহর্ষিঃ শাস্ত্রং প্রণীতবানিতি তত্ত্বজ্ঞানমাত্মতত্ত্বসাক্ষাৎকার ইহ বিবক্ষিতস্তস্যৈব সবাসনমিথ্যাজ্ঞানোমূলনক্ষমত্বাৎ “তমেব বিদিত্বাঽতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে হয়নায় “ ইত্যত্র “দ্বে ব্রহ্মণী বেদিতব্যে” ইত্যত্র চ বেদনপদস্য সাক্ষাৎকারপরত্বাৎ “পশ্যত্যচক্ষুঃ” ইত্যত্রাপি। তথা সচ শাস্ত্রান্মনননিদিধ্যাসনাদিপরম্পরয়েতি হেতুপঞ্চম্যা তথৈবাভিধানাৎ।। ৪।।

.

পৃথিব্যাপস্তেজো বায়ুরাকাশং কালো দিগাত্মা মন ইতি দ্রব্যাণি।। ৫।।

অনুবাদ

ক্ষিতি, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ, কাল, দিক্, আত্মা ও মন এইগুলি দ্রব্য।। ৫।।

ব্যাখ্যা

পূৰ্ব্বসূত্রে দ্রব্য, গুণ প্রভৃতির উল্লেখ মাত্র করা হইয়াছে, বিশেষ কথা কিছুই বলা হয় নাই। এই সূত্রে দ্রব্যসম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বিশেষ কথা বলা হইয়াছে। দ্রব্য বলিলে ক্ষিতি, জল প্রভৃতি অনুবাদ-কথিত নয়টী বস্তু বুঝিবে। দ্রব্য এই নয়টীর অধিকও নহে, ন্যূনও নহে। এখানে আত্মা শব্দের অর্থ—জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীবাত্মা অসংখ্য, পরমাত্মা এক, পরমাত্মাই ঈশ্বর। আত্মত্ব জীব ও ঈশ্বর উভয়ের ধর্ম্ম; সেই এক ধৰ্ম্মকে গ্রহণ করিয়াই আত্মাকে এক বলিয়া ধরা হইয়াছে। ক্ষিতির পক্ষেও এই কথা। ক্ষিতি অর্থে মৃত্তিকা। মৃত্তিকা তো আর একটী নহে, খণ্ড খণ্ড স্থূল বৃহৎ ঘট পট কত মৃত্তিকা। কিন্তু তাহার ধর্ম্ম ক্ষিতিত্ব;—ক্ষিতিত্ব এক। সেই এক ধৰ্ম্মকে গ্রহণ করিয়াই ক্ষিতিকেও এক বলিয়া ধরা হইয়াছে। ইহাকেই জাতির একত্বে ঐক্য বলে। আধুনিক বিজ্ঞানে জল যোগজ পদার্থ বলিয়া কথিত ‘হাইড্রোজান’ ও ‘অক্ষজান’ নামক বাষ্পদ্বয় মিলিত হইয়া জল উৎপাদন করে। সুতরাং এই যোগজ জলকে অতিরিক্ত দ্রব্য বলিতে হইলে, ক্ষিতি প্রভৃতির যোগজ বৃক্ষ, তৃণ, গুল্ম ইত্যাদিকেও ক্ষিতির অন্তর্গত না বলিয়া অতিরিক্ত পদার্থ বলিতে হয়। প্রত্যুত ‘হাইড্রোজান’ ‘অক্ষজান’ ইত্যাদিকে মূল পদার্থ বলা উচিত। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য—পৃথিবী, জল, তেজ ও বায়ুর পরমাণু মূল পদার্থ; যাহা স্থূল, তাহা মূল নহে। পরমাণু দুইটী মিলিত হইলে দ্ব্যণুক হয়, দ্ব্যণুক পৰ্য্যন্ত অণু সূক্ষ্ম, তিন দ্ব্যণুকের মিলনে ত্রসরেণুর উৎপত্তি হয়। ত্রসরেণু দৃশ্য বা স্থূলের আদ্য অবস্থা। সেই জলীয় দ্ব্যণুকোৎপাদক পরমাণু মিলন বা ত্রসরেণুর উৎপাদক দ্ব্যণুক মিলন এক এক প্রকার তেজ ও বায়ুর সাহায্যে হইয়া থাকে। ‘হাইড্রোজান’ ও ‘অক্ষজান’ এতদুভয়ের মধ্যে একটীতে জলীয় পরমাণুর বা জলীয় দ্ব্যণুকের অসম্মিলিত সমষ্টি, এবং একটীতে তেজের সূক্ষ্মাংশ ও বায়ু নিহিত আছে। উভয়ের সম্মিলনে পরমাণু হইতে দ্ব্যণুক ও দ্ব্যণুক হইতে ত্রসরেণু উৎপন্ন হয়। অথবা দুটীতেই জলীয় পরমাণু বা দ্ব্যণুকের অসম্মিলিত সমষ্টি আছে এবং দুটিতেই তেজের সূক্ষ্মাংশের ও বায়ুর সমাবেশ আছে। পরন্তু একটীর তেজঃ ও বায়ুর সাহায্যে অপরটীর পরমাণু সম্মিলিত হইয়া দ্ব্যণুক হয়; দ্ব্যণুক হইলে, দ্ব্যণুকের মিলনে ত্রসরেণু হয়, তাহাই ক্রমে স্থূল-জল বা দৃশ্য জল সৃষ্টি করে। কিন্তু যাহা জলীয় পরমাণু—যাহার জন্য জলকে মূল দ্রব্য বলা হইয়াছে, তাহা যোগজ নহে; যোগজ পদার্থ পরম সূক্ষ্ম হয় না, অন্ততঃ দুটী অবয়ব তাহাতে থাকিবেই। যাহার অংশ বা অবয়ব বিভাগ নাই, সেই পরম-অণু জল যোগজ নহে, ইহা অনুভব করিবে। মৃত্তিকাকে চূর্ণ করিয়া চারিদিকে উড়াইয়া দিলে তাহার সূক্ষ্ম অংশ সকল ক্রমে বিচ্ছিন্ন হইয়া পরম সূক্ষ্মপরমাণুতে পরিণত হয়, তখন তাহা লোক- লোচনের অগোচর হইয়া অনন্তপথে অনন্ত বায়ুহিল্লোলে ভাসিতে থাকে, তাহাই আবার উপযুক্ত সলিল, তাপ ও বায়ু যোগে সম্মিলিত হইয়া বৃক্ষ, তৃণ ইত্যাদির দীর্ঘ, ক্ষীণ দেহ পোষণের উপকরণ হয়। স্থূল জলেরও সংহার এবং উৎপত্তিও এই রীতি ক্রমেই হয় জানিবে। আর ‘হাইড্রোজান’ এবং ‘অক্ষজান’ প্রভৃতি মূল পদার্থ বলিয়া যাহা উল্লিখিত, তাহা বস্তুতঃ মূল নহে। ঐ সমস্ত পদার্থ ক্ষিতি, জল, তেজ ও বায়ুরই একের আধিক্যে অপরের ন্যূনভাবে সমাবেশ মাত্র, অর্থাৎ অধিক ন্যূনভাবে সম্মিলিত ক্ষিতি, জল, তেজ, বায়ুই ‘হাইড্রোজান’ প্রভৃতি নানারূপে প্রতিভাত হয়।

কেহ কেহ বলেন, যেমন নানাবর্ণের বিবিধ সূত্রে নিৰ্ম্মিত একখানি গালিচা দেখিয়া কেহ বলিলেন, এই গালিচা নির্মাণের উপযোগী সূত্র পাঁচ প্রকার—যথা রক্ত, নীল, পীত, শ্বেত ও কৃষ্ণ। অপরে বলিলেন, তিন প্রকার; যথা—কার্পাসসূত্র, ঊর্ণাসূত্র এবং শণসূত্র। এই দুইজন দুই পথে গমন করিলেও এই দুইজনের সিদ্ধান্তই সত্য। সেইরূপ ঋষিগণ যেভাবে জগতের উপাদান স্থির করিয়াছেন, সেভাবে তাহাই সত্য এবং আধুনিক বিজ্ঞানে যেভাবে জগতের উপাদান স্থিরীকৃত হইয়াছে, সেইভাবে তাহাই সত্য।

এক্ষণে পাঠকগণ বিচারপূর্ব্বক যে মত হয়, তাহাই গ্রহণ করুন। অন্যান্য জ্ঞাতব্য বিষয় পশ্চাৎ বিবৃত হইবে।। ৫।।

উপস্কারঃ

ইদানীমপবর্গভাগিতয়া সর্ব্বপদার্থাশ্রয়তয়া চ প্রথমোদ্দিষ্টস্য দ্রব্যপদার্থস্য বিভাগং বিশেষোদ্দেশঞ্চ কুৰ্ব্বন্নাহ।

ইতিকারো হবধারণার্থঃ, তেন নবৈব দ্রব্যাণি নাধিকানি ন ন্যূনানি বেত্যর্থঃ। ননু বিভাগবলাদেব ন্যূনাধিকসঙ্খ্যাব্যচ্ছেদসিদ্ধৌ কিমিতিকারেণেতি চেৎ, উদ্দেশমাত্রপরতয়াঽপি সূত্রসম্ভবে বিভাগতাৎপর্য্যস্ফোরণার্থমেবেতিকারাভিধানাৎ সুবর্ণাদীনামীশ্বরস্য চাত্রৈবান্তর্ভাবাৎ অন্ধকারস্য চাধিকত্বেনাশঙ্ক্যমানস্যাভাবত্বব্যুৎপাদনাদেতদধ্যবসেয়ম্। অসমাসকরণন্তু সর্ব্বেষাং প্রাধান্যপ্রদর্শনায় লক্ষণমেতেষান্তু বৈধর্ম্মাবসরে সূত্রকৃদেব দর্শয়িষ্যতি। ননু সুবর্ণং ন তাবৎ পৃথিবী নির্গন্ধত্বাৎ, ন জলং স্নেহসাংসিদ্ধিকদ্রবত্বশূন্যত্বাৎ, ন তেজো গুরুত্ববত্ত্বাৎ। অতএব ন বায়ুর্নবা কালাদি ততো নবভ্যো ভিদ্যত ইতি চেন্ন। আদ্যদ্বিতীয়য়োরনাভাসত্বং তৃতীয়স্য স্বরূপাসিদ্ধত্বং ততঃ পরং সিদ্ধসাধনং হেতোঃ স্বরূপাসিদ্ধিশ্চ। সাধয়িষ্যতে চ সুবর্ণস্য তৈজসত্বমিতি।। ৫।।

.

রূপরসগন্ধস্পর্শাঃ সংখ্যাঃ পরিমাণানি পৃথক্‌ত্বং সংযোগবিভাগৌ পরত্বাপরত্বে বুদ্ধয়ঃ সুখদুঃখে ইচ্ছাদ্বেষৌ প্রযত্নাশ্চ গুণাঃ।।৬।।

অনুবাদ

রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ এবং প্রযত্নও গুণ পদার্থ।। ৬।।

ব্যাখ্যা

গুরুত্ব, দ্রবত্ব, স্নেহ, সংস্কার, ধর্ম্ম, অধর্ম্ম এবং শব্দ, এই কয়টী গুণ উপরের সূত্রে স্পষ্ট উল্লিখিত হয় নাই; কিন্তু পরে ইহাদিগকেও গুণের মধ্যে গ্রহণ করা হইবে। এই কারণে সূত্রে ‘চকার’ এবং অনুবাদে ‘প্রযত্নও’ এইরূপ লিখিত হইয়াছে। তদ্দ্বারা ইহাই বুঝিতে হইবে যে, উল্লিখিত রূপাদিই কেবল গুণপদার্থ নহে, গুরুত্ব প্রভৃতি আরও কয়েকটি গুণ পদার্থ আছে। এই সকল গুণের বিশেষ বিবরণ পশ্চাৎ প্রদত্ত হইবে।। ৬।

উপস্কারঃ

গুণত্বেন রূপেণ গুণানাং সর্ব্বদ্রব্যাশ্রিতত্বং দ্রব্যাভিব্যঙ্গ্যত্বং দ্রব্যাভিব্যঞ্জকত্বঞ্চেতি দ্রব্যানন্তরং গুণানামুদ্দেশং বিভাগঞ্চাহ।

চকারেণ গুরুত্বদ্রবত্বস্নেহসংস্কারধর্ম্মাধর্ম্মশব্দান্ সমুচ্চিনোতি তে হি প্রসিদ্ধগুণভাবা এবেতি কণ্ঠতো নোক্তাঃ। গুণত্বঞ্চামীযাং যথাস্থানং লক্ষণতঃ স্বরূপতশ্চ বক্ষ্যতি রূপরসগন্ধস্পর্শানাং সমানকালীনরূপরসগন্ধস্পর্শসামানাধিকরণ্যং নাস্তীতি সূচনার্থং সমাসঃ। সংখ্যাপরিমাণয়োস্ত সমানকালীনসংখ্যা পরিমাণসামানাধিকরণ্যসূচনায়াসমাসো বহুবচননিৰ্দ্দেশশ্চ যদ্যপ্যেকত্বসমানাধিকরণং নৈকত্বান্তরং ন বা মহত্ত্বদীর্ঘত্বসমানাধিকরণ মহত্ত্বদীর্ঘত্বান্তরং তথাপি দ্বিত্বাদীনামহন্যো হন্যং সামানাধিকরণ্যং মহত্ত্বদীর্ঘত্বাদীনাঞ্চ বিজাতীয় পরিমাণয়োঃ সামানাধিকরণ্যমস্ত্যেব। পৃথত্বঞ্চ যদ্যপি দ্বিপৃথক্‌ত্বাদিসমানাধিকরণ তেন সংখ্যাবদ্ বহুত্বেনৈব নিৰ্দ্দেষ্টুমহতি তথাপ্যবধিব্যঙ্গ্যত্বলক্ষণং সংখ্যাতো বৈধর্ম্মং সূচয়িতুমেকবচননিৰ্দ্দেশঃ। সংযোগবিভাগয়োদ্বয়োরপ্যেককর্ম্মজন্যত্বসূচনায় দ্বিবচনং পরত্বাপরত্বয়োরন্যোন্যাশ্রয়নিরূপ্যতয়া দিক্কাললিঙ্গত্বাবিশেষসূচনায় চ দ্বিবচনং বুদ্ধীনাং বিদ্যাদিভেদেন সাংখ্যাভিমতৈকমাত্রবুদ্ধিনিরাকরণসূচনায় বহুবচনং সুখদুখয়োদ্বয়োরপি ভোগত্বাবচ্ছেদ্যৈককাৰ্য্যজনকত্বম্ অবিশেষেণ চাদৃষ্টোন্নায়কত্বং সুখস্যাপি দুঃখত্বেন ভাবনঞ্চ খ্যাপয়িতুং দ্বিবচনম্ ইচ্ছাদ্বেষয়োদ্বয়োরপি প্রবৃত্তিং প্রতি কারণত্বসূচনায় দ্বিবচনং, প্রযত্নানাং বিহিতনিষিদ্ধগোচরাণাং দশবিধানাং পুণ্যহেতু ত্বং দশবিধানাঞ্চ পাপহেতুত্বমভিসন্ধায় বহুবচনমিত্যুন্নেয়ম্।

যদ্বা রূপরসগন্ধস্পর্শানাং ভৌতিকেন্দ্রিয়ব্যবস্থাহেতুত্বজ্ঞাপনার্থং পাকজপ্রক্রিয়া- ব্যবস্থাপনার্থং বা তে সমস্যোক্তাঃ সংখ্যায়াং দ্বিত্ববহুত্বাদৌ বিপ্রতিপত্তিরিতি তন্নিরাকরণসূচনার্থ বহুত্বেনাভিধানং পৃথকৃত্বে তু সঙ্খ্যাবহুত্বেনৈবাস্যাপি বহুত্বমিতি সূচনায়াবধিজ্ঞানব্যঞ্জনীয়ত্বং সংখ্যাতো বৈধৰ্ম্মমিতি সূচনায় চ পৃথগভিধানং পরিমাণে তু দীর্ঘত্বহ্রস্বত্বাদিবিপ্রতিপত্তিনিরাসায় বহুবচনং সংযোগবিভাগয়োরন্যোন্যবিরোধজ্ঞাপনায় দ্বিবচনং পরত্বাপরত্বয়োর্দৈশিককালিকভেদেন ভিন্ন জাতীয়ত্বসম্ভবেন চতুষ্টাপত্তৌ গুণবিভাগো ন্যূনঃ স্যাৎ ইতি তত্রাপি দ্বিবচনমিত্যাদ্যুন্নেয়ম্। এতেষাঞ্চ লক্ষণমগ্রে বক্ষ্যতে।। ৬।।

.

উৎক্ষেপণমবক্ষেপণমাকুঞ্চনং প্রসারণং গমনমিতি কৰ্ম্মাণি।।৭।।

অনুবাদ

উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্চন, প্রসারণ এবং গমন ইহারাই (এই পাঁচটীই) কৰ্ম্ম পদাৰ্থ।।৭।।

ব্যাখ্যা

ঊর্দ্ধে নিক্ষিপ্ত বস্তুতে নিক্ষেপকালে যে স্পন্দন অনুভূত হয়, তাহা উৎক্ষেপণ, অধোনিক্ষিপ্ত বস্তুতে নিক্ষেপকালে যে স্পন্দন অনুভূত হয় তাহা অবক্ষেপণ, অধিকদেশবিস্তৃত বস্তুর অবয়ব ক্ষয় না হইলেও পূৰ্ব্বাপেক্ষা অল্পদেশবিস্তৃতি যে কৰ্ম্ম দ্বারা ঘটিয়া থাকে, তাহাই আকুঞ্চন। আকুঞ্চন এবং সঙ্কোচ শব্দের একই অর্থ; ঐরূপ অধিকদেশবিস্তৃতি যে কর্ম্ম দ্বারা হয় তাহা প্রসারণ, ইহাই প্রাচীন মত। নব্যেরা বলেন, উৎক্ষেপণ, অবক্ষেপণ, আকুঞ্চন, প্রসারণ, এই চারিটী উৎক্ষেপকৰ্ত্তা,

অধঃক্ষেপকৰ্ত্তা আকুঞ্চনকর্ত্তা এবং প্রসারণকর্ত্তারই হস্তপদ-সঞ্চালনা প্রভৃতির কর্ম্ম। গমন বলিলে যেরূপ কৰ্ম্ম বোধ হয় তাহা সকলেরই প্রত্যক্ষসিদ্ধ।

ভ্রমণ, রেচন, স্যন্দন, ঊর্দ্ধজ্বলন ও তির্য্যগমন এই কএকটী গমনের অন্তর্গত। ভ্রমণ অর্থে ঘূর্ণন, কঠিন বস্তুর নিঃসরণের নাম রেচন, জলীয় বস্তুর নিঃসরণের নাম স্যন্দন, দীপশিখা প্রভৃতির ঊর্দ্ধজ্বলন এবং বায়ু প্রভৃতির তির্য্যগতি সকলেরই পরিজ্ঞাত। যে ছয়টি পদার্থ সূত্রে উল্লিখিত হইয়াছে, তন্মধ্যে প্রথম তিনটীর বিভাগ যথাক্রমে প্রদর্শিত হইল। অতঃপর তাহাদিগের ধর্ম্ম ও লক্ষণাদি বিবৃত হইবে। দ্বিতীয় আহ্নিক হইতে সঙ্গতিক্রমে অবশিষ্ট পদার্থের বিবরণ এবং বিবিধ বিচার লিপিবদ্ধ হইবে।।৭।।

উপস্কারঃ

কৰ্ম্মণাং দ্রব্যজন্যতয়া গুণজন্যতয়া চ রূপবদ্রব্যসমবায়াচ্চ প্রত্যক্ষতেতি দ্রব্যগুণাভিধানানন্তরং কর্ম্মোদ্দেশবিভাগাবাহ।

উৎক্ষেপণম্ অবক্ষেপণম্ আকুঞ্চনং প্রসারণং গমনমিতি কর্ম্মাণি ইতিরবধারণার্থঃ ভ্রমণাদেরপি গমনান্তর্গতত্বাৎ অত্র চ উৎক্ষেপণত্বাবক্ষেপণত্বাকুঞ্চনত্ব প্রসারণত্ব গমনত্বানি কৰ্ম্মত্বসাক্ষাদ্ব্যাপ্যাঃ পঞ্চ জাতয়ঃ। নন্বেতদনুপপন্নং গমনস্য কৰ্ম্মপৰ্য্যায়ত্বাৎ সর্ব্বত্র গচ্ছতীতি বুদ্ধেদৃষ্টত্বাদুৎক্ষেপণত্বাদীনাং চতসৃণাং জাতীনাং পরস্পরাত্যক্তাভাবসমানাধিকরণানাং সামানাধিকরণ্যাননুভবাৎ চতস্র এব কৰ্ম্মত্বব্যাপ্যা জাতয় ইতি চেৎ সত্যং কৰ্ম্মপৰ্য্যায় এব গমনং পৃথগভিধানন্তু ভ্রমণরেচনস্যন্দনোর্দ্ধজ্বলননমনোন্নমনাদীনাং ভিন্নভিন্নবুদ্ধিব্যপদেশ- ভাজামেকেন শব্দেন সংগ্রহার্থং যদ্বা গমনত্বমপি কৰ্ম্মত্বব্যাপ্যা পঞ্চমী জাতিরেব তেন ভ্রমণরেচনাদিম্বেব গমনপ্রয়োগো মুখ্যঃ উৎক্ষেপণাবক্ষেপণাদিষু যদি গমনপ্রয়োগস্তদা ভাক্তঃ স্বাশ্রয়সংযোগবিভাগাসমবায়িকারণত্বমেব গৌণমুখ্যসাধারণো ধৰ্ম্মঃ গমনত্বজাতেস্ত্বনিয়ত- দিগ্দেশসংযোগবিভাগাসমবায়িকারণত্বমেব ব্যঞ্জকং তচ্চ ভ্রমণাদিষু সৰ্ব্বত্রেতি গমনগ্রহণেনৈব তেষাং গ্রহণমিতি। নিষ্ক্রমণত্ব প্রবেশনত্বাদিকা তু ন জাতিঃ, একস্মিন্নেব কৰ্ম্মণি গৃহাৎ গৃহান্তর গচ্ছতি পুরুষে কস্যচিৎ দ্রষ্টুঃ প্রবিশতীতি প্রত্যয়ঃ কস্যচিত্ত নিষ্ক্রামতীতি তত্র জাতিসঙ্করঃ স্যাৎ তথা ভ্রমণাদেরেকস্যা জলপ্রণাল্যা নিষ্ক্রাম্য পরাং প্রবিশতি, নিষ্ক্রামতি প্রবিশতীতি প্রত্যয়দ্বয়দর্শনাদুপাধিসামান্যমেবৈতদধ্যবসেয়ম্। উৎক্ষেপণাদৌ তু মুষলমুৎক্ষিপামীতীচ্ছা-জনিতেন প্রযত্নেন প্রযত্নবদাত্মসংযোগাদসমবায়িকারণাদ্ধস্তে তাবদুৎক্ষেপণ তত উৎক্ষেপণবিশিষ্টহস্তনোদনাদসমবায়িকারণাৎ মুষলেঽপ্যুৎক্ষেপণাখ্যং কৰ্ম্ম যুগপদ্বা তত উর্দ্ধমুৎক্ষিপ্তয়োর্হস্তমুষলয়োরবক্ষেপণেচ্ছাজনিত প্রযত্নবদাত্মসংযোগাদ্ধস্তনোদনাচ্চ যুগপদেব হস্তে মুষলে চাবক্ষেপণম্ উলূখলপাতানুকূলং সঞ্জায়তে ততো দৃঢ়তরদ্রব্যসংযোগাদ্‌ যদকস্মান্মুষলস্যোর্দ্ধং গমনং ভবতি তত্র নেচ্ছা ন বা প্রযত্নঃ কারণং কিন্তু সংস্কারমাত্রাদেব মুষলস্যোৎপতনং তচ্চ গমনমাত্রং নতৃৎক্ষেপণ ভাক্তস্তত্রোৎক্ষেপণব্যবহারঃ এবমনুলোম প্রতিলোমবায়ুদ্বয়সঙ্ঘট্টবশাদ্বায়োস্তৎপ্রেরিতত্বণতূলকাদৌ চোৎক্ষেপণব্যবহারো ভাক্তঃ। এবং স্রোতোদ্বয়সঙ্ঘট্টবশাজ্জলোর্দ্ধগমনে ঽপি। এবমুৎক্ষেপণাবক্ষেপণব্যবহারঃ শরীরতদবয়বতৎসংযুক্তমুষলতোমরাদিম্বেব মুখ্যঃ ভবতি হি হস্তমুৎক্ষিপতি মুষলমুৎক্ষিপতি তোমরমুৎক্ষিপতীতি এবমবক্ষিপতীত্যপি। আকুঞ্চনন্তু সৎস্বেবাবয়বানামারম্ভকসংযোগেষু পরস্পরমবয়বানামনারম্ভকসংযোগোৎপাদকং বস্ত্রাদ্যবয়বিকৌটিল্যোৎপাদকং কৰ্ম্ম, যতো ভবতি সঙ্কুচতি পদ্মং সঙ্কুচতি বস্ত্রং সঙ্কুচতি চৰ্ম্মেতি প্রত্যয়ঃ এবমবয়বানাং পূর্ব্বোৎপন্নানারম্ভকসংযোগবিনাশকং কৰ্ম্ম প্রসারণং যতো ভবতি প্রসরতি বস্ত্রং প্রসরতি চৰ্ম্ম প্ৰবিকসতি পদ্মমিত্যাদিপ্রত্যয়ঃ, এতচতুষ্টয়ভিন্নং যৎ কৰ্ম্মজাতং তৎসৰ্ব্বং গমনবিশেষঃ। তত্র ভ্রমণং প্রযত্নবদাত্মসংযোগাদ্ধস্তে কৰ্ম্মবতা হস্তেন নোদনাখ্যসংযোগাদবঘট্টনাচ্চ চক্ৰাদৌ তির্য্যসংযোগানুকূলং কর্ম্ম। এবং রেচনাদ্যপি ব্যাখ্যেয়ং স্ফুটীকরিষ্যতি চাগ্রে তদেতেষাং কৰ্ম্মণাং বিহিতযাগস্নানদানাদিষু ধৰ্ম্মানুকূল প্রযত্নবদাত্মসংযোগজন্য ত্বং নিষিদ্ধদেশগমন- হিংসাকলঞ্জভক্ষণাদিষু চাধৰ্ম্মানুকূল প্রযত্নবদাত্মসংযোগজন্যত্বমধ্যবসেয়মিতি।।৭।।

.

সদনিত্যং দ্রব্যবৎ কার্য্যং কারণং সামান্যবিশেষবদিতি কার্য্যংকারণং দ্রব্যগুণকৰ্ম্মণামবিশেষঃ।। ৮।।

অনুবাদ

সদ্ৰূপে প্রতীয়মানত্ব, ধ্বংসপ্রতিযোগিত্ব, দ্রব্যোৎপন্নত্ব, কার্য্যত্ব, কারণত্ব, পরজাতি এবং অপরজাতি এইগুলি, দ্রব্য, গুণ এবং কর্ম্মের সাধারণ ধৰ্ম্ম।। ৮।।

ব্যাখ্যা

যে জাতীয় কোন একটী বস্তুর অস্তিত্ব সাধারণের প্রত্যক্ষগোচর, তজ্জাতীয় বস্তুকে সদ্ৰূপে প্রতীয়মান বলা যায়, সদ্ৰূপে প্রতীয়মানত্ব সেই সকল বস্তুর ধর্ম্ম। মনে কর, দ্রব্যজাতীয় পৃথিবীর অস্তিত্ব, গুণজাতীয় রূপের অস্তিত্ব এবং কৰ্ম্মজাতীয় গমনের অস্তিত্ব সাধারণের প্রত্যক্ষসিদ্ধ। সুতরাং দ্রব্যজাতীয়, গুণজাতীয় এবং কৰ্ম্মজাতীয় বস্তুতে সদ্ৰূপে প্রতীয়মানত্ব আছে। দ্রব্যজাতীয় বলিলে সকল দ্রব্যকে বুঝিবে, গুণজাতীয় বলিলে সকল গুণকে বুঝিবে, কৰ্ম্মজাতীয় বলিলে সকল কৰ্ম্মকে বুঝিবে।

দ্রব্যত্ব, গুণত্ব এবং কৰ্ম্মত্ব জাতি লইয়াই এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করিয়াছি। সুতরাং সিদ্ৰূপেণ প্রতীয়মানবৃত্তি-পদার্থবিভাজক-ধৰ্ম্মবত্ব’—ইহাই—”সস্তূপে প্রতীয়মানত্ব” শব্দের অর্থ। অথবা যাহাকে সৎ বলিয়া জানিলে ভ্রান্ত হইতে হয় না, তাহাই’সদ্ৰূপে প্রতীয়মান’—সদ্ৰূপে প্রতীয়মানত্ব তাহারই ধর্ম্ম। দ্রব্যাদিত্ৰয়ে ‘সত্তা’নাম্নী জাতি আছে বলিয়া তাহাকে সৎ,—’সত্তাবৎ’ বলিয়া যে জ্ঞান হয়, তাহা ভ্ৰম নহে—এই সত্তাজাতির কথা পরে কথিত হইবে। যে জাতীয় বস্তু ধ্বংসপ্রতিযোগী অর্থাৎ নশ্বর, তাহাতে ধ্বংসপ্রতিযোগিত্ব থাকে। দ্রব্য, গুণ, কৰ্ম্ম—এই তিনজাতীয় বস্তু নশ্বর;—পরমাণু, আকাশাদি ও নিত্যগুণ, ধ্বংসপ্ৰতিযোগী না হইলেও—তজ্জাতীয় বস্তুতে ধ্বংসপ্রতিযোগিত্ব আছে অর্থাৎ ধ্বংসপ্রতিযোগিবৃত্তি- জাতিমত্ত্বই ধ্বংসপ্রতিযোগিত্ব শব্দের অর্থ, তাহা ঐ তিন পদার্থে আছে। দ্রব্যত্ব, গুণত্ব ইত্যাদিই,—নশ্বর বস্তু ঘট, রূপ ও কর্ম্মে বৃত্তি অর্থাৎ বর্তমান এবং দ্রব্যাদিত্রয় ঐ ধর্ম্মেরই আশ্রয়। সুতরাং উক্ত অর্থে ধ্বংসপ্রতিযোগিত্ব—দ্রব্যাদিত্রয়ের ধর্ম্ম। দ্রব্যোৎপন্নত্ব—দ্রব্য হইতে যাহাদের উৎপত্তি অর্থাৎ দ্রব্য যাহার উপাদান, তাহাকে দ্রব্যোৎপন্ন বলে। দ্ব্যণুক প্রভৃতি সকল অনিত্য দ্রব্যই দ্রব্যোৎপন্ন; কেন না, অনিত্যদ্রব্যের অবয়বই উপাদান অর্থাৎ সমবায়ী কারণ। অনিত্য গুণ ও কর্ম্মের সমবায়ী কারণ দ্রব্য। সুতরাং ‘দ্রব্যোৎপন্নত্ব’ তন্দ্রয়ের ধর্ম্ম। নিত্য দ্রব্য ও নিত্য গুণ দ্রব্যোৎপন্ন না হইলেও পূর্ব্বরীতিক্রমে দ্রব্যোৎপন্নবৃত্তিজাতিমত্ত্বই দ্রব্যোৎপন্নত্ব শব্দের অর্থ বুঝিবে। ‘কাৰ্য্যত্ব’ শব্দের অর্থ প্রাগভাবপ্রতিযোগিত্ব; উৎপন্ন হইবার পূর্ব্বে বস্তুর যে অভাব থাকে এবং উৎপন্ন হইলে যাহা থাকে না, তাহার নাম প্রাগভাব। যাহার উৎপত্তি হয় তাহাকে প্রাগভাবপ্রতিযোগী বলা যায়—কেন না যাহার অভাব, তাহাই সে অভাবের প্রতিযোগী। প্রাগভাবপ্রতিযোগিত্ব যে জাতীয় বস্তুতে থাকে,—কাৰ্য্যত্ব তাহাদেরই ধৰ্ম্ম; সকল দ্রব্যাদিতে প্রাগভাবপ্রতিযোগিত্ব না থাকিলেও পূর্ব্বের ন্যায় তাহাকে সর্বসাধারণধর্ম্ম করিবার জন্য এখানেও “যে জাতীয় বস্তুতে” ইহা লিখিলাম, অতঃপর পূৰ্ব্ববৎ তাহা খাটাইয়া লও। ‘কারণত্ব’—জ্ঞান ভিন্ন বস্তুর প্রতি কারণত্ব—জ্ঞানের কারণ জাতিও হয়, জাতিপ্রত্যক্ষে জাতি কারণ কি না; তাই জ্ঞান ভিন্ন বস্তুর প্রতি বলিয়াছি। যে জাতীয় বস্তু দ্রব্য বা বিভাগাদির কারণ হয়—কারণত্ব তাহারই ধর্ম্ম। দ্রব্য, গুণ ও কর্ম্ম এই তিন পদার্থই সেই জাতীয় বস্তু। দ্রব্য যে দ্রব্যের কারণ তাহা পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে। গুণও দ্রব্যের কারণ হয়—কেননা, অবয়ব দ্বারা সংযোগ হইতেই অবয়বী দ্রব্যের উৎপত্তি। কৰ্ম্ম সংযোগ-বিভাগের জনক। ফল দুলিতে দুলিতে ছিড়িয়া গেল, মাটীতে পড়িল, এই ‘দোলা’ই ফলের কর্ম্ম, আর তাহার কথিত পূর্ব্বসংযুক্ত দেশের বিভাগ ও নূতন দেশের সহিত সংযোগ হয়—সেই ‘দোলা’ বা স্পন্দনরূপ ক্রিয়াই সেই সংযোগবিভাগের জনক। ‘সামান্য বিশেষ’ অর্থে উপস্কারমতে বিশেষজাতি অর্থাৎ পরস্পরব্যাবর্ত্তক জাতি, যথা দ্রব্যত্ব, গুণত্ব ও কর্ম্মত্ব। আমি অনুবাদে সে অর্থ গ্রহণ করি নাই,—আমি ধরিয়াছি সামান্য অর্থে পরজাতি এবং বিশেষ অর্থে অপরজাতি। পরজাতি— ব্যাপক জাতি সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক স্থানে যাহা থাকে তাহাই এখানে ব্যাপকজাতি, যথা—সত্তা। অপরজাতি— ব্যাপ্যজাতি দ্রব্যত্ব, গুণত্ব, কৰ্ম্মত্ব ইত্যাদি। এতাবতা সৰ্ব্ববিধ জাতিমত্ত্বই দ্রব্য-গুণ-কর্ম্মের সাধারণ ধর্ম্ম, ‘জাতিমন্ত্’ মাত্রই বৰ্ত্তমান স্থলে উপযোগী; ‘সৰ্ব্ববিধ’ বা ‘পর’ ‘অপর’ ইত্যাদি শব্দ অন্যত্রজাতির অসত্তাজ্ঞাপক এই মাত্র।। ৮।।

উপস্কারঃ

দ্রব্যাদীনামুদ্দেশানন্তরং ত্রয়াণাং সাধর্ম্মপ্রকরণমারভতে। তত্র দ্রব্যাদীনাং ত্রয়াণাং সাধর্ম্মস্য তত্ত্বজ্ঞানানুকূলতয়া প্রথমং শিষ্যাকাঙিক্ষতত্বাৎ সামান্যাদিপদার্থত্রয়স্য উদ্দেশাৎ প্রাগেব ত্রয়াণাং সাধৰ্ম্মমাহ।

বিশেষে সত্যপি অয়মবিশেষশব্দঃ সাধর্ম্মপরঃ। সদিতি সদাকার ত্যয়ব্যপদেশবিষয়ত্বং, ত্রয়াণামেব সত্তাযোগিত্বাৎ, অনিত্যমিতি ধ্বংসপ্রতিযোগিত্বং যদ্যপি ন পরমান্বাদিসাধারণং তথাপি ধ্বংসপ্রতিযোগিবৃত্তিপদার্থবিভাজকোপাধিমত্ত্বং বিবক্ষিতম্। দ্রব্যবদিতি দ্রব্যং সমবায়িকারণতয়াস্যাস্তীতি দ্রব্যবৎ, এতদপি পরমান্বাদৌ নাস্তীতি দ্রব্যসমবায়িকারণক- বৃত্তিপদার্থবিভাজকোপাধিমত্ত্বং বিবক্ষিতম্। কার্য্যমিতি! প্রাগভাবপ্রতিযোগিবৃত্তিপদার্থ-বিভাজকোপাধিমত্ত্ব বিবক্ষিতম্। কারণমিতি। জ্ঞানেতরকার্য্যনিয়তপূৰ্ব্ববৰ্ত্তিজাতীয়- বৃত্তিপদার্থবিভাজকোপাধিমত্ত্বং তেন স্বসাক্ষাৎকারে বিষয়তয়া কারণে গোত্বাদৌ নাতিপ্রসক্তিনবা পারিমাণ্ডল্যাদাবজনকেঽব্যাপ্তিঃ। সামান্যবিশেষবদিতি। সামান্যং সদ্বিশেষোহন্যোন্যব্যাবর্তকতয়া দ্রব্যত্বগুণত্বকৰ্ম্মত্বাদি-তদ্বত্ত্বমিত্যর্থঃ। ননু “গাং দদ্যাৎ” “গৌঃ পদা ন স্প্রষ্টব্যা” ইতি শ্রুতেধৰ্ম্মাধৰ্ম্মজনকত্বং জাতের পীতি কারণত্বমতিব্যাপীতি চেন্ন অবচ্ছেদকতামাত্রেণ জাতেবিনিয়োগাৎ। উপলক্ষণঞ্চৈতৎ স্বসমবায়ার্থশব্দাভিধেয়ত্বমপি ত্রয়াণাং সাধর্ম্মং দ্রষ্টব্যম্, যদি তু কাৰ্য্যং ত্বানিত্যত্বে কারণবতামেব “কারণত্বঞ্চান্যত্র পারিমাণ্ডল্যাদিভ্যঃ” ইতি প্রশস্তদেবাচার্য্যব্যবস্থিতং সাধর্ম্মমুচ্যতে, তদা পদার্থবিভাজকোপাধিমত্তয়া ন বিশেষ্যং সূত্রোক্তরীত্যা ত্রয়াণাং গুণজনকত্বং গুণজন্যত্বঞ্চান্যত্র নিত্যদ্রব্যেভ্য ইতি।। ৮।।

.

দ্রব্যগুণয়োঃ সজাতীয়ারম্ভকত্বং সাধর্ম্মম্।।৯।।

অনুবাদ

সজাতীয় বস্তুর উৎপাদন যোগ্যতা দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম।। ৯।।

ব্যাখ্যা

পূর্ব্বে দ্রব্য, গুণ ও কর্ম্মের সাধর্ম্ম বলা হইয়াছে। এক্ষণে দ্রব্যগুণের সাধর্ম্ম কথিত হইতেছে। সাধর্ম্ম অর্থে সাধারণ ধৰ্ম্ম। দ্রব্য যদি সজাতীয় বস্তু উৎপাদন করে এবং গুণও তাহা করে, তাহা হইলে ঐ ধৰ্ম্ম দ্রব্য ও গুণের সাধারণ ধৰ্ম্ম হইতে পারে। এই বিবেচনা করিয়া, মহর্ষি পরসূত্রে দ্রব্য ও গুণ যে সজাতীয় বস্তু উৎপাদন করে, তাহা প্রদর্শন করিয়াছেন।। ১।।

উপস্কারঃ

ইদানীং দ্রব্যগুণয়োরেব সাধর্ম্মমাহ।
এতদেব সূত্রান্তরেণ স্পষ্টয়তি।। ৯।।

.

দ্রব্যাণি দ্রব্যান্তরমারভন্তে গুণাশ্চ গুণান্তরম্।। ১০।।

অনুবাদ

দ্রব্য হইতে অপর দ্রব্যের এবং গুণ হইতে অপর গুণের উৎপত্তি হয়।। ১০।।

ব্যাখ্যা

সূত্র–দ্রব্য, বস্ত্রও দ্রব্য; সূত্র হইতে বস্ত্র উৎপন্ন হয়;—এই রীতি অনুসারে সকল অবয়ব দ্রব্য হইতে সকল অবয়বী দ্রব্যের উৎপত্তি হইয়া থাকে এবং অবয়বগুণ হইতে অবয়বীর গুণ উৎপন্ন হয়। শুক্লসূত্রে নিৰ্ম্মিত বস্ত্ৰ শুক্লবর্ণ হইয়া থাকে। অবয়ব অবয়বী উভয়েরই একজাতীয় রূপ, অবয়বরূপ অবয়বীর রূপের প্রতি কারণ। সুতরাং সজাতীয় বস্তুর উৎপাদনযোগ্যতা গুণেও আছে, এই জন্যই দ্রব্য ও গুণের সজাতীয় উৎপাদনরূপ ধর্ম্ম আছে, ইহা পূৰ্ব্বসূত্রে কথিত হইয়াছে; অতএব ইহাই দ্রব্য, গুণ উভয়ের সাধারণধর্ম্ম। যদি বল, ঘট প্রভৃতি হইতে কোন দ্রব্যের উৎপত্তি হয় না; ঘটের গুণ—রূপ-রসাদি হইতেও কোন গুণের উৎপত্তি হয় না; সুতরাং ঐ সকল দ্রব্য ও গুণের সজাতীয় বস্তু উৎপাদনযোগ্যতা নাই। আমরা ইহার উত্তরে বলি, না-ই থাকিল, যে সকল দ্রব্য ও গুণে তাহা নাই, তাহাদিগের সাধর্ম্ম কথিত হইতেছে না, যাহাদিগের আছে, তাহারাও দ্রব্য বা গুণের অন্তর্গত, তাহাদিগের সাধর্ম্ম্যই কথিত হইতেছে। অথবা যাহা সজাতীয় বস্তুর উৎপাদনযোগ্য তাহাতে বৰ্ত্তমান দ্রব্যত্ব ও গুণত্বকে গ্রহণ করিয়া সকল দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম বলিলেও ক্ষতি নাই। অর্থাৎ ‘সজাতীয়ারম্ভকবৃত্তিপদার্থবিভাজকধর্ম্মবত্ত্ব ই তদুভয়ের সাধর্ম্ম। সজাতীয়ের আরম্ভকপদার্থে অবস্থিত যে পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম তাহাই সাধর্ম্ম। আরম্ভক অর্থে উৎপাদনযোগ্য। যে যে ধৰ্ম্মকে গ্রহণ করিয়া পদার্থ বিভাগ করা হয়, তাহাই পদার্থবিভাজক। কোন্ কোন্ ধর্ম্মকে গ্রহণ করিয়া ছয় পদার্থ বলিয়া পদার্থের বিভাগ করা হইয়াছে? দ্রব্যত্ব, গুণত্ব ইত্যাদিকে লইয়া। অসংখ্য ঘট পট, অসংখ্য দ্রব্য, সুতরাং অসংখ্য গুণ, তাহা ধরিলে পদার্থকে কি ছয় প্রকার বলা যাইত? দ্রব্যত্ব, গুণত্ব ইত্যাদি ধৰ্ম্ম একটী একটী; এইরূপ ছয়টীধর্ম্ম দ্বারা পদার্থের বিভাগ, তাই ইহাকে পদার্থবিভাজক বলে। পূর্ব্বে বা পরে যেখানে ‘পদার্থ-বিভাজক’ কথার উল্লেখ আছে, সেইখানেই ঐরূপ অর্থ বুঝিবে। এই অনুসারে দ্রব্যবিভাজক প্রভৃতির অর্থ বুঝিবে। সূত্র ও সূত্রার্থে বিভাগপ্রণালী দেখিয়া লইবে।। ১০।।

উপস্কারঃ

অন্ত্যাবয়ধিবিভুদ্রব্যাণি তথান্ত্যাবয়বিগুণান্ দ্বিত্বদ্বিপৃথত্বপরত্বাপরত্বাদীন গুণাংশ্চ বিহায় সজাতীয়ারম্ভকং সাধর্ম্মং দ্রষ্টব্যং সজাতীয়ারম্ভকবৃত্তিপদার্থবিভাজকোপাধিমত্ত্বং বা বিবক্ষিতং তেনাজনকদ্রবর্যুক্তীনামপ্যুপগ্রহঃ।। ১০।।

.

কৰ্ম্মৰ্ম্মসাধ্যং ন বিদ্যতে।। ১১।।

অনুবাদ

কৰ্ম্ম যে ফৰ্ম্ম হইতে উৎপন্ন হইবে এ বিষয়ে প্রমাণ নাই।। ১১।।

ব্যাখ্যা

সজাতীয় বস্তুর উৎপাদনযোগ্যতা—দ্রব্যগুণের ন্যায় কর্ম্মেও নাই কেন? এই প্রশ্নের উত্তরার্থই এই সূত্রের অবতারণা। দ্রব্য ও গুণের যেরূপ আছে, কর্ম্মের সজাতীয় উৎপাদনে সেরূপ প্রমাণ নাই, প্রত্যুত বাধক আছে। মনে কর, একটী স্পন্দন হইলেই স্পন্দিত বস্তুর সহিত অপর বস্তুর পূর্ব্বে যে সংযোগ ছিল, তাহার পরিবর্ত্তে বিভাগ হইয়া যায়। সেই কর্ম্ম হইতে কর্ম্মান্তর উৎপন্ন হয়, ইহা স্বীকার করিলে দ্বিতীয় কৰ্ম্ম হইতে আর বিভাগ হইতে পারে না, বিভাগ তো হইয়াই গিয়াছে। বিভক্তের আবার বিভাগ কি? বিভাগ তো সংযুক্তেরই হইয়া থাকে। বিভাগজনক না হইলেও তাহাকে কর্ম্ম বলা যায় না। সুতরাং কৰ্ম্ম সজাতীয় বস্তুর উৎপাদক নহে।। ১১।।

উপস্কারঃ

ননু কৰ্ম্মাণি কুতো ন কর্ম্মান্তরমারভক্ত ইত্যত আহ। বিদিরিয়ং জ্ঞানার্থো ন তু সত্তাভিধায়ী। সজাতীয়ারব্ধদ্রব্যগুণয়োরিব কৰ্ম্মসাধ্যে কৰ্ম্মণি প্রমাণং নাস্তীত্যর্থঃ। ইদমত্রাকূতম্। কৰ্ম্ম যদি কৰ্ম্ম জনয়েৎ স্বোৎপত্ত্যনন্তরমেব জনয়েৎ শব্দবৎ। তথাচ পূৰ্ব্বকৰ্ম্মণৈব যাবৎ সংযোগিদ্রব্যেভ্যো বিভাগে জনিতে দ্বিতীয়ং কৰ্ম্ম কেন সহ বিভাগং জনয়েৎ, বিভাগস্য সংযোগপূর্ব্বকত্বাৎ সংযোগান্তরস্য চ তত্রাধিকরণেঽনুৎপন্নত্বাৎ বিভাগাজননে তু কৰ্ম্মলক্ষণক্ষতেঃ ন চ ক্ষণান্তরে কর্ম্মান্তরং জনয়িষ্যতীতি বাচ্যং সমর্থস্য ক্ষেপাযোগাৎ অপেক্ষণীয়ান্তরাভাবাৎ পূৰ্ব্বসংযোগনাশক্ষণেঽপি জননে বিভাগজনকত্বানুপপত্তিরেব উত্তরসংযোগোৎপত্তিকালেঽপি জননে তথৈব। উত্তরসংযোগোৎপত্ত্যনন্তরকালম্ভ কৰ্ম্মনাশ এব তথাচ সুষ্ঠুক্তং কৰ্ম্ম কৰ্ম্মসাধ্যং ন বিদ্যত ইতি।।১১।।

ন দ্রব্যং কার্য্যং কারণঞ্চ বধতি।। ১২॥

অনুবাদ

দ্রব্য, কার্য্য বা কারণের বিনাশক নহে।। ১২।।

ব্যাখ্যা

যে ধৰ্ম্ম গুণ-কর্ম্মে আছে—তাহা দ্রব্যে নাই। এই ধর্ম্মই দ্রব্যের ‘বৈধৰ্ম্ম’ নামে কথিত। গুণাদির বৈধর্ম্মও—ঐরূপ ভাবে বুঝিবে। দ্রব্য স্বজন্য বস্তুকে বা স্বজনক বস্তুকে বিনষ্ট করে না। পরন্তু অবয়বনাশ বা আরম্ভকসংযোগনাশই দ্রব্যনাশের কারণ। একাধিক অবয়বের পরস্পর সম্মিলনে অবয়বীর উৎপত্তি হয়—যেমন নানাসূত্রের বয়নজনিত সম্মিলনে বস্ত্র-উৎপত্তি—সেই সম্মিলনকেই আরম্ভকসংযোগ বলা হইয়াছে। তাহার নাশ হইলে, দ্রব্যের নাশ হয়, নতুবা হয় না। সুতরাং দ্রব্য কার্য্য বা কারণের নাশক নহে। পরন্তু গুণ ও কর্ম্মকে, কার্য্যনাশক নহে বা কারণনাশক নহে এরূপ বলা চলে না। কেন? তাহা কথিত হইতেছে।। ১২।।

উপস্কারঃ

গুণকৰ্ম্মভ্যাং দ্রব্যস্য বৈধৰ্ম্মমাহ। দ্রব্যং ন স্বকার্য্যং হন্তি ন বা স্বকারণং হন্তি কার্য্যকারণ- ভাবাপন্নয়োদ্রব্যয়োবধ্যঘাতকভাবো নাস্তীত্যর্থঃ। আশ্রয়নাশারম্ভকসংযোগনাশাভ্যামেব দ্রব্যনাশাদিতি ভাবঃ। বধতীতি সৌত্রোনিৰ্দ্দেশঃ।।১২।।

.

উভয়থা গুণাঃ।। ১৩।।

অনুবাদ

গুণ উভয়প্রকার অর্থাৎ কার্য্যনাশ্য এবং কারণনাশ্য হইয়া থাকে।। ১৩।।

ব্যাখ্যা

কোন গুণ কার্য্য দ্বারা বিনষ্ট হয় এবং কোন গুণ কারণ দ্বারাই বিনষ্ট হয়। যথা, শব্দ উচ্চারণ করিলে, তাহা উচ্চারণের প্রযত্নানুসারে দীর্ঘকালস্থায়ী ও অল্পকালস্থায়ী হয়,—অথচ শব্দ দুই ক্ষণের অধিক থাকে না, ইহাই সিদ্ধান্ত; তবে দীর্ঘকালস্থায়ী শব্দ কিরূপে হইয়া থাকে? ইহার উত্তর এই যে,–একশব্দ দুইক্ষণস্থায়ী হইলেও সেই শব্দ হইতে তৎসজাতীয় শব্দান্তর উৎপন্ন হয়; এইরূপ ধারাবাহিক শব্দকেই দীর্ঘকালস্থায়ী একটী শব্দ বলিয়া লোকে বিবেচনা করে। সবলে উচ্চারিত শব্দ হইতে ক্রমানুসারে যে সকল শব্দ উৎপন্ন হয়, তাহার সংখ্যা অধিক হওয়াতেই, সেই ধারাবাহিক শব্দাবলীই অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকালস্থায়ী একটী শব্দ বলিয়া নির্ণীত হয়। অল্পবলে উচ্চারিত শব্দ হইতে ক্রমানুসারে যে শব্দ উৎপন্ন হয়, তাহার সংখ্যা অল্প। সুতরাং সেই ধারাবাহিক শব্দাবলী অপেক্ষাকৃত অল্পকালস্থায়ী বলিয়া বিবেচিত হইয়া থাকে। সুতরাং প্রথম শব্দ দ্বিতীয় শব্দের হেতু এবং দ্বিতীয় শব্দ প্রথম শব্দের নাশক, এইরূপ নিশ্চয় করিতে হয়। এইরূপে যে শব্দ, নিস্তেজ শব্দের—শব্দানুৎপাদক চরম শব্দের সৃষ্টি করে, তাহা সেই চরম শব্দের নাশকও হইয়া থাকে। সেইজন্য চরম শব্দ উৎপত্তির পরক্ষণেই লীন হইয়া যায়। অতএব শব্দ কারণের বিনাশক এবং কার্য্যেরও বিনাশক হয়। শব্দসম্বন্ধে বিশেষ বিভাগ পরে বলিব। শব্দ গুণ, সুতরাং গুণের মধ্যে কার্য্য ও কারণের এবং কারণ ও কার্য্যের পরস্পর নাশ্যনাশকভাব আছে—দ্রব্যে তাহা নাই।। ১৩।।

উপস্কারঃ

গুণস্য কার্য্যকারণবধ্যত্বমাহ। কাৰ্য্যবধ্যাঃ কারণবধ্যাশ্চেত্যর্থঃ আদ্যশব্দাদীনাং কার্য্যত্ববধ্যত্বং চরমস্য তু কারণবধ্যত্বম্ উপান্ত্যেন শব্দেন অন্ত্যস্য নাশাৎ।।১৩।।

.

কার্য্যবিরোধি কৰ্ম্ম।। ১৪।।

অনুবাদ

কর্ম্ম—কর্ম্ম দ্বারা বিনষ্ট হয়।। ১৪।

ব্যাখ্যা

কৰ্ম্ম—ক্রিয়া, স্পন্দন; সংযোগ এই স্পন্দনের কার্য্য। তুমি গঙ্গাস্নানে যাইবে, এই যাওয়া বা জলগমন—একপ্রকার স্পন্দন মাত্র। এই স্পন্দনের চরম কাৰ্য্য গঙ্গাজলসংযোগ। স্পন্দন আরম্ভ হইলে, এক স্থান হইতে অপর স্থানে সংযোগ হয়—এই সংযোগ প্রথম স্পন্দনের নাশক। এই স্পন্দননাশক্ষণে কোথাও বা কিঞ্চিৎ বিলম্বে আবার নূতন স্পন্দনের উৎপত্তি হয়,—এই রীতিক্রমে ধারাবাহিক শব্দের ন্যায় স্পন্দনধারাও চলিতে থাকে। গমনস্বরূপ স্পন্দনে গন্তব্য দেশে উপস্থিতি পৰ্য্যন্ত এই ধারাবাহিক ভাব থাকে। প্রথম পাদক্ষেপ, দ্বিতীয় পাদক্ষেপ—এইরূপ স্থূলভাবে দেখিলেও এক গমনের মধ্যেই স্পন্দনের অনেকত্ব অনুভূত হয়। সুতরাং সংযোগ হইলেই যখন পূৰ্ব্ব-উৎপন্ন কৰ্ম্ম বিনষ্ট হয়, তখন সংযোগ উহার নাশক। সুতরাং কৰ্ম্মে কৰ্ম্মনাশ্যত্ব থাকিল; দ্রব্যে তাহাও নাই।। ১৪।।

উপস্কারঃ

গুণানাং কার্যকারণোভয়বিরোধিত্বমুক্ত্বা কৰ্ম্মণঃ কার্য্যবিরোধিত্বমাহ। কার্য্যং বিরোধি যস্যেতি বহুব্রীহিঃ স্বজন্যোত্তরসংযোগনাশ্যত্বাৎ কৰ্ম্মণঃ দ্রব্যাণাং কার্য্যকারণাবিরোধিত্ব নিয়তমেব গুণকৰ্ম্মণোস্ত্বনিয়মঃ আশ্রয়নাশাসমবায়িকারণনাশনিমিত্তনাশবিরোধিগুণানাং নাশকত্বস্য বক্ষ্যমাণত্বাৎ।। ১৪।।

ক্রিয়াগুণবৎ সমবায়িকারণমিতি দ্রব্যলক্ষণম্।। ১৫।।

অনুবাদ

(দ্রব্য) কৰ্ম্মবৎ, গুণবৎ এবং সমবায়িকারণ—ইত্যাদি দ্রব্যের লক্ষণ।। ১৫।

ব্যাখ্যা

যে বস্তুতে কৰ্ম্ম অর্থাৎ স্পন্দন থাকে, তাহা ক্রিয়াবৎ। ঐ বস্তু দ্রব্যরূপেই ব্যবহৃত, সুতরাং কৰ্ম্ম বা কৰ্ম্মবত্ত্ব কতিপয় বস্তুতে দ্রব্যব্যবহারের হেতু—সুতরাং লক্ষণ। দ্রব্যমাত্রেই গুণ আছে, সেই জন্য দ্রব্যকে অপর বস্তু হইতে ভিন্ন বলিয়া বুঝিতে হইলে, গুণকে আশ্রয় করিতে হয়। যাহা যাহা গুণবান্ তৎসমস্তই দ্রব্য, তদতিরিক্ত দ্রব্য নাই—এইরূপে গুণ—বা গুণবত্ত্ব দ্রব্যের অপর লক্ষণ। জন্যবস্তু যাহাতে সমবায়সম্বন্ধে থাকে, তাহা সমবায়ি-কারণ—ইহা স্থূল কথা। অবয়বের সহিত অবয়বীর যে সম্বন্ধ, গুণ ও কর্ম্মের সহিত দ্রব্যের যে সম্বন্ধ, দ্রব্য গুণ ও কর্ম্মের সহিত জাতির যে সম্বন্ধ তাহাকে ও বিশেষের সম্বন্ধকে ‘সমবায় সম্বন্ধ’ বলা যায়। স্থূল কথা এই যে, সাবয়ব দ্রব্য, সংযোগাদি অনেকবৃত্তি গুণ, কৰ্ম্ম, সাবয়ব দ্রব্যের গুণ, এবং আকাশ ও জীবাত্মার বিশেষ গুণ—জন্য বস্তু এবং উহারা দ্রব্যেই সমবায় সম্বন্ধে থাকে। অতএব দ্রব্যই সমবায়ি কারণ। জন্য ও নিত্য গুণের বিশেষ বিবরণ পরে প্রদত্ত হইবে। কর্ম্ম সকল দ্রব্যে থাকে না। কর্ম্মবত্ত্ব সকল দ্রব্যের লক্ষণ নহে, এই জন্য ‘গুণবত্ত্ব’ রূপ দ্বিতীয় লক্ষণ। উৎপত্তিকালে দ্রব্যে গুণ থাকে না, সুতরাং ‘গুণবত্ত্ব’ তৎকালে দ্রব্যের লক্ষণ হইতে পারে না, এই হেতু তৃতীয় লক্ষণের অনুসরণ করা হইয়াছে। উৎপত্তিকালে যে দ্রব্যে গুণ থাকে না, তাহার কারণ এই যে, উৎপত্তিমৎ দ্রব্যের গুণও উৎপত্তিমৎ, পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি—সেই দ্রব্য সেই গুণের সমবায়ি কারণ; যেটা কারণ হইবে, কার্য্যের পূর্ব্বে তাহার অস্তিত্ব অনুভবসিদ্ধ। যে ক্ষণে ঘট উৎপন্ন হইল, তাহার পূর্ব্বে ঘটের অস্তিত্ব ছিল না, সুতরাং ঘটের গুণ ঐ ক্ষণে উৎপন্ন হইতে পারে না, উৎপত্তির পর ক্ষণে ঘটে রূপাদিগুণ উৎপন্ন হইতে পারে।। ১৫।।

উপস্কারঃ

শিষ্যাকাঙ্ক্ষানুরোধেন ত্রয়াণাং সাধর্ম্ম্যমভিধায়েদানীং ত্রয়াণাং লক্ষণমারভমাণ আহ। ক্রিয়াশ্চ গুণাশ্চ বিদ্যন্তেঽস্মিন্নিতি ক্রিয়াগুণবৎ‍, অত্র লক্ষণশব্দশ্চিহ্নবচনঃ সমানাসমানজাতীয়ব্যবচ্ছেদকব্যতিরেকিলিঙ্গবিশেষবচনশ্চ লক্ষ্যতেঽনেনেতি ব্যুৎপত্তিবলাৎ তত্র ক্রিয়য়া কৰ্ম্মণা দ্রব্যমিদমিতি লক্ষ্যতে। গুণবত্ত্বেন চ সমানাসমানজাতীয়েভ্যো ব্যাবৃত্তং দ্রব্যং লক্ষ্যতে, তত্র সমানজাতীয়াভাবত্বেন গুণাদয়ঃ পঞ্চ অসমানজাতীয়স্বভাবঃ তেন দ্ৰব্যং গুণাদিভ্যো ভিন্নং গুণবত্ত্বাৎ যন্ন গুণাদিভ্যো ভিদ্যতে তন্ন গুণবৎ যথা গুণাদীতি। গুণবত্ত্বং যদ্যপ্যাদ্যক্ষণেহ বয়বিনি নাস্তি তথাপি গুণাত্যন্তাভাববিরোধিমত্ত্বং বিবক্ষিতং গুণপ্রাগভাব- প্রধ্বংসয়োরপি গুণাত্যন্তাভাববিরোধিত্বাৎ এবং সমবায়িকারণত্বমপি ষট্‌পদার্থভেদকমেব দ্রব্যপদার্থস্য লক্ষণং ন চ সাধ্যাপ্রসিদ্ধিগুণাদিভেদস্য ঘটাদারের প্রত্যক্ষসিদ্ধত্বাৎ নচাত্র সিদ্ধসাধন ঘটত্বাবচ্ছেদেনেতরভেদস্য সিদ্ধত্বেঽপি দ্রব্যত্বাবচ্ছেদেন সাধ্যত্বা‍ পক্ষতাবচ্ছেদকভেদে ন সিদ্ধসাধনং যথা নিত্যে বাঙ্ঘনসে ইত্যত্র ইতি কেচিত্তন্ন পক্ষতাবচ্ছেদকাবচ্ছিন্নে ক্বচিদপি সাধ্যসিদ্ধৌ পক্ষতাক্ষতেস্তথাপ্যাবশ্যকত্বাৎ। ইতিশব্দশ্চ ইত্যাদিপরস্তেন সংখ্যাবত্ত্বপরিমাণবত্ত্বপৃথত্ববত্ত্বসংযোগবত্ত্ববিভাগবত্ত্বান্যপি দ্রব্যলক্ষণত্বেন সংগৃহ্যন্তে।। ১৫।

.

দ্রব্যাশ্রয্যগুণবান সংযোগবিভাগেম্বকারণমনপেক্ষ ইতি গুণলক্ষণম্।। ১৬।।

অনুবাদ

যাহা দ্রব্যাশ্রয়ী, অগুণবান্ এবং সংযোগ বা বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ নহে, (তাহাই গুণ) ইহাই গুণ লক্ষণ।। ১৬।।

ব্যাখ্যা

গুণ—দ্রব্যে থাকে, সুতরাং দ্রব্যাশ্রয়িত্ব গুণে আছে। কিন্তু এই দ্রব্যাশ্রয়িত্ব সাবয়ব দ্রব্যেও থাকে, অতএব যাহা দ্রব্যাশ্রয়ী তাহাই গুণ—এরূপ বলা যায় না, বলিলে দ্রব্যে অতিব্যাপ্তি হয়—অর্থাৎ যাহা লক্ষ্য নহে, তাহাও লক্ষণের বিষয় হইয়া পড়ে। এই জন্য ‘অগুণবান্’ এই অংশ আছে। সাবয়ব দ্রব্য—দ্রব্যাশ্রয়ী হইলেও—অগুণবান্ নহে। দ্ৰব্য গুণবান্, গুণ—গুণবান্ নহে, গুণে গুণ থাকে না, গুণ দ্রব্যেরই ধর্ম্ম। সুতরাং যাহা দ্রব্যাশ্রয়ী এবং গুণবান্ তাহা গুণ—এরূপ লক্ষণ করিলে দ্রব্যে অতিব্যাপ্তি হয় না। কিন্তু কৰ্ম্মে অতিব্যাপ্তি হয়; কৰ্ম্ম দ্রব্যাশ্রয়ী এবং অগুণবান্। গুণ তো কর্ম্মেরও ধর্ম্ম নহে। এইজন্য ‘সংযোগ’ ইত্যাদি তৃতীয়ভাগ—গ্রহণ করিতে হইয়াছে। যাহা সংযোগ বা বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ নহে, এরূপ বলিলে কি বুঝিতে হইবে তাহা দেখা যাউক,— এখানে নিরপেক্ষ কারণ অর্থে পরবর্ত্তী কোন ভাব পদার্থকে অপেক্ষা না করিয়া যাহা কারণ হয়, তাহা। কর্ম্ম, সংযোগ-বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ; কেন না, কর্ম্ম-উৎপত্তির পর অন্য এমন কোন ভাব পদার্থ উৎপন্ন হয় না, কৰ্ম্ম, যাহাকে অপেক্ষা করিয়া সংযোগ বা বিভাগের প্রতি কারণ হয়, তবেই হইল—কৰ্ম্মই সংযোগ বা বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ; ‘যাহা সংযোগ বা বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ নহে’ কৰ্ম্ম তাহা হইল না, অর্থাৎ কৰ্ম্ম ভিন্ন হইল। সুতরাং সমুদয় লক্ষণের মর্ম্ম এই যে, যাহা দ্রব্যাশ্রয়ী, গুণবদ্ভিন্ন এবং কর্ম্ম ভিন্ন তাহাই গুণ। যে পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম কেবল দ্রব্যাশ্রয়ী বস্তুতেই থাকে— অপর পদার্থাশ্রয়ী বস্তুতে থাকে না, তদাশ্রয় বস্তু ‘দ্রব্যাশ্রয়ী’ শব্দের প্রতিপাদ্য। মনে কর, গুণত্বরূপ পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম—গুণে আছে, গুণ—কেবল দ্রব্যাশ্রয়ী, ঐ পদার্থবিভাজক গুণত্বের যে আশ্রয় তাহা দ্রব্যাশ্রয়ী হইল। জাতি— গুণবদ্ভিন্ন এবং কর্ম্ম ভিন্ন হইলেও—মোটামুটি অর্থে দ্রব্যাশ্রয়ী হইলেও এরূপ দ্রব্যাশ্রয়ী হইল না; কেন না, জাতিত্ব অর্থাৎ সামান্যত্বরূপ পদার্থবিভাজকধৰ্ম্ম—দ্রব্যত্ব, গুণত্ব ইত্যাদি সকল জাতিতেই থাকে, কেবল যে দ্রব্যাশ্রয়ী বস্তুতেই থাকে তাহা নহে, গুণ কেবল দ্রব্যাশ্রয়ী হইলেও গুণত্ব দ্রব্যাশ্রয়ী নহে, গুণাশ্রয়ী; সুতরাং জাতিতে এই গুণ লক্ষণের অতিব্যাপ্তি হইল না।। ১৬।।

উপস্কারঃ

দ্রব্যানন্তরং গুণানামুদ্দেশাত্তল্লক্ষণমাহ

দ্রব্যমাশ্রয়িতুং শীলমস্যেতি দ্রব্যাশ্রয়ী এতচ্চ দ্রব্যেঽপি গতমত আহ অগুণবানিতি। তথাপি কর্ম্মণ্যতিব্যাপ্তিরিত্যত আহ সংযোগবিভাগেম্বকারণ তথাপি সংযোগবিভাগ- ধর্ম্মাধর্ম্মেশ্বরজ্ঞানাদীনামসংগ্রহঃ স্যাদত উক্তমনপেক্ষ ইতি অত্রানপেক্ষ ইত্যনন্তরং গুণ ইতি পূরণীয়ং সংযোগবিভাগেম্বনপেক্ষঃ সন্ কারণং যো ন ভবতি স গুণ ইত্যর্থঃ। সংযোগবিভাগাদীনাং সংযোগবিভাগৌ প্রতি সাপেক্ষত্বাৎ। নিত্যবৃত্তিনিত্যবৃত্তি- সত্তাব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং গুণত্বং সংযোগবিভাগৌ গুণত্বং সংযোগবিভাগৌ মিলিতৌ প্রতি সমবায়িকারণত্বা-সমবায়িকারণত্বরহিতে সামান্যবতি যৎ কারণত্বং তদ্‌গুণত্বাভিব্যঞ্জকং সংযোগবিভাগয়োঃ প্রত্যেকমেব সংযোগবিভাগকারণকত্বং ন মিলিতয়োঃ ধর্ম্মাধর্ম্মেশ্বরজ্ঞানাদীনাং দ্বয়োর্নিমিত্তকারণত্বমাত্রং ন সমবায়িকারণত্বং নাপ্যসমবায়িকারণত্বমিতি তেষাং সংগ্রহঃ, যদ্বা সংযোগবিভাগসমবায়িত্বাসমবায়িকারণত্বশূন্যত্বং সামান্যসমানাধিকরণ গুণত্বব্যঞ্জকং সামান্যবত্ত্বে সতি কৰ্ম্মান্যত্বে চ সত্যগুণবত্ত্বমেব বা গুণলক্ষণম্।। ১৬।।

.

একদ্রব্যমগুণং সংযোগবিভাগেম্বনপেক্ষকারণমিতি কৰ্ম্মলক্ষণম্।। ১৭।।

অনুবাদ

যাহা একৈক দ্রব্যমাত্রবৃত্তি, নির্গুণ এবং সংযোগ বা বিভাগের প্রতি নিরপেক্ষ কারণ—(তাহাই কর্ম্ম) কর্ম্মের লক্ষণ এই প্রকার।।১৭।।

ব্যাখ্যা

যাহা—এককালে একাধিক দ্রব্যে থাকে না, তাহাই একৈক দ্রব্যমাত্রবৃত্তি বস্তু। কৰ্ম্ম একৈক দ্রব্যমাত্রবৃত্তি; যাহা কোথাও থাকে না,—তাহাও একৈক দ্রব্যমাত্রবৃত্তি হইয়া উঠিতেছে; কেননা—তাহাও তো এককালে একাধিক দ্রব্যে থাকিবেই না। সুতরাং যাহা একৈকদ্রব্যমাত্র বৃত্তি তাহাই কৰ্ম্ম, এইরূপ বলিলে আকাশ প্রভৃতি নিত্যদ্রব্যে অতিব্যাপ্তি হইত কেন না, নিত্যদ্রব্য কোথাও থাকে না। এই জন্য নির্গুণ বলা হইয়াছে, আকাশাদি নির্গুণ নহে। আকাশ দ্রব্য, তাহাতে শব্দাদিগুণ আছে। যাহা একৈক দ্রব্যমাত্রবৃত্তি এবং নিৰ্গুণ তাহাই কৰ্ম্ম—ইহা বলিলে রূপরসাদিতে অতিব্যাপ্তি হয়, কেননা, রূপরসাদি একৈকদ্রব্যমাত্রবৃত্তি এবং নির্গুণ। রূপরসাদি গুণস্বরূপ, কিন্তু গুণের আশ্রয় নহে। যাহা গুণের আশ্রয় নহে তাহাই নির্গুণ। এই অতিব্যাপ্তি বারণের জন্য সংযোগ বা বিভাগের প্রতি ইত্যাদি অংশ কথিত হইয়াছে। রূপরসাদি সংযোগাদির কারণ নহে; সুতরাং অতিব্যাপ্তি বারণ হইল। অদৃষ্টে অতিব্যাপ্তি বারণের জন্য ‘নিরপেক্ষ’ অংশ প্রবেশ করিতে হইয়াছে। অদৃষ্ট সকল জন্যবস্তুরই কারণ; সুতরাং সংযোগবিভাগেরও কারণ, কিন্তু নিরপেক্ষ কারণ নহে; অদৃষ্ট স্বোত্তরকালোৎপন্ন কর্ম্মাদিকে অপেক্ষা করিয়া সংযোগাদির কারণ হইয়া থাকে। স্পন্দন—কৰ্ম্ম হইলে, সংযোগ হয়, কেবল অদৃষ্টবশাৎ সংযোগ হয় না। এই লক্ষণের গূঢ় রহস্য পরিষ্কারে বিবৃত আছে।। ১৭।।

উপস্কারঃ

গুণানন্তরমুদ্দিষ্টস্য কৰ্ম্মণো লক্ষণমাহ।

একমেব দ্রব্যম্ আশ্রয়ো যস্য তদেকদ্রব্যং ন বিদ্যতে গুণোঽস্মিন্নিত্যগুণং সংযোগবিভাগেম্বনপেক্ষকারণমিতি স্বোৎপত্ত্যনন্তরোৎপত্তিকভাবভূতানপেক্ষমিত্যর্থঃ। তেন সমবায়িকারণাপেক্ষায়াং পূৰ্ব্বসংযোগাভাবাপেক্ষায়াঞ্চ নাসিদ্ধত্বং স্বোৎপত্ত্যনন্তরোৎ-পত্তিকানপেক্ষত্বং বা বিবক্ষিতং পূৰ্ব্বসংযোগধ্বংসস্যাপি স্বোৎপত্ত্যনন্তরানুৎপত্তিত্বাৎ, অভাবত্বেন তস্যাদ্যক্ষণসম্বন্ধাভাবাৎ, নিত্যাবৃত্তিসত্তাসাক্ষাদ্ব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং কৰ্ম্মত্বং চলতীতি- প্রত্যয়াসাধারণকারণতাবচ্ছেদকজাতিমত্ত্বং বা গুণান্যনির্গুণমাত্রবৃত্তিজাতিমত্ত্বং বা স্বোৎপত্ত্যব্য- বহিতোত্তরক্ষণবৃত্তিবিভাগকারণতাবচ্ছেদকজাতিমত্ত্বং বা ন চায়ং চলতীতিপ্রত্যয়সাক্ষিকঃ পদার্থো নাবিরলদেশোৎপাদনাদিনোপপাদ্যঃ ক্ষণভঙ্গস্যাগ্রে নিরাকরিষ্যমাণত্বাৎ। লক্ষণস্য ইতরভেদসাধকতাপ্রকারঃ পূর্ব্বোক্ত এব।। ১৭।।

.

দ্রব্যগুণকৰ্ম্মণাং দ্রব্যং কারণং সামান্যম্।। ১৮।।

অনুবাদ

দ্রব্য, গুণ ও কর্ম্মের সামান্য কারণ দ্রব্য।। ১৮।।

ব্যাখ্যা

দ্রব্য, গুণ ও কর্ম্মের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে। এক্ষণে সেই তিন পদার্থের কারণ-ঘটিত সামান্য ধৰ্ম্ম কথিত হইতেছে-

অবয়বী দ্রব্য, গুণ এবং কর্ম্ম—দ্রব্য হইতে উৎপন্ন। সুতরাং ‘দ্রব্য সমবায়িকারণকবৃত্তি জাতিমত্ত্ব’ দ্রব্যাদিত্রয়ের সাধর্ম্ম বা সামান্য ধর্ম্ম। দ্রব্য যাহাদিগের সমবায়ি কারণ, তাহাদিগকে ‘দ্রব্যসমবায়িকারণক’ বলা হয়,—যথা অবয়বী দ্রব্য, গুণ এবং কর্ম্ম। তাহাতে যে জাতি থাকে অর্থাৎ যে ধৰ্ম্ম সমবায় সম্বন্ধে থাকে, তাহাই দ্রব্যসমবায়িকারণক বৃত্তি জাতি’। যথা— দ্রব্যত্ব, গুণত্ব, কৰ্ম্মত্ব, সত্তা ইত্যাদি। সমবায়সম্বন্ধে তদ্বত্ত্বই দ্রব্যাদিত্রয়ের সাধারণ ধর্ম্ম।। ১৮।।

উপস্কারঃ

ইদানীং কারণমুখেন ত্রয়াণামেব সাধর্ম্মপ্রকরণমুপক্রমতে।

সমানমেব সামান্যম্ একমিত্যর্থঃ অনয়োঃ সামানা মাতেতিবৎ। একস্মিন্নেব দ্রব্যে সমবায়িকারণে দ্রব্যগুণকৰ্ম্মাণি বৰ্ত্তন্তে ইত্যর্থঃ দ্রব্যসমবায়িকারণকবৃত্তিজাতিমত্ত্বং ত্রয়াণাং সাধৰ্ম্মম্।। ১৮।।

.

তথা গুণঃ।। ১৯।।

অনুবাদ

গুণও সেইরূপ।। ১৯।।

ব্যাখ্যা

যেমন দ্রব্য দ্রব্যাদি তিন পদার্থের সামান্য কারণ, গুণও সেইরূপ ঐ তিন পদার্থের সামান্য কারণ। প্রভেদের মধ্যে এই যে, দ্রব্য সমবায়িকারণ এবং গুণ অসমবায়িকারণ। জন্যদ্রব্যে বিবিধ কর্ম্ম এবং জ্ঞানাদির প্রতি বিশেষ বিশেষ সংযোগই অসমবায়ি কারণ। জন্যগত রূপাদির প্রতি জনকগত রূপাদি অসমবায়িকারণ। সুতরাং ‘গুণাসমবায়ি- কারণকবৃত্তি জাতিমত্ত্বই দ্রব্যাদিত্রয়ের সাধারণ ধর্ম্ম। গুণ যাহাদিগের অসমবায়ি কারণ—তাহাদিগকে ‘গুণাসমবায়িকারণক’ বলা যায়। যথা অবয়বী দ্রব্য, বিবিধ কৰ্ম্ম এবং বিবিধ গুণ;—যে জাতি তাহাতে থাকে, তাহাই ‘গুণাসমবায়িকারণক বৃত্তিজাতি’। যথা—দ্রব্যত্বাদি; পূৰ্ব্বসূত্রোক্তরীত্যনুসারে লক্ষণ সমন্বয় করিতে হইবে।। ১৯।।

উপস্কারঃ

গুণাসমবায়িকারণকত্বং ত্রয়াণাং সাধর্ম্মৰ্মাহ।

গুণাসমবায়িকারণকবৃত্তিজাতিমত্ত্বং ত্রিতয়সাধর্ম্মং দ্রব্যাণাং সংযোগোঽসমবায়িকারণং কার্য্যগুণানাং রূপরসগন্ধস্পর্শসংখ্যা পরিমাণ পৃথক্‌ত্বাদীনাং সজাতীয়কারণ-গুণাসমবায়ি- কারণকত্বং বুদ্ধ্যাদীনামাত্মগুণানাং মনঃসংযোগাসমবায়িকারণকত্বং পার্থিবপরমাণু- গুণানামগ্নিসংযোগাসমবায়িকারণকত্বং কর্ম্মণান্তু বহ্ন্যাদিনোদনাভিঘাতগুরুত্ব-দ্রবত্বসংস্কারা- দৃষ্টবদাত্মসংযোগপ্রযত্নবদাত্মসংযোগাদ্যাসমবায়িকারণকত্বং যথাযথ স্বয়মুহনীয়ম্। কচিদেকস্যাপি গুণস্য ত্রয়াণাং দ্রব্যগুণকৰ্ম্মণামারম্ভকত্বং তদ্‌্যথা বেগবত্তুলপিণ্ড-সংযোগস্থূলপিণ্ডাত্তরে কর্ম্ম করোতিদ্বিতূলকঞ্চ দ্রব্যমারভতে তৎপরিমাণঞ্চ। কচিদেকো গুণো দ্রব্যগুণাবারভতে, যথা তূলপিণ্ডসংযোগ এব বেগানপেক্ষঃ প্রচয়াখ্যো দ্বিতূলকং দ্রব্যং তৎপরিমাণঞ্চারভতে।। ১৯।।

.

সংযোগবিভাগবেগানাং কৰ্ম্ম সমানম্।। ২०।।

অনুবাদ

সংযোগ, বিভাগ এবং বেগের সামান্য কারণ কর্ম্ম।। ২০।।

ব্যাখ্যা

যেমন দ্রব্য, বিভিন্নজাতীয় নানা কার্য্যেরও কারণ, গুণও বিভিন্নজাতীয় নানা কার্য্যের কারণ, তদ্রূপ কৰ্ম্মও বিভিন্নজাতীয় নানা কার্য্যের কারণ। ‘বিভিন্নজাতীয় নানা-কাৰ্য্যজনক- বৃত্তি-জাতিমত্ত্ব’ দ্রব্যাদিত্রয়ের সাধর্ম্ম। সংযোগ, বিভাগ এবং বেগ—কর্ম্মের পক্ষে বিভিন্ন জাতীয় নানাকাৰ্য্য, সংযোগাদির সমবায়িকারণভিন্ন কারণবৃত্তিপদার্থবিভাজকধৰ্ম্মবত্ত্ব, গুণ ও কর্ম্মের সাধর্ম্ম। সংযোগজ সংযোগ, বিভাগজ বিভাগ এবং বেগজ বেগের প্রতি গুণ অর্থাৎ সংযোগাদিই যথাক্রমে অসমবায়িকারণ, তদতিরিক্ত সংযোগাদির প্রতি কর্ম্ম অসমবায়িকারণ। সুতরাং সংযোগাদির অসমবায়িকারণ যে সংযোগাদি এবং কর্ম্ম, তাহা সমবায়িকারণ হইতে ভিন্ন কারণ ইহা বলাই বাহুল্য। তদ্‌বৃত্তিপদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম—গুণত্ব ও কর্ম্মত্ব, তাহা বা তদ্বত্ত্ব গুণ ও কর্ম্মে আছে।। ২০।।

উপস্কারঃ

ক্কচিদেকস্য কৰ্ম্মণোহনেককার্য্যকারিত্বমাহ।

কারণমিত্যনুষঙ্গঃ। যত্র দ্রব্যে কৰ্ম্মোৎপন্নং তেন সমং যাবদ্রব্যং সংযুক্তমাসীৎ তাবৎসঙ্খ্যকান্ বিভাগান্ জনয়িত্বা তাবতঃ সংযোগানপি পুনরন্যত্র জনয়তি বেগং পুনরেবমেব স্বাশ্রয়ে করোতি বেগপদং স্থিতিস্থাপকমপ্যুপলক্ষয়তি।।২০।।

.

ন দ্রব্যাণাং কৰ্ম্ম।। ২১।।

অনুবাদ

কর্ম্ম—দ্রব্যের কারণ নহে।।২১।।

ব্যাখ্যা

পূর্ব্বসূত্রে সংযোগাদির কারণরূপে গুণ ও কর্ম্মের সাধর্ম্ম কীর্ত্তন করা হইয়াছে। পরন্তু কৰ্ম্ম যদি দ্রব্যেরও কারণ হয় তাহা হইলে, দ্রব্যের কারণরূপে দ্রব্য, গুণ ও কর্ম্ম এই তিনেরই সাধর্ম্ম বলা যাইতে পারে। কর্ম্ম যে দ্রব্যের কারণ, তাহা তো প্রত্যক্ষসিদ্ধ। কেননা, অবয়বীদ্রব্যের প্রতি অবয়ব দ্রব্য কারণ। এক অবয়ব অপর অবয়বের সহিত সংযুক্ত হইলে অবয়বী দ্রব্য উৎপন্ন হয়, যথা কপালদ্বয় সংযোগে ঘটের উৎপত্তি। এই কপালদ্বয় সংযোগ কৰ্ম্ম ব্যতীত— কপালের স্পন্দন ব্যতীত ঘটে না। সংযোগ না হইলে ঘটের উৎপত্তিও হয় না, তবেই দেখ যখন কর্ম্ম ব্যতিরেকে ঘট হয় না, তখন ঘটের প্রতি কর্ম্মও কারণ। এইরূপ অন্য অবয়বীর পক্ষেও জানিবে। এই আশঙ্কার উত্তরে বর্ত্তমানসূত্র। এই সূত্রের তাৎপর্য্য এই যে—কোনরূপে যাহা অপেক্ষিত হইবে তাহাই যে কারণ ইহা বলিতে পারা যায় না। কেননা, এরূপ বলিলে, কোন একটী কার্য্যকারকের পিতৃকুল বা মাতৃকুলের অতিপূর্ব্বতন পুরুষকেও সেই কার্য্যের কারণ বলিতে হয়। কেননা সেই পূৰ্ব্বতন পুরুষ না হইলে তো এই কার্য্যকারক পুরুষের উৎপত্তিই হইত না। এরূপে পূর্ব্বপুরুষ অপেক্ষিত হইলেও তিনি যেরূপ সেই কার্য্যের কারণ নহেন, তদ্রূপ ঘট কারণ যে কপালসংযোগ তাহার কারণ বলিয়া কৰ্ম্ম অপেক্ষিত হইলেও তাহা ঘটকারণ নহে, পরন্তু সংযোগের কারণ। কার্য্যোৎপত্তির অব্যবহিতপূর্বক্ষণে যাহার অস্তিত্ব অবশ্য অপেক্ষণীয় তাহাই সেই কার্য্যের কারণ, ঘটোৎপত্তির অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে কপালসংযোগ অবশ্যাপেক্ষণীয়, কৰ্ম্ম তৎকালে অবশ্যাপেক্ষণীয় নহে। ঘটের অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে কপালের কর্ম্ম না থাকিলেও কেবল সংযোগ সাহায্যে ঘট উৎপন্ন হয়, সংযোগবিনাশে ঘট বিনাশ হয়। সুতরাং উক্ত সংযোগই ঘটের কারণ। কর্ম্ম সংযোগের কারণ হইলেও ঘটের কারণ হয় না। সুতরাং কর্ম্ম দ্রব্যের কারণ নহে।। ২১।।

উপস্কারঃ

ননু ক্রিয়াবতা দ্রব্যেণারম্ভকসংযোগে জনিতে তেন চ দ্রব্যমারব্ধং যত্তদপি কৰ্ম্মজন্যমেব কৰ্ম্মণস্তৎপূৰ্ব্ববৰ্ত্তিত্বাদত আহ। কৰ্ম্ম দ্রব্যাণাং ন কারণমিত্যর্থঃ।।২১।।

.

ব্যতিরেকাৎ।। ২২।

অনুবাদ

কৰ্ম্ম না থাকিলেও দ্রব্য উৎপন্ন হয়।। ২২।।

ব্যাখ্যা

কর্ম্ম হইতে অবয়বের সংযোগ হয়, সংযোগ হইলে কৰ্ম্ম বিনষ্ট হয়, কৰ্ম্ম বিনষ্ট হইলেও অবয়ব সংযোগবশতঃ অবয়বী দ্রব্য উৎপন্ন হইয়া থাকে। অতএব কৰ্ম্ম দ্রব্যের কারণ নহে, ইহা পূর্ব্বসূত্র ব্যাখ্যায় বলিয়াছি।। ২২।।

উপস্কারঃ

কুত এবমত আহ।

ব্যতিরেকাদিতি নিবৃত্তেরিত্যর্থঃ। উত্তরসংযোগেন কৰ্ম্মণি নিবৃত্তে দ্রব্যমুৎপদ্যতে ইতি ন কর্ম্মণো দ্রব্যকারণত্বং বিনশ্যদবস্থঞ্চ কৰ্ম্ম ন দ্রব্যকারণম্। কিঞ্চ কর্ম্ম দ্রব্যস্যাসমবায়িকারণং বা ভবেন্নিমিত্তকারণং বা ন তাবদাদ্যঃ দ্রব্যস্যাসমবায়িকারণনাশনাশ্যত্বেন অবয়বকৰ্ম্মনাশাদেব দ্রব্যনাশাপত্তেঃ। ন দ্বিতীয়ঃ মহাপটনাশেহ বস্থিতসংযোগেভ্য এব খণ্ডপটোৎপত্তৌ নিষ্কৰ্ম্মণামেবাবয়বানাং দ্রব্যারম্ভদর্শনাদ্ব্যভিচারাৎ।। ২২।।

.

দ্রব্যাণাং দ্রব্যং কাৰ্য্যং সামান্যম্।। ২৩।।

অনুবাদ

এক দ্রব্য,দ্বিদ্রব্য ও বহুদ্রব্যের সাধারণ কার্য্য।।২৩।।

ব্যাখ্যা

দুটী অবয়বযোগে কোন অবয়বী উৎপন্ন হয়, বহু অবয়বযোগেও কোন অবয়বী উৎপন্ন হয়। দুই কপালযোগে ঘট এবং বহুসূত্রযোগে বস্ত্র ইহার উদাহরণ।।২৩।।

উপস্কারঃ

বহুনামেকস্যারম্ভকত্বমুক্ত্বা ইদানীমেকস্মিন্ কাৰ্য্যে বহুনামারম্ভকত্বমাহ।

দ্রব্যে চ দ্রব্যাণি চেতি দ্রব্যাণি তেষাং দ্রব্যাণাম্। তত্র দ্বাভ্যাং তন্তুভ্যাং দ্বিতন্তুকঃ পটো বহুভিরপি তন্তুভিরেকঃ পট আরভ্যতে। নন্বেকতন্তুকোঽপি পটো দৃশ্যতে যত্ৰৈকেনৈব তন্তুনা তানপ্রতানৌ ভবত ইতি চেন্ন, তত্রৈকস্য সংযোগাভাবেনাসমবায়িকারণাভাবাৎ পটানুৎপত্তেঃ। নচাংশুকতন্তু-সংযোগোঽসমবায়িকারণম্ অবয়বাবয়বিনোরযুক্তসিদ্ধত্বেন সংযোগাভাবাৎ, আরভ্যারম্ভক-ভাবানভ্যুপগমাৎ মূৰ্ত্তানাং সমানদেশতাবিরোধাৎ। দৃশ্যতে তাবদেবমিতি চেন্ন তত্র বেমাদ্যভিঘাতেন মহাবয়বিনস্তত্তোনাশাৎ খণ্ডাবয়বিনানাতত্ত্বৎপত্তৌ তেযামন্যোন্যসংযোগাৎ পটোৎপত্তেঃ বস্তুগত্যা তত্র নানাভূতেষু তন্তুষু একত্বাভিমানাৎ।। ২৩।।

.

গুণবৈধৰ্ম্ম্যান্ন কৰ্ম্মণাং কৰ্ম্ম।। ২৪।।

অনুবাদ

গুণের সহিত সাধর্ম্ম না থাকায় কৰ্ম্ম কৰ্ম্ম-জন্য হয় না।। ২৪।।

ব্যাখ্যা

গুণ সজাতীয় বস্তুর উৎপত্তিহেতু, পরন্তু সেই গুণধৰ্ম্ম কৰ্ম্মে নাই, এই জন্য কৰ্ম্মমাত্রই কৰ্ম্মজন্য নহে। যদি একটী কৰ্ম্মও এক কৰ্ম্মজন্য বা তদধিক-কৰ্ম্মজন্য হইত, তাহা হইলে, কর্ম্মকেও সজাতীয় বস্তুর উৎপত্তি-হেতু বলা যাইত তবেই দেখ, এ হিসাবে দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম্য আছে; কিন্তু কৰ্ম্মে তাহা নাই। সজাতীয় এক কার্য্যের অনেকজনকে যে পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম থাকে, সেই ধর্ম্মবত্ত্ব দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম্য। বস্ত্র দ্রব্য, সূত্রও দ্রব্য; সজাতীয় এক কাৰ্য্য বস্ত্র, জনক অনেক সূত্র, অর্থাৎ কার্য্য এক, কারণ অনেক; এই অনেক কারণেই দ্রব্যত্ব আছে, দ্রব্যত্ব পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম, ইহা দ্রব্যে আছে। এইরূপ পরিমাণের সজাতীয় কার্য্য এক বস্ত্রপরিমাণ, কারণ একৈক সূত্র পরিমাণ, সুতরাং অনেক; তাহাতে গুণত্ব আছে, গুণত্ব পদার্থবিভাজক ধর্ম্ম। সংস্কৃত নিয়মে বলিতে হয়, সজাতীয়ৈককাৰ্য্যকানেককারণ-বৃত্তিপদার্থবিভাজকধৰ্ম্মবত্ত্ব দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম, কর্ম্মে তাহা নাই। কৰ্ম্ম যে কৰ্ম্মজনক হয় না, তাহা একাদশ সূত্রে বলা হইয়াছে বটে, কিন্তু বহুকৰ্ম্মও এক কর্ম্মের জনক হয় কি না ইহা স্পষ্ট করিয়া বলা হয় নাই। এই সূত্রে তাহাও স্পষ্ট বলা হইল।। ২৪।

উপস্কারঃ

ননু যথা দ্রব্যাণাং দ্রব্যং কাৰ্য্যং গুণানাঞ্চ গুণঃ, তথা কিং কৰ্ম্মণামপি কৰ্ম্ম কাৰ্য্যমিত্যত আহ।

কাৰ্য্যমিতি শেষঃ। দ্রব্যগুণয়োঃ সজাতীয়ারম্ভকত্বং সাধর্ম্ম্যমুক্তং তত্র কৰ্ম্ম কৰ্ম্মসাধ্যং ন বিদ্যতে ইতি সূত্রেণ কৰ্ম্মণাং কৰ্ম্মজনকত্বং প্রতিষিদ্ধমেব তদিহানূদ্যতে ইতি ভাবঃ।।২৪।।

.

দ্বিত্ব প্রভৃতয়ঃ সংখ্যাঃ পৃথকত্বসংযোগবিভাগাশ্চ।। ২৫।।

অনুবাদ

দ্বিত্ব প্রভৃতি সংখ্যা, অনেক-পৃথক্ত্ব, সংযোগ এবং বিভাগ, (অনেক দ্রব্যের কাৰ্য্য)।। ২৫।।

ব্যাখ্যা

ত্রয়োবিংশ সূত্রে বলা হইয়াছে অনেক দ্রব্য অর্থাৎ অনেক অবয়বদ্ৰব্য সূত্রাদি হইতে বস্ত্র প্রভৃতি এক দ্রব্যের উৎপত্তি হয়। এই সূত্র ও পর সূত্রে সূচিত হইতেছে যে, দ্বিত্বাদি সংখ্যা প্রভৃতি গুণও অনেক দ্রব্য হইতে উৎপন্ন এবং অনেক দ্রব্য হইতে যাহার উৎপত্তি, তাহারা উভয়সমবেত বা অনেক সমবেত। সুতরাং বুঝা গেল ‘অনেকদ্রব্যারন্ধৈককার্য্যবৃত্তিপদার্থবিভাজকধৰ্ম্মবত্ত্ব এবং ‘উভয়সমবেতৈককাৰ্য্য- বৃত্তিপদার্থবিভাজকধৰ্ম্মবত্ত্ব’ দ্রব্য ও গুণের সাধর্ম্ম। অনেকদ্রব্যারব্ধ অর্থাৎ অনেক দ্ৰব্য হইতে উৎপন্ন যে একটী কার্য্য অবয়বী দ্রব্য বা দ্বিত্ব প্রভৃতি গুণ তাহাতে যে পদার্থবিভাজকধৰ্ম্ম থাকে অর্থাৎ দ্রব্যত্ব ও গুণত্ব—তদ্বত্ত্ব নিখিল দ্রব্যও গুণে আছে। উভয়সমবেত— অর্থাৎ একাধিক বস্তুতে সমবায় সম্বন্ধে যে থাকে, এবংবিধ যে একটী কাৰ্য্য—কোন একটী—অবয়বী দ্রব্য বা কোন একটী দ্বিত্বাদিগুণ—তদ্‌বৃত্তি—তাহাতে অবস্থিত যে পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম তদ্বত্ত্ব দ্রব্য ও গুণে আছে।। ২৫।।

উপস্কারঃ

ইদানীং ব্যাসজ্যবৃত্তীনাং গুণানাম্ অনেকদ্রব্যারভ্যত্বং দর্শয়ন্নাহ।

অনেকদ্রব্যারভ্যাঃ ইতি শেষঃ। দ্বিত্বাদিসমভিব্যাহৃতং পৃথত্বপদমপি দ্বিপৃথক্‌ত্বাদিপরম্, এবঞ্চ দ্বিত্বাদিকাঃ পরার্দ্ধপর্য্যন্তাঃ সঙ্খ্যা দ্বিপৃথক্‌ত্বাদীনি চ সংযোগা বিভাগাশ্চ দ্বাভ্যাং বহুভিশ্চৈব দ্রব্যেরারভ্যন্তে ইত্যনেকবৃত্তিত্বমমীষা তচ্চ সমবায্যন্যোন্যাভাব- সামানাধিকরণ্যম্।।২৫।।

.

অসমবায়াৎ সামান্যকাৰ্য্যং কৰ্ম্ম ন বিদ্যতে।। ২৬।।

অনুবাদ

একৈক কৰ্ম্ম অনেকসমবেত নহে বলিয়া অনেক-জন্য হইতে পারে না।। ২৬।।

ব্যাখ্যা

পূর্ব্বোক্ত সাধর্ম্মদ্বয় কেবল দ্রব্য-গুণেরই হয় কেন, কর্ম্মেরও তো হইতে পারে—এই আশঙ্কা নিবৃত্তির জন্য এই সূত্র কথিত হইল। কৰ্ম্ম যে অনেকদ্রব্যারব্ধ বা অনেকসমবেত নহে, ইহা বুঝানই এই সূত্রের উদ্দেশ্য।। ২৬।।

উপস্কারঃ

নম্ববয়বদ্রব্যাণাং গুণানাঞ্চোক্তানাং যথা ব্যাসজ্যবৃত্তিত্বং তথা কৰ্ম্মণামপি কিং ন স্যাদত আহ।

অসমবায়াদিত্যত্র দ্রব্যয়োদ্রব্যেধিতি যোজ্যং, তথাচ ন দ্রব্যয়োরেকং কৰ্ম্ম সমবৈতি ন বা দ্রব্যেম্বেকং কৰ্ম্ম সমবৈতি, তেন সামান্যস্য সমুদায়স্য কাৰ্য্যং কৰ্ম্ম ন বিদ্যতে, অত্রাপি বিদিজ্ঞানার্থো ন সত্তাবচনঃ। যদি কৰ্ম্ম ব্যাসজ্যবৃত্তি স্যাৎ একস্মিন্ দ্রব্যে চলতি দ্বয়োদ্রব্যয়োৰ্ব্বহুষু চ দ্রব্যেষু চলতীতি প্রত্যয়ঃ স্যাৎ, ন চৈতৎ; তস্মান্ন কৰ্ম্ম ব্যাসজ্যবৃত্তীত্যর্থঃ। ননু শরীরতদবয়বানাং কর্ম্ম শরীরতদবয়বৈবহুভিরারভ্যত এব কথমন্যথা শরীরে চলতি করচরণাদাবপি চলতীতি প্রত্যয়ঃ, এবমন্যত্রাপ্যবয়বিনীতি চেন্ন, অবয়বিকৰ্ম্মসামগ্রা অবয়বকৰ্ম্মসামগ্রীব্যাপ্তত্বাৎ তথোপলব্ধেঃ, ন তু বৈপরীত্যং, নহাবয়বে চলতি সৰ্ব্বত্রাবয়বিনি চলতীতি প্রত্যয়ঃ, অন্যথা কারণাকারণসংযোগাৎ কাৰ্য্যাকাৰ্য্যসংযোগোঽপি ন স্যাৎ, কারণকৰ্ম্মণৈব কাৰ্য্যস্যাপি সংযোগোপপত্তেঃ।। ২৬।।

.

সংযোগানাং দ্রব্যম্।। ২৭।।

অনুবাদ

একটী দ্রব্য.বহুসংযোগের কার্য্য।।২৭॥

ব্যাখ্যা

পূর্ব্বে দ্রব্যাদিত্রয়ের কারণঘটিত সাধর্ম্ম কথিত হইয়াছে, এক্ষণে—সেই তিন পদার্থের এককার্য্যঘটিত সাধর্ম্ম প্রদর্শনের জন্য পর পর তিনটী সূত্র আছে। তন্মধ্যে প্রথম সূত্রে একটী দ্রব্য বহু গুণের কার্য্য—অর্থাৎ একটী দ্রব্যের কারণ অনেক সংযোগ ইহা কথিত হইল। অনেক দ্রব্যসংযোগে যে এক দ্রব্য হয়, ইহা পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে, তাহা এক্ষণে স্মরণ করিবে।। ২৭।।

উপস্কারঃ

পুনৰ্ব্বহূনামেকং কাৰ্য্যমাহ।

বহূনাং সংযোগানাং দ্রব্যমেকং কার্য্যমিত্যর্থঃ। নিঃস্পর্শানাং দ্রব্যাণাম্ অন্ত্যাবয়বিনাং বিজাতীয়দ্রব্যাণাঞ্চ যে সংযোগাস্তান্ বিহায়েতি দ্রষ্টব্যম্।। ২৭।।

.

রূপাণাং রূপম্।। ২৮।।

অনুবাদ

একটী রূপ বহুরূপের কার্য্য।। ২৮।।

ব্যাখ্যা

একখানি বস্ত্রের একটী রূপ। অনেক সূত্রে অনেক রূপ, সকল সূত্রের একজাতীয় বর্ণ হইলেও ঠিক এক হইতে পারে না, সূত্রভেদে বর্ণেরও ব্যক্তিগত ভেদ আছে। সুতরাং একটী রূপ বহুরূপের কার্য্য হইতে পারে। এই সূত্রে বুঝা গেল, কেবল একটী দ্রব্য নহে, একটী গুণও বহু গুণের কার্য্য হইয়া থাকে।। ২৮।।

উপস্কারঃ

ইদানীং বহূনাং গুণানামেকং গুণকাৰ্য্যমাহ।

রূপমেকং কার্য্যমিত্যন্বয়ঃ। রূপপদমুভয়মপি লাক্ষণিকম্, অজহৎস্বার্থা চেয়ং লক্ষণা, কারণৈকার্থসমবায় প্রত্যাসত্ত্যা জন্যজনকভাবাশ্রয়ত্বঞ্চ শক্যলক্ষ্যসাধারণো ধর্ম্মস্তেন রূপরসগন্ধ- স্পর্শস্নেহসাংসিদ্ধিকদ্রবত্বৈকত্বৈকপৃথত্বানি সংগৃহ্যন্তে, এতে হি কারণে বৰ্ত্তমানাঃ কাৰ্য্যে সমানজাতীয়মেকমেব গুণমারভন্তে, দ্বিধা হ্যসমবায়িকারণানাং গতিঃ কেচিৎ কারণৈকার্থপ্রত্যাসত্ত্যা জনয়ন্তি, কারণমিহ সমবায়িকারণং তচ্চ জন্যস্য রূপাদিলক্ষণস্য কার্য্যস্য, তেন রূপাদিলক্ষণকার্য্যস্য যৎ সমবায়িকারণং ঘটাদি তেন সহ কপালে বর্ত্তমানং রূপং কারণৈকার্থসমবায়েন ঘটরূপমারভতে। এবং রসাদ্যপি কচিত্তু কার্য্যৈকার্থপ্রত্যাসত্যা সমবায়ি – কারত্বং যথা কারণমপি শব্দে নভসি কার্য্যমপি শব্দান্তরমারভতে নভস্যেব, রূপাদ্যপি পার্থিবপরমাণাবগ্নিসংযোগেন কাৰ্যৈকাৰ্থসমবায় প্রত্যাসত্ত্যা জন্যতে।। ২৮।।

.

গুরুত্ব প্রযত্নসংযোগানামুৎক্ষেপণম্।। ২৯।।

অনুবাদ

উৎক্ষেপণ (নামক একটী কর্ম্ম) গুরুত্ব, প্রযত্ন এবং সংযোগের (কাৰ্য্য)।। ২৯।।

ব্যাখ্যা

এই সূত্রে বুঝিতেছি—একটী কৰ্ম্মও বহুগুণের কার্য্য হইয়া থাকে। সুতরাং ‘নানাগুণকারণকৈককার্য্যবৃত্তিজাতিমন্ত্’ দ্রব্যাদি তিন পদার্থের সাধর্ম্ম। নানাগুণজন্য যে একটী কাৰ্য্য—কোথাও দ্রব্য, কোথাও গুণ এবং কোথাও বা কৰ্ম্ম—তাহাতে বৰ্ত্তমান যে জাতিসত্তা প্রভৃতি—তাহা বা তদ্বত্ত্ব তিন পদার্থেই আছে।। ২৯।।

উপস্কারঃ

একস্য কৰ্ম্মণোহনেককাৰ্য্যত্বমাহ।

উৎক্ষেপণমেকং কার্য্যমমীষামিত্যর্থঃ। অত্র গুরুত্বস্য হস্তলোষ্টাদিবৰ্ত্তিনো নিমিত্তকারণত্বং প্রযত্নবদাত্মসংযোগস্যাসমবায়িকারণত্বং হস্তনিষ্ঠোৎক্ষেপণস্য, লোষ্টনিষ্ঠোৎক্ষেপণস্য তু হস্তনোদনম সমবায়িকারণম্, অত্রাপ্যুৎক্ষেপণপদমবক্ষেপণাদাবপি লাক্ষণিকম্।।২৯।।

.

সংযোগবিভাগাশ্চ কৰ্ম্মণাম্।। ৩০।।

অনুবাদ

বিবিধ সংযোগ-বিভাগ কর্ম্মেরও কার্য্য।। ৩০।।

ব্যাখ্যা

গুণ এবং কর্ম্মেরও অন্যবিধ সাধর্ম্ম আছে—তাহা সংযোগ এবং বিভাগ এবং বেগের কারণতা লইয়া নির্ব্বাহ করিতে হয়। সংযোগ বা বিভাগাদির যে তাদাত্ম্যসম্বন্ধানবচ্ছিন্ন কারণতা, তদাশ্রয় বৃত্তি পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্মবত্ত্বই গুণ ও কর্ম্মের সাধর্ম্ম। দ্রব্যও সংযোগাদির কারণ বটে, কিন্তু সেই কারণতা যে সম্বন্ধকর্তৃক অবচ্ছিন্ন অর্থাৎ বিশেষিত হয়—গুণ ও কর্ম্মস্থিত কারণতা তৎসম্বন্ধ কর্তৃক অবচ্ছিন্ন নহে। কথাটা ভাল করিয়া বুঝ—

কারণ যেখানে থাকে কাৰ্য্য সেইখানে হয়, ইহাই দেখা যায়। যেখানে অগ্নি জ্বালিবে, সেইখানেই কাষ্ঠ দগ্ধ হয়; এক স্থানে অগ্নি থাকিল এবং অন্য স্থানে কাষ্ঠ দগ্ধ হইল এরূপ ঘটে না। সুতরাং স্থির হইল, কার্য্য কারণ একস্থানে থাকে। এখন দেখ, সংযোগরূপ কার্য্যের যাহা কারণ তাহা সংযোগের সহিত কি রূপে এক স্থানে থাকে? মনে কর, সংযোগের এক কারণ সংযুক্ত দ্রব্য, অপর কারণ স্পন্দনসংযোগ দ্রব্যে আছে, স্পন্দনও দ্রব্যে আছে বটে, কিন্তু সংযুক্ত দ্রব্য তো ঐ দ্রব্যের উপর নাই; আপনি সংযোগের আশ্রয়, কিন্তু আপনার আশ্রয় আপনি নহে, তবে কার্য্য-কারণ একত্র থাকিল কিরূপে? এই প্রশ্নের উত্তর এই যে, কার্য্যকারণের এক স্থানে থাকা একজাতীয় সম্বন্ধে ঘটে না। কারণ এক সম্বন্ধে এবং কার্য্য অপর কোন সম্বন্ধে থাকিলেও ক্ষতি নাই। কাৰ্য্য সংযোগ দ্রব্যে সমবায় সম্বন্ধে আছে এবং কারণ দ্রব্য—আপনাতে আপনি ‘তাদাত্ম্য’ সম্বন্ধে আছে। তাদাত্ম্য—তদাত্মতা, তৎস্বরূপত্ব—এই সম্বন্ধে আপনাতে আপনি থাকিতে পারে। এই তাদাত্ম্য সম্বন্ধে কারণ কার্য্যের সহিত একত্র থাকিবে। যে সম্বন্ধে কারণ কার্যের সহিত একত্র থাকে তাহাই কারণতাবচ্ছেদক সম্বন্ধ অর্থাৎ কারণতার বিশেষক সম্বন্ধ। যে সম্বন্ধ অবচ্ছেদক হয়, কারণতা তৎকর্তৃক অবচ্ছিন্ন হয়। তবেই দেখ দ্রব্যে যে সংযোগ-কারণতা আছে, তাহা তাদাত্ম্যসম্বন্ধাবচ্ছিন্ন। স্পন্দনে যে কারণতা আছে তাহা তাদাত্ম্যসম্বন্ধাবচ্ছিন্ন নহে। কেননা স্পন্দন ও সংযোগ, দ্রব্যে সমবায় সম্বন্ধেই আছে—যেখানে সংযোগ হইলে সংযোগের উৎপত্তি, সেখানেও কাৰ্য্য- কারণের সম্বন্ধ তাদাত্ম্য নহে—সংযোগের অপর বস্তুর সহিত অবয়বসংযোগ হইলে, তাহার সহিত অবয়বীরও সংযোগ হয়। হস্ত অবয়ব, দেহ অবয়বী; হস্ত দিয়া কোন বস্তু স্পর্শ করিলে, দেহের সহিতও তাহার সংযোগ হয়। এই যে হস্তসংযোগ, তাহা দেহসংযোগের প্রতি তাদাত্ম্য সম্বন্ধে কারণ নহে; কেননা হস্তসংযোগ সমবায়সম্বন্ধে হস্ত ও স্পৃষ্ট বস্তুতে আছে—দেহসংযোগ সমবায়সম্বন্ধে, দেহ এবং ঐ হস্তস্পৃষ্ট বস্তুতে আছে; সুতরাং স্পৃষ্ট বস্তুতে—ঐ দুই সংযোগই সমবায়সম্বন্ধে আছে। প্রকারান্তরে দেখ তো, হস্তসংযোগ একার্থসমবায় সম্বন্ধে দেহে আছে, দেহসংযোগ সমবায়সম্বন্ধে দেহে আছে। একার্থসমবায় সমবায়ঘটিত সামানাধিকরণ্য। সংযোগ ও দেহ উভয়েই হস্তে সমবায়সম্বন্ধে আছে বলিয়া সংযোগ ও দেহের সামানাধিকরণ্য—একাশ্রয়ে অবস্থিতি ঘটিল, সেই অবস্থিতি সমবায়সম্বন্ধে হইল বলিয়া তাহাকে সমবায়ঘটিত সামানাধিকরণ্য বলিয়াছি। সুতরাং ঐ হস্তসংযোগে যে কারণতা আছে, তাহা সমবায় বা একার্থসমবায় – সম্বন্ধাবচ্ছিন্ন, তাদাত্ম্যসম্বন্ধাবছিন্ন নহে। সুতরাং গুণ ও কর্ম্মে সংযোগের তাদাত্ম্যসম্বন্ধাবচ্ছিন্ন কারণতা আছে, তদাশ্রয় যে গুণ—সংযোগাদি এবং কৰ্ম্ম—তদ্বৃত্তি পদার্থবিভাজক ধৰ্ম্ম গুণত্ব ও কর্ম্মত্ব—গুণ, কর্ম্মে আছে; সুতরাং উহা তদুভয়ের সাধৰ্ম্ম।। ৩০।।

উপস্কারঃ

ননু মূৰ্ত্তগুণানাং কার্য্যাণাং কারণগুণপূর্ব্বকত্বং স্বাশ্রয়গুণপূর্ব্বকত্বঞ্চোক্তং দ্রব্যকৰ্ম্মণোশ্চ ন কর্ম্ম কারণমিত্যুক্তং তথাচ কৰ্ম্মণঃ কিমপি ন কাৰ্য্যমিত্যায়াতং, তথাচাতীন্দ্রিয়াণাং সূৰ্য্যাদিগতীনাম্ অনুমানমপি দুর্লভং লিঙ্গাভাবাৎ। অতঃ সংযোগবিভাগবেগানাং কৰ্ম্মেতি সূত্রোক্তমেব স্মারয়ন্নাহ। জন্যা ইতি শেষঃ। ব্যক্ত্যভিপ্রায়েণ বহুবচনং, সংস্কারোহপ্যুপ- লক্ষণীয়ঃ।।৩০।।

.

কারণসামান্যে দ্রব্যকর্ম্মণাং কর্ম্মাকারণমুক্তম্।। ৩১।।

ইতি প্রথমাধ্যায়স্য প্রথমাহ্নিকম্।

অনুবাদ

কারণ কথন প্রকরণে কর্ম্ম,—দ্রব্য ও কর্ম্মের কারণ নহে ইহাই বলা হইয়াছে।। ৩১।।

প্রথম অধ্যায় প্রথম আহ্নিক সমাপ্ত।

ব্যাখ্যা

বিশেষ-কারণতাঘটিত সাধর্ম্ম—কর্ম্মেরও আছে, ইহা বুঝা গিয়াছে; কিন্তু কৰ্ম্মে যদি মোটেই কারণতা না থাকে, তাহা হইলে তো মূলেই ভুল হইয়া উঠে। এই আশঙ্কা অপনোদনের জন্য এই সূত্র। কৰ্ম্ম যে মোটেই কারণ নহে, তাহা নয়। তবে কিনা, কৰ্ম্ম, দ্রব্য ও কর্ম্মের কারণ নহে এইমাত্র। পূর্ব্বে যে বিশেষ কারণতাঘটিত সাধৰ্ম্ম কথিত হইয়াছে, তাহাতো দ্রব্যকারণতা বা কর্ম্মকারণতাকে লইয়া হয় নাই; সুতরাং কোন দোষ নাই।। ৩১।।

প্রথমাধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিকম্‌

প্রথম অধ্যায় প্রথম আহ্নিক সমাপ্ত।

উপস্কারঃ

ননু দ্রব্যকৰ্ম্মণী ন কৰ্ম্মকাৰ্য্যে ইতি পূৰ্ব্বমুক্তম্, সংযোগবিভাগৌ তু সংযোগ- বিভাগকার্য্যাবেব, তথাচেদানীং কর্ম্মণঃ কারণত্বাভিধানং বিরুদ্ধমিত্যত আহ।

কারণসামান্যপদেন তৎপ্রকরণমুপলক্ষ্যতে তেন কারণসামান্যাভিধান প্রকরণে দ্রব্যকৰ্ম্মণী প্রতি কর্ম্মণোহকারণত্বমুক্তং ন তু সৰ্ব্বথাপ্যকারণমেব কর্ম্মেতি বিবক্ষিতং, যেন সংযোগ- বিভাগাশ্চ কৰ্ম্মণামিতি সূত্রং ব্যাহন্যেতেতি ভাবঃ।।৩১।।

ইতি শাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে প্রথমাধ্যায়স্য প্রথমাহ্নিকম্।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *