পাঁচ
শরীরের ক্ষত সেরে যায় একদিন।
পুতলি অন্য মানুষ হয়ে বাড়ি ফেরে পিপলির কাছে। সম্ভবত ও কোনো অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে। অমেয় আর পিপলি যখন বলে, এবার শুধু রিল্যাকস করো, খাও, ঘুমোও, বেড়াও।
—বাবা কোথায়?
—এই তো…বাড়িতে…
দাঁড়ি গোঁফ কামানো, পরিচ্ছন্ন ফিটফাট নীহার ওকে দেখে কেঁদেই ফেলেন।
—ভাবিনি, ভাবিনি মা, এমন দিনও আসবে।
অমেয় সস্নেহে বলে, যাও বাবার কাছে বসো।
অমেয় ওর কাঁধে হাত রাখতেই পুতলি ছিটকে ওঠে।
—না, ছোঁবেন না আমাকে…গায়ে হাত দেবেন না।
পিপলি বলে, পুতলি!
না, কেউ আমাকে ছুঁও না। আমার…আমার…ভয় করে। সরি অমেয়দা…আমি বাবার কাছে বসছি।
—বোস, চা খাবি?
—খেতে পারি।
এসো না একটু, চা—টা নিয়ে আসবে।
একেবারে টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো সুসজ্জিত রান্নাঘরে গিয়ে পিপলি বলে, ও বদলে গেছে। হয়তো মাথাটাই…
—না পিপলি, সম্ভবত কোনো পুরুষ মানুষের ছোঁয়া ও সহ্য করতে পারছে না।
—জানি না কি হবে!
ওরা চা আনে। সোফায় দু’কোণে দু’জন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছেন।
—কি হলো, তোমরা কথা বলছ না?
—পুতলি…বলছে…
—মা নেই, তাই না দিদি?
পিপলি চায়ের ট্রে নামায়। ডাক্তার বন্ধু বলেছে, সব সোজাসুজি জবাব দেবে ওকে।
—না পুতলি।
—পনেরই আগস্ট ছিল…পনেরই…মা কবে মারা গেল?
—দিন চারেক বাদে।
—আমি কিচ্ছু জানি না।
—তুই তখন জানার অবস্থায় ছিলি না। জ্ঞানই ছিল না তোর।
—মা…কি করে?
—প্রেসার বেড়ে…একটা স্ট্রোকেই…
.
—দাদা এসেছিল?
—এসেছিল, ছিল, আমরাই তো তোদের নিয়ে…
—বাড়ি কি বন্ধ?
—একটা সিকিউরিটি কোম্পানি দেখছে।
—বাড়ি ফিরব না আমরা?
—নীহার বলেন, সে সব কথা পরে হবে পুতলি, তুই একটু আরাম কর।
—আরাম! রিল্যাকস। ডক্টর মিসেস দত্তও বললেন। কিন্তু এখন তো অক্টোবর এসে গেল। আমি তো যথেষ্ট রিল্যাকস করেছি দিদি! কিন্তু এত খরচ…এত টাকা খরচ…সব আমার জন্যে, তো ভাবলে…
—তোর বিয়ে হলে খরচ হতো না?
—বিয়ে! আমার! কিন্তু সে তো অন্য খরচ হতো। এটা অন্যরকম নয়?
অমেয় সস্নেহে বলে, একটা বড়সড় অসুখ হলে চিকিৎসার জন্যেও খরচ হতো।
—দিদি! বাড়ি কি তোমরা বেচে দিয়েছ?
—তোকে না জানিয়ে?
—ওখানে আমরা ফিরব না?
নীহার কেঁদে ফেলেন, সে নেই…শূন্য বাড়ি…ওই টাউনে আমরা মুখ দেখাব কি করে? আমার মনই তো উঠে গেছে পুতলি।
—ও। আমার জন্যে। কিন্তু কেস হবে না? ওদের ধরবে না?
পিপলি বলে, সব চেষ্টাই করা হয়েছে পুতলি। গত তিন মাস আমরা আর কিছু ভাবিনি। তোমার ভাল হয়ে ওঠা…ওখানে থাকলে এর সিকির সিকি চিকিৎসা হতো না।
—তা হতো না।
—বাবাকে আমরা রেখে আসতাম কি করে?
—দাদা আসেনি তারপর?
পিপলি আঙুল ছড়িয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, কুমার বাবাকে নিয়ে গেল, আমরা তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত…বাবা তো থাকল না ওখানে। তোমার জন্য ব্যস্ত হয়ে চলে এল। থাকলে ভাল করত।
পিপলিকে খুব অল্পবয়স্কা দেখাচ্ছে। সুন্দর ফিগার, ছাঁটা চুল, কলকাতায় ও সালোয়ার কামিজই পরে। পুতলি নিজেকে দেখছে আয়নায়। আঁচড়ের দাগ, গলা থেকে তলপেট, হাত, কত ক্ষতচিহ্ন। মাথাও কেটে কুটে গিয়েছিল। চুল নার্সিংহোমে কেটে দেয়। পুতলি বলল, বুঝেছি, তোমাদের বড্ড ধকল যাচ্ছে।
—এবার তো পুজোতেও বেরোব না।
—তা কেন করবে?
—না, পূর্বাশার বিষয়ে একটা ব্যবস্থা না করে…
পিপলির দিকে তাকাল পুতলি। বলল, তাই করো, তাই করো। কিন্তু জেনো, বাড়ি থাক বা না থাক, আমি ওই টাউনে যাব একদিন, মাথা তুলে যাব। কেন যাব না? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি? আমি যাব।
—এর পরেও?
—এর পরেও।
—সমু তোকে বিয়ে করবে এর পর?
—বিয়ে? বিয়ের কথা কে ভাবছে বাবা? বিয়ে নয়, এ তুমি বুঝবে না। আমি শুতে গেলাম দিদি, আমি খাব না কিছু।
পিপলি বলল, বদলে গেছে খুব। কিন্তু এবার একটা ব্যবস্থা করতে হয়।
—বাড়ি বেচে ওকে নিয়ে কোনো আশ্রমে চলে গেলে হয় না?
অমেয় বলল, ওর সুজাতাদিকে আসতে দিন। ওর এখন…সকলের ওপর বিশ্বাস নেই।
.
—বিশ্বাসই পাচ্ছি না কাউকে সুজাতাদি।
সমুর কথা মনে হয়?
—বিয়ে মানে তো দেহেরও সম্পর্ক। না, বিয়ের কথা আমি ভাবতে পারছি না আর।
—কি ভাবছ?
—রাগে, অবিচারে জ্বলে যাচ্ছি।
—কাউকে চিনেছিলে?
—কাউকে না। এমন অতর্কিতে ধরল, মুখে ক্লোরোফর্ম চেপে ধরল…জ্ঞান হলো তো কোথায় কোন একটা ঘরে।…বুঝলাম শরীরে কেন যন্ত্রণা এত…সন্ধ্যার পর বাতি নিভিয়ে একটা লোক ঢুকল খাবার নিয়ে। তাকে আঁচড়ে কামড়ে জাপটে ধরি, মাথায় মারল, ঘাড়ের কাছে। আবার অজ্ঞান হয়ে যাই।
—গলা শুনে চেনা মনে হলো?
—না, খুব কর্কশ গলা…শুনলামই বা কোথায়? তারপর তো…লোকটার মুখ ফালা ফালা করে দিয়েছিলাম…গাল কামড়ে ধরেছিলাম…
নিশীথ বলল, এটা ওখানে পুলিশকে জানানো যায়। যদি কোনো লোককে ধরতে পারে।
সুজাতা বলেন, তিন মাস বাদে? নর্থবেঙ্গল পালাতে পারে, বর্ডার পেরোতে পারে…গাড়ির চাকার দাগ তো জলে ধুয়ে গেল…
—’জার্নিং টু জাসটিস’ পড়লাম সুজাতাদি। রেপ কেসে সুবিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
—ওখানে আন্দোলনটা বেশ জোরদার হয়েছে। দুটো রেপ কেসের খবর এল, আসামীরা ধরাও পড়েছে।
—তুই কি করবি?
—দাদা জানিয়েছে, আমাকে রাখা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। দিল্লীতেও রেপ হয়, ওরা বাড়ি থাকে না।
—দিদি?
—দিদির ধারণায় ওরা যথাসাধ্য করেছে। এখন আমার বাবার কথা শোনা উচিত।
—কথাটা কি পুতলি?
নিশীথদা, বাড়িটা ছ’লাখে বেচেছে। চার ভাগ করলে সবাই দেড় লাখ করে পায়। বাবার ইচ্ছে, আমি আর বাবা তিন লাখ ডোনেশান করে কোনো ধর্মাশ্রমে থাকি। বাবার মন…খুব দুর্বল হয়ে গেছে। আগে এ সব বলত না। ধর্মাশ্রম কেন? আমি কোনো পাপ করেছি?
—তুমি কি চাও?
—আমি কাজ করতে চাই। অন্য কোথাও, অচেনা পরিবেশে।
—আমি তো বলছি, আমার সঙ্গে চল।
—ম্যাকলাস্কিগঞ্জে?
—নিরিবিলিতে ভাল লাগবে।
নিশীথ বলল, পালিয়ে বাঁচা যায় না পল্লবী। কাজ করো, কাজ আছে, জীবনকে ফেস করো।
—আপনি আমায় পল্লবী বললেন?
—নামটা সুন্দর, তাছাড়া পুতুল তো নও, মানুষ।
—কি কাজ পারব?
—জানার জন্যেও একটু নির্জন বাস ভালো।
—সে তো সুজাতাদির বাড়িই আছে!
—যাবে, কোনোদিন সেখানেও যাবে।
—আমিই যদি আমার ভাই—বোন—বাবার কাছে একটা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠি, তাহলে মালার বাড়িতে মালা মরে গিয়েও কি বিপদের কারণ হয়েছিল?
—সমাজ, এই সমাজ!
—দাদা যখন বলল, দিল্লীতেও রেপ হয়, নিশ্চয় ঠিক বলেছে, হয়, সর্বত্র হয়। কিন্তু আমি গেলে আবারও রেপড হব, এটা ভাবল? না সব কিছুর পর, দাদা—বউদির মতো সো—কলড উদারচিত্ত লোকদের মনেও রেপ হওয়া মেয়েদের বিষয়ে রিজার্ভেশন আছে?
—তা হয়তো নয়।
—মনে হচ্ছে, রেপড হয়ে আমি একটা অন্য গ্রহের মানুষ হয়ে গেছি। আমার সঙ্গে কিভাবে কথা বলবে; কি আচরণ করবে, তা ওরা জানে না।
—তুমি নিজেও কি খুব স্বাভাবিক হতে পারছ পল্লবী? সত্যি বলো তো ভাই।
—না নিশীথদা, পারছি না। আয়নার সামনে গেলে যাকে দেখি সে আগেকার আমি নয়। কেউ এসে ভালভাবে কথা বললেও মনে হয়, কৌতূহল বশে এসেছে, নয় করুণা দেখাচ্ছে।
—তখন?
—অযৌক্তিক রাগ হয়, নিজেও রুক্ষ হয়ে উঠি। জানেন, এক সময়ে কাঁদতে পারতাম খুব। মালার জন্যে কেঁদেছি, সরস্বতীর জন্যে কেঁদেছি, সমুর সঙ্গে ‘এক দুজেকে লিয়ে’ দেখতে গিয়ে কেঁদেছি, আমার মার জন্যে কাঁদতে পারি না। ওরা হয়তো ভাবে আমি খুব নিষ্ঠুর হয়ে গেছি।
—হয়ে গেছ, পল্লবী?
—না নিশীথদা। মার কথা ভাবলেই মনে হয় মা আমার জন্যে মরেছে, আমাকে দেখে সইতে পারেনি। ওরাই মাকে মেরেছে। কান্না শুকিয়ে গেছে আমার।
সুজাতা বললেন, কি করবে সে সিদ্ধান্তটা নাও।
—হ্যাঁ, নেব।
—একবার নির্জনে গেলে…
—জানাব। নির্জন বলো, জনারণ্য বলো, আমাকে আর কেউ তুলে নিয়ে যেতে পারবে না।
—সমুকে জানাবে না কিছু?
—একটা কথাই জানাতে পারি। ও আঘাত পাবে, বুঝবেও।
.
পুতলির চিঠি—”সমু, অবাক হোস না। আমি একদিকে শরীরে ভাল আছি, অন্যদিকে আমার ভেতরে সব ভেঙেচুরে আমি অন্য মানুষ হয়ে গেছি।
আমাকে তুই ভুলে যেতে পারবি না, তবু বলছি, আমি তোকে বিয়ে করতে পারব না। কোনো পুরুষ আমার খুব কাছে আসবে, গায়ে হাত দেবে, ভাবলেও আমি যুক্তিবুদ্ধি হারিয়ে ফেলি। হিংস্র হয়ে উঠি। ক্ষ্যাপা কুকুরকে খেতে দিতে গেলি, তোর হাত কামড়ে দেয়নি? কতগুলো ইঞ্জেকশান নিলি তুই?
বাবা আমাকে ধর্মাশ্রমে রেখে দিতে চায়, যেন আমি পাপী, প্রায়শ্চিত্ত করব। দিদি আর দাদা আমাকে কাছে রাখতে হবে ভাবলেও অস্বস্তিতে পড়ে। ওরা কেউ মন থেকে আমাকে সহজ, স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। কেউ একবারও বলল না, রেপড হয়েছিল? তাতে কি? মাথা তুলে বেঁচে দেখিয়ে দে যে, ধর্ষিতা মেয়েটির মাথা তুলে বাঁচার অধিকার আছে।
টাউনের মালবিকাদির কথা শুনেছি, দেখিনি। ওঁরা নকশাল আন্দোলনে ছিলেন, পুলিশ রেপ করেছে, জঘন্য অত্যাচার করেছে, কিন্তু জেল থেকে ওঁরা মাথা নিচু করে বেরোননি। অর্চনা গুহনিয়োগী তো এখনো লড়ে যাচ্ছেন।
তোর, আমার, আমাদের প্রজন্মটা কোনো রাজনীতিক আন্দোলন জানে না। আমরা লড়ি সিভিল রাইট নিয়ে। সে লড়াইটা লড়েছিলাম বলে বোধহয় মনে ভীষণ জেদ, মাথা তুলে বাঁচব, লড়ে বাঁচব।
এই হিসেবের মধ্যে বিয়ে আসতে পারে না এখন। ওই টাউনে পূর্বাশা থাক বা না থাক, সুজাতাদি যদি আমাদের মত মেয়েদের কথা ভেবে, তার সঙ্গে ও টাউনে আমাদের আন্দোলনগুলো যোগ করে কোনো সংগঠন গড়েন, আমি সেখানে নিশ্চয় যাব।
বিয়ে বিষয়ে বাধা একান্ত আমার মনে, নিজস্ব। এটা বুঝে আমাকে ক্ষমা করে দে। ভুলে যাস না, তোর, তোদের বন্ধুত্ব আমার চিরকাল দরকার হবে। এখন বুঝতে পারছি, তুই কেন ল’ পড়তে চেয়েছিলি। লীগ্যাল এইডের দরকার, সবচেয়ে যে কোনো লড়িয়ে সংগঠনে।
ভাল থাকিস, কেননা আমি ভাল থাকার জন্যে নিজের সঙ্গেও লড়ছি—পুতলি।”
পুতলিকে সমু—”তোর চিঠি পেলাম, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তে, নিজস্ব কাজে, আমার বিশ্বাস চিরদিন থাকবে।
তোর টাউনকে আমরা গরম রাখছি। তোর ব্যাপার আর নারী ধর্ষণ ও পাচার নিয়ে এ পর্যন্ত চৌত্রিশটা মিটিং হয়েছে টাউনে, টাউনের বাইরে। এস. পি. ঘেরাও হয়েছে তিন বার, এবার পালাই পালাই করছে। অবশ্য এ সব মিটিং ক্ষমতাশীন দল, বিরোধী দল, এমনকি বিকাশবাবুদের দলও করেছে।
টাউনে ‘পূর্বাশা’ বিক্রি (কিনল সুকোমল বসু, আর গাছপালাগুলো একরকম রেখেছে), তারপর তোদের চলে যাওয়া, স্যারের রিজাইন করা, মাসিমার মৃত্যু—এসব খুব নাড়া দিয়েছে। শুনছি মস্তান রবিও নাকি বলেছে, বেঁচে থাকলে বেটাদের ধরব। টাউনে টাঙিয়ে রেখে দেব।
বুলি সবসময়ে তোর কথা জানতে চায়। আমি শক্ত থাকতে পারছিলাম না, এখন পারছি, আরো পারব।
এখনই তো তোকে ভোলা যাবে না, কোনোদিনই যাবে? তাই ওসব কথা এখন থাক। ভাল থাকিস, ইচ্ছে হলেই চিঠি লিখিস, কেমন?—সমু।
পুঃ—বন্ধুরা সবাই এক সঙ্গে তোকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, আলাদা কাগজে।”
বন্ধুদের চিঠি—”আমরা তোমার সঙ্গে আছি, ছিলাম, থাকব—গুলতি, তাপস, অমিত, পূজা, অভ্র, মীনাক্ষী।”
.
নিশীথ আর সুজাতা চা খাচ্ছিলেন। পুতলি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে এল।
—এর মানে?
—চলে এলাম সুজাতাদি। বাবা খুব আপত্তি করছিল, বলছিল আমার দায়িত্ব নাকি বাবার! আমি ওদের বুঝিয়েই বললাম, আমার বয়স উনিশ পেরিয়ে গেছে। আমি আমার জীবন কোনো ধর্মাশ্রমে কাটাব না, পূর্ব ইতিহাস লুকিয়ে কোনো বিয়ের পিঁড়িতে বসব না। আমি আমার দায়িত্ব থেকে তোমাদের মুক্তি দিচ্ছি। কাজ করব, চাকরির জন্য চাকরি নয়। আমি নিশ্চয় তোমাদের সব জানাব।
—সহজে ছেড়ে দিলেন?
—না। তিন দিন বাবাকে বোঝাতে হয়েছে।
—কিন্তু আমি তো ভাবছিলাম…
—কি হবে জঙ্গলে পালিয়ে সুজাতাদি? এখন আমি কাজ না পাওয়া পর্যন্ত তোমাকেও থাকতে হবে। ব্যাচেলর নিশীথদা, আর গণধর্ষিতা পল্লবী নিজেরা থাকবে?
—তোর শরীর ভাল আছে?
—যথেষ্ট ভাল আছে।
—টাকা পয়সা নিয়ে বেরিয়েছিস?
—পাওনা দেড় লাখ, ছেড়ে দিলাম। পাঁচশো চেয়ে এনেছি, রেখে দাও।
পুতলি বসে পড়ল। তারপর ঈষৎ তির্যক হেসে বলল, সাহায্য করতে চেয়েছ বারবার, তোমাদের ঘাড়েই চাপলাম।
নিশীথ খুব স্বাভাবিক, আত্মস্থ গলায় বলল, এখানে অনেকে থেকে গেছে, তুমিও থাকবে। তবে সুজাতাদির প্রস্তাবটা খারাপ ছিল না। মানুষের জঙ্গলেই মানুষকে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে, সুযোগ থাকলে গাছের জঙ্গল খারাপ নয়। গাছরা তো বেইমানি করে না।
—কোন কাজে লাগবে আমাকে?
—লে চেষ্টাতেও তো সময় লাগবে।
—কত সময়?
—বলা যায় না পল্লবী। আমরা ধরে নিয়েছিলাম তুমি তোমার দাদা বা দিদির কাছে থাকতে থাকতেই…
—দাদার কথা তো বললাম! আর দিদির কথা যদি বলেন, দিদির জীবনের অভিধানমতে সে যথেষ্ট ত্যাগ করেছে। ওদের কাজকর্ম নষ্ট হয়েছে, এ ছুটিতে ছেলেমেয়ে গেল ওদের পিসির বাড়ি শিলংয়ে। আর কতদিন আমাকে নিয়ে ভাববে?
—তোমার বাবা কি করবেন?
—বাবা তো দাদার কাছে থাকতে চান, দিদিও দেখলাম অরাজী নয়। ফ্ল্যাট ছেড়ে রেখে চলে যায়, একজন থাকলে তো ভালো। কাল বাবার সঙ্গে কথা বলেছি অনেক। বলেছি, বাড়ি তোমার। তুমি বেঁচে আছ। এখনি টাকা ওদের দেবে কেন? ওদের তো অনেক আছে।
—রাজী হলেন?
—না। বললে, আমি মুক্ত হতে চাই। বলে, এ টাকা তুই নে।
পুতলি ঠোঁট কামড়াল।
—আমি কতকগুলো রূঢ় সত্যি কথা বললাম। বললাম, আমার তোমার মিলিয়ে সব টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রাখো। কলেজের টাকাও পাবে, পেনশানও পাবে। তুমি টাকা দিয়ে দাদা বা দিদির কাছেই থাকো। যত্ন পাবে, আদরও পাবে। জানেন সুজাতাদি, আমাকে ওখানে থেকে কলকাতায় আনা, নার্সিংহোমে রাখা, সব খরচ বাবা দিদিকে দিয়ে দিয়েছে।
—চিরদিনই তো তোমার বাবা—মা আত্মসম্মানী।
—বাবা—মা’র অসুখে, সমুরা, আমার বন্ধুরাই করেছে। মা’র সময়েও হয়তো…
—হ্যাঁ, ওরাই করেছে।
—বাবা—মা’র জন্যে ওদের কিছু করতে হয়নি কোনোদিন। কখনো আমরা বেড়াতে গেলে মা বাবা কত খরচ করত। চিরকাল…চিরকাল…যা করতে হলো সে তো এই প্রথম! কেন করতে হলো? এ রকম উদ্ভট বিপদের জন্যে। মা মারা যাওয়াতে বাবা আরো অসহায় হয়ে পড়ল। কিন্তু এটা তো পরের জন্যে করেনি, নিজের বাবা…ছোট বোন…
পুতলি ঠোঁট কামড়ায়, চুপ করে।
নিশীথ বলে, আজ থেকে তো এখানেই থাকছ, চলো, আমার ফ্ল্যাট দেখাই।
—আপনি ফ্ল্যাট কিনেছেন?
—কিনেছি।
—কোথায়?
—এখানেই।
—যাঃ, এখানে তো সব সরকারী ফ্ল্যাট।
—সরকারই তো বেচল।
—বেশ করেছেন।
—দেখ, দুটো ঘর, একটা বসবার আর খাবার জায়গা। ছোট্ট কিচেন, আর বাথরুম। একটা তাসের মাপের ব্যালকনিও আছে।
—কি সুন্দর রেখেছেন।
—হ্যাঁ আমি হাউসপ্রাউড ম্যান। কম ভাড়া দিতাম, কিন্তু বছর বছর রং করিয়েছি, কিচেন সাজিয়ে নিয়েছি।
—এতগুলো ফোলডিং খাট!
—এটা তো সুজাতাদিরও বাড়ি। তাছাড়া লোকজন আসে, যায়, থাকে! পছন্দ হলো?
—খুব ভালো।
—থাকো, মন খুশি করে থাকো আজকে। কাল থেকে তোমার কাজের খোঁজ করব।
—হ্যাঁ…কাল থেকেই…বাবা যে কি করবে! কোনোদিন তেমন বন্ধুবান্ধব দেখিনি…মা ছিল আর পূর্বাশা! আমার জন্যে…
—নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেছ?
—না…দোষী নয়…কিন্তু অশুচি লাগে ভাবলে…অবশ্য আমার জ্ঞান ছিল না…মানুষ এমন হয় কেন?
নিশীথ গ্যাস জ্বেলে চা বসায়। বলে, যত রেপ হয়, তার সঠিক সংখ্যা কখনো জানা যাবে না। পুলিশে এফ আই আর করার পর পুলিশ যদি আসামীর নামে চার্জশীট আনে, তাহলে সেটা রেকর্ড হয়। এটা তো ১৯৮৭। বম্বেতে ১৯৮৬ সালে একশো দুইটা ডায়েরি হয়, চার্জশীট করে ছিয়ানববই জনকে…চা—টা ভেজাই। সাজা হয় একজনের, ছাড়া পায় তিনজন, বিচারাধীন একানব্বই জন। ধরে নিতে পারো প্রমাণাভাবে অধিকাংশই ছাড়া পাবে।
—ওই সব…মেয়েদের…কি হয়?
—প্রধানত ভেসে যায়। যদি না কোনো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সাহায্য করে।
—কি ভয়ানক!
—হ্যাঁ পল্লবী, খুব ভয়ানক।
—এ রাজ্যে?
—বলতে পারব না।
সুজাতাদি বলেন, আবার চা?
—এটা সেই চা যা রুমা গছিয়ে গেল।
—চা তো ভাল করেন আপনি।
সুজাতা সগর্বে বলেন, সব ভাল করে। রান্না, বাড়ির কাজ, সব একা করে। খুব গিন্নিবান্নি ছেলে।
—রান্না করে খাইয়ে দেব।
—দেবেন।
—চাও তো বাবাকে ফোনে বলো যে সুজাতাদির সঙ্গে ম্যাকলাসকিগঞ্জ যাচ্ছ। নিশ্চিন্ত হবেন।
—বলব!
.
ম্যাকলাস্কিগঞ্জের দক্ষিণতম প্রান্তে রাস্তা যেখানে ফুরিয়ে যায়, সেখানকার শাল, সিধা, অর্জুন ও ইউক্যালিপটাসে আড়াল করা মাঝারি বাংলোটিতে চারদিনও কাটেনি, নিশীথ এসে হাজির হলো।
বলল, রাঁচি থেকে মাছ কিনে এনেছি।
—এমন হঠাৎ নিশীথ?
—কালই ফিরব আমরা।
—কেন?
—উইন, ‘ফর উইমেন ইন নীড’ বারুইপুরের কাছে মেটেলিতে একটা ইউনিট খুলছে জানতাম। ওরা পল্লবীকে প্রথমে অফিস—ওয়ার্কে নিয়ে নেবে। জেলে পচছিল দশ বছর ধরে এমন দশজন মহিলাকে রাখার জন্যে একজন বাড়ি দিয়েছেন, একজন মানে মিসেস দত্ত। এরা নন ক্রিমিনাল লুনেটিক হিসেবে জেলে ছিল, পাগল নয়।
—এদের পরিবার পরিজন?
—সে পরের কথা। অ্যাডভোকেট বরুণবাবুর কেস, জাস্টিস বোস ছিলেন বলে মুক্তি পেল। থাকুক না ওখানে। কতকগুলো ধবংস হয়ে যাওয়া মেয়েকে আবার বাঁচতে সাহায্য করবে।
—আমি পারব?
—পারতেই হবে। তুমি তো একা নও। তোমরা চারজন মেয়ে থাকবে। বলা যায় না, হয়তো এদের ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার সোস্যাল ওয়ার্কার হবে। একশো টাকা পাবে, থাকবে খাবে, নতুন সংগঠন, সংগতি বাড়লে টাকা বাড়বে।
—খুব ভাল, খুব ভাল।
—এখানে ভাল লাগেনি?
—দারুণ লেগেছে। এখানে যদি কিছু করা যেত।
—অসম্ভব! দাদারা দাঁওয়ে কিনেছে, লাভে বেচবে। ওরা আসে না, আমি সময় পেলে আসি।
—আপনি আসবেন ওখানে?
—না, আমার সেণ্টার তো ধাপায়। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়ে যেতেও পারে। বিখনি আসেনি? কোথায় গেল?
—আভি আয়া দাদা!
—মাছটা বিখনি, খুব ভাল করে বানাও।
—তব মুরগি না লাই?
—না না। কাল আমরা চলেও যাব।
—ঔর এত্তা চাল, দাল, নমক, তেল, হরদি, চিনি, চা কা হোগা দিদি?
সুজাতা বললেন, তুই নিয়ে যাবি।
—কাল হি যানেকা, কা?
—হ্যাঁ বিখনি, কাজ আছে।
—যৈসন সমঝো।
বিখনি মাছটা নিয়ে চলে গেল। নিশীথ বলল, বাড়িটা নাকি সকলের। কেউ আসে না। বিখনিরা যা থাকে সপরিবারে। একটু চাষবাস করে।
পুতলি বলল, স্বামীটা মদ খায়, বড় ছেলে চলে গেছে খালারি, ছোট ছেলে, বিখনি আর ওর মেয়ে যা পারে করে।
—ও সব বলো না। বিখনির প্রেমজ বিবাহ।
—বাড়িটা এত সুন্দর, জায়গাটা এত ভালো।
—চোট্টি নদী দেখেছ?
—আগে আরো নির্জন, আরো সুন্দর ছিল। গাছও অনেক ছিল। পলাশের জঙ্গল কি! ফুল যখন ফুটত।
—হয়তো পরে, পরে কখনো আসব।
—কাজ চেয়েছিলে, কঠিন কাজেই দিচ্ছি, তোমার চেয়ে অনেক দুর্ভাগা ওই মেয়েরা। তাদের মনে বাঁচার আশা জাগিয়ে তোলার কাজ।
—বললেন যে আপিসের কাজ?
—সবরকম কাজ পল্লবী। ওখানে তুমি পল্লবী। যাদের সঙ্গে কাজ করবে, সকলেই জীবনে নানারকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে এসেছে।
—আমার চেনা কেউ আছে?
—শুধু রুচিরাকে চেনে সুজাতাদি। পল্লবীকে প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউণ্ড বলে দেবে।
রাতে, গায়ে শাল জড়িয়ে ঘরে বসে পল্লবী শুনেছিল ‘আশ্রয়’—এর কথা।
‘উইন চালাচ্ছে, সংগঠনটা অনেক আগে মিসেস সুশীলা দত্ত গড়েছিলেন। বাড়ি ও জমি তাঁরই দান। গড়েছিলেন বলতে—সূচনা করেছিলেন। মেটেলিতে একশো বছর আগে নির্মিত ‘মহিলা জাতি বিদ্যালয়’ ওঁর প্রপিতামহের দানে ধ্যানে তৈরি, যা এখন ‘রসময় মিত্র স্মৃতি মহিলা কলেজ’। মিসেস দত্তের মেয়ে অনীতা বিয়ের পরেই মারা যায়। ওঁর স্বামী নতুন জামাই ও মেয়েকে নিয়ে কোথা থেকে ফিরছিলেন গাড়ি চালিয়ে। দুর্ঘটনায় অনীতা, ওর স্বামী দুজনেই মারা যান। জামাই বেঁচে যায় ও বছর চারেক বাদে আবার বিয়ে করে। মিসেস দত্ত মেয়েদের কল্যাণকারী কয়েকটি জায়গায় অনেক দিয়েছেন। শেষে তাঁর পিতৃপুরুষদের গ্রাম মেটেলিতে এটা বলতে গেলে গড়ে দিলেন। তাঁর দান এক লক্ষ টাকা নিয়েই কাজ শুরু হয়। তারপর রেজিস্ট্রি হলো, ফাণ্ড তোলা গেল।
—রুচিয়া মেহতা সব কিছুর ইন—চার্জ। বাঙালী মেয়ে, সোসিওলজিতে এম.এ.। স্বামীকে ডিভোর্স করে চলে এসেছে। খুব মেজাজী মেয়ে, খুব কর্মঠ। মেয়েকে ছেড়ে আসতে হয়, কাস্টডি ও পায়নি। ওর মেয়েও বড় হয়ে গেছে এখন, বিদেশে রিসার্চ করছে কি যেন একটা কঠিন বিষয়ে। ওর স্বামীও অনেক কাল অনাবাসী ভারতীয়।
—স্বাস্থ্যকর্মী মাধবী আর গৌরী দুজনেই স্বামীপরিত্যক্তা। গৌরীর একটা ছেলেও আছে। খালপাড়ার কলোনির রেপ, ভিকটিম, বাড়িতে নেয়নি আর।
—রান্নাবান্না করে বাসন্তীর মা। বাসন্তী বকফুলিয়াতে রেপড হয়, পুলিশ আসামীদের চিনত। রেপের ফলে পনের বছরে বাসন্তীর গর্ভ হয়। বাসন্তীর মা—বাবা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে আসে। তারপর বাসন্তীর সন্তান হলে মা—মেয়ে বাচ্চা নিয়ে রেলে মাথা দিতে যাচ্ছিল। স্থানীয় লোকরা উদ্ধার করে আমাদের ওখানে নিয়ে আসে। বাসন্তীর মা আর বাসন্তী রাঁধে, অন্য কাজ করে। বাসন্তীর ছেলেকে আমরা স্কুলে দিয়েছি।
—এদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, যাদের জন্য এই সেণ্টার। জেলে এ সব মেয়ের বিরুদ্ধে কোনো চার্জ থাকে না, নন—ক্রিমিনাল লুনেটিক, বা এন—সি—এল মেয়ে হিসেবে এরা জেলে যায়। এদের ওপর চলে অমানবিক নিষ্ঠুরতা। শিবশঙ্কর চক্রবর্তী এদের হয়ে লড়েছেন, লিখেছেন, ছাড়িয়েছেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো, এরা যাবে কোথায়? পরিবার ফিরে নেবে ওদের? কুড়ি বাইশ বছর এ ভাবে থেকে অনেক মেয়ে পাগল হয়ে যায়, যৎসামান্য আহার পায় বলে টি. বি. ও অন্য রোগে ভোগে। বছর বছর বেশ কিছু মরেও যায়।
—রুচিরা ও বরুণবাবুর চেষ্টায়, খুবই মানবিকতাপূর্ণ জাস্টিস বোসের সহৃদয় সাহায্যে তেমন দশটি মেয়েকে ছাড়ানো হয়েছে, যারা এখনো সুস্থ মস্তিক। এমন মেয়ে সকলকে তখনি ছাড়ানো সম্ভব, যখন তাদের কোথাও নিরাপদে রাখা যাবে। যেখানে থেকে ওরা সহজ ও স্বাভাবিক হবে, বাইরের জগতের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠবে ওদের। ওদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাবে। যাদের যাবার জায়গা নেই তাদের কোনো কাজের ট্রেনিং দেওয়া যাবে…কষ্টসাধ্য কাজ, ধাপে ধাপে করতে হবে।
—দশটি মেয়ে, দশ রকম ব্যাকগ্রাউণ্ড। পুলিশ এদের তুলে আনে, আদালতে তোলে, আদালত পাঠায় জেলে। জেলে অমানবিকতার কথা বললাম, কিন্তু আদালত পাঠালে জেল ওদের নিতে বাধ্য। আইন বলে, ওদের এক মাসের বেশি জেলে রাখা বেআইনী। কিন্তু জেলে ঢোকাবার পর ওদের কথা সবাই ভুলে যায়। ব্যস, ওরা থেকে যায়।
কি…কি…ভয়ংকর।
নিশীথ ঠোঁটে আঙুল রাখে। বাইরে গাছপালার পাতা মাড়িয়ে কি যেন ছুটে গেল।
পল্লবীর চোখ কৌতূহলে বড় বড়।
নিশীথ মাথা নেড়ে হাসল, এক সময়ে হরিণ দৌড়ত, লেপার্ড আসত, এটা একটা বুনো শুওর। কারো ক্ষেতে যাবে, কারো চিনাবাদাম বা পান আলু খুঁড়ে খাবে।
—এ সব আমার জানাই হলো না।
—জীবন তো এইরকমই। ভালো লাগার সব কিছুই পিছনে ফেলে চলে যেতে হয় কোনো কোনো লোককে।
নিশীথের গলাটা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল।
—দরজা খুলে বাইরে একটু দাঁড়াও। দেখে নাও, এমন আকাশ দেখা যায় না।
কাচের দরজার বাইরে হিমেল বাতাস, বাতাস যেন হিমগর্ভ। সকালে দেখা যাবে রাতের হিম সকালের শিশির হয়ে ঝরছে আর ঝরছে।
বিখনিরা শুকনো পাতা জ্বালাচ্ছে, কি সুন্দর অচেনা গন্ধ। আকাশ, তারাভরা আকাশ, এত নিচে নেমে এসেছে যে মনে হয়, হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়। গাছের পর গাছ, গাছের পর গাছ। কোনো রাতের পাখি ডেকে ডেকে উড়ে গেল।
এইসব ছেড়ে যেতে হবে। কোন গাছের কি নাম তা না জেনেই।