পর্যাপ্তি
যাক, আজ দূরে যাক তারা
মেঘের তরঙ্গে ভেসে মৃত-স্বপ্ন আমার প্রিয়ারা,
চলে যাক সপ্তর্ষির পারে।
মলিন তুষার আজ মেঘেদের তরঙ্গের রঙ
শীতের কালিমা আজ ছায়াপথ শ্বেতাঙ্গীর বুকে
বিদায়ের লগ্ন এই,
মেঘে মেঘে ভেসে যাক তারা।
পশ্চিমে নিভন্ত আজ আলোকের চুম্বনের জ্বালা
কালো হয়ে গেল তার ওষ্ঠাধররক্তিম আবেগ,
পীড়িত চাঁদের মুখ—বর্ণহীন কুঞ্চিত করুণ,
তারারা অস্পষ্ট আজ মৃত্যু-কুয়াশায়,
ধূসর মেঘের স্রোতে আজ
ভেসে চলে প্রাণহীন প্রিয়ার শরীর।
স্বপ্ন দেখেছিল যারা তারা আজ মেঘের পিছনে,
স্বপ্নে বেঁচেছিল যারা তারা আজ মেরুর বাতাসে,
পুরোনো নৌকার মতো ভেসে যাক বিস্মৃতির ঢেউয়ে।
ডুবে যাক তারা,
মৃত্যু পাক চিরতরে,
আমার মনের মৌন স্বপ্নদের সমাধি-গহ্বরে।
আজ হতে আমার পৃথিবী
আজ হতে আমার আকাশ
আজ হতে এ পৃথিবী কঠোর কঠিন
এথিনার মূর্তি পাবে,
আজ হতে আমার আকাশে
বজ্রপাণি ছড়াবে আপিঙ্গল সংহতির হাসি।
আজ হতে শীতল বাতাস
সমুদ্র-বীজন-স্নিগ্ধ দক্ষিণের কোমল বাতাস
ছড়াবে না স্বপ্নবীজ আর।
আজ শুধু হিমলঘু নিঃশ্বাসের নির্মম পরশে
উজ্জ্বল আকাশতলে
মধ্যাহ্নের খরসূর্য চেয়ে রবে আমার দু চোখে।
সমুদ্র মরুভূ হল আজ
নেয়াডের লীলা হল শেষ,
শুভ্র ঋজু পর্বত-শিখর।
পর্বত আমাকে দিলে আকাশের বৈরাগ্য মিতালি
পর্বত গড়েছে আজ দৃষ্টিপথে দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর,
দিয়েছে আমার স্বপ্নে রূঢ় নিষ্পেষণ।
স্বপ্নগুলি ছুঁড়ে দাও আজ
পুরাতন ভগ্ন অলংকার
রাত্রিশেষে বিলাসী-আসর
স্বপ্ন সব ঠেলে দাও প্রভাতের গণিকার মতো
পুরানো সঙ্গীরা যত
কতদিন কর্মহীন গেছে
পুরোনো বন্ধুতা যত
কত রাত্রি বিনিদ্র কেটেছে
তারাদের মুখোমুখি নিদ্রাহীন উত্তপ্ত শয্যায়।
সন্ধ্যার এ ম্লান ক্লান্তক্ষণে
বিদায়ের এসেছে সময়।
তোমাদের ভার বয়ে বয়ে
ভার বয়ে আনন্দিত মোহে
স্বপ্নছায়ে গেছে দিন, লঘুপক্ষ দিন।
আজ আমি পরিচ্ছন্ন, বৃত্তচ্যুত অতীত আমার
স্বপ্নের প্রাসাদ আজ ভেঙে দিয়ে তাই
ইন্দ্রিয়ের ইন্দ্রধনু ভেঙে
আজ আমি মাগি তাই বন্দীর বন্ধন
আজ আমি ছেড়েছি আমাকে
মেরুক্রমা তুষার-বাতাসে
পর্বতের শুভ্র দৃঢ়তায়
স্বচ্ছদীপ্ত নিষ্ঠুর আকাশে
জীবনের অনন্ত মিছিলে।
১৯৩০