পরিশেষ ও সংযুক্তি

পরিশেষ 

আইসল্যান্ডের রেকিয়াভিক শহরটা বেশ অদ্ভুত। অনেকেই অনেক অদ্ভুত শহর দেখেছে জীবনে। তাদের চোখেও জায়গাটাকে খুব একটা স্বাভাবিক বলে মনে হবে না! রেকিয়াভিক আগ্নেয় শহর-যেখানে পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উঠে আসে উত্তাপ। 

পর্যটক আছে, তবে সেই পরিমাণটা আশানুরূপ নয়। এমনকি জুলাইয়ের শুরুর দিকেও তাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। সূর্য জ্বলছে, তা-ও বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে। সকালের এক বা দুই ঘণ্টার জন্য অবশ্য বিশ্রামে গেছিল। 

বিশালাকার পর্যটক লোকটা রেকিয়াভিকের প্রায় পুরোটা এলাকা হেঁটেই পার করে ফেলেছে। বিগত এক হাজার বছরে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি, এমন এক ভাষায় কথা বলছে লোকজন। স্থানীয়রা এমন সহজভাবে প্রাচীন গাঁথাগুলো বুঝতে পারে, যেন কাগজে ছাপা খবর পড়ছে! এই দ্বীপটা যেন অবিনশ্বর, আর সেটাই ভয় পাইয়ে দিচ্ছে পর্যটককে…আবার সান্ত্বনাও দিচ্ছে যেন। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর, প্রায় সারাটা দিন সূর্য উঠে থাকে বলে ঘুমানোও সম্ভব হচ্ছে না। হোটেল রুমে বসে বসে একবার গাইডবুক আর আরেকবার বিক হাউজ পড়ে কাটিয়ে দিয়েছে রাতগুলো। কখনও কখনও সময় কাটিয়েছে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। 

ঘড়ির কাটা জানান না দিলে বুঝতেই পারত না যে নতুন একটা দিন শুরু হয়েছে। 

অগণিত ক্যান্ডির দোকানের একটিতে ঢুকে চকলেট বার কিনেছে বিশেষ এই পর্যটক। মাঝে মাঝে নাকে আসছে সালফারের পচা গন্ধ। মন চাইছে, পাতালে গিয়ে হেডিসকে তার পচা ডিমগুলো ফেলে দিতে বলে। 

পথে অনেক সুন্দরী দেখতে পেল ও পাতলা আর কিছুটা মলিন। ওয়েনসডে এই ধরনের মেয়েই পছন্দ করতেন। শ্যাডোর মাঝে মাঝেই মনে হয়, ওর মাকে কী দেখে পছন্দ করেছিলেন তিনি? দারুণ সুন্দরী ছিলেন মহিলা, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু পাতলা বা মলিন, কোনটাই ছিলেন না। 

সুন্দরীদের দিকে তাকিয়ে হাসল শ্যাডো, কেননা তারা যুবককে ওর পুরুষত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য হাসি প্রায় লেগেই আছে ওর মুখে, ভ্রমণটা দারুণ উপভোগ করছে বলে। 

শ্যাডোর উপর যে নজর রাখা হচ্ছে, সেটা কখন টের পেল বলতে পারবে না ও। মাঝে মাঝেই ঘুরে দাঁড়িয়ে লোকটার চেহারা দেখার চেষ্টা করেছে বটে, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই ধরতে পারেনি। 

একটা ছোট্ট রেস্তোরাঁয় পা রাখল শ্যাডো। স্মোকড পাফিন আর ক্লাউডবেরি দিয়ে সারল খাবার। সেই সাথে ছিল সিদ্ধ আলু আর গলা ভেজাবার জন্য কোকাকোলা। আমেরিকার চাইতে এখানকার কোক অনেক বেশি মিষ্টি বলে মনে হলো। 

বিল নিয়ে আসার পর ওয়েটার জানতে চাইল, ‘ক্ষমা করবেন, স্যার। আপনি আমেরিকান?’ 

‘হ্যাঁ।’ 

‘তাহলে স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন গ্রহণ করুন। নিজের জ্ঞানের পরিধিতে বেশ তৃপ্ত মনে হলো ওয়েটারকে। 

শ্যাডো বুঝতেই পারেনি যে আজ স্বাধীনতা দিবস, জুলাই মাসের চার তারিখ। বিলের টাকা আর কিছু টিপ টেবিলের ওপরে রেখে বাইরে চলে এলো সে। আটলান্টিক থেকে ভেসে আসছে ঠান্ডা বাতাস। কোটের বোতাম লাগাতে বাধ্য হলো ও। 

ঘাসের উপর বসে চারপাশের শহরের দিকে তাকাল শ্যাডো। ভাবল, একদিন না একদিন ওকে ঘরে ফিরতেই হবে। আর একদিন না একদিন ওকে এমন এক ঘর বানাতে হবে যেখানে ফিরে যাওয়া যায়। 

আচমকা এক বৃদ্ধকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখল সে। লোকটার পরনে ধূসর একটা আলখাল্লা, নিচের দিকটা ছেঁড়া। দেখে মনে হয়, চলার ওপরেই থাকেন তিনি। মাথায় একটা নীল হ্যাট, ওটার কানা অনেক চওড়া। একদম ওপরে সিগালের একটা পালক লাগানো আছে। বয়স্ক হিপ্পির মতো দেখাচ্ছে তাকে, ভাবল শ্যাডো। অবসর নেওয়া বন্দুক-যোদ্ধাও হতে পারে। তবে একটা জিনিস মানতেই হয়, অস্বাভাবিক লম্বা বৃদ্ধ। 

শ্যাডোর পাশে এসে বসলেন বৃদ্ধ। ওর দিকে চেয়ে একটু মাথা দোলালেন কেবল। এক চোখ জলদস্যুদের মতো কালো পট্টিতে বাঁধা, থুতনিতে সাদা দাড়ি ঝুলছে। শ্যাডোর সন্দেহ হলো, এই বুঝি লোকটি সিগারেট চেয়ে বসেন। 

‘হেননগেন গেঞ্জুর? ম্যানস্টে কি ইফতেয়ার মরি?’ বৃদ্ধ লোকটা জানতে চাইলেন। 

‘আমি দুঃখিত,’ বলল শ্যাডো। ‘আইসল্যান্ডের ভাষা জানি না।’ ভাষা শিক্ষার বইটা বের করে নিয়ে ভাঙা ভাঙা ভাবে বলল, ‘এখ টালা বারা এনস্কু। আমি শুধু ইংরেজি জানি। সেই সাথে যোগ করল, ‘আমেরিকান।’ 

বৃদ্ধ লোকটা আস্তে আস্তে মাথা দোলালেন। বললেন, ‘আমার লোকরা এখান থেকে অনেক আগে আমেরিকায় গেছে। আবার ফিরেও এসেছে। ওরা বলল, মানুষের থাকার জন্য জায়গাটা ভালো। কিন্তু দেবতাদের জন্য ভালো না। আর দেবতাদের ছাড়া ওদের খুব…একাকী লাগছিল।’ চোস্ত ইংরেজিতে বলছেন তিনি, তবে মাঝে মাঝে ভুল জায়গায় বিরতি নিচ্ছেন। তার দিকে তাকাল শ্যাডো, কাছ থেকে দেখে অনেক বেশি বয়স্ক লাগে তাকে। চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেছে। 

বৃদ্ধ বললেন, ‘আমি তোমাকে চিনি, বাছা।’

‘তাই নাকি?’ 

‘তুমি আর আমি, একই পথে হেঁটেছি। আমিও নয়দিন ধরে ঝুলেছি জীবন-বৃক্ষের ডালে। আমি নিজেকেই করেছি নিজের জন্য উৎসর্গ।’ 

‘আপনি ওডিন।’ 

চিন্তামগ্ন ভাবে নড করলেন বৃদ্ধ। ‘অনেক নামেই ডাকা হয় আমাকে। হ্যাঁ, আমি ওডিন, বোরের সন্তান।’ 

‘আমি আপনাকে মরতে দেখেছি,’ জানাল শ্যাডো। ‘আপনার মরদেহের জন্য শোক পালন করেছি। ক্ষমতার জন্য সব কিছু ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন আপনি।’ 

‘আমি ওসব করিনি। 

‘ওয়েনসডে করেছেন, আপনি ওয়েনসডে।’ 

‘ওয়েনসডে আমার এক অবতার- একথা সত্যি। কিন্তু আমি ওয়েনসডে নই।’ নাক চুলকালেন বৃদ্ধ। ‘তুমি ফিরে যাবে আমেরিকায়?’ 

‘ফিরে যাওয়ার কোন কারণ নেই।’ বলল বটে শ্যাডো, কিন্তু জানে যে কথাটা মিথ্যা। 

‘অনেক কিছুই তোমার অপেক্ষায় আছে,’ বললেন বৃদ্ধ। ‘তবে তুমি না ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।’ 

একটা সাদা প্রজাপতি উড়ে গেল ওদের সামনে দিয়ে। চুপ করে রইল শ্যাডো। এই দেব-দেবীদের গোলমাল এক জীবনের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। ঠিক করল, বিমানবন্দরে গিয়ে টিকিট পালটে নেবে। আগে কখনওই যায়নি, এমন কোনো জায়গায় যাবে এবার। 

‘আপনার জন্য একটা জিনিস রেখেছি,’ বলল শ্যাডো। হাত পকেটে ঢুকিয়ে তালুর ভেতর তুলে নিলো ওটা। এরপর বলল, ‘হাত বাড়ান।’ 

অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন বৃদ্ধ। তারপর শ্রাগ করে ডান হাত বাড়ালেন। শ্যাডো এবার নিজের হাত বাড়াল। একটা একটা করে খুলে দেখাল যে ওগুলো খালি। তারপর একদম আচমকা বৃদ্ধের হাতের উপর ফেলে দিল কাচের চোখটা। 

‘কীভাবে করলে?’ 

‘জাদু,’ শক্ত মুখ করে জবাব দিল শ্যাডো। 

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন বৃদ্ধ, হাততালি দিতে শুরু করলেন। নকল চোখটার দিকে তাকিয়ে নড করলেন একবার, ওটা যে কী তা বুঝতে পেরেছেন। তারপর কোমরের সাথে ঝুলতে থাকা একটা চামড়ার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলেন। ‘অনেক ধন্যবাদ, আমি এর যত্ন নেব।’ 

‘স্বাগতম,’ বলে উঠে দাঁড়াল শ্যাডো, হাত দিয়ে ঝাড়ল প্যান্টে লেগে থাকা ঘাস। 

‘আরেকবার,’ অ্যাসগার্ডের রাজা বাচ্চাদের মতো করে বললেন। ‘আবার দেখাও খেলা।’ 

‘আপনাদের লোভ কখনও মিটবে না,’ বলল শ্যাডো। ‘ঠিক আছে, দেখাচ্ছি। এটা এক মৃত লোক শিখিয়েছিল আমাকে।’ 

বাতাসে খামচি দিল শ্যাডো, শূন্য থেকে তুলে আনল একটা সোনার পয়সা। জাদুর ক্ষমতা নেই ওটার। কিন্তু সোনার যে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

‘এই আমার জাদু।’ পয়সাটাকে দেখাল শ্যাডো। ‘গল্পের সমাপ্তি।’ 

বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে পয়সাটা টস করল সে। বাতাসে ভাসল পয়সাটা, একদম ওপরে উঠে যেন কিছুক্ষণ জায়গায় জমে রইল ওটা। মনে হলো যেন আর কখনও নিচে নামবে না। হয়তো আসলেই নামবে না! শ্যাডো তা দেখার জন্য অপেক্ষা করল না। হাঁটতে শুরু করল ও… 

…হাঁটতে থাকল একবারও পিছু না ফিরে। 

***

সংযুক্তি 

নর্স দেবতাগণ: 

ওডিন: নর্স পুরাণ অনুসারে সর্ব প্রথম দেবতা। সর্ব পিতা নামে খ্যাত। যুদ্ধের শুরুতে তার নাম নিয়েই শুরু করতে হয় আক্রমণ। জ্ঞানের উৎপত্তি তার থেকেই। জ্ঞানের জন্য নিজের এক চোখ উৎসর্গ করেন তিনি। 

লোকি: অনর্থের দেবতা, মিথ্যার দেবতা। কখনও অন্যান্য নর্স দেবতাদের সাথে এক হয়ে, আবার কখনও তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে। 

তিন নর্ন বোন: নর্নরা তিন বোন, তারা সম্মিলিতভাবে সব দেবতা আর মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নাম-উর্ড, ভেরডান্ডি এবং স্কাল্ড। তবে তাদের নির্ধারিত ভাগ্য অখণ্ডনীয় নয়। তারা তিনজন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্বও করেন। 

ইস্টার: ইস্টারের আসল নাম ওসটারা বা ইস্টোরে। তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। তবে পৌত্তলিক অ্যাংলো-স্যাক্সনেরা যে তার সম্মানে বিশেষ দিবস উদযাপন করত, তাতে সন্দেহ নেই। ইস্টারকে ধরা হয় প্রভাত এবং বসন্তে র দেবী হিসেবে। পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সি এক রমণীর রূপ নয়ে হাজির হন তিনি। বর্তমান খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পালিত উৎসব ইস্টার-এর নাম এই দেবীর নাম থেকে এসেছে বলেই ধারণা করা হয়। 

স্লাভিক দেবতাগণ 

চেরনোযোগ: চেরনোবোগের সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। তবে খ্রিষ্টান সাহিত্যিকদের মতে, স্লাভদের দুই প্রধান দেবতা ছিলেন। চেরনোবোগ তাদের একজন, অশুভ আর অন্ধকারের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। 

বিয়েলবোগ: চেরনোবোগের ভাই। তিনিও স্লাভদের প্রধান দেবতা। তবে তার ভাই যেখানে অশুভের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেখানে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন শুভ আর আলোর। 

যরিয়া বোনেরাঃ স্লাভিক পুরাণ অনুসারে: যরিয়া বোনেরা আসলে দুজন। বড়ো বোন, ভোরের তারা, যরিয়া উত্রেনেয়া। এবং ছোটো বোন, সন্ধ্যা তারা, যরিয়া ভেচেরনেয়া। তাদের পিতা হলেন সূর্য-দেব ডাযবোগ। সকালে যরিয়া উত্রেনেয়া দরজা খুলে দিলে সূর্য-দেব বের হন আর রাতে তিনি ফিরে আসার পর দরজা বন্ধ করেন যরিয়া ভেচেরনেয়া। তাদের আরেক দায়িত্ব হলো বিনাশ আনয়নকারী কুকুর, স্মারগেল যেন শিকল দ্বারা আবদ্ধ থাকে তা নিশ্চিত করা। আমেরিকান গডস বইতে নিল গেইম্যান ছোটো বোন হিসেবে যরিয়া পলুনোচনেয়া বা রাতের তারাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। 

মিশরিয় দেবতাগণ : 

হোরাস: তার প্রতীক হলো বাজপাখি। অধিকাংশ মিশরবিদের মতে তিনিই মিশরের প্রধান দেবতা। তার মাথার মুকুট সমগ্র মিশরের ওপরে তার রাজত্বের সাক্ষ্য দেয়। 

থোথ (বইতে মি. আইবিস): থোথ মিশরিয় জাদু, জ্ঞান ও চাঁদের দেবতা। হায়ারোগ্লিফ বা ভাষার লেখ্য-রূপ তার আবিষ্কার। একই সাথে তিনি লিপিকারদের দেবতা এবং ভারসাম্যের দেবতাও বটে। মিশরিয় সংস্কৃতিতে তাকে কল্পনা হয় সারস (আইবিস) পাখির মাথা বিশিষ্ট মানুষ হিসেবে। 

আনুবিস (বইতে মি. জ্যাকুয়েল): মৃতদের রক্ষাকর্তা ও এবং তাদের পাহারাদাতা হিসেবে মিশরিয় পুরাণে খ্যাত এই দেবতা। তবে আনুবিস তার গ্রিক নাম, মিশরিয় নাম-ইনু বা আনু। শেয়াল-মুখো দেবতা হিসেবেও তিনি পরিচিত। 

বাস্ট: বাস্ট বা বাস্টেস্ট মিশরিয় যোদ্ধা দেবী। প্রাচীন মিশরিয় পুরাণ অনুসারে, তিনি ছিলেন মিশরের নিম্নভূমির রক্ষক। পরবর্তীতে মিশরিয় প্রধান দেবতা রা-এর রক্ষক রূপে আবির্ভূত হন। প্রথম প্রথম তাকে সিংহী-রূপে কল্পনা করা হলেও, পরবর্তীতে বিড়াল-রূপে চিত্রিত করা হতে থাকে। 

আইরিশ দেবতাগণ: 

ম্যাড সুইনিঃ বইয়ের ম্যাড সুইনি প্রকৃত পক্ষে দেবতা নন। তিনি আইরিশ পুরাণের জনপ্রিয় এক রূপকথার প্রাণী-লেপ্রিকন। মধ্যযুগে সুইনি নামক এক রাজাকে অভিশাপ দেন সেন্ট রোনান। এরপর থেকে তিনি উন্মাদ হয়ে যাযাবরের জীবন বেছে নেন। 

মরিগান: মরিগানেরা তিনজন। আইরিশ পুরাণ অনুসারে তারা একত্রে যুদ্ধ ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাদের নাম-মাচা, নেমিয়ান ও বাড়ব। ধারণা করা হয়, দাঁড়কাকের রূপ নিয়ে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হন। 

অন্যান্য: 

আনানসি: আফ্রিকান ফোকলোরে আনানসি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে আছেন। তাকে মাকড়সার রূপে চিত্রিত করা হয় এবং ধারণা করা হয়, বিশ্বের যাবতীয় গল্পের সূত্রপাত তার থেকেই হয়েছে। মাকড়সা হলেও তিনি মানুষের সামনে আসেন একজন বৃদ্ধ পুরুষ হিসেবে। 

হুইস্কি জ্যাক: ইনি নেটিভ আমেরিকানদের কাছে জনপ্রিয় এক কাল্পনিক চরিত্র। আলগোনকুইন ভাষীদের কাছে উইসাকেডজ্যাক নামে পরিচিত। নেটিভ আমেরিকান গাঁথা অনুসারে-তিনি মহাপ্লাবনের ব্যবস্থা করে দুনিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তারপর আবার নতুন করে তৈরি করেছেন বর্তমান পৃথিবী। 

বিলকিস: বিলকিস চরিত্রটি ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি-তিনটি প্রধান আব্রাহামিক ধর্মেই উপস্থিত। তবে ইসলাম ধর্মে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, অন্য দুই ধর্মে সেভাবে হয়নি। বাইবেল অনুসারে, বিলকিস প্রকৃতপক্ষে অর্ধ-মানবী আর অর্ধ-জীন। বিলকিসকে আমেরিকান গডসে প্রেমের দেবী হিসেবেই দেখানো হয়েছে, অন্যদের ভালোবাসা ও প্রেম তার শক্তির উৎস। 

ইফ্রিতঃ ইফ্রিত জীনের একটি বিশেষ গোত্র। মধ্য-প্রাচ্যের সাহিত্যে ইফ্রিতদের দেখানো হয়েছে প্রধানত অশুভ এবং শয়তানের অনুসারী রূপে। 

লোয়া: লোয়ারা প্রধান স্রষ্টা বন্ডি এবং মানবজাতির মাঝে সম্পর্ক স্থাপনকারী। তবে সন্ত, দেবদূত কিংবা খোদ দেবতার সাথে তাদের পার্থক্য রয়েছে। লোয়াদের মাঝে সবচেয়ে নামকরা হচ্ছেন ব্যারন সামেডি। তিনি মৃতদের লোয়া। সাধারণত লম্বা কালো হ্যাট আর কালো পোশাক পরে থাকেন। ভুডু অনুসারীদের কাছেও তিনি বিপজ্জনক একটা চরিত্র। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *