পঞ্চমাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : কর্ম্মবিচার

পঞ্চমাধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিকম্

আত্মসংযোগপ্রযত্নাভ্যাং হস্তে কৰ্ম্ম।।১॥

অনুবাদ

আত্মার সংযোগ ও প্রযত্ন হইতে হস্তে কৰ্ম্ম (হইয়া থাকে)।।১।।

ব্যাখ্যা

পরমাণু ক্ষয়োপচয়শীল বৃহতের কারণ। পরমাণুর পরস্পর সংযোগ হইতে ক্রমে এই বৃহতের উৎপত্তি হয়। সেই যে সংযোগ তাহা পরমাণুর কর্ম্মমূলক। কৰ্ম্ম অর্থে স্পন্দন। কি কারণে কৰ্ম্ম হয় তাহা না জানিলে, পরমাণুতে কর্ম্ম হইতে পারে কিনা ইহাই বুঝা যায় না। যদিই বা পরমাণুতে কর্ম্ম হয় ও তাহা কোন্ কারণবশতঃ হয়—শিষ্যগণের এই আশঙ্কা ও অজ্ঞান দূর করিবার জন্য মহর্ষি কণাদ কর্ম্মের কারণ কি কি তাহা একে একে দেখাইতেছেন। শরীর বা অবয়বে যে চেষ্টারূপ কৰ্ম্ম হয় তাহার কারণ আত্মার প্রযত্ন এবং ঐ আত্মার সহিত সংযোগ। চেষ্টার সমবায়িকারণ শরীর বা অবয়ব, যত্নবিশিষ্ট আত্মার সহিত শরীরের যে সংযোগ তাহাই অসমবায়ি কারণ এবং ঐ আত্মার যে যত্ন তাহাই নিমিত্ত-কারণ। মনে কর—শয়নের সময় হাতটী নাড়িতে ইচ্ছা হইল, তখন হাত নাড়িবার প্রবৃত্তি হইল,—এই প্রবৃত্তিই যত্ন, তাহার পর হস্তে চেষ্টা হইল, এই চেষ্টাই হাত-নাড়া; এখন দেখ যদি হাত নাড়িতে তোমার যত্ন না হইত তাহা হইলে হাতটী নাড়ান হইত না। যত্ন হইলেও তোমার আত্মার সহিত যদি পরকীয় হস্তের ন্যায় তোমার স্বকীয় হস্তেও সম্বন্ধ না থাকিত, তাহা হইলেও হাতনাড়া হইত না। এইজন্য ঐ হস্তচালনরূপ হস্ত-কর্ম্মের—হস্ত তো সমবায়ী কারণ আছেই, তদ্ভিন্ন যত্নবিশিষ্ট আত্মসংযোগ ও প্রযত্নও কারণ।। ১।।

উপস্কারঃ

কর্ম্মপরীক্ষা পঞ্চমাধ্যায়ার্থঃ। প্রযত্ননিষ্পাদ্যকর্ম্মপরীক্ষা প্রথমাহ্নিকার্থঃ। তত্রাপ্যুৎক্ষেপণপ্রকরণম্,অপ্রযত্নসিদ্ধোৎক্ষেপণপ্রকরণম্ পুণ্যহেতুকৰ্ম্মপ্রকরণম্ পুণ্যপাপোদাসীনকর্ম্মপ্রকরণঞ্চ চেষ্টাবিশেষমধিকৃত্যাহ।

সংযোগশ্চ প্রযত্নশ্চ সংযোগপ্রযত্নৌ, আত্মনঃ সংযোগপ্রযত্নৌ তাভ্যাং হস্তে সমবায়িকারণে কৰ্ম্ম তস্য চ কৰ্ম্মণঃ প্রযত্নবদাত্মসংযোগোঽসমবায়িকারণম্। প্রযত্নশ্চ নিমিত্তকারণম্, ইয়মেব চেষ্টা, প্রযত্নবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণকক্রিয়ায়াশ্চেষ্টাত্বাৎ স্বাসমবেতস্বাতিরিক্তস্পর্শবদন্য- প্রযত্নজন্যক্রিয়ায়া বা।। ১।।

.

তথা হস্তসংযোগাচ্চ মুষলে কৰ্ম্ম।। ২।।

অনুবাদ

চেষ্টাযুক্ত হস্তের সংযোগে মুষলে কৰ্ম্ম (হইয়া থাকে)।। ২।।

ব্যাখ্যা

কতিপয় ছাত্র উদূখলে ধান্য লইয়া মুষল দ্বারা তাহা কাঁড়াইতেছে—ব্রাহ্মণের শূদ্র-প্রস্তুত তণ্ডুলও তো ব্যবহার করিতে নাই; বিশেষতঃ এই কণ্ডন ব্যাপার—কত জীববধের হেতু, ইহা যদি ধর্ম্ম সংস্কার না হয়, কেবল দগ্ধোদরের পূরণের জন্যই এই কণ্ডন কার্য্য করিতে হয় তো তাহা ব্রাহ্মণের অল্প অসাত্ত্বিকতার পরিচায়ক হয় না। ফলতঃ ধান্যের এই কণ্ডন সংস্কার ইহাও ধৰ্ম্মাঙ্গ। প্রথম জলের ছিটা দিয়া তাহার পর এই কণ্ডন বা অবহনন করিতে হয়; প্রোক্ষণ, অবহনন সকলই ব্রাহ্মণের কর্তব্য; তখন সেই তণ্ডুল ধর্ম্মকার্য্যের উপযুক্ত হইবে, তদ্দ্বারা যজ্ঞ সমাধা করিয়া অবশিষ্ট অন্ন গৃহস্থ ব্রাহ্মণ ভোজন করিবেন, ইহাই বিধি। এখনও সেই উদূখল-মুষলের বাল্যক্রীড়নক স্মৃতি বৈদিক হোমে আছে; এখনও পুরোহিত মহাশয় হোমস্থানে বসিয়া যজ্ঞোডুম্বরশাখার দ্বারা ক্ষুদ্রাকারে নির্ম্মিত একটী মধ্যক্ষীণ চারি অঙ্গুল ছয় অঙ্গুলের কাষ্ঠখণ্ড বামহস্তে ল’ন—তাহাই এখনকার উদূখলরূপে নির্ম্মিত হয়,—তাহার পর যজমান মহাশয়ের সদ্য বাজারে ক্রীত আঝাড়া আবাছা তণ্ডুল হইতে দুই চারিটা তণ্ডুল সেই উদূখলে ফেলিয়া দক্ষিণহস্তে—যাহা মুষলরূপে নির্ম্মিত—আর একটী সরু কাষ্ঠ লইয়া দুই একবার সেই বামহস্তস্থ উদূখলের তণ্ডুলে তদ্দ্বারা আঘাত করেন। এই ক্রীড়াই মহর্ষি- সময়াগত পবিত্র উদূখল-মুষলের ধান্যকণ্ডনের অভিনয় মাত্র। তখন এ অভিনয়ে ধৰ্ম্মকাৰ্য্য হই না, প্রকৃত উদূখল-মুষল-হস্তে পাঠবিরত ছাত্রগণ ধান্যকণ্ডনে নিযুক্ত; মহর্ষি কণাদ সেই দিকে চাহিয়া শিষ্যগণকে অঙ্গুলিনিৰ্দ্দেশে বলিতেছেন, ঐ দেখ–ঐ তোমার সতীর্থ বৈশম্পায়নের হস্ত মুষলে দৃঢ় সংযুক্ত হইয়া উহার প্রযত্নে উৎক্ষিপ্ত হইতেছে। সেই উৎক্ষেপরূপ চেষ্টাযুক্ত হস্তের দৃঢ় সংযোগে মুষলও উৎক্ষিপ্ত হইতেছে; এই মুষলে যে উৎক্ষেপরূপ কৰ্ম্ম দেখিতেছ, উহাও ঐ উৎক্ষিপ্ত হস্ত-সংযোগ জন্য—ঐ হস্ত-সংযোগই মুষলকর্ম্মের অসমবায়ী কারণ, আত্মসংযোগ নহে। প্রযত্ন মুষলের ঐ কর্ম্মে নিমিত্ত কারণ। ঐ উৎক্ষেপণ এবং অবক্ষেপণে আর একটী নিমিত্ত কারণ আছে, তাহা গুরুত্ব; ঐ মুষলে ভার না থাকিলে এইরূপ প্রযত্নে মুষল কতদূর উৎক্ষিপ্ত হইত। ভার না থাকিলে অবক্ষেপের সময় আরও অধিক প্রযত্ন করিতে হইত; অতএব চেষ্টা ব্যতীত কৰ্ম্মে যত্নবিশিষ্ট আত্মসংযোগ ও প্রযত্ন দুইটী কারণ থাকে না।। ২।।

উপস্কারঃ

হস্তোৎক্ষেপণমুক্ত্বা তদধীনং মুষলোৎক্ষেপণমাহ

চকারেণ গুরুত্বং নিমিত্তকারণান্তরং সমুচ্চিনোতি। তথেতি তাদৃশমুৎক্ষেপণরূপমেবেত্যর্থঃ। যদ্বা তথাহস্তসংযোগাদুৎক্ষেপণবদ্ধস্তসংযোগাদিত্যর্থঃ। অত্র চ প্রযত্নবদাত্মসংযুক্তেন হস্তেন মুষলস্য সংযোগোঽসমবায়িকারণম্, মুষলং সমবায়িকারণম্, প্রযত্নগুরুত্বে নিমিত্তকারণে।।২।।

.

অভিঘাতজে মুষলাদৌ কৰ্ম্মণি ব্যতিরেকাদকারণং হস্তসংযোগঃ।।৩।

অনুবাদ

অভিঘাতোৎপন্ন মুষলাদি-কর্ম্মে ব্যভিচার হয় বলিয়া হস্ত-সংযোগ (তাহার প্রতি) কারণ নহে।।৩।।

ব্যাখ্যা

মহর্ষি বলিতেছেন, বৎস! দেখ ঐ বৈশম্পায়ন শেষবার উদূখলে মুষল অভিঘাত করিল, আর মুষলপাতন অনাবশ্যক বিবেচনায় সে হস্তের চাপ মুষলে দেয় নাই, অভিহত মুষল একটু ঠিক্রাইয়া উঠিল। ঐ অবস্থায় মুষলের যে উৎপতন-কৰ্ম্ম তাহার কারণ হস্ত-সংযোগ নহে, উদূখলে অভিঘাতই তাহার কারণ। আমরা একালের অধ্যাপক, আমরা এইরূপ কৰ্ম্ম বুঝাইতে হইলে উদূখল-মুষলের অবতারণা না করিয়া বলের উল্লেখ করিতাম। প্রথমবার হাত দিয়া ‘বল’ নিক্ষেপ করিলে, সেই বলের ক্রিয়া—নিক্ষিপ্ত অবস্থায় তির্য্যগমন—তাহা হস্ত-সংযোগজন্য, তাহার পর আবার মাটীতে পড়িবার পর যে আবার উৎপতন তাহা হস্তসংযোগজন্য নহে, পরন্তু ভূতলে অভিঘাতজন্য। হস্ত-সংযোগ তাহার কারণ নহে কেন? — ইহার উত্তর সূত্রে কথিত হইয়াছে ‘ব্যভিচার হয় বলিয়া’—অর্থাৎ অভিঘাতকালে হস্তসংযোগ না থাকিলেও তৎপরক্ষণে উৎপতন-ক্রিয়া হয়। সুতরাং উহা কারণ নহে, কারণ অব্যবহিত পূৰ্ব্বক্ষণে না থাকিলে তো কার্য্য হইতে পারে না।।৩।।

উপস্কারঃ

উদূখলাভিহতস্য মুষলস্যাকস্মাদ্যদুৎপতনং জায়তে তত্র কারণমাহ।

অত্র যদ্যপি মুষলেন উৎপততা হস্তস্য সংযোগোঽপ্যস্তি তথাপি স সংযোগোহন্যথাসিদ্ধঃ, কিন্তু উদূখলাভিঘাত এব অসমবায়িকারণম্। কুত এবমিত্যত আহ ব্যতিরেকাদিতি, প্রযত্নস্য ব্যভিচারাদিত্যর্থঃ। যদি তদা প্রযত্নঃ স্যাৎ মুষলস্যৈবাকস্মিকমুৎপতন ন ভবেৎ বিধারকেণ প্রযত্নেন মুষলস্য ধারণমেব ভবেৎ, চেষ্টাধীনং মুষলস্য পুনরুৎপতনং বা ভবেৎ ইতি ভাবঃ।।৩।।

.

তথাত্মসংযোগো হস্তকৰ্ম্মণি।। ৪।।

অনুবাদ

(মুষলের সহিত উৎপতিত) হস্তের কর্ম্মে আত্মসংযোগ কারণ নহে।। ৪।।

ব্যাখ্যা

মহর্ষি বলিতেছেন, বৎস! ঐ যে মুষল উদূখলে অভিহত হইয়া ঠিক্রাইয়া উঠিল,—ঐ সঙ্গে বৈশম্পায়নের ক্লান্ত হস্তও মুষলের সঙ্গে কিঞ্চিৎ উৎক্ষিপ্ত হইল। ঐ যে হস্তের উৎক্ষেপ-কৰ্ম্ম, আত্ম-সংযোগ উহার হেতু নহে। এই উৎক্ষেপের হেতু যে কি তাহা বলিতেছি।। ৪।।

উপস্কারঃ

মুষলেন সহোৎপততো হস্তস্য কৰ্ম্মণি কারণবিশেষমভিধাতুং প্রযত্নবদাত্মসংযোগস্যা- সমবায়িকারণত্বং নিরাকর্ত্তমাহ।

মুষলেন সহোৎপততো হস্তস্য কৰ্ম্মণি আত্মসংযোগঃ প্রযত্নবদাত্মসংযোগস্তথা অকারণমিত্যর্থঃ, অকারণমিতি পূর্ব্বসূত্রস্থং তথেত্যতিদিশ্যতে।।৪।।

.

অভিঘাতান্মুষলসংযোগাদ্ধস্তে কৰ্ম্ম।। ৫।।

অনুবাদ

অভিঘাতস্বরূপ যে (উদূখল) মুষল-সংযোগ তাহা হস্ত-কর্ম্মের প্রযোজক।। ৫।।

ব্যাখ্যা

উদূখলে মুষল যেমন দুম করিয়া পড়িল, তৎক্ষণাৎ মুষলে উৎপতন-কৰ্ম্ম হইল। সেই কৰ্ম্ম হইতে মুষলে বেগ হইল, সেই বেগ হস্ত-উৎপতনের প্রযোজক।। ৫।।

কুতস্তর্হি হস্তে তদোপতনমত আহ।

উপস্কারঃ

যথা মুষলে উৎপততি মুষলমুখস্থং লোহমুৎপততি তথা হস্তোঽপি তদোপততি। অত্রাভিঘাতশব্দেন অভিঘাতজনিতঃ সংস্কার উচ্যতে উপচারাৎ। উৎপততো মুষলস্য পটুতরেণ কৰ্ম্মণা অভিঘাতসহকৃতেন স্বাশ্রয়ে মুষলে সংস্কারো জনিতস্তৎকৃতং সংস্কারমপেক্ষ্য হস্তমুষলসংযোগাদসমবারিকারণাদ্ধস্তেঽপ্যুৎপতনম্, ন তু তদুৎপতনং প্রযত্নবদাত্মসংযোগাসম – বায়িকারণম্, অবশো হি হস্তো মুষলেন সহোৎপততীতি ভাবঃ।।৫।।

.

আত্মকৰ্ম্ম-হস্তসংযোগাচ্চ।।৬।।

অনুবাদ

শরীর বা অঙ্গে অর্থাৎ হস্তে যে কৰ্ম্ম উৎপন্ন হয়, হস্ত-সংযোগ অর্থাৎ হস্ত-মুষল-সংযোগও তাহার কারণ।। ৬।।

ব্যাখ্যা

অভিহত মুষল উৎপতিত হইলে, সেই উৎপতনবেগযুক্ত মুষলের সহিত যে হস্তসংযোগ, তাহাই সেই মুষল-সংযুক্ত হস্ত-উৎপতনের হেতু। সে উৎপতন প্রযত্নজন্য।।৬।।

উপস্কারঃ

ননু শরীরে শরীরাবয়বে বা যৎ কৰ্ম্মোৎপদ্যতে তত্র প্রযত্নবদাত্মসংযোগঃ কারণম্, প্রকৃতে কথং ন তথেত্যত আহ।

আত্মশব্দঃ শরীরাবয়বপর উপচারাৎ, অন্বয়ানুপপত্তিরেবোপচারবীজম্, তথা চাত্মনঃ শরীরাবয়বস্যাপি হস্তস্য যৎ কৰ্ম্ম তৎ হস্তমুষলসংযোগাৎ, চকারাচ্চ বেগসমুচ্চয়ঃ; হস্তকৰ্ম্মণি হস্তসংযোগস্তাবদসমবায়িকারণম্, তত্র ব্যভিচারো নাস্তি, স চ ক্বচিৎ প্রযত্নবদাত্মসংযোগঃ। কচিদ্বেগবন্মূষলাদিহস্তসংযোগো যথা বাতুলস্য শরীরাবয়বকর্ম্মেতি ভাবঃ।।৬।।

.

সংযোগাভাবে গুরুত্বাৎ পতনম্।।৭।।

অনুবাদ

সংযোগ—অর্থাৎ পতনের প্রতিবন্ধক না থাকিলেই গুরুত্ব হেতু পতন (পতন নামক কৰ্ম্ম) হইয়া থাকে।।৭।।

ব্যাখ্যা

বৃক্ষের সহিত ফলের যতদিন সংযোগ থাকে, ফলে গুরুত্ব থাকিলেও ততদিন তাহা অধোদেশে নিপতিত হয় না। কিন্তু ঐরূপ সংযোগের অপগম হইলেই ফল অধোদেশে পতিত হয়। কেননা, তখন ফলপতনের প্রতিবন্ধক নাই, অথচ উহাতে গুরুত্ব আছে। উড্ডীয়মান পক্ষী আকাশ হইতে পড়িয়া যায় না, কেননা তখন উড্ডয়ন- প্রযত্ন তাহার আছে; সেই প্রযত্নই পতনের প্রতিবন্ধক। যদি তাহার প্রযত্ন মৃত্যুমূৰ্চ্ছাদি দ্বারা অপনীত হয়, তাহা হইলে সে ভূতলে পতিত হয়। ফলতঃ গুরুত্ব পতনের অসমবায়িকারণ।। ৭।।

উপস্কারঃ

প্রযত্নানধীনকর্ম্ম প্রকরণমারভতে।

সংযোগপদেন প্রতিবন্ধকমাত্রমুপলক্ষয়তি, তেন প্রতিবন্ধকাভাবে গুরুত্বাদসমবায়ি- কারণাৎ পতনম্ অধঃসংযোগফলিকা ক্রিয়া জায়তে। তত্র গুরুত্ববতি ফলাদৌ প্রতিবন্ধকঃ সংযোগঃ, বিহঙ্গমাদৌ তু বিধারকঃ প্রযত্নঃ পতনপ্রতিবন্ধকঃ, কাণ্ডাদৌ ক্ষিপ্তে সংস্কার এব পতনপ্রতিবন্ধকঃ, এতেষামভাবে গুরুত্বাধীনং পতনমিত্যর্থঃ। অভিধ্যানাদিনা বিষাদেরন্তরীক্ষ- স্থাপনে অদৃষ্টবদাত্মসংযোগো মন্ত্রাদিরেব বা প্রতিবন্ধকস্তেষামপি সংযোগপদেন সংগ্রহঃ।।৭ ॥

.

নোদনবিশেষাভাবান্নোৰ্দ্ধং ন তির্য্যগগমনম্।। ৮।।

অনুবাদ

নোদনবিশেষের অভাবে ঊর্দ্ধগমন বা তির্য্যগ্‌গমন হয় না।।৮।।

ব্যাখ্যা

বাণ বক্র ও ঊর্দ্ধ যেমন ভাবে নিক্ষিপ্ত হয়, তাহা সেইরূপ ভাবেই বক্র গমন করে বা ঊর্দ্ধ গমন করে। বৃক্ষচ্যুত ফল কিন্তু কখনই বক্র বা ঊর্দ্ধে গমন করে না। পরন্তু এক একটী লৌহময় বাণ ফল অপেক্ষা গুরুভার। সেই গুরুভার-বিশিষ্ট বস্তুর যে বক্রগমনাদি হয়, তাহার কারণ নোদনবিশেষ। ফলে সেরূপ নোদন নাই, তাই বক্র, ঊর্দ্ধ গমনও নাই।। ৮।।

উপস্কারঃ

ননু গুরুত্বাদ্ যদি পতনং তদা লোষ্টাদেরুৎক্ষিপ্তস্য ক্বচিদূর্দ্ধং কচিচ্চ তিৰ্য্যগ্‌গমন কথম্ভবেদিত্যত আহ

গুরুত্ববতোঽপি লোষ্টকাণ্ডাদের্যদূৰ্দ্ধং তির্য্যক্ চ গমনং তন্নোদনবিশেষাৎ তীব্রতরান্নো- দনাৎ তথাচ ফলপক্ষিবাণাদৌ সংযোগপ্রযত্নসংস্কারাভাবে যৎ পতনং তত্র নোদনবিশেষো নাস্তি তেন ন তির্য্যঙ্ ন বোর্দ্ধং গমনমিতি ভাবঃ।।৮।।

.

প্রযত্নবিশেষান্নোদনবিশেষঃ।।৯।।

অনুবাদ

প্রযত্নবিশেষ হইতেই নোদনবিশেষ হইয়া থাকে।। ৯।।

ব্যাখ্যা

‘নোদনবিশেষ’ শব্দটী, এই সূত্র ও পূর্ব্বাপর সূত্রে যে ভাবে ব্যবহৃত হইয়াছে তাহাতে ইহার অর্থ বিষয়ে সন্দেহ হয়। এই সূত্রানুসারে নোদনবিশেষ অর্থে নিক্ষেপের অনুকূল হস্তাদির চেষ্টা বোধ হয়। কেননা সেইরূপ কৰ্ম্ম প্রযত্ন-জন্য। কিন্তু কৰ্ম্ম কর্ম্মের জনক নহে; ইহা ন্যায়-বৈশেষিকের মত। অতএব নোদনবিশেষ শব্দের অর্থ কায়িক চেষ্টা হইলে উহা নিক্ষেপের অনুকূল কৰ্ম্ম হইতে পারে না। এই জন্য বলিতে হয়, নোদনবিশেষ শব্দ এই সূত্রে চেষ্টাবিশেষ-অর্থে এবং অন্যান্য সূত্রে চেষ্টাবিশিষ্ট অঙ্গের সহিত নিক্ষেপণীয় বস্তুর সংযোগবিশেষ-অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। অথবা সকল সূত্রেই শৈষোক্ত অর্থ গ্রাহ্য; প্রযত্ন চেষ্টার হেতু বলিয়া পরম্পরা ক্রমে উহা চেষ্টাবিশিষ্ট অঙ্গের সহিত নিক্ষেপণীয় বস্তুর যে সংযোগ তাহারও হেতু হয়; অর্থাৎ প্রযত্নবিশেষ সংযোগবিশেষের প্রযোজক হইয়া থাকে, ইহাই এই সূত্রের অর্থ।।৯।।

.

নোদনবিশেষাদুদসনবিশেষঃ।।১০।।

অনুবাদ

দূরে নিক্ষেপ নোদনবিশেষ হইতে (হয়)।। ১০।।

ব্যাখ্যা

কোন একটী বস্তুকে ছুঁড়িয়া দূরে ফেলিতে হইলে কায়িক ব্যাপারের আবশ্যক; দূরে ঢিল ছুঁড়িতে হইলে, হাতখানি সোজা সটান করিয়া পশ্চাৎদিকে লইয়া যাইতে হয়। সেইরূপ ক্রিয়াবিশিষ্ট বা উদ্যমবিশিষ্ট হস্তের সংযোগ-বিশেষই নোদনবিশেষ। বস্তুগত দূরে নিক্ষেপের—অর্থাৎ যে বস্তু দূরে নিক্ষপ্ত হইতেছে, তাহার সেই স্পন্দন বা কর্ম্মের প্রতি নোদনবিশেষ কারণ।।১০।।

উপস্কারঃ

ননু নোদনবিশেষ এব কুত উৎপদ্যতে তত্রাহ।

তির্য্যক্ ঊর্দ্ধং দূরম্ আসন্নং বা ক্ষিপামীতীচ্ছাকারণকঃ প্রযত্নবিশেষঃ তজ্জনিতো নোদনবিশেষস্ততো গুরুত্ববতো দ্রব্যস্য লোষ্টাদেরূর্দ্ধং তির্য্যক্ চ গমনমুপপদ্যতে। উদসনং দূরোৎক্ষেপণম্।। ১০।।

.

হস্তকৰ্ম্মণা বালককৰ্ম্ম ব্যাখ্যাতম্।।১১।

অনুবাদ

হস্তকর্ম্ম দ্বারাই বালকের কর্ম্ম বিবৃত হইল।। ১১।।

ব্যাখ্যা

ঐ যে মুষলোৎপতন-নিবন্ধন মুষলসংযুক্ত হস্তের উৎপতন, ইহা যেমন কোন ব্যক্তিবিশেষের ইষ্টানিষ্ট উদ্দেশে উৎপন্ন হয় না, পুণ্যপাপের হেতুও হয় না, বালকের হস্তপদাদি সঞ্চালনও সেইরূপ জানিবে।। ১১।।

উপস্কারঃ

উদূখলাভিঘাতাৎ মুষলেন সহ হস্তে যৎ কৰ্ম্ম উৎপন্নং তত্তাবৎ প্রযত্নপূর্ব্বকং ন ভবতি, নাপি পুণ্যপাপহেতুরতস্তত্তুল্যতাং বালকস্য ক্রীড়াকরচরণাদিচালনং যত্তত্রাতিদিশতি।

বালকস্য যদ্যপি করচরণাদিচালনং প্রযত্নপূর্ব্বকমেব তথাপি হিতাহিতপ্রাপ্তিফলকং ন ভবতি, ন বা পুণ্যপাপহেতুরিত্যতিদেশার্থঃ।।১১।

.

তথা দগ্ধস্য বিস্ফোটনে।। ১২।।

অনুবাদ

দগ্ধ বস্তুর (দহ্যমান বস্তুর)বিস্ফোটনকালীন (যে কৰ্ম্ম) তাহাও তদ্রূপ।। ১২।।

ব্যাখ্যা

কোন বস্তু অগ্নি-দগ্ধ হইবার সময় ফাটিয়া যায়, এই ফাটিয়া যাওয়াই বিস্ফোটন। বিস্ফোটন হইবার পূর্ব্বে দহ্যমান বস্তুর ক্রিয়া হয়। ঐ ক্রিয়া অগ্নিসংযোগ-জন্য, সেই যে ক্রিয়া উহাও মুষলোৎপতিত হস্তের ন্যায় প্রযত্ননিরপেক্ষ এবং উহা পাপপুণ্য উদ্দেশে অনুষ্ঠিত হয় না, বা তাহার হেতুও নহে।।১২।।

উপস্কারঃ

ইদানীং প্রযত্নপূর্ব্বকেঽপি কৰ্ম্মণি যত্র ন পুণ্যপাপহেতুত্বং তত্র দারককৰ্ম্মতুল্যতা- মতিদিশন্নাহ।

আততায়িনা কেনাপ্যগারে দাহ্যমানে তত্র দগ্ধস্য পুরুষস্য বিস্ফোটে বহ্নিকৃতে জাতে সতি তস্যাততায়িনো বধানুকূলেন প্রযত্নেন হস্তাদৌ যৎ কৰ্ম্ম জনিতং তন্ন পুণ্যহেতুর্ন বা পাপহেতুঃ। যথাহুঃ— “নাততায়িবধে দোষো হন্তুর্ভবতি কশ্চন। প্রকাশং বাহপ্রকাশং বা মন্যুস্তম্মন্যুমৃচ্ছতি।” “অগ্নিদো গরদশ্চৈব শস্ত্রপাণির্ধনাপহা। ক্ষেত্রদারাপহারী চ ষড়েতে আততায়িনঃ”।। ১২।।

.

যত্নাভাবে প্রসুপ্তস্য চলনম্।।১৩।।

অনুবাদ

সুষুপ্ত ব্যক্তির বিনা যত্নেও কৰ্ম্ম হয়।।১৩।।

ব্যাখ্যা

মনুষ্যের সুষুপ্তি প্রভৃতি অচৈতন্য অবস্থায় যে দেহের আক্ষেপ, সঞ্চালন ইত্যাদি হয় তাহা যত্নসাপেক্ষ নহে; বায়ুসংযোগ ইত্যাদিই তাহার কারণ।।১৩।।

উপস্কারঃ

ইদানীং যত্নং বিনা যানি কৰ্ম্মাণি ভবস্তি তান্যাহ। প্রসুপ্তস্যেতি চৈতন্যাভাব- দশামুপলক্ষয়তি, তেন মূৰ্চ্ছিতস্য জীবতোহচৈতন্যেঽপি বায়ুকৃতচলনং দ্রষ্টব্যমত্র।।১৩।।

.

তৃণে কৰ্ম্ম বায়ুসংযোগাৎ।। ১৪।।

অনুবাদ

তৃণ অর্থাৎ বৃক্ষাদিতে যে কর্ম্ম হয় তাহার হেতু বায়ুসংযোগ।।১৪।।

ব্যাখ্যা

বৃক্ষের শাখাপ্রশাখাদির স্পন্দন সমীরণ-সংযোগেও হয়।।১৪।।

শরীরকর্ম্মাণি ব্যাখ্যায় তদিতরাণ্যাহ।

উপস্কারঃ

তৃণপদেন বৃক্ষগুল্মলতাবতানাদিকং সৰ্ব্বমুপলক্ষয়তি।। ১৪।।

.

মণিগমনং সূচ্যভিসর্পণমদৃষ্টকারণকম্।। ১৫।।

অনুবাদ

(অয়স্কান্ত প্রভৃতি) মণির (অভিমুখে লৌহাদির) গমনের এবং (মন্ত্রপূত সূচীর (তস্করাভিমুখে) অভিগমনের অদৃষ্টই কারণ।। ১৫।।

ব্যাখ্যা

অয়স্কান্ত-অভিমুখে যে লৌহ ধাবিত হয়, সেই ধাবন বা লৌহের ঐ স্পন্দনবিশেষের কারণ অদৃষ্ট ও আত্মসংযোগ। লৌহের অয়স্কান্ত-অভিমুখে যে গতি, তাহা যে ব্যক্তির ইষ্টানিষ্টহেতু হয়, তাহার অদৃষ্টই সেই গমনের কারণ। মন্ত্রপূত সূচী ত্যাগ করিলে তাহা গিয়া দূরস্থ তস্করের শরীরে বিদ্ধ হয়। এই যে সূচীগতি তস্করের পাপ বা যাহার ধন অপহৃত হইয়াছে, তাহার পুণ্যেই হইয়া থাকে। এই সূত্রে যে মণিগমন শব্দ আছে, তাহার অর্থ—তস্কর-অভিমুখে যে মন্ত্রপূত মণি বা কাংস্য প্রভৃতির গমন, আর সূচ্যভিসর্পণ অর্থে সূচী বা যে কোন লৌহময় বস্তুর যে অয়স্কান্তমণি- অভিমুখে গমন অথবা তৃণাদির যে তৃণকান্তমণি-অভিমুখে গমন তাহার হেতু অদৃষ্ট, এইরূপ ব্যাখ্যা উপস্কারসম্মত। বস্তুতঃ আমার কৃত অনুবাদ ও ব্যাখ্যাই হউক এবং উপস্কারের ব্যাখ্যাই হউক, উভয় ব্যাখ্যাই সূত্রের প্রকৃতমর্ম্মপ্রকাশক নহে, ইহা আমার বিশ্বাস। এইজন্য ব্যাখ্যান্তর প্রদান করিতেছি। কাহাকেও যদি সর্পাঘাত হয়, তাহা হইলে মণি—অর্থাৎ কোন কোন প্রস্তর মন্ত্রপূত করিয়া ছাড়িয়া দিলে, মণি সেই সৰ্পাভিমুখে ধাবিত হয়। সর্প যেখানে থাকে সেইখানে গিয়া মণি সর্পের মস্তকে জোরে বসিয়া যায়। আর সর্প সেই মন্ত্রপূত মণির আকর্ষণে সর্পাহত ব্যক্তির নিকট আনীত হয়। এই যে মণিকৰ্ম্ম অথবা বিষপ্রস্তর নামক মণিবিশেষের বিষস্থানে দৃঢ়সংযোগ হেতু যে স্পন্দন ইহার কারণ অদৃষ্ট। মন্ত্রপূত সূচীর তস্করাভিমুখে গমনের হেতুও অদৃষ্ট।। ১৫।।

উপস্কারঃ

অদৃষ্টাধীনং কৰ্ম্ম পরিণয়ন্নাহ।

মণিপদেন কাংস্যাদিকমুপলক্ষয়তি তেনাভিমন্ত্রিতং মণিকাংস্যাদি তস্করাভিমুখং যদ্ গচ্ছতি তত্র গমনে মণ্যাদি সমবায়িকারণম্, অদৃষ্টবত্তস্করাত্মমণিসংযোগোঽসমবায়িকারণম্, তস্করস্য পাপং নিমিত্তকারণম্। সূচ্যভিসর্পণমিতি সূচীপদেন লৌহমাত্রং তৃণঞ্চোপলক্ষয়তি; তথা চায়স্কান্তাভিমুখং যৎ সূচ্যাদের্গমনং তৃণকান্তাভিমুখং যৎ তৃণস্য গমনং তত্র সূচ্যাদি সমবায়িকারণম্, যস্য হিতমহিতং বা তেন তৃণসূচ্যাদিগমনেন তদদৃষ্টবদাত্মসংযোগোঽসমবায়ি- কারণম্, তদদৃষ্টমেব নিমিত্তকারণম্, এবমন্যদপ্যূহ্যম্। তদ্ যথা বহ্নেরূর্দ্ধজ্বলন বায়োস্তিৰ্য্যগমনং সর্গাদৌ পরমাণুকৰ্ম্মাদি।। ১৫।।

.

ইষাবযুগপৎসংযোগবিশেষাঃ কৰ্ম্মান্যত্বে হেতুঃ।। ১৬।।

অনুবাদ

সংযোগবিশেষের অযৌগপদ্যই শরে বিবিধ কর্ম্ম সত্তার জ্ঞাপক।। ১৬।।

ব্যাখ্যা

শরক্ষেপ করিলে শর চলিয়া গেল, সেই গমনসময়ে শর কত স্থান অতিক্রম করিয়াছে, সেই বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন-সংযোগ বিভিন্ন-কৰ্ম্ম-জন্য। এক কৰ্ম্ম নানা সংযোগের হেতু হইলে সকল সংযোগ এক সময় হইতে পারে; তাহা যখন হয় না, তখন সেই শরের কর্ম্মও এক নহে, নানা। কর্ম্মও নানা এবং সংযোগও নানা, এরূপ হইলে এক একটী কৰ্ম্ম এক একটী সংযোগের হেতু।।১৬।।

উপস্কারঃ

ননু শরবিহঙ্গমালাতচক্রাদীনামুপরমপর্য্যন্তমেকমেব কৰ্ম্ম নানা বেতি সংশয়ে নিৰ্ণয়হেতুমাহ

ইষাবিতি ষষ্ঠ্যর্থে সপ্তমী, ইদমত্রাকূতং বেগেন গচ্ছতাং শরাদীনাং কুড্যাদিসংযোগানন্তরং শরাদৌ সত্যেব গত্যুপরমো দৃশ্যতে। অত্রাশ্রয়নাশস্তাবন্ন তন্নাশকঃ, আশ্রয়স্য বিদ্যমানত্বাৎ বিরোধিগুণান্তরঞ্চ নোপলভ্যতে তেন স্বজন্যঃ সংযোগ এব কৰ্ম্মনাশক ইত্যুন্নীয়তে, স চ সংযোগচতুর্থক্ষণে জাতঃ পঞ্চমক্ষণে কৰ্ম্ম নাশয়তি। তথাহি কর্ম্মোৎপত্তিরথ বিভাগঃ অথ পূর্ব্বসংযোগনাশঃ উত্তরসংযোগঃ কৰ্ম্মনাশঃ তেনাযুগপৎসংযোগবিশেষাঃ কৰ্ম্মনানাত্বজ্ঞাপকা ইত্যর্থঃ। সংযোগবিশেষা ইতি সংযোগে বিশেষঃ স্বজন্যত্বমেব অন্যথা সংযোগমাত্রস্য কৰ্ম্মনাশকত্বে কৰ্ম্ম ক্বচিদপি ন তিষ্ঠেৎ।। ১৬।।

.

নোদনাদাদ্যমিযোঃ কর্ম্ম তৎকর্ম্মকারিতাচ্চ সংস্কারাদুত্তরং তথোত্তরঞ্চ।। ১৭।।

অনুবাদ

শরের প্রথম কর্ম্ম নোদননামক সংযোগ হইতে (উৎপন্ন হয়)। (ঐ প্রথম) কৰ্ম্মজন্য বেগনামক সংস্কারে পরবর্ত্তী কর্ম্ম উৎপন্ন হয়; এইরূপ উত্তরোত্তর (জানিবে)।।১৭।।

ব্যাখ্যা

জোরে একটী বাণ ছুড়িলে তাহাতে অনেক কৰ্ম্ম উৎপন্ন হয়। তন্মধ্যে বাণের প্রথম কৰ্ম্ম নোদন হইতে উৎপন্ন হয়, তারপর বেগনামক সংস্কার উৎপন্ন হইয়া পর পর ধারাবাহিক কর্ম্ম উৎপাদন করে। যতক্ষণ তাহার বেগ থাকে ততক্ষণই এইরূপ চলিয়া থাকে।।১৭।।

উপস্কারঃ

নোদননিষ্পাদ্যকর্ম্মপ্রকরণানন্তরং সংস্কারনিষ্পাদ্যকর্ম্মপ্রকরণমারভতে।

পুরুষ প্রযত্নেনাকৃষ্টয়া পতঞ্জিকয়া নুন্নস্যেষোরাদ্যং কর্ম্ম জায়তে তত্র নোদনমসময়ি- কারণম্, ইষুঃ সমবায়িকারণম্, প্রযত্নগুরুত্বে নিমিত্তকারণে। তেন চাদ্যেন কৰ্ম্মণা সমানাধিকরণো বেগাখ্যঃ সংস্কারো জন্যতে। স চ বেগেন গচ্ছতীতি প্রত্যক্ষসিদ্ধ এব তেন সংস্কারেণ তত্রেষৌ কৰ্ম্ম জায়তে। তত্রাসমবায়িকারণং সংস্কারঃ, সমবায়িকারণমিষুঃ, নিমিত্তকারণন্তু তীব্রো নোদনবিশেষঃ। এবঞ্চ যাবদিষুপতনমনুবর্ত্তমানেন সংস্কারেণ উত্তরোত্তরঃ কৰ্ম্মসন্তানো জায়তে স্বজন্যোত্তরসংযোগেন কৰ্ম্মণি নষ্টে সংস্কারেণ কর্ম্মান্তরজননাৎ এক এব সংস্কারঃ কৰ্ম্মসন্তানজনকঃ, ন তু কর্ম্মসন্তানবৎ সংস্কারসন্তানোঽপ্যভ্যুপগন্তুমুচিতো গৌরবাদিতি দর্শয়িতুমাহ তথোত্তরমুত্তরঞ্চেতি; তৎকর্ম্মকারিতাচ্চ সংস্কারাদিত্যেকবচনঞ্চ, ন্যায়নয়ে তু কৰ্ম্মসন্তানবৎ সংস্কারসন্তানস্বীকারে গৌরবম্, যত্ত্ব যুগপৎপ্রক্ষিপ্তশরয়োরেকস্য তীব্রো বেগোহপরস্য তু মন্দস্তত্র নোদনতীব্রত্বমন্দত্বে নিমিত্তম্।। ১৭।।

.

সংস্কারাভাবে গুরুত্বাৎ পতনম্।।১৮।।

অনুবাদ

বেগ নিবৃত্তি হইলে গুরুত্ব থাকাতে পতন (হয়)।। ১৮।।

ব্যাখ্যা

বেগনামক সংস্কার কতক্ষণ? তাহার বিনাশ হইলেই ঐ বাণ মাটীতে পড়িয়া যায়, কেননা বাণে গুরুত্ব আছে। পূৰ্ব্বেই কথিত হইয়াছে, গুরুত্ব পতনের হেতু। তবে গুরুত্ব সত্ত্বেও প্রতিবন্ধক থাকিলে পতন হয় না, প্রতিবন্ধক না থাকিলেই পতন হয়। ঐ বেগ বাণের পতনে প্রতিবন্ধক ছিল, সেই বেগ নিবৃত্ত হইলেই পতন হয়।। ১৮।।

পঞ্চম অধ্যায়ে প্রথম আহ্নিক সমাপ্ত।

উপস্কারঃ

ননু সংস্কার এক এব চেৎ কৰ্ম্মসন্তানজনকস্তদা কদাচিদপি শরপাতো ন স্যাৎ, কাজনকস্য সংস্কারস্য সত্ত্বাদিত্যত আহ।

গুরুত্বত্তাবৎ পতনকারণমনুবর্ত্তমানমেব। তচ্চ গুরুত্বং সংস্কারেণ প্রতিরুদ্ধং পতনং নাজীজনদথ প্রতিবন্ধকাভাবে তদেব গুরুত্বং পতনং করোতীত্যর্থঃ।।১৮।।

ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে পঞ্চমাধ্যায়স্য প্রথমাহ্নিকম্।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *