পঞ্চমাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : ভূমিকম্প প্রভৃতির হেতু

পঞ্চমাধ্যায়ে—দ্বিতীয়াহ্নিকম্

নোদনাভিঘাতাৎ সংযুক্তসংযোগাচ্চ পৃথিব্যাং কৰ্ম্ম।।১।।

অনুবাদ

নোদন, অভিঘাত এবং সংযুক্ত-সংযোগ পৃথিবীতে কর্ম্ম হইবার কারণ।।১।।

ব্যাখ্যা

পৃথিবী অর্থে পার্থিব বস্তু। অণু ও মৃত্তিকাপিণ্ড হইতে বৃক্ষলতা, তৃণ ইত্যাদি বস্তুতে যে স্পন্দন বা ক্রিয়া হয়, তাহার তিনটী অভিব্যক্ত কারণ—একটী নোদন অর্থাৎ চালনা—যেরূপ সংযোগে শব্দ হয় না, অথচ নড়াচড়া হয়, সেইরূপ সংযোগ; আর একটী অভিঘাত—যাহাতে শব্দ হয় এমন সংঘর্ষ, ইহাও একপ্রকার সংযোগ; তৃতীয়টী সংযুক্ত-সংযোগ। মলয়-পবনের মৃদুমন্দ সংযোগে যে, কুসুমকুন্তলা নবমালিকার ঈষৎ নৃত্য, তাহা এই নোদন-সংযোগের কার্য্য। তালবৃক্ষ হইতে তাল পড়িলে, নীচের মৃত্তিকাও একটু বসিয়া যায়। এই যে সশব্দ তাল-ভূতল-সংযোগ ইহা অভিঘাত। এই অভিঘাত-ফলে মাটীর যে স্পন্দন, তাহারই ফল বসিয়া যাওয়া; ইহা মৃত্তিকার অংশসমূহের নিবিড়-সংযোগ-মাত্র। অশ্বের ক্রিয়া হইতে যে রথের স্পন্দন, তাহা এবং তালকম্পিত ভূতলের একাংশে অবস্থিত তৃণাদির যে স্পন্দন, তাহা সংযুক্তসংযোগের ফল। মহর্ষি এই যে ‘সংযুক্তসংযোগাৎ’ বলিয়াছেন, ইহার আরও একটা অর্থ আছে, তাহা আমরা টীকাকারের কথায় অবগত না হইলেও মহর্ষির মিত-উপদেশে বুঝিতে পারি। অয়স্কান্ত প্রভৃতির যে তৈজস অংশ তাহার অস্পষ্ট রশ্মি আছে, সেই রশ্মিই অয়স্কান্তের সংযুক্ত, তাহার সংযোগ সংযুক্ত-সংযোগ। ইহা লৌহে থাকিলে, বা তৃণকান্ত মণির রশ্মি-সংযোগ তৃণে থাকিলে লৌহ বা তৃণ স্পন্দিত হয়। স্পন্দনের পর বেগ হয়, বেগ ও ক্রমাধিক সংযুক্তসংযোগের ফলে লৌহাদি অয়স্কান্ত অভিমুখে নীত হয়। যদি বল, সংযুক্তসংযোগ স্পন্দনের কারণ হইলে অয়স্কান্ত লৌহের কেন বৃক্ষ-লতাদিরও স্পন্দন হেতু হয় না কেন? তাহার উত্তর করিতে হইলে, অপর কথা তুলিতে হয়, তাহাই তুলিতেছি—

সংস্কারের উল্লেখ উদ্দেশ সূত্রে নাই। কিন্তু এই পঞ্চমাধ্যায়ের প্রথমাহ্নিকে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ সূত্রে সংস্কারের কথা আছে, সংস্কারের উল্লেখ পরেও আছে। যে কয়টী গুণ দৃষ্ট নহে—অ-দৃষ্ট, যথা গুরুত্ব, সংস্কার, ধর্ম্ম এবং অধর্ম্ম, সেগুলি উদ্দেশসূত্রে নির্দিষ্ট হয় নাই, কেননা তাহা কার্য্য দ্বারা স্থিরীকরণীয়। শব্দ প্রত্যক্ষগোচর হইলেও তাহা দ্রব্য কি কৰ্ম্ম অথবা গুণ তাহা বিচার-সাপেক্ষ। এইজন্য শব্দের উল্লেখ উদ্দেশসূত্রে নাই। স্নেহ ও দ্রবত্ব স্পর্শবিশেষ কি স্বতন্ত্র গুণ, এ বিষয়ও বিচার করিতে হয়। এইজন্য উদ্দেশ্যসূত্রে সেগুলি গৃহীত হয় নাই। কিন্তু অন্যান্য স্থানে তাহা গৃহীত হইয়াছে। তাহা দেখিয়াই বুঝা যায়, গুরুত্ব প্রভৃতি কয়টী ধৰ্ম্মও গুণ; ইহা মহর্ষির সম্মত। অ-দৃষ্ট গুণের মধ্যে সংস্কার একটী। সংস্কার তিন প্রকার— বেগ, স্থিতি-স্থাপক ও ভাবনা। ইহাদিগের দ্বারা সংস্কৃত—অর্থাৎ আধিক্যযুক্ত হওয়া যায় বলিয়া, ঐ গুলির নাম সংস্কার। আমি একটী পদার্থ ভাবিতেছি, যখন তাহা আমার মনে আসে নাই, তখন আমি ন্যূন—কিন্তু যখন মনে হইবে, তখনও আমি সে-ই। কিন্তু আমার একটু আধিক্য হইবে, একটা জ্ঞান বাড়িয়া যাইবে। নিস্পন্দ নিশ্চল অণ্ডাল পড়িয়া আছে, তাহাতে যেমন একটু নোদন সম্বন্ধ হইল, অমনি তাহার পূর্ব্বাপেক্ষা আধিক্য হইল, নিৰ্জ্জীব অণ্ডাল গড়াইতে গড়াইতে কতদূর গেল। শাখাকে আকর্ষণ করিয়া স্থানভ্রষ্ট করিলে হতমান শাখা যেমন তোমার হস্তচ্যুত হইল, অমনি সে পূর্ব্ববৎ স্বস্থানস্থ। অচেতন শাখায় এই যে দৃঢ়তা, ইহা তাহার ঘটপটাদি অপেক্ষা আধিক্যের পরিচায়ক। এই যে সংস্কার ইহা ফুটাইতে হইলে তাহার সহায় চাই। এই সহায় সৰ্ব্বত্র সমান নহে, কোথাও বা একটা বা দুইটা নিৰ্দ্দিষ্ট আছে, কোথাও বা নাই। মনে কর, তুমি একটী বিষয় শিক্ষা করিয়াছ। কোন বিষয় কেহ জিজ্ঞাসা করিলে শিক্ষানুরূপ জ্ঞানানুসারে তৎক্ষণাৎ তুমি তাহার উত্তর করিতে পার। আবার কোন বিষয় বা একটু ভাবিয়া উত্তর করিতে পার; কোন বিষয় বা তোমার মনে হইল না, উত্তর দিতে পারিলে না। এ স্থলে তোমার শিক্ষালব্ধ সংস্কার ফুটাইবার বস্তু আছে কিন্তু তাহা পৃথক্ পৃথক্। কোন সংস্কার অপরের প্রশ্ন মাত্রেই স্ফুটিত বা উদ্‌বুদ্ধ; কোন সংস্কার মনোযোগে উদ্‌বুদ্ধ, কোন সংস্কার বা তখন উদ্বুদ্ধই হয় নাই। কিন্তু কোন্ সংস্কারের উদ্বোধক যে কোটী তাহা স্থির করা যায় না। বেগনামক সংস্কারের পক্ষেও ঐরূপ উদ্বোধক বা উদ্দীপক স্থির করা যায় না; একটী ভারী পদার্থে নোদন করিলে, একটু নড়িল কিন্তু তাহার বেগ হইল না; বলপূর্ব্বক নোদন করিলে, তাহার স্পন্দন হইল, বেগও হইল। এই বেগনামক সংস্কার ফুটাইবার মত উপকরণ না হইলে—অর্থাৎ উদ্দীপক না হইলে, অল্পক্ষণের মধ্যে বহু সংযোগ-হেতু কর্ম্ম পরস্পর দ্বারা বেগও প্রকাশ পায় না। একজাতীয় উদ্দীপক সৰ্ব্বত্র বেগের উপযোগী নহে। কোন্ বস্তু কোন্ বস্তুর বেগে উদ্দীপক, তাহা ফল দেখিয়া স্থির করিতে হয়। আমরা বুঝি, অয়স্কান্ত মণি লৌহের বেগোদ্দীপক; এই উদ্দীপক সাহায্যে প্রথমে ঈষৎ স্পন্দন, তৎপরে সেই স্পন্দন হইতেই লৌহের বেগ ও ধারাবাহিক স্পন্দন হইয়া থাকে। যেমন একবিধ নোদন সৰ্ব্ববিধ বস্তুর স্পন্দন-হেতু হয় না, সেইরূপ একবিধ সংযুক্ত-সংযোগ লৌহের ন্যায় সর্ব্বত্র বেগোদ্দীপক না হওয়ায় স্পন্দনহেতু হয় না। তৃণকান্ত মণিতেও এই নিয়ম জানিবে। অয়স্কান্তের তৈজস রশ্মি যে লৌহে সংযুক্ত না হইবে, সে লৌহে বেগ ফুটিবে না। টীকাকারেরা বলেন, বেগ প্রত্যক্ষসিদ্ধ। আমি বলি স্পন্দন প্ৰত্যক্ষসিদ্ধ; ঐযে সত্বর বহুসংযোগ-হেতু স্পন্দন, উহা প্রত্যক্ষসিদ্ধ; উহার দ্বারা বেগ অনুমান করিতে হয়। সেই কার্য্যগম্য বেগের অস্তিত্ব আত্মার অনুদ্ধ সংস্কারের ন্যায় সুষুপ্ত বিরহ-দুঃখভোগ বা সুষুপ্ত সুখসম্ভোগের ন্যায় অস্ফুট; যেন নাস্তিত্বে পৰ্যবসিত। কিন্তু যেই সংস্কারের উদ্বোধ, সেই বিরহ-দুঃখ-ভোগের উদ্দীপনা; যেই সুখসম্ভোগের উন্মেষণ, অমনই তাহা স্মৃতি-মূর্ত্তিতে পরিস্ফুট হয়; সেইরূপ নিশ্চল জড়পিণ্ডে সুষুপ্ত বেগ যেমন উদ্দীপক-যোগে সমুন্মীলিত হয়, অমনই তাহা দ্রুত স্পন্দন রূপে পরিস্ফুট হয়। এই গুরুত্ব প্রভৃতির যে অদৃষ্ট একটী সাধারণ সংজ্ঞা দিয়াছি, তাহার হেতু এই যে তাহা হইল ‘মণিগমনং সূচ্যভিসর্পণমদৃষ্টকারণম্’ (৫ম অঃ ১ আঃ ১৫শ) সূত্রের অয়স্কান্তমণি অভিমুখে গমন ও তস্করাভিমুখে মন্ত্রপূত কাংস্যাদির গমন, অদৃষ্ট কারণ;—অর্থাৎ বেগজন্য এরূপ অর্থও করা যাইবে। ফলতঃ গুরুত্ব প্রভৃতির অদৃষ্ট নাম হউক, বা না হউক, তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। বেগ প্রত্যক্ষ হউক বা না হউক, তাহাতেও ক্ষতি নাই; কেবল তাহা যে বিশেষ বিশেষ উদ্দীপক-সাহায্যে অভিব্যক্ত বা উৎপন্ন হয়, এইটুকু মানিলেই হইল।। ১।।

উপস্কারঃ

নোদনাদিনিষ্পাদ্যকর্ম্মপরীক্ষাপ্রকরণম্। তত্রাহ।

নোদনং সংযোগবিশেষঃ, যেন সংযোগেন জনিতং কৰ্ম্ম সংযোগিনোঃ পরস্পরং বিভাগহেতুন ভবতি, যঃ সংযোগঃ শব্দনিমিত্তকারণং ন ভবতি বা। যঃ সংযোগঃ শব্দনিমিত্তকারণং ভবতি যজ্জনিতং কৰ্ম্ম সংযোগিনোঃ পরস্পরবিভাগহেতুশ্চ ভবতি। স সংযোগবিশেষোঽভিঘাতঃ। তাভ্যামপি প্রত্যেকং কৰ্ম্ম জন্যতে, পঙ্কাখ্যায়াং পৃথিব্যাঞ্চরণেন নোদনাৎ চরণাভিঘাতাচ্চ কৰ্ম্ম জায়তে। তত্র পঙ্কঃ সমবায়িকারণম্, নোদনাভিঘাতৌ যথাযথমসমবায়িকারণম্, গুরুত্ববেগপ্রযত্না যথাসম্ভবং নিমিত্তকারণম্। সংযুক্তসংযোগাদিতি নোদনাদভিঘাতাদ্বা পঙ্কে কৰ্ম্ম তৎপঙ্কস্থিতে ঘটাদাবপি তৎসমকালমেব কৰ্ম্মদর্শনাৎ।।১।।

.

তদবিশেষেণাদৃষ্টকারিতম্।।২।।

অনুবাদ

তাহা বিশেষ-সম্পৃক্ত বা বিশেষরূপে হইলে, অদৃষ্ট জন্য (হয়)।।২।।

ব্যাখ্যা

এই নোদনাদিজন্য পৃথিবীর কর্ম্ম যদি ব্যক্তিবিশেষের ইষ্টানিষ্ট-হেতু হয়, তাহা হইলে অদৃষ্টও তাহার একটা কারণ হইবে। এবং যদি ব্যক্তিবিশেষের ইষ্টানিষ্ট-হেতু পৃথিবীস্পন্দন হয়, অথচ তাহা নোদনাদিজন্য নহে ইহা স্থিরীকৃত হয়, তাহা হইলে তাহাকে অদৃষ্টজন্যই বলিবে। অথবা বিশেষরূপ যে পৃথিবীর স্পন্দন—অর্থাৎ ভূমিকম্প উহা অ-দৃষ্ট অপ্রত্যক্ষ নোদনাদি হইতে উৎপন্ন।। ২।।

উপস্কারঃ

ননু ভূকম্পাদৌ নোদনাভিঘাতাবন্তরেণ জায়মানে কিমসমবায়িকারণমত আহ।

তদিতি পৃথিবীকৰ্ম্ম পরামৃশতি। পৃথিব্যামেব কৰ্ম্ম যদি বিশেষেণ আশয়েন ভবতি তদাদৃষ্টকারিতম্, তেন ভূকম্পেন যস্য দুঃখং সুখং বা ভবতি অদৃষ্টবত্তদাত্মসংযোগস্তত্রাসমবায়ি- কারণম্, ভূঃ সমবায়িকারণম্, অদৃষ্টং নিমিত্তকারণম্। যদ্বা তদা নোদনাভিঘাতৌ পরামৃশতি বিশেষো ব্যতিরেকঃ তথা চ নোদনাভিঘাতব্যতিরেকেণ যৎ পৃথিব্যাং কৰ্ম্ম তদদৃষ্ট- কারিতমিত্যর্থঃ।।২।

.

অপাং সংযোগাভাবে গুরুত্বাৎ পতনম্।। ৩।।

অনুবাদ

সংযোগের অভাব হইলে গুরুত্বপ্রযুক্ত জল পতন হয়।।৩।।

ব্যাখ্যা

জল গুরুত্বযুক্ত, মেঘের অথবা বায়ুর কিংবা তেজের সহিত দৃঢ় সংযোগ থাকায় তাহা পতিত হয় নাই। সেই সংযোগ তাপবলে শিথিল হইলেই সেই জল পতিত হয়,—অর্থাৎ বৃষ্টি হয়, সংযোগের অর্থাৎ বিধারক সংযোগের অভাব হইলে জল নিম্নে পতিত হয়, নিম্নপতনের হেতু গুরুত্ব। গুরুত্বসত্ত্বেও সংযোগবিশেষ পতনের প্রতিবন্ধক হয়, বৃক্ষের ফল প্রভৃতিতে ইহা দেখিতে পাওয়া যায়। ঐযে শাখার সহিত ফলের সংযোগ, উহা যতক্ষণ বিনষ্ট না হয়, ততক্ষণ ফলে গুরুত্বসত্ত্বেও উহা পতিত হয় না। সংযোগ বিনষ্ট হইলেই পতিত হয়। সেইরূপ ঊর্দ্ধগত জলসমষ্টি এমন সংযোগে সংযুক্ত যে, তাহা থাকিতে জল নিম্নে পতিত হয় না; সেই সংযোগ নষ্ট হইলেই জল পতিত হয়। কিন্তু সেই যে বিধারক-সংযোগ, তাহা জলসমষ্টির সহিত কোন্ দ্রব্যের সংযোগ? মহর্ষি তো কেবল সংযোগই বলিয়াছেন। টীকাকারেরা বলেন, মেঘের সহিত সংযোগ—কিন্তু এ মেঘ কি? ইহা জলসমষ্টি ব্যতীত অপর কোন দ্রব্য কি? কালিদাস বলিয়াছেন, ‘ধূমজ্যোতিঃসলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ’ ‘মেঘঃ’ তেজ, বায়ু, জল ও ধূমাংশ কিঞ্চিৎ পার্থিব পদার্থ সম্মিলিত হইয়া মেঘ হয়, ঠিক উহাই মেঘ কি না? আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ তাহা মিলাইয়া দেখুন। অথবা বায়ুর সহিত কিংবা তেজের সহিত জলের যে সংযোগ থাকে, তাহাই সূত্রস্থ সংযোগ শব্দের অর্থ; সেই সংযোগ কোনরূপ বিরুদ্ধ- সংযোগে বিদূরিত হইলেই বৃষ্টি হয়। আমি স্বয়ং এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না করিয়া মহর্ষি-সূত্রের যেমন যেমন অর্থ হইতে পারে, তাহা প্রকাশ করিলাম। বৈজ্ঞানিকগণ, মিলাইয়া তত্ত্ব স্থির করুন। অনেকস্থলেই বৈজ্ঞানিকগণের এবিষয়ে শ্রম করা উচিত। আমরা সংক্ষিপ্ত ঋষিবাক্য যথাশক্তি পরিস্ফুট করিতে চেষ্টা করিতেছি।। ৩।।

উপস্কারঃ

ইদানীং দ্রবদ্রব্যসমবেতকর্ম্মপরীক্ষাপ্রকরণম্, তত্ৰাহ।

অপাং যৎ পতনং বর্ষণরূপং তদ্‌গুরুত্বাসমবায়িকারণকম্, তৎসংযোগস্য মেঘসংযোগ- স্যাভাবে সতি ভবতি তেন সংযোগাভাবস্তন্নিমিত্তকারণমিত্যর্থঃ।।৩।।

.

দ্রবত্বাৎ স্যন্দনম্।।৪।।

অনুবাদ

দ্রবত্ববশতঃ স্যন্দন হয়। ৪।

ব্যাখ্যা

বিন্দু বিন্দু নিপতিত জল পরস্পর সংযোগে একাকার হইলে তাহার যে স্যন্দন- গড়াইয়া যাওয়া, তাহার কারণ দ্রবত্ব।। ৪।

উপস্কারঃ

তেষামেব বৃষ্টিবিন্দুনামন্যোন্যসংযোগজনকং কৰ্ম্ম কথমত আহ।

ক্ষিতৌ পতিতানামপাং বিন্দুনাং পরস্পরং সংযোগেন মহজ্জলাবয়বিস্রোতোরূপং যজ্জায়তে তস্য যৎ স্যন্দনং দূরসংসরণং তৎ দ্রবত্বাদসমবায়িকারণাদুৎপদ্যতে গুরুত্বান্নিমিত্ত কারণাদঙ্গু সমবায়িকারণেষু।।৪।।

.

নাড্যো বায়ুসংযোগাদারোহণম্।।৫।

অনুবাদ

সূর্য্যরশ্মিসমূহ বায়ু-সংযোগ সাহায্যে (সেই জলকে) ঊর্দ্ধে আরোহণ (করাইয়া থাকে)।। ৫।।

ব্যাখ্যা

টীকাকার বলেন সূর্য্যরশ্মিসমূহ বায়ু-সংযুক্ত হইয়া জল ঊর্দ্ধে আকর্ষণ করিয়া লয়। সূত্রার্থে ইহাও বুঝা যায় যে, সূর্যকিরণ জলকে ঊর্দ্ধে আকর্ষণ করে। জলের ঊর্দ্ধগমনে বায়ুসংযোগও একটী কারণ। জলকে ঊর্দ্ধে আকর্ষণ করিবার যোগ্য করিতে হইলে, জলকে যে অবস্থায় লইয়া যাইতে হয়, সূর্যকিরণ জলকে সেই অবস্থা প্ৰদান করে এবং বায়ুসংযোগ, তদবস্থাপ্রাপ্ত জলের ঊর্দ্ধগমনে সহায় হয়। জল সূর্যকিরণের তাপে বাষ্পাকার ধারণ করে এবং বায়ুমার্গে তাহা ঊর্দ্ধে উত্থিত হয়।

উপস্কার লিখিয়াছেন, নাড্যবায়ুসংযোগাৎ এরূপ পাঠও কোন কোন পুস্তকে আছে। তাহার তিনি এক অর্থও লিখিয়াছেন। ফলতঃ আমরা এই পাঠকে সমীচীন মনে করি। পরবর্ত্তী টীকাকারেরা এই পাঠের গূঢ় অর্থ বুঝিতে না পারিয়া নাড্যো বায়ুসংযোগাৎ এইরূপ পাঠ কল্পনা করিয়াছেন। ইহাই অনুমান হয়। নাড্যবায়ুসংযোগাৎ ইহার অর্থ—রশ্মি বা তেজঃসংস্পর্শে জল ঊর্ধ্বারোহণযোগ্য অর্থাৎ বাষ্প হয় এবং অ-বায়ুসংযোগ অর্থাৎ বায়ুসংযোগের অভাবেও বাষ্প হয়।।৫।।

উপস্কারঃ

ননু যদি ভূমিষ্ঠানামপাম্‌ ঊর্দ্ধং গমনং ভবতি তদা গুরুত্বাৎ পতনবর্ষণং সম্ভাব্যতে তদেব তু কুত ইত্যত আহ

কারয়ন্তীতি শেষঃ। যদপামূৰ্দ্ধমারোহণং তৎ নাড্যঃ সূর্য্যরশ্ময়ো বায়ুসংযোগাৎ কারয়ন্তি, গ্রীষ্মে বায়ুভিহতাঃ সূর্য্যরশ্ময় এব আরোহয়ন্ত্যপ ইত্যর্থঃ। ক্বচিৎ পাঠো নাড্যবায়ুসংযোগাদিতি স চ নাড্যো নাড়ীসম্বন্ধী যো বায়ুসংযোগ ইত্যুপপাদনীয়ঃ।।৫।।

.

নোদনাপীড়নাৎ সংযুক্তসংযোগাচ্চ।।৬।।

অনুবাদ

(জলের ঊর্দ্ধ আরোহণে) নোদন, আপীড়ন এবং সংযুক্ত-সংযোগ, হেতু।। ৬।।

ব্যাখ্যা

সূর্যকিরণের বা তেজের নিঃশব্দ-সংযোগ নোদন, প্রবলভাবে আক্রমণ এবং সংযুক্তের সহিত সংযোগ, এই কয়টী কারণে জল বাষ্প হয়। সূর্যকিরণ বা তেজঃ বলিলে কেহ যেন আলোক না বুঝেন। প্রকাশকত্ব এবং উষ্ণস্পর্শ অর্থাৎ তাপ তেজের ধৰ্ম্ম; কোন তেজে প্রকাশকত্ব এবং তাপ দুইই আছে। কোন তেজে দুইই থাকিলেও একটী বুঝিতে পারা যায়, অপরটী বুঝা যায় না। যাহা বুঝিতে পারা যায়, তাহার বিশেষ সংজ্ঞা ‘উদ্ভূত’। প্রকাশকত্ব স্পষ্ট না থাকিলেও কেবল তাপযুক্ত বস্তুও তেজ। সেই তেজের ধীর-সংযোগেও জল বাষ্পরূপে পরিণত হয়। সচরাচর জলে সূর্যরশ্মি নিপতিত হইয়া যে বাষ্প সৃষ্টি করে, তাহা এই নোদনের ফল। কখন বা অগ্নির উত্তাপে জল ‘টগ্’ ফুটিতে থাকে। এই যে তেজঃ-সংযোগ ইহা আপীড়ন, এই আপীড়নেও জল বাষ্পাকার ধারণ করে। মাটীতে জল ফেলিলে, যে জল শুষিয়া যায়, তাহা হইতেও বাষ্প হয়। সেই বাষ্প সংযুক্ত-সংযোগের ফল। এখানে তেজঃসংযুক্ত মৃত্তিকা—তাহার সংযোগ জলে হইলে সেই জল বাষ্প হয়। ফলে এই হইল, যে সংযোগের ফলে জল দৃশ্য, স্পৃশ্য হইয়াছে, সেই সংযোগ—অর্থাৎ স্থূল-জলের আরম্ভক সংযোগ, যদ্বারা বিনষ্ট হয়—তাহাই বাষ্পাকার প্রাপ্তির হেতু। সুতরাং বায়ুর অভাব হইলেও এই তেজের আপীড়ন উপস্থিত হয়, তাহাতেও জল বাষ্প হইয়া যায়।

অথবা নোদন—ছুঁড়িয়া দেওয়া, আপীড়ন—আছাড়ান এবং সংযুক্ত-সংযোগ, তেজঃসংযুক্ত ভূমিতে বা শিথিল-সংযোগ-যুক্ত বালুকাময় ভূমিতে সংযোগ, এই কয়টীও জলের ঊর্দ্ধ আরোহণের অর্থাৎ বাষ্পভাব প্রাপ্তির হেতু। মুখে জল লইয়া, মুখ-বায়ু-বেগে নিঃসারণ করিলে তাহা বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় এবং কিয়দংশ বাষ্পাকার ধারণ করে। জলের উপর জোরে আঘাত করিলেও কিয়দংশ বাষ্প হয় এবং তপ্ত বা বালুকাময় ভূমিতে জল ঢালিলেও তাহার কিয়দংশ বাষ্প হয়। কিন্তু পূর্ব্ব সূত্রে যে নাড়ী শব্দের ব্যবহার আছে, তাহা যদি রশ্মিরূপ মুখ্য অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, তাহা হইলে এরূপ অর্থ হয়। আর সে সূত্রে নাড়ী অর্থে যদি তেজ এবং তেজঃ শব্দে উষ্ণস্পর্শবিশিষ্ট বস্তু, ইংরাজি-বাঙ্গালায় যাহা তাপ নামে ব্যবহৃত—উষ্ম হয়, তাহা হইলে, অবায়ু-সংযোগ, নোদন, আপীড়ন, তিন অবস্থাতেই তাপ-সম্পর্ক হয় এইজন্য তাহাকে পৃথক্ কারণ বলিতে হয় না।।৬।।

উপস্কারঃ

ননু সূর্য্যরশ্মীনাং কথময়ং মহিমা যৎ ভূমিষ্ঠা অপ ঊৰ্দ্ধং নয়ন্তীত্যত আহ।

নোদনেন বলবদ্বায়ুনোদনেন আপীড়নাদাস্কন্দনাৎ বায়ুসংযুক্তা রশ্ময়স্তৎসংযুক্তা আপ ঊর্দ্ধং ধাবন্তি যথা স্থালীস্থা অপঃ কথ্যমানাঃ বায়ুনুন্নবহ্নিরশ্ময় ঊর্দ্ধং নয়ক্তি, চকার ইবার্থস্তত্র চ উপমানং স্থালীস্থা এবাপো দ্রষ্টব্যাঃ।।৬।।

.

বৃক্ষাভিসর্পণমিত্যদৃষ্টকারিতম্।।৭।।

অনুবাদ

(জলের) বৃক্ষাভিসর্পণ—অর্থাৎ বৃক্ষদেহে অভিগমন—অদৃষ্টের কাৰ্য্য।।৭।।

ব্যাখ্যা

যে অদৃষ্ট বলে বৃক্ষ জীবিত থাকে, জীবন-যোনি যত্ন সেই অদৃষ্টেরই কার্য্য। বৃক্ষমূলাতিরিক্ত স্থানে জল সেচন করিলে, যতটা জল বাষ্প হয়, বৃক্ষমূলে জলসেচন করিলে ততটা বাষ্প হয় না। কেন না বৃক্ষমূল দ্বারা জল বৃক্ষের সর্ব্ব শরীরে প্রবিষ্ট হইয়া বৃক্ষ পোষণ করে। বৃক্ষের এই যে জল আকর্ষণ, বা জলের এই যে বৃক্ষশরীরে প্রবেশ, ইহা বৃক্ষের জীবন-যোনি যত্নেরই কার্য্য। জীবন-যোনি যত্ন অদৃষ্টমূলক। এই কারণে জলের এই বৃক্ষাভিসর্পণ ‘অদৃষ্টকারিত’ বলিয়া সূত্রে উল্লিখিত হইয়াছে। টীকাকারেরা জীবন-যোনি যত্নের উল্লেখ না করিয়া অদৃষ্টেরই কার্য্য এইরূপ অর্থ করিয়াছেন। ফলতঃ সে কার্য্যও পরম্পরাকাৰ্য্য। এইভাবে অনুবাদেও আমি ‘কাৰ্য্য’ শব্দ ব্যবহার করিয়াছি। সূত্রে ‘কৃত’ নাই ‘কারিত’ আছে ইহা দেখিলেই বুঝা যায়। মহর্ষি বৃক্ষের প্রযত্নকেই সাক্ষাৎ কারণরূপে লক্ষ্য করিয়াছেন। বৃক্ষের যে জীবন আছে, তাহারও যে জীবন-যোনি যত্ন আছে, তাহা আধুনিক বিজ্ঞানেও স্থিরীকৃত।। ৭।।

উপস্কারঃ

ননু মূলে সিক্তানামপাং বৃক্ষাভ্যন্তরেণোর্দ্ধ গমনম্ অভিতঃ, তত্র ন নোদনাভিঘাতৌ নবাদিত্যরশ্ময়ঃ প্রভবন্তি তৎ কথং তদিত্যত্রাহ।

অভিতঃ সর্পণমভিসর্পণং তদভিসর্পণং মূলে নিষিক্তানামপাং বৃক্ষে তদদৃষ্টকারিতং পত্রকাণ্ডফলপুষ্পাদিবৃদ্ধিকৃতং সুখং দুঃখং বা যেষামাত্মনাম্, অদৃষ্টবত্তদাত্মসংযোগাদসমবায়ি – কারণাৎ অদৃষ্টান্নিমিত্তাদঙ্গু, সমবায়িকারণেষু তৎ কৰ্ম্ম ভবতি যেন কৰ্ম্মণা আপ ঊর্দ্ধং গত্বা বৃক্ষং বৰ্দ্ধয়ন্তীত্যর্থঃ।।৭।।

.

অপাং সংঘাতো বিলয়নঞ্চ তেজঃসংযোগাৎ।।৮।।

অনুবাদ

জলের সংঘাত—অর্থাৎ জমাট এবং বিলয়ন—অর্থাৎ দ্রবীভাব তেজঃ- সংযোগমূলক।। ৮।।

ব্যাখ্যা

তেজঃ-সংযোগের ইতর বিশেষ আছে। একপ্রকার তেজঃসংযোগে জল জমাট হইয়া করকা বা বরফ হয়, অন্যপ্রকার তেজঃ-সংযোগে তাহা গলিয়া যায়। বাষ্পাকারে পরিণত জলসমূহ ঊর্দ্ধে আকৃষ্ট হইয়া বায়ু-সংযোগে ঊর্দ্ধে অবস্থিতি করে ক্রমে তেজঃ- সংযোগবিশেষের ফলে পরস্পর মিলিত হইয়া জমাটও হয়। আবার অধিকতর-তাপযুক্ত তেজঃ-সংযোগের ফলে তাহা গলিয়া যায়। এই গলিত হওয়ার সময়ে বিধারক-সংযোগ বিনষ্ট হয়, তখন গুরুত্ব-প্রযুক্ত তাহা পতিত হয়—ইহাই বৃষ্টি।। ৮।।

উপস্কারঃ

নম্বপাং সাংসিদ্ধিকদ্রবত্বং লক্ষণমুক্তং তাদৃশানামেবাপামূৰ্দ্ধমধস্তির্য্যক্ চ গমনমুপপাদিত হিমকরকাদীনাঞ্চ শৈত্যাদপ্তমবিবাদসিদ্ধম্, তৎ কথং তেষাং সংঘাতঃ কাঠিন্যম্, কথঞ্চ বিলয়নমিত্যত আহ

দিব্যেন তেজসা প্রতিবন্ধাদাপ্যাঃ পরমাণবো দ্ব্যণুকমারভমাণা দ্ব্যণুকেষু দ্রবত্বং নারভন্তে, ততো দ্রবত্বশূন্যৈরবয়বৈদ্বণুকাদিপ্রক্রমেণ দ্রবত্বশূন্যা হিমকরকাদয় আরম্ভ্যন্তে, তেন তেষাং কাঠিন্যমুপলভ্যতে। নম্বেবং হিমকরকাদীনামাপ্যত্বে কিং প্রমাণমত উক্তং বিলয়নঞ্চ তেজঃসং- যোগাদিতি। তেজঃসংযোগেন বলবতা হিমকরকারম্ভকপরমাণূনাং ক্রিয়া, ক্রিয়াতো বিভাগস্তত আরম্ভকসংযোগনাশপরম্পরয়া হিমকরকাদিমহাবয়বিনাশস্তত্র দ্রবত্বপ্রতিবন্ধকতেজঃসংযোগ- বিগমাৎ ত এব পরমাণবঃ দ্ব্যণুকেষু দ্রবত্বমারভন্তে, ততো দ্রবত্ববতাং হিমকরকাদীনাং বিলয়ন তত্র চ বলবত্তেজোহনুপ্রবেশো নিমিত্তম্।। ৮।।

.

তত্ৰ বিস্ফুর্জথুর্লিঙ্গম্।।৯।।

অনুবাদ

বজ্রনির্ঘোষ সেই তেজঃসংযোগের অনুমাপক।।৯।।

ব্যাখ্যা

সেই তেজঃসংযোগ-অর্থে সংঘাত ও দ্রবত্বের হেতু তাপসংযোগ। যেরূপ তাপ হইলে জল সংঘাত অবস্থা প্রাপ্ত হইয়া কঠিনাকৃতি হয় এবং যেরূপ তাপ হইলে জল সংঘাতাবস্থা বা বাষ্প অবস্থা হইতে দ্রবীভূত হইয়া থাকে, সেই বিভিন্নপ্রকার তাপযুক্ত শীত ও উষ্ণ বস্তুদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত হইয়া সন্নিহিত মেঘে বা বায়ুতে যে তড়িৎ উৎপন্ন করে, তাহা ঐ শীতোষ্ণ বস্তুদ্বয়ের তড়িদ্ভাগের সহিত সম্মিলন হইবার পথে জলাদি দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হইলেই বজ্রনির্ঘোষ হয়। সুতরাং বজ্রধ্বনি যে বিভিন্নরূপ তাপসংযোগের অনুমাপক ইহা বেশ বুঝা গেল।। ৯।।

উপস্কারঃ

ননু বলবদ্দিব্যতেজোহনুপ্রবেশস্তত্র ইত্যত্র কিং প্রমাণমিত্যত আহ।

তত্র দিব্যাসু অঙ্গু দিব্যানাং তেজসামনুপ্রবেশে বিস্ফূৰ্জ্জথুলিঙ্গং বজ্রনির্ঘোষ এব লিঙ্গ- মিত্যর্থঃ। আত্যন্তিকবিদ্যুৎপ্রকাশস্তাবৎ প্রত্যক্ষ এব তদনুপদবিস্ফূর্জথুঃ সোঽপি প্রত্যক্ষ এব, তেনানুমীয়তে যস্মান্মেঘাৎ করকাঃ প্রাদুর্ভবন্তি তত্র দিব্যস্তেজো বিদ্যুদ্ৰূপমনুপবিষ্টং তদুপষ্টন্তেন করকারম্ভিকাণামপাং দ্রবত্ব প্রতিবন্ধ ইতি।। ৯।।

.

বৈদিকঞ্চ।। ১০।।

অনুবাদ

বৈদিক হেতুও আছে।। ১০।।

ব্যাখ্যা

বেদে আছে জল অগ্নিকে অর্থাৎ তেজকে গর্ভে অর্থাৎ অভ্যন্তরে ধারণ করিয়াছিল। অতএব জল যে তেজোগর্ভ অর্থাৎ তাপগর্ভ ইহা প্রমাণিত হইল।। ১০।।

উপস্কারঃ

অত্রৈব প্রমাণান্তরমাহ।

অপাং মধ্যে তেজোহনুপ্রবেশ আগমসিদ্ধ এবেত্যর্থঃ। তথাহি “আপস্তা অগ্নি গর্ভমাদধীরন যা অগ্নিং গর্ভং দধিরে সুবর্ণ” ইত্যাদি।। ১০।।

.

অপাং সংযোগাদ্বিভাগাচ্চ স্তনয়িত্নোঃ।।১১।।

অনুবাদ

জলের অর্থাৎ সংঘাতপ্রাপ্ত জল ও দ্রবীভূত জলের মেঘের সহিত যে সংযোগ বিভাগ তাহা বজ্রনির্ঘোষের হেতু।। ১১।।

ব্যাখ্যা

সংহত ও দ্রবীভূত জল অর্থাৎ অল্পতাপযুক্ত ও অধিকতাপযুক্ত মেঘ-জল পরস্পর সংযুক্ত থাকিলে তাহাতে তড়িৎ উৎপন্ন হইয়া নিকটস্থ মেঘে তড়িৎ উৎপন্ন করে। তখন ঐ তড়িদ্বয় পরস্পর মিলিত হইতে যায়, মধ্যে মেঘান্তর উপস্থিত হইলে, মিলনোন্মুখ তড়িদ্বয় তাহা ভেদ করিবার সময় যে শব্দ উৎপাদন করে, তাহাই বজ্রনির্ঘোষ। যদি ঐ তড়িদ্যুক্ত সংহত ও দ্রবীভূত জলের আশ্রয় মেঘখণ্ডের কিয়দংশ বায়ুযোগে বিক্ষিপ্ত বা বিভক্ত হয়, তাহা হইলেও বজ্রনির্ঘোষ হয়, কেননা মেঘবিভাগ-হেতু বায়ু ঐ তড়িদ্বয়ের সম্মিলনে বাধক। জল, বায়ু বা পার্থিবাংশ যাহাই তড়িদ্বয়ের মিলনপথে কিঞ্চিন্মাত্রও বাধক হইবে, তাহাকে অতিক্রম করিবার সময় শব্দ উৎপন্ন হইবে, উহাই বজ্রনির্ঘোষ। ৮ম হইতে ১১শ পর্য্যন্ত সূত্রের নিম্নলিখিত অর্থও হইতে পারে; বিভিন্নপ্রকার তড়িৎসংযোগে জল জমাট হইয়া যায় এবং গলিয়া থাকে। ৮। বজ্রনির্ঘোষ সেই তড়িৎ সংযোগের অনুমাপক। ৯। জল যে তড়িৎ উৎপন্ন করিতে সমর্থ তাহা বেদেও আছে, এই শ্রুতি উপস্কারে উদ্ধৃত হইয়াছে। ১০। মেঘের ও জলের যে সংযোগ-বিভাগ অর্থাৎ বায়ুজনিত আবৰ্ত্তন তাহাও তড়িৎ উৎপত্তির হেতু। ১১। বিস্তৃত ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিকগণ মহর্ষিকথিত সংক্ষিপ্ত সূত্রের উল্লিখিত ও অনুল্লিখিত বিবিধ অর্থের তত্ত্ব চিন্তা করিয়া বিস্মিত হইবেন। মহর্ষিগণকে যাঁহারা বাহ্যজগতের তত্ত্বনির্ণয়ে একেবারে উদাসীন অধিকন্তু অসমর্থ বলিতেও কুণ্ঠিত নহেন, যাঁহারা মহর্ষিগণকে কল্পনাপ্রিয় মিথ্যাবাদী বলিতেও ভীত নহেন, তাঁহারা সহস্র সহস্র বৎসর পূর্ব্বে মহর্ষির এই বাহ্যজগতের তত্ত্ব আবিষ্কার অনুভাব করিয়া একটু স্বীয় অজ্ঞতার প্রতি ধিক্কার প্রদান করিবার সুযোগ প্রাপ্ত হইলে আমরা আনন্দিত হইব।।১১।।

উপস্কারঃ

ননু বিস্ফূৰ্জ্জথুঃ কথমুৎপদ্যতে সংযোগবিভাগৌ শব্দযোনী তৌ চ নানুভূয়েতে ইত্যত আহ।

বিস্ফূর্জথুরিতি শেষঃ। অভিঃ স্তনয়িত্নোঃ সংযোগবিভাগৌ িিনমিত্তকারণীভূয় স্তনয়িত্বোরেবাকাশেন সংযোগাদসমবায়িকারণাদাকাশে সমবায়িকারণে শব্দং গৰ্জ্জিত জনয়তঃ। চিচ্চ বায়ুবলাহকসংযোগবিভাগৌ নিমিত্তকারণে বলাহকবিয়ৎসংযোগ- বিভাগাবসমবায়িকারণে, কর্ম্মকারণাধিকারেঽপি প্রাসঙ্গিকমিদমুক্তম্। যদ্বা মেঘাকাশসংযোগে বিভাগে বা শব্দাসমবায়িকারণে কারণম্ অপামেব নোদনাভিঘাতজনিতং কৰ্ম্মেতি সূচিতং কৰ্ম্মণ এবাধিকারপ্রাপ্তত্বাৎ।। ১১।।

.

পৃথিবীকৰ্ম্মণা তেজঃকৰ্ম্ম বায়ুকৰ্ম্ম চ ব্যাখ্যাতম্।। ১২।।

অনুবাদ

পৃথিবীকৰ্ম্ম দ্বারা তেজঃকৰ্ম্ম ও বায়ুকৰ্ম্ম বিবৃত হইল।। ১২।।

ব্যাখ্যা

দিগ্‌দাহ এবং ঘোর ঝড় ইহাও অদৃষ্টমূলক। সাক্ষাৎ কারণ অপর কিছু থাকিলেও দিগ্‌দাহ প্রভৃতির অশুভ ফল যখন শাস্ত্রে কথিত হইয়াছে তখন উহা যে অদৃষ্টসম্ভূত ইহা একেবারে উড়াইয়া দিবার কথা নহে।। ১২।।

উপস্কারঃ

ভূকম্পং প্রত্যদৃষ্টবদাত্মসংযোগঃ কারণমুক্তং তত্রৈবাকস্মিকদিগ্‌দাহহেতোস্তেজসঃ আকস্মিকবৃক্ষাদিক্ষোভহেতোশ্চ প্রভঞ্জনস্য কৰ্ম্ম যৎ সংজায়তে তত্ৰাপ্যদৃষ্টবদাত্ম- সংযোগোঽসমবায়িকারণম্, বায়ুতেজসী সমবায়িকারণম্, অদৃষ্টং নিমিত্তকারণমিত্যর্থঃ। কৰ্ম্মশব্দস্য হ্যাবৃত্তিৰ্ম্মহোল্কাদিকৰ্ম্মসূচনাৰ্থী।।১২।।

.

অগ্নেরূর্দ্ধজ্বলনং বায়োস্তিৰ্য্যক্‌পবনমণূনাং মনসশ্চাদ্যং কৰ্ম্মাদৃষ্টকারিতম্।।১৩।।

অনুবাদ

অগ্নির ঊর্দ্ধজ্জ্বলন, বায়ুর তির্য্যগ্ গমন, পরমাণু ও মনের প্রাথমিক কর্ম্ম অদৃষ্টমূলক।।১৩।।

ব্যাখ্যা

অগ্নি প্রজ্বলিত হইলে উষ্ণ বায়ু এবং বাষ্পের ঊর্দ্ধগমনবেগে অগ্নিও ঊর্দ্ধজ্বলনযুক্ত হয়। মনে কর—একটী দীপশিখা, উহার মধ্যে তেজ, দাহ্য পার্থিব বস্তুর ও জলীয় বস্তুর বাষ্প এবং বায়ু আছে। আকাশের অস্তিত্ব তো আছেই, তাহার কথা ছাড়িয়া দিলাম। পরন্তু ঐ সকল বাষ্প ও বায়ু তেজের অঙ্গভূত নহে, দীপের সঙ্গী। সঙ্গীদিগের উদ্‌গমনে দীপশিখার তেজোভাগকেও ঊর্দ্ধজ্বলনযুক্ত হইতে হয়। সঙ্গী বায়ু উষ্ণস্পর্শে লঘু হইয়া ঊর্দ্ধগত হইতে থাকে, দাহ্য বস্তুর বিসর্পণশীল বাষ্প সেই বায়ুর অনুগামী হয়। সেই একস্রোতোগত সঙ্গীর টানে তেজকে ঊর্দ্ধগামী হইতে হয়। পরন্তু তৈজস অবয়বের প্রবল আকর্ষণে তাহা একেবারে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় না। এই যে বায়ুর শুষ্কতা এবং পৃথিবী ও জলাংশের বাষ্পভাব, ইহার হেতু তেজঃসংযোগ। এই যে তেজঃসংযোগ ইহা অবশ্যই স্পন্দনসাপেক্ষ। কেবল বায়ুস্পন্দনে তেজঃসংযোগ ঘটিয়া যদি বাষ্পভাব ও বায়ুর শুষ্কতা হইত, এবং তদ্বারা বায়ুস্রোতের ঊর্দ্ধগমন হওয়ায় অগ্নিরও ঊর্দ্ধজ্বলন হইত, তাহা হইলে, অগ্নিপ্রোজ্জ্বললৌহপিণ্ডের অগ্নিও ঊর্দ্ধজ্বলনযুক্ত হইত; কেননা সেখানকার বায়ুরও শুষ্কতা হওয়ায় তাহাও ঊর্দ্ধগত হয়। যদি বল দাহ্যবস্তুর স্পন্দনবশতঃ তেজঃসংযোগ হয়, তদুত্তরে বলা যায়, দাহ্য বস্তুর স্পন্দনের পূর্ব্বে তেজেরও স্পন্দন মানিতে হয়। মনে কর একটী প্রদীপ জ্বালিলাম, এই জ্বালিত প্রদীপে তৈলাদির যে দাহ্য অংশের স্পন্দন হইতে থাকিল, তাহা কি অগ্নিসংযোগসাপেক্ষ নহে? সে অগ্নিসংযোগ কি পূৰ্ব্বতন অগ্নির স্পন্দনসাপেক্ষ নহে? অতএব প্রথমে তেজের স্পন্দন মানিতে হয়। তেজ স্পন্দিত হইয়া স্বসংযুক্ত উপযুক্ত বস্তু হইতে বাষ্প সৃষ্টি করে এবং স্বসংযুক্ত বায়ুর শুষ্কতা সম্পাদন করে; অবশ্য তেজের এই স্পন্দনপূর্ব্বক দাহ্য বস্তুর সহিত সংযোগ এবং সংযুক্ত বস্তুর উষ্ণতা ও বাষ্পভাব এত অল্প সময়ের মধ্যে হয় যে, উহার পৌর্ব্বাপর্য অনুভূত হয় না। কিন্তু পৌৰ্ব্বাপৰ্য্য আছে, পৌৰ্ব্বাপৰ্য্য না থাকিলে কার্য্যকারণভাব ঘটে না। যাহা কারণ তাহা পূৰ্ব্ববর্ত্তী হইবেই। উত্তপ্ত লৌহপিণ্ডের অগ্নিসংযোগ তেজঃস্পন্দন-জন্য হইলেও, তেজ যাহাকে অবলম্বন করিয়া অবস্থিত, সে অংশ স্থির বলিয়া অর্থাৎ স্পন্দনধৰ্ম্মা দাহ্য বাষ্পসমূহ উৎপাদনের উপকরণ নহে বলিয়া উহা বায়ুস্রোতে ঊর্দ্ধগামী হয় না। এক্ষণে দেখ, ঐ যে প্রাথমিক তেজঃস্পন্দন ইহার হেতু কি? ইহার হেতু মহর্ষি বলিতেছেন অদৃষ্ট। অ-দৃষ্ট অপ্রত্যক্ষ এমন অর্থ করিতে হয় কর, কিন্তু অদৃষ্টের মুখ্য অর্থ ধৰ্ম্মাধর্ম্ম, তাহাই হেতু, ইহাই প্রকৃত কথা। অগ্নির এই যে ঊর্দ্ধজ্বলন-হেতু তেজের প্রাথমিক স্পন্দন, যাহার জন্যই দাহ্যবাষ্পের উৎপত্তি, বায়ুর উষ্ণতা ও ঊর্দ্ধগতি, যে ঊর্দ্ধগত বায়ুর বেগে শিখারও ঊর্দ্ধগমন, এই ঊর্দ্ধগমনের জন্য জগতে কত লোক কত সুখদুঃখ প্রাপ্ত হইয়া থাকে, সেই সুখ-দুঃখ হেতু অদৃষ্টই ঊর্দ্ধজ্বলনের মূলীভূত প্রাথমিক তেজঃস্পন্দনের হেতু। বায়ু জলাংশযুক্ত হইয়া গুরু হয়, শুষ্ক হইলে লঘু হয়। যাহা গুরু তাহা অধোগামী, যাহা লঘু তাহা ঊর্দ্ধগামী হয়; কিন্তু বায়ুর যে প্রাথমিক বক্রগমন ইহার হেতু অদৃষ্ট। বায়ুর এই বক্রগতি না থাকিলে হিমপ্রধান দেশ মনুষ্যবাসের যোগ্য হইত কি না সন্দেহ? ঝড় ইত্যাদি হইত না। সুতরাং বায়ুর বক্রগতি যে সকল জীবের সুখদুঃখের হেতু তাহাদিগের অদৃষ্ট প্রাথমিক বক্রগতির কারণ। একটী বক্রগতি উৎপন্ন হইলে বেগপ্রযুক্ত ধারাবাহিক বক্রগতি হইতে পারে। বৈশেষিক যে যে স্পন্দনের হেতু অদৃষ্ট বলিয়াছেন, স্বভাববাদীরা তাহাকেই স্বভাব বলিয়া বর্ণনা করেন। কার্য্যকারণবাদ অপেক্ষা ফলতঃ স্বভাববাদ যে স্থূল, তাহা অবসর হয় তো বিচার করিয়া বুঝাইব। প্রাথমিক অর্থাৎ বর্ত্তমান সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমাণুর যে স্পন্দন, এবং মনের যে প্রাথমিক অর্থাৎ যত্নের কারণীভূত ক্রিয়া তাহাও অদৃষ্টমূলক। সৃষ্টিপ্রারম্ভে পরমাণু স্পন্দিত হয়, স্পন্দনের পর দ্ব্যণুকারম্ভক সংযোগ হয়, দ্ব্যণুকোৎপত্তির হেতু ঈশ্বরপ্রযত্ন, অদৃষ্টজনিত পরমাণুস্পন্দনকে সহায় পাইলে ফলোন্মুখ হইয়া থাকে। সেই পরমাণু মাত্রে পর্যবসিত পৃথিব্যাদি ভূতচতুষ্টয়ের অসংহত অবস্থায় পরমাণু স্পন্দনের অন্যবিধ কারণ থাকে না। প্রত্যেক পরমাণুর ঐরূপ স্বভাব স্বীকার অপেক্ষা অদৃষ্টকে সকল পরমাণুস্পদনহেতু বলিলে লাঘব আছে।। ১৩।।

উপস্কারঃ

অদৃষ্টবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণকং কর্ম্মান্তরমাহ।

আদ্যমিতি সর্গাদ্যকালীনমিত্যর্থঃ, তদা নোদনাভিঘাতাদীনামভাবাৎ অদৃষ্টবদাত্মসংযোগ এব তত্রাসমবায়িকারণম্। আদ্যমূর্দ্ধজ্বলনম্ আদ্যং তিৰ্য্যপবনমিতি, ইতরেষা জ্বলনপবনকৰ্ম্মণাং বেগাসমবায়িকারণকত্বমেব মন্তুমুচিতং দৃষ্টে কারণে সত্যদৃষ্টকল্পনানবকাশাৎ।। ১৩।।

.

হস্তকৰ্ম্মণা মনসঃ কৰ্ম্ম ব্যাখ্যাতম্।।১৪।।

অনুবাদ

হস্তকর্ম্ম দ্বারা মনের কর্ম্ম বিবৃত হইয়াছে।। ১৪।।

ব্যাখ্যা

প্রযত্ন ও প্রযত্ন-বিশিষ্ট আত্ম-সংযোগ হইলে যেমন হস্তের স্পন্দন হয়, সেইরূপ প্রযত্ন ও প্রযত্ন-বিশিষ্ট আত্মসংযোগ হইলে মনেরও স্পন্দন হয়। এই জন্য যত্ন করিয়া মনকে অভীষ্ট বিষয়ে নিযুক্ত করা যায়। অবশ্য এই স্পন্দন প্রযত্নপূর্ব্বক, প্রযত্নও সংস্পন্দনসাপেক্ষ। কেননা স্পন্দন না হইলে মনঃসংযোগ ঘটে না, আত্মমনঃসংযোগ ব্যতীত প্রযত্নও হইতে পারে না; এই জন্য প্রযত্নের হেতু আত্মমনঃ-সংযোগ অদৃষ্টজন্য, হৈহা পূৰ্ব্বসূত্রে কথিত হইয়াছে।। ১৪।।

উপস্কারঃ

অনাদ্যং কৰ্ম্মাধিকৃত্যাহ।

মুষলোৎক্ষেপণাদৌ যথা প্রযত্নবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণকং হস্তকৰ্ম্ম তথাভিমতবিষয়গ্রাহিণীন্দ্রিয়ে সন্নিকর্ষার্থং যন্মনসঃ কৰ্ম্ম তদপি প্রযত্নবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণকমেব, যদ্যপীন্দ্রিয়ং মনো ন সাক্ষাৎপ্রযত্নবিষয়স্তথাপি মনোবহনাড়ীগোচরেণ প্রযত্নেন মনসি কৰ্ম্মোৎপত্তিদ্রষ্টব্যা। নাড্যাস্তু ত্বগিন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বমঙ্গীকৰ্ত্তব্যম্ অন্যথা প্রাণবহনাডীগোচরেণ প্রযত্নেনাশিতপীতাদ্যভ্যবহরণমপি ন সম্ভবেৎ।। ১৪।।

.

আত্মেন্দ্রিয়মনোহর্থসন্নিকর্ষাৎ সুখদুঃখে।। ১৫।।

অনুবাদ

আত্মার সহিত মনঃ-সংযোগ এবং বিষয়ের সহিত ইন্দ্রিয় সংযোগ সুখ- দুঃখের হেতু।।১৫।।

ব্যাখ্যা

আত্মার সহিত মনঃ-সংযোগ হইতে হইলে মনের স্পন্দন আবশ্যক। স্পন্দন ব্যতীত ঐ সংযোগ হইতে পারে না। বিষয়ের সহিত যে ইন্দ্রিয়সংযোগ হয়—অর্থাৎ বিষয়ের সহিত যেরূপ ইন্দ্রিয়সংযোগে জ্ঞান উৎপন্ন হয়, সেই সংযোগও মনঃস্পন্দনসাপেক্ষ। কেননা মন ইন্দ্রিয়ের সহিত সংযুক্ত হইলে তবে জ্ঞান হইবে। মনের সংযোগ হইতে হইলে স্পন্দন চাই। ইন্দ্রিয় দ্বারা ইষ্টসাক্ষাৎকারে সুখ ও অনিষ্ট- সাক্ষাৎকারে দুঃখ হয়। সুতরাং যেদিক দিয়াই দেখ, মনঃস্পন্দন ব্যতীত সুখ-দুঃখ—সুখ- দুঃখ বলিয়া নহে, জ্ঞান, প্রযত্ন, ইচ্ছাদিও উৎপন্ন হয় না।। ১৫।।

উপস্কারঃ

ননু মনসি কৰ্ম্ম উৎপদ্যত ইত্যত্রৈব ন প্রমাণমত আহ।

সুখদুঃখে ইত্যুপলক্ষণং জ্ঞানপ্রযত্নাদ্যপি দ্রষ্টব্যম্। মনসো বৈভবং পূর্ব্বমেব নিরাকৃতম্, অণুত্বঞ্চ সাধিতম্, যুগপজ্ঞানানুৎপত্তিশ্চ মনসো লিঙ্গমিত্যুক্তং তেন তত্তদিন্দ্রিয় প্রদেশেন মনঃসংযোগমন্তরেণ সুখদুঃখে ন স্যাতামেব। যদি মনসি কৰ্ম্ম ন ভবেৎ ন ভবেচ্চ পাদে মে সুখং শিরসি মে বেদনেত্যাদ্যাকারোহনুভব ইত্যর্থঃ। যদ্যপি মনঃসন্নিকর্ষাধীনঃ সর্ব্বোহ প্যাত্ম- বিশেষগুণস্তথাপি সুখদুঃখে তীব্রসংবেগিতয়াতিস্ফূটত্বাদুক্তে।। ১৫।।

.

তদনারম্ভ আত্মস্থে মনসি শরীরস্য দুঃখাভাবঃ স যোগঃ।।১৬।।

অনুবাদ

মন আত্মনিষ্ঠ হইলে মনের স্পন্দন হয় না। (তখন) শরীরাবচ্ছিন্ন আত্মার দুঃখ-নিবৃত্তি-হেতু যোগ (নিষ্পন্ন হয়)।। ১৬।।

ব্যাখ্যা

ইন্দ্রিয়-সংযোগ-হীন আত্মনিষ্ঠ চিত্তের স্থিরাবস্থাই যোগ। যোগ মানবের দুঃখনিবৃত্তির উপায়। ১৬।

উপস্কারঃ

নম্বেবং যদি চপলং মনস্তদা চিত্তনিরোধাভাবাদ্‌যোগং বিনা নাত্মসাক্ষাৎকারো নবা তমন্তরেণ মোক্ষ ইতি শাস্ত্রারম্ভবৈফল্যমত আহ।

বিষয়েম্বলংপ্রত্যয়বত উদাসীনস্য বহিরিন্দ্রিয়েভ্যো ব্যাবৃত্তং মনো যদাত্মস্থমাত্মমাত্রনিষ্ঠ ভবতি তদা তৎকর্ম্মানুগুণপ্রযত্নাভাবাৎ কৰ্ম্ম মনসি নোৎপদ্যতে স্থিরতরং মনো ভবতি স এব যোগঃ, চিত্তনিরোধলক্ষণত্বাদ্‌ যোগস্য, তদনারম্ভ ইতি মনসঃ কর্ম্মানারম্ভ ইত্যর্থঃ। যদ্বা তৎপদেন সুখদুঃখে এবাভিধীয়েতে প্রক্রান্তত্বাৎ, দুঃখাভাব ইতি দুঃখাভাবসাধনত্বাদ্‌যোগ এব দুঃখাভাবঃ “অন্নং বৈ প্রাণঃ” ইতিবৎ। যদ্বা দুঃখস্যাভাবো যত্রেতি বহুব্রীহিঃ, শরীরস্যেতি শরীরাবচ্ছিন্নস্যাত্মনঃ, স যোগ ইতি প্রসিদ্ধিসিদ্ধতয়া তৎপদম্, অয়ং স যোগঃ। যদ্বাত্মপদেনা প্রাণ উচ্যতে উপচারাৎ প্রাণানুমেয়ত্বাদাত্মনঃ, তথা চ প্রাণবহনাড্যাং কৰ্ম্মণা প্ৰাণকৰ্ম্মাপি জায়তে। যদ্ধা জীবনযোনিযত্নবদাত্ম প্রাণসংযোগাসমবায়িকারণকং প্রাণকৰ্ম্ম, জীবনযোনি যত্নোহতীন্দ্রিয়ঃ প্রাণসঞ্চারানুমেয়ঃ কথমন্যথা সুষুপ্ত্যবস্থায়ামপি শ্বাসপ্রশ্বাসগতাগতমিতি ভাবঃ।।১৬।।

.

অপসর্পণমুপসর্পণমশিত পীতসংযোগাঃ কার্য্যান্তরসংযোগাশ্চেত্যদৃষ্ট- কারিতানি।।১৭।।

অনুবাদ

অপসর্পণ, উপসর্পণ, (গর্ভস্থ অবস্থায়) পান, ভোজন, কার্যান্তরের— অর্থাৎ গর্ভস্থ শরীরের স্পন্দন—অদৃষ্টমূলক।। ১৭।।

ব্যাখ্যা

অপসর্পণ—মরণকালে প্রাণ ও মনের দেহ ত্যাগ করিয়া উদ্‌গমন, উপসর্পণ—দেহান্তরের উৎপত্তি হইলে তাহাতে প্রাণ ও মনের প্রবেশ ইত্যাদি কৰ্ম্ম অদৃষ্টের কার্য্য।। ১৭।।

উপস্কারঃ

ননু প্রাণস্য মনসশ্চ কৰ্ম্ম যদি প্রযত্ননিমিত্তকং তদা প্রাণমনসী যদা মরণাবস্থায়ামপসর্পতঃ দেহাদ্বহির্ভবতঃ দেহান্তরোৎপত্তৌ তত্র পুনরুপসর্পতঃ প্রবিশতঃ তত্র প্রযত্নাভাবাত্তদুভয়- মনুপপন্নম্, অশিতপীতং ভক্তপানীয়াদি তস্যাপি শরীরাবয়বোপচয়হেতুঃ সংযোগস্তজ্জনকং যৎ কৰ্ম্ম যচ্চ গর্ভবাসদশায়াং সংযোগবিভাগজনকং কৰ্ম্ম তেষাং কথমুৎপত্তিরত আহ

অত্র নপুংসকমনপুংসকেনৈকবচ্চান্যতরস্যামিতি নপুংসকনিৰ্দ্দেশঃ, সংযোগপদঞ্চ তৎকারণে কর্ম্মণি লাক্ষণিকম্। অপসর্পর্ণং দেহারম্ভককর্ম্মক্ষয়ে দেহাদেব প্রাণমনসোরুৎক্রমণম্। উপসর্পণঞ্চ দেহান্তরোৎপত্তৌ তত্র প্রাণমনসোঃ প্রবেশনম্। অশিতপীতাদিসংযোগহেতুশ্চ কৰ্ম্ম, কার্য্যান্তরং গর্ভশরীরং তৎসংযোগহেতুশ্চ যৎ কৰ্ম্ম তৎ সৰ্ব্বমদৃষ্টবদাত্মসংযোগা- সমবায়িকারণকম্, ইতিকারেণ ধাতুমলকৰ্ম্মণামপ্যদৃষ্টবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণকত্ব সূচয়তি।। ১৭।।

.

তদভাবে সংযোগাভাবোঽপ্রাদুর্ভাবশ্চ মোক্ষঃ।। ১৮।।

অনুবাদ

তাহার (অদৃষ্টের) অভাবে শরীরসংযোগের অভাব হয় এবং ভবিষ্যতেও পুনরুৎপত্তিও হয় না—তাহাই মোক্ষ।। ১৮।।

ব্যাখ্যা

যোগবলে আত্মসাক্ষাৎকার হইলে রাগদ্বেষ নিবৃত্ত হয়। সুতরাং আর ধৰ্ম্মাধর্ম্ম হয় না, ধৰ্ম্মাধর্ম্ম-অভাবে পুনৰ্জ্জন্ম হয় না। যখন এই অবস্থা হয় তখন সেই ব্যক্তি জীবন্মুক্ত নামে আখ্যাত, সে জন্মের শরীর-পাত হইলেই তাহার নির্ব্বাণ মুক্তি। এই মুক্তি বা মোক্ষই সূত্রে কথিত হইয়াছে। এই অবস্থা চরমদুঃখনিবৃত্তির অবস্থা।। ১৮।।

উপস্কারঃ

ননু দেহান্তরোৎপত্তেরাবশ্যকত্বঞ্চেত্তদা কথং মোক্ষ ইত্যত আহ।

ইদমত্রাকূতং যোগবলেনাত্মতত্ত্বসাক্ষাৎকারে সতি তেন চ সবাসনমিথ্যাজ্ঞানে ধ্বস্তে তন্নিবন্ধনানাং রাগদ্বেষমোহানাং দোষাণামপায়াৎ প্রবৃত্তেরপায়ে তন্নিবন্ধনস্য জন্মনোহপায়ে তন্নিবন্ধনস্য দুঃখস্যাপায় ইতি তাবদ্বস্তুগতিঃ। তত্ৰ যোগিনো যোগজধৰ্ম্মবলেন তত্তদ্দেশকালতত্তত্তুর গমতঙ্গজভু জঙ্গবিহঙ্গমাদিদেহো পভোগ্যসুখদুঃখাসাধারণকারণ- ধর্ম্মাধর্ম্মনিকুরম্বমালোচ্য তত্তৎকায়ব্যূহং নির্ব্বাহ্য ভোগেন পূর্ব্বোৎপন্নধর্মাধর্ম্ময়োঃ ক্ষয়ঃ, নিবৃত্তদোষস্য ধর্ম্মাধর্ম্মান্তরানুৎপত্তাবপূর্ব্বশরীরান্তরানুৎপত্তৌ পূর্ব্বশরীরেণ সহাত্মনো যঃ সংযোগাভাবঃ স এব মোক্ষঃ। তদভাব ইতি অনাগতশরীরানুৎপাদে সংযোগাভাব ইত্যর্থঃ। নন্বিয়মবস্থা প্রলয়সাধারণীত্যত আহ অপ্রাদুর্ভাব ইতি। যদনন্তরং শরীরাদেঃ পুনঃ প্রাদুর্ভাবো ন ভবতীত্যর্থঃ, স মোক্ষ ইতি, তস্যামবস্থায়াং যো দুঃখধ্বংসঃ স মোক্ষ ইত্যর্থঃ।।১৮।।

.

দ্রব্যগুণকৰ্ম্মনিষ্পত্তিবৈধৰ্ম্মাদভাবস্তমঃ।। ১৯।।

অনুবাদ

দ্রব্য, গুণ এবং কর্ম্মের উৎপত্তিগত বিরোধহেতু তমঃ অভাব (পদার্থ)।। ১৯।।

ব্যাখ্যা

তমঃ অন্ধকার। অন্ধকারকে ভাব পদার্থ বলিলে তাহাকে অনিত্য বলিতে হয়। কেননা তাহার নাশ, উৎপত্তি সকলই প্রতিবাদীর অনুভবসিদ্ধ। অন্ধকারকে অনিত্য ভাবপদার্থমধ্যে পরিগণিত করিতে হইলে, হয় দ্রব্য, না হয় কৰ্ম্ম, অথবা গুণ বলিতে হইবে। কিন্তু দ্রব্যাদির উৎপত্তি যেরূপে হয়, অন্ধকারের উৎপত্তি সেরূপে হয় না। অবয়বক্রমে দ্রব্যোৎপত্তি হয়, পরন্তু রাত্রিকালে গৃহে শত তাড়িতালোক এককালে নির্ব্বাপিত করিলে গৃহ তৎক্ষণাৎ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়। ঘট-উৎপত্তির জন্য কপাল, বস্ত্র-উৎপত্তির জন্য তন্তু—যেমন পূর্ব্বে অপেক্ষিত, অন্ধকার-উৎপত্তির পূর্ব্বে সেরূপ কোন অবয়বের অপেক্ষা করিতে হয় না। অতএব দ্রব্য-উৎপত্তির ন্যায় অন্ধকারের উৎপত্তি নহে। সুতরাং অন্ধকার দ্রব্য হইতে পৃথক্। গুণের উৎপত্তি—পাক, অবয়ব-গুণ কৰ্ম্ম বা মনঃসংযোগসাপেক্ষ। কর্মের উৎপত্তি—বেগ, গুরুত্ব, প্রযত্ন ও সংযোগাদিসাপেক্ষ; অন্ধকার-উৎপত্তিতে সে সমস্ত অপেক্ষিত নহে। এই উৎপত্তিগত বৈষম্যবশতঃ অন্ধকারকে গুণ ও কর্ম্মও বলা যায় না। বিশেষতঃ যখন অন্ধকারের গতি ও রূপ প্রত্যয় আছে, তখন তাহাকে গুণ বা কর্ম্ম তো বলিতেই পার না; গুণাদিতে গুণ, কর্ম্ম নাই। অতিরিক্ত পদার্থ কল্পনাও অসম্ভব এবং অনাবশ্যক। কেননা আলোকের অভাবই অন্ধকার। উৎপত্তি, নাশ ও গতি প্রভৃতি অন্ধকারের স্বাভাবিক ধৰ্ম্ম নহে। আলোকের নাশ, উৎপত্তি ও অপসারণ প্রযুক্ত ঐরূপ প্রত্যয় হয়।। ১৯।।

উপস্কারঃ

ননু তমসোঽপি দ্রব্যস্য কৰ্ম্ম দৃশ্যতে চলতি চ্ছায়েতিপ্রত্যয়া। তত্র ন প্রযত্নো ন বা নোদনাভিঘাতৌ ন বা গুরুত্বদ্রবত্বে ন বা সংস্কারস্তথাচ নিমিত্তান্তরং বক্তব্যং তচ্চ নানুভূয়- মানমিত্যত আহ।

এতেন নবৈব দ্রব্যাণীত্যবধারণমপ্যুপপাদিতং দ্রব্যনিষ্পত্তিস্তাবৎ স্পর্শবদ্রব্যাধীনা। ন চ তমসি স্পর্শোহনুভূয়তে, ন চানুদ্ভূত এব স্পর্শঃ, রূপোদ্ভবে স্পর্শোদ্ভবস্যাবশ্যকত্বাৎ। পৃথিব্যাময়ং নিয়মঃ। তমস্তু দশমং দ্রব্যমিতি চেন্ন, দ্রব্যান্তরস্য নীলরূপানধিকরণত্বাৎ, নীলরূপস্য চ গুরুত্বনান্তরীয়কত্বাৎ রসগন্ধনান্তরীয়কত্বাৎ। যথাকাশং শব্দমাত্রবিশেষগুণং তথা তমোঽপি নীলরূপমাত্রবিশেষগুণং স্যাদিতি চেন্ন, চাক্ষুষত্ববিরোধাৎ। যদি হি নীলরূপবন্নীল রূপমেব বা তমঃ স্যাৎ বাহ্যালোকপ্রগ্রহমন্তরেণ চক্ষুষা ন গৃহ্যেত।।১৯।।

.

তেজসো দ্রব্যান্তরেণাবরণাচ্চ।।২०॥

অনুবাদ

দ্রব্যান্তর দ্বারা তেজের আবরণ হইতে (অন্ধকার হয়)।। ২০।।

ব্যাখ্যা

অন্ধকার যে গমনশীল—এরূপ জ্ঞান হইবার কারণ তেজের—অর্থাৎ আলোকের আবরণ। গমনশীল আলোক যে স্থানে প্রবেশ করে, তথায় অন্ধকার থাকে না। আলোক সরিয়া গেলে আলোকাভাব হয়; এই আলোকের গমনাগমন প্রযুক্ত অন্ধকার গমনশীল বলিয়া প্রতীত হয়।। ২০।।

উপস্কারঃ

তর্হি গতিপ্রতীতিঃ কিন্নিবন্ধনেত্যত আহ।

গচ্ছতা দ্রব্যান্তরেণাবৃতে তেজসি পূৰ্ব্বদেশানুপলস্তাদগ্রিমদেশে চোপলস্তাত্তেজো হভাবস্য গচ্ছদদ্ৰব্যসাধৰ্ম্মাদ্‌ গতিভ্রমো ন তু বাস্তবী তত্র গতিরিত্যর্থঃ। অন্বয়ব্যতিরেকাভ্যাং তথা প্রতীতেঃ। উদ্ভূতরূপবদ্যাবত্তেজঃসংসর্গাভাবস্তমঃ।।২০।।

.

দিক্‌কালাবাকাশঞ্চ ক্রিয়াবদ্বৈধৰ্ম্মান্নিষ্ক্রিয়াণি।।২১।।

অনুবাদ

দিক্, কাল, আকাশ এবং আত্মা—ক্রিয়াবিশিষ্ট দ্রব্যের বৈধর্ম্ম হেতু—নিষ্ক্রিয়।। ২১।।

ব্যাখ্যা

অমূৰ্ত্তত্ব—অর্থাৎ আপেক্ষিক ক্ষুদ্র পরিমাণের অভাব ক্রিয়াবিশিষ্ট দ্রব্যের বৈধৰ্ম্ম। যাহা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রপরিমাণ-সম্পন্ন, তাহাই ক্রিয়াবান্। দিক্, কাল ও আকাশ কাহারও অপেক্ষা ছোট পরিমাণ নাই—সুতরাং ক্রিয়া—স্পন্দন নাই।। ২১।।

উপস্কারঃ

এবং দ্বিসূত্রকং প্রাসঙ্গিকং তমঃপ্রকরণং সমাপ্য কর্ম্মশূন্যতাপ্রকরণমাহ চকারাদাত্মসংগ্রহঃ ক্রিয়াবতা বৈধর্ম্মং দিগাদীনামমূৰ্ত্তত্বং মূৰ্ত্তনুবিধানাৎ ক্রিয়ায়াঃ।।২১।।

.

এতেন কৰ্ম্মাণি গুণাশ্চ ব্যাখ্যাতাঃ।।২২।

অনুবাদ

ইহার দ্বারা কর্ম্ম ও গুণ বিবৃত হইল।। ২২।।

ব্যাখ্যা

পরিমাণ গুণ,—গুণ-কর্ম্মে গুণ থাকে না, গুণ দ্রব্যের ধর্ম্ম, গুণ কর্ম্মের নহে। গুণ ও কর্ম্মে যখন পরিমাণ মাত্রই নাই, তখন অমূর্ত্তত্ব আছেই; সুতরাং ক্রিয়াও থাকিতে পারে না, কেন না ক্রিয়া মূর্তত্বের অনুগামী।। ২২।।

উপস্কারঃ

গুণকৰ্ম্মণোনিষ্ক্রিয়ত্বমাহ।

এতেনেতি ক্রিয়াবদ্বৈধর্ম্মেণেত্যর্থঃ। ক্রিয়াবদ্বৈধর্ম্মমমূৰ্ত্তত্বং গুণকর্ম্মণোরপীতি তে অপি নিষ্ক্রিয়ত্বেন ব্যাখ্যাতে ইত্যর্থঃ।।২২।।

.

নিষ্ক্রিয়াণাং সমবায়ঃ কৰ্ম্মভ্যো নিষিদ্ধঃ।।২৩।।

অনুবাদ

নিষ্ক্রিয় বস্তুর সম্বন্ধ সমবায়, তাহা কৰ্ম্ম হইতে নিষিদ্ধ—অর্থাৎ কৰ্ম্ম-জন্য নহে।। ২৩।।

ব্যাখ্যা

গুণ, কৰ্ম্ম নিষ্ক্রিয় হইলে কোন্ সম্বন্ধে গুণাদি থাকিবে—স্পন্দন ব্যতীত সংযোগ অসম্ভব। এই আপত্তি খণ্ডনের জন্য কথিত হইতেছে—সমবায়ই তাহার সম্বন্ধ। সমবায় নিত্য, তাহা সংযোগের ন্যায় কর্ম্মাধীন নহে।। ২৩।।

উপস্কারঃ

ননু গুণকৰ্ম্মণী যদি নিষ্ক্রিয়ে তদা তাভ্যাং দ্রব্যস্য কথং সম্বন্ধঃ, সংযোগসম্বন্ধঃ সম্ভাব্যেত স চ কৰ্ম্মাধীন এবেত্যত আহ। নিষ্ক্রিয়াণাং গুণকৰ্ম্মণাং সমবায় এব সম্বন্ধঃ। স চ কৰ্ম্মভ্যো নিষিদ্ধঃ, তস্য সম্বন্ধস্য উৎপত্তিরেব নাস্তি, দূরে তু কর্ম্মাধীনতেত্যর্থঃ।।২৩।।

.

কারণত্ত্বসমবায়িনো গুণাঃ।।২৪।।

অনুবাদ

গুণ সকল সমবায়ি (কারণ) নহে, পরন্তু কারণ।। ২৪।।

ব্যাখ্যা

কৰ্ম্ম যে আশ্রয়ে উৎপন্ন হয়, তাহা কর্ম্মের সমবায়িকারণ। গুণ—কর্ম্মের সমবায়িকারণ নহে, কর্ম্মের আশ্রয়ও নহে; তবে গুণ—কর্ম্মের অপর কারণ—অর্থাৎ অসমবায়িকারণ ও নিমিত্তকারণ হয় বটে, কিন্তু অসমবায়িকারণ ও নিমিত্তকারণ— সমবেত বস্তুর আশ্রয় হয় না। এই কারণেই কর্ম্মও কর্ম্মের আশ্রয় নহে। ভাবার্থ এই যে, এক দ্রব্য ব্যতীত কেহই সমবায়িকারণ হয় না। সুতরাং গুণ-কৰ্ম্মাদি দ্রব্য ব্যতীত অন্যত্রও থাকে না।। ২৪।।

উপস্কারঃ

ননু যদ্যমূৰ্ত্তত্বাৎ গুণাঃ কৰ্ম্মসমবায়িকারণং ন ভবন্তি তদা গুণৈগুণাঃ কৰ্ম্মাণি চ কথমুৎপদ্যন্তে, ন হি সমবায়িকারণাতিরিক্তত্বরূপেণাপি কারণতা সম্ভবতীত্যত আহ।

গুণা অসমবায়িকারণং ন তু সমবায়িকারণমপি যেন কর্ম্মাধারাঃ স্যুঃ, সা চাসমবায়ি- কারণতা ক্বচিৎ কার্য্যৈকার্থসমবায়াৎ যথাত্মমনঃসংযোগস্যাত্মবিশেষগুণেষু সংযোগবিভাগ- শব্দানাং শব্দে ক্বচিৎ কারণৈকার্থসমবায়াৎ যথা কপালাদিরূপাদীনাং ঘটাদিরূপাদিষু।। ২৪।।

.

গুণৈদিগ্‌ব্যাখ্যাতা।। ২৫।।

অনুবাদ

গুণ দ্বারা দিক্ বিবৃত হইল।। ২৫।।

ব্যাখ্যা

ঐ দিকে লতা বিকম্পিত হইতেছে—এই যে প্রত্যয়, ইহা দ্বারা দিক্ যে লতাকম্পনের আশ্রয় স্থান, ইহা প্রমাণিত হইতেছে। সুতরাং দিক্‌কে নিষ্ক্রিয় বলা হয় কেন? যাহা ক্রিয়া—অর্থাৎ কম্পনাদির আশ্রয়, তাহাই তো ক্রিয়াবান্, এই আপত্তির উত্তরে বর্তমান সূত্র। ঐ দিকে অপূর্ব্ব সৌরভ—এই প্রত্যয় থাকিলেও সৌরভ পুষ্প প্রভৃতিরই গুণ, পরন্তু দিকের নহে, ইহা যেমন স্থির—ঐ দিকে লতা বিকম্পিত হইতেছে—এই প্রত্যয় থাকিলেও ঐ কম্পন দিকের কর্ম্ম নহে, লতারই কর্ম্ম, ইহাও স্থির। তবে যে আশ্রয়রূপে প্রত্যয় হয় তাহা দৈশিক সম্বন্ধমূলক। সমবায় সম্বন্ধে কৰ্ম্ম দিক্ প্রভৃতিতে নাই—ইহাই নিষ্ক্রিয় শব্দের অর্থ।। ২৫।।

উপস্কারঃ

ননু ইহ কৰ্ম্মোৎপদ্যতে ইদানীং কৰ্ম্মোৎপদ্যতে ইত্যাদিপ্রতীতিবলাৎ দিক্কালাবপি কর্ম্মসমবায়িকারণে এব কথমন্যথা তত্র তয়োরাধারতেত্যত আহ।

যথা গুরুত্বাদয়ো গুণা ন কর্ম্মসমবায়িকারণমমূৰ্ত্তত্বাৎ তথা দিগপি ন কৰ্ম্মসমবায়িকারণ- মমূর্ত্তত্বাদেবেত্যর্থঃ। আধারতা তু সমবায়িতামন্তরেণাপি, কুণ্ডে বদরাণি, কুণ্ডে দধি, বনে সিংহনাদ ইত্যাদিবদুপপদ্যত ইতি ভাবঃ।।২৫।।

.

কারণেন কালঃ।।২৬।।

অনুবাদ

কারণ দ্বারা অর্থাৎ কারণতা দ্বারা কাল বিবৃত হইল।। ২৬।।

ব্যাখ্যা

এই সময়ে মলয় মারুত প্রবাহিত হয়—এই যে প্রত্যয় ইহা দ্বারা প্রমাণিত হইতেছে—কাল মলয় মারুত স্পন্দনের হেতু,—মলয়মারুতস্পন্দন যে কালে সমবায়- সম্বন্ধে আছে—তাহা নহে। অতএব কালও নিষ্ক্রিয়।। ২৬।।

পঞ্চম অধ্যায় দ্বিতীয় আহ্নিক সমাপ্ত।

পঞ্চম অধ্যায় সমাপ্ত।

উপস্কারঃ

উত্তেনৈবাভিপ্রায়েণাহ।

নিষ্ক্রিয়ত্বেন ব্যাখ্যাত ইতি পরিণম্যানুষঙ্গঃ কারণেনেতি ভাবপ্রধানো নিৰ্দ্দেশঃ তেন নিমিত্তকারণত্বেনাধারমাত্রং কর্ম্মণঃ কালো ন তু সমবায়ীত্যর্থঃ।।২৬।।

ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে পঞ্চমাধ্যায়স্য দ্বিতীয়মাহ্নিকম্। সমাপ্তশ্চায়ং পঞ্চমাধ্যায়ঃ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *