ন্যাদোশ ও কুচবিহারের হাতী

ন্যাদোশ ও কুচবিহারের হাতী

বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ নেই। তবু ন্যাদোশ চলে এল। ঘরে ঢুকতে তো ওর অসুবিধে নেই। হাওয়ায় ভেসে চলে আসে, আমার ঘরে ঢুকে যায়।

পুজো নিশ্চয় আসছে। কিন্তু এখনো আকাশ যথেষ্ট নীল নয়। শাদা মেঘের নৌকোও নীল আকাশে ভাসছে না। ক্যালেণ্ডরে পুজোর তারিখ দেখতে পাচ্ছি। জানলার বাইরে কিছুই দেখছি না।

এসব কারণে মন ভালো নেই।

এরই মধ্যে চলে এলেন তিনি। সেই ল্যাগবেগে পা, চোখে হিংস্র চাহান। ঘরে ঢুকেই আমার টেবিলের সামনে গড়িয়ে গেল। যেহেতু ন্যাদোশ ৫০/৬০ বছর আগে গোরুদের স্বর্গে গেছে, সেহেতু ও মেঝেতে শুয়ে থাকলেও অসুবিধে নেই।

ওকে মাড়িয়েই লোকজন ঢোকে বেরোয়।

ক’বছর ধরে দেখছি, ন্যাদোশ বেজায় চিন্তাশীল হয়েছে। চোখ দেখেই বোঝা যায়। সর্বদা কি যেন ভাবছে। এবার ঘরে ঢুকেই বলল,—কি রকম দেখছ?

—যেমন ছিলে, তেমনি আছ।

—আরে, চেহারাটা দেখে জ্ঞানী—জ্ঞানী মনে হচ্ছে না?

—মনে হবার কথা ছিল?

—নিশ্চয়। আজকাল…যাকে বলে…আমি বেজায় চিন্তা করি, বুঝেছ?

—আমাদের…যাকে বলে স্বর্গে! বেজায় গণ্ডগোল পাকিয়েছ হাতী, বাঘ, গণ্ডার, এরা!

—হ্যাঁদোশ! গোরু মরলে গোলোকে যায়। হাতী, বাঘ…বলছ কি?

ন্যাদোশ চোখ মটকে হাসল। বলল,—দুর্গা তো পুজো নিতে আসবেন। শিব বেজায় বিপদে পড়েছেন।

—কেন?

—কেন আবার! এতকাল ধরে শিবকে বলা হচ্ছে ”পশুপতি”!

তিনি পশুদের দেবতাও হবেন, অথচ তারা মরলে কোথায় যাবে, তার কোনো জায়গা বানাননি!

—শিব বলে কথা! তিনি তো ইচ্ছে করলে…

—আমরা গোরুরা একেবারে বাধা দিচ্ছি। আমাদের সবজি বাগান, কলাগাছ, হাতিরা কিছু রাখবে?

—শিব কি বলছেন?

—বিপদে পড়েছেন তো! খেপে গেছেন মানুষের ওপর।

—কেন? আমরা কি করলাম?

—এই যে বাঘ মারছ। কুচবিহারের হাতিগুলো তো হরদম মরছে। এ তো মানুষের জন্যেই হচ্ছে…।

—তা বটে! তা বটে! এ সব খবর তো বেরোচ্ছে।

ন্যাদোশ হ্যাব্যা করে হাসল। বলল,—এখন আর কাগজের পরোয়া করে কে? টি.ভি. এসে গেছে না? সব দেখে ফেলছে সবাই।

বাপ রে বাপ!

—সে কি। স্বর্গেও টি.ভি?

—তুমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেতাই হয়ে গেছ। গতবারই তো বলে গেছি, যে গোলোকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গোরু আসছে। ছোকরা গোরুরা টি. ভি. দেখছে…মোবাইল আটকে রাখছে কানে, মেসেজ পাঠাচ্ছে মোবাইলে….।

—শিব কি বলছেন?

—স্বর্গে কি জায়গার অভাব আছে? তিনি হলেন দেবাদিদেব!

নিমেষে পশুপতিলোক বানিয়ে নেবেন।

—সেখানে সবাই থাকবে?

—সবাই।

—কি খাবে?

—সেটা দেবাদিদেবই বুঝবেন!

—বাঘরা কি খাবে?

—স্বর্গে এলে ওরা ”ভেজ” হয়ে যাবে।

—তা কি সম্ভব?

—নিশ্চয় সম্ভব। দেবতারা স—ব পারেন। কিন্তু তোমার সঙ্গে কথা ছিল।

—আমার মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে আর হাতি—বাঘ—ময়ূর বলে কিছু থাকবে না। তোমরা, মানে মানুষরা জঙ্গলগুলো তো ধ্বংস করেইছ। সবাই মোবাইল নিয়ে ঘুরছে, তাতে পাখিদেরও জীবন হালুয়া!

—আমি কি করব?

—কাজ করো কাজ! লেখো! নইলে…

—কি হবে?

—দেখবে আমরা কি করি! চলি! লেখো! লেখো! আমরা নইলে…ভীষণ শোধবেন।

—দেখব দেখব!

—আশ্বা! চলি! তোমার বাড়িতে কি রান্না হচ্ছে?

—ওই! চিকেন টিকেন হবে!

—আঃ! রাঁধবেন বটে তোমার মা!

—তোমার মনে আছে?

—থাকবে না? আমাকে দুনিয়ার প্রথম নন—ভেজ গোরু কারা বানাল? তোমরাই তো!

—সম্মান তো পাছ?

—তা পাচ্ছি। গোলোকে ”ন্যাদোশ” বললেই সবাই খাতির করে। এই রে! কে যেন আসছে। আমি চললাম।

ন্যাদোশও বেরোল, আর ”সন্দেশ” কাগজের ছেলেটাও হাজির।

বলল—”এবারকার সন্দেশের লেখা?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *