নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি – ৮

বিশ্রী চেহারা। তার ওপর বার হাত কাঁকুড়ের তের হাত বিচির মতো দেহের থেকে লম্বা ল্যাজ। শরীরের মাপ দেড় ইঞ্চি কিন্তু ল্যাজটা তিন ইঞ্চি। ল্যাজ নয়। ওভিপজিটর—ডিম পাড়ার যন্ত্র। নামটি মিষ্টি—মেগারহিসা। বেয়ারা নামটা মনে রাখতে পারে না, বলে মেহেরউন্নিসা।

মেহেরউন্নিসা সন্তানসম্ভবা। ল্যাবরেটরিতে দাঁড়িয়ে অমিতাভ ভাবী মায়ের কীর্তি দেখছিল। অনেকে বুঝতে পারে না, ওই লম্বা নল দিয়ে কী হবে। কিন্তু অমিতাভ জানে, অপ্রয়োজনে প্রকৃতি কিছুই সৃষ্টি করে না। সব কিছুরই প্রয়োজন আছে।

একটা পুরনো কাঠের টুকরো আঁতুড় ঘরে রেখে গিয়েছিল অমিতাভ। বরাবর সেটা ফুটো করেছে মেহেরউন্নিসা। কিন্তু ডিমপাড়া হয়নি। হবে কী করে? ওটা যে শুধু কাঠ। ওই কাঠ ফুটো করার শুঁড় দিয়ে সে অন্য এক পোকার সন্তানকে অনুসন্ধান করছে।

সৃষ্টিকর্তা ভদ্রলোকটির খামখেয়ালিতে বিস্মিত হতে হয়। তাঁর সৃষ্টিতে সর্বদা যে তিনি রুচিজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন, এ-কথাও বলা যায় না। না হলে এ-কেমন কথা, গর্ভিণী মেগারহিসা এক ধরনের ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গের সন্তান ছাড়া আর কারুর ওপর প্রসব করবে না। হর্নটেল পিজিয়নের শূককীটরা কাঠের মধ্যে বড় হয়ে ওঠে, ইতিমধ্যে কাঠের গুঁড়ো খেয়ে মানুষ হয়।

: আর একটা কাঠের টুকরো এবার মেহেরউন্নিসার কাছে এগিয়ে দিল অমিতাভ। আশ্চর্য এদের সন্ধান শক্তি। পোষকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এটা বুঝতে মেগার হিসার এক মুহূর্তও দেরি হলো না। কাঠফুটো করার কাজ শুরু হয়ে গেল। প্রকৃতির কাজে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সারাদিন ধরে ফুটো করে সে হয়তো হর্নটেল পিজিয়নের শূককীটের সন্ধান করবে, তারপর তার দেহে প্রসব করে নিশ্চিন্ত হবে।

পতঙ্গ জগতের বিচিত্র রহস্যের স্বাদ যে পেয়েছে, তার পক্ষে এর থেকে বেরিয়ে যাওয়া যে খুব শক্ত, তা অমিতাভ বুঝতে পারে। বিকেলবেলায় অমিতাভ যখন আবার আসবে, তখন হয়তো দেখবে ডিমপাড়া হয়েছে, কিন্তু কাঠের ফুটো থেকে ল্যাজটা বার করে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মরণ ফাঁদে প্রাণ হারিয়েছে মেহেরউন্নিসা। তার সন্তানরা ততক্ষণ অন্য শ্রেণীর কতকগুলো শূককীটের মাংস মহানন্দে ভোজন করতে শুরু করেছে। মায়ের সম্বন্ধে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। পতঙ্গের রাজত্বে অনেক শান্তি আছে।

হর্নটেল পিজিয়ন মানুষের তেমন কিছু ক্ষতি করে না। এদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তার তেমন প্রয়োজন আপাতদৃষ্টিতে নেই। কিন্তু জীমূতবাহন যে স্বপ্ন দেখছেন, তাঁর গবেষণার চরম লক্ষ্য যা, তাতে মেহেরউন্নিসা হয়ত কিছু সাহায্য করতে পারে।

এই ক’বছর নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে যা কাজ হয়েছে, তার পরিমাণ অবিশ্বাস্য বলা চলতে পারে। কত রকম পতঙ্গের প্রকৃতি যে জীমূতবাহন অনুধাবন করে যাচ্ছেন!

পিঠে হাত পড়তেই পিছন ফিরে তাকাল অমিতাভ। জীমূতবাহন এসে গিয়েছেন।

“কী ভাবছো?” জীমূতবাহন প্রশ্ন করলেন।

একটু লজ্জা পেয়ে গিয়েছিল অমিতাভ। তবু কোনরকমে বললে, “সত্যি আশ্চর্য জগৎ। ভাবছি, পতঙ্গদের জীবনের কতটুকু আমরা জানি!

জীমূতবাহন এবার নিজের এলাকায় এসেছেন। যে জগতে এলে বাইরের সব দুঃখ, সব না-পাওয়ার বেদনা সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া যায়। অদৃশ্য কোনো অ্যানেসথেসিয়ায় সাংসারিক দুঃখের অনুভূতিগুলো অবশ হয়ে আসে।

জীমূতবাহন তাঁর ল্যাবরেটরির এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন আর ভাবেন, এর সবই কি ব্যর্থ হবে? তাঁর এত পরিশ্রমের কোনো মূল্য থাকবে না? কিন্তু জীমূতবাহন বেশ ভরসা পাচ্ছেন। তাঁর মনের ভেতর থেকে কে যেন বলছে, একদিন বড় কিছু, বেশ বড় কিছুর সন্ধান পাওয়া যাবে এই ল্যাবরেটরির চার দেওয়ালের মধ্যে। তখন পৃথিবীর হিসেবী লোকরা বুঝবে, কেন জীমূতবাহন সেন অর্থ এবং প্রতিপত্তির লোভ টেম্‌স ও হাডসন নদীর জলে বিসর্জন দিয়ে এই স্বেচ্ছানির্বাসনে এসেছিলেন।

অমিতাভর পিঠে হাত দিয়ে জীমূতবাহন বললেন, “একবার টাইফয়েডে ঘায়েল হয়ে বেশ কিছুদিন বিলেতের হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। সেই সময় প্লিনির লেখা রোমের ন্যাচারাল হিস্ট্রি পড়েছিলাম। মাত্র ১৯০০ বছর আগেকার কথা। কিন্তু তখনও রোমানদের কী ধারণা ছিল জান? ভারতবর্ষের উত্তর প্রান্তে এক রকমের পিঁপড়ে সোনার টুকরো জোগাড় করে—আর কোথাও সোনা হয় না “প্লিনি লিখছেন—এই পিঁপড়ের আকার রাক্ষুসে—এক একটা নিশরীয় নেকড়ে বাঘের মতো। শীতকালে এই পিঁপড়েরা স্বর্ণরেণু সংগ্রহ করে। গ্রীষ্মকালে ভারতবর্ষের দুর্দান্ত গরম থেকে বাঁচবার জন্যে পিঁপড়েগুলো যখন গর্তের মধ্যে আশ্রয় নেয়, তখন ইণ্ডিয়ানরা এই সোনার গুঁড়ো নিয়ে পালিয়ে আসে এবং দেশ-বিদেশে বিক্রি করে।”

জীমূতবাহন বললেন, “তখনকার লোকদের ধারণা ছিল, পোকাদের দেহে রক্ত থাকে না এবং জমানো শিশিরকণা থেকে প্রজাপতির জন্ম হয়!”

কথা বলে জীমূতব্রাহন যে বিশেষ আনন্দ পাচ্ছেন, তা অনুভব করতে অমিতাভর দেরি হয় না। অমিতাভ বুঝতে পারে, সন্তানের স্নেহই তার ওপর বর্ষণ করছেন জীমূতবাহন। একটা লোকের দরকার ছিল তাঁর যার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, প্রশ্ন করতে পারেন, তর্ক করতে পারেন, রসিকতা করতে পারেন, আবার প্রয়োজন হলে ঝগড়াও করতে পারেন জীমূতবাহন।

জীমূতবাহন বললেন, “আমি যার সন্ধানে রয়েছি, অনেকে তা শুনলে পাগল বলবে আমাকে। বাইরে বলতে সাহস করি না। যখন কোথাও যাই, লোকে জিজ্ঞাসা করে কিসের গবেষণা করছেন, তখন বলি পতঙ্গদের জীবন, বিশেষ করে যেসব পতঙ্গ কৃষির ক্ষতি করে তাদের সম্বন্ধে ভালভাবে জানবার চেষ্টা করছি। এ-কাজ ভারতবর্ষের কোথাও যে হচ্ছে না, এমন নয়। প্রতি প্রদেশে কৃষি বিভাগের সঙ্গে এনটমোলজিস্ট বা পতঙ্গবিদ্‌রা রয়েছেন। পুসা ইনস্টিটিউটেও অনেক মূল্যবান কাজ হচ্ছে।”

একটু থেমে, জীমূতবাহন ছোট ছেলের মতো পরম উৎসাহে প্রিয় সহকারীকে বললেন, “তোমাকেই শুধু বলছি, আমার ধারণা, কোনো একদিন আমরা হয়তো এমন কোনো বর্ণসংকর প্যারাসাইট পতঙ্গের সৃষ্টি করতে পারবো যা যে-কোনো শক্রপোকার উপর ডিম পেড়ে দিতে আপত্তি করবে না। এখন যে প্যারাসাইটে আমরা সব সময় তেমন কাজ পাই না, তার প্রধান কারণ, এক একটা পতঙ্গের জন্যে এক একটা প্যারাসাইট। গরীব চাষীর পক্ষে সে-সবের খবর রাখা সম্ভব নয়। আর কবে কোন্ পতঙ্গ আসবে, তার জন্যে পঁচিশ-ত্রিশ হাজার রকমের প্যারাসাইট ল্যাবরেটরিতে সবসময় প্রস্তুত রাখাও সম্ভব নয়।

অমিতাভ মাস্টারমশাইয়ের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মাস্টারমশাই বললেন, “লোকে হয়তো এখনই আমাকে রাঁচী পাঠাতে চাইবে। কিন্তু যদি কোনোদিন সর্বত্র-প্রসবিনী প্যারাসাইট সৃষ্টি করতে পারি, তখন লোকে স্পেশাল ট্রেনে রাঁচী গিয়ে আমাকে মালা দেবে। এমনও তো হতে পারে, আমাদের তৈরি ডিমগুলো শূককীট অবস্থায় শুধু পোষকের জীবননাশ করবে তাই নয় ; বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে পতঙ্গ খেয়েই বেঁচে থাকবে।

“তাছাড়া হাইপার-প্যারাসাইটের সমস্যা আছে। ভাল করতে গিয়ে মন্দ হয়ে যায়—কারণ প্যারাসাইটের গায়ে ডিম পেড়ে দেয়, এমন প্যারাসাইটও আছে। তারা হয়তো চাষের ক্ষতি করে। প্যারাসাইটের-প্যারাসাইটের-প্যারাসাইটও রয়েছে কতো! বিলেতে আমরা একটা ছড়া মুখস্থ করেছিলাম :

Big fleas have little fleas,

Upon their backs to bite them.

The little fleas have lesser fleas,

And so ad infinitum.”

অমিতাভ বুঝতে পারে, জীমূতবাহনের সমস্ত দেহ দিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চার হচ্ছে।

অমিতাভ যেন জীমূতবাহনের সহপাঠী বন্ধু। তার হাত দুটো ধরে ঝাঁকানি দিয়ে জীমূতবাহন বললেন, “প্যারাসাইটদের অসুবিধা, একটা শূককীট একটার বেশী পতঙ্গের বিনাশ করতে পারে না। এবং তাও সময় লাগে। কোটি কোটি গর্ভিণী প্যারাসাইট সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। অথচ পতঙ্গভুক পতঙ্গরা অর্থাৎ প্রিডেটরগুলো ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্যে অসংখ্য পতঙ্গ খেয়ে ফেলতে পারে। এরা বাঁচেও অনেকদিন।”

একটু থামলেন জীমূতবাহন। আবার শুরু করলেন, “অর্থাৎ কিনা পতঙ্গভুক এবং পরজীবী পতঙ্গের মধ্যে ঘটকালি করে যদি প্যারাসিটিক প্রিডেটর বংশধর সৃষ্টি করতে পারি—তাহলে পৃথিবীর কৃষিবিজ্ঞানে এক নবযুগের সূচনা হবে।”

জীমূতবাহনের মুখ উৎসাহে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কী ভেবে আবার স্তিমিত হয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে বললেন, “আমাদের সামনে অনেক বাধা। বেশীর ভাগ লোকের কাছে এটা একটা বৈজ্ঞানিক গাঁজাখুরি। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক গাঁজাখোর বৈজ্ঞানিক শেষ পর্যন্ত সিদ্ধিলাভ করেছে।”

অবাক হয়ে গিয়েছিল অমিতাভ! জীমূতবাহন যেন কোনো মন্ত্রশক্তিতে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে উঠেছেন! অমিতাভ বললে, “আপনি বিশ্ব খাদ্য এবং কৃষিসংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল বি আর সেন মশাইকে একথা জানাননি?”

“না, কাউকে জানাইনি। পৃথিবীর লোকরা এখন হাসতে পারে। কিন্তু তাদের হাসতে দাও। এর আগেও তারা অনেকবার হেসেছে, কিন্তু গ্যালিলিও ও কোপার্নিকাসের তাতে কিছু এসে যায়নি।”

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জীযূতবাহন বললেন, “ওহো আমাকে একবার মাঠে যেতে হবে। উইঢিপিতে কিছু কাজ আছে।”

উইঢিপিটা দূর থেকে দেখলে একটা ছোট্ট পাহাড় মনে হবে। “উইঢিপিটা করেছেন কেন?” অমিতাভ জিগ্যেস করে।

“খেয়াল বলতে পারো। উইপোকার জীবন আমাকে মুগ্ধ করে। তেমন সুবিধে পেলে ওরাই একদিন পৃথিবী শাসন করবে। উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় একবার একটা উইঢিপি দেখেছিলাম, দুশো ফুটেরও বেশী উঁচু। আর আমাদের মহাভারতে আছে এক ঋষির কথা—মহর্ষি চ্যবন বোধ হয়। তপস্যা করতে করতে যার ওপর উইঢিপি জন্মে গিয়েছিল। তাছাড়া বাল্মীকি মুনির কথা তো জানই। মহাভারতে কত যে বল্মীকের উল্লেখ পেয়েছি।”

“আপনি মহাভারত পড়েন?”

“যখন আমার আর কিছুই ভাল লাগে না, তখন মহাভারত পড়ি। আমার মায়ের স্মৃতি কয়েকখণ্ড কালী সিংহের মহাভারত আছে।” জীমূতবাহন বলতে যাচ্ছিলেন, আমার বাড়িতে এসো তোমাকে মহাভারত দেখাবো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ব্রেক কষলেন। না, তিনি মোটেই চান না ঈশিতার সঙ্গে অমিতাভর দেখা হয়। যত কম সাক্ষাৎ হয়, ততই মঙ্গল।

“ভাল কথা, গতকাল তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি। স্টেশন পর্যন্ত ড্রাইভ জীমূতবাহন বললেন।

করা “কী যে বলেন! মিসেস সেনের সঙ্গে আলাপ করে খুব খুশী হলাম। চমৎকার মহিলা।”

“তোমরা আলাপ করে নিয়েছো তাহলে।”

“উনি জগদানন্দ বোসের মেয়ে, এটাও জানা ছিল না,” অমিতাভ উত্তর দেয়।

“জগদানন্দ বোসের নাম শুনেছো?”

“ওঁর নাম শোনেনি এমন লোক বাংলা দেশে কে আছে?”

মনে মনে একটু বিরক্ত হলেন জীমূতবাহন। যে কোনো লোকের সঙ্গে পরিচয় হলে প্রথম সুযোগেই ঈশিতা তার পিতৃপরিচয় জানিয়ে দেয়। জগদানন্দ বোস বড় ছিলেন নিশ্চয়, কিন্তু তাঁর মেয়েরাই তাঁকে সর্বত্র ছোট করে বেড়াচ্ছে। জগদানন্দ বোস আর সব পেরেছিলেন, কিন্তু মেয়েদের মানুষ করতে পারেননি!

নিজের চিন্তায় নিজেই চমকে উঠলেন জীমূতবাহন। এ-কথা যদি ঘুণাক্ষরে জানতে পারে ঈশিতা! কাউকেই মুখে বলেননি—কিন্তু জীমূতবাহনের মুহূর্তের জন্যে মনে হলো তাঁর গোপন অভিমতটা ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

শুধু জগদানন্দ বোস কেন, পৃথিবীর অনেকেই তাঁদের মেয়েদের মানুষ করতে পারেননি। তিনি নিজে? জীমূতবাহন সেনও এই বিষয়ে একশোর মধ্যে শূন্য পাবেন। হোপলেস্‌লি খারাপ করেছেন পিতৃত্বের এই পরীক্ষায়। কিন্তু বড় বেশীক্ষণ নীরব হয়ে রয়েছেন জীমূতবাহন। অমিতাভকে প্ৰশ্ন করলেন, “তুমি এখন কী করবে?”

“আপনি যা বলেছিলেন, ল্যাবরেটরিতে কিছু তুলো গাছের পোকা স্পটেড বোলওয়ার্ম তৈরির চেষ্টা করবো। ”

“বেশ বেশ, তাই করো। পোকালাগা তুলোর ফল এসেছে?”

“হ্যাঁ, মিস দেশাই পাঠিয়ে দিয়েছেন একটা লোকের হাতে।”

“ল্যাবরেটরিতে ওদের বংশবৃদ্ধি করানো বেশ কঠিন কাজ,” জীমূতবাহন বললেন।

অমিতাভ ল্যাবরেটরির একটা ছোট্ট কুঠুরির মধ্যে ঢুকে গেল। জীমূতবাহন তা দেখে বেশ ভরসা পেলেন।

কিন্তু জীমূতবাহনের মাথাটা হঠাৎ একটু ঘুরে উঠলো। হঠাৎ মনে হলো সুপ্রিয়, তাঁর এককালের প্রিয় সহকারী সুপ্রিয় চৌধুরীই যেন কেবিনে ঢুকে গেল। না না, এসব কী ভাবছেন জীমূতবাহন? হয়তো সুপ্রিয়র হাঁটার সঙ্গে অমিতাভর হাঁটার একটা সাদৃশ্য আছে এই পর্যন্ত। কিন্তু মাথাটা ঘোরা এখনও বন্ধ হয়নি বোধ হয়। আরও অতীতে তাঁর দৃষ্টি ফিরে যাচ্ছে—সুপ্রিয় নয়, দেবকুমার বোধ হয়। দেবকুমার সরকার—তাঁর প্রিয় ছাত্র ও সহকারী। না না, দেবকুমার নয়, সুপ্রিয়ও নয়, ঠিক যেন অজয় বসু।

প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ফেলে দিয়ে এখন কি আবার অজয় বসুর কথাও জীমূতবাহনকে ভাবতে হবে—কেমন করে একটা আদর্শের তিলে তিলে মৃত্যু হয়েছিল? না, তিলে তিলে মৃত্যু নয়—বৃহদারণ্য বনস্পতি বজ্রাঘাতে মুহূর্তে মৃত হরেছিল। জীমূত মানে তো মেঘ। জীমূতবাহন ইন্দ্ৰই তো বজ্রের দেবতা। তবে তিনিই কি এদের সর্বনাশের কারণ হয়েছিলেন? ভাই বা হয় কী করে! মিথ্যা। সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে জীমূতবাহন বুঝিয়ে দিতে পারেন তাঁর কোনো দোষ ছিল না।

কিন্তু এসব কী ভাবছেন জীমূতবাহন? ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে জীমূতবাহন ক্ষেতের মধ্য দিয়ে টার্মিটরিয়ামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। আকাশের দিকে তাকালেন জীমূতবাহন। কই, একফোটা মেঘ নেই কোথাও। তবে শুধু শুধু ভয় পেয়ে গেলেন কেন তিনি? বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হয় কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *