নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি – ১২

১২

মাথায় বেশ কয়েক বালতি জল ঢেলে এসেছেন জীমূতবাহন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি-দেহটা জ্বলছে। মনের আগুন কি কয়েক বালতি জে শান্ত হয়? ল্যাবরেটরিতে বসে জীমূতবাহনের মনে হচ্ছে তিনি হেরে যাচ্ছেন।

সেই ছোটবেলা থেকে সংসারের কত সংগ্রামেই তো জীমূতবাহন অংশ গ্রহণ করলেন। কিন্তু কখনও হেরে যাননি তো। কঠিন সমস্যার সামনে এসেছেন জীমূতবাহন, তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন, কিন্তু কখনও নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি তিনি। কিন্তু আজ কোনো ভরসা পাচ্ছেন না জীমূতবাহন।

টাকা! টাকা আনা পাই-এর কীটগুলো সমগ্র পৃথিবীকে আত্মসাৎ করতে বসেছে। না, টাকার ওপর কোনো রাগ ছিল না জীমূতবাহনের। কিন্তু টাকার কীটগুলো বংশ বৃদ্ধি করে মানুষের মহা অমঙ্গল করতে উদ্যত হয়েছে। পৃথিবীতে কি ব্যক্তির স্বাধীনতা লোপ পাবে? স্বাধীন মানুষের ছবি কি জাদুঘর ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না? পৃথিবীর সব প্রতিভাই কি টাকার কাছে মাথা বিকিয়ে দিয়ে দাসত্বের দলিলে সই করে দেবে? জীবনের বহ্নিকণা হারিয়ে আমাদের সেরা ছেলেরা নিয়মের এবং অভ্যাসের দৃঢ় আকর্ষণে স্বাচ্ছন্দ্যের খুঁটিতে বাঁধা থাকবে?

তিনবার—তিনবার ভুল করেছেন জীমূতবাহন। অপারগ শান্তনুর মতো স্ত্রীকে তিনি বার বার সন্তান আহুতি দিতে দেখেছেন। আর কেন? পৃথিবীতে অনেক সুপাত্র রয়েছে। বিদ্বান, চরিত্রবান, রূপবান, অর্থবান যুবক দেশে তো অনেক রয়েছে, তাদের যাকে ইচ্ছা মদালসার জন্যে মনোনয়ন করতে পারে ঈশিতা। অমিতাভ মিত্র ছাড়া দেশে কি ছেলে নেই?

“কী ভাবছেন, মাস্টারশাই?”

“কে, ইন্দু?” জীমূতবাহন যেন গভীর চিন্তার অন্ধকার খাদ থেকে উত্তর দিলেন।।

ভারি ভাল এই ইন্দু মেয়েটি। এমন মেয়ে জীমূতবাহনের হতে দোষ কী ছিল? জীমূতবাহন নিজের চিন্তায় নিজেই হেসে ফেললেন। একটা শাদা সরু পাড়ওয়ালা মিলের শাড়ি পরেছে ইন্দু। মদালসা এবং মদালসার মা ইন্দুকে দেখে শিখতে পারে না? চকচকে মূল্যবান শাড়ি ও টাইট ব্লাউজ যে সংসারের কত মূল্যহীন শূন্যগর্ভতাকে ঢেকে রেখেছে!

“মাস্টারমশাই, আপনার শরীর ভাল তো?” ইন্দু জিগ্যেস করলে। “আপনার মাথা ধরেছে মনে হচ্ছে, কপালটা একটু টিপে দেবো?”

“না ইন্দু, তুমি কেন টিপে দেবে?” জীমূতবাহন বাধা দিলেন।

“আমি মাথা টিপে দিলে বাবা খুব খুশী হন,” ইন্দুমতী হাসতে হাসতে বললে।

“কতদিন মা, তোমরা বাবাদের মাথা টিপবে? মাথা টেপার জন্যে চিরদিন তো তোমরা বাবার ঘরে থাকবে না।”

“বাবা আমাদের পুরো স্বাধীনতা দিয়ে এসেছেন ছোটবেলা থেকে।” গভীর বেদনার সঙ্গে জীমূতবাহন বললেন, “স্বাধীনতার মূল্য আমরা সব সময় বুঝতে পারি না মা।”

ইন্দুমতী হেসে বললে, “পৃথিবীর সামান্য ক’জন স্বাধীন মানুষ নিজেদের নিঃস্ব করে দিয়ে সত্যকে আবিষ্কার করেন—আর কোটি কোটি লোক যুগযুগান্ত ধরে তার ফলভোগ করে। পৃথিবীতে আবিষ্কারকরা কত দুঃখ, কত কষ্ট, কত অবহেলা, কত অবজ্ঞা পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন সে তো ‘আপনি জানেন মাস্টারমশাই।”

সোজা হয়ে উঠে বসলেন জীমূতবাহন। “এবার তোমাকে একটু বকা যাক, ইন্দু। শাদা শাড়ি পরেছো কেন?”

ইন্দু হেসে ফেললে, “এ-সব দিকেও আপনার নজর থাকে?”

“আমার ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল করতে চাই আমি! তোমার বেণীতে একটা ফুলের গোড়ে থাকতো আগে—সেটাও দেখছি না কেন? মালিকে ডেকে এখনই বলে দিচ্ছি, বাগানের সেরা ফুলগুলো ভোরবেলায় যেন তোমার ঘরে দিয়ে আসে।”

ইন্দুমতী হাসতে হাসতে বললে, “এতোক্ষণ যে বড় নোংরা জায়গায় কাজ করছিলাম। ভেটারিনারি ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘোড়ার মাংস এসে গিয়েছে।”

“অমিত কোথায়?” জীমূতবাহন জানতে চাইলেন।

“উনিও তো কসাইকে দিয়ে এগুলো কুচো কুচো করে কাটাচ্ছেন।” জীমূতবাহন জিগ্যেস করলেন, “মুখে একটা মাস্ক পরে নিয়েছে তো? যা অসাবধানী ছেলে। তুমি ওকে বলে দিও তো ইন্দু।”

“এতো মাংসে কী হবে?” ইন্দু জিগ্যেস করে।

“এখন রোজ আরও মাংস আসবে। অমিতাভ কিছু বলেনি তোমায়? আমি চাই তুমি ওকে এ-বিষয়ে যতখানি পারো সাহায্য করো। ভেরি ইন্টারেস্টিং প্রোগ্রাম। এ-দেশে আগে কখনও হয়নি। এখানকার পশু চিকিৎসা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এসেছিলেন। এখানকার বহু গরু, ঘোড়া, মোষ মারা যাচ্ছে—এক কুৎসিত মাছির আক্রমণে। কয়েক বছর ধরে বেড়েই চলেছে এই আক্রমণ। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি আসতে আরম্ভ করে—

ওয়ার্ম ফ্লাই। মাছিগুলো গরুদের গায়ে বসে। তারপর দগদগে ঘা হয়। সেই ঘা কিছুতেই সারতে চায় না, পোকা কিলবিল করে সেখানে। আমেরিকায় আমার এক বন্ধু সম্প্রতি নতুন পথে খুব ভাল ফল পেয়েছেন। দেখা যাক আমাদের ভাগ্যে কী আছে।”

ব্যাপারটা আরও জানবার আগ্রহ ছিল ইন্দুমতীর। কিন্তু মাস্টার-মশাইয়ের চিন্তায় বাধা দিতে সে সাহস করলে না।

না, এখন আর কোনো ব্যক্তিগত চিন্তাকে মনের মধ্যে ঢুকতে দেবেন না জীমূতবাহন। চিন্তাগুলো ক্রু ওয়ার্মের মতোই একটু ক্ষত পেলেই সেখানে ডিম পেড়ে বসে। হাজার হাজার ম্যাগটের জন্ম হয় সেখানে।

“আসতে পারি?” দরজায় টোকা পড়লো।

“এসো অমিত।”

“আপনার শরীর খারাপ নাকি?” অমিত প্রশ্ন করে। “না, একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।”

“আপনি এখন তো বাড়ি যাবেন একবার? তখন মিসেস সেনকে যদি অনুগ্রহ করে একটু বলে দেন, আমি চা খেতে যেতে পারবো না।”

জীমূতবাহনকে না জানিয়েই ঈশিতা তাহলে আবার অমিতকে চা-এ ডেকেছে। নিজের অজ্ঞতা চেপে রেখে জীমূতবাহন বললেন, “কেন, কী হলো?”

“এক্স-রে কোম্পানির লোকরা মেশিনটা প্রায় বসিয়ে ফেলেছে। এখনই আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখবো!”

“মাছি আছে তোমার স্টকে?”

“হাজার পাঁচেক স্টকে আছে। কাল এক লক্ষ আশা করছি।”

“ভেরি গুড মাই বয়। কিন্তু মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেন অমিত? রাত জাগছো নাকি? রাত জাগো। ঘড়ি ধরে দশটা-পাঁচটা কাজ করে পৃথিবীতে কোনো বড় আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। তবে সঙ্গে সঙ্গে শরীরের যত্ন নেবে। মাই ডিয়ার বয়, মনে রেখো সুস্থ শরীর না থাকলে মশা, মাছি, মানুষ কারুর কাজেই লাগবে না তুমি।”

অমিতাভকে কাজে বসিয়ে রেখে জীমূতবাহন বাড়িতে ফিরে গেলেন। নাকের ওপর একটা রুমাল বেঁধে বসে আছেন ঈশিতা। “কী তোমার কাণ্ড! ভাগাড়েও এত গন্ধ ছাড়ে না। গরু পচিয়েছ নাকি? ”

খুকু “গরু না, ঘোড়া,” জীমূতবাহন উত্তর দিলে।

“আজই তোমার এই জায়গা ছেড়ে হোটেলে গিয়ে উঠতাম ; নেহাত অমিতকে চা খেতে বলেছে তাই।”

“খুকু কোথায়?” জীমূতবাহন জানতে চান।

“বাথরুমে বমি করছে। কাপড়-চোপড় আবার পাল্টাতে হবে, অথচ অমিতের এসে পড়বার সময় হলো।”

“সে আসতে পারবে না।” খবরটা ঘোষণা করতে জীমূতবাহন বেশ আনন্দ পেলেন।

অমিত আসতে পারবে না শুনে হতাশ হয়ে পড়লেন ঈশিতা। বিরক্ত হয়ে বললেন, “আর আসবেই বা কী করে বেচারা? ভদ্রলোকের ছেলেকে রিসার্চের নামে মুদ্দফরাসের অধম কাজে বসিয়েছ।”

“ও কাজে ব্যস্ত থাকবে।” জীমূতবাহন গম্ভীরভাবে বললেন।

“কেন? তুমি কাজে ব্যস্ত থেকে ওকে পাঠিয়ে দিতে পারলে না? তোমার মেয়ে সাধ করে একজনকে নেমন্তন্ন করেছে, সেটার কোনো মূল্য নেই!”

বিব্রত জীমূতবাহন বললেন, “চা খেয়েই আমি ফেরত যাচ্ছি। দেখি ওকে যদি পাঠাতে পারি।”

“থাক,” ঈশিতা বললেন। “বমি করে করে খুকুমণির চোখের কোলে কালি পড়ে গিয়েছে। এখন যা ছিরি হয়েছে তাতে অমিতের না দেখাই ভাল।”

টেবিলে কয়েকটা ছবি পড়ে রয়েছে যেন? তুলে নিয়ে দেখতে লাগলেন জীমূতবাহন। হোসিয়ারির টিশার্ট পরে একটি মেয়ে বাঁ হাতে চুলগুলো ঠিক করে নিচ্ছে—ডান হাতে টেনিস-র‍্যাকেট। খুকুমণির ছবি না? হ্যাঁ, প্রত্যেকটাই খুকুমণির ছবি মনে হচ্ছে! বিভিন্ন ভঙ্গীতে খুকুমণি কোথাও টেবিল টেনিস, কোথাও টেনিকয়েট, কোথাও ভলিবল খেলছে।

“এ-সব কোথা থেকে এলো?” জীমূতবাহন জানতে চান ঈশিতার কাছ থেকে।

“একটা বিলিতী কোম্পানি ছবিগুলো তুলিয়েছে—ওদের নতুন গেঞ্জি, জামা এবং টাওয়েলের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করবে!”

“আর তুমি তাতে রাজী হয়েছো?” রাগে ফেটে পড়লেন জীমূতবাহন। “অন্যায় কী হয়েছে? বিনা পয়সায় আমেরিকা ঘুরিয়ে আনবে ওরা। তুমি তো পারলে না। ওদের আমেরিকান অফিস যদি পছন্দ করে, তাহলে একটা গাড়িও দিতে পারে।”

ঈশিতা আবার বললেন, “কী, অমন করে তাকাচ্ছ কেন? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি কিছু। পাবলিসিটির যুগ এটা। আমাদের সময় তো বাঈজী ছাড়া কেউ স্টেজে উঠতো না। কবিগুরুর সঙ্গে আমরা তো সে বাধা ভেঙে ফেললাম। সুস্মিতারা তো কলেজে ছেলেদের সঙ্গে অভিনয় করলে। খুকুমণি তো এন সি সি ক্যাম্প করে এসেছে। ছবি ছাপানোতেই যত দোষ? নিজের চেষ্টায় যদি কেউ একটা মোটর গাড়ি পায় তাতেও বাধা দিতে হবে? তোমার তো মুরোদ নেই।”

না, কোনো প্রতিবাদ করবেন না জীমূতবাহন। তাঁর মূল্যবোধ তাঁর আধুনিকা স্ত্রী ও কন্যাদের মহলে অচল। কিন্তু নিজের কথা ভাবছেন না তিনি। ভাবছেন অমিতাভর কথা। ঈশিতার সঙ্গে কোনো ব্যাপারেই মিল হয় না তাঁর। ঐ একটি ব্যাপার ছাড়া—অমিতাভ ছেলেটি ভাল।

ল্যাবরেটরিত যেতে ইন্দুমতী বললে, “আপনি এসেছেন ভালই হয়েছে। একবার এক্স-য়ে চেম্বারে যান। ডক্টর মিত্র মন খারাপ করে বসে আছেন।” সত্যিই গম্ভীর মুখে বসে আছে অমিতাভ। মুখে হতাশার চিহ্ন! পাশের টেবিলে দুটো ট্রেতে অনেক মাছি নিশ্চল হয়ে পড়ে রয়েছে।

“কী হয়েছে?” জানতে চাইলেন জীমূতবাহন।

“দু’বার রেডিয়েশনেই খারাপ ফল পেলুম স্যর। সমস্ত মাছিগুলো মারা গেল।”

“এতে হতাশ হবার কিছু নেই, মাই বয়। এসো দু‘জনে মিলে ব্যাপারটা অনুসন্ধান করে দেখা যাক। আমাদের উদ্দেশ্য কী?” জীমূতবাহন জানতে চাইলেন।

অমিতাভ বললে, “আমরা চাইছি রোনজেন রশ্মির বিকীরণে পুরুষ মাছিদের বন্ধ্য করে দিতে। পুরুষ মাছিরা আপাতত সুস্থ থাকবে, কিন্তু সন্তান উৎপাদনের কোনো ক্ষমতা থাকবে না তাদের।”

আর এক ট্রে মাছি আনা হলো এবার। চেম্বারের মধ্যে এক্স-রে যন্ত্রের খাপে ট্রেটা বসিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে অমিতাভ।

মাস্টারমশাই বললেন, “এক্স-রে ডোজটা এবার কমাও।”

“কত করব স্যার!”

“মিনিটে ২৫r দাও।”

মুহূর্তের জন্যে সুইচ টিপে দিলে অমিতাভ। এবার দরজা খুলে দিতে যাচ্ছিল সে। মাস্টারমশাই বাধা দিলেন। “এতো ব্যস্ত হতে নেই। সময় দিতে হয়। রেডিয়েশনের বিপদ অনেক। শিশের জ্যাকেটটা পরা আছে তো? হাতে কী পরেছো?”

ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। মাছিগুলোর কী হলো তা বুঝতে আরও সময় লাগবে।

সেই অবসরে কতকগুলো আলোচনা সেরে নিতে চাইলেন জীমূতবাহন। ভেটারিনারি কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ডক্টর রাও এসেছেন।

জীমূতবাহন বলছিলেন, “দেখুন ডক্টর রাও, আমরা যে পথে চলেছি তার পরিকল্পনা আমার এই তরুণ বন্ধু ডক্টর মিত্রের। ব্যাপারটা মোটামুটি এই ঃ ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে আসে এই সময়। স্ত্রী মাছির সঙ্গে পুরুষ মাছির যৌন মিলন হয় এবং তার বারো থেকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী মাছিরা ডিম পাড়বার জন্যে অস্থির হয়ে ওঠে। গবাদি পশুর দেহ গর্ভবর্তী মাছিদের ডিম পাড়ার পরম প্রিয় স্থান। সামান্য একটু ক্ষত পেলেই হলো। সেইখানে ডিমগুলো ফুটে ম্যাগটের উৎপত্তি হবে।”

জীমূতবাহন বলে চললেন, “আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় মার্কিন বৈজ্ঞানিক রানার প্রথম দেখলেন সিগারেট বীল নামে একরকম পোকার গায়ে এক্স-রে প্রয়োগ করলে তারা হয় মরে যায়, না হয় তাদের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়। ১৯১৬ সালে এই কাজ হলেও, ১৯২৭ পর্যন্ত ব্যাপারটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামালেন না। আমার বন্ধু মূলার ওই সময় অনেক ড্রোসোফিলাকে বন্ধ্য করলেন। এক্স-রে ছাড়াও বিটা, আলট্রাভায়লেট এবং গামা রশ্মি দিয়েও প্রজনন শক্তি নষ্ট করা যেতে পারে। তবে আলট্রাভায়লেটের শক্তি কম।”

রাও জিগ্যেস করলেন, “তারপর?”

জীমূতবাহন বললেন, “মনে করুন একশ মাছি উড়ে আসছে। তার মধ্যে পঞ্চাশটা পুরুষ এবং পঞ্চাশটা স্ত্রী। আমরা যদি ইতিমধ্যে পঞ্চাশটা বন্ধ্য পুরুষ মাছি ছাড়ি—তারা কিছু বীর্যবান পুরুষ মাছিকে তাড়িয়ে স্ত্রী মাছিদের সঙ্গে মিলিত হবে। কিন্তু সে মিলনে কোনো সন্তান হবে না। ফলে ডিম পাড়ার কোনো অবকাশই ঘটবে না। আমাদের গরুগুলো বেঁচে যাবে।”

রাও বললেন, “যে পুরুষ মাছিগুলো বাইরে থেকে এসেছে—তারা কি একেবারেই হটে যাবে?”

অমিতাভ বললে, “তা নয়—কিছু কিছু স্ত্রী মাছি পুরনো সঙ্গীদের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হবেই। কিন্তু পরের জেনারেশনে অনেক মাছির সংখ্যা কমে যাবে। তখন যদি আমরা আরও প্রজনন শক্তিহীন মাছি ছাড়তে পারি, তাহলে পরবর্তী জেনারেশনে মাছির সংখ্যা আরও কমবে।”

জীমূতবাহন বললেন, “আপনি তো জানেন রাও সায়েব-ফোর্মিয়া টেরিনোভার বংশ কী দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এদের সংখ্যা প্রতিবার একশ গুণ বেড়ে যায়।”

অমিতাভ বললে, “বন্ধ্য মাছি আমরা তৈরি করে দেবো। ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে এদের ছাড়ার দায়িত্ব আপনাদের।

জীমূতবাহন বললেন, “আমাদের ল্যাবরেটরিতে মাছির ওপর এক্স-রে প্রয়োগ আরম্ভ হয়েছে। আমরা এবার স্ত্রী মাছির সঙ্গে পুরুষ মাছিদের কয়েকদিন রেখে দেখবো এরা সত্যিই প্রজননশক্তি হারিয়েছে কিনা।”

অমিতাভ বললে,“আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমেরিকা থেকেও ভাল ফল পাব আমরা, সমস্ত দেশে চাঞ্চল্য পড়ে যাবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *