৬০
অরুন্ধতী নিজেকে সামলাতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বলল, “হঠাৎ করেই ঠিক করলে?”
সৌরভ বলল, “উইলসনে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পাবো না হয়ত। পেয়ে গেছি। এবার চলে যাবো”।
অরুন্ধতী চুল ঠিক করল। দু হাত দিয়ে মুখে ঢেকে আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে বলল, “আমার একটা বিচ্ছিরি স্বভাব আছে। তাৎক্ষণিক ভাবে যে ঘটনাটা ঘটে যায়, সেটা নিয়ে তখনই কিছু ভাবি না। ভাবনাটা আসে পরে। আর যখন আসে, সেটা নিয়েই ভাবতে থাকি। তুমি কাল হঠাৎ করে কথাটা বললে, আমি জানি আমি তখনই ঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। তারপর কী হল বল তো, বাড়ি গেলাম। চারপাশ দেখলাম। মনে হল আবার শুরু করা যায় হয়ত। কথাটা একবার মাথায় ঢুকছে, বেরোচ্ছে। আরেকবার মনে হল তোমার জীবনে কেউ আছে হয়ত। এখন আবার ভাবলাম সেটা নিয়েই আলোচনা করা যেতে পারে। এর মধ্যে এই খবরটা দিলে। খবরটা কখন পেলে?”
সৌরভ বলল, “এই তো। রাস্তায় আসার পথেই। আমি নিজেও কনফিউজড”।
অরুন্ধতী বলল, “কনফিউশনের কিছু নেই। এখানে কনফিউজড হতেই যেও না। এ রাজ্যে আর কিছু নেই। পালানোর সুযোগ পেয়েছো, পালাও। আমিও সুযোগের অপেক্ষায় আছি। দেখা যাক”।
সৌরভ বলল, “তুমি প্রপোজালটা নিয়ে ভেবেছিলে? সকালে বললে না তো”।
অরুন্ধতী বলল, “বাদ দাও। লেটস নট থিংক অ্যাবাউট ইট। এটা এখন একটা ডেড ইস্যু। কোথায় পোস্টিং দেবে?”
সৌরভ বলল, “জানি না। আগে মুম্বই যাই। কথা বলি”।
অরুন্ধতী বলল, “টিচিং নোবেল প্রফেশন। কিন্তু নিজেদেরও তো একটা স্যাটিসফ্যাকশন দরকার হয়। আজকাল যে কী পরিমাণ ডিপ্রেশন হয়… মনে হয় পালিয়ে যাই কোথাও। কাউকে বিশ্বাস হয় না। শুধু মনে হয় বেঁচে থেকে কী লাভ? বেঁচে থাকাটাই যন্ত্রণা বল? লকডাউনের সময়টায় মনে হচ্ছিল এটাই বোধ হয় শেষ। আবার এখন মনে হচ্ছে”।
সৌরভ বলল, “একা একা লড়াই করাটা খুব কঠিন। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা আরো কঠিন”।
অরুন্ধতী বলল, “আচ্ছা কাল যে তুমি হুট করে বলে দিলে, আমি যদি হ্যাঁ বলে দিতাম, তাহলে তুমি কী করতে?”
সৌরভ বলল, “জানি না। আমি যা করেছি ঘোরের মধ্যে করেছি। তুমি হ্যাঁ বললে হয়ত এতক্ষণে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যেতাম”।
সৌরভ হেসে ফেলল।
অরুন্ধতী বলল, “আমি বললাম না, আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াটাই ঠিক ঠাক থাকে। আমি বিষয়টা নিয়ে বেশি ভাবতে শুরু করলেই সব ঘেঁটে যায়। একা হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে একটা ইনসিকিউরিটি তৈরি হয়। আসল ভিলেন সেটাই”।
স্যুপ এল। অরুন্ধতী বলল, “আজ তুমি তোমার ইচ্ছে মত অর্ডার কর। এটা আমার ট্রিট। এত ভাল একটা খবর দিলে। একটু একটু হিংসে হচ্ছে, মন খারাপও হচ্ছে, কিন্তু তোমার জন্য ভালও লাগছে। উইলসন থেকে জয়যাত্রা শুরু হোক তোমার”।
সৌরভ বলল, “আর ওখানে গিয়ে যদি মনে হয় ওই চাকরিতে পোষাচ্ছে না, আমি আবার কলকাতা মিস করছি, কলেজে পড়ানো মিস করছি, তখন কী হবে?”
অরুন্ধতী বলল, “এসকেপ ভেলোসিটি পাওয়ার জন্য একটু সময় তো লাগেই বন্ধু। নিজেকে সময় দাও, যেখানেই পোস্টিং হোক, একটু সেটল করে যাও। দেখবে আর পিছনে ফিরে থাকতে হবে না। এই হোম সিকনেসের জন্যই তো আমরা মরি। সেটাকে হারিয়ে দাও। বাকিটা তোমার কাছে জল ভাত। তুমি পারবে”।
সৌরভ চুপ করে স্যুপটা খেতে লাগল। অরুন্ধতী তাকে এখানে কালকের প্রপোজালের জন্য হ্যাঁ বলতে এসেছিল? কী অদ্ভুত! তার কি খুশি হওয়া উচিত? সে একবারেই খুশি হতে পারছে না। এই রিলেশনটা বন্ধুত্বের জন্যই ঠিক আছে। সে অরুন্ধতীকে ভালোবাসে না। কী করতে যে ওরকম ঝোঁকের মাথায় ওসব বলে দিয়েছিল! এদিকে নিচেই তো রায়া আছে। মেয়েটা অরুন্ধতীর কথা শুনে জলে ডুবে যেতে বসেছিল। এসব কী করছে সে? নিজের ওপরেই ঘেন্না হচ্ছিল তার।
একটাই সান্ত্বনা থেকে যাবে। সে রায়াকে কোন দিন প্রশ্রয় দেয় নি।
প্রশ্রয় দিলে ব্যাপারটা খুব খারাপ দিকে যেতে পারত। সব থেকে ভাল হত মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে পারলে। সমস্যা হল, ওকে বুঝিয়ে বললে বুঝতো না। ও আরো বেশি করে তার প্রেমে পড়ে যেত। টিন, টুইনদের এটাই সমস্যা। যেটা বারণ করা হবে, সেটাই বেশি করে করবে।
অরুন্ধতী বলল, “বাড়িতে বললে আবার ভেবে না বসে আমার জন্যই তুমি শহর ছাড়বে। ওদের কনফিউশন ক্লিয়ার করে দিও”।
সৌরভ হাসল, “হ্যাঁ। সেটা তো করতেই হবে। নইলে তোমার সঙ্গে কোন দিন রাস্তা ঘাটে দেখা হয়ে গেলে যা তা ব্যাপার হয়ে যাবে”।
অরুন্ধতী জোরে হেসে উঠল, “তুমি পারোও বটে। উইল মিস ইউ। তোমাকে দেখলে প্রথমে মনে হবে তুমি খুব ব্যালান্সড। একটু মিশলেই বোঝা যায় তুমিও কম ছিটিয়াল নও। একটু ছিটিয়াল হওয়াটা দরকার, নইলে জীবন বড় বিরক্তিকর হয়ে যায়। তোমার বাড়ি যাওয়াটা একটা মজার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকবে”।
সৌরভ বলল, “আমি একটু দেখে আসি ওরা আছে নাকি?”
অরুন্ধতী বলল, “কারা? স্টুডেন্টরা? কেন, যাওয়ার কী দরকার? আমরা তো ফার্স্ট ফ্লোরে আছি। সমস্যা হবে না”।
সৌরভ মাথা নাড়ল, “আচ্ছা, ঠিক আছে”।
৬১
খাবার দিয়েছে। ওয়েটার তিনটে ফ্রায়েড রাইসকে পাঁচটা করে দিল। শিঞ্জিনী বলল, “পিজি আন্টিকে বলেছি ভাগ্যিস। আজ মনে হয় না আমি রাতে কিছু খেতে পারবো”।
শুভ্র বলল, “বাচ্চা মেয়ে নাকি তুই? এখন তো টিফিন চলছে। বিকেলে খেয়ে রাতে না খেয়ে থাকবি?”
শিঞ্জিনী বলল, “না খেয়ে থাকব আবার কী? পেট ভরে যাবে”।
রায়া চুপ চাপ খেয়ে যাচ্ছিল। যদিও তার খুব একটা খেতে ইচ্ছে করছিল না। শমীক সেটা লক্ষ্য করে বলল, “তুই খাওয়ায় মন দে। বেশি ভাবিস না”।
রায়া বলল, “হু”।
শুভ্র মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করল। কনফেশন পেজে থমকে গিয়ে বলল, “কী? এটা তো হেবি কনফেশন? প্রিয় শিন, আমি তোমাকে হেবি ভালোবাসি। তুমি আমার জন্যই পৃথিবীতে এসেছ। তুমি জানো না আমি তোমাকে কত ভালবাসি। আমাকে এক প্যাকেট…”
শিঞ্জিনী কান খাড়া করে শুনছিল। বলল, “কী হয়েছে? এক প্যাকেট কী?”
শুভ্র ফোনটা পকেটে রেখে বলল, “ও কিছু না। খেয়ে নে”।
শিঞ্জিনীর ফোন ব্যাগে ছিল। সে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কনফেশনটা দেখে রেগে গিয়ে বলল, “এটা তুমি পোষ্ট করেছো?”
শুভ্র বলল, “আমি পোষ্ট করতে যাবো কেন? আমি তো পড়ছিলাম”।
শিঞ্জিনী বলল, “আমার নাম ইনডাইরেক্টলি বলা হয়েছে এখানে। কার কাজ এসব?”
শুভ্র অবাক হয়ে বলল, “আমি কী করে জানি। বিড়ির কথাই বা লিখেছে কেন? দুপুরে ওই দাশুকে আমি তোদের কথা বলছিলাম। দাশু ছাড়া তো আর জানে না”।
শিঞ্জিনী বলল, “দাশু? দাশু পোষ্ট করেছে?”
শমীক বলল, “দাশু ছাড়া আর কে করবে? লোকের হাড়ির খবর নিয়ে বেড়ানো হল ওর কাজ। আর কোন দিন কিছু করেছে দেখেছিস? খুব জ্বালায়”।
অঞ্জনা খেতে খেতে হালকা গলায় বলল, “কনফেশন পোস্টের কিছু নেই। পেজটার অ্যাডমিনই দাশু”।
সবাই চমকে অঞ্জনার দিকে তাকাল। রায়া বলল, “তুই কী করে জানলি?”
অঞ্জনা বলল, “আমি একদিন দেখেছি ও পেজটা ম্যানেজ করছিল। ও ভেবেছিল কেউ দেখে নি। আমি জানতাম ওই পেজ দাশুই চালায়”।
শমীক বলল, “আমাকে বলতে পারতিস”।
অঞ্জনা বলল, “এটা বলার মত কোন ব্যাপার হল? আমার তো পি এন পি সি জিনিসটাই অসহ্য লাগে। দাশুকেও”।
রায়া শিঞ্জিনীর দিকে তাকাল, “ও কী কী করেছে ভাব? ওই কনফেশনটা চাইলেই ডিলিট করতে পারতো, করে নি। উলটে খাপ বসালো। ওর জন্য ব্যাপারটা কতদূর এগিয়ে গেল”।
শিঞ্জিনী বলল, “আর আজকের এটা? এগুলো কিন্তু এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে”।
শমীক বলল, “ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের মধ্যে পড়ে এগুলো। যা খুশি করুক, তোরা পাত্তা না দিলেই হল”।
শুভ্র এতক্ষণ থম মেরে বসেছিল। বলল, “আমি একটু ওকে বলেছিলাম শিঞ্জিনীকে আমার ভাল লাগে। মালটা আমার নামে এসব করে ফেলল?”
শিঞ্জিনী বাদে সবাই হেসে ফেলল। শিঞ্জিনী রেগে মেগে বলল, “এরকম হলে কিন্তু আমি বেরিয়ে যাবো। কোন বিড়িখোরের সঙ্গে আমার নাম যেন না জড়ায়”।
শুভ্র বলল, “দেখ, তুই আমাকে ইনসাল্ট কর, আমি কিছু বলব না। কিন্তু আমার বিড়িকে ইনসাল্ট করবি না”।
শিঞ্জিনী এবার হেসে ফেলে গম্ভীর হয়ে গেল, “তোমার সঙ্গে কথাই বলব না। একটু কথা বললে তোমরা ব্যাপারটা নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনা করতে শুরু করে দাও”।
সবাই হাসতে শুরু করল। শিঞ্জিনী রেগে গেল, “কী হচ্ছে কী? এটা একটা ব্যাপার হল? আমি কিন্তু দাশুকে ছাড়ব না”।
এবারও সবাই বলল, “আমরাও ছাড়ব না। দাশুর কপালে দুঃখ আছে”।
রায়া বলল, “আমরা কি একজন বিশিষ্ট বিড়িখোর জামাইবাবু পেতে চলেছি?”
শিঞ্জিনী বলল, “ভাল হচ্ছে না কিন্তু রায়া। আমি কিন্তু চলে যাবো”।
শুভ্র বলল, “আচ্ছা ভাই ঠিক আছে। আমি আর তোকে লাইন মারবো না। খুশি”?
অঞ্জনা বলল, “তুমি বিড়িটা ছেড়ে দাও। তাহলেই তো শিঞ্জিনী আর কিছু বলবে না”।
শিঞ্জিনী করুণ গলায় বলল, “প্লিজ তোরা এসব বন্ধ কর। আমার আর ভাল লাগছে না কিন্তু”।
শুভ্র বলল, “রান্নাটা ভালো করেছে। আমি এখানে কোনদিন খাই নি। ইয়ে রান্না মুঝে পসন্দ আয়া”।
তাদের খাওয়া হয়ে গেছিল। বিল এল। সবাই মিলে ভাগ করে বিল দিল। শিঞ্জিনী অঞ্জনাকে বলল, “তুই ফিরবি কী করে? একা ফিরিস না”।
অঞ্জনা বলল, “বাসে ফিরব। এখন যা ভিড়, খুব একটা প্রব্লেম হবে না”।
শিঞ্জিনী বলল, “শমীককে নিয়ে যা। ও তোকে পৌঁছে দিক”। কথাটা বলে হেসে ফেলল শিঞ্জিনী। অঞ্জনাও হাসল। বলল, “না না। আমি পারব”।
অরুন্ধতী আর সৌরভ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল। তাদের দেখে অরুন্ধতী বলল, “তোমরা খেয়েছ?”
অঞ্জনা মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ ম্যাম”।
অরুন্ধতী বলল, “তোমাদের জন্য একইসঙ্গে একটা ভাল আর বাজে খবর আছে। এস ডি খুব ভাল একটা চাকরি পেয়েছেন। হি ইজ লিভিং আওয়ার কলেজ সুন”।
শিঞ্জিনী রায়ার দিকে তাকাল। রায়া অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
শুভ্র ফস করে বলল, “স্যার ট্রিট দেবেন না”?
সৌরভ অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “শিওর। তোমরা বিল দিয়ে দিয়েছ?”
শিঞ্জিনী কটমট করে শুভ্রর দিকে তাকাল।
শুভ্র ঢোক গিলে বলল, “না মানে স্যার মিষ্টি খাওয়ালেই হবে”।
সৌরভ শুভ্রর কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “ক্লাস কোর ঠিক করে। চাকরি পেলেই হয় না, অ্যাটেন্ডেন্সের জন্য সেমে বসতে না পারলে চাকরিটা যাবে, বুঝলে?”
শুভ্র বড় করে মাথা নাড়ল, “ঠিক আছে স্যার”।
রায়া শিঞ্জিনীকে বলল, “আমাদের ফিরতে হবে তো। চল”।
শিঞ্জিনী রায়ার হাত ধরে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ। স্যার, ম্যাম, আমরা আসি। আমাদের ফিরতে হবে”।
সৌরভ বলল, “ঠিক আছে সাবধানে যাও”।
রেস্তোরা থেকে বেরিয়ে গেল রায়া। তার পেছন পেছন শিঞ্জিনী। বাকিরা কথা বলতে থাকল। সৌরভ উশখুশ করলেও বেরোল না। অরুন্ধতী সৌরভের অস্বস্তিটা বোঝার চেষ্টা করল।
রায়া খুব জোরে হাঁটছে। কেউ যাতে তার কান্না দেখতে না পায়, তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। পারছে না। শিঞ্জিনী দৌড়ে গিয়ে রায়ার হাত ধরে বলল, “কী রে, এরকম করে আসে? বুঝে যাবে তো”।
রায়া কাঁদতে কাঁদতে বলল, “বুঝুক, যা পারে করুক। আমি আর পারছি না। চলে যাবে? কেন যাবে?”
শিঞ্জিনী রায়ার হাত শক্ত করে ধরে বলল, “গেলে যাবে। আমরা আছি তো। আছি না?”
রায়া চোখ মুছল। বলল, “যত বার ভাবছি এসব নিয়ে ভাবব না, ততবার ভাবতে হচ্ছে। উফ!”
শিঞ্জিনী অসহায় চোখে রায়ার দিকে তাকাল।
একটা দিন যাচ্ছে বটে!
#
দরজা খুলে মিতা দেখলেন অরুন্ধতী কাঁদছে। বললেন, “কী রে? কী হল?”
অরুন্ধতী মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “সৌরভ চলে যাচ্ছে মা। অন্য চাকরি পেয়েছে। চলে যাবে”।
মিতা বললেন, “আটকা? তুই বললে থাকবে না?”
অরুন্ধতী মাকে ছেড়ে চোখ মুছল, “ও আমাকে ভালবাসে না। আমি আটকালে হবে না”।
মিতা শান্ত গলায় বললেন, “আয়, তোর জন্য একটা ভাল বই এনেছি। অনেকদিন বই পড়িস না তুই”।
অরুন্ধতী সোফায় গিয়ে চুপ করে বসল। কী দরকার ছিল সৌরভকে কথাটা বলার? একটু আগে জানলেই বলত না!
পরে বুঝতে পারল, সৌরভ যদি কাউকে ভালবেসে থাকে, তবে তাকে নয়। রায়াকে। এথিকসের জন্য কিছু বলতে পারছে না। অরুন্ধতীর খারাপ লাগছিল সৌরভের জন্য। ঠিক সময়ে চলে যাচ্ছে কি? কারো কারো জন্য কোন সময়ই ঠিক হয় না। কারো কারো জন্য সব কিছুই ঠিক সময়ে হয়।
কাল থেকে আরেকটা দিন। কী ক্লান্তিকর আরেকটা দিন! অরুন্ধতী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হারলে চলবে না। তাকে লড়তেই হবে। লড়াইটা করে বেঁচে থাকতেই হবে যে করে হোক…
৬২
দাশু ল্যাপটপ ঘাঁটছিল। আর কী কী নতুন কনফেশন পোষ্ট করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে শিঞ্জিনীর কনফেশনের কমেন্টগুলো দেখছিল আর ঠিক এই সময়েই তার ফোন বাজল।
দাশু দেখল শিঞ্জিনী ফোন করছে। অবাক হল খানিকটা। রাত ন’টা বাজে। এরকম সময় তো শিঞ্জিনী কখনো ফোন করে না। সে কিছু একটা সন্দেহ করে গলাটা ঘুম ধরা করে নিয়ে ফোন ধরল, “হ্যাঁ রে। বল। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম”।
শিঞ্জিনী বলল, “এই দাশুর বাচ্চা, কনফেশনটা ডিলিট কর”।
দাশু সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসল। বলল, “মানে?”
শিঞ্জিনী বলল, “ন্যাকা সাজিস না। অনেক ন্যাকামি মেরেছিস। আমরা সবাই জেনে গেছি কনফেশন পেজের অ্যাডমিন তুই। এখন যদি পোস্ট ডিলিট না করেছিস, তাহলে সবাই মিলে তোর নামে ডিরেক্টরের কাছে কমপ্লেইন করব””।
দাশু ভয় ধরা গলায় বলল, “এসব তোকে কে বলেছে? এস ডি?”
শিঞ্জিনী বলল, “এস ডি জানে?”
দাশু বলল, “না মানে শোন না, আমি ওই পেজটা চালাই না। তোর কোন ভুল ধারণা হয়েছে”।
শিঞ্জিনী বলল, “আমার সব ধারণা ঠিক হয়ে গেছে। আমি এবার শুধু অঙ্ক গুলো জুড়ছি। খুব জ্বালিয়েছিস তুই আমাদের। এবার তোর খবর আছে”।
মুখোশ খুলে গেছে। জাঙ্গিয়ার রং বেরিয়ে গেছে। আর লজ্জা করে লাভ নেই। দাশু কাকুতি মিনতি করতে শুরু করল, “শোন না, মাইরি বলছি আমি কারো ক্ষতি করি নি। আমার কোন দোষ নেই। প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর”।
শিঞ্জিনী বলল, “এস ডিকে নিয়ে যেটা করেছিলি, ঠিক করেছিলি তো? একটা স্টুডেন্টকে নিয়ে নোংরামি করেছিলি। এবার মেয়েটা যদি অপমানিত হয়ে সুইসাইড করে ফেলত, কে দায় নিত? তুই নিতিস?”
দাশু বলল, “আমি তো চেয়েছিলাম ওদের ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক। ব্যাপারটা ঘেঁটে যাবে বুঝতে পারি নি। মাইরি বলছি বিশ্বাস কর”।
শিঞ্জিনী বলল, “এবার গোটা কলেজ জানুক তুই অ্যাডমিন। তারপর ওরা বুঝে নিক কে কী করবে”।
দাশু বলল, “প্লিজ কাউকে বলিস না। প্লিজ প্লিজ। তোর পায়ে পড়ছি। আমি ক্ষমা চাইছি”।
শিঞ্জিনী বলল, “যদি রায়া তোর কাজের জন্য সুইসাইড করত তাহলে কী হত?”
দাশু বলল, “আমি ওর ক্ষতি করতে চাইনি বিশ্বাস কর প্লিজ। শোন, তুই যা বলবি, আমি তাই করব। শুধু কাউকে কিছু বলিস না”।
শিঞ্জিনী বলল, “ঠিক আছে। আমাকে, রায়াকে, শমীককে আর অঞ্জনাকে তোর কো অ্যাডমিন করে দে”।
দাশু হতাশ গলায় বলল, “ওরাও জেনে গেছে?”
শিঞ্জিনী বলল, “এখন অবধি আমরা জেনেছি। তুই এটা না করলে কাল গোটা কলেজ জেনে যাবে। যতজনের পেছনে কাঠি করেছিস এই পেজের মাধ্যমে তারা জানবে। এবার ভেবে দেখ তারপর কী হতে পারে”।
দাশু বলল, “করে দিচ্ছি। করে দিচ্ছি। প্লিজ, কাউকে বলিস না কিছু। ফুল কেস হয়ে যাবে তাহলে”।
শিঞ্জিনী বলল, “লোকের পেছনে লাগিস ঠিক আছে, সেটা যতক্ষণ নির্দোষ মজার মধ্যে আছে, মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যেটা কারো ক্ষতি করে, সেটা করে কি তুই ঠিক করেছিস?”
দাশু বলল, “ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা চাই”।
শিঞ্জিনী ফোন কেটে দিল। দাশু নিজের গালে জোরে জোরে চড় মারল। বলল, “শিট! বিড়ির পোষ্টটা কেন করতে গেলাম। ধরে ফেলেছে। উফ! ছি ছি ছি! হয়ে গেল। সব গেল। আমি শেষ। এবার কী হবে”?
শমীক ফোন করছে। দাশু ফোনটার দিকে কয়েক সেকেন্ড করুণ চোখে তাকিয়ে তারপর ফোন তুলল, “বল”।
শমীক বলল, “ভাই তুই তো এখন টপ মার্কেট যাচ্ছিস। ফুল কেস খেয়ে গেলি। এসবও করিস বলবি তো!”
দাশু বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে। এখন তো তোদের দিন। সিপিএম তৃনমূল জোট করে ফেলেছিস তোরা। যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবি। মজা নে। আমারও দিন আসবে”।
শমীক হেসে ফেলে বলল, “এস ডি কলেজ ছাড়ছে। ওকে নিয়ে একটা কম্বাইন্ড পোষ্ট করব পেজ থেকে। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ফর এভ্রিথিং। ঠিক আছে?”
দাশু বলল, “ঠিক আছে। আমি ভিডিও বানিয়ে দিচ্ছি। স্যারের কয়েকটা ছবি লাগবে। ফেসবুক থেকে নেওয়া যাবে, নাকি সেখানেও জেল হতে পারে?”
শমীক বলল, “ওয়েট কর। কনফারেন্স কল করছি”।
দাশু বলল, “এতো মহা নউটঙ্কি শুরু করলি তোরা। এই শোন, আমি ছেড়ে দিচ্ছি, তোরা পেজ চালা”।
শমীক বলল, “তা কী করে হয়? তুই হলি হারামিশ্রেষ্ঠ, তোকে বাদ দিয়ে কি এসব কাজ হয়?”
দাশু খুশি না হয়ে মিইয়ে গিয়ে বলল, “আর কী লাভ হল। ধরাই যখন পড়ে গেলাম আর কী হবে?”
৬৩
অঞ্জনা ঘরে ঢুকলে সুমনা বললেন, “আজ এত দেরী করলি?”
অঞ্জনা সোফায় বসে পড়ে বলল, “আজ অনেকগুলো ঘটনা ঘটল”।
সুমনা বললেন, “কী ঘটনা? আমাকে বলা যাবে?”
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ। না বলার কিছু নেই”।
সুমনা বললেন, “তাহলে বল”।
অঞ্জনা বলল, “রায়া আজকে জলে পড়ে গেছিল। ওকে একজন বাঁচিয়েছে। পরে জানা গেল রায়া এমনি এমনি পড়ে নি। ও এস ডিকে ভালোবাসে। আর এস ডি অরুন্ধতী ম্যামের সঙ্গে রিলেশনে আছেন। তাই রায়া জলে পড়ে গেছিল”।
সুমনা চোখ কপালে তুলে বললেন, “সেকি? তারপর? ঠিক আছে তো?”
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ, সেটাই বলছি তো। শোন। রায়ার সঙ্গে সবসময় শিঞ্জিনী থাকে। ওখান থেকে আমার সঙ্গে শিঞ্জিনীর ফ্রেন্ডশিপ হল”।
সুমনার মুখ হাঁ হয়ে গেল। বলল, “অ্যাঁ?”
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ। রায়াকে নিয়ে ওদের পিজিতে গেলাম আমরা। ওখানে ঠিক হল বিকেলে আমরা রেস্তোরাঁয় যাবো। বিকেলে আমরা কলেজের পরে রেস্তোরাঁয় গিয়ে ফ্রায়েড রাইস চিলি চিকেন শেয়ার করে খেলাম। খাবার পরে জানা গেল এস ডি চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ভাল চাকরি পেয়েছেন”।
সুমনা বললেন, “তোর ঘোষণাটি কি শেষ হল?”
অঞ্জনা বলল, “ও, আরেকটা ঘটনা হল আজ আমি ওদের বলেছি যে কনফেশন পেজটা দাশু চালায়। ওরা কেউ জানত না”।
সুমনা বললেন, “ভাবা যাচ্ছে না! আজ এত কাণ্ড হল! আর সব থেকে বেশি যেটা ভাবা যাচ্ছে না সেটা হল তুই শিঞ্জিনীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করলি। আবার রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেয়েও এলি!”
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ, এসব কোন কিছুই কঠিন না দেখলাম। উল্টে মনে হল, বন্ধুত্বটাই বেস্ট অপশন। শিঞ্জিনী ভাল মেয়ে। আমিই যে কী করতাম”!
সুমনা কয়েক সেকেন্ড হাঁ করে অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে থেকে অঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমার যে কী ভাল লাগছে, তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। এতদিনে তুই বড় হলি। এতদিন ধরে আমি শুধু ভেবে গেছি তুই কেন এরকম বিহেভ করছিস। এবার বুঝলাম। তুই নিজেও ওই শত্রুতাটা পছন্দ করছিলি না”।
অঞ্জনা বলল, “একদম তাই”।
সুমনা বললেন, “রায়ার খোঁজ নে। জলে পড়ে যাবে মানে ও কি ব্যাপারটা নিয়ে খুব সিরিয়াসলি ভেবে ফেলেছিল?”
অঞ্জনা বলল, “আরে সাধারণ ইনফ্যাচুয়েশন যেমন হয় না, ব্যাপারটা তেমন ছিল। ভাল লাগত, কেটেও যেত হয়ত। ওই দাশুটার জন্যই তো যত ঝামেলা। ছোট খাটো ব্যাপারটাকে কনফেশন পেজ টেজ দিয়ে সিরিয়াস জায়গায় নিয়ে চলে গেছিল। এখন দাশুর ব্যবস্থা করা হবে”।
সুমনার মজা লাগছিল মেয়ের কথা শুনতে। হাসি মুখে বললেন, “কীরকম? দাশুর কী ব্যবস্থা করা হবে?”
অঞ্জনা বলল, “ভাবছি। ভেবে নি। কেমন একটা সিক্রেট সুপারস্টারের মত সিক্রেট শয়তান ছেলে!”
সুমনা বললেন, “ঠিক আছে। আচ্ছা, এবার বল দেখি, নতুন বন্ধুত্ব করে কেমন লাগছে?”
অঞ্জনা বলল, “খুব ভাল লাগছে। আমার মনে হয় কলেজের পড়ে ছোট খাটো হ্যাং আউটেরও দরকার হয়। আমি যেমন শমীককে নিয়ে খুব কনফিউজ ছিলাম। একবার ভাবতাম শমীক খুব ভাল বন্ধু। আবার ভাবতাম শমীককে হয়ত আমি ভালবাসি”।
সুমনা বললেন, “তা এখন কোন ডিসিশনে এলি”?
অঞ্জনা ঠোঁট উল্টে বলল, “স্টিল কনফিউজড। তবে শমীককে নিয়ে আমি আর শিঞ্জিনী ঝামেলা করতাম মনে পড়লে খুব হাসি পাচ্ছে”।
সুমনা বললেন, “আচ্ছা। তাহলে এখনও ঠিক নেই শমীক আমাদের এখানে জামাইষষ্ঠী করতে আসবে নাকি?”
অঞ্জনা বলল, “না। ঠিক নেই। শমীকের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় ও তো বন্ধু, ওর সঙ্গে আবার কী হতে পারে, কিন্তু শিঞ্জিনী ওর সঙ্গে কথা বলেই আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল”।
সুমনা বললেন, “আচ্ছা! এ ক’দিনের মাথা গরমের এটাই প্রধান কারণ ছিল তবে?”
অঞ্জনা বলল, “ওই আর কী!”
সুমনা বললেন, “ওই আর কী?”
অঞ্জনা বলল, “আমি কনফিউজড ছিলাম আর কী। আসলে শমীকের সঙ্গে হোটেলে যাবার পর…”
অঞ্জনা ভুল বুঝে চুপ করে গেল।
সুমনা ভ্রূ কুঁচকে বললেন, “হোটেলে মানে? এটা আবার কবে হল?”
অঞ্জনা বলল, “না না। মানে ওসব কিছু না”।
সুমনা বললেন, “বলে যখন ফেলেছিস বল। কী হয়েছিল”?
অঞ্জনা বলল, “এগুলো বলা যায় নাকি?”
সুমনা বললেন, “বলে যখন ফেলেছিস বলে ফেল। হোটেলেও গেছিস?”
অঞ্জনা কয়েক সেকেন্ড মার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থেকে বলল, “ও বলে নি। আমিই বলেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমরা রিলেশনে আছি। ওখানে গিয়ে মনে হল আমি ভুল করছি। চলে এসেছিলাম”।
সুমনা বললেন, “যেদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এলি, সেদিন, তাই তো? তারপর সব আজেবাজে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলি”।
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ। এই নিয়ে কিন্তু আমরা আর কোন দিন কথা বলব না। ওকে?”
সুমনা বললেন, “ওকে, কিন্তু ওখানে গিয়ে তোর মনে হল শমীকের সঙ্গে তুই রিলেশনে নেই?”
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ”।
সুমনা বললেন, “কিছু করিস নি তো?”
অঞ্জনা জোরে জোরে মাথা নাড়ল, “না। কিচ্ছু করি নি”।
সুমনা বললেন, “এখন কি মনে হচ্ছে? শমীক তোর কী?”
অঞ্জনা বলল, “জানি না। তুমি কি এখন এটা নিয়ে ডিগ করতে শুরু করবে? তাহলে কিন্তু আমি নেই মা”।
সুমনা বললেন, “করব না। তবে হোটেল ফোটেল যাওয়ার ডিসিশন নিস না। ওগুলো সেফ না। এই বয়সে এমন কিছু করে ফেলিস না যার জন্য সারাজীবন কপাল চাপড়াতে হয়”।
অঞ্জনা বলল, “করি নি তো। ফিরে এসেছি”।
সুমনা বললেন, “আগে সব কথা আমাকে না বললে তোর পেট ফেটে যেত। এখন এই কথাটা এতদিন চেপে রাখলি। এটাই তোর অ্যাচিভমেন্ট”।
অঞ্জনা বলল, “এসব নিয়ে কেউ মার সঙ্গে কথা বলে? আমি কি পাগল?”
সুমনা বললেন, “তুই শমীকের সঙ্গে কিছু করিস নি তোর অপরাধবোধ থেকে। আর কোন কারণ নেই। তুই নিজেও জানতিস ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। ঠিক ভুল ব্যাপারটা খুব পলকা। তবু তুই বুঝতে পেরেছিস, এতেই আমি খুশি। শমীক ছাড়া কোন বন্ধু না থাকাটাই তোর সব থেকে বড় সমস্যা ছিল। আশা করি ইন ফিউচার তোদের বন্ধুত্বটা থাকবে। দেখা যাক”।
অঞ্জনা বলল, “তুমি কিন্তু হোটেলে যাওয়া নিয়ে আর ঘাঁটবে না। প্রমিস”?
সুমনা হেসে ফেললেন, “ওকে, প্রমিস”।
#
পিজিতে ফেরার পর থেকে রায়া চুপ করে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। শত চেষ্টা করেও শিঞ্জিনী ওর কান্না থামাতে পারে নি। খুব রেগে গিয়ে শিঞ্জিনী দাশুকে ফোন করার পর রায়াকে বলল, “দেখলি কেমন ঝাড়লাম? এবার তো ঠিক হ মা”।
রায়া বলল, “কাঁদতে দে। শরীর ভাল লাগছে না। কাঁদলে ভাল হবে”।
শিঞ্জিনী অবাক হয়ে বলল, “পৃথিবীতে একমাত্র তোকেই দেখলাম যে কাঁদলে ভাল থাকে। প্রণাম তোকে”।
রায়া উত্তর দিল না। শিঞ্জিনী বিরক্ত হয়ে বলল, “এভাবে চলবে?”
রায়া বলল, “কীভাবে?”
শিঞ্জিনী বলল, “এই যে তুই যেভাবে চালাচ্ছিস। কেঁদেই যাচ্ছিস। এবার বেশি বেশি হচ্ছে”।
রায়া বলল, “তুই কী করে বুঝবি? তুই কি কোনদিন কাউকে ভালবেসেছিস? যাকে ভালবাসলাম সে অন্য কারো সঙ্গে রিলেশনে আছে, ঠিক আছে। সেটাও মেনে নেওয়া যায়। দূর থেকে দেখেই ভাল থাকা যেত। কিন্তু এখন যদি তাকে কোন দিন আর দেখতেই না পাই, তাহলে কী করে হবে?”
শিঞ্জিনী বলল, “সেটাই তোর জন্য সব থেকে ভাল ব্যাপার হবে। আর দেখতে পাবি না কেন? ফেসবুকে দেখবি”।
রায়া বলল, “তোর সঙ্গে ওই শুভ্রদাকে ভাল মানাবে। তুইও বিড়ি টানা শুরু কর। তোদের বিড়ি ফ্যামিলি বলব”।
শিঞ্জিনী রায়াকে বালিশ ছুঁড়ে মারল, “ভাগ। শুধু আজে বাজে কথা। এই কান্না বন্ধ কর। আর ভাল্লাগছে না। এক কাজ কর। পড়তে বসে যা”।
রায়া উত্তর না দিয়ে পাশ ফিরে শুল।
শিঞ্জিনীর ফোন বেজে উঠল। সৌরভ ফোন করছে। শিঞ্জিনী ধরল, “হ্যাঁ স্যার”।
সৌরভ বলল, “রায়াকে ফোন করেছিলাম। ওর ফোন সুইচড অফ বলছে। ও কেমন আছে?”
শিঞ্জিনী ফোন স্পিকারে দিয়ে বলল, “ও শুয়ে আছে”।
সৌরভ বলল, “শরীর ঠিক আছে তো? জলে পড়ে গেল যখন, ডাক্তার দেখালে হত না”?
শিঞ্জিনী বলল, “সেসব কোন সমস্যা নেই স্যার। জ্বর আসে নি। ঠিকই আছে”।
সৌরভের গলা শুনে রায়া উঠে বসল। অবাক চোখে শিঞ্জিনীর দিকে তাকাল। সৌরভ বলল, “আমি কাল মুম্বই চলে যাবো। কলেজ হয়ত কিছুদিন সময় নেবে। নোটিস পিরিয়ডের ব্যাপার থাকবে”।
শিঞ্জিনী রায়ার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল। রায়া আবার শুয়ে পড়ল।
শিঞ্জিনী কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, “স্যার আপনি কি আমাদের সিলেবাস শেষ না করেই চলে যাবেন?”
সৌরভ বলল, “হ্যাঁ। সেটা ছাড়া তো উপায় নেই। ফিরে এসে দেখব কতটা কী এগিয়ে রাখা যায়। ঠিক আছে। তোমরা সাবধানে থেকো। তোমাদের বয়স কম, এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। হুইমজিকালি চলাটা ঠিক না। রায়া আজ যেটা করল…”
সৌরভ চুপ করে রইল।
রায়া শিঞ্জিনীর কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বলল, “আপনারা ভাল থাকুন, তাহলেই হবে। আমার চিন্তা না করলেও হবে”।
সৌরভ রায়ার কথা শুনে রেগে গেল, “তা বলে তুমি পুকুরে ডুবে যাবে? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
রায়া বলল, “আমার কথা ভাবার দরকার নেই তো স্যার। আপনি অরুন্ধতী ম্যামকে নিয়ে ভাল থাকুন”।
সৌরভ বলল, “তুমি বুঝতে পারছো না কেন? তুমি যখন বড় হবে, তখন এই ডিসিশন নিয়ে তুমিই রিগ্রেট করবে। তুমি অনেক ভাল ছেলে পাবে। কেন এসব নিয়ে ভাবছ? আমার মত কত ফ্যাকাল্টি আসবে যাবে, কত স্যালারি হয় একজন ফ্যাকাল্টির?”
রায়া বলল, “এই যে আপনি বড় চাকরি পেয়ে গেছেন। ফ্যাকাল্টিও তো আর থাকবেন না। আপনার সঙ্গে আমার রিলেশনে হলে কেউ বলতেও পারত না ফ্যাকাল্টির সঙ্গে রিলেশন করে কোন আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি। এথিকসেও আটকাবে না। তাহলে সেটা আমার রিগ্রেটের কারণ হবে কেন?”
সৌরভ থমকে গেল। রায়া যে এভাবে একটার পর একটা যুক্তি দিয়ে দেবে সে বুঝতে পারে নি। রায়া বলল, “বলুন স্যার। নাকি এগুলো কোন কারণই না। অরুন্ধতী ম্যামের সঙ্গে রিলেশনে আছেন বলে আমাকে কাটিয়ে দিলেন”।
সৌরভ বলল, “আমি কারো সঙ্গে কোন রিলেশন নেই। শুধু আমার ভূতটা তুমি নিজের মাথা থেকে নামিয়ে নাও”।
রায়া বলল, “আমার মাথা থেকে আমি কী নামাবো সেটা আমার ব্যাপার। তবে মনে রাখবেন আপনি যে যুক্তি দিচ্ছেন, সেগুলো এখন আর ভ্যালিড না। আপনি আমাদের ফ্যাকাল্টিও থাকবেন না। এবার কীভাবে কাটাবেন?”
সৌরভ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, “টেক কেয়ার রায়া। ভাল থেকো”।
ফোনটা কেটে গেল।
শিঞ্জিনী কয়েক সেকেন্ড রায়ার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে চিৎকার করল, “ওরে তুই তো ফাটিয়ে দিলি রে। উফ, ভাবতেই পারছি না। এভাবে বললি?”
রায়া বলল, “তো কীভাবে বলব? যত সব আজেবাজে যুক্তি দেয়”।
শিঞ্জিনী বলল, “ওরে উনি তোর স্যার রে”!
রায়া বলল, “তাতে যুক্তি তো ঠিক ঠাক দেবে তো নাকি? এতক্ষণ জানতাম এথিকসের প্রব্লেম। এখন তো কলেজ থেকেই চলে যাচ্ছে। তাহলে কীসের এথিকস হয়”?
শিঞ্জিনী হেসে ফেলল, “তুই তো অনেকদূর ভেবে ফেলেছিস মা!”
রায়া বলল, “আর কী হবে? চলেই তো যাবে। বাদ দে। চল পড়তে বসি”।
শিঞ্জিনী বলল, “উফ! এত মুড চেঞ্জ হচ্ছে তোর! সামাল দিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি!”
রায়া বলল, “মাথা গরম আছে। জ্বালাস না”।
শিঞ্জিনী হাত তুলল, “তথাস্তু”।
৬৪
পরের দিন সকাল।
বাস থেকে নেমে শমীক দেখল বৃষ্টি নেমেছে। সে ছাতা বের করে হাঁটতে শুরু করল।
“ওই। দাঁড়া দাঁড়া। আসছি”।
পিছন ফিরে শমীক দেখল অঞ্জনা ডাকছে। দাঁড়িয়ে গেল, “তুই ভ্যানে যাবি না?”
অঞ্জনা হাঁফাচ্ছিল। কোন মতে বলল, “না না। তোর সঙ্গে কথা আছে। সিরিয়াস কথা”।
শমীক হাঁটতে শুরু করল, “আবার কোন ইন্সট্রাকশন দিবি নাকি?”
অঞ্জনা বলল, “না না। সেসব কিছু না। আবার খানিকটা সেটাও”।
শমীক বলল, “ছাতার তলায় আয়। ভিজে যাবি নইলে”।
অঞ্জনা শমীকের ছাতার তলায় এসে বলল, “এখন আমাদের বাড়ির ধারে কাছ দিয়ে যাস না। মা আমাদের হোটেলের কথা জেনে গেছে। আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছি”।
শমীক বলল, “বাহ। খুব ভাল কাজ করেছিস। তবে চিন্তা করিস না, আন্টি আমাকে আজ সকালেই ফোন করে বার্থ ডে উইশ করে ফেলেছে। তুই ভুলে গেলেও আন্টি ভোলে নি”।
অঞ্জনা রেগে গেল, “আমি কেন ভুলতে যাবো? এই তো। তোর জন্য কী কিনেছি দেখ”।
অঞ্জনা ব্যাগ থেকে একটা পার্কার পেন বের করে শমীককে দিল। শমীক অবাক হয়ে বলল, “এটা কখন কিনলি?”
অঞ্জনা বলল, “কালকে ফেরার পথেই কিনে ফেলেছিলাম। ভুলতে যাবো কেন?”
শমীক বলল, “কী সৌভাগ্য আমার! আর হ্যাঁ, তোর এই টু পয়েন্ট জিরো ভারসানটাই বেটার। আমার বার্থ ডে মনে রাখছিস, সবার সঙ্গে মিশছিস, বেটার, ডেফিনিটলি বেটার”।
অঞ্জনা বলল, “তাহলে এটাও জেনে নে, কাল সারা রাত ধরে অনেক ভেবে টেবে বুঝে গেছি, তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর তোকে ভালোওবাসি। ঠিক আছে?”
শমীক বলল, “ফাইনাল তো ভাই? বিকেলে আবার চেঞ্জ হয়ে যাবে না তো?”
অঞ্জনা বলল, “না না। একদম ফাইনাল। তুই চাইলে তোকে লিপ কিসও করতে পারি”।
শমীক বলল, “ভাগ। আর চাইতে হবে না”।
অঞ্জনা বলল, “তুই কি আমাকে ভালবাসিস? না সেসব কিছুই নেই?”
শমীক বলল, “বাসি হয়ত। তুই ছাড়া তো কোন বন্ধুই নেই। আর আমি তোর উপর সেক্সুয়ালি অ্যাট্রাকটেড ফিলও করেছি”।
অঞ্জনা বলল, “ধুস। সেক্সুয়াল অ্যাট্রাকশনে ভালবাসা বোঝা যায় নাকি? ও তো এমনিতেই আসতে পারে।”
শমীক বলল, “সেটা নিয়েও সারারাত ভেবে নে। তোর আর কাজ কী?”
অঞ্জনা বলল, “জানিস, রায়াটার খোঁজ নিলাম শিঞ্জিনীর থেকে। খুব কান্নাকাটি করেছে, এস ডি নাকি ফোনও করেছিল”।
শমীক বলল, “খুব কমপ্লেক্স ব্যাপার। বেটার হয় রায়া সব ভুলে গেলে। রায়াকে বোঝাতে হবে”।
অঞ্জনা বলল, “আচ্ছা, ওদিকে দেখ তো, ওটা কী?”
অঞ্জনা ডান হাতের তর্জনী দিয়ে শমীকের ডানদিকে কিছু একটা দেখাল।
শমীক সেটা দেখতে যেতেই অঞ্জনা শমীকের গালে চুমু খেল। শমীক চমকে গিয়ে বলল, “এসব কী করছিস? লোকজন দেখতে পাবে তো”।
অঞ্জনা বলল, “চারদিক দেখে নিয়েই তো খেলাম। দেখলে দেখবে। এবার অ্যাট্রাকশন আসছে। মা ঠিকই বলছিল। তোর সঙ্গে আমি কিছু করতে চাইনি অপরাধবোধ থেকে। ওই জন্যই অতো সমস্যা হচ্ছিল। নাও আই অ্যাম ফাইন”।
শমীক আকাশ থেকে পড়ল, “এসব নিয়েও আলোচনা করে ফেলেছিস? সত্যিই আর তোদের বাড়ি যাওয়া যাবে না”।
অঞ্জনা বলল, “নরমাল কনভারসেশন। বেশি কিছু না। ভাগ্যিস একটু হলেও মার সঙ্গে ডিসকাস করা যায়, নইলে কনফিউশনেই আমি পাগল হয়ে যেতাম।”।
শমীক বলল, “আমার তো মা-ই নেই। আমি আর কী করে জানব এসব”।
অঞ্জনা বলল, “ছেলেরা পারে না। মেয়েরা মায়েদের সঙ্গে সব কথা বলে। সব মেয়েরা না বললেও অনেকেই বলে। আর আমি তো ছোটবেলা থেকেই বলি। তুই আসার আগে মা ছাড়া আমার তো আর কেউ ছিল না। আমার বন্ধু নেই, কিচ্ছু নেই। তুই ছিলি। সেই তুই দূরে গেলেই আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল”।
শমীক বলল, “খুব জ্বালাতন করিস তুই, জানিস তো”?
অঞ্জনা শমীকের হাত জড়িয়ে বলল, “বেশ করি। আচ্ছা, আজ বাংক মারবি? চল বৃষ্টির মধ্যে কলকাতা ঘুরে বেড়াই”।
শমীক বলল, “না বাপু। আজ ল্যাব আছে। আমি ওসবে নেই”।
অঞ্জনা বলল, “হুহ। পড়ে ফাটিয়ে দিবি যেন। চল না প্লিজ। জাস্ট একদিন। আর বলব না। তোর বার্থ ডে সেলিব্রেট করি”।
শমীক বলল, “আন্টি বকবে না?”
অঞ্জনা বলল, “আজই ফার্স্ট, আজই লাস্ট। আগের দিন শুধু শুধু হোটেলে গেছিলাম। ওসব না। ঘুরব। যাবি না? চল প্লিজ প্লিজ প্লিজ”।
শমীক বলল, “আচ্ছা চল। আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়েছি সত্যি। কী যে করিস! কোথায় যাবি?”
অঞ্জনা বলল, “ওসব ভেবেছি নাকি? আমি বেশি চিনিও না। চল, দেখি”।
শমীক কাঁধ ঝাঁকাল, “গুগল বের কর। কলকাতায় কী কী দেখার আছে দেখি”।
অঞ্জনা হাসতে হাসতে বলল, “ওটাই বাকি আছে। গুগল দেখে ঘুরব”।
শিঞ্জিনী আর রায়া ভ্যানে করে যাচ্ছিল। তাদের দেখে শিঞ্জিনী চিৎকার করল, “কী রে, উলটো দিকে কোথায় যাচ্ছিস? কলেজ যাবি না?”
অঞ্জনা বলল, “বাংক, বাংক। ভাল করে নোটস লিখবি। তোর থেকে নেবো। অ্যাই রায়া। টেক কেয়ার”।
রায়া ম্লান হাসল।
#
ভ্যানটা চলে গেলে ওরা দেখল বৃষ্টির মধ্যে অরুন্ধতী হাঁটতে হাঁটতে কলেজের দিকে যাচ্ছে। কেমন দিশেহারা ভাবে হেঁটে চলেছে। তাদের দেখতেও পেল না।
অঞ্জনা ছুটে গিয়ে অরুন্ধতীর হাত ধরল, “ম্যাম, সব ঠিক আছে তো?”
অরুন্ধতী চমকে অঞ্জনার দিকে তাকাল, “ওহ তুমি? হ্যাঁ। ঠিক আছে”।
অঞ্জনা বলল, “আপনি সাবধানে যান ম্যাম। সব ঠিক আছে তো?”
অরুন্ধতী হাসার চেষ্টা করল, “হ্যাঁ গো। তোমরা কলেজ যাচ্ছো তো? চল”।
অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ চলুন”। অঞ্জনা মাথা ঘুরিয়ে শমীককে ইশারা করল তাদের সঙ্গে কলেজের দিকে যাওয়ার জন্য। শমীক হেসে ফেলে নিজের মনেই বলল, “পাগলী একটা”।
#
সৌরভের ল্যাবের সামনে রায়া দাঁড়িয়ে আছে। সে অনেক চেষ্টা করছে কান্না আটকাতে, কিছুতেই পারছে না। শিঞ্জিনী খুঁজতে খুঁজতে তাকে দেখতে পেয়ে বলল, “ঠিক ধরেছি। তুই এখানেই থাকবি। চল চল। ক্লাসে চল।”।
রায়া বলল, “আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ও নেই। কী করব এবার?”
শিঞ্জিনী বলল, “ক্লাস করবি। আবার কী করবি? চল”।
রায়া বলল, “একবার গিয়ে ওর সামনের চেয়ারে বসি?”
শিঞ্জিনী বড় বড় চোখ করে বলল, “এবার কিন্তু বহুত বাড়াবাড়ি হচ্ছে রায়া। আমি পাতি ক্যালাবো তোকে”।
রায়া কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে বলল, “চল। ক্লাস করি”।
শিঞ্জিনী বলল, “চল। গিয়ে আমাকে বাঁচা”।
দুজনে মিলে ক্লাসের দিকে হাঁটতে লাগল।
শিঞ্জিনী বলল, “এখানে কাঁদছিলি, কেউ দেখে নি তো?”
রায়া বলল, “না। সবাই ক্লাসে গেছে। আমার মত কে আছে ল্যাবের সামনে এসে কাঁদবে?”
শিঞ্জিনী বলল, “এমন করিস তুই, সবাই জেনে যাবে তোর কথা”।
রায়া বলল, “জানলে জানবে। কী হবে তাতে? ভালোবাসি, এটাই তো জানবে। ওকে তো কিছু বলতে পারবে না। ও সব সময়েই শক্ত লাউন্ডা। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই কারো। তুই অতো ভাবিস না”।
শিঞ্জিনী বলল, “তুই যা করিস, না ভেবে উপায় থাকে না। যা করবি, বাবা মায়ের কথাটা ভাবিস দয়া করে”।
রায়া বলল, “না না, ওসব ভাবতে যাবই বা কেন?”
বৃষ্টি বেড়েছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। রায়া বলল, “আমিই বোকা”।
শিঞ্জিনী বলল, “ঠিক”।
রায়া বলল, “আমি গাধা”।
শিঞ্জিনী বলল, “এটাও ঠিক”।
রায়া বলল, “আমি এসব একবারেই ঠিক করি নি। স্যারের সঙ্গে কেউ প্রেম করতে যায়? কী সব করেছি, ইশ”।
শিঞ্জিনী বলল, “দারুণ বোধোদয়”।
রায়া বলল, “দেখ আমি আর কোন দিন কোন স্যারের দিকে তাকাবো না, তুই লিখে নে”।
শিঞ্জিনী বলল, “লিখে নিলাম। এটাই ফাইনাল”।
রায়া বলল, “চল, ক্লাস করি”।
শিঞ্জিনী বলল, “চল”।
রায়া বলল, “কী ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কলেজটা। এতদিন পর বৃষ্টি হল, আর আজকেই…”
রায়া দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “আমি আর পারছি না রে। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আমি ক্লাসে যেতে পারবো না এখন। তুই ক্লাস কর। কোন অসুবিধা নেই, আমি কোন রকম কোন পাগলামি করব না”।
শিঞ্জিনী বলল, “না ঠিক আছে। আমি আছি তোর সঙ্গে। লাইব্রেরীতে গিয়ে বসবি? চল”।
রায়া শিঞ্জিনীর হাত শক্ত করে ধরে হাঁটছিল। বলল, “কী বাজে জিনিস রে এসব। আর কাউকে কোনদিন ভালবাসতে যাবো না”।
শিঞ্জিনী কিছু বলল না। রায়ার ফোন বেজে উঠল।
রায়া ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখল সৌরভ ফোন করছে। সে অবাক হয়ে শিঞ্জিনীর দিকে তাকাল। শিঞ্জিনী বলল, “ধর ধর। দেখ কী বলছে”।
রায়া ফোন রিসিভ করল, “হ্যালো”।
“কলেজে গেছো?”
“হ্যাঁ”।
“ঠিক আছো এখন?”
“হ্যাঁ”।
“ক্লাস কোর মন দিয়ে। বাংক কোর না। ঠিক আছে?”
“আচ্ছা। চেষ্টা করব”।
“চেষ্টার কিছু না। কোর”।
“ঠিক আছে। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন”।
“রাখবো। তোমাকে সরি বলতে ফোন করেছিলাম। অরুন্ধতী ম্যামকেও সরি বলা উচিত। বলব। ওর ব্যাপারে তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। আমাদের মধ্যে কিছু নেই। তোমাকে কাল রাতেই বলেছিলাম। আজ আবার বলে দিলাম”।
“আচ্ছা”।
“ভালো থেকো। মন দিয়ে পড়াশুনা কর। ভাল হোক”।
“পড়াশুনা করব স্যার। আপনি না বললেও করব”।
“ভাল ভাল। তাহলে তো খুবই ভাল। রাখি তবে”?
“বাই”।
একটু অপেক্ষা করে ফোনটা কেটে গেল।
রায়া দাঁড়িয়ে পড়ল। শিঞ্জিনী বলল, “কী হয়েছে?”
রায়া চোয়াল শক্ত করে বলল, “ক্লাস করি চল। কারো জন্য খামোখা ক্লাস ডুব দেওয়ার তো কিছু নেই। আমাকে ভালবাসবে না, আমি কেন ভালবাসতে যাবো বল? ও ভালবাসলে কি ও চলে যেত? বাদ দে। চল”।
শিঞ্জিনী হাসল, “গুড গার্ল। চল”।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লাসে গিয়ে দেখল অঞ্জনা আর শমীক এসে গেছে। শিঞ্জিনী অবাক হয়ে বলল, “কিরে? তোরা এলি?”
শমীক কাঁধ ঝাঁকাল, “এই পাগলের পাল্লায় পড়লে সব হয়”।
শিঞ্জিনী বলল, “এখনও স্যার আসেন নি?”
অঞ্জনা বলল, “এখন কী করে স্যার আসবেন? স্যার আছেন?”
শিঞ্জিনী বলল, “ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তাহলে কি এটা অফ পিরিয়ড এখন?”
রায়া মাথা নিচু করে বসে ছিল। হঠাৎ ক্লাসের কোলাহল থেমে গেল। রায়া চোখ তুলে দেখল সেই লালচে জামাটা পরেই সৌরভ ক্লাসে ঢুকেছে। সে হাঁ হয়ে গেল। সৌরভ বলল, “এটা ক্লাস না মাছের বাজার? সবাই বস”।
অঞ্জনা বলল, “সেকি স্যার? আপনি গেলেন না?” সৌরভ বলল, “নাহ। অনেক ভেবে দেখলাম এই পচা শহরটা ছেড়ে পালালে তোমাদের ঠিক করবে কে? নাও ক্লাস, স্টপ টকিং, বোর্ডের দিকে তাকাও”।
রায়ার হাসি পাচ্ছে। কান্নাও পাচ্ছে। দুটোই প্রবলবেগে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
নিজেকে প্রাণপণে চিমটি কেটে দুই অনুভূতিকেই প্রাণপণে আটকে রেখে ডেস্কে বসে থাকল সে।
৬৫
অরুন্ধতী ক্লাস নোটস তৈরি করছিল। মাথার মধ্যে একগাদা চিন্তা কাজ করছে। ক্লাসের বাইরে সৌরভকে যেতে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। সৌরভ অনেকটা দূরে চলে গেছিল। অরুন্ধতী ফোন করল। সৌরভ ধরে বলল, “বল”।
অরুন্ধতী বলল, “আরে, তুমি যাও নি?”
সৌরভ বলল, “নাহ। যেতে যেতে শেষ মুহূর্তে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলাম। ইচ্ছে করল না”।
অরুন্ধতী বলল, “এত বড় সুযোগ ছেড়ে দিলে? এর পরে হায় হায় করতে হবে না তো?”
সৌরভ হাসল, “দেখা যাক। জীবনে কোন সিদ্ধান্তই তো ঠিক ঠাক নিতে পারি না। মাঝখান থেকে তোমাকে একটু জ্বালালাম”।
অরুন্ধতী বলল, “না না। কিছু জ্বালাও নি। এরকম কনফিউশন অনেক আসে। চিন্তা কোর না। তুমি বরং আরেকটু ভাবো। উইলসনের এইচ আরকে বলে কয়েকদিন সময় নাও”।
সৌরভ বলল, “সেটা করাই যায়। দেখি”।
ফোনটা রেখে অরুন্ধতী কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। ভাল লাগছে। সৌরভ চলে যাবে শোনার পর থেকে ভীষণ একা লাগছিল। নিজেকে বার বার এ কথা বলেই প্রবোধ দিয়ে যাচ্ছিল জীবনটা তাকে একাই কাটাতে হবে। সৌরভের না যাওয়াটা হয়ত ভালই হল তার জন্য।
ফোন বাজছে। অরুন্ধতী দেখল তার ল ইয়ার ফোন করছেন। ধরল, “বলুন মিস্টার সান্যাল”।
“মিষ্টি খাওয়াতে হবে ম্যাম”। সান্যালের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
অরুন্ধতী বলল, “কেন বলুন তো?”
সান্যাল বললেন, “কেসটা মিটেছে। আপনি এখন অফিসিয়ালি ডিভোর্সড”।
অরুন্ধতী শ্বাস ফেলল। বলল, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। অবশ্য ধন্যবাদ বলে ছোট করা ঠিক হল নাকি বলতে পারছি না। আপনি যে দ্রুততার সঙ্গে কাজটা করলেন, সেটাই অভাবনীয়”।
সান্যাল বললেন, “আমি রাতে আপনার বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো দিয়ে আসব। ভাল থাকুন ম্যাম”।
অরুন্ধতী বলল, “আপনিও খুব ভাল থাকুন”।
ফোন কেটে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকল সে। দীর্ঘ একটা লড়াইয়ের শেষ হল আজ। সম্পর্ক যেন ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পিজার মত। যতক্ষণ গরম ছিল, দারুণ সুস্বাদু ছিল। ঠাণ্ডা হয়ে গেলেই সেটা জুতোর সুকতলা হয়ে যায়।
“মে আই কাম ইন ম্যাম?”
দরজায় রায়া দাঁড়িয়ে আছে। অরুন্ধতী বলল, “এসো এসো”।
রায়া তার টেবিলের সামনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
অরুন্ধতী বলল, “বল রায়া। কিছু বলবে?”
রায়া বলল, “আই অ্যাম সরি ম্যাম”।
অরুন্ধতী অবাক হল, “কেন বল তো? কী হল আবার?”
রায়া বলল, “আমি আপনাকে আর এসডিকে নিয়ে একটা কনফেশন পোষ্ট করেছিলাম। সেটা নিয়ে খুব ঝামেলা হল। আমার ওটা করা উচিত হয় নি”।
অরুন্ধতী কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বসে থেকে বলল, “ঠিক আছে। এটা নিয়ে এত সরি বলার তো কিছু হয় নি। হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। ভুলে যাও। আর কখনো করবে না, তাহলেই হল”।
রায়া বলল, “আসলে ম্যাম, আমার মাথাটাই উলটো পাল্টা হয়ে গেছিল। আমি যে কী করছিলাম, মানে খুব বাজে কাজ করছিলাম”।
অরুন্ধতী বলল, “আমরা সবাই এরকম আজে বাজে কাজ এককালে করেছি বুঝলে? ওসব ভেবো না তো। সামনে সেম আসছে। পড়াশুনোয় মন দাও। চ্যাপ্টারগুলো সব বুঝছো তো? এখন এই রিলেশন, প্রেম এসব নিয়ে চর্চা করতে করতে দেখবে সেম চলে এসেছে। কাঁদারও সময় পাবে না। পড়াশুনো শুরু করে দাও”।
রায়া বলল, “আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন তো?”
অরুন্ধতী হেসে ফেলল, “হ্যাঁ রে বাবা। ওসব ঠিক আছে”।
রায়া বলল, “আসি ম্যাম”।
অরুন্ধতী বলল, “এসো”।
রায়া চলে যাচ্ছিল। অরুন্ধতী বলল, “শোন রায়া”।
রায়া দাঁড়িয়ে গেল।
অরুন্ধতী বলল, “এই বয়সটা খুব বাজে। কোন কিছু নিয়েই বেশি ভেসে যেও না। বুঝেছো?”
রায়া মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ ম্যাম। মনে থাকবে”।
অরুন্ধতী বলল, “তোমাদের গ্যাংটা দেখে খুব ভাল লাগল। একদিন আড্ডা মারব। ঠিক আছে?”
রায়া বলল, “ঠিক আছে ম্যাম। ভাল থাকুন”।
অরুন্ধতী বলল, “তুমিও। আর ভুলেও জলের কাছে যাবে না কিন্তু”।
রায়া এবার হেসে ফেলল।
৬৬
শিঞ্জিনী ক্যান্টিনে বসে অ্যাসাইনমেন্ট লিখছিল। শুভ্র এসে তার পাশের চেয়ারে বসে বলল, “বাস স্ট্যান্ডের ওখানে একটা নতুন পার্ক হয়েছে দেখেছিস?”
শিঞ্জিনী বলল, “ভুলেও ভেবো না তোমার সঙ্গে আমি ওখানে যাবো। দুঃস্বপ্নেও না”।
শুভ্র বলল, “আমি কি তোকে বলেছি ওখানে আমার সঙ্গে যেতে হবে?”
শিঞ্জিনী বলল, “তুমি কি ক্লাস টাস কর না? সারাক্ষণ এখানেই বসে থাকো?”
শুভ্র বলল, “ক্লাস করব না কেন? তোর সঙ্গে কথা বলতে এলাম। এটা একটা ডিউটি তো”।
শিঞ্জিনী বলল, “ডিউটি? কী ধরণের ডিউটি?”
শুভ্র বলল, “ওসব তুই বুঝবি না। হাইক্লাস ব্যাপার স্যাপার”।
অঞ্জনা এসে শিঞ্জিনীর পাশের চেয়ারে বসল। শিঞ্জিনী বলল, “এ দেখ, এসে গেছে আমাদের দাদা। রাখি আসছে না? আমাদের দাদাকে রাখি পরাবো”।
অঞ্জনা বলল, “রায়া কোথায় রে? চোখে চোখে রাখিস। এখন আবার এস ডির ল্যাবে না চলে যায়”।
শিঞ্জিনী সচকিত হয়ে বলল, “ঠিক বলেছিস তো”। কথাটা বলে শিঞ্জিনী শুভ্রকে বলল, “তুমি এখানে আজে বাজে না বকে দেখে এসো রায়া কোথায় গেল”।
শুভ্র বলল, “যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো”?
শিঞ্জিনী কড়া চোখে শুভ্রর দিকে তাকাল। শুভ্র সেটা দেখে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে যাচ্ছি। অতো গরম নেওয়ার কী আছে?”
শুভ্র চলে যেতে শিঞ্জিনী বলল, “জ্বালিয়ে খেল”।
অঞ্জনা বলল, “হি লাইকস ইউ”।
শিঞ্জিনী বলল, “সে তো বুঝতেই পারি। কিন্তু বিড়ি খোর। আমার বিড়ি খোর দেখলে কেমন অস্বস্তি হয়”।
দুজনেই হেসে ফেলল।
শুভ্র দু মিনিট পরে রায়ার সঙ্গে এল। বলল, “এই যে, ম্যাডাম অরুন্ধতী ম্যামের ঘরে ছিল”।
শিঞ্জিনী অবাক হয়ে রায়ার দিকে তাকাল। রায়া বসে বলল, “ম্যামের কাছে ক্ষমা চাইলাম কনফেশনটার জন্য”।
শিঞ্জিনী বলল, “কেন এসব করতে গেলি? ঝাড়ল?”
রায়া মাথা নাড়ল, “না। ঝাড়বে কেন? বলল পড়ায় মন দিতে”।
শিঞ্জিনী বলল, “এসব কেন করিস বল তো? একবার তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতিস?”
অঞ্জনা বলল, “রায়ার মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। সে জন্যই এসব করেছে”।
শুভ্র বলল, “অপরাধবোধ সবার মধ্যেই কাজ করে। যখন আমি অনেক দূরে, থাকব না এই মাটির ঘরে, ইয়ে কলেজে, তখন আমাকে নিয়েও অনেকে কাঁদবে”।
শিঞ্জিনী রেগে গেল, “কেউ কাঁদবে না তোমাকে নিয়ে। এরকম ডেস্পারেট হয়ে গেছো কেন তুমি?”
রায়া বলল, “ওকে কেউ দেয় না তো, তাই”।
শুভ্র বলল, “বল। তুই তো বলবিই। তোকে বাঁচালাম, এখন তুইই এসব কথা বলবি। এই তো হয়”।
অঞ্জনা বলল, “এস ডিকে নিয়ে একটা ভিডিও বানানোর কথা হচ্ছিল। সেটা তাহলে আর দরকার নেই?”
শিঞ্জিনী বলল, “আপাতত। আবার যদি মন পাল্টায়, যদি চলে যায়”।
রায়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
শুভ্র বলল, “ফ্যাকাল্টিদের স্যালারি কত হয়? খুব বেশি তো হয় না। এই চাকরি কেন করবে? ভাল চাকরি পেয়েছিলেন তো। কার জন্য থেকে গেলেন?”
শিঞ্জিনী রায়ার দিকে তাকাল। রায়া বলল, “আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? আমি কিছু জানি না। আমি এসবের মধ্যে থাকতে চাই না একবারেই”।
শিঞ্জিনী বলল “ওই দেখ। এস ডি”।
রায়া বলল, “ইয়ার্কি মারিস না তো। ভাল লাগছে না”।
অঞ্জনা বলল, “আরে ইয়ার্কি মারবে কেন? সত্যিই উনি এসেছেন। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছেন”।
রায়া চমকে পেছনের দিকে তাকাল। সৌরভ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাত নেড়ে ডাকল। রায়া শিঞ্জিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, “এ কী রে? ডাকছে কেন?”
শিঞ্জিনী বলল, “গিয়ে দেখ”।
রায়া উঠে ভয়ে ভয়ে সৌরভের কাছে গেল। সৌরভ বলল, “তুমি আমাকে ভালোবাসো?”
রায়ার বুক ঢিব ঢিব করছিল। প্রশ্নটা শুনে সে একবার পেছনে বন্ধুদের দিকে তাকাল। পরক্ষণে সৌরভের দিকে দৃঢ়স্বরে বলল, “হ্যাঁ”।
সৌরভ বলল, “তুমি জানো কলেজে ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট রিলেশনশিপ হলে কী প্রব্লেম হতে পারে?”
রায়া বলল, “ভেবে দেখেছি স্যার। কলেজে কোন কথা না বললেই হল”।
সৌরভ হেসে ফেলল, “তুমি সব ভেবে ফেলেছো?”
রায়া বলল, “এ ক’দিন সকাল বিকেল তাইই তো ভেবেছি”।
সৌরভ রায়ার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল, “এমন ভেবেছ যে জলে ডুবে যেতে বসেছিলে?”
রায়া বলল, “ওসব তো হয়। এখন ঠিক আছি স্যার”।
সৌরভ বলল, “ঠিক আছো?”
রায়া মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ”।
সৌরভ বলল, “ওকে। টেক কেয়ার”।
রায়া বলল, “হ্যাঁ স্যার। এটা বলার জন্য ডেকেছিলেন?”
সৌরভ বলল, “না। আমি ডেকেছিলাম এটা বলার জন্য যে আমি নিজেও জানি না আমি কেন চাকরি ছেড়ে গেলাম না। হয়ত খুব বড় ভুল করলাম। তাও আমি খুশি। আমি সব থেকে বেশি ভালবাসি পড়াতে। আর সেটাই আজীবন করে যেতে চাই। তুমি মন দিয়ে ভাল করে পড়। পাস আউটের পর তুমি যে ব্যাপারে কথা বলতে চাও, তখনও যদি তোমার সেটা বলার মত ইচ্ছে থাকে, সেটা বলব না হয়?”
রায়া হাঁ করে সৌরভের দিকে তাকাল।
সৌরভ বলল, “আমি ল্যাবে গেলাম। আর বার বার ফলো করার দরকার নেই। পড়ার কাজ পড়। আমি থাকব। কোথাও যাব না। ঠিক আছে?”
রায়ার পা নড়ছিল না। চারদিকে যেন সবাই চুপ করে গেছে। একবার কি নিজেকে চিমটি কেটে দেখবে? নাহ, সেটাও করতে ইচ্ছে করছে না। তাতে যদি এই মুহূর্তটাই মিথ্যে হয়ে যায়? সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
আরেকটু দূরে, লালুদার মাচায় তখন দাশু তখন দাশু আরেকটা কনফেশন পেজ তৈরি করতে ব্যস্ত।
এবারেরটা মারাত্মক অ্যানোনিমাস পেজ বানাতে হবে। সে নিজেই যেন নিজের পোষ্ট দেখে কিছু চিনতে না পারে…
খুব ভালো লাগলো গল্প টা।