নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক – ১০

১০

#২৩৭

রিপ্লাই টু #২৩৪ কনফেশন

রাত ২টোর পোস্ট-

বাই এনি চান্স, কনফেশনটা কি এস ডির জন্য ছিল?

প্রথম দুটো ক্লাস ফাঁকা আছে। সৌরভ ডেস্কে বসে কাজ করছিল।

এ বি, অরুন্ধতী বসু দরজায় নক করে ঢুকল।

সৌরভ বলল, “আরে, সকাল সকাল কী মনে করে ম্যাডাম?”

অরুন্ধতী বলল, “এই কলেজের স্টুডেন্টরা ফেসবুকে একটা কনফেশন পেজ চালায়, জানো?”

সৌরভ বলল, “আমার সেভাবে ফেসবুক করা হয় না। দেখিই না। কেন বল তো?”

অরুন্ধতী তার মোবাইল বের করে কনফেশনটা দেখাল। সৌরভ কনফেশনগুলো দেখে বলল, “ওহ। এগুলো তো জাস্ট ফর ফান পেজ”।

অরুন্ধতী বলল, “কোন কেস হয় নি তো?”

সৌরভ বলল, “কীসের কেস? এগুলো তো হবেই! এতে চাপ নেওয়ার কী আছে?”

অরুন্ধতী বলল, “ব্যাপারটা ঠিক চাপ না। তোমার নাম জড়িয়েছে, আর তোমাকে সেভাবে ফেসবুকে দেখি না বলেই জানিয়ে দিয়ে গেলাম। এসব জেনে রাখা ভাল। কোন স্টুডেন্ট কোথায় তোমাকে প্রপোজ টোপোজ করে দিল, তৈরি থাকা ভাল। তাই না? সব কিছুকে জাস্ট ফর ফান ভেবে নিও না। সমস্যা হতে পারে।”

সৌরভ বলল, “আমাকে উদ্দেশ্য করেই কনফেশনটা করেছে নাকি, সেটা কিন্তু এখন কনফার্ম না। আর এতে আমার কোন ফিলিংস কাজ করে না এ বি। আমাদের অনেক কাজ আছে, সেমিস্টার আছে এত বড় কোভিড লকডাউনের পরে। বুঝতেই পারছো কত রেসপন্সিবিলিটি থেকে যাচ্ছে। অনলাইনে ক্লাস নিতে নিতে হালত খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। এদের এগুলো তো পিওর ইনফ্যাচুয়েশন। কলেজ শেষ হবে, সব ভুলে যাবে। ধীরে ধীরে আমরাও বুড়ো হব। অন্য কোন ফ্যাকাল্টি নিয়ে এসব হবে। অতো চিন্তার কিছু নেই বোধ হয়”।

অরুন্ধতী কাঁধ ঝাঁকাল, “ঠিকই। জানাতে এসেছিলাম, জানানোর দরকার ছিল। জানানো হয়ে গেছে, চলে যাচ্ছি”। বলে অরুন্ধতী হেসে ফেলল।

সৌরভও হেসে বলল, “দারুণ বললে তো! তোমার খবর কী? ডিভোর্স পাওয়া গেল?”

অরুন্ধতী বলল, “অনেক ক্যাচাল চলছে। অতো তাড়াতাড়ি জটগুলো খুলবে নাকি জানি না। মিটলে বাঁচা যায়। পুরষজাতির উপরই ঘেন্না ধরে গেল”।

সৌরভ সভয়ে বলল, “ওরে বাবা, কী ভয়ের ব্যাপার। তুমি আমাকেও ঘেন্না করতে শুরু করে দিলে নাকি?

অরুন্ধতী বলল, “ঘেন্না ঠিক না। তবে সবাইকে অতো সহজে বিশ্বাস করতে পারি না আর কী! মুখে ভাল ভাল কথা বলে একজন কী করে আরেকটা অ্যাফেয়ার চালায় কে জানে। আমি হঠাৎ করে জানতে পারলাম বলেই তো?”

সৌরভ বলল, “হ্যাঁ, সেটা ঠিক। এ ব্যাপারে তুমি কথা না বলতে চাইলে ঠিক আছে। ছেড়ে দাও”।

অরুন্ধতী বলল, “দেখো সৌরভ, আমি কথাটা তুমি বলেই বললাম। এই যে স্টুডেন্টগুলো আছে, এদের সঙ্গে আরো সচেতনভাবে মেলামেশা করো। কোনভাবেই কোন প্রশ্রয় দিচ্ছো, এরা যেন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে না পারে। এদের বয়স কম, এদের ইনফ্যাচুয়েশনগুলো সামান্য প্রশ্রয় পেলেই সমস্যা তৈরি করে ফেলবে। তোমার বাড়ি থেকে নিশ্চয়ই মেয়ে দেখা চলছে? এখন যদি কলেজে এরকম কোন সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে গোটা লাইফটা হেল হয়ে যাবে। বুঝেছো?”

সৌরভ বলল, “বুঝেছি। থ্যাংকস ফর ইয়োর কনসারন। আমি ব্যাপারটা নিয়ে অত ডিপলি ভাবতামও না হয়ত। তবে আফটার লকডাউন, অনেক কিছুই পাল্টাচ্ছে। ব্যাপারটা কলেজ ম্যানেজমেন্টের কানে গেলেও ঝামেলা হবার চান্স আছে। আমি সিরিয়াস হয়ে যাবো। তবে কোন স্টুডেন্টের সঙ্গেই আমি হালকাভাবে কথা বলি না। হতে পারে ওই কনফেশনটা আমাকে নিয়ে না। অনেকেই আছে তো”।

অরুন্ধতী বলল, “হতে পারে। কিন্তু তোমার নামটা উঠেছে। ওই জন্যই এলাম। ফোন করেও বলা যেত, সেটা না করে নিজেই চলে এলাম। কলেজ বন্ধ ছিল। ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস সবাই এত দিন ঘরে ছিল। এই সময়টা অনেক বেশি ক্রুসিয়াল”।

সৌরভ মাথা নাড়ল, “ঠিক ঠিক”।

জানলার বাইরে একটা মুখ দেখা দিল গতকালের মত। সৌরভ তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়ে দেখল রায়া দাঁড়িয়ে আছে। “বল কী বলবে?”

রায়া অরুন্ধতীকে দেখে বলল, “না ঠিক আছে স্যার। আমি পরে আসছি”।

সৌরভ অবাক হয়ে বলল, “পরে আসার কী আছে? কী বলবে?”

রায়া বলল, “পরে বলছি স্যার”।

রায়া দাঁড়াল না। চলে গেল। সৌরভ ভ্রূ কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে রইল।

১১

ক্লাস শুরু হয়ে গেছিল। রায়া থমথমে মুখে শিঞ্জিনীর পাশে গিয়ে বসল। শিঞ্জিনী তার ডায়েরীর পেজে লিখল, “কী হল? তোর মুখটা এরকম কেন?”

রায়া শিঞ্জিনীর লেখার নিচে লিখল, “আই থিংক এবি আর এসডির মধ্যে সাম থিং সাম থিং হ্যাপেনিং”।

শিঞ্জিনী লেখাটা চোখ বড় বড় করে দেখে রায়ার হাতে একটা চিমটি দিয়ে লিখল, “ভাগ। পজেসিভনেস তাও ভাল, সন্দেহবাতিকটা অসুস্থ করে দিতে পারে। বিওয়ার”।

রায়া কিছু না লিখে খাতার মধ্যে হিজিবিজি আঁকতে শুরু করে দিল। শিঞ্জিনী খাতাটা সরিয়ে নিল। ক্লাস চলাকালীন দুজনে আর কোন কথা হল না। শেষ হতেই শিঞ্জিনী ফিস ফিস করে বলল, “এগুলো বেশি বেশি। এরকম সন্দেহ করিস না। অসুস্থ হয়ে যাবি”।

রায়া বলল, “আমি সন্দেহ করব কেন? উনি সৌরভের ঘরে একা একা কী করতে যাবে? শুধু ওর সঙ্গে দেখা করতে উনি পাশের বিল্ডিং থেকে চলে এসেছেন। তুমুল পুরকি না থাকলে এটা হয় না”।

শিঞ্জিনী বলল, “ঠিক আছে। মাথা গরম করিস না। ঠিক হয়ে যাবে”।

রায়া বলল, “আমার কান্না পাচ্ছে। আমি আর ক্লাস করব না। ক্যান্টিনে গেলাম”।

রায়া ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। শিঞ্জিনী রায়ার পেছন পেছন গিয়ে বলল, “এই ক্লাসটা মিস করবি? এর পর সেম দিতে পারবি না তুই অ্যাটেনডেন্সের জন্য”।

রায়া বলল, “ভাড় মে জায়ে অ্যাটেন্ডেন্স। আমার কিছু দরকার নেই। সুখে থাকুক ও, আমি কলেজ ছেড়ে দেব। বাবাকে বলব একটা সরকারি কাকু দেখে বিয়ে দিয়ে দেবে, সংসার করব”।

শিঞ্জিনী হেসে ফেলল, “সরকারি কাকুর থেকে কোন নেতাকে বিয়ে করে ফেল”।

রায়া বলল, “হ্যাঁ, আর তারপর এস এস কে এমে ফুলসজ্জা করব নাকি?”

শিঞ্জিনী হাসতে হাসতে বলল, “এটাই তোর একমাত্র প্ল্যান বি? এস ডি না থাকলে বিয়ে?”

রায়া বলল, “হ্যাঁ। আর কী করব বল? জীবনের তো কোন মানেই থাকবে না। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফ্যাকাল্টিদের আর কত স্যালারি হয়? আমি কোন এম এন সিতে চাকরি করব, ও পড়াশুনা করবে, এটাই তো ভেবে নিয়েছিলাম”।

শিঞ্জিনী বলল, “অনেক বেশিদূর ভেবে নিয়েছিলি। হি ইজ টু ওল্ড”।

রায়া ফুঁসে উঠল, “একদম ওল্ড বলবি না ওকে”।

শিঞ্জিনী বলল, “কেন বলব না? তোর উনি তো আরেকজনের হয়ে গেল অ্যাকরডিঙ টু ইউ। তাহলে যাই বলি না কেন, তোর তো গায়ে লাগার কোন কারণ নেই!”

রায়া বলল, “অফিসিয়ালি এখনও যায় নি। এখন ড্রাফট হয়ে আছে। যদি কেস সত্যি হয়, তাহলে পাখিকে সেন্ড করে দিয়ে বলব যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে”।

শিঞ্জিনী বলল, “তুই এত চাপ নিয়ে নিস না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে”।

রায়া বলল, “কিছু ঠিক হবে না। আমাকে শিওর বাচ্চা বলে ভাগিয়ে দেবে। ওই এবির ডিভোর্স হয়ে গেছে না? তার মানে দেখা যাবে এস ডির জন্যই ডিভোর্স হয়েছিল। হয়ত ওদের অনেক দিন আগে থেকেই প্রেম চলছে গোপনে গোপনে। নইলে ওর ঘরে এবি হঠাৎ করে যাবে কেন?”

শিঞ্জিনী বলল, “গসিপ করতে যেতে পারে। কালকে কনফেশন পেজে মাঝরাতে একটা পোষ্ট হয়েছে। দেখিস নি?”

রায়া দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “কখন?”

শিঞ্জিনী বলল, “কী করে দেখবি? ঘুম থেকে উঠেই তো কলেজে দৌড় দিয়ে এলি। এত লেট রাইজার হলে হয়? রাতে একটা পোষ্ট এসেছিল যে টিচার মানে এস ডির কথা বলা হচ্ছে নাকি? অনেকেরই এস ডির উপর নজর আছে হয়ত”।

রায়া একটু চিন্তা করে বলল, “সহজে বশীকরণ করে, এরকম কোন তান্ত্রিক চেনা জানা আছে তোর? আমি এস ডির উপরে প্রয়োগ করব তাহলে?”

শিঞ্জিনী বলল, “ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তান্ত্রিক দিয়ে বশীকরণ করবি? বাহ। অনেক উন্নতি হয়েছে”।

রায়া বলল, “কী করব তাহলে আমি? চোখের সামনে নিজের জানেমনকে অন্যের হাতে যেতে দেখব”?

শিঞ্জিনী বলল, “গাঁটছড়ার জুন মালিয়ার মত ওয়েট এন্ড ওয়াচ কর। তাতে যদি কাজ দেয়”।

রায়া বলল, “মনটাই খারাপ হয়ে গেল, ধুস ধুস ধুস”।

১২

রিসেপশনের ছেলেটা বলল, “দুজনেই হেলমেট খুলুন। এভাবে হেলমেট পরে থাকলে হবে না। হোটেলের কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশন আছে”।

সাগ্নিক হেলমেট খুলল। ছেলেটা বলল, “আপনাকেও হেলমেট খুলতে হবে”।

সুকন্যা ইতস্তত করে তার হেলমেট খুলল। ছেলেটা দুজনের আই কার্ড জেরক্স করে চাবি আর আই কার্ডের অরিজিনাল কপি জেরক্স করে বলল “টু জিরো ফোর”।

সাগ্নিক তাড়াতাড়ি চাবি নিয়ে হাঁটতে শুরু করেই শুনতে পেল ছেলেটা বলছে, “অল্প বয়সে পাকলে আল, তার দুঃখ চিরকাল”।

সাগ্নিক জিজ্ঞেস করল, “কী বলছেন?”

ছেলেটা বলল, “কিছু না। যান”।

লিফটে উঠে সুকন্যা বলল, “মহা হারামি মাল”।

সাগ্নিক বলল, “দাঁড়া না, বাইরে পাই একদিন। ঠ্যাং ভেঙে দেব বাইঞ্চোতের”।

দরজা খুলে রুমে ঢুকেই দুজনে শুরু হয়ে গেল। চুমু খেতে খেতে সুকন্যা হঠাৎ করে সরে গিয়ে বলল, “প্রোটেকশন এনেছিস তো?”

সাগ্নিক বলল, “না। কখন কিনব? ও আমি ঠিক সময়ে তুলে নেব, নো প্রব্লেম”।

সুকন্যা সাগ্নিকের পায়ে লাথি মেরে বলল, “ফোট। ওসব আমাকে বোঝাতে আসবি না। যা কিনে নিয়ে আয়। নইলে চল বেরিয়ে যাই”।

সাগ্নিক লাথি খেয়ে খাটে বসে পড়ল, “কোথায় বেরোব, কেন বেরোব, মানে এত ঝামেলা করে এলাম, ছেলেটাকে চমকালাম, তুই এখন এসব বাওয়াল দিচ্ছিস?”

সুকন্যা বলল, “হ্যাঁ দিচ্ছি। কারণ তুই এখন এসব ন্যাকামি করবি, আর আমার কিছু হলে তখন তোকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ওসব আমি বুঝি, আমাকে অতো জ্ঞান দিতে হবে না”।

সাগ্নিক বলল, “এখন বেরোব আবার? যদি কিছু জিজ্ঞেস করে”।

সুকন্যা বলল, “করলে করবে। আমার কী? মালের দায়িত্ব আরোহী। যা গিয়ে নিয়ে আয়”।

সাগ্নিক ব্যাজার মুখে বেরোল। সুকন্যা রুম সার্ভিসে ফোন করে খাবার অর্ডার করে দিল। কিছুক্ষণ পর সাগ্নিক রুমে ঢুকে বলল, “বহুত জ্বালাতন করিস তুই”।

সুকন্যা চুইংগাম চিবোতে চিবোতে বলল, “লাভ নেই। আমার পিরিয়ড হয়ে গেছে”।

সাগ্নিক হাঁ করে সুকন্যার দিকে তাকিয়ে বলল, “কখন হল?”

সুকন্যা বলল, “এই তো তুই গেলি, তখনই হল। নে এবার গান কর, আমি হলাম রেডিও লেডি কিলার রেডিও”।

সাগ্নিক বিফল মনোরথ হয়ে সোফায় বসে পড়ে বলল, “এখন এইগুলো কি পরে বসে থাকব ভাই?”

সুকন্যা বলল, “যেখানে ইচ্ছে পরে বসে থাক। বেলুন করে ফোলাতেও পারিস। কোন অসুবিধা নেই”।

সাগ্নিক বলল, “কত আশা করে এসেছিলাম, জীবনের প্রথম কেস, তুই পুরো শেষ করে দিলি। ধুস”।

সুকন্যা বলল, “আমার কিছু করার নেই তো। অ্যাক্ট অফ উপরওয়ালা। এখানে কিছু করার থাকে না”।

কলিং বেল বাজল।

সাগ্নিক চমকে উঠে বলল, “কে রে?”

সুকন্যা বলল, “ফ্রায়েড রাইস, চিলিচিকেন আর আইসক্রিম। নিয়ে আয়”।

সাগ্নিক বলল, “টাকা কে দেবে?”

সুকন্যা বলল, “তুই দিবি। নিয়ে আয়”।

সাগ্নিক দরজা খুলে খাবার নিয়ে এসে বলল, “বেশি মাল কড়ি নেই, হিসেব করে চল প্লিজ”।

সুকন্যা বলল, “খিদে পেয়েছে, কী করব বল? তুই তো “করো” হোটেলে নিয়ে এসেই খালাস। সকালে মেসে কিছু রান্নাই হয় নি যখন বেরিয়েছিলাম”।

সাগ্নিক বলল, “আহা রে। ঠিক আছে খেয়ে নে। তারপর বেরোনো যাক”।

সুকন্যা বলল, “কেন? বেরোব কেন? তুই দেখি বুদ্ধিজীবী হয়ে যাচ্ছিস দিনে দিনে। ধান্দা না মিটলেই চেপে যাস। কী ব্যাপার তোর? সারাক্ষণ যে প্রেমের কথাগুলো বলিস, সেগুলো বল? নাকি সবই সেক্সের জন্যই করতিস”?

সাগ্নিক থতমত হয়ে বলল, “না না। এমা! এসব কী বলছিস তুই? আমি কি ও চোখে তোকে কোনদিন দেখেছি নাকি?”

সুকন্যা বলল, “কোন চোখে দেখেছিস? বোনের চোখে?”

সাগ্নিক বলল, “হে হে, কী যে বলিস। বোন কেন হবে? আমি তো তোকে ভালবাসি”।

সুকন্যা গালে হাত দিয়ে বলল, “ভালবাসিস? তাহলে বল ভালবাসার কথা। শুনি?”

সাগ্নিক বলল, “ওগুলো কী করব?”

সুকন্যা বলল, “পরিয়ে বসে থাক। আর কী করবি”?

সাগ্নিক ব্যাজার মুখে বসে রইল।

১৩

আঁচল আগরওয়াল বিরাট একটা বড় গাড়ি করে কলেজে আসে। গাড়িটা শুধু ওকে নামিয়েই দিয়ে যায় না, যতক্ষণ কলেজ থাকে, ড্রাইভারসহ পার্কিঙে দাঁড়িয়ে থাকে। কলেজ যখন প্রথম খুলেছিল, তখন প্রথম প্রথম বাকিরা হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে থাকত, পরে অভ্যাস হয়ে গেছে।

দাশু অনেক হিসেব করে দেখেছে, বড়লোকের মেয়েকেই তুলতে হবে। সে ক্লাসের শুরু থেকে আঁচলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। তার হিন্দি খুব একটা সুবিধের না বলে মনের কথা পুরোপুরি বলতে পারছে না বলে খুঁতখুঁত করছে।

ব্রেকের সময় আঁচল মোবাইল ঘাঁটছিল, দাশু গম্ভীর হয়ে আঁচলের পাশে বসে বলল, “হোয়াটস আপ?”

আঁচল হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আই অ্যাম অলরেডি ইন কলেজ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ”!

দাশু বলল, “আরে হোয়াটস আপ মতলব ক্যা খবর?”

আঁচল হেসে ফেলল, “ক্যা হুয়া তেরেকো?”

দাশু বলল , “আমি সাডেনলি ভাবলাম তু কিতনি আচ্ছি হ্যায়!”

আঁচল বলল, “ও তো মে হু”।

দাশু বলল, “বি এফ হ্যায়?”

আঁচল বলল, “হাঁ হ্যায়। কিউ?”

দাশু বলল, “লিভ হিম। উসে ছেড়ে দে”।

আঁচল হি হি করে হেসে বলল, “কিস খুশি মে?”

দাশু বলল, “মেরা মাতারাণী হিন্দুস্তানি বহু মাঙ্গতা। তু মুঝসে শাদি করলে”।

আঁচল দাশুর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল।

দাশু বলল, “কিয়া হুয়া?”

আঁচল হাসতে হাসতে বলল, “ক্যা ইয়ার, একদম সে আকর স্ট্রেট শাদি ওয়ালি বাত? তেরা ক্যা হুয়া?”

দাশু গম্ভীর গলায় বলল, “আতা মাঝি সটকলি”।

আঁচল ব্যাগ থেকে একটা টফি বের করে দাশুকে দিয়ে বলল, “খা লে। পাগল”।

দাশু টফিটা নিয়ে বলল, “এর মানে আমার মা হিন্দুস্তানি বহু পাচ্ছে?”

আঁচল বলল, “ও বাহারওয়ালী গাড়ি কিসকা হ্যায় মালুম হ্যায় তেরেকো? মেরে বয়ফ্রেন্ডকা”।

দাশু বলল, “তো ক্যা হুয়া? কোই বাত নেহি। আমি তোর জন্য একটা টোটো কিনে দেব। তুই টোটো করে কলেজে আসবি”।

আঁচল এবার খচে গেল, “এ তু যা। অভি নিকাল”।

দাশু বলল, “ঠিক আছে, তাহলে তোর বয়ফ্রেন্ড কো বোল কর তু মুঝে গোদ লে লে”।

আঁচল পেন নিয়ে দাশুকে তাড়া করল। দাশু দৌড় মারল। ক্লাস থেকে বেরিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে শমীককে ধাক্কা মারল। শমীক বলল, “কী হয়েছে? হাঁফাচ্ছিস কেন?”

দাশু বলল, “আরে সকালে ঠিক করলাম আঁচলকে বিয়ে করব। প্রপোজ করতেই তাড়িয়ে দিয়েছে”।

শমীক অবাক হয়ে বলল, “মানে? হঠাৎ করে ঠিক করলি আঁচলকে বিয়ে করবি? তুই কি আবার পাগল হয়ে গেছিস? নাকি কোভিড হবার আগে যেটুকু সুস্থ ছিলিস, সেটাও আর নেই?”

দাশু বলল, “আরে ভেবে দেখ, ও তো পয়সাওয়ালা ঘরের মেয়ে, তুলতে পারলেই কেল্লা ফতে। এখন অবশ্য জানতে পারলাম ওই গাড়িটা ওর বয়ফ্রেন্ডের। তাহলে তো ওর পয়সা নেই, ওর বয়ফ্রেন্ডের আছে। দাঁড়া এক মিনিট”।

দাশু দৌড়ে ক্লাসে ঢুকে আঁচলকে বলল, “এই আঁচল, তোর বয়ফ্রেন্ডের বোন থাকলে বলিস, বিয়ে করব”।

আঁচল পেন ছুঁড়ে মারল। দাশু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়ে বলল, “চান্স কম। আঁচল হেবি খচে গেছে। ব্যাপারটা পরে সাল্টাবো। তোর কেস বল। কালকে ছুটি নিয়ে কোথায় গেছিলিস দুটিতে? একদিনে দুজনেই ডুব মেরে দিলি?”

শমীক আমতা আমতা করে বলল, “অঞ্জনা আসে নি কেন আমি জানি না। আমি অসুস্থ ছিলাম বলে আসি নি”।

দাশু বলল, “অসুস্থ ছিলিস? কী হয়েছিল? বিচিতে ধনুষ্টংকার?”

শমীক বলল, “ভাগ। তুই কি নরমাল কথা বলতে পারিস না?”

দাশু বলল, “না। আর কেউ জানুক না জানুক আমি তো জানি তোর আর অঞ্জনার সিংকিং সিংকিঙ ড্রিঙ্কিং ওয়াটার কেস আছে। কী হয়েছিল ভাই, বল না বল না। আমি কাউকে বলব না”।

শমীক বলল, “কিছু না”।

দাশু বলল, “দাঁড়া, আমি একবার বের করি, তারপর তোরই একদিন কি আমারই একদিন”।

শমীক চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে গেল।

১৪

“আমরা ভুল করেছিলাম। আমাদের হোটেলে যাওয়া উচিত হয় নি। মা কাল কিছু একটা আঁচ করেছিল। আমাকে আন এক্সপেক্টেড প্রেগনেন্সী নিয়ে অনেক জ্ঞান দিয়ে দিল জানিস?”

অঞ্জনা খেতে খেতে নিচুস্বরে কথাগুলো বলল।

কোন কোন জুটি তৈরি হয়ে যায় যারা অনেক সময় কথা বলার সময় বেশি কথাও বলে না। ইশারাতেই কাজ চলে যায়। অঞ্জনা আর শমীকের জুটির কেমিস্ট্রিটাও অনেকটা এরকম। অঞ্জনা যতটা নিচু গলায় কথা বলল, অত নিচু গলায় কথা বললে পাশে বসেও অন্য কেউ শুনতে পেত না। শমীক ঠিকই শুনতে পেল। তার মধ্যেও বেশ খানিকটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। অঞ্জনার কথা শুনে বলল, “আন্টি ঠিকই বলেছেন। এর পর থেকে আমরা আর হোটেলে যাব না”।

অঞ্জনা বলল, “গলা নামিয়ে কথা বল স্টুপিড। আরেকটু চাউ নে আমার থেকে। আমি এত খেতে পারছি না”।

শমীক দেখল শিঞ্জিনী দূরের টেবিলটা থেকে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “হোটেলে যে ফর্ম ফিল আপ করলাম, ওরা হোটেল থেকে আবার সেই ফর্মগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় না তো?”

অঞ্জনা বলল, “ধুস। এগুলো একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তুই কি ভেবেছিস শুধু আমরাই গেছি? এখানে যারা রিলেশনে আছে, সবাই যায়। আমাদের লাক ভাল ছিল যে অন্য কোন কাপলের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়ে যায় নি। আমি জানি না আমার যদি কোন দিন অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে হয়, তাকে আমি কী বলব? আই চিটেড হিম? ওইটুকুকে চিটিং বলা যায় না হোপফুলি”।

শমীক বলল, “আমি তো অত কিছু ভেবে ওটা করি নি। আমরা আগের রাতে কথা বলেছিলাম, প্ল্যান করেছিলাম, সেই প্ল্যানটা এক্সিকিউট করতে গেছিলাম। অতো ভাবলে তো হয়েই যেত”।

অঞ্জনা বলল, “হ্যাঁ, আমার কেমন একটা অস্বস্তি হল। আরেকটা জিনিসও হতে পারে, মে বি আমি ফ্রিজিড। আমি গুগল করে দেখেছি ফ্রিজিড মানে কি। এসব ক্ষেত্রে যাদের কোন সেন্সেশনই হয় না, তারা ফ্রিজিড হয়। আমি যদি ফ্রিজিড হই, তাহলে আরেক ঝামেলা। কিন্তু তোর সঙ্গে আমার ফিজিক্যাল ফ্রিকোয়েন্সী ম্যাচ করছে না। তাহলে কী করে বুঝব আমি ফ্রিজিড কি না? আর তোর সঙ্গে ছাড়া কারো সঙ্গে তো আমি মিশিও না। অন্য কারো সঙ্গে ওসব করতেও পারব না। কী হবে তাহলে?”

শমীক বলল, “কিছুই হবে না। এখন অতো ভেবে কী হবে? যখন হবে, তখন দেখা যাবে। হয়ত তোর বর ঠিক ঠাকই আদর করে দেবে তোকে। তোরও আর কোন অসুবিধে হবে না”।

অঞ্জনা হাসল, “হোপফুলি। আর তুই নিশ্চয়ই মেমসাহেব বিয়ে করবি? আমার এক দাদা ছিল। সে এখানে কোন মেয়ের দিকেই তাকাতো না। ইউ কে তে সে ছেলে গিয়ে সকাল বিকেল মেয়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেঞ্জ অফ কান্ট্রি অনেক কাজে দেয়। তোকেও হয়ত দেবে”।

শমীক বলল, “দিতেই হবে। আমার কোন রকম ফ্রিজিডনেস নেই আমি বুঝে গেছি”।

অঞ্জনা সোজা হয়ে বসে বলল, “কী করে বুঝেছিস? তোর মেল অরগ্যান রিয়্যাক্ট করেছিল?”

শমীক বলল, “হ্যাঁ। ইয়ে মানে কী করব বল, ওই সিচুয়েশনে ওটাই তো স্বাভাবিক। আমি তো বুঝি নি তুই হঠাৎ করে সব কিছু বন্ধ করে দিবি”।

অঞ্জনা বলল, “শিট ম্যান। কী সব হয়ে যাচ্ছিল। খুব ভুল করছিলাম। কাল ক্লাসও মিস হল, তার সঙ্গে কলেজে দুটো দিন পিছিয়েও পড়লাম”।

শমীক বলল, “সবাই জিজ্ঞেস করছে আমরা একসঙ্গে ডুব মেরেছিলাম কেন”!

অঞ্জনা বলল, “আমাকে জিজ্ঞেস করার সাহস নেই কারো। তুইও সেই পারসোনালিটি গ্রো কর যাতে তোকে কেউ কিছু না বলতে পারে”।

শমীক বলল, “ট্রাইং”।

অঞ্জনা বলল, “হু। তুই ট্রাই কর। আমি ক্লাসে গেলাম। তুই বরং একটু পরেই আয়। একসঙ্গে গেলে আবার কথা শুনবি”।

শমীক মাথা নাড়ল। অঞ্জনা ব্যাগ নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যেতেই শিঞ্জিনী এসে বলল, “তোদের প্রেমালাপ হল?”

শমীক বলল, “ধুস। প্রেমালাম কেন হবে? আন্টি আমার জন্য টিফিন পাঠিয়েছিলেন, সেটা খেলাম”।

শিঞ্জিনী বলল, “ওহ। দারুণ ব্যাপার তো! এখন থেকেই ফ্যামিলি ফ্যামিলি ব্যাপার চলে এসেছে বল?”

শমীক বলল, “কাল যে স্ক্যান পাঠিয়েছিলি, একটা পেজ বুঝতে পারছি না। আরেকবার পাঠাবি?”

শিঞ্জিনী বলল, “কাল পাঠিয়েছিলাম কাল তো কিছু বলিস নি? ম্যাডামের বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে বলেছে নাকি?”

শমীক বলল, “উফ। ভীষণ উলটো পাল্টা কথা ধরিস তুই। আমি ওকে দিই নি কিছু”।

শিঞ্জিনী বলল, “সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?”

শমীক বলল, “করতে হবে। কারণ এটাই সত্যি”।

শিঞ্জিনী বলল, “হ্যাঁ। কত যে সব সত্যি কথা বলছিস সে তো বোঝাই যাচ্ছে। কাল কোথায় গেছিলি, একবারও বললি না”।

শিঞ্জিনীর কণ্ঠস্বর একটু জোরে শোনাল।

শমীক সভয়ে চারদিকে দেখল। নাহ, কেউ শোনে নি। আশ্বস্ত হল সে। বলল, “বলার কিছু নেই বললাম তো। আমি বাড়ি ছিলাম”।

শিঞ্জিনী কয়েক সেকেন্ড শমীকের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে দলে গেল।

১৫

কলেজ কনফেশন # ২৪৪

নাম, সেক্স, এজ প্রকাশে অনিচ্ছুক

এস ডি +এ বি?

ইজ সামথিং কুকিং?

… “এই শোন না, হোয়াটস অ্যাপ করেছি একটা স্ক্রিনশট। দেখে ফেল”।

কলেজ থেকে ফিরে শিঞ্জিনী ঘুমনোর চেষ্টা করছিল। রায়া ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করল। শিঞ্জিনী তার হোয়াটস অ্যাপে কলেজের কনফেশন পেজের স্ক্রিনশটটা দেখে বলল, “এটা তুই পাঠিয়েছিস?”

রায়া বলল, “হ্যাঁ, ফিরে এসেই ফর্মে লিখে দিয়েছিলাম। এখন পোষ্ট হয়েছে দেখলাম”।

শিঞ্জিনী বলল, “এতক্ষণ ব্যাপারটা ঠিক ঠাক ছিল। এবার ব্যাপারটা নোংরা দিকে গেল। তুই কিন্তু একটা প্রব্লেম ক্রিয়েট করছিস এবার, বুঝতে পারছিস? কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তার নামে স্ক্যান্ডাল রটানোর মেয়ে তুই ছিলিস না। এটা ঠিক করলই না”। কথাটা শুনে রায়ার মুখ কালো হয়ে গেল।

বলল, “তাহলে কী হবে? আমি তো অতি উৎসাহে করে ফেললাম। এবার যদি আমি পেজে মেসেজও করি, তাহলেও আমার আইডেন্টিটি ডিসক্লোজ হয়ে যাবে”।

শিঞ্জিনী বলল, “এই জন্যই তোকে বার বার বলি, এসব কিছু করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে কর। মাঝে মাঝে তোর যে কী হয় আমি কিছুই বুঝতে পারি না। হতে পারে এস ডি আর বি বন্ধু। তুইই ব্যাপারটাকে কমপ্লিকেটেড করে দিলি”।

রায়ার ফোন বেজে উঠল।

রায়া নাম্বারটা দেখে বলল, “ওরে বাবা, এস ডি ফোন করছে”।

শিঞ্জিনী চমকে উঠল, “মানে? উনি কেন ফোন করছেন তোকে?”

রায়া মাথায় হাত দিয়ে বলল, “আমাকে সকালে উনি ওর রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন। এখন হয়ত এই কনফেশনটা দেখে কিছু সন্দেহ করছেন। আমি কী করব এবার? আমার সব গেল! প্লিজ বাঁচা আমাকে”।

শিঞ্জিনী বলল, “ঠিক আছে, মাথা ঠাণ্ডা করে ফোনটা ধর। ফোন না ধরলে আবার অন্য সন্দেহ করবে। কনফার্ম হয়ে যাবে এই কনফেশনটা তুইই করেছিস। ধর”।

রায়া তাড়াতাড়ি ফোন ধরতে যেতে ফোনটা কেটে গেল।

রায়া বলল, “কেটে গেল”।

শিঞ্জিনী বলল, “আর কত রিং হবে? তুই কলব্যাক কর। বলবি ফ্রেশ হচ্ছিলি”।

রায়া ফ্যাকাসে হয়ে গেছিল। বলল, “দেখ, আমার হার্ট বিট কত বেড়ে গেছে”।

শিঞ্জিনী বলল, “যা করেছিস, ফেস দ্য কোনসিকোয়েন্সেস। কিছু করার নেই আর। ফোন কর। স্পিকারে রাখ”।

রায়া কল ব্যাক করল।

একটা রিং হতেই সৌরভ ধরল, “হ্যাঁ রায়া?”

রায়া ফোন স্পিকারে দিয়েছিল। সে ভয়ে ভয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার”।

সৌরভ বলল, “কাল তুমি যে নোটসগুলো নিয়ে গেছিলে, আজ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল, দিয়ে যাও নি তুমি?”

রায়ার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর সারল।

সে জোরে শ্বাস ছেড়ে বলল, “না স্যার, জেরক্স মেশিনটা খারাপ হয়ে গেছিল, আমি বাইরে থেকে জেরক্স করাতে পারি নি। কালকে দিলে কি খুব অসুবিধে হবে?”

সৌরভ বলল, “না ঠিক আছে। আমাকে একবার বলবে তো। সকালে ল্যাবে এসেছিলে, তারপর চলে গেলে। আমার পরে মনে হল তুমি তখন নোটসগুলো ফেরত দিতে এসেছিলে নাকি”।

রায়া বলল, “না না স্যার, আমাদের তখন ক্লাস শুরু হয়েছিল বলে তাড়াহুড়ো করে চলে গেছিলাম। আমি কাল আপনাকে জেরক্স করে নোটসগুলো ফেরত দিয়ে দেব”।

সৌরভ “ওকে” বলে ফোন রেখে দিল।

রায়া বোতল থেকে অনেক খানি জল খেয়ে নিয়ে বলল, “সব আউট করে দিয়েছিল মাইরি। বাপরে”!

শিঞ্জিনী বলল, “এই জন্য কলেজের স্যারকে নিয়ে বেশি ভাবতে নেই। শোন, তুই একটা কাজ কর। একটা ফেক প্রোফাইল বানিয়ে ওটা থেকে ওই পেজে মেসেজ করে রিকোয়েস্ট কর কনফেশনটা ডিলিট করে দেওয়ার জন্য। একটা লম্বা হ্যাজ সেন্টু দে যে তুই হালকা মনে পোষ্টটা করে ফেলেছিলি, পরে তোর মনে হয়েছে যেটা করেছিস ঠিক করিস নি। আফটার অল শিক্ষক পিতার মত হয়”।

রায়া বলল, “হ্যাঁ, বাবার মতই তো। সুগার ড্যাডি”।

শিঞ্জিনী বলল, “এই একটু ছাড় পেতেই বাড়াবাড়ি শুরু করে দিলি। যা তো!”

রায়া বলল, “কী আনন্দ আমার জানেমন আমাকে ফোন করেছে। নাহ, তোমার উপর যা রাগ ছিল জানেমন, বিগত সব রাগ আমি দমায় ফেলসি”।

শিঞ্জিনী হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল, “ভগবান!”

১৬

“এখানে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন অসুবিধে নেই। শুধু কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশনস আছে”, পিজি মালিক চশমা ঠিক করতে করতে বললেন।

শুভ্র বলল, “হ্যাঁ ঠিক আছে”।

পিজি মালিক বললেন, “আরে শুনে নাও”।

শুভ্র ব্যাজার মুখে বলল, “বলুন”।

পিজি মালিক বললেন, “যখন খুশি বাড়ি ফিরলে চলবে না। রাত আটটার মধ্যে ফিরতে হবে। নেশা ভাং করা চলবে না। সেসব বাইরে থেকে করে এসেও বাড়িতে ঢোকা যাবে না। জোরে গান চালানো যাবে না। মাসের তিন তারিখের মধ্যে রেন্ট দিয়ে দিতে হবে। দিদি এবং মোদির যৌথ প্রচেষ্টায় খাবারের দাম তুমুল বেড়ে গেছে। প্রতি মাসেই বর্ধিত মূল্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ঘরে বন্ধু বান্ধবী, বউ মেয়ে, ছেলে, বয়ফ্রেন্ড কাউকে নিয়ে আসা যাবে না। আরো ব্যাপার আছে, আমরা এই ঘেরা জায়গায় একটা সোসাইটিতে থাকি। এই সোসাইটিরও কিছু রুলস এন্ড রেগুলেশনস আছে। সেগুলিও দেখে নেবে। এসবের এদিক ওদিক হলেই বাড়ি থেকে বিনা নোটিসে বের করে দেওয়া যাবে”।

শুভ্র বলল, “ঠিক আছে কাকু। কোন অসুবিধা নেই। আমি আজকেই ঢুকে যাচ্ছি”।

পিজি মালিক বললেন, “তুমি এদ্দিন কোথায় থাকতে?”

শুভ্র বলল, “হোস্টেলে। ওখানে আর থাকা যাচ্ছে না”।

পিজি মালিক বললেন, “তিন মাসের রেন্ট অ্যাডভান্স লাগবে। কাল আবার লকডাউন পড়ে যাবে, তুমি বাড়ি গিয়ে বললে আর ফিরবো না, সেসব হবে না। আর আধার, প্যান, ভোটার সব দাও”।

শুভ্র ভালোমানুষের মত মুখে করে বলল, “চইহইয়ের সিরিজের মত কোন মামণি থাকবে না আমার সঙ্গে?”

পিজি মালিক শুভ্রর আপাদমস্তক দেখে বললেন, “ওসব ওয়েব সিরিজে হয়। বাস্তবে হয় না। তোমার স্যার বলেছেন বলে তোমাকে এখানে রাখতে রাজি হয়েছি। এমনিতে এখানে অনেক ঝামেলা আছে। যেগুলো যেগুলো বললাম, সেগুলোর উপর অ্যাগ্রিমেন্টও সই করতে হবে। যদি ঠিক ভাবেও থাকো, তাহলেও আমার যদি কোন সমস্যা থাকে, তখন এক মাসের নোটিসে ঘর ছাড়তে বলতে পারি”।

শুভ্র বলল, “আমার তো আর কয়েকটা মাস। তারপর এমনিই আমি ছেড়ে দেব। পাস আউটের পর সম্ভবত ব্যাঙ্গালোরে পোস্টিং হবে”।

পিজি মালিক বললেন, “তার জন্যও একটা ব্যাপার আছে। আমি কিন্তু রেন্টটা মাসের শুরুতে নেব। মানে রুম রেন্টটা। ফুডের পেমেন্ট মাসের শেষে হিসেব করব। যদি খাবে বলে খেলে না, তাহলেও মিল চার্জ হবে। তোমার জন্য কোন রকম ঝামেলাতেও যেন আমাকে না জড়াতে হয়। এলাকায় কোন মেয়ে দেখে টোন করলে, তারপর সে ঝামেলা ঘরে এলে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হবে”।

শুভ্র বলল, “এটা বাড়ি না নর্থ কোরিয়া?”

পিজি মালিক বললেন, “আমাকেও তো নিজেরটা দেখতে হবে, তাই না? তোমাদের বয়সী ছেলেরা কত কিছু করে ফেলতে পারে। তুমি কি ব্যাগপত্র নিয়ে এসেছ? তাহলে ওই ঘরে ঢুকে যাও। ঘর পরিষ্কার করাই আছে। অ্যাটাচড বাথরুম আছে। বেশি জল নষ্ট করবে না”।

শুভ্র বলল, “আপনি বললে আমি স্নান করাও ছেড়ে দেব”।

পিজি মালিক কটমট করে তাকিয়ে বললেন, “যেটুকু বলছি, সেটুকু মেনে চলার চেষ্টা করে আমাকে কৃতার্থ কর”।

শুভ্র বলল, “ঠিক আছে”।

শুভ্র ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল। হোস্টেলে থাকা যাচ্ছিল না। সবাই বাজে ভাবে পেছনে লাগছিল। “সব হিংসা। নিজেরা ক্যাম্পাসিং এ কিছু পায় নি বলে ল্যাং মারার চেষ্টা”।

নিজের মনে মনে এই কথাগুলোই আরেকবার বলে সে ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে আলনায় রাখল। ঘরটা ছোটর মধ্যে ছিমছাম। একটা সিঙ্গল বেড খাট, একটা আলমারি, একটা আলনা, একটা টেবিল। জায়গাটা কলেজ থেকেও কাছে। সব দিক দিয়েই ভাল। কয়েক মাসের জন্য নেওয়া যায়। বাবাকে ফোনে ফোনে পাগল করে দিয়ে টাকা পাঠাতে বাধ্য করেছে সে। বাবাকে বলে দিয়েছে মাইনে পেলেই সব টাকা শোধ করে দেবে। হোস্টেলে থাকবে না আগের রাতেই ঠিক করে নিয়েছিল। সবাই বাজে ভাবে পেছনে লাগছে। এভাবে থাকা যায় না।

সমস্যা একটাই। হোস্টেলে এই সময় কেউ না কেউ স্পিকারে গান চালিয়ে দিত। সেটা শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ত সে। এখন ঘুমোবে কী করে? পিজি মালিক বলে দিয়েছে গান চালানো যাবে না। এদিকে হেডফোনে গান শুনতে পারে না সে।

শুভ্র গভীর চিন্তায় পড়ে গেল।

১৭

সুমনা টিভি দেখছিলেন। অঞ্জনা হঠাৎ করে এসে মায়ের পাশে বসে পড়ল। সুমনা বললেন, “কী হল? আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে? তুই হঠাৎ আমার কাছে বসলি?”

অঞ্জনা গম্ভীর গলায় বলল, “আমার কিছু প্রশ্ন আছে”।

সুমনা বললেন, “আবার কী নিয়ে ভাবতে শুরু করলি?”

অঞ্জনা বলল, “সেক্স”।

সুমনা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “সেক্স নিয়ে ভাবছিস? এখনই? তুই তো আমার টেনশন দশগুণ বাড়িয়ে দিবি”!

অঞ্জনা বলল, “টেনশনের কী আছে? তুমিই তো কাল অকাল প্রেগনেন্সী নিয়ে গাদা গাদা জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছিলে। আমার যদি কোন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে কাকে করব? গুগলে অতো ডিটেলসে কিছু পাচ্ছি না। ওসব দেখলে ভয় লাগতে শুরু করে”।

সুমনা বললেন, “তোর পড়া হয়ে গেছে?”

অঞ্জনা বলল, “না। পড়ছি। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন আসছে মনে, কিছুতেই মন বসাতে পারছি না”।

সুমন অঞ্জনার দিকে ঘুরে বসে বললেন, “ঠিক আছে। বল তবে”।

অঞ্জনা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বলল, “নাহ, থাক। মাকে এসব কথা বলা ঠিক না”।

সুমনা কাঁধ ঝাঁকিয়ে আবার টিভির দিকে ফিরলেন। অঞ্জনা মার সঙ্গে বসে টিভি দেখতে লাগল।

সুমনা মেয়েকে কোন প্রশ্ন করলেন না। অঞ্জনা কিছুক্ষণ বসে উঠে ঘরে চলে গেল। মিনিট পাঁচেক পরে আবার এসে বলল, “বিয়ের আগে সেক্স করা যায় না?”

সুমনা হেসে ফেললেন, “পড়াশুনো শেষ না করে সেক্স করা উচিত না। মানে ফোকাস ঠিক রাখা দরকার। তুই ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ না করে যদি সেক্স নিয়ে বেশি ভাবতে শুরু করিস, তবে তো সমূহ বিপদ”।

অঞ্জনা চিন্তিত মুখে বলল, “তা ঠিক। এটা আমারও মনে হয়েছে পরে”।

সুমনা বললেন, “পরে মানে? কীসের পরে?”

অঞ্জনা বলল, “কোন কিছুর পরে না। তুমি যদি ভেবে থাকো আমি ব্যাপারটা করে এসেছি, তবে ভুল ভাবছো”।

সুমনা বললেন, “ঠিক আছে। বুঝলাম। আমি ভুল ভাবব না তাহলে?”

অঞ্জনা বলল, “অবভিয়াসলি না। কেন ভাবতে যাবে? আমি যথেষ্ট সিরিয়াস”।

সুমনা বললেন, “আমিও একজন সিরিয়াস মানুষকে চিনি, যে এসব ব্যাপারে তোর মতই সিরিয়াস ছিল। তারপর তার পেটে বাচ্চা চলে এসেছিল। সে না চাইতেই”।

অঞ্জনা বলল, “তুমি আবার এখানে নিজেকে টেনে নিয়ে গেলে?”

সুমনা বললেন, “এ ছাড়া উপায় নেই বলে। তোর মতোই সিরিয়াস ছিলাম। তারপর ভয়াবহ কাণ্ডটা ঘটিয়েই গেলেছিলাম”।

অঞ্জনা বলল, “ভয়াবহর কী আছে? বাবা তো তোমাকে বিয়ে করেছিল”।

সুমনা বললেন, “হ্যাঁ। কিন্তু ওই টুকু সময় আমাকে কী ভয়াবহ নরকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল, সেটা আমিই জানি। তোর বাবার বাড়ির লোকজন বিয়ের পরে আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিল”।

অঞ্জনা বলল, “এখন সময় অনেক এগিয়েছে”।

সুমনা বললেন, “একবারে ফালতু ধারণা। সময় যত এগোচ্ছে, মানুষ তত মধ্যযুগে যেতে চাইছে। কিচ্ছু এগোয় নি মানুষ। বরং পিছোচ্ছে। প্রতিশীলতা মুখেই থাকে। শোন মা…”

অঞ্জনা সঙ্গে সঙ্গে মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “না না। একবারে বোল না আমি তোমার পথে এগোতে চাইছি। ব্যাপারটা সেসব না। জাস্ট মাথায় প্রশ্নটা এসেছিল বলে করলাম”।

সুমনা বললেন, “ছেলেটা কে?”

অঞ্জনা আবার উঠে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে এসে বলল, “প্রশ্নটা উইথড্র কর। তুমি জিজ্ঞেস করলে, আমার পেট ফুলতে শুরু করল। তুমি উইথড্র না করলে আমার পেটের মধ্যে উত্তরটা ঘুরবে, আমি বলবও না, আবার অস্বস্তি হবে। উইথড্র কর”।

সুমনা বললেন, “শমীক ছাড়া কারো সঙ্গে তোকে কথা বলতে দেখি না। শমীক?”

অঞ্জনা ঢোক গিলল, “শমীক কী করে হবে? হি ইজ স্টিল চাইল্ড। ওসব বোঝে নাকি?”

সুমনা বললেন, “শমীকের সঙ্গে ঠিক কী কী করছিস তুই? তোরা দুজনে বিরাট কিছু ছড়িয়ে ফেলিস নি তো?”

অঞ্জনা হতাশ মুখে বসে পড়ে বলল, “ভাল লাগে না। তোমাকে কিছু বলাই বিপদ। ঠিক পেট থেকে কথা বের করে নাও”।

সুমনা বললেন, “ছেলেটা ভীষণ স্ট্রাগল করে পড়াশুনা চালাচ্ছে। তোর স্ট্রাগলও কিন্তু কম না। পড়তে পড়তে এসব ভাবতে শুরু করছিস? যদি রেজাল্টে এফেক্ট আসে? একমাত্র ওই বইগুলোই পারে তোদের জীবনটা পাল্টে দিতে। এমন কিছু করিস না, যাতে আসল সময়ে তোদের ফোকাস নড়ে যায়”।

অঞ্জনা বলল, “আমি জানি না। আমি খুব কনফিউজড”।

সুমনা বললেন, “কনফিউশনের কিছু নেই। তোরা কি, ওই কী যেন বলে, হ্যাঁ, রিলেশনশিপ শুরু করেছিস নাকি?”

অঞ্জনা বলল, “না। আমার মনে হচ্ছে আমি ওকে ঠিক ভালবাসি না”।

সুমনা বললেন, “তাহলে তো হয়েই গেল। এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা বন্ধ করে দে”।

অঞ্জনা পাংশু মুখে বসে রইল।

১৮

দাশু ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাং তুলে গেম খেলছিল। কলেজ থেকে ফিরে এক ঘণ্টা গেম খেলে সে। তারপর ঘুমিয়ে পড়ে। কোন পড়া থাকলে রাত বারোটা থেকে পড়তে বসে। নইলে ফেসবুক ঘাঁটতে বসে যায়।

ঘুমোতে যাবার আগে পেজের মেসেজ বক্স চেক করতে গিয়ে দেখল একটা মেসেজ এসেছে জীবনানন্দ সেন নামের প্রোফাইল থেকে। ডিপিতে রণবীর আলিয়ার ছবি। লেখা “অ্যাডমিন, প্লিজ এবি আর এস ডির পোষ্টটা ডিলিট করে দিন।”।

দাশু ফিক ফিক করে হাসতে লাগল। এরকমই হয়। অনেকেই বোমা মেরে চেপে যায়। কেউ ধরা পড়ার ভয় পায়, কেউ কেচ্ছার।

সে রিপ্লাই করল, “কনফেশন তো ডিলিট হয় না মামু। কিছু করার নেই। তবে এই প্রোফাইলের নামখানা খাসা হয়েছে। কী করে নামটা ঠিক করলি? জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনকে বিয়ে করার পর বউয়ের টাইটেল নিয়েছে নাকি? ”

রিপ্লাই এল, “ওরে আন্ডু স্যার আর ম্যামের নাম আছে পোস্টে। ধরা পড়লে সবাই ধরা পড়বে”।

দাশু খিক খিক করে হাসতে হাসতে লিখল, “ইনিশিয়াল দিয়ে লিখলে কারো বাবার সাধ্য নেই বোঝার। যাক গে, তুই কে রে? চেনাজানা?”

রিপ্লাই এল, “আমিও তো তোকে চিনি না। তুই কে?”

দাশু লিখল, “কাগজ আমি দেখাবো না। কেন পরিচয় দেব? দিলেই কেলো”।

“প্লিজ করে দে। খুব চাপ হয়ে যাবে”।

“আমি তো চাপই চাই”।

“আমি কিন্তু সাইবার সেলে কমপ্লেন করব”।

দাশু হাই তুলল, “সাইবার সেলে? বাপরে! তা কী বলে কমপ্লেন করবি? দ্যাকো দ্যাকো, আমি ক্ষার খেয়ে একটা পোষ্ট করে জিভ কেটেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে কেস খাবো?”

“তোর কপালে দুঃখ আছে। ডিলিট কর”।

“আগে যাও বা করতাম। তুই হুমকি দিলি। এখন করব না”।

অ্যাংরি রিয়্যাক্ট এল।

দাশু স্ক্রিনশট নিয়ে পেজে লিখল,

“অ্যাডমিন পোষ্ট।

একটা বিশেষ কেচ্ছামূলক গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বুন্দুগণ। দেখা যাচ্ছে এক পাবলিক একটা পোষ্ট করেছিল এবি আর এসডির প্রেম নিয়ে। সে পোষ্টটা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই এই ফেক প্রোফাইল থেকে মেসেজ এসেছে। মেসেজগুলো দেখার মত। তার আগে দেখুন প্রোফাইলটা। প্রোফাইল অ্যানালিসিস করে কী বোঝা যাচ্ছে? জীবনানন্দ সেন। খিক খিক। ভাবা যায় না। বনলতা সেনকে বিয়ে করার পর বেচারা জীবনানন্দবাবুর টাইটেল চেঞ্জ হয়ে গেল। তারপর তিনি রালিয়ার বিয়ে খেতে গেলেন। সে সব ঠিক আছে। এবার ব্যাপার হল তিনি আমাদের দেখে নেবার হুমকি দিলেন। কে তিনি? ফ্যাকাল্টি কেচ্ছা ছড়াতে চাইছিলেন। তারপর নিজেই ঘাবড়ে গিয়ে পোষ্ট ডিলিট করতে বলছেন। আপনাদের কী মত, পোষ্ট ডিলিট করা উচিত”?

কমেন্ট ১ – মার গেড়েছে, এ তো বড় প্লেয়ার ভাই।

কমেন্ট ২ – ডিলিট করা যাবে না। ডিলিট করলে কিন্তু আমি পেজ আন লাইক করে দেবো। পোষ্ট থাক। খেলা হবে। ডিডিক ডিডিক, খেলা হবে।

কমেন্ট ৩- ভাই পোষ্ট ডিলিট করলে আমি তোর বাড়ির সামনে শুয়ে পড়ব।

কমেন্ট ৪- এটা কনফেশন না কৃষি বিল? করার পর বলে উইথড্র করতে হবে? হবে না। থাক।

কমেন্ট ৫- প্রোফাইলটা আজকেই তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয় কোন মামণির কাজ। কেন মনে হয় বলতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে

কমেন্ট ৬- এবি আর এস ডি? চূড়ান্ত জুটি তো! একবারে উত্তম সুচিত্রা। সত্যি হলে হেবি হবে। হোক হোক।

পেজের ইনবক্সে আবার মেসেজ এল, “কাজটা ঠিক হল না। শত হলেও ওরা আমাদের স্যার। কিছু হলে আমরা কেস খাব। অ্যাডমিন, ভেবে দেখে ডিলিট কর প্লিজ”।

দাশু বলল, “কে অ্যাডমিন, কবে অ্যাডমিন, কীসের অ্যাডমিন? ইয়ে রুট কি সভি লাইন ব্যস্ত হে। প্লিজ ট্রাই আফটার সামটাইম। টিং টিং টিটিং”।

১৯

ঘরের মধ্যে টেনশনে পায়চারি শুরু করেছে রায়া। শিঞ্জিনী বলল, “কী হল? এত টেনশন করছিস কেন?”

রায়া বলল, “এই পেজটার অ্যাডমিনটা ভীষণ ত্যাঁদড়। মেসেজ থেকে আবার খাপ খুলে দিয়েছে জানোয়ারটা”।

শিঞ্জিনী বলল, “খোরাক নিচ্ছে আর কী। পেয়েছে খোরাক”।

রায়া বলল, “গোটা কলেজ খোরাক নিচ্ছে। সবাই শুধু অন্যকে ছোট করে মজা দেখতে ভালবাসে”।

শিঞ্জিনী বলল, “কী আর করবি? চিন্তা করিস না। কেউ বুঝতে পারবে না ওটা তুই করেছিলিস। চিল মার”।

রায়া দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে খুঁটতে তার খাটে বসে বলল, “এই পেজগুলোর অ্যাডমিনগুলো কি মাইনে পায় নাকি ফেসবুক থেকে? কী লেভেলের ভাব নেয় দেখেছিস? যতরকমভাবে পারে ফুটেজ খেয়ে যাবে। আমি তো শুধু আমার কথা ভাবছি না”।

শিঞ্জিনী বলল, “আর কার কথা ভাবছিস?”

রায়া বলল, “ওর কথাও ভাবছি”।

শিঞ্জিনী বলল, “ও? ওটা কে ভাই”?

রায়া লজ্জিত গলায় বলল, “তোর জামাইবাবু”।

শিঞ্জিনী হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল, “ওরে আমার লজ্জাবতী লতা এলেন রে! এসব মাথায় আসে কী করে তোর?”

রায়া বলল, “না আসার কী আছে? সৌরভকে কি তুই জামাইবাবু না বলে দাদা বলবি? আচ্ছা তাই বলিস না হয়”।

শিঞ্জিনী হাই তুলল, “যা পারিস কর। কাকিমা কোথায় গেছে? খিদে পেয়ে গেল তো আমার। আজকেও কি কালকের মত রাত এগারোটায় খেতে দেবে”?

রায়া বলল, “দিলে দেবে। কী আর করব? আচ্ছা শোন না, অনেক সময় আওয়াজ খেয়ে লোকে সত্যি সত্যি রিলেশনশিপে চলে যায়। এই এস ডি- এবির ব্যাপারটা তো গোটা কলেজে রাষ্ট্র হয়ে যাবে। এরপর সত্যি সত্যিই ওরা প্রেম করতে শুরু করবে না তো?”

শিঞ্জিনী বলল, “করলে করবে। তোর আর কি, তুই নতুন কারো গলায় ঝোলার তাল করবি”।

রায়া বলল, “ছি শিনু। তুই আমার বরের ব্যাপারে কথা বলছিস মনে রাখবি। কনফেশনটা ডিলিট করলেই ভাল হত। রাতের স্বপ্নের সাবজেক্টটাও ভেবে নিয়েছিলাম। আমাদের ফুলসজ্জা। স্যারের জন্য দুধ নিয়ে যাব। স্যার আমার ঘোমটা সরিয়ে দিতে দিতে বলবে”…

শিঞ্জিনী বলল, “বলবে ফিবোন্যাকি সিরিজের অ্যালগোটা একবার বল তো খুকি”।

রায়া জ্বলন্ত চোখে শিঞ্জিনীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই খুকি, তোর মেয়ে খুকি, তোর বেড়াল, মানে তোর পুষি খুকি। আমাকে এসব বলে ডিজহারটেন করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করিস না, ফল ভাল হবে না”।

শিঞ্জিনী হেসে ফেলে বলল, “বাবারে। খুব ভয় পেলাম। কী ফল হবে শুনি?”

রায়া বলল, “জানি না। শোন না। টেনশন হচ্ছে। ছাদে যাবি?”

শিঞ্জিনী বলল, “পড়ব ভাবছিলাম”।

রায়া বলল, “ছাড় তো। পড়াশুনা করে কী হবে? তুই কেন পড়াশুনা করিস? অঞ্জনাকে হারানোর জন্য তো?”

শিঞ্জিনী গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলল, “তুই ওই নামটা বলবি না। আমার সহ্য হয় না”।

রায়া শিঞ্জিনীর হাত টানতে টানতে বলল, “চল চল। মুখ গোমড়া করে বসে থাকিস না। অঞ্জনাকে একদিন তুই ঠিক হারিয়ে দিবি। চিন্তার কিছু নেই”।

শিঞ্জিনী খাট থেকে নামতে নামতে বলল, “একটা অতি অহংকারী মেয়ে। আমার ওকে দেখলেই মাথা গরম হয়ে যায়। বিরক্তিকর”।

রায়া শিঞ্জিনীর পেটে খোঁচা মারল, “নাকি অন্য কোন ব্যাপার?”

শিঞ্জিনী চশমা ঠিক করে নিয়ে বলল, “কোন ব্যাপার না। চল, যেখানে যাচ্ছিস চল”।

দুজনে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে লিফটে উঠল। ছাদ ফাঁকাই। এক কোণে দাঁড়িয়ে শুভ্র বিড়ি ফুঁকছিল। তাদের দেখে চিনতে পারল, “এই তোরা আমাদের কলেজের না?”

শিঞ্জিনী শুভ্রকে দেখে চিনল, “হ্যাঁ দাদা। একই কলেজের”।

শুভ্র বিড়ি ফেলে দিয়ে জুতো দিয়ে বিড়িটাকে পিষে দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল, “আমিও এখানেই একটা ফ্ল্যাটে এসেছি আজকেই। এখন থেকে এখানেই থাকত। আর আমাকে দাদা বলতে হবে না। আমাকে নাম ধরে ডাকলেই হবে। দোস্তি মে নো দাদা”।

রায়া খিল খিল করে হেসে দিয়ে বলল, “মাইরি তুমি পুরো আমাদের পাড়ার ফুটো মস্তানের মত কথা বল”।

শুভ্র রাগী চোখে রায়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “এ মেয়েটা তো বেশি বকে। এই, তুই আমাকে স্যার বলে ডাকবি”।

রায়া বলল, “ওরকম না। চশমা পরে একটা চেয়ারে বসে বলতে হবে, আমারে স্যার ডাকবা। নইলে মীম মেটিরিয়াল হবে কী করে?”

শুভ্র চশমা ঠিক করে নিয়ে বলল, “মহা জ্বালা তো। ঠিক আছে। আমিও দেখে নেব”।

শুভ্র দাপাতে দাপাতে চলে গেল। রায়া বলল, “আজব চিড়িয়া তো। দেখেছিস তো এই সব পাবলিকদের? কোন পারসোনালিটিই নেই। এই জন্যই আমি তোদের জামাইবাবুকে এত ভালবাসি। পুরাই টুরু লাভ”।

শিঞ্জিনী বলল, “এই দাদাটা এমনি ছড়ু হলেও পড়াশুনায় ভাল। ভালই হল, কোন হেল্প লাগবে করবে”।

রায়া শিঞ্জিনীর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, “কী কাজে লাগবে? পুল পুশ? নাকি শসা বেগুণ কিনতে কাজে লাগবে?”

শিঞ্জিনী রায়াকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল, “এই তুই যা তো ব্যাটা পারভারটেড পাবলিক!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *