নবমাধ্যায়ে—দ্বিতীয়াহ্নিকম্
অস্যেদং কার্য্যং কারণং সংযোগি বিরোধি সমবায়ি চেতি লৈঙ্গিকম্।। ১।।
অনুবাদ
ইহা ইহার কার্য্য, কারণ, সংযোগী, বিরোধী বা সমবায়ী এইরূপ লৈঙ্গিক (জ্ঞান হইয়া থাকে।। ১।।
ব্যাখ্যা
লিঙ্গ—ব্যাপ্তি পক্ষধর্ম্মতা-বিশিষ্ট হেতু; তমূলক যে জ্ঞান তাহা অনুমিতি। লিঙ্গ কে হইতে পারে—যে কার্য্য, যে কারণ, যে সংযোগী, যে বিরোধী এবং যে সমবায়ী ইহারা সকলে লিঙ্গ হইতে পারে। ধূম বহ্নির লিঙ্গ, কেননা ধূম বহ্নির কার্য্য, ধূম দেখিয়া বহ্নির অনুমিতি করিতে হয়। এক প্রকার মেঘ বৃষ্টির কারণ, সেই মেঘ বৃষ্টির লিঙ্গ, সেই মেঘ দেখিয়া বৃষ্টির অনুমান করা হয়। এইরূপ কোথাও সংযোগী লিঙ্গ, কোথাও বিরোধী লিঙ্গ এবং কোথাও বা সমবায়ী লিঙ্গ হইয়া থাকে,—সেই সকল লিঙ্গের কথা পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে। সাধ্য অনুমেয়, হেতু অনুমিতি-সাধন এবং পক্ষ সাধ্যসংশয়ের স্থান বা অনুমিতির ক্ষেত্র। তাহার অনুমান করিতে হয়, তাহা অনুমেয় বা সাধ্য, যদ্দ্বারা অনুমিতি করিতে হয়, তাহা হেতু বা অনুমিতিসাধন, যে আশ্রয়ে অনুমিতি করিতে হয় অর্থাৎ যেখানে সাধ্য আছে কিনা এইরূপ সংশয়, তাহা পক্ষ বা অনুমিতিক্ষেত্ৰ; যথা, বহ্নি সাধ্য, ধূম হেতু, পৰ্ব্বত পক্ষ। ধূম বহ্নি অপেক্ষা অধিক দেশে থাকে না, সেই ধূম ঐ-যে পর্ব্বতে রহিয়াছে, এই যে জ্ঞান, ইহাই ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মর্তাবিশিষ্টহেতুজ্ঞান অর্থাৎ লিঙ্গজ্ঞান নামে অভিহিত। এই জ্ঞান হইলে, ধূমকে পৰ্ব্বতে দেখিতে না পাইলেও বহ্নি পৰ্ব্বতে আছে, এইরূপ যে জ্ঞান হয়, সেই জ্ঞানই অনুমিতি, তাহা বহ্নির ব্যাপ্তি এবং পক্ষে অর্থাৎ পৰ্ব্বতে স্থিতি এই দুইটী ধৰ্ম্মবিশিষ্ট ধূম নামক যে হেতু বা লিঙ্গ তমূলক বলিয়া ঐরূপ লিঙ্গজ্ঞানজন্য বলিয়া, তাহার নাম লৈঙ্গিক। পক্ষ সম্বন্ধে নানামত আছে। সাধ্যসংশয় যাঁহাদিগের মতে পক্ষতা, তাঁহারা সাধ্যসংশয়ক্ষেত্রকেই পক্ষ বলিয়া থাকেন। পরন্তু অনুমিতির ইচ্ছা, সাধ্যনিশ্চয়ের অভাব ইত্যাদি পক্ষতাও শাস্ত্রে কথিত আছে। পক্ষতা অনুমিতির কারণ। যে কোন উপায়ে যদি সাধ্যের নিশ্চয় হইয়া যায়, তাহা হইলে সে ক্ষেত্রে আর অনুমিতি হয় না। এই মূলটুকু লক্ষ্য করিয়া পক্ষতাকে কারণ বলা হইয়াছে এবং সেই পক্ষতায় নানা পণ্ডিতের নানামত দাঁড়াইয়া গিয়াছে।। ১।।
উপস্কারঃ
তদেবং পূৰ্ব্বাহ্নিকে যোগিপ্রত্যক্ষমযোগিপ্রত্যক্ষঞ্চ কারণতঃ স্বরূপতো লক্ষণতশ্চ নিরূপিতম্। প্রমাণং দ্বিবিধং প্রত্যক্ষং লৈঙ্গিকঞ্চেতি যদ্বিভক্তং তত্র লৈঙ্গিকমিদানীং নিরূপয়িতুমুপক্রমতে।
জ্ঞানমিতি প্রকৃতম্, লিঙ্গাজ্জাতং লৈঙ্গিকং ব্যাপ্তিবিশিষ্টঃ পক্ষধৰ্ম্মো লিঙ্গম্, তত্র ব্যাপ্তিরুক্তা। যৎ সিষাধয়িষাবিরোধিপ্রমাণাভাবো যত্র স তং প্রতি পক্ষঃ, তাদৃশং প্রমাণং সাধক বাধকঞ্চ, তদুভয়াভাববতঃ পক্ষত্বাৎ ন হি সাধকে বাধকে বা প্রমাণে সতি কস্যচিৎ সংশয়ঃ সিষাধয়িষা বা অতএব সন্দিগ্ধসাধ্যধর্ম্মা ধৰ্ম্মী সিষাধয়িষিতসাধ্যধর্ম্মা ধৰ্ম্মী বা পক্ষ ইতি প্ৰাঞ্চঃ, উৎপাদ্যসাধ্যবত্তানির্ণয়নির্বত্ত্যসংশয়োৎপত্তিপ্রতিবন্ধকমানত্বাবচ্ছিন্নাভাবো যত্র স পক্ষ ইতি জীবনাথমিশ্রাঃ। সিষাধয়িষাবিরহসহকৃতসাধকমানাভাবো যত্র স পক্ষ ইতি কেচিৎ। এতন্মতে বাধস্থলেঽপি পক্ষতা, তদেতদনুমানময়ূখে দ্রষ্টব্যম্, তদেতস্য পক্ষস্য ধর্ম্মো লিঙ্গমিত্যুক্তং ভবতি। লিঙ্গঞ্চ দৃষ্টমনুমিতং শ্রুতং বা যদনুভবরূপং জ্ঞানং জনয়তি তল্লৈঙ্গিকং, তদুক্তম্, “অনুমেয়েন সম্বদ্ধং প্রসিদ্ধঞ্চ তদন্বিতে। তদভাবে তু নাস্ত্যেব তল্লিঙ্গমনুমাপকম্।।” ইতি। এতেন লিঙ্গমেবানুমিতিকারণং ন তু তস্য পরামর্শঃ, তস্য নির্ব্যাপারত্বেনাকরণত্বাৎ, লিঙ্গস্য তু স এব ব্যাপারঃ। যত্র ধূমাদেরতীতত্বমনাগতত্বং বা তত্র কথমনুমিতিরিতি চেন্ন সাধ্যস্যাপ্যতীতানাগতত্বয়োস্তত্রানুমানাৎ, তত্রৈব প্রতিবন্ধাৎ অতীতত্বমনাগতত্বং বৰ্ত্তমানত্বঞ্চ ধুমাদের্যত্র ন নিশ্চিতং তত্র কথমনুমিতিরিতি চেৎ, ন কথঞ্চিৎ, তত্র সাধ্যস্যাপি সন্দেহাৎ, পূর্ব্বাপরদিনয়োঃ সত্ত্বনিশ্চয়ে মধ্যদিনে তু সন্দেহে কথমনুমিতিরিতি চেৎ, তদ্দিনাবচ্ছিন্নধূমাদিনা তদ্দিনাবচ্ছিন্নবহ্ন্যাদেরনুমানাৎ তথৈব ব্যাপ্তেঃ কারণত্বাবধারণাৎ, ধূলীপটলাৎ কথং ধূমভ্রমাদনুমিতিরিতি চেৎ ব্যাপ্তত্বেন জ্ঞাতস্যৈব লিঙ্গত্বাৎ জ্ঞানস্য চ যাথার্থাযাথার্থ্যাভ্যামনুমিতেস্তাদৄপ্যাৎ, অন্যথা তবাপি কথং তত্র পরামর্শঃ করণং স্যাৎ, অতীন্দ্রিয়লিঙ্গস্থলে পরামর্শস্য তদজন্যতয়া কথং তদ্ব্যাপারত্বমিতি চেৎ তৎসত্তানিৰ্ব্বাহকত্বরূপক্ষৈমিকাসাধনতায়াস্তত্র ব্যাপারত্বঘটকত্বাৎ অন্যথা সমবায়স্য শ্রবণাদের্ব্যাপারত্বানুপপত্তেরিতি, কার্য্যলিঙ্গাৎ ধূমালোকাদেরগ্ন্যাদ্যনুমানং, কারণাদপি যথা বধিরস্য ভেরীদণ্ডসংযোগবিশেষাৎ শব্দানুমানম্, যথা বা ধাৰ্ম্মিকস্য যথাবিধিযাগস্নানাদ্যনুষ্ঠানাদ্ধৰ্ম্মস্বর্গাদ্যনুমানম্, যথাবিধিকারীর্য্যাদ্যনুষ্ঠানাদ্বা বর্ষানুমানম্, পয়ঃপূর্ণনদ্যাদৌ খন্যমানপ্রবাহাদ্বা জলনিঃসরণানুমানম্, উপরিবৃষ্টিদর্শনাদ্বা নদীবৃদ্ধ্যনুমানম্, স চায়ং কার্য্যকারণভাবলক্ষণ একসম্বন্ধঃ প্রকারদ্বয়েনোক্তঃ, সংযোগিনঃ শরীরস্য দর্শনাৎ ত্বগিন্দ্রিয়ানুমানম্, বিরোধিনো বিস্ফুর্জতোহহেদর্শনাজ্ ঝাটাদ্যত্তরিতনকুলানুমানম্, সমবায়িনা জলৌষ্ণ্যেন তৎসম্বদ্ধতেজোহনুমানম্।।১।।
.
অস্যেদং কার্য্যকারণসম্বন্ধশ্চাবয়বাদ্ভবতি।।২।।
অনুবাদ
ইহার অর্থাৎ সাধ্যবিশিষ্ট পক্ষের ইহা অর্থাৎ পক্ষবৃত্তি হেতু এই জ্ঞান, এবং কার্য্যকারণ সম্বন্ধ অর্থাৎ সাধ্যহেতুর ব্যাপ্তিজ্ঞান অবয়ব হইতেও হইয়া থাকে।। ২।।
ব্যাখ্যা
লিঙ্গজ্ঞান দ্বিবিধ—স্বার্থ এবং পরার্থ। যেখানে আপনার কোন সংশয় দূর করিবার জন্য অনুমিতি করিবার অভিপ্রায়ে লিঙ্গজ্ঞান আশ্রয় করা হয়, সেইখানে ঐ লিঙ্গজ্ঞান ‘স্বার্থ’। আর যে স্থানে নিজের সংশয় নাই, কিন্তু প্রতিবাদীকে নিজের মতে আনিবার জন্য বিচার করিতে হয় এবং বিচারে উভয়পক্ষমানিত নিরপেক্ষ সুপণ্ডিতকে মধ্যস্থ রাখিতে হয়, সেই স্থলীয় লিঙ্গজ্ঞান ‘পরার্থ’। পরার্থ শব্দের দুই প্রকার অর্থ আছে, তন্মধ্যে এক অর্থ ‘মধ্যস্থের জন্য’ এবং অপর অর্থ ‘প্রতিবাদীর পরাজয়ের জন্য’। যাহাই হউক, মধ্যস্থের লিঙ্গজ্ঞান না হইলে প্রতিবাদী পরাজিতও হয় না, তাহাকে নিজমতে আনয়ন করিতেও পারা যায় না। কেননা কয়জন প্রতিবাদী স্বেচ্ছায় আপনার কোট ছাড়িয়া দেয়? কাজেই সম্মানিত মধ্যস্থের প্রয়োজন। তিনি যে পক্ষের কথা অনুসারে কোন একটী সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন, সেই পক্ষের জয় হয়। প্রতিপক্ষও অগত্যা তাঁহার মত মানিতে বাধ্য হয়, মধ্যস্থের সেই লিঙ্গজ্ঞান বাদিপ্রযুক্ত অবয়ব হইতে হইয়া থাকে। লিঙ্গজ্ঞান তো হয়ই, অবাধিতত্বাদি জ্ঞানও হইয়া থাকে। সেই অবয়বের বিবরণ ন্যায়দর্শনে আছে; প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয় এবং নিগমন এই পাঁচটী অবয়ব। বৈশেষিক সম্প্রদায়ের আচার্য্যগণ এই পঞ্চ অবয়বকে যথাক্রমে প্রতিজ্ঞা, অপদেশ, নিদর্শন, অনুসন্ধান এবং প্রত্যাস্নায় নামে অভিহিত করিয়া থাকেন। এই পঞ্চ অবয়ব বাক্যের নাম ‘ন্যায়’। পৰ্ব্বত পক্ষ, বহ্নি সাধ্য, ধূম হেতু এই স্থলীয় অবয়ব প্রদর্শন করিতেছি। এই স্বরূপ পরিচয়ে সুধী পাঠকগণ লক্ষণ স্থির করিবেন। বাদীর উক্তি-পৰ্ব্বতো বহ্নিমান্—পৰ্ব্বতে বহ্নি আছ, ইহা প্রতিজ্ঞা; এই বাক্যার্থ সমর্থনের জন্য ‘ধূমাৎ’ ধূম ইহার হেতু, এই বাক্যই হেতু বা অপদেশ। যো যো ধূমবান্ স বহ্নিমান যথা মহানসম্—যে যে স্থানে ধূম থাকে সেই সকল স্থানেই বহ্নি থাকে, যথা পাকশালা—এই বাক্যই উদাহরণ বা নিদর্শন। ‘বহ্নিব্যাপ্যধূমবান্ অয়ং’—পৰ্ব্বতে বহ্নি ব্যাপ্য ধূম আছে—এই বাক্য উপনয় বা অনুসন্ধান। তস্মাদ্বহ্নিমান্—সেই বহ্নিব্যাপ্য ধূমহেতুক বহ্নি এই পৰ্ব্বতে আছে, এই বাক্যই নিগমন বা প্রত্যান্নায়। এই সকল কথা শুনিলে মধ্যস্থের বাক্যার্থ জ্ঞান হইয়া তমূলক লিঙ্গজ্ঞানাদি হয়, তাহা মধ্যস্থের অনুমিতির কারণ হইয়া থাকে, তখন বিরুদ্ধভাষী প্রতিবাদী মধ্যস্থ দ্বারা তিরস্কৃত হয়। পক্ষ যে সাধ্যবিশিষ্ট এই জ্ঞান প্রতিজ্ঞাজন্য, ধূম যে হেতু এই জ্ঞান হেতুজন্য, ধূমে যে বহ্নিব্যাপ্তি আছে অর্থাৎ ধূম যে বহ্নিব্যাপ্য এই জ্ঞান উদাহরণজন্য; তবেই দেখ, সাধ্যবিশিষ্ট পক্ষ বা পক্ষে সাধ্য আছে এই জ্ঞান,—হেতুবিষয়ক জ্ঞান এবং ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রতিজ্ঞাদি অবয়বত্রয়জন্য, পক্ষবৃত্তি হেতু বা হেতু যে পক্ষে আছে এই জ্ঞান উপনয়- জন্য, তাহার পর উপসংহার অর্থাৎ নিগমন, একসঙ্গে ফলিতার্থ জ্ঞানের হেতু। শেষটীকে বাঙ্গালা হিসাবে সমষ্টিকরণও বলিলে ক্ষতি হয় না। অতএব সাধ্যবিশিষ্ট পক্ষাদি জ্ঞান যে অবয়ব হইতে হইয়া থাকে ইহা সিদ্ধ হইল।।২॥
উপস্কারঃ
নন্বব্যাপকমিদং পরিসঙ্খ্যানম্, ন হি চন্দ্রোদয়েন সমুদ্রজলবৃদ্ধেঃ জলপ্রসাদেনাগস্ত্যোদয়স্য কুমুদপ্রকাশেন চন্দ্রোদয়স্য চতুৰ্দ্দর্শনক্ষত্রোদয়েনাপরচতুদর্শনক্ষত্রাস্তময়স্য রসেন রূপস্য রূপবিশেষেণ বা রসবিশেষস্যানুমানমনেন সংগৃহ্যত ইত্যত আহ।
অস্যেদমিত্যেতাবদেব প্রযোজকং ভবতীতি, অস্য সাধনস্য ধূমাদেরিদং সাধ্যং বহ্ন্যাদি যদ্বাঽস্য ব্যাপকস্য বহ্ন্যাদেরিদং ব্যাপ্যং ধূমাদি, তথাচ ব্যাপ্যত্বগ্রহমাত্রং তন্ত্রং ন তু কার্য্যকারণভাবাদিরপি। ননু পূর্ব্বসূত্রে তর্হি পরিসঙ্খ্যানমতন্ত্রমত আহ কার্য্যকারণসম্বন্ধ ইতি, অনেন চোক্তং সম্বন্ধামপ্যুপলক্ষয়তি সম্বন্ধপদে চ বিষয়িলক্ষণা তেন সম্বন্ধ ইতি সম্বন্ধোপন্যাস ইত্যর্থঃ। কুতস্তদুপন্যাস ইত্যত আহ অবয়বাৎ একদেশাৎ উদাহরণমাত্রাৎ ল্যবলোপে পঞ্চমী, তেনোদাহরণমনুরুধ্য কার্য্যকারণভাবাদেঃ সম্বন্ধস্যোপন্যাস ইহ দর্শনে সাঙ্খ্যাদিদর্শনে চ ভবতীত্যর্থঃ। এবঞ্চ স্বাভাবিকসম্বন্ধশালিত্বং ব্যাপ্যত্বম্, স্বাভাবিকত্বঞ্চাত্রৌপাধিকত্বম্, তচ্চ প্রত্যক্ষাণাং কেষাঞ্চিৎ সাধ্যব্যাপকত্বনিশ্চয়াৎ, কেষাঞ্চিৎ সাধনব্যাপকত্বনিশ্চয়াদেবাপ্রপাধি ত্বং জ্ঞেয়ম্, অতীন্দ্রিয়াণাঞ্চ প্রমাণসিদ্ধানাং কেষাঞ্চিদুভয়ব্যাপকত্বম্ উভয়াব্যাপকত্বং সাধনমাত্ৰ- ব্যাপকত্বং সাধ্যমাত্রাব্যাপকত্বং বা, তত্রাদ্যে সাধনব্যাপকত্বাৎ দ্বিতীয়ে সাধ্যব্যাপকত্বাৎ, চতুর্থেঽপি সাধনব্যাপকত্বাদেবানুপাধি ত্বং নিশ্চেয়ম্। তৃতীয়েঽপি ব্যাপকস্য তন্মাত্রব্যাপকত্বানু- পপত্তিরিতরস্য তু কথং তন্মাত্রব্যাপকত্বমিত্যত্র তর্কোহনুসন্ধেয় ইতি তুল্যযোগক্ষেম- ত্বাদিনাহনুপাধিত্বমধ্যবসেয়ম্। ভবিষ্যতি কশ্চিদত্রোপাধিরিতশঙ্কাপিশাচী সকলবিধিনিষেধব্য- বহারানাস্কন্দতীত্যনাদেয়েত্যনৌপাধিকত্বনিশ্চয়সম্ভবাৎ, উপাধিলক্ষণং ব্যাপ্তিলক্ষণঞ্চোক্তম্। তচ্চানুমানং দ্বিবিধং স্বার্থং পরার্থঞ্চ। তত্র স্বার্থং স্বয়মেব ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতয়োরনুসন্ধানাৎ, পরার্থঞ্চ পরোদীরিতন্যায়জন্যব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতাজ্ঞানাৎ, ন্যায়শ্চ তৃতীয়লিঙ্গপরামর্শপ্রযোজক- শাব্দজ্ঞানজনকবাক্যম্, তদবয়বাশ্চ পঞ্চ, তত্রাবয়বত্বং তৃতীয়লিঙ্গপরামর্শপ্রয়োজকশাব্দ – জ্ঞানজনকশাব্দজনকবাক্যত্বম্, তানি চ বাক্যানি প্রতিজ্ঞাহেতূদাহরণোপনয়নিগমনানি। তত্র প্রতিজ্ঞা উদ্দেশ্যানুমিত্যন্যূনানতিরিক্তবিষয়কশাব্দজ্ঞানজনকং ন্যায়াবয়ববাক্যম্। হেতুশ্চ প্রকৃতসাধনগতপঞ্চম্যতো ন্যায়াবয়বঃ। উদাহরণন্তু প্রকৃতসাধ্যসাধনাবিনাভাবপ্রতিপাদকো ন্যায়াবয়বঃ উপনয়শ্চাবিনাভাববিশিষ্টস্য হেতোঃ পক্ষবৈশিষ্ট্যপ্রতিপাদকো ন্যায়াবয়বঃ। নিগমনন্তু পক্ষে প্রকৃতসাধ্যবৈশিষ্ট্যপ্রতিপাদকো ন্যায়াবয়বঃ। এবঞ্চ প্রবৰ্ত্ততে ন্যায়ঃ, শব্দোহনিত্য কৃতকত্বাৎ, যদ্ যৎ কৃতকং তদনিত্যম্, অনিত্যত্বব্যাপ্যকৃতকত্ববাংশ্চায়ম্, তস্মাদনিত্যঃ। এতেষামেব প্রতিজ্ঞাপদেশনিদর্শনানুসন্ধান প্রত্যাস্নায়া ইত্যন্বর্থা বৈশেষিকাণাং সংজ্ঞাঃ, অত্র চ বাদজল্পবিতণ্ডানাং প্রবৃত্তিপ্রকারশ্ছলজাতিনিগ্রহস্থানলক্ষণানি চ বাদিবিনোদেহন্যেষ্টব্যানি।। ২।।
.
এতেন শাব্দং ব্যাখ্যাতম্।।৩।।
অনুবাদ
ইহা দ্বারা শাব্দবোধ ব্যাখ্যাত হইল।।৩।।
ব্যাখ্যা
মহর্ষি কণাদ, প্রত্যক্ষ ও অনুমান দুই প্রমাণ মানেন, শব্দকে স্বতন্ত্র প্রমাণ বলেন না; পরন্তু তাহাও অনুমানের অন্তর্গত। মোটামুটি ধরিতে গেলে শব্দই অর্থবোধের অনুমাপক, লিঙ্গ (সূক্ষ্ম নিদোষ অনুমানপ্রণালী উপস্কার ও পরিষ্কারে দ্রষ্টব্য)। যেমন ধূমদর্শন করিবার পর—অপ্রত্যক্ষীভূত বহ্নির অনুভব হয়—সেই অনুভব অনুমিতি এবং এই অনুমিতির হেতু অনুমান। সেইরূপ শব্দ-শ্রবণের পর অপ্রত্যক্ষ বাক্যার্থের অনুভব হয়—তাহাও অনুমিতি। সেই অনুমিতির হেতুও অনুমান মাত্র—অন্য প্ৰমাণ নহে। বহ্নির সহিত ধূমের সংযোগঘটিত ব্যাপ্তি আছে, সেই ব্যাপ্তি- পক্ষধর্ম্মর্তাবিশিষ্টরূপে জ্ঞাত হইয়া ধূম অনুমিতির হেতু হইয়া থাকে। শব্দের সহিত অর্থেরও প্রতিপাদ্য-প্রতিপাদক ভাব ___[?] সেই সম্বন্ধঘটিত ব্যাপ্তি পক্ষধর্ম্মতাবিশিষ্টরূপে জ্ঞাত হইয়াই শব্দ অর্থানুমিতির হেতু হইয়া থাকে। মনে কর ‘জল আন’ এই শব্দ শুনিলে যে অর্থবোধ হয়—সেই অর্থের সহিত ঐ শব্দের প্রতিপাদ্য-প্রতিপাদকভাব সম্বন্ধঘটিত ব্যাপ্তি আছে, তাহা শৈশবে বয়োজ্যেষ্ঠগণের বাক্য ও কার্য্য দ্বারা নির্ণীত হইয়া থাকে,—এক্ষণে সেই শব্দ শুনিলে ব্যাপ্তি স্মরণ হয়। তাহার ফলেই অর্থজ্ঞান হইয়া থাকে। সুতরাং শব্দ অতিরিক্ত প্রমাণ নহে—অনুমান বিশেষ মাত্র। নৈয়ায়িক প্রভৃতি বলেন। শব্দশ্রবণের পর পদজ্ঞানজন্য এক একটী পদের অর্থ জ্ঞান হয়—তাহা স্মৃতিমাত্র। কিন্তু সেই অর্থসমূহের যে পরস্পরসম্বন্ধজ্ঞান, তাহাই তো শাব্দবোধ। এই শাব্দবোধ অনুমিতিস্বরূপ হইলে তাহা ব্যাপ্তিজ্ঞানকে অপেক্ষা করিত, পরন্তু তাহা করে না। ব্যাপ্তি জ্ঞান হয় কি না হয়—এ বিষয়ে বিবাদ নিষ্প্রয়োজন, পরন্তু সাধারণের অনুভবই এ বিষয়ে প্রমাণ। তদ্ভিন্ন শাব্দবোধ এবং অনুমিতির স্বরূপেও বৈলক্ষণ্য অনুভূত হয়। গুরুর উপদেশে যে জ্ঞান হয় এবং অনুমান দ্বারা যে জ্ঞান হয়—তদুভয়ের পার্থক্য সকলেরই অনুভূত। যাহা হউক মহর্ষি কণাদের মতে ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রভৃতি কয়েকটী জ্ঞান এত শীঘ্র উৎপন্ন হয় যে, তাহা বুঝা যায় না। শব্দ শুনিবার পরই আমার এই অর্থ জ্ঞান হইল এইরূপ অনুভব হইয়া থাকে, ফলতঃ সে অনুভব ভ্রমমাত্র। জ্ঞান-বৈলক্ষণ্যের কথায় মহর্ষি কর্ণপাত করেন নাই।।৩।।
উপস্কারঃ
প্রমাণান্তরাণি লৈঙ্গিকেঽন্তর্ভাবয়িতুং প্রকরণান্তরমারভতে।
শাব্দং শব্দকরণকং জ্ঞানমিদমিতি যন্নৈয়ায়িকাদীনামভিমতং তদপ্যেতেন লৈঙ্গিকত্বেন লিঙ্গপ্রভবত্বেনৈব ব্যাখ্যাতং যথা ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতা প্রতিসন্ধানাপেক্ষং লৈঙ্গিকং তথা শাব্দমপি। তথাহি এতে পদার্থাঃ মিথঃ সংসর্গবন্তঃ আকাঙ্ক্ষাদিমডিঃ স্মারিতত্বাৎ গামভ্যাজেতি পদার্থসার্থবৎ, তত্র হি আকাঙ্ক্ষাদিমপদকদম্বস্মারিতত্বং পদার্থানাং মিথঃ সংসর্গবত্ত্বব্যাপ্যং গৃহীত্বৈব সংসর্গবত্ত্বমনুমিনোতি কিং কল্পনীয় প্রমাণভাবেন শব্দেন? ননু নদীতীরে পঞ্চ ফলানি সন্তীত্যনাপ্তবাক্যে ব্যভিচারান্নেদমনুমানমিতি চেন্ন আপ্তোক্তত্বেনাপি বিশেষণাৎ, আপ্তত্বং হি প্রকৃতবাক্যার্থগোচরযথার্থবাক্যার্থজ্ঞানবত্ত্বং ন ত্বপ্রতারকত্বমাত্রং তত্র বাক্যার্থপ্রতীতেঃ পূৰ্ব্বং দুর্গ্রহমিতি চেন্ন শব্দপ্রামাণ্যবাদিভিরপি ব্যভিচারিশব্দব্যাবর্ত্তকস্যাপ্তোক্তত্বস্য গ্রাহ্যত্বেনাভিমতত্বাৎ, তেষাং প্রামাণ্যগ্রহণার্থং তদপেক্ষা শাব্দন্তু জ্ঞানং তদ্গ্রহমন্তরেণাপ্যুপপদ্যতে তব তু যাদৃশং লিঙ্গং তাদৃশগ্রহণমাবশ্যকং ব্যাপ্যত্ত্বাপ্তোক্তত্ববিশিষ্টমিতি চেন্ন। অয়মত্রাভ্রান্ত ইতি সামান্যতো গ্রহণসম্ভবাৎ, নন্বত্রেতি প্রকৃতসংসর্গে ইত্যেব পর্যবস্যতি তথাচ পূৰ্ব্বমশক্যমেব তদ্গ্রহণমিতি চেন্ন প্রকরণসমভিব্যাহারাদিমাহাত্ম্যাৎ সামান্যত আপ্তত্বনিশ্চয়সম্ভবেন লিঙ্গনিশ্চয়সম্ভবাৎ, কদাচিত্তত্র বিসংবাদেঽপি বাষ্পাদৌ ধূমধর্ম্মেণেবানুমানপ্রবৃত্তেঃ। নম্বেতে পদার্থাঃ সংসৃষ্টা এবেতি বা সাধ্যম্, সম্ভাবিতসংসর্গা ইতি বা? নাদ্যঃ অনাপ্তোক্তে ব্যভিচারাৎ, ন দ্বিতীয়ঃ যোগ্যতামাত্রসিদ্ধাবপি সংসর্গানিশ্চয়ান্নিষ্কম্পপ্রবৃত্ত্যনুপপত্তেঃ, যোগ্যতায়াশ্চ পূৰ্ব্বমেব হেতুবিশেষণত্বেন জ্ঞাতত্বাৎ কিমনুমানেনেতি চেন্ন নিয়মস্যৈব সাধ্যত্বাৎ আপ্তোক্তত্বেন বিশেষণাচ্চ ন অভিচার ইত্যুক্তত্বাৎ। নম্বাকাঙ্ক্ষা শ্রোতরি তদুৎপাদ্যসংসর্গাবগমপ্রাগভাবঃ স চ স্বরূপসন্নেব হেতুস্তজ্ঞানে চ সংসর্গজ্ঞানস্য পূৰ্ব্বমেব ভাবাদনুমানবৈয়র্থ্যমিতি চেন্ন। ন হি সংসর্গাবগমপ্রাগভাবমাত্রমাকাঙ্ক্ষাং রূমঃ, কিং তর্হি স্মারিততদাক্ষিপ্তাবিনাভাববিশিষ্টম্, তথাচ বিশেষণাংশজ্ঞানাদেবাকাঙ্ক্ষায়া জ্ঞানাৎ, তহি তাবদেবাকাঙ্ক্ষাহস্ত্বিতি চেন্ন বিমলং জলং নদ্যাঃ কচ্ছে মহিষশ্চরতীত্যত্রাপি নদীকচ্ছয়োরবিনাভাবসত্ত্বেনান্বয়বোধাপত্তেঃ। নীলমুৎপলমিত্য নীলোৎপলয়োরবিনাভাবেঽপি তদাক্ষিপুয়োদ্রব্যগুণয়োরবিনাভাবসম্ভবাৎ, যদ্বা পদস্মারিতগোচরা জিজ্ঞাসৈবাকাঙ্ক্ষা অভিধানাপর্যবসানং বা তথাপি তজ্জ্ঞানমাবশ্যকং জ্ঞায়মানকারণে জ্ঞানোপযুক্তব্যভিচারিবৈলক্ষণ্যাৎ ব্যাপ্তিবৎ, অতএবানন্বয়নিশ্চয়বিরহো বা, বাধকপ্রমাণাভাবো বা, সজাতীয়ে দর্শনং বা, ইতরপদার্থসংসর্গেহপরপদার্থনিষ্ঠাত্যন্তাভাবাপ্রতিযোগিত্ব প্রমাবিশেষ্যত্বং বা যোগ্যতাহস্তু, তজ্ঞানমাবশ্যকম্, আসত্তেরপ্যব্যবধানেন স্মরণরূপায়া জ্ঞানং তন্ত্রম্, সংসর্গে চ সংসৃজ্যমানবিশেষাদেব বিশেষ ইতি নানভিমতবিশেষসিদ্ধিঃ। যদ্ধা এতানি পদানি স্মারিতার্থসংসর্গজ্ঞানপূর্ব্বকানি আকাঙ্ক্ষাযোগ্যতাসত্তিমৎপদকদম্বত্বাৎ গামভ্যাজেতি পদকদম্ববদিত্যনুমানাৎ জ্ঞানাবচ্ছেদকতয়াঽভিমতবিশেষসিদ্ধিঃ। যত্ত্ব এতানি পদানি স্মারিতার্থসংসর্গবন্তীতি সাধ্যম্, তৎপদানাং পদার্থসংসর্গবত্ত্বং বাধিতমিত্যুপেক্ষণীয়ম্। ন চ লিঙ্গতয়া সংসর্গজ্ঞাপকত্বমেব পদানাং সংসর্গবত্ত্বম্, তস্যানুমানাৎ পূৰ্ব্বমসিদ্ধত্বেন ব্যাপ্তেরগ্রহাৎ। কে িচচ্চেষ্টাপ্রমাণান্তরমিতি বদন্তি, তত্রোচ্যতে চেষ্টা দ্বিবিধা কৃতসময়া হ কৃতসময়া চ। তত্র কৃতসময়া অভিপ্রায়স্থং শব্দং স্মারয়তি ন তু সংসর্গপ্রমামপি জনয়তি লিপিবৎ, স্মৃত্যারূঢ়ঃ শব্দ এব তত্র প্রমাণং শব্দস্য চ লিঙ্গত্বমুক্তং ন চ শব্দস্মরণং চেষ্টায়া অবান্তরব্যাপারঃ, চেষ্টামন্তরেণাপি শব্দাদর্থপ্রত্যয়াৎ ব্যাপারত্বে তু চেষ্টানৈয়ত্যাপত্তেঃ। নম্বেবং কথমেডমূকস্য চেষ্টাধীনো ব্যবহারস্তস্য তত্র সময়গ্রহাভাবাদিতি চেন্ন, তস্য চেষ্টাত কথমর্থেঽপি সংপ্রত্যয় ইতি চিন্তনীয়ত্বাৎ তস্যার্থেঽপি সঙ্গতিগ্রহাভাবাৎ, ব্যবহার তস্যাবিনাভাবগ্রহাৎ করিতুরগয়োরিব কশাঙ্কুশাভিঘাতাত্তত্তদ্ব্যবহার পাটবোপপত্তেঃ। অকৃতসময়া তু যা কৃত্যান্বয়িনী, সা প্রযোজকাভিপ্রায়ং স্মারয়ন্তী প্রযোজ্যং প্রবর্ত্তয়তি, ন তু কুত্রচিৎ প্রমাং জনয়তি, যথা শঙ্খধ্বনৌ ত্বয়াগন্তব্যমিতি শ্রুতশঙ্খধ্বনিঃ প্রতিষ্ঠতে, তথা যদা ময়া তৰ্জ্জন্যূদ্ধীক্রিয়তে তদা ত্বয়াঽসৌ তাড়নীয় ইতি তদা তাড়য়তি, ন তু কিঞ্চিৎ প্রমিণোতি। জ্ঞপ্ত্যন্বয়িনী ত্বকৃতসময়া যথা দশানামঙ্গুলীনামূর্দ্ধকরণেন দশ সঙ্খ্যা মুদ্রাণাং পুরাণানাং বা ত্বয়া জ্ঞাতব্যেতিকারকপ্রধানা, হস্তাকুঞ্চনদর্শনাওয়া সমাগন্তব্যমিতি ক্রিয়াপ্রধানা, তথাচানয়া চেষ্টয়া পদার্থা এব স্বতন্ত্রাঃ পরং স্মার্য্যন্তে ন তু তেষাং পরস্পরমন্বয়োঽপি বোধ্যতে, তদ্বোধককর্তৃকৰ্ম্মাদিবিভক্তিব প্রকৃতে চেষ্টৈকদেশানাং নিয়তানামভাবাৎ, তহি সংসর্গবোধমন্তরেণ চেষ্টাতঃ কথং প্রবৃত্তিনিবৃত্তী ইতি চেৎ সংশয়প্রতিভয়োরন্যতরস্মাদিতি গৃহাণ, তস্মান্ন চেষ্টাঽপি প্রমাণমিতি।।৩।।
.
হেতুরপদেশো লিঙ্গং প্রমাণং করণমিত্যনর্থান্তরম্।।৪।।
অনুবাদ
হেতু, অপদেশ, লিঙ্গ, প্রমাণ এবং করণ একার্থের বাচক হইয়া থাকে।।৪।।
ব্যাখ্যা
সামান্য-বাচক শব্দ বিশেষবাচকও হইতে পারে, মনুষ্য বলিলে ব্রাহ্মণও বুঝায়। পরন্তু যে শব্দ এক-বিশেষবাচক, তাহা অন্য বিশেষের বাচক হইতে পারে না। যেমন ব্রাহ্মণ-শব্দ শূদ্রের বাচক হয় না। প্রমাণ—প্রমাকরণ, সুতরাং করণ-বিশেষ; হেতু প্রমাণবিশেষ হইয়া থাকে, করণ এবং প্রমাণ শব্দ সামান্য-বাচক হইলেও তাহা হেতুবাচক হইতে পারে। অপদেশ শব্দ, শব্দবাচক, শব্দ যদি হেতুবিশেষ হয় তাহা হইলে সামান্যবাচক হেতুশব্দও সেইরূপ বিশেষবাচক হইয়া শব্দার্থক হইতে পারে। পরন্তু শব্দ যদি স্বতন্ত্র প্রমাণ হয়, তাহা হইলে শব্দ একবিধ প্রমাণ-বিশেষ এবং হেতু অন্যবিধ প্ৰমাণ বিশেষ হইয়া পড়ে—একার্থবাচক কোন মতেই হয় না। মহর্ষি বলিতেছেন, ঐ সকল শব্দ একার্থবাচক; অতএব প্রমাণান্তর নহে।। ৪।।
উপস্কারঃ
ননু শব্দঃ কথং লিঙ্গং শব্দস্যাপদেশস্বভাবত্বেন লিঙ্গভিন্নত্বাদিত্যাশঙ্ক্যাহ।
অপদিশ্যতে কথ্যতেহনেনার্থ ইত্যপদেশঃ শব্দঃ, স চ হেতুলিঙ্গপৰ্য্যায় এব, প্রমাণমিতি লিঙ্গবিধয়া প্রমাকরণমিত্যর্থঃ। এবং করণশব্দোঽপি লৈঙ্গিকজ্ঞানকরণে লিঙ্গ এব বৰ্ত্ততে, দ্বয়ী হি করণগতিঃ, কিঞ্চিৎ সন্নিকর্ষাধীন প্রবৃত্তি, কিঞ্চিচ্চাবিনাভাববল প্রবৃত্তি শব্দস্য ন অর্থেন সন্নিকর্ষো নাপ্যবিনাভাব ইতি কথমর্থং গময়েৎ, সঙ্কেতাদাময়তীতি চেৎ সঙ্কেতো হি পদার্থে, ন তু তৎসংসর্গে; তত্রাপি সঙ্কেত ইতি চেন্ন তস্যানেকবিধত্বেন সঙ্কেতবিষয়ভাবানুপপত্তেঃ পদার্থসঙ্কেতবলাদেব বাক্যার্থোঽপি ভাসতে ইতি চেন্ন অন্যসঙ্কেতেনাস্যোপস্থিতাবতিপ্রসঙ্গাৎ, শব্দস্মারিতসংসর্গত্বেন নিয়ম ইতি চেৎ, তথা চৈতন্নিয়মবলেনানুমানস্যৈব লব্ধাবসরত্বাৎ, সঙ্কেতস্যাপি ইচ্ছামাত্রত্বেনাতিপ্রসক্তত্বাৎ, ঈশ্বরেচ্ছা নাতিপ্রসক্তেতি চেন্ন তদিচ্ছামন্তরেণাপি গঙ্গাদিপদাত্তীরাদ্যুপস্থিতেরিত্যলং নৈয়ায়িকেষু ধৃষ্টতয়েতি।।৪।।
.
অস্যেদমিতি বুদ্ধ্যপেক্ষিতত্বাৎ।।৫।।
অনুবাদ
ইহার অর্থাৎ এই ব্যাপকের ইহা অর্থাৎ ব্যাপ্য এই জ্ঞান পূর্ব্বে অপেক্ষিত হয় বলিয়া (অতিরিক্ত প্রমাণ নহে)।। ৫।।
ব্যাখ্যা
যাহা ব্যাপ্তিজ্ঞানকে অপেক্ষা করিয়া কোন জ্ঞানবিশেষের উৎপাদক হয়, তাহাই অনুমানের অন্তর্গত, শব্দ সেইরূপ হইয়া থাকে। সুতরাং শব্দ অতিরিক্ত প্রমাণ নহে—কেবল শব্দ কেন? উক্তরূপ হেতু যাহাতেই দেখিব—তাহাই অতিরিক্ত প্রমাণ নহে—এইরূপ নিশ্চয় করিব। উপমান প্রভৃতিও অতিরিক্ত প্রমাণ নহে, তাহাও অনুমানের অন্তগত (সহজবোধের জন্য স্থূলভাবে এই উপমান বিচার করিতেছি, বিশেষ জিজ্ঞাসু ব্যক্তি উপস্কার ও পরিষ্কার দেখিবেন)। প্রথমে লোকমুখে শুনা আছে, গবয় নামক পশু—গো-সদৃশ, তৎপরে যখন সেই পশু দৃষ্টিগোচর হয়, তখন গো-সাদৃশ্য প্ৰত্যক্ষ হইয়া থাকে—এই যে গো-সাদৃশ্য ইহা গবয়সংজ্ঞা বা গবয়সংজ্ঞাশক্তির ব্যাপ্য এই জ্ঞান হইলে—এই জাতীয় পশুর নামই গবয়—অর্থাৎ ঐ প্রকার পশু যে গবয়পদবাচ্য ইহা অনুভব হয়—সেই অনুভব অনুমিতি। সুতরাং তাহার যাহা করণ তাহা অনুমান ব্যতীত আর কিছুই নহে। নৈয়ায়িকেরা বলেন, যে ব্যক্তি পূর্ব্বে কখন গবয় দেখে নাই, তাহার ব্যাপ্তিজ্ঞান সম্ভবপর নহে। সে কোন অরণ্য প্রত্যাগত ব্যক্তির মুখে শুনিয়াছে যে, গবয় গো-সদৃশ হইয়া থাকে—তাহার পর যখন সে গবয় দেখিতে পাইল, তখন তাহার গো- সাদৃশ্য জ্ঞান হইল বটে। কিন্তু গো-সাদৃশ্য যে গবয় সংজ্ঞা অর্থাৎ গবয়পদবাচ্যত্বের ব্যাপ্য এ পৰ্য্যন্ত জ্ঞান তো তাহার হয় না কিন্তু তখন সেই অরণ্যপ্রত্যাগত ব্যক্তির কথা মনে পড়ে—গবয়নামক পশু গো-সদৃশ—এই স্মরণের পর এই দৃশ্যমান গবয়জাতীয় পশু গবয়পদবাচ্য এই জ্ঞান হয়—এই জ্ঞান উপমিতি;—গো-সাদৃশ্য জ্ঞান—তাহার কারণ উপমান নামক প্রমাণান্তর শাব্দবোধ স্থলের ন্যায় এখানেও সেই ব্যাপ্তি জ্ঞান হওয়া না- হওয়া লইয়া মতভেদ। নৈয়ায়িক মতের অন্য যুক্তিও আছে, তাহা গ্রন্থান্তরে বুঝাইবার ইচ্ছা থাকিল। এতদ্ভিন্ন অর্থাপত্তি, সম্ভব প্রভৃতি কতিপয় প্রমাণ অপরে স্বীকার করিয়াছেন। তাহা পূৰ্ব্বর্তন নৈয়ায়িক এবং বৈশেষিক উভয় সম্প্রদায়েরই অস্বীকৃত। তবে শিরোমণি ও তৎসম্প্রদায়স্থ বঙ্গীয় নৈয়ায়িকগণ অর্থাপত্তির প্রমাণান্তরত্ব স্বীকার করিয়াছেন। যাহা প্রমাণসিদ্ধ, তাহার অনুপপত্তিমূলক যে অপ্রত্যক্ষ বিষয়ের কল্পনা, তাহাই অর্থাপত্তি। মনে কর—(এই ভাবের শব্দঘটিত স্থল যদিও শ্রুতার্থাপত্তির উদাহরণে প্রাচীন সম্প্রদায়ে উল্লিখিত হইয়াছে, তথাপি ইহা দৃষ্ট অর্থাপত্তির উদাহরণ হইতে পারে বিবেচনায় উল্লিখিত হইল।) হরিবাবু বেশ হৃষ্টপুষ্ট—কিন্তু সমস্ত দিন ধরিয়া দেখিয়া বুঝিয়াছ যে, হরিবাবু দিনে কিছুই আহার করেন না; রাত্রিতে তিনি আহার করেন কিনা তাহা তোমার অপ্রত্যক্ষ। তবে ইহাও স্থির যে বিনা আহারে মানুষ এমন হৃষ্টপুষ্ট হইতে পারে না—এই যে প্রমাণসিদ্ধ অর্থাৎ প্রত্যক্ষ হৃষ্টপুষ্ট ভাবের বিনা আহারে অনুপপত্তি—অর্থাৎ হইতে না পারা তদ্দ্বারাই হরিবাবু যে রাত্রিতে আহার করেন ইহা অনুভব করা যায়। এই অনুভবের নাম অর্থাপত্তি। মীমাংসক ও বৈদান্তিকেরা এই অর্থাপত্তিহেতুকে অর্থাপত্তি-প্রমাণ নামে অভিহিত করিয়া থাকেন। নৈয়ায়িকেরা বলেন, অর্থাপত্তি ব্যতিরেকব্যাপ্তি জ্ঞানেরই কার্য্য। হেতু সাধ্যের ব্যাপ্য এই যে জ্ঞান, ইহা অন্বয় ব্যাপ্তিজ্ঞান নামে এবং সাধ্যের অভাব হেতুর অভাবের ব্যাপ্য এই যে জ্ঞান, ইহা ব্যতিরেকব্যাপ্তি জ্ঞান নামে অভিহিত। রাত্রিতে আহারের অভাব হইলেই দিবসে অনাহারী ব্যক্তির হৃষ্টপুষ্ট ভাবের অভাব হয়—দিবসে অনাহারী ব্যক্তির হৃষ্টপুষ্ট ভাবের যে অভাব তাহা ব্যাপক—এবং রাত্রিতে আহারের অভাব ব্যাপ্য। কেবল রাত্রিতে আহার থাকিলেও কেহ কেহ কৃশ হয়—এই জন্য দিবসে অনাহারীর হৃষ্টপুষ্ট ভাবের অভাব বা কৃশতা অধিকদেশবৃত্তি, রাত্রিতে আহারের অভাব তদপেক্ষা অল্পদেশবৃত্তি—এই জ্ঞান হয়, তাহাই ব্যতিরেকব্যাপ্তিজ্ঞান। কেননা, দিবসে অনাহারী হরিবাবুর হৃষ্টপুষ্ট ভাব প্রত্যক্ষসিদ্ধ হেতু, রাত্রিতে আহার সাধ্য, এ স্থলে সেই সাধ্যাভাব যে হেত্বভাবের ব্যাপ্য এইরূপ জ্ঞান হয়। এই ব্যতিরেকব্যাপ্তিজ্ঞানের ফলে হরিবাবু যে রাত্রিভোজন করেন, ইহা সিদ্ধ হইতেছে। মহর্ষি কণাদের মতে ব্যতিরেকব্যাপ্তিজ্ঞান অনুমিতির কারণ না হইলেও—আহার ব্যাপক, হৃষ্টপুষ্ট ভাব ব্যাপ্য,–এই প্রকার অন্বয়ব্যাপ্তিজ্ঞান হয়—অথচ হরিবাবু দিবসে ভোজন করেন না—এইরূপ নিশ্চয় থাকায়—রাত্রিতে তিনি যে ভোজন করেন ইহা সিদ্ধ হইতেছে। সামান্যাকারে সাধ্যসিদ্ধি হইবার পক্ষে আংশিক বাধা থাকিলে আংশিক ভাবে সাধ্যসিদ্ধি হয়। এই সিদ্ধি অর্থাৎ অনুমিতিকে ইতরবাধজ্ঞানমূলক অনুমিতি বলা যায়। আংশিক বাধাই ইতরবাধ’। সুতরাং বৈশেষিকমতে অর্থাপত্তি ইতরবাধজ্ঞানমূলক অনুমিতি ভিন্ন আর কিছুই নহে। ইহার হেতু অনুমান প্রমাণেরই অন্তর্গত। একটী কথা এই যে, সাধ্য ব্যাপ্য হেতু পক্ষে আছে, এইরূপ নিশ্চয় হইলে, অনুমিতি হয়—এই নিশ্চয়ের নাম পরামর্শ, ইহা অনেকবার বলিয়াছি। বলা বাহুল্য সকল অনুমিতির পূর্ব্বেই এই পরামর্শ আবশ্যক, তবে তাহা সৰ্ব্বত্র উল্লিখিত না হইলেও ব্যাপ্তিজ্ঞান বলা হইলেই, পরামর্শ পর্য্যন্ত বুঝিবে, সেই পরামর্শের বিষয়ীভূত যে সাধ্য তাহা ব্যাপক—সেই ব্যাপকেরই অনুমিতি হয়—ইহাই নৈয়ায়িক সম্প্রদায়ের মূল মত। মনে কর ‘বহ্নিব্যাপ্যধূমবান্ পর্ব্বতঃ’, এইরূপ পরামর্শ আছে তৎপরে যে অনুমিতি হইবে—তাহার স্বরূপ বা আকার ‘বহ্নিমান পৰ্ব্বতঃ।’ পরামর্শে বহ্নিই ব্যাপকরূপে গৃহীত হইয়াছে—অনুমিতি তাহারই অর্থাৎ তদ্বিষয়েই হইল। যাহা পরামর্শে ব্যাপকাংশে বিষয়ীভূত হয় না, তাহাকে অনুমিতির বিধেয় নামক বিষয় বলিতে হইলে নিয়মের ব্যাঘাত হয়। ‘বহ্নিব্যাপ্যধূমবান্’ এইরূপ পরামর্শ থাকিলে, দ্রব্যানুমিতি বা মহানসীয়বহ্নিমান্, পৰ্ব্বতীয়বহ্নিমান্ ইত্যাদি অনুমিতিও হইতে পারে। অতএব আংশিক বাধা থাকিলেও—পরামর্শ সামান্যভাবে হইলে সামান্যভাবেই অনুমিতি হইবে। আংশিক বাধা সামান্যবুদ্ধির প্রতিবন্ধক হয় না। মহানসীয় বহ্নির অভাব পর্ব্বতে আছে, এইরূপ নিশ্চয় সত্ত্বেও পর্ব্বতে বহ্নি আছে, এইরূপ জ্ঞান হওয়ায় বাধা নাই; সুতরাং ইতরবাধজ্ঞান থাকিলেই যে যাহা পরামর্শে ব্যাপক ভাবে বিষয়ীভূত হয় নাই, তাহা অনুমিতির বিধেয়-বিষয় হইবে এমন নিয়ম যুক্তিযুক্ত নহে। এই জন্যই তাঁহারা ব্যতিরেকব্যাপ্তিজ্ঞানকে অনুমিতির কারণ বলিয়াছেন। বৈশেষিকের অভিপ্রায়, পরামর্শে ব্যাপক ভাবে যাহা বিষয়ীভূত হয় নাই, আংশিক বাধা ও লাঘবজ্ঞানস্থলে তাহাও অনুমিতির বিষয় হইবে, অন্য স্থলে নহে। এই মূল মতভেদ থাকিলেও নব্য ন্যায় এই দুই মতকেই বৈকল্পিক ভাবে গ্রহণ করিয়াছেন। সম্ভব প্রমাণ যথা—এই ব্যক্তি ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত, সুতরাং ইহার আচার থাকিতে পারে, এই যে অনুভব ইহার হেতুই সম্ভবপ্রমাণ-পদবাচ্য। বৈশেষিক প্রভৃতির মত এই—যদি ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রযুক্ত এই আচার জ্ঞান হয় তাহা হইলে উহা অনুমানেরই অন্তর্গত, ব্যাপ্তিজ্ঞান না থাকিলে—উহা প্রমাণই নহে। ঐরূপ বিচার অনুশীলন দ্বারা অন্য প্রকার প্রমাণও খণ্ডনীয়।। ৫।।
উপস্কারঃ
উপমানাদীনামপি পরাভিমতানাম্ অবিনাভাববলপ্রবৃত্তিকানাং লৈঙ্গিক এবান্তর্ভাব ইতি প্রতিপাদয়িতুমাহ।
উপমানার্থাপত্তিসম্ভবাভাবানামিতি শেষঃ। অস্য ব্যাপকস্য ইদং ব্যাপ্যমিত্যাকারা যা বুদ্ধিঃ সা জনকত্বেনাপেক্ষিতা যেষাং তে তদপেক্ষিতাস্তস্য ভাবস্তদপেক্ষিতত্বং তস্মাদিত্যর্থঃ। আহিতাগ্নিপাঠাৎ ভান্তেন বহুব্রীহিঃ। তারকাদি পাঠাদিতো বা, তত্রোপমানং তাবদনুমানমেব শব্দদ্বারা, তথা হি গোশদৃশো গবয় ইতি বাক্যম্ভাবৎ আরণ্যকেন কীদৃক্ গবয় ইতি নাগরিকজিজ্ঞাসায়ামভিধীয়তে তত্র যো গোসদৃশঃ স গবয়শব্দবাচ্য ইতি সামানাধিকরণ্যবলাৎ অতিদেশবাক্যশ্রবণানন্তরমেব পরিচ্ছিনত্তি, বনং গতস্তু তাদৃশং পিণ্ডমুপলভ্যায়মসৌ গবয়শব্দবাচ্য ইতি প্রতিসন্ধত্ত, অতিদেশবাক্যশ্রবণসময়ে গবয়ত্বং প্রবৃত্তিনিমিত্তং ন জ্ঞাতমতঃ কথং সংজ্ঞাপরিচ্ছেদ ইতি চেৎ লক্ষণয়া তৎপ্রতীতিসম্ভবাৎ, গোসদৃশো গবয় ইতি বাক্যেঽন্বয়ানুপপত্তিবিরহাৎ কথং লক্ষণেতি চেৎ তাৎপৰ্য্যানুপপত্তেঃ সত্ত্বাৎ, ন হি ব্যুৎপিৎসং প্রতি গোসাদৃশ্যস্য সখণ্ডস্য প্রবৃত্তিনিমিত্তত্বেনোপদর্শনমুচিতং তস্মাদখণ্ড জাতিবিশেষে তাৎপৰ্য্যমস্যেতি লক্ষণাসম্ভবাৎ, যদ্বা গবয়শব্দো গবয়বাচকঃ অসতি বৃত্ত্যন্তরে শিষ্টৈস্তত্র প্রযুজ্যমানত্বাৎ অসতি বৃত্ত্যন্তরে যঃ শব্দো যত্র শিষ্টৈঃ প্রযুজ্যতে স তস্য বাচকো যথা গোশব্দো গোরিত্যনুমানাদেব গবয়সংজ্ঞাং পরিচ্ছিনত্তি। তর্কশ্চ যত্ত্বয়োপমানসহকারী বাচ্যঃ স বরমনুমানে ক্রুপ্তপ্রমাণভাবেহস্ত কিং কল্পনীয় প্রমাণভাবেনোপমানেনেতি, অনুমানময়ূখে বিস্তরোহন্যত্রান্বেষ্টব্যঃ। অর্থাপত্তিরপ্যনুমানমেব, তথাহি দৃষ্টার্থাপত্তিস্তাবজ্জীবতশ্চৈত্রস্য গৃহাসত্ত্বেন দৃঢ়তরপ্রমাণাবধৃতেন বহিঃ সত্ত্বং কল্পয়তি। তত্রোপপাদ্যোপপাদকয়োব্যাপ্যব্যাপকভাবাবধারণাধীনৈব বহিঃসত্ত্বপ্রতীতিঃ, ভবতি হি জীবতো গৃহাসত্ত্বং বহিঃসত্ত্বেন সহচরিতং, বহিঃসত্ত্বং বিনা জীবতো গৃহাসত্ত্বমনুপপন্নমিতি বা ঞ্জানম্। তত্রাদ্যেঽন্বয়ব্যাপ্তেরেবাত্ত্যে তু ব্যতিরেকব্যাপ্তেরের গ্রহ ইতি, ব্যাপ্তিরস্তি ন তস্য গ্রহণমিহোপযুজ্যত ইতি চেৎ ব্যাপ্তিগ্রহমন্তরেণার্থাপত্তাভাসানবকাশাৎ, স্বরূপসত্যা ব্যাপ্ত্যা বস্তুতো যদুপপাদকং তস্যৈব কল্পনা স্যাদিতি দিক্। সংশয়করণিকায়া বিরোধকরণিকায়াশ্চানুমানান্তর্ভাব ঊহনীয়ঃ। বিরোধস্যাপি সহানবস্থাননিয়মলক্ষণস্য ব্যাপ্তিঘটিতত্বাৎ। শ্রুতার্থাপত্তিরপ্যনুমিতানুমানং পীনো দেবদত্তো দিবা ন ভুক্তে ইত্যনেন বাক্যেন পীনত্বমনুমিতং তেন চ পীনত্বেন রাত্রিভোজনানুমানম্ দেবদত্তো রাত্রৌ ভুক্তে দিবাভোজিত্বে সতি পীনত্বাসদ্ভাবাদিতি। সম্ভবোঽপ্যনুমানমেব, তদুদাহরণং হি সম্ভবতি খার্য্যাং দ্রোণঃ সম্ভবতি, দ্রোণে আঢ়কং সম্ভবতি সহস্রে শতমিত্যাদি। তত্রেয়ং খারী দ্রোণবতী তদ্ঘটিতত্বাৎ, যদ্ যেন ঘটিতং তত্ত্বেন তদ্বৎ যথাহবয়ববান্ ঘটঃ, এবমন্যদপ্যূহ্যম্। যতু সম্ভবতি ব্রাহ্মণে বিদ্যা, সম্ভবতি ক্ষত্রিয়ে শৌর্য্যমিত্যাদি, তৎপ্রমাণমেব ন ভবতি অনিশ্চায়কত্বাৎ। অভাবোঽপি ন মানান্তরং কার্য্যেণ কারণানুমানবৎ কার্য্যাভাবেন কারণাভাবানুমানস্য ব্যাপ্তিমূলকত্বেনানুমান এবান্তর্ভাবাৎ। ভট্টমতন্তু ভূতলাদাবভাবগ্রাহকং প্রমাণমনুপলম্ভাখ্যং তৎ ক্বচিৎ প্রত্যক্ষে কচিচ্চানুমানেঽর্ন্তভূতং চক্ষুরাদিনৈবাভাবগ্রহাৎ, ন চেন্দ্রিয়মধিকরণগ্রহ এবোপক্ষীণম্ অভাবগ্রহপর্য্যন্তং তদ্ব্যাপারসত্ত্বাৎ। ঐতিহ্যমবিজ্ঞাতপ্রবক্তৃকং প্রবাদপারম্পর্যম্, ইতিহেতি নিপাতসমুদায়ঃ পুরাবৃত্তে বর্ত্ততে, তস্য ভাব ঐতিহ্যং, তদ্ যদি বাধিতার্থং ন ভবতি তদা শব্দান্তর্নিবেশাদনুমানম্, যদিহ বটে যক্ষো মধূকতরৌ গৌরীত্যাদি তদ্ যদ্যাপ্তোক্তং তদা পূৰ্ব্ববৎ, নাপ্তোক্তঞ্চেত্তদা ন প্রমাণম্, তদেবং প্রত্যক্ষমনুমানঞ্চেতি সিদ্ধং দ্বয়মেব প্ৰমাণমিতি।। ৫।।
.
আত্মমনসোঃ সংযোগবিশেষাৎ সংস্কারাচ্চ স্মৃতিঃ।।৬।।
অনুবাদ
আত্মা এবং মনের সংযোগবিশেষ এবং সংস্কার হইতে স্মৃতি (উৎপন্ন হইয়া থাকে)।। ৬।।
ব্যাখ্যা
পূর্ব্বে প্রত্যক্ষ বা অনুমিতি হইলে, সংস্কার জন্মে, সেই সংস্কার স্মৃতির কারণ। অদ্য যাহা অনুভব করিলাম, তাহার সংস্কার তো হইলই, সুতরাং ভবিষ্যতে স্মরণের ন্যায় সংস্কারের পরক্ষণ হইতেই ধারাবাহিক স্মৃতি না হয় কেন? তাহার প্রচলিত উত্তর—উদ্বোধকের অভাব। যখন উদ্বোধক উপস্থিত হইবে তখন সেই সংস্কারফলে সংস্কারের অনুসারে স্মৃতি হইয়া থাকে। মহর্ষি সেই উদ্বোধককে সাক্ষাৎ কারণ না বলিয়া পরম্পরায় কারণ বলিতেছেন। মহর্ষি বলেন, আত্মার সহিত মনঃসংযোগ না হইলে তো আর আত্মার যে বিশেষ গুণ আছে তাহার উৎপত্তি হয় না, স্মৃতির প্রতিও আত্মমনঃসংযোগ কারণ, কিন্তু সকল আত্মমনঃসংযোগ নহে, আত্মমনঃসংযোগবিশেষ। উদ্বোধকসমবধান কালে যে আত্মমনঃসংযোগ হয়, তাহা এবং সংস্কার—স্মৃতির হেতু। সংস্কারকে স্মৃতির হেতু বলাতেই সংস্কার-হেতু অনুভবকে স্মৃতি-কারণ বলা হইল। বস্তুগত্যা অনুভবই তো স্মৃতির কারণ। তবে অনুভব বহু পূর্ব্বে বিনষ্ট হইলেও বৰ্ত্তমানে স্মৃতি হয় কেমন করিয়া? কার্য্যের অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে না থাকিলে তো আর কারণ হয় না। এই নিয়ম থাকায় অনুভবে স্মৃতিকারণত্ব রক্ষার জন্যই সংস্কার মানিতে হয়। অনুভব সাক্ষাৎসম্বন্ধে স্মৃতির অব্যবহিত পূর্ব্বক্ষণে না থাকিলেও সংস্কার দ্বারা থাকে। সুতরাং বুঝা গেল, সংস্কার, উদ্বোধক-সমবধানকালীন আত্মমনঃসংযোগ বা উদ্বোধক ও আত্মমনঃসংযোগ যে সময়ে ঘটিবে তখন স্মৃতি বা স্মরণ হইবেই। অনুভব প্রমাত্মক হইলে, স্মৃতিও প্রমাত্মক হইবে, অনুভব ভ্রমাত্মক হইলে স্মৃতিও ভ্রম হইবে।। ৬।।
উপস্কারঃ
লৈঙ্গিকং ব্যাখ্যায় ইদানীং প্রকরণান্তরমারভতে।
উৎপদ্যত ইতি শেষঃ, সংযোগবিশেষঃ প্রণিধানাদিসন্নিধানম্, এতস্মাদসমবায়িকারণাদা- ত্মনি সমবায়িনি স্মৃতির্বিদ্যাবিশেষ উৎপদ্যতে। নিমিত্তকারণমাহ সংস্কারাদিতি চকারেণ ব্যাপারী পূৰ্ব্বানুভবঃ সমুচ্চীয়তে, অনুভব্যাথার্থ্য্যাযাথার্থ্যমিয়মনুবিধত্তে, রজ্জুং ভুজঙ্গতয়োপলভ্য পলায়িতস্য তথৈব স্মৃতেঃ, ন চ সততং স্মৃতিপ্রসঙ্গঃ, সংস্কারোদ্বোধাধীনত্বাৎ। তদুক্তং প্রশস্তদেবপাদৈঃ “লিঙ্গদর্শনেচ্ছানুস্মরণাদ্যপেক্ষাদাত্মমনসোঃ সংযোগবিশেষাৎ পট্বা ভ্যাসাদরপ্রত্যয়জনিতাচ্চ সংস্কারাদ্ দৃষ্টশ্ৰুতানুভূতেষু শেষানুব্যবসায়স্মরণেচ্ছাদ্বেষ হতুরতীতবিষয়া স্মৃতিঃ” ইতি। আর্যং জ্ঞানং সূত্রকৃতা পৃথভ্ ন লক্ষিতং, যোগিপ্রত্যক্ষান্তৰ্ভাবিত, পদার্থ প্রদেশাখ্যে তু প্রকরণে তদুক্তং, তদ্্যথা “আন্নায়বিধাতৃণামৃষীণা- মতীতানাগতর্বত্তমানেত্বতীন্দ্রিয়েম্বর্থেষু ধৰ্ম্মাদিষু গ্রন্থোপনিবদ্ধেষু লিঙ্গাদ্যনপেক্ষাদাত্মমনসোঃ সংযোগাদ্ধৰ্ম্মবিশেষাচ্চ প্রাতিভং জ্ঞানং যদুৎপদ্যতে তদার্যম্” ইতি। তচ্চ কদাচিল্লৌকিকানামপি ভবতি, যথা কন্যকা বদতি শ্বো মে ভ্রাতাগন্তেতি হৃদয়ং মে কথয়তীতি।।৬।।
.
তথা স্বপ্নঃ।। ৭।
অনুবাদ
স্বপ্ন (ও) সেইরূপ।।৭।।
ব্যাখ্যা
সংস্কার ও আত্মমনঃসংযোগবিশেষ স্বপ্নেরও হেতু। তবে স্মৃতিহেতু সংযোগে এবং স্বপ্নহেতু সংযোগে—একটু তারতম্য আছে। যেখানে নিদ্রা উদ্বোধক হয়—সেই স্থানে স্বপ্ন, পক্ষান্তরে জাগ্রদবস্থায় উদ্বোধক জুটিলে স্মৃতি হয়। স্বপ্নে যে মানস জ্ঞান হয়—তাহার বিষয় এক একটী করিয়া অনুভূত থাকে, কিন্তু সমস্তটা মিলাইয়া তাহা অনুভূত থাকে না। পক্ষান্তরে যেমনভাবে অনুভব থাকিবে, স্মৃতি তদনুরূপ হয়। স্বপ্নজ্ঞান প্রমা নহে, তাহা নিদ্রাধীন দোষহেতুকই হইয়া থাকে।।৭।।
উপস্কারঃ
তদেবং চতুৰ্ব্বিধাং বিদ্যাং ব্যুৎপাদ্য ইদানীমবিদ্যাং ব্যুৎপাদয়িতুমহতি। তত্র সংশয়- বিপর্যয়ৌ প্রসঙ্গাৎ পূর্ব্বমেব নিরূপিতৌ, স্বপ্নং নিরূপয়িতুমাহ।
যথাত্মমনসোঃ সংযোগবিশেষাৎ সংস্কারাচ্চ স্মৃতিস্তথা স্বপ্নজ্ঞানমপীত্যর্থঃ। উপরতেন্দ্রিয়- গ্রামস্য প্রলীনমনস্কস্য ইন্দ্রিয়দ্বারেণ যদনুভবনং মানসম্, তৎ স্বপ্নজ্ঞানম্। তচ্চ ত্রিবিধং কিঞ্চিৎ সংস্কারপাটবাৎ কামী ক্রুদ্ধো বা যমর্থমাদৃতশ্চিন্তয়ন্ স্বপিতি তস্য তস্যামবস্থায়াং প্রত্যক্ষাকারং জ্ঞানং পুরাণাদিশ্রবণজনিতসংস্কারবশাজ্জায়তে, কর্ণাৰ্জ্জুনীয়ং যুদ্ধমিদমিত্যাকরম্। কিঞ্চিদ্ধাতূনাং বাতপিত্তশ্লেষ্মণাং দোষাৎ, তত্র বাতদোষাদাকাশগমন-বসুন্ধরাপর্য্যটন-ব্যাঘ্রাদিভয় পলায়নাদীনি পশ্যতি। পিত্তোপচয়দোষমহিন্না বহ্নিপ্রবেশ-বহ্নিজ্বালালিঙ্গন-কনকপৰ্ব্বত-বিদ্যুল্লতাবিস্ফুরণ- দিগ্দা ছাদিকং পশ্যতি। শ্লেষ্মদোষপ্রাবল্যাত্তু সমুদ্রসন্তরণনদীমজ্জন-ধারাসারবর্ষণরজতপর্ব্বতাদি পশ্যতি। অদৃষ্টবশাদপি তজ্জন্মানুভূতেষু জন্মান্তরানুভূতে বা নিদ্রোপপ্লুতান্তঃকরণস্য যজ্ জ্ঞানমুৎপদ্যতে তত্র শুভাবেদকং ধর্ম্মাৎ গজারোহণ-পর্বতারোহণ-ছত্রলাভ-পায়সভক্ষণ- রাজসন্দর্শনাদিবিষয়কম্, অধৰ্ম্মাত্তু তৈলাভ্যঞ্জনান্ধকূপপতনোষ্ট্রারোহণ-পঙ্কমজ্জন-স্ববিবাহ- দর্শনাদিবিষয়কং স্বপ্নজ্ঞানমুৎপদ্যতে। ত্রয়াণাং মিলিতানামেবাত্র কারণত্বং গুণপ্রধানভাবমা- শ্রিত্যায়ং বিভাগো দ্রষ্টব্যঃ।।৭।।
.
স্বপ্নান্তিকম্।। ৮।।
অনুবাদ
স্বপ্নান্তিক (তদ্রূপ)। ৮।।
ব্যাখ্যা
স্বপ্নের মধ্যে যে স্বপ্নানুভূত বস্তুস্মৃতি, অথবা স্বপ্নের মধ্যে যে, ‘আমি শয়ন করিয়া আছি’ ইত্যাদি প্রকৃত জ্ঞান, তাহা স্বপ্নান্তিক নামে অভিহিত। তাহার প্রতিও সংস্কার কারণ।।৮।।
উপস্কারঃ
ননু যজ্ঞানং স্বপ্নমধ্যে স্বপ্নজ্ঞানানুভূতস্যৈবার্থস্য স্মৃতিরূপং জায়তে তত্র স্বপ্নত্বং ন বর্ত্ততে স্বপ্নস্যানুভবরূপত্বাৎ, তথাচ কস্মাৎ কারণাত্তদুৎপত্তিরিত্যত আহ।
তথেতি পূৰ্ব্বসূত্রাদবর্ত্ততে তেনাত্মমনসোঃ সংযোগবিশেষাৎ সংস্কারাচ্চ যথা স্বপ্নস্তথা স্বপ্নান্তিকমপীত্যর্থঃ। এতাবানের বিশেষো যৎ স্বপ্নজ্ঞানং পূর্ব্বানুভবজনিতাৎ সংস্কারাৎ, স্বপ্নান্তিকন্তু তৎকালোৎপন্নানুভবজনিতসংস্কারাদেব; তদুক্তং প্রশস্তদেবাচার্য্যৈঃ “অতীতজ্ঞানপ্রত্যবেক্ষণাৎ স্মৃতিরেব” ইতি। উক্তঞ্চ বৃত্তিকারৈঃ “অনুভূতবস্তুস্ফূরণার্থতয়া ন স্মরণাদর্থান্তরং স্বপ্নজ্ঞানম্” ইতি। স্বপ্নমধ্যে প্রমাভূতং যজ্ঞানং তৎ স্বপ্নান্তিকমিতি কেচিৎ, যথা শয্যায়াং শয়ানোঽস্মীত্যাদি।।৮।।
.
ধৰ্ম্মাচ্চ।।৯।।
অনুবাদ
ধৰ্ম্ম হইতেও (হয়)।। ৯।।
ব্যাখ্যা
স্বপ্নদর্শনে যে বিশেষভাবে অনুভব, অদৃষ্টও তাহার হেতু। কেহ বলেন, পূর্ব্বসংস্কার না থাকিলেও অদৃষ্টবশতঃ স্বপ্নদর্শন ঘটে; সেই স্বপ্ন সুখহেতু হইলে ধৰ্ম্মমূলক, দুঃখহেতু হইলে অধর্ম্মমূলক। অন্যে বলেন, তা নয় পূৰ্ব্বানুভব চাইই। তবে পূর্বানুভব সামান্যাকারে থাকিলেও যে স্বপ্নে প্রত্যক্ষ হয় তাহা অদৃষ্টমূলক।। ৯।।
উপস্কারঃ
স্বপ্নস্বপ্নান্তিকয়োঃ কারণং সমুচ্চিনোতি।
অধর্ম্মসমুচ্চয়ার্থশ্চকারঃ। কৃতব্যাখ্যানমেতৎ।।৯।।
.
ইন্দ্রিয়দোষাৎ সংস্কারদোষাচ্চাবিদ্যা।। ১০।
অনুবাদ
ইন্দ্রিয়দোষ এবং সংস্কারদোষ হেতু অবিদ্যা ঘটিয়া থাকে।।১০।।
ব্যাখ্যা
দোষই ভ্রমের হেতু। ইন্দ্রিয়দোষ এবং সংস্কারদোষ উদাহরণস্বরূপ উল্লিখিত। এই দোষ একপ্রকার নহে। ব্যক্তিবিশেষে, কালবিশেষে এবং দেশবিশেষে বিভিন্ন প্রকার দোষ আছে। ইন্দ্রিয়দোষ—যথা—চক্ষুর পিত্তজনিত হরিদ্রাদোষ, শ্বেত বস্তুকেও হরিদ্রাভ দেখিতে হয়। সংস্কারদোষ—অসগ্রন্থ পাঠজনিত অনুভবের ফলে যে সংস্কার হয় তাহাই সংস্কারদোষ। যেমন আধুনিক কতিপয় ইংরাজিশিক্ষিতের ধর্ম্ম ও আচারবিষয়ে সংস্কারদোষ থাকায়, আমাদের শাস্ত্রসম্মত ধৰ্ম্মবিষয়ে তাহারা ভ্রান্ত। যাহা, যাহা নহে, তাহাকে সেই ভাবে অনুভব করাই ভ্রম। শঙ্খ শ্বেত, কিন্তু চক্ষুরোগের দোষে তাহাকে হরিদ্রাভ বলিয়া জ্ঞান হয়, ইহা ভ্রম। আমাদের ধর্ম্মমূলীভূত আচারকে—ইহা ধৰ্ম্মমূল নহে, এইরূপ নিশ্চয় করা হয়, তাহা ভ্রম। দূরস্থিত এক বস্তু অন্য বস্তুরূপে যে প্রতীত হয়, তাহার কারণ দূরত্বদোষ। সেই দূরত্বদোষ সকল ব্যক্তির পক্ষে সমান নহে। রাত্রি ও দিন এইরূপ সময়ভেদেও দূরত্বদোষের ভেদ হয়। সুতরাং দোষ যে ভ্রমের হেতু তাহা স্থির। দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় আহ্নিকে সংশয়ের হেতু নির্দ্দেশ করা হইয়াছে। এই আহ্নিকের সপ্তম সূত্রেই স্বপ্নের হেতুও কথিত হইয়াছে। এই সূত্রে ভ্রমসামান্যের হেতু কথিত হইল। স্বপ্ন, সংশয় এবং বাধনিশ্চয় সৰ্ব্ববিধ ভ্রান্তির সাধারণ হেতু—ইন্দ্ৰিয়াদিদোষ। ইহা বুঝাইবার জন্যই এই সূত্র কথিত হইয়াছে।। ১০।।
.
উপস্কারঃ
ইদানীং পৰ্য্যায়মধিকৃত্যাহ।
অবিদ্যেতি সামান্যবাচ্যপি পদং বিপর্যয়ে বর্ততে প্রকরণাৎ সংশয়স্বপ্নানধ্যবসায়ানা – মুক্তত্বাৎ, তত্রেন্দ্রিয়দোষো বাতপিত্তাদ্যভিভবকৃতমপাটবম্, সংস্কারদোষো বিশেষাদর্শনসাহিত্যং, তদধীনং হি মিথ্যাজ্ঞানং জায়তে।।১০।
তদ্দুষ্টজ্ঞানম্।। ১১।।
অনুবাদ
দুষ্টজ্ঞান (ই) অবিদ্যা।। ১১।।
ব্যাখ্যা
যে জ্ঞান দুষ্ট—দোষজন্য, তাহাই অবিদ্যা অর্থাৎ ভ্ৰম।।১১।।
উপস্কারঃ
অবিদ্যাসামান্যলক্ষণমাহ।
তদিত্যব্যয়পদং সৰ্ব্বনামসমানার্থকমবিদ্যাং পরামৃশতি। সাহবিদ্যা, দুষ্টজ্ঞানং ব্যভিচারিজ্ঞানমতস্মিংস্তদিতি জ্ঞানং ব্যধিকরণপ্রকারাবচ্ছিন্নং বিশেষ্যাবৃত্তিপ্রকারকমিতিযাবৎ, দোষাচ্চ জ্ঞানস্যানিশ্চয়রূপত্বমপি, তেনৈককোটিসত্ত্বেঽপি সংশয়ো দুষ্ট এবানবধারণাত্মকত্বাৎ, তদনেন সংশয়বিপর্য্যয়স্বপ্নানধ্যবসায়ানাঞ্চতুর্ণামপ্যুপগ্রহঃ।।১১।।
.
অদৃষ্টং বিদ্যা।। ১২।।
অনুবাদ
বিদ্যা অদুষ্টজ্ঞান।। ১২।।
ব্যাখ্যা
যাহা ভ্রমজ্ঞান নহে, তাহাই বিদ্যা অর্থাৎ যে জ্ঞান সৰ্ব্বাংশে প্রমা তাহাই বিদ্যাপদবাচ্য।। ১২।।
উপস্কারঃ
জ্ঞানমিত্যনুবৰ্ত্ততে। অদুষ্টমদুষ্টেন্দ্রিয়জন্যং যত্র যদস্তি ত ততদনুভবো বা সমানাধিকরণপ্রকারকানুভবো বা বিশেষ্যাবৃত্ত্যপ্রকারকানুভবোর বা বিদ্যেত্যর্থঃ। তচ্চাধ্যক্ষং লৈঙ্গিকঞ্চ দ্বয়মেব।। ১২।।
.
আর্ষং সিদ্ধদর্শনঞ্চ ধৰ্ম্মেভ্যঃ।।১৩।।
অনুবাদ
আর্যজ্ঞান এবং সিদ্ধদর্শনের হেতু (বিবিধ) ধৰ্ম্ম।। ১৩।।
ব্যাখ্যা
আর্যজ্ঞান অর্থে যুক্তযোগীর প্রত্যক্ষ এবং সিদ্ধদর্শন অর্থে যুঞ্জানযোগীর প্রত্যক্ষ। ফলে এক আর্যজ্ঞানই দ্বিবিধ, তাহা পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে। তবে, যুক্তের প্রাধান্যহেতু এই সূত্রে তাঁহারা ঋষি এবং যুঞ্জানগণ সিদ্ধ নামে অভিহিত হইলেন। যোগজধৰ্ম্মপ্রভাবে ঐরূপ জ্ঞান হইয়া থাকে।। ১৩।।
নবম অধ্যায় দ্বিতীয় আহ্নিক সমাপ্ত।
উপস্কারঃ
নন্বার্ষমপি জ্ঞানং সমানাধিকরণপ্রকারকমেব তচ্চ নেন্দ্রিয়জন্যমসন্নিকৃষ্টার্থগোচরত্বাৎ, ন লৈঙ্গিকং লিঙ্গানুসন্ধানমন্তরেণ জায়মানত্বাৎ, তথাচৈতকরণং তৃতীয়ং প্রমাণমায়াতমত আহ। ঋষীণাং গালবপ্রভৃতীনাং যদতীতানাগতবিষয়কং জ্ঞানং তদার্যম্। যচ্চ সিদ্ধানাং মন্ত্রৌষধিগুটিকাঞ্জনাদিনা ব্যবহিতবিপ্রকৃষ্টার্থগোচরজ্ঞানং প্রতিসিদ্ধিগতানাং যদ্দর্শনং তদুভয়ং ধর্ম্মেভ্যো যথার্থসাক্ষাৎকারিজ্ঞানং জায়তে, তদ্যোগিপ্রত্যক্ষেহন্তর্ভাবান্ন বিদ্যান্তরমিতি বৃত্তিকৃতঃ, আর্যং জ্ঞানং চতুর্থী বিদ্যেব সা চ ঋষীণাং লৌকিকানাঞ্চ ভবতি। তচ্চ মানসং প্রত্যক্ষমেব উৎপ্রেক্ষাসহকৃতেন মনসা জনিত নিয়মসন্দর্শনাদি-লিঙ্গজনিত বা, প্রাভবীয়সংস্কারাধীনৈবা ব্যাপ্তিধীঃ, স্তনপানেষ্টসাধনতাব্যাপ্তিগ্রহবৎ। প্রশস্তাচাৰ্য্যাস্তু সিদ্ধদর্শনং ন জ্ঞানান্তরমিত্যাহুঃ। তথাহি যদি সিদ্ধানাং গুটিকাঞ্জনাদিসিদ্ধিনিমিত্তপ্রভবং ব্যবহিতবিপ্রকৃষ্টবিষয়ং তদুচ্যতে তদা প্রত্যক্ষমেব, প্রত্যক্ষমেব, যদি তু দিব্যান্তরীক্ষভৌমানা গ্রহনক্ষত্রসঞ্চারাদিনিমিত্তাধীন তদা তল্লৈঙ্গিকমেব তথা সহচারদর্শনেন ব্যাপ্তিপরিচ্ছেদাদিতি।। ১৩।।
ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে নবমাধ্যায়স্য দ্বিতীয়মাহ্নিকম্।
সমাপ্তশ্চায়ং নবমোহধ্যায়ঃ।