ধীরেন সরকারের রহস্য – মনোজ সেন

ধীরেন সরকারের রহস্য

ধীরেন সরকার চট করে কোনো ব্যাপারে ঘাবড়াবার পাত্র নন। বোরাকপুরের ফাঁকা মাঠের মধ্যে বিশাল বাড়িতে থাকেন একা। দেখাশোনা করার জন্যে অবশ্য ভুলো আছে, সে নাকি এককালে ছিল ডাকাত, কেন না দশ-বারোটা খুনও করেছে, কিন্তু রাত ন-টার পরে থাকাও যানা থাকাও । তাই। আফিংয়ের নেশায় সে তখন অন্য জগতের অধিবাসী। সেই রাত ন-টা থেকে পরের দিন সকাল সাতটা পর্যন্ত ধীরেনবাবুর একমাত্র সঙ্গী তাঁর বিখ্যাত উইনচেস্টার রাইফেলটি। সেটিকে চেনে না, তেমন লোক এ তল্লাটে নেই। কতবার বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, বোমা পড়েছে, লোক খুন করতে ঢুকেছে, কিন্তু ধীরেন সরকারের উইনচেস্টার তাদের বাড়ির চৌহদ্দির ভেতরেও ঢুকতে দেয়নি।

হ্যাঁ, ধীরেনবাবুর শত্রু অনেক। হবে নাই বা কেন? তাঁর অপরাধ, তিনি টাকা ধার দেন। মানুষ বিপদে পড়ে তাঁর কাছে আসে, তিনি তাঁদের ফেরাতে পারেন না। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো অপরাধ তিনি আবার সে টাকা আদায় করতে যান। টাকা না-পেলে মামলামোকদ্দমা করেন। তাতে নাকি বহু লোক সৰ্বস্বান্ত হয়েছে। তা, তিনি কী করবেন? টাকা ধার দিয়ে বসে বসে মালা জপ করবেন? এ কী মুগের যুক্ত নাকি? টাকা ধার দেব, আর সুদে-আসলে সে টাকা আদায় করতে পারব না? অদ্ভুত ব্যাপার। তার নাকি সুদের হার চড়া। তা যাও না যেখানে সুদের হার কম। কত তো ব্যাঙ্ক হয়েছে, সেখানে যাও। দেখ কত কম সুদে কত টাকা বের করতে পারো। তার কাছে আসা কেন? তিনি তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘ধার নাও গো… ধার নাও গো’ বলে ফিরি করতে যান না। টাকা নেবে, ফেরত দেবে। যেমন যেমন লেখাপড়া হবে, তেমন তেমন। তাতে যদি কোনো বিধবা সর্বস্বান্ত হয় তো ধীরেনবাবুর কী করবার থাকতে পারে? তা না-হলে যে তাঁকেই সর্বস্বান্ত হতে হয়। তখন মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করবে কে?

তা, এমন মানুষের শত্রু না-থাকাই অস্বাভাবিক। তবে ধীরেনবাবু এসব গ্রাহ্য করেন না। ভুলো আছে, উইনচেস্টার আছে, আর আছেন, ধীরেন সরকার স্বয়ং। এই ত্র্যহস্পর্শ যোগকে যমেও ডরায়। যেমন ভুলো, তেমনি তিনি— দশাশই চেহারা, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, মাথায় ছোটো ছোটো করে ছাঁটা কাঁচা-পাকা চুল, দেখলে কে বলবে বয়েস ষাট ছুই ছুই। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমোন, বাকি সময়টা বিষয়কর্ম, মামলামকোদ্দমা, থানা-পুলিশ এইসব করতেই কাটে। তাই, রাত দশটা থেকে বারোটা তিনি কোনোরকম বিরক্তি পছন্দ করেন না, কারণ এই সময়টা তার হিসাব-নিকেশের সময়। বাড়ির পেছন দিকের দুটো ঘরে তাঁর ‘মহাফেজখানা’। যাবতীয় দলিল দস্তাবেজ সব থাকে এইখানে। দশটা বাজলেই এখানে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন, তারপর একটার পর একটা দলিল থেকে তার পরদিনের কার্যপদ্ধতি ঠিক করতে থাকেন। লোকে বলে, এই ঘরের সিন্দুকে নাকি কয়েক লক্ষ টাকা আছে। কথাটা নেহাত মিথ্যে না-হতেও পারে, তবে এইসব শুকনো দলিলে যা আছে, তা ওই সিন্দুকে যা আছে তার বোধ হয় পঞ্চাশ গুণ হবে।

অতএব, এটা খুবই স্বাভাবিক যে, এহেন ধীরেন সরকার কোনো ব্যাপারেই চট করে ঘাবড়াতে পারেন না। কাজেই, রাত বারোটার সময় শেষ দলিলটি বন্ধ করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতে অমাবস্যার তারাভরা আকাশে একটা অদ্ভুত আলো যখন তাঁর নজরে পড়ল, তখন তাঁর মনে কৌতূহলই জাগল, আর কিছু নয়। আলোটা অদ্ভুত, কারণ যদিও সেটা অন্যান্য তারাগুলোর মতোই একটা উজ্জ্বল বিন্দু, কিন্তু তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে সেটার রং অনবরত পালটাচ্ছে— কমলা থেকে সাদা থেকে তীব্র হলুদ। প্রথমে ধীরেনবাবুর মনে হল, ওটা নিশ্চয়ই কোনো প্লেনের আলো। কিন্তু, তা তো নয়। প্লেনের আলো তো এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না। এই কারণে, ওটা কোনো ফানুসও হতে পারে না। তবে কী ওটা? ধীরেনবাবুর হঠাৎ মনে হল, তবে ওটা নিশ্চয়ই একটা কৃত্রিম উপগ্রহ। সম্প্রতি কাগজে পড়েছেন, ইনস্যাট না কী যেন নামওয়ালা একটা ভারতীয় উপগ্রহ এমনভাবে আকাশে তুলে দেওয়া হয়েছে যে সেটা একই জায়গায় ভারতবর্ষের ওপর ভেসে রয়েছে। ওটা তবে ওই ইনস্যাট না কী যেন তাই হবে।

ধীরেনবাবুর কৌতূহল আর একটু বাড়ল। আবার, মনে মনে ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের প্রশংসাও না-করে পারলেন না। নাঃ, বুদ্ধি আছে লোকগুলোর। সাহেবদের সঙ্গে পাল্লা তো দিচ্ছে। আরও একটু ভালো করে দেখবার জন্যে জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। শীতের নিস্তব্ধ রাত, পেছনের বিরাট পোড়ো মাঠটা নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে যেন একেবারে হারিয়েই গিয়েছে। মাঠের ওপারে ধান খেত থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় ধীরেনবাবু বিরক্ত বোধ করলেন। আলোটা যে ভালো করে দেখবেন, তার উপায় আছে?

ধীরেনবাবু জানলাটা বন্ধ করতে গিয়েও পারলেন না। তাঁর যেন মনে হল, আলোটা একটু বড়ো হয়েছে। কমলা-সাদা-হলুদের তীব্রতাও যেন বেশি। জিনিসটা নেমে আসছে বলে মনে হচ্ছে যেন। কী রে বাবা! এই বাড়ির ওপর ভেঙে-চুরে পড়বে না তো? একটা পড়ন্ত উপগ্রহকে কি উইনচেস্টারের গুলি আটকাতে পারবে?

পারুক না পারুক, চেষ্টা করে তো দেখতে হবে। রাইফেলটা হাতে নিয়ে ধীরেনবাবু খিড়কির দরজা খুলে পেছনের মাঠের ওপর গিয়ে দাঁড়ালেন।

আলোটা এখন আরও বড়ো হয়েছে। সাদা আলোটার দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। আর সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে একটা অতিক্ষীণ ঝিঁঝি পোকার ডাকের মতো আওয়াজ। ধীরেনবাবু অবশ্য ভয় পাননি। রাইফেল হাতে স্থির দৃষ্টিতে তিনি আলোটা লক্ষ করতে লাগলেন। শব্দটা শুনে তাঁর মনে হল, তাহলে ওটা প্লেনই হবে, উপগ্রহ বোধ হয় শব্দ করে না। কিন্তু একটু বাদে আলোটা আর একটু বড়ো হতে তার পেছনে যে একটা অবয়বের ক্ষীণ অস্পষ্ট আভাস তাঁর নজরে পড়ল, সেটা কিন্তু মোটেই একটা প্লেনের মতো নয়, বরং একটা চাকতির মতো।

বিদ্যুৎ চমকের মতো ধীরেনবাবুর মনে হল, তবে কি এটা একটা উড়ন্ত চাকতি,”ফ্লাইং সসার? অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসছে পৃথিবী আক্রমণ এবং অধিকার করতে? এ সম্পর্কে যেটুকু জানেন ধীরেনবাবু, তাতে তাঁর ধারণা এই উড়ন্ত চাকতি ব্যাপারটা মোটেই সুবিধের নয়। এ চাকতি চড়ে যারা আসে তারা তো মানুষ অথচ মানুষের চেয়ে নাকি বিদ্যেবুদ্ধিতে অনেক উঁচু, কাজেই মানুষকে তারা মানুষ বলেই গণ্য করবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট নয়; সন্দেহ আছে।

তবে, অত ভয় পাবারই বা কী আছে? উইনচেস্টারের সামনে খাড়া থাকবে, এমন প্রাণী এখনও পর্যন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে জন্মায়নি। তবে একগাদা যদি আসে, অন্য কথা। তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা যাবে। আর যেটা গোঁ গোঁ করতে করতে নামছে, সেটা যদি এখানে নামে আর ধীরেনবাবু যদি একবার ওই যন্ত্রের ভেতরে যারা আছে, তাদের কব্জা করে ফেলতে পারেন, তবে আর তাঁকে পায় কে? মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এমন সুযোগ আর কেউ কখনো পায়নি, সেটা ঠিক মতো সদ্‌ব্যবহার করতে হবে। ওই যন্ত্র যদি লাঠালাঠি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসে, তবে স্বতন্ত্র কথা। নইলে ধীরেনবাবুর কপালে যা নাচছে, ওই দু-ঘর ভরতি দলিল তার সিকির সিকিও দিতে পারবে না। তা যদি না-হয় তাহলেও রাইফেল হাতে ধীরেন সরকারকে জব্দ করা বড়ো সহজ ব্যাপার নয়। বোরাকপুরের লোক সেটা জানে, এবার জানতে পারবে ওই চাকতিওয়ালারা।

যে যন্ত্রটা ধীরেনবাবুর সামনে এসে নামল, সেটা বিশাল বড়ো রকমের কিছু নয়। নেহাত ছোটোই বলা চলে। চ্যাপটা, গোল মতন, তলায় নানারকমের যন্ত্রপাতি, ওপরটা মসৃণ। নামার কিছু আগে গোঁ গোঁ শব্দটা আর আলোগুলো বন্ধ করে তিনটে লম্বা লম্বা পায়া বের করে তার ওপরে বেশ স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতেই নামল যন্ত্রটা। পায়াগুলো এক-মানুষ সমান উঁচু হবে আর চাকতিটার ব্যাস হবে একটা ঘরের সমান, তার বেশি কিছুতেই নয়। এর ভেতর একগাদা সৈন্যসামন্ত লুকিয়ে থাকতে পারে— এমন বিশ্বাস হল না ধীরেনবাবুর। অমাবস্যার অন্ধকারে চাকতিটাকে আর যাই হোক, ভীতিপ্রদ বলে মনে হল না।

এবার একসঙ্গে দুটো ঘটনা ঘটল। প্রথম, চাকতিটার ওপর হেলে সাপের মতো লকলকে একটা শুঁড় বেরিয়ে এল। সেটা যেন মুখ ঘুরিয়ে ধীরেনবাবুর দিকে তাকাল আর তাঁকে দেখতে পেতেই তাঁর মুখে একটা উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠল। সেই আলোয় ধীরেনবাবু আর তাঁর আশেপাশে বেশ খানিকটা জায়গা আলোকিত হয়ে উঠল। আর দ্বিতীয়, চাকতিটার তলায় একটা দরজা মতন খুলে গিয়ে একটা সিঁড়ি নেমে এল এবং সেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে ধীরেনবাবুর সামনে দাঁড়াল একটা মনুষ্যাকৃতি জীব।

জীবটিকে দেখে ধীরেনবাবু হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পেলেন না। ঠিক যেন একটি বাচ্চা ছেলে, প্রকাণ্ড মাথা, রোগা ডিগডিগে হাত-পা, মাথায় খোঁচা খোঁচা চুল, ডেবডেবে চোখ আর মুখে একটা বোকা বোকা হাসি। এদিকে পরনে সিল্কের মতো চকচকে কোনো কাপড়ের গাঢ় সবুজ রঙের পোশাক। দেখাচ্ছে যেন একটি সং। এই নাকি গ্রহান্তরের বিশাল সভ্য মানুষ, যাদের ভয়ে পৃথিবীর লোক থরহরি কম্প!

জীবটি কিছুক্ষণ ধীরেনবাবুর সামনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর হঠাৎ ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন করল, ‘আপনি বাঙালি বটেন?’

ধীরেনবাবু সহাস্যে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি বাঙালি বটে। আপুনি কে বটেন?’

তাঁর হাসি দেখে জীবটি বোধ হয় একটু আশ্চর্য হয়ে গেল। একটু ভেবে বলল, ‘দুঃখিত, দুঃখিত, আমার ভাষাটা একটু পুরোনো হয়ে গেল বোধ হয়, তাই না? এখন ঠিক হয়েছে তো? বেশ, বেশ। আমার নাম, গপলে। আমি আসছি আগ্ৰবা নক্ষত্রমণ্ডলের পঞ্চম গ্রহ চুং থেকে। আমার পুরো নাম চুংনি গপলে।’ বলে সে তার বোকা বোকা হাসিটা আরও প্রশস্ত করে ধীরেনবাবুর দিকে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল।

এমন হাসি দেখেই গলে যাবেন, ধীরেনবাবু তেমন লোকই নন। চট করে রাইফেলটি তুলে জীবটির দিকে তাক করে ধরে বললেন, ‘ব্যাস, ব্যাস, ওই পর্যন্ত। আর না। বেশি কাছে এলেই এক গুলিতে খুলি উড়িয়ে দেব। যা বলার, ওখান থেকেই বলো।’

গপলে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গেল। একটু ভেবে বলল, ‘কী আশ্চর্য! আপনার ভেতর থেকে শত্রুভাবাপন্ন তরঙ্গ পাচ্ছি যেন। কেন? আমি তো কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি। বরঞ্চ, আপনাদের উপকারার্থেই…’

ধীরেনবাবু পূর্ববৎ কঠিন গলায় বললেন, ‘আমাদের উপকারার্থে? কীরকম উপকার?’ বলে বন্দুক নামাতে গিয়ে দেখেন, সেটা নামানোর ক্ষমতা নেই। হাত আটকে গেছে, আঙুলগুলোও নাড়তে পারছেন না। নিশ্চয়ই ওই ব্যাটার কোনোরকম কারসাজি। ধীরেনবাবু একটু ভয় পেলেন, কিন্তু মুখে প্রকাশ করলেন না।

গপলে হাসল, বলল, ‘ভয় পাবেন না, ভয় পাবার কিছু নেই। আমি সত্যিই কোনো ক্ষতি করব না। ক্ষতি করতেও পারি না, কারণ আমি এসেছি আমাদের প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে আপনাদের সঙ্গে ব্যাবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা চালানোর জন্যে, যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে নয়। আপনি কি আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন?’

ধীরেনবাবু ভাবলেন, এ ব্যাটা দেখছি, আমার মনের ভাব বুঝতে পারছে। থট-রিডিং জানে নাকি? মনে হয় না। তাঁর মনের কথা বোঝা অত সহজ নয়। বোধ হয়, চোখ-মুখের সামান্য পরিবর্তন দেখে আঁচ করেছে। সে করুক গে! এ তো এখন ব্যাবসার কথা বলছে দেখছি। মনে হচ্ছে, বড়ো দাঁও মারা যেতে পারে, যদি ঠিকমতো চাপ দেওয়া যায়। মুখে বললেন, ‘তুমি… ইয়ে… আপনি প্রথমে বললেন আমাদের উপকার করতে এসেছেন, এখন বলছেন ব্যাবসা করতে এসেছেন। কোনটা ঠিক? ব্যাপারটা আমাকে বুঝিয়ে বলবেন?’

গপলে হাত নেড়ে বলল, ‘অবশ্য, অবশ্য! ব্যাবসা এবং উপকার— দুটোই আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য। মানে, আমাদের সঙ্গে ব্যাবসা করলে আখেরে আপনাদের উপকারই হবে। আমি এমন একটা জিনিস এনেছি আপনাদের এখানে বিক্রয় করবার জন্যে, যা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একটি অত্যন্ত দামি এবং দুষ্প্রাপ্য বস্তু বলে পরিচিত। এটির প্রয়োজনীয়তাও অত্যধিক। সেই জন্যেই বলছি, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাবসা করলে আপনাদের উপকারই বেশি হবে। অতএব, আপনাদের ব্যাবসা-সংক্রান্ত ব্যাপারের যিনি নেতা বা পরিচালক, তাঁর কাছে আমাকে নিয়ে চলুন।’

ধীরেনবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, ‘দেখুন, আমাদের এখানে ওরকম কেউ নেই। ব্যাবসা যাঁরা করেন তাঁরা নিজেরা নিজেরা করে থাকেন, কিছুটা স্বাধীনভাবে। কথা বলতে হলে আপনাকে তাঁদের সঙ্গেই বলতে হবে। আমিও একজন ব্যবসায়ী, আপনি আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। সৎ এবং ভদ্র ব্যবসায়ী বলে আমার খ্যাতি আছে। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’

‘অসৎ এবং অভদ্র কাকে বলে? বিশ্বাস করবই বা না কেন?’

‘সেকথা যাক। পরে আপনাকে এ ব্যাপারে বলা যাবে খন। এখন বলুন কীসের ব্যাবসা আপনি করতে চান?’

‘দেখুন, যে জিনিসটি আমি এনেছি, তাঁর নাম বিশুদ্ধ মুইরালাস। আপনি কি এর নাম শুনেছেন?’

ধীরেনবাবু মাথা নাড়াতে গিয়েও পারলেন না। বললেন, ‘কস্মিনকালেও না।’

‘তবেই দেখুন। এই গ্রহের লোক এই পদার্থটির নামই শোনেনি, অথচ সমগ্র ছায়াপথ নীহারিকায় বহু গ্রহের লোক এটি পাবার জন্যে যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত। বস্তুত, জিনিসটি অমূল্য।’

ধীরেনবাবুর দু-চোখ চকচক করে উঠল। বললেন, ‘তাই নাকি? তা, জিনিসটি কী? কী কাজে লাগে?’

‘জিনিসটি একটি রাসায়নিক পদার্থ। কীভাবে এটি তৈরি করা হয়েছে, তা অবশ্য আপনাকে জানানো যাবে না। বুঝতেই পারছেন, ব্যাবসাগত কারণে এই গোপনীয়তা আমাদের বজায় রাখতেই হয়। মানে, সমগ্র ছায়াপথে, এই মুইরালাস তৈরি করে মাত্র ছ-টি গ্রহ। অবশ্য আপনাদের এদিকে স্পষ্টতই আমাদের কোম্পানিই প্রথম আসছে – কাজেই এটা তৈরি করার রহস্য আপনাদের, মানে আপনাকে, জানালে যে আমাদের বিশেষ ক্ষতি হবে— তা নয়। তাহলেও, এটা আমাদের কোম্পানির একটা সাধারণ নিয়ম, এটা না-ভাঙাই ভালো।’

‘বেশ তো, তা না-হয় না-ই ভাঙলেন। কিন্তু এই পদার্থটা কী কাজে লাগে, তা তো বললেন না।’

‘অসংখ্য, অসংখ্য। এই বিশুদ্ধ মুইরালাস থেকেই তৈরি হয় মুইডস, যা ওষুধ শিল্প, সার, শিল, ধাতুর বিজ্ঞান প্রভৃতি প্রভূত সংখ্যক শিল্পে ব্যবহৃত হতে পারে। তেমনি, এর থেকে তৈরি হয় নিরন্ধ গ্যাস। এই গ্যাসও বহু কাজে লাগে। আপনি শুনলে আশ্চর্য হবেন, তুব্বা বলে একটা গ্রহ আছে, যেখানে এই গ্যাস সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা অবশ্য এর গন্ধ সহ্য করতে পারি না। আর, শুধু মুইরালাস ব্যবহার করে অমৃততুল্য খাদ্য বানানো যেতে পারে। স্রেফ এই জন্যেই আতমতেপ গ্রহে লক্ষ লক্ষ বাক্স এই মাল আমরা সরবরাহ করে থাকি। মানে, আতমতেপের লোকেরা আবার একটু বেশি রকমের ভোজনরসিক কিনা।’

গপলের বিবরণ শুনে ধীরেনবাবু সন্তুষ্ট হলেন। বললেন, ‘বেশ, বেশ। কিন্তু একটা প্রশ্ন। ব্যাবসাটা হবে কীভাবে? ব্যাবসায় লেনদেনের একটা ব্যাপার থাকে। এই ক্ষেত্রে আপনি আমাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?’

গপলে একটু চিন্তিত হল। বলল, ‘হুঁ, তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি। আপনাদের এই গ্রহ সম্বন্ধে, সম্পূর্ণ বিবরণটি আনা হয়নি। আচ্ছা, আপনারা লেনদেন করেন কীভাবে? আমি যদি আপনার কাছ থেকে মুইরালাস নিতুম, আপনি তাহলে আমার কাছ থেকে কী আশা করতেন?’

‘টাকা। এই টাকার মাধ্যমেই আমাদের এখানে ব্যাবসাপাতি চালানো হয়ে থাকে।’

‘টাকা? সেটা কী জিনিস?’

‘সেটা হয় ছাপানো কাগজ বা টাকশালে তৈরি মোহর— ধাতুর চাকতি।’

‘আমাকে একটু দেখাতে পারেন? আছে আপনার কাছে?’

‘আছে। বাড়ির ভেতর থেকে নিয়ে আসতে হবে।’

‘বেশ তো। নিয়ে আসুন।’

ধীরেনবাবু হঠাৎ অনুভব করলেন, তাঁর হাত-পা আবার চালু হয়ে গেছে। নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে। আপনি তাহলে এখানে দাঁড়ান, আমি কানে দেখাচ্ছি।’

গপলে বাচ্চা ছেলের মতো টুক করে মাথা নেড়ে তার সম্মতি জানাল। ধীরেনবাবু খিড়কির দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে দরজাটি ভালো করে বন্ধ করে তাঁর ‘মহাফেজখানায়’ গিয়ে ঢুকলেন। সিন্দুকের ডালা খুলে টাকার বান্ডিল থেকে একটা নোট সবে বের করেছেন, হঠাৎ একটা ঘড়ঘড় করে আওয়াজ কানে এল। চমকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখেন, গপলে বোকা বোকা হাসি হাসতে হাসতে অবলীলাক্রমে দেওয়াল ভেদ করে তাঁর ঘরের ভেতরে চলে আসছে।

ধীরেনবাবু হাঁ-হাঁ করে উঠতে না-উঠতে গপলে একেবারে তাঁর পাশে এসে ছোঁ মেরে টাকাটা হাত থেকে তুলে নিল। বলল, ‘এই আপনাদের টাকা বুঝি?’ বলে টাকাটা শুঁকল, নেড়েচেড়ে দেখল, তারপর কচমচিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল। ধীরেনবাবু স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন, তাঁর মুখে কথা সরল না।

খাওয়া হয়ে গেলে গপলে বলল, বাঃ, সুন্দর টাকা, খাসা টাকা, বড়োই সুস্বাদু। এতে চলবে বটে, কিন্তু একটু পুরোনো হলে ভালো হত। এটাতে এখনও যেন বোদা বোদা গন্ধ লেগে আছে। তবে হ্যাঁ, ছায়াপথের বড়ো বেশি গ্রহে এমন জিনিসটি পাওয়া যাবে না, একথা স্বীকার করতেই হবে। হেঁ হেঁ, একে আমরা বলি সুরিপাপ। তা, কত আছে আপনার?’

ধীরেনবাবু হাত নেড়ে সিন্দুকটা দেখিয়ে একটা হিসাব দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই গপলে নাক উঁচু করে ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস নিয়ে বলল, ‘আপনার কাছে তো প্রচুর পুরোনো সুরিপাপ আছে মনে হচ্ছে। গন্ধ পাচ্ছি যে! হ্যাঁ… ওই তো তাকে ওপর। অনেক আছে।’

‘কিন্তু ওসব যে আমার দলিলপত্র।’

‘তা সে আপনি যে নামই দিন। ও জিনিস থাকতে এই বাজে বোদা মাল আমি নেব না, হ্যাঁ আপনি আদি ওই সব মাল আমাকে দেন, তাহলে আমি আপনাকে পুরো এক বাক্স মুইরালাস দেব। বউনি বলেই বেশি দিচ্ছি, এর পরের বার এসে কিন্তু আধ বাক্সের বেশি দেব না।’

‘কিন্তু…’

‘আবার কিন্তু কীসের? জানেন, ডব্রিন গ্রহের লোকেরা এক বাক্স মুইরালাসের জন্যে সাত বাক্স সোনা দেয়? আপনাদের এখানে সোনা পাওয়া যায়? তাও দিতে পারেন। তবে এখানে সাতে হবে না, ন-বাক্স দিতে হবে। এতটা দূর আসতে হল কিনা?’

ধীরেনবাবু খাবি খেতে খেতে বললেন, ‘কত বড়ো বাক্স?’

গপলে তার সবুজ রঙের জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা বাক্স বের করে নিয়ে এল— খুব বড়ো কিছু নয়, লম্বা চওড়ায় চার ইঞ্চি আর খাড়াই ইঞ্চি ছয়েক হবে। বলল, ‘এইরকম বাক্স। যদি ওই পুরোনো সুরিপাপ না-দিতে চান, তাহলে এরকম ন-বাক্স সোনা হলেই চলবে।’

ধীরেনবাবু একটু সামলেছেন। বললেন, ‘এইরকম বাক্সের ন-বাক্স সোনা? সে যে অনেক দাম!’

‘তা দামি জিনিসের দাম অনেক তো হবেই।’

‘তা তো বটেই, তা তো বটেই। তা ঠিক আছে, এত দামি জিনিস যখন, তখন ওই দলিলগুলো সব দিয়ে দেয়া যাবে খন।’ মনে মনে – ভাবলেন, যে জিনিসের দাম এত, সেটা একবার হাতে পেলে, ওই সব দলিলের আর দরকারই থাকবে না। এসব ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে শেষজীবনটা একটু নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবেন। তারপর বললেন, ‘আমি একবার ওই মুইরা না কী যেন বললেন, সেটা দেখতে পারি?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।’ বলে গপলে হাতের বাক্সটা খুলে দেখাল।

ধীরেনবাবু দেখলেন, বড়ো বড়ো স্বচ্ছ স্ফটিকে বাক্সটা ভরতি। স্ফটিকগুলো দেখতে অনেকটা হিরের মতো, কিন্তু পলকাটা নয়, চৌকো চৌকো।

গণলে বলল, ‘এই নিন। যত্ন করে রাখুন। জল যেন না লাগে, আর বর্ষাকালে সাবধানে রাখবেন যাতে জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে না-আসতে পারে।’ বলে বাক্সটা ধীরেনবাবুর হাতে ধরিয়ে দিল।

তারপর হঠাৎ, ধীরেনবাবু ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সড়সড় করে টিকটিকির মতো দেয়াল বেয়ে উঠে গিয়ে তাক ভরতি যাবতীয় দলিলপত্র অবলীলাক্রমে নামিয়ে আনল গপলে। বোকা বোকা একগাল হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ। চলি তাহলে। আবার শিগগিরিই আসব।’

ধীরেনবাবু ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘শিগগিরই মানে? কবে?’

গপলে চট করে মনে মনে হিসাব করে নিয়ে বলল, ‘ধরুন, চুং-এ গিয়ে ফিরে আসতে আমার লাগবে, আমাদের হিসাব মতে পাঁচ সপ্তাহ। সেটা আপনাদের হিসাবে বোধ হয় সাড়ে চার হাজার বছর হবে। আচ্ছা, নমস্কার।’ বলে সেই পর্বতপ্রমাণ দলিলপত্র নিয়ে অনায়াসে দেয়ালের ভিতর দিয়ে। হেঁটে বাইরে চলে গেল।

ধীরেনবাবু আর্তনাদ করে বললেন, ‘সাড়ে চার হাজার বছর!’

‘ও মশায়, শুনুন, শুনুন! ও মশায়!’

মশায় অবশ্য ততক্ষণে ঘরের বাইরে। ধীরেনবাবু তার পেছনে ধাওয়া করতে গিয়ে দড়াম করে দেয়ালে মাথা ঠুকে চোখে সরষেফুল দেখতে দেখতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

বোরাকপুরের লোকেরা আজও জানে না, ধীরেন সরকার পাগল হয়ে গেলেন কেন। বয়োবৃদ্ধেরা অবশ্য বলেন যে এত পাপ আর অন্যায় একটা মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব, কিন্তু যাদের কম বয়েস তারা কিন্তু এই ব্যাখ্যায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তাদের খটকাটা অন্য জায়গায়। তারা বোরাকপুর গার্লস কলেজের কেমিস্ট্রির ছোকরা প্রফেসর অতনু মিত্রের কথাটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না।

অতনু বোরাকপুরে নবাগত। ধীরেন সরকারকে সে কোনোদিন চিনতও না। কাজেই তাঁর চাকর ভুলো এসে যখন তাকে ডাকল, তখন ভুলোর চেহারা যতই ভয়াবহ হোক না কেন, তার সরকার বাড়িতে না-যাবার কোনো কারণ ছিল না।

সরকার বাড়িতে যেতেই, ধীরেনবাবু নাকি অতনুকে পেছনের দিকে একটা ঘরে নিয়ে যান। সেখানে একটা সিন্দুক থেকে একটা বাক্স বের করে তার থেকে একটা কৃস্টাল বের করে তার হাতে দিয়ে বলেন, ‘এ জিনিসটা কী? বেশি নাড়াচাড়া করবেন না। ভালো করে দেখে বলুন।’

অতনু বলে যে পরীক্ষা না-করে তো বলা যাবে না। ওটা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া দরকার। ধীরেন সরকার একটু রাগতভাবে বলেন যে ও জিনিস বাড়ির বাইরে বেরুবে না, কারণ সেটি অমূল্য। দরকার হলে ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি এখানে এনে কাজ করতে হবে। অতনু নাকি তখন বলে যে সেটা সম্ভব নয়, কারণ একটা পুরোদস্তুর কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি বাড়িতে বসিয়ে তারপর সেটাকে টেস্ট করা প্রচুর ব্যয় এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে, ধীরেনবাবু যদি চান, তবে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখা যেতে পারে।

ধীরেনবাবু তখন একটু ইতস্তত করে রাজি হন এবং বলেন যে যদি তিনি জানতে পারেন যে এই পরীক্ষার কথা অতনু ঘুণাক্ষরেও অন্য কাউকে জানিয়েছে, তাহলে অতনুর ঠাকুরদা রায়বাহাদুর স্যার রাঘবেন্দ্র মিত্রকে সেকেন্ড ইয়ার ইকনমিক্সের সুছন্দা গুপ্তের কথাটা জানিয়ে দিতেই হবে। তার ফলটা যে কী হবে, অতনু তা নিশ্চয়ই জানে। আর যদি সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় থাকে, তবে অতনু পঞ্চাশ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাবে। অতএব অতনু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ এবং বিচলিত হলেও পারিশ্রমিকের কথাটা ভেবে রাজি হয়।

পরীক্ষা করতে গিয়ে কিন্তু অতনু একটু হতাশই হয়। পরীক্ষার ফল নিয়ে কিঞ্চিৎ বিমর্ষভাবেই সরকার-বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। পরীক্ষার ফল ছিল যে জিনিসটি অদ্ভুত। কিন্তু অমূল্য নয়, কারণ সেটি শতকরা এক-শো ভাগ খাঁটি সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণের কৃস্টাল। এতটা খাঁটি সোডিয়াম ক্লোরাইড অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য, তবে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা সম্ভব। কেউ করে না, কারণ তার কোনো প্রয়োজনও নেই। আর অদ্ভুত হচ্ছে, কৃস্টালটার পরিমাণ। লবণের এতবড়ো কৃস্টাল তৈরি করা প্রায় অসম্ভব— অতিরিক্ত রকমের কন্ট্রোল্ড কন্ডিশনে এটা বানানো হয়তো সম্ভব, কিন্তু তার জন্যে প্রচুর খরচ এবং সময়ের দরকার।

পরীক্ষার ফল শুনে ধীরেন সরকার কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে থাকেন, তারপরেই তাঁর গলা দিয়ে একটা বিকট বীভৎস হুংকার বেরিয়ে আসে। অতনু তাই শুনে ছিটকে সরকার-বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে এবং ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে নিজের কোয়ার্টাসে ফিরে আসে।

অতনুর এই কাহিনি সত্য হোক বা না-হোক, বোরাকপুরের লোকেরা কিন্তু রোজ রাত্রে দেখে যে ধীরেন সরকার বিবস্ত্র অবস্থায় বাড়ির ছাদে উন্মত্তের মতো লাফাতে লাফাতে কোনো এক গোপলা বা গপলেকে অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করতে করতে তাঁর রাইফেল থেকে আকাশের দিকে ঘনঘন দুমদাম করে গুলি ছুড়ছেন। তবে তার সঙ্গে অতনু বা তার লবণের যে কী যোগাযোগ থাকতে পারে, সে রহস্যের অবশ্য আজও সমাধান হয়নি। পাগলা গারদে খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার লোকেরা বাড়িতে ঢুকতে পারেনি— রাইফেলের গুলির থেকে মরতে মরতে বেঁচে পালিয়ে এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *