ধংসের মুখে নারী
না, নারীমহিমা কীর্তন আমার পেশা নয়। বরং বরাবরই ওঁদের সান্নিধ্য হইতে দূরে থাকিতে ভালবাসি, নারীহৃদয়-তত্বের অনেক তথ্যই আজ অবধি আমার অজানা।
শুধু—
গত কয়েকদিন অনিবার্য কারণে অজস্র নারীমণ্ডলীর মাঝখানে ঘুরিতে ফিরিতে ক্ষণে ক্ষণে নারীচরিত্রের যে অপূর্ব বিকাশ দেখিয়া অভিভূত হইয়াছি তাহারই একটু আভাস মাত্র। অভিভূত অনুভূতির সম্পূর্ণ বর্ণনা? সে কি আর সম্ভব! সামান্য চেষ্টা।
সান্নিধ্যের সূত্রটা এই— একটা ”রেস্কিউ পার্টির” কিছুটা পার্ট গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। না করিয়া উপায়ও ছিল না….. জগমামা ছাড়িবেন কেন? নিজেকে তিনি পৃথিবীসুদ্ধ দুর্গতের গার্জেন মনে করিতে পারেন, সকলের দুর্গতি মোচনের দায়িত্ব লইয়া হাঁকাহাঁকি করিতে পারেন, কিন্তু চারখানার বেশি হাত পা তো গজাইতে পারেন না? কাজে কাজেই— প্রাকৃতিক, মানবিক, দৈবিক, ভৌতিক, যে কোনো দুর্যোগের সূচনা দেখিলেই বুঝিতে দেরী হয় না, আমারও ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ আসন্ন। জগমামা ডাক দিবেনই।
এবারেও ডাক পড়িল … জগদ্বিখ্যাত ”প্রত্যক্ষ দিবসের” তাল সামলাইতে। যথাকর্তব্য নির্দেশান্তে মহোৎসাহে আমার পিঠ ঠুকিয়া দিয়া কহিলেন— ”লেগে পড়। তোর ওপরেই আমার বেশি ভরসা।” হয়তো জনান্তিকে সকলকেই এই একই ঔষধ প্রয়োগে চাঙ্গা রাখেন, তবু এত উৎসাহের মুখে বলিতে বাধিল যে আমি নিজে তো—’ভরসা’ শব্দটির আদ্যক্ষর ছাড়া মনের মধ্যে আর কিছুই খুঁজিয়া পাইতেছি না।
অগত্যা ‘দুর্গা’ বলিয়া দুর্গম সমুদ্রে ঝাঁপাইয়া পড়া ছাড়া গতি কি? ‘দয়া’ ‘মায়া’ ‘সহানুভূতি’ ইত্যাদি বড় বড় কথা থাক, চক্ষুলজ্জাকে তো বিসর্জন দিতে পারি না। পাড়ার যত ছেলে— জগমামার ‘স্বোপার্জিত’ বিরাট ভাগিনেয় বাহিনী— সকলেই যখন দিকে দিকে বিপন্নের সন্ধানে ছুটিতেছে— আমি কোনমুখে ঘরের কোণ আশ্রয় করিয়া বসিয়া থাকিব? ভবিষ্যতে কি আর সে-মুখ দেখানো সম্ভব হইবে? অবশ্য ঈশ্বর ইচ্ছায় যদি আমি এবং জগমামা গুণ্ডার চোখ ফসকাইয়া শেষ অবধি টিকিয়া থাকি।
আমার উপর ভার ছিল মেয়েদের বোর্ডিং হোষ্টেলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার। অবশ্য আপদ আসিবার পূর্বেই। যথারীতি বা যথাসম্ভব রক্ষাকবচ সঙ্গে লইয়া প্রথমেই গেলাম — হোষ্টেলে। হোষ্টেল সুপারিন্টেণ্ডেন্ট মিসেস ঘোষাল আমাদের আশায়, বিশুদ্ধ বাংলায় —’হানফান’ করিতেছিলেন। আমাদের দেখিয়া আনন্দে মূর্চ্ছা যাইতে যাইতে কোনপ্রকারের সামলাইয়া লইয়া কখনো ছলছল, কখনো বিস্ফারিত চক্ষে ঝড়ের বেগে যে বাক্যরাশি বহাইয়া গেলেন তাহার তাৎপর্য এই যে— ”গত তিন দিন যাবৎ প্রায় পঁয়তাল্লিশটি মেয়ে লইয়া তিনি যে উদ্বেগের মধ্যে কাটাইয়াছেন সে শুধু তিনিই জানেন….. তিন দিন তিন রাত্রি কাহারও আহার নিদ্রা নাই…..!” ইত্যাদি…..
রাত জাগিয়া পেটের ভাত চাল হইয়া যাইবার ভয়ে মেয়েরা ভাতে বসিতে রাজী হয় না— খাইবেই বা কি? উপকরণ তো কচু আর কুমড়া! মুহুমুর্হু চা চায়, অথচ চিনি নাই। আতঙ্কে আতঙ্কে এবং চায়ের অভাবে মেয়েরা প্রায় পাগল হইয়া উঠিয়াছে। অনেকের আবার ফিট-এর ধাত! এদিকে ডাক্তার নাই, ঔষধ নাই, টেলিফোন বন্ধ, মিসেস ঘোষালের স্নায়ু নিতান্ত সবল বলিয়াই এতটা টান সহ্য হইয়াছে কিন্তু অবস্থা ক্রমশঃ সহ্যের বাহিরে যাইতে বসিয়াছে— এভাবে আর এক বেলাও চালাইতে হইলে— থাক, অকল্যাণের কথাটা আর নাই উচ্চারণ করিলাম।
নষ্ট করিবার মত সময় অবশ্য আমাদের ছিল না।
সামান্য কিছু কাপড় চোপড় লইয়া মেয়েদের নামিয়া আসিতে বলিলাম। পঁয়তাল্লিশটি উন্মাদিনীপ্রায় তরুণীকে সামলাইয়া লইয়া যাইবার ভার পাইয়া— সত্য গোপন করিব না, বেশ একটু উন্মাদনা বোধ করিতেছিলাম। এত ঝঞ্ঝাট সত্বেও।
আশ্বাস দিবার ছলে— আলাপ করিতে যাইব না তা ঠিক, সাহসও নাই তবু নিজেকে যেন ঐতিহাসিক যুগের ‘হীরো’ মনে হইতেছিল। হয়তো এই নামই একদা ভবিষ্যৎ ইতিহাসে নারীত্রাতা বীরপুরুষদের মধ্যে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকিবে। কিন্তু সে যাক….. ইহাদের এত দেরী কেন? সামান্য কিছু কাপড় জামা গোছাইয়া আসিতে এত সময় লাগে? মিসেস ঘোষালের হিসাবে তো যাইবার জন্য আলগোছ হইয়া আছে সব….. তবে?
ফিট হইল না তো কাহারও? …..সারা সংসার তুলিয়া আনিতেছে নাকি? মিসেস ঘোষালেরও পাত্তা নাই, সেই যে উপরে উঠিয়াছেন। এ দিকে রেডক্রশের গাড়ী অপেক্ষা করিতে রাজী নয়, মিনিটে মিনিটে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিতেছে। কি করি….. দোতলার সিঁড়ি ধরিয়া সোজা উঠিয়া যাইব? না, আসিতেছেন— আসিতেছেন। একে একে দুইয়ে দুইয়ে নামিয়া আসিতেছেন….. হাতে ভ্যানিটিব্যাগ, পায়ে হাইহিল, পরণে ঢাকাই, টাঙাইল, ছাপা সিল্ক, রঙিন তাঁত, চোখে কাজল, ঠোঁটে রং! মাপ করিবেন, এত নিখুঁৎ দৃষ্টিপাত আমার স্বভাব নয়, শুধু দেখিয়া বেশি শক খাইয়াছিলাম বলিয়াই!….. কোথায় আলুথালুবেশা আলুলায়িতকেশা—অর্ধ উন্মাদিনী আশ্রয়-প্রার্থিনী কাতরা রমণীর দল, আর কোথায় সুসংবদ্ধবেশা হাস্যোৎফুল্লা তরুণীর সারি!
ভাবিলাম ধন্য বঙ্গবালা! এই ঘোর দুর্দিনে—লোকের যেখানে মাথার ঠিক থাকে না সেখানে চোখের কাজল ঠিক রাখা কম আয়াসসাধ্য ব্যাপার?….. কিন্তু পথের লোকে দেখিলে কি ভাবিবে? হয়তো ভাবিবে, আমি যেন নব-বিবাহিত শাঁসালো জামাই, বিরাট শ্যালিকাবাহিনী লইয়া চলিয়াছি মেট্রো-লাইটহাউসে।
চলিতেছি….. মধ্য কলিকাতা হইতে দক্ষিণ কলিকাতায়! গাড়ীর উল্কাবেগের মধ্যেও টুকরো-টাকরা কানে আসিতেছে….. ”উঃ বাবা, যে তাড়া লাগালেন মিসেস ঘোষাল, একটা শাড়ী বার করবার পর্যন্ত সময় হল না।” …..”বেলাটা তবু এর মধ্যেই খুব সেজে নিয়েছে।…..” ”দীপ্তি কি কাণ্ড করেছিস? সব শাড়ী ব্লাউসগুলো এনেছিস নাকি? কত বড় প্যাকেট!” ”সব আবার কোথা? কি যে বলিস! মাত্র গোটা-আষ্টেক শাড়ী আর এগারোটা ব্লাউস…. কত দিন থাকতে হবে ঈশ্বর জানেন….. কি করে যে চালাবো।” …..”উঃ, আমার দুর্দশার কথা যদি শুনিস, একটা জুতো কিনবো বলে ঠিক করছিলাম—মাঝখানে এই কাণ্ড! ছেঁড়া জুতো পরে লোকসমাজে বেরোনোর চাইতে গুণ্ডার হাতে মরা বরং ভালো ছিল—উঃ, কী ভীষণ খারাপ যে লাগছে।”— ”খারাপ লাগা? কার বা না লাগছে শুনি? বাসন্তী চ্যাটার্জীর কথা শোন একবার!” ”কোথায় নিয়ে গিয়ে তুলবে কে জানে! হয়তো এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হবে….. বাথরুম পাবো না …….শাড়ী ব্লাউস হারিয়ে যাবে”….. ”বেঙ্গল ডায়ার্সে আমার নতুন ধনেখালি শাড়ীটা পড়ে থাকলো”— একটি নিশ্বাস। ”শুনছি নাকি পাঁচশো মেয়েকে কোন একটা ওই— কলেজের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে তুলেছে’!!—জানি না বাবা, কপালে কত দুর্গতি আছে…. কী ভীষণ বিশ্রী লাগছে ভাই!” …..”আমি বাবা থাকছি না ওখানে, কাছেই দিদির ননদের বাড়ী আছে, চলে যাবো….” ”ছাড়বে তো?” ……”ছাড়বে না মানে? জেলের কয়েদী নাকি? …..”তবে তো আমিও চলে যেতে পারি সুকোমলদা’কে খবর দিয়ে”……. ”সুকোমলদা? ওঃ! তোর সেই ‘তিনি’? ……তা’হলে তো দেখছি তোর পোয়াবারো এই সুযোগে…..” ”ভাগ অসভ্য মেয়ে! কিন্তু সত্যি বলতে কি ভাই, এরকম পালানোয় বেশ যেন এ্যাডভেঞ্চার আছে” …..”নীলিমা চুপচাপ আছিস যে বড়? তুমি বাবা সোজা মেয়ে নও— কী উপায়ে তোমার সেই ‘ইয়ে দাদার’ সঙ্গে দেখা করতে পারো তাই ভাবছো নিশ্চয়?” ”পাগল আর কি! মিসেস ঘোষাল তো যাচ্ছেন পরের ট্রিপে।” ……”আরে দূর, ওখানে আবার মিসেস ঘোষাল! জনতার চাপে হারিয়ে যাবেন।” …..”সাউথ ক্যালকাটার মেয়েগুলো শুনেছি ভীষণ চালিয়াৎ, একসঙ্গে থাকতে হবে কি না কে জানে! কি যে হবে….. এত জঘন্য লাগছে ভাই।”
গাড়ীর গতি উল্কাবেগকে হার মানাইবার পণ ধরিয়াছে….. কথার লাইন ভাঙিয়া খান খান, আর স্পষ্ট কিছু বোঝা যাবে না….. শুধু কথার ধ্বনি….. হাসির গিটকিরি…..! বোধ করি কেহ কাহারও ”ইয়ে দাদার” রহস্য ফাঁস করিয়া দিয়াছে— তাই হাসির এত ঘটা! ‘বিশ্রীলাগা’র লক্ষণ খুঁজিয়া পাইতেছি না।
একটা ট্রিপ নামাইয়া আবার রওনা হইবার মুখে ক্ষেতু আসিয়া হতাশ সুরে বলিল —’সবুদা, অবস্থা ঘোরালো।’
—ঘোরালো সে কি নতুন বলবি? আবার কোন বাজারে আগুন লাগলো?
—আর দুর ও-আগুন নয়, তবে হ্যাঁ, ‘আগুন’ বটে। তুমি না গেলে হবে না, চলো জগমামা ডাকছেন।
—কোথায় যেতে হবে তাই বল?
আর কোথাও নয়, এই বাড়ীর মধ্যেই,— যেখানে সমস্ত আগুনের খাপরাদের এনে এনে জড় করা হচ্ছে। তুমি আর কজনকে এনেছো? দেখোগে ইতিমধ্যে কতো এসে গেছেন, চারিদিক থেকে! আর আগুন—
—কেন? কোন গোলমাল হয়েছে নাকি? ব্যাপার কি?
—বলে বোঝাবার নয়। জগমামা অকূল পাথারে পড়েছেন— তুমি দেখগে যাও। আমি বরং তোমার কাজটা চালিয়ে দিচ্ছি।
—তাহলে ভেতরেই পাবো জগমামাকে?
—কি জানি এতক্ষণে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন কিনা, বলছিলেন ‘পালাই’। এক কাজ করো বরং, আগে জগমামার বাড়ীটাই দেখে এসো! দেরী কোরো না, কি যে হচ্ছে কে জানে—! আমি তো— পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
ক্ষেতু আমাকে ঠেলিয়া পাঠাইল।
কিন্তু কে জানিত যমের মুখে ঠেলিয়াছে। …..জগমামার বাড়ী গিয়া দেখি জগমামা নাই! দুর্গা শ্রীহরি— বাড়ী নাই। যিনি আছেন তিনি জগমামী।
কড়া নাড়িতেই ভিতর হইতে বারকতক ‘কে? কে?’ প্রশ্ন করিয়া সশব্দে কপাট খুলিয়া দাঁড়াইলেন। …..আর একদিন এমনি দাঁড়াইয়াছিলেন, সরস্বতী পূজার চাঁদা চাইতে আসিয়াছিলাম — জগমামা বাড়ী ছিলেন না। …..সেই অবধি চাঁদা তোলার ভার আর নিই না!
আজও দাঁড়াইলেন। বারকয়েক আমার আপাদমস্তক দেখিয়া লইয়া ধীর গম্ভীর কণ্ঠে কহিলেন— তোমরাই ‘রেস্কু’ হয়েছ?
সভয়ে মাথা নাড়িলাম, অবশ্য নেতিসূচক নয়।
—তা বেশ কোর্চ্ছো, ভালে কাজ কোর্চ্ছো, বাপমার ‘আউট’ ছেলে, যা কোর্চ্ছো শোভা পাচ্ছে! কিন্তু এ বুড়োমানুষটাকে টানা কেন? তোমাদের মতন ধেই ধেই করে বেড়াবার বয়েস ওর?
ভিতর হইতে প্রতিবাদের প্রবল তাগিদ অনুভব করি— ভাষা খুঁজিয়া পাই না। অথচ ওপক্ষে ভাষার অগ্নিস্রোত।
—কেন, আপনারা মুরোদ বের করে দেশ উদ্ধার করোগে না বাছা, বারণ তো করেনি কেউ! ‘মামা! মামা!’ সাতকালের মামা! যেখানে যা হবে— বন্যে ভূমিকম্প দুর্ভিক্ষ মড়ক সবের দায়িক ‘মামা’। মামা যেন চোর-দায়ে ধরা পড়ে বসে আছে!
গোবেচারা ভালোমানুষ মামাটিকে ভাঙাইয়া খাইতে খাইতে মামীর সংসারের জন্যে যে তাঁহার আর কিছুই অবশিষ্ট রাখি নাই, সংসারের কূটাটুকু ভাঙিয়া উপকার করিবার ক্ষমতাও নাই তাঁহার, ক্ষমতা আছে শুধু শিঙ খোয়াইয়া বাছুরের দলে নেত্য করিয়া বেড়াইতে — ইত্যাদি খাঁটি কথাগুলি শুনাইয়া দিয়া পরিশেষে মন্তব্য করিলেন জগমামী—’পাড়ার ছেলে আসো যাও বলি না কিছু, এবারে কিন্তু নিজমূর্তি ধরবো আমি।
‘ঝনাৎ’ শব্দে কপাট বন্ধ করিয়া দিলেন।
বাঁচিলাম বলিলে ভুল হয় না, কিন্তু ‘নিজমূর্তির’ স্বরূপটা আর কল্পনায় আনিতে পারি না।….. যাক— জগমামার পাত্তা পাওয়া তো দরকার। কোথায় আর যাইবেন— সেই সেখান ছাড়া? ক্ষেতুর ভাষায় যেখানে আগুন জ্বলিতেছে।
আসিয়া দেখি— হাঁ, আছেন— দরজার সামনেই। বিপন্নভাবে দাঁড়াইয়া আছেন।
মামা কিছু বলিবার আগেই বলি, দেখো মামা, তোমাকে বোকা-সোকা ভালমানুষ পেয়ে ভুলিয়ে দেশোদ্ধার করিয়ে নিচ্ছি, এটা তো ভালো কথা নয়?
—কেন? কেন? আমার বাড়ী গিয়েছিলি বুঝি! …..জগমামা উদ্বিগ্ন প্রশ্ন করেন— খুব যাচ্ছেতাই করলে তো তোদের মামী? ক্ষেতুকেও করেছে। আচ্ছা কী পাগল বল তো—বলে কি না ”দেশে এত লোক থাকতে তোমার কেন মাথাব্যথা—” আরে মাথা থাকলে তবে তো মাথাব্যথা! সে যাক, ওসব মেয়েলীকথায় কান দিলে চলে? এখন এদিকে মস্ত বিপদ!
বলিলাম— ক্ষেতুও বললে বিপদ। বিপদ তো পদে পদে, নতুন আর কি? প্রাণ তো সুতোর আগায় ঝুলছে—
—আরে না না, ওসব কিছু না, বিপদ হচ্ছে— এরা বড্ড কষ্ট পাচ্ছেন! মানে—বেজায় অসুবিধে বোধ করছেন।
—কারা? বিস্মিত প্রশ্ন করি।
—আঃ কি বিপদ। ‘এঁরা’। মানে যাঁরা এসেছেন।
—ওঃ, তাই বলো। তা’ অসুবিধে তো করবেনই—ঘরবাড়ী ছেড়ে একবস্ত্রে চলে এসেছেন—
—কি বিপদ। তবে আমরা করলাম কি? ভদ্রঘরের মেয়েরা রয়েছেন সব। একজনের ছোট ছেলের নাকি সক্কালবেলা উঠেই দুখানা গজা আর দুখানা বিস্কুট খাওয়া অভ্যেস, শুধু বিস্কুট দেখে ফেলে দিয়ে কান্নাকাটি করছে! তার মা তো চটেমটে লাল। বলেন— ”ছেলেপিলে যদি ঠিকমতন খেতে না পেলো তবে আর আনা কেন? এর চেয়ে গুণ্ডার হাতে মরা ভাল ছিল।” …..আর একটি ভদ্রমহিলা হর্লিকসের অর্ডার দিয়ে বসে আছেন, একজন জামা কাপড় কিছু আনতে পারেননি বলে স্নান করতে পাননি….. কাঁদছেন! ওদিকে ঠাকুর-চাকরগুলো এতো যাচ্ছেতাই চা তৈরি করেছে যে কেউ মুখে করতে পারেননি। আবার কে বুঝি বাসিকাপড়ে কার কাচাকাপড় ছুঁয়ে দিয়েছে সেই নিয়ে হুলুস্থূল ব্যাপার! কি যে করি? তোর ওপরই আমার বেশি ভরসা।
বলিয়া জগমামা আর একবার পিঠ ঠুকিয়া দেন।
অথচ আমার তো হৃৎকম্প শুরু হইয়াছে।
জানি জগমামা যাওয়াইয়া ছাড়িবেন তবু শেষ অস্ত্র হিসাবে বলি— যেতে দাও না মামা, ‘মেয়েলি কথায় কান দিলে চলে?’
—বলিস কি সবু?
মামা আকাশ হইতে পড়েন।—ওঁরা সব ভদ্রঘরের মেয়ে!
যেন সে দাবী জগমামীর নাই!
—বুঝলাম। খুবই অসুবিধেয় পড়েছেন, কিন্তু ইচ্ছে করে তো অসুবিধেয় ফেলিনি আমরা? যেমন করে হোক মাথাগুঁজে থেকে—বিপদ উদ্ধার হওয়া বৈ তো নয়?
—সেকথা কে বোঝে বল!
জগমামা হতাশ ভঙ্গী করেন। …..তুই বরং বুঝিয়ে দেখগে—
গেলাম।
নিজে কিছু বুঝিবার আগেই একটি আধাবয়সী সধবা মহিলা প্রায় তাড়িয়া আসিয়া বলিলেন— এই যে, তোমাদেরই খুঁজছিলাম। বলি বাবা, এই যে গাড়ী গাড়ী মেয়েমানুষকে এনে এনে জন্তু-জানোয়ারের মতন খোঁয়াড়ে পুরছো— তারা খেলো কি, না খেলো, কিছু পেলো কি না পেলো দেখতে আসছো একবার? তাই বলছি—মরতেই যদি হয়—ঘর-বাড়ী ছেড়ে এখানে মরতে আসা কেন? এর চেয়ে গুণ্ডোর হাতে মরা ভালো ছিল!
—কি আশ্চর্য, খাওয়া-দাওয়ার তো যতোটা সম্ভব ভালো বন্দোবস্ত করা হয়েছে!
—হবে না কেন, মাছমাংস, বিস্কুট পাঁউরুটি, সত্যিক-জাতের ছোঁয়া জল, সব খেতে পারলে ব্যবস্থা আছে। তা তো আর পারিনে বাছা। আজ দশবছর ওসব ছেড়েছি—একদিন ‘কারে’ পড়েছি বলে জাতধম্ম খোয়াবো নাকি?
সধবাদের বাছবিচার থাকে না, তাই জানা ছিল—তবু সবিনয়ে বলি—সে কি? যাঁরা নিরামিষ খাবেন তাঁদের তো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা ছিল?
—ওই শুনতেই আলাদা, তাকিয়ে দেখলে আর জ্ঞান থাকে না। আঁশঘরের বামুন নিরিমিষ-ঘরে এসে পান খাচ্ছে। আর চাও কিছু?
হতাশ ভাবে বলি—তা’হলে আপনার কি ব্যবস্থা হবে?
—আর ব্যবস্থা! বিধাতা এখন কত দুর্গতি লিখেছেন কে জানে! আমাকে তুমি বরং বাজারের খাবার কিছু আনিয়ে দাও।
—বাজারের খাবার? চলবে?
—উপায় কি! মাছমাংসর চাইতে তো ভালো। …..আমাদের কায়েতের ঘরে তো তবু একরকম, ওদিকে দেখোগে এক ব্রাহ্মণকন্যে হত্যে হচ্ছেন, কাল থেকে জলবিন্দুটি মুখে যায়নি।
—কি আশ্চর্য, কোথায় তিনি? যাঁদের কিছুই চলবে না তাঁদের জন্যে তো ফল আর গঙ্গাজলের ব্যবস্থা আছে।
ভদ্রমহিলা হাসিয়া ওঠেন। বিদ্রূপের হাসি।
—থাক বাছা, ব্যবস্থার বড়াই আর কোর না তোমরা, কী অব্যবস্থা! কী অব্যবস্থা! মা, মা, এতখানি বয়সে এমন জগাখিচুড়ি কাণ্ড আর দেখিনি। মস্ত মস্ত ক্রিয়াকাণ্ডের বাড়ীও দেখেছি তো; দুবেলায় পাঁচশো পাত পড়ছে— টু শব্দটি নেই, আর এ একেবারে হৈ হৈ কাণ্ড………
যেন আমার বিবাহে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়াছি ইঁহাকে।
কিন্তু সেই মরণোম্মুখ ব্রাহ্মণকন্যা?
শুনিলাম স্পর্শদোষ এড়াইয়া তিনতলার ছাতে বসিয়া আছেন। অথচ জগমামা ভার দিয়াছেন সকলকে বুঝাইয়া সোজা করিতে। আমার ওপরই নাকি বেশি ভরসা তাঁহার।
সামান্য কয়টা সিঁড়ি ভাঙা? এমন আর শক্ত কি? প্রশংসার সুরাও তো কম বলবর্ধক নয়!
সিঁড়ির মুখে আসিয়া থমকিয়া দাঁড়াইলাম….. আছেন বটে— কিন্তু নিঃসঙ্গ নিশ্চয়ই নয়, তুমুল গল্প চলিতেছে! অনেকরকম কণ্ঠ! ”তারপর দিদি, সে কী অবস্থা, ওদিকে পাশের বাড়ী গুণ্ডো পড়েছে, এদিকে বাড়ীর বাবুদের ধমক,—”কিছু নিতে হবে না, সব ফেলে দিয়ে এসো!” হাত পা ঠকঠক করে কাঁপছে….. তার মধ্যে বৌ-ঝি সক্কলকার গায়ের গয়না খুলে পুঁটলি বেঁধে কয়লার গাদার নীচে রেখে এলাম….. একখানা একখানা করে ঘুঁটে কয়লা কি উটকোবে? কি বল দিদি, অত সময় পাবে কোথায়?…..
—আহা তুমি তো দিদি তবু সময় পেয়েছ, আমি তো গাড়ীতে উঠে তবে সব পেটকোঁচড়ে বাঁধি।……
—ধনেপ্রাণে মারা যাওয়া ! স্থিতভিত সব গেল, আর কি তেমন গুছিয়ে সংসার পাততে পারবো?
—অবিশ্যি হবেই আবার, কথায় বলে ‘হাড় থাকলেই মাস হয়।’ তবে এক পক্ষে মন্দই বা কি? আমার কথাই বলি— জা ভাসুরের সঙ্গে একতিল বনছিল না, নিত্যি-দিন খিটিমিটি, এদিকে কর্তাটির ধনুকভাঙা পণ ‘ভেন্ন’ হবো না। আমিও বাবা ‘কোট’ ধরেছি, এই সুযোগ। আবার যে সবাই মিলে ভেড়ার গোয়ালে ঢুকবো—সেটি হচ্ছে না।….. শত্তুর মুখে ছাই দিয়ে জায়ের এগারটি কাচ্চা-বাচ্ছা।
—এগা-রো! নমস্কার করি বাবা! আপনার?
—আমার তো ‘এই মেয়েটি’। ওই একটি বৈ দুটি নয়— মনের মত করে খাওয়াতে মাখাতে ইচ্ছে করে কিনা বলো দিদি? তা’ রাবণের পুরীতে হবার জো কি? এই যে তিরিশ টাকা দিয়ে নাচের মাষ্টার রেখেছি,…. তা জায়গা পায় না যে প্রাণখুলে একটু নাচবে।….. খুকু, সেই ‘ময়নামতী নাচ’টা দেখিয়ে দাও তো এঁদের— লজ্জা কি বোকা মেয়ে, এই যে এখানে সরে এসো—
সর্বনাশ!
আর নেপথ্যাভিনয় সমীচীন নয়। ‘ময়নামতী’ সুরু হইলে কি রক্ষা আছে? রঙ্গস্থলে দেখা দিলাম; বামুন মেয়েকে চিনিতে বিলম্ব হইল না।
উন্নাসিক অভিজাত্যপূর্ণ চেহারা, ধবধবে থানপরা, সিল্কের চাদর গায়ে, বয়েস চল্লিশের বেশি নয়। তুমি সম্বোধন না করিয়া ‘আপনি’ বলিলাম। সসম্ভ্রম প্রশ্নের উত্তরে তাচ্ছিল্যের সহিত বলিলেন—উপোসে মরব না, সে জোর রাখি, তবে গঙ্গাজলের কথা যদি বললেন তো বলি—বালতীতে-রাখা গঙ্গাজল, তা’র আবার মাহাত্ম্য!
—ওঃ, বালতীতে রাখা চলে না বুঝি? …..সত্য বলিতে কি সম্ভ্রম না আসিয়া উপায় ছিল না—এমনি দৃপ্তভঙ্গী! ব্যস্তভাবে বলি—বলেন তো আলাদা আনিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু খেতে তো হবেই কিছু! …..বুঝতেই পারছেন, এখানেই কিছুদিন থাকতে হতে পারে, কাজেই—
ঈষৎ অনিচ্ছাসত্বে কিছু ভাবিয়া বলিলেন—চারটি চিঁড়ে আর চিনি পেলে ভালো—গঙ্গাজলে ভিজিয়ে—
—নিশ্চয় নিশ্চয়, এখুনি সব ঠিক করে আনিয়ে দিচ্ছি—
নিজেই ছুটিলাম। গঙ্গা দূরে নয়—
সাইকেলের হ্যাণ্ডেলে ঝুলাইয়া দুই বোতল গঙ্গাজল আনিয়া মহোৎসাহে বলি— এই নিন, বোতল আগে ভালো করে গঙ্গায় ধুয়ে এনেছি—
মুখের কথা শেষ হইল না, একটি তীক্ষ্ণহাসি যেন বুকের হাড়ে গিয়া বিঁধিল।….. —বোতলে গঙ্গাজল? আপনি হিন্দু তো? না কি? কাঁচের বোতলে খাওয়া আর মাছমাংস খাওয়ার তফাৎ?
তফাৎ যে কিছুই নাই—তা জানিতাম না! কাজেই—বুঝিতে পারি না—গোলমাল হইয়া যায়।
তিনিই বুঝাইয়া দেন….. নতুন মাটির কলসীতে নাকি গঙ্গাজলের বিশুদ্ধতা কিছুটা বজায় থাকে। …..অতঃপর চিঁড়া! যাইতেছি, পিছনে ডাক—দেখবেন আবার সেদ্ধ চিঁড়ে এনে বসবেন না—
—না না, সে কি! সেদ্ধ কেন? কাঁচাই আনবো তো—শুকনো!
—হয়েছে! অবোধ শিশু নাকি? আতপ চিঁড়ে জানেন না?
জ্ঞান হইল। জানিতাম না তা নয়, বলিয়াছি তো গোলমাল হইয়া যাইতেছে। …..ছুটিলাম। সাইকেলের সাহায্যে মাইল তিন চার ঘুরিয়া তিন টাকার দরে একসের আতপ চিঁড়া আনিয়া যখন পৌঁছিলাম—সন্ধ্যা হয়-হয়।………
ব্রাহ্মণকন্যা সেগুলি আলগোছে লইয়া গম্ভীর ভাবে কহিলেন, সামান্য জিনিষের জন্যে এত দেরী, এ শুধু আপনাদের পাড়াতেই দেখছি….. একটু গঙ্গাজল আর দুটো শুকনো চিঁড়ে যোগাড় করতে একটা বেলা কেটে গেল! ধন্যবাদ। থাক, আজ আর খাচ্ছে কে!
ধন্যবাদ হজম করিয়া বাহিরে আসিতেই দেখি জগমামা।
—এই যে সবু, সব হ’ল?
—হল।
—বাঁচলাম বাবা, জানি তুই যেখানে আছিস—সব ঠিক হয়ে যাবে। যে মেয়েটা হরলিকস চেয়েছিল তারা পেয়েছে?
—জানি না?
—জানিস না? সে কি? …..যারা বাথরুম না পেয়ে রাগ করে পদ্মপুকুরে গা ধুতে গিয়েছিল তারা ফিরেছে?
—জানি না!
—তাও জানিস না? তবে! …..বলি—কুমড়ো ছাড়া আর কিছু তরকারি যোগাড় হয়েছে?
—কিছুই জানি না আমি।
—তবে এতক্ষণ চাঁদমুখ নিয়ে কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলে চাঁদ? প্রেয়সী খুঁজছিলে? বলি, একঘরে খাওয়া-শোওয়া নিয়ে নীচুজাত উঁচুজাতে যে ঝগড়া হচ্ছিল তার কিছু মীমাংসা হয়েছে?
—এটা জানিতাম। কারণ ঝগড়াটা নিতান্ত নীরবে হইতেছিল এমন মনে করিবার হেতু নাই। আসা যাওয়ার পথে কানে গিয়াছে। …..বলিলাম, মীমাংসার আছে কি? বর্ণহিন্দুরা তপশীলিদের ছায়া মাড়াতে রাজী নয়; অথচ তপশীলিরা ন্যায্য আসন চায়। ঝগড়া তো চলতেই থাকবে।
—তা হলে?
—ও কিছু না। অভাবের জাঁতায় মুগমুসুরি এক হয়ে যাবে।
মামা কাতরভাবে বলেন—ক্ষেপেছিস? পুরুষ-মানুষের কথা আলাদা, এ যে মেয়েছেলে! ওরা কখনো স্বভাব ছাড়ে? ইস্কুলবাড়ির মেয়েদের কথা শুনেছিস? তারা নাকি—
—কাল শুনবো মামা।
বলিয়া বড় বড় পা চালাই।
ছোটখাটো একটা স্টেশনারী দোকান আমার ছিল, দাঙ্গার হাঙ্গামায় আজ এগারো দিন অনাথার মত দোর বন্ধ করিয়া পড়িয়া আছে। ভাবিলাম ‘দুর্গা’ বলিয়া খুলি।
তালা খুলিয়া সবে ঢুকিয়াছি …..তখনো কাউন্টারের সামনে বসি নাই, একটি ছোকরা হন্তদন্ত ভাবে ছুটিয়া আসিয়া প্রশ্ন করিল—এই যে দোকান খুলেছেন—যেখানে যাই দোকান বন্ধ, এমন মুস্কিল হয়েছে—”টাঙ্গী লিপষ্টিক” আছে? ”টাঙ্গী”? আর কিছু হলে চলবে না। দেখুন না শিগগির—
ঔষধাভাবে শিশুপুত্রের রোগ বাড়িতে থাকিলে পিতা যেমন মরিয়া হইয়া ছুটাছুটি করে তেমনি ব্যস্ত ভাব।
বুঝিলাম কোনো ‘তুতো দাদা’। পাছে অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থিত বস্তুটি আগে আনিয়া হাজির করিয়া বাহবা আদায় করিয়া বসে তাই এত ছুটাছুটি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রার্থিত বস্তু পাওয়া গেল না।
অবশ্য আজকাল অমন অনেক জিনিষই থাকে না, ‘বিস্কুট নাই’ ‘হরলিকস নাই’ ‘অজন্তা সাবান নাই’ ‘এটা নাই’ ‘ওটা নাই’ বলিতে বলিতে হায়রাণ হইয়া যাই।
ছোকরা ত্রুদ্ধ কণ্ঠে কহিল—নেই? কি নিয়ে যে দোকান দিয়েছেন আশ্চর্য! বেচারা মেয়েদেরই হয়েছে দুর্দশার একশেষ! যথাসর্বস্ব ফেলে রেখে বাড়ী ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে, অথচ এখানে কিছু মিলছে না।
অপরাধীর মতো বলি—এই আর একটা রয়েছে—’কমলিকা’! ‘টাঙ্গীর’ মতো অতো ফাষ্ট কালার না হলেও—
—থাক মশাই, ও চলবে না—’টাঙ্গী’ ছাড়া আর কিছু ব্যাভার করে না সে। দেখি এখন কোথায় পাই। …..ঝঞ্ঝাট দেখুন না—ভ্যানিটি ব্যাগ এনেছিস যখন—বিশেষ দরকারী জিনিষগুলো তো ভরে নিতে হয়? এখন একেবারে অস্থির ব্যাপার, বলে কিনা—’এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে গুণ্ডার হাতে মরা শ্রেয় ছিল।’ বুঝুন?
ছুটিয়া চলিয়া গেল।
কিন্তু বুঝিব কি! আমি যে তখন বিহ্বল অভিভূত। বুঝিবার ক্ষমতা কই?
পুরুষ বলিয়া বীরত্বের বড়াই করি, অথচ প্রায়ই কতো তুচ্ছ কারণে দাড়ি কামাইতে আলস্য করি …. জুতায় কালি দিই না, কোটের বোতাম ভুল ঘরে লাগাই, পকেটে রুমাল থাকিতে ফর্সা কোঁচার আগায় তেলতেলে ঘাড় মুছি। আর এতটুকু বিপদে পড়িলেই বিচলিত হই! ছিঃ! আমাদের আবার বড়াই?
—