দ্বিতীয় পর্ব— গোধূলিসন্ধির নৃত্য
সাইগারসন আর প্রিয়নাথ যখন গোপালচন্দ্রের লেকচার শুনছিলেন, ঠিক সেই সময় তারিণী আর গণপতি হেঁটে হেঁটে চলেছে সোনাগাজির বিখ্যাত বেশ্যাপট্টির দিকে। তারিণী একাই যেতে পারত, কিন্তু জানে, যে কাজে যাচ্ছে, তাতে একা গেলে মারধর তো খাবেই, প্রাণও যেতে পারে। গণপতি এক অদ্ভুত মানুষ। হয়তো বিবাগি হয়ে সংসার ছেড়েছিল বলেই। সংসারে কেউ তার কাছে অচ্ছুত না। কাউকে সে দূরে ঠেলে দেয় না। তারিণী নিজে দেখেছে, সর্বাঙ্গে কুষ্ঠ প্রায় গলে পচে যাওয়া ভিখারিকে গণপতি কী পরম মমতায় সেবা করছে তার সাধ্যের মধ্যেই। সোনাগাজির পতিতাদের মধ্যেও অনেকেই তার চেনা। বেশ্যাদের মূল সমস্যা একটাই, যৌন রোগ। একবার রোগে ধরলে বাঁধা বাবু ছেড়ে দেয়। ছুটকোরা আর কাছে ঘেঁষে না। নাম হয়ে যায় দাগি বেশ্যা বলে। একবার দাগি হলে তার দুর্দশা আর বলার মতো না। বছর কুড়ি আগে বারবনিতাদের যৌন রোগ পরীক্ষার জন্য সরকার চোদ্দো আইন চালু করেন। তাতে যৌন রোগ পরীক্ষার জন্য নিদারুণ অত্যাচার করা হত বেশ্যাদের ওপর। ফিরে এসে অনেকেই ভিক্ষা করতেও বাধ্য হয়। তারিণী জানে, খুব আতান্তরে পড়লে নিজের অসুবিধা করেও গণপতি তাদের অর্থসাহায্য করে। একমাত্র পানদোষ বাদ দিলে গণপতির মতো মানুষ হয় না।
“মদটাই বা খাও কেন? ছেড়ে দিতে পারো না?” প্রায়ই বলে তারিণী।
“একদিন ছেড়ে দেব, দেখো। আমি ঠিক করেই রেখেছি। সারি সারি সুরার বোতল নিয়ে মাঝে বসব। সারারাত ধরে একের পর এক বোতল খালি করতে থাকব। রাত বাড়বে। নেশা বাড়বে। হয়তো বেহুঁশ হয়েও যেতে পারি। কিন্তু পরদিন থেকে আর মদ ছোঁব না।”
“সেদিন আর এসেছে!” বলে তারিণী হাসে।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা সোনাগাজির গলিতে চলে এসেছে। সাইগারসন সাহেব তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন রাখহরির কী হল খোঁজ নেবার। সেটা নিতে গেলে এখানে আসা ছাড়া গতি নেই। আর একা আবার আসতে তারিণীর সাহসে কুলায়নি। যবে থেকে গোয়েন্দাগিরি ধরেছে, তারিণী ডায়রি লেখা শুরু করেছে। দুখানা মোটা মোটা ডায়রি ভরে গেছে, যদিও তাতে আসল ঘটনা কম, কবিতাই বেশি। অনেকেই জানে না, গণপতি জানে, তারিণী মনেপ্রাণে এক কবি। তার খুব ইচ্ছে একদিন তার কবিতার বই বেরোবে। বটতলার সস্তার প্রেস থেকে না, রীতিমতো দামি কাগজে, লাল কাপড়ে বাঁধাই হয়ে, সোনার জলে নাম খোদাই করে। কিন্তু গত কয়েকদিনে যা চলছে, তাতে তারিণীর কবিতা লেখা মাথায় উঠেছে। দুইবেলার ঘটনা লিখতে গিয়েই পাতা ভরে উঠছে একে একে।
সোনাগাজির গলিতে ঢুকে একটু পরেই গণপতি বাঁদিকে এক সরু পথ ধরল। পাশাপাশি বড়োজোর দুজন যাওয়া যাবে।
—এইদিক পানে ঢুকলে কেন? সেই বাড়ি তো এদিকে না!
—জানি, কিন্তু এখান থেকেই খবর পাওয়া যাবে।
—এখানে কার বাড়ি?
—বাড়ি তো এক বাবুর। কে তা জানি না। তবে বর্তমানে থাকে লক্ষ্মীমতি। এই সোনাগাজির গলিতে অমন একখানা চরিত্র খুঁজে পাওয়া ভার।
—কেন হে?
—বুঝলে তারিণী, নেহাত লক্ষ্মীমতি মেয়েমানুষ, তায় আবার রাঁড়, তাই তুমি বেঁচে গেলে। যদি ও পুরুষমানুষ হত, আর গোয়েন্দাগিরিতে নামত, তবে তোমার আর সাইগারসন সাহেবের মতো অনেক গোয়েন্দার নাক কাটত এক হাতে। ঘর থেকে এক পাও বেরোয় না। এদিকে গোটা কলকাতার সব খবর ওর কাছে থাকে। খোদায় মালুম কেমন করে। খবর পেতে হলে ওর চেয়ে ভালো কেউ হয় না। আর মনটাও সোনা দিয়ে বাঁধানো।
—তোমার সঙ্গে আলাপ কীভাবে?
—সে আর বলো কেন? এককালে রাস্তায় রাস্তায় মাদারির খেলা দেখাতাম। একবার ভুলে ঢুকে পড়েছিলাম এই গলিতে। দালালরা আমায় চোর ভেবে পিটিয়ে প্রায় আধমরা করে দিয়েছিল। লক্ষ্মীমতিই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে এই বাড়িতে। সেবা করে সুস্থ করে তোলে। বললাম না, এঁরাও যে মায়ের জাত, সেটা আমরা ভুলে যাই প্রায়ই।
বলতে বলতে দুজনে এক দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। সদর দরজা বন্ধ।
“লক্ষ্মীমতি, ও লক্ষ্মীমতি, বলি আছ নাকি?” গণপতি হাঁকল।
উপর থেকে কাঁসরের মতো গলায় আওয়াজ এল, “কোন ড্যাকরা, নিমুষ্কের ব্যাটা রে! আমি কি ঘর থেকে বেরুই? সকাল সকাল ছেনালি কত্তে এয়েচিস নাকি?”
গণপতি হেসে ফেললে। তারিণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “মন যেমনই হোক, লক্ষ্মীমতির ভাষাটি বড্ড সরস। কিছু মনে কোরো না ভাই”, বলে আবার হাঁকল “দিদি, আমি গণপতি। দরকার ছিল একটু।”
খানিকক্ষণ কোনও আওয়াজ নেই। তারপর সদর দরজা খুলে গেল। এক থুত্থুড়ে বুড়ি দরজা খুলে দিয়ে একপাশে দাঁড়ালে। ওপর থেকে আবার শোনা গেল, “মাসি, এঁদেরকে আমার কাচে পাঠাও।”
পাঠাতে হল না। গণপতি সিঁড়ি বেয়ে চটাপট উঠতে লাগল। পিছন পিছন একটু কুণ্ঠিতভাবে তারিণী। উপরে উঠে ডানদিকে ঘুরেই একটা হলঘর। তারিণী উঁকি মেরে দেখল ঘর খালি। তাতে ফরাস পাতা, হুঁকো, মদের বোতল, পেয়ালা সব গড়াগড়ি যাচ্ছে। এক কোণে ডালা খোলা অবস্থায় একটা হারমোনিয়াম। কাল রাতে আসর জমেছিল বোঝা যাচ্ছে। তার পাশের ঘর থেকে এক মহিলা কণ্ঠ ভেসে আসছে। তারিণীরা ঢুকতেই দেখল এক স্থূলাঙ্গী ধবধবে ফর্সা মহিলা গায়ে কোনওক্রমে একটা কোরা কাপড় জড়িয়ে খাটে বসে জাঁতিতে সুপুরি কাটছে। কাপড়ে তার শরীরের যতটা ঢাকা পড়েছে, তার বেশিটাই অনাবৃত। তারিণী লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিল। সামনে মেঝেতে বসে একটা পনেরো-ষোলো বছরের মেয়ে কেঁদে কেঁদে কী যেন বলছে। লক্ষ্মীমতি তার হাতের জাঁতি দিয়ে দুজনকে ইশারায় দুটো চেয়ারে বসতে বলল। মেয়েটা তখনও বলে যাচ্ছে, “… সেখানে গে দেকি চারিদিকে পেয়াদা পাক গিসগিস কচ্চে। তাদের আগুতে দেকেই তো ভয়ে আমার বুক গুড়গুড় কত্তে লাগল। শুনেচি নাকি আরকের টবে বসায়, গরম লোহার শিক ঢোকায়, এইসব ভাবনায় কাপড়ে মুতে ফেলেচি। একজন এসে বললে, তোর ব্যামো আচে? ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বল্লুম, না। পরে বলল, সরে আয়। তোকে ন্যাংটো হতে হবে। যদি বেশি নজ্জা করে তো চোকে কাপড় বাঁধ। আমার তো নজ্জাতে পরান যাচ্চে, তবু ভয়েতে যা বলচে তাই কচ্চি, নইলে মারবে না ধরবে এই ভেবে হাতখানি চোকে দিয়ে চুপ করে ডাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর আর মাতামুন্ডু কী বলব এনাদের সামনে?”
“তুই বল, এঁদের গেরাহ্যি করার দরকার নেই কো।” লক্ষ্মীমতি বললে।
“দিদি, তারপর একটি ভদ্দরনোক কাচে এসে বললে, ন্যাংটো হও। আমি তো চোকে হাত দিয়ে আচি। সে বার দুই বলে আপনিই ন্যাংটা কল্লে। তারপর আঁটকুঁড়ির ব্যাটা বলে কিনা, পা ফাঁক করে ডাঁড়া। কী আর করি। ডাঁড়ালাম। বলব কী দিদি, হাঁটু গেড়ে বসে সব ঘুঁটে ঘুঁটে দেখলে, ম্যা গো…” বলে মেয়েটা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
লক্ষ্মীমতি সুপুরি কাটতে কাটতেই বললে, “কাঁদিস নে নিস্তারিণী। আমি বাবুকে বলে দেবখন। চন্নননগরে নাকি এসবের হ্যাপো নেই। সবাই যাচ্চে, তুইও যা।”
“তুমিও চলো দিদি”, নিস্তারিণী চোখ মুছে বললে।
“আ মোলো গতরখাগি! আমার কি গেলে চলবে? আমি এখন ঢোক্কা মাগি। আমায় বাবু বেঁধে রেখেচেন তাই আচি। তোর ডবকা বয়স। অনেক ভবিষ্যৎ পড়ে আচে। তুই এখন যা। পরে আসিস। একটা কাজ আচে। কত্তে হবে।”
“কী কাজ দিদি?”
“বল্লুম না, এখন যা… বাবুরা এয়েচেন কেন দেকি। কতা বলি… তুই বরং মাসিকে বল এঁয়াদের জন্য এট্টু শরবতের…”
“না, না, আমরা কিছু খাব না”, ব্যস্ত হয়ে উঠল তারিণী।
“কেন? বেশ্যার বাড়ির জলও খেতে নেই বুঝি? তা ভালোমানুষের পো, এতই যদি ঘিনপিত তা এয়েচ কেন। বেরিয়ে যাও, এখুনি বেরিয়ে যাও।”
তারিণী দেখল রাগে লক্ষ্মীমতির গোটা দেহ কাঁপছে। গণপতি কোনওমতে শান্ত করলে।
“আরে দিদি, ও ভালো ছেলে। এসব ভেবে বলেনি। আসলে এইমাত্তর খেয়ে বেরুলাম তো। কিন্তু তাতে কী? শরবত তো আর খাওয়া নয়, যাকে বলে পান করা। কি তারিণী, তাই তো?”
তারিণীর তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। কোনওক্রমে উপরে নিচে মাথা নাড়াল।
লক্ষ্মীর মেজাজ একটু ঠান্ডা হয়েছে। সে নিস্তারিণীকে গম্ভীর গলায় আদেশ দিল, “শোন, একটু শুকনো মুচকুন্দ ফুল দিয়ে আনবি।”
গণপতি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার বাবুর কী খবর দিদি?”
“আর খবর! সে কতায় আচে না,
কপাল আমার বক্ত,
শক্ত দেখে ভাতার নিলাম,
হাগে শুধু রক্ত
আমার হয়েচে সেই মরণদশা। দিন দশ-পনেরো হল শরীলে আর জোর নেই। কিছু করে-টরে না। এসে বলে, মাতা ধরেচে। মাতা টিপে দে। তবে কিচুদিন হল বড্ড চিন্তায় আচে বেচারা। সবসময় কী যেন সব ভাবে। ভয়ে ভয়ে থাকে। জিজ্ঞেস কল্লে বলে, এসব তুই বুঝবিনে। কী কুক্ষণে যে চিটিটা আমার হাতে এল…”
“কীসের চিঠি?” তারিণী জিজ্ঞেস করে।
“সে আমি কী জানি… তা তুমি কে বাছা?” শেষ কথাটা তারিণীকে উদ্দেশ্য করে বলা।
এবারেও উত্তর দিল গণপতি, “দ্যাখো কাণ্ড। এখনও তোমাদের আলাপ করাইনি! এ হল তারিণী। আমার মিতে। শখের গোয়েন্দা। খুব ভালো ছেলে।”
শখের গোয়েন্দা শুনে তারিণী একটু দমে গেল, কিন্তু আবার ভাবল ঠিকই আছে। সব খুলে বলতে গেলে এ আবার চুপ করে যাবে।
“তা শখের গোয়েন্দার আমার বাড়ি কী কাজ?” শরবতের রাগ এখনও যায়নি মনে হচ্ছে, তারিণী ভাবে। তারপর বেশ মিনমিন করেই বলে, “আসলে দিদি, এর আগের রাস্তা দিয়ে সোজা গেলে যে পানের দোকানটা আছে…”
“হ্যাঁ, দাশুর দোকান…”
“তার উলটো দিকের বাড়ির…”
“হ্যাঁ, রতনমণি আর হীরেমন থাকে। দুই বোন। এক জাঁদরেল বাবু দুটোকেই রেকেচে। রতন ভালো মেয়ে। তবে হীরেটা বদ। যেদিন যেদিন বাবু আসে না, খুচরো কাজ করে। আজকাল নাকি এক দালাল ফড়ের সঙ্গে আশনাই হয়েচে।”
“না, না, সেই বাড়ি না। তার পাশের বাড়ি…”
লক্ষ্মীর মুখ গম্ভীর হল। “কেন, ওই বাড়িতে কী হয়েচে?”
“কিছু না। কে থাকেন সেটা জানতে চাই।”
“ভূত থাকে বুজলে, ভূত! তুমি নেহাত ভাইয়ের সঙ্গে এয়েচ, তাই তোমায় কিচু বল্লাম না। নইলে অন্য কেউ ভরদুকুরে ওই অপয়া বাড়ির নাম কল্লে আমি জুতো মেরে তার মুক সোজা করে দিতাম।”
তারিণী দেখল মহা মুশকিল, এ যে কথায় কথায় রেগে যায়। কিন্তু আবার চুপ থাকলেও কাজ হবে না। এদিকে বুড়ি মাসি তাদের জন্য শরবত নিয়ে এসেছে। দুজনে একটাও কথা না বলে চুপচাপ শরবত খেতে লাগল।
প্রথম কথা বলল লক্ষ্মীমতি নিজেই।
“কিচু মনে কোরো না ভাই। তুমি এসে অব্দি তোমার সাতে মুক নেড়ে নেড়ে কতা কইচি। পোড়ামুক আমার। আসলে ওই বাড়ি বড়ো অপয়া। ওর নাম কেউ নেয় না বড়ো। এককালে খুব জমাটি বাড়ি ছিল ওটা। দোতলা বাড়ি। সতেরো-আঠারোটা ঘর। সব ঘর ভরা। এক-এক ঘর এক-এক মেয়েমানুষের। সন্ধে হলেই যেন উৎসব লেগে যেত। গানের আওয়াজ, নাচের আওয়াজ। ত্রৈলোক্য রাঁড় পেত্থমে ওই বাড়িতেই এসেই ওটে। পরে বাড়ির ওপরতলা একা ওর হয়েছিল। মাগি পয়সা করেচিল। রাখতে পারলে না। তারপর খুনখারাপি ধল্লে। একবার ওসব পতে গেলে আর ফেরা যায় নাকো। ত্রৈলোক্যও পারলে না। দারোগা প্রিয়নাথের হাতে ধরা পল্লে। ফাঁসি হল। কিন্তু মরার আগে বুঝি সে অভিশাপ দিয়েচিল। ও বাড়ির একজনও আর বাঁচলে না। সবাই একে একে ফৌত হল। এখন ভূতুড়ে বাড়ির মতো পড়ে থাকে…”
“কেউ থাকে না ওখানে?”
“থাকে না বলব না, তবে আমাদের কেউ থাকে না।”
“মানে?”
“আমি তো ঘর থেকে বেরুই না বাপু, যা শুনি মুকের কথা। ও বাড়ি নাকি পাগলের আস্তানা। একপাল পাগল রয়েচে ওই বাড়িতে। হীরেমন ওদের চিৎকার শুনেচে। ওরা কোতা থেকে আসে, কোতায় যায়, কেউ জানে না। অশৈলী সব কায্যকলাপ। হীরেমন তো বলেচে, ওরা মানুষ নয় খোক্কসের বাচ্চা। কাঁচা কাঁচা জন্তুজানোয়ারের রক্ত খায়।”
“হীরেমন দেখেছে?”
“না দেখেনি, তবে মাঝে মাঝেই একপাল ভেড়া নিয়ে আসত ঠেলায় চাপিয়ে। অনেকদিন এমন হয়েচে, আবার গাড়িতে চাপিয়ে তাদের ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। নাড়িভুঁড়ি সব এলানো। দেহে কোতাও রক্ত নেই। এই রক্ত সব কে খাচ্চে বল দেকি? ওই খোক্কসের বাচ্চাগুলো।”
“কতদিন হল এরা এসে রয়েছে?”
“তা বাপু দিন গুনে তো বলতে পাব্বো না, মাস ছয় তো হবেই।”
“আপনাদের চেনা কেউ ওই বাড়ি যায় না?”
“ঢুকতে দিলে তো! সামনে দরোয়ান থাকে। কাচে গেলেই দূর দূর করে ভাগায়। সেই হীরেমনের পিরিতের ছোকরা, গেচিল কী হচ্চে দেখতে, এমন তাড়া দিয়েচে, হারামজাদা বাপের নাম ভুলে গেচে। তবে ভালো একটাই, কদিন হল বাড়িতে আর কেউ নেই নাকি। সদরে তালা। রতন বলচিল, দিদি এতদিনে শান্তিতে ঘুমুতে পাব্বো।”
“তালা কবে থেকে?”
“এই তো দিন পনেরো হবে।”
তারিণী হিসেব করে দেখল, সেই রাখহরির ঘটনার পর থেকেই বাড়ি তালাবন্ধ। হঠাৎ তারিণীর মাথায় যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। বলল, “আচ্ছা দিদি, এই পনেরো দিনে এই পাড়ার কোনও মেয়ে কি পালিয়ে গেছে?”
লক্ষ্মীর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে উঠল। এতটাই চমকাল যে তার আঁচল খসে বাঁদিকের স্তন যে পুরো উন্মুক্ত হয়ে গেছে সেটা খেয়ালই করল না।
“হ্যাঁ, ময়না। কিন্তু সে কথা তুমি জানলে কী করে? এ পাড়ার বাইরে তো তা কেউ জানে না!”
“বলব। কিন্তু ময়নাকে নিয়ে কিছু বলুন।”
“ময়নার আসল নাম ফুলমতী। বিহারে বাড়ি। এখানে এসেচে দুই বচর হল। ডবকা মাগি। কিন্তু পয়সার খুব লোভ। শুনেছি ডবল বেশ্যা। মাগির মাও বেবুশ্যেগিরিই কোত্ত। এখানে এসে এক ফড়েকে ধরে সায়েবদের সঙ্গে খুব ঢলানি। মাগির মাটিতে পা পড়ে না। ওই বাড়িতে মাজে মাজে সায়েব খদ্দের আসত। তখন মাগির ডাক পোত্ত। পনেরো দিন মাগি বেপাত্তা। এ পাড়ার কেউ ওকে দুচোখে দেখতে পাত্তো না। তাই সবাই চুপচাপ আচে। তা তুমি কীভাবে জানলে বাছা?”
“আমি ওকে দেখেছি। আজ উঠি। আর দিদি, একটাই কথা, আপনার বাবুর নামটা যদি বলেন…”
“ভাতারের নাম এই পাপ মুকে নিতে নেই। জানো না?”
“তবু যদি সাঁটে বলেন।”
“সাঁটে? এই ধরো নতুন চাঁদ।”
“ও আচ্ছা, নবীন চন্দ্র… আর পদবি? সেটা তো বলতেই পারেন।”
“মান্না”, লাজুক হেসে বললে লক্ষ্মীমতি।