দ্বিতীয়াধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিকম্
রূপরসগন্ধস্পর্শবর্তী পৃথিবী।। ১।।
অনুবাদ
রূপ, রস, গন্ধ এবং স্পর্শ যাহাতে আছে তাহা পৃথিবী।। ১।।
ব্যাখ্যা
পৃথিবী প্রভৃতির লক্ষণ কথিত হইতেছে। রূপ, রস, গন্ধ এবং স্পর্শ পৃথিবীর লক্ষণ। এই চার গুণ যাহাতে আছে, তাহাই পৃথিবী। ইহা মূলের অপাতগম্য অর্থ। এই অর্থের উপর আপত্তি এই যে, গন্ধই পৃথিবীর লক্ষণ অর্থাৎ ‘গন্ধ যাহাতে আছে তাহাই পৃথিবী’ এইরূপ বলিলেই চলে, রূপাদিকে লক্ষণান্তর্গত করিবার প্রয়োজন কি? ইহার উত্তরে বলিতে হয়, সূত্রে পৃথিবীর চারিটী লক্ষণ প্রদর্শিত হইয়াছে—বহুরূপ, বহুরস, স্পর্শ বিশেষ অর্থাৎ পাকজ স্পর্শ এবং গন্ধ এই চারিটাই পৃথিবীর লক্ষণ। তন্মধ্যে একটী ‘অনেকরূপবত্ত্ব’ বা ‘অনেকরূপববৃত্তি দ্রব্যত্ব ব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’ অর্থাৎ যে জাতীয় দ্রব্যে অনেক প্রকার রূপ থাকে, তাহা পৃথিবী। পার্থিব বস্তুতে শ্বেত নীল পীত ইত্যাদি অনেক রূপ থাকে, জল ও তেজে কেবল শুক্লরূপ আছে। তবে যে সমুদ্রের নীল জল, লাল পাউডারের লাল আলো দেখা যায়, তাহা ঔপাধিক, স্বাভাবিক নহে; জলের সহিত মিশ্রিত পার্থিবাংশের ঐ নীলরূপ ইহা প্রাচীনেরা বলেন। আমরা বলি, সমুদ্রের জল অত্যন্ত স্বচ্ছতাগুণেই নীলবৎ অনুভূত হয়। যেখানে চক্ষুঃ আপনার কার্য্য করিতে সমর্থ না হয়, সেখানেই অন্ধকার। নয়ন মুদ্রিত করিলে অন্ধকার, অন্ধকারকে কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া বোধ হয়, ফলে অন্ধকারের রূপ নাই; সেইরূপ স্বচ্ছজলরাশির শুক্লরূপে চাক্ষুষতেজ বাধা পায় না, তাহা স্বচ্ছজলের অভ্যন্তরে যথাসম্ভব চলিয়া যায়—সেই তেজ অভ্যন্তরস্থ আলোকহীন জলের রূপ গ্রহণে অসমর্থ হইয়া অন্ধকার দেখে। সেই অন্ধকার এবং জলের বহির্ভাগের শুরুরূপ মিলিত হইয়া নীলাকারে প্রতিভাত হয়। ইহা আলোকাভাবপ্রযুক্ত ভ্রম। আকাশের নীলতাও ঐরূপ। চাক্ষুষতেজঃ যে পৰ্য্যন্ত যাইতে পারে, সে পর্য্যন্ত সূর্যকিরণের বা নক্ষত্র কিরণের শুক্লপ্রভা দেখে, তদূর্দ্ধে আর চাক্ষুষ তেজ যায় না, সেখানে মনুষ্য অন্ধ, তাই অন্ধকার। এই অন্ধকার ও নিম্নস্থ কিরণের শুক্লতা মিলিত হইয়া নীলাকারে প্রতিভাত হয়। ইহা দূরত্বপ্রযুক্ত ভ্রম। তবে জলে যে শুক্লরূপ বলিতেছি, তাহা স্বচ্ছতারই নামান্তর। সেই শুক্লের প্রকৃত নাম অভাস্বর শুক্ল। জলে যদি রূপ একেবারেই না থাকিত তাহা হইলে, বায়ুর ন্যায় জলও চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত হইত না। লালপাউডার দাহে যে লাল আলো দেখা যায়, তাহা পাউডারের অন্তর্গতরূপ, আলোকের রূপ নহে। অর্থাৎ তাহা পার্থিবরূপ; তেজের অন্যবিধরূপও পার্থিব, কেবল ভাস্বর শুক্লই তেজের স্বাভাবিক রূপ। আর একটী লক্ষণ ‘অনেক রসবত্ত্ব’ বা ‘অনেক রসবদত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্য জাতিমত্ত্ব’। অর্থাৎ যে জাতীয় দ্রব্যে মধুর, অম্ল ইত্যাদি বিবিধ রস আছে, তাহা পৃথিবী। জলে রস আছে, পরন্তু তাহা কেবলমাত্র মধুর। কোন কোন জলে যে লবণাদি রসের আস্বাদ পাওয়া যায়, তাহা সেই জলমিশ্রিত পার্থিবাংশের আস্বাদ। অপর লক্ষণ—‘পাকজ স্পর্শবত্ত্ব’ বা ‘পাকজস্পর্শববৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’। অর্থাৎ যে জাতীয় দ্রব্যের পাকবশতঃ স্পর্শের বৈলক্ষণ্য হয়, তাহাই ‘পৃথিবী’। কাঁচামাটীর নরম ঘট পোড়াইলে কঠিন হয়, পাকাঘটের এই যে কঠিন স্পর্শ ইহা পাকজন্য। চাউল সিদ্ধ করিলে ভাত হয়, চাউলের স্পর্শ কঠিন, ভাতের স্পর্শ কোমল; এই স্পর্শবৈলক্ষণ্যের হেতু পাক। জল বা বায়ু পাক করিলেও তো তাহার স্পর্শবৈলক্ষণ ঘটে। শীতল জল, শীতল বায়ু অগ্নির তাপে উষ্ণ হয়, সুতরাং পৃথিবী লক্ষণের অতিব্যাপ্তি। ইহার উত্তরে আমরা বলি, ঐ উষ্ণতা জল বা বায়ুর নহে, উহা জল বা বায়ুর সহিত মিলিত অগ্নিকণারই উষ্ণ স্পর্শ। ঐ তীব্র স্পর্শের প্রাবল্যেই জলের শীত স্পর্শ অনুভূত হয় না। যদি পাকবশতঃ জল বা বায়ুর স্পর্শের বৈলক্ষণ্য ঘটিত, তাহা হইলে পাকা ঘটের ন্যায় বা ভাতের ন্যায় ঐ জলের আর পূর্ব্ববৎ স্পর্শ হইত না, চিরকালই উষ্ণ থাকিত। চতুর্থ লক্ষণ—’গন্ধবত্ত্ব’ বা ‘গন্ধবদ্বৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’ অর্থাৎ যে জাতীয় দ্রব্যে গন্ধ থাকে, তাহাই পৃথিবী। একটী কথা এই,—দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিকে লইয়াই—’যে জাতীয়’ কথাটী বুঝিতে হইবে। নতুবা জলাদিতেও পৃথিবী লক্ষণের অতিব্যাপ্তি হইত, পরেও এইরূপ আছে।। ১।
উপস্কারঃ
দ্বিতীয়াধ্যায়স্য প্রথমাহ্নিকস্য নবানাং দ্রব্যাণাং লক্ষণমর্থঃ তত্র পৃথিব্যপ্তেজসাং লক্ষণপ্রকরণম্ ঈশ্বরসিদ্ধিপ্রকরণম্ আকাশানুমানপ্রকরণম্। তত্র প্রথমোদ্দিষ্টায়াঃ পৃথিব্যা লক্ষণমাহ।
রূপং নীলপীতাদ্যনেকপ্রকারং পৃথিব্যা এব। তথাচ নীলরূপসমানাধিকরণদ্রব্যত্বব্যাপ্য- জাতিমত্ত্বং লক্ষণম্। এবং রসঃ কটুকষায়াদ্যনেকপ্রকারকঃ পৃথিব্যামেব তথাচ কটুরসসমানা- ধিকরণদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং লক্ষণম্। এবং কযায়াদিপদপ্রক্ষেপেণ লক্ষণান্যূহনীয়ানি। গন্ধো দ্বিবিধঃ, সুরভিরসুরভিশ্চ। তথাচ গন্ধসমানাধিকরণদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং লক্ষণং তথা গন্ধসমানাধিকরণ-গন্ধাসমানাধিকরণগুণাসমানাধিকরণ-জাত্যধিকরণদ্রব্যত্বং দ্রষ্টব্যম্। ন চ পাষাণাদৌ গন্ধরসয়োরননুভবাৎ তত্রাব্যাপকমিদমুভয়মপীতি বাচ্যং তত্রাপাততো গন্ধরসয়ো- রননুভবেঽপি তদীয়ভস্মসু তদুপলম্ভাৎ য এবাবয়বাঃ পাষাণারম্ভকাস্ত এব তপ্তস্মারম্ভকা অপীতি নাব্যাপ্তিঃ। কথং তর্হি সুরভিঃ সমীরণঃ, তিক্তং কারবেল্বজলমিতি প্রতীতিরিতি চেন্ন, পার্থিবোপাধিকত্বাৎ তয়োর্গন্ধরসয়োঃ। স্পর্শোহপ্যনুষ্ণাশীতঃ পাকজঃ পৃথিব্যামেব তথাচ পাকজস্পর্শসমানাধিকরণদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং লক্ষণম্, পাকজত্বঞ্চ বিশেষান্তরব্যঙ্গ্যং পৃথিবীস্পর্শ এব, বিশেষান্তরঞ্চ শিরীষলবঙ্গীকুসুমাদৌ স্পর্শবিশেষে স্ফুটতরম্, ন ত্বেবং জলাদিস্পর্শে। যদ্যপ্যবয়বিনি পাকাদগ্নিসংযোগাৎ স্পর্শাদয়ো ন জায়ন্তে তথাপি তৎপরম্পরাপ্রভবতয়া তত্রাপি বৈজাত্যবিশেষোহনুসরণীয়ঃ। ননু লক্ষণমিদ ব্যতিরেকিলিঙ্গমিতরভেদসাধকং ব্যবহারসাধকং বা তত্র পৃথিবীতরেভ্যো ভিদ্যতে গন্ধবত্ত্বাৎ যন্নেতরভিন্নং তন্ন গন্ধবৎ যথা জলাদি ইতরভেদাভাবব্যাপকাভাব প্রতিযোগিগন্ধবতী চেয়ং তস্মাদিতরভিন্না। তত্রেতরভেদস্য সাধ্যস্য প্রসিদ্ধৌ ততো হেতোর্ব্যতিরেকে সপক্ষবিপক্ষব্যাবৃত্ততয়াহসাধারণ্যম্ অব্যতিরেকে চান্বয়িত্বং অপ্রসিদ্ধৌ চ অপ্রসিদ্ধবিশেষণঃ পক্ষঃ, তথাচ তত্র ন সন্দেহো ন বা সিষাধয়িষা ন বা তদ্বিশিষ্টজ্ঞানরূপানুমিতিঃ কিঞ্চ ব্যতিরেকয়োর্ব্যাপ্তিস্তথাচ ন ব্যাপ্তস্য পক্ষধর্ম্মত্বং পক্ষধর্ম্মস্য বা ন ব্যাপ্তত্বমিতি বৈষম্যম্। অতএবোপনয়বৈয়থমপি ব্যাখ্যায়তে ন ত্বগৃহীতব্যাপ্তিকমপি তদুক্তম্,
“সাধ্যা প্রসিদ্ধিবৈষম্যং ব্যর্থতোপনয়স্য চ।
অন্বয়েনৈব সিদ্ধিশ্চ ব্যতিরেকিণি দূষণম্।।” ইতি।
এবং ব্যবহারসাধ্যকেঽপি, তত্র যদ্যপি ব্যবহারঃ পৃথিবীপদবাচ্যত্বং তচ্চ পৃথিবীত্বজাতাবপ্যস্তি। তত্র চ পৃথিবীত্বং হেতুর্নাস্তীত্যসাধারণ্যং তথাপি পৃথিবীত্বপ্রবৃত্তিনিমিত্তকপৃথিবীপদবাচ্যত্বং সাধ্যমিতি নাসাধারণ্যং যদ্বা পৃথিবীত্বং ক্বাচিৎকপদপ্রবৃত্তিনিমিত্তং জাতিত্বাৎ ঘটত্ববদিতি সামান্যতঃ সিদ্ধৌ পৃথিবীপদং পৃথিবীত্বপ্রবৃত্তিনিমিত্তকম্, ইতরাপ্রবৃত্তিনিমিত্তকত্বে সতি সপ্রবৃত্তিনিমিত্তকত্বাৎ যন্নৈবং তন্নৈবমিতি সাধ্যম্। তথাচাত্রাপি সাধ্যাপ্রসিদ্ধিরেবেতি চেৎ মৈবম্, ইতরেষাং জলাদীনাম্ ভেদস্য ঘট এব প্রসিদ্ধেঃ। বায়বাদেরতীন্দ্রিয়স্যাপি ভেদস্য অন্যোন্যাভাবস্য ঘটাদৌ প্রত্যক্ষত এব সিদ্ধত্বাৎ অন্যোন্যাভাবগ্রহে অধিকরণযোগ্যতামাত্রস্য তন্ত্রত্বাৎ স্তম্ভঃ পিশাচো ন ভবতীত্যাদৌ তথা দর্শনাৎ, নচৈবং ঘট এবং তর্হি দৃষ্টান্তোহস্ত, কিং ব্যতিরেকিণা
“ঋজুমার্গেণ সিদ্ধান্তং কো হি বক্রেণ সাধয়েৎ”
ইতি বাচ্যম্ অব্যতিরেকিলিঙ্গং চেদনাভাসং, তদায়মপি মার্গো বক্ররুচিং প্রত্যপ্রতিহত এব সাধ্যাপ্রসিদ্ধেনিরাসে তন্মূলকদোষাণাং নিরস্তত্বাৎ। ব্যতিরেকসহচারেণ অন্বয়ব্যাপ্তেরের গ্রহা ব্যতিরেকব্যাপ্যাহ ন্বয়ব্যাপ্তেরনুমানাদ্বা ন বৈষম্যম্। নচোপনয়বৈয়র্থ্যম্, গৃহীতরাপ্তেরেব হেতোঃ পক্ষে উপসংহারাৎ তদুক্তম্,
“নিয়ম্যত্বনিয়ত্বে ভাবয়োর্যাদৃশী মতে।
তে এব বিপরীতে তু বিজ্ঞেয়ে তদভাবয়োঃ।।” ইতি।
ব্যবহারম্ভ গন্ধবতী পৃথিবীত্যুপদেশাদেব যথা কম্বুগ্রীবাদিমান্ ঘটপদবাচ্য ইতি। তথা কুত্রচিদেব ঘৃতাদৌ মৃদাদৌ চ গন্ধবত্ত্বেনোপলক্ষণেন পৃথিবীত্বে পৃথিবীপদপ্রবৃত্তিনিমিত্তত্বং যেনোপদেশাদ্ গৃহীতম্, গন্ধবৎ সৰ্ব্বং পৃথিবীত্বেন প্রবৃত্তিনিমিত্তেন পৃথিবীপদবাচ্যং গন্ধবত্ত্বাৎ, যন্নৈবং তন্নৈবমিতি ব্যতিরেকী তস্যাপ্যবতরত্যেব। ননু ভেদসাধকব্যতিরেকিণি ভেদো বৈধৰ্ম্মং স্বরূপভেদো বা, অন্যোন্যাভাবো বা, ন তাবদাদৌ প্রত্যক্ষত এর তদবগমাৎ। ন তৃতীয়ঃ অভাবভেদস্যাপি সাধ্যত্বেন তদন্যোন্যাভাবস্য তত্রাভাবাৎ তেন সহ স্বরূপভেদে সাধ্যে সাধ্যাননুগমাদিতি চেন্ন অভাবপ্রতিযোগিকন্যোন্যাভাবস্যাপি সাধ্যত্বাৎ স যদ্যতিরিক্তস্তদাহস্ত্যেব ন চেৎ স্বরূপমাদায় তৎপর্য্যবসানাৎ বস্তুতো ভিন্ন এব তদ্বৈধর্ম্মস্য তদন্যোন্যাভাবব্যাপ্যত্বাৎ নচানবস্থা যাবত্যেবানুভবস্তাবত্যেবাবিশ্রামাৎ অন্যত্র স্বননুভবেনৈব বিশ্রামাৎ যত্ত্ব ত্রয়োদশান্যোন্যাভাবাস্ত্রয়োদশসু প্রসিদ্ধাঃ মিলিতাঃ পৃথিব্যাং সাধ্যন্তে ইতি তত্ত্বচ্ছং প্রত্যেক প্রসিদ্ধেরতন্ত্রত্বাৎ মিলিত প্রসিদ্ধেরভাবাৎ কিন্তু নির্গন্ধত্বাবচ্ছিন্ন প্রতিযোগিতাকান্যোন্যাভারঃ সাধ্যেত প্রতিযোগিতাবচ্ছেদকভেদেনাভাবভেদস্যাবশ্যকত্বাৎ স চ ঘটাদাবেব প্রত্যক্ষসিদ্ধ ইত্যুক্তত্বাৎ। আকাশাদৌ কা গতিরিতি চেৎ আকাশমিতরভিন্নং শব্দাশ্রয়ত্বাৎ, যন্নৈ তন্নৈবমিত্যাদৌ পক্ষৈকদেশে যদ্যপি ন সাধ্যং প্রসিদ্ধং তথাপি যদ্ যদ্বৈধর্ম্মবৎ তৎ তৎপ্রতিযোগিকান্যোন্যাভাববদিতি সামান্য প্রবৃত্তব্যাপ্তিবলেন শব্দাশ্রয়ত্বাত্যন্তাভাববৎ প্রতিযোগিকান্যোন্যাভাবস্য পূৰ্ব্বমেব সিদ্ধৌ কেবলং পক্ষনিষ্ঠতয়া ইদানীং বোধ্যতে বহ্নিরিব পৰ্ব্বতনিষ্ঠতয়া ইত্যন্যোঽস্মৎসিদ্ধান্তঃ তদ্বৈধৰ্ম্মস্য তদন্যোন্যাভাবব্যাপ্যত্বাৎ। শব্দাশ্রয়ত্বাত্যন্ত্যাভাববত্ত্বমেব বিপক্ষে ন গৃহীতমিতি চেৎ তর্হি শব্দাশ্রয়ত্বস্য ন লক্ষণত্বং ন বা লিঙ্গত্বং বিপক্ষগামিত্বশঙ্কাগ্ৰস্তত্বাদিতি।। ১।।
.
রূপরসস্পর্শবত্য আপো দ্রবাঃ স্নিগ্ধাঃ।।২॥
অনুবাদ
(১) রূপ, রস এবং স্পর্শ, যাহাতে আছে তাহা, (২) দ্রবত্ব যাহাতে আছে তাহা এবং (৩) স্নেহ যাহাতে আছে তাহা জল। ২।
ব্যাখ্যা
সূত্রের রচনাভঙ্গীতে জলের তিনটী লক্ষণ বলিয়া আপাততঃ বোধ হয়, যেরূপ বোধ হয় তাহা অনুবাদে দেখাইয়াছি। কিন্তু তাহার ব্যাখ্যা আবশ্যক, নতুবা প্রথম লক্ষণের পৃথিবীতে অতিব্যাপ্তি হয়; রূপ, রস এবং স্পর্শ এই তিনই তো পৃথিবীতে আছে। রূপ বিশেষ অর্থাৎ কেবল অভাস্বর শুক্লরূপ, রসবিশেষ অর্থাৎ কেবল মধুর রস, স্পর্শবিশেষ অর্থাৎ শীতস্পর্শ—যাহাতে আছে, তাহাই জল। এরূপ বলিলে, এই একটী লক্ষণই তিনটী লক্ষণ হয়। এক লক্ষণে রূপ, রস এবং স্পর্শ প্রবেশ করাইবার আবশ্যক হয় না। সুতরাং তথাস্তু; সূত্রের যে অংশটুকুকে আপাততঃ প্রথম লক্ষণ বলিয়া বুঝাবার সেই আশে তিনটি লক্ষণই হইল। অর্থাৎ (ক) ‘অভাস্বর শুক্লরূপমাত্রবত্ত্ব’ বা ‘অভাস্বর শুক্লেতররূপবদবৃত্তি রূপববৃত্তি জাতিমত্ত্ব’ (খ) ‘মধুরেতররসবদবৃত্তি রসবদ্ববৃত্তি জাতিমত্ত্ব’ এবং (গ) শীতস্পর্শববৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’ এই তিন লক্ষণ (১) চিহ্নিত অনুবাদের অন্তর্গত। (ক) যে জাতীয় দ্রব্যের একটীতেও অভাস্বর শুক্লরূপ ব্যতীত অপর রূপ নাই, (এই অংশ দ্বারা পৃথিবী ও তেজে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল), পরন্তু রূপ আছে (এই অংশ দ্বারা বায়ু প্রভৃতিতে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল, রূপ আছে বলিলেই অভাস্বর শুক্ল রূপ আছে ইহা স্পষ্টই বুঝা যায়। সুতরাং লক্ষণে ততটুকু পর্যন্ত প্রবেশ করাইয়া লক্ষণকে ভারি করিবার প্রয়োজন নাই,) তাহা জল। যাহা পরপ্রকাশনে অসমর্থ, তাহাই অভাস্বর। (খ) যে জাতীয় দ্রব্যে মধুর রস ব্যতীত অপর রস নাই, (এই অংশ দ্বারা পৃথিবীতে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল) পরন্তু রস আছে—(এই অংশ দ্বারা তেজঃ প্রভৃতিতে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল) তাহা জল। হরীতকী চর্ব্বণে রসনা পরিষ্কৃত ও সতেজ হইলে জলের মধুর রস বুঝা যায়। (গ) যে জাতীয় দ্রব্যে শীতল স্পর্শ আছে, তাহা জল। অন্য বস্তুতে যে শীতল স্পর্শ অনুভব হয়, তাহাও জল-সংযোগ হেতু হইয়া থাকে—ঐ সকল সূক্ষ্ম জল পবনবেগেও আনীত হয়, প্রকারান্তরেও আনীত হইয়া থাকে। তবে ঐ জলে ‘উদ্ভূত’ রূপ না থাকায় তাহার প্রত্যক্ষ হয় না। উদ্ভূত রূপের পরিচয় এই,—হাঁড়িতে বালি দিয়া তাহা জ্বলন্ত উনানে (চুল্লীতে) চড়াইলে, সেই বালি অতি উত্তপ্ত হয়, তাহাতে সূক্ষ্ম অগ্নি থাকে, কিন্তু তাহা দেখা যায় না। উষ্ণ স্পর্শ ও দাহ দ্বারা অগ্নির অস্তিত্ব বুঝিতে হয়; সে অগ্নি দেখা যায় না কেন? না, তাহাতে ‘উদ্ভূত’ রূপ নাই। চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের যোগ্য রূপকেই ‘উদ্ভূত’ রূপ বলা যায়। ইহা (১) চিহ্নিত অনুবাদের ব্যাখ্যা। ‘সাংসিদ্ধিকদ্রবত্বববৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্তিজাতিমত্ত্ব’— জলের ৪র্থ লক্ষণ। স্বাভাবিক দ্রবত্বের নামান্তর সাংসিদ্ধিকদ্রবত্ব। দ্রবত্ব পাতলা ভাব। যে জাতীয় দ্রব্যে সাংসিদ্ধিক দ্রবত্ব আছে অর্থাৎ যে জাতীয় দ্রব্য স্বাভাবিক পালা, অগ্নিতে উত্তাপ দিলেও যাহা জমাট হয় না, এবং অন্যবিধ কারণে জমাট হইলেও প্রাকৃতিক নিয়মে আপনিই গলিয়া যায়, তাহাই জল। সুবর্ণ গলাইলে পাতলা হয়, নতুবা নহে। দুগ্ধ জ্বাল দিলে ক্ষীর হয়, সে ক্ষীর আর প্রাকৃতিক নিয়মে আপনিই গলিয়া যায় না, বরফ জমাট হইলেও আপনিই গলিয়া যায়। সুতরাং সুবর্ণে বা দুগ্ধে জললক্ষণের অতিব্যাপ্তি, বরফে অব্যাপ্তি নাই। বলা বাহুল্য দুগ্ধ তৈলাদিতে জলাংশ আছে সেই জন্যই তাহা পাতলা। ইহা (২) চিহ্নিত অনুবাদের ব্যাখ্যা। ‘স্নেহবদ্বৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’ জলের পঞ্চম লক্ষণ; যে জাতীয় দ্রব্যে স্নেহ, (আশ্লেষকতা, সংযুক্ত বস্তুতে লাগিয়া থাকা) আছে, তাহা জল। কোন পার্থিব বস্তুতে যদি এগুণ দেখিতে পাও তো বুঝিবে সেই বস্তুর অন্তর্গত জলেরই ঐ গুণ, পৃথিবীর নহে। ইহাই (৩) চিহ্নিত অনুবাদের ব্যাখ্যা।।২।।
উপস্কারঃ
পৃথিব্যনন্তরমুদ্দিষ্টানামপাং লক্ষণমাহ।
শুক্লমধুরশীতা এব রূপরসস্পর্শাঃ দ্রবত্বঞ্চ সাংসিদ্ধিকং স্নেহস্তু স্বরূপতঃ। ননু শুক্লমেব রূপমপামিত্যযুক্তং কালিন্দীজলাদৌ নৈল্যস্যোপলম্ভাৎ। মধুর এব রস ইত্যপ্যযুক্ত জম্বীরকরবীররসাদৌ আল্ল্যতৈক্তাদেরুপলম্ভাৎ, শীত এব স্পর্শ ইত্যপ্যনুপপন্নং মধ্যন্দিনে ঔষ্ণ্যস্যৈবোপলম্ভাৎ সাংসিদ্ধিকঞ্চ দ্রবত্বমব্যাপকং হিমকরকাদাবভাবাৎ স্নেহস্তু স্বরূপা- সিদ্ধোঽতিব্যাপকশ্চ জলেহননুভবাৎ ঘৃতাদৌ পার্থিবেহনুভবাচ্চ ন চ জলত্বং জাতিরেব জললক্ষণং ব্যবস্থাপকাভাবেন তদনুপপত্তেঃ। ন চ স্নেহসমবায়িকারণতাবচ্ছেদকত্বেন তৎসিদ্ধিঃ, স্নেহত্বস্য কার্য্যাকাৰ্য্যবৃত্তিতয়া কাৰ্য্যত্বানবচ্ছেদকত্বাৎ তস্মাদ্ভেদকাভাবাদ্ জলং ন ভিদ্যত ইতি চেন্মৈবম্। অভাস্বরশুক্লমাত্ররূপস্যৈব তদ্ভেদকত্বাৎ কালিন্দীজলাদৌ নৈল্যস্যাশ্রয়োপাধিকত্বাৎ বিয়দ্বিকীর্ণকালিন্দীজলে ধাবল্যস্যোপলম্ভাৎ, তেনাভাস্বরশুক্লেতররূপাসমানাধিকরণরূপবত্তি- দ্রব্যত্বসাক্ষাদ্ব্যাপ্যজাতিমত্ত্বম্ অপাং লক্ষণম্। রসোঽপি মধুর এব জম্বীরকরবীররসা- স্ল্যতৈক্ত্যাদেঃ পার্থিবোপাধিকত্বাৎ। জলে মাধুৰ্য্যং নানুভূয়ত এবেতি চেন্ন, কষায়দ্রব্যভক্ষণানন্তর তদভিব্যক্তেঃ। ন চ হরীতক্যা এব তন্মাধুর্য্যং জলাভিব্যঙ্গ্যং তত্র কষায়রসস্যৈবোপলম্ভা হরীতক্যাঞ্চামলক্যামিব কষায় এব রসঃ তস্যৈবানুভবাৎ, ন চ গুণবিরোধেন তত্র রসানারম্ভঃ অবয়বানামপি তত্র কষায়রসবত্ত্বাৎ ষড্রসত্বপ্রবাদস্তু তত্তদ্রসকার্য্যকারিত্বনিবন্ধনঃ চিত্ররসস্ত প্রমাণাভাবাদেব নিরস্তঃ। চিত্ররূপে তু পটোপলম্ভ এব প্রমাণং সুরভ্যসুরভ্যবয়বারম্ভস্তু গুণবিরোধনিরস্ত এব চিত্রগন্ধে প্রমাণাভাবাৎ, তস্মাদ্ধরীতকীভক্ষণানন্তরং যন্মাধুর্য্যমুপলভ্যতে তৎ জলস্যৈব উল্বণতা তু দ্রব্যবিশেষসন্নিধানাধীনা শ্রীখণ্ড সন্নিযোগাজ্জলে শৈত্যাল্ববণতেব। কর্কটীভক্ষণান্তরন্তু তিক্ততা যাহনুভূয়তে সা কর্কট্যা এব তদবয়বে জলপানমন্তরেণাপি তিক্ততোপলম্ভাৎ রসনাগ্রবর্ত্তিপিতদ্রব্যতিক্ততায়া বা তত্রানুভবাৎ, তথাচ মধুরেতররসাসমানাধিকরণরসসমানাধিকরণদ্রব্যত্বসাক্ষাদ্ব্যাপ্যজাতিমত্ত্বমপাং লক্ষণম্। এবং শীতস্পর্শসমানাধিকরণদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বমপাং লক্ষণম্। মধ্যন্দিনে তু যদৌষ্ণ্যং তত্তেজস এব তদন্বয়ব্যতিরেকানুবিধানাৎ এবং সাংসিদ্ধিকদ্রবত্বং স্বরূপত এব লক্ষণং সাংসিদ্ধিকদ্রবত্ববদ্বৃত্তিদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বং বা জলত্বম্। স্নেহ স্তু গুণবিশেষো ন তু দুগ্ধত্বদধিত্ববৎ সামান্যবিশেষঃ স্নিগ্ধস্নিগ্ধতরস্নিগ্ধতমেতি তারতম্যপ্রতীতেঃ ন চ জাতৌ তারতম্যং সম্ভবতি। ননু ভবতু স্নেহো গুণঃ, স তু জলে বৰ্ত্তত ইত্যত্র কিং প্রমাণমিতি চেন্ন সক্রুসিকতাদৌ জলেন সংগ্রহে তদনুমানাৎ সংগ্রহো হি স্নেহদ্রবত্বকারিতঃ সংযোগবিশেষঃ স হি ন দ্রবত্বমাত্রাধীনঃ কাচকাঞ্চনদ্রবত্বেন সংগ্রহানুপপত্তেঃ, নাপি স্নেহমাত্রকারিতঃ স্ত্যানৈতাদিভিঃ সংগ্রহানুপপত্তেঃ তস্মাদন্বয়ব্যতিরেকাভ্যাং স্নেহদ্রবত্বকারিতঃ স চ জলেনাপি সত্তুসিকতাদৌ দৃশ্যমানঃ স্নেহং জলে দ্রঢ়য়তি, ইয়ঞ্চ প্রত্যক্ষোপষ্টম্ভিকৈব যুক্তিঃ স্নেহস্য প্রত্যক্ষত্বাৎ, ঘৃতাদৌ তু স্নেহ উপষ্টন্তকজলনিষ্ঠঃ সংযুক্তসমবায়েন তদ্গততয়া ভানাৎ এবং তৈলরসাদিম্বপি উপষ্টন্তকঞ্চাতিশয়িতস্নেহমেব জলম্, স্নেহাধিক্যাদেব তস্য জলস্য নানলবিরোধিত্বম্। যদি পৃথিবীবিশেষগুণঃ স্নেহঃ স্যাৎ সৰ্ব্বপার্থিববৃত্তিঃ স্যাৎ গন্ধবৎ। জলত্বঞ্চ দ্রব্যত্বসাক্ষাদ্ব্যাপ্যজাতিঃ স্নেহবন্মাত্রবৃত্তিসংযোগসমবায়িকারণতাবচ্ছেদিকায়া জাতেঃ পরমাণুসাধারণ্যেন সিদ্ধত্বাৎ।। ২।
.
তেজো রূপস্পর্শবৎ।।৩।।
অনুবাদ
যাহাতে রূপ এবং স্পর্শ আছে তাহা তেজঃ।।৩।।
ব্যাখ্যা
ভাস্বররূপবত্তিদ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব এবং উষ্ণস্পর্শবদ্ববৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্য জাতিমত্ত্ব এই দুইটী তেজের লক্ষণ। দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতি—পৃথিবীত্ব, জলত্ব, তেজস্ব ইত্যাদি। যে দ্রব্যত্ব ব্যাপ্যজাতি ভাস্বররূপবৎ বস্তুতে থাকে তাহা অর্থাৎ তেজস্ব যাহাতে আছে তাহাই তেজ। যে জাতীয় দ্রব্য পরপ্রকাশনসমর্থ তাহাই তেজ, ইহাই প্রথম লক্ষণের অর্থ। যে জাতীয় দ্রব্যে উষ্ণ স্পর্শ আছে, তাহা তেজ, ইহাই দ্বিতীয় লক্ষণের অৰ্থ।।৩।।
উপস্কারঃ
উদ্দেশক্রমানুরোধেন তেজোলক্ষণমাহ।
রূপং ভাস্বরং স্পর্শশ্চোষ্ণস্তদ্বত্তেজ ইত্যর্থঃ। ননু ভাস্বরত্বং পরপ্রকাশকত্বং তাদৃশঞ্চ রূপ নোষ্মণি ন বা চামীকরস্থে ভজ্জনকপালস্থে বারিস্থে বা তেজসি। শুক্লঞ্চ রূপমুক্তেষু ন ক্বাপি, উষ্ণশ্চ স্পর্শো ন চান্দ্রে ন বা চামীকরে তৎ কথমেতদিতি চেন্ন, উষ্ম্যদৌ তেজত্বেন ভাস্বররূপানুমানাৎ। তেজস্ত্বমেব তত্র স্বরূপাসিদ্ধমিতি চেন্ন, উষ্ণস্পর্শবত্ত্বেন তদনুমানাৎ, চামীকরে কথমিতি চেৎ, তত্র ভাস্বররূপাভাবেঽপি অত্যন্তানলসংযোগেনানুচ্ছিদ্যমানজন্যদ্রবত্বাধিকরণত্বেন ব্যতিরেকিণা তেজস্বানুমানাদিতি বক্ষ্যমাণত্বাৎ ভর্জনকপালাদিনিষ্ঠে চোষ্ণস্পর্শবত্ত্বেন তেজস্বানুমানাৎ। চতুৰ্ব্বিধং হি তেজঃ কিঞ্চিদুদ্ভূতরূপস্পর্শং যথা সৌরাদি, কিঞ্চিদুদ্ভূতরূপমনুদ্ভূতস্পর্শং যথা চান্দ্রম্, কিঞ্চিদনুদ্ভূতরূপস্পর্শং যথা নায়নম্ কিঞ্চিদনুদ্ভূতরূপমুদ্ভূত স্পর্শ যথা নৈদাঘ বারিভর্জনকপালাদিগতঞ্চ তেজঃ। নায়নমগ্রে সাধয়িষ্যতে।। ৩।।
.
স্পর্শবান্ বায়ুঃ।।৪।।
অনুবাদ
যাহাতে স্পর্শ আছে তাহা বায়ু। ৪।
ব্যাখ্যা
যাহাতে ‘স্পর্শ আছে’ অর্থে উক্তরূপাদিগুণের মধ্যে কেবল স্পর্শ যাহাতে আছে, তাহা বায়ু; রূপাসমানাধিকরণ স্পর্শববৃত্তি জাতিমত্ত্বই বায়ুর লক্ষণ। যে জাতি রূপবৎ বস্তুতে নাই (এই অংশ দ্বারা পৃথিবী প্রভৃতিতে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল) কিন্তু স্পর্শবৎ বস্তুতে আছে (এই অংশ দ্বারা আত্মা প্রভৃতিতে অতিব্যাপ্তি বারণ হইল।) সেই জাতি যাহাতে থাকে তাহা বায়ু।
মনে কর দ্রব্যত্ব, সত্তা ইত্যাদিজাতি রূপবৎ বস্তুতে নাই, এমন নহে—কেন না—পৃথিবী প্রভৃতিতে ঐ সব জাতি আছে, ঐ সব জাতিকে পাইলে না, বায়ুত্ব, আত্মত্ব ইত্যাদি জাতিকে পাইলে, তন্মধ্যে আত্মত্ব স্পর্শবৎ বস্তুতে থাকে না, বায়ুত্ব তাহাতে আছে; সুতরাং তাহাই বায়ুর লক্ষণ। অথবা ‘যাহাতে স্পর্শ আছে’ অর্থে যাহাতে স্পর্শ বিশেষ—অপাকজ অনুষ্ণাশীত স্পর্শ বাষ্পস্পর্শ আছে তাহা বায়ু। কিংবা যে জাতীয় কোন দ্রব্যেই পাকজ স্পর্শ নাই, পরন্তু অনুষ্ণাশীত স্পর্শ আছে, তাহা বায়ু।। ৪।।
উপস্কারঃ
ক্রমপ্রাপ্তং বায়ুলক্ষণমাহ
রূপাসমানাধিকরণস্পর্শসমানাধিকরণজাতিমত্ত্বং রসাসমানাধিকরণানুষ্ণাশীত স্পর্শসমানাধিকরণজাতিমত্ত্বং গন্ধাসমানাধিকরণানুষ্ণাশীতস্পর্শসমানাধিকরণজাতিমত্ত্বং স্পর্শেতরবিশেষগুণাসমানাধিকরণবিশেষগুণসমানাধিকরণজাতিমত্ত্বং বা বায়ুলক্ষণম্।। ৪।।
.
ত আকাশে ন বিদ্যন্তে।। ৫।।
অনুবাদ
তাহারা অর্থাৎ রূপ, রস, গন্ধ এবং স্পর্শ, আকাশে নাই।। ৫।।
ব্যাখ্যা
রূপাদি আকাশে নাই; যাহা আকাশে নাই তাহা আকাশের লক্ষণ হইতে পারে না। এই জন্য রূপাদি পৃথিবী প্রভৃতিরই লক্ষণ, আকাশের লক্ষণ নহে। যদি বল আকাশে নীলরূপের অনুভব হয়, সুতরাং আকাশে রূপ আছে, তদুত্তরে আমরা বলি ঐ অনুভব মরীচিকায় জল ভ্রমের ন্যায় ভ্রম মাত্র। আকাশে রূপ থাকিলে গৃহাভ্যন্তরেও আকাশে নীলিমা দেখা যাইত। ঐ যে নীলিমা উহা অন্ধকারের কালিমার ন্যায় নয়নজ্যোতির অভাব মাত্র। পৃথিবী লক্ষণে এ সম্বন্ধে কিছু বলিয়াছি। উপস্কার মতে ‘আকাশে নাই’ এরূপ অনুবাদ নহে, ‘আকাশে অনুভূত হয় না’ ইহাই অনুবাদ। আমরা অনুবাদে ও ব্যাখ্যায় সর্ব্বত্র উপস্কারের অনুবর্ত্তন করি নাই। বিচক্ষণ পাঠকগণ—চিন্তা করিয়া কারণ আবিষ্কার করিবেন।। ৫।।
উপস্কারঃ
নম্বাকাশকালদিগাত্মনামপি রূপাদিমত্ত্বং কথং ন লক্ষণমত আহ।
অত্র বিদিরুপলব্ধিবচনঃ নোপলভ্যন্তে যতোহতো ন তে রূপাদয়ো নিরোগতঃ সমুচ্চয়তো বিকল্পতো বা বৰ্ত্তন্তে নভঃপ্রভৃতিষু দ্রব্যেধিত্যর্থঃ। ননু দধিধবলমাকাশমিতি কথং প্রতীতিরিতি চেন্ন মিহিরমহসাং বিশদরূপাণামুপলম্ভাত্তথাভিমানাৎ কথং তহি নীলং নভ ইতি প্রতীতিরিতি চেন্ন সুমেরোর্দক্ষিণদিশমাক্রম্য স্থিতস্যেন্দ্রনীলময়শিখরস্য প্রভামালোকয়তাং, তথাভিমানাৎ যত্ত্ব সুদূরং গচ্ছচ্চক্ষুঃ পরাবর্ত্তমানং স্বচক্ষুঃকনীনিকামাকলয়ত্তথাভিমানং জনয়তীতি মতং তদযুক্তং পিঙ্গলসারনয়নানামপি তথাভিমানাৎ। ইহেদানীং রূপাদিকমিতি প্রত্যয়াৎ দিক্কালয়োরপি রূপাদিচতুষ্কমিতি চেন্ন সমবায়েন পৃথিব্যাদীনাং তল্লক্ষণস্যোক্তত্বাৎ ন তু সম্বন্ধান্তরেণাপি ইহেদানীং রূপাত্যন্তাভাব ইত্যপি প্রতীতেঃ সর্ব্বাধারতৈব দিক্কালয়োঃ।।৫।।
.
সর্পির্জতুমধূচ্ছিষ্টানামগ্নিসংযোগাদ্দ্রবত্বমদ্ভিঃ সামান্যম্।।৬।।
অনুবাদ
ঘৃত, জতু এবং মোমে অগ্নি সংযোগজন্য দ্রবত্ব হয়, সুতরাং দ্রবত্ব, জল (ও ঘৃতাদির) সাধারণ ধর্ম্ম।।৬।।
ব্যাখ্যা
দ্রবত্ব জলের লক্ষণ হইলে পৃথিবীতে অতিব্যাপ্তি। কেননা ঘৃত, গালা, মোম প্রভৃতি পার্থিব বস্তুতেও দ্রবত্ব আছে, এই পূর্ব্বপক্ষের উত্তরে এই সূত্র কথিত হইয়াছে। ইহার ভাবার্থ এই যে পৃথিবীতে যে, দ্রবত্ব তাহা অগ্নির উত্তাপ জন্য,—নৈমিত্তিক; জলের দ্রবত্ব সাংসিদ্ধিক। সাংসিদ্ধিকদ্রবত্ববত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্বই জলের লক্ষণ— আমরা একথা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। সামান্যতঃ দ্রবত্ব পৃথিবী ও জলের সাধারণ ধর্ম্ম হইলেও সাংসিদ্ধিক-দ্রবত্ব সাধারণ ধর্ম্ম নহে, জলেরই অসাধারণ ধর্ম্ম। অতএব পৃথিবীতে অতিব্যাপ্তি নাই।। ৬।।
উপস্কারঃ
নম্বপাং দ্রবত্বং লক্ষণমুক্তং তদযুক্তং পৃথিব্যামপি দ্রবত্বোপলম্ভাদিত্যত আহ।
সর্পিরাদীনাং যদ্রবত্বমস্তি তদগ্নিসংযোগান্নিমিত্তাৎ, ন তু সাংসিদ্ধিকং তাদৃশঞ্চাপাং লক্ষণ দ্রবত্বমাত্রন্তু পৃথিব্যা অদ্ভিঃ সামান্যং ন তু সাংসিদ্ধিকং দ্রবত্বমপীতি নাতিব্যাপ্তিরিত্যর্থঃ।।৬।।
.
ত্রপুসীসলোহরজতসুবর্ণাদাবগ্নিসংযোগাদ দ্রবত্বমদ্ভিঃ সামান্যম্।।৭।।
অনুবাদ
রাং, সীসা, লৌহ, রৌপ্য এবং সুবর্ণের দ্রবত্বও অগ্নি-সংযোগজন্য; দ্রবত্ব (রাং প্রভৃতির এবং) জলের সাধারণ ধর্ম্ম।। ৭।।
ব্যাখ্যা
‘সাংসিদ্ধিক দ্রবত্ববদ্বৃত্তি দ্রব্যত্বব্যাপ্যজাতিমত্ত্ব’ জলের লক্ষণ; সুতরাং রাং, সীসা প্রভৃতি তৈজস দ্রব্যে নৈমিত্তিক দ্রবত্ব থাকিলেও অতিব্যাপ্তি নাই। ‘দ্রবত্ব’ জলের লক্ষণ হইলে পৃথিবীর ন্যায় তেজেও অতিব্যাপ্তি হইত। কেননা, কোন না কোন দ্রবত্ব রাং, সীসা প্রভৃতি তৈজস পদার্থেও আছে।।৭।।
উপস্কারঃ
ননু তথাপি ত্রপুসীসলোহাদৌ তেজসি গতত্বেন তদবস্থৈবাতিব্যাপ্তিরিত্যত আহ।
উপলক্ষণঞ্চৈতত্ কাংস্যতাম্রার কূটপারদাদীনামপ্যুপসংগ্রহঃ। শক্যলক্ষ্যসাধারণঞ্চ অত্যন্তাগ্নিসংযোগানুচ্ছিদ্যমানজন্যদ্রবত্বাধিকরণত্বমেব, তথাচ সুবর্ণাদীনামপি দ্রবত্বং নৈমিত্তিকমেব নিমিত্তস্যাগ্নিসংযোগস্যান্বয়ব্যতিরেকসিদ্ধত্বাৎ, পরন্তু পূৰ্ব্বসূত্রেঽগ্নিপদমৌষ্ণ্য- প্রকর্ষবত্তেজঃপরম্, ইহ তু বহ্নিপরমিতি বিশেষঃ। ননু সুবর্ণাদীনামপি পার্থিবত্বমেব দ্রব্যান্তরত্বং বা পীতিমগুরুত্বাদেঃ পার্থিবত্বব্যবস্থাপকত্বাদ্ দ্রবত্বানুচ্ছেদস্য পৃথিবীবৈধৰ্ম্মস্যা-প্যনুভবাৎ দ্রব্যান্তরত্বব্যবস্থাপকত্বাদিতি চেন্ন, সুবৰ্ণং তৈজসম্ অত্যন্তাগ্নিসংযোগেঽনুচ্ছিদ্য- মানদ্রবত্বাধিকরণত্বাৎ যন্নৈবং তন্নৈবং যথা পৃথিবীতি ব্যতিরেকিণা তৈজসত্বসিদ্ধেঃ। ন চ জলপরমাণৌ বিরুদ্ধতা দ্রবত্বস্যানিত্যত্বেন বিশেষণীয়ত্বাৎ, ন চ প্ৰদীপাদেঃ সপক্ষাদ্ধেতোর্ব্যাবৃত্তেরসাধারণ্যং সুবর্ণং ন পার্থিবমিতি সাধ্যার্থত্বাৎ, ন চাত্র গুরুত্বাধারস্য পক্ষত্বে বাধঃ তদতিরিক্তস্য পক্ষত্বে চাশ্রয়াসিদ্ধিঃ, দ্রবত্বাধিকরণত্বেন পক্ষত্বাৎ, ন চাত্যন্তিকত্বং দুর্ব্বচঃ, প্রহরপর্য্যন্তমগ্নিসংযোগেঽপ্যনুচ্ছিদ্যমানানিত্যদ্রবত্বাধিকরণত্বাদিতি বিবক্ষিতত্বাৎ। ন চ তরতমাদিপ্রত্যয়াদাশ্রয়নাশাচ্চ দ্রবত্বনাশোহপ্যবশ্যং বাচ্য ইতি বাচ্যং সমানাধিকরণদ্রবত্বসামগ্রসমবহিতাগ্নিসংযোগজন্যধ্বংসপ্রতিযোগ্যবৃত্তিদ্রবত্বসামান্যবদ্ৰবত্ববত্ত্বাদিত্যস্য হেত্বর্থত্বাৎ, যদ্বা পীতিমগুরুত্বাশ্রয়ঃ পীতরূপভিন্নরূপপ্রতিবন্ধকদ্রবদ্রব্যসংযুক্তঃ প্রহরপর্য্যন্তমনলসংযোগেঽপি পীতরূপভিন্নরূপানাশ্রয়ত্বাৎ অনলসংযুক্তজলমধ্যস্থিতপীতপটবৎ। ননু চান্ধকারে সুবর্ণরূপগ্রহাপত্তিস্তদানীং তদ্রূপস্যাভিভবাভাবাৎ বলবৎসজাতীয়গ্রহণ কৃতস্যাগ্রহণ- স্যাভিভবপদার্থত্বাৎ ইতি চেৎ তত্র ফলবলেন বলবৎসজাতীয়সম্বন্ধমাত্র- স্যাভিভবপদার্থত্বাৎ তদুক্তম্—
.
“ভূসংসর্গবশাচ্চান্যরূপং নৈব প্রকাশতে” ইতি দিক্।।৭।।
বিষাণী ককুদ্বান্ প্রান্তেবালধিঃ সাস্নাবান্ ইতি গোত্বে দৃষ্টং লিঙ্গম্।।৮।।
অনুবাদ
শৃঙ্গ যাহার আছে, যাহার ককুদ্ (ঘাড়ের ঝুঁট) আছে, যাহার পুচ্ছের অগ্রভাগে কেশগুচ্ছ, যাহার গলকম্বল আছে, (তাহার) ইহারাই গোত্বের জ্ঞাপক, দেখা যায়।। ৮।।
ব্যাখ্যা
বায়ু প্রভৃতি কতিপয় বস্তু অনুমানবলে সিদ্ধ করিতে হয়। সেই অনুমানের স্বরূপ ও তাহার প্রামাণ্য স্থাপনার্থ এই সূত্র কথিত হইয়াছে। সূত্রের ভাবার্থ এই—শৃঙ্গ প্রভৃতি প্রত্যেকটাই গোত্বের জ্ঞাপক। মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতির শিং এক প্রকার হয়, গরুর শিং অন্য প্রকার হয়। গরুর সকল দেহ বনের ভিতর ডুবিয়া আছে, কেবল শিং দুটী দেখা যাইতেছে, সেই যে গোশৃঙ্গের বিজাতীয় গঠন তাহা দেখিয়াই তুমি নিশ্চয় করিবে,—বনের ভিতর গরু আছে। এই যে নিশ্চয় ইহাই—অনুমিতি, আর ঐ যে শিং উহাই এই অনুমিতির হেতু। কেবল শিং নহে, ঘাড়ের ঝুঁট, ল্যাজ, গলকম্বল প্রত্যেকটাই ঐরূপ অনুমিতির হেতু। ঐ সকল হেতু দ্বারা আমরা গরুর যে নিশ্চয় করি, যদি হেতুনিশ্চয়ে আমাদের ভ্রম না হয়, তাহা হইলে সেই নিশ্চয়, অভ্রান্তই হয়। কিন্তু ঐ নিশ্চয় প্রত্যক্ষ নয়, কেননা, গরুটীকে তো তখনও আমরা দেখি নাই, স্পর্শও করি নাই; সুতরাং ঐ নিশ্চয় অনুমিতি। এক স্থলে যদি সেই অনুমিতি অভ্রান্ত হয়, তবে অন্য স্থলেই বা না হইবে কেন? বায়ুর লক্ষণ করা হইয়াছে; কিন্তু বায়ুর প্রত্যক্ষ হয় না, সুতরাং যাহার লক্ষণ করিলাম, সে বস্তু যে আছে, তাহা তো নিশ্চয় করা চাই। শিং প্রভৃতি হেতু দ্বারা যেমন গরু নিশ্চয় করা হয়, সেইরূপ কোন বিশেষ হেতু দ্বারা বায়ুরও নিশ্চয় করিতে হইবে। সেই নিশ্চয় অনুমিতি। দৃষ্টান্ত অনুসারে বলিতে পারি যে, সে অনুমিতি অভ্রান্ত। সহজ কথার অনুরোধে অভ্রান্ত শব্দ প্রমাণ অর্থে ব্যবহার করিয়াছি।। ৮।।
উপস্কারঃ
এবং স্পর্শবদ্রব্যচতুষ্কলক্ষণপ্রকরণং সমাপ্য বায়োলক্ষণমাশ্রয়াসিদ্ধমিতি তৎপরিজি- হীর্ষয়া বা আদাবনুমানং প্রমাণমুপন্যস্যানুমানস্যৈব প্রথমং দৃষ্টানুসারেণ প্রাণাণ্যমুপপাদ্য বায়ুসাধন প্রকরণমারভতে।
যথা গোত্বং প্রতি বিষাণাদীনি লিঙ্গানি গৃহীতব্যাপ্তিকানি তথাতীন্দ্রিয়বায়াদিদ্রব্যপঞ্চ- কলিঙ্গান্যপি সামান্যতোদৃষ্টানি প্রমাণভাবমাসাদয়ন্তীতি ভাবঃ। অত্র যদ্যপি বিষাণিত্বমাত্রং ন গোত্বে লিঙ্গং মহিষাদৌ ব্যভিচারাৎ। ন চ সাস্নাদিমত্ত্বং বিশেষণং বিশেষ্যস্য ব্যর্থত্বাপত্তেঃ তথাপি গোবিষাণে মহিষমেষাদিবিষাণাপেক্ষয়া বৈলক্ষণ্যমাকলয়তাং ধূম ইব তে তে বিশেষা লিঙ্গভাবমাসাদয়ন্ত্যেব। বিষাণেম্বপি ঋজুত্ববক্রত্বকঠিনত্বসুকুমারত্বহ্রস্বত্বদীর্ঘত্বাদয়ঃ তে চ বিশেষাঃ নিপুণতরবেদ্যাঃ সন্ত্যেব, তথা চ ব্যবহিতবিপ্রকৃষ্টগোপিণ্ডে অয়ং গৌবিষাণ – বিশেষবত্ত্বাৎ পূৰ্ব্বানুভূতগোপিণ্ডবদিত্যনুমানমপ্রত্যূহমেব। এবং ককুদ্বত্তাপি লিঙ্গং গোত্বে, প্রান্তেবালধিমত্ত্বমপি স্বতন্ত্রমেব লিঙ্গং গোত্বে, প্রান্তে বালা আধীয়ন্তেঽস্মিন্নিতি প্রান্তেবালধিঃ পুচ্ছবিশেষঃ অলুক্সমাসাৎ, গোপুচ্ছ এবান্তেবালধিশব্দেনোচ্যতে, ন হি যথা গোপুচ্ছেষু প্রান্তেবালধিত্বং তথাশ্বমেষাদিপুচ্ছেষু, তেষাং সামস্ত্যেন বালময়ত্বাৎ, মহিষাদিপুচ্ছে তাদৃশী প্রলম্বতা নাস্তীতি বৈলক্ষণ্যাৎ, অন্তেবালধিমত্ত্বমপি গোত্বে লিঙ্গং মতুব্লোপাৎ গোপিণ্ড উচ্যতে। তথাচায়ং গৌঃ প্রান্তেবালধিমত্ত্বাৎ পূৰ্ব্বানুভূতগোপিণ্ডবৎ, সাস্নাবত্তা তু প্রসিদ্ধৈব গোত্বে লিঙ্গম্।।৮।।
.
স্পর্শশ্চ বায়োঃ।।৯।।
অনুবাদ
স্পর্শ-ইত্যাদি বায়ুর (জ্ঞাপক)।।৯।।
ব্যাখ্যা
‘ইত্যাদি’ অংশ সূত্রস্থিত চকারের অনুবাদ। স্পর্শ বিশেষ, সন্ সন্ শব্দ, তৃণ, তূল প্রভৃতির নিরবলম্বনে আকাশে স্থিতি এবং গাছের পাতা নড়া ইত্যাদি দ্বারা বায়ুর অস্তিত্ব নিশ্চয় করিতে হয়। অবশ্য বায়ুকে নয়নগোচর করা যায় না, ত্বক্ সাহায্যেও বায়ুর প্রত্যক্ষ হয় না, কিন্তু বায়ু স্পর্শের প্রত্যক্ষ হয়, সেই স্পর্শ বুঝিয়া বায়ুর নিশ্চয় করিতে হয়। বায়ুর স্পর্শ কিরূপ তাহা সকলেই জানেন। বড় ঝড়ে বায়ুর শব্দ সকলেই শুনিয়াছেন, সেই শব্দ শুনিয়া রুদ্ধদ্বার গৃহের অভ্যন্তরে থাকিয়াও বায়ুর অস্তিত্ব নিশ্চয় করা যায়। তৃণ কি তূল উড়াইয়া দিলে, বায়ু থাকিলে, শীঘ্র মাটীতে পড়িয়া যায় না। এই যে পতনের প্রতিবন্ধকতা, ইহার দ্বারা বায়ুর নিশ্চয় করিতে হয়। বৃক্ষ পত্রের কম্পন দেখিয়া বায়ু নিশ্চয়ের প্রবৃত্তি এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পল্লীগ্রামের অনেকেরই হইয়া থাকে।।৯।।
উপস্কারঃ
এবং সকললোকযাত্রাবাহিনোহনুমানস্য দৃষ্টানুসারেণ প্রামাণ্যমভিধায় বায়ুসাধনপ্রকরণ- মারিপমান আহ।
লিঙ্গমিতি শেষঃ। চকারাৎ শব্দধৃতিকম্পাঃ সমুচ্চীয়ন্তে। ননুপলভ্যমানস্পর্শঃ পৃথিব্যা এবানুদ্ভূতরূপায়াঃ স্যাদিতি চেন্ন, উদ্ভূতস্য পৃথিবীস্পর্শস্যোদ্ভূতরূপনান্তরীয়কত্বাৎ। তথাচ যোহয়ং স্পর্শোহনুভূয়তে স ক্কচিদাশ্রিতঃ স্পর্শত্বাৎ পৃথিব্যাদিস্পর্শবদিতি সামান্যতো দৃষ্টে স্পর্শাশ্রয়সিদ্ধৌ স্পর্শাশ্রয়ো ন পৃথিব্যাদিত্রয়াত্মকঃ নীরূপত্বাৎ নাকাশাদিপঞ্চাত্মকঃ স্পর্শবত্ত্বা- দিতীতরবাধসহকৃতেনাষ্টদ্রব্যাতিরিক্তদ্রব্যসিদ্ধিঃ, এবং শব্দবিশেষোঽপি বায়ৌ লিঙ্গম্, তথাহি অসতি রূপবদ্রব্যাভিঘাতে যোহয়ং পর্ণাদিশব্দসন্তানঃ স স্পর্শবদ্বেগবদ্রব্যাভিঘাতনিমিত্তকঃ অবিভজ্যমানাবয়বদ্রব্যসম্বন্ধিশব্দসন্তানত্বাৎ দণ্ডাভিঘাতজভেরীশব্দসন্তানবৎ রূপবদ্রব্যাভি- ঘাতব্যতিরেকস্তু যোগ্যানুপলব্ধিগম্যঃ তচ্চ স্পর্শবদ্বেগবদ্রব্যমষ্টদ্রব্যাতিরিক্তমেব পরিশেষাৎ। এবং ধৃতিবিশেষোঽপি বায়োর্লিঙ্গং, তথাহি তৃণতূলস্তনয়িতুবিমানানাং নভসি ধৃতিঃ স্পর্শ- বদ্বেগবদ্রব্যসংযোগজা চেতনানধিষ্ঠিতদ্রব্যধৃতিত্বাৎ, প্ৰবাহে তৃণকাষ্ঠনৌকাদিধৃতিবৎ, অভিধ্যানকৃতবিষাদিধৃতৌ চ অস্মদাদ্যধিষ্ঠানমেব এবং পক্ষিকাণ্ডাদিধৃতাবপি। ন চেশ্বরা- ধিষ্ঠিতত্বেন হেতুবিশেষণাসিদ্ধিঃ চেতনপদেন তদিতরস্য বিবক্ষিতত্বাৎ। এবং কম্পোঽপি বায়ুসত্ত্বে লিঙ্গং, তথাহি ইদং রূপবদ্ দ্রব্যাভিঘাতমন্তরেণ তৃণাদৌ কৰ্ম্ম স্পর্শবদ্বেগব- দ্রব্যাভিঘাতজং গুরুত্ব প্রযত্নবদাত্মসংযোগাজন্যকর্ম্মত্ত্বাৎ নদীপূরাহতবেতসবনকৰ্ম্মবদিতি গুরুত্বপদেনাদৃষ্টবদাত্মসংযোগদ্রবত্বসংস্কারাণামুপগ্রহঃ, তেন তদজন্যকৰ্ম্মত্বং হেতুঃ। ননু প্রত্যক্ষ এব বায়ুঃ কিমত্র লিঙ্গগবেষণয়েতি চেন্ন, বায়ুর্ন প্রত্যক্ষঃ নীরূপবহিদ্রব্যত্বাৎ গগনবদিত্যনু- মানাদতীন্দ্রিয়ত্বস্যৈব সিদ্ধেঃ। ননু বায়ুঃ প্রত্যক্ষঃ স্পর্শাশ্রয়ত্বাদ্ ঘটবদিতি প্রত্যক্ষত্বানুমানমিতি চেন্ন, উদ্ভূতরূপবত্ত্বস্যাত্রোপাধিত্বাৎ, ন চ রূপাদাবাত্মনি চ সাধ্যাব্যাপকমেতৎ পক্ষধৰ্ম্ম-বহিদ্রব্যত্বাবচ্ছিন্নস্য সাধনধর্ম্মাবচ্ছিন্নস্য বা সাধ্যস্য ব্যাপকত্বাৎ, ন চ চাক্ষুষ প্রত্যক্ষত্বে তত্তন্ত্রং তত্রৈব তদন্বয়ব্যতিরেকানুবিধানাৎ স্পার্শনপ্রত্যক্ষত্বে তু যোগ্যস্পর্শবত্তামাত্রস্য তন্ত্ৰতেতি বাচ্যং রূপান্বয়ব্যতিরেকয়োরুভয়ত্রাপি তন্ত্রত্বাৎ। ন ল্যুভয়সিদ্ধস্পর্শেনৈব প্রত্যক্ষতা রূপস্য গ্রহমন্তরেণ দৃষ্টা। কিঞ্চ যদি বায়ুঃ প্রত্যক্ষঃ স্যাৎ সঙ্খ্যাদিসামান্যগুণোপলম্ভেঽপি তন্ত্রং স্যাৎ। নন্বস্ত্যেব ফুৎকারাদৌ সঙ্খ্যায়াঃ পরিমাণস্য চ হস্তবিতস্ত্যাদেঃ উভয়পার্শ্ববর্ত্তিনোৰ্ব্বায়োঃ পৃথত্বস্য চ পরত্বাপরত্বয়োশ্চ প্রত্যক্ষতা, বায়ুজাতীয়স্য ব্যক্তিপরতয়া তু ন তবাপি নিয়মঃ, পৃষ্ঠলগ্নবস্ত্রাদৌ তদনুপলন্তাদিতি চেন্ন, ব্যক্তিপরতয়ৈব নিয়মাৎ পৃষ্ঠলগ্নবস্ত্রাদৌ চার্জবাবস্থানে সঙ্খ্যাদীনাং গ্রহণাৎ, অনার্জবাবস্থানদোষাত্তু তদগ্রহঃ উদ্ভূতরূপস্পর্শৌ মিলিতাবেব বহিদ্রব্যপ্রত্যক্ষত্বে তন্ত্রে প্রভায়া নয়নগতপীতদ্রব্যস্য চন্দ্রমহসশ্চ স্পর্শানুদ্ভবাদপ্রত্যক্ষত্বং নিদাঘোত্মণোর্বিভ ক্তাবয়বাপ্যদ্রব্যাণাঞ্চ রূপানুদ্ভবাদপ্রত্যক্ষত্বমিতি ন্যায়বার্ত্তিকতাৎপর্য্যটীকাকৃতঃ, স্পৰ্শানু- দ্ভবেঽপি প্রভাদীনাং প্রত্যক্ষতৈব, অতএব চান্দ্রালোকে নভসি পক্ষিকাণ্ডাদিসংযোগবিভাগয়োঃ প্রত্যক্ষতৈবেতি সম্প্রদায়বিদঃ, ন চোদ্ভূতস্পর্শবত্ত্বং সামান্যতো বহিদ্রব্যপ্রত্যক্ষতা প্রয়োজকমিতি বাচ্যম্, ইন্দ্রনীলপ্রভায়া অপ্রত্যক্ষতাপত্তেঃ, ন চোদ্ভূতবিশেষগুণবত্ত্বমেব তন্ত্রম্ আকাশস্যাপি প্রত্যক্ষতাপত্তেঃ, ন চ জন্যমহত্ত্বসমানাধিকরণোদ্ভূতবিশেষগুণবত্ত্বং তথা, রসনাগ্রবর্ত্তিপিত্তদ্রব্যস্য তৈক্ত্যোদ্ভবেঽপ্যপ্রত্যক্ষত্বাৎ তস্মাদুদ্ভূতরূপবত্ত্বমেবাত্মেতরদ্রব্য প্রত্যক্ষতাতন্ত্রং তচ্চ বায়ৌ নাস্তীত্যপ্রত্যক্ষো বায়ুঃ।।৯।।
.
ন দৃষ্টানাং স্পর্শ ইত্যদৃষ্টলিঙ্গো বায়ুঃ।। ১০।
অনুবাদ
(পূর্ব্বোক্ত) স্পর্শ দৃষ্ট বস্তুর (পৃথিব্যাদিত্রয়ের) নহে, অতএব বায়ুর অনুমান অ-দৃষ্টমূলক। ১০।
ব্যাখ্যা
বায়ু-স্পর্শাদি-প্রত্যক্ষমূলক বায়ুর অনুমিতি হয়। পরন্তু এই অনুমিতির সহিত গোত্ব-অনুমিতির অর্থাৎ শিং দেখিয়া যে গরু বলিয়া নিশ্চয় করা যায়, তাহার একটু পার্থক্য আছে। গোত্ব এবং শৃঙ্গাদির ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষমূলক; কিন্তু এই বায়ুস্পর্শঘটিত ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষমূলক নহে। এই যে স্পর্শ অবলম্বন করিয়া আমরা বায়ুর অস্তিত্ব সিদ্ধ করিতেছি, সে স্পর্শ যদি পৃথিব্যাদির হইত তাহা হইলে তাহার ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষমূলক হইত। কিন্তু তাহা নহে, তাহা হইলে সে স্পর্শ দ্বারা বায়ুসিদ্ধি হইত না; বায়ুস্পর্শ—বাষ্পস্পর্শ ঈষৎ সুড়সুড়ি লওয়ার ন্যায় স্পর্শ; সেই স্পর্শ হইলেই আমরা বুঝি আমার গাত্রে যে স্পর্শ হইতেছে, ইহা অপর কোন গতিশীল বৃহৎ পদার্থের বটে, যে হেতু ইহা স্পর্শ। কেবল এক বস্তু হইলে স্পর্শ ঘটে না। কিন্তু কিসের স্পর্শ? পৃথিবী, জল বা তেজের স্পর্শ তো নহে, কেননা স্পর্শের পূর্ব্বে আমার শরীর যেখানে ছিল এবং যেরূপ দেখাইতেছিল, এখন তো সেইখানে আছে এবং সেইরূপ দেখাইতেছে—যদি পৃথিবীপ্রভৃতির স্পর্শ হইত তাহা হইলে নূতন কোন পার্থিব বস্তু, কোন জলীয় বস্তু বা তৈজস বস্তু দেখিতে পাইতাম; সুতরাং এই স্পর্শ, পৃথিবী প্রভৃতির অতিরিক্ত কোন গতিশীল বৃহৎ পদার্থেরই ইহা নিশ্চয়। পরন্তু এই গতিশীল বৃহৎ পদার্থের সম্বন্ধ কেহ কখনই দেখিতে পায় না; অতএব তাহা যে অনুভূয়মান স্পর্শ বা স্পর্শত্বের ব্যাপক, এবং জ্ঞানও প্রত্যক্ষমূলক হইতে পারে না। সুতরাং সূত্রে বায়ুকে ‘অদৃষ্টলিঙ্গক’ বলা হইয়াছে। এই যে অনুমান দ্বারা বায়ুর অস্তিত্ব সিদ্ধ হইতেছে, ইহা ‘ধৰ্ম্মিগ্রাহক মান’ নামে প্রসিদ্ধ। ইহাতে বায়ুর নাম গন্ধ থাকে না, ইহা দ্বারা কেবল এই স্পর্শের একটী নূতন দ্রব্যের সহিত সম্বন্ধ নিশ্চিত হয়। সেই নূতন দ্রব্যই শাস্ত্রে বায়ু নামে অভিহিত। এক প্রকার অনুমিতি অভ্রান্ত হওয়ায় অনুমানকে প্রমাণ বলিতে হইয়াছে। সেই প্রমাণ যদি অন্যত্রও কার্য্যকর হয়, তবে তদ্দ্বারা বস্তুসিদ্ধি না হইবে কেন? যদি বল প্রত্যক্ষমূলক ব্যাপ্তিজ্ঞান ব্যতীত অভ্রান্ত অনুমিতি হয় না, তদুত্তরে আমরা বলি—তাহা হইলে অপরের সহিত ব্যবহার করাই যায় না। যাহার সহিত ব্যবহার করিবে তাহার শুনিয়া বুঝিতে হয় তাহার অভিপ্রায় কি? তবে তো তাহার সহিত ব্যবহার করা যায়—কিন্তু এই পরকীয় অভিপ্রায়জ্ঞান কখনই প্রত্যক্ষমূলক ব্যাপ্তিজ্ঞানসাহায্যে ঘটিতে পারে না। অন্যের মনোভাব কি অন্যে প্রত্যক্ষ করিতে পারে? সুতরাং ব্যাপ্তিজ্ঞান প্রত্যক্ষমূলক না হইলেও প্রমাণ হইবে। সেই প্রমাণ দ্বারাই বায়ুর অস্তিত্বসিদ্ধি হয়। এখন আপত্তি এই,—বায়ুর অস্তিত্বসিদ্ধি অনুমান দ্বারা কেন? বায়ুর তো ত্বাচ্প্রত্যক্ষই হয়। এই আপত্তির উত্তরে পূৰ্ব্বাচার্য্য্যগণ বলেন, ত্বাচ্ প্রত্যক্ষের প্রতিও রূপ কারণ; যাহার রূপ আছে, তাহারই ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হইবে, অন্যের হইবে না। এ নিয়ম অস্বীকার করিলে বায়ুর সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদিরও ত্বাপ্রত্যক্ষাপত্তি। অন্ধকারে ঘটের ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হইলেও আমরা বুঝিতে পারি ঘটটা কত বড়, হাত দিয়া বুঝিতে পারি কয়টা ঘট, কিন্তু বায়ুর সংখ্যা পরিমাণাদি তো বুঝিতে পারি না। যে দ্রব্যের ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হইবে, সে দ্রব্যের সংখ্যা, পরিমাণাদিও ত্বাচ্ প্রত্যক্ষের বিষয় হইয়া থাকে। বায়ুর যখন সংখ্যাদি ত্বাচ্ প্রত্যক্ষের বিষয় নহে; তখন বায়ুরও ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হয় না। নব্য-নৈয়ায়িকেরা বলেন, বায়ুরও ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হয়, স্থল বিশেষে (নিঃশ্বাস প্রভৃতিতে) সংখ্যাদিরও ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ হয়; তবে কোথায় কোথায় অন্য প্রতিবন্ধক হেতু না হইতেও পারে। গায়ে ঠেকিলে সেই বস্তুবিষয়ে যে জ্ঞান হয়, তাহাকে ত্বাচ্ প্রত্যক্ষ বলা যায়।। ১০।
উপস্কারঃ
ননু প্রত্যক্ষতো দৃষ্টমিহ লিঙ্গং নাস্তি ন হি বহ্নিধূময়োরিবেহ প্রত্যক্ষেণ ব্যাপ্তিগ্রহঃ। কিঞ্চ পৃথিব্যাদ্যন্যতমস্যৈব স্পর্শোহপ্যয়ং ভবিষ্যতীত্যত আহ।
অয়ং স্পর্শো যঃ পক্ষঃ ক্রিয়তে স দৃষ্টানাং পৃথিব্যপ্তেজসাং ন ভবতি রূপাসহচরত্বাৎ। তথাচায়ং স্পর্শঃ ক্বচিদাশ্রিত ইত্যনুমেয়মিত্যদৃষ্টলিঙ্গঃ সামান্যতো দৃষ্টলিঙ্গোঽপি বায়ুঃ পক্ষধর্ম্মতাবলাদায়াত ইত্যর্থঃ, যদ্যপি দৃষ্টমেব স্পর্শাদিচতুষ্কং লিঙ্গমিতি তথাপি বায়ুনা সহাগৃহীতব্যাপ্তিকত্বাদদৃষ্টলিঙ্গত্বমুক্তং নহয়ং ধর্মী বায়ুরিতি প্রতিজ্ঞায় বায়ুঃ সাধয়িতুং শক্যতে, তথাচ সামান্যতো দৃষ্টাদেবেতরবাধসহকৃতাদ্বায়ুসিদ্ধিরিতিভাবঃ।।১০।।
.
অদ্রব্যবত্ত্বেন দ্রব্যম্।। ১১।।
অনুবাদ
দ্রব্যাশ্রিত নহে বলিয়া (বায়ুর পরমাণু) দ্রব্য।। ১১।।
ব্যাখ্যা
যে বায়ুর স্পর্শ প্রত্যক্ষ হয়, তাহা ক্ষুদ্র নহে, বৃহৎ; দার্শনিক ভাষায় ইহাকে ‘মহৎ’ বলা যায়। অথচ এই মহতের ন্যূনতা ও আধিক্য আছে। সুতরাং আকাশের ন্যায় পরম মহৎ নহে, ইহার অবয়ব আছে। সে অবয়বের সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র-অংশ চরম অবয়ব, তাহার আর অবয়ব নাই। তাহাই বায়ু-পরমাণু। এক্ষণে আপত্তি এই, বায়ু-পরমাণু যখন নিরবয়ব তখন তাহা দ্রব্যসমবেত নহে, যাহা দ্রব্যসমবেত নহে, তাহা দ্রব্য নহে; যেমন গুণত্বাদি জাতি। এইরূপ বায়ু-পরমাণু যদি অদ্রব্য প্রতিপন্ন হয়, তাহা হইলে তজ্জন্য বায়ুও দ্রব্য হইবে না। সুতরাং বায়ু মানিতে হইলে তাহাকে অতিরিক্ত পদার্থই বলিতে হয়। এই আপত্তির উত্তরে এই সূত্র কথিত হইয়াছে। এক নিত্য দ্রব্য ব্যতীত সকল পদার্থই সাক্ষাৎ সম্বন্ধে বা পরম্পরা সম্বন্ধে দ্রব্যকে আশ্রয় করিয়া থাকে। স্থূল বায়ুর শেষ সূক্ষ্ম অংশ নিরবয়ব, সুতরাং দ্রব্যাশ্রিত নহে, দ্রব্যাশ্রিত নহে বলিয়াই তাহা দ্রব্য, আকাশ দ্রব্যাশ্রিত নহে, বা দ্রব্যসমবেত নহে, তাহা তো দ্রব্য। সুতরাং যাহা দ্রব্যসমবেত নহে তাহা দ্রব্য নহে, এ অনুমান দুষ্ট। যাহা অদ্রব্যাশ্রিত তাহা দ্রব্য, ইহাই সদনুমান, দৃষ্টান্ত আকাশ, আত্মা ইত্যাদি।।১১।।
উপস্কারঃ
উপলভ্যমানস্পর্শাশ্রয়মবয়বিনং সাধয়িত্বা পরমাণুলক্ষণং বায়ুং সাধয়িতুমাহ।
দ্রব্যমাশ্রয়ভূতমস্যাস্তীতি দ্রব্যবৎ, ন দ্রব্যবৎ অদ্রব্যবৎ, দ্রব্যানাশ্রিতমিত্যর্থঃ। তথাচাকাশবৎ পরমাণুলক্ষণো বায়ুদ্রব্যম্ অন্যেষাং পদার্থানাং দ্রব্যাশ্রিতত্বাৎ আশ্রিতত্বঞ্চান্যত্র নিত্যদ্রব্যেভ্য ইত্যভিধানাৎ পরমাণুভ্যাং দ্ব্যণুকারম্ভাৎ দ্ব্যণুকাদিপ্রক্রমেণাবয়বিনো মহত আরম্ভস্যোপপাদনীয়ত্বাদিতি।।১১।।
ক্রিয়াবত্ত্বাদ্ গুণবত্ত্বাচ্চ।। ১২।।
অনুবাদ
ক্রিয়া এবং গুণ আছে এই হেতুও (তাহাকে দ্রব্য বলিতে হয়)।। ১২।।
ব্যাখ্যা
পরমাণুদ্বয়ের ক্রিয়াব্যতীত সংযোগ হয় না, সংযোগব্যতীত দ্ব্যণুক হয় না, দ্ব্যণুক না হইলে ক্রমে বৃহৎ বায়ুও হইতে পারে না। কারণীভূত বায়ুপরমাণুতে গুণ না থাকিলে কাৰ্য্য—বৃহৎ বায়ুতেও গুণ থাকিত না, যখন বৃহৎ বায়ু হয় এবং তাহা গুণবিশিষ্ট, তখন তাহার মূলীভূত সূক্ষ্মবায়ুতেও ক্রিয়া ও সংযোগাদি গুণ আছে। গুণক্রিয়ার অস্তিত্বও বায়বীয় পরমাণুর দ্রব্যত্বের সাধক।।১২।।
উপস্কারঃ
বায়ুপরমাণোর্দ্রব্যত্বসাধকং হেতুদ্বয়ং সমুচ্চিন্বন্নাহ।
বায়ুপরমাণুর্দ্রব্যমিতি শেষঃ। যদ্যপি দ্রব্যত্বে সিদ্ধ্যেক্রিয়াবত্ত্বং গুণবত্ত্বঞ্চ সিধ্যতি তৎসিদ্ধৌ চ দ্রব্যত্বসিদ্ধিরিত্যন্যোন্যাশ্রয়ঃ তথাপ্যুপলভ্যমানস্পর্শাশ্রয়স্যাবয়বিনো মূলভূতস্য পরমাণোরসমবায়িকারণসংযোগান্যথানুপপত্ত্যা ক্রিয়াবত্ত্বম্, অবয়বিস্পর্শরূপাদেঃ কারণগুণ- পূৰ্ব্বকত্বনিয়মাদ্ গুণবত্ত্বঞ্চ সিদ্ধং তাভ্যাঞ্চ দ্রব্যত্বমিত্যদোষঃ। তত্র ক্রিয়াবত্ত্বং সপক্ষৈকদেশবৃত্তি, গুণবত্ত্বঞ্চ সপক্ষব্যাপকম্। চকারাৎ সমবায়িকারণত্বং দ্রব্যত্বসাধকং সমুচ্চিনোতি। ননু পরমাণাবেব ন প্রমাণং কস্য দ্রব্যত্বং সাধ্যত ইতি চেন্ন স্থূলকাৰ্য্যস্য ক্রিয়াবিভাগাদিন্যায়েন ভজ্যমানস্যাল্পতরতমাদিভাবাৎ, যতো নান্নীয়ঃ স এব পরমাণুঃ অবয়বাবয়বিপ্রসঙ্গস্যানবধিত্বে অনন্তাবয়বত্বাবিশেষে সুমেরুসর্যপাদীনাং পরিমাণাবিশেষাপত্তিঃ কারণসংখ্যাবিশেষমন্তরেণ পরিমাণপ্রচয়য়োরপি পরিমাণভেদং প্রত্যতন্ত্রত্বাৎ, ন চ বিনাশাবধিরেবায়ম্ অবয়বাবয়বি প্রসঙ্গঃ, অন্ত্যস্য নিরবয়বত্বেন বিনাশানুপপত্তেঃ সাবয়বত্বে চ নিরবধিত্বাপত্তেস্তত্র চ দোষস্যোক্তত্বাৎ। ননু ত্রুটিরেবাবধিদৃশ্যমানত্বাদদৃশ্যমানকল্পনায়াং মানাভাবাদিতি চেন্ন তস্য চাক্ষুষদ্রব্যতয়া মহত্ত্বানেকদ্রব্যত্বয়োরাবশ্যকত্বাৎ তস্মাৎ ত্রসরেণ্ববয়বাবয়ব এব পরমাণুর্যথা পৃথিব্যাদৌ তথা বায়াবপীতি সিদ্ধো বায়ুপরমাণুঃ।।১২।।
.
অদ্রব্যত্বেন নিত্যত্বমুক্তম্।। ১৩।।
অনুবাদ
দ্রব্যাশ্রিত নহে এই হেতু (বায়ুর সূক্ষ্মাংশ) নিত্য বলিয়াই কথিত হইয়াছে।। ১৩।।
ব্যাখ্যা
যে সকল দ্রব্য দ্রব্যাশ্রিত নহে—যথা আকাশ ইত্যাদি তাহা নিত্য ইহা স্থির সিদ্ধান্ত।। ১৩।।
উপস্কারঃ
ননু ক্রিয়াবত্ত্বাদ্ গুণবত্ত্বাচ্চ ঘটাদিবৎ পরমাণোরনিত্যত্বমনুমেয়মত আহ।
পরমাণুলক্ষণবায়োরিতি শেষঃ। দ্রব্যং হি সমবায়িকারণাসমবায়িকারণান্যতরনাশান্নশ্যতি, পরমাণোস্ত্র নিরবয়বতয়া নৈতদুভয়মস্তি, তথাচ বিনাশকাভাবান্ন বিনশ্যতি, ক্রিয়াবত্ত্বে গুণবত্ত্বে চ হেতৌ সাবয়বত্বমুপাধিঃ। স চ পক্ষধর্মদ্রব্যত্বাবচ্ছিন্নসাধ্য প্যাপকঃ কেবলসাধ্যব্যাপক প্রাগভাবপ্রতিযোগিত্বমুপাধিঃ।। ১৩।।
.
বায়োবায়ুসংমূৰ্চ্ছনং নানাত্বলিঙ্গম্।। ১৪।।
অনুবাদ
বায়ুর যে (অন্য) বায়ুর সহিত সংযোগ-বিশেষ (অভিঘাত) তাহাই বায়ুর নানাত্বসাধক।। ১৪।।
ব্যাখ্যা
বায়ু একটী হইলে, কেবল বায়ুনিষ্ঠ সংঘর্ষ বা অভিঘাত এমন কি ছোট খাট সংযোগও হয় না। কেন না সংযোগ দ্বিষ্ঠ, যদি বায়ুমাত্রনিষ্ঠ সংযোগ অনুভূত হয়, তাহা হইলে একাধিক বায়ু স্বীকার করিতেই হইবে। বায়ু দ্বয়ের সংঘর্ষ বায়ুর ঊর্দ্ধগমন দ্বারা অনুমান করিতে হয়। দেখা যায় দুই বিভিন্ন দিক্ হইতে জলের স্রোত বহিলে স্রোতোদ্বয়ের পরস্পর সংঘর্ষ হয়, তাহা হইলে, মধ্যস্থান উচ্চ হইয়া উঠে। সেইরূপ—স্বাভাবিক যাহার ঊর্দ্ধগমন নাই, সেই বায়ুর ঊর্দ্ধগমন হইলে বুঝিবে, দুই দিক্ হইতে বায়ু বহিয়া সংঘর্ষযুক্ত হইয়াছে। বায়ুবেগে যখন তৃণ পত্র ঊর্দ্ধে উঠিতে থাকে, তখন বায়ুর ঊর্দ্ধগমন স্থির করিবে। এই সংঘর্ষযুক্ত বায়ু এ দেশের চলিত কথায় ‘ঝুঁটি বাতাস’ ‘ঘুর্ণিবায়ু’ ইত্যাদি নামে পরিচিত।। ১৪।।
উপস্কারঃ
দ্ব্যণুকাদিপ্রক্রমেণারম্ভসিদ্ধৌ সিদ্ধমপি বায়ুনানাত্বং প্রকারান্তরেণাপি সাধয়িতুমাহ। বায়ুসংমূৰ্চ্ছনমিতি বায়োবায়ুনাং বা সংমূৰ্চ্ছনং সংযোগবিশেষঃ। স চ সমানবেগয়ো- বিরুদ্ধদিক্ক্রিয়য়োঃ সন্নিপাতঃ। স চ তৃণতূলকাদেরূর্দ্ধগমনেনানুমীয়তে বাম্বোরূদ্ধগমনস্য সন্নিপাতস্য চাতীন্দ্রিয়ত্বাৎ তৃণাদীনান্তু প্রত্যক্ষাণামূৰ্দ্ধ গমনলক্ষণায়াঃ ক্রিয়ায়াঃ প্রত্যক্ষায়াঃ স্পর্শবদ্বেগবদ্রব্যাভিঘাতনোদনান্যতরজন্যত্বমনুমীয়তে। তথাহি তিৰ্য্যমনস্বভাবস্য বায়ো- রূর্দ্ধগমনং পরস্পরপ্রতীঘাতমন্তরেণানুপপদ্যমানং পরস্পরপ্রতীঘাতং সাধয়তি নদীপয়ঃ- পূরয়োস্তথা দর্শনাৎ তদূর্দ্ধগমনঞ্চ তৃণাদ্যৰ্দ্ধ গমনানুমেয়ং ন হি তৃণাদীনামূৰ্দ্ধগমনং স্পর্শ- বদ্বেগবদ্রব্যাভিঘাতনোদনান্যতরবিনেতি।।১৪।।
.
বায়ুসন্নিকর্ষে প্রত্যক্ষাভাবাদ দৃষ্টং লিঙ্গং ন বিদ্যতে।। ১৫।।
অনুবাদ
বায়ুর সহিত যে ব্যাপ্তি তাহা প্রত্যক্ষ হয় না—এই জন্যই বায়ুর অনুমান বা জ্ঞাপক প্রত্যক্ষসিদ্ধ নহে।। ১৫।।
ব্যাখ্যা
১০ম সূত্রে বায়ুকে ‘অদৃষ্টলিঙ্গ’ বলা হইয়াছে। কিন্তু তাহা অনুচিত, কেন না বায়ুর সাধক লিঙ্গ বা হেতু যে স্পর্শ প্রভৃতি তাহাতো দৃষ্টিগোচরই হইয়া থাকে। এই আশঙ্কায় এই সূত্রের উপন্যাস। ভাবার্থ এই যে, সেই সূত্রে ‘অদৃষ্টলিঙ্গ’ এই শব্দের মধ্যে যে লিঙ্গ শব্দ আছে তাহা কেবল হেতুপর নহে। পরন্তু তাহার অর্থ, ব্যাপ্তিবিশিষ্ট হেতু, ব্যাপ্তি প্রত্যক্ষ হয় না বলিয়াই ‘অদৃষ্টলিঙ্গক’ বলা হইয়াছে। ১০ম সূত্রে ব্যাখায় এ কথা আছে।। ১৫।।
উপস্কারঃ
নম্বদৃষ্টলিঙ্গো বায়ুরিত্যুক্তং তথাচ কথমেতদিত্যত আহ।
দৃষ্টং হি লিঙ্গং যত্র প্রত্যক্ষেণ ব্যাপ্তিগ্রহস্তদুচ্যতে যথা ধূমোহগ্নেঃ, বায়ুসন্নিকর্ষে চ বায়ুনা সহাবিনাভাবে প্রত্যক্ষং নাস্তি। ন হি ভবতি যো যঃ স্পর্শকস্পাদিমান্ স বায়ুরিতি কস্যচিৎ প্রত্যক্ষং বায়োরেবাপ্রত্যক্ষত্বাদত এব তাদৃশং প্রত্যক্ষগৃহীতব্যাপ্তিকং লিঙ্গং নাস্তীত্যর্থঃ।।১৫।।
.
সামান্যতোদৃষ্টাচ্চাবিশেষঃ।।১৬।।
অনুবাদ
সামান্যতোদৃষ্ট অনুমান দ্বারা (বায়ুর) অবিশেষ (অনুমিতি) হয়।। ১৬।।
ব্যাখ্যা
সামান্যতোদৃষ্ট অনুমান দ্বারা বিশেষ নিশ্চয় হয় না, অর্থাৎ বায়ুত্বরূপে নিশ্চয় হয় না, বস্তুরূপে বা দ্রব্যরূপে সামান্যতঃ নিশ্চয় হয় এই মাত্র; এই সামান্যতঃ নিশ্চয়ই সূত্রে ‘অবিশেষ’ শব্দে কথিত। এ কিরূপ নিশ্চয় হয় তাহা ১০ম সূত্রের ব্যাখ্যায় বলিয়াছি। অনুমান তিনপ্রকার ‘পূর্ব্ববৎ’ ‘শেষবৎ’ এবং ‘সামান্যতোদৃষ্ট’। যে জাতীয় হেতুসাধ্যের ব্যাপ্তি প্রত্যক্ষীভূত, তজ্জতীয়-হেতুসাধ্যক অনুমান ‘পূৰ্ব্ববৎ’ নামে কথিত ব্যতিরেকব্যাপ্তিজ্ঞানমূলক অনুমান ‘শেষবৎ’ এবং যে জাতীয় হেতু সাধ্যের ব্যাপ্তি কোথাও প্রত্যক্ষ হয় নাই, সেই জাতীয়-হেতু-সাধ্যক অনুমানই সামান্যতোদৃষ্ট। হেতুর অভাবের সাধ্যাভাব অপেক্ষা অল্পস্থানে না থাকাই ব্যতিরেকব্যাপ্তি। মনে কর বহ্নি সাধ্য, ধূম হেতু, ধূমের অভাব বহ্নির অভাব অপেক্ষা অল্পস্থানে থাকে না, বরং অধিকস্থানে থাকে, যেখানে বহ্নির অভাব নাই, সেখানেও—তপ্তলৌহপিণ্ডেও থাকে। এই যে হেত্বভাবের সাধ্যাভাব অপেক্ষা অল্পস্থানে না থাকা অর্থাৎ হেত্বভাবে সাধ্যাভাব ব্যাপকত্ব তাহাই ব্যতিরেকব্যাপ্তি। অভাব যেখানে সাধ্য সেইস্থলে এইরূপ ব্যতিরেকব্যপ্তিজ্ঞান হইয়া অনুমান হইলে তাহাকে ‘শেষবৎ’ বলা যায়। পূর্ব্ববৎ অনুমানের উদাহরণ পৰ্ব্বতো বহ্নিমান্ ধূমাৎ, অর্থাৎ পৰ্ব্বতে যেহেতু ধূম আছে, সুতরাং বহ্নি আছে কেন না যেখানে ধূম থাকে সেইখানেই বহ্নি থাকে। এই যে ধূম ও বহ্নির ব্যাপ্তি তাহা রন্ধনশালায় পূর্ব্বদৃষ্ট। সেই অনুসারে পর্ব্বতেও বহ্নি ধূম ব্যাপ্তিজ্ঞান হইবার পর পর্ব্বতে বহ্নিব্যাপ্য ধূমের নিশ্চয় হইলে বহ্নির অনুমিতি হয়। এই অনুমানই ‘পূৰ্ব্ববৎ’। শেষবৎ অনুমানের উদাহরণ—পৃথিবী পৃথিবীতরভিন্না গন্ধবত্ত্বাৎ। যাহা পৃথিবী নহে, তাহাতে গন্ধ নাই, যেমন জল। এইরূপে গন্ধাভাবে পৃথিবীভেদরূপ সাধ্যাভাবের ব্যাপকত্বজ্ঞান হইবার পর সেই ব্যতিরেকব্যাপ্তিবিশিষ্ট গন্ধের পৃথিবীবৃত্তিত্ব নিশ্চয় হইলে, পৃথিবী অর্থাৎ ঘটপটাদি সমুদয় পার্থিব বস্তুই পৃথিবী ভিন্ন নয় ইহা অনুমিতি হয়, এই অনুমানই ‘শেষবৎ’। সামান্যতোদৃষ্ট অনুমানের উদাহরণ—অয়ং স্পর্শঃ ক্বচিদাশ্রিতঃ স্পর্শত্বাৎ। বায়ু স্পর্শ হইলে বুঝা যায়, এই যে অনুভূয়মান স্পর্শ ইহা কোথাও আছে, যেহেতু ইহা স্পর্শ। কিন্তু এই যে ‘কোথাও থাকা’ যাহা ফলতঃ বায়ুবৃত্তিত্ব তাহা কখনই প্রত্যক্ষ হয় না। সুতরাং হেতুতে তাহার ব্যাপ্তিও কখন প্রত্যক্ষ হয় নাই। কিন্তু ‘কোথাও থাকা’ যাহা পৃথিবীবৃত্তিত্ব ইত্যাদি তাহা প্রত্যক্ষ হয়, সুতরাং বায়ু বা পৃথিবী বিশেষরূপ গ্রহণ না করিয়া যে ব্যাপ্তিজ্ঞান হয় তজ্জন্য ‘এই স্পর্শও কোথাও আছে’ এইরূপ অনুমিতি হয়, এই অনুমান সামান্যতোদৃষ্ট।। ১৬।।
উপস্কারঃ
তর্হি বায়োরনুমানমেব কথমিত্যত উক্তমেব দ্রঢ়য়িতুমাহ।
অনুমানং হি ত্রিবিধং পূর্ব্ববৎ শেষবৎ সামান্যতোদৃষ্টঞ্চ। তথাচায়মনুভূয়মান স্পৰ্শঃ ক্বচিদাশ্রিতঃ স্পর্শত্বাৎ গুণত্বাদ্বেতি সামান্যতোদৃষ্টাদেবেতরবাধসহকৃতাৎ অষ্টদ্রব্যাতিরিক্ত- দ্রব্যাশ্রিতত্বং সিধ্যতীত্যর্থঃ। গতং তর্হি কেবলব্যতিরেকিণেতি চেন্ন ইতরবাধানন্তরং যত্র সামান্যতোদৃষ্টং প্রবর্ততে তত্রাষ্টদ্রব্যানাশ্রিতত্বং পক্ষবিশেষণং সিদ্ধমাদায় অষ্টদ্রব্যানাশিতোহয়ং স্পর্শঃ ক্বচিদাশ্রিত ইতি প্রতিজ্ঞার্থোঽষ্টদ্রব্যাতিরিক্তদ্রব্যাশ্রিতত্বমনাদায় ন পর্য্যবস্যতীতি- প্রতীত্যর্থাপর্যবসন্নতয়াহন্বয়িন এব তৎসিদ্ধিঃ। যত্র তু পূর্ব্বমেব বাধাবতারাৎ সামান্যতো দৃষ্টং তত্র প্রতীত্যর্থপর্যবসানাৎ কেবলব্যতিরেকীত্যভ্যুপগমাৎ। প্রকারার্থং কেবলব্যতিরেকীতি তু তুচ্ছমেব। উক্তস্থলে প্রকারস্যান্বয়িন এবোপস্থিতেঃ ব্যাপকতাবচ্ছেদকপ্রকারিকৈবানুমিতিরিতি নিয়মস্ত্বপ্রমাণিকঃ সামগ্রীবিশেষসাচিব্যাৎ প্রকারান্তরভানস্যাপি সম্ভবাৎ।। ১৬।।
.
তস্মাদাগমিকম্।।১৭।।
অনুবাদ
অতএব (বায়ু এই নাম) শাস্ত্রপ্রতিপাদিত।। ১৭।।
ব্যাখ্যা
অনুমিতি সামান্যরূপেই হয়, বিশেষরূপে হয় না। সুতরাং তাহাকে যে বায়ু নামে অভিহিত করিতেছি, তাহার কারণ কি—তাহার কারণ শাস্ত্র। শাস্ত্রে বায়ুর নাম আছে ক্ষেপণশীলতা তাহাতে আছে এ কথা বলা আছে এবং তাহাকে গন্ধবহ বলা হইয়াছে। অথচ পৃথিবী, জলাদি হইতে পৃথভাবে উল্লিখিত; ইহা দেখিয়াই আমরা এই ক্ষেপণশীল গন্ধবহ নূতন দ্রব্যকে বায়ু নামে অভিহিত করিয়াছি।। ১৭।।
উপস্কারঃ
ননু চাবিশেষ ইতি বায়ুরয়মিত্যাকারানুমিতিন ভবতি কিন্তুষ্টদ্রব্যাতিরিক্তদ্রব্যাশ্রিতত্বেনৈব প্রকারেণেতি বিবক্ষিতং যদি, তদা তস্য দ্রব্যস্য বায়ুসংজ্ঞায়াং কিং মানমত আহ।
যস্মাদ্বিশেষাকারেণ নানুমিতিঃ তস্মাদ্বায়ুরিতি নাম আগমিকম্, আগমো বেদঃ ততঃ সিদ্ধমিত্যর্থঃ। “বায়ুর্বৈ ক্ষেপিষ্ঠা দেবতা” “বায়ব্যং শ্বেতং ছাগলমালভেত” “বায়ুশ্চ সৰ্ব্ব- বর্ণোহয়ং সৰ্ব্বগন্ধবহঃ শুচিঃ” ইত্যাদি-বিধিশেষীভূতার্থবাদাদেব বায়ুসংজ্ঞাধিগতিঃ। যথা,—
“যন্ন দুঃখেন সম্ভিন্নং ন চ গ্রস্তমনন্তরম্।”
ইত্যাদ্যর্থবাদাৎ স্বর্গসংজ্ঞায়াঃ।
“বসন্তে সৰ্ব্বশস্যানাং জায়তে পত্রশাতনম্।
মোদমানাশ্চ তিষ্ঠন্তি যবাঃ কণিশশালিনঃ।।”
ইত্যর্থবাদাৎ যবসংজ্ঞায়াঃ, “অম্বুজো বেতসঃ” ইত্যর্থবাদাৎ বেতসসংজ্ঞায়াঃ। “বরাহং গাবো হনুধাবন্তি” ইত্যর্থবাদাৎ বরাহসংজ্ঞায়াঃ, অন্যথা “স্বর্গকামো যজেত” ইত্যাদৌ বিশিষ্ট- সুখানুপস্থিতৌ যাগাদিষু স্বর্গার্থিনাং প্রবৃত্তির্ন স্যাৎ, ন স্যাচ্চ “যবময়শ্চরুর্ভবতি” “বৈতসে কটে প্রাজাপত্যং ধিনোতি” “বারাহী চোপানৎ” ইত্যাদৌ ম্লেচ্ছপ্রসিদ্ধিমনুরুধ্য প্রবৃত্ত্যনধ্যবসায়ঃ, ম্লেচ্ছা হি যববরাহবেতসশব্দান্ কঙ্গুবায়সজম্বুষু প্রযুঞ্জতে তথাচার্থবাদমন্তরেণ সন্দেহঃ স্যাদিত্যাগমাদেব তত্তদর্থপ্রতীতিরিতি ভাবঃ। নামমাত্রমাগমিকং দ্রব্যসিদ্ধিস্তু সামান্যতো দৃষ্টাদেব।। ১৭।।
.
সংজ্ঞা কৰ্ম্ম ত্বস্মদ্বিশিষ্টানাং লিঙ্গম্।।১৮।।
অনুবাদ
সংজ্ঞা এবং (পৃথিবী প্রভৃতি) জন্য বস্তু আমাদিগের অপেক্ষা বিশিষ্ট চেতনের জ্ঞাপক।। ১৮।।
ব্যাখ্যা
সংজ্ঞা নাম। সূত্রস্থ কর্ম্মশব্দের অনুবাদ জন্যবস্তু। ‘বিশিষ্ট’ অর্থ অধিকক্ষমতাযুক্ত। এই অধিকক্ষমতাযুক্ত চেতন স্বয়ং ঈশ্বর এবং শাস্ত্রকর্তা মহর্ষিগণ। সংজ্ঞাপ্রভৃতি দ্বারা ঈশ্বরাদির অনুমানপ্রণালী পরসূত্রে প্রদর্শিত হইবে।। ১৮।।
উপস্কারঃ
এবং বায়ুপ্রকরণং সমাপ্য তৎ কিমুন্মাদিজল্পিত-ডিখণ্ডবিখসংজ্ঞাবৎ বায়ুসংজ্ঞা- পীত্যাগমস্য সৰ্ব্বজ্ঞপ্রণীতত্বমুপপাদয়ন্ ঔপোদঘাতিকমীশ্বর প্রকরণমারিপ্সমান আহ।
তুশব্দঃ স্পর্শাদিলিঙ্গব্যবচ্ছেদার্থঃ সংজ্ঞনাম কৰ্ম্ম কাৰ্য্যং ক্ষিত্যাদি, তদুভয়মম্মদ্বিশিষ্টানাম্ ঈশ্বর-মহর্ষীণাং সত্ত্বেহপি লিঙ্গম্।।১৮।।
.
প্রত্যক্ষপ্রবৃত্তত্বাৎ সংজ্ঞাকৰ্ম্মণঃ।।১৯।।
অনুবাদ
সংজ্ঞা ও (পৃথিবী প্রভৃতি) জন্য বস্তু প্রত্যক্ষ প্রযোজ্য বলিয়া (তাহা অধিকক্ষমতাযুক্ত চেতনের জ্ঞাপক)।।১৯।।
ব্যাখ্যা
দেখা যায়, যে যখন নাম রাখে, তৎপূর্ব্বে নামযোগ্য বস্তুটী তাহার দর্শনযোগ্য থাকে। বাপ যখন পুত্রের নাম রাখেন, পুত্রটী তৎপূর্ব্বে পিতার প্রত্যক্ষযোগ্যই হইয়া থাকে। স্বর্গ অদৃশ্য এবং দেবতা প্রভৃতি আমাদের অপ্রত্যক্ষ, কিন্তু এই নাম যাঁহার প্রদত্ত তাঁহার অপ্রত্যক্ষ নহে; ইহা বুঝা যায়। অস্মদাদির অপ্রত্যক্ষ বস্তুকে যিনি প্রত্যক্ষ করিতে সক্ষম, তিনি যে আমাদিগের অপেক্ষা ‘বিশিষ্ট’ তাহা আর বলিতে হইবে কেন? সেই বিশিষ্ট অর্থাৎ অধিকক্ষমতাযুক্ত আত্মাই মহর্ষি এবং ঈশ্বর। দেখা যায়, তন্তুবায় বস্ত্ৰ নির্ম্মাণ করিতে হইলে, সূত্রগুলি প্রত্যক্ষ করে। পরিদৃশ্যমান কর্তৃত্ব স্থলে সৰ্ব্বত্রই এই নিয়ম যে, যাহা অবয়বী তাহার চেতন কৰ্ত্তা আছে এবং সেই কর্ত্তা অবয়বীর অবয়ব প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। সুতরাং যে যে জন্য বস্তু অস্মদাদি ব্যক্তি নির্ম্মাণ করিতে পারে না, তাহারও চেতন কৰ্ত্তা আছেন এবং তিনি সেই—জন্য-বস্তুর অবয়ব প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। ইহা তো স্বীকার করিতে হইবে; তাহা হইলেই আমাদিগের অপেক্ষা ‘বিশিষ্ট’ চেতনের অস্তিত্ব স্বীকার করিতে হইল; সেই চেতনই ঈশ্বর। যখন মহর্ষিগণের উৎপত্তি হয় নাই, কল্পারম্ভে সেই সময়ে যে দ্ব্যণুক উৎপন্ন হয়—তাহার চেতন কর্তা ঈশ্বরভিন্ন আর কেহ হইতে পারেন না। এই রূপে ঈশ্বরের অনুমান করিতে হয়।। ১৯।।
উপস্কারঃ
কথমেতদিত্যত আহ।
অত্রাপি সংজ্ঞা চ কৰ্ম্ম চেতি সমাহারদ্বান্দ্ব্বাদেকবদ্ভাবঃ সংজ্ঞাকÍর্জগৎকর্ত্তশ্চাভেদসূচনার্থঃ। তথাহি যস্য স্বৰ্গাপূর্ব্বাদয়ঃ প্রত্যক্ষাঃ স এব তত্র স্বর্গাপূর্ব্বাদিসংজ্ঞাঃ। কৰ্ত্তুমীষ্টে প্রত্যক্ষে চৈত্র-মৈত্রাদিপিণ্ডে পিত্রাদেশ্চৈত্রমৈত্ৰাদিসংজ্ঞানিবেশনবৎ এবঞ্চ ঘটপটাদিসংজ্ঞানিবেশনমপি ঈশ্বরসঙ্কেতাধীনমেব যঃ শব্দো যত্রেশ্বরেণ সঙ্কেতিতঃ স তত্র সাধুঃ, যথা যা কাচিদোষ- ধিনকুলদংষ্ট্রাগ্রস্পৃষ্টা সা সর্ব্বাপি সর্পবিষং হন্তীত্যেতাদৃশী সংজ্ঞা অস্মদাদিবিশিষ্টানাং লিঙ্গ- মনুমাপকং যাপি মৈত্রাদিসংজ্ঞা পিত্রা পুত্রে ক্রিয়তে সাপি “দ্বাদশেহহনি পিতা নাম কুৰ্য্যাৎ” ইত্যাদি-বিধিনা নূনমীশ্বরপ্রযুক্তৈব তথাচ সিদ্ধং সংজ্ঞায়া ঈশ্বরলিঙ্গত্বম্। এবং কর্ম্মাপি কার্য্যমপীশ্বরে লিঙ্গং তথাহি ক্ষিত্যাদিকং সকর্তৃকং কাৰ্য্যত্বাৎ ঘটবদিতি। অত্র যদ্যপি শরীরাজন্যং জন্যং বা জন্যপ্রযত্নাজন্যং জন্যং বা সকর্তৃকত্বাসকর্তৃকত্বেন বিবাদাধ্যাসিতং বা সন্দিহ্য- মানকর্তৃকত্বং বা ক্ষিত্যাদিত্বেন ন বিবক্ষিতম্ অদৃষ্টদ্বারা ক্ষিত্যাদেরপি জন্যপ্রযত্নজন্যত্বাৎ বিবাদসন্দেহয়োশ্চাতিপ্রসক্তত্বেন পক্ষতানবচ্ছেদকত্বাৎ, কিঞ্চ সকর্তৃকত্বমপি যদি কৃতিমজ্জন্যত্বং তদাস্মদাদিনা সিদ্ধসাধনম্, অস্মদাদিকৃতের প্যদৃষ্টদ্বারা ক্ষিত্যাদিজনকত্বাৎ উপাদানগোচর- কৃতিমজ্জন্যত্বেঽপি তথা, অস্মদাদিকৃতেরপি কিঞ্চিদুপাদানগোচরত্বাৎ, কার্য্যত্বমপি যদি প্রাগভাবপ্রতিযোগিত্বং তদা ধ্বংসে ব্যভিচার ইতি তথাপি ক্ষিতিঃ সকর্তৃকা কাৰ্য্যত্বাৎ। অত্র চ সকর্তৃকত্বমদৃষ্টাদ্বারককৃতিমজ্জন্যত্বং কাৰ্য্যত্বঞ্চ প্রাগভাবাবচ্ছিন্নসত্তাপ্রতিযোগিত্বং নচাঙ্কুরাদৌ সন্দিগ্ধানৈকান্তিকত্বং সাধ্যাভাবনিশ্চয়ে হেতুসদসত্ত্বসন্দেহে সন্দিগ্ধানৈকান্তিকত্বস্য দোষত্বাৎ। অন্যথা, সকলানুমানোচ্ছেদপ্রসঙ্গাৎ, ন চ পক্ষাতিরিক্তে দোষোঽয়মিতি বাচ্যং রাজাজ্ঞাপত্তেঃ নহি দোষস্যায়ং মহিমা যৎ পক্ষং নাক্রামতি তস্মাদঙ্কুর স্ফুরণদশায়াং নিশ্চিতব্যাপ্তিকেন হেতুনা তত্ৰ সাধ্যসিদ্ধের প্রত্যূহত্বাৎ ক্ব সন্দিগ্ধানৈকান্তিকতা তদস্ফুরণদশায়ান্তু সুতরামিতি সংক্ষেপঃ।। ১৯।।
.
নিষ্ক্রমণং প্রবেশনমিত্যাকাশস্য লিঙ্গম্।। ২০।।
অনুবাদ
নিষ্ক্রমণ এবং প্রবেশ প্রভৃতি,—আকাশের অনুমাপক।। ২০।।
ব্যাখ্যা
আকাশ অবকাশ। আকাশ না থাকিলে কোন স্পর্শবিশিষ্ট দ্রব্যের নির্গম, প্রবেশ, এদিকে ওদিকে গমন—ইত্যাদি হইত না। মনে কর, প্রাচীর ব্যবধান থাকিলে, তাহা ভেদ করিয়া লোকে যাইতে পারে না, বায়ুসঞ্চারেও ব্যাঘাত হয়; প্রাচীর না থাকিলে অবকাশ বা আকাশ; তাহাতে মনুষ্যের নির্গম, প্রবেশ, বায়ুসঞ্চার কিছুতেই ব্যাঘাত ঘটে না। সুতরাং নির্গম-প্রবেশাদি দেখিয়াই আকাশের অস্তিত্ব অনুমান করিতে হয়। অর্থাৎ নির্গমপ্রবেশাদি জন্য যে সংযোগ-বিভাগ তাহা স্পর্শাভাববদ্রব্যের সহিত ঘটিয়া থাকে। কেন না সেই সংযোগ-বিভাগ ও স্পর্শবদ্রব্যের সহিত সংযোগ-বিভাগ একপ্রকার নহে। এইরূপে অনুমান করিতে হয়। এই অনুমান দ্বারা যে স্পর্শাভাববৎ দ্রব্য সিদ্ধ হয়, তাহাই আকাশ। ইহা সাংখ্যমত।। ২০।।
উপস্কারঃ
এবং সূত্রাভ্যামীশ্বরপ্রকরণং সমাপ্যাকাশপ্রকরণমারিপ্সমান আহ।
ইতিশব্দঃ প্রকারার্থঃ, উৎক্ষেপণাদীন্যপি কৰ্ম্মাণি সংগৃহাতি। স্পর্শবদ্রব্যসঞ্চারো নিষ্ক্রমণং প্রবেশনঞ্চ তদকাৰ্য্যস্যাকাশস্য লিঙ্গমিতি সাখ্যাঃ।।২০।।
.
তদলিঙ্গমেকদ্রব্যত্বাৎ কৰ্ম্মণঃ।।২১।।
অনুবাদ
তাহা অনুমাপক নহে; কেন না, কৰ্ম্ম একদ্রব্য অর্থাৎ—কর্ম্মের আশ্রয় এক একটী দ্রব্য মাত্ৰ।। ২১।।
ব্যাখ্যা
পূৰ্ব্বসূত্রোক্ত সাংখ্যমত এই সূত্র দ্বারা খণ্ডিত হইতেছে। মহর্ষি কণাদ বলিতেছেন, নির্গম-প্রবেশাদি আকাশের অনুমাপক হইতে পারে না। কেন না, নির্গমপ্রবেশাদি কৰ্ম্ম একৈক দ্রব্যে অবস্থিত। যাহা নির্গত হয়, যাহা প্রবিষ্ট হয় সেই সকল দ্রব্যে নির্গমপ্রবেশাদি কৰ্ম্ম থাকে, সেই কর্ম্মের সহিত আকাশের ব্যাপ্তিনিৰ্ব্বাহক কোন সম্বন্ধ নাই। ঐ সকল কৰ্ম্ম যাহাতে থাকে, তাহাই. ঐ সকল কর্ম্মের সমবায়ী কারণ। আকাশ- কর্ম্মের সমবায়ী কারণ নহে। আকাশ যে অসমবায়ী কারণ ও নিমিত্ত কারণ নহে, তাহা পরসূত্রদ্বয়ে মীমাংসিত হইবে; কার্য্য-কারণসম্বন্ধ নাই, অন্যবিধ উপযুক্ত সম্বন্ধও নাই, সুতরাং নির্গমপ্রবেশাদি আকাশের অনুমাপক হইবে কিরূপে? যেরূপ অনুমানের আকার উপরে প্রদর্শিত হইয়াছে, তদ্দ্বারা আকাশ সিদ্ধ হয় না, কেন না আত্মাও স্পর্শাভাবব দ্রব্য। সুতরাং আত্মা দ্বারা অনুমিতি চরিতার্থ হইলে, অতিরিক্ত পদার্থ সিদ্ধি হইতে পারে না। অতএব নির্গমপ্রবেশ আকাশের অনুমাপক হইতে পারে না।।২১।।
উপস্কারঃ
তদেতদ্দূষয়িতুমাহ।
নিষ্ক্রমণপ্রবেশনাদিকৰ্ম্ম ন তাবৎ সমবায়িকারণতয়া আকাশমনুমাপয়তি কৰ্ম্মণ একদ্রব্যত্বাৎ, একমাত্রমূর্তসমবায়িকারণকত্বাৎ ন বা কৰ্ম্মাপি ব্যাসজ্যবৃত্তীত্যুত্ত অমূৰ্ত্তবৃত্তীতি।। ২১।।
.
কারণান্তরানুক্লপ্তিবৈধর্ম্ম্যাচ্চ।।২২।।
অনুবাদ
অসমবায়িকারণ লক্ষণের অলক্ষ্যত্ব হেতু (আকাশকে নির্গমনাদির অসমবায়িকারণ বলা যায় না)।। ২২।।
ব্যাখ্যা
কার্য্যের যে সমবায়িকারণ তদ্ভিন্ন হইয়া (“সামানাধিকরণ্যসম্বন্ধাবচ্ছিন্নজনকতা, যাহাতে আছে” এরূপ বলিলে, ‘তদ্ভিন্ন হইয়া’ আর বলিতে হয় না) তাহার সহিত সমানাধিকরণ—সমবায়সম্বন্ধসাহায্য একাশ্রয়ে যে অবস্থিত, এবং কার্য্যের সহিত সমবায়সম্বন্ধসাহায্যে একাশ্রয়ে যে অবস্থিত হয়, সে যদি কারণ হয় তবেই তাহাকে সেই কার্য্যের অসমবায়িকারণ বলা যায়। তন্তুর রূপ বস্ত্ররূপের অসমবায়িকারণ, বস্ত্ররূপের সমবায়ী কারণ বস্ত্র, ঐ বস্ত্র এবং তন্তুর রূপ, তন্তুতে সমবায়সম্বন্ধসাহায্যে অবস্থিত। সুতরাং তাহা প্রথমোক্ত অসমবায়িকারণ হইল। জ্ঞানের অসমবায়িকারণ আত্ম- মনঃসংযোগ,—তাহা জ্ঞানের সহিত একাশ্রয়ে সমবায়সম্বন্ধে অবস্থিত, তাহা দ্বিতীয় প্রকার অসমবায়িকারণ। এখন বুঝিয়া দেখ—দুইটী দ্রব্য যখন কোন একটী বস্তুতে এককালে সমবায়সম্বন্ধে থাকে না, সুতরাং দ্রব্য প্রথমোক্ত অসমবায়ী কারণ হইতেই পারে না। অবয়বী দ্রব্যের উৎপত্তির পূর্ব্বে, গুণ, কৰ্ম্ম অবয়বে প্রত্যক্ষসিদ্ধ বলিয়া অবয়বী দ্রব্যকে অবয়বস্থিত গুণাদির কারণ বলা যায় না। সুতরাং দ্রব্য, দ্বিতীয় অসমবায়িকারণও হইতে পারে না। ফলতঃ দ্রব্য অসমবায়িকারণলক্ষণের লক্ষ্য হয় না। দ্রব্যত্ব এবং অসমবায়িকারণত্ব পরস্পর বিরুদ্ধধর্ম্ম, আকাশে যখন দ্রব্যত্ব আছে সুতরাং অসমবায়িকারণত্ব থাকিবেই না।। ২২।।
উপস্কারঃ
ননু চাসমবায়িকারণতয়ৈবাকাশমনুমাপয়িয্যতি নিষ্ক্রমণপ্রবেশনাদীত্যত আহ।
অনুক্লপ্তির্লক্ষণম্ অনুকল্পতে জ্ঞাপ্যতেহনেনেতি ব্যুৎপত্ত্যা, কারণান্তরস্য অসমবায়িকারণস্য যানু কু প্তিলক্ষণং তদ্বৈধৰ্ম্মাদিত্যর্থঃ। দ্রব্যন্তাবদসমবায়িকারণং ন ভবত্যেব, অসমবায়িকারণতা চ কারণৈকার্থপ্রত্যাসত্ত্যা কার্য্যৈকার্থপ্রত্যাসত্ত্যা চ প্রথমা তন্তুরূপাণা পটরূপং প্রতি, ইয়ঞ্চাসমবায়িকারণতা মহতীতি সংজ্ঞা লভতে গুরুপ্রতিপত্তিত্বাৎ, দ্বিতীয়া চ যথা আত্মমনঃসংযোগস্য জ্ঞানাদিকং প্রতি ইয়ঞ্চাসমবায়িকারণতা লম্বীতি সংজ্ঞাং লভতে লঘুপ্রতিপত্তিকত্বাৎ, আকাশস্য তু নিষ্ক্রমণ প্রবেশনাদৌ কৰ্ম্মণি সমবায়িকারণতা নাপ্যসমবায়িকারণতা, তথাচ ন কর্ম্মাকাশসত্ত্বে লিঙ্গমিতি।। ২২।।
.
সংযোগাদভাবঃ কৰ্ম্মণঃ।।২৩।।
অনুবাদ
সংযোগ প্রযুক্ত—(বাধা হেতু) কর্ম্মের (নির্গম-প্রবেশাদির) অভাব হয়।। ২৩।।
ব্যাখ্যা
যাইতে যাইতে প্রাচীরে সংযোগ হইল, সেই সংযোগ, বেগাদির প্রতিবন্ধক, সুতরাং নির্গমপ্রবেশাদি ঘটে না। নতুবা আকাশের অভাবে যে নির্গমপ্রবেশাদি ঘটে না তাহা নহে; অতএব আকাশকে নির্গমপ্রবেশাদির নিমিত্ত কারণও বলিতে পার না। আকাশ ও অবকাশ এক বস্তু নহে, প্রাচীরের অভ্যন্তরেও আকাশ আছে। আকাশকে নির্গম প্রভৃতি কর্ম্মের নিমিত্ত কারণ বলিলে এবং প্রাচীরসংযোগাদিকে বেগ প্রভৃতির প্রতিবন্ধক না বলিলে প্রাচীরসত্ত্বেও নির্গমপ্রবেশ ঘটিতে কোন প্রতিবন্ধক থাকিত না। আর প্রাচীরসংযোগকে বেগের প্রতিবন্ধক বলিলে বেগের অভাবেই কর্ম্মের অভাব বলিতে পারি, আকাশকে নিমিত্ত কারণ স্বীকার করা নিষ্প্রয়োজন। অতএব নির্গমাদির প্রতি আকাশ কোনপ্রকার কারণই নহে।। ২৩।।
উপস্কারঃ
ননু নিমিত্তকারণমস্ত কৰ্ম্মণ্যাকাশম্, দৃশ্যতে হ্যাকাশে পক্ষিকাণ্ডাদীনাং সঞ্চরণমত আহ।
মূর্ত্তসংযোগেন কর্ম্মকারণস্য বেগগুরুত্বাদেঃ প্রতিবন্ধাৎ কৰ্ম্মণোহভাবোহনুৎপাদো ন ত্বাকাশাভাবাৎ তস্য ব্যাপকত্বাৎ, তস্মাদাকাশান্বয়োহন্যথাসিদ্ধ এব নাকাশনিত্তিতা সাধয়তীত্যর্থঃ।।২৩।।
.
কারণগুণপূর্ব্বকঃ কাৰ্য্যগুণো দৃষ্টঃ।।২৪।।
অনুবাদ
দেখা যায়, কারণের গুণ কার্য্যের গুণের জনক।। ২৪।।
ব্যাখ্যা
কিন্তু শব্দ আকাশের অনুমাপক এই সিদ্ধান্ত প্রদর্শনের জন্য নিম্নলিখিত বিচার উত্থাপিত হইয়াছে। পৃথিবী প্রভৃতি জন্য দ্রব্যে যে বিশেষগুণ আছে, তাহা তদীয় সমবায়িকারণের গুণ হইতে সম্ভূত। বস্ত্রের শুক্লরূপ তন্তুর শুক্লরূপ হইতে সম্ভূত, ইহা তো প্রত্যক্ষসিদ্ধ। কিন্তু শব্দ থাকিতে পারে এমন জন্য দ্রব্য তো মিলিতেছে না। অতএব শব্দ কাহার গুণ বিচার করিয়া একবার দেখা যাক।। ২৪।।
উপস্কারঃ
এবং সাঙ্খ্যমতে দূষিতে শব্দমাকাশে লিঙ্গমুপপাদয়িষ্যন্ পরিশেষানুমানায় পীঠমারচয়ন্নাহ।
পৃথিব্যাদিলক্ষণে কার্য্যে যে বিশেষগুণা রূপাদয়স্তে কারণগুণপূর্ব্বকা দৃষ্টাঃ শব্দোঽপি বিশেষগুণঃ জাতিমত্ত্বে সতি বাহ্যৈকেন্দ্ৰিয়মাত্রগ্রাহ্যত্বাৎ রূপাদিবৎ। তথাচ তাদৃশং কাৰ্য্য নোপলভ্যতে যত্র কারণগুণপূর্ব্বকঃ শব্দঃ স্যাদিত্যর্থঃ।। ২৪।।
.
কার্য্যান্তরা প্রাদুর্ভাবাচ্চ শব্দঃ স্পর্শবতামগুণঃ।।২৫।।
অনুবাদ
শব্দ, স্পর্শবিশিষ্ট (দ্রব্য) গণের গুণ নহে, কেন না কার্য্যান্তর অর্থাৎ সেই শব্দের সজাতীয় শব্দ (অবয়বে) অনুভূত হয় না।। ২৫।।
ব্যাখ্যা
স্পর্শবিশিষ্ট দ্রব্য পৃথিবী, জল, তেজ ও বায়ু দুইভাগে বিভক্ত,—অবয়ব ও অবয়বী। অবয়বে যে গুণ থাকে, সেইরূপ গুণ অবয়বীতেও থাকে, অবয়বীতে যে গুণ থাকে সেইরূপ গুণ অবয়বে থাকে; ইহা দেখা যায় তন্তুরূপ এবং বস্ত্ররূপ ইহার প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত। শব্দ যদি ঐ সকল দ্রব্যের গুণ হইত, তাহা হইলে, এক প্রকার শব্দ অবয়ব এবং অবয়বীতে থাকিত, পরন্তু তাহা তো নাই। মৃদঙ্গের শব্দ মৃদঙ্গের অবয়বে নাই, বীণার শব্দ বীণাবয়বে নাই। অতএব শব্দ পৃথিবী প্রভৃতি দ্রব্যচতুষ্টয়ের গুণ নহে।। ২৫।।
উপস্কারঃ
ননু বীণাবেণুমৃদঙ্গশঙ্খপটহাদৌ কার্য্যে শব্দ উপলভ্যতে তথাচ তৎকারণগুণপূর্ব্বকঃ স্যাদত আহ।
ভবেদেবং যথা তন্তুকপালাদিষু রূপরসাদ্যনুভূয়তে তৎসজাতীয়ঞ্চ রূপরসাদ্যন্তরং পটঘটাদাবুপলভ্যতে, তথা বীণাবেণুমৃদঙ্গাদ্যবয়বেষু যঃ শব্দ উপলব্ধস্তৎসজাতীয়শ্চেৎ বীণাবেণুমৃদঙ্গাদ্যবয়বিন্যুপলভ্যতে ন চৈবম্, প্রত্যুত নিঃশব্দৈরেবাবয়বৈবীর্ণাদ্যারম্ভদর্শনাৎ নীরূপৈস্তু তন্তুকপালাদিভিঃ পটঘটাদ্যারম্ভস্যাদর্শনাৎ, কিঞ্চ যদি শব্দঃ স্পর্শবতাং বিশেষগুণঃ স্যাৎ তদা তত্র তার-তারতর-মন্দ-মন্দতরাদিভাবো নানুভূয়তে। নহ্যেকাবয়ব্যাশ্রিতা রূপাদয়ো বৈচিত্র্যেণানুভূয়ন্তে তস্মান্ন স্পর্শবদ্বিশেষগুণঃ শব্দঃ।।২৫।।
.
পরত্র সমবায়াৎ প্রত্যক্ষত্বাচ্চ নাত্মগুণো ন মনোগুণঃ।। ২৬।।
অনুবাদ
শব্দ আত্মার গুণ বা মনের গুণ নহে, কেন না, তাহা অন্যত্র সমবেত, (আত্মভিন্ন দ্রব্যে সমবায়সম্বন্ধে অবস্থিতরূপে অনুভূত হয়) এবং বাহ্য প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত।। ২৬।।
ব্যাখ্যা
শব্দ আত্মার গুণ হইলে, শব্দ শ্রবণ করি এইরূপ অনুভব হইত না। পরন্তু যেমন আমি সুখী এইরূপ অনুভব হয় সেইরূপ আমি শব্দবান্ এইরূপ অনুভব হইত। এবং শব্দ আত্মগুণ হইলে, বধির ব্যক্তিও শব্দ অনুভব করিতে পারিত। আত্মগুণ তো আর বাহ্য ইন্দ্রিয় দ্বারা গৃহীত হয় না, মনের দ্বারাই তাহা গৃহীত হয়। মনের গুণ হইলে তাহার প্রত্যক্ষ হইত না, মনের কোন গুণই প্রত্যক্ষগম্য নহে; এই যুক্তিতে শব্দকে দিক্ বা কালের গুণও বলা যায় না, দিক্-কাল-গুণও প্রত্যক্ষগম্য হয় না। এখন বুঝা গেল, শব্দ—পৃথিবী, জল, তেজ, বায়ু, আত্মা, মনঃ, দিক্ এবং কালের গুণ নহে।। ২৬।।
উপস্কারঃ
নন্বাত্মগুণো মনোগুণো বা শব্দো ভবিষ্যতীত্যত আহ।
শব্দো যদ্যাত্মগুণঃ স্যাৎ তদাহং সুখী, যতে জ্ঞানে ইচ্ছামীত্যাদিবৎ অহং পূৰ্য্যে অহং বাদ্যে অহং শব্দবানিত্যাদিধীঃ স্যাৎ। ন ত্বেবমস্তি, কিন্তু শঙ্খঃ পূৰ্য্যতে, বীণা বাদ্যতে ইতি প্রতিয়ন্তি লৌকিকাঃ। কিঞ্চ শব্দো নাত্মগুণঃ বাহ্যেন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বাৎ রূপাদিবৎ, অপি চ শব্দো যদ্যাত্মযোগ্যবিশেষগুণঃ স্যাদ্বধিরেণাপ্যুপলভ্যেত দুঃখাদিবৎ। তস্মাৎ সুষ্ঠুক্তং পর সমবায়াদিতি। অমনোগুণত্বে হেতুমাহ প্রত্যক্ষত্বাদিতি। নাত্মমনসোগুণ ইতি সমাসে কর্তব্যে যদসমাসকরণং তেন তুল্যন্যায়তয়া অপ্রত্যক্ষত্বাদিত্যনেনৈব হেতুনা দিক্কালয়োরপি গুণত্বং শব্দস্য প্রতিষিদ্ধমিতি সূচিতম্।। ২৬।।
.
পরিশেষাল্লিঙ্গমাকাশস্য।।২৭।।
অনুবাদ
(শব্দ) পরিশেষাধীন আকাশের অনুমাপক।। ২৭।।
ব্যাখ্যা
অবশেষে শব্দ আকাশেরই অনুমাপক হইয়া উঠিল। কেমন করিয়া? তাহা বলিতেছি; বুঝিলাম শব্দ বিশেষ গুণ, কেন না তাহা একটী মাত্র বহিরিন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য অথচ অভাবাদিস্বরূপ নহে। রূপ, স্পর্শ ইত্যাদি ইহার দৃষ্টান্ত। শব্দ অবশ্য কোন দ্রব্যে থাকে, কেন না তাহা গুণ, এই অনুমান হইলে এবং শব্দ কথিত অষ্ট দ্রব্যের গুণ নহে এইরূপ নিশ্চয় হইলে, অবশেষে শব্দগুণ দ্বারা এই অষ্টদ্রব্যাতিরিক্ত একটী দ্রব্য সিদ্ধ হয়। তাহাই আকাশ, সুতরাং আকাশের অস্তিত্বসিদ্ধি শব্দ হইতেই হইয়া থাকে।। ২৭।।
উপস্কারঃ
যদর্থময়ং পরিশেষস্তদাহ।
শব্দ ইতি শেষঃ। অত্রাপি শব্দঃ ক্বচিদাশিতো গুণত্বাৎ রূপাদিবদিতি সামান্যতোদৃষ্টাদষ্টদ্রব্যাতিরিক্তদ্রব্যসিদ্ধিঃ। গুণশ্চায়ং বাহ্যৈকেন্দ্রিয়গ্রাহ্যজাতীয়ত্বাৎ রূপাদিবৎ, অনিত্যত্বে সতি বিভুসমবেতত্বাৎ জ্ঞানাদিবৎ। অনিত্যত্বঞ্চ সাধয়িষ্যতে। পরিশেষসিদ্ধস্য দ্রব্যস্যাবয়বকল্পনায়াং প্রমাণাভাবান্নিত্যত্বং সর্ব্বত্র শব্দোপলব্ধেবিভুত্বম্।। ২৭।।
.
দ্রব্যত্বনিত্যত্বে বায়ুনা ব্যাখ্যাতে।। ২৮।।
অনুবাদ
(আকাশের) দ্রব্যত্ব এবং নিত্যত্ব বায়ু (পরমাণু) দ্বারা বিবৃত হইয়াছে।। ২৮।।
ব্যাখ্যা
যেমন বায়ুপরমাণু গুণবান্ বলিয়া দ্রব্য, দ্রব্যে অনাশ্রিত বলিয়া নিত্য দ্রব্য—ইহা পূৰ্ব্বে কথিত হইয়াছে। সেইরূপ আকাশও গুণবান্ বলিয়া দ্রব্য এবং দ্রব্যে অনাশ্রিত বলিয়া নিত্য দ্রব্য ইহা জানিবে।। ২৮।।
উপস্কারঃ
শব্দলিঙ্গস্য দ্রব্যস্য দ্রব্যত্বনিত্যত্বে অতিদেশেন সাধয়ন্নাহ।
অদ্রব্যবত্ত্বাদ্যথা বায়োর্নিত্যত্বং তথাকাশস্যাপি, গুণবত্ত্বাৎ যথা বায়োদ্রব্যত্বং তথাকাশস্যাপীত্যর্থঃ।। ২৮।।
.
তত্ত্বম্ভাবেন।।২৯।।
অনুবাদ
সত্তা দ্বারা (আকাশের) তত্ত্ব (একত্ব) কথিত হইয়াছে।। ২৯।।
ব্যাখ্যা
সত্তা যেমন এক, আকাশও সেইরূপ এক জানিবে।। ২৯।।
উপস্কারঃ
তৎ কি বহুন্যাকাশানি একমেব বেত্যত আহ।
ব্যাখ্যাতমিতি বিপরিণতেনান্বয়ঃ। ভাবঃ সত্তা সা যথৈকা তথাকাশমপ্যে- কমেবেত্যর্থঃ।।২৯।।
.
শব্দলিঙ্গাবিশেষাদ্বিশেষলিঙ্গাভাবাচ্চ।। ৩০।।
অনুবাদ
যেহেতু শব্দস্বরূপ অনুমাপক একপ্রকার এবং ভেদসাধক হেতুও নাই, (অতএব আকাশ এক, নানা নহে)।। ৩০।।
ব্যাখ্যা
সত্তাসাধক হেতুর একরূপত্ব এবং তদীয় ভেদসাধক হেতুর অভাববশতঃ সত্তা যেরূপ এক বলিয়া নিশ্চিত হইয়াছে, তদ্রূপ এখানেও আকাশসাধক হেতু একরূপ এবং আকাশভেদসাধক হেতু নাই, এই কারণে আকাশও এক।। ৩০।।
উপস্কারঃ
নম্বনুগতপ্রত্যয়-মহিন্না সত্তায়া একত্বং সিদ্ধম্ আকাশে কথমেকত্বং তদ্দৃষ্টান্তেন সেৎস্যতীত্যত আহ
তত্ত্বমাকাশস্য সিদ্ধমিত্যর্থঃ। বৈভবে সতি সৰ্ব্বের্ষাং শব্দানাং তদেকাশ্রয়তয়ৈবো- পপত্তাবাশ্রয়ান্তরকল্পনায়াং কল্পনাগৌরবপ্রসঙ্গঃ অন্যদপি যদাকাশং কল্পনীয়ং তত্রাপি শব্দ এব লিঙ্গং তচ্চাবিশিষ্টং ন চ বিশেষসাধকং ভেদসাধকং লিঙ্গান্তরমস্তি, আত্মনাং যদ্যপি জ্ঞানাদিকমবিশিষ্টমেব লিঙ্গং তথাপি ব্যবস্থাতো লিঙ্গান্তরাদাত্মনানাত্বসিদ্ধিরিতি বক্ষ্যতে।। ৩০।।
.
তদনুবিধানাদেকপৃথত্বঞ্চেতি।। ৩১।।
অনুবাদ
একত্বের নিয়তানুগত্যবশতঃ এক-পৃথক্ত্বও (আকাশধৰ্ম্ম) ইতি।।৩১।।
ব্যাখ্যা
যাহাতে একত্ব সংখ্যা থাকে এক-পৃথক্তও তাহাতে থাকে। আকাশ যখন এক, তখন একপৃথত্ত্বও তাহাতে আছে, দ্বিপৃথক্ত্বাদি নাই। এক-পৃথত্ত্বের কথা আলোচিত হইবে। অনুবাদে যে ‘ইতি’ শব্দ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহা মূলেরই অনুলিপি। ইতি শব্দ দ্বারা ‘আহ্নিক’ সমাপ্তি সূচিত হইয়াছে।। ৩১।।
দ্বিতীয়াধ্যায়ে প্রথম আহ্নিক সমাপ্ত।
উপস্কারঃ
নম্বাকাশস্য একত্বং তাবদস্তু, বৈভবাৎ পরমমহত্ত্বমপ্যস্ত, শব্দাসমবায়িকারণত্বাৎ সংযোগবিভাগাবপি স্যাতাম্ একপৃথকৃত্বং কথমত আহ।
নিয়মেনৈকপৃথক্ত্বমেকত্বমনুবিধত্তে ইত্যেকপৃথক্ত্বসিদ্ধিঃ, ইতিরাহ্নিকপরিসমাপ্তেী, মানসপ্রত্যক্ষাবিষয়বিশেষগুণবদ্ৰব্যলক্ষণমাহ্নিকার্থঃ। তেন পৃথিব্যপ্তেজোবায়ুাকাশানাং প্রসঙ্গত ঈশ্বরাত্মনোশ্চ লক্ষণমস্মিন্নাহ্নিকে। তেন চতুৰ্দ্দশগুণবতী পৃথিবী তে চ গুণা রূপরসগন্ধ- স্পর্শসংখ্যা পরিমাণ-পৃথত্ব-সংযোগ-বিভাগ-পরত্বাপরত্ব-গুরুত্বদ্রবত্বসংস্কারাঃ। তাবন্ত এব গন্ধমপাস্য স্নেহেন সহাপাম্। এত এব রসগন্ধস্নেহগুরুত্বান্যপাস্য তেজসঃ। গন্ধরসরূপগুরুত্ব- স্নেহদ্রবত্বান্যপাস্য বায়োঃ। শব্দেন সহ সঙ্খ্যাদিপঞ্চগুণবত্বমাকাশস্য। সঙ্খ্যাদিপঞ্চকমাত্র দিক্কালয়োঃ। পরত্বাপরত্ববেগসহিতং সঙ্খ্যাদিপঞ্চকং মনসঃ। সঙ্খ্যাদিপঞ্চকং জ্ঞানেচ্ছাপ্রযত্নাশ্চেশ্বরস্য।। ৩১।।
ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে দ্বিতীয়াধ্যায়স্যাদ্যমাহ্নিকম্।