পূর্বখণ্ড— সংলিপ্ত
মধ্যখণ্ড- সংশপ্তক
উত্তরখণ্ড- সংখ্যাপন

দশম পরিচ্ছেদ— বার্গান্ডি

দশম পরিচ্ছেদ— বার্গান্ডি

ডিসেম্বর ৫, ১৮৯৪, ভাইলিমা, সামোয়া

অষ্টাদশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ইউরোপীয় জাহাজিরা নতুন নতুন দেশের সন্ধানে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। তাঁদেরই একজন, এক ফরাসি, লুই আঁতোয়ান ডি বোগেনভিল, অস্ট্রেলিয়ার থেকে কিছু দুরে একঝাঁক নতুন দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। অবশ্য আবিষ্কার বলতে তথাকথিত সভ্যসমাজের আবিষ্কার। তিনি এই দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখলেন নেভিগেটর দ্বীপপুঞ্জ, যা পরে পলিনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ নাম নেয়। তারপর যা হয় আর কি। দলে দলে ইউরোপীয়ান মিশনারি আর ব্যবসায়ীরা এসে ছেয়ে ফেলল এই দ্বীপ। আমেরিকাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও একটা দিক দখল করে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করল। মাঝখান থেকে দ্বীপের আদিবাসীদের লবেজান দশা। একের পর এক বড়োলোক ইউরোপীয় এসে তাদের জমি কিনে নিচ্ছে, আর তারা প্রান্তিক জনজাতিতে পরিণত হচ্ছে। এমনতর অবস্থায় প্রায় সবার নজর এড়িয়ে ১৮৮৯-তে সামোয়ায় ইক্যুয়েটর নামে এক জাহাজ এসে থামল। জাহাজ থেকে অনেকের সঙ্গে নেমে এলেন এক ঢ্যাঙা, অসুস্থ সাহেব। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে তীব্র শারীরিক কিংবা মানসিক উদ্বেগে কেমন যেন পাগলপারা হয়ে গেছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী। হিসেবমতো এই সময় তাঁর লন্ডনেই থাকা উচিত। তাঁর লেখা শেষ নভেলা “দ্য স্ট্রেঞ্জ কেস অফ ডাক্তার জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড” শুধু বিক্রিতেই আকাশ ছোঁয়নি, সর্বকালের সেরা ভয়ের বইয়ের তালিকায় নাম ঢুকিয়ে ফেলেছে। লন্ডন থেকে আমেরিকার ব্রডওয়ে, সর্বত্র রমরমিয়ে চলছে তাঁর নাটক। সবাই একটিবারের জন্য দেখতে চাইছেন লেখককে। আর সেই লেখক সবার চোখ এড়িয়ে সামোয়ার ভাইলিমাতে ৩১৩ একর জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকা শুরু করলেন। এক অর্থে ভাইলিমায় থাকা দ্বীপান্তর হওয়া কয়েদির সামিল। সভ্য জগতের সঙ্গে সংযোগ বলতে একখানা মাত্র জাহাজ, যা মাসে একবার সানফ্রান্সিস্কো থেকে সিডনি যাবার পথে মাসকাবারি খোরাক, ওষুধ ইত্যাদি নামিয়ে দিয়ে যায়। খ্যাতির চরম সীমায় লুইয়ের এইভাবে পালিয়ে আসার কারণ কেউ জানে না। স্ত্রী ফ্যানিও না। তিনি শুধু এটুকুতেই খুশি, এখানে এসে লুই আবার আগের মতো ফূর্তিবাজ হয়ে গেছেন। স্বাস্থ্যও ফিরেছে অনেকটা। কিন্তু এই একলা জীবন ফ্যানির মনে ধীরে ধীরে চেপে বসতে থাকে। ফ্যানি ভাবেন এবার তিনি নিজেই হয়তো পাগল হয়ে যাবেন। পাঁচ বছর এভাবেই কেটে গেল দুজনের। লুই লম্বা লম্বা চিঠি লেখেন পরিচিতদের, কবিতা লেখেন। কিন্তু যে বইয়ের জন্য আজ তাঁর বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তার নামটুকুও নেন না। যেন জাদুবলে জীবনের ওই অধ্যায়টাই উপড়ে ফেলেছেন সমূলে।

ডিসেম্বরের প্রথম দিন আপিয়াতে যে মালবাহী জাহাজ থামে, তার সঙ্গে জাহাজ থেকে নেমে এল ছোটোখাটো, গাঁট্টাগোঁট্টা এক মানুষ। মাথায় টপ হ্যাট, হাতে লাঠি, তবুও চলনে বলনে কোথাও একটা গ্রাম্যভাব। ঠিক তিনদিন লাগল তাঁর লুইয়ের এস্টেট খুঁজে বার করতে। ৫ তারিখ, রবিবার, সবে সকালের প্রার্থনা সেরে নিজের ঘরে বসে অর্ধেক লেখা নতুন উপন্যাসটায় হাত দেবেন বলে ভাবছেন লুই, নেটিভ ছোকরা চাকরটা এসে জানাল এক সাহেব নাকি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায়। এই পরবাসে এমন ঘটনা একেবারেই আকস্মিক। ফ্যানি পাশের ঘরেই ছিলেন। তিনিও অনাহূতের মতোই চললেন লুইয়ের পাশাপাশি, আগন্তুকের সঙ্গে দেখা করতে।

বসার ঘরের কৌচে বেশ হাত পা ছড়িয়েই পিছন ফিরে বসে ছিল লোকটা। এই বাড়ি যেন কতদিনের চেনা। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। লুই ঘরে ঢুকে “এক্সকিউজমি” বলতেই উঠে ঘুরে দাঁড়াল। হেসে বলল, “আপনি আমায় চিনবেন না। আমার নাম ম্যানুয়েল ডিব্যাসি। আমি লন্ডন থেকে আসছি। হিউড র‍্যাডির ব্যাপারে কথা বলতে।”

ফ্যানি পরিষ্কার দেখতে পেলেন লুইয়ের মুখে তীব্র আতঙ্কের ছায়া। সারা মুখ রক্তশূন্য হয়ে মোমের মতো সাদা। হাত পা কাঁপছে। কোনওমতে ফ্যানিকে নির্দেশ দিলেন, “তুমি যাও। আমি কথা বলছি।” ফ্যানি অনড়। এবার প্রায় চিৎকার করেই লুই ফ্যানিকে বললেন, “কথা শুনছ না কেন? যেতে বলছি, যাও এখান থেকে।” একেবারে অপরিচিত ব্যক্তির সামনে এই অপমান ফ্যানির সহ্যের বাইরে। কোনওমতে কান্না চেপে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে দেন ফ্যানি।

আগন্তুক কোনও কথা বলে না। হাসিমুখে গোটা ঘর ঘুরে দেখতে থাকে। লুইও কিছু বলেন না। শুধু তাঁর ভীত দৃষ্টি আগন্তুককে অনুসরণ করে চলে।

“সব মিলিয়ে কতটা জমি নিলেন এখানে?” আগন্তুক প্রশ্ন করে

“৩১৩ একর”, কাঁপা গলায় উত্তর দেন লুই।

“৩+১+৩, মানে ৭। বাহ, খুব ভালো। তা আলোচনাটা এখানেই করব? না অন্য কোনও ঘরে? একান্তে?”

“আমরা নিচের সেলারেগিয়ে কথা বলতে পারি।”

“বেশ। তবে তাই হোক।”

সামোয়াতে ডিসেম্বর মাসে গরমকাল। তবুও মাটির নিচের এই সেলারটা বেশ ঠান্ডা। সেখানেই একটা টুল টেনে বসে পড়ে আগন্তুক। লুই বসেন না। আগন্তুক যেন মদের বোতল দেখতেই এসেছে, এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বোতল দেখতে থাকে। তারপর বলে, “বার্গান্ডি মদের ভালো কালেকশান বানিয়েছেন তো!”

“হ্যাঁ, আমার প্রিয়।”

“তাই বুঝি! তাহলে দেখছি আপনি ব্রাদারহুড ছেড়ে পালালেও ব্রাদারহুড আপনাকে ছাড়েনি।”

“কেন এমন বলছেন?”

“এই যে ৩১৩ একর জমি কেনা, সেলারে বার্গান্ডি মদ রাখা…বার্গান্ডি রং যে মাস্টার ম্যাসনের রং, সাধু ওরিজেনের আলখাল্লার রং, সে কি আপনি জানেন না?”

“আমি এত ভাবিনি।”

“তাই বুঝি? কিন্তু এবারে আপনাকে একটু ভাবতে হবে যে।”

“কী ভাবব?”

“ব্রাদারহুডের একেবারে গোপনতম তথ্য আপনাকে দেওয়া হয়েছিল। সত্যি বলতে আপনিই সবটা দেখেছিলেন। দেখানোর পিছনে কারণ ছিল। আপনাকে বলা হয়েছিল গোটা ঘটনাকে রূপকথার মতো লিখতে; যাতে কিছুতেই মানুষ বিশ্বাস না করে আদতে এমনটা হতেও পারে।

“আমি তো তাই করেছি।”

“না, করেননি”, আগন্তকের গলা চড়তে থাকে, “রূপকথা মানে সত্যকে গোপন করা। আসল মানুষদের নাম প্রকাশ করে দেওয়া না।”

“কিন্তু আমি তো তা করিনি”, মিনমিনে গলায় বলতে চান লুই।

“করেননি, তাই না?” প্রায় হুংকার দিয়ে বলে আগন্তুক, “এলি হেনকি জুনিয়র আর হেনরি জেকিলের মিল আমরা যখন ধরতে পেরেছি, বাকিরা পারবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আর এডওয়ার্ড হাইড! মশাই আপনার সাহসের তারিফ করতেই হয়।” পকেট থেকে একটা ছোটো নোটবই আর পেনসিল বার করে লোকটা খসখস করে লিখল,

Elly Henkey Jr.      Hewed Raddy
Henry Jekyll      Edward Hyde

“বলুন কী বলবেন?”

উত্তর দেবার মতো কিছু নেই। চুপ করে রইলেন লুই।

“যাই হোক, এসব বাজে কথা বলতে আমি আসিনি। এসেছি যা নিতে, সেটা আমায় দিয়ে দিন। আমি চুপচাপ চলে যাব।”

“কী নিতে এসেছেন আপনি?”

“বুঝতে পারছেন না? আচ্ছা তবে বুঝিয়েই বলি। গায়েব হবার আগে হিলি আপনাকে যে দুটো জিনিস দিয়ে গেছে, সে দুটো।”

“কে হিলি? আমাকে কী দিয়ে গেছে?”

“আপনি হিলিকে চেনেন না?”

“নাহ। জীবনে নাম শুনিনি।”

“কিন্তু আমাদের কাছে খবর আছে, ইংল্যান্ডে ফিরে সে প্রথম গেছিল বার্নমাউথে। যেখানে আপনার বাড়ি ছিল এককালে। আর মজার ব্যাপার, তার মাসখানেকের মধ্যে আপনিও কাউকে কিছু না জানিয়ে গা ঢাকা দিলেন এই দ্বীপে। এই দুইয়ে দুইয়ে চার আমরা করতে পারি না ভেবেছেন?”

“শুনুন, প্লিজ মন দিয়ে শুনুন। কোথাও একটা বিরাট ভুল হচ্ছে। আমি এসবের কিচ্ছু জানি না। যদি কিছু ঘটে থাকে তবে তা একান্তই কাকতালীয়।”

“নেহাতই যখন জানেন না, তখন শুনুন। এই হিলি আগে ডাক্তার হেনকির ল্যাবরেটরিতে কাজ করত। একদিন সে আচমকা গায়েব হয়ে যায়। তারপর যখন তার খোঁজ পাই, তখন সে ভারতে। ভারতে তার নানা কার্যকলাপে আমরা নিশ্চিত হই যে আমাদের সন্দেহ সঠিক।”

“কী সন্দেহ?”

“পালাবার আগে ডাক্তার হেনকির সেই আবিষ্কারের ফর্মুলা আর সেই আরক দুটোই চুরি করে পালায় হিলি। গোটা ব্রাদারহুড ও দুটো খুঁজছে।”

“হিলি এখন কোথায়?”

“কেউ জানে না, বললাম তো। শেষ জানা অবধি তাকে বার্নমাউথে দেখা গেছে। এরপরেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। হিলি কিছুদিন ভারতে ছিল। সেখানে হেনকির শিষ্য হ্যালিডে গেছিল আরকের খোঁজে। হ্যালিডে খুন হয়েছে। আর সেই আরক আর তার ফর্মুলা যেন হাওয়ায় উবে গেছে। যদি কারও হাতে সেটা পড়ে, আর সেটার সঠিক ব্যবহার সে না জানে, তবে অনর্থ হয়ে যাবে। এখনও তেমন কিছু হয়নি। এর মানে একটাই। এটা এমন জায়গায় আছে, যার খোঁজ সভ্য সমাজের কাছে নেই। সেটা আপনি ছাড়া কেউ হতে পারে না।”

“বিশ্বাস করুন, আমি এসবের কিছুই জানি না।”

“মনে করুন। মনে করার চেষ্টা করুন। এত বড়ো একটা আবিষ্কার পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাবে, এমনটা তো হতে পারে না।”

“মুছে যাবে কেন? ডাক্তার হেনকি তো জীবিত। নিশ্চয়ই তাঁর মনে আছে। তিনি আবার বানিয়ে ফেলবেন সেই আরক।”

খানিক চুপ করে বসে থাকল সেই আগন্তুক। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “ডাক্তার হেনকি এখন অসুস্থ। শারীরিক না মানসিক। ভিয়েনার এক ডাক্তার ফ্রয়েড তাঁকে পরীক্ষা করে বলেছেন, অদ্ভুত এক রোগ হয়েছে তাঁর। নাম ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেশিয়া। এতে রোগীর সবকিছু মনে থাকে। শুধু কোনও নির্দিষ্ট ঘটনা বাদে। ডাক্তার হেনকির বেলাতেও তাই হয়েছে। এই আরক তৈরি সম্পর্কে যা কিছু, সব তাঁর মস্তিষ্ক থেকে মুছে গেছে চিরকালের মতো। এখন আমাদের হাতে না আছে সেই আরক, না আছে তা বানানোর কৌশল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন মিস্টার স্টিভেনসন, আপনার সাহায্য কতটা দরকার।”

“কিন্তু আমি অপারগ। আমি এর কিচ্ছু জানি না।”

“আমাদের বাঁকা পথ নিতে বাধ্য করবেন না মিস্টার স্টিভেনসন। দরকারে আমরা তাও নিতে পারি। বোস্টনে আপনারই মতো এক লেখক বেশ কয়েক বছর আগে ব্রাদারহুডের সমস্ত তথ্য জানিয়ে দেবার ধমকি দিয়েছিল। তার শেষ পরিণতি জানেন নিশ্চয়ই?”

“পো?” কোনওক্রমে উচ্চারণ করলেন লুই।

“এই তো, জানেন দেখছি। তারপর ছড়িয়ে দেওয়া হল ভূতে পো-কে খুন করেছে। সেই রহস্যের সন্ধান আজও হয়নি। আপনিও সেরকম কিছু চান না নিশ্চয়ই। আগামী কাল সন্ধ্যার পর আমি আবার আসব। যা যা চাই, খুঁজে বার করে রাখবেন। এবার কিন্তু আমি না শুনতে আসব না। আসি তবে।” এই বলে সেলার থেকে একটা ভিন্টেজ বার্গান্ডি মদ বার করে বগলে পুরে চলে গেল লোকটা।

সেদিন সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি লুই। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে কবেকার সেই অন্ধকার ঘরের আসরের ছবি, হেনকির মুখ আর টেস্টটিউবে বার্গান্ডি রঙের লাল আরক। পরদিন সন্ধ্যাবেলা সূর্যাস্ত হতেই অস্থির হয়ে উঠলেন লুই। বারবার তাকাতে লাগলেন সদর দরজার দিকে। সারাদিন কিছু দাঁতে কাটেননি। ডিনারের টেবিল সাজানো হয়েছে। নেটিভ ছেলেটা বার্গান্ডি মদের বোতল আনার পরে নিজেই কর্ক খুলে এক চুমুক খেয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন লুই, “এ আমার কী হল? এমন অদ্ভুত লাগছে কেন সারা দেহে?” ফ্যানির দিকে চেয়ে বললেন, “দ্যাখো তো আমার মুখটা বদলে যাচ্ছে কেন?” বলেই ঢলে পড়লেন টেবিলে। সেই তাঁর শেষ কথা। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে রহস্যজনক মৃত্যু হল রবার্ট লুই স্টিভেনসনের।

দুইদিন পরে সামোয়াতেই কবর দেওয়া হল তাঁকে। পত্রিকায় ছাপা হল অবিচুয়ারি। তাতে যা লেখা হল না, তা হল একগাদা নেটিভের সঙ্গে লুইয়ের শেষ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন গুটিকয় ইউরোপিয়ান সাহেব। তাঁদের একজন, বেঁটেখাটো, মাথায় টপ হ্যাট, এই এলাকায় একেবারেই অপরিচিত। তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন লুইয়ের পুরোনো বন্ধু হিসেবে।

সবশেষে ভিজিটার্স ডায়রিতে সই করার সময় ‘ম্যানু’ লিখেই ঘসঘস করে কেটে লিখলেন, ‘পল সিউডোম্যান’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *