ত্রিরত্নের নৌবিহার – ৬

ছয়

আজকের সকালটা বড় সুন্দর। সময়টা বসন্তের শেষ কিংবা গ্রীষ্মের শুরু, যা-ই মনে করেন আপনি। এ সময় ঘাসের লিকলিকে কচি ডগা আর পাতাগুলো লেপ্টে যায় গাঢ় সবুজ রঙের প্রলেপে, বছরটাকে মনে হয় নারীত্বের দ্বারপ্রান্তে উপনীত অজানা জাগরণী স্পন্দনে কম্পিত কোন এক সুশ্রী কুমারী।

কিংস্টনের ভেতর দিককার সুন্দর অথচ অদ্ভুত ধরনের রাস্তাগুলো নেমে এসেছে একেবারে পানির কিনারে। উজ্জ্বল রোদে ওগুলোকে দেখাচ্ছে অপূর্ব এক ছবির মত। রৌদ্র ঝলকিত নদীর বুকে সঞ্চরমান বজরা, গাছপালায় ঢাকা গুণ—টানার পথ, ওপারের ছিমছাম ভিলাগুলো, লাল আর কমলা রঙের ব্লেজার পরে হ্যারিসের ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দে দাঁড় টানা, দূরে টিউডর যুগের ধূসর প্রাচীন ইমারতগুলোর আবছা ছবি—সব কিছু মিলে এমন এক সূর্যস্নাত, উজ্জ্বল অথচ শান্ত প্রাণোচ্ছল অথচ শান্তিময় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে যে আমার মনে হলো যেন এক স্বপ্নাবেশে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ছি।

আমি ভাবতে লাগলাম কিংস্টনের ইতিহাসের কথা। একদা স্যাক্সন রাজাদের অভিষেক হত এখানে। তখন এর নাম ছিল ‘কাইনিঙ্গেস্টান।’ মহান সীজার নদী পার হয়েছিলেন এখানে। রোমান সৈন্যরা নদীর পাড়ে ঢালু উঁচু জমিতে তাঁবু গেড়েছিল। পরবর্তীকালের এলিজাবেথের মত সীজারও বোধ হয় সবখানেই থেমেছেন। পার্থক্য শুধু এটুকু যে রানী বেস-এর চেয়ে সীজারের মর্যাদাবোধ ছিল একটুখানি বেশি। তিনি কোন শুঁড়িখানায় গিয়ে আস্তানা পাতেননি।

শুঁড়িখানার ব্যাপারে ইংল্যান্ডের এই কুমারী রানীটি ছিলেন এক্কেবারে পাগল। লণ্ডনের দশ মাইলের মধ্যে সামান্যমাত্র আকর্ষণ রয়েছে এরকম একটা পানশালাও বোধ হয় নেই যেখানে তিনি কোন না কোন সময়ে ঢুঁ মেরে দেখেননি, বিরাম নেননি, কিংবা রাত কাটাননি। আমার জানতে ইচ্ছা করে, হ্যারিস যদি বদলে যায়, মহৎ ও ভাল মানুষ হয়ে ওঠে, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে ইন্তেকাল করে, তাহলে যেসব পানশালায় সে নিত্য ঢুঁ মারে সেসব জায়গায় ওরা ‘হ্যারিস এখানে এক গ্লাস বিটার (এক জাতীয় মদ) খেয়েছিলেন’, ‘এখানে ‘৮৮ সালের গ্রীষ্মে হ্যারিস দুই গ্লাস ঠাণ্ডা স্কচ গ্রহণ করেছিলেন’, ‘১৮৮৬ সালের ডিসেম্বরে হ্যারিসকে এখান থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়া হয়েছিল’ ইত্যাদি ধরনের বিজ্ঞপ্তি লাগাবে কিনা।

‘না, লাগাবে না। কারণ, তাহলে এধরনের বিজ্ঞপ্তির সংখ্যা দাঁড়াবে অনেক। ফলে যে যে শুঁড়িখানায় সে কোনদিন যায়নি ওগুলোই হয়ে যাবে বিখ্যাত ওগুলোতে ঝুলানো হবে এরকম বিজ্ঞাপন: ‘দক্ষিণ লণ্ডনের একমাত্র পানশালা, যেখানে হ্যারিস কখনও কিছু পান করেননি।’ হ্যারিস যে ওখানে কিছু পান করেনি সেটার পেছনে কি রহস্য থাকতে পারে তা জানার জন্য মানুষ ভীড় জমাবে ওই জায়গায়।

বেচারা দুর্বলচিত্ত রাজা এডউই কি ঘৃণাই না করতেন ‘কাইনিংস্টান’কে। অভিষেকের ভোজটা তাঁর জন্য একটু অতিমাত্রায় হয়ে গিয়েছিল। হয়তো মিষ্টি কুল দিয়ে ঠাসা বুনো শুয়োরের মাথাটি তাঁর স্বাস্থ্যের উপযোগী হয়নি। এবং হয়তো তিনি বেশি মাত্রায় ‘স্যান’ (একটা স্পেনীয় মদের প্রাচীন নাম) আর ‘মীড’ (মধু ও পানির গাঁজানো মদ) গিলে ফেলেছিলেন। তাই প্রিয়তমা এলগিভাকে নিয়ে সকে পড়েছিলেন হৈ-হুল্লোড় থেকে, স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় দু’দণ্ড হাঁপ ছাড়ার উদ্দেশ্যে।

সম্ভবত গরাদহীন জানালায় হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে তাঁরা দেখছিলেন নদীর বুকে মায়াবী জোছনার প্লাবন। দূরবর্তী হলগুলো থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছিল তুমুল উল্লাস আর হৈ-হট্টগোলের অস্পষ্ট আওয়াজ।

এমন সময় বর্বরস্বভাব ওডো আর সেন্ট ডানস্টান উদ্ধতভাবে জোর করে ঢুকে পড়ে সেই নীরব কামরায়। প্রিয়দর্শিনী রানীকে কর্কশ কটূক্তিতে বিদ্ধ করে বেচারা এডউইকে টেনে নিয়ে যায় মাতালদের প্রচণ্ড হট্টগোল আর মত্ততার মধ্যে।

বহু বছর পরে স্যাক্সন রাজা-রাজড়া আর স্যাক্সন আমোদ-ফূর্তিকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয় রণবাদ্যের কর্ণবিদারী ধ্বনি সহকারে এবং কিছুকালের জন্য অস্তমিত হয় কিংস্টনের গৌরব রবি। তা আবার উদিত হয় হ্যাম্পটন কোর্ট টিউডর ও স্টুয়ার্টদের রাজপ্রাসাদে পরিণত হওয়ার পরে। রাজকীয় বজরাগুলো তখন বাঁধা থাকতো নদীর ঘাটে, ঝলমলে পোশাকধারী রাজপুরুষেরা ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হাঁক দিতেন: ওহে ফেরী! গাড়সুকস্ (একটা অশ্লীল গালি), গ্রেমার্সি (অশেষ ধন্যবাদ)।

চারদিকে ছড়ানো প্রাচীন বাড়িঘরের অনেকগুলোই কিংস্টন যখন রাজকীয় শহর ছিল, অভিজাত ও সভাসদরা সেখানে তাদের রাজার কাছাকাছি বাস করতেন, যখন রাজপ্রাসাদের গেট পর্যন্ত লম্বা রাস্তাগুলো ইস্পাতের ঝনৎকার, মহিলা সওয়ারদের টাট্টু ঘোড়ার চিঁহি, রেশমী ও মখমলের পোশাকের খসখস আওয়াজ, আর সুন্দরী নারীদের আনাগোনায় সরগরম জমজমাট হয়ে থাকত, সেই সব বিগত দিনের ইতিহাস বর্ণনায় মুখর। ওরিয়েল, জাফরিকাটা জানালা, বিশাল ফায়ারপ্লেস, ত্রিকোণ গম্বুজযুক্ত ছাদওয়ালা বিরাট ও প্রশস্ত বাড়িগুলোতে আজও বিগতকালের আঁটসাঁট জামা পায়জামা, মুক্তাখচিত কাঁচুলি আর জটিল শাপ শাপান্তের দিনগুলোর নিঃশ্বাস ধ্বনিত হয়। এগুলো তৈরি হয়েছিল সেই সব দিনে ‘যখন লোকে জানত কিভাবে নির্মাণ করতে হয়। কালের প্রবাহে এসব বাড়ির রক্তিম ইটগুলো আরেকটু শক্তভাবে চেপে বসেছে মাত্র। নিঃশব্দে নামতে গেলে এসব বাড়ির ওক কাঠের সিঁড়িগুলো কিচু কিচ্ ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ করে না।

ওক কাঠের সিঁড়ির কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ল, কিংস্টনের একটা বাড়িতে জমকালো খোদাই-কাজ করা একটা ওক কাঠের সিঁড়ি আছে। বাড়িটা এখন বাজারের মধ্যেকার একটি দোকান। স্পষ্ট বোঝা যায় যে এটা একসময় কোন বড় মানুষের বাসস্থান ছিল। কিংস্টনবাসী আমার এক বন্ধু একদিন একটা হ্যাট কেনার জন্য ওখানে যায় এবং কোনরকম ভাবনা চিন্তা না করেই পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে সঙ্গে সঙ্গে হ্যাটের দামটা দিয়ে দেয়।

দোকানদার (সে আমার বন্ধুকে চেনে) প্রথমটায় স্বভাবতই একটুখানি হকচকিয়ে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। সে অনুভব করে যে এ ধরনের কারবারকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু একটা করা দরকার। সে আমাদের নায়ককে জিজ্ঞেস করে যে খোদাই-কাজ করা কিছু চমৎকার ওক কাঠ দেখার আগ্রহ তার আছে কি না। আমার বন্ধু সম্মতি জানাবার পর দোকানী তাকে দোকানের ভেতর দিয়ে বাড়ির সিঁড়ির ওপর নিয়ে যায়। আমার বন্ধু দেখল, সিঁড়ির রেলিং এর পিল্পাগুলো অপূর্ব কারুকাজ শোভিত, গোটা দেয়াল জুড়ে ওক কাঠের প্যানেল এবং তাতে এমন সুন্দর খোদাই কাজ যা কোন রাজ প্রাসাদেরও গৌরব বাড়াতে পারে।

সিঁড়ি থেকে ওরা গেল ড্রইংরুমে। ঘরটা বেশ বড়, ঝকমকে এবং কিছুটা বিস্ময়কর অথচ আনন্দজনক হাল্কা-নীল রঙের কাগজ দিয়ে মোড়ানো। ঘরে উল্লেখযোগ্য আর কিছুই নেই। আমার বন্ধুর জানার ইচ্ছে হলো কেন তাকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন সময় মালিক গিয়ে কাগজের ওপর টোকা দিতেই কাঠের আওয়াজ পাওয়া গেল।

‘ওক, সব খোদাই করা ওক, সিঁড়িতে যেমন দেখেছেন তেমনি, একেবারে সিলিং পর্যন্ত।’

তিরস্কারের সুরে বলে উঠল আমার বন্ধুটি, ‘কিন্তু মিঞা, তুমি কি বলতে চাচ্ছ যে খোদাই করা ওককে তুমি কাগজ দিয়ে ঢেকে রেখেছ?’

জবাবে সে বলল, “জ্বি-হ্যাঁ। কাজটা করতে আমার বেশ পয়সা খরচ হয়েছে। প্রথমে অবশ্য সবটা ম্যাচ-বোর্ড দিয়ে ঢাকতে হয়েছে। কিন্তু এখন ঘরটাকে বেশ প্রফুল্ল দেখায়। আগে দারুণ বিষণ্ন দেখাত।’

লোকটাকে আমি পুরোপুরি দোষ দিই একথা বলতে পারিনে। তার দৃষ্টিকোণ হলো গড়পড়তা গেরস্থের দৃষ্টিকোণ। সেই দিক থেকে তার কথার পেছনে যুক্তি আছে। সে চায় জীবনটাকে যতটা সম্ভব হাল্কাভাবে নিতে। সে তো আর দুষ্প্রাপ্য জিনিসের দোকানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো উন্মাদ নয়। খোদাই করা ওক কাঠ দেখতে খুব সুন্দর। এর অল্প কিছুটা থাকলে ভাল লাগে। কিন্তু যাদের ওতে সখ নেই তাদের পক্ষে ওরকম ওক কাঠে মোড়া ঘরে বসবাস করা নিঃসন্দেহে একটুখানি নিরানন্দকর বৈকি। ওটা গির্জায় বাস করার মত ব্যাপার।

না, লোকটার ক্ষেত্রে দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই যে সে, যে কিনা খোদাই—কাজওয়ালা ওকের ধারই ধারে না, তারই বৈঠকখানাটি পুরোপুরি ওই কাঠের প্যানেলে আবৃত। অথচ যারা ওই জিনিস পছন্দ করে তাদেরকে ওটা কিনতে হয় গলাকাটা দাম দিয়ে। দুনিয়ার নিয়মটাই বোধ হয় এরকম। প্রত্যেক মানুষের তা-ই আছে যা সে চায় না এবং যা সে চায় ওটা রয়েছে অন্যের কাছে।

বিবাহিত লোকদের বৌ আছে, কিন্তু বৌদের তারা চায় বলে মনে হয় না। আর অবিবাহিত ছেলেরা আক্ষেপে চেঁচায় যে তারা বৌ পায় না। যে গরীব মানুষটা নিজের পেট চালাতে হিমসিম খায় তারই রয়েছে গোটা আষ্টেক গাব্বা গোব্বা ছেলেমেয়ে। ধনী মিঞা-বিবিরা নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়। ধন-দউলত দিয়ে যাওয়ার মত কেউ তাদের থাকে না।

তদুপরি রয়েছে ওইসব মেয়েরা—যাদের প্রেমিক আছে। প্রেমিকওয়ালা এই মেয়েরা প্রেমিকদেরকে চায় না। ওরা বলে, প্রেমিক না থাকলেই বরং ভাল। প্রেমিকরা বড্ড জ্বালাতন করে। প্রেমিকরা সাদামাঠা চেহারার ও বয়স্কা মিস স্মিথ আর মিস ব্রাউনের কাছে গিয়ে প্রেম করে না কেন? ওই বেচারীদের তো কোন প্রেমিক নেই। প্রেমিক-ওয়ালা মেয়েরা আরও বলে যে ওদের নিজেদের প্রেমিকের দরকার কিসের? বিয়ে ওরা কোনদিনই করবে না।

এসব নিয়ে বেশি ভাবা উচিত নয়। ভাবলে বড্ড খারাপ লাগে।

আবার খোদাই করা ওকের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। শৈল্পিক এবং সুন্দর জিনিস সম্পর্কে তাঁদের—অর্থাৎ আমাদের-প্র-প্র-প্রপিতামহদের কি চমৎকার ধারণাই না ছিল। কেন, আমাদের হাল আমলের মূল্যবান সব শিল্পসম্পদই তো তিন চারশো বছর আগেকার মাটি খুঁড়ে তোলা সাধারণ জিনিস। তখনকার দিনে ওসব যত্রতত্র পাওয়া যেত। আমি বিস্ময়ের সাথে ভাবি, এখন যেসব জিনিসের এত কদর করি আমরা–সেই প্রাচীন সুপ-প্লেট, বিয়ারের মগ, বাতির শলিতা কাটার যন্ত্র, এগুলোর কি সত্যিকারের কোন অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য আছে? নাকি প্রাচীনত্বের যে দ্যুতিময় বেষ্টনী ঘিরে রেখেছে এগুলোকে সেটাই আমাদের দৃষ্টিকে মুগ্ধ করে? যেসব ‘ওল্ড ব্লু’ অলঙ্কার হিসাবে আমরা ঝুলিয়ে রাখি দেয়ালে ওগুলো হচ্ছে শ’ কয়েক বছর আগেকার ঘরকন্নার নিত্য ব্যবহার্য জিনিস। যেসব ফিকে-লাল রঙা রাখাল ও হলুদ রঙা রাখালনীর মূর্তি আমরা এখন দেখাই জনে জনে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মুখর হয়ে ওঠার জন্য, ওগুলোর মর্ম ওরা বেশ বোঝে এরকম ভান করার জন্য, আসলে ওগুলো আঠারো শতকের চুল্লীর ওপরকার তাকের কারুকাজের অংশ। তখনকার দিনের মায়েরা বাচ্চা কাঁদলে চুষতে দিত ওগুলো।

ভবিষ্যতেও কি একই ব্যাপার ঘটবে? বিগত দিনের তুচ্ছ জিনিস কি সব সময়ই হয়ে যাবে আজকের দিনের পরম আদরের শিল্পসম্পদ? দু’হাজার সাল কিংবা তারও পরে আমাদের উইলো গাছের নকশা আঁকা ডিনার সেটগুলোকে কি সাজিয়ে রাখা হবে চুল্লীর তাকের ওপর? ধারের দিকটায় সোনালী রঙ করা, ভেতরে ভেতরে সুন্দর ফুল আঁকা আমাদের সাদা পেয়ালাগুলো (উৎপত্তিস্থল অজ্ঞাত) এখন সারাহ জেনস্ হালকা-চটুল চিত্তে ভেঙ্গে ফেলে। ওগুলোকে কি একদিন সাবধানতার সাথে মেরামত করে ব্র্যাকেটের ওপর রেখে দেয়া হবে এবং একমাত্র বাড়ির কর্ত্রীই ওগুলোর ধুলোময়লা ঝাড়বেন?

আমার সাজানো-গোছানো শোবার ঘরে ওই যে চীনামাটির কুকুরটা রয়েছে, ওটার রঙ সাদা। চোখ দুটো নীল। নাকটা ফিকে লাল এবং তাতে কালো কালো ফুটকি আছে। ওটার মাথাটি দৃষ্টিকটুভাবে খাড়া, আর অভিব্যক্তিটা একেবারে দুর্বল, নিস্তেজ। আমার নিজের ওটাকে ভাল লাগে না। শিল্পকর্ম হিসেবে বলতে পারি ওটা আমার বিরক্তি উৎপাদন করে। আমার অবিবেচক বন্ধুরা ওটাকে ব্যঙ্গ করে। এমনকি আমার বাড়িঅলী পর্যন্ত ওটার প্রশংসা করেন না। তিনি বলেন যে তাঁর পিসী (বা খালা) দিয়েছিলেন বলেই ওটা আছে।

কিন্তু দুইশো বছর সময়ের মধ্যে এ সম্ভাবনাই বেশি যে ওই কুকুরটাকে ঠ্যাংহীন লেজ-ভাঙ্গা অবস্থায় কোন না কোন জায়গা থেকে খুঁড়ে তোলা হবে, প্রাচীন চীনামাটির কাজ হিসেবে বিক্রি করা হবে এবং কাঁচের বাক্সে রেখে দেওয়া হবে। লোকেরা ওটার চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখবে ও প্রশংসা করবে। ওটার নাকের রঙটার চমৎকার গভীরতা তাদেরকে মুগ্ধ করবে এবং ওটার হারিয়ে যাওয়া লেজটি নিঃসন্দেহে কেমন সুন্দর ছিল তা নিয়ে ওরা জল্পনা-কল্পনা করবে।

আমরা এ যুগের মানুষরা ওই কুকুরটির সৌন্দর্য দেখতে পাই না। ওটা আমাদের অতি পরিচিত, ঠিক সূর্যাস্ত ও তারাদের মত। এ সবের সৌন্দর্যে আমরা শ্রদ্ধাপ্লুত হই না, যেহেতু আমাদের চোখে এরা নিত্যকার সাধারণ দৃশ্য। ওই চীনামাটির কুকুরটির বেলায়ও তাই। কিন্তু ২২৮৮ সালের মানুষ ওটাকে নিয়ে পাগল হয়ে উঠবে। ওরকম কুকুর তৈরির কাজটা হয়ে দাঁড়াবে হারানো শিল্পকর্ম। আমরা কেমন করে অমন জিনিস বানিয়েছি সেটা ভেবে বিস্মিত হবে আমাদের অধস্তন পুরুষেরা এবং বলাবলি করবে আহা কি নিপুণ ছিলাম আমরা! ‘উনিশ শতকের সেই সব মহান প্রাজ্ঞ শিল্পী এবং ওই চীনামাটির কুকুরগুলো যাঁরা বানিয়েছিলেন’ এরকম আদরের ভাষায় তারা আমাদের কথা উল্লেখ করবে।

এই সময় হ্যারিস হঠাৎ বৈঠা ছুঁড়ে ফেলে নিজের আসন ছেড়ে লাফিয়ে উঠে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। তার পা দুটো উঠে গেল শূন্যে। মন্টমোরেন্সি ‘ঘেউ’ করে একটা ডিগবাজী খেল। ওপরে রাখা মালপত্রের ঝুড়িটা লাফিয়ে উঠল এবং ভেতরকার সব জিনিস ছড়িয়ে পড়ল বাইরে।

কিছুটা বিস্মিত হলেও আমি কিন্তু মেজাজ হারালাম না। যথেষ্ট মোলায়েমভাবে বললাম, ‘অ্যাই, ওরকম করলে কেন?’

‘কেন ওরকম করলাম? কেন…,’ না, দ্বিতীয় চিন্তার পর আমি ঠিক করলাম হ্যারিস যা বলেছে সেটার পুনরুক্তি আর করব না। স্বীকার করি, দোষটা হয়তো আমার, কিন্তু ভাষার তীব্রতা ও অভিব্যক্তির অসভ্যতার কোন ক্ষমা থাকতে পারে না, বিশেষত হ্যারিসের মত একজন লোকের—যাকে কিনা যত্নের সাথে লালন—পালন করা হয়েছে বলেই জানি। আমি অন্য বিষয়ে চিন্তায় মগ্ন ছিলাম এবং যে কোন লোক সহজেই বুঝতে পারবেন, আমি যে হাল ধরেছিলাম সেকথা আমার মনে ছিল না। এর পরিণতিতে গুণ টানার পথের সঙ্গে ভালমত জড়িয়ে পড়লাম আমরা। ওই মুহূর্তে বলা মুশকিল হয়ে দাঁড়াল কোনটা আমরা—অর্থাৎ আমাদের নৌকা, আর কোন্‌টা নদীর মিডলএসেক্স তীরভূমি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা আমরা টের পেলাম এবং নিজেদেরকে ছাড়িয়ে নিলাম।

হ্যারিস বলে দিল যে এবারকার মত সে যথেষ্ট দাঁড় বেয়েছে। এখন আমার পালা। কাজেই নৌকা থেকে নেমে গুণ ধরলাম আমি। এবং হ্যাম্পটন পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলাম নৌকা। আহা কি সুন্দর নদীর তীর ঘেঁষে চলে যাওয়া প্রাচীন দেয়ালটা। ওই দেয়ালটার পাশ দিয়ে যখনি যাই মনটা আমার খুশি হয়ে ওঠে অমন পরিণত, উজ্জ্বল ও মিষ্টি দেয়াল! এখানে বেয়ে উঠছে লিচেন, ওখানে জন্মাচ্ছে শ্যাওলা। এখানটায় একটা লাজুক আঙ্গুরলতা উঁকি মারছে ব্যস্ত নদীর বুকে কি ঘটছে তা দেখার জন্য। একটু দূরে নিচের দিকে একটা পুরানো শান্ত আইভির ঝোপ। সে কি মনোরম দৃশ্য। এই প্রাচীন দেয়ালের প্রতি দশ গজের মধ্যে রয়েছে পঞ্চাশটি ছায়া, বর্ণের আভা, আর রঙের খেলা। আমি যদি শুধু ছবি আঁকতে পারতাম, জানতাম কি করে ছবি আঁকতে হয় তাহলে নিশ্চয় দেয়ালটার একটি ছবি আঁকতাম। অনেক সময় ভেবেছি, হ্যাম্পটন কোর্টে গিয়েই থাকা উচিত আমার। জায়গাটাকে এত শান্তিময় নীরব দেখায়।

এটা হলো খুব ভোরে বেশি লোকজন জেগে ওঠার আগে মনের আনন্দে ইচ্ছে মত চারদিকে ঘুরে বেড়াবার উপযোগী প্রিয় প্রাচীন জায়গা।

কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াত সে বিষয়টাকে আমি আসলে গ্রাহ্য করছি বলে মনে হয় না। ওখানে বিকেলগুলো হত ভয়ানক নিরানন্দ ও বিষণ্ণ। ল্যাম্পের আলো প্যানেলযুক্ত দেয়ালের ওপর ছড়িয়ে দিত ভৌতিক ছায়া। ঠাণ্ডা পাথুরে করিডরে দূরবর্তী পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি কখনও শোনা যেত এগিয়ে আসছে—আবার কখনও শোনা যেত দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। শুধু নিজের হৃৎস্পন্দন ছাড়া আর সব কিছুতে বিরাজ করত মৃত্যুর নিস্তব্ধতা।

আমরা, সকল মানব-মানবীরা হলাম সূর্যের সন্তান। আমরা আলো আর জীবন ভালবাসি। এই কারণে আমরা শহর-নগরে ভীড় জমাই। গ্রামাঞ্চল প্রতিবছরই ক্রমে জনশূন্য হয়। দিনের বেলা প্রখর সূর্যালোকে চারদিককার প্রকৃতি যখন প্রাণবন্ত ও ব্যস্ত থাকে তখন পাহাড়ের ধার ও গভীর বন আমাদের ভাল লাগে। কিন্তু রাতে মা ধরিত্রী যখন আমাদেরকে জাগ্রত রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। তখন, ওহো তখন, পৃথিবীটাকে মনে হয় কত নির্জন। আমরা কোন নীরব ঘরে আবদ্ধ শিশুদের মত হয়ে উঠি ভীত, সন্ত্রস্ত। বসে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদি। গ্যাস আলোকিত রাজপথ, মানুষের কণ্ঠস্বর, মানুষের জীবনযাত্রার স্পন্দন শোনার জন্য আকুল হই। সেই মহা নিস্তব্ধতার মধ্যে যখন আঁধারে আবৃত গাছেরা নৈশ বাতাসে খখস্ শব্দে আন্দোলিত হতে থাকে তখন বড় অসহায় বোধ করি আমরা, নিজেদেরকে মনে হয় অতি ক্ষুদ্র। চারপাশে তখন ভূতেরা ঘুরে বেড়ায়। তাদের নিঃশব্দ দীর্ঘশ্বাস ব্যথিত করে তোলে আমাদেরকে। আসুন, আমরা সব বড় বড় শহরে চলে যাই, লক্ষ লক্ষ গ্যাস-জেটের বহ্ন্যুৎসব করি, সবাই মিলে চেঁচিয়ে গান গেয়ে নিজেদেরকে সাহসী বলে অনুভব করি।

হ্যারিস আমাকে জিজ্ঞেস করল হ্যাম্পটন কোর্টের গোলকধাঁধাটি কোনদিন দেখেছি কিনা। বলল, সে একবার গিয়েছিল একজনকে পথ দেখাবার জন্য গোলকধাঁধাটির একটা ম্যাপ নিয়ে আগেই সে সবকিছু দেখে নেয়। ম্যাপে ওটাকে এতই সোজা-সরল দেখাচ্ছিল যে তার মনে হয়েছিল গোলকধাঁধাটি একটা ভাঁড়ামি। দুই পেনির প্রবেশমূল্যের উপযুক্ত নয়। তার ধারণা ওই ম্যাপটি ছিল আসলে একটা ধাপ্পা, কারণ ওটা মোটেই খাঁটি বস্তুর মত ছিল না। ওটা ছিল প্রতারণাকর। হ্যারিস ওখানে গিয়েছিল তার এক গ্রামবাসী সম্পৰ্কীয় ভাইকে নিয়ে।

হ্যারিস তাকে বলেছিল, ‘আমরা ঢুকব এর ভেতরে যাতে তুমি বলতে পারো গোলকধাঁধাটি দেখেছ। খুবই সোজা ব্যাপার এটা। একে গোলকধাঁধা বলাই পাগলামি। ডান দিকে প্রথম মোড় নিয়েই তুমি এগুতে থাকবে। মিনিট দশেক এদিক-ওদিক ঘুরে বেরিয়ে গিয়ে লাঞ্চ খেয়ে নেবে।

ভেতরে যেতেই ওদের সঙ্গে কিছু লোকের দেখা হয়। লোকগুলো বলে যে তারা পৌনে এক ঘণ্টা যাবৎ ওখানে ঘুরছে এবং দেখার সাধ তাদের মিটে গেছে। হ্যারিস তাদেরকে বলল ইচ্ছে হলে তারা ওর পেছনে যেতে পারে, সে সবে ঢুকেছে, এক চক্কর দিয়ে ফিরে এসেই বেরিয়ে যাবে। তারা বলে, সেটা তার অনুগ্রহ। এই বলে তারা ওর পিছু নেয়।

তাদের সাথে ক্রমে আরও কিছু লোক জুটে যায়। ওই লোকগুলোও চায় ব্যাপারটার একটা ইতি হোক। এমনি করে এগিয়ে যেতে যেতে গোলকধাঁধার ভেতরকার সব লোক তাদের দলে সামিল হয়ে যায়। যেসব লোক আর কখনও ঢোকার বা বেরুবার, নিজেদের ঘরবাড়ি বা বন্ধুবান্ধবকে দেখতে পাওয়ার সকল আশা-ভরসা ছেড়ে দিয়েছিল তারা হ্যারিস ও তার দলকে দেখে সাহস ফিরে পায় এবং তাকে আশীর্বাদ করে তার দলে যোগ দেয়। হ্যারিস আমাকে বলল, তার বিবেচনায় সবসুদ্ধ জনাবিশেক লোক তাকে অনুসরণ করছিল। বাচ্চা কোলে এক মহিলা সকাল থেকেই ঘুরছিলেন ওখানে। হ্যারিসকে হারানোর ভয়ে তিনি ওর বাহু আঁকড়ে থাকার জন্য গোঁ ধরেন।

হ্যারিস ডান দিকে মোড় নিতেই থাকে। কিন্তু পথটা মনে হয় বড় দীর্ঘ। হ্যারিস আর তার জ্ঞাতি ভাই আন্দাজ করে যে গোলকধাঁধাটা খুব বড়।

‘ওহো ইউরোপের বৃহত্তম গোলকধাধাগুলোর অন্যতম এটা,’ বলে হ্যারিস।

‘হ্যাঁ, হতেই হবে, যেহেতু কমসে কম মাইল দু’য়েক তো ইতিমধ্যেই আমরা হেঁটে ফেলেছি,’ সায় দেয় হ্যারিসের জ্ঞাতি ভাই।

হ্যারিসের নিজের কাছেই ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত মনে হতে থাকে। কিন্তু হাল ছাড়ে না সে। যেতে যেতে তারা দেখে, পথে আধ-পেনি দামের একটা কেক পড়ে আছে। হ্যারিসের জ্ঞাতি ভাইটি শপথ করে বলে যে কেকটাকে সে মিনিট সাতেক আগেই ওখানে পড়ে থাকতে দেখেছে। হ্যারিস বলে, ‘সেটা অসম্ভব!’ কিন্তু বাচ্চাওয়ালা মহিলাটি বলে ওঠেন—‘মোটেই অসম্ভব নয়, কারণ তিনি নিজেই বাচ্চার হাত থেকে ওটাকে সেখানে ফেলে দিয়েছিলেন হ্যারিসের সঙ্গে দেখা হবার ঠিক আগের মুহূর্তে। তিনি আরও বলেন যে হ্যারিসের সাথে দেখা একেবারে না হলেই ভাল হত, হ্যারিস একটা ঠগ। এতে খেপে গিয়ে হ্যারিস ম্যাপ খুলে তার তত্ত্ব বোঝাতে শুরু করে।

তখন দলের একজন মন্তব্য করে, ‘এখন আমরা কোন্ জায়গাটায় আছি সেটা জানা গেলে বলব যে ম্যাপটা ঠিক আছে।’

কিন্তু নিজেদের তখনকার অবস্থান হ্যারিসের জানা ছিল না। সে প্রস্তাব দেয় যে প্রবেশ পথে ফিরে গিয়ে আবার যাত্রা শুরু করাই ভাল হবে। আবার যাত্রা শুরু করার ব্যাপারে দলের একাংশের মধ্যে তেমন বেশি উৎসাহ দেখা যায় না, তবে প্রবেশ পথে ফিরে যাবার যৌক্তিকতা সম্পর্কে সবাইকে দেখা যায় একমত। সুতরাং তারা ফিরে চলে উল্টোমুখে হ্যারিসের পিছু পিছু। প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর তারা দেখে যে গোলকধাঁধার মাঝামাঝি জায়গায় উপস্থিত হয়েছে।

হ্যারিস প্রথমটায় ভাবে যে সে এমন ভান করবে যেন এখানে আসাটাই তার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু জনতার মারমুখী ভাব লক্ষ করে সে ব্যাপারটাকে একটা দুর্ঘটনা হিসাবে গণ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়।

যা হোক, তখন যাত্রা শুরু করার মত একটা জায়গা তারা পেয়েছে। আরেকবার ম্যাপ খোলা হয়। এবার সবকিছু আগের চেয়ে সোজা-সরল মনে হয় সবার। তৃতীয়বারের মত যাত্রা শুরু করে তারা।

তিন মিনিট হাঁটার পর তারা দেখে যে আবার কেন্দ্রস্থলে, অর্থাৎ যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল সেখানেই ফিরে এসেছে।

এরপর থেকে কোনমতেই আর কোথাও যেতে পারেনি তারা। যেপথেই যায়, যেদিকেই যায়, ফিরে আসে সেই মাঝখানটায়। শেষ পর্যন্ত এটা এমন নিয়মিত ও ঘন ঘন ঘটতে থাকে যে কিছু কিছু লোক ওখানটাতেই দাঁড়িয়ে যায়, অপেক্ষা করতে থাকে অন্যেরা চারদিকে ঘোরাঘুরি করে ফিরে আসার জন্য। কিছুক্ষণ পরে হ্যারিস আবার ওর ম্যাপটি বের করে। কিন্তু সেটা দেখেই খেপে ওঠে জনতা। তারা ওকে বলে দেয়: ‘যাও, ম্যাপটা দিয়ে তোমার চুল কোঁকড়া করো গে।’

হ্যারিস আমাকে বলল যে ওই সময় তার জনপ্রিয়তা যে কিছু পরিমাণে হ্রাস পেয়েছিল সেটা অনুভব না করে সে পারেনি।

অবশেষে তারা সবাই উন্মত্ত হয়ে ওঠে, চিৎকার করে ডাকতে থাকে চৌকিদারকে। লোকটা এসে বাইরের মই বেয়ে উঠে চেঁচিয়ে পথ বাতলে দেয় তাদেরকে। কিন্তু ততক্ষণে তাদের সকলের মাথা এমন এক বিভ্রান্তির ঘূর্ণাবর্তে পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে যার ফলে লোকটার কথা ওরা বুঝতেই পারে না। তখন লোকটা বলে, ‘আপনারা যেখানে আছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন, আমি আসছি।’

চৌকিদারটা ছিল কম বয়সী এবং কপালদোষে ওই কাজেও একেবারে আনকোরা। ভেতরে সে আসে বটে, কিন্তু তাদের কাছে আসতে পারে না। পরক্ষণেই সে যায় হারিয়ে। মাঝে মাঝে তারা দেখে বেড়ার ওপাশে ছুটোছুটি করছে সে। সে-ও ছুটে আসতে থাকে তাদের দিকে। মিনিট পাঁচেক ওখানে দাঁড়িয়ে তারা অপেক্ষা করে লোকটার জন্য। আর তখনি দেখা যায় যে ঠিক আগের জায়গাতেই গিয়ে হাজির হয়েছে সে এবং ওখান থেকে জিজ্ঞেস করছে—তারা জায়গা ছেড়ে কোথায় সরে গিয়েছিল।

পুরানো চৌকিদারদের একজন খেয়েদেয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হয় তাদেরকে। তারপর সকলে বেরিয়ে আসে গোলকধাঁধা থেকে।

হ্যারিস আমাকে বলল, তার বিবেচনায় গোলকধাঁধাটি চমৎকার। আমরা এই মর্মে একমত হলাম যে ফেরার পথে জর্জকে ওটার মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *