ত্রিরত্নের নৌবিহার – ১

এক

আমরা ছিলাম চারজন। জর্জ, উইলিয়াম স্যামুয়েল হ্যারিস, আমি, আর মণ্টমোরেন্সি। বসেছিলাম আমার ঘরে। ধূমপান করতে করতে আলোচনা করছিলাম আমাদের কার শরীর কতটা খারাপ হয়ে পড়েছে সেই বিষয়ে। এখানে খারাপ বলতে আমি অবশ্য ডাক্তারী দৃষ্টিতে খারাপের কথাই বলতে চাচ্ছি।

আমরা সবাই অসুস্থ বোধ করছিলাম। বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম স্নায়বিকভাবে। হ্যারিস বলল তার মাথাটা একেক সময় অসম্ভব রকম চক্কর দিতে থাকে। তখন কি করছে হুঁস থাকে না তার। জর্জ বলল তার মাথাও ওইভাবে চক্কর দেয় এবং সে-ও কি করছে খেয়াল রাখতে পারে না। আমার ক্ষেত্রে রোগটা হচ্ছে যকৃতের। যকৃতটার বিগড়ে যাবার কথা জানতাম এজন্যে যে একটু আগেই আমি যকৃতের পেটেণ্ট বড়ির একটা বিজ্ঞাপন পড়ছিলাম। ওতে যকৃতের রোগের বিভিন্ন লক্ষণের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। ওইসব লক্ষণ থাকলে লোকে বলে দিতে পারে যে তার যকৃত কাজ করছে না। আমার মধ্যে বিজ্ঞাপনের সবগুলো লক্ষণই ছিল।

একটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কোন অষুধের বিজ্ঞাপন পড়লেই সেই বিশেষ রোগটির দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছি না ভেবে আমি পারিনি কখনও বিজ্ঞাপনের বর্ণিত লক্ষণগুলো আমার যত রকম অনুভূতি হয়েছে তার সাথে প্রতিটি ক্ষেত্রে হুবহু মিলে যায়।

মনে পড়ে একদিন সামান্য একটা রোগের চিকিৎসা সম্বন্ধে পড়াশোনা করার মতলবে বৃটিশ মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। ওই সামান্য রোগটা, আমার ধারণায় ঘুসঘুসে জ্বর, আমার মধ্যে কিছুটা ছিল বলে মনে হয়েছিল। বই নিয়ে যা পড়ার সব পড়ে ফেললাম। তারপর আনমনে অলসভাবে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একনাগাড়ে সব রোগ সম্পর্কেই পড়তে লাগলাম। প্রথমে কোন রোগের বিবরণীর মধ্যে ডুব দিয়েছিলাম মনে নেই, তবে এটা জানি যে রোগটা ছিল ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক। পূর্ব লক্ষণগুলোর তালিকার অর্ধেক পর্যন্ত পড়ার আগেই আমার মনে হয় যে রোগটা আমাকে অনেকটা কাবু করে ফেলেছে।

আতঙ্কে হিম হয়ে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। পরে হতাশ ঔদাসীন্যে আবার পৃষ্ঠা ত্রিরত্নের নৌবিহার ওল্টাতে লাগলাম। পৌঁছে গেলাম টাইফয়েড জ্বরের অধ্যায়ে। লক্ষণগুলো পড়েই আবিষ্কার করে ফেললাম যে আমার টাইফয়েড জ্বর আছে। নিশ্চয় কয়েক মাস ধরে এই জ্বরে ভুগছি নিজের অজান্তে। আমার আর কি কি রোগ আছে জানার ইচ্ছা হলো। ‘সেন্ট ভিটাসের নাচ’ (স্নায়ুরোগ-জনিত কাঁপুনি) এর বিবরণ পড়ে দেখলাম যা আশঙ্কা করেছিলাম ঠিক তাই, ওটাও আছে আমার। নিজের কেসটা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। ঠিক করলাম শেষ অবধি দেখব তন্ন তন্ন করে। শুরু করলাম বর্ণের ক্রম অনুসারে পড়া। পালাজ্বরের অধ্যায়টা পড়ে জানলাম যে আমি কাহিল হয়ে পড়ছিলাম ওই জ্বরেই এবং তার সঙ্কটজনক পর্যায়টা আসবে আর প্রায় পক্ষকালের মধ্যেই। ব্রাইটের রোগ (ডা. ব্রাইটের আবিষ্কৃত কিডনির রোগ) আমার মধ্যে কেবল সামান্য মাত্রায় আছে দেখে স্বস্তি বোধ করলাম কিছুটা। বুঝতে পারলাম যে এ রোগটি নিয়েও বছর কয়েক বাঁচতে পারব। কলেরা দেখলাম তার সব মারাত্মক জটিলতা নিয়েই আমার মধ্যে আছে। আর আমার জন্মটাই হয়েছে বোধ হয় ডিপথেরিয়া নিয়ে। ছাব্বিশটি বর্ণ ধরে এক এক করে বিবেকবুদ্ধি সহকারে ধৈর্যের সাথে আমি পড়ে গেলাম। শেষে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে ‘চাকরানীর হাঁটু-ফোলা রোগ (House maid’s knee)’ আমার নেই।

এতে প্রথমে কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলাম আমি। কেন জানি মনে হলো আমার প্রতি এটা এক ধরনের অবজ্ঞা। আচ্ছা, এই ‘চাকরানীর হাঁটু-ফোলা’ রোগটা হলো না কেন আমার? কেন এই কুৎসিত কার্পণ্য? কিছুক্ষণ পরে অবশ্য আরেকটু নির্লোভ অনুভূতির জয় হলো। ভেবে দেখলাম যে আমার তো ফার্মাকোলজিতে বর্ণিত আর সব ক’টি রোগই আছে। না-ই বা থাকল ‘চাকরানীর হাঁটু-ফোলা’ রোগ। ওটা ছাড়াই চালিয়ে নেব কোন রকমে। গেঁটেবাত দেখা যাচ্ছে আমার অজান্তে চরম ও সাংঘাতিক রূপ নিয়ে জাপটে ধরেছে আমাকে, আর জীবাণুঘটিত রোগে তো ছেলেবেলা থেকেই আমি ভুগছি। ফার্মাকোলজিতে বিবরণ না থাকায় সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে আর কোন রোগ আমার নেই।

বসে বসে ভাবতে লাগলাম। ডাক্তারী দৃষ্টিতে কি কৌতূহলজনক কেস—মেডিক্যাল ছাত্রদের ক্লাসের জন্যে কিছু মূল্যবান সম্পদই না হব আমি। আমাকে পেলে ছাত্রদেরকে আর হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হবে না। আমি নিজেই তো একটা জলজ্যান্ত হাসপাতাল। ছাত্রদেরকে যা করতে হবে সেটা হলো আমার চারদিকে শুধু একটা চক্কর দেয়া এবং তারপরেই গিয়ে ডিপ্লোমাটা নিয়ে নেয়া।

আর কতদিন বাঁচব তা জানতে উৎসুক হয়ে উঠলাম। চেষ্টা করলাম নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে। নাড়িতে হাত দিলাম। প্রথম দিকে কোন স্পন্দনই টের পেলাম না। তারপর মনে হলো ওটা হঠাৎ চলতে শুরু করেছে। ঘড়ি বের করে নাড়ির গতির সাথে মিলালাম। দেখা গেল নাড়ির স্পন্দন মিনিটে ১৪৭ বার। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনুভবের চেষ্টা করলাম। কিছুই টের পেলাম না। বিলকুল থেমে আছে ওটা। এতদিন আমি এই ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছি যে হৃৎপিণ্ডটা নিশ্চয় সব সময় যথাস্থানেই আছে। কিন্তু এখন কি হলো? কোথায় গেল ওটা? বুঝতে পারলাম না। কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত, শরীর দুমড়ে দুই পাশটা এবং পিঠের কিছুটা পর্যন্ত চাপড় মেরে দেখলাম। কিন্তু কিছুই টের পেলাম না, কিছুই শুনলাম না। জিহ্বাটা দেখার চেষ্টা করলাম। যদ্দূর সম্ভব ঠেলে ওটাকে মুখ থেকে বের করে এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ দিয়ে পরীক্ষার চেষ্টা করলাম। দেখলাম কেবল জিহ্বার আগাটুকু। ওই কসরত থেকে একমাত্র লাভ হলো এই যে আমার হামজ্বর হয়েছে বলে আগের চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত হয়ে গেলাম।

একজন সুস্থ লোক হিসেবে আমি ঢুকেছিলাম ওই পাঠাগারে, আর হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলাম এক জ্বরাগ্রস্ত বিধ্বস্ত মানুষ হয়ে।

ডাক্তারের কাছে চলে গেলাম। লোকটা আমার পুরানো দোস্ত। নিজেকে অসুস্থ কল্পনা করে যখনি তার কাছে যাই, সে আমার নাড়ি দেখে, জিব দেখে, আবহাওয়া নিয়ে খামোকা আগড়ম-বাগড়ম বকে। কাজেই আমি ভাবলাম, এখন গেলে তার একটা উপকার হবে। মনে মনে বললাম, একজন ডাক্তার কি চায়? সে চায় প্র্যাকটিস। আমাকে সে রোগী হিসেবে পাবে। যাদের একটা বা দুটো রোগ আছে এরকম সতেরো শ’ সাধারণ রোগীর চাইতে বেশি প্র্যাকটিস সে পেয়ে যাবে একা আমার মধ্যে। সুতরাং আমি সোজা গিয়ে তার সাথে দেখা করলাম।

সে বলল, ‘তোমার হয়েছে কি?’ জবাবে বললাম, “প্রিয় বন্ধু, আমার কি হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে তোমার সময় নষ্ট করব না। জীবন বড় ক্ষণস্থায়ী। আমার বর্ণনা শেষ হবার আগেই তুমি অক্কা পেতে পারো। তবে, আমার কি হয়নি সেটা তোমাকে বলব। “চাকরানীর হাঁটু-ফোলা” রোগ আমার হয়নি। কেন হয়নি তা বলতে পারব না। তবে প্রকৃত তথ্যটা হলো এই যে ওটা আমার নেই। অন্য সব রোগই অবশ্য আছে।’

এরপরে কিভাবে এসব আবিষ্কার করেছি সে কাহিনী তাকে জানালাম।

সে আমার জামা-কাপড় খুলে আগা-পাশ-তলা খুঁটিয়ে দেখে হাতের কব্জিটা চেপে ধরল খপ করে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার বুকে আচমকা একটা থাপ্পড় মেরে বসল। এটা আমি তার একটা কাপুরুষোচিত কাজ বলব। পরক্ষণেই সে করল কি, মাথাটা হেলিয়ে হঠাৎ একটা চুঁ মারল আমাকে। তারপর খস খস করে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে ভাঁজ করে আমার হাতে তুলে দিল। ওটা পকেটে পুরে বেরিয়ে গেলাম।

প্রেসক্রিপশনটা না খুলেই সোজা গিয়ে সবচেয়ে কাছের কেমিস্টকে দিলাম। লোকটা ওটা পড়ে আমাকে ফেরত দিয়ে বলল, ওসব জিনিস সে রাখে না।

প্রশ্ন করলাম, “তুমি তো কেমিস্ট, তাই না?’

সে জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, কেমিস্ট। তবে একই সাথে যদি সমবায় স্টোর ও পারিবারিক হোটেল খুলতাম তাহলে হয়তো তোমাকে খুশি করতে পারতাম। শুধুমাত্র কেমিস্ট হওয়ায় পারছিনে।

তখন আমি প্রেসক্রিপশনটা পড়ে দেখলাম ওতে লেখা রয়েছে—

: ১ পাইণ্ট বিয়ার সহযোগে ১ পাউণ্ড বীফ স্টেক প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর।

: ১টা দশ মাইলের হণ্টন প্রত্যহ সকালে।

: ১টা বিছানা প্রতি রাতে ঠিক ১১টায় আর, যেসব ব্যাপার তুমি বোঝো না সেগুলো দিয়ে মগজটাকে বোঝাই কোরো না।

প্রেসক্রিপশনটা মেনে চললাম এবং নিজেই বলছি বেশ সুফল পেলাম। আমার জীবনটা রক্ষা পেল এবং সেটা এখনও চালু আছে।

যাক, এবার বর্তমান প্রসঙ্গে অর্থাৎ যকৃতের বড়ির বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ফিরে যাই। লক্ষণগুলো যে আমার মধ্যে আছে এতে কোন ভুল নেই। প্রধান লক্ষণটি হলো, ‘যে কোন ধরনের কাজের প্রতি একটা সাধারণ বিতৃষ্ণ ভাব।’

এর জন্যে আমার যে ভোগান্তি সেটা বর্ণনা করা দুঃসাধ্য। একেবারে শৈশব থেকেই শহীদ হয়ে আছি। ছেলেবেলায় রোগটা আমাকে একদিন এক লহমার জন্যেও ছাড়েনি। বড়রা জানতেন না যে আমার যকৃতটাই যত নষ্টের গোড়া। চিকিৎসাবিজ্ঞান তখন আজকের মত এতটা উন্নত ছিল না কিনা, তাই বড়রা বলতেন যে কাজের প্রতি আমার বিতৃষ্ণার জন্যে দায়ী হচ্ছে কুঁড়েমি।

তাঁরা বলতেন, ‘অ্যাই কামচোরা খুদে শয়তান, ওঠ, কিছু কাজ কাম কর।’ অবশ্য এসব তাঁরা বলতেন আমি যে অসুস্থ সেটা না জেনে।

আমাকে বড়ি খেতে দিতেন না তাঁরা। বড়ির বদলে মাথার এক পাশে ঠোকা মেরে ফুলিয়ে দিতেন। আর অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে এই যে মাথায় ওরকম ঠোকা খাওয়ামাত্রই সাময়িকভাবে আমি সুস্থ হয়ে উঠতাম। আমি দেখেছি যে গোটা বাক্সভর্তি বড়ি এখন আমার যকৃতের ওপর যতটা কাজ করে তার চাইতে অনেক বেশি কাজ করত তখন মাথায় ঠোক্কর-জনিত একটা পিণ্ড। ওটা আমাকে তক্ষুণি ছুটে গিয়ে বড়দের অভীষ্ট কর্মটি সম্পাদনে অধিকতর তৎপর করে তুলত।

জানেন, প্রায়ই এমন দেখা যায় যে পুরানো ফ্যাশনের ওসব সাদামাঠা দাওয়াই হাল আমলের অষুধের দোকানের গাদাগাদা অষুধ থেকে অনেক বেশি ফল দেয়।

যাকগে ওসব কথা। আমরা বসে বসে আধঘণ্টা ধরে পরস্পরকে নিজ নিজ রোগব্যাধির বর্ণনা শোনালাম। জর্জ আর হ্যারিসকে আমি ব্যাখ্যা করে বোঝালাম সকালে ঘুম থেকে উঠলেই আমার কেমন লাগে। হ্যারিস আমাদেরকে বলল বিছানায় শুতে গেলে তার কেমন লাগে। জর্জ কম্বলের ওপর দাঁড়িয়ে রাতে তার কেমন লাগে সেটা বোঝাতে গিয়ে এক চাতুর্যপূর্ণ ও মন-কাড়া অভিনয় কলা প্রদর্শন করল।

জর্জটা ভাবে সে অসুস্থ। আসলে কি জানেন? তার কিচ্ছুই হয়নি।

এ সময় মিসেস পোপেটস এসে দরজায় ঘা দিলেন। তিনি জানতে চান আমরা রাতের খাবার খাব কিনা। একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণ হাসি হেসে তাঁকে জানালাম যে যৎকিঞ্চিৎ খাওয়ার চেষ্টা আমাদের করা উচিত। হ্যারিস বলল, পেটে কিছু পড়লে রোগ-ব্যাধি প্রায়ই দমে থাকে। মিসেস পোপেটস ট্রে নিয়ে এলেন। টেবিল ঘিরে বসে আমরা ভুনা মাংস, পেঁয়াজ, ফলের চাটনী ইত্যাদি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম।

ওই সময়টায় আমি নিশ্চয় খুবই দুর্বল ছিলাম। কারণ, প্রথম আধঘণ্টার পর আমার যেন খাবারের প্রতি আর কোন আকর্ষণই ছিল না। আমার ক্ষেত্রে এটা এক অসাধারণ ঘটনা। এমন কি পনীর খেতেও আমার কোন ইচ্ছে হয়নি।

খাওয়ার পর্ব সেরে গ্লাসগুলো আরেকবার ভরে নিয়ে পাইপ ধরিয়ে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আলোচনা আবার শুরু করলাম আমরা। আমাদের আসলে কি হয়েছে সে সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত ছিলাম না। তবে এ ব্যাপারে সবাই আমরা একমত ছিলাম যে যা-ই হয়ে থাকুক, সেটা হয়েছে অতিরিক্ত কাজ বা খাটুনীর দরুন।

‘আমাদের যা দরকার সেটি হলো বিশ্রাম,’ বলল হ্যারিস।

‘বিশ্রাম আর পুরাপুরি হাওয়া বদল,’ বলল জর্জ। ‘মগজের ওপর অতিমাত্রায় চাপ পড়ার ফলে আমাদের সর্বশরীরে একটা সাধারণ অবসাদ জন্মে গেছে। স্থান পরিবর্তন, চিন্তা ভাবনার প্রয়োজনের অনুপস্থিতি আমাদের মানসিক সমতা ফিরিয়ে আনবে।’

জর্জের এক ‘তুতো ভাই’—অর্থাৎ সম্পৰ্কীয় ভাই, মেডিক্যালের ছাত্র, কাজেই পারিবারিক সূত্র ধরে জর্জ কিছুটা ডাক্তারী ঢংএ কথা বলে।

জর্জের সাথে একমত হয়ে আমি প্রস্তাব দিলাম যে আমাদের উচিত এমন কোন নির্জন ও অতীতের সাথে সম্পর্কযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করা যা লোকজনের পাগল করা ভীড় থেকে অনেক দূরে। সেখানকার নিদ্রালু অলিগলিতে, পরীদের দ্বারা লুকানো কোলাহলময় লোকালয়ের বাইরে অবস্থিত কোন আধা বিস্মৃত কোণটিতে, কিংবা কালের উত্তুঙ্গ পাহাড় চূড়ায় পাখির বাসার মত সুন্দরভাবে বসিয়ে রাখা কোন আস্তানায় সূর্যস্নাত সাতটি দিন আমরা স্বপ্ন দেখে কাটিয়ে দেব। উনিশ শতকের উত্তাল তরঙ্গগর্জন সেখান থেকে শোনাবে দূর থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ বংশী ধ্বনির মত।

হ্যারিসের মতে ওরকম জায়গায় যাওয়া কুঁজোর পিঠে সওয়ার হবার মত ব্যাপার। সে জানে আমি কোন ধরনের জায়গার কথা বলছি: যেখানে রাত আটটায় সবাই শুয়ে পড়ে, প্রেম বা পয়সা কিছুর বিনিময়ে কাউকে পাওয়া যায় না, একটুখানি তামাকের দরকার হলেও দশ মাইল হাঁটতে হয়।

সে বলল, ‘নাহ্, বিশ্রাম আর হাওয়া বদলের জন্যে সমুদ্রযাত্রাই সেরা।’

সমুদ্রযাত্রার ব্যাপারে আমি জোর আপত্তি জানালাম। কেউ যদি কয়েক মাসের জন্যে যায় তাহলে সমুদ্রে ভ্রমণ ভাল, কিন্তু এক সপ্তাহের জন্যে ওটা ক্ষতিকর।

ধরুন, সোমবারে যাত্রা করলেন এই ধারণা বুকে নিয়ে যে আপনি ফূর্তি করতে চলেছেন। তীরে দাঁড়ানো বন্ধুদের হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে সবচেয়ে বড় পাইপটা ধরিয়ে হামবড়াভাব নিয়ে ডেকের ওপর ঘুরে বেড়াতে লাগলেন যেন আপনি একাধারে ক্যাপ্টেন কুক, স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাস। মঙ্গলবারে আপনার মনে হবে, না আসাই উচিত ছিল। বুধ, বৃহস্পতি, শুক্রবারে আপনি ভাববেন এর চাইতে মরণই ছিল ভাল। শনিবারে আপনি একটুখানি চা-টা খেতে, ডেকে উঠে বসতে এবং সহৃদয় মানুষদের ‘কেমন আছেন’ প্রশ্নের জবাবে ফ্যাকাসে মিষ্টি হাসি হাসতে পারবেন। রোববারে আবার চলতে ফিরতে এবং শক্ত খাবার খেতে শুরু করবেন আপনি। আর, সোমবারে ব্যাগ ছাতা হাতে তীরে নামার অপেক্ষায় জাহাজের সেতুর ওপর দাঁড়ানো অবস্থায় ভ্রমণটা আপনার পুরোপুরি ভাল লেগে উঠতে শুরু করবে।

মনে পড়ে আমার ভগিনীপতি একবার স্বাস্থ্যোদ্ধারের উদ্দেশ্যে এক স্বল্পকালীন সমুদ্র সফরে যান। তিনি লণ্ডন লিভারপুলের রিটার্ন টিকেট নিয়েছিলেন। লিভারপুলে পৌঁছার পর তাঁর একমাত্র চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় কেমন করে ওই টিকেটটা বিক্রি করবেন।

অসম্ভব কম দামে তিনি নাকি ওটা ফেরি করে বেড়ান গোটা শহরময়। শেষ পর্যন্ত মাত্র আট পেনিতে তিনি ওটা বিক্রি করেন পিত্তরোগীর মত দেখতে এক যুবকের কাছে। ওই যুবকটাকে নাকি তার ডাক্তার সাগরতীরে গিয়ে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

তার হাতে সস্নেহে টিকেটটি গুঁজে দিয়ে আমার ভগিনীপতি বলেছিলেন— ‘সমুদ্রের ধারে যাবে? আরে সমুদ্রের স্বাদ তুমি এত প্রচুর পরিমাণে পাকে যে তোমার গোটা জীবনতক সেটা স্থায়ী হবে। আর ব্যায়াম? বাপুরে, ওই জায়গাটায় শুধু বসে থাকলেই তোমার যতটা ব্যায়াম হবে অতটা শুকনো ডাঙ্গায় হাজার ডিগবাজি খেলেও হবে না।

তিনি নিজে, মানে আমার ভগিনীপতি, ট্রেনযোগে ফিরে আসেন। তিনি বলেছিলেন যে নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েই তাঁর জন্যে অনেক স্বাস্থ্যপ্রদ।

আমার পরিচিত আরেকজন উপকূলীয় অঞ্চলে এক সপ্তাহের সমুদ্র-ভ্রমণে যায়। যাত্রার আগে স্টুয়ার্ড এসে জানতে চাইল সে প্রতি বেলা খেয়ে দাম দেবে, নাকি সর বেলার খাবারের দাম অগ্রিম চুকিয়ে দেবে।

স্টুয়ার্ড সুপারিশ করল যে শেষেরটাই করা ভাল, কারণ ওতে অনেক সস্তা পড়ে। মাত্র আড়াই পাউণ্ডে ওরা তাকে সারা সপ্তাহ খাওয়াবে। সে আরও বলল, সকালের নাস্তায় মাছ এবং মাছের ‘গ্রীল’ দেয়া হবে। একটায় লাঞ্চ। লাঞ্চে থাকবে চার পদের খাবার। ডিনার সন্ধ্যে ছটায়। তাতে থাকবে সুপ, জয়েন্ট, মুরগী, সালাদ, মিষ্টি, পল্লীর এবং ফলফুল। রাত ১০টায় দেয়া হবে হালকা মাংসের খাবার।

আমার সেই পরিচিত লোকটা ছিল একটু পেটুক ধরনের। সে ঠিক করল আড়াই পাউণ্ডের বন্দোবস্তেই যাবে এবং গেলও তাই।

শিয়ার্নেস ছাড়ার সাথে সাথে লাঞ্চ পরিবেশিত হলো। কিন্তু ক্ষুধা যতটা হবে বলে সে ভেবেছিল ওরকম হলো না। ফলে একটু খানিক গোমাংস, কিছু স্ট্রবেরি ও ক্রিম খেয়েই সে উঠে গেল। গোটা বিকেল বেলাটায় অনেক চিন্তাভাবনা করল সে। তার একবার মনে হলো যেন সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে কেবল সেদ্ধ গোমাংসই খেয়ে যাচ্ছে। আরেকবার মনে হলো বছরের পর বছর শুধু স্ট্রবেরি আর ক্রিম খেয়েই কাটাচ্ছে সে। ওদিকে গোমাংস, স্ট্রবেরি, ক্রিম কাউকেই এতে খুশি মনে হচ্ছে না, তারা যেন বরং কিছুটা অসন্তুষ্ট

ছটা বাজতেই ওরা এসে জানাল যে ডিনার তৈরি। ঘোষণাটা তার মনে কোন উৎসাহই জাগাল না। তবে সে অনুভব করল যে আড়াই পাউণ্ডের কিছু অংশ ওই ডিনারের মধ্যে রয়েছে, কাজেই ওটা গলাধঃকরণ করা উচিত। দড়িদড়া, এটা—ওটা আঁকড়ে কোনক্রমে নিচে নামল সে। মইয়ের গোড়ায় নামতেই পেঁয়াজ, রসুন শূকরের গরম গরম ঊরু, ভাজা মাছ আর শাক-সবজির লোভনীয় গন্ধ ভক্ করে এসে লাগল তার নাকে। তৈলাক্ত হাসি নিয়ে স্টুয়ার্ড এসে বলল, ‘আপনার জন্যে কি আনব, স্যার?’

ক্ষীণ স্বরে সে জবাব দিল, ‘আমাকে এক্ষুণি ওপরে নিয়ে যাও।’

সঙ্গে সঙ্গে ওরা তাকে ওপরে তুলে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল।

এর পরের চারটা দিন সে সাদাসিধে নিষ্কলুষ জীবন যাপন করল শুধুমাত্র পাতলা ‘ক্যাপ্টেনের’ বিস্কুট (মানে, বিস্কুটগুলোই ছিল পাতলা, ক্যাপ্টেন নয়) আর সোডা-পানি খেয়ে। কিন্তু শনিবারের দিকে সে উঠে দাঁড়াল, হালকা চা আর শুকনো টোস্ট খেল। সোমবারে গোগ্রাসে মুরগীর ঝোল গিলতে লাগল সে। মঙ্গলবারে জাহাজ থেকে নেমে গেল। জাহাজটা যখন ঘাট ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেদিকে চেয়ে আফসোস হলো তার।

সে ভাবল: ওই তো চলে যাচ্ছে জাহাজটা, চলেই যাচ্ছে আমার দুই পাউণ্ড দামের খাবার সঙ্গে নিয়ে, যে খাবারের মালিক আমি এবং যা আমি খাইনি।

লোকটা আমাকে বলেছে যে ওরা যদি তাকে আর একটা দিন সময় দিত তাহলে তার বিশ্বাস, না-খাওয়া ওই দুই পাউণ্ডের খাবারটা সাবাড় করে হিসাবটা সে ঠিকই মিলিয়ে দিত।

কাজেই সমুদ্র যাত্রার বিরুদ্ধে আমি দাঁড়ালাম। আমি এই বিরুদ্ধতা যে নিজের কারণে নয় সেটাও বুঝিয়ে বললাম। আমি কোনদিন দুর্বল ছিলাম না। ভয় হচ্ছিল জর্জের জন্যে। জর্জ বলল, সে সুস্থই থাকবে। সমুদ্র যাত্রা তার বরং ভালই লাগবে। তবে হ্যারিস আর আমার প্রতি তার উপদেশ হচ্ছে আমরা যেন ওরকম চিন্তাকে মনে স্থান না দিই, কারণ তার নিশ্চিত বিশ্বাস যে আমরা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়ব। হ্যারিস বলল, সমুদ্রে গিয়ে লোকে যে কি উপায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেটা তার কাছে বরাবরই একটা হেঁয়ালি। লোকে নিশ্চয় ইচ্ছা করে ভণ্ডামি করে অসুস্থ হয়। সে প্রায়ই চেষ্টা করেছে অসুস্থ হতে, কিন্তু কখনও পারেনি।

এরপর হ্যারিস আমাদেরকে শোনাল কিভাবে একবার সে চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিল সেই কাহিনী। চ্যানেল তখন এতই বিক্ষুব্ধ ছিল যে সকল যাত্রীকে বার্থের সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। গোটা জাহাজে সুস্থ ছিল মাত্র দুইজন, সে আর ক্যাপ্টেন। কোন কোন সময় সে আর সেকেণ্ড মেট। তবে সাধারণভাবে সে আর অন্য কেউ। যখন অন্য কেউ সুস্থ থাকত না তখন কেবল সে একাই সুস্থ থাকত।

একটা বড় অদ্ভুত কাণ্ড এই যে ডাঙ্গায় কখনও কেউ সমুদ্র পীড়ায় আক্রান্ত হয় না। সাগরে গেলে অনেককে, জাহাজ ভর্তি মানুষকে খুবই কাহিল অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু ডাঙ্গায় সমুদ্র পীড়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এমন মানুষের দেখা আমি আজও পাইনি। প্রতিটি জাহাজে যে হাজার হাজার বাজে নাবিক গিজগিজ করে, ডাঙ্গায় এসে ওরা কোথায় লুকোয় সেটাও আমার কাছে একটা রহস্য।

ইয়ারমাউথের জাহাজে যে লোকটাকে একদিন দেখেছিলাম বেশিরভাগ মানুষই যদি তার মত হত তাহলে এই রহস্যটার সমাধান আমি করে ফেলতে পারতাম। মনে পড়ে, ব্যাপারটা ঘটেছিল সাউথ-এণ্ড জেটি থেকে একটুখানি দূরে। জাহাজের পোর্টহোলের ভেতর দিয়ে শরীরের অনেকটা বের করে লোকটা ঝুঁকে ছিল বিপজ্জনকভাবে। আমি ছুটে গেলাম তাকে বাঁচাতে। ঘাড় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম, ‘এ্যাই মিঞা, আরেকটু ভেতরের দিকে চলে এসো, তুমি তো নিচে পড়ে যাবে।

জবাবে সে শুধু বলল, ‘আহা ভাই, পড়ে গেলেই মরে বাঁচি।’ এছাড়া আর কিছুই সে বলল না। ওই অবস্থাতেই তাকে ফেলে আসতে হয়।

তিন সপ্তাহ পরে সেই লোকটার সাথেই আমার দেখা হয়ে যায় এক স্নানাগার সংলগ্ন কফি রুমে। গল্প করছে সে তার সমুদ্র যাত্রা সম্পর্কে, উৎসাহ ভরে বোঝাচ্ছে সমুদ্র তার কত প্রিয়।

লাজুক গোছের এক যুবকের ঈর্ষান্বিত প্রশ্নের জবাবে সে বলছে, ‘আমি একজন দক্ষ নাবিক। হ্যাঁ, স্বীকার করি একবার আমার কিছুটা খারাপ লেগেছিল। হর্ন অন্তরীপের একটু দূরে। পরদিন সকালে আমাদের জাহাজটা বিধ্বস্ত হয়।’

আমি বলে উঠলাম, “আরে, সাউথ-এও জেটির কাছে সেদিন তুমিই না বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলে? এবং জাহাজ থেকে নিচে নিক্ষিপ্ত হতে চেয়েছিলে?’

জবাবে মুখচোখে বিভ্রান্তির ভাব ফুটিয়ে সে বলল, ‘সাউথ-এণ্ড জেটি?’

‘হ্যাঁ, তিন সপ্তাহ আগে ইয়ারমাউথ যাওয়ার পথে?’

‘ওহ্ হো…হ্যাঁ-হ্যাঁ,’ চেহারায় ঔজ্জ্বল্যের ভাব এনে বলে উঠল সে, ‘এখন আমার মনে পড়ছে। সেদিন বিকেলে খুব মাথা ধরেছিল আমার। আচার খাওয়ার কারণে, বুঝলেন? বাজে আচার। আপনিও খেয়েছিলেন নাকি?’

নিজের বেলায় সমুদ্রপীড়া ঠেকানোর এক চমৎকার উপায় আমি আবিষ্কার করেছি। সেটা হলো টাল সামলানো বা নিজ দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা। ডেকের মাঝখানে আপনি দাঁড়ান। জাহাজ দুলতে শুরু করলে, সামনে-পেছনে এপাশে—ওপাশে আন্দোলিত হতে থাকলে শরীরটাকে তার সাথে মিল রেখে ঘোরান -যাতে তা সব সময় সোজা থাকে। জাহাজের সামনের দিকটা ওপর দিকে উঠে গেলে আপনি সামনে ঝুঁকে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ডেকটা আপনার নাকের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, আর যখন পেছনের দিকটা ওপরে উঠে যাবে তখন পেছন দিকে হেলে থাকবেন। ঘণ্টা দু’ঘণ্টার জন্যে এই প্রক্রিয়াটা খুবই ভাল, তবে সপ্তাহকাল ধরে এ প্রক্রিয়া চালানো যায় না।

জর্জ বলল, ‘চলো আমরা নদীতে যাই।’ তার মতে আমাদের তাজা বাতাস, ব্যায়াম আর নির্জনতা দরকার। অনবরত স্থান পরিবর্তন আমাদের মনকে ব্যস্ত রাখবে (হ্যারিসের যেটুকু মন আছে ওটাকেও), কঠোর পরিশ্রমে ক্ষুধা বাড়বে এবং ভাল ঘুম হবে।

হ্যারিস বলল, তার মতে জর্জের সব সময় যে নিদ্রালু ভাব রয়েছে সেটাকে বাড়িয়ে দিতে পারে এমন কিছু ওর করা উচিত হবে না, কারণ, তা বিপজ্জনক হতে পারে। শীত বলো, গ্রীষ্ম বলো, সব ঋতুতেই দিনের মধ্যে যখন সময় মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা, সে ক্ষেত্রে জর্জ এখন যা ঘুমায় তার চাইতে সে বেশি ঘুমাবে কেমন করে তা হ্যারিস বুঝতে পারছে না। তবে ওর মনে হয় যে জর্জ যদি এর চাইতে বেশি ঘুরাতে চায় তাহলে মরে গেলেই পারে এবং মরে গিয়ে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচটাও বাঁচাতে পারে।

নদীতে ভ্রমণ সম্পর্কে হ্যারিস কোন আপত্তি তুলল না। আমারও আপত্তি ছিল না। আমি আর হ্যারিস বললাম যে জর্জের আইডিয়াটা ভাল। বললাম এমন স্বরে যাতে কোনক্রমে এরূপ বোঝায় যে জর্জের মগজ থেকে ওরকম একটা বুদ্ধিমানের মত প্রস্তাব বেরিয়ে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।

এই প্রস্তাবে বিস্মিত বা উৎফুল্ল হয়নি শুধু একজন। সে হচ্ছে মণ্টমোরেন্সি। নদীর ব্যাপারে মন্টমোরেন্সির বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।

তার কথা হলো ‘তোমাদের জন্যে ওটা বেশ ভালই। তোমরা ওটা পছন্দ করো। কিন্তু আমি? আমি করিনে। আমার ওতে কিছুই করার নেই। দৃশ্য শোভা দেখে বেড়ানো আমার কাজ নয়। ধূমপানও করি না। আমি একটা ইঁদুর দেখলে তোমরা নৌকা থামাবে না। আমি ঘুমোলে তোমরা নৌকা নিয়ে পাগলামি কাণ্ডকারখানা চালাবে, আর আমি গড়িয়ে পড়ে যাব পানিতে। আমার মত চাইলে আমি গোটা ব্যাপারটাকেই আস্ত বোকামি বলব।’

দেখা গেল আমরা তিনজন পক্ষে, একজন বিপক্ষে। কাজেই, ৩-১ ভোটাধিক্যে প্রস্তাবটা পাস হয়ে গেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *