তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো – ৫

নিহিন খুঁজে পেল কলরবকে। যে এতদিনে অন্য কারো হয়ে গেছে। কি দরকার ছিল এতকিছু ঘটার! ভালোই তো ছিল। কেনই বা বাবা এতদিন পর সবকিছু বলতে গেল, আর কেনোইবা ও হন্যে হয়ে খুঁজতে গেল! কিংবা খুঁজে না পেলেও একদিক দিয়ে ভালো হতো, অনন্তকাল ধরে চলত এ খোঁজাখুঁজি, বেশ হতো। খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষার মাঝেও এক ধরনের ভালোলাগা ছিল। কিন্তু আজ তো সবটাই শেষ হয়ে গেল। পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে ওর। তার মানে নিহিনের বাবার কাছে যখন শুনেছে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তার পর ও বিয়ে করেছে। ৪ টা বছর কোনো কথা না বলে, কোনো সাপোর্ট না পেয়েও অপেক্ষা করেছে কলরব। বিয়ে করার জন্য নিজেকে তৈরি করেছে। কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ এটা পারে তাই ভেবে অবাক হচ্ছে নিহিন! আর কষ্ট পাচ্ছে সে ভালোবাসার মানুষটা আজ হারিয়ে গেছে বলে। শুধু হারিয়ে গেছে তা না, অন্য কারও হয়ে গেছে। ঘরের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে কাঁদছিল আর এসব ভাবছিল নিহিন। হঠাৎ কান্নাটা থামানোর চেষ্টা করল; ভাবল, ধুর এতদিনে ও বিয়ে করবে এটাই তো স্বাভাবিক আর বিয়ে করলে তো বাচ্চা হবেই, শুধু শুধু এত আবেগে ভেসে যাওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি, সে বয়সও আর নেই। ওর নিজের জীবনেও বহু কিছু ঘটে গেছে। কিন্তু নিহিনের কান্নার বেগ আরও বাড়ল। মানুষের মন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অবাধ্য জিনিস!

আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না কলরবের। ইদানীং তো বিছানায় শোয়ার আগে ঘুম চলে আসে। কিন্তু আজ যে আসবে না তা খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে ও। এপাশ-ওপাশ করছে শুধু। লাইট বন্ধ করলে মনে হচ্ছে অনেক বেশি অন্ধকার, আর লাইট জালালে মনে হচ্ছে আলোটা চোখে লাগছে। হঠাৎ হঠাৎ গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, যতই পানি খাচ্ছে তৃষ্ণা মিটছে না। এসব তো হবেই, নিহিন ফোন করেছে আজ। বরাবরই কলরব যেকোনো ব্যাপারে কন্ট্রোল করতে পারে নিজেকে। কিন্তু এই একটা মানুষের ব্যাপারে কোনো কন্ট্রোলই ছিল না। সেই কন্ট্রোলটা এতদিনে এসেছে বলেই ধারণা ছিল ওর। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে ধারণাটা ভুল! যাকে ছাড়া জীবনটাই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে তার কন্ঠস্বর শুনে এত উতলা হওয়ার কোনো মানে হয় না, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার সে হচ্ছে। এত বছর ধরে একটু একটু করে ঠিক করা সবকিছু মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। কেন এমনটা হলো? নিহিন যদি আসারই ছিল ওর জীবনে তবে আরো আগে এলো না কেন? এখন তো কিছুই আর করার নেই কলরবের। হাত পা বাঁধা। এসব ভাবতে ভাবতেই অস্থির রাতটা কাটছিল ওর। শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না, ওঠে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটে টান দিয়ে আবার ভাবতে বসলো, একটা ফোনকল পেয়ে বোকার মতো এতকিছু ভাবার কী আছে? ওর বিয়ে হয়েছে, নিশ্চই বাচ্চাকাচ্চাও হয়েছে, এতদিন পর সব জানতে পেরে হয়তো খারাপ লেগেছে তাই ফোন করেছে। এসব নিয়ে এত ভাবার আসলে কিছু নেই। কিন্তু হতচ্ছাড়া মনটা তো এসব যুক্তি মানছে না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু পুরুষ মানুষের এই এক সমস্যা, যতই অস্থির লাগুক, যতই বুকটা ভার হয়ে থাক কান্নার কোনো সুযোগ নেই। কেবল একটা দীর্ঘশ্বাসের মধ্য দিয়েই বুকের চাপা কষ্টগুলো দূর করতে হয়।

পৃথিবীর ছোট্ট একটি দেশের ছোট্ট শহরের দুটি প্রান্তে দুটি মানুষের পরস্পরের জন্য এ হাহাকারের কথা তাদের দুজনের কেউই জানল না।

চার-পাঁচ দিন পার হয়ে গেছে নিহিনের সাথে কথা হয়েছে কিন্তু অস্থিরতা কাটেনি কলরবের। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে, তবু যেন কিছু ঠিক নেই। কলরবের খুব ইচ্ছে হয় নিহিনকে কল করতে, কথা বলতে। তার চেয়ে বেশি ইচ্ছে হয় একবার নিহিনকে দেখতে। কিন্তু দেখলে নিজেকে সামলাতে পারবে তো? পরক্ষণেই ভাবল না পারার কি আছে? হি ইজ আ ম্যান আফটার অল। কিন্তু দেখা করার কথা নিহিনকে বলবে কীভাবে? এই কদিনে কতবার ফোন করতে চেয়েছে, ফোনটা হাতে নিয়েও রেখে দিয়েছে অসংখ্যবার। কোথায় যেন একটা জড়তা। অফিস থেকে ফিরে কাপড় না পালটেই শুয়ে পড়েছে কলরব। শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিল। এমন সময় কলরবের বাবা শওকত সাহেব এসে বললেন,

“কিরে অফিস থেকে এসেই শুয়ে পড়লি? শরীর টরির খারাপ করেনি তো?”

“না বাবা, এমনি ভালো লাগছে না।”

“কেন? অফিসে কিছু হয়েছে?”

“না, সব ঠিক আছে, জাস্ট ক্লান্ত লাগছে খুব।”

“কী বলছিস? তুই তো সহজে ক্লান্ত হোস না।”

কলরব হেসে বলল,

“বুড়া হয়ে যাচ্ছি বোধহয়।”

“নিজের বাপের কাছে বলছিস এ কথা? সাহস তো কম না!”

শওকত সাহেব কলরবের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

“কিছু কি হয়েছে? কদিন ধরেই তোকে অন্যমনস্ক দেখছি।”

“তেমন কিছু না বাবা।”

“নিহিন রিলেটেড কিছু?”

“আমি তোমাকে বলব, একটু সময় দাও।”

“না মানে নিহিন ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে তোকে এত অস্থির হতে দেখিনি কখনো। তাই বললাম।”

কলরব হেসে বলল,

“কে বলেছে তোমাকে? মা মারা যাওয়ার সময় আমার কী অবস্থা হয়েছিল তা কি তুমি ভুলে গেছ? তারপর কল্প ছোটবেলায় যখন বসুন্ধরা সিটিতে হারিয়ে গিয়েছিল আর গত বছর যখন এক্সিডেন্ট করেছিল, তখন তো শুধু অস্থির না পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি।”

“সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তোর মা তো কবেই গেছে, আর কল্প তো বাসায়ই আছে, ভালো আছে। তো নিহিন ছাড়া তোর অস্থিরতার আর কোনো কারণ দেখছি না।”

“আচ্ছা, কল্প কোথায়?”

“ওর টিচার এসেছে, পড়ছে। কথা ঘুরাস না। বিরক্ত লাগছে।”

কলরব হাসল.. শোয়া থেকে ওঠে বসে বলল,

“হ্যাঁ নিহিন! ফোন করেছিল কয়েকদিন আগে।”

“হঠাৎ!”

“জানি না, তবে বলল ওর বাবা নাকি সব বলে দিয়েছেন ওকে। ওর হয়তো খারাপ লেগেছে আর তাই ফোন করেছে।”

“নাম্বার পেল কোথায়?”

“জানি না বাবা। এ ব্যাপারে ও কিছু বলেনি, আর আমিও সেভাবে জিজ্ঞেস করিনি। আসলে ও কী বলেছে আর আমি কী বলেছি কিছুই জানি না। মাথাটা কাজ করছিল না তখন

“সেটাই তো স্বাভাবিক। যাই হোক ওর কি আসলেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল?”

“এগুলো কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি বাবা। তবে বিয়ে তো হয়েছেই, তাছাড়া যদি বিয়ে না হতো ওর বাবা নিশ্চই আমার সাথে যোগাযোগ করত। কারণ যেদিন সে জানতে পেরেছিল সত্যি কোনো যোগাযোগ না করে ৪ বছর ধরে আমি অপেক্ষা করেছিলাম, আর সে তার দেওয়া কথা ভুলে গিয়েছিল তখন কিন্তু সে অপরাধবোধে ভুগছিল, সেটা তার চেহারায় স্পষ্ট ছিল এবং সে স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছিল। যাই হোক আমি সরাসরি জিজ্ঞেস করিনি।”

“তাহলে কী বলেছিস? এতদিন পর মেয়েটা ফোন করল, আর এসব খোঁজ খবর নিবি না?”

“মাথা কি তখন ঠিক ছিল বাবা? ওর প্রতি আমার অনুভূতিগুলো তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। তাই এসব প্রশ্ন তোমার মুখে মানায় না।”

একটু থেমে শওকত সাহেব বললেন,

“কল্পর কথা বলেছিস?”

“হ্যাঁ।”

“এখনই ওর কথা বলতে গেলি কেন?”

“বাবা, এখন কল্পই আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। আর বাবা তুমি বড্ড বেশি ভেবে ফেলছ। এজন্যই তোমাকে বলতে চাইনি। আমাকে একলা ছেড়ে দাও প্লিজ।”

খানিকটা রেগে গেল কলরব। শওকত সাহেব বললেন,

“আচ্ছা, সরি। কিন্তু তুই উঠবি তো। ফ্রেশ হয়ে নে, তারপর কল্পর নামে নালিশ আছে, একটা ব্যবস্থা এবার করতেই হবে।”

“কেন আবার কী করেছে?”

বিছানা ছেড়ে ওঠে টাই খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল কলরব। শওকত

সাহেব বললেন,

“নতুন এক বায়না ধরেছে, তুই বকবি বলে এতদিন তোকে বলিনি। এখন আর না বলে পারছি না। এত বাড়াবাড়ি করছে।”

“বায়নাটা কী?”

“ওর ফেসবুক একাউন্ট চাই। ওর সব ফ্রেন্ডের নাকি আছে।”

চমকে উঠে একটু জোরেই বলে উঠল,

“কী?”

“হ্যাঁ।”

“ওর কলিজাটা কি ইদানীং একটু বেশি বড় হয়ে গেছে নাকি? ফেসবুক একাউন্ট খোলার কথা আমাকে বলতে বলবে।”

“দ্যাখ, ওকে কিন্তু তুই একটু বেশিই শাসন করিস। বকিস না তো, তোকে তো ভয় পায়, তুই বুঝিয়ে বললেই বুঝবে।”

“শাসন করি দেখেই তো ভয় পায়, নাহলে জীবনেও মানত না। তাছাড়া খালি শাসন করি তা তো না। কয়টা বাবা তার ছেলের সাথে এত বন্ধুর মতো মেশে দেখাও দেখি।”

“কেন আমিই তো তোর সাথে বন্ধুর মতো মিশি, আবার শাসনও করি না।”

“কেন বাবা কল্পকে আদর করার সময় তো উজার করে করি, তখন মানা করো না কেন?”

“তোর ছেলে, তুই যা ভালো বুঝিস কর। আমার বাবা বাচ্চাদের এত শাসন করা একদম পছন্দ না।”

একথা বলেই গজগজ করতে করতে বেড়িয়ে গেলেন শওকত সাহেব। কলরব কাপড় বদলে হাত মুখ ধুতে গেল। মুখে পানির ঝাপটা দিয়েই হেসে ফেলল কলরব। কল্প ফেসবুক ব্যবহার করতে চাইছে। কী দুনিয়া এলো! তারপর হঠাৎ একটা ঝটকা লাগল, মনে হলো নিহিনকে ফেসবুকে খুঁজে দেখলেই তো হয়, খুঁজে পেলে বর্তমান ছবি দেখা যাবে। আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠাবে। অ্যাড নিশ্চই করবে। তখন কথা বলাটা অনেক সহজ হবে। না জিজ্ঞেস করেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে! হাতটা কোনোরকমে মুছলো ট্রাউজারে, মুখে তখনও পানি। ঝটপট ঘরে গিয়ে সার্চ দিয়ে ফেলল, যথারীতি হাজারটা নিহিন চলে এলো। পুরো নামটা যেন কী! হ্যাঁ মনে পড়েছে, নিহিন ফারিয়া। আবার সার্চ দিলো, এখনও অনেকগুলো নিহিন ফারিয়া চলে এলো কিন্তু নিজের জনকে চিনে নিতে সমস্যা হয়নি কলরবের। অনেক পরিবর্তন এসেছে, অনেক বড় হয়েছে, আর এত বেশি সুন্দর হয়েছে যে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। পরিপূর্ণতা যেন ঠিকরে পড়ছে। সেই বাচ্চা মেয়েটা তো নেই তবে সে চাহনি, সে ভুবন ভুলানো হাসি সবই আগের মত হাজারটা কথা বলে। বুকের মধ্যে কাঁপন দিয়ে উঠল কলরবের।

ছবিগুলোতে প্রাইভেসি দেওয়া তাই আর কোনো ছবি দেখতে পেল না। কী মনে করে হঠাৎ ‘এবাউট’ এ চলে গেল। দেখতে পেল রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিংগেল। তার মানে কি ও বিয়ে করেনি! তবে ওর বাবা যে বলেছিলেন ওর বিয়ে হয়ে গেছে? অবশ্য ফেসবুকে অনেকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিংগেলই দিয়ে রাখে। কিন্তু নিহিনও কি তাই করেছে? দ্বিধায় পড়ে গেল কলরব। যাই হোক, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো, অ্যাড করুক তারপর টাইমলাইন ঘেঁটে সব প্রশ্নের উত্তর বের করা যাবে। টাওয়াল নিয়ে মুখটা মুছে আবার নিহিনকে দেখতে লাগল। এমন সময় লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকল কল্প। বলল,

“পাপ্পা, আমাকে ডেকেছ?”

কল্পকে বকতে বা শাসন করতে আর ইচ্ছে হলো না কলরবের। কাছে আসতেই ওকে কোলে তুলে নিল কলরব। হেসে বলল,

“কি রে তোর নাকি ফেসবুক একাউন্ট লাগবে?”

“তুমি না করলে লাগবে না।”

মাথা নিচু করে বলল কল্প। কলরব বলল,

“দাদাভাই যে বলল তোর লাগবে।”

“এক্‌চুয়েলি পাপ্পা, আমার সব ফ্রেন্ডদের ফেসবুক একাউন্ট আছে। কিন্তু আমার নেই বলে আমি কারো সাথে কানেক্টেড থাকতে পারি না।”

হেসে ফেলল কলরব। বলল,

“কেন? তোর ফোন তো সবসময় দাদাভাইয়ের কাছে থাকে, ফোন করে কানেক্ট করবি ওদেরকে।”

“ওক্কে পাপ্পা।”

মন খারাপ করে বলল কল্প। কলরব কল্পকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই ক্লাস সিক্স-সেভেনে উঠলেই তোকে ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেবো। তার আগে এটার দরকার নেই বাবা।”

“ওক্কে পাপ্পা।”

“তোর তো অনেক কিছু আছে যা তোর ফ্রেন্ডদের নেই, যা ওরা কারোর কাছে চেয়েও পায় না। তাহলে তুই সামান্য ফেসবুকের জন্য মন খারাপ করবি?”

“আমার যা আছে ওদেরও তো তা আছে।”

“তাই?”

“হ্যাঁ।”

“ওদের কি আমার কল্প সোনার মতো বিউটিফুল হ্যান্ডরাইটিং আছে?”

“আশফাকের আর হৃদির হ্যান্ডরাইটিংও বিউটিফুল।”

“ওকে, ওদের কি কল্পর মতো সুইট গানের গলা আছে?”

“ইশিকার গানের গলা বেস্ট।”

“ওকে দেন.. ওরা কি কল্পর মত সবসময় ক্লাসে ফার্স্ট হয়?”

“না।”

মুখে হাসি ফুটল কল্পর। কলরব আবার জিজ্ঞেস করল “ওরা কি কল্পর মত এভরি উইকেন্ডে ঘুরতে যেতে পারে?”

“না।”

হাসির রেখা বড় হলো কল্পর। কলরব আবার জিজ্ঞেস করল, “ওদের কি কল্পর দাদাভাইয়ের মত দ্যা গ্রেট দাদাভাই আছে?”

“না।”

হেসে হেসে বলল কল্প। কিন্তু হঠাৎই হাসিটা কোথাও মিলিয়ে গেল। কলরব জিজ্ঞেস করল,

“আবার কী হলো?”

“ওদের সবার মা আছে পাপ্পা।”

থেমে গেল কলরব। আর কিছুই বলার রইল না। মনটা খারাপ হয়ে গেল কলরবেরও। কল্প বোধহয় বুঝতে পারল, সাথে সাথে কোল থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কলরবের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

“বাট মাই পাপ্পা ইজ দ্যা বেস্ট পাপ্পা ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। কারোর নেই এমন পাপ্পা, কারোর নেই। আই এম সরি পাপ্পা। আমি কিচ্ছু চাই না, কিচ্ছু না, প্লিজ স্মাইল।”

অনেকদিন হয়ে গেছে কলরবের সাথে কথা হয়েছে, একবারই। আর কল দেওয়ার সাহস হয়নি। এখন তো ও বিবাহিত, কথা বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না। কিন্তু ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে নিহিনের। একবার, শুধু একবার। একবার দেখা তো করা যেতেই পারে। কিন্তু ও একা চাইলেই তো হবে না। কলরবও তো পারত একবার কল করতে, এখন তো নিহিনের ফোন নাম্বার আছে ওর কাছে, কিন্তু তা তো করেনি। তাই আবার কল দিয়ে, দেখা করতে চেয়ে বেহায়াপনা করার কোনো মানে হয় না। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো বুকের ভেতর থেকে। না এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে হবে না, মিড টার্মের পর ক্লাস শুরু হয়ে কতদিন কেটেও গেছে অথচ অর্ধেক খাতাও দেখা হয়নি এখনো, রাত ৮ টা বাজে, এখন খাতা দেখা শুরু করলে বেশ কিছু খাতা দেখা যাবে। খাতা দেখতে বসে পড়ল নিহিন। কিছুক্ষণ পর ওর বড় বোন মোহনার কল এলো,

“হ্যালো নিহিন..”

“আপু বলো।”

“ফেসবুকের ইনবক্সে ওই ছেলেটার ছবি পাঠিয়েছি, দেখ হিরোর মতো দেখতে।”

“ঠিক আছে আপু, আমি পরে দেখে নেব। এখন একটু ব্যস্ত, খাতা দেখছি।”

“না, এসব বাহানা শুনতে চাই না আমি। তুই এখনই দেখবি।”

“বাহানা না, আমি সিরিয়াসলি খাতা দেখছিরে বাবা।”

“এত কথা শুনতে চাই না। ওরা তোর ছবি দেখেই তোকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে, এবার তোকে সামনাসামনি দেখতে চায়, তার আগে তোর দেখা প্রয়োজন। এখনি দেখে আমাকে জানা কেমন লাগল, আমি অনলাইনেই আছি।”

একথা বলেই মোহনা ফোনটা রেখে দিলো। অগত্যা ফেসবুকে লগইন করল নিহিন। তা নাহলে মোহনা আবার তুলকালাম বাধাবে। ইনবক্সে ঢুকতেই মোহনার মেসেজটার পাশ কাটিয়ে একটা মেসেজ রিকোয়েস্টে চোখ আটকে গেল নিহিনের, নিশ্বাস বন্ধ হবার যোগাড়! মেসেজটা ছিল এরকম, “হ্যালো, কলরব বলছি” কিন্তু প্রোফাইল নাম “সাদমান সাদিফ। প্রোফাইলে ঢুকল নিহিন। প্রোফাইল দেখে বুঝতে পারল এটা কলরবের প্রোফাইল। আর অবাক হলো এটা দেখে যে সাব্বির মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। একসেপ্ট করে দেখতে পেল আর ২০ মিনিট আগে কলরব অনলাইনে ছিল। ইশ, কেন আরো ২০ মিনিট আগে এলো না! সাব্বির অনলাইনেই ছিল। নিহিন ওকে নক করল,

“দোস্ত, সাদমান সাদিফ কে? চিনিস?”

“আরে চিনি মানে, আমার পেয়ারের লোক। কিন্তু ক্যান? তুই ভাইরে পাইলি কই?”

“আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, তোকে মিউচুয়াল দেখলাম।

“ “ওহ, অ্যাড করতে পারিস.. খুব ভালো মানুষ।”

“আচ্ছা, তোর কেমন পেয়ারের লোক সে?”

“আসলে সে আমার বস ছিল। কিন্তু রিলেশন ভাই ভাই, একলগে সিগ্রেট খাই টাইপ ভাই। এখন অবশ্য সে আমাদের অফিসে নাই। কিন্তু সম্পর্ক আছে আগের মতই।”

“হারামি, কুত্তা, ফাউল।”

“একি! গালি দেস ক্যান?”

“যখন তোরে বললাম কলরবকে খুঁজে দিতে তখন বললি এ নামে কেউ নেই আর এখন বলো ভাই ভাই সম্পর্ক?”

সাব্বির আকাশ থেকে পড়ল। বলল,

“মানে?”

“তোর সাদমান সদিফই তো কলরব।”

“তুই কি শিওর?”

“শিওর মানে? আমি ওকে দেখে চিনবো না?”

সাব্বির সঙ্গে সঙ্গে কল করল নিহিনকে। নিহিন ফোন রিসিভ করতেই বলল,

“দোস্ত তোকে কি কলরব পরি বলে ডাকত?”

“হ্যাঁ। তুই কী করে জানলি?”

অবাক হয়ে বলল নিহিন। সাব্বির খুব এক্সাইটেড গলায় বলল,

“দোস্ত আসলে কর্পোরেট লাইফটাই তো এমন আমরা কারো ডাকনাম ধরে ডাকি না, জানিও না। গুড্ডু, লাড্ডু, চিংকু, পিংকু কত নামই তো থাকে, কলরব নামটাও সাদমান ভাইয়ের ওই টাইপ কোনো নাম হবে। জীবনেও শুনিনি, বুঝবো কীভাবে? ওর পুরো নামটা যদি তুই সেদিন বলতে পারতি, সেদিনই পেয়ে যেতি। ইশ, কতবার যে ওর মুখে তোর কথা শুনেছি কিন্তু ও কখনো কাহিনি বলেনি, কীভাবে তোর সাথে সম্পর্ক হয়েছিল, কীভাবে ব্রেকআপ হয়েছিল কিছুই বলেনি কোনোদিন, আর তোর নামটাও বলেনি কোনোদিন, জিজ্ঞেস করলেই বলত, “ওর বিয়ে হয়ে গেছে, কী লাভ এখন ওর নাম ধাম মানুষকে বলে। তাই কাউকেই ওর নাম বলি না। ও আমার পরি, এ নামটাই নাহয় জানুক সবাই। তাছাড়া এমনও তো হতে পারে তুই ওর স্বামী, কিংবা তোর বড় ভাই ওর স্বামী। কী লাভ ঝামেলা করে। আমি চাই ও ভালো থাকুক।”

নিহিনের কেন যেন কান্না পাচ্ছে। ও পরি ছিল তার! সে তার পরির জন্য কত ভাবত! নিহিন কোনো কথা বলছে না, চুপচাপ শুনছে। সাব্বির আবার বলল,

“তোর প্রেমকাহিনি তোর মুখে তো আগেই শুনেছিলাম, কিন্তু একবারও দুইটা স্টোরি রিলেট করা থাক দূরে চিন্তাও করিনি। আর তুই একবারও বলিসনি ও তোকে পরি বলে ডাকত। যাই হোক ফরগেট ইট। আগে বল, তুই কি জানিস সাদমান ভাই তোকে কতটা ভালোবাসে?”

কী বলবে বুঝতে পারছে না নিহিন। আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ওর কন্ঠটা, “কী বলছিস! এসব ও বলত? কিন্তু ও তো ম্যারিড। এসব বলবে কেন?”

“বলছে তোরে? তোর জন্য সে আজ পর্যন্ত বিয়ে করেনি।”

অবাক হলো নিহিন! হিসেব মিলছে না কিছুতেই। বলল,

“কী বলছিস তুই? তোকে আর তিথিকে সেদিন বলেছিলাম না কলরব কে কল করেছিলাম, সেদিন তো আমি ওর ছেলের কণ্ঠ শুনেছি। জিজ্ঞেস করলাম কে কথা বলছে, ও বলল ওর ছেলে।”

“কল্প? কল্প ওরই ছেলে। জন্মের দুই ঘণ্টা পর থেকে যাকে কোলে নিয়ে আজ পর্যন্ত বাবার আদর দিয়ে এত বড় করেছে সে কি নিজের ছেলে না?”

“কী বলছিস!”

“ঠিকই বলছি। তোকে এতটাই ভালোবাসে যে অন্য কাউকে নিয়ে থাকা সম্ভব না তার পক্ষে, তাই বিয়েই করেনি। কিন্তু বাবা হতে চেয়েছিল তাই বাচ্চা অ্যাডপ্ট করেছে। আর আমরা দু’একজন ছাড়া কেউ জানেও না যে কল্প অ্যাডপ্টেড, সবাই জানে ও সাদমান ভাইয়ের নিজের ছেলে, এমনকি ওর আত্মীয়স্বজনরাও। সবাইকে এটা জানানোর কারণ হলো ভাই কল্পকে কখনোই জানতে দিতে চায় না যে ও তার নিজের ছেলে না।”

নিহিনের মাথা ঘুরছে, কী শুনছে এসব! কী করবে এখন? কল করবে কলরবকে? নাকি ওর বাসায় চলে যাবে সাব্বিরকে নিয়ে? সাব্বির নিশ্চই ওর বাসা চেনে। না এটা ঠিক হবে না, তাহলে কী করবে? কেন এত অস্থির লাগছে, এত কেন পাগল পাগল লাগছে? কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না নিহিন। মাঝে মাঝে মানুষ এত কেন অসহায় হয়ে পড়ে? মানুষের চেয়ে অসহায় প্রাণী বোধহয় আর একটিও নেই এ পৃথিবীতে!

অনেক উলট-পালট ভেবে শেষমেশ নিহিন ফোনটা করেই ফেলল। ওপাশ থেকে কলরব বলল,

“হ্যালো…”

অস্থিরতায় ফোন তো করে ফেলল, এখন কী বলবে! কিছুতেই বুঝতে পারছে না নিহিন। কোনোমতে বলল,

“কেমন আছ?”

“আছি তো ভালোই, তুমি ভালো আছ?”

“হুম, ভালো।”

“ম্যাডামকে ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো না। ঝুলেই রইলাম।”

“একটু আগেই অ্যাড করলাম। কিন্তু তোমার এ নাম আমি জানতাম না কেন?”

“অবশ্যই জানতে। বলেছিলাম না আমার মা পাখিদের ডাক অনেক পছন্দ করত তাই আমার নাম রেখেছিল কলরব, এটা ডাকনাম। কিন্তু আমার পুরো নাম সাদমান সাদিফ।”

“হ্যাঁ, মা কেন কলরব রেখেছিল সেটা বলেছ, কিন্তু পুরো নাম বলোনি তুমি।”

“বলেছি। মনে করে দেখ, যেদিন আমাদের প্রথম কথা হয়েছিল তার পরের দিনই বলেছি।”

চিন্তায় পরে গেল নিহিন। এত আগের কথা এত নির্দিষ্টভাবে বলছে ও, হতেও তো পারে। কলরব নিহিন কে চুপ থাকতে দেখে আবার বলল,

“তখনও তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করোনি তাই আমার তখনকার বলা কথা ভুলে গেছ, কিন্তু তোমার প্রত্যেকটি কথা আমার মনে আছে। কারণ.. থেমে গেল কলরব। আগের মত সব কথা হুটহাট বলতে পারছে না। নিহিন বলল,

“কারণ… কী?”

“না, কিছু না।”

“বলো..”

“বাদ দাও, আচ্ছা এতদিন পর আমাদের কথা হলো, তো একবার দেখাটাও হওয়া উচিত না?”

স্বস্তি পেল নিহিন। মনে মনে এটাই চাচ্ছিল, বলতে পারত না হয়তো। বলল,

“কবে দেখা করতে চাও?”

“আমার তো শুক্র শনি ছাড়া গতি নেই। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতেই অনেক রাত হয়ে যায়, তারপর তো আর সম্ভব না।”

“আমার শুধু শুক্রবার বন্ধ। তবে প্রতিদিন বিকেলের মধ্যেই বাসায় চলে যেতে পারি।”

“তাহলে এ শুক্রবারই দেখা করা যাক।”

“আচ্ছা।”

“ও, ভালো কথা.. আমার সাথে আমার ছেলে থাকবে। আসলে প্রতি শুক্র ও শনিবার ওকে নিয়ে বেড়াতে হয়। সারা সপ্তাহে সময় দিতে পারিনা, তাই এই দুইটা দিন ওর। সমস্যা নেই তো?”

“না না, ওকে নিয়েই এসো.. আমার কোনো সমস্যা নেই। কী কিউট করে কথা বলে। শুনেই দেখতে ইচ্ছে করছিল সেদিন।”

“হুম শুধু কথা না, ও আগাগোড়া পুরাটাই কিউট। বাপকা বেটা তো!” হাসল নিহিন। বলল,

“তাছাড়া জিজ্ঞেস করার কী আছে? আমি যে বাচ্চাদের পছন্দ করি তা ভুলে গেছ?”

“না ভুলিনি, কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি আমি বাচ্চাদের পছন্দ করি। তাই আমি এক বাচ্চার বাপ, আর তুমি এখনো অবিবাহিত, ঘটনা কী? বিয়ে করোনি কেন?”

নিহিন আসলেই বিয়ে করেছে কি না জানার জন্য আন্দাজে একটা ঢিল ছুড়ল কলরব। নিহিনের মন চাইল বলে দিক, তুমি কত বিয়ে করেছ! কিন্তু বলল না, নিহিন এটা কলরবকে দিয়েই বলাতে চায়। তাই বলল,

“তোমাকে কে বলল আমি বিয়ে করিনি?”

“না মানে তোমার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বলেছে।”

“ওটা যে মিথ্যে নয় তার কী গ্যারান্টি? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এমনটাই তো শুনেছিলে।”

“হ্যাঁ তা শুনেছি। তাহলে কি ধরে নেব তুমি বিবাহিত?” হেসে ফেলল নিহিন। কলরব বলল,

“এখানে হাসির কী আছে?”

“এমনি।”

দুজনেই চুপ হয়ে গেল। একসময় নীরবতা ভেঙে নিহিন বলল,

“তুমি ছেলের সাথে ছেলের মাকেও নিয়ে এসো।”

“ছেলের মা হাতছাড়া হয়ে গেছে।”

কলরব স্বস্তি পেল তার মানে নিহিনের বিয়ে নাও হতে পারে। কিন্তু বারবার মনে হতে লাগল, ওর ওই হাসির পেছনে কোন রহস্য নেই তো? বুকের ভেতর দামামা বাজতে লাগল!

অনেকদিন সাজে না নিহিন। কারণ ও সাজতে পছন্দ করে না। কিন্তু আজ সাজবে, কলরব খুব সাজ পছন্দ করত। কলরব তো শাড়িও খুব পছন্দ করত, খুব বলত শাড়ি পরতে, কিন্তু সেই ১৫ বছর বয়সে তো শাড়ি পরতেই শেখেনি নিহিন। তাই কখনো ওকে শাড়ি পরে দেখাতে পারেনি। আজ এত বছর পর প্রথম দেখা, আজ কি শাড়ি পরাটা ঠিক হবে? কলরব কী ভাববে? আবার নিজেই ভাবল এত ভাবাভাবির কী আছে? এখন ও বড় হয়েছে, শাড়ি তো পরতেই পারে। কিন্তু আজকাল অকেশন ছাড়া শাড়ি কেউ পরেই না। কী করবে? এসব ভাবতে ভাবতে শাড়ি একটা পরেই ফেলল। সাদা শাড়ি, জলপাই রঙের পাড়। সাদা প্রিয় রং কলরবের। নিশ্চই ওর ভালো লাগবে। আয়নার সামনে বসে চোখে কাজল দিলো। হালকা লিপস্টিক দিলো আর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। কোমর সমান চুলগুলো খোলাই রাখল। সব শেষ করে যখন আয়নার সামনে দাঁড়াল, নিজের রূপে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল। না এভাবে কলরবের সামনে কিছুতেই যেতে পারবে না ও। লজ্জায় মরেই যাবে। শাড়ি পালটে সাজের সাথে যায় এমন একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিল, এই ভালো।

কলরবের আজকের মত দুর্দশা ইহজীবনে কোনোদিনও হয়নি। কী পরবে বুঝে উঠতে পারছে না। আলমারির সামনে অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিহিন পাঞ্জাবি খুব পছন্দ করত। পাঞ্জাবি পড়লেই বলত, ‘তোমাকে পাঞ্জাবিতে এত মানায় কেন বলল তো?’ বাচ্চা মেয়েটা এটা বুঝত না যে পাঞ্জাবি পড়লে সব ছেলেদেরই মানায়। যাই হোক শুক্রবার যেহেতু পাঞ্জাবি পরাই যায়। কিন্তু না পরাটাই ভালো, শীতকাল বলতে গেলে চলেই এসেছে, তবু তো আজ প্রচণ্ড গরম পড়েছে। তাছাড়া নিহিন ভাবতে পারে ওর জন্য পঞ্জাবি পরেছে কলরব। আবার উৎসব উৎসব ভাব চলে আসবে পাঞ্জাবি পরলে। ধুর.. যে যা ভাবার ভাবুক, আজ নিহিনের সাথে দেখা করতে যাবে ও, এর চেয়ে বড় উৎসবের দিন আর কী হতে পারে? নিহিনের পছন্দের কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পরল। কলরব আর কল্প যেখানেই যায় একই কাপড় পরে বের হয়। কেনার সময়ই ইচ্ছে করে একই কাপড় কেনে কলরব। তাই কল্পও একই পাঞ্জাবি পরল। বের হওয়ার সময় সানগ্লাস পরে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনে পড়ল নিহিন বলত, ‘সানগ্লাস আমার একদম ভালো লাগে না, সানগ্লাস পরলে তোমার চোখ দেখা যায় না।’

সানগ্লাসটা খুলে রেখে দিলো। কল্প বলল,

“পাপ্পা, ইটস আ সান্নি ডে। তুমি সানগ্লাস কেন রেখে যাচ্ছো?”

“এমনি, ভাল্লাগছে না।”

একটু থেমে আবার বলল,

“আসলে আমরা যে এত সানগ্লাস পরি, পরা উচিত না কিন্তু। কারণ সানগ্লাস পরলে চোখ দেখা যায় না।”

“কিন্তু পাপ্পা, তুমি তো বলেছিলে সানগ্লাস সান এর আল্ট্রা ভায়োলেট থেকে আমাদের চোখকে প্রোটেক্ট করে।”

কলরব মহা বিপদে পড়ল। বলল,

“বড়রা না পরলেও হয় কিন্তু বাচ্চাদের পরা উচিত।”

“তাহলে তুমি যে সানগ্লাস কিনে কিনে ঘর ভরে ফেলেছ? আর এতদিন তো ডেইলি পরতে।”

কলরব বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“বাবা আমরা বেরোলাম।”

তারপর কল্পকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলল,

“তুই অনেক পেকেছিস। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছিস! তোকে আমি ল’তে ভর্তি করে দেবো কালই, তোর আর স্কুলে যেতে হবে না! ইয়া মোটা মোটা বই পড়বি!”

“নো পাপ্পা.. আই হেট বুকস!”

কলরব ড্রাইভ করছে, পাশে কল্প আবারও জেরা শুরু করে দিয়েছে।

“পাপ্পা, আমরা আজকে যে আন্টিটার সাথে মিট করতে যাচ্ছি, সে কি দেখতে সুন্দর, নাকি না?”

“কেন?”

“সুন্দর না আন্টিদের আমার ভালো লাগে না।”

“কেন? যারা অসুন্দর তারা কি তোকে মেরেছে?”

“নো, বাট কেন জানি ভালো লাগে না।”

“কী আর করা যাবে বল, সবাই তো আর আফরার মতো সুন্দর হয় না।”

“পাপ্পা!”

ধমক দিয়ে বলল কল্প। কলরব হেসে বলল,

“আচ্ছা আচ্ছা সরি, ওই আন্টিটা অনেক সুন্দর। তোর পছন্দ হবে।”

“সে কি ফরসা?”

“হুম, ফরসা তো।”

“মায়ের মতন?”

একটা ধাক্কা খেয়ে আবার সামলে নিল কলরব। বলল,

“হুম, তোর মায়ের মতন।”

“এহ্ আমার মায়ের মতো সুন্দর পৃথিবীতে আর কেউ নেই।”

সেটা অবশ্য ঠিক, এই আন্টিটা অত সুন্দর না হলেও সুন্দর।”

“আচ্ছা। পাপ্পা, আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে?”

“এইতো চলে এসেছি প্রায়।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *