তেইল্যা চোরা – ১২

১২

দাওয়ায় বসে একটা নেড়ি কুকুর তার ঘা চাটছে। আমেনা দরজা খুলতেই সেটা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে উঠানে নেমে তার ঘা চাটা অব্যাহত রাখলো। মজিদ আর রোশনী এখনো ঘুমিয়ে আছে, এখন আর গঞ্জে যেতে হয় না তাদের। আমেনা বসে বসে স্মৃতিচারণ করে, ফজর আলী নাক ডেকে ঘুমাত, সে ঘর ঝাড়ু দিতো, মজিদ লাটিম, নাটাই নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত। সেদিনগুলোতেও আমেনার মনে হাজারটা অপ্রাপ্তি ছিল, অভিযোগ ছিল, দুঃখ ছিল, হয়তো একটুখানি সুখও ছিল। কিন্তু এখন চিন্তা করলে সেই একটুখানি সুখই অপ্রাপ্তি, অভিযোগ দুঃখগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। কুকুরটার চিৎকারে আমেনার ধ্যানভঙ্গ হলো। লুঙ্গির সাথে খাকি শার্ট পরা দুজন লোক এসেছে, তাদের ঘাড়ের উপর দিয়ে রাইফেলের নল দেখা যাচ্ছে, তাদেরই একজন কুকুরের পিঠে লাথি বসিয়ে দিয়েছে, অস্ত্র পিঠে থাকলে মানুষের পা শিরশির করে, শুধু লাথি দিতে ইচ্ছা হয়। আমেনার বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো। একদৃষ্টিতে চোখ বুলিয়েই লোকগুলোর লালসা পরিসংখ্যান করে নিলো আমেনা। ঘোমটাটা মাথায় উঠিয়ে দিয়ে একটু আড়াল করে বসে বলল, ‘কারে চান আপনেরা?’

দুজনের মধ্যে পেটমোটা লোকটি বলল, ‘ঘরে পুরুষ মানুষ আছে?’

আমেনা সংকোচে বলল, ‘না, ঘরে পুরুষ মানুষ নাই। আপনেরা কার কাছে আইছেন?

পেটমোটা লোকটি নিতান্ত আপন ঘরের মতো দাওয়ায় বসে পড়ল, বলল, ‘পুরুষ মানুষ নাই হেইডা জানি। সোনাদানা আছে কিছু?’

‘আমরা গরীব মানুষ-খানাদানা পাই না, সোনাদানা পামু কই।’

‘খানাদানা নাই তো কী হইছে, গণ্যিমান্যি লোকেরা কি মরছে নাকি? তারা তোমাগো দেখবো, কলিম বেপারী খবর পাঠাইছেন, তোমাগো নিয়া যাইতাম, খানাদানা, সোনাদানা সবকিছুর ব্যবস্থা হইবো। ঘরে আরেকটা মাইয়া আছে না? হে কই?’

আমেনার মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো, সে কিছু বলতে পারছে না। তাকে ধরে নিয়ে গেলে মজিদের কী হবে? না প্রাণ থাকতে সে কিছুতেই যাবে না। আমেনা ঝট করে ঘুরে ঘরে ঢুকতে চাইলো। কিন্তু চিকন লোকটি তার শাড়ির আঁচল ধরে ফেলল, আঁচল নিয়ে টানাটানিতে আমেনার হাত চলে এলো লোকটার হাতে। আমেনা অন্যহাতে ঘরের পাল্লা ধরে রইলো। অমানুষিকভাবে চিৎকার করছে সে। ভেতর থেকে রোশনী দৌড়ে বেরিয়ে এলো, মজিদ কিছু না বুঝে কাঁদছে। রোশনী আমেনাকে ছাড়াতে গিয়ে নিজেও ধরা পড়ল। আমেনার হাত পাল্লা থেকে পিছলে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *