তৃতীয় পর্ব— ধূসর পাতায় যেই জ্ঞান
অরুণবাবুর বাড়ি থেকে সোজা অফিসে ফিরলাম। অমিতাভ মুখার্জি ব্যান্ডেল স্টেশন অবধি পৌঁছে দিয়েছিলেন। অফিসে এসে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলাম।
একটা জিনিস ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। এই হিলি আর ওয়ার্নারের গ্রেপ্তারের সঙ্গে দেবাশিসদার মৃত্যু কোনও না কোনও ভাবে জড়িত। আবার তারিণীর লুকিয়ে রাখা নাটকের বইয়ের লেখক শৈলচরণ সান্যাল-ও খুন হন একইভাবে। এদিকে বিশ্বজিৎ খুন হয়েছে। এই যে সব রিচুয়ালিস্টিক খুন, এর পিছনে কোনও একজন থাকা সম্ভব না। কোনও ব্যক্তিগত হিংসা বা লোভেও এই খুন না। কারণ যারা খুন হয়েছে তারা কেউই সমাজের উঁচুতলার মানুষ নয়। মধ্যবিত্ত বা ছাপোষা গৃহস্থ। শুধু… ভাবতে গিয়ে একটু নাড়া খেলাম। দেবাশিসদা আর বিশ্বজিৎ। দুজনেরই যৌনজীবন কিন্তু ছাপোষা মধ্যবিত্তের মতো ছিল না। দেবাশিসদা নিয়মিত বেশ্যাপাড়ায় যেতেন, আর বিশ্বজিতের এক হিজড়ার সঙ্গে সম্পর্ক। যদি ধরেই নিই এই যৌনতার কারণে দুজন খুন হয়েছেন, তাহলেও দেবাশিসদার আমাকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ আর বিশ্বজিতের কাছে পাওয়া সেই নোটের কোনও মানে উদ্ধার হয় না। আগে যা ভেবেছিলাম, ঠিক তাই। একশো বছর ধরে কোনও এক দানব ঘুমিয়ে ছিল। দানব না ভূত কে জানে? হয়তো এ-ই হিলির ভূত। এখন সেই ভূতকে আবার জাগিয়েছে কেউ বা কারা ইতিহাস নিজেকে ফের গুটিয়ে নিয়ে চলেছে একশো বছর আগের পথে।
আচ্ছা, তারিণী কি সেই কেস সমাধান করেছিল? প্রিয়নাথ? করলে কেমন করে? সমকালীন কোনও পত্রিকায় এই নিয়ে কিছু নেই। যে দুটো জায়গায় থাকতে পারত, প্রিয়নাথের দপ্তরের দারোগার পাণ্ডুলিপি আর তারিণীর ডায়রি। দুটোই মিসিং। কেউ যেন ইচ্ছে করে আমাকে অদ্ভুত একটা ভিডিও গেম খেলায় নামিয়ে দিয়েছে, যে খেলায় গোপন ক্লু ছড়িয়ে আছে এদিক ওদিক। কিন্তু লুকিয়ে রাখা। সেই ক্লু খুঁজে বার করে পরের ক্রুয়ের জন্য যেতে হবে। যদি সত্যিই ভিডিও গেম হত, তবে দুর্দান্ত হত, দারুণ এনজয় করতাম। কিন্তু মুশকিল হল এটা ঘোর বাস্তব। দুজন চেনা মানুষ এর মধ্যেই বীভৎসভাবে খুন হয়েছেন। তবু কেন যেন মনে হচ্ছে এর গোটাটাই টিপ অফ দি আইসবার্গ। আরও বড়ো কিছু আসছে। সামনেই। আর আমি ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার হয়ে বসে আছি।
ভাবতে ভাবতে প্রথমেই অরুণবাবুর দেওয়া ফাইলটা খুললাম। অনেকদিন অব্যবহারে ধুলো জমেছে। দারুণ সংগ্রহ ভদ্রলোকের। শুরুতেই স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রিয়নাথের অবসর গ্রহণের খবরের কাটিং। একটা ব্যাপার দেখে অবাক হলাম, এই সামান্য পরিসরেও হিলি আর ওয়ার্নারের কেসের উল্লেখ আছে। আর আছে কিছু বাংলা সংবাদপত্রের কাটিং। সবই ওই ১৮৯৫- ৯৬ নাগাদ। পত্রিকার নাম সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়। পিছনে পেনসিলে প্রিয়নাথের হাতে লেখা, “নীবারসপ্তকের জন্য”। তাতে যে কটা খবর দেখলাম, সবই হয় দাঙ্গার, নয় অস্বাভাবিক মৃত্যুর। এই ধরনের খবরে আমার আগ্রহ চিরকাল।
খবরগুলো পড়তে পড়তেই মেরুদণ্ড বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল যেন। এতক্ষণে ধীরে ধীরে আমার কাছে একটা ছবি পরিষ্কার হচ্ছে। আর সে ছবি বড়ো ভয়ানক। কাছে থাকা দেবাশিসদার নোটটা আমার কাছেই রাখতে বলেছিলেন অফিসার। সেটা আবার দেখলাম। তখন তাড়াহুড়োতে খেয়াল করিনি। এবার যা দেখতে পেলাম, তাতে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবার জোগাড়। আমি যা ভাবছি তা যদি ঠিক হয়, তবে তো…..
ফাইল ঘাটতে থাকলাম পাগলের মতো। যদি আর কিছু পাওয়া যায়। খবরের কাগজের কাটিং বাদে কিছু পাতলা পাতলা কাগজ, হ্যান্ডবিল, একটা ক্লিপ দিয়ে আঁটা। সঙ্গে একটা কাগজের টুকরোতে ছোট্ট নোট, “প্রিয়নাথের দারোগার দপ্তরের কপির ভিতর থেকে পাওয়া।” সেগুলো উলটে পালটে দেখলাম। বিশেষ দরকারি কিছু না। কালেকটরস আইটেম বলতে একটাই। জাদুকর গণপতি কোন এক লালমোহন মল্লিকের বাড়িতে প্রাইভেট শো দেখাবেন, তার বিজ্ঞাপন যেটা সবচেয়ে অবাক করল, তা হল বিজ্ঞাপনে এইচ এল সেনের উল্লেখ। যিনি “জনমধ্যে আনন্দ জন্মাওনার্থ এই মনোরম ছায়াবাজি প্রদর্শন করিবেন।” এই এইচ এল কি হীরালাল? তাহলে তো দারুণ ব্যাপার! জাদুকর গণপতি আর ভারতীয় সিনেমার পথিকৃৎ হীরালাল সেন এক মঞ্চে! জানি না এই খবর আর কেউ জানেন কি না। এর সঙ্গেই পাতলা লাল কাগজে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের কোনও এক দোকানের স্তনবর্ধক তেলের বিজ্ঞাপন। তেলের নাম রতিবিলাস তৈল। এ জিনিস আবার এখানে কেন? পাশে অর্ধনগ্ন এক মহিলার ছবি। নিচে বিজ্ঞাপন আর ছড়া লেখা। সেই ছড়াও সামান্য অশ্লীলতা ঘেঁষা। আজকাল এমন বিজ্ঞাপন যে করবে, তাকে মারধর খেতে হবে নিশ্চিত। বিজ্ঞাপনের একেবারে শেষে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। একেবারে ছোটো ছোটো অক্ষরে লেখা, “এইপ্রকার বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন— শ্রী শৈলচরণ সান্যাল ও শ্রী তারিণীচরণ রায়। ৩৫ নং ক্লাইভ স্ট্রিট, কলিকাতা।” সে কী! তাহলে তো এই বিজ্ঞাপন এই ফাইলে থাকার কারণ স্পষ্ট। আর প্রিয়নাথের সঙ্গে যোগের বিষয়টা আরও ক্লিয়ার হে হচ্ছে। মন দিয়ে বিজ্ঞাপনটাই পড়তে শুরু করলাম। এবার একটু খুঁটিয়ে।
শুরুতেই সাবধানবাণী। “ইগনোর করিবেন না”। ইগনোর কেন? উপেক্ষা কেন না? পরের লাইনটা আরও অদ্ভুত। একই বাক্যের মধ্যে পরপর কয়েকটা সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে। “এক এক ঔষধ”, “দুই স্তনে”, “তিনবার”, “পাঁচদিন” ব্যবহার করলেই নাকি কাজ হবে। কিন্তু তাই যদি হয় তবে আবার শেষের দিকে মাসে “আটদিন”ব্যবহার করতে বলছে কেন? আরে! ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮– সংখ্যাগুলোর এই সিরিজটা তো আমি চিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন আমাদের অঙ্ক স্যার শুভঙ্কর বিশ্বাস গোটা ক্লাস নিয়েছিলেন এই নিয়ে। সেই থেকে ভুলিনি। ১২০২ সালে খরগোশের বৃদ্ধি গুনতে গিয়ে ফিবোনাচ্চি নামের এক ভদ্রলোক এই সিরিজ বানান। সিরিজটা দেখতে একেবারে সোজা। প্রথমে শূন্য। তারপর ১। তারপরের সংখ্যা আসবে আগের দুটোকে যোগ করে। জীববিজ্ঞানীরা বলেন এই সিরিজ অনুযায়ী নাকি গাছের ডালে পাতার সজ্জা থেকে থেকে সূর্যমুখী ফুলের বীজের সজ্জা, এমনকি শামুকের খোলের প্যাঁচ সব হয়। স্বয়ং ঈশ্বর নাকি এই সিরিজ বানিয়েছেন। সংস্কৃতের মাত্রাবৃত্ত ছন্দ, চিনের গোপন বার্তাবহ অক্ষর ই-চিং, ইউরোপের ফ্রিম্যাসনদের কোড লেটার সব কিছুতেই এই গোল্ডেন সিরিজ থাকতই। ফ্রিম্যাসনদের পবিত্র সংখ্যা ছিল তেরো (৮+৫)। বিজ্ঞাপন, হাতে লেখা পোস্টারের মাধ্যমে তারা তাদের নানা গোপন বার্তা প্রকাশ্যেই ছড়িয়ে দিত শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আপাতদৃষ্টিতে এর একটা মানে থাকত ঠিকই, কিন্তু সেটা বহিরঙ্গের। আসল বার্তাটা ধরতে পারবে কেবল অন্য একজন ফ্রিম্যাসনই। অন্য কেউ না। তাদের যে-কোনো গোপন বার্তায় তেরো থাকবেই। শুভঙ্কর স্যার বলেছিলেন, ফ্রিম্যাসনদের নিয়ে এই সবই জানা গেছে মাত্র বছর তিরিশ আগে। বেশ কিছু ফ্রিম্যাসন সাংবাদিকদের ভিতরের খবর দিয়ে দেয়। এক ঝটকায় সব মনে পড়ে গেল। আর ঠিক তারপরেই মনে হল বড্ড বেশি ভেবে ফেলছি। একে তো এটা নিতান্ত মহিলাদের স্তন বাড়ানোর হ্যান্ডবিল, তাও দুই বাঙালির লেখা। এই নিয়ে এত বেশি ভাবার অবকাশ কোথায়? সবচেয়ে বড়ো কথা, গোটা বিজ্ঞাপনে কোথাও তেরো সংখ্যাটাই নেই। বিজ্ঞাপনে লেখা শিশির দামে চোখ পড়তেই মুখটা আপনাআপনি হাঁ হয়ে গেল। প্রতি বোতলের দাম, “বারো আনা এক পাই।” বারো আর এক তেরো।
এর একটাই মানে। আমি এই মুহূর্তে হাতে যেটা ধরে আছি, সেটা কোন সাধারণ বিজ্ঞাপন না। ফ্রিম্যাসনদের গোপন লিফলেট।
.
আমি যা বোঝার বুঝে গেছি। একশো বছর আগের কেসটা ঠিকঠাক না জানতে পারলে দেবাশিসদা কিংবা বিশ্বজিতের মৃত্যুরহস্য সমাধান করা যাবে না। ফ্রিম্যাসনদের নিয়ে কোথা থেকে শুরু করব বুঝে গেছি। প্রিয়নাথের শেষ লেখা আর তারিণীর খাতা পাইনি, কিন্তু যেটা পেয়েছি সেটা দিয়েই শুরু করা যাক বরং। তৈমুরের কাব্যগাথার মধ্যে লুকিয়ে রাখা শৈলচরণ সান্যালের লেখা সেই অদ্ভুত নাটক। সম্ভবত তাঁর লেখা শেষ নাটক। আগে একবার চোখ বুলিয়েছিলাম। খুব ইম্প্রেসিভ কিছু লাগেনি। আসলে হোমসের ভাষায় আমি দেখেছি, কিন্তু লক্ষ করিনি। আর গোয়েন্দা হতে গেলে তো অবজারভেশন আর ডিডাকশান মাস্ট। ড্রয়ার থেকে বইটা বার করে সামনের টেবিলল্যাম্পটা জ্বালিয়ে বসলাম। দরজাও বন্ধ করে দিলাম। এখন কেউ ডিসটার্ব করলে মুশকিল। সেই ছেঁড়া খামের মধ্যে থেকে পো-র বইয়ের মলাটে মোড়া নাটকটা বার করলাম। কী আশ্চর্য! খামের ভিতরে আরও একটা কাগজ! এটা আগে দেখিনি তো? দেখলে মনে থাকত নিশ্চিত। খুলে দেখলাম ফাঁকা কাগজ না। ছবি। এক বৃদ্ধা, এক যুবতি, আর এক শিশুর। এই ছবি আগে খেয়াল করিনি কেন? ছবির পিছন দিকে দেখতেই রহস্য পরিষ্কার হল। খামের ভিতরে আঠা দিয়ে ছবিটা লাগানো ছিল। আঠা খুলে পড়ে গেছে। ছবিটা পাশে রেখে এবার বইটা খুললাম।
একদম ছোট্ট বই। পাতলা কাগজে ছাপা। মলাট বলতে চারিদিকে সরু বর্ডার দিয়ে বইয়ের নাম, পাশে ডানাওয়ালা দুই পরি হাতে মালা নিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটা তর্জনী নিচের লেখার দিকে নির্দেশ করছে। সেখানে লেখা—
“সাধিতে দেশের হিত করিয়াছি পণ।
মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পাতন।”
এই লাইন দুটো আমার চেনা। বাবা প্রায়ই বলতেন। খুব সম্ভব রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের লেখা। তারপরে আরও কয়েক ছত্র কবিতা। লেখকের নাম, মুদ্রক আর প্রাপ্তিস্থান লেখা। একেবারে পিছনের মলাটে লাল পেনসিল দিয়ে একটা চিহ্ন আঁকা। বইটা খুলে পড়তে বসলাম। এবার সিরিয়াসলি।
.
বিষম ভূত ও পুষ্পসুন্দরীর পালা
“সাধিতে দেশের হিত করিয়াছি পণ।
মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পাতন।”।
হংসকে হত্যা করার কিবা এ কী ছল।
তুমিই মহান দেব প্রতাপ প্রবল।।
মানুষ ছাড়িয়ে ভূতে লইলে শরণ।
দুর্গ প্রাকারে তব মহা আয়োজন।।
প্রেমের অপূর্ব গতি, অদ্ভুত সে খেলা।
ভাতৃমাঝে অসহায় দারিকা একেলা।।
কলিকাতা
গরানহাটা নিবাসী
শ্রীযুক্ত শৈলচরণ শান্যাল
প্রণীত।
গরানহাটা স্ট্রীটে
৯১ নং ভবনে এংলো ইন্ডিয়ান যন্ত্রে
মুদ্রিত
সন ১৩০৩
যাঁহার এই পুস্তক প্রয়োজন হইবেক তিনি ৩৫ নং ক্লাইভ স্ট্রীটের
শ্রী তারিণীচরণ রায়ের আপিসে অনুসন্ধান করিলে প্রাপ্ত হইবেন
মূল্য ।০ আনা মাত্ৰ
বিজ্ঞাপন
→ বিকট মনে হইলেও ইহা একটি প্রহসন মাত্র। এই ক্ষুদ্র প্রহসনখানি আপনাদের নয়নাগ্রে অর্পণ করা আমার অতিমাত্র সাহস ভিন্ন অন্য কিছুই নহে। সাবধান হই নাই। সাহিত্যপ্রেমে হৃদয় পরিপূর্ণ।
→ কঠোর এই দুঃসাহস সমুদ্রে একমাত্র সমাজোপকারের ভরসাতরী অবলম্বনে ভাসিত হইলাম। এক্ষণে গ্রন্থকর্তার জীবননাশ বা জীবনোদ্ধার দুই কার্য্যের বিবিধ ভার আপনার উপরেই সমর্পিত হইল। পাঠন্তে যেমতি বোধ হইবে তেমতি করিবেন। আপনারাই আমার ভ্রাতা ভাগিনীসম। রাখিলে আপনারাই রাখিবেন, মারিলে আপনারাই মারিবেন। সে ষড় একান্তই আপনার নিজস্ব বিচারাধীন।
→ তোয়াজি ভূতে আমার ঘাড় মটকাইলে জানিবেন একদিন সেই ভূত কৃষ্ণকায়া পুষ্পসুন্দরীকে হত্যার অশেষ চেষ্টা করিবেক।
→ রিভাইজ করা সত্ত্বেও এই পুস্তকে বিবিধ পংচুএশন দোষ আছে। সানুগ্রহে সংশোধনান্তে পাঠাজ্ঞা হইবেক। তাহাতে কেরানী হইতে রাণী সকলেই সুখী।
→ আমার আশা এই নাটক অভিনীত হইলে গোল্ডেন যাইবেই।
ইতি।
গ্রন্থপ্রণেতা।
নাট্যোল্লিখিত ব্যক্তিগণ।
পুরুষ।
দীপ্তবর্ত – পুষ্পসুন্দরীর স্বামী
বিজয়বর্মা – পুষ্পসুন্দরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র
ধনবর্মা – পুষ্পসুন্দরীর কনিষ্ঠ পুত্র (বিশেষ প্রয়োজনে দীপ্তবর্তর ভুমিকার অভিনেতা এই ভূমিকায় অভিনয় করিতে পারেন)
শক্তিধর – প্ৰজা
বুদ্ধিধর – বিদেশি প্রজা
কাপালিক – বিশেষ প্ৰজা
সেনাপতি – পুষ্পসুন্দরীর রক্ষক
স্ত্রী।
পুষ্পসুন্দরী – মহারাণী
হেমলতা – পুষ্পসুন্দরীর দাসী
বিষম ভূত ও সুন্দরীর পালা
পুরাতন কথা ছিলয়ে রাজন।
তিনটি সিংহ তাঁর করয়ে সৃজন।।
কানহারী নামে মন্ত্রী বুদ্ধে বিচক্ষণ।
বিনা মেঘে বজ্রপাত রাজার মরণ।।
রাজার তনয়া যেন কুসুম মুরতি।
পুষ্পসুন্দরী নামে হয় তাঁর খ্যাতি।।
প্রথম অঙ্ক
পুষ্পসুন্দরীর উপবেশনাগার
পুষ্প কেশবিন্যাস করিতেছে। হেমলতা সম্মুখে দণ্ডায়মানা
পুষ্পসুন্দরী—দিনের পরে দিন চলে যায়। আমার আর সুদিন আসে না। কানহারী কতা শোনে না। সখীরা কাচে ঘেঁসে না। এই ভরা গতর নিয়ে আমি কোতায় যাই?
হেমলতা—সে কী কতা রাজকুমারী! কিছুই যে তোমার মনে ধরে না! নিত্তি নিত্তি খাওনদাওন। ধুমধাম। গলায় মুক্তোর সাতনরি হার। রোজই নিত্যনতুন পাত্র আসচে। তাতেও মনে সুক নেই? সতেরো বছর বয়স হোতে গেল। থাকো কেমন কোরে?
পুষ্পসুন্দরী— কী যে বলিস আবাগীর বেটি! আমার কি আর রাজপুতের অভাব আছে? কিন্তু সব যে বুড় ভাম। আমার শরিলের জ্বালা তেয়ারা কি মিটাতে পারবেন?
আর থাকি কেমন করে—
কী বলিব হায় ওহে কী বলিব হায়।
দিবা রাত্রি আমি থাকি ঐ ভাবনায়।।
আমার যা হয় ওহে আমার যা হয়।
পূর্ণরূপে প্রকাশিতে বাক্য সাধ্য নয়।।
অন্য মেয়ে হোলে ওহে অন্য মেয়ে হোলে।
নাগরের সঙ্গে যেত কোন দেশে চলে।।
হেমলতা—সে কী গা! এমন কতা মনেই আনতে নেই। দেখ আজ তোমার আত্মীয়রা আসবেন। তোমার কত সুখ্যাত করবেন। মুকে এট্টু পউডার টাউডার দেও, একখানা ভাল কাপড় পর, রাজপুতেরা এলে নিজের হাতে হাতে পান সেজে দিওখন। তোমায় আর শেকাব কি? কৰ্ম্ম সিদ্ধি কত্তে পার কি না দেক।
(অন্য দ্বার দিয়া রাজকুমার দীপ্তবর্তের প্রবেশ)
হেমলতা (উচ্চৈঃস্বরে)–এ কী! এ কী! কে? তুমি কাউকে না বলে অন্দরমহলে ঢুকলে যে বড়! এ আমাদের রাজকুমারীর শয়নকক্ষ। বেরোও এখুনি।
দীপ্তবর্ত— (লজ্জিত হইয়া) এসব আমি কিছুই জানি নে। আমি পথভুলে এই কক্ষে এসেচি।
পুষ্পসুন্দরী—আরে আরে এ কাকে কী বলচিস হেম? এ যে দীপ্ত। পাশের রাজ্যের রাজপুত্তুর। আমার শিশুকালের সখা। সেই কবে দেখেচিলুম। ওর সেই মূর্ত্তি আমার মনে গাঁথা হয়ে রয়েচে। সেই মুখ, সেই চোক। এখন আরও সুন্দর হয়েচ।
(স্বগত গীত )
রাগিণী লোম ঝিঁঝিট। তাল ঠেকা।
আমি কী করি এখন,
অস্থির হতেছে প্রাণ নাহি নিবারণ।
যে ছিল সদা অন্তরে, আবার সে এল ফিরে
তাহারই অদর্শনে, বাঁচে কি জীবন।
দীপ্তবর্ত—আমি তবে যাই রাজকুমারী।
পুষ্পসুন্দরী— সে কী। চলে যাবে? সবে তো এলে। তোমায় কতদিন দেকিনি রাজকুমার। কী চেহারাখানি, কী মিষ্ট কথা, কী মধুর স্বর। আহা আমার সঙ্গে কথা বলে আর দু দণ্ড কি থাকা যায় না? এই নাও এই বেলফুলের মালাতোমায় দিলেম। এই পান দিলেম তোমার হাতে।
দীপ্তবর্ত—তা যাবে না কেন রাজকুমারী?
লঘু ত্রিপদী
আহা কী শুনিনু মরমে মরি
মনের আগুন দ্বিগুণ হল।
শুনে বেলফুল হইনু আকুল
অকূলেতে প্রাণ পড়িল।।
শুন লো দিনা, তোমারে বিনা,
যতেক যাতনা সই।
এ বসন্ত কালে, সে সদা কালে,
হৃদেতে দংশিছে ঐ।।
পুষ্পসুন্দরী—আহা! তোমার কথা শুনে মন বড় ব্যাকুল হচ্চে। তোমায় আপন করে পেতে আমার শরিল মন উতলা হয়েচে। তুমি আমায় বিয়ে কর।
দীপ্তবর্ত—কিন্তু কুমারী যে জন্মের বাঁধন আমাদের একডোরে বেঁধেচে তারা কি আমাদের মিলনে বাধা দেবে না?
পুষ্পসুন্দরী—আমি ওসব বুঝতে চাইনে। দেহ মন দিয়ে আমি সুদু তোমাকেই কামনা করেচি। আমার জ্বালা মিটাও। এস খানিক ঘুমানো যাউক।
দীপ্তবর্ত—চলো (দুইজনে কিয়ৎকাল রহস্য করে নিদ্রা গেল)
.
দ্বিতীয় অঙ্ক
রাজসিংহাসনে উপবিষ্ট পুষ্পসুন্দরী
পুষ্পসুন্দরী—(স্বগত) আমার প্রাণের আরাম, দেহের শান্তি দীপ্তবর্ত আর নাই। সান্নিপাতিকে আক্রান্ত হয়ে আমায় এই নিঠুর পিথিবিতে ফেলে তিনি সগগে গেচেন। রেকে গেছেন রাজকুমার বিজয়বর্মা আর রাজকুমার ধনবর্মাকে। এখন আমি একা মহিলা এঁদের কি মতে মানুষ করি?
(বিজয়বর্মার প্রবেশ)
বিজয়বর্মা—আমাকে এত্তালা পাটিয়েছিলেন মা?
পুষ্পসুন্দরী—হ্যাঁ বাবা। চারিদিকে বড্ড কানাঘুষা শোনা যায়। তুমি নাকি এদানি এক রাঁড় লয়ে ফুত্তি কচ্চ? দেশের সকলে ছি ছি কচ্চে। তোমার এসব নষ্টামি বন্দ। তুমি রাজপুত্তুর। ভেবে দেক দেকি, এ কাজ কি ভাল কচ্চো?
বিজয়বর্মা—আপনি ভুল শুনেচেন মা। সৌদামিনী আমার রাঁড় নয়। আমার চোক্ষের মণি। বক্ষের পাঁজর। সে রাজবাড়ির রন্ধনশালে কাজ করে। আপনি নিজে তাঁর রান্নার কত সুখ্যাত করেচেন। আর কে কি কান ভরালো, আপনি সে সমস্ত ভুলে গেলেন?
গীত
রাগিণী চল বাছা। তাল কলসী কাচা।
কেন হইল এমন
মম প্রাণ ধনে সৌদামিনী কেমনে করিল হরণ।
কি দিবস কি রজনী, দহিচে গো সজনী
বিহনে সেই গুণমণি এই অধীনের মন।
জীবন দিব অর্পণ, ত্যাজ না ত্যাজ না প্রাণ
কোথা রবে সেই প্ৰাণধন
পুষ্পসুন্দরী—ছি ছি বাবা। তোমার নজ্জা নেই কো? মায়ের সামনে এসব কতা কইচ? তোমার ওই রাঁধুনির সঙ্গে মেলামেশা চলবে না। আমি তোমার সাতে কম্বুদ্বীপের রাজকুমারীর বে দেব।
বিজয়বর্মা— হা হা হা। বড় হাসালেন মা। এই কাল পোশাকের মত আপনার মনটাও কাল হয়ে বিষ হৃদয় হয়েচে। কম্বুদ্বীপের প্রজারা আজ খেতে পত্তে পাচ্চেন না। আপনি দেকে দেকচেন না। আর সেকেনের রাজকুমারীর সঙ্গে আমার বিবাহের কতা বলচেন?
ছি ছি এ কী কাজ নাই তব লাজ
ধিক২ তোমায় শতেক ধিক।।
সৌদা গুণমণি, আমার সন্তান জননী
ভালবাসি প্রাণাধিক।
পুষ্পসুন্দরী— তুই এ কী কল্লি! রাজপুত্তুর হয়ে দাসীর গভ্যে নিষেক কল্লি? তোকে আমি ত্যাজ্যপুত্তুর কল্লাম। এই মুহূর্তে বেরিয়ে যা আমার চোকের সামনে থেকে। আর এই পোড়ামুক আমায় দেকাস না।
(প্রণাম করিয়া বিজয়বর্মার বিদায়)
.
তৃতীয় অঙ্ক
নগরের রাজপথ
দুই বন্ধু শক্তিধর আর বুদ্ধিধরের প্রবেশ
শক্তিধর—ভাই বুদ্ধিধর আজ আমাদের বড় দুর্দিন। রাজকুমার বিজয়বর্মা প্রাণ দিলেন। বন্দিদশা আর সইছিল না। নিজের বুকে তলোয়ার ঢুকিয়ে পরাণপাত কল্পেন।
বুদ্ধিধর—শেষে তো আমাকেও তাঁর কাচে ঘেঁসতে দিত না। প্রহরীরা এমন বজ্জাত আমায় দেকলেই তেড়ে আসত। আমি গোপনে দুই একবার তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেছি। সে দিশ্য চোকে দেকা যায় না ভাই। রাজপুত্তুরের সোনার বন্ন কালি হয়েচে। চোখের জ্যোতি ছাই হয়েচে। তিনি শুদু ঘরে থাকেন আর কাঁদেন। বলেন আমার মেয়ে কোথায়?
শক্তিধর— রাজপুত্তুরের আবার মেয়ে কী গো? উনি তো আইবুড়!
বুদ্ধিধর (ফিসফিস করে)— তবে আর বলচি কী? রাজবাড়ির রাঁধুনির গভ্যে রাজপুত্তুরের মেয়ে হয়েচে। রাণী সেই মেয়েকে কোতায় পাচার করেচেন কে জানে?
শক্তিধর—আর সেই রাঁধুনি?
বুদ্ধিধর—তাকে পুরেচে পাগলাগারদে। এখন ছোট রাজকুমারই মাকে মন্তন্না দিচ্চেন। সঙ্গে বড়মন্ত্রী।
শক্তিধর—কিন্তু এ তো মেনে নেওয়া যায় না ভাই। তবে উপায়?
বুদ্ধিধর—উপায় একটা আচে। আমি আমার ভাইদের সাতে বলেচি। তারা এক উপায় বাতলেচেন। জঙ্গলের মাঝে এক কাপালিকের বাস। তার এক পোষা ভূত আচে। সে বিষম ভূত এমনিতে পোষ মানে না, তাকে দিব্যি তোয়াজ কত্তে হয়। মন্ত্র পত্তে হয়।
(মন্ত্র)
হিলি ভূত, বিলি ভূত
খিলখিলি কত ভূত।
বাক্সেতে এস ভাই
বোতলেতে বস ভাই
সবুজ বরণ দেকে
আহা, আহা মরে যাই!
শক্তিধর—ধর তোয়াজ কল্লাম। তারপরে কী হবে?
বুদ্ধিধর–সেই ভূত কোনক্রমে তোমায় চেপে ধল্লে তোমার ঘিলু আর কাজ কব্বে না। মাতা গুলিয়ে যাবে। তকন ভূতে যা যা কবে, তুমি তাই তাই কর্তে বাধ্য। আমি একন সেই স্থলেই যাচ্চি। যাবে তো চল।
শক্তিধর—কিন্তু সে স্থলে কি আমায় পোবেশ কর্তে দেবে?
বুদ্ধিধর- আমি আছি চিন্তা কি? তুমি তৈয়ার থাকিও।
(করমর্দন করিয়া দুজনের বিদায়)
.
চতুর্থ অঙ্ক
কাপালিকের গৃহ
অন্ধকার হইতে আওয়াজ ভাসিয়া আসে।
কাপালিক— তুমি কে?
বুদ্ধিধর-ঈশ্বরের পুত্র। আপনার ভাই।
কাপালিক-তোমার সঙ্গে কে?
বুদ্ধিধর-ঈশ্বরের আর এক অনুগামী। আপনার অন্য এক ভাই।
কাপালিক— তোমাদের পণ কী?
বুদ্ধিধর – আমাদের পণ জীবনসর্বস্ব।
কাপালিক— জীবন তুচ্ছ। সকলই কি ত্যাগ করতে প্রস্তুত?
বুদ্ধিধর —হ্যাঁ।
কাপালিক— তবে চোখ বন্ধ করে তিন পা সামনে এস। আলোর সন্ধান পাবে।
(আলো জ্বলিয়া উঠে)
কাপালিক –তোমরা কেন এসেচ?
বুদ্ধিধর –আমাদের মনস্কাম পূর্ণ কত্তে।
কাপালিক— সেটা কী?
বুদ্ধিধর—আমার ভাইয়েরা বলেচে আপনার কাচে এক পোষা তোয়াজি ভূত আচে। হিলির ভূত। সে ভূত আপনার আজ্ঞায় চলে। আমাদের সেই হিলির ভূত চাই।
কাপালিক— সে ভূত সবার জন্যে নয়। তাকে লুকিয়ে রাকতে হয়। দুর্জনের হাতে পল্লে সব্বোনাশ হবে।
বুদ্ধিধর– আমাদের মনস্কাম প্রতিশোধ। রাণী পুষ্পকুমারী আমাদের ভাই বিজয়বর্মাকে মেরেচে। আমরা তার শোধ নেব। এই আমার বন্ধু শক্তিধর রাজি হয়েচে। সে রাণীর মহলে ঢুকে ভূত ছেড়ে আসবে।
কাপালিক– তাকে রাজপুরীতে ঢুকতে দেবে কেন?
বুদ্ধিধর– মহামাত্যের হাত আমাদের মাতায়।রাণী জানেন না উনি কম্বুদ্বীপের চর।
(কাপালিকের হাতে দুইটি কাঁটা। সম্মুখে একখানি মানবকরোটি ও দুইখানি হাড়। তিনি এক লম্বা চাবি লইয়া তাহার পাশ হইতে এক অদ্ভুত ধাতব বাক্স বাহির করেন। ডালা খুলিয়া ভিতর হইতে এক কাচের বোতল বাহির হইল)
কাপালিক— এই বোতলেই সেই ভূত রয়েচে। এই ভূত এমনিতে জাগে। তোয়াজে জাগে। লবণখোর এই ভূতকে লবণ খাওয়ালেই সে জাগ্রত হইয়া রঙ বদলায়। তারপর তাতে আগুন দিতে হয়। অনলের তাপে ভূতের পো জেগে নেত্য করেন। এই দ্যাখো আমি কেমন শিশি খুলিয়ে লবণ দিতেছি।
শক্তিধর—আরে আরে! ভূতের ছানার রঙ বদলে কেমনে সবজেপানা হয়ে গেল। এবার কী কর্ত্তে হবে?
কাপালিক— যার গায়ে ছাড়তে চাও। তার কাচের লোককে এই দিয়ে বশ কল্পেই হবে। এই লাও।
শক্তিধর—ভূতের শক্তি ফুরালে কী কব্বো?
কাপালিক—অনলের তাপে ভূতের শক্তি আবার বাড়বেখন। লয়ে যাও।
(বোতল লইয়া কাপালিককে প্রণাম করিয়া দুইজনের প্রস্থান)
.
পঞ্চম অঙ্ক
রাণী পুষ্পসুন্দরীর কক্ষ
পুষ্পসুন্দরী ও ধনবর্মা বসিয়া আছেন
পুষ্পসুন্দরী— মহারাজের মৃত্যুর পর অনেক বছর কাটল। প্রজারা সবাই সুখে শান্তিতেই আচে। রাজ্যবাসীর এই খপর জানা দরকার। তুমি উচ্ছবেরআয়োজন কর।
ধনবর্মা—অবশ্য রাণী। কিন্তু তার আগে আপনার পাপের বিচার হোউক।
পুষ্পসুন্দরী— এ কী বলচ?
ধনবর্মা—আপনি খপর রাখেন না মহারাণী। রাজ্যে মানুষে মানুষে মহাদাঙ্গা বেঁধেচে। সবাই সবাইকে মারতে লেগেচে। আপনি চোখ উলটে বসে আচেন। এ রাজ্য আপনি আমাকে প্রদান করুন।
পুষ্পসুন্দরী— মাগো! এ কেমন কতা! ছি ছি। মা থাকতে ছেলে বসবে সিংহাসনে এ কি সম্ভব! আমার মহামন্ত্রী, সেনাপতি থাকতে তা হতে দেবে না।
(সেনাপতির প্রবেশ)
সেনাপতি – আপনার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েচে রাণী। এবার প্রাণ দিতে তৈয়ার হউন।
পুষ্পসুন্দরী—সেনাপতি তোমার কি খারাপ হল? এমনতর বকচ কেন? তোমার চোক লাল। মুকে গ্যাজা উটছে। কেমনপানা লাগচে যেন তোমায়।
ধনবর্মা-তোয়াজী হিলিভূতে ভর করেছে ওকে। ও আর কতা শুনবে না। শুনবে আমার কতা। সেনাপতি গর্দান লত্ত।
পুষ্পসুন্দরী-হায় হায়! আমার ইহকাল বিধবা হইয়াই গেল। পরকাল ও বুঝি যায়। আপন পেটের পুত্তুর এইভাবে শত্রুর হইয়া দেখা দিবে ভাবি নাই।
হা ঈশ্বর। হা স্বামী!
(সেনাপতি কর্তৃক পুষ্পসুন্দরীর হত্যা)
সেনাপতি— হায় হায়! এ কী কল্লাম! ভুতের বশে এসে আমাদের রাণীকে হত্যা কল্লাম। আমার নরকেও ঠাঁই নাই।
(বুদ্ধিধর ও শক্তিধরের প্রবেশ)
বুদ্ধিধর –মন ছোট কর্বেন না সেনাপতি। যা হবার হয়েচে। এখন ছোট রাজকুমার ধনবর্মাই আমাদের নতুন রাজা। (ধনবর্মাকে ঘিরে সবাই গান করিতে লাগে)
গীতি— বেহাগ। তাল— কাওয়ালি
এনা হতে দেবগণ জনম করি গ্রহণ
ডরে সবে নিবসে যাঁহায়
অজর অমর অজ অভুজে অযুতভুজ
আশে বড় প্রণমি তাহায়।
রত্নাকরে রমা যথা অথবা বিজলীলতা
দশ মাঝে তুমি আছ রাজা
খুজিয়া অযুত দেশ তোমার বন্দিত বেশ
নিন্দুকেরা পায় যোগ্য সাজা।
যবনিকা পতন।
সমাপ্ত