তৃতীয়াধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : আত্মার অনুমান

তৃতীয়াধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিক

প্রসিদ্ধা ইন্দ্ৰিয়ার্থাঃ।। ১।।

অনুবাদ

ইন্দ্ৰিয়ার্থ প্রসিদ্ধ।। ১॥

ব্যাখ্যা

এই আহ্নিকে আত্মার বিষয় বলা হইবে। জ্ঞান দ্বারা আত্মার অস্তিত্ব সিদ্ধ করিতে হয়। সকল জ্ঞানের মধ্যে সাক্ষাৎকার প্রধান, কেন না এরূপ স্পষ্ট জ্ঞান আর দ্বিতীয় নাই। সাক্ষাৎকার কিন্তু এক নহে, বিষয়াদিভেদে বিভিন্ন, আত্মার অস্তিত্বসিদ্ধির জন্য সকল সাক্ষাৎকারকে একেবারে গ্রহণ না করিয়া কেবল রূপসাক্ষাৎকার, রসসাক্ষাৎকার ইত্যাদি এক এক প্রকার সাক্ষাৎকারকে গ্রহণ করিলেই চলে। ইহা জানাইবার জন্যই রূপাদির কথা উঠিতেছে। এই রূপাদির স্বরূপ কি, তাহা স্পষ্ট প্রদর্শিত না হইলেও শব্দের স্বরূপ প্রদর্শন করাতেই রূপাদিরও স্বরূপ প্রদর্শিত হইয়াছে। অর্থাৎ কেবল চক্ষুদ্বারা যাহার অনুভব করিতে হয়, তাহা রূপ, যাহা রসনাগ্রাহ্য তাহাই রস, যাহা ঘ্রাণগ্রাহ্য তাহাই গন্ধ, কেবল ত্বগিন্দ্রিয় দ্বারা যাহা অনুভব করিতে হয় তাহাই স্পর্শ। রূপ ও স্পর্শের লক্ষণে ‘কেবল’ বলিতে হইয়াছে, নতুবা ঘট, পট প্রভৃতি দৃশ্য ও স্পৃশ্য বস্তুতে অতিব্যাপ্তি হয়। প্রত্যক্ষসিদ্ধ রূপত্বাদি জাতিই রূপাদির লক্ষণ ইহাই ভাবার্থ। এই রূপাদিই ইন্দ্রিয়ার্থ নামে অভিহিত। পরন্তু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য রূপাদিবিশিষ্ট বলিয়া, এ স্থলে ‘ইন্দ্রিয়ার্থ’ শব্দে পৃথিবী প্রভৃতিকেও গ্রহণ করিতে পারিবে।

উপস্কারঃ

তদেবং দ্বিতীয়াধ্যায়ে বহির্দ্রব্যপরীক্ষামুপপাদ্য উদ্দেশক্রমাদিদানীমাত্মপরীক্ষায়ৈ পীঠমারচয়িতুমাহ।

ইন্দ্রিয়াণামর্থা গন্ধরসরূপস্পর্শশব্দা বাহ্যৈকৈকেন্দ্রিয়গ্রাহ্যাঃ, তত্র শ্রোত্রগ্রহণো যোহর্থঃ স শব্দ ইতি শব্দপ্রসিদ্ধৌ দর্শিতায়ামর্থাদান্ধাদৌ স্পর্শপৰ্য্যন্তে প্রসিদ্ধিদর্শিতেত্যর্থঃ। তথাহি ঘ্রাণগ্রহণো যোহর্থঃ স গন্ধঃ, রসগ্রহণো যোহর্থঃ স রসঃ, চক্ষুমাত্রগ্রহণো যোহর্থঃ তদ্রূপম্, ত্বগিন্দ্রিয়মাত্রগ্রহণো যোহর্থঃ স স্পর্শঃ, সৰ্ব্বত্র চার্থশব্দেন ধৰ্ম্মী ভাবভূত উচ্যতে তেন গন্ধত্বাদৌ গন্ধাদ্যভাবে চ নাতিব্যাপ্তিঃ। তদেবং ঘ্রাণগ্রহণবৃত্তিগুণত্বাবান্তরজাতিমত্ত্বং গন্ধত্বম্ এবং রসাদাবপি বাচ্যং তেন নাতীন্দ্রিয় গন্ধাদ্যনুপগ্ৰহঃ।। ১।।

.

ইন্দ্রিয়ার্থপ্রসিদ্ধিরিন্দ্রিয়ার্থেভ্যোঽর্থান্তরস্য হেতুঃ।। ২।।

অনুবাদ

জ্ঞান-সাধনীভূত ইন্দ্রিয়, রূপাদি গুণ (এবং অন্যান্য জড় বস্তু) হইতে আত্মা যে ভিন্ন—এই জ্ঞানের ইন্দ্রিয়ার্থ-সাক্ষাৎকার হেতু।।২।।

ব্যাখ্যা

রূপাদি সাক্ষাৎকার অবশ্যই কোন দ্রব্যে আছে। কেন না; সাক্ষাৎকারও তো গুণপদার্থ। সেই সাক্ষাৎকার, যে দ্রব্যের গুণ, তাহাই আত্মা। অনুবাদে যে ‘ইন্দ্রিয়ার্থ সাক্ষাৎকার’ কথাটী আছে, তাহা হইতে ইন্দ্রিয় ও রূপাদি সাক্ষাৎকার এই দুইপ্রকার অর্থ গ্রহণ করিতেও পারা যায়। সুতরাং রূপাদি সাক্ষাৎকারকে যেমন আত্মার অস্তিত্বসাধক বলা হইয়াছে, সেইরূপ ইন্দ্রিয়কেও আত্মার অস্তিত্বসাধক বলা যায়। কেননা ইন্দ্রিয় জ্ঞানের সাধক, যাহা সাধন অর্থাৎ করণ তাহা কর্ত্তার আশ্রিত হইয়া থাকে, সেই যে কৰ্ত্তা—তিনিই আত্মা এরূপেও আত্মার অস্তিত্ব সিদ্ধ হয়।।২।

উপস্কারঃ

ইন্দ্রিয়ার্থপ্রসিদ্ধেরাত্মপরীক্ষায়ামুপযোগমাহ।

হেতুর্লিঙ্গমর্থান্তরস্য আত্মনঃ ইন্দ্রিয়ার্থেভ্য ইতি ইন্দ্রিয়েভ্যোঽর্থেভ্যশ্চ রূপাদিভ্য- স্তদ্বদভ্যশ্চ যদর্থান্তরম্ আত্মা তস্য লিঙ্গমিত্যর্থঃ। যদ্যপি জ্ঞানমেব লিঙ্গমিহ বিবক্ষিতং তথাপীন্দ্রিয়ার্থপ্রসিদ্ধে. রূপাদিসাক্ষাৎকারস্য প্রসিদ্ধতরতয়া তাদ্ৰূপ্যণৈব লিঙ্গত্বমুক্তং তথাহি প্রসিদ্ধিঃ ক্বচিদাশ্ৰিতা কাৰ্য্যত্বাৎ ঘটবৎ গুণত্বাদ্বা ক্রিয়াত্বাদ্বা। সা চ প্রসিদ্ধিঃ করণজন্যা ক্রিয়াত্বাৎ ছিদাক্রিয়াবৎ। যচ্চ প্রসিদ্ধেঃ করণং তদিন্দ্রিয়ং তচ্চ কর্তৃপ্রযোজ্যং করণত্বাৎ বাস্যাদিবৎ তথা যত্রেয়ং প্রসিদ্ধিরাশ্রিতা, যো ঘ্রাণাদীনাং করণানাং প্রযোক্তা স আত্মা।। ২।।

.

সোহনপদেশঃ।।৩।।

অনুবাদ

তাহা অর্থাৎ ইন্দ্ৰিয় বা তদ্‌গ্রাহ্য স্থূলদেহ (জ্ঞানের আশ্রয় স্বরূপে) গ্রহণীয় নহে।।৩।।

ব্যাখ্যা

সাক্ষাৎকার কোন দ্রব্যে থাকে বটে, কিন্তু সেই দ্রব্য যে ইন্দ্রিয়াদি হইতে ভিন্ন, তাহা মানিব কেন? ইন্দ্রিয়কে অথবা স্থূল দেহকেই সেই সাক্ষাৎকারের আশ্রয় বলিব। ইন্দ্রিয় জ্ঞানের সাধন হইলেও তাহাকেই কৰ্ত্তাও বলিব, কিংবা ইন্দ্রিয় সাধনই থাক, দেহই কৰ্ত্তা; ইহা পূৰ্ব্বপক্ষ; ইহার উত্তর, ‘না’—তাহা হইতে পারে না।। ৩।।

উপস্কারঃ

ননু শরীরমিন্দ্রিয়াণি বা প্রসিদ্ধেরাশ্রয়োহস্তু প্রসিদ্ধিং প্রতি তদুভয়ান্বয়ব্যতিরেকয়োঃ স্ফুটতরত্বাৎ কিং তদন্যাশ্রয়কল্পনয়া, তথাহি চৈতন্যং শরীরগুণঃ তৎকার্য্যত্বাৎ তদ্রূপাদিবৎ, এবমিন্দ্রিয়গুণত্বেঽপি বাচ্যমিত্যাশঙ্ক্যাহ।

অপদেশো হেতুঃ তদাভাসোহনপদেশঃ, তথাচ তৎকাৰ্য্যত্বং জন্যজ্ঞানাদাবনৈকান্তিকত্বা- দনপদেশ ইত্যর্থঃ।।৩।

.

কারণাজ্ঞানাৎ।। ৪।।

অনুবাদ

কেননা কারণে জ্ঞান নাই।। ৪।।

ব্যাখ্যা

ইন্দ্রিয় এবং দেহ এই দুই দ্রব্যই পৃথিবী প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন। সেই পৃথিবী প্রভৃতির পরমাণু—ইন্দ্রিয়াদির চরম কারণ। পরমাণুতে যে গুণ আছে, তৎকাৰ্য্যে তজ্জাতীয় গুণ থাকিবে। পার্থিব পরমাণুতে রূপ আছে, স্থূল পৃথিবীতেও রূপ দেখিতে পাওয়া যায়। যদি ইন্দ্রিয় বা দেহে জ্ঞান আছে ইহা বল, তাহা হইলে, পরমাণুতেও জ্ঞান আছে ইহা স্বীকার করিতে হয়, পরন্তু তাহা নাই।।৪।।

উপস্কারঃ

ননু তৎকাৰ্য্যত্বং চৈতন্যত্বাবচ্ছিন্নস্যৈব কাৰ্য্যত্বং বিবক্ষিতং প্রদীপাদীনাঞ্চ সমস্তমেব চৈতন্যং ন কাৰ্য্যমিতি ন ব্যভিচার ইত্যাশঙ্ক্যাহ।

শরীরকারণানাং করচরণাদীনাং তদবয়বানাং বা অজ্ঞানাৎ জ্ঞানশূন্যত্বাদিত্যর্থঃ। পৃথিব্যা-দিবিশেষগুণানাং হি কারণগুণপূর্ব্বকতা দৃষ্টা, তথাচ শরীরকারণেষু যদি জ্ঞানং স্যাত্তদা শরীরেঽপি সম্ভাব্যেত ন চৈবম্। নন্বস্তু শরীরকারণেম্বপি চৈতন্যমিতি চেন্ন, ঐকমত্যাভাব- প্রসঙ্গাৎ। ন হি বহুনাঞ্চেতনানামৈকমত্যং দৃষ্টম্, করাবচ্ছেদনানুভূতস্য করচ্ছেদেহ স্মরণপ্রসঙ্গাৎ, যতো “নান্যদৃষ্টং স্মরত্যন্যঃ” ইতি। কিঞ্চ শরীরনাশে তৎকৃতহিংসাদিফলানুপভোগপ্রসঙ্গাৎ, ন হি চৈত্রেণ কৃতস্য পাপস্য ফলং মৈত্রো ভুক্তে, ততশ্চ কৃতহানিরকৃতাভ্যাগমশ্চ স্যাৎ।।৪।।

.

কাৰ্য্যেষু জ্ঞানাৎ।। ৫।।

অনুবাদ

যেহেতু সেই কারণোৎপন্ন বস্তুর মধ্যে (কোনটীতে কোনটীতে) জ্ঞান আছে।। ৫।।

ব্যাখ্যা

কারণে জ্ঞান থাকিলে তদীয় সৰ্ব্ববিধ কার্য্যেই জ্ঞান থাকিবার কথা। পার্থিব পরমাণুতে রূপ আছে, এই জন্য সৰ্ব্ববিধ স্থূল পৃথিবীতেও রূপ থাকে। কিন্তু তোমার মতেও কেবল ইন্দ্রিয় বা শরীর ইত্যাদি কোন কোন কাৰ্য্য দ্রব্যে জ্ঞান আছে।। ৫।।

উপস্কারঃ

ননু শরীরকারণেষু সূক্ষ্মমাত্রয়া জ্ঞানমস্তি শরীরে তু স্ফুটমতো নাকারণগুণপূর্ব্বকতা নচৈকমত্যানুপপত্তিরিত্যাশঙ্ক্যাহ।

যদি হি শরীরমূলকারণেষু পরমাণুষু চৈতন্যং স্যাৎ তদা তদারকেষু কাৰ্য্যেষু ঘটাদিম্বপি স্যাৎ, কিঞ্চ পার্থিববিশেষগুণানাং সৰ্ব্বপার্থিববৃত্তিতায়া ব্যাপ্তেঃ কার্য্য্যেম্বপি ঘটাদিষু চৈতন্যং স্যান্ন চ তত্র চৈতন্যমুপলভ্যতে ইত্যর্থঃ।। ৫।।

.

অজ্ঞানাচ্চ।।৬।।

অনুবাদ

যেহেতু (সেই কারণোৎপন্ন অনেক বস্তুতে) জ্ঞান নাই (বা জ্ঞান যে আছে এ বিষয়ে) প্ৰমাণ নাই।।৬।।

ব্যাখ্যা

সেই কারণোৎপন্ন কোন কোন বস্তুতে জ্ঞান আছে, সকল বস্তুতে নাই, ইহা তোমাকেও স্বীকার করিতে হইবে। অনেক জড় দ্রব্যেই যে জ্ঞান নাই, ইহা তো প্রত্যক্ষসিদ্ধ। অথবা ঐ সকল বস্তুতে জ্ঞান যে আছে এ বিষয়ে প্রমাণ নাই।।৬।।

উপস্কারঃ

ননু ঘটাদাবপি সূক্ষ্মমাত্রয়া চৈতন্যমস্ত্যেবেত্যাশঙ্ক্যাহ।

সর্ব্বৈঃ প্রমাণৈরজ্ঞানাৎ কুম্ভাদৌ ন চৈতন্যমিত্যর্থঃ। সর্ব্বপ্রমাণাগোরচস্যাপ্যভ্যুপগমে শশবিষাণাদেরপ্যভ্যুপগমপ্রসঙ্গঃ, ন হি ঘটাদৌ চৈতন্যং কেনাপি প্রমাণেন জ্ঞায়ত ইতি।।৬।।

.

অন্যদেব হেতুরিত্যনপদেশঃ।।৭।।

অনুবাদ

হেতু সাধ্য হইতে ভিন্ন, অতএব (সাধ্যের তাদাত্ম্যবিশিষ্ট) হেতু হেতুই নহে।। ৭।।

ব্যাখ্যা

তাদাত্ম্য না থাকিলে, বা জন্য-জনক ভাব না থাকিলে অনুমাপক হেতু হইতে পারে না। অতএব ইন্দ্ৰিয়স্থিত করণত্ব আত্মার অনুমাপক অর্থাৎ কর্তৃপ্রবর্তিতত্বের অনুমাপক হইতে পারে না; কেন না, করণত্বের সহিত কর্তৃপ্রবর্তিতত্বের তাদাত্ম্যও নাই, জন্য-জনক ভাবও নাই। এই আপত্তির উত্তরে বলিতেছেন, তাদাত্ম্য থাকিলে বরং অনুমাপক হয় না। কেন না, সাধ্য এবং হেতু এক হইলে,—অনুমিতির পূর্ব্বেই তো তাহার নিশ্চয় হইয়া যায়, তবে আর অনুমিতি কেন? অনুমিতির পূর্ব্বে পরামর্শ প্রয়োজনীয়, সেই পরামর্শ-পক্ষে যে হেতু আছে, এইরূপ নিশ্চয়াত্মক হইয়া থাকে। সুতরাং সাধ্য, হেতু এক হইলে তাহা অনুমাপক হইতে পারে না। হেতু তাদাত্ম্যঘটিত হইলে সাধ্য হেতুর একত্বও অনিবাৰ্য্য। অতএব ‘তাদাত্ম্য’ অনুমিতির উপযোগী নহে।। ৭।।

উপস্কারঃ

নন শ্রোত্রাদিভিঃ করণৈরধিষ্ঠাতাহনুমীয়তে ইত্যুক্তং তদযুক্তং ন হি শ্রোত্রাদি- ভিরাত্মনস্তাদাত্ম্যং তদুৎপত্তির্বা, ন চ তাভ্যামন্তরেণাবিনাভাবসিদ্ধিঃ, ন চাবিনাভাবমন্তরেণানু- মিতিরিত্যত আহ।

হেতুঃ সাধ্যাদন্য এব ভবতি, ন তু সাধ্যাত্মা সাধ্যাবিশেষ প্রসঙ্গাৎ তস্মাত্তাদাত্ম্যঘটিতো হেতুরহেতুরনপদেশ ইত্যর্থঃ।।৭।।

.

অর্থান্তরং হ্যর্থান্তরস্যানপদেশঃ।।৮।।

অনুবাদ

এক বস্তু অপর বস্তুর সাধক হইতে পারে না।। ৮।।

ব্যাখ্যা

হেতুর সহিত সাধ্যের তাদাত্ম্য থাকিলে অনুমিতি হইবে না, তবে কি যে কোন একটা বস্তু অপর বস্তুর সাধক হইবে? তাহা নয়। যে বস্তুর সহিত যাহার ব্যাপ্তি সম্বন্ধ আছে, সেই ব্যাপ্তিবিশিষ্টত্বরূপে কোন স্থানে হেতুজ্ঞান হইলে, তবে তাহা সেইস্থানে অনুমিতির উপযোগী হয়। তাহা না হইলে, কেবল বহ্নি হইতে ধূম উৎপন্ন এই জন্য—এখানে ধূম আছে, কেবল ইহা জানিলেই যে বহ্নিজ্ঞান হইবে, তাহা নয়। এই প্রদেশ বহ্নিব্যাপ্যধূমবান্ এইরূপ জ্ঞান হইলে যেমন বহ্নির অনুমিতি হয়, সেইরূপ অন্য কোন বস্তু যাহা বহ্নি হইতে উৎপন্ন নহে, তাহাও যদি ঐরূপে পরিজ্ঞাত হয়, তাহা হইলেও অনুমিতি হইবে।। ৮।।

উপস্কারঃ

ননু শ্রোত্রাদিভিরিন্দ্রিয়ৈরাত্মনো যথা ন তাদাত্ম্যং তথা তদুৎপত্তিরপি নাস্তি। নহি বহেধূম ইব আত্মনঃ শ্রোত্রাদিকরণমুৎপদ্যতে ইত্যত আহ।

হি যতঃ কাৰ্য্যং ধূমাদি যথা রাসভাদেরর্থান্তরং তথা কারণাদ্বহ্ন্যাদেরপ্যর্থান্তরমেব তথা চার্থান্তরত্বাবিশেষাৎ ধূমো রাসভং ন গময়তি কিন্তু বহ্নিমেব গময়তীত্যত্র স্বভাববিশেষ এব নিয়ামকঃ। স চ স্বভাবো যদি কাৰ্য্যাদন্যস্যাপি ভবতি তদা সোহপ্যপদেশো ভবত্যেব, তথাচ কাৰ্য্যমবিবক্ষিতস্বভাবভেদম্ অনপদেশঃ, তথাচ তাদাত্ম্যতদুৎপত্তী এবাবিনাভাবঃ তয়োরেবাবি- নাভাবপর্যবসানং তাভ্যাং সমানোপায়ো বা তদুভয়মাত্রগ্রহাধীনগ্রহো বেতি স্বশিষ্যব্যামোহনায় পরিভাষামাত্রমিতি ভাবঃ।।৮।।

.

সংযোগিসমবায্যেকার্থসমবায়িবিরোধি চ।। ৯।।

অনুবাদ

সংযোগী, সমবায়ী, একার্থসমবায়ী এবং বিরোধী (ইহারাও অনুমাপক হইতে পারে)।।৯।।

ব্যাখ্যা

কেবল জন্য দ্রব্য বা জনকদ্রব্য বলিয়া কেন? ব্যাপ্তি থাকিলে সংযোগী প্রভৃতিও হেতু হইয়া অনুমিতির উপযোগী হইয়া থাকে। সংযোগী হয় কে? যে-হেতু, জন্যজনকভাব-অসত্ত্বেও সংযোগাধীনব্যাপ্তিবিশিষ্ট হইয়া সাধ্যের অনুমাপক হয়, তাহাই সংযোগী; যেমন ত্বক্ সাধ্য, শরীরত্ব হেতু, ত্বক্ অর্থাৎ ছালের সহিত শরীরের কার্য্যকারণ ভাব নাই, নিয়ত সংযোগ আছে। শরীরে সংযোগ থাকায় ত্বক্ শরীরত্বের ব্যাপক। এই যে ব্যাপকতা ইহা সংযোগসম্বন্ধাবচ্ছিন্ন, সুতরাং ব্যাপ্তি সংযোগাধীন হইল। সমবায়ী কে? যে,–হেতু, সাধ্যব্যাপ্তিবিশিষ্ট হইয়া অনুমাপক হইবে, সেই হেতু, ব্যাপ্তি বা সাধ্য—সমবায়ঘটিত হইলে, তাহাকে সমবায়ী বলা যায়। তবে সাধ্যের ব্যাপকতা এবং হেতুর ব্যাপ্যতা দুই যদি সমবায় সম্বন্ধাবচ্ছিন্ন হয় তাহা হইলে, সেই হেতুকে ‘একার্থসমবায়ী’ বলা যায়। যে—হেতুতে বিরুদ্ধবস্তুঘটিত ব্যাপ্তি বা ব্যাপকতা জ্ঞানের বিষয় হইয়া অনুমিতিজনক হয়, তাহাকে বিরোধী হেতু বলা যায়। ফলে ব্যাপ্তি অব্যাহত থাকিলেই সেই ব্যাপ্তি ও পক্ষধর্ম্মতাবিশিষ্ট হেতু জ্ঞান, অনুমিতির কারণ হইয়া থাকে।। ৯।।

উপস্কারঃ

সম্প্রত্যবিনাভাবস্য তদুভয়ব্যভিচারমেব স্ফূটয়িতুমাহ।

শরীরং ত্বগৎ শরীরত্বাদিত্যয়ং হেতুঃ সংযোগো, বৃদ্ধিক্ষয়বদ্রব্যসহজাবরণং হি ত্বগিত্যুচ্যতে। তচ্চ ন শরীরস্য কার্য্যং কারণং বা কিন্তু সহোৎপত্তিকমাত্রং নিয়তসংযোগবৎ। এবং সমবায়ি যথাকাশং পরিমাণবদ্ দ্রব্যত্বাৎ ঘটাদিবদিতি। অত্র পরিমাণং সাধ্য দ্রব্যত্বেনাকাশসমবায়িনা ধর্ম্মেণ সাধ্যতে যদ্বা পরিমাণতারতম্যং ক্বচিদ্বিশ্রান্তমিত্যনেনাণুত্ব পরিমাণবিশেষঃ সিদ্ধঃ তেন তদাশ্রয়ঃ পরমাণুরনুমীয়তে, শব্দাদিনা ত্বাকাশস্য, জ্ঞানাদিনা ত্বাত্মনোহনুমানং, কার্য্যেণৈব কারণানুমানমিতি নোদাহৃতম্।।৯।।

.

কার্য্যং কার্য্যান্তরস্য।। ১০।।

অনুবাদ

এক কার্য্য কার্য্যান্তরের (হেতু হয়)।। ১০।।

ব্যাখ্যা

জলের রূপ তদীয় স্পর্শের অনুমাপক হইয়া থাকে; এই স্পর্শানুমাপক হেতু রূপ একার্থসমবায়ী। এ স্থলে সেই রূপের ব্যাপকতা এবং সেই স্পর্শের ব্যাপ্যতা দুইই সমবায়সম্বন্ধাবচ্ছিন্ন; কেন না, জলের স্বচ্ছশুক্ল রূপ তাহা যাবদীয় শীতস্পর্শাধিকরণে আছে—এই যে যাবদীয় স্পর্শাধিকরণে থাকা তাহাই ব্যাপকতা। কোন্ সম্বন্ধে সেই থাকা? না সমবায়সম্বন্ধে, গুণ দ্রব্যে সমবায় সম্বন্ধে থাকে। এই জন্যই সমবায় সম্বন্ধকে ‘ব্যাপকতাবচ্ছেদক’ বলা হইয়াছে। আর ঐ স্থানে শীতস্পর্শাধিকরণ অর্থাৎ যাহাতে শীতস্পর্শ আছে, তাহা শীতস্পর্শের কোন্ সম্বন্ধবশতঃ অধিকরণ হইয়াছে? না সমবায়সম্বন্ধবশতঃ। এই জন্য ব্যাপ্যতাও সমবায়সম্বন্ধাবচ্ছিন্ন। ফল কথা এই, যেখানে সাধ্য সমবায়সম্বন্ধে এবং হেতুও সমবায় সম্বন্ধে সেইখানে ঐ হেতুকে একার্থসমবায়ী বলা হয়।। ১০ ।।

উপস্কারঃ

একার্থসমবায়িনং সূত্রকৃচুদাহরতি।

কার্য্যং রূপং কার্য্যান্তরস্য স্পর্শস্য লিঙ্গম্। উপলক্ষণঞ্চৈতত্ অকাৰ্য্যমপ্যাকাশৈকত্বম্ আকাশৈকপৃথক্‌ত্বে লিঙ্গম্ এবং পরমমহত্ত্বে।। ১০।।

.

বিরোধ্যভূতং ভূতস্য।। ১১।।

অনুবাদ

অবিদ্যমান (হেতু) বিদ্যমানের (অনুমাপক হইলে, তাহা) ‘বিরোধী’ (হেতু নামে অভিহিত হয়)।। ১১।।

ব্যাখ্যা

মেঘাড়ম্বরের পর বৃষ্টি হইল না; এই যে তাৎকালিক অনুৎপন্ন বৃষ্টি বা বৃষ্টির অনুৎপত্তি তাহা মেঘ যে বায়ু-সঞ্চালিত হইতেছে ইহার অনুমাপক। বায়ুসঞ্চালিত মেঘ হইতে বৃষ্টি হয় না, এই জন্য ইহা বিরোধমূলক অনুমান। এই অনুমানের হেতু, একপ্রকার ‘বিরোধী’।। ১১।।

উপস্কারঃ

বিরোধিলিঙ্গমুদাহরতি।

অভূতং বর্ষং, ভূতস্য বায়ুভ্রসংযোগস্য লিঙ্গম্ এবং স্ফোটাদের্বিরোধী মন্ত্রপাঠঃ, তথাচাভূতমনুৎপন্নং স্ফোটাদি ভূতস্য মন্ত্রপাঠস্য লিঙ্গম্।। ১১।।

.

ভূতমভূতস্য।।১২।

অনুবাদ

বিদ্যমান (হেতু) অবিদ্যমানের (অনুমাপক হইলে, তাহা বিরোধী হেতু নামে অভিহিত হয়)।। ১২।।

ব্যাখ্যা

মেঘ বায়ুসঞ্চালিত হইতেছে। এই যে সঞ্চালন, তাহা বৃষ্টির অনুৎপত্তি বা অনুৎপন্ন বৃষ্টির অনুমাপক। মেঘের বায়ুকৃত সঞ্চালন ও বৃষ্টি এক কালে এক দেশে হয় না। উক্ত বিদ্যমান বায়ুসঞ্চালনকে অন্য প্রকার বিরোধী হেতু বলা যায়।। ১২।।

উপস্কারঃ

বিরোধিলিঙ্গস্যোদাহরণান্তরমাহ।

ভূতং স্ফোটাদিকম্ অভূতস্য মন্ত্রপাঠস্য লিঙ্গম্ এবং ভূতো বায়ুভ্রসংযোগোঽভূতস্য বর্ষস লিঙ্গম্ এবং ভূতো দাহোহভূতস্য মণ্যাদিসমবধানস্য লিঙ্গমেবমন্যদপ্যূহ্যম্।। ১২।।

.

ভূতো ভূতস্য।। ১৩।।

অনুবাদ

বিদ্যমান (বিরোধীও) বিদ্যমান বস্তুর (বিরুদ্ধের, অনুমাপক হয়)।। ১৩।।

ব্যাখ্যা

আর একপ্রকার বিরোধী আছে, তাহা বিদ্যমান থাকিলেই অপর বিরুদ্ধ বস্তুর অনুমান হয়। যেমন সর্পকে প্রচ্ছন্ন বনভূমি অভিমুখে ভয়সম্ভ্রম এবং ক্রোধে আস্ফালন করিতে দেখিলে বুঝিবে, সেই বনে নকুল আছে। এই আস্ফালনকারী সৰ্প বিদ্যমান, এই নকুলও বিদ্যমান। ইহাও বিরোধী হেতু; সুতরাং বিরোধী তিন প্রকার।। ১৩।।

উপস্কারঃ

লিঙ্গান্তরমুদাহরতি।

বিদ্যমানেনৈব বিরোধিনা বিদ্যমানস্যৈব বিরোধিনঃ ক্বচিদনুমানং যথা বিস্কুর্জন্তমহিং দৃষ্টা ঝাটান্তরিতস্য নকুলস্য। অত্র হি বিস্ফূজন্নহির্ভূতো বিদ্যমানো ঝাটান্তরিতো নকুলোঽপি বিদ্যমান এবেতি ভবতি, ভূতো ভূতস্য লিঙ্গমিত্যর্থঃ। বর্ষবায়ুভ্রসংযোগয়োস্তু নৈকস্মিন্ কালে বিদ্যমানতা ন বা স্ফোটমন্ত্রপাঠয়োরিতি।। ১৩।।

.

প্রসিদ্ধি পূর্ব্বকত্বাদপদেশস্য।। ১৪।।

অনুবাদ

ব্যাপ্তি-প্রসিদ্ধিপূৰ্ব্ব হইলেই তাহা হেতু (হইবার উপযুক্ত। এই কারণে সকরণকত্ব হেতু আত্মার অনুমাপক হইতে পারে)।। ১৪।।

ব্যাখ্যা

যে হেতুতে ব্যাপ্তি প্রসিদ্ধ, অর্থাৎ যাহা ব্যাপ্য হেতু, তাহা পক্ষ দেশে অবস্থিত ইহা নিশ্চয় হইলেই অনুমিতি হইবে, তা, সেই—হেতু, জন্যই হউক আর নাই হউক, বা জনকই হউক আর নাই হউক, সে অনুসন্ধানের প্রয়োজন নাই। অতএব ইন্দ্রিয়ধৰ্ম্মিক অনুমিতি অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ও কর্তার অপেক্ষা করে ইত্যাদি অনুমিতি, অনুপপন্ন হইল না।। ১৪।।

উপস্কারঃ

ইদানীং পরিগণনস্য প্রয়োজনমাহ।

প্রসিদ্ধিঃ স্মর্য্যমাণা ব্যাপ্তিঃ, অপদেশো হেতুবচনং, তেন স্মৰ্য্যমাণব্যাপ্তিবিশিষ্টো হেতুহেত্ববয়বেনোপনয়াবয়বেন বোচ্যতে ইতি ভবতি প্রসিদ্ধিপূর্ব্বকোঽপদেশ ইতি। তথাচ শ্রোত্রাদিনা করণেনাধিষ্ঠাতুঃ, জ্ঞানাদিনা চ গুণেন তদাশ্রয়স্যাত্মনো যদনুমানমুক্তং তত্র সর্ব্বত্র ব্যাপ্তিরস্তি, ত্বয়া তু শরীরকার্য্যত্বেন হেতুনা জ্ঞানস্য যচ্ছরীরগুণত্বং সাধিতং তত্র ন ব্যাপ্তিরিতি ভাবঃ। ননু কেয়ং ব্যাপ্তির্ন তাবদব্যভিচরিতসম্বন্ধঃ অব্যভিচারস্য সাধ্যাত্যন্তাভাবসামানাধিকরণ্যানধিকরণত্বস্য কেবলান্বয়িন্যপ্রসিদ্ধেঃ। সাধ্যানধিকরণানধিকরণত্বস্যাপি কেবলান্বয়িন্যসম্ভবাৎ ধূমাদেরপি যৎকিঞ্চিৎসাধ্যানধিকরণাধিকরণত্বাৎ। নাপ্যবিনাভাবঃ, স হি সাধ্যং বিনা অভাবো বা হেতোঃ, অবিনা, সাধ্যান্বয়ে সতি ভাবো বা, ধূমস্যাপি ক্বচিদ্রাসভাভাবেই ভাবাৎ রাসভসত্ত্বে সত্ত্বাচ্চ, নিয়তব্যতিরেকো নিয়তশ্চান্বয়ো বিবক্ষিত ইতি চেৎ, ন নিয়মস্যৈব নিরূপ্যমাণত্বাৎ। নাপি কার্ৎত্ম্যেন সম্বন্ধঃ, স যদি কৃৎস্নস্য সাধ্যস্য সাধনসম্বন্ধঃ, স বিষমব্যাপ্তে ধূমাদাবপি নাস্তি। অথ কৃৎস্নস্য সাধনস্য সাধ্যসম্বন্ধঃ সোহপ্যেকস্য সাধ্যস্য কৃৎস্নসাধনে সম্বন্ধাভাবাদনুপপন্নঃ। অথ কৃৎস্নস্য সাধ্যস্য কৃৎস্নেন সাধনেন সম্বন্ধঃ, এতদপ্যযুক্তং ন হি কৃৎস্নেন সাধনেন কৃৎস্নস্য সাধ্যস্য ক্বচিদপি সম্বন্ধঃ সম্ভবতি। প্রত্যেকমেব সাধ্যসাধনয়োঃ সম্বন্ধাৎ, বিষমব্যাপ্তেঃ চাব্যাপ্তেঃ। নাপি স্বাভাবিকঃ সম্বন্ধঃ, স্বভাবো হি স্বস্য ভাবো বা স্বমেব ভাবো বা, তত্র তজ্জন্যত্বঞ্চেত্তদ্ধিতার্থঃ, তদা সমবায়লক্ষণায়াং ব্যাপ্তাবব্যাপ্তেঃ, তদাশ্রিতত্বঞ্চেত্তদ্ধিতার্থঃ, তদাপি সমবায়েঽব্যাপ্তিঃ ন হি সমবায়ঃ ক্বচিদাশ্রিতঃ, সংযোগস্যাপি হেতুধর্ম্মধূমত্বাদ্যনাশ্রিতত্বাৎ হেতুধৰ্ম্মধূমত্বাদ্যজন্যত্বাচ্চ। নাপ্যনৌপাধিকঃ সম্বন্ধঃ, উপাধেরেব দুৰ্ব্বচত্বাৎ, সুবচত্বেঽপি দুর্গ্রহত্বাৎ, সুগ্রহত্বেঽপ্যন্যোন্যাশ্রয়াৎ সাধ্যব্যাপকত্বে সতি সাধনাব্যাপকত্বাদের্ব্যাপ্তিগ্রহাধীনগ্রহত্বাৎ। নাপি সম্বন্ধমাত্রং ব্যাপ্তিঃ, ব্যভিচারিসম্বন্ধস্যাপি দেশবিশেষকালবিশেষগর্ভতয়া ব্যাপ্তিরূপত্বেঽপি তজ্ঞানস্যানুমিতাবতন্ত্রত্বাৎ অনুমিতিকারণীভূতজ্ঞানবিষয়ব্যাপ্তেরেব নিরূপয়িতুমুচিতত্বাৎ। নাপি সাধনবন্নিষ্ঠাত্যন্তাভাবাপ্রতিযোগিসাধ্যসামানাধিকরণ্যং ব্যাপ্তিঃ। বহ্নেরপি ধূমবন্নিষ্ঠাত্যন্তাভাবপ্রতিযোগিত্বাৎ, ন হি ধূমবতি মহানসে পৰ্ব্বতীয়বহোত্যন্তাভাবঃ, ইদং সংযোগি দ্রব্যত্বাদিত্যাদৌ সংযোগাত্যন্তা-ভাবস্য সাধনসমানাধিকরণত্বাদব্যাপকতা প্রসঙ্গাৎ। প্রতিযোগিবিরুদ্ধস্বসমানাধিকরণাত্যন্তাভাবা-প্রতিযোগিসাধ্যসামানাধিকরণ্যং ব্যাপ্তিঃ, সংযোগাত্যন্তাভাবস্য প্রতিযোগিবিরুদ্ধত্বাভাবাদিতি চেৎ, ন, সংযোগাত্যন্তাভাবস্যাপি প্রতিযোগিবিরুদ্ধত্বাৎ। অন্যথাবচ্ছেদভেদকল্পনাবৈয়র্থ্যাৎ ন হি কৃতকত্বানিত্যত্বয়োবৃত্ত্যর্থর্মবচ্ছেদভেদঃ কল্প্যতে। নাপি সাধ্যবৈয়ধিকরণ্যানধিকরণত্বং কেবলান্বয়িনি সাধ্যবৈয়ধিকরণ্যাপ্রসিদ্ধেঃ সাধ্যানধিকরণাধিকরণত্বং হি তৎ। নাপি যৎসম্বন্ধিতাবচ্ছেদকরূপবত্ত্বং যস্য তস্য সা ব্যাপ্তিঃ বহ্নিত্বস্যাপি ধূমসম্বন্ধিতাবচ্ছেদকত্বাৎ, অধিকদেশবৃত্তিতয়া তন্ন তথেতি চেৎ ব্যাপকতাবচ্ছেদকস্যাধিকদেশবৃত্তের প্যভ্যুপগমাৎ ধূমত্বস্যাপি গগনতলাবলম্বি ধূমবৃত্তিতয়াধিকদেশবৃত্তিত্বাৎ। অতএব তদ্বারণার্থং বিশেষণমিতি চেৎ তর্হি যদ্ ব্যাপ্যতাবচ্ছেদক তদেব সম্বন্ধিতাবচ্ছেদকত্বেনাভিমতমিত্যভিমত তথাচাত্মাশ্রয়ঃ। এবঞ্চ যৎসামানাধিকরণ্যাবচ্ছেদকরূপবত্ত্বং যস্য তস্য ব্যাপ্তিরিত্যপ্যুক্তদোষাক্রান্তমিতি চেৎ, অত্রোচ্যতে, অনৌপাধিকঃ সম্বন্ধো ব্যাপ্তিঃ। অনৌপাধিকত্বন্তু যাবৎস্বব্যভিচারিব্যভিচারিসাধ্যসামানাধিকরণ্যং যাবৎস্বসমানাধিকরণা ত্যন্তাভাবপ্রতিযোগিপ্রতিযোগিকাত্যন্তাভাবসমানাধিকরণসাধ্যসামানাধিকরণ্যং বা, যাবৎসাধনা ব্যাপকাব্যাপ্যসাধ্যসামানাধিকরণ্যমিতি নিরুক্তিদ্বয়ার্থঃ, যাবৎসাধ্যব্যাপকব্যাপকত্বং বা, বহুব্রীহিণা দুর্গ্রহমিদমিতি চেৎ, অতএব তত্র ভূয়োদর্শনাপেক্ষা তর্কাপেক্ষা চ। যদ্বা সাধনসমানাধিকরণাত্যন্তাভাবাপ্রতিযোগিসাধ্য – সামানাধিকরণ্যং ব্যাপ্তিঃ। অত্যন্তাভাবশ্চ বিবক্ষিতঃ তেন মহানসীয়ধূমে

বহ্নিত্বাদিসামান্যাবচ্ছিন্ন প্রতিযোগিতাকো

সা

১০৮

বৈশেষিক-দর্শনম্

পৰ্ব্বতীয়বহ্যত্যন্তাভাবসামানাধিকরণ্যেঽপি ন দোষঃ, ধূমবতি বহ্নির্নাস্তীতি প্রতীতেরনদয়াৎ, দ্রব্যত্বন্তু সংযোগিত্বাত্যন্তাভাবাসমানাধিকরণমেব ন হি ভবতি দ্রব্যং ন সংযোগীতি প্রতীতিঃ। সংযোগানাং প্রত্যেকমব্যাপ্যবৃত্তিত্বেঽপি সংযোগিত্বসামান্যস্য ব্যাপ্যবৃত্তিত্বাৎ তস্যৈব চ ব্যাপকত্বাৎ। নন্বনৌপাধিকত্বমুপাধিবিরহঃ উপাধিরেব দুষ্পরিকলনীয় ইতি চেন্ন সাধ্যব্যাপকত্বে সতি সাধনাব্যাপকস্যোপাধিত্বাৎ তদুক্তং “সাধনে সোপাধিঃ সাধ্যে নিরুপাধিরুপাধিঃ”। ননু কেবলসাধ্যাব্যাপকোপাধ্যব্যাপকমেতৎ যথা বায়ুঃ প্রত্যক্ষঃ প্রত্যক্ষস্পর্শাশ্রয়ত্বা- দিতত্রোদ্ভূতরূপবত্ত্বম্, স শ্যামো মিত্রাতনয়ত্বাদিত্যত্র শাকপাকজত্বম্, নহু্যদ্ভূতরূপবত্ত্বং প্রত্যক্ষত্বব্যাপকম্, আত্মনি গুণকৰ্ম্মাদৌ চ প্রত্যক্ষে তদভাবাৎ। নাপি শাকপাকজত্বং শ্যামত্বব্যাপকম্ কাককোকিলজলদজম্বুফলাদৌ শ্যামে তদভাবাদিতি চেন্ন, পৰ্যবসিত- সাধ্যব্যাপকত্বে সতি সাধনাব্যাপকত্বস্য তথা বিবক্ষিতত্বাৎ, পৰ্যবসিতঞ্চ সাধ্য যদ্ধৰ্ম্মাবচ্ছেদেনোপাধ্যোপকত্বমভগ্নং তদ্ধৰ্ম্মাবচ্ছিন্নম্, প্রকৃতে বহিদ্ৰব্যত্বাবচ্ছেদেন প্রত্যক্ষত্বস্যোদ্ভূতরূপবত্ত্বং ব্যাপকম্, অন্বয়ব্যতিরেকাভ্যাং গৃহীতম্, ঔৎপত্তিকনরশ্যামত্বাবচ্ছিন্নং সাধ্যং প্রতি চরকসুশ্রুতাদৌ শাকপাকজত্বস্য ব্যাপকত্বাবধারণাদেবমন্যত্রাপ্যূহ্যম্। ননু নায়মুপাধিপদবাচ্যঃ, যদ্ধম্মোহন্যত্র ভাসতে স উপাধিঃ, যথা স্ফটিকাদৌ জবাকুসুমাদি, বিষমব্যাপ্তোপাধৌ চ ব্যাপ্যত্বাভাবাত্তদ্ধর্ম্মস্য সাধনাভিমতেহনবভাসনাদিতি চেৎ সত্যং সমব্যাপ্ত এবান্ধেনপ্রভববহ্নিমত্ত্বাদৌ মুখ্য উপাধিপদপ্ৰয়োগঃ, অন্যত্র তু গৌণঃ, গুণো ব্যভিচারোন্নায়কত্বম্, যদ্ধি যদ্ব্যাপকব্যাভিচারি তস্য তদ্ব্যভিচারিত্বনিয়মাৎ। ভবতি চ সাধ্যব্যাপকস্যোপাধের্ব্যভিচারি সাধনম্, অতঃ সাধ্যব্যভিচারীতি, যদ্ব্যাপকাব্যাপ্যং যৎ তৎ তদব্যাপ্যম্ ইতি। ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধ্যুন্নায়কত্বং বা সৎপ্রতিপক্ষোত্থাপকত্বং বা পক্ষে উপাধেঃ সাধ্যব্যাপকস্যাভাবাৎ সাধ্যাভাবসাধনাৎ। তদুক্তং “বাদ্যুক্তসাধ্যনিয়মচ্যুতোঽপি কথকৈরুপাধি- রুদ্ভাবঃ। পর্যবসিতং নিয়ময়ন্ দূষকতাবীজসাম্যাৎ” ইতি। উন্নীয়তে চায়ং বাধব্যভিচারানুকূল- তর্কাভাবপ্রতিকূলতর্কৈঃ। যত্ত্ব যদ্ব্যভিচারিত্বেন সাধনস্য সাধ্যব্যভিচারিত্বং স উপাধিরিতি। তত্র তৃতীয়া ন করণে ন হেতৌ ন প্রকারে ন লক্ষণে, ন চ যদ্ব্যভিচারিত্বেন জ্ঞাতেন সাধনস্য সাধ্যব্যভিচারিত্বং জ্ঞায়তে ইতি পূরণীয়ম্ অজ্ঞায়মানোপাধ্যব্যাপনাৎ স্ফূটব্যভিচারস্থলোপাধ্য- ব্যাপনাৎ, যোগ্যতাগর্ভা তু দুর্নিরূপা, ব্যভিচারোন্নায়কত্বমব্যবস্থাপ্য উপাধ্যুদ্ভাবনাশক্যত্বাচ্চ, পক্ষেতরত্বন্তু উপাধিলক্ষণাক্রান্তমপি স্বব্যাঘাতকত্বান্নোপাধিঃ, যথা পক্ষে সন্দিগ্ধানৈকান্তিকত্বম্, যদি হি তত্র ন সন্দেহস্তদা ন পক্ষতা, যদি পক্ষতা তদা সন্দেহস্যাবশ্যকতয়া সন্দিগ্ধা- নৈকান্তিকত্বধৌব্যাৎ অবশিষ্টং ময়ূখেঽন্বেষ্টব্যম্।। ১৪।।

.

অপ্রসিদ্ধো হন পদেশোঽসন্ সন্দিগ্ধশ্চানপদেশঃ।।১৫।।

অনুবাদ

পরামর্শের বিরোধী হেতুই হেত্বাভাস। (তাহা তিন প্রকার) অপ্রসিদ্ধ, অসৎ এবং সন্দিগ্ধ।। ১৫।।

ব্যাখ্যা

যে হেতুতে প্রকৃত সাধ্যের ব্যাপ্তি অপ্রসিদ্ধ, যে হেতুতে পক্ষবৃত্তিত্ব নাই, বা যে হেতুর আশ্রয় পক্ষে পক্ষতাবচ্ছেদক নাই,—এই ত্রিবিধ হেতুই অপ্রসিদ্ধ। যে হেতু সাধ্যের অধিকরণে থাকে না, তাহা অসৎ বা বিরুদ্ধ এবং যে হেতু সাধ্যসন্দেহের জনক হয়, তাহাই সন্দিগ্ধ। সন্দিগ্ধ অর্থে—ব্যভিচারী। বিশেষ বিবরণ উদাহরণপ্রসঙ্গে প্রদত্ত হইবে।। ১৫।।

উপস্কারঃ

ইদানীং বৃত্তানাং বৰ্ত্তিষ্যমাণানাঞ্চ হেতূনাং হেত্বাভাসাদ্বিবেকায় হেত্বাভাস প্রকরণমারভমাণ আহ।

অপ্রসিদ্ধ ইতি অব্যাপ্তোহ গৃহীতব্যাপ্তিকো বিপরীতব্যাপ্তিকশ্চ বিরুদ্ধঃ, এতেন ব্যাপ্যত্বা- সিদ্ধবিরুদ্ধয়োঃ সংগ্রহঃ, অসন্ ইতি পক্ষেঽসন্ অপক্ষধর্ম্ম ইত্যর্থঃ স চ ক্বচিৎ স্বরূপবিরহাৎ ক্বচিৎ সন্দেহসিষাধয়িষয়োরভাবাৎ সিদ্ধসাধনে, সন্দিগ্ধ ইতি পক্ষে সাধ্যসদসত্ত্ব- কোটিকসংশয়জনকঃ, স চ সংশয়ঃ সমানধর্মদর্শনাৎ ক্বচিদসাধারণধর্মদর্শনাৎ ক্বচিৎ পক্ষ এব হেতোঃ সাধ্যতদভাবসাহচর্য্যদর্শনাৎ, আদ্যঃ সাধারণানৈকান্তিকঃ, দ্বিতীয়স্ত্বসাধারণানৈকান্তিকঃ, তৃতীয়োহনুপসংহারী।। ১৫।।

.

যস্মাদ্বিষাণী তস্মাদশ্বঃ।। ১৬।।

অনুবাদ

(এই গৰ্দ্দভ) যেহেতু শৃঙ্গবিশিষ্ট, অতএব (ইহা) অশ্ব।। ১৬।।

ব্যাখ্যা

অনুমান করিতে হইলে, হেতু স্থির করিতে হয়; সেই হেতু যদি ব্যাপ্তিবিশিষ্ট এবং পক্ষে আছে এইরূপ অভ্রান্ত নিশ্চয় হয়, তাহা হইলে, অনুমান অর্থাৎ অনুমিতিও অভ্রান্ত হইতে পারে, তাহা না হইলেও যদি অনুমিতি অভ্রান্ত হয়, তাহা হেতুর গুণে নহে, কপালের গুণে। আত্মা, ঈশ্বর, পরলোক, জন্মান্তর সমস্তই অনুমানসাপেক্ষ। অনুমান কেন ভ্রান্ত হয় তাহা না জানিলে, অভ্রান্ত অনুমানের উপযুক্ত হেতু স্থির করা যায় না। যে সকল হেতুকে অবলম্বন করিয়া অনুমান করিলে, অনুমান ভ্রান্ত হইতে পারে, তাহাই হেত্বাভাস; অভ্রান্ত অনুমানের উপযোগী ব্যাপ্তি-পক্ষধর্ম্মতা-বিশিষ্ট হেতুই সদ্ধেতু। আত্মানুমানস্থলে যে হেতু দেখান হইয়াছে তাহা হেত্বাভাস নহে, সদ্ধেতু। ইহা বুঝাইবার জন্যই ১৫শ সূত্রের অবতারণা। পরন্তু উদাহরণ প্রদর্শন ব্যতীত লক্ষণ পরিষ্কৃত হয় না, এই জন্য এই সূত্রে সেই উদাহরণ প্রদর্শিত হইতেছে। তুমি দূরে একটী গর্দভ দেখিলে, তোমার নিকটস্থ আর একব্যক্তিও উহাকে দেখিল, তাহার কর্ণদ্বয়কে তুমি শৃঙ্গ বলিয়া বুঝিয়াছ, অপরে তাহা কৰ্ণ বলিয়াই বুঝিয়াছে এবং তাহার পুচ্ছও দেখিয়াছে। তোমরা উভয়েই তখন পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া দূরস্থ বস্তুটী কোন্ পশু নির্ণয় করিবার জন্য অনুমানে প্রবৃত্ত হইলে, এমন সময় আর একটা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিও উপস্থিত হইলেন। তিনি কিন্তু কিছু না বলিয়া তোমরা কেমন অনুমান কর তাহাই দেখিতে লাগিলেন;—তুমি বলিলে ঐ পশুটী অশ্ব, কেননা উহার শৃঙ্গ আছে, তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি হাসিয়া বলিল, “কৈ শৃঙ্গ? শৃঙ্গ তো উহার নাই, ঐ দুটী যে উহার কর্ণ, বিশেষতঃ যাহার শৃঙ্গ থাকে সেই পশু কি অশ্ব হইতে পারে? অশ্বের কি শৃঙ্গ আছে?” হয় তো তুমি আপনার কোট সহজে ছাড়িলে না। তখন সেই তৃতীয়ব্যক্তি তোমাকে বলিলেন, না বাপু, এই দ্বিতীয় ব্যক্তি যাহা বলিয়াছেন তাহাই ঠিক; তোমার হার হইল। এস্থলে তোমার প্রযুক্ত হেতু অপ্রসিদ্ধ এবং বিরুদ্ধ। শৃঙ্গে অশ্বত্বের ব্যাপ্তি নাই, অর্থাৎ যেখানে যেখানে শৃঙ্গ সেই সব স্থানেই অশ্বত্ব এরূপ ব্যাপ্তি বা নিয়ম নাই। ব্যাপ্তি তো দূরের কথা শৃঙ্গ ও অশ্বত্ব কোথাও এক স্থানে থাকে না। পক্ষ—যাহাতে সাধ্যের সন্দেহ হইয়াছিল, যেখানে অনুমান করিবার জন্য তুমি প্রবৃত্ত হইয়াছিলে—সেই দূরস্থ পশু,—তাহাতে শৃঙ্গ নাই, সুতরাং হেতুতে পক্ষবৃত্তিত্ব থাকিল না—এই দুই কারণে শৃঙ্গ ‘অপ্রসিদ্ধ’ হেতু। এখানে সাধ্য অশ্বত্ব,—ইহার অধিকরণ অশ্ব, তাহাতে শৃঙ্গ থাকে না——অতএব ঐ হেতু ‘বিরুদ্ধ’ও হইল। সুতরাং এই সূত্রে বিরুদ্ধ এবং অসিদ্ধ দুইটী অনপদেশ অর্থাৎ হেত্বাভাসের উদাহরণ প্রদত্ত হইল। এতদ্ভিন্ন অসিদ্ধ—যেমন সোনার পাথরবাটী, ইহা পক্ষ হইলে, আশ্রয়াসিদ্ধি। কেন না পক্ষতাবচ্ছেদক বা পক্ষের বিশেষণ—’সোনার’ বা সুবর্ণময়ত্ব ফলতঃ পাথরবাটীতে—প্রস্তরময় পাত্রে নাই; সাধ্য হইলে ‘সাধ্যাপ্রসিদ্ধি’ সাধ্যবিশেষণ ঐ সুবর্ণময়ত্ব সাধ্যে নাই,—হেতু হইলে ‘হেত্বসিদ্ধি’ ঐ হেতু বিশেষণ—-সুবর্ণময়ত্ব হেতুতে—প্রস্তরময় পাত্রে নাই। ব্যাপ্তিনিশ্চয় করিতে হইলেই সাধ্য ও হেতুর আবশ্যক। হেতুতে সাধ্য ব্যাপ্তিই অনুমানের উপযোগী কি না। এখন যদি সাধ্যের বা হেতুর কিয়দংশ অলীক হয় তাহা হইলে ব্যাপ্তিকেই অলীক বা অপ্রসিদ্ধ বলিতে হয়। এইজন্য সাধ্যাপ্রসিদ্ধি ও হেত্বসিদ্ধির পৃথক্ পৃথক্ উল্লেখ নাই; উহারা এক ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধির অন্তর্গত। এই সোনার পাথরবাটী, দুগ্ধের পাত্র এইরূপ অনুমান করিতে হইলে, সোনার পাথরবাটী পক্ষ। ঐ জিনিসটা—সোনার পাথরবাটী এইরূপ অনুমানে সোনার পাথরবাটী সাধ্য। এবং ঐখানে দুগ্ধ আছে যেহেতু ঐখানে সোনার পাথরবাটী আছে—এইরূপ অনুমানে সোনার পাথরবাটী হেতু।। ১৬।।

উপস্কারঃ

তত্র ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধবিরুদ্ধস্বরূপাসিদ্ধানামুদাহরণমাহ।

যত্র রাসভপিণ্ডং পক্ষীকৃত্যায়মসাবশ্বঃ বিষাণিত্বাৎ যস্তু নাশ্বো নাসৌ বিষাণী, যথা শশশৃগালনরবানরাদিরিতি ব্যতিরেকসহচারদর্শনাহিতব্যামোহঃ প্রযুক্তে, তত্র ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধ- স্বরূপাসিদ্ধবিরুদ্ধানামুদাহরণমিদম্।।১৬।।

.

যক্ষ্মাদ্বিষাণী তস্মাদৌৗরিতি চানৈকান্তিকস্যোদাহরণম্।।১৭।।

অনুবাদ

যেহেতু শৃঙ্গবিশিষ্ট—অতএব (ইহা) গো, এইরূপ স্থল—ব্যভিচারীর উদাহরণ।। ১৭।।

ব্যাখ্যা

যে হেতু—* সাধ্যের অধিকরণেও থাকে এবং সাধ্যাভাবের অধিকরণেও থাকে, তাহাই প্রধান ব্যভিচারী; ইহার নাম সাধারণ। যে অধিকরণে সাধ্য নিশ্চয় বা সাধ্যাভাব নিশ্চয় আছে, তাহাতে যে হেতু থাকে না তাহাও ব্যভিচারী। এই প্রকার ব্যভিচারীর নাম অসাধারণ এবং যে হেতু একেবারে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সাধ্য সাধনের জন্য অবলম্বিত হয়, অথচ সাধ্য যথায় নাই সেখানেও থাকে, তাহাই অন্যবিধ ব্যভিচারী; ইহার নাম অনুপসংহারী। সূত্রে সংক্ষেপে এই তিন প্রকার ব্যভিচারীরই উদাহরণ প্রদত্ত হইয়াছে;—যেখানে মহিষ পক্ষ—গোত্ব সাধ্য এবং শৃঙ্গ হেতু—সেইখানে ঐ হেতু সাধারণ। কেননা সাধ্যের অধিকরণ গো তাহাতেও শৃঙ্গ আছে, সাধ্যাভাবের- গোত্বাভাবের অধিকরণ মহিষ তাহাতেও আছে, ইহা সাধারণ হেতু। যদি কোন একটী গো পক্ষ হয়, গোত্ব সাধ্য হয় এবং শৃঙ্গবিশেষ—অর্থাৎ তাহার শৃঙ্গই হেতু হয়—তাহা হইলে ঐ হেতু অসাধারণ। কেননা ঐ শৃঙ্গবিশেষ যেখানে আছে সেখানে গোত্বের বা গোত্বাভাবের নিশ্চয় নাই; সে শৃঙ্গ অন্যত্রও নাই। সামান্যতঃ গোশৃঙ্গ হেতু হইলে, অর্থাৎ এই বস্তু—যেহেতু গো-শৃঙ্গ-বিশিষ্ট অতএব গো—এইরূপ স্থলে, এখানে হেতু ব্যভিচারী হইল না; কেননা, যে গরুতে গোত্বের অনুমান করা যাইতেছে, তাহাকে ছাড়িয়া অপর গরুতে সাধ্যের অর্থাৎ গোত্বের নিশ্চয় আছে এবং গোশৃঙ্গও আছে। যথায় গোত্ব নাই, তথায় গোশৃঙ্গও নাই—এই কারণে গোশৃঙ্গ গোত্বের অনুমানে নিৰ্দ্দোষ হেতু বা সদ্ধেতু এইজন্য পূর্ব্বে শৃঙ্গ হেতু দ্বারা গোত্বের অনুমান উল্লিখিত হইয়াছে। যদি বিশ্ব পক্ষ হয়—আর শৃঙ্গমাত্রই হেতু হয়, তাহা হইলে তাহাকে অনুপসংহারী হেতু বলিতে পারি। যথা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই গোত্ববিশিষ্ট, যেহেতু তাহার শৃঙ্গ আছে। এইরূপ অনুমানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই পক্ষ, অথচ সাধ্যাভাবের অধিকরণ মহিষে শৃঙ্গ আছে—এইজন্য ঐ হেতু অনুপসংহারী হইতে পারে। পরন্তু এই স্থল অনুপসংহারীর সৰ্ব্বসম্মত স্থল নহে— সকলই অনিত্য, যেহেতু সৰ্ব্বত্রই প্রমেয়ত্ব আছে—এইস্থলের প্রমেয়ত্ব-হেতু অনুপসংহারী। কেননা সকলই পক্ষ, অথচ প্রমেয়ত্ব হেতু অনিত্য বস্তুতেও আছে—নিত্য বস্তু—আকাশ, আত্মাতেও আছে। প্রমেয়ত্ব—প্রমাজ্ঞান-বিষয়ত্ব যাহা প্রমাজ্ঞানের বিষয়। সকল বস্তুই প্রমাজ্ঞানের বিষয়, অন্ততঃ সর্ব্বজ্ঞ ঈশ্বরের প্রমাজ্ঞানবিষয় না হইবে কি? সুতরাং প্রমেয়ত্ব সৰ্ব্বত্র বৃত্তিধৰ্ম্ম। তাহা নিত্যেও আছে অনিত্যেও আছে। এই ত্রিবিধ ব্যভিচারীই সূত্রে ‘সন্দিগ্ধ’ নামে অভিহিত। এইরূপ হেতু দেখিলে, পক্ষে সাধ্যের নিশ্চয় না হইয়া সন্দেহই জাগিয়া উঠে। কেননা যে বস্তু সাধ্যের সহিতও একত্র থাকে, সাধ্যাভাবের সহিতও একত্র থাকে, বা নিশ্চিত সাধ্য বা নিশ্চিত সাধ্যাভাব কিছুরই সহিত একত্র থাকে না—সেই হেতুকে পক্ষে দেখিলে, মনে সন্দেহ হয় এখানে সাধ্য আছে কি না? এইরূপ সন্দেহ-কারণ বলিয়াই উহাকে ‘সন্দিগ্ধ’ বলা হইয়াছে।

[* সাধারণ প্রভৃতির লক্ষণে বিবিধ মতভেদ থাকিলেও কোন না কোন একটী মত গ্রহণ করিয়া আমরা লক্ষণ জ্ঞান করিতেছি; বিশেষ অনুসন্ধিৎসুগণ তত্ত্ব___[?] গ্রন্থ পাঠ করিবেন।]

ন্যায়দর্শনমতে, এতদ্ভিন্ন দুইটী হেত্বাভাস আছে—বাধিত এবং সৎপ্রতিপক্ষিত। যেখানে পক্ষে সাধ্য থাকে না, সেই পক্ষে সেই সাধ্যের অনুমাপক হেতুকে বাধিত বলা যায়। যথা উৎপত্তিকালীন ঘট পক্ষ ও গন্ধ সাধ্য হইলে পৃথিবীত্ব হেতু বাধিত সংজ্ঞায় অভিহিত। গন্ধ, উৎপত্তিকালে ঘটে থাকিতে পারে না, কেননা, ঘটের যে গন্ধ, ঘট তাহার কারণ,—কারণ পূর্ব্বে না থাকিলে, কাৰ্য্য উৎপন্ন হয় না। উৎপত্তির পূর্ব্বে ঘট ছিল না। সুতরাং উৎপত্তিকালে ঘটে গন্ধ উৎপন্ন হয় না, পরক্ষণে হয়।

হ্রদ পক্ষ, বহ্নি সাধ্য, ধূম হেতু, এই স্থলে যদি বহ্নিব্যাপ্যধূমবান্ হ্রদ এইরূপ পরামর্শ কালে বহ্ন্যভাবব্যাপ্যজলবান্ হ্রদ এইরূপ পরামর্শ হয় তাহা হইলে উক্ত উভয় হেতুই ‘সৎপ্রতিপক্ষিত’ নামে আখ্যাত হইয়া থাকে। প্রতিপক্ষ অর্থে বিরোধী। যে অনুমানের জন্য পরামর্শ, তাহার বিরোধীর অনুমাপক পরামর্শ তখন যদি ‘সৎ’ হয় অর্থাৎ থাকে, তাহা হইলে, কোন পরামর্শেরই ফল হয় না। সুতরাং বিরোধী পরামর্শদ্বয় এককালে হইলেই তখন সেই হেতুর নাম হয় সৎপ্রতিপক্ষিত বা সৎপ্রতিপক্ষ।

বৈশেষিক দর্শনে এই দুই প্রকার হেত্বাভাসের অনুল্লেখের কারণ এই যে, ইহা প্রকৃত হেত্বাভাস নহে। হেতু অর্থে অনুমিতিসাধন, যে সকল হেতু অনুমিতিসাধনতার অর্থাৎ ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতার ব্যাঘাতক দোষে দূষিত তাহাই হেত্বাভাস। হেতু স্বীয় পরামর্শ দ্বারা অনুমিতির উৎপাদক হয়। যে দোষ বুঝিলে সাধ্যনিশ্চয়, ব্যাপ্তিনিশ্চয় এবং পক্ষে হেতুনিশ্চয় ঘটে না, তাহাই অর্থাৎ অসিদ্ধি, বিরোধ এবং ব্যভিচার এই ত্রিবিধ দোষ মাত্রই অনুমিতি-সাধনতার ব্যাঘাতক। বাধ ও সৎপ্রতিপক্ষ অনুমিতির ব্যাঘাতক হইলেও অনুমিতিসাধনতার ব্যাঘাতক নহে। সুতরাং তাহাকে হেত্বাভাস বলিব কেন? যাহা হেতুদোষ নহে, তাহাকে গ্রহণ করিয়া ‘হেত্বাভাস’ বা ‘দুষ্টহেতু’ এইরূপ সংজ্ঞা করিলে, নানাপ্রকার হেত্বাভাস বলিতে হয়। মনে কর—দূরস্থ পিতা যখন পুত্রের সংবাদ গ্রহণের ইচ্ছায় ছুটাছুটি করে, তখন সেই সংবাদ গ্রহণের অনুপযোগী কোন বিষয়েই মন যায় না। অতএব জ্ঞানও হয় না, কেননা ঐরূপ উৎকটেচ্ছা অপর জ্ঞানের প্রতিবন্ধক। সুতরাং অনুমিতিরও প্রতিবন্ধক। সেই সব ইচ্ছা অনুমিতির প্রতিবন্ধক হইলেও তাহা যেমন হেতুদোষ নহে—সেইরূপ বাধ, সৎপ্রতিপক্ষও হেতুদোষ নহে, পরন্তু অনুমিতির বিরোধী।

কেহ কেহ বলেন, বাধিত, সৎপ্রতিপক্ষিত হেতু বৈশেষিকমতে হেত্বাভাস হইলেও তাহা অসিদ্ধ প্রভৃতির অন্তর্গত। বাধস্থলে ব্যভিচার বা অসিদ্ধি আছেই। কেননা পক্ষে সাধ্যের অভাব আছে, তথায় হেতু থাকিলে ব্যভিচার; না থাকিলে স্বরূপাসিদ্ধি। সৎপ্রতিপক্ষস্থলে উভয়বিধ পরামর্শ কালে, কোন হেতুতেই ব্যাপ্তি নিশ্চয় হয় না, বা পক্ষবৃত্তিত্বের নিশ্চয় হয় না। এই যে অনিশ্চয় ইহাও একপ্রকার অসিদ্ধি; সুতরাং তথায় ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধি আছে। আর বিরোধী পরামর্শদ্বয় সত্ত্বে পক্ষে সাধ্যসন্দেহই হয়, এ কারণ সন্দেহ হেতু বলিয়া সন্দিগ্ধের অন্তর্গতও বলিতে পারা যায়।

ন্যায়দর্শনে যে পঞ্চবিধ হেত্বাভাস বলা হইয়াছে, তাহার কারণ প্রাচীন ব্যবহার মাত্র। ব্যবহার দেখিয়া লক্ষণ স্থির করিতে হয়, লক্ষণ অনুসারে ব্যবহার স্থির হয় না। বাধিত সৎপ্রতিপক্ষিত হেতুও হেত্বাভাস নামে ব্যবহৃত হইয়া থাকে; যে লক্ষণ দ্বারা তদুভয়ের সংগ্রহ করা যায় তাহাই কর্ত্তব্য। যদি অন্যবিধ দোষ থাকিলে তাহাকে স্বতন্ত্ৰ হেত্বাভাসরূপে গ্রহণ করা না হয়, তাহা হইলে বিরুদ্ধস্থলে ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধি তো আছেই, সুতরাং ত্রিবিধ হেত্বাভাসও বলা উচিত নহে। অতএব যে সময় বা সম্প্রদায়ের হেতু বাধ সৎপ্রতিপক্ষ দ্বারা হেত্বাভাস সংজ্ঞায় ব্যবহৃত হইত না, বৈশেষিকদর্শন সেই সময়ে বা সম্প্রদায়ে ও যে সময় বা সম্প্রদায়ে ব্যবহার ছিল; ন্যায়দর্শন সেই সময়ে বা সম্প্রদায়ে প্রাদুর্ভূত, ইহাই স্থির করিতে হয়। এ সম্বন্ধে আর একটী প্রকৃষ্ট কারণও আছে; তাহা এই;—সাধ্যবিশিষ্টপক্ষে সাধ্যব্যাপ্যহেতুর নিশ্চয় হইলে প্ৰমানুমিতি হয়। অর্থাৎ ঐরূপ নিশ্চয় বা পরামর্শ প্রমানুমিতির কারণ বা হেতু, যাহা যাহা ইহার ব্যাঘাতক তাহাই হেতুদোষ। বাধ ও সৎপ্রতিপক্ষিত ঐ নিশ্চয়েরও ব্যাঘাতঙ্ক অতএব উহারাও হেতুদোষ। তবেই দাঁড়াইল এই যে, হেত্বাভাস শব্দের মধ্যে যে ‘হেতু’ পদ আছে, বৈশেষিক মতে তাহার অর্থ—ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতা-বিশিষ্ট হেতু; আর ন্যায়মতে তাহার অর্থ—প্রমানুমিতির কারণ। এই হইতেই হেত্বাভাস ত্রিবিধ ও পঞ্চবিধ এই দুই মতের সৃষ্টি হইয়াছে।। ১৭।

উপস্কারঃ

অনৈকান্তিকমুদাহরতি।

যত্র মহিষং পক্ষয়িত্বা অয়ং গৌর্বিষাণিত্বাদিতি সাধয়তি তত্র সাধারণানৈকান্তিকতা, যদা ত্বাকাশং নিত্যং শব্দাশ্রয়ত্বাদিতি সাধয়তি তদাঽস্যাসাধারণানৈকান্তিকতা, এবং শব্দোঽনিত্য শব্দত্বাদিত্যাদ্যপ্যগৃহ্যমাণদশায়ামসাধারণানৈকান্তিকমেব, যদা তু বিপক্ষবাধকতর্কাবতারাৎ পক্ষ এব সাধ্যং সিধ্যেৎ তদা সপক্ষবৃত্তিতাজ্ঞানদশায়াং সদ্ধেতুরেব পক্ষস্যাপি সপক্ষত্বাৎ তত্র ব্যাপ্তপক্ষধর্ম্মতয়াহ প্রমিতোঽসিদ্ধঃ। স চ ত্রিবিধঃ ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধঃ স্বরূপাসিদ্ধ আশ্রয়াসিদ্ধশ্চ। তত্রাগৃহীতব্যাপ্তিকো ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধঃ, সত্যা এব ব্যাপ্তেরগ্রহাৎ ব্যাপ্তেরভাবাচ্চ উভয়থাপি, তেনানুকূলতৰ্কাভাসাদয়োঽসিদ্ধভেদাঃ স চায়মসমর্থবিশেষণাসমর্থবিশেষ্যাসমর্থোভয়সন্দিগ্ধা- সমর্থবিশেষণসন্দিগ্ধাসমর্থবিশেষ-সন্দিগ্ধাসমোর্থাভয়ভেদপ্রপঞ্চেন সহস্রধা ভিদ্যতে সৰ্ব্বত্র চাত্র সিদ্ধিবিরহ এবোদ্ভাব্যঃ। অত্রেদং তত্ত্বম্। হেতুস্তাবৎ কেবলান্বয্যন্বয়ব্যতিরেকিকেবল- ব্যতিরেকিভেদান্দ্রিবিধঃ। তত্র সর্বধৰ্ম্মিগতো ধৰ্ম্মঃ কেবলান্বয়ী যথা প্রমেয়ত্বাভিধেয়ত্ববিশেষ্যত্ব- বিশেষণত্বনিত্যদ্রব্যাত্যন্তাভাবাশ্রয়নাশনাশ্যগুণাদিধ্বংসাত্যন্তাভাবাদয়ঃ, নহ্যস্তি তাদৃশং কিঞ্চিৎ, যত্ৰৈতে ধৰ্ম্মা ন বিদ্যন্তে, তথাচ সৰ্ব্বগতত্বম্ অত্যন্তাভাবাপ্রতিযোগিত্বং বা কেবলান্বয়িত্বম্। এতেষাঞ্চ স্বাত্মবৃত্তিত্বেঽপি ন দোষঃ। তদুক্তং “প্রমাণং শরণং বৃত্তৌ ন ভিন্নাভিন্নত্বে যতঃ” ইতি কেবলান্বয়িসাধ্যকো হেতুঃ কেবলান্বয়ী অস্য চ পক্ষসত্ত্বসপক্ষসত্ত্বাবাধিতত্বাসৎপ্রতিপক্ষিতত্বানি চত্বারি রূপাণি  ́ গমকত্বৌপয়িকানি, অন্বয়ব্যতিরেকিণস্তু হেতোর্বিপক্ষাসত্ত্বেন সহ পঞ্চ, কেবলব্যতিরেকিণঃ সপক্ষসত্ত্বব্যতিরেকেণ চত্বারি, তথাচ যস্য হেতোর্যাবন্তি রূপাণি গমকতৌপয়িকানি তদন্যতররূপহীনঃ স হেতুরাভাস এবঞ্চ গমকতৌপয়িকান্যতররূপশূনত্বং হেত্বাভাসত্বং তেনান্যতররূপশূনত্বস্য নিশ্চয়বৎসন্দেহোহপ্যনুমিতি প্রতিবন্ধকঃ বাদিহেতোর- সাধকতাসাধকঃ। ন চ কেবলান্বয়িকেবলব্যতিরেকিণোর্থেত্বোরন্যতররূপশূন্যতয়া হেত্বাভাসত্বা-পত্তিঃ কেবলান্বয়িনি বিপক্ষাসত্ত্বস্য কেবলব্যতিরেকিণি সপক্ষসত্ত্বস্য গমকত্বৌপয়িকত্বাভাবাৎ। এবঞ্চাশ্রয়াসিদ্ধস্বরূপাসিদ্ধভাসাসিদ্ধানাং পক্ষসত্ত্বরূপবিরহাদাভাসত্বম্, ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধবিরুদ্ধ- সাধারণানৈকান্তিকানাং বিপক্ষাসত্ত্বরূপবৈকল্যাৎ, অসাধারণানৈকান্তিকানুপসংহারিণোঃ সপক্ষ- সত্ত্ববৈকল্যাৎ, বাধিতসৎপ্রতিপক্ষিতয়োরবাধিতত্বাসৎপ্রতিপক্ষিতত্ববিরহাৎ, এবং সোপাধিত্বা- প্রযোজকত্বয়োরপি বিপক্ষাসত্ত্বনিশ্চয়াভাবাদগমকত্বম্, অনুকূলতর্কাভাবপ্রতিকূলতর্কয়োরপি বিপক্ষাসত্ত্বানিশ্চয়বিরহাৎ, এবং সাধ্যবিকলসাধনবিকলোভয়বিকলদৃষ্টান্তাভাসানাং যদি হেত্বা- ভাসবিধবা দোষত্বং তদা সপক্ষসত্ত্বানিশ্চয়াৎ, যদি স্বাতন্ত্রেণ দৃষ্টান্তাভাসতয়া তথাপি দ্বারং হেতোঃ সপক্ষসত্ত্বানিশ্চয় এব, অনুপদর্শিতান্বয়ানুপদর্শিতব্যতিরেকাস্তু ন্যূনাপ্রাপ্তকালনিগ্রহ- স্থানপর্যবসন্না এব আত্মাশ্রয়ান্যোন্যাশ্রয়চক্রকানবস্থাস্তু ব্যাপ্তিনিশ্চয়ং বিঘটয়ন্তঃ সপক্ষসত্ত্ব- বিপক্ষাসত্ত্বন্যতররূপবিকলা এব হেত্বাভাসতামাসাদয়ন্তি। তত্র পক্ষে সাধ্যসদসত্ত্বাকোটি কসংশয়জনকো হেত্বাভাসঃ সব্যভিচারঃ, পক্ষে সাধ্যাভাবনিশ্চয়ফলকো হেত্বাভাসো বিরুদ্ধঃ, ব্যাপ্তিপক্ষধর্ম্মতা প্রমিতিবিরহোঽসিদ্ধঃ, বাধসৎপ্রতিপক্ষৌ তু কাশ্যপীয়ে মতে ন স্বতন্ত্রৌ। তত্র বাধ আশ্রয়াসিদ্ধাবনৈকান্তিকে বা পৰ্য্যবস্যতি তদুক্তং “বাধায়ামপক্ষধর্ম্মো হেতুরনৈকান্তিকো বা” ইতি সৎপ্রতিপক্ষোঽপ্যন্যতরত্র ব্যাপ্ত্যাদিসংশয়মাপাদয়ন্ অনৈকান্তিকাদাবেব পর্যবস্যতি। বৃত্তিকার “অপ্রসিদ্ধোহনপদেশোঽসন সন্দিগ্ধশ্চানপদেশ: ইতি সূত্র স্থচকারস্য বাধসৎপ্রতিপক্ষসমুচ্চয়াৰ্থতামাহ তেন “সব্যভিচারবিরুদ্ধ- প্রকরণসমসাধ্যসমাতীতকালাঃ পঞ্চ হেত্বাভাসাঃ “ ইতি গৌতমীয়মেব মতমনুধাবতি। পরন্তু ‘বিরুদ্ধাসিদ্ধসন্দিগ্ধমলিঙ্গং কাশ্যপোহব্রবীৎ” ইত্যাদ্যভিধানাৎ সূত্রকারস্বরসো হেত্বাভাসত্রিত্বে চকারম্ভূক্তসমুচ্চয়ার্থ ইতি তত্ত্বম্। গ্রন্থগৌরবভয়াৎ প্রপঞ্চো ন কৃতো ময়ূখে বিস্তরোহন্বেষ্টব্যঃ।।১৭।।

.

আত্মেন্দ্রিয়ার্থসন্নিকর্ষাদ্যন্নিষ্পদ্যতে তদন্যৎ।। ১৮।।

অনুবাদ

আত্মা হইতে এবং ইন্দ্রিয়ের সহিত বিষয়সম্বন্ধ হইতে যাহা (যে জ্ঞান) উৎপন্ন হয়, তাহা (আত্মার অস্তিত্বসাধক) সদ্ধেতু।। ১৮।।

ব্যাখ্যা

এই যে হেত্বাভাস নিরূপণ করা হইল, ইহার ফল—সদ্ধেতুনিশ্চয়। যে অনুমান হইতে আত্মার অস্তিত্বসিদ্ধি হয়, সেই অনুমানবিষয়ীভূত হেতু হেত্বাভাস নহে, সদ্ধেতু। সেই অনুমান এইরূপ,—জ্ঞান কোথাও আছে—কেন না তাহা উৎপত্তিম‍, যাহা উৎপত্তিম‍, তাহাই কোন না কোন আধারে আশ্রিত, যথা রূপাদি। এই অনুমান দ্বারা জ্ঞান কোন আধারকে অবলম্বন করিয়া আছে এরূপ স্থির হইলে, সে আধার, দ্রব্যভিন্ন অপর কেহ হইতে পারে না। পৃথিবী প্রভৃতি দ্রব্যও সে আধার নহে। এইরূপ নিশ্চয় করিবার জন্যও অনুমান আছে; জ্ঞান দ্রব্যে থাকে, কেন না তাহা গুণ;—জ্ঞান, পৃথিবী প্ৰভৃতি দ্রব্যে থাকে না, কেন না—তাহা কেবল মানস প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত। এই যে জ্ঞান ইহা সাক্ষাৎ সম্বন্ধে আত্মার অস্তিত্বসিদ্ধির হেতু না হইলেও—ইহাকে অবলম্বন করিয়াই হেতুর হেতুত্ব। জ্ঞানকে অবলম্বন না করিলে আত্মার অস্তিত্বসিদ্ধি হয় না। সেই যে হেতুত্ব, তাহার ব্যাঘাতক হেতুদোষ। জ্ঞানকে অবলম্বন করিয়া আত্মার অস্তিত্বসিদ্ধি করিবার জন্য যে হেতু গৃহীত হইয়া থাকে, তাহাতে অসিদ্ধি প্রভৃতি কোন দোষ নাই, অতএব তাহা সদ্ধেতু। এইরূপ ঈশ্বরাদি অনুমানেও সদ্ধেতু নিশ্চয় করিতে হয়।। ১৮।।

উপস্কারঃ

ইদানীং হেত্বাভাসবিবেচনস্য ফলমাহ।

আত্মেন্দ্রিয়ার্থসন্নিকর্ষাত্তাবজ্ঞানমুৎপদ্যতে তচ্চাত্মনি লিঙ্গম্ অসিদ্ধবিরুদ্ধানৈকান্তি- কেভ্যোঽন্যৎ অনাভাসমিত্যর্থঃ। তথাহি জ্ঞানমাত্মন্যুভয়থা লিঙ্গম্, জ্ঞানং ক্বচিদাশ্রিতং কাৰ্য্যত্বাদ্ৰূপাদিবদিতি বা, প্রত্যভিজ্ঞারূপতয়া বা যোহহমদ্রাক্ষং সোহহং স্পৃশামীতি। তত্র জ্ঞানগতং কাৰ্য্যত্বং নাসিদ্ধং যন্নিষ্পদ্যত ইত্যভিধানাৎ, ন বিরুদ্ধং সামান্যতো দৃষ্টেঽত্র বিরোধাভাবাৎ, ন চানৈকান্তিকম্, তত এব, তথাচ স্বগতকার্য্যত্বগুণত্বদ্বারা সামান্যতো দৃষ্টেন জ্ঞানমেবাত্মনি লিঙ্গম্, প্রত্যভিজ্ঞানন্তু ভিন্নকর্তৃকেভ্যো ব্যাবৰ্ত্তমানমেককর্তৃকতায়াং পৰ্য্যবস্যতি। ন চ বুদ্ধিচৈতন্যেঽপি কার্য্যকারণভাবনিবন্ধনমেব প্রতিসন্ধানম্, শিষ্যগুরুবুদ্ধ্যোরপি প্রতিসন্ধানপ্রসঙ্গাৎ। উপাদানোপাদেয়ভাবস্তত্র নাস্তি। স চ প্রতিসন্ধানপ্রযোজক ইতি চেদুপাদানত্বস্য দ্রব্যধৰ্ম্মতয়া বুদ্ধাবসম্ভবাৎ, সম্ভবে বা বুদ্ধীনাং ক্ষণিকতয়াপূর্ব্বানুভূত- প্রতিসন্ধানানুপপত্তেঃ, ন হি পূর্ব্ববুদ্ধ্যা উত্তরাসু বুদ্ধিষু কশ্চিৎ সংস্কার আধীয়তে, স্থিরস্য তস্য ত্বয়াহনভ্যুপগমাৎ, ক্ষণিকবুদ্ধিধারারূপস্য চ কালান্তরস্থতৌ প্রতিসন্ধানে বাহসামর্থ্যাৎ, আলয়বিজ্ঞানসন্তানঃ প্রবৃত্তিবিজ্ঞানসন্তানাদন্য এব স্মৰ্ত্তা চ প্রতিসন্ধাতা চেতি চেৎ? স যদি স্থিরঃ তদা সিদ্ধং নঃ সমীহিতম্, ক্ষণিকবুদ্ধিধারারূপশ্চেৎ তদা পূৰ্ব্বদোষানতিবৃত্তেঃ, নহি তত্রাপি স্থিরঃ কশ্চিৎ সংস্কারঃ।কিঞ্চ প্রবৃত্তিবিজ্ঞানাতিরিক্তে তত্র প্রমাণাভাবঃ। অহমিতি বুদ্ধিধারৈব প্রমাণমিতি চেৎ ভবতু তত্ত্ব যদি প্রবৃত্তিবিজ্ঞানান্যালয়বিজ্ঞানমেব চেদুপাদত্তে তদা প্রবৃত্তিবিজ্ঞানানামুপাদানতাবিরহে নিমিত্ততাপি ন স্যাৎ, উপাদানতাব্যাপ্তত্বান্নিমিত্ততায়াঃ, মাহস্তু নিমিত্ততাপীতি চেৎ, তহি সত্ত্বমপি গতম্, অর্থক্রিয়াকারিত্বস্য সত্ত্বলক্ষণত্বাৎ প্রবৃত্তিসত্তানালয়বিজ্ঞানসম্ভানাভ্যাং সন্তুয় সন্তানদ্বয়মুপাদীয়ত ইতি চেৎ তর্হি কিমপরামবয়- বিসংযোগাদিভিঃ, ব্যাসজ্যবৃত্তিতায়াস্ত্বয়াপ্যভ্যুপগমাৎ তস্মাজ্ জ্ঞানেনাশ্রয়তয়াহনুমিতমাত্মানং প্রতিসন্ধানং স্থিরত্বেন সাধয়তীতি ন কিঞ্চিদনুপপন্নম্। যদ্বা নিত্যা বুদ্ধির্নাত্মানং কারণত্বেন গময়িতুমহতীতি সাধ্যমতনিরাসায় সূত্রমিদমুপতিষ্ঠতে “আত্মেন্দ্রিয়ার্থসন্নিকর্ষাদ্ যন্নিষ্পদ্যতে তদন্যৎ” বুদ্ধিতত্ত্বং যত্ত্বয়োচ্যতে তজ্ঞানমেব, বুদ্ধিরুপলব্ধিজ্ঞানমিতি হি পৰ্য্যায়াভিধান, তচ্চাত্মাদিসন্নিকর্ষাদুৎপন্নম্ অন্যদেব ত্বদভ্যুপগতাদন্তঃকরণাদিত্যর্থঃ। তথাচ ভবতি তৎ আত্মনো লিঙ্গমিতি ভাবঃ।। ১৮।।

.

প্রবৃত্তিনিবৃত্তী চ প্রত্যগাত্মনি দৃষ্টে পরত্র লিঙ্গম্।। ১৯।।

অনুবাদ

নিজ আত্মার প্রবৃত্তি নিবৃত্তি অনুভূত হয়। (সেইরূপ) প্রবৃত্তি নিবৃত্তিই পরকীয় আত্মার অনুমাপক।। ১৯।।

ব্যাখ্যা

ইচ্ছা হইতে প্রবৃত্তি ও বিদ্বেষ হইতে নিবৃত্তির উৎপত্তি হয়। এই জন্যই লোকে সুখজনক কার্য্যে প্রবৃত্ত ও দুঃখজনক কাৰ্য্য হইতে নিবৃত্ত হয়। শারীরিক চেষ্টা দ্বারা এই প্রবৃত্তি নিবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়। চাকুরে ডেলিপ্যাসাঞ্জারের ভাত মুখে দিয়া গাড়ীর জন্য দৌড়াদৌড়ি, আর পাওনাদারের দোকানের পথে গাঢাকা দেওয়া দেখিলেই প্ৰবৃত্তি, নিবৃত্তি বুঝা যায়। কেন না, আমার নিজের প্রবৃত্তি-নিবৃত্তির সময়েও ঐরূপ চেষ্টাই হইয়া থাকে। পরকীয় ঐ প্রবৃত্তি-নিবৃত্তিও আত্মনিষ্ঠ, কেন না তাহা তো প্রযত্নেরই অন্তর্গত। আমার প্রযত্ন যখন আত্মস্থিত, অর্থাৎ জ্ঞানের সহিত একাধিকরণে স্থিত, তখন পরকীয় প্রযত্নও আত্মস্থিত। আমি জানিয়া প্রবৃত্ত হইতেছি, এইরূপ অনুভব দ্বারা জ্ঞান ও প্রযত্নের একাধিকরণে স্থিতি সিদ্ধ হয়। এই দুইটী সূত্র দ্বারা সকল জীবাত্মার অনুমান প্ৰণালী প্রদর্শিত হইল।। ১৯।।

উপস্কারঃ

আত্মন্যনুমানমভিধায় ইদানীং পরাত্মানুমানমাহ।

প্রত্যগাত্মনীতি স্বাত্মানীত্যর্থঃ, ইচ্ছাদ্বেষজনিতে প্রবৃত্তিনিবৃত্তী প্রযত্নবিশেষৌ তাভ্যাঞ্চ হিতাহিতপ্রাপ্তিপরিহারফলকে শরীরকর্ম্মণী চেষ্টালক্ষণে জন্যেতে, তথাচ পরশরীরে চেষ্টাং দৃষ্ট্বা ইয়ং চেষ্টা প্রযত্নজন্যা চেষ্টাত্বাৎ মদীয়চেষ্টাবৎ। স চ প্রযত্ন আত্মজন্যঃ, আত্মনিষ্ঠো বা প্রযত্নত্বাৎ, মদীয় প্রযত্নবদিতি পরাত্মানুমানম্।। ১৯।

ইতি শাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে তৃতীয়াধ্যায়স্যাদ্যমাহ্নিকম্।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *