তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – ১

নবনী অনেকক্ষণ থেকে হাঁটছে। কতক্ষণ সে জানে না। তার হাতে ঘড়ি নেই। এ রকম অজ পাড়াগায়ে ঘড়ির দরকারও নেই। তবে গায়ে চাদর থাকলে ভালো হত। শীত লাগতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ আগেও শীত ছিল না, এখন ঝপ করে শীত পড়ে গেছে। নবনী মনে মনে বলল, ‘বাহ্ আশ্চর্য তো!’ মনে মনে বলার প্রয়োজন ছিল না, চেঁচিয়েও বলা যেত—আশপাশে কেউ নেই।

তার পরনে সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি। সিল্কের শাড়ি সে কখনোই পরে না। শীতের সময় সিল্ক পরলে গায়ে হিম হিম হয়—ভালো লাগে না। সবুজ রংটাও তার পছন্দ না। তার ধারণা, সবুজ গাছেদের রং—এই রং তাদেরই থাকা উচিত। সবুজ শাড়ি পরার পর তার নিজেকে খানিকটা গাছ গাছ মনে হচ্ছিল। এখন আর মনে হচ্ছে না। শীত লাগছে। গাছদের নিশ্চয়ই শীত লাগে না।

নবনী হাঁটতে হাঁটতে একটা বটগাছের কাছে চলে এসেছে। এটা যে একটা বটগাছ দূর থেকে বোঝা যায়নি। বেলা পড়ে এসেছে, চারদিক অস্পষ্ট, ছায়া ছায়া। নবনী এগুচ্ছিল পায়ে-চলা পথে। তার অভ্যাস মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে গাছটার সামনে পড়ে গেল। অন্ধকারের মধ্যে হুলস্থুল একটা ব্যাপার। বিশাল ঝুরি নেমেছে চারদিকে। পুরো গাছটাকে মনে হচ্ছে প্রকাণ্ড এক পাহাড়। নবনী বাচ্চাদের মতো গলায় চেঁচিয়ে বলল, ‘মিস্টার বটগাছ! আপনি কোত্থেকে এলেন?’ মনের আনন্দে এখানে চেঁচিয়ে কথা বলা যায়। কেউ শুনে ফেলবে না এবং ভুরু কুঁচকে ভাববে না মেয়েটা পাগল নাকি?

সে চারদিকে তাকাল। কেউ কোথাও নেই। মাথার উপর কিছু পাখি উড়াউড়ি করছে। কী পাখি? ‘কী আশ্চর্য, টিয়া!’ নবনী আবারো চেঁচিয়ে বলল, ‘টিয়া টিয়া, টিয়া!’ কেউ শুনবে না। যত ইচ্ছা চেঁচানো যায়। আচ্ছা, এই জায়গাটা জনশূন্য কেন? মানুষজন তো নেই, গরুছাগলও নেই, কে জানে এই জায়গাটা হয়তো ‘দোষী’। সব গ্রামে একটা ‘দোষী’ পথ থাকে। সন্ধ্যার পর ঐ পথে কেউ যায় না। একটা থাকে ‘দোষী গাছ’। বেশিরভাগ সময়ই শ্যাওড়া গাছ। দোষী গাছের কাছে যাওয়াও নিষেধ। এই বটগাছটা আবার দোষী না তো!

নবনী বলল, ‘মিস্টার বটগাছ, আপনি দোষী না নির্দোষ?’

সে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল। মাথার উপর দিয়ে ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া উড়ে যাচ্ছে। এত সুন্দর একটা পাখি এত বিশ্রী করে ডাকে! পাখি যত সুন্দর হয় তার ডাকও হয় তত কুৎসিত। চিড়িয়াখানায় একবার ময়ূরের ডাক শুনে তার হাত থেকে বাদামের ঠোঙা পড়ে গিয়েছিল।

নবনী এমনিতে বেশ ভীতু। ঢাকায় তাদের বাড়িতে রাতে ঘুম ভাঙলে মনে হয় খাটের নিচে কেউ এক জন বসে আছে। মশারির নিচ দিয়ে সে তার বরফশীতল হাত ঢুকিয়ে নবনীকে ছুঁয়ে দেবে। রাতে অন্ধকার ঘরে সুইচ জ্বালাতে গিয়ে তার সব সময় মনে হয় সুইচ বোর্ডে হাত দিতে গিয়ে সে অন্য এক জনের হাতে হাত দিয়ে ফেলবে। অথচ সম্পূর্ণ অচেনা এই গ্রামে অন্ধকার হয় হয় অবস্থায়ও তার এতটুকু ভয় করছে না। বরং মজা লাগছে। বটগাছটার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। নবনী বটগাছের একটা ঝুরিতে হাত রেখে বলল, ‘মিস্টার বটগাছ, এটা কি আপনার হাত, না পা? আপনার গায়ের চামড়া এত খসখসে কেন?’

নবনীর হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা বটগাছটা যদি এখন কথা বলে ওঠে তাহলে তার কেমন লাগবে? সে কি ভয় পাবে? বটগাছটা যদি বলে, ‘নবনী, এটা আমার হাতও না, পা-ও না। আমরা তো মানুষ নই যে আমাদের হাত-পা থাকবে। আমরা হচ্ছি গাছ।’ তাহলে কি নবনী ভয়ে চিৎকার করে উঠবে? মনে হয় না। ভয় পেলে আগেই পেত। আচ্ছা, সে ভয় পাচ্ছে না কেন এটাও তো এক আশ্চর্য ব্যাপার। পরিবেশ মানুষকে বদলে দেয় হয়তো। ঢাকা শহরে সে ছিল দারুণ ভীতু একটা মেয়ে। এখানে অসম্ভব সাহসী এক জন, যে হেঁটে হেঁটে একা চলে এসেছে প্রকাণ্ড এক বটগাছের কাছে।

নবনী ঠিক করল, পুরো গাছটা একটা চক্কর দিয়ে সে যে পথে এসেছিল সেই পথেই ফিরে যাবে। ডাকবাংলোয় পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে যাবে। তাতে অসুবিধা হবে না। একটাই পথ। তাছাড়া গতকাল পূর্ণিমা গেছে। আজো কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ উঠবে। গতকাল কুয়াশা ছিল, আজ কুয়াশা নেই। চাঁদ উঠলে চারদিকে ঝলমল করতে থাকবে। নবনী আগে লক্ষ করে নি হঠাৎ লক্ষ করল বটগাছের গুঁড়িটা বাঁধানো। চারদিকে ঝুরি নেমেছে বলে বাঁধানো গুঁড়ি চোখে পড়ছে না।

এমন জংলা জায়গায় একটা প্রাচীন গাছ কে বাঁধিয়ে রেখেছে? কেউ কি এখানে এসে বসে? এখন কি কেউ চুপচাপ বসে আছে? নবনীর হঠাৎ একটু ভয় ধরে গেল। গা কেঁপে গেল। দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসছে। গাছটাকে এখন আর ভালো লাগছে না। টিয়া পাখির শব্দ কানে বাজছে। মনে হচ্ছে এরা এখন অনেক নিচু দিয়ে উড়ছে। একটা পাখি তো প্রায় নবনীর মাথার চুল ছুঁয়ে গেল। নবনীকে দেখে পাখিগুলো কি বিরক্ত হচ্ছে? আচ্ছা কেউ কি নিশ্বাস ফেলল? নবনী পরিষ্কার নিশ্বাস ফেলার শব্দ শুনল। তার নিজের নিশ্বাস ফেলার শব্দই কি সে শুনেছে?

নবনী দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার মনে হচ্ছে সে একা একা আর ডাকবাংলোয় ফিরতে পারবে না। তার সব সাহস চলে গেছে। এখন হয়তো সে পথই খুঁজে পাবে না। বটের ঝুরির আড়াল থেকে কে যেন কাশল। একবার না, পরপর দুবার। নবনী দারুণ চমকে বলল, ‘কে? কে ওখানে?’

গাছের বাঁধানো গুঁড়িতে পা তুলে গুটিসুটি মেরে কে যেন বসে আছে। তার গায়ের চাদরটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে— খয়েরি। নবনী উঁচু গলায় বলল, ‘কে ওখানে বসে আছে?’

‘জ্বি আমি।’

‘বের হয়ে আসুন দয়া করে।’

লোকটা যদি জবাব দিতে আরেকটু দেরি করত তাহলে কী কাণ্ড হত কে জানে। নবনী হয়তো হার্টফেল করত। গাছের ঝুরির ভেতর দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে লোকটা বের হচ্ছে। দেখে ভয় পাওয়ার মতো চেহারা না। পঁচিশ-ত্রিশ বছরের এক জন মানুষ পরনে পাজামা পাঞ্জাবি। গায়ে খয়েরি রঙের চাদর। চোখে চশমা। তাকে দেখে মনে হচ্ছে—নবনী যেমন ভয় পেয়েছে, সেও ভয় পেয়েছে। কেমন মুখ কাঁচুমাচু করে, খানিকটা কুঁজো ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ভালোমতো তাকাচ্ছেও না নবনীর দিকে। ভালোমতো তাকালে দেখতে পেত পৃথিবীর সবচে’ রূপবতী তরুণীটি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

নবনী বলল, ‘আপনি কে?’

‘জ্বি, আমার নাম মবিনউদ্দিন।’

‘এখানে কী করছিলেন?’

‘কিছু করছিলাম না। বসে ছিলাম।’

‘আপনি কী করেন?’

‘আমি মাস্টারি করি।’

‘স্কুল মাস্টার?’

‘জ্বি না, আমি কলেজে শিক্ষকতা করি।’

নবনী কঠিন গলায় বলল, ‘আমাকে বলা হয়েছে এখানে কোনো কলেজ নেই।’

‘কলেজটা পাশের গ্রামে। মাঝে একটা নদী আছে। শিবসা নদী। শিবসা নদীর ঐ পাড়ে কলেজ। মমিনুন্নেসা মেমোরিয়েল কলেজ।’

‘আপনার কলেজ এ গ্রামে, আপনি এখানে এসেছেন কেন?’

নবনী জেরা করার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করছে। ধমকের সুরে প্রশ্ন। যেন ভীত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি আসামি, সে ফরিয়াদী পক্ষের উকিল। কলেজের এক জন শিক্ষকের সঙ্গে এভাবে কথা বলা যায় না হয়তো। কিন্তু নবনীর খুব রাগ লাগছে। লোকটা কেন তাকে ভয় দেখাল?

‘কথার জবাব দিচ্ছে না কেন? আপনি ঘাপটি মেরে এই গাছের নিচে বসে কী করছিলেন?’

‘কিছু করছিলাম না। চুপচাপ বসে ছিলাম।’

‘ধ্যান করছিলেন নাকি?’

মবিনউদ্দিন জবাব দিল না। কয়েকবার কাশল। এখনো সে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে না। নবনী বলল, ‘আপনি আমাকে দারুণ ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। এত ভয় আমি জীবনে পাই নি। যাই হোক, আপনি আমাকে দয়া করে একটু এগিয়ে দিন। আমার ভয় কাটছে না। আমি ফিশারিজের ডাকবাংলোয় উঠেছি।’

‘জ্বি আমি জানি। আপনি মন্ত্রী সাহেবের বড় মেয়ে।’

নবনীর ভয় কেটে গেল। লোকটি তাকে চিনতে পেরেছে। ভয় কাটার জন্যে এই যথেষ্ট। তাছাড়া কথা বলছে খুব ভদ্র ভঙ্গিতে। কলেজের টিচাররা এত ভদ্র ভঙ্গিতে কথা বলে না। তারা খিটখিটে ধরনের হয়। কে জানে গ্রামের কলেজের টিচাররা হয়তো এরকম। কিংবা এও হতে পারে, লোকটা তাকে চিনতে পেরেছে বলেই এত ভদ্রভাবে কথা বলছে। লোকটার সঙ্গে এতটা খারাপ ব্যবহার করা উচিত হয় নি। পরে সবাইকে বলে বেড়াবে—মন্ত্রীর মেয়ে আমাকে ধমক দিয়েছে। কেউ বুঝবে না, মন্ত্রীর মেয়ে না হলেও নবনী এই পরিস্থিতিতে এভাবেই কথা বলত।

নবনী গলার স্বর স্বাভাবিক করে ফেলে বলল, ‘চলুন যাই। আমাকে এগিয়ে দিতে আপনার অসুবিধা নেই তো?’

‘জ্বি না।’

‘আপনার সঙ্গে আমি রেগে রেগে কথা বলছিলাম। আপনি কিছু মনে করবেন না। আসলে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম, তারপর ভয়টা কেটে গেল। হঠাৎ ভয় কাটলে মানুষ রেগে যায় এই থিওরিটা কি আপনি জানেন?’

মবিন জবাব দিল না। সে মাথা নিচু করে হাঁটছে। নবনী যাচ্ছে আগে আগে, সে তার পেছনে পেছনে। একটু দূরত্ব নিয়ে হাঁটছে। নবনী পরিস্থিতি সহজ করার জন্যে বলল, ‘আমি যে গাছটার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তা কি শুনতে পেয়েছিলেন?’

‘জ্বি।’

‘কী বলছিলাম বলুন তো?’

‘আপনি বলছিলেন, মিস্টার বটগাছ আপনি কোথে কে এলেন?’

‘আপনি আমার কথা শুনে অবাক হন নি?’

‘জ্বি না।’

‘অবাক হন নি কেন?’

‘আমি দূর থেকেই দেখেছি আপনি আসছেন। এই জন্যেই অবাক হই নি। আপনাকে না দেখে হঠাৎ যদি কথা শুনতাম তাহলে অবাক হতাম।’

‘আমাকে একা একা আসতে দেখেও অবাক হন নি?’

‘জ্বি না?’

‘কেন অবাক হন নি?’

‘আপনি তো প্রায়ই একা একা হাঁটেন।’

‘আমি একা একা হাঁটি তাও জানেন?’

মবিন অস্বস্তির সঙ্গে বলল, ‘জানি। সবাই জানে। এটা প্রায় গণ্ডগ্রামের মতো জায়গা। শহরের কেউ এলেই সবাই অবাক হয়ে দেখে। আর আপনি হচ্ছেন এক জন মন্ত্রীর মেয়ে। আপনি কী করছেন না করছেন সবাই লক্ষ রাখছে।’

‘তাই নাকি?’

‘জ্বি এটাই তো স্বাভাবিক। এখানে কোনো বড় ঘটনা তো ঘটে না। এক জন মন্ত্রীর মেয়ে একা একা হাঁটছে এটা বিরাট ঘটনা। আপনাকে নিয়ে কলেজের টিচার্স কমনরুমে আলোচনা হয়।’

‘সে কী! কী আলোচনা?’

‘আপনার শোনার মতো কিছু না। আমাদের তো আলোচনা করার কিছু নেই।’

‘কলেজে আপনি কী পড়ান?’

‘ইংরেজি সাহিত্য।’

‘আপনাদের এটা কি ডিগ্রি কলেজ?’

‘জ্বি না। ইন্টারমিডিয়েট কলেজ।’

‘আপনি কি আমার নাম জানেন?’

‘জ্বি জানি। আপনার নাম নবনী।’

নবনী হেসে ফেলল। নিতান্ত অপরিচিত এক জন কলেজের শিক্ষক, যে ভূতের মতো ঘাপটি মেরে বটগাছটির গুঁড়িতে বসেছিল সেও তার নাম জানে, আশ্চর্য হবার মতোই ঘটনা।

‘আপনি কি আমার ছোট বোনের নাম জানেন?’

‘জ্বি না।’

‘আমারটা জানেন তারটা জানেন না কেন? তার নাম হল শ্রাবণী। ত

মবিন কথা বলছে না। একা একা কথা চালিয়ে যাওয়া যায় না। হুঁ হাঁ বলার জন্যেও এক জনকে দরকার। নবনীর কথা বলতে ইচ্ছে করছে। এ রকম তার কখনো হয় না। কথা বলতে ইচ্ছা করে না।

‘মবিন সাহেব!’

‘জ্বি।’

‘আমার ছোট বোনের নামটা আপনার কাছে কেমন লাগল তা তো বললেন না।’

‘সুন্দর নাম।’

‘শ্রাবণ মাসে জন্মেছে বলে শ্রাবণী। ও কী বলে জানেন? ও বলে— ভাগ্যিস আমার ভাদ্র মাসে জন্ম হয় নি। ভাদ্র মাসে জন্ম হলে তার নাম হত ভাদ্রী।’

নবনী হাসছে। আনন্দিত ভঙ্গিতে হাসছে।

তারা বড় রাস্তায় উঠে এল। এখন আর পথ হারানোর ভয় নেই। সোজা পথ। চোখ বন্ধ করেও যাওয়া যাবে। নবনী বলল, ‘মেনি থ্যাংকস। আপনাকে আর আসতে হবে না। এখন আমি যেতে পারব।’

মবিন কিছু বলল না।

নবনী বলল, ‘আপনাকে ডাকবাংলোয় নিয়ে চা খাইয়ে দিতে পারতাম। তা করতে পারছি না। আজ আমাকে বাবার কাছ থেকে বকা খেতে হবে। আপনাকে নিয়ে গেলে আপনিও বকা খাবেন। রেগে গেলে বাবা সবাইকে বকেন। টমিকেও বকেন। টমি হল আমাদের কুকুর। আচ্ছা তাহলে যাই। ভালো কথা, গাছের নিচে বসে কী করছিলেন তা তো বললেন না?’

‘জোছনা দেখার জন্যে বসেছিলাম।’

‘কী বললেন?’

‘জোছনা দেখার জন্যে আমি মাঝে মাঝে গাছের গুঁড়িতে গিয়ে বসি। ওখান থেকে জোছনা সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগে।’

‘তাই নাকি?’

‘জ্বি। দেখার মতো দৃশ্য। একবার সারারাত ছিলাম।’

‘সারারাত কি আর জোছনা দেখতে ভালো লাগে?’

‘জ্বি লাগে। জোছনা তো এক রকম থাকে না। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলায়। আপনি কি দেখবেন?’

নবনী বিস্মিত হয়ে বলল, ‘কী বললেন?’

মবিন নিচু গলায় বলল, ‘আপনি যদি জোছনা দেখতে চান তাহলে…’

‘তাহলে কী?’

মবিন ইতস্তত করে বলল, ‘গতকাল পূর্ণিমা ছিল। আজ কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদ উঠবে। গাছের গুঁড়িটা বাঁধানো। সুন্দর বসার জায়গা।’

নবনী তীক্ষ্ণ গলায় বলল, ‘আপনি কি আমাকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছেন আপনার সঙ্গে অন্ধকার গাছের নিচে সারারাত বসে থাকার জন্যে?’

মবিন চুপ করে রইল। নবনী বলল, ‘আপনার সাহস ও স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি। এমন অস্বাভাবিক প্রস্তাব আপনি দিলেন কীভাবে? আপনার মাথা ঠিক আছে তো? ‘কমন সেন্স’ বলে একটি ব্যাপার আছে। কমবেশি সবারই তা থাকে। আপনার মনে হয় তাও নেই।’

‘আমি ভেবেছিলাম …

‘কী ভেবেছিলেন আপনি? আপনার প্রস্তাবে আমি ‘কী আশ্চর্য! কী সুন্দর প্রস্তাব’ বলে লাফিয়ে উঠব তারপর গাছের নিচে সারারাত বসে থাকব? আপনার কি যেন নাম বলেছিলেন?’

‘মবিনউদ্দিন।’

‘শুনুন মবিনউদ্দিন সাহেব। আপনি আমাকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। জোছনা দেখার নিমন্ত্রণের জন্যেও ধন্যবাদ। নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারছি না। আমি বয়সে আপনার ছোট। তবু আপনাকে একটা উপদেশ দিচ্ছি এ জাতীয় নিমন্ত্রণ চট করে দেয়া যায় না। আচ্ছা, আমি যাচ্ছি।’

নবনী হন হন করে এগুচ্ছে। অনেকদূর এসে সে একবার পেছনে ফিরল। মবিনউদ্দিন রাস্তার এক পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *