জেরুসালেম ও মসজিদে আকসা উদ্ধারের সঠিক উপায়

জেরুসালেম ও মসজিদে আকসা উদ্ধারের সঠিক উপায়

জেরুসালেম ও ফিলিস্তিন মুক্ত করার আন্দোলন চলছে। ফিলিস্তিনীরা প্রতিরোধ আন্দোলন করছে। কিন্তু তাদের মুক্তি আন্দোলনগুলো সবই ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের কথা বলছে। অনেকগুলো পৃথক পৃথক মুক্তিসংস্থা সম্মিলিত প্রতিরোধ আন্দোলনের ধারা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন। এটি একটি ফেডারেশন। সকল মুক্তিসংগঠনগুলো এর সদস্য। কিন্তু তারা সবাই ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। সাথে রয়েছে জেরুসালেমকে রাজধানী করার ঘোষণা। ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধে জর্দান থেকে ইসরাইলের কেড়ে নেয়া জর্দান নদীর পশ্চিমতীর ও গাজ্জা এলাকা নিয়ে জেরুসালেমকে রাজধানী করে তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। প্রশ্ন হল, যদি ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ইসরাইল থেকে পৃথক হয়ে খুব একটা লাভ হবে না। আলোচনা করলে ইসরাইল ফিলিস্তি নীদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। সেক্ষেত্রে পৃথক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সত্যিকার প্রয়োজন থাকে না। ইসলামের লালনভূমি ফিলিস্তিনে অবশ্যই ইসলাম কায়েম করতে হবে। কেননা, সেখানেই হযরত ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, হারুন, ইউশা, দাউদ, সুলাইমান, যাকারিয়া এবং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর আগমন ঘটেছে। সেই জমিনের প্রতিটি বালুকণা ইসলামী আদর্শের বাস্তব স্বাক্ষর। স্বয়ং মহানবী মুহম্মদ (সাঃ) এর মেরাজের কারণে যে বাইতুল মাকদিস ধন্য হয়েছে, সেই জেরুসালেম ভিত্তিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আদর্শ হবে ইসলাম, অন্য কোন মতবাদ নয়। সকল ফিলিস্তিনী এবং বিশ্বের সকল মুসলমানের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার।

পক্ষান্তরে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধ আন্দোলন ৪০ বছর যাবত চলছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ উক্ত মুক্তি আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে জেরুসালেম ও ফিলিস্তিনের মুক্তি আসেনি। তাই আজ ফিলিস্তিনীদের দ্বীনি অংশের মধ্যে ইসলামের পুনর্জাগরণের অনুভূতি এসেছে এবং ইসলামকে তারা মুক্তি আন্দোলনের আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছে। হামাস নামক মুক্তি সংস্থা দলীয় আদর্শ হিসেবে ইসলামের কথা ঘোষণা করায় অধিকৃত ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে সাড়া পড়েছে। হামাসের আহ্বানে ১৯৮৭ সালের ৮ই ডিসেম্বর থেকে গোটা অধিকৃত ফিলিস্তিনে চলছে ইসরাইল বিরোধী গণ-আন্দোলন বা ইন্তেফাদা। এই ইস্তেফাদার কারণে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনী সমস্যার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য তথা ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের জন্য আন্ত র্জাতিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ফিলিস্তিন ও বাইতুল মাকদিসকে পুনরুদ্ধারের জন্য আপাততঃ যে সকল চেষ্টা চলছে সেগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :

১. ইসলামী সম্মেলন সংস্থার উদ্যোগে জেরুসালেম কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা জেরুসালেমকে রক্ষার বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের প্রচেষ্টা ও ভূমিকার সমম্বয় সাধন করছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দুর্বল বলে জেরুসালেম কমিটি নিন্দা প্রস্তাব ও দুঃখ প্রকাশ ছাড়া বাস্তবে তেমন কিছুই করতে পারছে না।

২. ফিলিস্তিনী ইতেফাদা বা গণ-আন্দোলন। ফিলিস্তিনী মুসলমানগণ হানাদার ইহুদীদের বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা গোটা অধিকৃত ফিলিস্তিনে, ফিলিস্তিনী গণ-জাগরণ বা ইন্তেফাদা গড়ে তুলেছে। ইহুদীদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা থেকে শুরু করে বোমা নিক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু শত্রুর কঠোর নির্যাতন ও প্রতিরোধের মুখে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনী জনগণ সামরিক সাফল্য লাভ করতে পারছে না। উল্লেখ্য যে, ৫০ লাখ ফিলিস্তিনী মুসলিম নাগরিকের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ হচ্ছে অধিকৃত ফিলিস্তিনে। আর অবশিষ্টরা ফিলিস্তিনের বাইরে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও দেশে বাস করছে। ৩. জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইহুদীদের প্রভাবান্বিত। কেননা, এর সদস্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েট ইউনিয়ন বৃটেন এবং ফ্রান্স নির্লজ্জভাবে ও প্রকাশ্যে ইহুদীদের সকল অন্যায় কাজ অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।

তবে সর্বাগ্রে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সে ইসরাইলের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা প্রস্তাব পাশ হতে দেয় না। তাতে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ নং ও ৩৩৮ নং প্রস্তাবে, অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলী জবরদখল প্রত্যাহারের লক্ষ্যে ইসরাইলী বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাব বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের। নিরাপত্তা পরিষদ তা করছে না। এমতাবস্থায় নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজস্ব শক্তি-সমন্বিত করে ইসলামের ভূমি উদ্ধারের জন্য অগ্রসর হওয়াই মুসলিমের কর্তব্য। মুসলমানদের আরো করণীয় হল, জেরুসালেম মুক্ত করার জন্য ইহুদীদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দেয়া। জেহাদ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে মসজিদে আকসাকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ৪০ বছর যাবত বিভিন্ন উপায়ে বহু চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু কোন ফলোদয় হয়নি। তাই আজ মুসলিম দেশ সমূহের সরকারগুলোর উচিত, ওলামায়ে কেরাম এবং ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে জেহাদের কর্মসূচী হাতে নেয়া। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। তিনি বলেছেন, এমন একদিন আসবে যখন ইহুদীদেরকে পাইকারীভাবে হত্যা করা হবে। এমনকি গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইহুদীকে গাছ দেখিয়ে দিয়ে বলবে, তাকে হত্যা কর।

সমাপ্ত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *