নয়
এমনি স্তব্ধতা নেমে এসেছিল আরো একটা জায়গায় আর একদিন। যেখানে মৃগাঙ্কমোহন বলেছেন, ভবর দোষ নেই। ওকে আমিই পাঠিয়েছিলাম।
এই অবিশ্বাস্য ধাক্কায় পাথর হয়ে তাকিয়ে থেকেছিল এ বাড়ির জন্য দুই বাসিন্দা। পাথর কেটে একটা তীক্ষ্ন প্রশ্ন বেরিয়ে এলো, কোথায় পাঠিয়েছিলেন?
মৃগাঙ্কমোহন ঘরের সীলিঙের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে ভাবশূন্য গলায় উত্তর দিলেন, বই বেচতে!
বাবা!
শোভনার গলা দিয়ে আরো তীক্ষ্ন একটা শব্দ যেন ঘরের বাতাসে আছড়ে পড়ল, আপনি পাঠিয়েছিলেন বই বেচতে আপনার মরে যাওয়া ছেলের আলমারি থেকে বার করে? এই কথা বিশ্বাস করতে হবে?
মৃগাঙ্ক আবার তেমনি নির্লিপ্ত ভাবশূন্য, সত্যিকথা বিশ্বাস করতে হবে বৈকি বৌমা।
শোভনা পাশের সোফায় বসে পড়ে বলল, টিসু, পাখাটা বাড়িয়ে দে।
পাখা বাড়িয়ে দিয়ে টিসু তীব্র হলো। অনড় রোগীর বিছানার কাছে সরে এসে বসলো, দাদু, সবকিছুরই একটা সীমা থাকা উচিত। ভ্রাতৃস্নেহেরও। ভবদাদুকে রক্ষা করতে তুমি নিজের ঘাড়ে যে দোষটা নিচ্ছো, সেটা কতখানি ভয়ঙ্কর তা ঘাড়ে নেবার আগে ভেবে নিয়েছ?
মৃগাঙ্ক বললেন, অনেক ভেবেছি টিসু, এই এতোদিন ধরেই ভেবেই চলেছি। সত্যিটা প্রকাশ করে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু—
মৃগাঙ্ক একটু থেমে জিরিয়ে নিয়ে বললেন, কিন্তু যখন দেখলাম, একটা নিরপরাধ লোক, যে লোকটা চিরদিন আমার সেবা করেছে, খিদমদগারি করেছে, কেনা গোলামের যত নির্বিচারে আমার ভাল—মন্দ সব আদেশ পালন করে এসেছে, আমাকে প্রাণতুল্য ভালোবেসে এসেছে, আর এখন আমার অপরাধের শাস্তি ভোগ করছে, লাঞ্ছনা অপমান নিন্দে ঘেন্না নীরবে মাথা পেতে বইছে অথচ মুখ ফুটে বলছে না ‘ওগো’ দোষ আমার নয়, তখন মনে বড় ঘেন্না এলো—
মৃগাঙ্ক আর একবার থামলেন।