ছয়
শোভনাও বেরিয়ে এলো।
বললো, অ্যাকসিডেণ্টের কথা শুনেই এতো বেশী আপসেট হয়ে গেছে তোর দাদু। বইয়ের কথাটা বলতে পারা গেল না। বলাই উচিত ছিল। এক কান্নাতেই মিটে যেত।
বলরামকে শীগগির পাঠিয়ে দাও, কাছে থাকতে বলো—এই বলরাম। ট্যাকসি এনেছিস? যা দাদুর কাছে থাকগে যা। কান্নাকাটি করছে—মা চলো। বটুয়ায় টাকাপত্র আছে তো বেশ কিছু?
মা চলো।
শোভনা আকাশ থেকে পড়ে।
আমি যাবো? এখন?
তো কখন যাবে?
কাল যাব অখন। আজ ঝুলনদ্বাদশী, ঠাকুরের উৎসব—আজ তুই দেখে আয়।
টিসু গম্ভীরভাবে বলে, একলা?
বাঃ একলা কেন? এই তো ছেলেটিকে আটকালি সঙ্গে যাবার জন্যে—এখন ‘ছেলেটি’। মনে মনে হাসে মানিক।
টিসু একবার মার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলল, ছেলেটা তোমার চেনা?
ওমা। আমার চেনা হল কখন? মানে এই এখনই হলো আর কি?
তার সঙ্গে তোমার মেয়েকে এক ট্যাকসিতে ছেড়ে দিচ্ছ তাহলে?
মানিক চমকে ওঠে।
এ আবার কী কথা। সর্বনেশে মেয়ে।
শোভনা বলে ওঠে, কী যে আজে—বাজে কথা বলিস। তুই—ই তো বললি, হাসপাতালে কোথায় কি চিনি না—
বললাম—
টিসু এবার একবার মানিককে দেখে নিয়ে বলে, ধর এর সবটাই ফলস। ধর, ভবদাদুকে ধরে নিয়ে আটকে রেখে আমাদের ব্ল্যাকমেল করতে এসেছে।
মানিক মেজাজ হারিয়ে ফেলে। চড়া গলায় বলে, আপনাকে আমার সঙ্গে যেতে কেউ পায়ে ধরে সাধেনি। রইল আপনার ট্যাকসি, চললাম আমি—
কক্ষনো না, গেলেই হল?
বলেই একটা কিম্ভূত কাণ্ড করে বলে টিসু। খপ করে হাত বাড়িয়ে মানিকের একটা হাত চেপে ধরে বলে, নট নড়ন—চড়ন, নটু কিচ্ছু। কথাটা শেষ করতে দিন। মা, ধর ব্ল্যাকমেল নয়, হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছি বলে আমায় অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে তুলল,—
আঃ টিসু, কী বিশ্রী কথা বলে চলেছিস। বেশ তো, অরবিন্দ যাবে তোর সঙ্গে। তার তো আর এখন রান্নার তাড়া নেই।
ওঃ, অরবিন্দ। যাকে ফুঁ দিলে পড়ে যায়—কোনো দরকার নেই, আমি একলাই যাচ্ছি। টাকাকড়িগুলো দিয়ে ঝুলনপূর্ণিমা করগে যাও।
‘পূর্ণিমা’ শব্দটার মধ্যে ব্যঙ্গ অনুভব করে শোভনা ক্রুদ্ধগলায় বলে, বলেছি পূর্ণিমা? ঝুলন—দ্বাদশী না?
ও একই কথা। দাও দাও টাকার বটুয়াটা দাও। কুইক। তবে প্রস্তুত থেকো, হয় তো ভবদাদুর মত আর না ফিরতেও পারি।