চার
সুইনহো স্ট্রীটের সেই বারান্দাওলা বাড়িটায় ঠিক এই সময় এই কথাটাই উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
শোভনা বলল, বেলা চারটে বেজে গেল, ভাত খাবে তা খেয়াল নেই? যা দিকি টিসু, তোর দাদুকে একবার জিগ্যেস করে আয় দিকি। কোথাও পাঠিয়েছে কিনা?
লোকটা সংসারে এমন কিছু দামী মাল নয় যে, ঘণ্টা কয়েকের অদর্শনে কেউ ব্যাকুল হবে। ভাত খাবার সময়টা পার হয়ে গেছে, তাই খোঁজ পড়া। খাওয়ার পাট চুকিয়ে যদি বেরোতো ওই লোক, রাত দশটা অবধি পথে ঘুরলেও কেউ খোঁজ নিতো না।
ভাত নিয়ে বসে অবশ্য কেউ নেই। রাঁধুনি ঠাকুর টেবিলে চাপা দিয়ে রেখে দিবানিদ্রার ঘুমটা ঘুমোতে গেছে অনেক আগে। শোভনাও কিছু বসে ছিল না তার চিরকাল ঘাড়ে পড়ে থাকা দূর সম্পর্কের বুড়ো খুড় শ্বশুরের জন্যে। সেও দিবানিদ্রা সেরে উঠে যখন দেখতে পেল টেবিলে যেমন চাপা দেওয়া ভাত—টাত ছিল তেমনি রয়েছে, তখন তার টনক নড়ল।
টিসুর আজ ছুটি ছিল কলেজে, নিজের মনে নিজের ঘরে ছিল, শুনে বলল, তাই না—কি? —আঃ, এইসব বুড়োদের নিয়ে আর পারা গেল না।
নেমে এলো দোতলা থেকে।
—কিন্তু নেমে এসে কি প্যাসেজ পার হয়ে সেই ঘরে ঢুকে যেতে পারল টিসু? যে ঘরে দাদু মৃগাঙ্কমোহন একখানা বিরাট পালংকে, বিরাট দেহখানা মেলে অনড় হয়ে পড়ে আছেন। আছেন প্রায় বছর তিনেক ধরে।
না, সে ঘরে ঢোকবার আগেই বলরাম ঊর্ধ্বশ্বাসে এসে বলে উঠল, দিদিবাবু, ছোট দাদুর খবর নিয়ে একটা—থেমে গেল।
কী থেমে গেলি যে? একটা কে? কী খবর এনেছে?
উত্তেজিত—উৎকণ্ঠ গলায় প্রশ্নটা করে টিসু।
বলরামও ঢোক গিলে থেমে বলল, একটা ছেলে। মানে, ইয়ে মস্তান মত ছেলে।
ওঃ! তা’ কী খবর এনেছে সে?
বলছে, বাস থেকে পড়ে গেছল ছোটদাদু। এখোন হাসপাতালে আছে।
চমৎকার।
বসে পড়বার মত জায়গা হাতের কাছে না থাকাতেই দাঁড়িয়ে থাকল টিসু, বলল, এইটিই ভাবছিলাম।
তারপর তীক্ষ্ন গলায় ডাক দিল—মা। শীগগির নেবে এসো। বলরাম, কোথায় সে ছেলে?
ওই যে গেটে—
গেটে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস? আশ্চর্য।