চৌদ্দ
সেই বলাটাই বলা হয়েছিল।
আর মৃগাঙ্কমোহন বলে উঠেছিলেন, ওরে টিসু ওকে চলে যেতে দিসনে। বৌমা ও এভাবে চলে গেলে সংসারের মঙ্গল হবে না!
শোভনা বলে উঠেছিল, আর একজন বিশ্বাসঘাতক লোককে বাড়িতে রেখে দিলে বাড়ির খুব মঙ্গল?
মৃগাঙ্ক হতাশ গলায় বলেছিলেন, বিশ্বাসঘাতক ও নয় বৌমা। যে বিশ্বাসঘাতক সে তোমাদের সামনে পড়ে রয়েছে। ওর দোষ নেই। ওকে আমিই পাঠিয়েছিলাম।
তারপর থেমে থেমে বললেন, আমিই ওকে বলেছি, ও বই তো আর কারো কাজে লাগবে না—
টিসু বলল, বিশ্বাস করা শক্ত হচ্ছে দাদু।
তবু বিশ্বাস করতেই হবে দিদি। ভবকে আটকাতে হবে। আমার জন্য যদি ওকে কলঙ্কের কালি মেখে এ বাড়ি থেকে বিদায় হতে হয়, মরে সদগতি হবে না আমার।
টিসু হতাশ গলায় বলল, বেশ না হয় বিশ্বাসই করলাম! কিন্তু কেন এই জঘন্য কাজ করতে গেলে দাদু? সারাক্ষণ তো বিছানায় পড়ে আছো, বই বেচা টাকা দিয়ে কী করতে তুমি?
মৃগাঙ্ক যেন নিজের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তাই শক্ত গলায় বললেন, ওকে দিয়ে রেস খেলতে পাঠাতাম।
দাদু তুমি কি আমায় নাটক শোনাতে বসেছ? রেস খেলা টাকায় কী করতে শুনি? তা নয়, ভাইয়ের রেস খেলার নেশার জোগান দিতে এই তো?
ওরে না রে না! ভবকে তোরা কেউ চিনলি না। ভব দেবতা। তাই নীরবে সব পাপের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে আমাকে—
শক্ত থাকার চেষ্টাটা হঠাৎ ব্যর্থ হয়ে যায়।
হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন মৃগাঙ্ক, আমারই নেশার জোগান দিতে—চিরকাল দু হাতে রোজগার করেছি, দু হাতে খরচ করেছি। আর নেশার বশীভূত হয়ে ভেবেছি এমনি দিন চিরদিন যাবে। দামী মদ ছাড়া খেতে পারি না। কিন্তু এখন তোর মার হাত তোলায় থেকে—
আরো চেঁচিয়ে কেঁদে ওঠেন মৃগাঙ্ক, বেটাছেলে, চিরকাল যে যথেচ্ছ টাকা উড়িয়েছে, শেষ বয়েসে তার হাতে যদি একটা পয়সা না থাকে—তার বড়ো যন্ত্রণা নেই রে—