জগা খিচুড়ি
বাংলা প্রবাদে জগা খিচুড়ি নামটি থেকে বুঝানো হয় কোনো জটপাকানো জিনিসের উপস্থাপনাকে। কেউ যদি একটি বিষয় সম্পর্কে লিখতে গিয়ে এলোমেলো অবান্তর কিংবা বেমানান বাক্য বা শব্দ ব্যবহার করে অস্পষ্টভাবে প্রায় অর্থহীন কিছু উপস্থাপন করে তবে শিক্ষক বা অভিভাবকরা ঐ জাতীয় লেখাকে জগা খিচুড়ি বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। অর্থাৎ বিসদৃশ বস্তু বা বিষয়ের বেমানান একত্রীকরণকে আমাদের প্রবাদে জগা খিচুড়ি বলে অভিহিত করা হয়।
খিচুড়ি একটি উপাদেয় খাদ্য নিঃসন্দেহে। কিন্তু রান্নার সময় যদি পরিমাণমতো চাল, ডাল, লবণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সুসমন্বয় না ঘটানো যায় তবে সে খিচুড়ি অবশ্যই ভোক্তার কাছে আকর্ষণীয় বা লোভনীয় বলে বিবেচিত হয় না। চাল ও বিভিন্ন শাকসবজির একত্র সমাবেশে কোনোমতে রান্না করা চলনসই খিচুড়ি জগা খিচুড়ি নামে পরিচিত। সকল বস্তু অর্থে জগৎ > জগা + খিচুড়ি = জগাখিচুড়ি—এমন কথা দেখতে পাই বিভিন্ন অভিধানে। কিন্তু আমার মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে পণ্ডিতদের এ ব্যাখ্যা মেনে নেয়া কঠিন। কারণ জগমোহন, জগন্মোহন, জগন্ময়, জগন্নাথ ইত্যাদির পূর্বপদ জগৎ হতে পারে। কিন্তু জগা শব্দ জগৎ থেকে এসেছে—এমন যুক্তি মেনে নেয়া যাচ্ছে না কিছুতেই। আমার ভুল হলে জ্ঞানের অভাব স্বীকার করে ক্ষমা চাই।
জগন্নাথ নামের মানুষকে আমরা সাধারণভাবে বিকৃত করে সংক্ষেপে জগা বলতে অভ্যস্ত। আসলে উড়িষ্যার পুরীর জগন্নাথ-মন্দিরে জাতপাতের কড়াকড়ি নেই। সেখানে খাদ্য-খানা রান্না হয় সব শ্রেণীর, সব জাতির মানুষের জন্য একই হাঁড়িতে। সে রান্নায় যে খিচুড়ি করা হয় তা সুস্বাদু হোক বা না হোক, সব শ্রেণীর মানুষ তা খাচ্ছে একত্রে অবলীলায়। সুতরাং মনে করা সঙ্গত যে, জগন্নাথধামের স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য সবার একত্র অংশগ্রহণে যেনতেন ভাবে রান্না করা যে খিচুড়ি খাওয়া হয়—সেটিই জগন্নাথের খিচুড়ি বা জগা খিচুড়ি। উন্নাসিক তথাকথিত কুলীনদের কাছে জগন্নাথক্ষেত্রের ভেদহীন সর্বজনীন মিলন আদিকাল থেকেই প্রশংসনীয় নয়— এ কারণে তারা এমন নাম দিয়ে থাকতে পারে ব্যঙ্গার্থে।