জগবন্ধুর হারমোনিয়াম
অনেকদিন ধরেই জগবন্ধু একটা হারমোনিয়াম কিনবেন বলে ভাবছিলেন, জগবন্ধু যে গানবাজনা করেন তা কিন্তু নয়, তবে ওসব শুনতে তাঁর খুব ভালো লাগে৷ মাঝে মাঝে হয়তো গুনগুন করে কোনো গানের কয়েক কলি আনমনে গেয়েও ফেলেন তিনি৷
একদিন যখন অফিস ছুটির সময় জগবন্ধু এরকম গুনগুন করছিলেন, তখন সরখেলদা পিছন থেকে এসে পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘বাঃ, জগবন্ধু তোমার গানের গলাটা তো মন্দ নয়৷ একটা হারমোনিয়াম কিনে বাড়িতে রেওয়াজ করলে তো পারো৷ একলা মানুষ, এতে তোমার সময়ও কেটে যাবে৷’
তার কথা শুনে জগবন্ধু লাজুক হেসে বলেছিলেন, ‘কী যে বলেন দাদা, আমার গলা শুনে হয়তো লোকে বাড়িতে ঢিল ছুড়বে৷’
জগবন্ধু মুখে যাই বলুন না কেন, সরখেলদার কথাটা কিন্তু মনে ধরেছিল তাঁর৷ কিন্তু হারমোনিয়াম আর কেনা হয়ে উঠছিল না৷
সেদিন শনিবার৷ এমনিতেই অফিস হাফ ছুটি, তার ওপর টিভিতে ভারত-পাকিস্তানের ওয়াড-ডে৷ তাই অফিস আজ শুনশান৷ অফিস ছুটি হওয়ার কিছু আগেই বেরিয়ে পড়েছিলেন জগবন্ধু৷ হাঁটতে হাঁটতে নিউ মার্কেটের মধ্যে দিয়ে ফেরবার সময় হঠাৎই চোখে পড়ে গেল দোকানটা৷ সাইনবোর্ডে লেখা আছে-ইসমাইল কনসার্ট, এখানে পুরাতন বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করা হয়৷
সাইনবোর্ড চোখে পড়তেই জগবন্ধুর মনের ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল৷ সেদিন পকেটে বেশ কিছু বাড়তি টাকাও ছিল৷ জগবন্ধু ঢুকে পড়লেন দোকানের ভিতরে৷ দোকানদার একজন হাসিখুশি মধ্যবয়সি মানুষ৷ জগবন্ধু হারমোনিয়ামের কথা বলতেই পাশের একটা ঘরে নিয়ে গেলেন তাঁকে৷ সেই ঘরে নানা ধরনের হারমোনিয়াম রাখা আছে৷
বেশ কয়েকটা হারমোনিয়াম দেখবার পর শেষে একটা পছন্দ হল জগবন্ধুর৷ সেটা কিন্তু অন্যগুলোর চেয়ে ছোটো আকারের৷ অনেকটা, বৈষ্ণবরা যে-হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে নামসংকীর্তন করে সেই ধরনের৷ জিনিসটা খুব হালকাও, বাক্সের ভিতর ভরা থাকলে অনায়াসে হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়৷ দোকানদারকে জিনিসটার দাম মিটিয়ে দিয়ে পথে নেমে একটা ট্যাক্সি ধরলেন জগবন্ধু৷ তারপর শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে, ঘণ্টা দুয়েক পরে যখন নিজের স্টেশনে নামলেন তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে৷
স্টেশন থেকে জগবন্ধুর বাড়ি বেশ কিছুটা দূরে৷ হেঁটে যেতে মিনিট চল্লিশ সময় লাগে৷ হারমোনিয়ামটা হাতে ঝুলিয়ে যখন তিনি স্টেশনের বাইরে রিকশা স্ট্যান্ডে উপস্থিত হলেন তখন স্ট্যান্ডে একটাও রিকশা দেখতে পেলেন না৷ বোধ হয় তারাও আজ কোথাও খেলা দেখতে বসে গেছে৷ অগত্যা হারমোনিয়ামের বাক্সটা হাতে ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগালেন জগবন্ধু৷ বাড়ির সামনে যখন তিনি পৌঁছোলেন তখন সাতটা বাজতে চলেছে৷ সামনেই পুজো আসছে৷ বাতাসেও যেন তার একটা আমেজ৷ তাই হারমোনিয়ামের বাক্সটা নিয়ে এতটা পথ হেঁটে আসলেও কোনো ক্লান্তি বোধ হল না জগবন্ধুর৷
বাড়ির ঠিক সামনের ল্যাম্পপোস্টটার নীচে এসে প্রতিদিনের মতো একটু দাঁড়ালেন তিনি৷ তারপর পকেট থেকে চাবি বের করে বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন জগবন্ধু৷ বাড়িটা জগবন্ধুর ঠাকুরদার আমলের, ওপর-নীচ মিলিয়ে গোটা আষ্টেক ঘর৷ অনেকেই জগবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, একলা এত বড়ো বাড়িতে না থেকে অন্তত নীচের তলাটায় একটা ভাড়াটে বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু জগবন্ধুর মন সায় দেয়নি তাতে৷ একলা দিব্যি আছেন তিনি৷ কত টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে বসিয়ে নিজের শান্তিভঙ্গ করতে তিনি মোটেই রাজি নন৷
একলা থাকতে তাঁর কোনো অসুবিধাই হয় না৷ প্রতিদিন সকালে গোপালের মা এসে বাড়ি ঘরদোর পরিষ্কার করে রান্না করে দিয়ে যায়৷ রোজ সকাল ন-টার সময় অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোবার আগে রাতের ভাত-ডাল-তরকারি ফ্রিজের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে যান, ফলে রাতে ফিরে রান্নাবান্নার ঝঞ্ঝাট আর পোহাতে হয় না জগবন্ধুকে৷
সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে এসে তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লেন জগবন্ধু৷ কাল রবিবার, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সপ্তাহের বাজারটা সেরে ফেলতে হবে৷ বিছানায় শোওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে ঘুম নেমে এল৷
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল জগবন্ধুর৷ তাঁর কেন জানি মনে হতে লাগল কোথা থেকে একটা হারমোনিয়ামের মিষ্টি সুর ভেসে আসছিল এতক্ষণ৷ ঘুম ভাঙার সঙ্গেসঙ্গেই সেটা হারিয়ে গেল৷ সেই সুরের রেশ কিন্তু এখনও জগবন্ধুর কানে বাজছে৷ বিছানা থেকে নেমে আলোটা জ্বালালেন তিনি৷ খাটের পাশে টেবিলের ওপর হারমোনিয়ামটা রাখা আছে৷ তার পাশে রাখা ঢাকা দেওয়া জলের গ্লাসটা তুলে নিয়ে এক গ্লাস জল খেলেন তিনি৷ তারপর আলো নিভিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন৷
পরদিন ভোরে উঠে চোখমুখ ধুয়ে, চা খেয়ে হাতে বাজারের থলে নিয়ে বাজারের দিকে পা বাড়ালেন জগবন্ধু৷ কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলেন তাঁর পাড়ার গোপীনাথবাবু বাজার করে ফিরছেন৷ গোপীনাথবাবুকে তিনি একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন৷ কারণ গোপীনাথবাবু একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামতে চান না৷ তা ছাড়া বৃদ্ধ গোপীনাথবাবুর সব কিছুতেই ব্যাপক কৌতূহল৷ আজ একেবারে সামনাসামনি পড়ে গেলেন৷ জগবন্ধুকে দেখতে পেয়েই গোপীনাথ বললেন, ‘কী হে জগবন্ধু, কাল রাতে দেখলাম তুমি একটা বাক্স নিয়ে বাড়ি ফিরলে, কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলে বুঝি?
জগবন্ধু উত্তর দিলেন, ‘না কোথাও যাইনি৷ হাতে একটা হারমোনিয়ামের বাক্স ছিল৷’
গোপীনাথ আবার প্রশ্ন করলেন, ‘তা তোমার সঙ্গের লোকটি কে ছিল? তাকে তো আগে কখনো দেখিনি৷’
জগবন্ধু বললেন, ‘কই, আমার সঙ্গে তো কেউ ছিল না৷’
জগবন্ধুর কথা শুনে গোপীনাথ আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘সে কী হে! কাল স্পষ্ট দেখলুম-তুমি যখন বাক্স হাতে বাড়ি ফিরলে, তখন তোমার পেছন পেছন একজন লোক এল, তুমি যখন ল্যাম্পপোস্টের তলায় দাঁড়ালে সেও তখন তোমার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল৷ তারপর তুমি যখন দোর খুলে ভিতরে ঢুকলে, সেও তোমার সঙ্গে ভিতরে ঢুকে গেল৷ আর তুমি বলছ কিনা তোমার সঙ্গে কেউ ছিল না! দেখো জগবন্ধু, আমি বুড়ো হয়েছি ঠিকই, চোখে আমার চশমাও আছে, তা বলে এতটা ভুল দেখার মতন অবস্থা আমার এখনও হয়নি৷’
এই বলে গজগজ করতে করতে বাড়ির পথ ধরলেন গোপীনাথবাবু৷ ওনার কথার কোনো মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে এরপর জগবন্ধুও এগোলেন বাজারের দিকে৷
দুপুর বেলা খাওয়া-দাওয়া সেরে টেবিলের ওপর থেকে হারমোনিয়ামটা নিয়ে পাশের ঘরের তক্তপোশে গিয়ে বসলেন জগবন্ধু৷ হারমোনিয়ামটার বেশ বয়স হয়েছে বোঝা যায়৷ তার জায়গায় জায়গায় পালিশ উঠে গেছে৷ বহু ব্যবহারে ফলে রিডগুলো স্থানে স্থানে কিছুটা খয়েরি রঙের হয়ে গেছে৷ হারমোনিয়ামটা যে এত পুরোনো তা কাল দোকানের আলো-আঁধারের মধ্যে জগবন্ধু ঠিক বুঝতে পারেননি৷ তাই এখন হারমোনিয়ামটা দেখে কিছুটা মুষড়ে পড়লেন৷ ক্লিপ থেকে বেলোটা খুললেন তিনি৷ অমনি একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ এসে নাকে লাগল৷ তারপর রিডের ওপর হাত বোলাতেই যেন সুরের রামধনু খেলে গেল ঘরের ভিতর৷ জগবন্ধু অবাক হয়ে গেলেন তাই শুনে৷ এত মিষ্টি শব্দ যে এর থেকে হতে পারে, তা ভাবতে পারেননি তিনি৷
ছোটোবেলায় তাঁর মামাবাড়িতে একটা হারমোনিয়াম ছিল৷ একবার সেখানে মার সঙ্গে গিয়ে সা-রে-গা-মা-টা শিখেছিলেন তিনি৷ দু-একবার চেষ্টা করার পর তিনি দেখলেন সেটা এখনও ভোলেননি৷ সারা দুপুরটা মেতে রইলেন হারমোনিয়ামটা নিয়ে৷
আস্তে আস্তে বিকাল হয়ে গেল৷ জগবন্ধুর আবার আজ একটা বিয়ের নিমন্ত্রণ আছে নৈহাটিতে৷ তাই তিনি হারমোনিয়ামটা বন্ধ করে উঠে পড়লেন৷
রাত দশটা নাগাদ নিমন্ত্রণ খেয়ে জগবন্ধু যখন রিকশা থেকে পাড়ার মোড়ে নামলেন, তখন দেখলেন সামনের একটা দোকানে বারোয়ারি পুজো কমিটির ছেলেগুলো আড্ডা মারছে৷ তাদের দেখে জগবন্ধুর মনে পড়ল আজ তাদের চাঁদার টাকাটা দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন৷ টাকাটা দেওয়ার জন্য তিনি এগিয়ে গেলেন তাদের দিকে৷ চাঁদাটা দিয়ে তিনি যখন তাঁর বাড়ির দিকে এগোতে যাচ্ছেন, ছেলেদের মধ্যে একজন বলে উঠল, ‘দাদা যে সংগীত সাধনা করেন, তা তো আমাদের জানা ছিল না৷ এবার আমাদের পূজামণ্ডপে আপনাকেও গাইতে হবে কিন্তু৷’
জগবন্ধু ভাবলেন আজ দুপুর বেলা যখন তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছিলেন, তখন হয়তো তারা বাড়িতে গিয়েছিল৷ নীচ থেকে তাদের ডাক হয়তো তিনি শুনতে পাননি৷ এই ভেবে জগবন্ধু তাদের বললেন, ‘ও, দুপুর বেলা তোমরা আমরা বাড়িতে গিয়েছিলে বুঝি? আসলে আমি তো ওপরের ঘরে বসে বাজাচ্ছিলাম, তাই তোমাদের ডাক শুনতে পাইনি৷’
জগবন্ধুর কথা শুনে ছেলেটা বলল, ‘না না, দুপুর বেলায় নয়, সন্ধ্যা নামার একটু পরেই আমরা আপনার বাড়ি গিয়েছিলাম৷ ওই যখন লোডশেডিং হয়েছিল৷ শুনতে পেলাম আপনি দোতলার ঘরে বসে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন৷ আমরা বেশ কয়েকবার ডেকেছিলাম আপনাকে৷ আপনি বোধ হয় শুনতে পাননি৷ এমনিতেই লোডশেডিং, তার ওপর আপনি তো আর চাঁদা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার লোক নন, তাই আর আপনাকে ডাকাডাকি করিনি৷’
ছেলেটার কথা শুনে জগবন্ধুর মাথার ভিতরটা কেমন গুলিয়ে গেল৷ তিনি তো আজ বিকালের পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন না, তাহলে তিনি সন্ধ্যার পর হারমোনিয়াম বাজালেন কীভাবে! মুখে কিছু না বলে বাড়ির দিকে পা চালালেন৷
আগের দিনের মতন সেদিনও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল জগবন্ধুর৷ তাঁর যেন মনে হতে লাগল কোথা থেকে হারমোনিয়ামের শব্দ ভেসে আসছে৷ বিছানাতে শুয়ে শুয়ে তা শুনতে লাগলেন৷ সুরটা যেন তাঁর মনের মধ্যে কেমন একটা নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে৷
কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর জগবন্ধু বুঝতে পারলেন সুরটা ভেসে আসছে তাঁর পাশের ঘর থেকে৷ কিন্তু তিনি ভয় পেলেন না৷ মনের মধ্যে কেমন একটা অস্বস্তি হতে লাগল৷
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন জগবন্ধু৷ তারপর আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বারান্দাতে বেরিয়ে পাশের ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন৷ বুঝতে পারলেন তাঁর অনুমান সত্যি৷ হারমোনিয়ামের শব্দটা আসছে ঘরের ভিতর থেকেই৷ ঘরের দরজাটা খোলা৷ সামনে ভারী পরদা ঝুলছে৷ এ অঞ্চলে চোরের উপদ্রব নেই বলে সাধারণত দোতলার ঘরের জানলা-দরজা খোলাই থাকে৷ পরদার ফাঁক দিয়ে উকি মারতেই জগবন্ধু এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেলেন৷ ঘরের ভিতর আলো জ্বালা না থাকলেও খোলা জানলা দিয়ে এক ফালি চাঁদের আলো এসে পড়েছে ঘরের ভিতর৷ সেই আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ লোক তক্তপোশের ওপর বসে মাথা নীচু করে একমনে বাজিয়ে চলেছে হারমোনিয়ামটা৷ পরনে তার ধবধবে সাদা চুড়িদার-পাঞ্জাবি, আর মাথায় ছোট্ট একটা কাপড়ের তিনকোনা টুপি৷
হঠাৎ লোকটা মুখ তুলে তাকাল দরজার দিকে, অমনি জগবন্ধুও সরে দাঁড়ালেন দরজার পাশ থেকে৷ কিন্তু সে মনে হয় দেখতে পেয়েছে জগবন্ধুকে, কারণ হারমোনিয়ামের শব্দটা সঙ্গেসঙ্গেই থেমে গেল৷
কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন জগবন্ধু৷ তারপরই পরদা সরিয়ে আচমকা জ্বেলে দিলেন ঘরের আলোটা৷ বিদ্যুতের আলোতে ঝলমল করে উঠল সারা ঘর৷ কিন্তু সে-ঘরের মধ্যে কেউ কোথাও নেই! শুধু একটু হালকা আতরের গন্ধ ছড়িয়ে আছে ঘর জুড়ে৷ আর হারমোনিয়ামের বেলোটা খোলা অবস্থায় রয়েছে৷
কিছুক্ষণ সেই ঘরে দাঁড়িয়ে থাকার পর ঘরের আলো নিভিয়ে নিজের ঘরে শুতে চলে গেলেন জগবন্ধু৷ পরদিন ভোরে যখন তাঁর ঘুম ভাঙল, রাতের ঘটনাটাকে নেহাতই স্বপ্ন বলে ধরে নিলেন তিনি৷
দিন সাতেকের জন্য অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিলেন জগবন্ধু৷ কিন্তু সেখান থেকে ফেরবার সময় এক বিপত্তি হল৷ ট্রেনের মধ্যে থেকে ব্রিফকেসটা খোয়া গেল জগবন্ধুর৷ টাকাপয়সা তাতে না থাকলেও কিছু জামাকাপড় আর বাড়ির চাবির গোছাটা ছিল তার মধ্যে৷ অতএব তালা না ভাঙলে বাড়িতে ঢোকা সম্ভব নয়৷ তাই বাড়িতে ঢোকবার সময় পাড়ার একটা ছেলেকে ডেকে নিয়ে এসে সদর দরজার, শোওয়ার ঘরের ও রান্নাঘরের তালাটা ভাঙলেন তিনি৷ অন্য ঘরগুলো বন্ধই রইল৷
জগবন্ধু ভাবলেন ডুপ্লিকেট চাবিগুলো ঘরের কোথাও রাখা আছে কি না খুঁজে দেখবেন৷ সেগুলো যদি পেয়ে যান তাহলে আর তালাগুলো ভেঙে নষ্ট করতে হবে না৷ কিন্তু নানা কাজের চাপে চাবিগুলো আর খুঁজে বার করা হয়ে উঠল না৷ তা ছাড়া ঘরগুলোতে খুব বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস না থাকায়, ঘরগুলো খোলার জন্যে খুব একটা তাগিদও অনুভব করলেন না৷ তাই ঘরগুলো বন্ধ অবস্থাতেই পড়ে রইল৷ হারমোনিয়ামের কথাটা প্রায় ভুলেই গেলেন৷
একদিন গোপীনাথবাবু তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে রাতের বেলাতে যে ভদ্রলোককে তোমার ছাদে দেখতে পাই, তিনি তোমার কে হন?’
অনিদ্রার রুগি, চোখে মোটা কাচের চশমা আঁটা, গোপীনাথবাবুর প্রশ্ন জগবন্ধুর কাছে অবান্তর মনে হওয়াতে তার কোনো উত্তর দেননি তিনি৷
মাস দুয়েক কেটে গেছে৷ বেশ শীত পড়েছে এবার৷ দরজা-জানলা বন্ধ করে সেদিন রাতে লেপমুড়ি দিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলেন জগবন্ধু৷ অনেকদিন পর আবার হঠাৎই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল জগবন্ধুর৷ তাঁর কানে এসে বাজতে লাগল হারমোনিয়ামের সুর৷ তবে সেই সুর, সেই ধ্বনি কেমন যেন বিষাদ মাখা৷ লেপমুড়ি দিয়ে সেই শব্দ শুনতে লাগলেন জগবন্ধু৷ কিছুক্ষণ পর থেমে গেল সেই শব্দ৷ আর তারপরই জগবন্ধুর মনে হল তাঁর ঘরের মধ্যে কেউ যেন প্রবেশ করেছে৷ মুখের ওপর থেকে লেপটা সরিয়ে ফেললেন তিনি৷ অন্ধকার ঘরে কাউকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু তার নিশ্বাস ফেলার শব্দ যেন স্পষ্টই শুনতে পেলেন৷ আরও অনুভব করলেন, একটা মিষ্টি আতরের গন্ধ যেন ছড়িয়ে পড়েছে সারা ঘরে৷
জগবন্ধুর আজকে সত্যি ভয় ভয় করতে লাগল৷ হাত বাড়িয়ে জগবন্ধু খাটের পাশে রাখা টেবিলল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিতেই হালকা নীল আলোয় ভরে গেল সারা ঘর৷ জগবন্ধু দেখলেন তাঁর পায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই বৃদ্ধ লোকটা! যাকে তিনি একদিন পাশের ঘরে চাঁদের আলোতে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখেছিলেন৷
জগবন্ধুর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসতে লাগল৷ তিনি শুধু একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তার দিকে৷ খাটে শুয়ে লোকটির মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন৷ আজও তার পরনে একই পোশাক৷ শুধু সেদিনের থেকে আজ তাকে অনেক বেশি বৃদ্ধ বলে মনে হচ্ছে৷ করুণ দৃষ্টিতে সে চেয়ে রয়েছে জগবন্ধুর দিকে৷
বৃদ্ধের ঠোঁট এবার নড়তে শুরু করল৷ জগবন্ধুর মনে হল তার কন্ঠস্বর যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে৷ সে কী বলছে তা কানে শুনলেও মাথায় নিতে পারছিলেন না জগবন্ধু৷ কারণ আতঙ্কে তখন তাঁর বুদ্ধি লোপ পাওয়ার অবস্থা৷
লোকটা কথা বলেই চলেছে৷
কয়েক মিনিট কেটে যাওয়ার পর কিছুটা ধাতস্থ হলেন জগবন্ধু৷ তাঁর মনে হল লোকটা আর যাই করুক তাঁর কোনো ক্ষতি করবে না৷ তিনি এবার মন দিয়ে বৃদ্ধ কী বলছে তা শোনার চেষ্টা করলেন৷ ততক্ষণে বৃদ্ধের কথা বলা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে৷ শুধু শেষের দিকের কয়েকটা কথা কানে এসে বিঁধল তার, ‘বাবুজি, হামার সারা জিন্দেগির কামাই উও হারমনির অন্দর রাখা আছে, লেকিন আজ হামার ঘরে বাচ্ছালোগ একটা রোটির জন্য ভিখ মাঙছে৷ উও হারমনি আপনি ওদের ওয়াপস করে দিন বাবুজি৷ নেহি তো সব ভুখা মরে যাবে৷’
কথা শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল লোকটা৷ জগবন্ধুর মনে হল লোকটার চোখের কোলে যেন জল চিকচিক করছে৷ এরপর মাথায় হাত ছুঁয়ে জগবন্ধুকে কুর্নিশ করে অন্ধকারের মধ্যে আস্তে আস্তে মিশে গেল লোকটা৷
ভোর বেলাতেই একজন লোক ডেকে এনে পাশের ঘরের তালাটা ভেঙে ফেললেন জগবন্ধু৷ দু-তিন মাসের অব্যবহারের ফলে বেশ কিছুটা ধুলো জমেছে ঘরে৷ কিন্তু হারমোনিয়ামটা দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি৷ তার ওপর একটুও ধুলোর আস্তরণ নেই৷ কেউ যেন যত্ন করে মুছে রেখেছে সেটা৷
হারমোনিয়ামটা নিজের ঘরে নিয়ে এলেন জগবন্ধু৷ তারপর দরজা-জানলা ভালো করে খুলে দিয়ে পরদা সরিয়ে দিলেন তিনি৷ সকালের আলোতে ঝলমল করে উঠল সারা ঘর৷ সেই আলোতে ভালো করে হারমোনিয়ামটা দেখতে লাগলেন তিনি৷ হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ল হারমোনিয়ামের গায়ে এক জায়গায় পালিশ চটে গিয়ে কয়েকটা সংখ্যা যেন ফুটে উঠেছে৷ একটা ন্যাকড়া জলে ভিজিয়ে এনে সেখানটাতে ভালো করে ঘষতেই পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠল পরপর সাতটা সংখ্যা৷
জগবন্ধু এবার আরও ভালো করে দেখে বুঝতে পারলেন হারমোনিয়ামের প্রত্যেকটা রিডই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা৷ কিন্তু তারা এতই ক্ষুদ্র যে সাধারণ অবস্থাতে তাদের বোঝাই যায় না৷ অনেক চেষ্টার পর সংখ্যাগুলোকে মোটামুটি উদ্ধার করতে পারলেন জগবন্ধু৷ তারপর হঠাৎ কী মনে হতে সেই সাতটা সংখ্যা মিলিয়ে পরপর রিড টিপতেই হারমোনিয়ামের নীচের দিকের একটা অংশ ফাঁকা হয়ে গেল৷ বেরিয়ে পড়ল একটা খোপ৷ জগবন্ধু তার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বার করে আনলেন একটা ছোটো চামড়ার থলে৷ থলেটা টেবিলের ওপর উপুড় করতেই তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল অনেকগুলো ছোটো ছোটো ভাঁজ করা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া কাগজের টুকরো৷
একটা ছোটো কাগজের টুকরো হাতে তুলে নিলেন জগবন্ধু৷ দীর্ঘদিন থাকার কারণে কাগজের টুকরোগুলো একদম নষ্ট হতে বসেছে৷ অতি সাবধানে একটা টুকরোর ভাঁজ খুলে চমকে উঠলেন তিনি৷ আসলে সেগুলো হল ব্রিটিশ সরকারের আমলের ভাঁজ করা একশো টাকার নোট৷ জগবন্ধু গুনে দেখলেন মোট একশোটা আছে৷ অর্থাৎ সেই সময়কার দশ হাজার টাকা! কিন্তু আজকে এই নোটগুলো হয়তো-বা বাজে কাগজের মতনই মূল্যহীন৷
কিছুক্ষণ সেগুলো নিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন জগবন্ধু৷ নোটগুলো যখন তিনি থলের মধ্যে ভরে রাখতে যাবেন, তখন তার মধ্যে আর-একটা জিনিস দেখতে পেলেন৷ জিনিসটা হল একটা ছোট্ট কাপড়ের পুঁটলি৷ তার ভেতর থেকে বের হল এক ছড়া মালা৷ হলদেটে হয়ে গেলেও মালাটা যে মুক্তোর তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হল না৷ মালায় একটা ছোট্ট লকেটও আছে৷ লকেটের পিছনে একটা নাম ইংরেজিতে খোদাই করা৷ ‘আহম্মদ নাজাফি’৷ জগবন্ধুর মনে হল এই নামটা যেন তিনি কোথাও দেখেছিলেন বা শুনেছিলেন৷ কিন্তু অনেক ভাবার পরও মনে করতে পারলেন না৷
জগবন্ধু সেদিন ট্রেনে উঠে চুপচাপ জানলার পাশে বসেছিলেন৷ বারবারই খালি ‘আহম্মদ নাজাফি’ নামটা তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরে-ফিরে আসছে৷ পাশে বসে এক ভদ্রলোক অনেকক্ষণ ধরে পকেট ট্রানজিস্টারে খেলার রিলে শুনবার চেষ্টা করছিলেন৷ কিন্তু কিছুতেই সেন্টারটা ঠিকমতন ধরতে পারছিলেন না৷
অনেকক্ষণ চেষ্টার পর লোকটা বিরক্ত হয়ে অন্য একটা সেন্টার ধরলেন৷ সেখানে গানের আসর হচ্ছে৷ জগবন্ধুও শুনতে শুনতে চললেন সেই গান৷ একটা গান শোনাবার পর ঘোষিকা বললেন, ‘এবার আপনাদের একটা কাওয়ালি গান পরিবেশন করব৷’ ‘কাওয়ালি’ শব্দটা কানে আসবার সঙ্গেসঙ্গেই জগবন্ধু যেন লাফিয়ে উঠলেন৷ এবার তাঁর সব মনে পড়ে গেছে৷ কিছুদিন আগে তিনি এক দৈনিক সংবাদপত্রে কাওয়ালি গায়কদের নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলেন৷ তাতেই লেখা ছিল বিখ্যাত কাওয়ালি গায়ক আহম্মদ নাজাফির সম্বন্ধে কিছু কথা৷
শিয়ালদাতে ট্রেন থেকে নামবার পর জগবন্ধু ট্যাক্সি ধরে ছুটলেন সেই সংবাদপত্রের অফিসের দিকে৷ সেখান থেকে তিনি একটা ঠিকানা পেলেন৷
ঠিকানার সূত্র ধরে দু-দিন অনেক ছোটাছুটির পর অবশেষে জগবন্ধু এসে উপস্থিত হলেন পার্ক সার্কাসের এক বস্তিতে৷ সেখানে আলম নাজাফি বলে একটা নাম খোঁজাখুঁজি করতেই একজন দেখিয়ে দিল একটা খাপরার চালওলা বাড়ি৷ সেই বাড়ির সামনে নোংরা মাটিতে বেশ কয়েকটা ছোটো ছোটো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে খেলা করছে৷ জগবন্ধু সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই একজন বছর তিরিশের যুবক কাশতে কাশতে বাইরে বেরিয়ে এল৷ জগবন্ধু তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন তার নামই আলম নাজাফি৷
জগবন্ধু বেশ কিছুক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলার পর সে জগবন্ধুকে নিয়ে ঘরের ভেতরে গেল৷ ঘরের ভেতরে অভাবের চিহ্ন সুস্পষ্ট৷ ঘরের এক কোণে নোংরা বিছানার ওপর শুয়ে আছেন তার অন্ধ বৃদ্ধা মা৷ আর মেঝেতে খেলা করছে রোগা রোগা দুটো শিশু৷
আলম জগবন্ধুকে এনে দাঁড় করাল একটা নোনাধরা দেওয়ালের সামনে৷ সেই দেওয়ালে টাঙানো আছে অনেকদিনের পুরোনো বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা ছবি৷ ছবিটা হল আলম নাজাফির পিতামহের ছবি৷ ইনিই ছিলেন লক্ষ্ণৌ-এর বিখ্যাত কাওয়ালি গায়ক আহম্মদ নাজাফি৷
ছবির মানুষটি মধ্যবয়সের হলেও তাঁকে চিনে নিতে অসুবিধা হল না জগবন্ধুর৷ এই লোক আর সেই মানুষটি একই ব্যক্তি, যিনি ক-দিন আগে এক রাতে এসে দেখা দিয়েছিলেন জগবন্ধুকে৷
এরপর আলমকে সঙ্গে করে ঘরের বাইরে এলেন জগবন্ধু৷ আলমের মুখ থেকে শুনলেন এই বিখ্যাত গায়কের বংশধরদের বর্তমান করুণ অবস্থার কথা৷ ভাগ্যের পরিহাসে কীভাবে লক্ষ্ণৌ-এর হাভেলির পরিবর্তে আজ তাদের ঠিকানা হয়েছে পার্ক সার্কাসের এই বস্তি৷ এখানেই ছোটো ছোটো শিশু ও বৃদ্ধা অন্ধ মাকে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে আলম৷ ঘটি-বাটি যা ছিল, সব বিক্রি হয়ে গেছে৷ এমনকী আহম্মদ নাজাফির শেষ স্মৃতি হারমোনিয়ামটাও, কয়েক মাস আগে ছেলের অসুখের কারণে মাত্র দুশো টাকায় নিউমার্কেটের এক দোকানে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে সে৷ এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ল আলম৷
পরদিন আলমকে সঙ্গে করে বউবাজারের এক পরিচিত সোনার দোকানে গেলেন জগবন্ধু৷ মালাটা সেখানে বিক্রি করে পেলেন তিরিশ হাজার টাকা৷ সম্পূর্ণটাই তিনি তুলে দিলেন আলমের হাতে৷ আর পুরোনো নোটগুলো একটা কিউরিও শপে বিক্রি করে পাওয়া গেল হাজার কুড়ি টাকা৷ সেই টাকাটা তিনি আলমের ছেলে-মেয়েদের জন্য ব্যাঙ্কে জমা করে দিলেন৷ কিছুদিনের মধ্যে জগবন্ধু আলমের জন্য নিজের অফিসে একটা ছোটোখাটো কাজেরও ব্যবস্থাও করে ফেললেন৷
আলম যেদিন তার অফিসে কাজে যোগদান করল, সেদিন প্রচণ্ড খুশিমনে বাড়ি ফিরলেন জগবন্ধু৷ তারপর তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন৷ মাঝরাতে সেদিনও আবার হারমোনিয়ামের শব্দে জেগে উঠলেন তিনি৷ তার মনে হতে লাগল ঘরের মধ্যে যেন এক অদ্ভুত সুর ছড়িয়ে পড়ছে৷ সে সুর বিষাদের নয়, সে যেন দ্রুত ছন্দের সুরের রামধনু৷ জগবন্ধু ভেসে যেতে লাগলেন সেই সুরের প্লাবনে৷ অবশেষে একসময় বন্ধ হল সেই সুর, আর সঙ্গেসঙ্গেই মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠল ঘর৷ জগবন্ধু বুঝতে পারলেন আজ আবার তিনি এসেছেন৷ আজ আর তাঁর ভয় করছে না৷ টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে বিছানার ওপর উঠে বসলেন তিনি৷ দেখলেন সেদিনের মতো আজও তাঁর ঘরের ভিতর এসে দাঁড়িয়েছেন সেই মানুষটি৷ আজও তাঁর চোখে জল, কিন্তু সে জল দুঃখের নয়, আনন্দের৷ খুশিতে যেন ঝলমল করছে তার মুখ৷ জগবন্ধুর দিকে চেয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে একবার কুর্নিশ করলেন তিনি, তারপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলেন৷
পরদিন জগবন্ধু আলমের বাড়ি গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে এলেন হারমোনিয়ামটা৷