1 of 3

চোরে চোরে মাসতুতো ভাই

চোরে চোরে মাসতুতো ভাই

সুবলচন্দ্র মিত্রের (১৮৭২-১৯১৩ খ্রি.) সরল বাঙ্গালা অভিধানে প্রবাদটির উৎপত্তি সম্পর্কে যে কাহিনী বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ—

একদল চোর এক বাড়ির বেশকিছু বাসনপত্র চুরি করে। চুরি শেষ করার পরপরই ভোর হওয়ায় তারা বেশ অসুবিধায় পড়ে যায়। কাছেই ছিল এক সহিসের আস্তাবল। চোরেরা বুদ্ধি করে সেই ঘোড়ার আস্তাবল থেকে সহিসের খাটিয়া নিয়ে তার ওপর চোরাই মালপত্র রেখে চাদর দিয়ে ঢাকলো। অতঃপর খাটিয়া কাঁধে করে ‘বল হরি হরিবোল’ বলে চিৎকার করতে করতে এগুতে লাগলো রাস্তা দিয়ে যাতে সবাই, মনে করে যে, খাটিয়ায় মড়া নিয়ে ওরা পোড়াতে যাচ্ছে শ্মশানে।

এভাবে যেতে যেতে পথে এক পাকা চোরের সাথে দেখা হলো চোরদের। ঐ পাকা চোর ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল যে, খাটিয়ার ওপরে বাসনের মধ্যে একটি নল দেখা যায়। চোরেরা দেখলো, সত্যিই একটি চোরাই বদনার নল বেরিয়ে পড়েছে চাদরের আড়াল থেকে। তাড়াতাড়ি তারা তা ঢেকে ফেললো এবং পাকা চোরকে তাদের দলে আহ্বান করে বললো— ‘ভাগ নেবে তো এসো।’

পাকা চোর খুশি। চোরাই মালের ভাগ পাবার আহ্বানে সে খাটিয়া বহনের ভাগ নিতে কাঁধ লাগানো এবং সবাই পূর্ববৎ ‘বল হরি হরিবোল’ ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চললো। সর্বসমক্ষে ভাগ নেয়ার আহ্বান মানে মড়া বহনের ভাগ নেয়া। পাকা চোরও ইঙ্গিত বুঝে কাজে নামলো এবং প্রকাশ্যে বললো, ‘মেসো কখন মরেছে?’ অর্থাৎ মৃতের স্ত্রী তার মাসি আর অন্য চোরেরা তার মাসতুতো ভাই। সেই থেকে এই প্রবাদের উদ্ভব।

অন্যায় কাজে সায় দিলে অথবা অন্যায়কারীর পক্ষ অবলম্বন করে অন্যায়ের সহযোগী হলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়ে থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *