চতুর্থাধ্যায়—প্রথমাহ্নিক : পরমাণুর মূল কারণত্ব স্থাপন

চতুর্থাধ্যায়ে—প্রথমাহ্নিকম্

সদকারণবন্নিত্যম্।।১।।

অনুবাদ

সৎপদার্থের মধ্যে যাহা কারণবৎ নহে অর্থাৎ যাহার কারণ নাই, তাহা নিত্য (সৎ পদার্থ)।। ১।।

ব্যাখ্যা

সত্তা, দ্রব্য গুণ ও কর্ম্মে থাকে। সৎ বলিলে এই তিনটী পদার্থ বুঝা যায়। তদ্ভিন্ন পদার্থ—সমবায়, জাতি, বিশেষ এবং অভাব। এই চারিটী পদার্থ এখানে গৃহীত হইতেছে না, কারণ সমবায় প্রভৃতি তিনটী পদার্থের নিত্য ও অনিত্য দুইরূপে বিভাগ নাই, তাহারা একমাত্র নিত্য। অভাবের অনিত্যত্ব আবার অন্য রকমের। একটার (প্রাগভাবের) বিনাশ আছে, উৎপত্তি নাই; অপরটীর (ধ্বংসের) উৎপত্তি আছে, বিনাশ নাই—সেই জন্য অভাবের বিভাগ নিত্য, অনিত্য এরূপ নহে, তাহার বিভাগ যেরূপ তাহা কথিত হইবে। জগতের উপাদান ও অসমবায়িকারণ প্রদর্শনের জন্য সৎপদার্থ দুইভাগে বিভক্ত করিয়া প্রদর্শিত হইতেছে। সৎ দ্বিবিধ—নিত্য এবং অনিত্য; যে সৎ পদার্থের কারণ অর্থাৎ উৎপাদক নাই—তাহাই নিত্য; তদ্ভিন্ন অনিত্য। দ্রব্যের মধ্যে পৃথিবী, জল, তেজ এবং বায়ু এই চারিটী, গুণের মধ্যে রূপ, রস, স্নেহ, স্পর্শ, দ্ৰবত্ব, সংখ্যা, পরিমাণ, জ্ঞান, যত্ন, ইচ্ছা, গুরুত্ব এবং পৃথত্ত্ব—নিত্য ও অনিত্য দুই প্রকার। অবশিষ্ট দ্রব্য নিত্য, অবশিষ্ট গুণ ও যাবতীয় কৰ্ম্ম অনিত্য। পৃথিবী প্রভৃতি ভূতচতুষ্টয়ের যাহা পরম অণু—অবিভাজ্য অংশ—তাহা নিত্য, তদপেক্ষা বড় হইলেই অনিত্য। ঈশ্বরের জ্ঞান, ইচ্ছা, যত্ন নিত্য; জীবের অনিত্য। জল, বায়ু এবং তেজঃ পরমাণুর যথাযোগ্য রূপাদি এবং নিত্য দ্রব্যের পরিমাণ, নিত্য দ্রব্যের একত্ব সংখ্যা ও এক পৃথ নিত্য। পৃথিবী পরমাণুর রূপাদি অগ্নি সংযোগে পরিবর্তনশীল, সুতরাং অনিত্য।। ১।।

উপস্কারঃ

পৃথিব্যাদীনাং নবানামুদ্দেশং লক্ষণপরীক্ষাং নিবর্জ্য প্রকৃতের্মূলকারণতাং সাখ্যাভিমতাং নিরাচিকীর্ষঃ পরমাণূনাং মূলকারণত্বং পৃথিব্যাদ্যন্তর্ভাবঞ্চ সিষাধয়িষুনিত্যত্বসামান্যলক্ষণং তাবদাহ।

ন কারণবদকারণবৎ পদসংস্কারাৎ তদেবং ঘটাদীনাং ব্যবচ্ছেদঃ। তথাপি প্রাগভাবেহতিব্যাপ্তিরিত্যত আহ সদিতি সত্তা-যোগীত্যর্থঃ। সমবায়বিশেষপদার্থয়োঃ সত্তৈকার্থসমবায় এব সত্তাযোগঃ সামান্যান্তরস্য সত্তায়াশ্চ সৎপ্রত্যয়বিষয়তৈব সত্তাযোগঃ। স চ প্রত্যয়ো বস্তুস্বরূপমাত্রনিবন্ধন ইত্যন্যদেতৎ, ন চান্যত্রাপি তথৈবাস্তু, কিং সত্তয়েতি বাচ্যম্ অনুগতমতেস্তৎসিদ্ধেরুক্তত্বাৎ।।১।।

.

তস্য কাৰ্য্যং লিঙ্গম্।।২।।

অনুবাদ

কার্য্য তাহার অনুমাপক।। ২।।

ব্যাখ্যা

এই নিত্য সৎ পদার্থ দৃশ্য নহে, কার্য্য দ্বারা তাহার অনুমান করিতে হয়। এই যে বৃহৎ পৃথিবী ইহা বৃহৎ অবয়বসমূহ হইতে উৎপন্ন, সেই বৃহৎ অবয়ব স্থূল মৃৎপিণ্ড হইতে উৎপন্ন; সেই মৃৎপিণ্ড পবনবেগে সতত পরিচালিত পরমাণুর ক্রমসম্মিলনে উৎপন্ন; এই সম্মিলনকৰ্ত্তাই ঈশ্বর। আমাদের সম্মুখে ঊর্দ্ধে পার্শ্বে নিরন্তর পরমাণু-সমূহ বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরিতেছে। কিন্তু কৈ তাহারা মিলিয়া আমাদের দৃষ্টিরোধ করিতেছে না, বা বৃহৎ মৃৎপিণ্ড হইয়া আমাদের মস্তকে নিপতিত হইতেছে না। ঈশ্বরের পরমাণু-সম্মিলন বিষয়ক প্রযত্ন ফলোন্মুখ হইলে তবে তাহারা মিলিত হইয়া বৃহৎ হয়; নতুবা হয় না। সুতরাং এই বৃহৎ পৃথিবী রূপ কার্য্য দ্বারা আমরা নিত্য পরমাণুর ও ঈশ্বরের অনুমান করিতেছি। আবার দৃশ্য জলের শুক্লবর্ণ ইত্যাদি দ্বারা জলীয় পরমাণুর শুক্ল রূপাদিরও অনুমান করিতেছি। সুতরাং যেগুলি নিত্য সৎ, কোন না কোন কার্য্য দ্বারাই তাহাদের অনুমান হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে একদল বলেন, ধ্বংস হইতে অর্থাৎ অভাব হইতেই জগতের উৎপত্তি। এই যে বীজ হইতে অঙ্কুর হইতেছে ইহাও সেই অভাবের কৰ্ম্ম; বীজটী বিনষ্ট হইলে, তবে অঙ্কুর দেখা দেয়। তাঁহাদের মত অভ্রান্ত হইলে, নিত্য সৎপদার্থ কারণ হয় না। অতএব কাৰ্য্য নিত্য সৎপদার্থেরও অনুমাপক হইতে পারে না। সেই বৌদ্ধ মত খণ্ডন করিবার জন্যই তৃতীয় সূত্র কথিত হইবে।। ২।।

উপস্কারঃ

নিত্যসামান্যমভিধায়েদানীং পরমাণুমধিকৃত্যাহ।

তস্য পরমাণোঃ, কার্য্যং ঘটাদি, লিঙ্গম্, তথাচ গৌতমীয়ং সূত্রম্ “ব্যক্তাৎ ব্যক্তস্য নিষ্পত্তিঃ প্রত্যক্ষপ্রামাণ্যাৎ” ইতি, অবয়বাবয়বিপ্রসঙ্গস্তাবদনুভূয়তে। স যদি নিরবধিঃ স্যাৎ তদা মেরুসষ পয়োঃ পরিমাণভেদো স্যাৎ, অনন্তাবয়বারন্ধত্বাবিশেষাৎ ন চ পরিমাণপ্রচয়বিশেষাধীনো বিশেষঃ স্যাদিতি বাচ্যং সঙ্খ্যাবিশেষাভাবাত্তয়োরপ্যনুপপত্তেঃ প্ৰলয়াবধিঃ স্যাদিতি চেৎ, অন্ত্যস্য কস্যচিন্নিরবয়বত্বে প্রলয়স্যৈবানুপপত্তেঃ অবয়ববিভাগবিনাশয়োরেব দ্রব্যনাশকত্বাৎ। বিভাগশ্চ নাবধিঃ তস্যৈকাশ্রয়ত্বানুপপত্তেঃ তস্মান্নিরবয়বং দ্রব্যমবধিঃ স এব পরমাণুঃ। ন চ ত্রসরেণুরেবাবধিঃ, তস্য চাক্ষুষদ্রব্যত্বেন মহত্ত্বাদনেকদ্রব্যবত্ত্বাচ্চ, মহত্ত্বস্য চাক্ষুষ প্রত্যক্ষত্বে কারণত্বম্ অনেকদ্রব্যবত্ত্বমাদায়ৈব, অন্যথা মহত্ত্বমেব ন স্যাৎ কস্য কারণত্বং ভবেৎ, ন চ এসরেণোরবয়বা এব পরমাণবঃ মহদ্রব্যারম্ভকত্বেন তেষামপি সাবয়বত্বানুমানাৎ তন্ত্রবৎ কপালবচ্চ। তস্মাৎ যৎ কাৰ্য্যদ্রব্যং তৎ সাবয়বম্, যচ্চ সাবয়বং তৎ কাৰ্য্যং দ্রব্যম্। তথাচ যতোহবয়বাৎ কাৰ্য্যত্বং নিবৰ্ত্ততে তত্র সাবয়বত্বমপীতি নিরবয়বপরমাণুসিদ্ধিঃ। তদুক্তং প্রশস্তদেবাচার্য্যৈঃ “সা চ দ্বিবিধা নিত্যা চানিত্যা চ” ইতি।। ২।।

কারণভাবাৎ কার্য্যভাবঃ।।৩।।

অনুবাদ

কারণে যাহা থাকে কাৰ্য্যে তাহা বৰ্ত্তিয়া থাকে।। ৩।।

ব্যাখ্যা

অভাব কারণ নহে। অভাবের স্বরূপগত ইতরবিশেষ থাকিতে পারে না; কপালধ্বংসের পর ঘট উৎপন্ন হইল, আর বীজধ্বংস করিয়া অঙ্কুর উৎপন্ন হইল—এই ধ্বংস—অভাব, দ্রব্যের অসত্তা মাত্র, এ অসত্তার আবার ইতর বিশেষ কি? শূন্য ঘরে যদি রাম গিয়া বাহির হইয়া আসে, তাহাতে যে অসত্তা, আর শূন্য ঘরে শ্যাম গিয়া বাহির হইয়া আসিলেও সেই অসত্তা। এইরূপ অসত্তার ইতর বিশেষ না থাকায় কার্য্যের বৈলক্ষণ্য ঘটিতে পারে না। আমাদের মতে কার্য্যের বৈলক্ষণ্য— কারণবৈলক্ষণ্যে হয়, এই কারণ পরমাণু। পৃথিবীর যে পরমাণু তাহাতে গন্ধ, রস, রূপ, স্পর্শ, সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথক্ত, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব, অপরত্ব, গুরুত্ব, নৈমিত্তিক দ্রবত্ব এবং বেগ ও স্থিতিস্থাপক নামক সংস্কারদ্বয় আছে। এই জন্য বৃহৎ পৃথিবীতেও সেই গুণের অস্তিত্ব অনুভব করি। জলীয় পরমাণুতে গন্ধ নাই, স্নেহ আছে, বেগ নামক সংস্কার আছে, স্থিতিস্থাপক নাই; নৈমিত্তিক দ্রবত্ব নাই, স্বাভাবিক দ্রবত্ব আছে, স্পর্শ পৃথিবীতে কঠিনত্ব কোমলত্ব, জলে শীতলতা এই মাত্র প্রভেদ। অপর গুণ পৃথিবীর ন্যায় জানিবে। তেজে গন্ধ, রস, স্নেহ ও গুরুত্ব নাই। তাহাতে স্পর্শ উষ্ণ, দ্রবত্ব নৈমিত্তিক। অপর পূর্ব্ববৎ। ভাষ্য ও টীকাকার মতে বলিতেছি। বায়ুতে গন্ধ, রস, রূপ, গুরুত্ব ও দ্রবত্ব নাই, স্পর্শ—সুড়সুড়ি দেওয়ার ন্যায় স্পর্শ আছে। তাহা শীতত্ব, উষ্ণত্ব, বা কঠিনত্ব, কোমলত্ব নহে। আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা বায়ুর গুরুত্ব স্থির করিয়াছেন। এ বিষয়ে মহর্ষির কি মত তাহা বলিবার ইচ্ছা থাকিল। আকাশে শব্দ, সংখ্যা, পরিমাণ সংযোগ, বিভাগ এবং পৃথক্ত্র আছে। মনে পরত্ব অপরত্ব এবং বেগ আছে, কিন্তু শব্দ নাই। অবশিষ্ট আকাশের গুণ মনে আছে। কাল এবং দিকে সংখ্যাদি পাঁচটী গুণ এবং জ্ঞান, সুখ, দুঃখ, ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযত্ন, ভাবনা নামক সংস্কার, ধর্ম্ম এবং অধর্ম্ম—এই কয়টী গুণ আছে। ঈশ্বরে এতন্মধ্যে সুখ, দুঃখ, দ্বেষ এবং সংস্কার নাই, অবশিষ্ট কয়টী গুণই আছে। পৃথিবী প্রভৃতি চারিটী দ্রব্য ও মনে কৰ্ম্ম আছে। এক্ষণে দেখ, কারণের গুণ হইতে যখন কাৰ্যগুণের উৎপত্তি হয়, অবয়বের বৈচিত্র্যেও—অবয়বীর বৈচিত্র্য হয়, তখন আমাদের পক্ষে ঐ দোষ নাই। পরমাণু প্রভৃতির গুণভেদ থাকাতেই পৃথিবী, জল ইত্যাদি বিভিন্ন দ্রব্য উৎপন্ন হয়। অভাব বা শূন্যতা কারণ হইলে কার্য্যের আকস্মিক-ভাব হয়। সেই আকস্মিকতা সৰ্ব্বত্রই সমান, তাহা হইলে মৃৎপিণ্ড হইতেও সুবর্ণকুণ্ডল, সুবর্ণ হইতেও মৃন্ময় ঘট হইতে পারে। অতএব অভাব কারণ নহে। এই কারণ অর্থে—উপাদান-কারণ। কার্য্য অর্থে—উপাদেয় কাৰ্য্য।।৩।।

উপস্কারঃ

ইদানীং পরমাণৌ রূপাদিসিদ্ধয়ে প্রমাণমাহ

রূপাদীনাং কারণে সদ্ভাবাৎ কার্য্যে সদ্ভাবঃ, কারণগুণপূর্ব্বকা হি কাৰ্য্যগুণা ভবন্তি, ঘটপটাদৌ তথা দর্শনাদিত্যর্থঃ।।৩।।

.

অনিত্য ইতি বিশেষতঃ প্রতিষেধভাবঃ।। ৪।।

অনুবাদ

নিত্যের নিষেধ লইয়াই তো অনিত্য।। ৪।।

ব্যাখ্যা

যদি নিত্য পরমাণু থাকে, তাহা হইলে, বৈশেষিক মত গ্রাহ্য হইতে পারে। পরন্তু সৎপদার্থ—পরমাণু নিত্য হয় না। এমন অবস্থায় পরমাণুকে কারণ বলিতে যাওয়া বিড়ম্বনা মাত্র; কেন না সেই পরমাণু যখন অনিত্য, তখন তাহারও তো কারণ আছে। এইরূপ যতই দূরে যাইবে ততই কারণপরম্পরা। সুতরাং সেই অনিবৃত্ত কারণ- পরম্পরায় হাবুডুবু না খাইয়া শূন্যতাকেই কারণ বলা উচিত। বিশেষতঃ অঙ্কশাস্ত্রের নিয়মানুসারে দেখিতে গেলে অবিভাজ্য অংশ হয় না, যেখানে অবিভাগ সেইখানেই শূন্য। সুতরাং শূন্যতা হইতেই জগতের উৎপত্তি ইহা মানিতেই হইবে—ইহা বৌদ্ধমত। এই মতের খণ্ডনের জন্য এই সূত্রের অবতারণা। তুমি যে পরমাণুকে নিত্য নহে বলিতেছ, নিত্য বস্তু না থাকিলে নিষেধ করাই ঘটে না। যে বস্তু অপ্রসিদ্ধ তাহার কি নিষেধ সম্ভবে? যদি বল শূন্যতাই নিত্য, তাহার নিষেধ পরমাণুতে করিতেছি; তাহার উত্তর—পঞ্চম সূত্রে প্রদত্ত হইতেছে।।৪।।

উপস্কারঃ।

ইদানীং সৰ্ব্বানিত্যতাবাদিনিরাকরণায়াহ।

বিশেষত ইতি ষষ্ঠ্যন্তাওসিঃ বিশেষস্য নিত্যস্য প্রতিষেধস্তদা স্যাৎ যদ্যনিত্য ইতি প্রত্যয়ঃ শব্দপ্ৰয়োগশ্চ ন স্যাৎ নঞ উত্তরপদার্থনিষেধার্থত্বাৎ। তৎ কথং নিত্যাভাবেঽনিত্য ইতি স্যাৎ ভবতি চ ততো নিত্যমস্তীতি সিদ্ধম্, যদ্বা অনিত্য ইতি ন নিত্যঃ পরমাণুরিত্যনেন প্রকারেণ নিত্যস্য ত্বয়া প্রতিষেধঃ কৰ্ত্তব্যঃ। অনেন চ অনেন চ প্রকারেণ প্রতিষেধো ন সিধ্যতি সিদ্ধ্যসিদ্ধিপ্রতিহতত্বাৎ, সূত্রঞ্চৈবং যোজনীয়ম্। অকারঃ স্বতন্ত্র এব প্রতিষেধবচনঃ “অমাননাঃ প্রতিষেধবচনাঃ” ইতি তথাচানিত্য ইতি ন নিত্য ইত্যর্থঃ। প্রতিষেধভাবঃ প্রতিষেধস্বরূপং তেন ন নিত্য ইতি বিশেষস্য নিত্যস্য প্রতিষেধস্বরূপম্, তচ্চ ন সম্ভবতীতি শেষঃ।।৪।।

.

অবিদ্যা।। ৫।।

অনুবাদ

ভ্ৰম!।। ৫।।

ব্যাখ্যা

ভ্রম আর কি! যাহা শূন্যতা তাহা নিত্য! যাহা একেবারেই অসৎ, তাহাকে নিত্য বলিতে যাওয়া ভ্রম নহে তো কি? আমি যে নিত্যের কথা প্রথমেই তুলিয়াছি, তাহা নিত্য সৎপদার্থ। অসৎকে সেই নিত্য সৎপদার্থ বলিয়া পরমাণুতে তাহার নিষেধ করিতে যাওয়া ভ্রমের আড়ম্বর মাত্র। বিশেষতঃ অঙ্কের কথা এখানে যে তুলিয়াছ তাহাও ভ্ৰম। দ্রব্যের উপাদানোপাদেয় ভাব এক কথা এবং অঙ্কের অবিভাগ অপর কথা। অঙ্কের অবিভাজ্য না থাকে না থাক্, কিন্তু সেই অঙ্ক হইতে কি কোন আকৃতিবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হইতে পারে, যে সেই দৃষ্টান্তে পরমাণুর অপলাপ করিবে? পৃথিবী প্রভৃতির যদি অবিভাজ্য অংশ না থাকে তাহা হইলে সুমেরু ও সর্বপেরও তুল্যপরিমাণ হইত, কেন না সুমেরুরও অনন্ত অবয়ব এবং সর্বপেরও অনন্ত অবয়ব। আর শূন্যতা হইতে জগৎ উৎপন্ন হইলে, উৎপন্ন বস্তুর যে বৈচিত্র্য থাকে না এবং সকল স্থান হইতেই সকল কাৰ্য্য উৎপন্ন হইতে পারে—এ দোষ তো আছেই। তাই বলি শূন্যতাকে নিত্য বলিয়া পরমাণুর অনিত্যত্ব সাধন, ইহা ভ্ৰম মাত্ৰ।। ৫।।

উপস্কারঃ

ননু পরমাণুর্ন নিত্যঃ মূর্ত্তত্বাৎ ঘটবৎ, এবং রূপবত্ত্বরসবত্ত্বাদয়ঃ প্রত্যেকং হেতব উন্নেয়াঃ ‘এবং ষট্‌কেন যুগপদ্‌যোগাৎ পরমাণোঃ ষড়ংশতা’ তথাচ সাবয়বত্বাৎ অব্যাপ্যবৃত্তিসংযোগা- শ্রয়ত্বাৎ। কিঞ্চ পরমাণোমধ্যে যদ্যাকাশমস্তি তদা সচ্ছিদ্রত্বেনৈব সাবয়বত্বম্, অথ নাস্তি, তদাকাশস্যাসৰ্ব্বগতত্বপ্রসঙ্গঃ। কিঞ্চ ছায়াবত্ত্বাৎ আবৃত্তিমত্ত্বাৎ। অপিচ যৎ সৎ তৎ ক্ষণিকমিত্যাদিক্ষণিকত্বসাধকানুমানাদপি পরমাণোরনিত্যতা, তথা চৈতাবতী চেদনুমিতি- পরম্পরা তদা কথমুচ্যতে পরমাণুনিত্য ইত্যত আহ।

পরমাণোরনিত্যত্ববিষয়া সৰ্ব্বাপ্যনুমিতিঃ অবিদ্যা ভ্রমরূপা আভাসপ্রভবত্বাৎ, আপাততো ধৰ্ম্মিগ্রাহকমানবাধঃ সৰ্ব্বত্র বিপক্ষবাধক প্রমাণশূন্যত্বাদ্ব্যাপ্যত্বাসিদ্ধিঃ, ক্বচিৎ স্বরূপাসিদ্ধিরিত্যাদি সমানতন্ত্রেহন্বেষ্টব্যম্।। ৫।।

.

মহত্যনেকদ্রব্যবত্ত্বাৎ রূপাচ্চোপলব্ধিঃ।।৬।।

অনুবাদ

মহৎ (বস্তু) অনেকাবয়বযুক্ত দ্রব্যে গঠিত হইলে এবং তাহাতে রূপ থাকিলে তবে প্রত্যক্ষ হয়।।৬।।

ব্যাখ্যা

কারণে যাহা থাকে, কার্য্যে তাহাই বৰ্ত্তিবে এই নিয়ম তুমি অবশ্যই স্বীকার করিবে। তোমার পরমাণু প্রত্যক্ষগোচর নহে, তবে সেই পরমাণুর কার্য্য্য বৃহৎ পৃথিবী প্রত্যক্ষগোচর হয় কেন? বিশেষতঃ যাহা অপ্রত্যক্ষ, তাহা অসৎ, সেই অপ্রত্যক্ষ পরমাণু কারণ, আর শূন্যতা কারণ—ইহা তো সমান কথা। এই দুইটী আপত্তির উত্তর এই যে (১) কারণের গুণ কাৰ্য্যে বৰ্ত্তিয়া থাকে ইহাই আমার ৩য় সূত্রের ভাব; ভাব গ্রহণ করিয়া মত খণ্ডন কর, বাক্যের ছলে খণ্ডন করিলে কি হইবে? প্রত্যক্ষগোচরত্ব গুণ নহে, তাহা একটী ধর্ম্ম মাত্র। কারণে যত ধর্ম্ম থাকে কার্য্যে সেই সকল ধৰ্ম্ম থাকিবে একথা আমি বলি না, তাহা হইলে কার্য্য-কারণের ভেদ থাকিত না। (২) কেবল বস্তুই যদি প্রত্যক্ষের কারণ হইত, অর্থাৎ বস্তু থাকিলেই প্রত্যক্ষ হইবে, আর না থাকিলেই প্রত্যক্ষ হইবে না, তাহা হইলে অপ্রত্যক্ষ পরমাণু এবং শূন্যতা একই হইত, পরন্তু তাহা নহে। যে দ্রব্যের অবয়ব একাধিক অবয়ব দ্বারা গঠিত, সেই অণুভাবোত্তীর্ণ দ্রব্যে যদি চক্ষুগ্রহণযোগ্য রূপ থাকে তবেই তাহা প্রত্যক্ষ হইবে নতুবা নহে; পরমাণুর অবয়ব নাই, সুতরাং তাহা প্রত্যক্ষ হয় না। মনে কর অন্ধকার গৃহে বস্তুর প্রত্যক্ষ হয় না, তাই বলিয়া কি সেই বস্তু নাই বলিতে হইবে? ফলতঃ মহৎ পরিমাণ এবং রূপ এই দুইটী প্রত্যক্ষের সামান্য কারণ। কেহ বলেন, মহৎ পরিমাণ উদ্ভূতরূপ এবং উদ্ভূত স্পর্শ দ্রব্য-প্রত্যক্ষের কারণ। আর পরবর্ত্তী গ্রন্থকারগণ বলেন, মহৎ পরিমাণ প্রত্যক্ষ সামান্যের কারণ, উদ্ভূতরূপ চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের কারণ এবং উদ্ভূতস্পর্শ স্পার্শেন বা ত্বাচ্ প্রত্যক্ষের কারণ। তবে এই সূত্রে দ্রব্যপ্রত্যক্ষেরই কারণ নির্দেশ করা আছে। আমার মত এই যে, পৃথিবীপ্রত্যক্ষে উদ্ভূতরূপ ও উদ্ভূত স্পর্শ কারণ। তদিতর প্রত্যক্ষে চাক্ষুষস্থলে উদ্ভূত রূপ এবং স্পার্শেন স্থলে উদ্ভূত স্পর্শ কারণ। এইরূপে পূৰ্ব্বর্তন মতদ্বৈধের সামঞ্জস্য কর্তব্য।।৬।।

উপস্কারঃ

ননু যদি পরমাণুরস্তি কথমিন্দ্রিয়েণ ন গৃহাতে, রূপবত্ত্বস্পর্শবত্ত্বাদয়শ্চৈন্দ্রিয়কত্ব- প্রয়োজকাস্ত্বয়ৈবোপপাদিতা ইত্যত আহ।

মহতি মহত্ত্ববতি দ্রব্যে মহচ্ছব্দাৎ পরিমাণবাচকাৎ গুণবাচকানাং মতুপো লোপাৎ, অনেকদ্রব্যবত্ত্বাদিতি অনেকং দ্রব্যমাশ্রয়ো যস্য তদনেকদ্রব্যম্, তদ্ যস্যাস্তি তদনেকদ্রব্যব‍ তদ্ভাবস্তস্মাৎ অনেকদ্রব্যবত্ত্বাৎ, এবং সতি বায়ুরপি প্রত্যক্ষঃ স্যাদত উক্তং রূপাচ্চেতি উদ্ভূতাদনভিভূতাদিতি বক্ষ্যতে, উপলব্ধিরিতি বহিরিন্দ্রিয়েণেতি শেষঃ। তথাচ পরমাণোর্ম- হত্ত্বাভাবাদনুপলব্ধিরিত্যুক্তং ভবতি, অনেকদ্রব্যবত্ত্বঞ্চ অনেকদ্রব্যাশ্রিতাশ্রিতত্বম্ অবয়ব- বহুত্বাধীনমহত্ত্বাশ্রয়ত্বং বা। ন চ মহত্ত্বেনৈবানেকদ্রব্যবত্ত্বমন্যথাসিদ্ধমিতি বাচ্যং বৈপরীত্যস্যাপি সম্ভবাৎ জন্যেন জনকস্যান্যথাসিদ্ধিন তু জনকেন জন্যস্যেতি চেন্ন জন্যজনকয়োগ- পদন্বয়ব্যতিরেকগ্রহেঽন্যথাসিদ্ধ্যভাবাৎ। অন্যথা ভ্রামণাদিনা দণ্ডাদীনামন্যথাসিদ্ধি প্রসঙ্গাৎ, মহত্ত্বোৎকর্ষাত্ প্রত্যক্ষতোৎকর্ষো দূরাদাবিতি চেন্ন, অনেকদ্রব্যবত্ত্বোৎকর্ষস্যাপি ত সম্ভবাদ্বিনিগমনাবিরহাৎ। কিঞ্চ মর্কটকীটসূত্রজালে হস্তচতুষ্টয়াদিমিতে দূরাদপ্রত্যক্ষে মর্কটমাত্র- প্রত্যক্ষতাহনেকদ্রব্যবত্ত্বোৎকর্ষাধীনৈব মহত্তোৎকর্ষস্য জালে বর্ত্তমানত্বাৎ এবং সূক্ষ্মতন্তুঘটিত- পটাদৌ দূরত্বে মহত্ত্বোৎকর্ষেঽপি স্বল্পপরিমাণমুদ্গারাদিপ্রত্যক্ষে দ্রষ্টব্যম্।। ৬।।

.

সত্যপি দ্রব্যত্বে মহত্ত্বে রূপসংস্কারাভাবাদ্বায়োরনুপলব্ধিঃ।।৭।

অনুবাদ

(অনেকাবয়বযুক্ত) দ্রব্যে গঠিত হওয়ায় মহৎ পরিমাণ থাকিলেও রূপসংস্কারের অভাববশতঃ বায়ুর প্রত্যক্ষ হয় না।।৭।।

ব্যাখ্যা

সমবায় এক, ইহা পরে কথিত হইবে; বায়ুতে স্পর্শসমবায় আছে, সুতরাং রূপের সমবায়ও আছে, কেন না সমবায় তো ভিন্ন নহে। যদি রূপের সমবায় থাকিল, তাহা হইলে রূপও সমবায় সম্বন্ধে আছে, ইহা তোমাকে মানিতে হইবে। তবে বায়ুর প্রত্যক্ষ হয় না কেন? এই আপত্তির উত্তরে এই সূত্র কথিত হইতেছে। রূপের ঐ প্রকার সম্বন্ধ থাকিলে প্রত্যক্ষ হয় না, উহাকে সমবায় সম্বন্ধে রূপের সত্তা বলা যায় না। রূপসংস্কার থাকা চাই। রূপসংস্কার অর্থে—রূপসমবায় অর্থ উদ্ভূত ও অনভিভূতরূপসম্বন্ধ; ইহা থাকিলে প্রত্যক্ষ হয় নতুবা নহে। রূপ এবং তদীয় সমবায় যেখানে থাকে, সেইখানে রূপসমবায় থাকে, নতুবা স্পর্শসমবায় থাকিলে, রূপসমবায় আছে ইহা বলা যায় না।।৭।।

উপস্কারঃ

নন্বেবমপি মধ্যন্দিনোল্কাপ্রকাশস্য চাক্ষুষস্য রশ্নের্ব্বায়োবা স্পর্শসমবায়েন রূপসমবায়িনো মহতশ্চোপলম্ভঃ স্যাৎ অত আহ।

রূপসংস্কারপদেন রূপসমবায়ো রূপোদ্ভবো রূপানভিভবশ্চ বিবক্ষিতঃ। তেন যদ্যপি বায়ৌ য এব স্পর্শসমবায়ঃ স এব রূপসমবায়ঃ তথাপি রূপনিরূপিতো নাস্তি তত্র রূপাত্যন্তাভাবসত্ত্বাৎ। চাক্ষুষে চ রশ্নৌ রূপসংস্কারঃ রূপোদ্ভবো নাস্তি, মধ্যন্দিনোকাপ্রকাশে চ রূপসংস্কারো রূপানভিভবো নাস্তি ইতি ন তেষাং প্রত্যক্ষতা, এবং গ্রীষ্মোষ্মভজন- কপালানলকনকাদিষু রূপসংস্কার উন্নেয়ঃ। বৃত্তিকৃত রূপঞ্চ রূপসংস্কারশ্চেত্যে- করূপপদলোপঃ তেন রূপাভাবাদ্বায়োরনুপলব্ধিঃ, রূপসংস্কারাভাবাচ্চক্ষুরাদীনামনু- পলব্ধিরিত্যাহুঃ।।৭।।

.

অনেকদ্রব্যসমবায়াৎ রূপবিশেষাচ্চ রূপোপলব্ধিঃ।।৮।।

অনুবাদ

অনেক দ্রব্যের সমবায় সম্বন্ধে বৃত্তিত্ব এবং উদ্ভূতত্ব রূপ প্রত্যক্ষের কারণ।।৮।।

ব্যাখ্যা

বিবাদী বলিতেছেন, মহৎ পরিমাণের অভাবে পরমাণুর প্রত্যক্ষ না হয়, না হউক, পরমাণুতে যখন রূপ আছে বলিতেছ, তখন সেই রূপেরই প্রত্যক্ষ হয় না কেন? যদি বল, আশ্রয়ের প্রত্যক্ষ না হইলে, তাহার গুণেরও প্রত্যক্ষ হয় না, তাহার উত্তর এই—তোমার মতে বায়ুর প্রত্যক্ষ না হইলেও বায়ুস্পর্শের প্রত্যক্ষ হয়। আরও দেখ লবণের প্রত্যক্ষ না হইলেও লবণাক্ত জলে রসপ্রত্যক্ষ হয়। আল্লা-গোলা জলে, কোথাও জলভিন্ন বস্তু দেখিবে না অথচ লাল রং দেখিবে। সুতরাং আশ্রয়প্রত্যক্ষ না হইলেও গুণের প্রত্যক্ষ হয়। এখানে কিন্তু তাহা না হয় কেন? বিবাদীর এই পূর্ব্বপক্ষের উত্তরার্থ বর্ত্তমান সূত্র। রূপের আশ্রয় যদি সাক্ষাৎই হউক আর পরম্পরাতেই হউক বহু অবয়বের মিলনে উৎপন্ন হয় অর্থাৎ রূপের আশ্রয় যদি মহৎ পরিমাণবিশিষ্ট হয় এবং রূপ যদি উদ্ভূত হয় তাহা হইলেই রূপের প্রত্যক্ষ হয়, নতুবা নহে। উদ্ভূতত্ব রূপাদিত বিশেষধর্ম্ম, সকল রূপে তাহা থাকে না; বায়ু পুষ্পের ক্ষুদ্রকণিকা আহরণ করিয়া সৌরভ বিতরণ করে, সেই কণিকায় অবশ্যই রূপ আছে, নীরূপ বস্তু পৃথিবীর অংশ হয় না; কিন্তু সেই রূপ উদ্ভূত নহে। যদি বল সেই কণিকা অতিক্ষুদ্র তাই রূপ প্রত্যক্ষ হয় না, তদুত্তরে বলা যায়, তাহা হইলে গন্ধেরও ঘ্রাণজ প্রত্যক্ষ হইত না। আল্লাগোলা জলে যে আল্লার ক্ষুদ্রাংশেরও প্রত্যক্ষ হয় না অথচ তদীয়রূপের প্রত্যক্ষ হয়, তাহার কারণ ঐ আলতায় ক্ষুদ্রাংশরূপ যে পৃথিবী বা পার্থিব বস্তু তাহাতে উদ্ভূত স্পর্শ নাই। পূর্ব্বেই বলিয়াছি পৃথিবীর চাক্ষুষ প্রত্যক্ষে উদ্ভূত স্পর্শও কারণ। যাঁহারা উদ্ভূত স্পৰ্শকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের কারণ বলেন না, তাঁহাদের মত এই—ঐ পার্থিবাংশ, জলের সহিত মিশিয়া অভিভূত হইয়াছে। যাহা অভিভূত হয় তাহারও প্রত্যক্ষ হয় না, যেমন দুগ্ধে জল মিশাইলে জল ও দুগ্ধ পৃথভাবে প্রত্যক্ষ হয় না, তদ্রূপ। পরমাণু মহৎ পরিমাণ-বিশিষ্ট নহে। অতএব তদীয় রূপ চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের অযোগ্য, তাহাতে রূপ নাই বলিয়া যে প্রত্যক্ষ হয় না তাহা নয়।। ৮।।

উপস্কারঃ

এবং পরমাণুনিত্যতাপ্রকরণানন্তরং পরমাণুলিঙ্গতয়োপোঘাতসঙ্গত্যা বহিদ্ৰব্যপ্রত্যক্ষতা- প্রকরণং সমাপ্য উপোঘাতেন গুণপ্রত্যক্ষতাপ্রকরণং বর্ত্তয়িষ্যন্নাহ।

রূপগতো বিশেষো রূপবিশেষঃ তচ্চোদ্ভূতত্বমনভিভূতত্বং রূপত্বঞ্চ তস্মাদ্ৰূপস্যোপলব্ধিঃ। নম্বেবং পরমাণোর্ঘ্যণুকস্য চ রূপং গৃহ্যেতেত্যত উক্তমনেকদ্রব্যসমবায়াদিতি। অনেকপদং ভূয়স্তুপরং তেনানেকানি ভূয়াংসি দ্রব্যাণি আশ্রয়তয়া যস্য তদনেকদ্রব্যং ত্রসরেণুপ্রভৃতি তৎসমবায়াৎ, ঘটাদয়োহপ্যবয়বদ্বয়ারব্ধাঃ পরম্পরয়াহনেকদ্রব্যাশ্রয়া এব, রসস্পৰ্শাদৌ রূপত্ববিরহাৎ চাক্ষুষত্বাভাবঃ চাক্ষুষে তেজসি চ উদ্ভূতত্ববিরহাৎ, উদ্ভবঃ রূপাদিবিশেষগুণগতো জাতিবিশেষ এব রূপত্বাদিব্যাপ্যঃ। নম্বেবং শুক্লত্বসুরভিত্বকটুত্বাদিভিরপি পরাপরভাবানুপপত্তি- রেব তত্তদ্ব্যাপ্যতন্নানাত্বকল্পনে তু কল্পনাগৌরবম্। উদ্ভবপদস্য নানার্থত্বঞ্চেতি চেন্ন বাহ্যৈকৈকেন্দ্ৰিয়গ্রহণযোগ্যগুণত্বস্যৈবোপাধেরুদ্ভবত্বাৎ তদুপাধিবিরহস্যৈবানুদ্ভবত্বাৎ, অনুদ্ভবা- ভাব এব উদ্ভব ইতি কেচিৎ তচ্চিন্ত্যম্। অনুদ্ভবস্যাপ্যেবং ব্যবস্থাপয়িতুমশক্যত্বাৎ। অতীন্দ্রিয়বিশেষগুণত্বমনুভূতত্বমিতি চেৎ, এবং তহি ঐন্দ্রিয়কবিশেষগুণত্বস্যৈবোদ্ভবত্বাপত্তেঃ। ঐন্দ্রিয়কত্বাবচ্ছেদকং কিমিতি চেৎ তুল্যম্, বিশেষগুণেম্বেকৈবোদ্ভূতত্বং জাতিঃ গুণগতজাতৌ পরাপরভাবানুপপত্তির্ন দোষায়েত্যপি বদন্তি। ৮।।

.

তেন রসগন্ধস্পর্শেষ জ্ঞানং ব্যাখ্যাতম্।।৯।।

অনুবাদ

তদ্দ্বারাই রস, গন্ধ এবং স্পর্শ বিষয়ে জ্ঞান বিবৃত হইল।

ব্যাখ্যা

বিবাদীর আপত্তি এই যে, পরমাণুর রূপের প্রত্যক্ষ না হয়, না হউক; রস প্রভৃতির প্রত্যক্ষ হয় না কেন? তাহার উত্তর এই,—যেমন রূপ প্রত্যক্ষের নিয়ম, রসাদি প্রত্যক্ষেরও সেই নিয়ম। অর্থাৎ রসাদির আশ্রয়ে মহৎ পরিমাণ এবং রসাদি উদ্ভূত হইলে, তবে তাহার প্রত্যক্ষ হয়, নতুবা প্রত্যক্ষ হয় না। পরমাণুতে মহৎ পরিমাণ নাই, তাহার রসাদিরও প্রত্যক্ষ হয় না।। ৯।।

উপস্কারঃ

স্পর্শাতিরিক্তানাং রূপসামানাধিকরণ্যমেব বহিরিন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা প্রযোজকমিতি রূপপ্রত্যক্ষসামগ্রীমভিধায় তামন্যত্রাতিদিশন্নাহ।

তেনেতি রূপপ্রত্যক্ষজ্ঞানেনেত্যর্থঃ। যথা রূপবিশেষাৎ রূপত্বানভিভূতত্বোদ্ভূতত্বাদ্ৰূপো- পলব্ধিস্তথা রসবিশেষাৎ রসত্বানভিভূতত্বোদ্ভূতত্বলক্ষণাৎ রসোপলব্ধিঃ, এবমিতরত্রাপি যোজ্যম্, অনেকদ্রব্যসমবায়শ্চাতিদেশ্যঃ, ঘ্রাণরসনত্বগিন্দ্রিয়াণামনুদ্ভবাদগন্ধরসস্পর্শানামগ্রহণম্, পাষাণাদাবনুদ্ভবাদান্ধরসয়োঃ, তদ্ভস্মনি তয়োরুপলম্ভাৎ, তয়োঃ পাষাণাদাবুপলন্ত এব ন তু স্পষ্ট ইত্যেকে। বিভক্তাবয়বাপ্যদ্রব্যরূপানুদ্ভবাত্তদগ্রহণম্ এবং রসস্যাপি, উষ্ণজলে তেজোরূপস্যানুদ্ভবাৎ স্পর্শস্য চাভিভবাৎ বিততকপূরচম্পকাদৌ রূপরসস্পর্শানামনুদ্ভবাদনুপলন্তঃ। কনকাদৌ রূপমুদ্ভুতমেব শুক্লত্বভাস্বরত্বে পরমভিভূতে, রূপমপ্যভিভূতমিত্যেকে কনকগ্ৰহণ রূপান্তরসাহচর্য্যাৎ, অভিভবশ্চ বলবৎসজাতীয়গ্রহণকৃতমগ্রহণং ন তু বলবৎসজাতীয়সম্বন্ধমাত্রম্, বলবৎসজাতীয়সম্বন্ধস্যাপ্যগ্রহণনিরূপ্যতয়া অগ্রহণস্যৈবোপজীব্যত্বাৎ। নচাগ্রহণপ্রযোজকত্বেন বলবৎসজাতীয় এবোপজীব্যঃ, অগ্রহণস্য গ্রহণপ্রাগভাবস্য তদত্যন্তাভাবস্য বা তদপ্রযোজ্যত্বাৎ গ্রহণধ্বংসস্য চ তত্রাভাবাৎ, তবাপি তহি বলবৎসজাতীয়গ্রহণকৃতমগ্রহণমনুপপন্নমেবেতি চেৎ, অস্ত্বেবং তথাপি সজাতীয়স্য বলবত্ত্বে দুর্ব্বলত্বে বা তাদৃশসম্বন্ধসত্ত্বে বা গ্রহণাগ্রহণে এব প্রযোজকে ইতি স এবাভিভবপদার্থঃ।।৯।।

.

তস্যাভাবাদব্যভিচারঃ।।১০।।

অনুবাদ

তাহার (উদ্ভূতত্বের) অভাবেই (গুরুত্বে) ব্যভিচার নাই।।১০।।

ব্যাখ্যা

এক্ষণে দ্রব্যের যে গুরুত্ব তাহা প্রত্যক্ষ কি না? যদি প্রত্যক্ষ হয় তো কোন্ ইন্দ্ৰিয় দ্বারা প্রত্যক্ষ? যদি না হয় তো কেন হয় না? এই প্রশ্নের উত্তর এই প্রসঙ্গেই প্রদত্ত হইতেছে। ভাবার্থ এই— যদি এমন একটা কোন বস্তু দেখিতে পাই, সেখানে প্রত্যক্ষকারণসত্ত্বেও প্রত্যক্ষ হয় না, বা প্রত্যক্ষকারণাসত্ত্বেও প্রত্যক্ষ হয়, তাহা হইলে, দ্রব্য রূপ ইত্যাদি প্রত্যক্ষের কারণনির্দেশের জন্য এত যে উপদেশ, সমস্তই নিষ্ফল হইবে। তখন কার্য্যের আকস্মিকত্ববাদী মাথা তুলিয়া বলিবেন, কেমন ভাই ঠেকিয়াছ, আর কেন, কার্য্যকারণভাবের কথা তুলিও না। এই জন্য কথিত হইতেছে, গুরুত্বের কোনরূপে প্রত্যক্ষই হয় না। কেননা, উদ্ভূতত্ব অর্থাৎ প্রত্যক্ষযোগ্য রূপ-রসাদিতে যে বিশেষ বিশেষ ধৰ্ম্ম বা একটী সামান্য ধৰ্ম্ম আছে তাহা গুরুত্বে নাই; এই জন্য তাহার প্রত্যক্ষ হয় না। তুলাদণ্ড প্রভৃতির নমনোন্নমন দর্শনে গুরুত্বের অনুমান করিতে হয়, ইহা বৈশেষিক ভাষ্যকারের মত। বল্লভাচার্য্য বলেন, গুরুত্বের চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হইবার কারণ নাই, স্পার্শন প্রত্যক্ষ হয়। অতএব কার্য্যকারণভাবের ব্যভিচার নাই।। ১০।।

উপস্কারঃ

ননু গুরুত্বমপ্যনেকদ্রব্যসমবেতং রূপমহত্ত্বসমানাধিকরণঞ্চেতি কথং ন প্রত্যক্ষমত আহ। তস্য রূপত্বাদেঃ সামান্যস্য উদ্ভবস্য চ গুরুত্বে ২ ভাবান্ন গুরুত্বং প্রত্যক্ষম্। ননু মা ভূৎ তত্র রূপত্বাদিকং তথাপি তৎপ্রত্যক্ষং স্যাদত আহ অব্যভিচার ইতি। একৈকেন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বং প্রতি রূপত্বাদীনাং পঞ্চানাং জাতীনাম্ অব্যভিচারো নিয়ম এব যত্রৈব রূপত্বাদিপঞ্চকান্যতমৎ তত্রৈব বাহ্যৈকৈকেন্দ্ৰিয়গ্ৰাহ্যত্বং তদ্ব্যতিরেকাদিত্যর্থঃ, সূত্রে তু গুরুত্বাধিকারস্যাস্ফুটত্বাৎ প্রশস্তদেবৈর- তীন্দ্রিয়েষু মধ্যে পরিগণিতমপি বল্লভাচার্য্যেঃ স্পার্শনমুক্তং গুরুত্বম্।।১০।।

.

সংখ্যাঃ পরিমাণানি পৃথক্‌ত্বং সংযোগবিভাগৌ পরত্বাপরত্বে কর্ম্ম চ রূপিদ্রব্যসমবায়াৎ চাক্ষুষাণি।। ১১।।

অনুবাদ

সংখ্যা, পরিমাণ, পৃথত্ত্ব, সংযোগ, বিভাগ, পরত্ব (জ্যেষ্ঠত্ব ও দূরত্ব), অপরত্ব (কনিষ্ঠত্ব ও নিকটত্ব), কৰ্ম্ম, স্নেহ, বেগ এবং দ্রবত্ব রূপবদ্রব্যে সমবায়সম্বন্ধে থাকিলে তাহার চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ হয়।। ১১।।

ব্যাখ্যা

স্নেহ, বেগ এবং দ্রবত্ব সূত্রস্থ চকারের অনুবাদ। (বেগের যে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের কথা বলিলাম, ইহা টীকাকারের মতানুসারে। মহর্ষির স্পষ্ট উক্তি এ সম্বন্ধে নাই। আমার নিজ মত পঞ্চম অধ্যায়ের দ্বিতীয় আহ্নিকে বলিব।) পরমাণুর সংখ্যাদির প্রত্যক্ষ হয় না কেন? ইহার উত্তরে বলিতেছেন, যাহার উদ্ভূত রূপ আছে, উদ্ভূত স্পর্শ আছে এবং যাহাতে মহত্ত্ব পরিমাণ আছে তাহার সংখ্যাদির চাক্ষুষ হয় এবং ত্বাচ্ প্রত্যক্ষও হয়। ত্বাচ্ প্রত্যক্ষে রূপের কারণতা এবং চাক্ষুষ প্রত্যক্ষে স্পর্শের কারণতা এ বিষয়ে বিবাদ আছে; তাহার হেতু এই যে, হর্ষি স্পষ্ট করিয়া ত্বাচ্ প্রত্যক্ষের বা স্পার্শর কথা বলেন নাই, রূপ ও চাক্ষুষের কথা বলিয়াছেন। তাহার পর নিজ নিজ যুক্তি অনুসারে স্ব-স্ব পক্ষসমর্থন চলিয়া আসিতেছে। ‘রূপিদ্রব্য’ এই স্থানে দ্রব্য পদ গ্রহণ করায় মহৎ পরিমাণ পাওয়া গেল।। ১১।।

উপস্কারঃ

এবমেকৈকেন্দ্রিয়গ্রাহ্যানভিধায় দ্বীন্দ্রিয়গ্রাহ্যানা

এতেষাং চাক্ষুষত্বে স্পার্শনত্বে বা পরস্পরানপেক্ষত্বসূচনায়াসমাসঃ। যদ্যপি মহত্ত্বাপেক্ষাস্তি তথাপি ন পরিমাণত্বেন, চকারঃ স্নেহদ্রবত্ববেগানামুপসংগ্রহার্থঃ, চাক্ষুষাণীতি স্পার্শনত্বমপ্যুপলক্ষয়তি। যদ্বা চকার এব চাক্ষুষাণি চেত্যত্রাপি যোজ্যঃ। সঙ্খ্যা ইতি বহুবচনম্ একত্বাদিকাঃ সৰ্ব্বা এব সঙ্খ্যাঃ সংগৃহাতি, একত্বং সামান্যমেব ন তু গুণ ইতি চেৎ তদ্ যদি দ্রব্যমাত্রবৃত্তি তদা দ্রব্যত্বেন সহান্যূনানতিরিক্তবৃত্তিত্বম্। অথ গুণকর্ম্মণোরপি বর্ত্ততে, তদা সওয়া সহান্যূনানতিরিক্তবৃত্তিত্বম্। কথং তহি গুণাদাবপ্যেকত্বাদিপ্রত্যয় ইতি চেৎ আরোপিতেনৈকত্বেন, একার্থসমবায় প্রত্যাসত্যা সম্যগেবৈকত্ব প্রত্যয়ো বা। তদেতদেকত্বং, নিত্যদ্রব্যেষু নিত্যম্‌ অনিত্যেষু চ কারণৈকত্বাসমবায়িকারণকম্। দ্বিত্বাদিকন্তু অপেক্ষাবুদ্ধিজন্যম্। অপেক্ষাবুদ্ধিশ্চ নানৈকত্বসমূহালম্বনরূপাসজাতীয়য়োৰ্ব্বিজাতীয়য়োৰ্ব্বা দ্রব্যয়োশ্চক্ষুষা সন্নিকর্ষে।। ১১।।

.

অরূপিম্বচাক্ষুষাণি।। ১২।।

অনুবাদ

যাহাদের রূপ নাই, তাহাদের সংখ্যাদি, চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের অযোগ্য।। ১২।।

ব্যাখ্যা

‘যাহাদের রূপ নাই’ অর্থান্তর ‘রূপ ও স্পর্শ নাই’ ‘চাক্ষুষ প্রত্যক্ষের’ অর্থান্তর চাক্ষুষ ও স্পার্শন প্রত্যক্ষের’ অযোগ্য।। ১২।।

উপস্কারঃ

এতাবন্ত্যেব কৰ্ম্মপৰ্য্যস্তানি অভিপ্রেত্যাহ।

রূপরহিতদ্রব্যেষু বৰ্ত্তমানানি কৰ্ম্মপৰ্য্যস্তানি সঙ্খ্যাদীন্যচাক্ষুষাণি ন স্পার্শনানীত্যপি দ্রষ্টব্যম্। অপ্রত্যক্ষানীতি নোক্তম্, তথা সত্যাত্মৈকত্বমপি প্রত্যক্ষং ন স্যাৎ।। ১২।।

.

এতেন গুণত্বে ভাবে চ সৰ্ব্বেন্দ্রিয়ং জ্ঞানং ব্যাখ্যাতম্।। ১৩।।

অনুবাদ

ইহা দ্বারা গুণত্ব এবং সত্তার সর্ব্বেন্দ্রিয়জন্য প্রত্যক্ষ হয়, ইহা কথিত হইল।। ১৩।।

ব্যাখ্যা

রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এবং শব্দ—চক্ষুঃ প্রভৃতি এক এক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। জ্ঞানসুখাদি মনোগ্রাহ্য, সংখ্যাদি চাক্ষুষ ও ত্বাচ প্রত্যক্ষের বিষয়। অতএব গুণত্ব জাতি ও সত্তাজাতির আশ্রয়, সকল ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য হয়। সুতরাং তদুভয় জাতি যে সৰ্ব্বেন্দ্রিয়-গ্রাহ্য ইহা কথিত হইল। কেন না যে যে বস্তু যে যে ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য সেই সেই বস্তুর জাতি সেই সেই ইন্দ্রিয়েরই গ্রাহ্য হইয়া থাকে।। ১৩।।

চতুর্থ অধ্যায় প্রথম-আহ্নিক সমাপ্ত

উপস্কারঃ

রূপাদীনামেকৈকেন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বং সঙ্খ্যাদীনাং দ্বীন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বং সুখাদীনাং মানসত্বং তথাচ সত্তাগুণত্বয়োঃ সামান্যয়োঃ সৰ্ব্বেন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বমায়াতমিত্যাহ।

ব্যক্তিগ্রহণযোগ্যতৈব জাতিগ্রহণয্যেগ্যতা, ব্যক্তয়শ্চ যথাযথং যদি সৰ্ব্বেন্দ্রিয়ৈগৃহ্যন্তে তদা জাত্যোরপি গুণত্বসত্তয়োঃ সৰ্ব্বেন্দ্রিয়গ্রাহ্যত্বং পৰ্য্যবসন্নমিত্যর্থঃ।।১৩।।

ইতি শাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে চতুর্থাধ্যায়স্যাদ্যমাহ্নিকম্।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *