চতুর্থাধ্যায়—দ্বিতীয়াহ্নিক : অনিত্যদ্রব্যবিভাগ ও শরীরাদি কথন

চতুর্থাধ্যায়স্য—দ্বিতীয়াহ্নিকম্

তৎ পুনঃ পৃথিব্যাদিকার্য্যদ্রব্যং ত্রিবিধং শরীরেন্দ্রিয়বিষয়সংজ্ঞকম্।। ১।

অনুবাদ

(সৎপদার্থের মধ্যে) সেই (পরমাণুর অনুমাপক) যে, জন্য (অনিত্য) পৃথিবী প্রভৃতি দ্রব্য, তাহা তিন প্রকার। শরীর, ইন্দ্রিয় এবং বিষয় এই তিনটী তাহার নাম।।১।।

ব্যাখ্যা

পৃথিবী প্রভৃতি চারিটী দ্রব্য নিত্য এবং অনিত্য দুই ভাগে বিভক্ত, তন্মধ্যে নিত্য—পরমাণু; অনিত্য—তদ্ভিন্ন সূক্ষ্ম হইতে সুবৃহৎ পর্য্যন্ত। এইজন্য অনিত্য ‘ক্ষিত্যপ্তেজোমরুৎ’ ইহা তিন ভাগে বিভক্ত। এক শরীর, দ্বিতীয় ইন্দ্রিয়, তৃতীয় বিষয়—ভোগ্যবস্তু। ভূতলস্থ জীবের পার্থিব শরীর প্রত্যক্ষসিদ্ধ, বরুণলোকে জলীয় শরীর, আদিত্যাদি দেবলোকে তেজঃশরীর এবং বায়ুলোকে বায়বীয় শরীরেরও প্রমাণ আছে। পৃথিবী-ইন্দ্ৰিয় ঘ্রাণ, জলেন্দ্রিয় রসনা, তেজ-ইন্দ্রিয় চক্ষু এবং বায়ু-ইন্দ্ৰিয় ত্বক্। এক এক ইন্দ্রিয় এক একটা বিশেষ গুণ প্রত্যক্ষ করে। যে ইন্দ্রিয় যে ভূত হইতে উৎপন্ন, সেই ইন্দ্রিয় সেই ভূতের বিশেষ গুণ প্রত্যক্ষ করিবেই—এইটুকু স্থির রাখিলেই ইন্দ্ৰিয়তত্ত্ব বুঝিবে।। ১।।

উপস্কারঃ

স্পর্শবদদ্রব্যপরীক্ষার্থে চতুর্থাধ্যায়ে মূলকারণপরমাণুপরীক্ষানন্তরং কার্য্যদ্বারা স্পর্শবন্ত্যেব দ্রব্যাণি পরীচিক্ষিরাহ।

তত্র শরীরত্বং প্রযত্নবদাত্মসংযোগাসমবায়িকারণবৎক্রিয়াবদন্ত্যাবয়বিত্বম্ উপাধিভেদঃ। ন তু শরীরত্বং জাতিঃ, পৃথিবীত্বাদিনা পরাপরভাবানুপপত্তেঃ, ইন্দ্রিয়ত্বঞ্চ স্মৃত্যজনকজ্ঞানকারণমনঃ- সংযোগাশ্রয়ত্বম্, শব্দেতরোদ্ভূতবিশেষগুণানাশ্রয়ত্বে সতি জ্ঞানকারণমনঃসংযোগাশ্রয়ত্বং বা, নক্তঞ্চরনয়নরশ্মিস্তু তেজোন্তরমেব চক্ষুষ্ট্রেতু শব্দরূপেতরোদ্ভূতবিশেষগুণানাশ্রয়ত্বে সতীতি দেয়ম্, ন ত্বিন্দ্রিয়ত্বং জাতিঃ, পৃথিবীত্বাদিনা পরাপরভাবানুপপত্তেঃ। বিষয়ত্বঞ্চ যদ্যপি প্রতীয়মানভোগসাধনত্বম্, তচ্চ লৌকিকসাক্ষাৎকারবিষয়ত্বমেব দ্রব্যগুণকৰ্ম্মসামান্যাভাবসাধারণম্, তথাপি সূত্রানুরোধাৎ লৌকিকসাক্ষাৎকারবিষয়কার্য্যদ্রব্যত্বং দ্রষ্টব্যম্, পৃথিব্যাদিকাৰ্য্যদ্রব্যং ত্রিবিধমিতি হি সূত্রম্, তথাচ বিষয়ত্বমপি ন জাতিঃ।।১।

.

প্রত্যক্ষাপ্রত্যক্ষাণাং সংযোগস্যা প্রত্যক্ষত্বাৎ পঞ্চাত্মকং ন বিদ্যতে।।২।।

অনুবাদ

প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ বস্তুর (পরস্পর) সংযোগ অপ্রত্যক্ষ হয় বলিয়া পঞ্চাত্মক বস্তু নাই।। ২।।

ব্যাখ্যা

বেদান্তমতে জগৎ পঞ্চীকৃত বা ত্রিবৃৎকৃত এবং পাঁচটী বা তিনটীই স্থূল দ্রব্যের সমবায়ী কারণ। এই মতের খণ্ডনার্থ বর্ত্তমান সূত্র। যেমন একটী প্রত্যক্ষ দ্রব্য বৃক্ষাদি এবং অপরটী অপ্রত্যক্ষ দ্রব্য কাল প্রভৃতি এতদুভয়ের সংযোগ প্রত্যক্ষ হয় না, তদ্রূপ প্রত্যক্ষ ভূত পৃথিব্যাদি এবং অপ্রত্যক্ষ আকাশ এতৎসমুদায়ের মিলনে উৎপন্ন বস্তুও প্রত্যক্ষের অনুপযোগী হইয়া পড়িত। বিশেষতঃ দুই বা ততোধিক বিজাতীয় বস্তুর সম্মিলনোৎপন্ন স্থূল বস্তুরও রূপাদি গুণ থাকিতে পারে না। বিভিন্ন অবয়বে যে সকল গুণ থাকে, তাহা হইতেই অবয়বীর গুণ হয়, বিরোধী গুণ অবয়বদ্বয়ে থাকিলে সেই গুণ দ্বারা অবয়বীতে গুণ উৎপন্ন হইতে পারে না, অতএব স্থূল বস্তু রূপাদি শূন্য হইয়া পড়িত।।২।।

উপস্কারঃ

ইদানীং শরীরস্য ত্রৈভৌতিকত্বচাতুৰ্ভৌতিকত্বপ্রবাদং নিরাকÍমাহ।

গন্ধক্লেদপাকব্যূহাবকাশদানেভ্যঃ পাঞ্চভৌতিকং যদি শরীরং ভবেৎ তদাহ প্রত্যক্ষ ভবেৎ। যথা প্রত্যক্ষাপ্রত্যক্ষাণাং বায়ুবনস্পতীনাং সংযোগোঽ প্রত্যক্ষস্তথা শরীরমপ্যপ্রত্যক্ষং স্যাদিতি দৃষ্টান্তদ্বারকং সূত্রং, পঞ্চাত্মকং ন বিদ্যত ইতি শরীরমিতি শেষঃ। ক্লেদপাকাদয়স্তু উপষ্টম্ভকজলানলগতা এব, চাতুৰ্ভৌতিকেহ প্যেবম্। নন্বস্তু ত্রৈভৌতিকম্, ত্রয়াণাং ভূতানাং প্রত্যক্ষত্বাদিতি চেন্ন, বিজাতীয়ারম্ভস্য প্রতিষেধাৎ। একস্য গুণস্যাবয়বিনি গুণানারম্ভকত্বাৎ তদ্ যদি পৃথিবীজলাভ্যামারম্ভঃ স্যাৎ তদা তদারব্ধমগন্ধমরসঞ্চ স্যাৎ, এবং পৃথিব্যনলাভ্যাম- গন্ধমরূপমরসঞ্চ স্যাৎ পৃথিব্যনিলাভ্যামগন্ধমরসমরূপমস্পর্শঞ্চ স্যাদিত্যাদ্যহ্যম্।।২।।

.

গুণান্তরা প্রাদুর্ভাবাচ্চ ন এ্যাত্মকম্।।৩।।

অনুবাদ

গুণান্তরের অপ্রাদুর্ভাব হেতু (স্থূল দ্রব্যাদি) ত্রিভূতাত্মকও নহে।।৩।।

ব্যাখ্যা

অবয়বগুণ হইতে অবয়বিগুণোৎপত্তি হয়। পরন্তু বিজাতীয় দুইটী অবয়ব হইলে তাহাদের গুণ হইতে কোন গুণের উৎপত্তি হয় না। এইজন্য স্থূল দ্রব্যকে ত্রিভূতাত্মক বা ত্রিবৃৎকৃতও বলা যায় না।। ৩।।

উপস্কারঃ

এতদেবাহ।

পৃথিব্যপ্তেজসাং প্রত্যক্ষাণামেবারব্ধং শরীরং প্রত্যক্ষং স্যাদপি, যদি তত্র গুণান্তরং কারণগুণপূর্ব্বকং প্রাদুর্ভবেৎ, ন ত্বেতদস্তি একস্য গন্ধাদেরনারম্ভকত্বস্যোক্তত্বাৎ, তথাচ ন এ্যাত্মকমপি শরীরং ন রূপবদ্ভূতত্রয়ারব্ধমপীত্যর্থঃ।।৩।।

.

অণুসংযোগস্ত্বপ্রতিষিদ্ধঃ।। ৪।।

অনুবাদ

তবে অণুসংযোগ যে নিষিদ্ধ তাহা নহে।।৪।।

ব্যাখ্যা

যেরূপ সংযোগ না হইলে, জন্য বস্তু উৎপন্ন হয় না এবং যেরূপ সংযোগের নাশে জন্য বস্তু বিনষ্ট হয়, উপাদানাতিরিক্ত ভূতত্রয়ের অণু দ্রব্যের সেইরূপ সংযোগ শরীরে মানি না। কিন্তু যেরূপ সংযোগনাশাদি হইলে কাৰ্য্যনাশ হয় না, পরন্তু যে সংযোগ উৎপত্তির সহায় তাহা আমরা মানি। মনে কর, এই দেহ—ইহাতে ক্লেদ আছে, তাপ আছে, বায়ু আছে এবং আকাশ সম্বন্ধও আছে; আছে সব কিন্তু এক পৃথিবীই উপাদান বা সমবায়ী কারণ। অন্য ভূত সকল নিমিত্ত কারণ, পার্থিব অণু, ত্রসরেণু প্রভৃতির সংযোগই দেহের উৎপাদক, এই সংযোগের নাশ দেহের নাশক; আর জল প্রভৃতির অণু সংযোগাদি সেরূপ নহে। পৃথিবী সমবায়িকারণ বলিয়াই ইহার গন্ধ আছে। কঠিন, কোমল স্পর্শ, নানাবর্ণ ইত্যাদি গুণ আছে। আর ক্লেদ, তাপাদি যাহা দেখিতেছ তাহা নিমিত্তকারণের গুণ মাত্ৰ।। ৪।।

উপস্কারঃ

কথং তকেস্মিন্নেব শরীরে পাকাদীনামুপলন্ত ইত্যত আহ।

মিথঃ পঞ্চানাং ভূতানাং পরস্পরমুপষ্টম্ভকতয়া সংযোগো ন নিষিধ্যতে, কিন্তু বিজাতীয়য়োরণ্বোদ্রব্যং প্রত্যসমবায়িকারণং সংযোগো নেষ্যতে। তথাচ তদুপষ্টম্ভাৎ পাকাদীনাং শরীরে ভবত্যুপলন্ত ইতি তহি কিম্প্ৰকৃতিকমিদং মানুষশরীরমিত্যত্র গৌতমীয় সূত্রমুপতিষ্ঠতে “পার্থিবং তদ্ বিশেষগুণোপলব্ধেঃ”। পৃথিবীবিশেষগুণো গন্ধো মানুষশরীরে আনাশমনপায়ী দৃশ্যতে, পাকাদয়স্তু শুষ্কশরীরে নোপলভ্যন্তে ইতি তেষামৌপাধিকত্বং গন্ধস্য স্বাভাবিকত্বমিতি পার্থিবত্বব্যবস্থিতেঃ।।৪।।

.

তত্র শরীরং দ্বিবিধং যোনিজমযোনিজঞ্চ।। ৫।।

অনুবাদ

তন্মধ্যে শরীর দ্বিবিধ—যোনিজ এবং অযোনিজ।।৫।।

ব্যাখ্যা

পিতা-মাতা হইতে উৎপন্ন দেহই যোনিজ, তদ্ভিন্ন অযোনিজ। পার্থিব দেহের মধ্যে জরায়ুজ এবং অণ্ডজ দেহ যোনিজ; স্বেদজ এবং উদ্ভিজ্জ দেহ অযোনিজ। আর জলাদি দেহ অযোনিজ। বরুণলোকাদিতে যে দেহ ধারণ হয়, তাহা পুণ্যফলে; পাপফলেও অযোনিজ বায়বীয় দেহ গ্রহণ হয়, পুণ্যফলেও বায়ুলোকে বায়বীর দেহ গ্রহণ হয়। সূৰ্য্যলোকে তৈজস দেহ, তাহা পুণ্যফলে লভ্য। স্থূলতঃ দেহ দুই প্রকারই হইল।।৫।।

উপস্কারঃ

শরীরং বিভজতে।

তত্র পার্থিবাপ্যাদিশরীরেষু মধ্যে পার্থিবং শরীরং দ্বিবিধম্। কে তে দ্বে বিধে ইত্যত্রাহ— যোনিজমযোনিজঞ্চেতি। আপ্যতৈজসবায়বীয়শরীরাণাং বরুণাদিত্যবায়ুলোকেষু প্রসিদ্ধানাম- যোনিজত্বমেব অযোনিজত্বং শুক্রশোণিতসন্নিপাতানপেক্ষত্বম্। অযোনিজঞ্চ দেবানাম্‌ষীণাঞ্চ, শুয়তে হি“ব্রহ্মণো মানসা মন্বাদয়ঃ” ইতি। কারণমন্তরেণ কথং কার্য্যমিতি চেৎ যোনেঃ শরীরত্বাবচ্ছেদেনাকারণত্বাৎ উষ্মজকৃমিমশকাদিশরীরে ব্যভিচারাৎ সংস্থানবিশেষবত্ত্বস্য চাসিদ্ধেঃ দেবর্ষিশরীরাপেক্ষয়াহম্মদাদিশরীরাণামন্যাদৃশত্বাৎ, যোনিজমপি দ্বিবিধং জরায়ুজ- মণ্ডজঞ্চ। জরায়ুজং মানুষপশুমৃগাণাং গর্ভাশয়স্য জরায়ুত্বাৎ পক্ষিসরীসৃপাণামণ্ডজং পরিতঃ সৰ্পণশীলত্বাৎ সর্পকীটমৎস্যাদয়োঽপি সরীসৃপা এব যদ্যপি বৃক্ষাদয়োঽপি শরীরভেদা এব ভোগাধিষ্ঠানত্বাৎ। ন খলু ভোগাধিষ্ঠানত্বমন্তরেণ জীবন-মরণ-স্বপ্ন-জাগরণ-ভেষজপ্রয়োগবীজসজাতীয়ানুবন্ধানুকূলোপগমপ্রতিকূলাপগমাদয়ঃ সম্ভবন্তি বৃদ্ধিক্ষতভগ্নসংরোহণে চ ভোগোপপাদকে স্ফূটে এব, আগমোহপ্যস্তি।

“নর্ম্মদাতীরসম্ভূতাঃ শরলাৰ্জ্জুন পাদপাঃ।
নৰ্ম্মদাতোয়সংস্পর্শাৎ তে যান্তি পরমাং গতিম্।।” ইতি।
“শ্মশানে জায়তে বৃক্ষঃ কঙ্কগৃধ্রাদিসেবিতঃ।”

ইত্যাদিশ্চ তথাপি চেষ্টাবত্ত্বমিন্দ্রিয়বত্ত্বঞ্চ নোদ্ভিদাং স্ফূটতরমতো ন শরীরব্যবহারঃ।।৫।।

.

অনিয়তদিগ্বদেশপূর্ব্বকত্বাৎ।। ৬।।

অনুবাদ

অনিয়ত দিগ্‌দেশ স্থিত (পরমাণুসমূহ) কারণ হয় বলিয়াই (অযোনিজ দেহ উৎপন্ন হয়)।। ৬।।

ব্যাখ্যা

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে অসংখ্য পরমাণুপুঞ্জ ঘুরিতেছে, দেবশরীরাদিলাভের উপযোগী ধর্ম্ম বা অধর্ম্মের প্রভাবে সেই সকল পরমাণু ক্রমে সম্মিলিত হইয়া অযোনিজ দেহ সৃষ্টি করে। মনের সহিত সংযুক্ত আত্মার সেই দেহেই বিশেষ সম্বন্ধ হয়। এইরূপেই জীবের অযোনিজ দেহ ধারণ ঘটে।। ৬।।

উপস্কারঃ

অযোনিজশরীরোৎপত্তিকারণমাহ।

অনিয়তদিগ্‌দেশাঃ পরমাণবো ধর্ম্মবিশেষজনিতকর্ম্মাণস্তৎপূর্ব্বকত্বাদযোনিজশরীরাণাম্।।৬।।

.

ধৰ্ম্মবিশেষাচ্চ।।৭।

অনুবাদ

ধৰ্ম্মবিশেষ হেতুই (পরমাণুর কর্ম্ম হয়)।।৭।।

ব্যাখ্যা

ইতস্ততো বিক্ষিপ্ত পরমাণুপুঞ্জ যে অনুকূল স্পন্দনে পরস্পর সংযুক্ত হয়—সেই স্পন্দন, ধৰ্ম্মসম্পন্ন সেই আত্মার সহিত সংযোগ সম্মিলনে হইয়া থাকে। ধৰ্ম্মসম্পন্ন আত্মার সংযোগে স্পন্দিত পরমাণুর বশতঃ যে অযোনিজ দেহ উৎপন্ন হয়, তাহা দেবদেহ। পাপযুক্ত আত্মার সংযোগে স্পন্দিত পরমাণুর সম্মিলনোৎপন্ন দেহ নারকীয় দেহ।।৭।।

উপস্কারঃ

ননু পরমাণূনাং কৰ্ম্ম বিনা কথং দ্রব্যাসমবায়িকারণং সংযোগমন্তরেণ দ্রব্যোৎপত্তিরত আহ।

·

অদৃষ্টবদাত্মসংযোগাদেব সর্গাদৌ পরমাণূনাং কৰ্ম্ম তেন চ কৰ্ম্মণা সম্ভূয় পরমাণবো দ্ব্যণুকাদিপ্রক্রমেণ অযোনিজং দেবর্ষীণাং শরীরমারম্ভন্তে . ইত্যর্থঃ। উপলক্ষণঞ্চৈতত্ অধৰ্ম্মবিশেষাচ্চ ক্ষুদ্রজম্ভূনামুম্মজানাং মশকাদীনাং যাতনাময়ানি শরীরাণ্যুৎপদ্যন্তে ইত্যপি দ্রষ্টব্যম্।।৭।।

.

সমাখ্যাভাবাচ্চ।৮।।

অনুবাদ

সমাখ্যা অর্থাৎ প্রসিদ্ধি ও নামনিরুক্তি দ্বারা (অযোনিজ দেহের অস্তিত্ব নিশ্চয় করা যায়)।। ৮।।

ব্যাখ্যা

‘ব্রহ্মণো মানসাঃ পুত্রাঃ’ ব্রহ্মার মানস পুত্র হইয়াছিলেন। বিরাট্‌পুরুষ তপস্যাপ্রভাবে মনুর সৃষ্টি করেন, এই সকল শাস্ত্র কথা, অঙ্গার হইতে অঙ্গিরার উৎপত্তি ইত্যাদি অর্থযুক্ত নামই সমাখ্যা।। ৮।।

উপস্কারঃ

দেবর্ষীণামযোনিজে শরীরে প্রমাণান্তরমাহ।

সমাখ্যা অন্বর্থা সংজ্ঞা শ্রুতিস্মৃতীতিহাসপুরাণাদিষু প্রসিদ্ধা। তথাহি দুর্বাসঃপ্ৰভূতয়ো মানসাঃ অহঙ্কারেভ্যঃ অঙ্গারেভ্যঃ (?) সমভবদঙ্গিরা ইত্যাদিকা, তথাপি জ্ঞায়তে সত্যযোনিজানি শরীরাণি দেবর্ষীণামিতি।। ৮।।

.

সংজ্ঞায়া আদিত্বাৎ।।৯।।

অনুবাদ

সংজ্ঞার আদিত্ব হেতু (অযোনিজ দেহ বাধিত হইল না)।।৯।।

ব্যাখ্যা

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে, পিতা-মাতা পুত্রকে দেখিয়া পুত্রের নাম করে, তদ্রূপ ব্রহ্মা এই নামও অবশ্য পিতা-মাতা দেখিয়াই রাখিয়াছেন। তাহার উত্তর এই যে, ব্রহ্মা এই নাম আদি–জগতে তখন পিতা-মাতাই হয় নাই; তবে যে সে নাম হইল, তাহা ঈশ্বরকৃত। নাম বা নামাভিধেয় বস্তুর প্রত্যক্ষ দ্বারা ঈশ্বরের অস্তিত্বসাধনপ্রসঙ্গ পূৰ্ব্বে গিয়াছে। অথবা সূত্রের অর্থান্তর এই—মাতা, পিতার উৎপত্তির পূর্ব্বে যখন ব্ৰহ্মা সংজ্ঞা হইয়াছে তখন সে সংজ্ঞার প্রতিপাদ্য তো কেহ থাকিবেনই। সেই প্রতিপাদ্য ব্রহ্মদেহও অযোনিজ।। ৯।।

উপস্কারঃ

প্রমাণান্তরমাহ।

সর্গাদৌ যা ব্রহ্মাদিসংজ্ঞা আদিভূতা প্রাথমিকতয়া জ্ঞায়তে অন্ত্যযোনিজং শরীরমিতি। নহি তদা ব্ৰহ্মণো মাতাপিতরৌ স্তঃ, যাভ্যাং ব্রহ্মাদিসংজ্ঞা কৃতা স্যাদিতি ভাবঃ।।৯।।

.

সন্ত্যযোনিজাঃ।।১০।।

অনুবাদ

(অতএব) অযোনিজ দেহ আছে।। ১০।।

ব্যাখ্যা

শাস্ত্রের উল্লেখ এবং প্রসিদ্ধ নাম দ্বারা অনুমান করিয়া অযোনিজ দেহের অস্তিত্ব স্থিরীকৃত হইল।।১০।।

উপস্কারঃ

উপসংহরতি।

শরীরবিশেষা ইতি শেষঃ।।১০।।

.

বেদলিঙ্গাচ্চ।।১১।

অনুবাদ

বেদমূলক অনুমান দ্বারাও (সিদ্ধ হয়)।। ১১।।

ব্যাখ্যা

বেদ দুইভাগে বিভক্ত; মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ। এই দুই ভাগেই অযোনিজ দেহের কথা আছে। সেই বেদোক্তিমূলক অনুমান দ্বারাও অযোনিজ দেহ নির্ণীত হইল। বেদে আছে প্রজাপতি অনেক প্রজা সৃষ্টি করিলেন। তাহার পর তপস্যা করিয়া মুখ হইতে ব্ৰাহ্মণ, বাহু হইতে ক্ষত্রিয়, উরু হইতে বৈশ্য এবং পাদদেশ হইতে শূদ্র সৃষ্টি করিলেন। বেদের পুরুষসূক্তেও এই ভাবের মন্ত্র আছে। তবেই দেখ প্রথমোৎপন্ন ব্রাহ্মণাদির দেহ যোনিজ নহে, অযোনিজ। দেহ যোনিজই হউক আর অযোনিজই হউক—মানবেরই হউক আর দেবতারই হউক, তাহা দেহ—আত্মা নহে; হে শিষ্য! তাহার মোহে পড়িয়া মার্গভ্রষ্ট হইও না। ইহাই মহর্ষি কণাদের অভিপ্রায়। আমিও একবার নিমীলিত-নয়নে বলি, হে আত্মন্! দয়াময় মহর্ষি কণাদ-গৌতমের উপদেশে প্রকৃত পথে অগ্রসর হও; বৃথা কালক্ষেপ করিও না।। ১১।।

চতুর্থাধ্যায়ে দ্বিতীয় আহ্নিক সমাপ্ত।

উপস্কারঃ

উপসংহৃতেহতিদার্ঢ্যার্থং প্রমাণান্তরমাহ।

বেদো মন্ত্রঃ, স চ লিঙ্গ্যতে জ্ঞাপ্যতে ২ নেনেতি বেদলিঙ্গং ব্রাহ্মণম্, ততোহপ্যযোনিজ শরীরং প্রতিপদ্যতে ইত্যর্থঃ। তথাহি ব্রাহ্মণম্ “প্রজাপতিঃ প্রজা অনেকা অসৃজৎ স তপোহতপ্যত প্রজাঃ সৃজেয়মিতি, স মুখতো ব্রাহ্মণমসৃজৎ। বাহুভ্যাং রাজন্যমুরুভ্যাং বৈশ্যম্, পভ্যাং শূদ্রম্” ইতি। বেদোঽপি “ব্রাহ্মণোহস্য মুখমাসীৎ বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পভ্যাং শূদ্রেঽজায়ত” ইত্যাদিঃ, তদেবং যোনিজমযোনিজঞ্চ পার্থিবশরীরমুক্তম্। আপ্যং তৈজসং বায়বীয়ঞ্চাযোনিজমেব শুক্রশোণিতয়োর্নিয়মেন পার্থিবত্বাৎ পার্থিবেন চ পাথসীয়ানারম্ভাৎ। ইন্দ্রিয়ন্তু পার্থিব ঘ্রাণং সর্ব্বপ্রাণভূৎসাধারণং জলাদ্যনভিভূতৈঃ পার্থিবভাগৈরারব্ধং ঘ্রাণম্, ঘ্রাণ পার্থিব রসাদ্যব্যঞ্জকত্বে সতি গন্ধব্যঞ্জকত্বাৎ মৃগমদগন্ধব্যঞ্জককুক্কুটোচ্চারবৎ, এবং রসনমাপ্যং রূপাদ্যব্যঞ্জকত্বে সতি রসস্যৈব ব্যঞ্জকত্বাৎ সত্তুরসাভিব্যঞ্জকসলিলবৎ। এবঞ্চক্ষুস্তৈজসং রসাদ্যব্যঞ্জকত্বে সতি রূপস্যৈব ব্যঞ্জকত্বাদালোকবৎ, ত্বগিন্দ্রিয়ং বায়বীয়ং গন্ধাদ্যব্যঞ্জকত্বে সতি স্পর্শস্যৈব ব্যঞ্জকত্বাৎ অঙ্গসঙ্গিসলিলশৈত্যাভিব্যঞ্জকব্যজনবাতবৎ। বিষয়স্তু পার্থিবো মৃৎপাষাণস্থাবরলক্ষণঃ তত্র ভূপ্রদেশাঃ প্রাকারেষ্টকাদয়ো মৃদ্ধিকারাঃ, অদ্রিমণিহীরকগৈরিকাদয়ঃ পাষাণাঃ, স্থাবরাস্তূণৌষধি বৃক্ষগুল্মলতাবতানবনস্পতয়ঃ। আপ্যাস্ত বিষয়াঃ সরিৎসমুদ্রহিমকরকাদয়ঃ। তৈজসস্তু বিষয়ো ভৌমদিব্যোদর্য্যাকরজভেদাচ্চতুৰ্ব্বিধঃ। ভৌমং কাষ্ঠেন্ধনপ্রভবম্, দিব্যম্ অবিন্ধনং বিদ্যুদাদি উদর্য্যম্ অন্নাদিরসার্জনক্ষমং জাঠরম্, আকরজঞ্চ হিরণ্যাদি। বায়বীয়স্তু বিষয়ঃ উপলভ্যমানস্পর্শাশ্রয়ো বায়ু; বায়োশ্চতুর্থঃ কাৰ্য্যঃ প্রাণাখ্যঃ শরীরে রসমলধাতূনাং প্রেরণাদিহেতুৱেকঃ সন্ ক্রিয়াভেদাদপানাদিসংজ্ঞাং লভত ইতি।। ১৯।।

ইতি শ্রীশাঙ্করে বৈশেষিকসূত্রোপস্কারে চতুর্থাধ্যায়স্য দ্বিতীয়মাহ্নিকম্। সমাপ্তশ্চায়ং চতুর্থাধ্যায়ঃ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *