আট – ঘোরানো সিঁড়ি
সতীনাথ নেউগীর কথা মরদ কা বাৎ!
হাতি কা দাঁত বলতে পারব না, কেন না সব দাঁত আর নিজস্ব নয়।
আমি, ন্যালা আর ন্যালার মা গেট খুলে সকালে গৃহ প্রবেশ করলাম।
কোথায় যাব, তা দেখার কৌতূহলে বিনি, মাধবী, দুজনেই এসেছে সঙ্গে সঙ্গে। ওরা তিন ভাই না কি কেয়ারটেকারের খোঁজে অনুপমের বাড়ি গেছে। অনুপম স্বাধীনের সহপাঠী ছিল, বড় উকিল।
আমি বললাম, আমাকে ব’ল না।
আমাদের স্বাগত জানাতে বনমালীর বউ আর সিদ্ধিবালা এগিয়ে এল।
সিদ্ধিবালা বলল, নূতন কলসিতে জল রাখছি, উপরেও, নিচেও। পাকঘর যা বরোসরো হইছে দিদি! দুপারে ওহানেই ঘোম আসবা। নূতন হাঁড়িতে খিচুড়ি রানছি, পায়েস।
মাধবী বলল, খিচুড়ি আর পায়েস, কাকা?
—হ্যাঁ রে মা! নিউগী বংশের নিয়ম।
বনমালীর বউ বলল, আসেন দিদি! আসেন বউদি! কল পায়খানা দেখেন! সকল বেবাক মৌজুদ!
আমি বুঝলাম, ও মানসচক্ষে দেখছে, ন্যালার বউ হয়ে ওর মেয়ে এই ঘরে, রান্নাঘরে ঘুরছে। ন্যালার মা ঘরে ঢুকে বলল, নূতন চৈকি ক্যান? মেঝাতে শুইলেই গা ঢাইলা ঘোম আসত। তিন দিকে জানালা, তায় জাল। বাতাস কি বা।
বসল চৌকিতেই। তারপর বলল, বাচলাম গো ছোট কত্তা। অৎ বরো বারি ঝাট দিতে, মুছতে, আর য্যান পারতাম না।
বিনি সানুযোগে বলল, কাকা। সারপ্রাইজ দিলেন বটে।
—ঘোরানো সিঁড়ি দেখো?
—ওপরে আপনার ঘর?
—হ্যাঁ, ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাব, দরজা বন্ধ করব, ব্যস হয়ে গেল।
—একটু জমি তো রইল।
—ন্যালার মা লঙ্কা, কুমড়া, ডাঁটা লাগাবে।
—ন্যালা লাগাবে না?
—না। ন্যালা বিজনেস করবে।
—কিসের?
—এটাই তো আমার স্বপ্ন। ওকে তিন চাকার ভ্যান কিনে দেব। ও তাতে করে গ্রাম থেকে সবজি, ফল, চাল আনবে, বাজারে বেচবে। ওর কর্তা মা’র ব্যবস্থা।
মাধবী বলল, কাকা। রাখবে কোথায়?
—পাশে তো পাকা শেড তুলব।
—সব ভেবেছিলে?
—স—ব।
—তোমার পরে, কাকা?
—এখানেই জিতে গেছি মা। ন্যালার বিয়ে হবে। ও এই বাড়ি পাবে। ওরা থেকে যাবে কয়েক জেনারেশান। দিল্লির বা সুভাষের ফ্ল্যাট নয়, এখানে মানুষ থাকবে।
—চলুন ওপরে উঠি।
একটু দাঁড়ালাম। দু’খানা ছবি, আর দাদা বউদিকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকলাম। গুনে গুনে বাইশটা ধাপ। খুব শক্ত করে নিচটা বাঁধানো।
দাদা, বউদি আর আমি ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ঘরে উঠলাম। বড় ঘর, একটি তক্তাপোশ, একটা চেয়ার, একটা টেবিল, একটি ছোট কাঠের আলমারি। তিনটে জানলাই খোলা। আলমারির উপর ছবি দুটো রাখলাম। মাধবী আর বিনি চুপ।
আমি মনে মনে বললাম, দাদা! বউদি! নেউগীরা নয়, তবুও মানুষ থাকব। ঘোরাইন্যা সিঁড়ি অহনে কেও সরাইতে পারত না।
দাদা আর বউদি আমার সব কথা শুনতে পাচ্ছিলেন।
***