নয়
প্রথমবারের মতই যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এল প্রকাণ্ড গরিলাটা। নিজেকে নিতান্ত শিশু বলে মনে হলো রানার লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে।
‘খুব তো দেখছি তোমার বুকের পাটা!’ জ্যাক লেমনের গলার স্বরে নিখাদ বিস্ময়। ‘শুনেছিলাম ফোর্ট ফ্যারেল ছেড়ে তুমি ভেগেছ। দেখছি সত্যি নয়।’
‘ভেগেছি তা কে বলল তোমাকে?’ পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সেটা বাড়িয়ে দিল রানা।
মোবিল আর পেট্রলে ভেজা অ্যাপ্রনে হাত মুছল লেমন। অত্যন্ত যত্নের সাথে একটা সিগারেট তুলে নিল প্যাকেট থেকে। লাইটার জ্বেলে সেটায় আগুন ধরিয়ে দিল রানা। সাদা মেঘের মত ধোঁয়া ছাড়ল লোকটা রানার মাথার উপর। ‘কেন, বয়েড বাবাজীর চেলাচামুণ্ডারা তো তোমার খোঁজে শহর চষে ফেলেছিল, সে খবরও রাখো না?’
‘একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলাম,’ বলল রানা। ‘গতকাল ফিরেছি। তা কেন খুঁজছিল তারা আমাকে? জানো কিছু?’
‘বেশি কথা ওরা আমার সাথে বলে না,’ লেমন হঠাৎ গম্ভীর। ‘জানো, ফোর্ট ফ্যারেলে একমাত্র আমিই আছি, যে বুকটান করে চলাফেরা করে, কাউকে পরোয়া করে না। হ্যাঁ, জানি। জিজ্ঞেস করতে বলল, তোমাকে নাকি টার্গেট করে ওরা শুটিং প্র্যাকটিস করবে।’
‘তোমার কাছে আমি এসেছি একটা পুরানো গাড়ি কিনতে,’ শান্তভাবে বলল রানা। ‘আরও একটা কাজ তোমার ঘাড়ে চাপাতে চাই আমি, জ্যাক লেমন।’
‘কি সেটা?’ রানা লক্ষ করল, বেশ আগ্রহের সাথে প্রশ্নটা করল লেমন।
‘পরে বলব,’ বলল রানা, ‘আগে গাড়ির ব্যাপারটা সেরে নিই। ছোট একটা ট্রাকের দরকার আমার—ফোর হুইল ড্রাইভ।’
‘জীপ হলে চলবে না?’
‘আছে নাকি?’
আঙুল দিয়ে প্রায় নতুনের মত দেখতে একটা ল্যান্ডরোভার দেখাল লেমন, ‘ওটা চলবে? নতুনই বলতে পারো। দাম কিন্তু একটু বেশি পড়বে।’
‘চলো, আগে দেখে নিই ওর অবস্থা।’
ভাঙাচোরা গাড়িগুলোর পাশ দিয়ে গ্যারেজের ভিতর দিকে নিয়ে গেল রানাকে লেমন। মিনিট তিনেক ধরে ল্যান্ডরোভারটা পরীক্ষা করল রানা। ‘চলবে। কিন্তু তার আগে আমি একটু চালিয়ে দেখতে চাই। আধ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসব। আপত্তি নেই তো?’
‘নেই। চাবি ভিতরেই আছে।’
ল্যান্ডরোভার নিয়ে বেরিয়ে এল রানা গ্যারেজ থেকে। শহরের বাইরে লংফেলোর কেবিনে যাবার রাস্তাটা অসম্ভব খানাখন্দে ভরা। পিংপং বলের মত ড্রপ খেতে খেতে ছুটল গাড়িটা।
লংফেলোর কেবিনটা ছোট হলেও বেশ সুন্দর করে তৈরি করা। ঠিক তার পিছনেই একটা ঝর্ণা। স্বচ্ছ পানিতে ছোট বড় অনেক মাছও দেখল রানা।
ফিরে এসে গ্যারেজের সামনে থামল রানা। আওয়াজ পেয়ে সাত টন ওজনের একটা ট্রাকের নিচে থেকে বেরিয়ে এল লেমন। ‘কি মনে হলো?’
‘ভাল। কাজ চলবে। কত চাও, লেমন? কাগজপত্র সব ঠিক আছে তো?’
‘তা আছে,’ লেমন বলল। মাথা চুলকে কি যেন ভাবল সে। তারপর একটা দাম হাঁকল।
কোন তর্কের মধ্যে না গিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দাম মিটিয়ে দিল রানা। লেমনের দু’চোখে বিস্ময় ফুটে উঠেছে দেখেও না দেখার ভান করল।
‘ক্লিফোর্ড নামে একজন লোকের কথা মনে আছে তোমার?’ মৃদু কণ্ঠে জানতে চাইল রানা।
মাথা চুলকাতে শুরু করল জ্যাক লেমন। ‘ওহ্-হো, হ্যাঁ, মনে পড়েছে, তুমি মি. হাডসন ক্লিফোর্ডের কথা জানতে চাইছ, তাই না? ভুলেই গিয়েছিলাম তাঁকে। তাঁর কথা জানতে চাইছ কেন?’
‘দেখলাম, ফোর্ট ফ্যারেলের লোকেরা তাঁর নাম মনে রেখেছে কিনা,’ বলল রানা, ‘এই ফোর্ট ফ্যারেলেই বুঝি থাকতেন তিনি, না?’
সরল মুখে সন্দেহ আর ইতস্তত একটা ভাব ফুটল লেমনের। ‘কি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে যেন কথা বলছ তুমি? ফোর্ট ফ্যারেলে থাকতেন মানে? ক্লিফোর্ড স্বয়ং ফোর্ট ফ্যারেল ছিলেন।’
‘তাই নাকি? কিন্তু আমি তো দেখছি ফোর্ট ফ্যারেল বলতে পারকিনসনদেরই বোঝায়।’
অবাক হয়ে গেল রানা লেমনের প্রতিক্রিয়া দেখে। মাটিতে একটা পা ঠুকল সে, দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে কম্পনটা টের পেল রানা। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল লেমনের। ডান দিকে মুখ ঘুরিয়ে থোঃ করে একদলা থুথু ফেলল সে। ‘ওদের আমি ইয়ে করি! আর যেই তোষামোদ করুক, ওদের আমি এক পয়সা দাম দিই না।’
‘শুনেছি ক্লিফোর্ড মারা যান একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে। কথাটা কি ঠিক?’
‘হ্যাঁ। ছেলে এবং স্ত্রী সহ। এডমনটনে যাবার পথে। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার ছিল সেটা।’
‘কি ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি?’
দু’কোমরে হাত রাখল জ্যাক লেমন। উপর নিচে মাথা দোলাল ভুরু কুঁচকে। ‘ঠিক ধরেছি, এত কথা জানতে চাওয়ার পিছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে তোমার। তোমার নামটা কি যেন?’
‘মাসুদ রানা।’
‘বিদেশী নাম। ফোর্ট ফ্যারেলে কি কাজ?’
‘আমি একজন জিওলজিস্ট,’ বলল রানা। ‘কিন্তু এবার পুরোপুরি পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে আসিনি। আচ্ছা, লেমন, মি. হাডসন যে গাড়িটা নিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলেন সেটা কি তিনি তোমার কাছ থেকে কিনেছিলেন?’
হো-হো করে হেসে উঠল লেমন। হাসি থামতে বাঁ হাত তুলল মাথার উপর। মাথার পিছনের চুল শির শির করে উঠল রানার। নিজের অজান্তেই শক্ত হয়ে গেল কাঁধের পেশীগুলো। প্রচণ্ড একটা নাড়া খেল রানা কাঁধে লেমনের চাপড় খেয়ে। ‘পাগল হয়েছ তুমি, অ্যাঁ? মি. ক্লিফোর্ড কিনবেন গাড়ি আমার কাছ থেকে? আরে না-না তাঁর নিজেরই একটা শো-রূম ছিল—ফোর্ট ফ্যারেল মোটরস। পারকিনসনরা ওটাকে এখন পারকিনসন অটোমোবাইল করেছে।’
‘তোমাকে তাহলে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে?’
‘ওরা তো নির্লজ্জ—আমার খদ্দেরদের ভাগিয়ে নিয়ে যাবার ফন্দি করছে সারাক্ষণ।’ সগর্বে হাসল লেমন। ‘কিন্তু আমার ব্যবসা ওদের চেয়ে কোন অংশে খারাপ হয় না।’
হঠাৎ গম্ভীর হলো রানা। ‘কাজের কথাটা এবার বলি তোমাকে, লেমন। কাজটা আর কিছুই না, বয়েডের চেলা চামুণ্ডাদের কানে একটা খবর পৌঁছে দেবে শুধু তুমি।’
‘তা পারব,’ সাগ্রহে বলল লেমন, ‘কথাটা?’
‘টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্যে স্মল আর্মস বা রাইফেল যেন ব্যবহার করতে না যায় ওরা। আমার তরফ থেকে ওদের জন্যে একটা উপদেশ—আমাকে যদি একচুল নাড়াতে চায়, কামান দাগতে হবে।’
‘আর মাটিতে শুইয়ে দিতে চাইলে?’
‘চাইলেও তা ওরা পারবে না,’ বলল রানা। ‘কিন্তু যদি আপস করতে চায়, প্রস্তাব পাঠাতে পারে।’
‘প্রস্তাবটা কি রকম হলে তুমি গ্রহণ করবে?’ সকৌতুকে জানতে চাইল লেমন।
‘আমার একটাই শর্ত: কবর থেকে কঙ্কাল তিনটে তুলে তাতে রক্ত মাংস এইসব বসিয়ে সেগুলোর ধড়ে জান ফিরিয়ে দিতে হবে। তা যদি পারে, কোন আপত্তি নেই আমার আপস করতে।’ ল্যান্ডরোভারের দিকে ফিরল রানা। এগোতে শুরু করল সেদিকে।
পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠল লেমন, ‘কবর! কঙ্কাল! মি. রানা, তুমি কি…’
ল্যান্ডরোভারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল রানা। ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, ক্লিফোর্ডদের কথা বলতে চাইছি আমি। ওদেরকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এর একটা মাত্র বিকল্প আছে, সেটা ওদেরকে কল্পনা করে নিতে বোলো।’
প্রকাণ্ড শরীরটা পাথর হয়ে গেছে লেমনের। গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল রানা, তারপর ছেড়ে দিল সেটা। লেমনের চোখের সামনে দিয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ল্যান্ডরোভার।
ফরেস্ট অফিসারদের বাংলোর দিকে তীর বেগে ছুটছে ল্যান্ডরোভার। অন্তত একজনের মনে ক্লিফোর্ডদের স্মৃতি এবং কিছু বিস্ময়কর প্রশ্ন জাগিয়ে দেয়া গেছে। ভাবছে রানা। জ্যাক লেমন খুব চাপা স্বভাবের লোক তা মনে হয় না। আশা করা যায়, দুপুরের আগেই এ-কান সে-কান হতে হতে জায়গা মত পৌঁছে যাবে খবরটা।
ফরেস্ট অফিসারের বাংলোর সামনে গাড়ি থামিয়ে নামল রানা। অফিসেই পাওয়া গেল অফিসার ডোনাল্ডকে। পরিচয় আদান-প্রদানের সময় রানার মনে হলো লোকটা পক্ষপাতদুষ্ট কিনা তা সঠিক বোঝা না গেলেও কথাবার্তায় অনেকটা যান্ত্রিক। সরাসরি প্রসঙ্গটা তুলল রানা। বলল, গাছ কাটার একটা লাইসেন্স পেতে চায় সে, সে-ব্যাপারেই আলাপ করতে এসেছে।
‘কোন আশা নেই আপনার, মি. রানা,’ বলার ভঙ্গি দেখে রানার মনে হলো ঠিক এই কথাগুলো আরও অনেককে এই ভঙ্গিতেই বলেছে ডোনাল্ড, ‘আশপাশে যত ক্রাউন ল্যান্ড দেখছেন তার প্রায় সবটা পারকিনসনরা নিজেদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে রেখেছে। দুটো কি একটা পকেট বাকি থাকলেও তা এত ছোট যে এক ট্রাক গাছও কাটতে পারবেন না।’
হাত দিয়ে চোয়াল ঘষতে ঘষতে বলল রানা, ‘ম্যাপটা কি একটু দেখতে পারি?’
বড় সাইজের একটা ম্যাপ বের করে ডেস্কের উপর বিছিয়ে দিল ডোনাল্ড। বিশাল একটা এলাকার উপর আঙুল বুলিয়ে দেখাল সে রানাকে। ‘এর সবটাই পারকিনসন ল্যান্ড, মি. রানা, তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। এবং এ দিকের এখান থেকে,’ ম্যাপের গায়ে আঙুল রাখল সে, তারপর সেটা ম্যাপের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘শুরু হলো ক্রাউন ল্যান্ড, শেষ হচ্ছে এই এখানে এসে। ক্রাউন ল্যান্ড, কিন্তু দখলে রয়েছে পারকিনসনদের।’
খুঁটিয়ে দেখে নিল রানা ম্যাপটা। তারপর বলল, ‘কোন আশা সত্যিই দেখছি নেই। ঠিক আছে, কি আর করা। আচ্ছা, কথা প্রসঙ্গে বলছি, শুনলাম পারকিনসনরা নাকি বরাদ্দ সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি গাছ কেটে নিচ্ছে, কথাটা কি সত্যি?’
রানার দিকে মুখ তুলল ডোনাল্ড। ভুরু কুঁচকে উঠছিল, কিন্তু সামলে নিল দ্রুত। কণ্ঠস্বরটা মৃদু কঠিন শোনাল রানার কানে, ‘আমি জানি না।’
ম্যাপটা আরও খানিকক্ষণ দেখল রানা। তারপর বলল, ‘ধন্যবাদ, মি. ডোনাল্ড। আগামী বছর নিলামের সময় ছাড়া…’
‘বৃথা আশা করছেন আপনি,’ মাঝ পথে রানাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ডোনাল্ড। ‘পারকিনসনরা দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত নিয়ে থাকে। ওদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও তিন বছর বাকি।’
‘কিন্তু আমি তো আর তিন মাসের বেশি অপেক্ষা করতে পারব না!’ দৃঢ় ভঙ্গিতে বলল রানা কথাটা। উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে।
বুঝতে পারেনি কথাটা ডোনাল্ড। ‘আপনি, মি. রানা…কি বলছেন?’
‘মি. ডোনাল্ড, আপনি ওদের শুভানুধ্যায়ী কিনা জানি না, কিন্তু যদি হন, ওদের কানে কথাটা তুললে ওদের উপকারই করবেন। বলবেন, ক্রাউন ল্যান্ডে গাছ কাটার লাইসেন্স আমার চাই-ই চাই। ওরা আমাকে অর্ধেক বনভূমি ছেড়ে দিতে পারে স্বেচ্ছায়। তা নাহলে, একমাত্র বিকল্প হতে যাচ্ছে, তিন মাসের মধ্যে গাছ কাটার সমস্ত লাইসেন্স বাতিল।’
‘মি. রানা। এসব কি…’
পিছন ফিরে না তাকিয়ে বেরিয়ে এল রানা। ল্যান্ডরোভারে চড়ে স্টার্ট দেবার সময় দেখল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে ডোনাল্ড। গম্ভীর ভাবে একটা হাত তুলে নাড়ল রানা তার উদ্দেশে।
বাস স্টেশনে পৌঁছে রিস্টওয়াচ দেখল রানা। এগারোটা বেজে পাঁচ। সিগারেট ধরিয়ে স্টেশনের কার্গো ডিপোতে ঢুকল ও। ডিপো সুপারিনটেন্ডেন্ট ফিক করে হাসল রানাকে দেখে। ‘আপনার কথাই ভাবছিলাম, স্যার। একমাত্র আপনার ব্যাগগুলোই রয়ে গেছে ডিপোতে। তা, ফোর্ট ফ্যারেলে থাকছেন তো কিছুদিন?’
প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেল রানা। বলল, ‘তাড়াতাড়ি তুলে দাও ওগুলো গাড়িতে।’
উত্তর না পেয়ে মুখটা একটু গম্ভীর হলো সুপারিনটেন্ডেন্টের। নিঃশব্দে ব্যাগগুলো তুলে দিল সে ল্যান্ডরোভারে।
ছোকরার কাঁধে একটা হাত রাখল রানা। ‘তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলছি; ইচ্ছে করলে তুমি আমাকে ক্লিফোর্ডদের শেষ এবং একমাত্র ভরসা বলে মনে করতে পারো।’
খানিক আগে রাগ যদি হয়েও থাকে রানার উপর, মুহূর্তে তা মুছে গেছে লোকটার মন থেকে। একটা চোখ টিপল সে রানার দিকে তাকিয়ে। ‘সত্যি, শীলা ক্লিফোর্ড একটা মেয়ের মত মেয়ে বটে। কিন্তু! মিস্টার, বয়েডের ব্যাপারে একটু সাবধান থাকবেন…’
‘ভুল করছ। আমি তার কথা বলছি না। আমি হাডসন ক্লিফোর্ডের কথা বলছি,’ বলল রানা, ‘আর বয়েডের ব্যাপারে আমাকে সাবধান করে দেবার কোন দরকার নেই। পারলে ওকেই তুমি সাবধান করে দিতে চেষ্টা কোরো। কেন না, পারকিনসনদের দুর্বলতাটা কোথায় তা আমি জানি। ফোনটা কোথায় তোমাদের?’
হাত তুলে হলঘরটা দেখাল সুপারিনটেন্ডেন্ট, বিস্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি যেন তার। তাকে পাশ কাটিয়ে এগোল রানা। হলঘরে ঢুকেছে মাত্র, পিছনে পদশব্দ শুনতে পেল ও। ‘মি. রানা। হাডসন ক্লিফোর্ড যে মারা গেছে—আজ প্রায় আট বছর…’
থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকাল রানা। ‘জানি। সেজন্যেই কথাটা বলেছি। অর্থটা বুঝতে পারোনি? এবার কেটে পড়ো এখান থেকে। ফোনে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলতে চাই আমি।’
খানিক ইতস্তত করল ছোকরা, তারপর বিড় বিড় করে কি যেন বলল। ঘুরে দাঁড়িয়ে চলে গেল রানার দৃষ্টির আড়ালে।
ফোনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল রানা। মুচকি হাসল একটু ডায়াল করার সময়। আর একটা বিষমাখানো তীর ছুঁড়েছে ও। ছুটছে সেটা পারকিনসনদের মানসিক শান্তির দিকে।
উইকলি ফোর্ট ফ্যারেলের অফিস থেকে লংফেলো জানতে চাইল, ‘কোত্থেকে বলছ তুমি, রানা?’
‘দাদুর ভূমিকায় অভিনয়টা পরে করলেও চলবে,’ বলল রানা, ‘আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে। ভাল কোন আইনজ্ঞের সঙ্গে পরিচয় আছে তোমার?’
‘তা আছে।’
‘আমি এমন একজন আইনবিদ চাই যে পারকিনসনদের বিরুদ্ধে লড়তে ভয় পাবে না। ওদের কিছু দুর্বলতার কথা জানা আছে আমার, তাকে শুধু আমি যা জানি সেটাকে নিয়ম অনুযায়ী সাজিয়ে দিতে হবে।’
‘বুড়ো পিরহান ডি পিরহান এই কাজের জন্যে একমাত্র উপযুক্ত লোক। কিন্তু, তোমার মতলবটা কি, রানা?’
‘উদ্দেশ্য মহৎ। মাটি খুঁড়তে যাচ্ছি আমি।’
‘মানে? কোথায় মাটি খুঁড়বে? কেনই বা?’
‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে সে-কথা বোলো না, মিস্টার লংফেলো,’ বলল রানা। ‘আমি সাপ বের করার জন্যেই খুঁড়তে যাচ্ছি।’
‘হেঁয়ালি বন্ধ করবে দয়া করে?’
‘তবে শোনো। পারকিনসনদের মাটিতে গর্ত করতে চাইছি আমি।’
‘কিন্তু কেন?’ দ্রুত প্রশ্ন করল লংফেলো।
‘বললাম না, উদ্দেশ্য মহৎ? খনিজ পদার্থ খুঁজব।’
‘কিন্তু…’
‘পারকিনসনরা সেটা পছন্দ করবে না, এই তো? ওরা অপছন্দ করুক, বাধা দিতে আসুক, সেটাই তো আমি চাইছি, বুঝতে পারোনি?’