তেইশ
কখন উঠে দাঁড়িয়েছে পুসি, লক্ষ করেনি রানা। হঠাৎ সে ছুটতে শুরু করতেই গাফ অসম্ভব জোরে চিৎকার করে উঠলেন। ‘পুসি!’
দাঁড়িয়ে পড়ল পুসি পর্দার কাছে। পা দুটো কাঁপছে, দেখল রানা।
‘গুলি করতে দ্বিধা করবে না তুমি,’ রানাকে উদ্দেশ্য করে বললেন গাফ, ‘যদি এখান থেকে পালাবার চেষ্টা করে। শুনলে, পুসি? ঠিক এই কাজটাই নিজের হাতে করা উচিত ছিল আমার আট বছর আগে।’
রানা বলল, ‘ওকে আমি আপনার লাইব্রেরীরূমে পেয়েছি, আপনার ড্রয়ার থেকে কাগজপত্র বের করে মেঝের ওপর ফেলছিল।’ হাতের লাল ফাইলটা দেখাল রানা। ‘এটা ছিল ওর হাতে।’
‘তোমার হাতে ওটা আমি আগেই দেখেছি, রানা,’ গাফ চোখ বুজে বললেন। ‘ওটার ভিতর যে কাগজপত্র আছে সেগুলো কোর্টে দেখিয়ে হাডসন ক্লিফোর্ডের যা কিছু ছিল সব কেড়ে নিতে পারবে শীলা ক্লিফোর্ড। ফাইলটা অনেক খুঁজেছি আমি, রানা। পাইনি। এখন বুঝতে পারছি, ওটা আমারই লাইব্রেরীতে লুকিয়ে রেখেছিল ওরা। ওই লাইব্রেরীটাতেই কখনও খোঁজ করিনি। করব না তা ওরা জানত বলেই রেখেছিল ওখানে।’
‘কি আছে ওটায়?’
‘হাডসন ক্লিফোর্ডের যাবতীয় দলিলপত্র। উইলটাও আছে ওতে।’
‘তার মানে, যে দলিল দেখিয়ে পারকিনসনরা ক্লিফোর্ডদের সব কিছু গ্রাস করেছিল সেটা জাল ছিল?’
‘না,’ বললেন গাফ। ‘ওটা ছিল পুরানো, প্রথম দলিল। আমরা, আমি আর হাডসন তখন যুবক, বিয়ে করিনি কেউ—ব্যবসা শুরু করেই একটা দলিল করেছিলাম। তাতে আমরা শর্ত রাখি দু’জনের মধ্যে কেউ যদি মারা যাই তাহলে অপরজন সবকিছুর মালিক হবে। বিয়ের পর এই দলিল বাতিল করা হয়। কিন্তু পুরানো দলিলটা থেকেই যায় আমার কাছে। ওটার সাহায্যেই বয়েড সব দখল করার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলে।’
‘পরের অর্থাৎ শেষ দলিল এবং উইলে কি ছিল?’
‘হাডসন শীলা ক্লিফোর্ডকে তার ধর্ম-কন্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল উইলটায়, এবং শর্ত রেখেছিল টমাস ও শীলা সমান বখরা পাবে। দু’জনের যে-কোন একজনের অনুপস্থিতিতে অপরজন হবে সমস্ত সম্পত্তির মালিক।’ নার্সের দিকে তাকালেন গাফ। ‘টেলিফোনটা বিছানায় নিয়ে এসে দাও আমাকে তাড়াতাড়ি।’
পর্দা সরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল নার্স। টেলিফোন নিয়ে ফিরল তখুনি।
‘কাগজ কলম আছে তোমার কাছে?’ জানতে চাইল রানা।
রানার চোখে চোখ রাখল নার্স। ‘আছে।’
‘এখানে যা কিছু বলা হয় সব নোট করো তুমি,’ বলল রানা। ‘কোর্টে দাঁড়িয়ে সব হয়তো বলতে হতে পারে তোমাকে।’
ডায়াল করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন গাফ। হাত কাঁপছে তাঁর। রানার দিকে তাকালেন। ‘দেখো তো সার্জেন্ট হ্যামিলটনকে পুলিস স্টেশনে পাওয়া যায় কিনা?’ নাম্বারটা জানালেন তিনি রানাকে। ডায়াল করল রানা। রিঙ হতে শুরু করল অপরপ্রান্তে, রিসিভার ধরিয়ে দিল ও গাফের হাতে।
‘হ্যামিলটন? আমি পারকিনসন বলছি…আমার শরীরের খবর জানার কোন দরকার নেই। কি বলছি, শোনো। এখুনি চলে এসো আমার বাড়িতে…একটা খুন হয়েছে,’ বালিশের উপর পড়ে গেল গাফের মাথা, হাত থেকে খসে পড়ল রিসিভার। রিসিভারটা ধরে ফেলে ক্রেডলে রেখে দিল রানা।
শটগানটা পুসির পেটের দিকে তাক করে ধরে আছে রানা। বিছানার অপরপ্রান্তে, নার্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। দু’পাশে মরা সাপের মত ঝুলছে তার হাত দুটো। মুখের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ডান দিকের কপালে একটা শিরা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে তার। ইতিমধ্যে অত্যন্ত নিচু গলায় কথা বলতে শুরু করেছেন গাফ পারকিনসন। দ্রুত নোট করছে নার্স তাঁর কথাগুলো।
‘বয়েড দেখতে পারত না টমাসকে,’ নরম, নিস্তেজ গলায় বলে চলেছেন গাফ। ‘টমাস ছিল অত্যন্ত ভদ্র আর অসম্ভব মেধাবী ছেলে। বুদ্ধি, শক্তি, জনপ্রিয়তা সবই ছিল তার—বয়েডের যা ছিল না। কলেজের পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে পাস করত টমাস, বয়েড ফেল মারত। টাকা আর প্রভাবের জোরে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় বয়েড। টমাসের বান্ধবীর সংখ্যা ছিল অগণিত, কিন্তু বয়েড গায়ের জোরে মেয়েদের সাথে প্রেম করতে গিয়ে কেলেঙ্কারি ঘটাত। টমাসকে দেখে মনে হত হাডসনের উপযুক্ত উত্তরাধিকারী হতে পারবে সে, ব্যবসা দেখাশোনার ব্যাপারে বাপকেও ছাড়িয়ে যাবে। বয়েড জানত, আমাদের যৌথ ব্যবসার মাথা হিসেবে টমাসই একদিন স্বীকৃতি পাবে, নিজের কোন সুযোগই থাকবে না। হাডসন উপস্থিত থাকলেও ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে জটিল কোন সমস্যায় পড়লে আমি টমাসকে ডেকে পাঠাতাম, তার কাছ থেকেও পরামর্শ চাইতাম। এসব দেখে খেপে গিয়েছিল বয়েড, কিন্তু তাকে আরও খেপিয়ে তুলল এই পুসি—কারণ, তার অবৈধ প্রেম-প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল টমাস। অপমানিত হয়েছিল সে টমাসের কাছে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে।’
দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছেন গাফ। রীতিমত হাঁপাচ্ছেন তিনি। ‘…এই সব কারণে ওরা দু’জন টমাসকে খুন করার ষড়যন্ত্র করে। ষড়যন্ত্রটা শুধু টমাসকে খুন করার জন্যে ছিল না। ওরা ঠিক করে গোটা ক্লিফোর্ড পরিবারকেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে দুনিয়ার বুক থেকে। একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটাবার ব্যবস্থা হয়। আমার বুইকটা ধার করে নিয়ে যায় বয়েড। এডমনটন রোডে অনুসরণ করে ওরা ক্লিফোর্ডদের। পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ক্লিফোর্ডদের গাড়িটাকে পাহাড়ী রাস্তা থেকে নিচের গভীর খাদে ফেলে দেয়া হয় খুন করার জন্যে, ঠাণ্ডা মাথায়। হাডসন অ্যাক্সিডেন্টের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোনরকম সন্দেহ করেনি বলে আমার ধারণা। কেননা আমার গাড়িটাকে চিনত সে, চিনত গাড়ির আরোহীদের।’
‘কে চালাচ্ছিল গাড়িটা?’
‘তা আমি জানতে পারিনি। কখনোই কথাটা প্রকাশ করেনি বয়েড বা পুসি। বুইকের সামনেটা তুবড়ে গিয়েছিল, সেটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি ওরা। ওটা দেখেই দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিই আমি। বয়েডকে চেপে ধরতে সে বাধ্য হয়ে সব কথা স্বীকার করে আমার কাছে। ভিজে কাগজের ঠোঙার মত কুঁকড়ে গিয়েছিল সে।’
দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থাকলেন গাফ, তারপর বললেন, ‘কি করার ছিল আমার! বয়েড আমার সন্তান।’ একটা মিনতির সুর ফুটে উঠল বৃদ্ধের কণ্ঠস্বরে। ‘আমার সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করো, রানা। নিজের ছেলেকে খুনী হিসেবে পুলিসের হাতে কিভাবে তুলে দিই আমি? তারপর বয়েডের চেয়ে তখন বেশি চিন্তিত হলাম টমাসের জন্যে। ওর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু কিভাবে?…এডমনটন রোডে গিয়ে দেখলাম সবাই মারা গেছে, একজন অপরিচিত যুবকও রয়েছে তাদের মধ্যে—শুধু টমাস ছাড়া। টমাস বেঁচে ছিল, কিন্তু বেঁচে যাবে বলে মনে হচ্ছিল না। ভাবলাম, যদি বা বাঁচে, শেষ পর্যন্ত এদের হাত থেকে ওকে বাঁচাতে পারব না। যদি জানতে পারে টমাস বেঁচে আছে তাহলে আবার চেষ্টা করবে এরা খুন করতে। এবং দ্বিতীয়বার হয়তো ব্যর্থ হবে না। এখানেই ভুলটা হয়েছিল আমার। আমার উচিত ছিল টমাস বেঁচে আছে এই সত্য প্রকাশ করে দিয়ে বয়েডকে সামলানো। টমাসকে নিজের কাছে রেখে পাহারা দিতে পারতাম। বোধ হয় তারও দরকার হত না। সুস্থ হয়ে উঠলে টমাস নিজের বুদ্ধির জোরেই নিজেকে রক্ষা করতে পারত—বয়েড তার আর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করত না ভয়ে। কিন্তু এসব কথা তখন মাথায় আসেনি। মাথায় অন্য একটা বুদ্ধি এসে গেল। দেখলাম, টমাসকে অজ্ঞাত পরিচয় যুবক, ওরফে কেনেথ হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। তা চালিয়ে দিলে দু’দিক থেকে লাভ হবে। টমাসও বাঁচে, বয়েডও বাঁচে। সকল সমস্যার সমাধান হয়।’
নিঃস্ব, অবসন্ন দেখাচ্ছে গাফকে। মিনিট তিনেক কথা বলতে পারলেন না তিনি। তারপর আবার বললেন, ‘বয়েডকে বাঁচাবার জন্যে, ওর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে ফোর্ট ফ্যারেল থেকে ক্লিফোর্ডদের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করি আমি। সম্পদ দিয়ে ওর চারধারে নিরাপত্তার পাঁচিল তুলতে চেষ্টা করি।’
মৃদু স্বরে জানতে চাইল রানা, ‘আপনি কি টমাসকে টাকা পাঠাতেন, মি. গাফ?’
‘হ্যাঁ,’ গাফ বললেন। ‘টাকা পাঠানো ছাড়া আর কি করতে পারতাম আমি টমাসের জন্যে, বলো? তার অধিকার তাকে যদি ফিরিয়ে দিতে চাইতাম, কি ঘটত ভেবে দেখো। বয়েডকে তুলে দিতে হত পুলিসের হাতে। বয়েডের ভাগ্য ভাল ছিল, টমাস তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলে। সে যদি স্মৃতি না হারাত, আমার সমাধানটা টিকত না, ভেঙে পড়ত কিছুদিন পরই। টমাস ফোর্ট ফ্যারেলে এসেই নতুন করে বিষয়টাকে জ্যান্ত করে ফেলেছিল। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে থেকে টমাসের কোন খবর আমি পাইনি। খবর পাবার জন্যে একটা প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম আমি। তারা কোন খোঁজ দিতে পারেনি। টমাস ফোর্ট ফ্যারেলে আসবে এ ভয় আমার ছিল। কিন্তু সাবধান হবার সুযোগই আমি পাইনি। সে এসেছিল তাও আমি জানতাম না। বয়েড তাকে টমাস বলে চিনতে পারেনি, চিনেছিল কেনেথ বলেই। সে জানত টমাস নয়, বেঁচে আছে কেনেথ, এবং কেনেথের স্মরণশক্তি হারিয়ে গেছে। কিন্তু যদি সে সব কথা স্মরণ করতে পারে? তাহলে কি হবে? বয়েড জানত, তাহলে মরতে হবে তাকে। তাই সে খুন করে কেনেথ ওরফে টমাসকে।’ নার্সের দিকে তাকালেন তিনি। মৃতপ্রায় দেখাচ্ছে তাকে। ‘সব লিখে নিয়েছ?’
নার্সের দু’চোখে টলমল করছে পানি। মাথা ঝাঁকাল সে, ‘জ্বী।’
রানার দিকে তাকালেন গাফ। ‘আট বছর আগেই বয়েডকে খুন করা উচিত ছিল আমার, রানা। পাঁচটা খুন করেছে সে এইটুকু বয়সে, আরও করবে। আমি অনুমতি দিচ্ছি, তাকে তুমি থামাও—যেভাবে পারো।’
‘বয়েডের ব্যাপারটা নিয়ে হ্যামিলটন মাথা ঘামাবে, তার ওপরই ব্যাপারটা ছেড়ে দিন,’ কলিং বেলের ক্ষীণ আওয়াজ ঢুকল রানার কানে। ‘ওই এসেছে সে।’ নার্সের দিকে তাকাল রানা। ‘যাও, সার্জেন্টকে নিয়ে এসো।’
নার্স বেডরুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পুসির দিকে শটগান নাড়ল রানা। ‘এবার চলো, পুসি,—কোথায় ওরা? শীলা আর লংফেলোকে কোথায় রেখেছ?’
খুন করেছে বয়েড ওদের, শিউরে উঠে ভাবল রানা প্রশ্নটা করেই।
‘গুড খ্রীষ্ট! আরও খুন নাকি?’ গাফ আঁৎকে উঠলেন।
গাফের দিকে খেয়াল দিল না রানা। ছুরিটা বের করল। ‘পুসি, কোথায় ওরা? যদি না বলো হ্যামিলটন পৌঁছবার আগেই চিরে ফালা ফালা করে দেব তোমার মুখটা।’
বৃদ্ধ একটা কথাও বললেন না। শুধু গভীর একটা শ্বাস নিলেন। রানাকে পুসির দিকে এগোতে দেখে চোখ বুজলেন।
‘ঠিক আছে, বলছি! আন্ডারগ্রাউন্ড গোডাউনে বেঁধে রেখেছি বেশ্যা মাগীটাকে। তার সাথে বুড়ো দালালটাও আছে। এদের দু’জনকেও গলা টিপে মারতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বয়েড, হদ্দ বোকাটা তা করতে দেয়নি আমাকে।’
সার্জেন্ট হ্যামিলটন শুনল কথাটা। পুঁসির ঠিক পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে সে। তার পিছনে দু’জন সশস্ত্র কনস্টেবল।
‘নার্সের মুখে শুনেছ সব?’ জানতে চাইল রানা।
দীর্ঘ ছয় ফুট শরীরটা নিয়ে পুসির পাশ ঘেঁষে এগিয়ে এল হ্যামিলটন। রানার সামনে দাঁড়াল। তারপর তাকাল গাফের দিকে। ‘শুনেছি, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না।’
‘তোমার বিশ্বাস অবিশ্বাসে কিছু এসে যায় না,’ বৃদ্ধ বললেন বিছানা থেকে। ‘নার্স যা নোট করেছে সব সত্যি। কাগজটা দাও আমাকে, আমি সই করে দিচ্ছি,’ হাত পাতলেন তিনি।
গাফের সই করা পর্যন্ত অপেক্ষা করল রানা। তারপর সার্জেন্টকে বলল, ‘পুসির বিরুদ্ধে তুমি কি অভিযোগ আনবে বুঝতে পারছ তো? ও এখন তোমার দায়িত্বে। আত্মহত্যা যদি ঠেকাতে চাও, এক্ষুণি ওর হাতে হাতকড়া লাগাও।’
পরিস্থিতি বুঝতে খুব বেশি সময় নিল না হ্যামিলটন। দ্রুত হাতকড়া লাগাল সে পুসির হাতে।
‘নার্সের কাছ থেকে বাকিটা জেনে নাও,’ বলল রানা। ‘আমি শীলা আর লংফেলোর কাছে যাচ্ছি।’
***
‘ছয়জনের মত খাবার, কফি ভর্তি বড় একটা কেটলি আর তিন গ্যালন পানির ব্যবস্থা করো, ডিকসন।’ বলল শীলা। ‘জলদি!’
‘পানি, মিস ক্লিফোর্ড?’
‘হ্যাঁ-হ্যাঁ, পানি। আর ছয়জনের মত খাবার।’
‘কিন্তু আপনারা মানুষ তিনজন…’
হেসে উঠল শীলা। হাসতে হাসতেই ডিকসনের কৌতুকের ছাপ-মাখা মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ঘুরল, এগিয়ে এসে দাঁড়াল রানার সামনে, প্রায় বুকে বুক ঠেকিয়ে। দু’হাত তুলে জড়িয়ে ধরল রানার গলা। টানছে নিজের দিকে।
খড়মড় করে আওয়াজ হলো ওয়্যারলেস সেটে। রিস্টওয়াচ দেখল রানা। হেলিকপ্টারে করে পারকিনসনদের বাড়ি থেকে ফেরার পর তিন ঘণ্টা পেরিয়েছে মাত্র। একটা ওয়্যারলেস সেট চেয়ে নিয়েছে সে হ্যামিলটনের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্যে। কথা আছে, যখন যা হয় জানাবে হ্যামিলটন ওকে। হাত বাড়িয়ে রিসিভারটা তুলে নিল সে।
‘রানা।’
‘হ্যামিলটন। মি. রানা, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ম্যাপে আপনার দেখানো জায়গার কাছাকাছিই বয়েডকে ধরতে পেরেছি আমরা, তবে…’
‘তবে?’
‘একজন লোককে হারাতে হয়েছে আমাদের। বয়েড তার খুলি উড়িয়ে দিয়েছে।’
‘দুঃখিত।’
‘আপনার জবানবন্দী দরকার হবে। কখন আসব?’
‘এই, বিকেল চারটে নাগাদ?’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’ কথা না বাড়িয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল হ্যামিলটন।
রিসিভার নামিয়ে রাখল রানা।
চোখে চোখে চেয়ে রইল দু’জন কয়েক সেকেন্ড। নিজের অজান্তেই এগিয়ে গেল পরস্পরের দিকে। চুম্বকের মত টানছে দু’জন দু’জনকে। রানার বুকে মাথা রাখল শীলা। গাল ঘষল। রানার দু’হাত জড়িয়ে ধরল শীলার ক্ষীণ কটি। ধীরে ধীরে মুখ তুলল শীলা। ঠোঁটে বিচিত্র এক টুকরো নরম হাসি।
এক পা দু’পা করে বিছানার কাছে চলে এসেছে দু’জন। এমন সময় দরজায় ঘা পড়তে শুরু করল ঘন ঘন।
‘কই হে, দরজা বন্ধ কেন? কি করছ তোমরা?’
‘দুর ছাই! বুড়ো লংফেলো! জ্বালিয়ে মারল দেখছি!’ বলেই হেসে উঠল শীলা। আছড়ে পড়ল রানার বুকে! ‘খুলছি না। ভাঙুক দরজা, ভেঙে দেখুক কি করছি!’
* * *