গ্রাস – ২

দুই

২৫ অক্টোবর।

ব্রিটিশ কলম্বিয়া। ফোর্ট ফ্যারেল।

ধূলি ধূসরিত চেহারা নিয়ে বাস থেকে নামল রানা। ও একাই। আর কেউ নামল না। বাসের এটা শেষ স্টেশন। উঠলও না কেউ। বাঁক নিয়ে পীস রিভার এবং ফোর্ট সেন্ট জনের দিকে, অর্থাৎ সভ্যতার দিকে ফিরে যাচ্ছে বাস। ফোর্ট ফ্যারেলের জনসংখ্যা একজন বাড়ল। সাময়িকভাবে।

স্টেশনের কার্গো ডিপোর দিকে এগোল রানা। ভিতরে ঢুকে দেখল কাউন্টারে বসে ঝিমুচ্ছে মাথা কামানো এক লোক। আঙুল দিয়ে ঠক ঠক করে আওয়াজ করল রানা কাউন্টারে। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে টুল থেকে পড়ে যাবার উপক্রম করল লোকটা। ভনভন করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল মাথার ঘা থেকে মাছিগুলো।

‘আমার ব্যাগ,’ বলল রানা।

মুখে হাত চাপা দিয়ে বড় আকারের একটা হাই তুলল লোকটা। ‘নতুন মনে হচ্ছে? বেড়াতে এসেছেন বুঝি?’

‘নতুন কি পুরানো তা জেনে তোমার কি দরকার?’ তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছে রানা, বিলি করতে নয়। ‘পারকিনসন বিল্ডিংটা কোন্‌দিকে বলতে পারো?’

‘কিং স্ট্রীটে,’ কণ্ঠস্বরে তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটিয়ে বলল লোকটা।

স্কেল বসিয়ে আঁকা একটা সরলরেখার মত পড়ে আছে রাস্তাটা। দীর্ঘ পদক্ষেপে এগোল রানা। শহরটা সম্পর্কে বাইরে থেকে যতটুকু সম্ভব জেনে নিয়েই ঢু মারতে এসেছে সে। রাস্তা ধরে এগোবার ফাঁকে মানচিত্রে দেখা শহরটাকে মিলিয়ে নিচ্ছে শুধু।

রাস্তায় লোকজন খুব কম। মাত্র কয়েক হাজার লোকের বাস ফোর্ট ফ্যারেলে। রাস্তার দু‘ধারে মাঝারি আকারের চার পাঁচ তলা বিল্ডিংগুলোর গায়ে অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লটকে আছে। দুটো গ্যাস স্টেশন, গ্রোসারী শপ, অটো ডিলার, সেলুন এবং ছোট ছোট ক’টা রেস্টুরেন্ট আর বার নিয়ে একটা সুপারমার্কেট। অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ করল রানা, প্রায় প্রতিটি সাইনবোর্ডেই পারকিনসন নামটা লেখা রয়েছে। শহরটা যেন তাদেরই পারিবারিক সম্পত্তি। এমন যে বিখ্যাত ক্লিফোর্ড পরিবার, তাদের নামগন্ধ কিছুই নেই শহরের কোথাও। ভারি আশ্চর্য লাগে ওর। এই শহরটাকে গড়ে তোলার কাজে যে পরিবারের অবদান অপরিমেয়, সেই পরিবারের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে গেছে এখান থেকে।

চৌরাস্তাটার নামকরণ করা হয়েছে কিং স্ট্রীট। রাজকীয় ভঙ্গিতেই আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল চেহারার এগারো তলা একটা বিল্ডিং। ওটাই পারকিনসন বিল্ডিং সন্দেহ নেই।

শহরের মধ্যে একমাত্র চৌরাস্তাতেই বিশেষ যত্নের ছাপ চোখে পড়ল রানার। ঝক ঝক তক তক করছে রাস্তাটা। মিস্ত্রিরা এইমাত্র যেন চুনকাম করে গেছে বিল্ডিংগুলো। সামনেই পার্কের বিশাল গেট। পার্কের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক মর্মর মূর্তি। ফোর্ট ফ্যারেলের জনক লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম জে ফ্যারেলের প্রতিমূর্তি ওটা। রানা অনুমান করল, মৃত্যুকালে যতটুকু লম্বা ছিলেন ভদ্রলোক তার চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি লম্বা করে গড়া হয়েছে তাঁকে। তাঁর ইউনিফর্ম ক্যাপে নিরাপদ নীড় রচনা করেছে বায়স কুল।

হঠাৎ পার্কের গেটের মাথার উপর দৃষ্টি পড়তে থমকে দাঁড়াল রানা। গেটের মাথায় ঝাপসা হয়ে গেছে অক্ষরগুলো। কিন্তু এখনও পড়া যায় পরিষ্কার : ক্লিফোর্ড পার্ক।

গোটা শহরে এই একটিমাত্র জায়গায় ক্লিফোর্ড পরিবারের নাম দেখল রানা। পারকিনসন বিল্ডিঙে যখন পৌঁছুল, তখনও পার্কের নামটা নিয়ে গভীরভাবে কি যেন ভাবছে ও!

আরও একটা সিগারেট ধরাল রানা। বাইরের অফিস রূমে অপেক্ষা করছে ও। পারকিনসনের সেক্রেটারি মেয়েটা মিনি স্কার্টের কিনারা উরুর মাঝখানে তুলে লোভনীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করে রাখলেও, দ্বিতীয়বার সেদিকে তাকায়নি রানা। ভিতরের অফিস থেকে ডাক আসতে অস্বাভাবিক দেরি দেখে বিরক্তি বোধ করল ও। ভাবল, বয়েড পারকিনসন খুব একটা সুবিধের লোক নয়।

‘পা দোলাচ্ছিল সেক্রেটারি মেয়েটা। হঠাৎ তা থামিয়ে রিস্টওয়াচ দেখল সে। তারপর মুখ তুলল, ‘এখন আপনি ভিতরে ঢুকতে পারেন।’

নিঃশব্দে মুচকি হাসল রানা। পারকিনসনকে চিনতে শুরু করেছে যেন ও। টেলিফোন এল না, বেল বাজল না— মেয়েটা রিস্টওয়াচ দেখে অনুমতি দিল ভিতরে ঢোকার। কে জানে, পারকিনসন হয়তো তাকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল মাসুদ রানা নামে একজন জিওলজিস্ট আসবে, তাকে অন্তত চল্লিশ মিনিট বসিয়ে রেখে তারপর ঢুকতে দেবে আমার চেম্বারে। আমিই যে এই শহরের অধিপতি তা যেন আমার সাথে দেখা হওয়ার আগেই তার জানা হয়ে যায়। কিংবা, ভুলও হতে পারে ওর, চেম্বারের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবল রানা, হয়তো সত্যিই কাজে ব্যস্ত ছিল লোকটা।

ডেস্কের পিছনে রিভলভিং চেয়ারে বসা পারকিনসনকে দেখে অবাকই হলো রানা। শহরটা তার, এটা চাক্ষুষ করার পর ও ধরেই নিয়েছিল লোকটা প্রৌঢ় কিংবা বুড়ো না হয়েই যায় না। অল্প বয়সে ক’জনইরা কেউকেটা হতে পারে!

ওর চেয়ে বেশি হবে না পারকিনসনের বয়স। চমৎকার স্বাস্থ্য। বোঝা যায় ব্যবসা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে না এ-লোক। শরীরটাকে বলিষ্ঠ রাখার পিছনে প্রচুর শ্রম আর সময় ব্যয় করে থাকে। ছোট ছোট চুল মাথায়, প্রায় গোল করে কাটা—ফলে মুখটাকে বড় দেখাচ্ছে এবং কোথায় যেন নীচতা আর নিষ্ঠুরতার একটা ছাপ ফুটে রয়েছে। চেহারাটাকে এমন করার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে ভেবে পেল না রানা। হয়তো, ইচ্ছে করেই বেছে নিয়েছে এই চেহারা, ভাবল ও, লোকের মনে ভয় ঢোকাবার জন্যে। স্থুল বুদ্ধির মানুষ দুনিয়ায় তো আর কম নেই।

চেয়ার ছেড়ে উঠল না পারকিনসন। শুধু হাতটা রানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘গ্ল্যাড টু মিট ইউ, রানা।’

বসতে বলেনি। চেয়ার ছেড়ে ওঠেনি। নাম উচ্চারণ করার আগে মিস্টার বলেনি। সবই লক্ষ করল রানা। পা দিয়ে একটা চেয়ার টেনে ধীরে ধীরে বসল ও।

কালো হয়ে গেল পারকিনসনের মুখ। নিজের বাড়ানো হাতটার দিকে তাকাল সে। গ্রহণ করেনি রানা ওটা। না করায় হাতটার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে সম্ভবত, ভাবল রানা।

হাতটা অত্যন্ত ধীর ভঙ্গিতে ফিরিয়ে নিল পারকিনসন। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে নিয়ে ঠোঁটের কোণে রাখল রানা। প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল পারকিনসনের দিকে।

‘চুক্তিপত্রটা দেখাচ্ছি তোমাকে,’ তর্জনী দিয়ে টোকা দিয়ে প্যাকেটটা রানার দিকে ফেরত পাঠিয়ে দিল পারকিনসন। হাভানা চুরুটের বাক্সটা টেনে নিল ডেস্কের একধার থেকে। ‘রুটিন অনুযায়ীই সব কিছু হবে।’

সিগারেট ধরিয়ে গ্যাস লাইটারটা বাড়িয়ে দিল রানা। মুহূর্তের জন্যে ইতস্তত করল পারকিনসন। রানাকে প্রত্যাখ্যান করবে কিনা ডাবল সম্ভবত। তারপর মুখটা বাড়িয়ে দিল চুরুটে আগুন ধরাবার জন্যে।

পরস্পরের দিকে চেয়ে আছে ওরা, নিঃশব্দে।

একমুখ নীলচে ধোঁয়া ছাড়ল পারকিনসন। লাইটারটা নিভিয়ে হাতটা সরিে আনল রানা।

আমাদের বিজ্ঞাপনের উত্তরে একমাত্র তুমিই আবেদন করেছ, তাই কাজটার দায়িত্ব তোমাকে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। কিন্তু, পারকিনসন হাসল, তোমাকে ডেকে পাঠানোর পর আমাদের মনে পড়ল, কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবার মত যোগ্যতা তোমার আছে কিনা তা জানার কোন চেষ্টাই আমরা করিনি। কোন ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করেছ, রানা?’

‘মন্ট্রিয়ল।’

কিন্তু এক্সপিরিয়েন্স ক’বছরের?’

“ছয়…না, সাড়ে ছয় বছরের।’

“ফ্রিল্যান্সার?’

‘হ্যাঁ।’

‘এর মধ্যে কোথাও পেয়েছ কিছু? তেল কিংবা আকরিক লোহা? কয়লা কিংবা সোনা? রেডিয়াম কিংবা… দামী কিছু?’

‘প্রশ্নটা কি বোকার মত হয়ে যাচ্ছে না?’ মৃদু হাসির সাথে বলল রানা। ‘আমি একজন জিওলজিস্ট। মাটি পরীক্ষা করে খনিজ পদার্থ থাকা না থাকার সম্ভাব্যতা নির্ণয় করতে পারি মাত্র। পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে থাকা না থাকার ওপর… জিওলজি সম্পর্কে আমার জ্ঞানের ওপর নয়। এটুকু বোঝার মত বুদ্ধি তোমার নেই এ আমি বিশ্বাস করি না, পারকিনসন।’

‘আমার প্রশ্নটা তুমি ঠিক বুঝতে পারোনি,’ পারকিনসন কঠিন, কর্তৃত্বের সুরে বলল, ‘আমি জানতে চাইছি মাটির নিচে খনিজ পদার্থ থাকা সত্ত্বেও তোমার অযোগ্যতার দরুন তা আবিষ্কৃত হয়নি এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা। বুঝেছ প্রশ্নটা? আরও পরিষ্কার করে বলব? প্রশ্নটা এভাবেও করা যায়: যেখানে খনিজ পদার্থ নেই বলে রিপোর্ট দিয়েছ তুমি সেখানে পরে অন্য কোন জিওলজিস্ট খনিজ পদার্থ আছে বলে প্রমাণ করেছে কিনা?’

হেসে উঠল রানা। ‘এরকম কোন ঘটনা যদি ঘটেই থাকে, তোমার কাছে তা স্বীকার করব বলে মনে করো? সে যাক, কাজটা করতেই এসেছি আমি, পারকিনসন। সুতরাং, আমার যোগ্যতা প্রমাণ করার দায়িত্ব আমারই।’ পকেট থেকে একটা এনভেলাপ বের করে পারকিনসনের সামনে ডেস্কের উপর ছুঁড়ে দিল রানা। ‘ওটার ভিতর আমার সার্টিফিকেটগুলো আছে, কয়েকটা প্রশংসাপত্রও পাবে তুমি চোখ বুলিয়েই বুঝতে পারবে জিওলজিস্ট হিসেবে আমি প্রথম শ্রেণীর কিনা।’ শুধু সার্টিফিকেটগুলো জাল কিনা তা জানার কোন চেষ্টা করো না, তাহলেই আমি বাপু ফেঁসে যাব—মনে মনে বলল রানা—প্রমাণ হয়ে যাবে একজন চাষী আলকাতরা সম্পর্কে যতটা জানে আমি জিওলজি সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

এনভেলাপটা খুলে এক এক করে সবক’টা সার্টিফিকেট আর প্রশংসাপত্রে চোখ বুলাল পারকিনসন। অকারণ গাম্ভীর্যে ভারি করে রেখেছে সারাক্ষণ মুখটাকে। দেখা শেষ করে এনভেলাপটা রানার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘এসবে কিছু প্রমাণ হয় কিনা আমি জানি না। সে যাক, কাজ তোমাকে দিয়েই করাচ্ছি আমরা। তার আগে, এখানের পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা থাকা দরকার তোমার।’

‘আমি শুনছি।’

‘ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এই অংশে পারকিনসন করপোরেশনের গুরুত্ব তোমার মত একজন বহিরাগতের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়। উন্নতির চরম শিখরে উঠে যাচ্ছি আমরা—দ্রুত গতিতে। বর্তমানে আমরা কাঠ কেটে সাইজ করার, কাগজের জন্য মণ্ড তৈরি করার এবং একটা প্লাইউডের কারখানা চালাচ্ছি। হাতে রয়েছে একটা নিউজপ্রিন্ট মিলের, আর প্লাইউড প্ল্যান্টটাকে বড় করার কাজ। কিন্তু একটা জিনিসের অভাব রয়েছে আমাদের, তা হলো পাওয়ার—বিশেষ করে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার।’

রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে প্রায় শুয়ে পড়ল পারকিনসন। ‘ডসন ক্রীক-এর গ্যাস ফিল্ড থেকে পাইপ দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস যে আনা যায় না তা নয়, কিন্তু তাতে খরচ পড়ে যাবে মেলা, তাছাড়া, গ্যাসের দাম বাবদ প্রচুর ডলার গুনতে হবে প্রতিমাসে। আরও অসুবিধে আছে। আমাদের চাহিদা বুঝে গ্যাস ফিল্ডের মালিকরা প্রতি বছর গ্যাসের দাম কয়েকবার করে বাড়ালেও টু-শব্দ করতে পারব না আমরা। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে আমাদের ইণ্ডাস্ট্রিগুলো সচল থাকবে কিনা তা নির্ভর করবে ওদের মর্জির ওপর। সুযোগ পেলে ওরা আমাদের লাভের অংশের বেশির ভাগটাই খেয়ে নিতে চাইবে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, জেনেশুনে ওদের ফাঁদে আমি পা দিতে যাচ্ছি না! আমি চাই পাওয়ারের দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে।’

দেয়ালে সাঁটা ম্যাপের দিকে আঙুল তুলল পারকিনসন। ‘ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওয়াটার পাওয়ারের কোন অভাব নেই। কিন্তু এদেশের অধিকাংশ এলাকা এখনও অনুন্নত। ২,২০,০০,০০০ কিলোওয়াট সম্ভাব্য শক্তির মধ্যে থেকে মাত্র ১৫,০০,০০০ কিলোওয়াট নিচ্ছি আমরা। উত্তর-পশ্চিমের এই দিকটায় সম্ভাব্য ৫০,০০,০০০ কিলোওয়াট ওয়াটার পাওয়ারের সবটাই অব্যবহৃত থাকছে, একটা জেনারেটর রসিয়েও ওর সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়নি।’

‘পীস রিভারে পোর্টেজ মাউন্টিন ড্যাম তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে,’ বলল রানা।

ভুরু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করল পারকিনসন। ‘ওটা তৈরি হতে কয়েক বছর সময় লাগবে। শত শতকোটি ডলার খরচ করে সরকার কবে একটা ড্যাম তৈরি করবে তার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি না আমরা, রানা। পাওয়ার আমাদের দরকার এই মুহূর্তে। সুতরাং, প্রয়োজন মেটাতে কি করতে যাচ্ছি আমরা?’ হাসছে পারকিনসন। ‘আমরা নিজেরাই একটা বাঁধ তৈরি করতে যাচ্ছি—হ্যাঁ। সেটা খুব বড় একটা বাঁধ হবে না, কিন্তু তার দরকারও নেই। আমাদের বর্তমান প্রয়োজন এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োজন মেটাবার জন্যে যথেষ্ট বড় হলেই চলবে। বাঁধ তৈরি করার প্রাথমিক সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছি আমরা। যেকোন মুহূর্তে শুরু করে দিতে পারি আমরা কাজ। মাল মশলা যা লাগবে তাও পৌঁছে গেছে ফোর্ট ফ্যারেলে। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বাত্মক সাহায্য এবং আশীর্বাদও রয়েছে আমাদের ওপর। এখনও তাহলে কাজে হাত দেইনি কেন?’

নাটকীয় ভাবে প্রশ্নটা করে রানার দিকে চেয়ে থাকল পারকিনসন। তারপর নিজেই উত্তরটা বলল, ‘কারণ, বাঁধ তৈরি হয়ে যাবার পর উপত্যকার পঁচিশ বর্গ মাইল এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। তখন যদি জানতে পারি যে একশো ফিট পানির নিচে মূল্যবান খনিজ পদার্থ রয়েছে? ভুলের জন্যে মাথার চুল ছিঁড়তে হবে না তখন? এবার বুঝেছ তো ব্যাপারটা? বাঁধ আমরা তৈরি করব, কিন্তু তার আগে নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে চাই যে-এলাকাটা পানিতে ডুবে যাবে তার নিচে দামী কিছু আছে কিনা। এর আগে কোন জিওলজিস্ট এলাকাটা চেক করেনি। আমি চাই, গোটা এলাকাটা ভাল করে চেক করো তুমি। তারপর আমাকে জানাও নিচে যেটা আছে সেটা সোনার খনি না রেডিয়ামের খনি, নাকি তেলের খনি। পারবে না?’

‘এলাকার ম্যাপটা একটু দেখতে চাই আমি,’ বলল রানা।

রিভলভিং চেয়ারে সিধে হয়ে বসল পারকিনসন। অনেকগুলো কথা বলে নিজের সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা রানাকে দিতে পেরে তৃপ্তি বোধ করছে সে। হাত বাড়িয়ে ক্রেডল থেকে ফোনের রিসিভার তুলে বলল, ‘নাথান, কাইনোক্সি এলাকার ম্যাপটা নিয়ে এসো।‘রিসিভার নামিয়ে রেখে নিভে যাওয়া চুরুটটা ধরাল সে। ‘আমাদের হোল্ডিঙেও জিওলজিক্যাল সার্ভে দরকার, কথাটা ভাবছি কিছুদিন থেকে, একমুখ ধোঁয়া ছাড়ল সে রানার দিকে। ‘এই কাজটা যদি সুন্দরভাবে শেষ করতে পারো তাহলে হয়তো আরও একটা চুক্তি করতে পারি আমরা তোমার সাথে। তুমি লোক কেমন, এবং তোমার যোগ্যতা কেমন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে, রানা। যদি প্রমাণ করতে পারো আমাদের কাজে লাগবে তাহলে বছরের পর বছর ধরে তোমাকে আমরা পুষতে পারি।’

‘কিন্তু আমার যে পেশা…’

‘বাদ দাও তোমার পেশা!’ পারকিনসন তাচ্ছিল্যের সাথে বলল। ‘ক’ডলার কামাও এই পেশায় সারা বছরে? ধরো, তোমার যা আয় তার চেয়ে যদি তিনগুণ আয়ের রাস্তা দেখিয়ে দিই, ছাড়তে রাজি হবে না ওই নীরস পেশাটাকে?’

‘কাজটা কি তার ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটা।’

‘তা কি সংখ্যায় একটা? বেছে নেবার জন্যে একশোটা কাজের নাম বলতে পারি আমি তোমাকে।’ পারকিনসন হাসছে। ‘জানো, পঞ্চাশজন লোককে খামোকা পুষি আমি। কেউ আমার বডিগার্ড, কেউ স্রেফ বন্ধু, কেউ শুভানুধ্যায়ী, কেউ…’

চেম্বার কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে উঠে পারকিনসনকে থামিয়ে দিল রানা। ‘কি হলো!’ কঠিন শোনাল পারকিনসনের কণ্ঠস্বর। উজবুকের মত হাসছ কেন?’

‘উজবুক আমি না তুমি?’ কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল রানা। ‘তুমি বেতনভুক বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী পোষো একথা বলতে পারলে? পয়সা দিয়ে বন্ধু পাওয়া যায় বলে সত্যিই বিশ্বাস করো?’

‘আমার বিশ্বাস সম্পর্কে তুমি তাহলে কিছুই জানো না, দেখছি।’ পারকিনসন দৃঢ়ভঙ্গিতে বলল, ‘ডলার ঢাললে, বিলিভ মি, গড়কেও পোষা যায়। কিছুদিন আছই তো, নিজেই এর প্রমাণ দেখার সুযোগ পাবে তুমি।’

‘তুমি ঠাট্টা করছ।’ পারকিনসনকে আরও কথা বলাবার জন্যে উত্তেজিত করতে চাইছে রানা।

‘মোটেই নয়! তুমি জানো, ফোর্ট ফ্যারেলে ঈশ্বরের পরেই আমার স্থান? খোদাকে ওরা তো দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু আমাকে পাচ্ছে। শুধু দেখতেই পাচ্ছে না আমার উত্তাপের আঁচও এরা অনুভব করছে সারাক্ষণ। আমি বলতে চাইছি, গড়ের চেয়েও ওরা বেশি মানৈ আমাকে। ভয় করে। ওরা জানে, গড়ের মত পরোক্ষ কিছুতে বিশ্বাস করি না আমি, আমি প্রত্যক্ষে বিশ্বাস করি। কিছু যদি আমার মন মত না হয়, সরাসরি আঘাত করি আমি। সবাই জানে।’

‘কেউ যদি জেনেও অবাধ্য হয়?’

‘আজ পর্যন্ত সে সাহস কারও হয়নি। হবেও না।’

‘জোর দিয়ে বলো না।’

‘কি বলতে চাও তুমি?’

‘বেতনভুক শুভানুধ্যায়ী হিসেবে সতর্ক করে দিতে চাই,’ হাসতে হাসতে বল রানা, ‘সবাইকে গরু-ছাগল ভেবো না, পারকিনসন—পালে দু’একটা বাঘও থাকতে পারে।’

‘আরও পরিষ্কার করে বলো।’

‘অন্যায় চিরকাল সহ্য করে না মানুষ।’

‘আমি তো কোন অন্যায় করছি না কারও ওপর! নিরীহ ভঙ্গিতে দু‘দিকে হাত ছড়িয়ে দিয়ে বলল পারকিনসন, ‘এই এলাকার মালিক আমি। প্রাপ্য সম্মান আর মর্যাদা আমাকে দিতেই হবে। তোমার কি ধারণা??

‘তোমার সাথে এ ব্যাপারে আমি একমত,’ বলল ‘রানা। ‘কিন্তু বিতর্ক দেখা দিতে পারে ‘প্রাপ্য’ শব্দটার অর্থ নিয়ে। তুমি প্রাপ্য বলতে কি বোঝো তা জানি না।’

‘এ প্রসঙ্গে আলোচনা অসমাপ্ত রইল তোমার সাথে আমার,’ নাথান মিলারকে ঢুকতে দেখে বলল পারকিনসন, ‘পরে শেষ করা যাবে, কি বলো? কেন যেন মনে ইচ্ছে, অনেকদিন পর, কিংবা বলা উচিত এই প্রথম একজন লোককে পেলাম যাকে আমার ক্ষমতা এবং প্রভাব সম্পর্কে একটু জ্ঞান দান করা দরকার-আলোচনার মাধ্যমে।’

‘আমি আবার আলোচনায় তেমন বিশ্বাস করি না,’ মুচকি হেসে বলল রানা ‘কিন্তু এ প্রসঙ্গ থাক এখন।’

রানার পাশ ঘেঁষে গিয়ে গেল নাথান। হাতে পাকানো ম্যাপ কয়েকটা। পারকিনসনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। অস্বাভাবিক লম্বা, সুবেশী, ক্লিনশেভড — বয়স বয়েড পারকিনসনের চেয়ে একটু বেশিই হবে। দু‘জনের সাথে কোথাও কোন মিল নেই, কিন্তু তবু কেন যেন মনে হলো রানার, জোড়াটা মিলেছে ভাল। অসম্ভব ধূর্ত আর বাস্তববাদী লোক নাথান, চোখের তীক্ষ্ণ চাউনি আর হাড় বের হওয়া মুখের ভাবলেশহীন চেহারা দেখে অনুমান করল রানা।

‘থ্যাঙ্কস, নাথান,’ ম্যাপগুলো নিজের হাতে নিয়ে বলল পারকিনসন। ‘ও ইচ্ছে আমাদের জিওলজিস্ট, যাকে আমরা ভাড়া করেছি, মাসুদ রানা। রানার দিকে তাকাল সে। ‘নাথান মিলার, আমাদের একজন এগজিকিউটিভ।’

‘প্লীজড টু মিট ইউ,’ বলল রানা। দ্রুত একবার মাথাটা শুধু ঝাঁকাল নাথান, তারপরই পারকিনসনের দিকে ফিরিয়ে নিল মুখ। ‘ন্যাশনাল কংক্রিট ওদের বিল মিটিয়ে দেয়ার জন্যে বড় বেশি তাগাদা দিচ্ছে।’

‘কিছু একটা বুঝিয়ে ঠেকিয়ে রাখো,’ পারকিনসন বলল। ‘ইঁট, বালি, সিমেন্ট, রড কোনটার দামই আমরা দিচ্ছি না রানার রায় না পাওয়া পর্যন্ত।’ মুখ তুলে তাকাল সে রানার দিকে। ‘তোমার ওপরই সব নির্ভর করছে এখন, রানা।’ একটা ম্যাপ খুলে ডেস্কের উপর বিছাল সে। ‘এই যে কাইনোক্সি, কোয়াদাচা-র উপঢৌকন বলা হয় নদীটাকে, ফিনলে এবং আরও সব এলাকার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পীস রিভারে গিয়ে মিশেছে। এই এখানে রয়েছে একটা এসকারপমেন্ট, পাহাড়ের ঢালু গা, এর বাঁকগুলোয় বাধা পেয়ে কাইনোক্সি উদ্দাম খরস্রোতায় পরিণত হয়েছে।

এসকারপমেন্টের পিছনেই রয়েছে একটা উপত্যকা,’ ম্যাপের উপর তর্জনী ছুটছে পারকিনসনের, ‘বাঁধটা আমরা দেব ঠিক এইখানে, ফলে উপত্যকাটা সয়লাব হয়ে যাবে পানিতে। পাওয়ার হাউসটা হবে এখানে, এসকারপমেন্টের বটমে। সার্ভে টীমের রিপোর্ট অনুযায়ী উপত্যকা ছাড়িয়েও দশ মাইল জায়গা ডুবে যাবে—দৈর্ঘ্যে মাইল দুই বা কিছু বেশি। ওটা একটা নতুন লেক হবে—লেক পারকিনসন।’

‘পরিমাণে কম নয় পানিটা,’ মন্তব্য করল রানা।

‘কিন্তু খুব বেশি গভীর হবে না,’ বলল পারকিনসন, ‘তাই আমরা হিসেব করে দেখেছি অল্প খরচেই বাঁধটা তৈরি করতে পারব।’ ম্যাপের নিচের দিকে তর্জনী দিয়ে একটা বৃত্তের মত আঁকল সে। ‘এই বিশ বর্গ মাইলের মধ্যে আমরা কোনরকম খনিজ পদার্থ কিছু হারাচ্ছি কিনা তা জানাবার দায়িত্ব এখন তোমার।’

ম্যাপটা আরও কিছুক্ষণ দেখল রানা। তারপর বলল, ‘কঠিন কোন কাজ নয়। পারব। ভাল কথা, উপত্যকাটা ঠিক কোথায় বলো তো?’

‘এখান থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে। বাঁধের মাল মশলা নিয়ে যাবার জন্যে কাঁচা একটা রাস্তা তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছি আমরা, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি সেটা। জায়গাটা একেবারেই নির্জন।’

‘কিছু এসে যায় না।’

‘নির্জন জায়গায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তোমার নিশ্চয়ই আছে, যেহেতু তুমি একজন জিওলজিস্ট। সে যাক। ভেব না যে চল্লিশ মাইল পায়ে হাঁটতে হবে তোমাকে। করপোরেশনের হেলিকপ্টার তোমাকে পৌঁছে দেবে এবং নিয়ে আসবে, যখন যেমন প্রয়োজন।’

‘তাতে আমার জুতোর শুকতলা খুব কম খইবে—ধন্যবাদ,’ বলল রানা। ‘ভাল কথা, মাটি পরীক্ষা করে কি পাই না পাই তার ওপর নির্ভর করবে পরীক্ষামূলক গর্ত খুঁড়তে হবে কিনা। ভাড়ায় একটা ড্রিলিং মেশিন আনিয়ে রাখো। আর, খোঁড়ার কাজে তোমার দু‘জন লোককে আমার দরকার হতে পারে।’

নাথান বলল, ‘চুক্তিতে এসব কথা থাকছে না। ব্যাপারটা ঠিক ন্যায্য হচ্ছে কি? তোমার কাজ তোমাকেই সব করতে হবে।’

‘নাথান, মাটিতে গর্ত খোঁড়ার জন্যে ডলার নিই না আমি। ওই সব গর্তের ভিতর থেকে যে কাদা উঠবে তা মাথা খাটিয়ে পরীক্ষা করে খনিজ পদার্থ পাওয়ার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে রিপোর্ট দেয়ার জন্যে ডলার নিয়ে থাকি। তোমরা যদি বলো এক হাতে কাজ করতে, তাও আমি করব—কিন্তু তাতে সময় লাগবে ছয়গুণ বেশি। ঘণ্টা হিসেবে বেতনে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি আমি—ওই ছয় গুণ বেশি সময়ের বেতন দশ হাজার ডলারের কম হবে না। তোমাদের ডলার বাঁচাবার স্বার্থেই কথাটা বলেছি আমি।’

উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল নাথান, হাত নেড়ে তাকে থামিয়ে দিল পারকিনসন। ‘বাদ দাও, নাথান। হয়তো গর্ত খোঁড়ার কোন দরকারই পড়বে না শেষ পর্যন্ত। নির্ঘাত কিছু পাবার সম্ভাবনা দেখলে তবে তো ড্রিল করার কথা ভাববে তুমি, রানা?’

‘হ্যাঁ।’

ঠাণ্ডা চোখে তাকাল নাথান পারকিনসনের দিকে। ‘আরেকটা ব্যাপার,’ বলল সে, ‘রানাকে বরং সাবধান করে দাও ও যেন উত্তর দিকটায় সার্ভে করতে না যায়। ওটা আমাদের এলাকা…’

‘ওটা আমাদের এলাকা নাকি আমাদের এলাকা নয় তা আমি জানি, নাথান,’ পারকিনসন অসহিষ্ণু হয়ে উঠল হঠাৎ। ‘শীলার সাথে এ ব্যাপারে একটা সমঝোতায় আসার চেষ্টা করব আমরা—সময় মত।’

‘এখনি সময়,’ বলল নাথান। উত্তেজনার বা অস্বস্তির লেশমাত্র নেই কণ্ঠস্বরে বা মুখের চেহারায়। ‘একটা সমঝোতা না হলে গোটা স্কীমটা ধসে পড়তে পারে।’

দু‘জনের এই বাক্-যুদ্ধের অর্থ না বুঝলেও রানা টের পেল দু‘জনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে পরস্পরকে নিয়ে।

সেই দ্বন্দ্বটাকেই প্রকট করে তুলতে চাইল রানা। ‘ভাল কথা, এই সার্ভেতে আমার বস্ কে তা জানতে পারলে খুশি হতাম। কার কাছ থেকে অর্ডার নেব আমি—তোমার কাছ থেকে, পারকিনসন? নাকি তোমার কাছ থেকে, নাথান?’

রানার দিকে তিন সেকেণ্ড স্থির চোখে চেয়ে রইল পারকিনসন। ‘প্রশ্নটা করে বোকামির পরিচয় দিয়েছ তুমি, রানা। আমার নাম পারকিনসন এবং এটা পারকিনসন, করপোরেশন। তুমি আমার কাছ থেকেই হুকুম পাবে।’

‘বুঝলাম,’ কথাটা বলল রানা নাথান মিলারের দিকে চোখ রেখে। ‘কথাটা আপনারও জানা হয়ে থাকল।’

কাঁধ ঝাঁকাল নাথান। বিনাবাক্য ব্যয়ে পা বাড়াল সে দরজার দিকে।

আধঘণ্টা পর ওদের সাথে চুক্তিপত্রে সই করল রানা। নাথানকে হাড় কেপ্পন বললেও কম বলা হয়। আধখানা ডলারও সে বেশি দিতে রাজি নয়। তার এই স্বভাব দেখে প্রচলিত হারের চেয়ে অনেক বেশি, প্রায় দ্বিগুণ বেতন হাঁকল রানা।

পারকিনসন দর কষাকষির ব্যাপারে অত্যন্ত নীচ স্বভাবের হলেও নাথানের মত কূটবুদ্ধি তার নেই। ওকে কাছে পেয়ে হাতছাড়া করার ঝুঁকিটা ওরা নেবে না, তাছাড়া হাতে সময় এদের কম, এটা বুঝতে পেরেই নিজের দাম বাড়িয়ে দিল রানা। শেষ পর্যন্ত ওর জেদই বজায় থাকল।

চুক্তি হয়ে যাবার পর পারকিনসন বলল, ‘পারকিনসন হাউজে তোমার জন্যে একটা কামরা রিজার্ভ করা আছে। হোটেলটা হিলটনের সমকক্ষ হয়তো নয়, কিন্তু আরামের দিক থেকে এর তুলনাও হয় না। ভাল কথা, রানা, কাজে হাত দিচ্ছ কখন তুমি?’

‘এডমনটন থেকে আমার যন্ত্রপাতি এসে পৌছুলেই।’

“কোথায় আছে বলো, ‘কপ্টার পাঠিয়ে আনিয়ে দিচ্ছি,’ বলল পারকিনসন। ‘সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নই আমি।’

নিঃশব্দে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল নাথান। পারকিনসনের অনেক ব্যাপারেই তার সমর্থন নেই, ডাবল রানা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *