গুরুপ্রণামী

গুরুপ্রণামী

আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

আকাশে অনেক কিছু দেখতে পাওয়া যায়।

মেঘ। সূর্য। কখনও প্লেন।

আমি খুঁজছিলাম টাকা।

টাকা দরকার।

মাসের শেষ, টাকা একেবারেই হাতে নেই।

বাসে ওঠার আগে পর্যন্ত দশবার চিন্তা করতে হচ্ছে। টাকা না থাকলে যা হয়।

কোথাও যাবার হলে হেঁটেই মেরে দিচ্ছি।

হন্টন শিল্পে খুব শিগগিরি বঙ্গ বিভীষণ টাইপের কিছু পেয়ে যেতে পারি।

রুবির মোড়ে দাঁড়িয়ে একটা বাসের দিকে তাকিয়ে পকেটে অবশিষ্ট টাকার সঙ্গে বাস ভাড়ার জটিল ক্যালকুলেশন করতে করতে ঘেমে যাচ্ছিলাম এমন সময় দেখি একটা বিরাট গাড়ি এসে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দৈব বাণীর মত কোন একটা মেয়ের গলায় শুনতে পেলাম “এই অয়নদা। গাড়িতে ওঠো শিগগিরি”।

আমি গাড়ির দিকে নজর দিলাম।

ওরে বাবা, এ তো গাড়ি নয়, দেবতা নিশ্চয়। নারী কন্ঠের মালকিনকে অবশ্য চিনলাম। অহনা বসু। জুনিয়র। একদিন এসে খুব কায়দা করে বলেছিল টিউশন পড়তে চায়। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলেছিলাম প্রতিটা সেমিস্টার পাশ করার পর আমি আগের সেমিস্টার ভুলে যাই। টিউশন তো দূর কী বাত।

অহনা তাও বেশ কয়েকবার ঘ্যান ঘ্যান করেছিল।

আমি না-য়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে মুখ টুখ বাঁকিয়ে চলে গেছিল।

এখন এরকম ডাক শুনে আর রিস্ক নিলাম না।

পকেটে টাকা নেই।

লিফট পেলে মন্দ হয় না।

গাড়িতে উঠে পড়লাম। হেব্বি ঠান্ডা গাড়ি। নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে এরকম জোরে এসি চলছে। ড্রাইভার আমাদের ক্লাসের সব থেকে গম্ভীর স্যার এস ডিজির থেকেও গম্ভীর মুখে গাড়ি চালাচ্ছে। সামলে সুমলে বসতে না বসতেই অহনা বলল “কোথায় যাবে?”

আমি বললাম “পাটুলি। তুই কোথায় যাবি?”

অহনা বলল “সল্টলেক”।

আমি বললাম “যাব্বাবা, আমি তো তোর উল্টোদিকে যাব। জিজ্ঞেস না করেই গাড়িতে তুললি?”

অহনা ড্রাইভারকে “ও রাজীবদা পাটুলি চল তো”, বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “এই তো, পাটুলি যাচ্ছি। হল?”

আমি রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে বললাম “বাঁচালি, কালকেও রুবি থেকে পাটুলি হেঁটে গেছি। পায়ের ব্যথা কমে নি এখনও”।

অহনা অবাক হয়ে বলল “কী? ঢপ মারার জায়গা পাও না?”

আমি বললাম “মাইরি বলছি বিশ্বাস কর। বনগাঁ লোকালের দিব্যি। টাকার অভাব যাচ্ছে”।

অহনা বলল “সত্যি তুমি রুবি থেকে পাটুলি হেঁটে গেছ?”

আমি বললাম “সত্যি। সত্যি। সত্যি। হল?”

অহনা কপালে হাত টাত দিয়ে বলল “ভাবা যাচ্ছে না। আজকেও তাই যেতে নাকি?”

আমি বললাম “দেখ আজকে কুড়ি তারিখ। পকেটে সাড়ে তিনশো টাকা আছে। এর মধ্যে একদিন মেসের বাজার করতে হবে, আড়াইশো থেকে তিনশোটাকার ধাক্কা। বাকি পঞ্চাশটাকায় বাস ভাড়া টায়ে টায়ে হয়ে যেতে পারে কিন্তু এর মধ্যে যদি কোন কারণে কোন কেলো হয়ে যায় তবে গেলো”।

অহনা বলল “বাবা! কত হিসেব!”

আমি বললাম “গরীব আদমি। বুঝতেই পারছি”।

অহনা মাথা নাড়িয়ে বলল “হু। সে তো বুঝতেই পারছি। সেই জন্যই তো বলেছিলাম টিউশন পড়াতে। হাত খরচা উঠে যেত। এভাবে হাঁটতে হত না”!

আমি আঁতকে উঠে বললাম “রক্ষে কর। পারলাম না”।

অহনা রেগে গেল। রেগে গেলে অহনা লাল হয়ে যায়।

বলল “কেন পারবে না কেন? তুমি জানো আমার একটা ভাল টিউটর নেই?”

আমি বললাম “ক্লাস কর না মন দিয়ে। ক্লাস করলে টিউটর লাগে না। আমার তো কোন টিউটর নেই”!

অহনা বলল “হুহ। তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট। সবাই তোমার মত বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকতে পারে নাকি”!

আমি বললাম “ছাতার ব্রিলিয়ান্ট। আমার কোন কাজ নেই, পকেটে টাকা নেই, তাই ক্লাস করতে হয়। বাপ দিত একগাদা হাত খরচ, আমিও ঘুরে বেড়াতাম”।

অহনা বলল “ভাল হয়েছে দেয় নি। মানুষ হবে। আমার মত বখে যাবে না”।

আমি বললাম “তুই বখে গেছিস? কোই দেখে তো মনে হচ্ছে না!”

অহনা মজা পেল আমার কথা শুনে। হেসে বলল “দেখে বলে দিতে পারো কে বখে গেছে আর কে বখে যায় নি?”

আমি বললাম “হ্যাঁ, না পারার কী আছে”।

অহনা বলল “তাহলে বল আমি কেমন মেয়ে”।

আমি বললাম “চমৎকার মেয়ে। তবে হেড অফিসে একটু ডিফেক্ট আছে”।

অহনা রেগে গেল “কেমন ডিফেক্ট”?

আমি বললাম “এই যে সল্টলেকে বাড়ি আর আমাকে নামাতে পাটুলি যাচ্ছিস! ডিফেক্ট না থাকলে কেউ এরকম করে?”

অহনা হেসে ফেলল। বলল “তা ঠিক। তুমি ক পেয়েছো। এক্কেবারে বিশাল ট্যালেন্ট তোমার দেখতে পাচ্ছি মানুষ চেনার”।

আমি বললাম “তবে? দেখলে হবে, খরচা আছে”।

অহনা আবার হাসল।

গাড়ি কালিকাপুর পেরিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। বেশ জ্যাম। আমি অবাক হয়ে বললাম “কী হয়েছে?”

গাড়ির ড্রাইভার বলল “মিছিল যাচ্ছে কিছু একটা। জ্যাম হয়ে গেছে”।

আমি অহনার দিকে তাকালাম “দেখলি, কেমন ফেঁসে গেলি তুই”?

অহনা বলল “ফাঁসার কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। এই মিছিল যাবে, আবার দেখবে সব নরমাল হয়ে গেছে”।

আমি বললাম “তা ঠিক। শহর মানেই পাগলদের জায়গা”।

অহনা আমার হাতে একটা চিমটি কেটে বলল “মানেটা কী? আমি পাগল?”

আমি বললাম “না না, তুই কেন পাগল হবি? আমি তো বললাম তোর হেডঅফিসটা একটু ম্যালফাংশান করে মাঝে মধ্যে, বাকি সব ঠিকই আছে”।

অহনা গুম হয়ে বসে থেকে বলল “তোমার আর জামা নেই? তুমি এই একটা জামা পরে কলেজ আসো কেন?”

আমি বললাম “আমার দুটো জামা আছে। একই কালারের। ওই জন্য বুঝতে পারিস না”।

অহনা বলল “দুটো জামা একই কালারের কেন?”

আমি বুঝদারের মত মাথা নেড়ে বললাম “ওই তো, সবার চোখে ধুলো দেবার জন্য। লোকে যেন ধোঁকা খেয়ে ভাবে এই দেখো ছেলেটা একই জামা দুবার করে পরছে”।

অহনা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল “বাওয়া, বিরাট ব্যাপার তো। খুব ধুলো দিতে পেরেছো আমাদের মুখে যা হোক”।

আমি হাসলাম “তবেই বোঝ”।

অহনা বলল “আচ্ছা, তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

আমি বললাম “ক্ষেপেছিস? গার্লফ্রেন্ড থাকা মানে কত ঝামেলা জানিস? খরচ দাও রে, টেলিফোন কর রে, সারারাত জানু খেয়েছো, পানু দেখেছ…”

বলেই অহনার দিকে তাকিয়ে জিভ কাটলাম।

অহনা হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলল “ঈশ, জঘন্য। তোমাকে যতটা ইনোসেন্ট মনে হয় তুমি একেবারেই তা নও”।

আমি বললাম “আমি? ইনোসেন্ট! কে, কেন, কবে, কীভাবে?”

অহনা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ড্রাইভারের দিকে নিঃশব্দে ইঙ্গিত করে আমাকে চুপ করে যেতে বলে বলল “পাগল দেখেছি, তোমার মত পাগল দেখি নি”।

আমি অহনার ইঙ্গিতে একটু ঘাবড়ে গেছিলাম। কোনমতে সামলে গিয়ে বললাম “আমি নেমে যাব? এখান থেকে হেঁটে চলে যেতে পারব”।

ড্রাইভার বুঝলাম আমার প্রপোজালে খুশি হয়েছে। বলল “নেমে গেলে ভাল হয়। এখনও গাড়ি ঘোরাতে পারব। এরপরে অসুবিধা হয়ে যাবে”।

অহনা কিছু বলার আগেই আমি গাড়ি থেকে নামলাম। গাড়ির লাইন লেগে গেছে রাস্তায়।

আমি অহনাকে টাটা বলতে যাব, দেখি আমাকে অবাক করে অহনাও গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে। আমি অবাক হয়ে বললাম “কীরে, কী হল?”

অহনা বলল “আমি দেখতে চাই, তুমি সত্যিই এতটা হাঁটো না ঢপ মারো”।

আমি বললাম “আমি তো হাঁটিই, কিন্তু তুই কী চাইছিস? আমার সঙ্গে এতটা হাঁটবি? পারবি?”

অহনা বলল “দেখতেই পাবে! আমাকে ফিজিক্যালি অত আনফিট ভেবো না। যথেষ্ট অ্যাকটিভ আমি। রোজ সকালে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়াই মিনিমাম”।

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম “বাপ রে, তুই মানুষ, না পিটি উষা?”

অহনা বলল “কেন, পিটি উষা কি মানুষ না? যাক গে, এত ভাটাতে পারছি না। চল হাঁটতে শুরু করি”।

অহনা ড্রাইভারকে বলে দরজা বন্ধ করে আমার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করে দিল।

আমি বললাম “কাজটা ভাল করলি না। এবার ফিরবি কী করে?”

অহনা হাত নেড়ে বলল “ফেরার চাপ নিই না। ট্যাক্সি আছে। আরও ভাল ব্যাপার পাটুলিতে আমার ছোটমাসীর বাড়ি আছে। তেমন হলে ওখানে থেকে যাব”।

আমি জোর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বললাম “তাহলে ঠিক আছে। আমার কী! পরের মেয়ে পরমানন্দ, যত গোল্লায় যায়, তত আনন্দ”।

অহনা বলল “হুহ, ওরম বলতে পারলে? আমি তোমার জুনিয়র না?”

আমি মাথা টাথা চুলকে বললাম “তাও ঠিক। জুনিয়রের ওপর তো একটা দায়িত্ব আছেই। আচ্ছা, ঠিক আছে, তোকে পাটুলি পৌঁছে দেব আমি”।

অহনা খুশি হয়ে বলল “যাক, তাও ভাল। মিনিমাম বোধ বুদ্ধি আছে”।

আমি বললাম “মিনিমাম বোধ বুদ্ধির কী আছে? আমার যথেষ্ট বোধ বুদ্ধি আছে”।

অহনা জোর পায়ে আমার সঙ্গে হাঁটছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে মিছিল যাচ্ছে “চলবে না, চলছে না” করতে করতে।

অহনা বলল “মিছিলে হাঁটতে ইচ্ছা করছে”।

আমি বললাম “খেয়েছে। কেন?”

অহনা বলল “এমনি। বাড়ি, কলেজ করতে করতে বোর হয়ে গেলাম”।

আমি বললাম “ও। তা ভাল। চ মিছিলেই ভিড়ে যাই, বেশ একটা এনার্জি পাওয়া যাবে”।

দুজনে মিছিলে ভিড়ে গেলাম।

মিছিলের লোকজন আমাদের দেখে একটু ব্যোমকে গেল কিন্তু কিছু বলল না।

খানিকক্ষণ হাঁটার পর অহনা বলল “একটু দাঁড়াবে?”

আমি বললাম “এই যে বললি তুই সকালে দৌড়স?”

অহনা রাস্তার কোণায় দাঁড়িয়ে পড়ে বলল “আমি ক্লান্ত হই নি। মিছিলটাও বোর লাগছে এবার। চলে যাক ওঁরা”।

আমি আবার দাঁড়িয়ে গেলাম। মিছিলের লোকগুলো আমাদের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি দিতে দিতে “চলবে না, চলছে না” বলতে বলতে চলে গেল।

খানিকক্ষণ পরে আবার হাঁটতে শুরু করলাম আমরা।

অহনা বলল “অজয়নগরে রোল খাব, ঠিক আছে?”

আমি বললাম “টাকা নেই যে”।

অহনা বলল “আমার আছে তো। মাসের শুরুতে দিয়ে দেবে”।

আমি বললাম “আচ্ছা। তাই হোক। অজয়নগরের রোল ভাল জিনিস। স্বর্গে সেসব পাওয়া যায়। অবশ্য তোরা বড়লোক। স্বর্গীয় জিনিস টাকা ফেললেই পেয়ে যাস”।

অহনা বলল “ছাই। বাড়িতে আমার অনেক রেস্ট্রিকশন। অবশ্য রোল ইচ্ছা করলে খেতেই পারি”।

দুজনে বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে হাঁটতে লাগলাম।

অহনা বলল “এই তুমি সিরিয়াসলি হাঁটছ দেখছি। তোমার হাঁটা দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে তুমি হাঁটো। রিয়েলি! আই অ্যাম ইমপ্রেসড”!

আমি বললাম “গ্রামের লোকেদের কাছে হাঁটাটা বড় কথা না। অবশ্য এই সব রাস্তায় হাঁটা হেকটিক কারণ গাড়িগুলো হুশ হুশ করে বেরিয়ে যায়। পলিউশনও আছে। আমাদের ওখানে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম তো আমরা হেঁটে বা সাইকেল করেই চলে যাই। এমন কিছু কষ্ট হয় না”।

অহনা বলল “হ্যাটস অফ। সত্যি। কিছু বলার নেই। আচ্ছা,তোমার সঙ্গে কেন হাঁটছি জানো?”

আমি বললাম “যাতে বুঝতে পারিস আমি সত্যিই হাঁটি কিনা?”

অহনা দু দিকে মাথা নেড়ে বলল “একেবারেই না। অ্যাকচুয়ালি তোমাকে বোঝাতে যে তোমার থেকে টিউশন নিতে আমি কতটা সিরিয়াস”।

আমি অহনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বললাম “বাপ রে। কী চাপ রে!”

অহনা গম্ভীর গলায় বলল “হ্যাঁ, সত্যিই ভীষণ চাপ। তুমি না পড়ালে তোমার ঘাড়ে উঠে ঘাড় মটকাব। আমাকে চেনো না তুমি”।

আমি হেসে ফেললাম। বললাম “আচ্ছা, আমি চেষ্টা করব। কিন্তু ছাত্রী ফেল করলে যেন আমার দোষ না হয় আগে থেকে বলে রাখলাম”।

অহনায় হেসে বলল “একদম। ছাত্রী ফেল করলেও মাস্টার বেকসুর খালাস পাবে। ওয়াদা হে মেরা”।

আমরা অজয়নগর এসে গেছিলাম। একটা রেস্তরাঁয় ঢুকলাম।

চেয়ারে বসে অহনা হাঁফ ছেড়ে বলল “উফ। সত্যিই। ইউ আর জিনিয়াস। মানতেই হচ্ছে”।

আমি হাসলাম “তা বটে”।

অহনা বলল “কিন্তু এখান থেকে পাটুলি তোমাকে আমার সঙ্গে রিক্সায় যেতে হবে। আমি আর হাঁটতে পারছি না”।

আমি ব্যাজার মুখে বললাম ‘অভ্যেস খারাপ করে দিচ্ছিস”।

অহনা বলল “হোক অভ্যেস খারাপ। একদিন রিক্সায় গেলে কিছু হয় না”।

আমি আর কী বলব। চুপ করে বসে থাকলাম।

রেস্তোরার বয় এসে অর্ডার জানতে চাইলে অহনা যেই রোলের কথা বলেছে বয় জানাল টেবিলে রোল সার্ভ হয় না।

অহনা রেগে মেগে এক গাদা খাবার অর্ডার করে দিল।

আমি ভিরমি খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম “একী করলি তুই! আমার মাসের বাজেটটাই তো অর্ডার করে দিলি”।

অহনা ফিক ফিক করে হাসতে হাসতে বলল “আচ্ছা তুমি চাপ নিচ্ছো কেন! টিউশন দেবে বলে রাজি হয়েছ তার প্রণামী ভেবে নাও না”।

আমি হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। টাকা থাকলে লোকে কত কিছু করতে পারে।

খানিকক্ষণ পরে অহনা ওর ব্যাগ থেকে একটা জামা বের করে আমায় দিয়ে বলল “এটা পরবে। তোমার কালার কন্সেপ্টের কথা আগে জানলে একই কালারের জামা দিতাম। কেনা হয়ে গেছে। কিছু করার নেই। দয়া করে পরে আমাকে উদ্ধার কোর”।

আমি আর অবাক হলাম না। লোকে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর হয়। আমি অধিক শকে পাথর হয়ে গেছিলাম।

বললাম “এটা কখন কিনলি?”

অহনা বলল “পুজোয়। কেনার পর থেকে ব্যাগে নিয়ে ঘুরছি। রোজ ভাবি দেবো। দেওয়া হয় না”।

আমি বললাম “কেন কিনলি?”

অহনা মাথায় হাত দিয়ে বলল “ওই যে ঘুষ। গুরু প্রণামী আর কী। বুঝেছ?”

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম “পড়ার জন্য কেউ জামা পরাতে পারে এই প্রথম দেখলাম আমি। লহ প্রণাম”!

অহনা ফিকফিক করে হাসতে লাগল।

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইলাম।

#

সাত বছর পরের কথা।

অফিসের কাজে নিউ ইয়র্ক যাব। ফ্লাইটে বসে আছি।

অহনা বুবুনকে আমার কোলে দিতে দিতে দাঁত খিচিয়ে বলল “ধর না বাচ্চাটাকে একটু। সারাক্ষণ মায়ের কোলেই থাকবে মেয়েটা”?

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিনের অহনার সঙ্গে এদিনের অহনার মনে মনে তুলনা করতে করতে ফিকফিক করে হাসতে থাকলাম।

অহনা রেগে বলল “কী হল আবার? হাসছ কেন?”

আমি বললাম “কিছু না। লহ প্রণাম”।

অহনা আমার পেটে একটা খোঁচা মেরে বলল “মরণ!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *