1 of 3

গজকচ্ছপের লড়াই

গজকচ্ছপের লড়াই

প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা দুই প্রবল পক্ষের মধ্যে দীর্ঘকালব্যাপী সংঘর্ষ অর্থে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়। ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ-বিবাদ অথবা দুই মোটা মানুষের মধ্যে সংঘটিত লড়াইকেও গজকচ্ছপের লড়াই নামে অভিহিত করা হয়। বিষয়টিকে গজকচ্ছপীয় নামেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

পুরাণকাহিনী অনুযায়ী অতীতকালে বিভাবসু নামে এক খ্যাপাটে ঋষি ছিলেন। তার রাগ ছিল সাংঘাতিক। তার ছোট ভাই সুপ্রতীক ধনসম্পদ বাঁটোয়ারা করার জন্য তাকে অনুরোধ করায় বিভাবসু বিরক্ত হন। একসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ছোট ভাইকে অভিশাপ দেন— ‘তুমি গজ (হাতি) হও।’ সুপ্রতীকও ছাড়ার পাত্র নন। তিনিও বড় ভাইয়ের উপর বিরক্ত হয়ে বললেন— ‘তুমি কচ্ছপ হও।’

তারপর বড় ভাই কচ্ছপ আর ছোট ভাই হাতি হয়ে গেলেন পরস্পরের অভিশাপে। কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থামলো না। সুযোগ পেলেই একজন আরেক জনকে আক্রমণ করতে ছাড়ে না। এভাবে বহু যুগ ধরে এক সরোবরে এই দুই ভাই পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে।

দক্ষরাজের কন্যা কদ্রু ও বিনতা ছিলেন কশ্যপমুনির স্ত্রী। দুই বোন হলেন পরস্পর সতিন। কদ্রু হলেন নাগজননী অর্থাৎ তার সহস্র নাগ সন্তান। আর বিনতা হলেন অরুণ ও বিষ্ণুর বাহন পক্ষিরাজ গরুড়। কদ্রু তার বোন বিনতাকে দাসী করে রেখেছিলেন। সে জন্য সাপদের শত্রু ছিলেন গরুড়। সাপদের শর্ত ছিল যে, গরুড় যদি স্বর্গ হতে অমৃতভাণ্ড এনে তাদের দিতে পারেন তখনই তার মা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

সমুদ্র-মন্থনে প্রাপ্ত অমৃতভাণ্ড দেবতারা স্বর্গে নিয়ে গেছেন। যে কোনো উপায়ে তা আনতে হবে মায়ের দাসত্বমোচনের জন্য। গরুড় রওনা হলেন স্বর্গের উদ্দেশে। যাত্রাপথে তিনি খুব ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লেন। পিতা কশ্যপের কাছে খাবার চাইলেন। তখন কশ্যপ দূরের জলাশয়ে যুদ্ধরত বিভাবসু ও সুপ্রতীককে দেখিয়ে গরুড়কে ভোজনপর্ব সারতে বললেন। বাবার আদেশে গরুড় গজকচ্ছপকে দু’নখে ধরে নিলেন এবং নানা ঘটনার পর এক পাহাড়- চূড়ায় নিয়ে খেয়ে ফেললেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *