কুয়াশার আড়ালে ওরা আসে
এক
চোখ মেলার পরেও সুমন্ত বুঝতে পারছিল না, এমন হঠাৎ করে কেন তার ঘুমটা ভেঙে গেল। বিছানায় শুয়ে শুয়েই সে দেখতে পাচ্ছিল জানলার কাচে লেপটে রয়েছে ঘন অন্ধকার। সকাল হতে এখনও অনেক দেরি। কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে বলেও তো মনে পড়ছে না। তাহলে?
ঠিক সেই সময়েই সুমন্ত শিসের শব্দটা শুনতে পেল।
অনেক দূর থেকে যেন ভেসে এল আওয়াজটা। খুব নিচু পর্দায় বাঁধা একটা শিস। ছোট্ট এবং সাবধানী শব্দটা একবার উঠেই মিলিয়ে গেল। সুমন্ত মনে মনে চিন্তা করল, তাহলে কি কিছুক্ষণ আগেও কেউ এইভাবে শিস দিয়েছিল? সেই আওয়াজেই কি তার ঘুম ভেঙে গেছে?
হতেই পারে। সুমন্ত জানে তার ঘুম বেড়ালের ঘুমের মতন পাতলা। তার ব্রেনের একটা অংশ ঘুমের মধ্যেও সজাগ থাকে। গলির বাইরে রাস্তায় চুপিচুপি একটা জিপ এসে দাঁড়ানোর শব্দ, উঠোনের ইটে একটা লোহার সোল লাগানো জুতোর অসাবধানী ঠোক্কর কিংবা রিভলবারের সেফটি—ক্যাচ সরানোর একটা ছোট্ট ক্লিক শব্দেই কতবার তার ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম ভেঙে যায় বলেই পুলিশের হাত এড়িয়ে এখনও সে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাজেই একটা শিসের শব্দ, যতই আস্তে হোক, যত দূর থেকেই সেটা ভেসে আসুক, তাকে জাগিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট। বালিশের নিচে রাখা রিভলবারটা হাতে নিয়ে সুমন্ত বিছানা ছেড়ে মেঝেতে পা দিল। তার আগে সেলফোনের স্ক্রিনে সময় দেখল— দুটো সাঁইত্রিশ।
তখনই সে দ্বিতীয়বার শিসের আওয়াজটা শুনতে পেল। এবার যেন শব্দটা আরও একটু কাছে এগিয়ে এসেছে বলে মনে হল তার।
দিল্লি থেকে মথুরা অবধি যে নতুন এক্সপ্রেসওয়েটা তৈরি হয়েছে, তার দুপাশে ধু ধু ফাঁকা জমির মধ্যে ইদানীং একটা দুটো করে বাড়ি গজিয়ে উঠছে। সেরকমই একটা বাড়িতে এই ‘নিসান্ত রিসর্ট’। লোকজনের চোখের আড়ালে দুয়েকদিন লুকিয়ে থাকবার পক্ষে পুরো হোটেলটাই আইডিয়াল। তবু আরও নিশ্চিন্ত হবার জন্যে সুমন্ত একতলায় পেছনদিকের একটা সস্তার ঘরই বুক করেছিল। এই ঘরের জানলা খুললে ফাঁকা মাঠ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।
সুমন্ত নিশ্চিত, আওয়াজটা দুবারই ওই মাঠের দিক থেকেই ভেসে এসেছে।
শিস দেওয়ার এই ভঙ্গিটাও তার খুব চেনা। গত তিনদিন ধরে মথুরানাথ শর্মার বাড়ির ওপর নজরদারি করার সময় অনেকবার সে এই শিস শুনেছে। কিন্তু এখন, রাত আড়াইটের সময়, ওই তেপান্তরের মাঠের মধ্যে মথুরানাথ শর্মা শিস দিয়ে ঘুরছেন? বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া এ কথা কি কেউ ভাবতে পারে? মনে মনে নিজেকেই গালাগাল দিল সুমন্ত।
নিজেকে সুমন্ত বোঝাল শিস নয়, এ নির্ঘাত কোনো রাতচরা পাপিয়ার ডাক। কিন্তু শীতকালে কি পাপিয়া ডাকে? ঠিক মনে করতে পারছিল না সুমন্ত।
নিশ্চিত হওয়ার জন্যেই জানলার কাছে এগিয়ে গিয়ে পাল্লা দুটো খুলে ফেলল সুমন্ত, আর খুলেই অবাক হয়ে গেল। শুতে যাওয়ার আগে, যখন এই জানলার দাঁড়িয়ে শেষ সিগারেটটা খেয়েছিল, তখনও তো বাতাস বেশ পরিষ্কার ছিল। মাঠের ওপারে বাহারগঞ্জ কলোনির আলোগুলো যে মিটমিট করে জ্বলছিল, সেটা অবধি এখানে দাঁড়িয়ে দিব্যি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এই কয়েকঘণ্টার মধ্যে জানলার সামনে এত বড় একটা সাদা পাঁচিল উঠে গেল কেমন করে?
না, পাঁচিল নয়, কুয়াশা। চাপ চাপ কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছে সারা দুনিয়া। এর মধ্যে দিয়ে কিছু দেখতে পাওয়া অসম্ভব। যদি কিছু শোনা যায়, এই আশায় আরও কিছুক্ষণ খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে রইল সুমন্ত। কিন্তু আমগাছটার পাতা থেকে টিনের চালের ওপর হিমের ফোঁটা ঝরে পড়ার টপ টপ আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দই তার কানে এল না।
পাখির ডাকই হবে। মনে মনে বলল সুমন্ত। পাখির ডাককেই সে মথুরাবাবুর শিসের শব্দ বলে ভুল করছে। নাহলে মথুরাবাবু এখানে কেমন করে আসবেন? তাঁর বাড়ি তো মাঠের ওপাশে, ওই বাহারগঞ্জ কলোনিতে। আর তিনি তো অন্ধ। যার ভরসায় মথুরানাথ শর্মা চলাফেরা করতেন, সেই এলসাকে তো গতকাল রাতেই সুমন্ত নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছে।
এলসাকে ছাড়া একা একা ওই জলাজমির মধ্যে ঘুরে বেড়াবেন অন্ধ মথুরানাথ শর্মা? ইমপসিবল। গতকাল রাতে, কাজ কমপ্লিট করার পর, সুমন্ত নিজে ওই মাঠ ভেঙে বাহারগঞ্জ থেকে এই রিসর্টে ফিরে এসেছিল। তার দুটো শক্তপোক্ত পা আছে, দুটো জোরালো চোখের নজর আছে। তা সত্ত্বেও তার জান নিকলে গিয়েছিল ওই উঁচু নিচু এবড়ো খেবড়ো জমিটা পার হয়ে আসতে। আর সেখানে ওই অন্ধ লোকটা এলসাকে ছাড়া একা একা এদিকে চলে আসবে?
হাঃ, ভাবলেও হাসি পায়।
আর তাছাড়া শিস দিয়ে ডাকবেনই বা কাকে মথুরাবাবু? কাকে ডিরেকশন দেবেন? এলসাই তো আর নেই।
দুই
হ্যাঁ, মথুরানাথ শর্মার সর্বক্ষণের সঙ্গী জার্মান শেফার্ড কুকুরটার নাম এলসাই ছিল। যে লোকটা মথুরানাথবাবুর আলমারিতে রাখা ক্যাশ পঁচিশ লাখ টাকার খবরটা সুমন্তকে দিয়েছিল, সেইই তাকে এলসার কথাও বলে দিয়েছিল। মথুরাবাবু নয়ডার একটা সিমেন্ট কারখানার সুপারভাইজার ছিলেন। বছর দুয়েক আগে কারখানায় একটা অ্যাকসিডেন্টে যখন তিনি দুটো চোখের দৃষ্টিই হারান তখন তাঁর বয়স পঁয়তাল্লিশ। ওই বয়সে নতুন করে অন্ধকারের দেশে পা রাখা নিশ্চয়ই খুবই কঠিন কাজ, বিশেষ করে যে মানুষের তিনকুলে আর কেউ নেই। তবে মথুরাবাবুর সেই কাজটা সহজ করে দিয়েছিল এলসা। অন্ধ মানুষের সঙ্গী হিসেবেই এলসাকে তার ট্রেনার তৈরি করেছিল।
মথুরাবাবু লাঠি ব্যবহার করতেন না। তার হাতে ধরা থাকত এলসার গলার চেন। সুমন্ত নিজের চোখেই দেখেছে, এলসা কীভাবে মথুরাবাবুকে নিয়ে বাজার হাট ব্যাঙ্ক পোস্ট—অফিস সব জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে। খানাখন্দ বাঁচিয়ে, ট্রাফিকের স্রোত কাটিয়ে, সারাক্ষণ সবরকম বিপদ আপদ থেকে সে মথুরাবাবুকে আগলে নিয়ে ঘুরত।
শুধু বাইরে নয়, ঘরেও এলসা ছিল মথুরাবাবুর সহায়। পাড়ার চায়ের দোকানে বসে সুমন্ত গল্প শুনেছে, এলসা না কি মথুরাবাবুকে ছেড়ে রাখা চটি, স্নানের তোয়ালে, ওষুধের প্যাকেট এসবও মুখে করে এগিয়ে দিত। মথুরাবাবুর সমস্ত কথা বুঝত এলসা।
অন্ধ ছিলেন বলেই মথুরাবাবু ব্যাঙ্ক কিংবা এটিএমের মাধ্যমে টাকাকড়ির লেনদেনে স্বস্তি পেতেন না। একটা বড়সড় অ্যামাউন্টের টাকা সব সময় বাড়িতেই রাখতেন, কারণ তার নিজের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। কদিন আগেই একবার হার্ট—অ্যাটাক হয়েছিল। আবার কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, কত টাকা হাসপাতালকে দিতে লাগে— এইসব ভেবেই একেবারে পঁচিশ লাখ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ির আলমারিতে এনে রেখেছিলেন। যদিও ওঁর বাড়িটা ছিল কলোনির একেবারে শেষপ্রান্তে, তবুও তিনি অত টাকা বাড়িতে রাখতে ভয় পাননি। কেন ভয় পাননি সেটা বোঝা কঠিন নয়। ওরকম একটা বাঘের মতন কুকুর বাড়িতে থাকলে চোর ডাকাতের ভয় করবে কেন লোকে?
তবু সুমন্ত রিস্কটা নিয়েছিল। প্রায় তিনদিন টানা মথুরাবাবুর বাড়ির ওপর নজর রেখে সে বুঝে নিয়েছিল এলসাকে আটকাতে গেলে তাকে কী করতে হবে। রাতেরবেলা বাড়ির বাইরের ফাঁকা জমিটায় ঘুরে বেড়াত এলসা। কোনো প্রয়োজন হলে তাকে শিস দিয়ে ভেতরে ডেকে নিতেন মথুরাবাবু। শিস দিয়েছিল সুমন্তও। মথুরাবাবুর আওয়াজ নকল করে পেছনের বাগান থেকে ছোট্ট একটা শিস। কাল রাত আড়াইটেয়। একটু সন্দেহ কি আর হয়নি এলসার? তবে ওই শিসটার জন্যেই সুমন্তর সামনে পৌঁছেও তার রুদ্রমূর্তি ধরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল তার। ওই দু—এক মুহূর্তের দেরিটুকুই দরকার ছিল সুমন্তর। ওই সময়টুকুর মধ্যেই প্রথম হান্টিংনাইফটা হাওয়ার মধ্যে দিয়ে উড়ে গিয়ে এলসার পাঁজরে বিঁধে গিয়েছিল। পরেরটা গলায়। ব্যস, সব শেষ।
অন্ধেরা কি মৃত্যুর গন্ধ পায়? নাহলে এলসাকে বাগানে ফেলে রেখে ঘরে পা দেওয়া মাত্র মথুরাবাবু কেন এলসার জন্যে হাহাকার করে উঠবেন?
টাকার জন্যে নয়, এলসার জন্যেই আর্তনাদ করে উঠেছিলেন মথুরাবাবু— বরবাদ হয়ে গেলাম। আমি বরবাদ হয়ে গেলাম। কেমন করে বেঁচে থাকব, যদি এলসা না থাকে? তুমি টাকা নিয়ে যেতে ভাই, আমি বাধা দিতাম না। কিন্তু এলসাকে কেন আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে তুমি?
অমন চিৎকার বেশিক্ষণ চলতে দিলে লোকজন ছুটে আসত। তাই বাধ্য হয়েই মথুরাবাবুর মাথায় রডের একটা জোরালো বাড়ি মেরে তাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল সুমন্ত।
পুরোপুরি অজ্ঞান অবশ্য হয়নি লোকটা। নিজের রক্তের মধ্যেই নিজে উপুড় হয়ে শুয়ে বিড়বিড় করে কী সব যেন বলছিল। আলমারি থেকে নোটের বান্ডিল—গুলো নিয়ে ব্যাক—প্যাকে ঢোকাতে ঢোকাতে সুমন্ত শুনেছিল আধা অচৈতন্য লোকটা বলছে— স্কাউন্ড্রেল, তুই পালাতে পারবি না। আমি ঠিক তোর কাছে পৌঁছে যাব। এলসাকে নিয়েই পৌঁছে যাব তোর ডেরায়। এলসাকে তুই চিনিস না। দরকার হলে দুনিয়ার কোনায় কোনায় ঘুরে ও ঠিক তোকে খুঁজে বার করবে।
তখন তো কথাগুলোকে মনে হয়েছিল একজন আহত লোকের প্রলাপ। কিন্তু এখন ওই কথাগুলোই কেন যেন সুমন্তর কানের ভেতর বার বার বেজে উঠছে। তোর কাছে পৌঁছে যাব… তোর কাছে… পৌঁছে যাব।
জানলা থেকে বিছানার দিকে ফিরে যেতে গিয়েও ফিরতে পারল না সুমন্ত। তার পা দুটো জমে পাথর হয়ে গেল। কারণ এইমাত্র তৃতীয়বার শিসের শব্দটা শুনতে পেয়েছে সে। আর তার সঙ্গে আরও একটা শব্দ। একটা জাত কুকুরের ভরাট গলার হুঙ্কার।
মাত্র একবার ডেকে উঠেই থেমে গেল কুকুরটা। সুমন্তর মনে হল কে যেন চাপা হিসস শব্দ করে কুকুরটাকে থামিয়ে দিল।
সুমন্ত সম্মোহিতের মতন ধীরে ধীরে জানলার কাছে ফিরে গিয়ে বাইরে তাকাল।
তিন
নাঃ, এই হতভাগা কুয়াশার জ্বালায় কিচ্ছু দেখা যাবে না। বিশাল ধূসর এক ময়ালসাপের মতন পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুয়াশার স্তূপ। শেষ রাতের হাওয়ায় মাঝে মাঝে এখানে ওখানে একবার করে সেই সাপের পাক আলগা হচ্ছে। দু এক পলক দেখা যাচ্ছে একটা গাছ, একটা ল্যাম্প—পোস্ট কিংবা মেহেদি গাছের বেড়ার আবছা সিল্যুয়েট। সেরকম ফাঁক ফোকরগুলোর দিকেই তীক্ষ্ন নজর রাখছিল সুমন্ত। যদি কিছু দেখা যায়।
দেখতে গিয়ে একবার সে এতটাই চমকে উঠেছিল যে, মনে হয়েছিল হৃদপিন্ডটা বুঝি লাফিয়ে বুকের বাইরে চলে আসবে। সে যেন পরিষ্কার দেখেছিল মথুরাবাবু একটু দূরে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এমনকী মথুরাবাবুর মণিহীন দুটো চোখও সে পরিষ্কার দেখতে পেয়েছিল। সেই চোখদুটো এই ঘরের দিকেই তাকিয়েছিল। অবশ্য কুয়াশা এসে যখন আবার মথুরাবাবুকে ঢেকে দিচ্ছে তখন তার মনে হয়েছিল ওটা মথুরাবাবু না হয়ে পাম্প—হাউসের দেয়ালের ওপর চুনকামের একটা পোচড়াও হতে পারে।
কিন্তু এবারে? এবারে? আর তো কোনো সন্দেহ নেই। ওই তো, পাম্প—হাউসের সামনের সিমেন্ট বাঁধানো চত্বরটার ওপর দিয়ে নিঃশব্দে চলে গেল দুটো ছায়ামূর্তি।
একটা মানুষের ছায়া। আর একটা কুকুরের।
কুকুরটা চলে গেল প্রথমে। বিশাল বড় কুকুর, মুখটা ছুঁচলো। লোমে ভরা ল্যাজটা চামরের মতন দুলছে। মরার পরেও এলসা একটুও বদলায়নি। ঠিক পেছনেই হেঁটে গেল মানুষটা। হাতে কুকুরের গলার চেন। নাঃ, লোকটার কথার দাম আছে। বলেছিল পৌঁছে যাব। পৌঁছে গেছে ঠিক।
আর কোনো শিসের আওয়াজ নেই, কারণ তার প্রয়োজনও নেই। সুমন্ত দেখেছে, এলসা মাটির সঙ্গে নাক লাগিয়ে ছুটে আসছে। ও সেই হাতের গন্ধ পেয়ে গেছে, যে হাতে ধরা ছিল ওর গলায় গাঁথা হান্টিং—নাইফের বাট।
কিন্তু সুমন্ত এখন কী করবে? মেহেদির বেড়াটাকে পাক দিয়ে এড়িয়ে ওরা নিশ্চয় এই ঘরটার দিকেই এগিয়ে আসছে। কতক্ষণ লাগবে এলসার এখানে পৌঁছতে? দু মিনিট? তিন মিনিট? তার মধ্যে পালাতে পারবে না সে?
চরম আতঙ্কে সুমন্ত দরজাটা হাট করে খুলে দৌড় লাগাতে গেল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই কুয়াশার আড়াল ছিঁড়ে, বিকট গর্জন করে তার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সেই অমানুষ অনুসরণকারী।
শাবাশ ডিউক!
নয়ডা পুলিশের ডগ—স্কোয়াডের হাবিলদার পরমেশ্বর সিং তার প্রিয় স্নিফার ডাক ডিউকের পিঠে দুটো চাপড় মেরে তাকে মাটিতে পড়ে থাকা সুমন্তের বুকের ওপর থেকে টেনে সরিয়ে নিল। তারপর ও.সি. বিকাশ জয়সোয়ালের দিকে তাকিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে বলল, সত্যি স্যার, ক্রাইমের চব্বিশ ঘণ্টা বাদে কটা কুকুর এইভাবে ক্রিমিনালের গন্ধ ফলো করে তাকে ধরতে পারবে বলুন তো? ডিউক একটা জিনিয়াস।
বিকাশ জয়সোয়াল তখনই পরমেশ্বরের কথার কোনো জবাব দিলেন না। তিনি সুমন্তর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে তার পালস দেখছিলেন। তার নজর কিন্তু আটকে ছিল সুমন্তর দুটো চোখের দিকে। খোলা চোখদুটো যেন কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল।
একটু বাদে নিজের মুঠো থেকে সুমন্তর নেতিয়ে পড়া হাতটাকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন বিকাশ জয়সোয়াল। অবাক গলায় বললেন, এ তো হার্টফেল করে মরে গেছে মনে হচ্ছে পরমেশ্বর। সুমন্ত দুবের মতন একটা পাকা ক্রিমিনাল কী দেখে এত ভয় পেল বলো তো?
পরমেশ্বর সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারল না।