কারও পৌষমাস
সরসীবালা মরিলেই বাঁচেন। কেন যে একটা জাপানী বোমা ছুটিয়া আসিয়া সকলের আগে তাঁহার মাথায় পড়িতেছে না, এইটাই অহরহ অভিযোগ সরসীবালার।
অভিযোগ, অসন্তোষ এটা অবশ্য মনুষ্য প্রকৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুর উপরই রীতিমত একটা অপছন্দ ভাব লইয়া মানুষ সংসারে টিকিয়া থাকে মাত্র।
তবে সরসীবালার বর্তমান অভিযোগে যৎকিঞ্চিৎ বৈচিত্র্য আছে—এই যা। যে দুরন্ত বোমাতঙ্কে ভারত সুদ্ধ লোক জলাতঙ্ক রোগীর মত ক্ষেপিয়া ছুটাছুটি করিতেছে, সেই অনাগত বোমার অসঙ্গত বিলম্বই সরসীবালার অসন্তোষের কারণ।
তা’ অবস্থার গতিকে ব্যবস্থা। নিরীহ ভদ্রমহিলা আজীবন নিশ্চিন্তে সংসার এবং নিঃসঙ্কোচে মেদবৃদ্ধি করিয়া আসিয়াছেন, কতগুলি ধানে কতকটি চাল হয়, কখনো তাহার হিসাব রাখিতে হয় নাই, এক কথায় বলিতে গেলে তাঁহার আজ ”হাড়ির হাল”। সকল অনর্থের মূল যখন ওই হতচ্ছাড়া বৌমা, তখন সেটাকে শীঘ্র একবার দেখিয়া লওয়াই বাসনা সরসীবালার।
উৎপাত কি কম? এইতো—সংসারের হাজার কাজ সারিয়া সবেমাত্র তিনতলায় উঠিয়াছেন কুলের আচারটুকুর তত্বাবধান করিতে—হাঁফ ছাড়েন নাই—হাঁফাইতেছেন; অমনি নীচের উঠান হইতে নবনিযুক্ত ঝিয়ের শানানো গলার ”মা” ডাক ভাসিয়া আসিল। মাতৃনাম মধুর, শুনিলে কান জুড়াইবার কথা কিন্তু সময় বিশেষে উক্ত মধুর ধ্বনি যে কতটা কর্ণদাহকারী হইতে পারে—সরসীবালার সশব্দ স্বগতোক্তিতেই তাহা প্রকাশ পায়।
ওরে বাবারে আবার ডেকে মরছে! আর পারিনে না—পোড়ার মুখো জাপানী আমার মাথায় একটা বোমা কবে ফেলবে রে—
বলিয়া খসখসে তসর ও থসথসে শরীরখানি সামলাইয়া অনেক আয়াসে নামিয়া আসেন। মিনিটখানেক হাঁপানোর পর সিঁড়ি নামার গুরু পরিশ্রম কিঞ্চিৎ লাঘব করিয়া সরসীবালা ঝির উদ্দেশ্যে কাতর প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করেন—কিগো বাছা আবার ডাক পাড়ছো কেন? ছিষ্টি সংসার সেরে সবে মাত্তর ওপরে উঠেছি—কি রাজকার্যে দরকার পড়লো শুনি?
ব্লাউস সেমিজ পরা মার্জিতবাক ঝি। বিশুদ্ধ বাঙলায় উত্তরস্বরূপ প্রতিপ্রশ্ন করে—আমার আবার আপনাকে কি আবশ্যক মা? টাইম মতন আসবো—নিজের কাজ বাজিয়ে দিয়ে চলে যাবো, ডাকাডাকির কি ধার ধারি? দিদিমণি ডেকে দিতে হুকুম করলেন তাই। হুকুম তামিল তো করতে হবে মনিবের।
মনিব মনে মনে সাতবার কান মলিয়া তাড়াতাড়ি বলিয়া ওঠেন—দিদিমণি আবার নীচে বসে বসে ফরমাস করছে কি জন্যে? সিঁড়ি ভেঙে বলে আসতে পারে না? যত গতর দেখেছে সব এই বুড়ির! কোথায় সে?
এই তো একজনা বাবু এসেছিলেন—তাঁকে নিয়ে উপরে গেলেন।
আবার উপরে! সরসীবালার মাথায় বোমা না হোক বাজই পড়ে যেন।
বাবু আবার কে? এই এতক্ষণ নীচে ছিলাম—বাবু ভদ্দর কেউ এলো না। অ আভা, আভা! কে এসেছে রে?
আভা যাহাকে ডাকিয়া লইয়া গিয়া উপরের ঘরে তুলিয়াছে তেমন ‘বাবু’ সম্বন্ধে বিশেষ অবহিত হইবার প্রয়োজন বোধ করেন না সরসীবালা। আভার সাড়া মিলিল না। অগত্যা ধীর মন্থর গমনে আবার সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া দ্বিতলে উঠিয়া আভার ঘরের দরজায় উঁকি মারিতেই সরসীবালার বিরক্তি সম্পূর্ণ দূর হইয়া যায়। গালে হাত দিয়া বলিয়া ওঠেন—হরি বলো, আমাদের ‘ফুলু’? আমি বলি কে না কে ‘বাবু’। তা’পর খবর কি? এতদিন আসোনি কেন? এইসব ডামাডোল যাচ্ছে, ভেবে ভেবে হাঁফিয়ে মরি। কেউ আর আসে টাসে না যে দুটো কথা কই। যাক তারপর—তোমরা কোনখানে যাওনি এখনো? সুশীলাদির শরীর কেমন? হৃষিবাবু ভালো আছেন তো? তোমরা দুভাই—? ক্ষেতু শ্বশুর বাড়ি—না এখানে? ‘দুলু’র বৌ কোথায়?
ধীরে মাসীমা ধীরে—’ফুলু’ নামধারী বাবুটি উঠিয়া আসিয়া সরসীবালাকে একটি প্রণাম ঠুকিয়া সহাস্যে বলিয়া ওঠে—
একটা একটা করে বলুন, প্রথম নম্বর—’এতদিন আসিনি কেন?’ কারণ দিন কয়েক ছিলাম না কলকাতায়। ‘কোথায় গেছলাম’ না জিগ্যেস করতেই বলে নিই, শিউড়ি গিয়েছিলাম বাবা মাকে বৌদিকে রাখতে—
হরে কেষ্ট! তোমরাও তা’ হলে কলকাতা ছেড়েছ? আহা জানলে একবার দেখা করে আসতাম সুশীলাদির সঙ্গে। লোকে তো বলছে কলকাতার শহর নাকি গুঁড়ো হয়ে যাবে—আত্মীয় বন্ধুর সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না—ভগবানই বলতে পারেন সত্যিমিথ্যে। তা’ সব ভালো আছো তো?
যতটা সম্ভব এবাজারে। মার কথা যদি বলেন, কখনোই ভালো থাকেন না—আজই বা খামোকা ভালো থাকতে যাবেন কি জন্যে? যে ক’টি রোগ পোষা আছে পালা করে ঠিক চালিয়ে দেয় সারা বছর। তবে—বাবা খুব ভালো আছেন। আগে একখানা খবরের কাগজ নিতেন, শিউড়ি গিয়ে পর্যন্ত দু’খানা নিচ্ছেন। যখনি দেখি—চারদিকে খাতা পেন্সিল, এ্যাটলাস, গ্লোব, স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার ইত্যাদি ছড়িয়ে নিয়ে আনন্দে বসে আছেন। স্নান-আহার ভুল হয়ে যায়।
ভালো বটে—ওই এক পাগল মানুষ। যখন যে বাতিক চাপে। বরাবর একরকম থাকলেন। বৌমা তাহলে শিউড়িই গেছেন?—
হ্যাঁ। ক্ষেতুও গেছে মার কাছে। দাদাকেই শুধু থাকতে হবে এখানে! আমিও ভেগে পড়বো। এখানে তো—গোয়াল শূন্য। ভাগ্যক্রমে—কতকগুলো খোঁয়াড়ভাঙা গরুকে ঠেঙিয়ে জড় করা হয়েছে শিউড়িতে, তাদের ঘাস জল দিতে যেতে হবে।
বেশ কথা কও ফুলু! সরসীবালা, হাসিতে থাকেন, তোমার ছাত্তররা বুঝি শিউড়িতে যাবে একজামিন দিতে।
সেই রকম তো ব্যবস্থা। আভার কি ব্যবস্থা হ’ল? আই, এ, দিতো না এবার?
দিতো তো—হচ্ছে কই? ব্যবস্থার কথা তোমরাই বেশি জানো। মেয়ে তো সেই দুঃখে শয্যে নিয়েছেন বললেই হ’ল—ওকি লা চিমটি কাটছিস কেন?
চিমটি কি আবার, পিঁপড়ে হয়েছে চৌকিতে। বলিয়া মায়ের পিঠের কাছে হইতে ঈষৎ সরিয়া দাঁড়ায় আভা। সরসীবালা আসিবার পূর্বে কথা কিছু কহিয়াছিল কিনা কে জানে, আপাততঃ সে গম্ভীর মুখে তাচ্ছিল্যের আভাস টানিয়া আনিয়া মায়ের পিছন ঘেঁষিয়া দাঁড়াইয়াছিল। মায়ের যেমন সকলের কাছে সকল কথা খুলিয়া বলা রোগ, মেয়ের তেমনি আপত্তি তাহাতে। কেন রে বাপু, লাভটা কি? অপরের চিত্তবিনোদন ছাড়া তাহাদের কাছে দুঃখ গাথা গাওয়ার আর কি সার্থকতা আছে? কে কবে অন্যকে মুস্কিলে পড়িতে দেখিলে কৌতুক বোধ ছাড়া, সমবেচনায় বিগলিত হয় শুনি? তবে?
কাজেই প্রচলিত গ্রাম্যপ্রথায় মাকে একটু সতর্ক করিবার চেষ্টা করিতেছিল আভা, কিন্তু মা এমনি ন্যাকা যে হাটে হাঁড়ি ভাঙিয়া বসিলেন।
মেয়েদের লেখাপড়া—’হয়ে গেল’ মাসীমা। ফুলু উৎসাহে মতামত ব্যক্ত করে বুঝলেন আভাদেবী! নারী প্রগতির দফা গয়া। আগেও ছিল না—পরেও থাকবে না! মাঝখান থেকে ফাঁকতালে জনাকতক যা করে নিতে পেরেছে। এখন ওই—’ব্যাক টু দি ভিলেজ।’ কলসী নিয়ে পুকুর থেকে জল আনো হেঁসেল ধরো—এবং অবসর কালে পাড়া বেড়াও আর ছেলে ঠেঙাও। পরীক্ষা দেওয়া আর হচ্ছে না মেয়েদের।
না হয় না হ’বে, আপনার কি? কেউ তো তা’র জন্যে আপনার কাছে কাঁদতে যায়নি! আপনাদের তো সব বজায় থাকবে তা’হলেই হ’ল।
মায়ের অতিরিক্ত সারল্যে যতটা অস্বস্তি বোধ করে আভা, ততোধিক অপ্রতিভ হ’ন সরসীবালা মেয়ের অন্যায় ঔদ্ধত্যে। কাজেই তাড়াতাড়ি কথা ফিরাইতে বলেন—
আভি কি ফুলুকে ‘আপনি’ বলিস না কি?
আগে বলতেন না—কলেজে উঠে সভ্য মহিলা হয়ে পর্যন্ত বলছেন।
ওই সব ঢং ইস্কুল কলেজের। ছোটবেলায় কত ভাব, কত আবদার—চব্বিশ ঘণ্টা তো সুশীলাদির বাড়িই পড়ে থাকতিস। এখন আবার ‘আপনি আঁগ্যে’—এদিকে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা তো খুব শিখেছিস, চলে যাচ্ছিস যে? ওই এক ধরন মেয়ের। যাচ্ছিস তো একটু চা করে আনিস ফুলুর জন্যে। পেতলের কৌটোয় নিমকি আছে ক’খানা, আনিস সেই সঙ্গে।
গমনোন্মুখ আভা মায়ের ডাকে মুখ ফিরাইয়া দাঁড়াইয়াছিল, চশমার ভিতর হইতে তাহার পানে হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া ফুলু কহিল—
ওরে বাবা একে চা—তা’র ওপর নিমকি! যে রকম রাগে গরগর করছে আপনার মেয়ে, নিমকির বদলে চায়েই না নুন দিয়ে বসে মাসীমা।
আভা উত্তর অবশ্য করে না, জ্বলন্ত দৃষ্টি এবং ত্রুদ্ধ ভঙ্গীর মধ্যে উত্তর রাখিয়া ‘তরতর’ করিয়া নীচে নামিয়া যায়।
সরসীবালা ক্ষুব্ধকণ্ঠে কহেন—এই এক উল্টো রাগ মেয়ের। পরীক্ষে হ’ল না তা’র জন্যে চব্বিশ-ঘণ্টা রাগ ঝাল মন খারাপ। দিতে পারিস দি’গে যা না বাবু, কে তোর হাত পা বেঁধে রেখেছে? কার যে দোষ তার ঠিক নেই, ঝাল ঝাড়তে মা আছে। মা যেন ওর কলেজের মাথায় বোমা ফেলেছে। আমার মাথায় একটা পড়লেই আমি বাঁচি। পড়ছে নাও তো ছাই।
হ্যাঁ বাঁচবার একটা সহজ পথ বার করেছেন তা’হলে—বেশ। যাক বৌদিরা সব গেলেন কোথা? নেই না কি কেউ?
আর বোলোনা বাবা, আমার যা খোয়ার হয়েছে সে বলবার নয়। বৌমারা তো রেঙুনে বোমা পড়ার গুজব শুনেই আপন আপন কাচ্চা বাচ্চা সামলে একধার থেকে চম্পট। ছিষ্টি সংসার এলোমেলো ক’রে ছড়িয়ে এক এক সুটকেস সম্বল ক’রে যেখানে সুবিধে পেলেন চ’লে গেলেন—আমি বুড়ি সেই সব গুছিয়ে মরছি। আর আমার ছেলেরা হপ্তায় হপ্তায় মাল বইছে আর বাজার সরকারি করছে। এদিকে দেখ বৌমারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরটা জবাব দিলে, হাতে পায়ে ধরতে বাকী রাখলাম শুনল না! চাকর মুখপোড়া না ব’লে পালালো। অতদিনের পুরোনো ঝিটা সুদ্ধু বোনপোর অসুখের ছুতো করে গেলো, আর এলো না। অতিকষ্টে একটা বাসন-মাজার লোক পেয়েছি, দশ টাকা মাইনে—তেজে মটমট করছে, তাই পায়ে ধরে রাখা। ধোপা বলে গেছে আসছে ‘ক্ষেপে’ আর কাপড় নেবে না। আবার আজ সকালে—
গয়লা ব্যাটা বলে গেছে—’দুধ দেবে না কাল থেকে’—এই তো?
কথার শেষাংশ ফুলুই যোগ করিয়া দেয়।
ঠিক তাই। তোমায় কে বললে? আভা?
সরসীবালা বিস্মিত প্রশ্ন করেন।
বলতে হবে না, সর্বত্রই এক ব্যাপার কিনা। ‘বাঙালীর একতা নেই’ বলে যে বদনাম ছিল সেটা ঘুচেছে এতদিনে। সকলের মনে এক চিন্তা, সকলের মুখে এক কথা, সকলের ঘরে এক সমস্যা।
হ্যাঁ ফুলু, তা এরা কিছু বিহিত করছে না?
কারা?
এইসব তোদের কর্তারা?
করছে বৈকি, দেশের যত সব ভালো ভালো দামী লোকদের বোমার হাত থেকে বাঁচাবার জন্যে যত্ন করে নিয়ে গিয়ে ‘সেলে’ বন্ধ করে রেখে দিচ্ছে।
সরসীবালা কি বোঝেন তিনিই জানেন, বোধ করি দামী দামী ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে একপ্রকার নিশ্চিন্ত হইয়াই বলেন—তা যেন বেশ করেছে বুঝলাম, কিন্তু আমাদের মতন গেরস্থ প্রজাদের কথাও তো ভাবতে হয়? তাদের জন্যেও তো কিছু করা দরকার?
তাতেও ত্রুটি নেই মাসীমা, কী না করেছে? মরে গেলে মড়া পর্যন্ত ফেলবে কথা দিচ্ছে, আর কী চান?
ওমা তুমি আবার ও কি বলছো? সরসীবালা হতাশ বিস্ময়ে গালে হাত দেন ছোটলোকগুলোর কথা তো মিথ্যে নয় তা হলে? সেই ভয়েই তো পোড়ার মুখোরা তিলার্ধ তিষ্ঠোচ্ছে না—চোখ কান বুজে ছুটছে।
ঠিকই করছে—প্রফুল্ল সুচিন্তিত মন্তব্য প্রকাশ করে—ভেতরের কথা আগে ওরাই ঠিক ধরে ফেলেছে আর কি।
কি জানি বাছা, তুমি তো আরো ভাবনা ধরিয়ে দিলে! আমার ছেলে মেয়েরা তো এসব কথা হেসে উড়িয়ে দেয়।
হাসি? বলেন কি? হাসবার দিন কি আর আছে? আজ যাতে হাসছেন—কাল তাই ফলে যাচ্ছে। সব বিশ্বাস করে যাবেন একধার থেকে। হাসি? রাম বলো—
ফুলু জিভ কাটিয়া ভারী গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়ে।
কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া সরসীবালা খেদোক্তি করেন, আমার যে কত দিকে কত জ্বালা! সবাই বলছে—’চলে যাও চলে যাও—পালাও পালাও”—আরে বাবু—ছেলেরা পড়ে থাকবে বোমার মুখে—কর্তার নড়বার জো নেই—সরকারের চাকর, তিনি থাকবেন। আমার প্রাণটাই কি বড় হ’ল? হাত পুড়িয়ে রেঁধে খাবারই কি ক্ষমতা আছে ওদের? কখনো একগেলাশ জল গড়িয়ে খায়নি। তা’রপর এই ছিষ্টি সংসার। ভগবান না করুন; বোমা পড়লে আলাদা কথা, তা’বলে ইচ্ছে করে চোর ডাকাতের হাতে স’পে সর্বস্ব দিয়ে যাবো? আমাকে থাকতেই হবে শেষ পর্যন্ত, তবে মেয়েটাকে নিয়েই ভাবনা। কোথায় যে পাঠাই—
কেন বৌদিদের কারুর সঙ্গে পাঠালেই হ’ত?
তাই বা কি করে হয় বলো? অতবড় আইবুড়ো মেয়ে—কুটুম্বুবাড়ি পাঠানো কি সম্ভব? তা’ছাড়া—(কণ্ঠবর হ্রাস করিয়া সরসীবালা বিষণ্ণভাবে বলেন) মেয়ের কথা তো জানই—যত তেজ, ততো জেদ, অবুঝের একশেষ; ভাইদের আস্কারায় গোল্লায় গেছে একেবারে—ওই মেয়েকে পরের বাড়ী পাঠিয়ে কখনো স্বস্তি হয় মনে?
উঁহু মোটে না। এক শ্বশুরবাড়ী ছাড়া। কিন্তু কথা হচ্ছে কি এই সব মেয়েদেরই আগে সামলানো দরকার। আপনারা বরং পরে…এই যে চা হয়ে গেল এরই মধ্যে? এ যে দেখছি ‘রাগই লক্ষ্মী’। যাই বলুন মাসীমা, আভা কিন্তু চা’টি তৈরী করে ভারী খাসা।
থাক যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু ”কথাটা কি হচ্ছিল” শুনতে পাই না?
বক্রদৃষ্টিতে মায়ের মুখখানা একবার দেখিয়া লয় আভা। ভাবটা যেন রাগ করেন করুন। কেন? সব সময় আমাকে লইয়া আলোচনা করার দরকারটা কি?
সরসীবালা ভারীমুখে ফুলুর হইয়া জবাব দেন, কথা আর কি! তোমাকে কোনখানে পাঠানো দরকার তাই বলছে। তুমি তো বোমা পড়া না দেখে নড়বে না বলছো। লোকে শুনলে কি বলবে?
লোকের কিছুই বলতে হয় না, যদি পরের ভাবনাটা একটু কম করে ভাবে। বলিয়া একখানা চেয়ার টানিয়া গুছাইয়া বসে আভা, কতকটা ‘রণং দেহি’ ভাব।
অন্যের রাগটাও অনেক সময় উপভোগের বস্তু হইতে পারে, অন্ততঃ ফুলুর বর্তমান মুখচ্ছবি সেই কথাই বলে। সে সোৎসাহে বলে, আমাদের বীরভূমটাই সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা বুঝলেন মাসীমা। বোলপুরটা রয়েছে কি না? টোকিও রেডিও থেকে বলেছে—”শান্তিনিকেতন নষ্ট করা হবে না।”
টোকিও রেডিওর কল্যাণে গাঁজাটা আজকাল বড়বেশী সস্তা হয়ে পড়েছে কিন্তু। কি বলেন ফুলুদা?
সরসীবালা মেয়েকে আঁটিয়া উঠিতে পারেন না কিন্তু চেষ্টা ছাড়েন না। ধমক দিয়া ওঠেন, আর কি—তোর কাছে তো সবই গাঁজা! খালি কাটা কাটা কথা শিখেছিস বৈ তো নয়। দেশ সুদ্ধু লোক ধেই ধেই করে নাচছে, আর উনি পণ্ডিত বলবেন ‘বাজে আর গাঁজা।’
প্রফুল্লর বিদ্যাবুদ্ধির উপর সরসীবালার বরাবরই একটু উচ্চ ধারণা, কাজেই তাহার কথার প্রতিবাদ করাটা বরদাস্ত করিতে পারেন না।
থাক থাক তার জন্যে কি, ছেলেমানুষের কথা কে ধরছে মাসীমা আপনিও যেমন। আমি বলি কি শিউড়িতেই পাঠিয়ে দিন ওকে মার কাছে। মা খুবই খুশী হবেন। অবশ্য যদি পর মনে না করেন। ক্ষেতু রয়েছে—থাকবেও ভালো—
কে কোথায় ভালো থাকবে না থাকবে সেটাও আজ কাল টোকিও রেডিওতে বলছে বুঝি?
আভা বক্রোক্তি করে।
নাঃ বসে বসে খালি ঝগড়াই কর—হতাশ হইয়া হাল ছাড়িয়া দেন সরসীবালা।—ফুলু একটু বোসো বাবা দেখি আবার ঝি-টা ডেকে মরছে কেন। কি জ্বালা যে হয়েছে—হতচ্ছাড়া বোমা পড়েও পড়ছে না তো! গঙ্গা যাত্রার রুগীর মতন ঝুলে থাকলো দেশটা, না মরলো না সারলো।
অনেক কষ্টে দেহভার টানিয়া তুলিয়া বকিতে বকিতে প্রস্থান করেন সরসীবালা।
চেয়ারখানা আর একটু টানিয়া আনিয়া আভা তীব্রস্বরে প্রশ্ন করে—মতলবটা কি শুনি? মাকে শিউড়ির কথা বলে নাচানোর মানে?
মানে অতি সরল, তবে বুদ্ধির অভাবে সহজ কথাও দুরূহ হয়ে ওঠে এই আর কি?
সকলের বুদ্ধি তো সমান ধারালো নয়, কাজেই দয়া করে খুলে বলতে হয়।
মানে আর কিছুই নয়, প্রফুল্ল কণ্ঠস্বর অপেক্ষাকৃত নামাইয়া বলে, বাঙলা অভিধানে ‘সান্নিধ্য সুখ’ বলে একটা কথা আছে না? বলিয়া চশমার ভিতর হইতে রহস্যময় চাহনি ফেলে।
আভা অবশ্য আমল দেয় না, হাসিয়া ওঠে।
আছে আর কই? পূর্বে ছিল বটে! এখন তো ব্রহ্মদেশ থেকে বোমার ফুলকি এসে সারা ভারতে বিরহের আগুন জ্বেলে দিয়েছে।
বড্ড কথা শেখা হয়েছে যে?
প্রফুল্ল হঠাৎ হাত বাড়াইয়া আভার এলোচুলের একটা গোছা ধরিয়া টান দেয়।
আভাও তৎপর সরিয়া গিয়া ক্ষিপ্রহস্তে চুলগুলা টানিয়া জড়াইয়া বলে, বড্ড সাহস বেড়েছে যে?
হা ঈশ্বর! সাহসই যদি থাকতো! যাকগে, তোমার আগুনের কথায় মনে পড়ে গেল একটা কথা—ওর ফাঁকে ফাঁকে আবার যে মিলনের শান্তি বারিও ছিটোনো হচ্ছে। কাল দেখে এলাম তার প্রমাণ। গজেনদা’দের তো জানো? পিসিমা মারা যেতে যেতেই ‘তিন ভাই তিন ঠাঁই। গজেনদা’ থাকেন টালায়, রাজেনদা টালিগঞ্জে, ব্রজেনদা চৌরঙ্গী। কেউ কারো মুখ দেখেন না—দৈবাৎ পথে দেখা হয়ে গেলে অন্য ফুটপাথে সরে যান, এক ট্রামে উঠে পড়লে পরের স্টপে নেমে যান, মোটর চড়লে একজন আর একজনের গায়ে কাদা ছিটিয়ে নির্মল আনন্দ উপভোগ করেন। এইরকমই চলে আসছে—হঠাৎ কাল গজেনদা’র বাড়ি গিয়ে প’ড়ে দেখি এক বিচিত্র ব্যাপার!
বিচিত্র ব্যাপার স্মরণ করিয়া প্রফুল্ল প্রায় সশব্দে হাসিয়া ওঠে।
আভা ঈষৎ কৌতূহলে প্রশ্ন করে—কি এত বৈচিত্র্য দেখলেন?
দেখি গজেনদা’র সেই সভ্যভব্য পৌনে একডজন বাচ্চা মুখরিত বাড়িটি নিঃশব্দ; সসন্তান ‘গজেন বৌদি’ ফেরার। রাজেনদা ব্রজেনদা’রও একই অবস্থা। ”শেষের দিন সমাগত” ভেবে মনোমালিন্য বিসর্জন দিয়ে তিন ভাই একঠাঁই হয়েছেন। দেখি ছোটকর্তা একঝুড়ি আলু আর একখানি ধারালো ছুরি কোলে করে দালানে বসে নিবিষ্টচিত্তে কড়াইশুঁটি ছাড়াচ্ছেন, উঠোনে মেজকর্তা একটি হৃষ্টপুষ্ট ভেটকি নিয়ে আঁশবঁটির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন, আর সাড়া পেয়ে রান্নাঘর থেকে বড়কর্তা বেরিয়ে এলেন। গিন্নির ফেলে যাওয়া একখানি শাড়ী পাট করে পরা। দরাজ গলায় আমায় খেয়ে যাবার অনুরোধ জানালেন, ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থা। ”ডালটা একটু পুড়ে গেছে বটে, মাংস আছে হাতে”।
পোড়বার অপেক্ষায়?
হ’তে পারে। তা’হোক তবু দেখে ভারী আনন্দ হ’ল।
তা তো হবেই আপদের শান্তি হয়েছে যে! দেখা যাচ্ছে সর্বাপদ শান্তির মহৌষধ হচ্ছে জাপানী বোমা কি বল?
স্থান কাল পাত্র ভেদে আপদও সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়, বুঝলেন মহাশয়া? ধরুন আপনি—শ্রীমতী আভা দেবী—শিউড়ি নামক বীরভূম জেলার একটি ক্ষুদ্র শহরে আরো ক্ষুদ্র একটি কুটিরে পদার্পণ করলেন—
দায় পড়েছে আমার সেখানে যেতে। আমার সিঁড়ির তলা বজায় থাক, বালির বস্তা অক্ষয় হো’ক, পরের বাড়ি যেতে যাবো কি দুঃখে?
তুমি বড় নিষ্ঠুর আভা, একদম হার্টলেস।
ওরে বাস রে—আলোচনার ধারাটা যে বড় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে!
কি করা যাবে। অবস্থা জরুরি হয়ে দাঁড়ালেই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শুনলে তো মাসীমার কথা? বোমার ঝাপটায় কে কোথায় ছিটকে পড়বো, হয়তো আর দেখাই হবে না।
উপায় কি? তাই স্বীকার করে নিতে হবে। তা’বলে পরের বাড়ী গিয়ে থাকা-ফাকা আমার দ্বারা পোষাবে না।
শেষের কথাগুলো আভা রীতিমত গম্ভীর হইয়াই বলে।
সঙ্গে সঙ্গে প্রফুল্লরও মুখের ভাবের পরিবর্তন ঘটে। সে আরো গম্ভীর গলায় বলে, এই কথা তো? বেশ। আমিও দেখে নেবো তোমার আপত্তি কেমন টেঁকে। এই চললাম, মাসীমাকে বলে সব ঠিক করতে।
কখনোই পারবে না।
নিশ্চয়ই পারবো।
বেশ বাজী ফেলো।
এই ফেললাম। কি শর্ত?
শর্ত আবার কি? জয়ের জয়টাই লাভ। হারাটা—হারই, সেইটাই মস্ত লোকসান।
আভার কথার উত্তর হয়তো প্রফুল্লর কাছে ছিল কিন্তু সব সময় সকল কথা বলার সুযোগ হয় না মানুষের। সারা পৃথিবী সর্বদাই যেন রসভঙ্গ করিবার ষড়যন্ত্র করিয়া ফিরিতেছে। অপলক দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া ফুলু কি বলিতে গিয়া চমকিয়া থামিয়া চকিত প্রশ্ন করে—ও কি?
‘সাইরেনের’ তীক্ষ্ণ আওয়াজ একবার তীব্রস্বরে বাজিয়া উঠিয়াই যেন গোঙাইয়া কাঁদিয়া ফেলে।
আর বোলোনা—জ্বালাতন! আভা ভ্রূ কোঁচকাইয়া বলিয়া ওঠে—পাড়ায় গোটাকতক দুষ্টু ছেলে জুটেছে, শীষ দিয়ে হরদম ওই ‘সাইরেনে’র সুর তুলবে—ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। মা আবার ভীতুমানুষ, জেনেশুনেও—
কথা শেষ করিতে হয় না। সরসীবালা জানিয়া শুনিয়াও কন্যাকে ডাকিয়া সভীত প্রশ্ন করেন—অ-আভা, কিরে তোদের ‘সাইলেন্ট’ ‘ফাইলেন্ট’ বাজলো না তো?
নাঃ মাকে নিয়ে আর পারা গেল না। রোজ শুনবেন তবু—মাকে প্রবোধ দিতে তাড়াতাড়ি নীচে নামিতে হয় আভাকে। ‘সাইরেনে’ সরসীবালার বড় ভয়।
কিন্তু সরসীবালাকে দোষ দেওয়া যায় না। বোমার ছায়া দেখাইয়া বেঁটে জাপানী যদি চল্লিশকোটি লোককে বিভ্রান্ত করিয়া তুলিতে পারে—সাইরেনের নকলে বিহ্বল হইয়া পড়িবেন এমন কিছু অন্যায় নয় তাঁহার পক্ষে।
বিমানভীতির প্রবল আলোড়নে সামাজিক জীবনে যে ভাঙন ধরিয়াছে— তাহা ভয়ঙ্কর। মাত্র ছয় মাস আগে যে কথা ‘ভাবিলে’ দুঃস্বপ্ন—’বলিলে’—পাগল—এবং ‘শুনিলে’—প্রলাপ মনে হইতে পারিত, তেমনি কাণ্ড অহরহ ঘটিতেছে। যুগান্তকাল ধরিয়া যে বৃদ্ধ বটগাছ ঝুড়ির পর ঝুরি নামাইয়া শিকড় গাড়িয়া আসিতেছিল, কে যেন প্রচণ্ড মুষ্টিতে সবলে তাহাকে মাটির বুক হইতে টানিয়া ছিঁড়িয়া একাকার করিয়াছে।
সোনার শহর কলিকাতা, আজব শহর কলিকাতা, ইন্দ্রভূষণ কলিকাতা মর্তে, অমরাবতী কলিকাতা—তাহার আজ কী হাল! কলিকাতাবাসী আজ সব থাকিয়াও সর্বহারা।
তাহাদের জীবনে আস্থা নাই, উপার্জনে স্পৃহা নাই, ক্রীড়ায় আনন্দ নাই, কর্মে উৎসাহ নাই, মনে সুখ নাই, মুখে হাসি নাই, ঘরে বৌ নাই, পথে আলো নাই, মগজে বুদ্ধি নাই, পেটে ভাত নাই। পরনের কাপড়খানি মাত্র কটিদেশে টিঁকিয়া আছে, প্রত্যক্ষ বোমার অপেক্ষায়। ঠিক যেন পৃথিবীর কাছে দেনা পাওনা চুকাইয়া বসিয়া আছে এক বিরাট মৃত্যুর প্রতীক্ষায়; তবু আশ্চর্য! সেই অন্তহীন অন্ধকারেও মাঝে মাঝে আলোর ফুলকি জ্বলে।
বিধাতাপুরুষঘটিত তিনটি কাজের মধ্যে—বিবাহটাও জন্ম-মৃত্যুর মত অদম্য হইয়া ওঠে। শাঁখ বাজে—বাজনা বাজে—সামিয়ানা চাপা দিয়া আলোও জ্বলে। নিষ্প্রদীপকে অঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া ‘সূয্যিমামায়’ আমল থাকিতে থাকিতেই বর বিজয় অভিযানে বাহির হয়—পাঁচ এয়োর বদলে তিন এয়ো কাজ চালাইয়া দেয়। মোটের মাথায় বিবাহটা রদ হয় না।
বীরভূমগামী ট্রেনের একখানা সেকেন্ড ক্লাশ খালি কামরায়, একটি সদ্য বিবাহিত নবদম্পতিকে উঠাইয়া দিয়া সঙ্গের কয়জন পাশের কামরায় উঠিয়া পড়েন। এবং পরের ট্রেনে সংবাদ লইবার আশ্বাস প্রদান করেন।
গাড়ি চলিতেই বর একটি সশব্দ নিঃশ্বাসের সঙ্গে বলিয়া ওঠে—যাক—ভাগ্যে জাপান যুদ্ধটা বাধিয়েছিল!
সেকেলে কনে নয় যে উত্তর দিবে না, সঙ্গে সঙ্গে বলে—দেশসুদ্ধ লোক সব হারাতে বসেছে—আর উনি সেই সুযোগে নিজের সুবিধে করে নিয়ে যুদ্ধের জয়গান করছেন। কী সাংঘাতিক লোক!
আরে ‘মশাই’, এই তো নিয়ম পৃথিবীর, কারো সর্বনাশ কারো পৌষমাস।
দেখছি তাই।
মাসীমা কিন্তু শেষ পর্যন্ত—কুটুম্বুবাড়িই পাঠালেন মেয়েকে কি বল?
সেই তো কথা—কনে বেচারা মুখখানি ভারী চিন্তাযুক্ত করিয়া বলে, এখন সেই কুটুম্বের ছেলেটি যে মেয়েটার কি হাল করে এই ভাবনা।
ট্রেনের বিরক্তিকর শব্দে শুনিতে পাওয়ার অসুবিধায় বরকে লজ্জার মাথা খাইয়া নতুন কনের নেহাৎ কাছাকাছি আসিয়া বসিতে হয়; তবুও মুখটাকে কানের গোড়ায় সরাইয়া না আনিলে চলে না।…
দেখলে তো যেতে হ’ল কিনা? বাজীর জিতটা আমার প্রাপ্য জানলে? তুমি হেরে গেলে।
কনে কিন্তু দিনে ডাকাতি করে, স্বচ্ছন্দে অস্বীকার করিয়া বলিয়া বসে, ঈস হার কিসের? মোটেই আমি ‘যাবো না’ বলিনি। বলেছিলাম, ‘পরের বাড়ি গিয়ে থাকা পোষাবে না। তা’ পরের বাড়ি যাচ্ছি না নিশ্চয়?’
নিশ্চয় নয়! প্রতিবাদীর কথায় স্বীকৃতি দিয়া বাদী স্বেচ্ছায় মামলা তুলিয়া লইয়া আপোষে মিটমাট করিয়া লয়।
তবে আপোষ ব্যবস্থাটা সম্ভবতঃ সাধারণ্যে চলিত নয়, গাড়ীতে অপর যাত্রী থাকিলে এ্যালাউ করিত কিনা সন্দেহ, রিজার্ভ বলিয়াই রক্ষা।
—